hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)

লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ

১০
৪. বাতেনী সম্প্রদায় এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস
সে কালে বাতেনী সম্প্রদায়ের উদ্ভব মুসলমানদের উপর সবচেয়ে বড় দুর্যোগ ডেকে আনে। মাটিকে করে আরো সিক্ত। আলেম ওলামা, আর আহলে সুন্নাহর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে হত্যা আর বিশ্বাসঘাতকতা দ্বারা তারা মানুষের মনে ভয়- ভীতি আর সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। মুসলিম সমাজকে দুর্বল করার মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তারা চোরাগোপ্তা হত্যার পথ গ্রহণ করে। সংকটজনক সময়ে তারা উজির, বাদশাহ এবং আলেম- ওলামাদেরকে হত্যা করে। ক্রসেডার আর তাতারদের ন্যায় ইসলামের দুশমনদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। সুন্নাহ পন্থীদের প্রতি বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে বর্তমানকালের বাতেনীরা ইহুদি এবং পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের সঙ্গে যে গাঁট-ছাড়া বাঁধছে, এ চিত্র তা থেকে মোটেই ভিন্ন নয়। বর্তমানকালে লেবাননে মুসলমানরা এদের হাতে অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনীরা সবচেয়ে তিক্ত দু’টি দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। পাকিস্তানে কাদিয়ানি আর ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায় ইংরেজ আর পাশ্চাত্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে। বাহাই সম্প্রদায় সখ্য স্থাপন করছে ইহুদিদের সঙ্গে।

বাতেনী সম্প্রদায় কোন একটা বিশেষ গোষ্ঠীর নাম নয়। হাশাশী, কারামেতা, খারমিয়া, ইসমাঈলিয়া, দুরজিয়া ইত্যাদি নানা সম্প্রদায় এদের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের আরো অনেক সম্প্রদায়ের নাম এদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এদের মূল বুলি এই যে, কুরআনের দু'টা অর্থ আছে- একটা জাহেরী, অপরটা বাতেনী। আসলে তারা কুরআন মজীদের প্রতি বিশ্বাসী নয়। মানুষকে আল্লাহর বন্দেগির বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য এ বিশ্বাসকে তারা একটা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। নিজেদের অপরাধমূলক লক্ষ্য- উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তারা শিয়া ইজমকেও হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। আসলে তারা ইসলামে বিশ্বাসীই নয়। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানো আর নবুওয়্যাত রিসালাত অস্বীকার করা। রাফেযী ধর্মমত হচ্ছে তাদের বাহ্যিক ধর্ম, আর তাদের বাতেনী বিশ্বাস হচ্ছে নিছক কুফরি মতবাদ ছড়ানো।1 অতীত এবং বর্তমানে বারবার বাতেনী সম্প্রদায়ের কর্মকান্ডের উদ্ভব ঘটেছে। অতীত ইতিহাস অধ্যয়নকারীর সম্মুখে বর্তমানের চিত্র পরিস্ফুট হয়ে উঠবে। অতীত সম্পর্কে অবগত হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানরা কি কুখ্যাত হাসান সাবাহ- এর কুকীর্তির ইতিহাস পাঠ করেছে? শাম দেশের শায়খুল জাবাল এর ইতিহাস পড়েছে? কারামেতা সম্প্রদায়ের কাহিনি অধ্যয়ন করেছে ? বর্তমান যুগেও তাদের অপকর্ম নমুনা হিসাবে পেশ করা হবে।

হাসান সাববাহ কায়রোর ইসমাঈলী উবায়দী সম্প্রদায়ের নিকট থেকে তার কর্মকান্ডের মূলনীতি গ্রহণ করে। অতঃপর ইরান গমন করে তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একটা গোপন আস্তানা স্থাপন করে। সেখান থেকে সে আহলে সুন্নাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে। সেলজুক বংশের শক্তিধর উজির হাসান ইবনে আলী এর হত্যার মাধ্যমে তার পরিকল্পনার নীল নকশা আঁকে। বাতেনী সম্প্রদায়ের নিকট তিনি ছিলেন সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি। কারণ, তিনি আলেমদের সহায়তা করতেন, জ্ঞান বিস্তার আর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা দ্বারা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। বাতেনীরা তাঁর এসব কর্মতৎপরতা সহ্য করতে পারেনি। ফলে উজির নিয়ামুল মূলক সর্ব প্রথম তাদের মূল্যবান শিকারে পরিণত হন। দাইলামী বংশের একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁর নিকট প্রেরণ করা হয় সাহায্য কামনার ভান করে। সাহায্য প্রার্থী এ ব্যক্তিটি ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে। হিজরী ৪৯৬ সালে রায় দেশে আবুল মুজাফ্ফর ইবনুল খাজান্দীকে হত্যা করা হয়। ইনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ওয়ায়েয।2 হিজরী ৪৯৮ সালে শাফেয়ি মজহাবের অন্যতম প্রধান শায়েখ আবু জাফর ইবনুল মুশাতকে তারা হত্যা করে। একই বৎসর বায়হাক অঞ্চলের তুরাইসীস গ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক ইসমাঈলিয়া এসে সমবেত হয়। তারা সেখানে তুলকাম কান্ড ঘটায়। অনেককে হত্যা করে অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। ফলে গোটা অঞ্চলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দাপট বৃদ্ধি পায়। একই বৎসর মা- ওয়ারাউন নাহার, খোরাসান এবং ভারতবর্ষের হজ্বযাত্রীদের হজ থেকে ফিরে আসার পথে রায় অঞ্চলের ‘খাওয়ার’ নামক স্থানে পৌছলে বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা ভোর রাত্রে হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে তাদেরকে হত্যা করে মাল-সামান লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।3

হিজরী ৪৯৯ সালে বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা কাজি আবুল‘আলা ছায়েদ ইবনে আবু মুহাম্মদ নীশাপূরীকে ইসফাহানের জামে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হত্যা করে। তিনি ছিলেন হানাফি মাজহাবের অন্যতম বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।4 হিজরী ৫০২ সালে ইসফাহানের কাজি ওবায়দুল্লাহ ইবনে আলী আল-খতিবকে হত্যা করা হয়। বাতেনীদের ভয়ে তিনি সর্বদা লৌহ বর্ম পরিধান করে থাকতেন।5 ৫১৬ হিজরীতে বাতেনীরা সুলতান মাহমুদ সালজুকীর উজির আবূ তালিব সুমাইরীর উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে।6

৫১৯ হিজরীতে দুঃখজনক ঘটনাবলীতে কাজী আবূ সা’আদ মুহাম্মদ ইবনে নছর আল- হারবীকে হামাদানে হত্যা করা হয়। সুলতান সানজারের নিকট খলিফার একটা বিশেষ পয়গাম নিয়ে তিনি সেখানে গমন করেছিলেন।7 হিজরী ৫২০ সালে মুসেলের আমির আবূ সাঈদ আল- বারসাকীকে হত্যা করা হয়। বাতেনীরা তাঁকে জুমার দিন মসজিদে নামাজ পড়া অবস্থায় হত্যা করে। মুসেলের জামে মসজিদে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর তাঁর সম্পর্কে বলেন . তিনি ছিলেন একজন তুর্কি ক্রীতদাস এবং অত্যন্ত ভালো মানুষ। আলেম-ওলামা এবং নেকারদেরকে তিনি ভালোবাসতেন। ন্যায়নীতি পছন্দ করতেন এবং নিজেও তা মেনে চলতেন।8

হিজরী ৫২৫ সালে বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা দামেশকের অধিপতি বূরী ইবনে তাগতেগীন-এর উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে মারাত্মকভাবে আহত করে। আহত অবস্থায় এক বৎসর বেঁচে থেকে পরবর্তী বৎসর তিনি ইন্তিকাল করেন। তিনি ছিলেন একজন অগ্রবর্তী বীর মুজাহিদ।9 তাঁর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চানোর কারণ এই ছিল যে, ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার অভিযোগে তিনি স্বীয় উজিরকে হত্যা করেছিলেন। এ হত্যার বদলা নেওয়ার উদ্দেশ্যে গোপনে তাঁকে হত্যা করার অভিপ্রায়ে হাসান ইবনে সাববাহ জনৈক খতিবকে প্রেরণ করে।10

হিজরী ৫২৯ সালে বাতেনী সম্প্রদায়ের লোকেরা আববাসীয় খলিফা আল-মুস্তারশিদ বিল্লাহ ফজল ইবনে আববাসকে হত্যা করে। হত্যার পর তারা তার দেহের বিকৃতি সাধন করে উলঙ্গ লাশ ফেলে রাখে। 11 হাফেজ শামসুদ্দীন আয-যাহাবী তাঁর সম্পর্কে বলেন . তিনি ছিলেন দ্বীনদার- পরহেজগার একজন বীর মুজাহিদ।

মুসেলের আমির মওদুদ ইবনে জঙ্গিকে ক্রুসেড যুদ্ধে সুলতান গিয়াসুদ্দীন সালজুকীর পক্ষ থেকে ত্যক্ত বিরক্ত করা হলে তিনি যাজীরা অঞ্চল থেকে বিপুল সৈন্য সংগ্রহ করেন। এ বিশাল বাহিনী নিয়ে তিনি শাম দেশে গমন করেন এবং ক্রুসেডারদের নিকট থেকে অনেক দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন। দামেশক পৌঁছে নামাজ আদায় করার জন্য তিনি দামেশকের জামে মসজিদে প্রবেশ করলে বাতেনী সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি ভিক্ষুকের বেশে তাঁর নিকট গমন করে ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে কিছু সাহায্য করেন। লোকটি কাছে গিয়ে তাঁকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইন্তিকাল করেন।12

কথিত আছে যে, বায়তুল মুকাদ্দাসের ক্রুসেড শাসক দামেশকের শাসনকর্তার নিকট একটা বাণী প্রেরণ করেন। এতে তিনি বলেন . যে জাতি তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ঈদের দিন মা’বুদের গৃহে হত্যা করতে পারে, সে জাতিকে ধ্বংস করা ন্যায়ত . আল্লাহর কর্তব্য। হিজরী পঞ্চম শতকের শুরুতে ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের প্রচারক বাহরাম সিরিয়া আগমন করে প্রচার কার্য শুরু করলে অনেক সাধারণ মানুষ এবং নীচ স্তরের লোকেরা তাতে সাড়া দেয়। তাদের কোপানলের ভয়ে অনেক আলেম এবং শরিয়তের পতাকাবাহী নীরবতা অবলম্বন করেন। 13

এসব বাতেনীরা হয় মুসলমানদেরকে হত্যা করে, অথবা তাদের বিরুদ্ধে দুশমনদেরকে সহায়তা দান করে। অথবা দুশমনদের নিকট সহায়তা কামনা করে। ওয়াদী তাইম14 এর রঈম দাহহাদ ইবনে জুন্দল- এর উদ্ধৃতি দিয়ে ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর বলেন . মুসলমান এবং ইংরেজরা তার সহায়তা করে। এবং এক সম্প্রদায় দ্বারা অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করা হয়। অবশেষে দামেশক অধিপতি ইসমাঈল ইবনে বুরী আগমন করত: তাদের নিকট থেকে শাকীফ দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।15 এটা জানা কথা যে, ওয়াদী তাইম-এ দ্রুত ইসমাঈলিয়া সম্প্রদায়ের প্রচার কার্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল।

বাতেনী সম্প্রদায়ের হাতে যেসব আলিম- ওলামা নিহত হন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন বিশিষ্ট আলেম জাহিদ এবং আল্লাহ ওয়া আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল মাঅ ইবনে কায়েদ আল আওয়ানী16। এ মহান আলেমের গ্রামের জনৈক বাতেনী ঘাতক একজন ওয়ায়েজিনের বেশ ধারণ করে প্রবেশ করত: তাঁর সঙ্গে মসজিদে কথা বলে। ইবনে কায়েদকে হত্যাস্থলে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি চিৎকার করে বলে উঠেন . হে কুকুর নীচে নেমে যায়! এ সময় সাধারণ মানুষ ছুটে এসে তীর নিক্ষেপ করলে সে পলায়ন করে। এ বাতেনী ঘাতকের উপর যা কিছু ঘটে গেছে, সে সম্পর্কে সিরিয়ার ইসমাঈলিয়াদের নেতা সিনানকে অবহিত করা হয়। আওয়ানীর ঘটনা জানতে পেরে সিনান তার অনুসারী দু’জন লোককে ইবনে কায়েদ এর নিকট প্রেরণ করে। তারা এসে কয়েক মাস তাঁর সঙ্গে অবস্থান করে ইবাদত- বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকে। অবশেষে তারা তাঁকে এবং তাঁর খাদেমকে হত্যা করে বাগানে আশ্রয় নেয়। বাগানের মালিরা জানতে পেরে তাদের উভয়কে হত্যা করে লাশ জ্বালিয়ে দেয়।17

এখানে আমরা যা কিছু আলোচনা করেছি, তা কেবল হাশাশী ইসমাঈলী সম্প্রদায়ের কর্মকান্ড। অন্যান্য বাতেনীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আমরা কিছুই উল্লেখ করিনি। এরা আর অন্যান্য কারামেতারা শিয়াদের সহায়তায় লালিত এবং তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলশ্রুতিতেই এদের উদ্ভব ঘটেছে। ওস্তাদ মুহাম্মদ কুর্দ আলী বলেন .

বিস্ময়ের বিষয় এই যে, শিয়ারা হচ্ছে ক্রুসেড দলের লোক। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনা করে। এরা পর্বতে আশ্রয় নিয়ে ক্রুসেডারদের সঙ্গে মিলে হামলা চায়। এবং ক্রুসেডারদের গাইড আর দোভাষী হিসাবে কাজ করে।18

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন