hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী

লেখকঃ আবু আব্দুর রাহমান

২০
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ: মুজিযা-অলৌকিকতা
জ্ঞান ও যুক্তির দাবী হল, ইহুদী খৃষ্টান এবং অন্যান্য কাফেরদের ইসলামে দাওয়াত কালে নিজ নবুওয়াতের দলীল এবং অকাট্য প্রমাণাদি তাদের কাছে বর্ণনা করা। যাতে তার রিসালত যে সকল মানুষের জন্য, এ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।

এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে তার নবুওয়াত এবং রিসালাতের সামগ্রিকতার দলীল- প্রমাণ ও নিদর্শন অনেক। যা গনণা করে শেষ করা যাবে না।

তবে সকল প্রকার প্রমাণাদি ও নিদর্শন দুটি প্রকারে সীমাবদ্ধ করা যায়ঃ

(ক) সে সব মুজিযা বা অলৌকিকত্ব অতীতে ঘটেছে এবং বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যেমন, মুসা ও ঈসা আ. এর মুজিযা।

(খ) সে সকল মুজিযা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যেমন আল-কুরআন, ইলম, ঈমান। এগুলো তার নবুওয়তের নিদর্শন। এমনিভাবে তার আনীত শরীয়ত, নিদর্শনাবলী, যা আল্লাহ কোন কোন সময় তার উম্মতের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। দলীল- প্রমাণের মাধ্যমে তার ধর্মের আত্মপ্রকাশ করা। এবং তার পূর্বেকার কিতাবে তার গুণাবলি উল্লেখ থাকা ইত্যাদি। [ الجواب الصحيح لمن بدل دين المسيح ৬৭-৭১/৪] এ সকল মুজিযা অনেক ব্যাপক-বিস্তৃত যা গণনা করা সম্ভব নয়। তবে তার নবুওয়াত প্রমাণ করা ও তার রিসালাতের সামগ্রিকতার কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করব।

প্রথম বিষয়ঃ আল-কুরআনের মুজিযাসমূহ

দ্বিতীয় বিষয়ঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রকাশিত দৃশ্যমান মুজিযাসমূহ

প্রথম বিষয়ঃ কুরআনের মুজিযা - যা দিয়ে চ্যালেঞ্জের সময় বিরোধী পক্ষ পরাজিত হয়। এ হল এক অলৌকিক বস্ত্ত যা মানুষ ব্যক্তিগত এবং দলীয় উভয়ভাবে কুরআনের সাদৃশ্য গ্রন্থ বা সূরা রচনায় অক্ষম হয়েছে। এ মুজিযা আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির হাতেই ##দিয়ে থাকেন যাকে আল্লাহ নবুওয়ত ও রিসালাতের জন্য নির্বাচন করেন। তার সত্যতা এবং তার রিসালাতের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের উপর অবর্তীণ কুরআন- আল্লাহর কালাম বা বাণী। এটা অনেক বড় মুজিযা। যা সকল কালে, সকল যুগে অব্যাহত থাকবে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য মুজিযা হয়ে থাকবে কেয়ামত পর্যন্ত। [ الداعي إلي الإسلام ]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সকল নবী কে সেই পরিমাণ নিদর্শন দেয়া হয়েছে যা তার উপর ঈমান আনায়নকারীর জন্য পর্যাপ্ত হয়। আমি প্রাপ্ত হয়েছি অহী যা আল্লাহ আমার কাছে প্রেরণ করেছেন। আমি আশাবাদী, অনুসারীর দিক দিয়ে কেয়ামতে আমি তাদের সকলে চেয়ে শ্রেষ্ঠ হব। [সহীহ আল - বুখারী ৪৯৮১, সহীহ মুসলিম ১৫২]

এ কথা দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের মুজিযা শুধু কুরআনে সীমাবদ্ধ করা উদ্দেশ্য নয়। এটাও বলা উদ্দেশ্য নয় যে, তিনি কোন দৃশ্যমান মুজিযা নিয়ে আসেননি। বরং উদ্দেশ্য হল কুরআন হচ্ছে বড় মুজিযা যা বিশেষভাবে আল্লাহ তাআলা এ রাসূলের জন্যই নির্ধারণ করেছেন। কারণ প্রত্যেক নবীকে নির্দিষ্ট মুজিযা প্রদান করা হয়েছে যা দিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন তার জাতিকে। প্রত্যেক নবীর মুজিযা তার জাতির অবস্থার সাথে সঙ্গতি পূর্ণ হয়ে থাকে। তাইতো দেখা যায় ফেরাআউনের সময়ে যাদুর ব্যাপক প্রচলন থাকায় মুসা আলাইহিস সালাম তার নিকট লাঠি নিয়ে আগমন করেন। লাঠি দিয়ে এমন কাজই করলেন যা যাদুকররা করত। এর মাধ্যমে তিনি যাদুকরদের পরাজিত করলেন। কিন্তু মুজিযার এ পদ্ধতি অন্য নবীদের বেলায় ব্যবহৃত হয়নি।

ঈসা আ. এর যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির যুগ ছিল। তখন ঈসা আ. আগমন করলেন এমন মুজিযা নিয়ে আসলেন, যা সকল ডাক্তার ও চিকিৎসককে অক্ষম বানিয়ে দিল। যেমন মৃতকে জীবিত করা, শ্বেতী রোগ ভাল করা, কুষ্ঠ রোগ নিরাময় করা। তখনকার চিকিৎসা-বিজ্ঞান ও চিকিৎসকরা ঈসা আ. এর কাছে পরাজিত হল।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ ছিল ভাষা, সাহিত্য কবিতা, ভাষা অলংকার ও বাগ্মীতার শ্রেষ্ঠ যুগ।

এর বিপরীতে আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামকে মুজিযা হিসাবে দিলেন আল-কুরআন, যার সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন,

لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ﴿42﴾ سورة فصلت

‘‘এতে কোন মিথ্যা অনুপ্রবেশ করবেনা- অগ্র হতেও নয়, পশ্চাত হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান, প্রশংসনীয় আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।’’ [সূরা হামীম সাজদা ৪২]

তবে আল-কুরআনের মুজিযা অন্য সকল মুজিযা থেকে ভিন্ন। কারণ এটি এক স্থায়ী দলীল ও চ্যালেঞ্জ যা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকবে। কখনো এটাকে পরাজিত করা যাবে না। কখনো এর বিকল্প রচনা করা সম্ভব হবে না। অন্যান্য নবী রাসূলদের মুজিযা ও চ্যালেঞ্জ তাদের জীবনের সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে। তাদের নবুওয়াত কালের ঘটনাবলী পরবর্তীতে শুধু শিক্ষনীয় ইতিহাস। আর আল-কুরআন এটা এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত চলমান প্রমাণ ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিরাজ করছে। মনে হয় যেন শ্রোতা এ প্রমাণটি এ মাত্র আল্লাহর রাসূলের মূখ থেকে শুনেছেন। এ পরিপূর্ণ প্রমাণ অব্যাহত থাকার কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আমি আশাবাদী কিয়ামত দিবসে অন্য নবীদের চেয়ে আমার অনুসারী বেশি হবে।

কুরআন সুস্পষ্ট নিদর্শন ও মুজিযা হল সকল দিক থেকে: শব্দের দিক থেকে, ছন্দের দিক থেকে, শব্দার্থ প্রকাশে, অলঙ্কারের দিক থেকে, অর্থ তাৎপর্য নির্দেশের দিক থেকে, আল্লাহর নামসমূহ, গুণাবলি এবং তার ফেরেশ্তা সম্পর্কীয় সংবাদ এবং লক্ষ্য উদ্দেশের দিক থেকে। এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিক রয়েছে যা জ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।

উদাহরণ স্বরূপ এখানে মাত্র চার প্রকার উল্লেখ করছি-

বিস্ময়কর ভাষা অলঙ্কার

কুরআনে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে অলৌকিক ভাষা অলঙ্কার, শব্দ গাঁথুনী যা চ্যালেঞ্জ করল জিন ইনসানকে এরূপ একটি কুরআন পেশ করার জন্য। তারা অক্ষম হলো। আল্লাহ বলেনঃ

قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا - سورة الإسراء

‘‘বল, যদি মানুষ ও জিন সমবেত হয় এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য, যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না।’’ [সূরা আল-ইসরা ৮৮]

أَمْ يَقُولُونَ تَقَوَّلَهُ بَلْ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿33﴾ فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ ﴿34﴾ سورة الطور

‘‘তারা কি বলে এ কুরআন তার নিজের বানানো? বরং তারা বিশ্বাস করতে চায়না। তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে এর সদৃশ বানানো কিছু উপস্থিত করুক।’’ [সূরা আল-ফাতির ৩৩-৩৪]

এ চ্যালেঞ্জের তারা কেটে পড়ল। কেউই সামনে আসেনি। অতঃপর তাদের অবকাশ দেয়া হলো এবং অনুরূপ দশটি সূরার চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ . سورة هود

‘‘তবে কি তারা বলে যে, ওটা সে নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও, তাহলে তোমরাও ওর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [সূরা হুদ ১৩]

অতঃপর তারা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অপারগ হলো, অক্ষম হয়ে গেল। তাদের আবার সুযোগ দেয়া হলোঃ

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿38﴾ سورة يونس

‘‘তারা কি এরূপ বলে যে, এটা তার স্বরচিত? তুমি বলে দাও, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরাই আনয়ন কর এবং আললাহকে বাদ দিয়ে যাকে নিতে পার ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’ [সূরা ইউনূস ৩৮]

হিজরতের পর মদীনায় আবার এ চ্যালেঞ্জের পূনরাবৃত্তি করা হলোঃ

وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ ﴿23﴾ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿24﴾ سورة البقرة

‘‘এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবর্তীণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তৎ সদৃশ একটি সূরা তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবে না, তা হলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন মানুষ ও প্রস্তরপুঞ্জ যা অবিশ্বাসীদের জন্যে প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে।’’ [সূরা আল-বাকারা ২৩-২৪]

আল্লাহর বাণী ‘ فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবেনা, অর্থাৎ যদি অতীতে না পেরে থাক ভবিষ্যতেও পারবেনা’ দ্বারা চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হলো, তারা এর মত একটি সূরা ভবিষ্যতেও পেশ করতে পারবে না, যেমনটি একটু পূর্বে বলে দেয়া হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা অবস্থানকালে তাকে বলার জন্য আল্লাহ তাআলা আদেশ করলেনঃ

قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآَنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا ﴿88﴾ سورة الإسراء

‘‘বল, যদি মানুষ ও জিন সমবেত হয় এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য, যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে, তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবে না।’’ [সূরা আল-ইসরা ৮৮]

আল্লাহর আদেশের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের জন্য এ চ্যালেঞ্জ ব্যাপক করা হয়। সকল মাখলুকের মাঝে এ খবর দেয়া যে তাদের পক্ষে এ রূপ একটি কুরআন পেশ করা অসম্ভব, যদিও তারা সবাই একত্র হয়ে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে। এ চ্যালেঞ্জ সকল মাখলুকের জন্য। প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি চ্যালেঞ্জ শুনেছে যে কুরআন শ্রবণ করেছে এবং জেনেছে বিশেষ ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ সকলেই। এবং এটা জেনেছে এরপরও কেউ এর মত একটি গ্রন্থ পেশ করতে পারেনি। এমনকি তারা এর মত একটি সূরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের প্রেরণকাল হতে আজ পর্যন্ত পেশ করতে পারেনি। এভাবেই চ্যালেঞ্জ বহাল আছে এবং থাকবে।

আল-কুরআন অন্তর্ভুক্ত করেছে হাজারো মুজিযা। কারণ তার রয়েছে একশত চৌদ্দটি সূরা । আর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার প্রয়াস চালানো হলো একটি সূরায়। তা ও আবার কুরআনের সবচে ক্ষুদ্র সূরা আল কাউসার- মাত্র তিনটি ছোট আয়াত। সর্বসম্মতভাবে কুরআনে ছয় হাজার দুইশত আয়াতের চেয়ে কিছু বেশি আয়াত আছে। আর আল কাউসারের পরিমাণ হলো কয়েকটি আয়াত মাত্র। অথবা বলা যায় দীর্ঘ একটি আয়াত যার উপর একটি সূরার নাম প্রয়োগ হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো চ্যালেঞ্জ ও অলৌকিকতা ও বিরোধী পক্ষের পরাজয়।

যার আত্মা আছে অথবা মু’মিন অবস্থায় মনোযোগ সহকারে কুরআন শুনলে তার আর কোন প্রমাণের প্রয়োজন নেই।

গায়েব সম্পর্কীয় সংবাদ

কুরআনের অলৌকিকত্ব হলো তাতে অনেকগুলো গায়েবের সংবাদকে শামিল কারেছে। যা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরও জানা ছিল না। এবং তার মত অন্য কোন মানুষের জানার কোন পথও ছিল না। এটা প্রমাণ করে কুরআন আল্লাহর কালাম এতে কোন প্রকার গোপনীয়তা নেই।

وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ﴿৫৯﴾ سورة الأنعام

‘‘গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে; তিনি ছাড়া আর কেউই তা জ্ঞাত নয়। স্থল ও জলভাগের সব কিছুই তিনি অবগত রয়েছেন। তার অবগতি ব্যতীত বৃক্ষ হতে একটি পাতাও ঝরে না এবং ভূ- পৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না। এমনভাবে কোন সরস ও নিরস বস্ত্তও পতিত হয় না; সমস্ত বস্ত্তই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।’’ [সূরা আল-আন আম ৫৯।]

গায়েব সম্পর্কীয় সংবাদ বিভিন্ন প্রকারঃ

প্রথম প্রকারঃ অতীতের গায়েব, এটা প্রকাশ করেছে বিস্ময়কর ঘটনাবলী যা মক্কার কুরাইশ সমাজ জানত না। এবং যাবতীয় সংবাদ যা আল্লাহ অতীত কাল সম্পর্কে জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় প্রকারঃ বর্তমানের অজানা সংবাদ যা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে জানিয়েছেন। যেমন মুনাফিকদের গোপন সংবাদ। কতিপয় মুসলমান থেকে ভূল সংঘটিত হওয়া এছাড়া আরো অন্যান্য সংবাদ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানত না, তিনি তার রাসূলকে তা অবগত করিয়েছেন।

তৃতীয় প্রকারঃ ভবিষ্যত গায়েব। যা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে জানিয়েছেন এবং পরে তা ঘটেছে যা সংবাদ দিয়েছেন। এসব বিষয় নির্দেশ করে, কুরআন আল্লাহর কালাম এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

৩. ধর্মীয় অলৌকিকত্ব

আল কুরআনুল কারীম পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে সকল যুগের, সব স্থানের মানুষের প্রয়োজনীয় সমূহ নিদের্শনা বিদ্যমান। কারণ, এ কুরআন যিনি অবতীর্ণ করেছেন, তিনি সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। তিনি মানব জাতি সৃষ্টি করেছেন। তার কল্যাণ, অকল্যাণ, উপকার, অপকার তিনি-ই সব চেয়ে বেশি ভাল জানেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন, সে সিদ্ধান্ত হিকমত ও প্রজ্ঞার শীর্ষ স্থানের মর্যাদা পায়। এরশাদ হচ্ছেঃ

أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ

‘‘জেনে রাখ! যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জনেন। তিনি হচ্ছেন বিজ্ঞ দয়ালু , সর্ব জ্ঞানের অধিকারী।’’ [সুরা আল মুলক : ১৪]

আমরা বিভিন্ন সংস্থার অবস্থা ও মানব রচিত আইনের প্রতি একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই দেখব যে, পরিবেশ, স্থান ও কালের পরিবর্তনের সামনে প্রচলিত আইনের অসহায়ত্ব আর নিঃশর্ত আত্মসমর্থন, কত নির্মম, নির্লজ্জ! যার প্রেক্ষিতে বার বার প্রয়োজন হয় সংস্করণ, সংযোজন ও বিয়োজন ইত্যাদির। আজকে যা প্রনয়ণ করছে, আগামী কাল তা বাতিল করছে। কারণ, ত্রুটি, বিচ্যুতি ও অজ্ঞতা হল মনুষ্য প্রকৃতি। তাই এক সাথে কিংবা সম্মিলিতভাবে মানুষের পক্ষে সর্বকাল ও সর্বযুগের উপযোগী করে আইন ও বিধান প্রনয়ণ করা সম্ভব নয়।

মানব জাতিকে নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের চরিত্র সংশোধনের সামনে সংস্থা ও সংগঠনের এটাই বড় ব্যর্থতা। এর বিপরীতে আল-কুরআন সকল ত্রুটি হতে মুক্ত ও পবিত্র, মানুষের স্বার্থ ও কল্যাণের জিম্মাদার। ইহকাল ও পরকালের পাথেয়। যদি মানুষ এর অনুসরণ করে এবং এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا ﴿الإسراء :9﴾

‘‘এ কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল। এবং যে সকল মু’মিন সৎকর্ম করে, তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করে যে, তাদের জন্য রয়েছে বড় প্রতিদান।’’ [সূরা আল-ইসরা : ৯] মোট কথা : আল্লাহর কিতাব যে ধর্ম ও শরীয়ত নিয়ে এসেছে, তার মধ্যে তিনটি মানবস্বার্থ প্রধান্য দেয়া হয়েছে :

প্রথম মানবস্বার্থ : ছয়টি বস্ত্তর উপর থেকে বিকৃতি, হুমকি ও শংকা দূরভীত করা, তা হল : ধর্ম, জীবন, বিবেক, মনুষ্য বংশ, সম্মান ও সম্পদ হেফাজত করা।

দ্বিতীয় মানবস্বার্থ : মানুষের প্রয়োজনসমূহ অক্ষত রাখা ও সামনে পেশ করা, প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের উপকারী বস্ত্তগুলো উপার্জনের জন্য কুরআন বিরাট এক ময়দান উম্মুক্ত করে রেখেছে; সাথে সাথে ক্ষতিকর প্রতিটি পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।

তৃতীয় মানবস্বার্থ : উত্তম চরিত্র ও উত্তম স্বভাব অর্জন করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ।

কুরআনুল কারীম আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের মানবিক সকল সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে, যা মানুষের ক্ষমতা ও সাধ্যের বাইরে ছিল। এমন কোন দিক নেই, যেখানে সে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। মরণের আগে ও পরে মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাপারেই সে ইনসাফপূর্ণ ও ন্যায় সঙ্গত বিধান রচনা করে দিয়েছে।

৪. আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপারে অসাধারণত্ব

পবিত্র কুরআনের আরেকটি অলৌকিকত্ব হচ্ছে, অনাগত বিষয় সম্পর্কে সংবাদ প্রদান। যার সত্যতা বর্তমান বিজ্ঞান বের করতে সক্ষম হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

سَنُرِيهِمْ آَيَاتِنَا فِي الْآَفَاقِ وَفِي أَنْفُسِهِمْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ ﴿فصلت :53﴾

‘‘আমি সত্বরই তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ চতুর্দিকে দেখিয়ে দেব এবং তাদের নিজেদের ভিতরও। যাতে তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনিই হচ্ছেন সত্য। তোমার রবের জন্য এতটুকু কি যথেষ্ট নয় যে, তিনি সব জিনিসের উপর দৃশ্যমান ও সাক্ষ্য।’’ [সুরা ফুসসিলাত : ৫৩]

আল্লাহর এ ওয়াদা শেষ যুগে এসে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। মানুষ সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দিগন্তে দিগন্তে সে সকল জিনিস অবলোকন করছে। যেমন, উড়োজাহাজ, ডুবু জাহাজ ইত্যাদির মাধ্যমে। মানুষ এসব জিনিসের সবেমাত্র মালিক হয়েছে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে এর সংবাদ দিয়েছেন। যা আল-কুরআনের সত্যতা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্যতার প্রমাণ।

আধুনিক বিজ্ঞানের এ অলৌকিকত্ব সব জায়গাতেই বিকশিত হয়েছে : আসমানে-যমীনে, সমুদ্রে-মরু ভূমিতে, মানুষের মধ্যে, জীব জন্তুর মধ্যে, বৃক্ষ-তরুলতা ও কীট পতঙ্গের ভিতর সর্বত্রই। যার উদাহরণ এখানে পেশ করা সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় বিষয়ঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রকাশিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মুজিযাসমূহ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অস্বাভাবিক অনেক ঘটনা রয়েছে, যে গুলোর গণনা সম্ভব নয়। এখানে আমরা নমুনার জন্য নয় প্রকার অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ করব :

প্রথম প্রকার : আসমানী মুজেজা বা অলৌকিক ঘটনা, যেমনঃ

১. চন্দ্র দ্বি খন্ডিত হওয়া : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্যবাদীতা প্রমাণের এটি অনন্য ঘটনা। মক্কার কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুরোধ করল তার নবী হওয়ার একটি প্রমাণ দেখানোর জন্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চন্দ্র দ্বি খন্ডিত করে দেখালেন। তারা স্পষ্টভাবে হেরা পর্বতকে চন্দ্রের দু টুকরার মাঝখানে দেখেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ ﴿1﴾ وَإِنْ يَرَوْا آَيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُسْتَمِرٌّ ﴿2﴾ وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُسْتَقِرٌّ ﴿3﴾

‘‘কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চন্দ্র দু টুকরা হয়ে গেছে। তারা যখন-ই কোনো আয়াত দেখে, তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে এবং বলে এটা হচ্ছে প্রচলিত যাদু। তারা মিথ্যারোপ করেছে এবং তারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। প্রতিটি জিনিস-ই যথা সময়ের জন্য স্থিরকৃত।’’ [সুরা আল কামার : ১-২]

২. ইসরা ও মিরাজ : এ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উর্ধ্ব জগত তথা আসমনের উপরে গমন। এর বিবরণ কুরআনে বর্ণিত আছে এবং হাদীসের দ্বারাও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿1﴾

‘‘মহান সে সত্বা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মসজিদুল হারাম থেকে আল মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি। যাতে আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ [সূরা আল ইসরা : ১]

এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক বড় ঘটনা। অল্প সময়ের মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত তার ইসরা বা রাত্রিকালিন ভ্রমন সম্পন্ন হয় এবং সেখান থেকে তাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর সেখানে এমন জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে গিয়ে ভাগ্যলীপির আওয়াজ শুনেছেন, জান্নাত দেখেছেন। এবং এখানেই নামাজ ফরজ হয়। সকাল হওয়ার আগে আগেই মক্কায় ফিরে আসেন। এ খবর শুনে কাফেররা এটাকে মিথ্যা বলে অভিহিত করল এবং তার কাছে এর প্রমাণ চাইল। যেমন তারা রাসূলের কাছে বায়তুল মুকাদ্দাসের আকৃতি ও বিবরণ জানতে চাইল। কারণ, তারা জানতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেননি। আল্লাহ তার সামনে বায়তুল মুকাদ্দাস পেশ করে দিলেন আর তারা যা যা প্রশ্ন করছিল, তিনি তার সঠিক উত্তর দিয়ে দিলেন। আরো অনেক নিদর্শন তিনি দেখেছেন উর্ধ্ব জগতে।

দ্বিতীয় প্রকার : শুন্য জগতের মুজেজা বা অলৌকিক ঘটনা :

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেঘমালার আনুগত্য করণঃ আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মেঘমালার আগমন, প্রত্যাগমন এবং বৃষ্টি বর্ষণ সব কিছুই করেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুআর বরকতে হয়ছিল।

২. বাতাসের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করা। আল্লাহ তাআলা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا

‘‘স্বরণ কর, যখন শত্রু বাহিনী তোমাদের নিকট চলে এসে ছিল, আমি তাদের উপর প্রেরণ করি সৈন্য বাহিনী এবং বাতাস যা তোমরা দেখনি।’’ [সূরা আল-আহযাব : ৯] আল্লাহ তাআলা আহযাবের যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর উপর এ প্রবল বাতাস প্রেরণ করে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমাকে পূর্ব দিগন্ত থেকে আগত বাতাস দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আর আদ সম্প্রদায়কে পশ্চিমা বাতাস দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।’ [সহীহ মুসলিম : ৯০০]

তৃতীয় প্রকার : জীব-জন্তুর ভিতর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য করণঃ মানুষ, জিন এবং চতুষ্পদ জন্তু। এ অধ্যায়টি খুবই দীর্ঘ। কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হল :

(ক) মানুষের ভেতর তার ক্ষমতা প্রয়োগ :

আলী রা. তার চোখে ব্যথা অনুভব করতে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চোখের উপর থু থু দেন, ফলে তার চোখ ভাল হয়ে যায়। তার মনে হচ্ছিল, তার কোনো ব্যথা ছিল না। [সহীহ আল - বুখারী ৩০০৯, সহীহ মুসলিম :২৪০৬]

আব্দুল্লাহ ইবেন আতীকের পা ভেঙ্গে গিয়ে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পা মালিশ করে দিলেন। ফলে তার পা ভাল হয়ে গেল। যেমন ইতিপূর্বে সেখানো কোনো ব্যাথা ছিল না। [সহীহ আল - বুখারী ৪০৩৯]

সালামাতা ইবনুল আকওয়া খায়বারের যুদ্ধে পায়ে ব্যথা পেয়ে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে দম করে দেন। ফলে পরে কখনো তাতে ব্যথা অনুভব হয়নি। [সহীহ আল - বুখারী ৪২০৬]

(খ) জিন এবং শয়তানের উপর তার কর্তৃত্ব

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদেরকে মানুষদের মধ্য হতে বের করে দিতেন। শুধু এ বাক্যের মাধ্যমে যে, ‘ও আল্লাহর দুশমন বের হয়ে যাও।’ [আহমদ : ৪/১৭০-১৭২]

উসমান ইবনে আবিল আসের সীনা থেকে তিনি শয়তান তাড়িয়ে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দিয়ে উসমানের সীনায় তিন বার আঘাত করেন এবং তার মুখে থু থু দেন। অতঃপর বলেন, ‘আল্লাহর দুশমন বের হয়ে যাও।’ এরকম তিন বার করেছেন। তার পর থেকে আর শয়তান কখনো উসমানের কাছে আসেনি। [ইবনে মাজাহ : ৩৫৪৮]

(গ) জীব জন্তুর উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্তৃত্ব

এ রকম ঘটনা অনেক বার হয়েছে। একবার উট এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সেজদা করেছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তু আর গাছ-পালা আপনাকে সেজদা করে, তার চেয়ে আমরাই আপনাকে সেজদা করার বেশি হকদার।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের এবাদত কর এবং তোমাদের ভাইয়ের সম্মান কর। যদি আমি কাউকে সেজদা করার নিদের্শ দিতাম তবে অবশ্যই নারীদের বলতাম, স্বামীদের সেজদা করার জন্য...’ [আহমদ : ৪/১৭০-১৭২]

চতুর্থ প্রকার : গাছ, ফল এবং লাকড়ির উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্তৃত্ব

(ক) গাছের উপর তার প্রভাব :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর অবস্থায় গ্রামের একজন লোক তার কাছে আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। সে ব্যক্তি বলল, আপনার কথার প্রমাণ কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সালামা নামক এ বৃক্ষটি।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছটিকে কাছে ডাকলেন, গাছটি ছিল ময়দানের প্রান্তে। গাছটি মাটি চিরে চিরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এসে উপস্থিত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিন বার সাক্ষ্য দিতে বললেন। সে তিন বার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মত সাক্ষ্য দিল। অতঃপর সে তার জায়গায় চলে গেল। [সুনান আদ-দারামী : ১৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার ইচ্ছা করলেন। কিন্তু পর্দা করার কিছু পেলেন না। একটি গাছের ডাল ধরে বললেন, ‘আল্লাহর হুকুমে তুমি আমার অনুসরণ কর।’ সে লাগাম যুক্ত উটের ন্যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করল। অতঃপর আরেকটি গাছের নিকট এসে তদ্রুপ বললেন। সে গাছও তা-ই করল। অতঃপর উভয় গাছকে মিলে যাওয়ার নিদের্শ দিলেন। উভয় গাছ মিলে গেল। প্রয়োজন সেরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় গাছকে স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেতে বললেন। উভয় গাছ স্ব স্ব স্থানে ফিরে গেল। [সহীহ মুসলিম : ৩০১২]

(খ) ফলের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রভাব

গ্রামের এক ব্যক্তি এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি নবী এটা কিভাবে বিশ্বাস করব?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি এ খেজুর গাছ হতে খেজুর ডেকে নিয়ে আসি, তবে কি তুমি বিশ্বাস করবে- আমি আল্লাহর রাসূল?’ অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আহবান করলেন। গাছ থেকে খেজুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চলে আসল। অতঃপর তাকে পূর্বের জায়গায় চলে যেতে বললেন, ‘ফিরে যাও।’ বে পূর্বের জায়গায় চলে গেল। ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করল। [তিরমিজি : ৩৬২৮, আহমদ : ১/১২৩]

(গ) কাঠের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রভাব :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় জুমার দিন একটি খেজুর গাছের সাথে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার নিমার্ণ করা হল এবং তাতে উঠে তিনি খুতবা দিতে আরম্ভ করলেন। গাছটি বাচ্চার মত কাঁদতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে গরুর মত ঢেকুর তুলতে লাগল গাছটি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলেন, তখনও সে কাঁদতে ছিল। অতঃপর তার উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, অবশেষে সে চুপ করল। [সহীহ আল- বুখারী ৩৫৮৪ আহমদ : ২/১০৯]

পঞ্চম প্রকার : পাহাড় এবং পাথর কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য স্বীকার

(ক) পাহাড়ের আনুগত্য স্বীকার :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ পাড়ারের উপর উঠলেন। তার সাথে ছিল আবু বকর, উমার এবং উসমান রা.। পাহাড়টি কাঁপতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা দ্বারা আঘাত করে বললেন, ‘স্থির হও উহুদ।’ তোমার উপর আছে একজন নবী, একজন সিদ্দীক এবং দু’জন শহীদ।’’ [সহীহ আল- বুখারী ৩৬৭৫]

(খ) পাথরের আনুগত্য স্বীকার :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি এখনো সে পাথরটি চিনি, যে পাথরটি আমাকে নবুওয়ত প্রাপ্তির আগেও সালাম করত।’ [সহীহ মুসলিম : ২২৭৭]

(গ) যমীনের উপর তার প্রভাব :

যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের ময়দানে ছিলেন এবং যুদ্ধ প্রচন্ড আকার ধারণ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খচ্চর থেকে নেমে এক মুষ্টি মাটি হাতে নিলেন এবং শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘চেহারাগুলো মলিন করে দাও।’ আল্লাহ শত্রু দলের এমন কোনো মানুষ বাকি রাখেননি, যার চোখে সে মাটি যায়নি। অতঃপর আল্লাহ তাদের পরাস্ত করেন এবং মুসলমানগণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিজেদের মধ্যে বণ্টন করেন। [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৭]

ষষ্ঠ প্রকার : পানির নিঃসরণ এবং খানা, পানীয় ও ফলফলাদিতে বরকত -

(ক) পানির উৎসরণ এবং পানীয় বৃদ্ধি পাওয়া :

এ ধরনের অসাধারণ ঘটনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে অনেক বার ঘটেছে। তন্মধ্যে :

হুদাইবিয়াতে সকলে পিপাসার্ত হয়ে গিয়ে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত একটি পাত্রের ভিতর রাখলেন, সাথে সাথে তার আঙ্গুল থেকে ঝর্ণার ন্যায় পানি বের হতে লাগল। তারা সকলে সেখান থেকে পান করল, অজু করল। জাবেরকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তোমরা কত জন ছিলে?’ তিনি বললেন, ‘আমরা যদি এক লাখও হতাম, তাহলেও যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম পনের শত মানুষের মত।’ [সহীহ আল - বুখারী ৩৫৭৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকে এসে দেখেন এখানকার কুপগুলো খুব ছোট ছোট। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এর থেকে অল্প অল্প পানি জমা করা হল। তিনি তাতে হাত এবং চেহারা ধুয়ে পুনরায় সেখানে পানি রেখে দিলেন আর সাথে সাথে ঝর্ণার ন্যায় পানি বের হতে লাগল। সে কুপটি এখন পর্যন্ত অবশিষ্ট আছে। [সহীহ মুসলিম : ৭০৬]

আবু হুরায়রা রা. এর দুধের পাত্রের ঘটনা। যে পাত্রের দুধ এতো বেশি হয়ে ছিল যে, সকল মেহমান খাওয়ার পরও অতিরিক্ত ছিল। [সহীহ আল - বুখারী ৬৪৫২]

(খ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কল্যাণে খানা বৃদ্ধি, বরকত লাভ, যেমন :

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দশত সাহাবায়ে কেরাম নিয়ে রণাঙ্গনে ছিলেন। এক সময় সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। সাথে ছিল সামান্য খাদ্য। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দস্তরখান বিছিয়ে নিজ নিজ খানা সেখানে উপস্থিত করার নিদের্শ দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কল্যাণের স্পর্শ পেয়ে খানাতে প্রচুর বরকত হল। সকলে সে খানা ভক্ষণ করল এবং স্ব স্ব পাত্রে জমা করে রাখল। [সহীহ আল - বুখারী ২৯৮২, সহীহ মুসলিম : ১৭২৯]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম খন্দক যুদ্ধে তিন দিন পর্যন্ত কোনো খানা গ্রহণ করেননি। জাবের রা. একটি উট জবেহ করে আনল এবং তার স্ত্রী আটা পিষে দিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাক দিয়ে সকলকে তার খানার প্রতি আহবান জানালেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আটার খামির এবং গোশ্তের পাত্রের মধ্যে মুখের লালা দিলেন, ফলে খানা বরকতময় হয়ে গেল। জাবের রা. আল্লাহর শপথ করে বলেন, আমরা এক হাজার জন ছিলাম। সকলে খানা খেয়ে চলে আসলাম। তবুও আমাদের খানা যে পরিমাণ ছিল, সেরূপই থাকল। পাত্রগুলো খাদ্যে পুর্ণ ছিল। আটার খামির বাকি ছিল। আমার ধারণা সে খামির দিয়ে আরো রুটি তৈরী করা যেত।

এ অধ্যায়টি খুবই বড়, সবগুলো আলোচনা করা সল্প পরিসরে সম্ভব নয়।

(গ) ফল ও শষ্যের বৃদ্ধি। যেমন :

এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে কিছু খানা চাইল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আধা অসাক তথা ত্রিশ সা’র (বাহাত্তর কেজির) মত আটা প্রদান করলেন। সে এবং তার পরিবার তা থেকে খেতে ছিল। মোটেই শেষ হচ্ছিল না। ফলে একদিন মেপে দেখল। অতঃপর এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘটনাটি জানাল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা না মাপতে, তবে এর থেকে খেতে থাকতে বহু দিন। [সহীহ মুসলিম : ২২৮১]

জাবের রা. এর পিতা ঋণগ্রস্থ ছিল। তার বাগানে যে পরিমাণ খেজুর ছিল, তাতে তাদের যথেষ্ট হত না। জাবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মাপার জন্য সে খেজুর উপস্থিত করল, তিনি তার ভেতর জাবের রা. এর প্রয়োজন মোতাবেক মেপে দিলেন। জাবের রা. বলেন সে খেজুর আমার কাছেই ছিল, মনে হচ্ছিল, তা যেন কমছে না। [সহীহ আল - বুখারী ৩৫৮০]

সপ্তম প্রকার : আল্লাহর ফেরেশতাদের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য প্রদান :

হিজরত প্রক্কালেঃ আল্লাহ তাআলা বলেন : فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ‘‘আল্লাহ তাআলা তার উপর সাকিনা নামক বিশেষ অনুগ্রহ অবতীর্ণ করেন। এবং তাকে তিনি এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা শক্তিশালী করেছেন, যা তোমরা দেখনি। আল্লাহ কাফেরদের বাক্য ছোট করে দিয়েছেন। মুলতঃ আল্লাহর বাক্যই মহান।’’ [সূরা আত-তওবা : ৪০]

বদর প্রান্তে। আল্লাহ তাআলা বলেন : إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِمُرْدِفِينَ ‘‘স্বরণ কর! যখন তোমরা স্বীয় রবের নিকট ফরিয়াদ করতে ছিলে, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করব।’’ [সূরা আল-আনফাল : ৯]

উহুদ ময়দানে জিবরীল ও মিকাইল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডানে এবং বামে থেকে যুদ্ধ করেছে।

খন্দকের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا

‘‘স্বরণ কর! যখন তোমাদের নিকট সৈন্য বাহিনী এসে উপস্থিত হয়েছিল। আমি তাদের উপর বাতাস এবং বিশেষ এক সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেছি, যা তোমরা দেখনি।’’ [সূরা আল-আহযাব : ৯]

৫.বনু কুরাইযা যুদ্ধের সময়, খন্দকের যুদ্ধ থেকে এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অস্ত্র রেখে গোসল করার পর, জিবরীল এসে বললো, ‘কি, অস্ত্র রেখে দিয়েছেন?’ আমরা তো এখনো অস্ত্র রাখিনি। শত্রু বাহিনীকে ধাওয়া করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোথায়? অতঃপর বনু কুরাইযার প্রতি ইংগিত করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্থান অভিমুখে অভিযানে বের হলেন। আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে তাকে বিজয় দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী ৪১১৭, সহীহ মুসলিম ১৭৬৯।]

৬.হুনাইন যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَأَنْزَلَ جُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ ﴿26﴾ سورة التوبة

‘‘এবং তিনি এমন সৈন্যদল নাযিল করলেন, যাদেরকে তোমরা দেখনি। আর তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করলেন; আর এটা হচ্ছে কাফিরদের কর্মফল।’’ [সূরা আত-তাওবা, ২৬।]

অষ্টম প্রকারঃ তার শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহ যথেষ্ট হওয়া এবং তাকে মানুষ থেকে রক্ষা করা

এই প্রকারটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতের সত্যতার ওপর বড় নিদর্শনসমূহের মধ্য থেকে একটি। এ প্রকারের উদাহরণঃ

মুশরিক এবং উপহাসকারীদের বিরুদ্ধে তার জন্য আললাহই যথেষ্ট হওয়াঃ ফলে তারা কোন কুমতলব নিয়ে তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ ﴿94﴾ إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ ﴿95﴾ سورة الحجر

‘‘অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ, তা প্রকাশ্যে প্রচার কর, এবং মুশরিকদের উপেক্ষা কর। আমিই যথেষ্ট তোমার জন্যে বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে’’ [সূরা আল-হিজর,৯৪-৯৫।]

ইহুদী খ্রিষ্টানের মোকাবেলায় আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হওয়াঃ আল্লাহ বলেনঃ

فَإِنْ آَمَنُوا بِمِثْلِ مَا آَمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿137﴾ سورة البقرة

‘‘তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রূপ বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে নিশ্চয় তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে; এবং যদি তারা ফিরে যায় তবে তারা বিচ্ছিন্নতায় পতিত। অতএব এখন তাদের ব্যাপারে আপনার জন্য আললাহই যথেষ্ট এবং তিনিই মহা শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।’’ [সূরা আল-বাকারা, ১৩৭।]

এবং সকল মানুষ থেকে তাকে সুরক্ষা করাঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ﴿67﴾ سورة المائدة

‘‘হে রাসূল ! যা কিছু তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তুমি পৌঁছে দাও। আর যদি এরূপ না কর, তবে তুমি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাওনি বলে বিবেচিত হবে। আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে সুরক্ষিত রাখবেন।’’ [সূরা আল-মায়িদা, ৬৭।]

এবং এটা এক ব্যাপক বার্তা যে, আল্লাহ তাকে সকল মানুষ থেকে নিরাপত্তা দিবেন। কারণ উল্লেখিত তিনটি তথ্যই সংঘটিত হয়েছে যা আল্লাহ তাআলা জানালেন। আললাহই তার শত্রুর বিরুদ্ধে যথেষ্ট ছিলেন বিভিন্ন অলৌকিক নিয়মে। শত্রুর আধিক্য, শক্তি সামর্থ্য বেশি হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে বিজয়ী করেছেন, এবং যারা তার বিরোধিতা করেছে তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন।

এমনি একটি ঘটনা- জনৈক খ্রিষ্টান ইসলাম গ্রহণ করে। সূরা বাকারা, ও আলে ইমরান পড়ে এবং সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লেখক হিসাবে কাজ শুরূ করে। এরপর সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে আবার খ্রিষ্টান হয়ে যায়। সে বলত, আমি যা লিখতাম মুহাম্মাদ এর বাহিরে আর কিছু জানতো না। আল্লাহর ইচ্ছায় লোকটির আকস্মিক মৃত্যু হয়। গোত্রের লোকেরা তাকে মাটিতে পুঁতে রাখলো। প্রত্যুষে তাকে মাটির উপর পাওয়া গেল। তারা খুব গভীর গর্ত করে আবার তাকে মাটিতে পুঁতে রাখলো। এবারও প্রত্যুষে তাকে মাটির উপর নিক্ষপ্ত অবস্থায় পাওয়া গেল। তারা আবার আরো গভীর করে গর্ত করে তাকে পুঁতে রাখলো, সকালে দেখা গেল সে আজো নিক্ষিপ্ত অবস্থায় যমীনের উপরে পড়ে আছে। মানুষ বুঝল এটা কোন মানুষের কাজ নয়, তাই তারা পতিত অবস্থায়ই তার লাশ রেখে ফিরে গেল। [সহীহ আল - বুখারী ৩৬১৭, সহীহ মুসলিম , ২৭৮১।]

নবম প্রকারঃ তার দুআ কবুল হওয়া

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন এবং তার কবুল হওয়ার বিষয় মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এটা দিবা লোকের মত স্পষ্ট এবং এর সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তা বিস্তারিত বর্ণনা করার ক্ষেত্রও এটা নয়। তবে উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি উল্লেখ করা যেতে পারেঃ

১.নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস রা. জন্য দুআ করতে যেয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে সন্তান ও সম্পদে বৃদ্ধি দান কর, এবং যা দিয়েছ তাতে বরকত দাও’ [সহীহ মুসলিম ,২৪৮০।] তার হায়াত বৃদ্ধি কর, তার গুনাহ ক্ষমা কর’ [আল-আদাবুল মুফরাদ,৬৫৩।] আনাস বললেন, আল্লাহর শপথ! ‘নিশ্চয় আমার সম্পদ অনেক হয়েছে, আমার সন্তান সন্ততি এক শতের মত। [সহীহ মুসলিম ,২৪৮১,১৪৩।] আমার মেয়ে আমিনা আমাকে সংবাদ দিয়েছে, আমার বংশের একশত উনত্রিশ জন লোককে বসরার হিজাজে দাফন করা হয়েছে।’ [সহীহ আল - বুখারী ১৯২৮।]

তার একটি বাগান ছিল। তাতে বছরে দুবার ফল আসত। বাগানের মাঝে এমন ফুল ছিল, যা থেকে মেশকের সুগন্ধি আসতো।’ [তিরমিযী, ৩৮৩৩ হাদিসটি হাসান গরিব।]

২. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হুরায়রা রা. এর মায়ের হেদায়েতের জন্য দুআ করলে ততক্ষণাৎ দুআ কবুল হয় এবং তার মা মুসলমান হয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম , ২৪৯১।]

৩. উরওয়া বিন আবু যায়েদ আল বারিকি রা. এর জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, ‘হে আললাহ! তার ক্রয় বিক্রয়ে বরকত দাও।’ ফলে তিনি বাড়ি ফেরার পূর্ব মূহুর্তে কুফা শহরে অবস্থান কালে ব্যবসায় চল্লিশ হাজার আয় করেন। [মুসনাদে আহমদ, ৪/৩৭৬।] তার অবস্থা এমন হয় যে, মাটি বিক্রয় করলে তাতেও তিনি লাভবান হতেন। [সহীহ আল - বুখারী, মানাকেব অধ্যায়, ৩৬৪২।]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতিপয় শত্রুর বিরুদ্ধে বদ দু’আ করলে তা কবুল হয়। যেমন আবু জাহেল, উমাইয়্যা, উকবা, উতবা প্রমুখ। [ফতহুল বারী, ১/৩৪৯ সহীহ মুসলিম ৩/১৪১৮।]

বদর যুদ্ধের সময় দু’আ, হুনাইন যুদ্ধের সময় দু’আ, সূরাকা বিন মালেকের জন্যে দু’আ ইত্যাদি সবগুলোই কবুল হয়েছে। [সহীহ মুসলিম ১৭৬৩, ১৭৭৫।]

প্রকৃত কথা হলো- সুবিচারক জ্ঞানী এবং ধর্মানুরাগী এসব দলীল ও শিহরণ সৃষ্টিকারী প্রমাণাদির সামনে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য। এবং তার ঈমান গ্রহণ না করে অন্য উপায় ও থাকে না। তাই সে হৃদয় মন থেকে উচ্চারণ করে ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন