hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী

লেখকঃ আবু আব্দুর রাহমান

২৪
বাইশতম পরিচ্ছেদ: বিদায় হজে উম্মতের জন্য উপদেশ ও বিদায় গ্রহণ
১. মানুষের মাঝে হজের ঘোষণাঃ

সুস্পষ্ট দাওয়াত, আমানত আদায়, উম্মতকে উপদেশ, আল্লাহর পথে যথাযথ সংগ্রামের পর তিনি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দেন। তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, তিনি দশম বছর হজব্রত পালন করবেন। মদীনাতে নয়টি বছর দাওয়াত, শিক্ষা, জিহাদে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করার পর এ ঘোষণায় উদ্দেশ্য ছিল, মানুষকে হজ ফরযের সংবাদ পৌঁছানো-যাতে তারা তার নিকট থেকে হজের বিধি-বিধান শিখে নেয় এবং তার কাজ-কথাগুলো প্রত্যক্ষ করে। এবং তাদের অসীয়ত করবেন, উপস্থিতগণ কর্তৃক অনুপস্থিতদের কাছে এ পয়গাম পৌঁছে দেয়ার জন্য। তারা যাতে ইসলামী দাওয়াতের অনুসরণ করে এবং দূরে ও কাছের সকলের নিকট তা পৌঁছে দেয়। [শরহুন নববী আলা সহীহ সহীহ মুসলিম , ৪২২/৮।]

জাবের রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন এ সময়ে হজ করেননি। অতঃপর দশম হিজরীতে তিনি লোকদের মাঝে হজের ঘোষণা দেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ করবেন। তাই মদীনায় বিশাল একদল লোক জমায়েত হলো। তাদের সকলের আকাঙ্খা তারা রাসূলের অনুসরণ করবে। হজে তিনি যা করবেন তারাও তার মত আমল করবেন....’এ ভাবেই জাবের রাসূলের হজের কথা বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায় তিনি বললেন , বাইদা [জুল হুলাইফার একটি এলাকার নাম ।] নামক স্থানে তার উষ্ট্রী তাকে নিয়ে থেমে গেল। আমি আমার দৃষ্টির শেষসীমা পর্যন্ত তার সামনে পদব্রজকারী ও আরোহনকারীদের দেখতে পেলাম। অনুরূপ তার ডানে বামে ও পেছনেও দেখলাম। [কারো কারো মত এ সংখ্যা ৯০ হাজার কারো কারো মত হলো এক লক্ষ ত্রিশ হাজার- ফাতহুল মালিকুল মাবুদ ১০৫/২/৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝেই ছিলেন। তার উপর আল-কুরআন অবর্তীণ হচিছল এবং তিনি তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে তিনি যা আমল করেছেন আমরা ও তার সাথে আমল করতে থাকি। ...এভাবে জাবের রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হজ আদায়ের বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায় বললেন, ‘তিনি আরাফায় পৌঁছলেন এবং নামিরাতে তার জন্য নির্মিত তাবুতে অবতরণ করলেন।’

২.আরাফয় উম্মতকে শেষ উপদেশ ও বিদায় জানানোঃ

জাবের রা. বলেন, যখন সূর্য অস্তমিত হলো ‘কাসওয়া’ (তার সাওয়ারী) আনার জন্য আদেশ করলেন। তাকে নিয়ে আসা হলো। ‘বাতনে ওয়াদী’তে তিনি ভাষণ দিলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের কাছে সম্মানিত। যেমন পবিত্র ও সম্মানিত তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর। জেনে রাখ! জাহেলী যুগের সকল কর্মকান্ড আমার পদতলে পিষ্ট। [অর্থাৎ তিনি জাহেলি সকল কর্ম কান্ড বাতিল করে দিলেন অতএব এটার আর কোন কার্যকরিতা নাই । ফাতহুল মালিকিল মাবুদ ১৮/২।] জাহেলী যুগের রক্তের দাবী রহিত করা হলো। প্রথম যে রক্ত দাবী রহিত করছি, তাহলো আমাদের রক্তর দাবী - ইবনে রবিয়া বিন হারিসের রক্ত- সে বনি সাআদ গোত্রে দুধ পান করতো। তাকে হুযাইল গোত্রের লোকেরা হত্যা করেছিল। জাহেলী সুদ রহিত করা হলো। প্রথম যে সুদ, যা রহিত করলাম তা হলো আমাদের সুদ - আববাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এর সুদ- তা পুরোটি রহিত করা হলো। [এর দ্বারা উদ্দেশ্য যা মূল ধনের অতিরিক্ত, করণ মূল ধন মালিক পাবে ।] আর নারীদের ব্যাপারে আললাহকে ভয় কর, কারণ তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং তাদের গুপ্তাঙ্গ বৈধ করেছ আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে। [কালেমার অর্থ ১. সম্মান জনক ভাবে বিদায় এবং সুন্দর ভাবে গ্রহণ ২. লাইলাহ ইল্লাল্লাহ ৩.ইজাব ও কবুল ৪.এর দ্বারা কোরআনের সূরা নিসার ৩ নং আয়াত উদ্দেশ্য ‘তোমাদের মনমত দুইটি ও তিনটি ও চারটিকে বিয়ে কর; ইসলামী বিদ্বানগণ এটিকেই বিশুদ্ধ মত বলে মনে করেন কারণ এতে উল্লেখিত সবগুলো অর্থ এসে যায়। ফাতহুল মালিকল মা‘বুদ ১৯/২।] তাদের উপর তোমাদের অধিকার হলো, তোমরা যাকে অপছন্দ কর এমন কাউকে তারা বিছানায় স্থান দেবে না। [অর্থাৎ নারী অথবা পরুষ কাউকে যেন স্ত্রী ঘরে আসতে অনুমতি নাদেয়। এর দ্বারা এ উদ্দেশ্য নয় যে, তারা যেন ব্যভিচারির অনুমতি নাদেয় কারণ জিনা সর্বাবস্থায় হারাম স্বামী পছ্ন্দ হোক অথবা অপছ্ন্দ। প্রাগুপ্ত।] যদি তারা এমন কিছু করে বসে, তাহলে তাদের মৃদু শাসন কর। তাদের আহার-বিহার, পোশাক- পরিচ্ছদ তোমাদের দায়িত্বে। তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব রেখে গেলাম। যদি তা আঁকড়ে ধর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। [অর্থাৎ তোমাদের মাঝে এমন বস্ত্ত রেখে গেলাম যদি তা বিশ্বাসে ও আমলে মজবুত হয় ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, আর তা হলো আল্লাহর কিতাব যা সামনে পেছনে কোন দিক থেকে বাতিল আসতে পারে না, হাদীসের উল্লেখ এজন্যে করা হয়নি, কারণ কোরআন হলো দ্বীনের মূল, অথবা এ জন্যে যে কোরআনেই তো হাদীসের অনুসরণ করতে বলেছে। ফাতহুল মালিকিল মা‘বুদ, ২০/২।] আর আমার ব্যাপারে তোমরা জিজ্ঞাসিত হলে কি বলবে?’ উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, ‘আমরা সাক্ষী দেব যে, আপনি রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন, আমানত আদায় করেছেন, জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার শাহাদত আঙ্গুলী আকাশের দিকে উত্তোলন করেন এবং মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘হে আললাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন! হে আললাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন! হে আললাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন!’ [সহীহ মুসলিম , ১২১৮।]। সমাবেশস্থল বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। [কারো কারো মত হলো একলক্ষ্য ত্রিশ হাজার ফাতহুল মালিকিল মা‘বুদ ১০৫/২।]

আল্লাহ তাআলা জুমার দিবসে আরাফার দিনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবর্তীণ করেন তার বাণীঃ

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ﴿৩﴾ سورة المائدة

‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’ [সহীহ আল - বুখারী, ৪৫, সহীহ মুসলিম ৩০১৬-৩০১৭।] এ উম্মতের উপর এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশাল নেআমত; যে আল্লাহ তাদের জন্য তাদের দীন পরিপূর্ণ করেছেন। তাই তাদের অন্য কোন দীনের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। তাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোন নবীর মুখাপেক্ষীরও প্রয়োজন পড়বে না। এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তাআলা তাকে শেষ নবী বানিয়েছেন। এবং তাকে প্রেরণ করেছেন সকল জিন ইনসানের জন্য। তাই ঐ বস্ত্ত হালাল বলে গণ্য হবে, যা তিনি হালাল বলেন। ঐ বস্ত্ত হারাম হবে, যা তিনি হারাম বলেন। এবং তিনি যা বিধান হিসাবে বলবেন, তাই হবে বিধান। আর তিনি যত সংবাদ দিয়েছেন সবই সত্য- হক্ব, তাতে মিথ্যা - পশ্চাৎপদতা নেই।

وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا

‘‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে।’’ অর্থাৎ সত্যতা সংবাদ পরিবেশনে আর ইনসাফ আদেশ ও নিষেধ প্রদানে। তাই আল্লাহ যখন তাদের জন্য দীনকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন তাদের উপর নেয়ামত ও পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। [ইবনে কাসির, ১২/২।]

বর্ণিত আছে, আরাফা দিবসে এ আয়াত অবতরণ প্রাক্কালে, উমার রা. কেঁদে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কাঁদছেন কেন? উত্তরে বললেন, ‘এর কারণ হলো আমরা দীনের সমৃদ্ধিতে ছিলাম। এখন পূর্ণাঙ্গ করা হলো। আর কোন বস্ত্ত পূর্ণাঙ্গ হলে তার তা আর বৃদ্ধি পায় না। সমৃদ্ধ হয় না। [ইবনে কাসির ১২/২।] তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পূর্বাভাস দেখছিলেন এ আয়াতে।

৩. জামরাতে উম্মতকে উপদেশ দান ও বিদায় জানানোঃ

জাবের রা. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দশম তারিখে বাহনে থেকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি ‘তোমরা আমার থেকে তোমাদের বিধি-বিধানগুলো শিখে নাও, আমি জানি না, হতে পারে এ হজের পর আমি আর হজ করব না।’ [সহীহ মুসলিম , ১২৯৭।]

উম্মে হুসাইন রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ পালন করেছি, এবং তাকে দেখেছি জামরাতুল আকাবা নিক্ষেপ শেষে ফেরার পথে তিনি সাওয়ারীর উপর ছিলেন। তার সাথে বেলাল ও উসামা রা. ও ছিলো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কথাই বললেন। তবে আমি তাকে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের উপর যদি কোন কালো বিকলাঙ্গ কৃতদাস আমীর নিযুক্ত করা হয়, সে যদি আল্লাহর কিতাব দিয়ে তোমাদের পরিচালিত করে, তার আনুগত্য কর, অনুসরন কর।’ [সহীহ মুসলিম , ১২৯৮।]

৪. কুরবানীর দিনে উম্মতকে উপদেশ দান ও বিদায় জানানোঃ

আবু বকরা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বহনকারী উটে বসা ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি লাগাম ধরলেন। তিনি মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি জানো এটা কোন দিন?’ তারা বলল, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ এবং তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। আমরা মনে করলাম তিনি আজকের দিনের অন্য কোন নাম ঘোষণা করবেন। অতঃপর বললেন, ‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘এটা কোন মাস?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ এবং তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। আমরা মনে করলাম, তিনি এ মাসের অন্য কোন নাম দেবেন। অতঃপর বললেন, ‘এটা কি জিলহজ মাস নয়?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘এটা কোন শহর?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। আমরা মনে করলাম, তিনি এ শহরের অন্য কোন নতুন নাম বলবেন। বললেন, ‘এটা কি পবিত্র নগরী নয়?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহ রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইজ্জত-আব্রু, তোমাদের শরীর তোমাদের কাছে সম্মানিত ও হারাম। যেমন সম্মানিত এ নগরী, এ মাস, আজকের এ দিন। অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রভুর সাক্ষাত লাভ করবে। তখন তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই আমার পর তোমরা ভ্রষ্টতার দিকে যাবে না- যা তোমাদের পরস্পরকে হত্যার দিকে ধাবিত করে। জেনে রাখ! তোমরা যারা আজ উপস্থিত আছ তারা এ বাণী পৌঁছাবে অনুপস্থিতদের কাছে। কারণ বহু বর্ণনাকারী হতে শ্রবণকারী অধিক জ্ঞানী, ও সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। আমি কি পৌঁছিয়েছি?’ অতঃপর পেছনে গেলেন এবং দুটি লাবণ্যময় মেষ জবেহ করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস বলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি - ‘উপস্থিতিগণ অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছাবে’ এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হতে উম্মতের জন্য অসীয়ত। তিনটি প্রশ্নের প্রতিটির পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ নীরব থাকার উদ্দেশ্য ছিলঃ তাদের বোধশক্তিকে উপস্থিত করা, সকলের মনোযোগ পুরোপুরি আকর্ষণ করা এং সংবাদের গুরুত্ব অনুধাবন করানো। [ফাতহুল বারী, ১৫৯/১।]

ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানী দিবসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামারাতে অবস্থান করেন...এবং বলেন, ‘এটা হচ্ছে বড় হজের দিন। আরো বললেন, হে আললাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।’ এবং লোকদের বিদায় জানালেন। উপস্থিত লোকেরা বলল, ‘এটা বিদায় হজ।’ [সহীহ আল - বুখারী, ১৭৪২।]

মীনাতে আল্লাহ সকল হাজীদের কানগুলো ব্যাপক ভাবে খুলে দিলেন, যেন কুরবানী দিবসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদত্ত খুতবা সবাই শুনতে পায়। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুজিযা যে আল্লাহ তাদের কানে বরকত দিলেন এবং শ্রবণ শক্তিকে বৃদ্ধি করলেন। যাতে দূরে কাছে সবাই তার ভাষণ শুনতে পায়। এমনকি তারা অনেকে তাদের বাড়িতে বসে ও শুনতে পেয়ে ছিলেন। [আউনুল মাবুদ, ৪৩৬/৫।]

আব্দুর রহমান বিন মুয়ায আত তাইমী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা মিনায় অবস্থানকালে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন, আর আমাদের কানগুলো খুলে দেওয়া হলো। এমনকি তিনি কি বলছেন তা আমরা গৃহে বসেও শুনছিলাম। [আবু দাউদ ১৯৫৭।]

৫.আইয়্যামে তাশরীকে উম্মতের জন্যে তার অসীয়তঃ

জিলহজ মাসের বারো তারিখে আইয়্যামে তাশরীকের দ্বিতীয় দিন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন, এ দিনটিকে ইয়াওমুর রা’স- মাথা দিবস- বলা হতো। এ দিনে তারা জবেহকৃত পশুর মাথা আহার করতো বলে মক্কার লোকেরা এ নামে দিনটিকে উল্লেখ করতো। এবং এটা ছিল তাশরীক দিনগুলোর অন্তর্ভুক্ত। [আউনুল মাবুদ ৪৩২/৫।]

বাকার গোত্রের দুইজন লোক যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন, বললেন, তাশরীক দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমরা খুতবা দিতে দেখেছি, আমরা তার উষ্ট্রীর কাছে ছিলাম। এটা ছিল মিনায় প্রদত্ত খুতবার মত।

আবু নাদরা রা. হতে বর্ণিত, যে ব্যক্তি তাশরীক দিবসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুতবা শুনেছেন, তিনি আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের পিতা একজন। জেনে রাখ, অনারবের উপর আরবের কোন প্রাধান্য নেই। কালোর উপর সাদারও নেই কোন শ্রেষ্ঠত্ব। সাদার ও নেই কালোর উপর কোন প্রাধান্য। তবে শ্রেষ্ঠত্ব হবে তাকওয়ার ভিত্তিতে। আমি কি পৌঁছাতে পেরেছি তোমাদের কাছে? তারা বললো, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!’ অতঃপর বললেন, ‘এটা কোন দিন? তারা বলল, ‘এটা সম্মানিত দিন।’ তিনি আবার বললেন, ‘এটা কোন মাস?’ তারা বলল, ‘এটা পবিত্র মাস।’ আবার বললেন, ‘এটা কোন নগরী?’ তারা বলল, ‘সম্মানিত নগরী।’ তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ সম্মানিত করেছেন তোমাদের পরস্পরের রক্ত, সম্পদ, ইজ্জত আব্রু, ঠিক আজকের সম্মানিত দিন, সম্মানিত মাস ও সম্মানিত নগরীর মত। আমি কি পৌঁছাতে পেরেছি?’ তারা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি পৌঁছিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘উপস্থিতগণ অনুপস্থিতদের কাছে যেন এ বাণী পৌঁছে দেয়।’ [মাজমাউযাওয়ায়েদ ২৬৬/৩ রিজাল ছহিহ।]

এখানে বিদায় হজে পবিত্র স্থানসমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষণের সংক্ষেপ বর্ণিত হলো।

এর মধ্যে রয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. এর হাদীস- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে মানুষের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন এবং বললেন, ‘শয়তান আশাহত হয়েছে এ বিষয়ে যে, এ ভূমিতে তার উপাসনা হবে না। কিন্তু এ ছাড়া অন্য আমল যা তোমরা তুচ্ছ জ্ঞান কর, তার বিষয়ে সে উপাসনা পাওয়ার আশা করবে। অতএব! তোমরা সাবধান থেকো! আমি তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি এমন বিষয়, যা তোমরা আকড়ে ধরলে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব, তাঁর নবীর সুন্নাত।’ [আত তরগীব- আলবানী.৩৬/১]

আবু উমামাহ রা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার জাদআ উটের উপর থেকে বিদায় হজে জনতার উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদানকালে বলতে শুনেছি, ‘হে মানব সকল! তোমরা তোমাদের প্রভুর আনুগত্য কর। পাঁচ ওয়াক্ত নামায কায়েম কর। তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর। রমযানের সিয়াম পালন কর। এবং তোমাদের শাসকের আনুগত্য কর। তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [হাকেম ৪৭৩/১ মুসলিমের শর্তে।]

এ পরিচ্ছেদের সারকথা ও শিক্ষনীয় বিষয়ঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের হজের আহবানে সাড়া দিয়ে যে-ই মদীনায় উপস্থিত হয়েছেন, সে-ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের সাথেই হজ করেছেন। জাবের রা. হতে বর্ণিত হাদীস তাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, মদীনায় অসংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিল। প্রত্যেকের ইচ্ছা আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করবে। তিনি যা আমল করবেন তারা তা-ই করবে।

হাজীদের জন্য উত্তম হলো সূর্য হেলে যাওয়ার পর আরাফায় অবতরণ করা, যদি সম্ভব হয়।

আরাফায় হাজীদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করা উত্তম, এতে থাকবে মানুষের জরুরী বিষয়ের ব্যাখ্যা, তাওহীদ ও দীনের মৌলনীতির ব্যাখ্যা। তাতে সতর্ক করা হবে শিরক, বিদআত ও পাপ ও মুসলিম জাতির দিক-নির্দেশনা সম্পর্কে এবং উপদেশ থাকবে মানুষের প্রতি কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করার।

বিদায় হজে রাসূল সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি খুতবা প্রদান করেছেন। আরাফা দিবসে খুতবা, মীনায় কুরবানী দিবসের খুতবা, মীনায় জিলহজ মাসের ১২ তারিখে খুতবা। ইমাম শাফী র. এর মত হলো ইমাম অনুরূপ খুতবা দেবে। জিলহাজ মাসের সাত তারিখে [ফাতহুল মালিকিল মাবুদ ২০/২।] এবং এর মধ্যে আগামী খুতবার পূর্ব পর্যন্ত সব বিষয় ইমাম শিক্ষা দেবে।

রক্ত, ইজ্জত, সম্পদ, শরীর ইত্যাদি পবিত্র হওয়ার বিষয় দৃঢ়ভাবে গুরুত্ব প্রদান। এক মুসলিমের জান, মাল-সম্পদ, ইয্যত-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম ও সম্মানিত। সে এগুলোর কোন ক্ষতি করতে পারে না। বরং এগুলোকে সম্মান করতে হবে।

উদাহরণ ব্যবহার এবং একটি উপমার সাথে অন্য একটি উপমার তুলনা। যেমন, নবী সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- ‘এ দিনের মত সম্মানিত, এ মাসের মত হারাম, এ শহরের মত পবিত্র।

জাহেলী যুগের সকল কর্মকান্ড ও সুদ রহিত করা। এটাও জেনে রাখা যে, জাহেলী যুগের হত্যাকান্ডের কোন কেসাস নেই।

ইমাম অথবা যে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে, সে প্রথমে নিজেকে এবং নিজের পরিবার থেকে শুরু করবে। কারণ এরা তার কথা গ্রহণের উপযুক্ত। এবং নবদীক্ষিত মুসলিমের সাথে ভাল আচরণ করা।

সুদের মধ্যে মূলধনের অতিরিক্ত হলো হারাম। মূলধন মালিকেরই প্রাপ্য।

নারী অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা, এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা।

স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেয়া ফরয। সে যদি কোন অন্যায় করে এর জন্য তাকে শর্তসাপেক্ষে এবং কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত নিয়মে শাস্তি দেয়া যাবে এবং এর ফলে যেন কোন প্রতিক্রয়া সৃষ্টি না হয়।

উপদেশ হবে আল্লাহর কিতাব এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের সুন্নাতের মাধ্যমে।

‘তোমরা হজের বিধানাবলী আমার থেকে গ্রহণ কর’, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ হতে আদেশ অর্থাৎ আমার এ হজে আমি যা আনয়ন করেছি- কথা, কাজ, আচরণ সবই গ্রহণ কর।

হজের এ সকল আহকাম তোমরা শিখে নাও, সংরক্ষণ কর, আমল কর এবং মানুষকে শিক্ষা দাও। হজের আহকাম বিষয়ে এটি একটি মৌলিক হাদীস, যা নামাজের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী صلوا كما رأيتمموني أصلي (তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখ সেভাবে নামাজ পড়) এর মত।

‘সম্ভবত এরপর আমি হজ করবো না’ এর মাধ্যমে উম্মতকে বিদায় জানানোর প্রতি ইঙ্গিত। এবং তাদের জানিয়ে দেয়া যে, মৃত্যু অতি নিকটে। তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে তার কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য। আর এ কারণেই এটাকে বিদায় হজ বলা হয়।

জ্ঞানের প্রচার প্রসারের জন্য উৎসাহ প্রদান করা, এবং এ প্রচার প্রসারের জন্য খুব বড় পন্ডিত হওয়া শর্ত নয়। কারণ, হতে পারে তারপর অন্য কেহ আসবে, যে পূর্বের ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিদ্বান হবে। উত্তম হলো খতীব উঁচু স্থানে থাকবে যাতে সবাই দেখতে ও শুনতে পায় ।

প্রশ্ন করা অতঃপর নীরব থেকে আবার তার উত্তর প্রদান, বিষয়টি শ্রোতা ও ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষনের একটি সুন্দর মাধ্যম।

‘ওয়ালিউল আমর’ বা দায়িত্বশীল এর আদেশ সর্বদা মান্য করা। যতক্ষণ তিনি মানুষকে কুরআন অনুসারে পরিচালিত করেন। যদি তার থেকে কোন গুনাহ এবং নিষিদ্ধকাজ প্রকাশ পায় তাহলে তাকে উপদেশ দেয়া, আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, আল্লাহর ভয় দেখানো উচিত। তবে তা হবে হিকমত ও উত্তম পদ্ধতিতে।

আল্লাহর আনুগত্য, নামায, যাকাত, রোযার নির্দেশ দেয়া এবং এ অসীয়ত করা যে মানুষের মাঝে কোন শ্রেণি বিভক্তি নেই, নেই কোন বর্ণ বিভক্তি। কিন্তু তাকওয়ার ভিত্তিতে মান-মর্যাদার স্তর নির্ণয় করা হবে।।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রকাশিত মুজিযা - কুরবানী দিবসে তার খুতবা গৃহে অবস্থান করেও মানুষেরা শুনতে পেরেছে। আল্লাহ তাআলা সকলের কানগুলো বিশেষভাবে খুলে দিয়েছেন। যা রাসূলের রিসালাতের সত্যতার আরেকটি নিদর্শন।

ইসলামী বিদ্বানদের মতে কুরবানী হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এটা হাজী এবং হাজী ভিন্ন সকলের জন্য। এর মাধ্যমে হাদি [হাদি বলা হয় : হজের অংশ হিসাবে যে পশু জবেহ করা হয়।] আদায় হবে না। হাদি জবেহ করা স্বতন্ত্র সুন্নাত। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনায় খুতবা প্রদান করার পর যে দুটি মেষ যবেহ করেছেন [ফাতহুল বারী ৫৭৭,৫৭৪/৩ ফাতহুল মালিকিল মাবুদ।] তা ঐ সকল হাদির থেকে পৃথক ছিল, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে যবেহ করেন এবং বাকীগুলো আলী রা. কে যবেহ করতে বলেছেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন