hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী

লেখকঃ আবু আব্দুর রাহমান

২৯
সাতাশতম পরিচ্ছেদ: ওফাতপূর্ব অসীয়ত
ইবেন আববাস রা. বলেন, বৃহস্পতিবার দিন রসুলের অসুখ প্রচন্ড আকার ধারণ করলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কিছু একটা নিয়ে আসো, আমি তোমাদের জন্য একটি উপদেশনামা লিখে দেই। যার পরে তোমাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।’ সাহাবারা এ নিয়ে পরস্পর দ্বিধাদ্বন্দে লিপ্ত হয়ে গেল। অথচ রাসুলের সামনে এমন করা উচিত ছিল না। কেউ বলল, ‘এখন রসুলের উপর রোগের প্রকোপ খুব বেশি, তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আমাদের জন্য এ কিতাবই যথেষ্ট।’ ঘরে উপবিষ্ট লোকজন মতদ্বৈততায় লিপ্ত হয়ে গেল। কেউ বলল, ‘কিছু একটা সামনে দাও, তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিক, তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।’ অন্যেরা অন্য কিছু বলতে ছিল। যখন হৈ চৈ আর দ্বিরুক্তি কথাবার্তা বৃদ্ধি পেল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা আমার এখান থেকে দূরে সরে যাও।’ আরেকটি বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন, ‘আমি যে অবস্থায় আছি, সেভাবে থাকতে দাও, তোমাদের কথা শুনার চেয়ে এটাই আমার জন্য উত্তম। আমি তোমাদেরকে তিনটি উপদেশ দিচ্ছি, জাজিরাতুল আরব তথা আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বের করে দেবে। আগত মুসাফিরের দল, পথিক ও মেহমানদের মেহমানদারী এবং আমার নীতি অনুসারে তাদের সাহায্য, সহযোগিতা প্রদান করবে। তৃতীয়টি ভুলে গেছেন, অথবা তিনি বলেছেন, আমাকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ [সহীহ আল - বুখারী ৪৪৩১, ৪৪৩২ সহীহ মুসলিম : ১৬৩৭] ইবনে হাজার রহ. বলেন, সেই কঠিন মুহূর্তে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ তিনটি উপদেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা বুঝে আসে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা লিখতে চেয়েছেন, তা লেখা জরুরী ছিল না। কেননা যদি জরুরী হতো, তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে বিরত থাকতেন না। অধিকন্তু যারা এর প্রতিবন্ধক হয়েছে, তাদের উপর শাস্তি নাযিল হত। পারতপক্ষে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে হলেও বলে দিতেন। যেমন তিনি বলেছেন, মুশরিকদেরকে বের করে দিতে। তার পরেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক দিন জীবিত ছিলেন, তার থেকে অনেক হাদীস সাহাবায়ে কেরাম লিপিবদ্ধ করেছেন, হতে পারে তার মধ্যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জরুরী সে বিষয়কেও বলে দেয়া হয়েছে, যা তিনি লিখতে চেয়ে ছিলেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। [ফাতহুল বারি : ৮/১৩৪]

তৃতীয় উপদেশের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে যে, সে উপদেশ হচ্ছে আল-কুরআন। অথবা উসামা বিন যায়েদের সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করার উপদেশ। অথবা নামাজ এবং অধীনস্থদের ব্যাপারে কিংবা তার কবরকে ঈদ-উৎসবের স্থান না বানানোর উপদেশ। এ সকল উপদেশ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রমাণিত আছে। [ফাতহুল বারি : ৮/১৩৪]

আব্দুল্লাহ বিন আবি আওফা রা. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোনো অসীয়ত করে গেছেন? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে উপদেশ দিয়েছেন।’ আল্লাহর কিতাবের অসীয়তের অর্থ হল, তার অর্থ ও শব্দ সংরক্ষণ করা। এর সম্মান করা, অসম্মান না করা এবং এর অনুসরণ করা। আদেশগুলো পালন করা। নিষেধ হতে বিরত থাকা। রীতিমত এর তেলাওয়াত করা, শিক্ষা দেয়া ও শিক্ষা গ্রহণ করা ইত্যাদি। [আল ফাতহ : ৯/৬৭]

পবিত্র কুরআনের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন জায়গায় উপদেশ প্রদান করেছেন। আরাফা এবং মিনার খুতবাতে, মক্কা হতে প্রত্যাবর্তনের সময় গাদিরে খুমের নিকট। তিনি বলেছেন, ‘...আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি : একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এতে রয়েছে পথ নিদের্শনা, আলোকবর্তিকা। এটা আল্লাহর শক্ত রজ্জু। যে এটাকে আঁকড়ে ধরবে, সে সৎ পথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর যে এটাকে ছেড়ে দেবে, সে পথভ্রষ্ট হবে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধর এবং এর দ্বারা অটল-অবিচলতার সাথে পরিচালিত হও।’ তিনি কুরআন প্রসংগের পরে বলেন, ‘এবং আমার পরিবারবর্গ, তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি...’ তিনবার বলেছেন। [সহীহ মুসলিম : ২৪০৮] মৃত্যুর সময় তিনি আল্লাহর কুরআনের উপদেশ দিয়েছেন। [সহীহ আল - বুখারী ২৭৪০, মসুলিম : ১৬৩৪, ২৪০৮]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা বিন যায়েদের সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করার নিদের্শও দিয়েছেন। ইবনে হাজার রহ. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর মাত্র দু’দিন আগে, শনিবার দিন উসামা বিন যায়েদের সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। এর প্রস্ত্ততি শুরু হয়েছিল রাসুলের অসুস্থতারও আগে। সফর মাসের শেষে রোমের সাথে যুদ্ধের জন্য মুসলিম সৈনিকরা প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে বলেন, ‘তোমার পিতার শাহাদাতের ময়দানের পানে ধাবিত হও। সে দিকে ঘোড়া চালাও। আমি তোমাকে এ সেনাদলের দায়িত্ব প্রদান করলাম...’ তৃতীয় দিন তার অসুখের সূচনা হয়। তিনি নিজ হাতে উসামা বিন যায়েদের পতাকা তৈরী করে দিলেন, উসামা তার হাত থেকে পতাকা তুলে নেন। উসামার সাথে মুহাজির, আনসারদের বড় বড় সাহাবী সঙ্গী হলেন। অতঃপর রাসুলের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেল। তিনি বললেন, ‘উসামার সৈন্যদল পাঠিয়ে দাও।’ আবু বকর রা. খলীফা হয়ে উসামার সৈন্যদল প্রেরণ করেন। বিশ দিন পর্যন্ত সফর করলেন, তার পিতার যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছানোর জন্য। তিনি খুব পারঙ্গমতার সহিত যুদ্ধ করলেন। অবশেষে অনেক গণীমত নিয়ে বিজয় বেশে ফিরে আসেন। [ফাতহুল বারি : ৮/১৫২, সিরাতে ইবনে হিশাম : ৪/৩২৮]

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্যদল পাঠিয়েছেন, যার দায়িত্ব দিয়েছেন উসামা বিন যায়েদকে। এতে কেউ কেউ তার নেতৃত্বে আপত্তি জানাতে ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এখন তোমরা তার নেতৃত্বে আপত্তি জানাচ্ছ, এক সময় তার পিতার নেতৃত্বেও তোমরা আপত্তি জানিয়েছিলে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, সে-ই নেতৃত্বের উপযুক্ত। তার পিতা যেমন আমার কাছে সবার চেয়ে বেশি প্রিয় ছিল, সেও আমার নিকট সবার চেয়ে বেশি প্রিয়।’ [সহীহ আল - বুখারী ৩৭৩০, ৪২৫০, ৪৪৬৮, ৪৪৬৯, ৬৬২৭, ৭১৮৭ সহীহ মুসলিম : ২৪২৬] রাসুলের ইন্তেকালের সময় উসামার বয়স ছিল আঠারো বছর। [শরহে নববি : সহীহ মুসলিম : ১৫/২০৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ এবং অধীনস্থদের ব্যাপারেও উপদেশ বাণী প্রদান করেছেন। আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃত্যুকালীন সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিকাংশ উপদেশ-ই ছিল এরকম যে, ‘নামাজ! নামাজ! আর তোমাদের যারা অধীনস্থ! বলতে বলতে তার বুকের ঢেকুর আরম্ভ হয়ে যেত। তবুও মুখে উচ্চারণ করতেই থাকতেন। [আহমদ : ৩/১১৭ সহীহ, ইবনে মাজাহ : ২/৯০০, সহীহ ইবনে মাজাহ : ২/১০৯]

আলী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বশেষ বাণী ছিল : ‘নামাজ! নামাজ! আর তোমাদের অধীনস্থ যারা! [ইবনে মাজাহ : ২/৯০১, হাদীস নং ১৬২৫ আহমদ : ৫৮৫, ইবনে মাজাহ : ২/১০৯]

এ পরিচ্ছেদের সারকথা ও শিক্ষনীয় বিষয়ঃ

জাযিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপ হতে মুশরিকদের বের করা অবশ্য কর্তব্য। মৃত্যুকালীন সময়ে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি নিদের্শ দিয়েছেন। যা উমার রা. স্বীয় খেলাফতের শুরুতেই বাস্তবায়ন করেন। মুরতাদদের সাথে বোঝা-পড়া আর যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে করতেই আবু বকর রা. এর খেলাফত যুগ শেষ হয়ে যায়। তাই তার পক্ষে এ হুকুম পালন করা সম্ভব হয়নি।

আগত মেহমান ও পথিকদের মেহমানদারী, সম্মান এবং উপযুক্ত হাদিয়া ইত্যাদি প্রদান করা। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করতেন। আর এটা তার নিদের্শও বটে।

কুরআনের শব্দ ও অর্থের প্রতি যত্নশীল হওয়া, একে সম্মান করা, হেফাজত করা, এর মধ্যে যা কিছু আছে তার অনুসরণ করা, এর আদেশ-নিষেধগুলো যথাযথ পালন করা এবং রীতিমত এর তেলাওয়াত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন জায়গায় এর জন্য উপদেশ দিয়েছেন। এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

নামাজের গুরুত্ব; কারণ কালিমায়ে শাহাদাতের পরই এর স্থান। মুমুর্ষ মুহূর্তেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য অসীয়ত করেছেন।

অধীনস্থ কর্মী ও দাস-দাসীদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকা। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু মুহূর্তেও এর জন্য তাগিদ দিয়েছেন।

উসামা বিন যায়েদের ফজিলত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেনা প্রধান বানিয়েছেন। যখন অনেক শীর্ষস্থানীয় মুহাজির ও আনসার সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন। অধিকন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ হুকুম বাস্তবায়ন করার নিদের্শও প্রদান করেছেন।

আবু বকর রা এর ফজিলত। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপদেশ পালন করেছেন, উসামা বিন যায়েদের সৈন্য বাহিনীর লক্ষ্য পরিবর্তন করেননি। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

‘‘যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদেশের বিরোধিতা করে, তাদের উচিত ফেতনা অথবা মর্মন্তুদ শাস্তির আক্রমন হতে সতর্ক থাকে।’’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন