মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)
লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ
৩১
৫. পরবর্তীকালে সংস্কার কার্যক্রম কেন অব্যহত ছিল না?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/31
সুলতান সালাহউদ্দীন ছিলেন এক বিপ্লবী ব্যক্তিত্ব। তাঁর মধ্যে অনেক মহৎ গুণাবলির সমাবেশ ঘটে। সুলতান নূরুদ্দীন মাহমুদ জিহাদের যে পরিমন্ডল গড়ে তোলেন, তাতে জ্ঞানের মর্যাদা ছিল। আলেম সমাজকে উপযুক্ত স্থান দেয়া হতো এবং সুবিচারের প্রসার ঘটানো হতো। সালাহউদ্দীন মানস আর চরিত্র গঠনে এসব গুণাবলি সহায়কের ভূমিকা পালন করেন। আমির আর উজির পর্যন্ত এসব গুণ বিস্তার লাভ করে। তবে যে প্রধান জটিল সমস্যাটি অবশিষ্ট ছিল, তা হলো এই যে, তাঁদের সংস্কার কোন শক্ত ভিত্তি পায়নি। তা রাষ্ট্র- সরকারের গণ-ধারায় পরিণত হয়নি। শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হলে নেতা বা প্রতিষ্ঠাতার অবর্তমানে তা বন্ধ হতো না। সালাহউদ্দীনের ইন্তিকালের পর তাঁর তিন পুত্র মিশর, সিরিয়া এবং হালব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। শাসন পদ্ধতিতে পূর্বাবস্থা ফিরে আসে। ভাইদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেয়, যা ছিল এহেন অবস্থায় স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে যদি সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে উঠতো, যথা খেলাফত ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা গড়ে উঠতো, তাহলে নেতা বা প্রতিষ্ঠাতার অবর্তমানেও রাষ্ট্র বিভক্ত ও দুর্বল হতো না। কারণ, ব্যক্তি না থাকলেও শক্ত ভিততো বর্তমানে রয়েছে। প্রয়োজনীয় শর্তানুযায়ী উপযুক্ত ব্যক্তিকে যোগ্য পদে বাছাই করে নেয়া যায়।63 ঐতিহাসিক ইবনে কাসীর বলেন . পিতার মৃত্যুর পর সালাহউদ্দীন পুত্র আফয ব্যবস্থাপনায় বিকৃতি সাধন করে। পিতার আমিরদেরকে দূরে সরিয়ে দেয়, দূরের লোকজনকে নিকটে নিয়ে আসে এবং খেলা ধুলায় মত্ত হয়ে পড়ে।64 সালাহউদ্দীনের সন্তানদের পর ক্ষমতায় আসে তাদের পিতৃব্য আদিল। আদিলের সন্তানরা, যারা ছিল আইয়ূবী রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারী, তারা কিছুটা হলেও ক্রুসেডারদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। আদিলের পুত্র ঈসা ক্রুসেডারদের সঙ্গে জিহাদ করেন। তিনি নিজে আলেম ছিলেন এবং আলেমদেরকে ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন . আমি তাহাবী আকীদায় বিশ্বাসী। দিময়াতের খ্রিস্টানদের সঙ্গে যুদ্ধে ভাই কামেলকে সহায়তা করে তিনি বলেন . দিময়াতের ঘটনা আমি আল্লাহর কাছে জমা রাখছি এবং আশা করি, তা দ্বারা আল্লাহ আমার প্রতি দয়া করবেন।65 কিন্তু ক্রুসেডাররা পুনরায় একত্র হয়ে হামলা চায় এবং সালাহউদ্দীন তাদের নিকট থেকে যা কিছু অধিকার করে নিয়েছিলেন, তারা সেসব ফেরত দেয়ার দাবি জানায়। ফলে তাদের এবং আদিলের পুত্রদের মধ্যে এই মর্মে সমঝোতা হয় যে, তারা কেবল বায়তুল মুকাদ্দাস দখলে রাখবে। হিজরী ৬৩৮ সনে আদিলের পুত্র সালেহ ইসমাইল ছায়দার খ্রিস্টান শাসনকর্তার নিকট শাকীক দুর্গ অর্পণ করেন। শায়খ ইজ্জ ইবনে আব্দুস সালাম এবং ইবনুল হাজিব এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তিনি তাদেরকে বন্দী করে পরে মুক্তি দেন। মুক্তি পেয়ে ইবনে আব্দুস সালাম মিশর গমন করেন।66 তখন আত্মকেন্দ্রিক হিংসা বিদ্বেষ দেখা দেয়। এই ইসমাইল আর ছালেহ আইউব ইবনে কামেল এর বিরোধকালে ছালেহ আইউব দামেশক দুর্গের ব্যাপারে খাওয়ারজেমীদের সঙ্গে পত্র মারফত যোগাযোগ করেন। রাজ প্রসাদ আর সুখ- সম্ভোগের মধ্যে যেসব সন্তানরা প্রতিপালিত হয়েছে, তারা যখন মোকাবিলা করতে অক্ষম হলো, তখন মামলুক বা দাস বংশ তাদের নিকট থেকে ক্ষমতা অধিকার করে নেয় এবং এরাই ক্রুসেডার আর তাতারদের ধ্বংস লীলা বন্ধ করে।
এভাবে আইয়ুবী রাষ্ট্রের সমাপ্তি ঘটে এবং মামলুকরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও জিহাদী এবং সংস্কার কার্যের প্রভাব তখনও অব্যাহত ছিল। মামলুকরা (আইনে জুতে) আমির (কাতায)- এর নেতৃত্বে তাতারদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। জাহির বায়বার্স এর শাসনামলে সিরিয়া এবং মিসরে অনেক শক্ত ঘাঁটির পতন ঘটে। হিজরী ৬৬৩ সনে শাসক জাহির কায়সারিয়া এবং আরসূফ অধিকার করে তথাকার সমস্ত খ্রিস্টানকে হত্যা করেন। অতঃপর দ্বিতীয় দফা ছকদ জয় করত: ইয়াফা এবং এন্তাফিয়া অধিকার করেন। ৬৬৯ হিজরী সনে এক্কা পুনরুদ্ধার করে নেয়। এ সম্পর্কে ইবনে কাসীর বলেন . ইসলাম এবং মুসলমানদের কল্যাণে তাঁর রয়েছে সদুদ্দেশ্য। তিনি নগর আর দুর্গ জয় করেন এবং ইসমাঈলীদের নিকট একটা দুর্গও ছাড়েননি। তিনি ছিলেন বীর-বাহাদুর এবং অতি সাহসী পুরুষ। রোম আর মুঘলদের সঙ্গে এমন যুদ্ধ করেন, যুগ যুগ ধরে যার কথা শোনা যায়নি। পোশাক-আশাক এবং আহার-বিহারে তিনি ছিলেন মধ্যপন্থী। এ রকম ছিল তাঁর সৈন্যও। তিনি মদ্য পান রহিত করেন এবং ফাসেক- পাপাচারীদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। হিজরী ৬৭৬ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন।67 কিন্তু ক্রুসেডারদের চূড়ান্ত প্রস্থান সম্পন্ন হয় আশরাফ ইবনে কারাউনের শাসনামলে হিজরী ৬৯০ সনে, যখন সূর এবং সায়দা আত্মসমর্পণ করে।
মুসলমানরা মামলুকদেরকে গ্রহণ করে নেয়। কারণ, তারা ছিল বীরপুরুষ। তাদের ছিল পর্যাপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণ। ফলে তারা সুযোগ সন্ধানী দুশমনদের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করেন। কিন্তু তারা জনগণকে বৈজ্ঞানিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে গড়ে তোলেনি। যেন তাদের আশঙ্কা ছিল মুসলমানদেরকে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলা হবে। ফলে তারা পদক্ষেপ নেয় ধীর মন্থর গতিতে। এসব মামলুকদের স্পষ্ট কোন রাজনৈতিক নীতিমালা ছিল না, যা তাদের রাজত্বকে স্থায়ী করতে পারে এবং তারা সাংস্কৃতিক দিক থেকেও চিন্তা করতে পারে। এভাবে মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ ত্রুটির কারণে এবং তা হচ্ছে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ না করা- সংস্কার কার্য অব্যাহত থাকতে পারেনি। এ ছাড়া ওলামাদের জন্য ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করাও ছিল অন্যতম করণ।
সুরা ইনস্টিটিউটের অনুপস্থিতি ইবনে খলদুনের মতো ঐতিহাসিককে আইন বিধিবদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। তিনি এই আইনকে অপরিহার্য মনে করেন। আর তা এই যে, কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থাই তিন পুরুষ বা তিন শতাব্দীর বেশি কাল টিকে থাকতে পারে না। কারণ, তৃতীয় বা চতুর্থ পুরুষ অবশ্যই আইন রহিত করবে। ফলে রাষ্ট্রের পতনের সূচনা হবে। কোন রাষ্ট্র যদি এর চেয়ে বেশি সময় টিকে থাকে তবে তা মৃত্যুর টিকে থাকা। প্রথম দফায় শক্তির কারণে তার প্রাণ এই যায় আর এই আসে দশা। এ ধরনের রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই ইবনে খালদূনের দর্শন খাপ খায়। অবশ্য রাষ্ট্র যদি শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, যথা পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ এবং একাডেমিক ইনস্টিটিউশন ইত্যাদি, তখন অবস্থা ভিন্ন হতে পারে।
খেলাফতে রাশেদার রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরামর্শ ভিত্তিক ছিল, কিন্তু তা সুসংবাদ এবং সুস্পষ্ট বিধান ভিত্তিক ছিল না। কারণ, তৎকালে বিষয় ছিল জটিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় পরবর্তীকালে, যখন শুরা বিধিবদ্ধ হয়নি এবং সঠিক রূপে তার অনুশীলন হয়নি।
অন্য একটা প্রসঙ্গ, আর তা হচ্ছে ওলামাদের পক্ষ থেকে ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে দেয়া, যার ফলে কোন কোন শাসক তাদের সামনে দেখা দেয়া লেনদেন এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার কোন সমাধানই খুঁজে পান না। কোন কোন সময় কেউ আশ্রয় নেয় ভবিষ্যৎ বক্তা বা এমন কিছুর নিকট, তারা যাকে বলে রাজনীতি। অথচ মুসলিম উম্মাহ মুজতাহিদমুক্ত থাকতেই পারে না। তাদের মধ্যে নিঃশর্ত ইজতিহাদের ক্ষমতা থাকতে হবে, যারা যে কোন সমস্যায় সঠিক শরিয়তের বিধান দিতে সক্ষম । এ দুটি হচ্ছে জিহাদ অব্যাহত না থাকার অন্যতম প্রধান কারণ এবং আলোক ধন্য যুগের পর মুসলিম মিল্লাতের দুর্বলতা।
শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য, অনেক ক্ষেত্রে সূচনা হয় সংশয়,
কিন্তু নির্গমন দ্বারা প্রতিভাত হয় বিশ্বাস
কঠোর ও কট্টর দুশমনদের সম্মুখে অথবা অপেক্ষমাণ সংশয়বাদীদের মুখে আল্লাহর কিতাবে গচ্ছিত রাখা রীতির চেয়ে বেশি সত্য রীতি আর কিছুই নেই। .
وَالعَاقِبَةُ لِلمُتَّقينَ
‘শুভ পরিণাম নেককার মুত্তাকীদের জন্য।’
নবী ঈসা আলাইহিস সালামের জবানীতে বর্ণিত আছে যে, আমরা কীভাবে মিথ্যাবাদীকে চিনবো? তাঁকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : ফলাফল থেকেই তুমি তাদেরকে চিনতে পারবে। ব্যাপারটা যখন মানুষের নিকট তালগোল পাকিয়ে যায় এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা থাকে না, তখন তাদেরকে বলা হবে : তোমরা ফলাফলের অপেক্ষা করো, কে সত্যপন্থী, আর কে মিথ্যাপন্থী, তোমরা নিজেরাই তা প্রত্যক্ষ করতে পারবে .
‘যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয়; আর যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে থেকে যায়। আল্লাহ এভাবে উপমা দিয়ে থাকেন।’ (সূরা রা’দ: ১৭)
সুতরাং শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য- এটা আল্লাহর চিরন্তন রীতি, জাতি- গোষ্ঠীর পরিণতির ক্ষেত্রে, যারা সরে দাঁড়ায় তাদের পালন কর্তার বিধান আর প্রকৃতির নিয়ম থেকে। সত্য মিথ্যার সংঘাতে আল্লাহর নীতি এই যে, সত্য উপরে থাকবে আর মিথ্যা থাকবে নীচে। সুতরাং যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে প্রতিষ্ঠিত- প্রমাণিত সত্য বস্ত্ত সন্ধান করে, যা স্থাপত্য তত্ত্বেরও দাবি, তখন প্রকৃতির রীতি তাদের সহায়তা- পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।68
ইতিহাস পর্যালোচনা এবং মানুষের জীবনধারা পর্যালোচনা এ নীতির প্রতি সমর্থন জানায়। আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, মিথ্যা যখনই স্ফীত হয়ে দম্ভ প্রকাশ করে, তখন আল্লাহর হুকুমে কিছু কাল পরে হলেও সত্য তার উপর জয়ী হবে। মিথ্যা কয়েকটা চক্কর কেটে খড় কুটের মতো উড়ে যায়। আর যা কল্যাণকর, তা-ই দীর্ঘস্থায়ী হয়। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র আর সভ্যতা- সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য। অতীতের এমনটি না ঘটে থাকলে ভবিষ্যতে অবশ্যই ঘটবে।
‘আমরা তাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাই, তার কিছু যদি তোমাকে দেখাই অথবা যদি ইতিপূর্বেই তোমার মৃত্যু ঘটাই- তোমার কর্তব্যতো কেবল প্রচার করা আর হিসাব- নিকাশতো আমাদের কাজ।’
(সূরা রা’দ : ৪০)
আর দুনিয়াতে এটা সংঘটিত না হলে আখিরাতে অবশ্যই ঘটবে:
‘ইহুদিরা বলে, খ্রিস্টানদের কোন ভিত্তি নেই এবং খ্রিস্টানরা বলে- ইহুদিদের কোন ভিত্তি নেই; অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবে যারা কিছুই জানে না, তারাও অনুরূপ কথা বলে। সুতরাং যে বিষয়ে তাদের মতভেদ আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে বিষয়ে মীমাংসা করবেন (সূরা আল- বাকারা . ১১৩)।
কতো তাগুতের পতন হয়েছে, কতো জালিম রাষ্ট্র বিলীন হয়ে গেছে, যেন কখনো তা ছিলই না। ইসলামের দুশমনরা ভেতর এবং বাইরে থেকে কতো চেষ্টা, কতো ষড়যন্ত্রইনা করেছে। পরিণতিতে ইসলামই টিকে আছে। টিকে থাকবে। বাতেনী সম্প্রদায়ের পক্ষে কতো বিপ্লব সাধিত হয়েছে। খোররামিয়া, বাবকিয়া, জঙ্গি আর ফাতেমীদের নামে; অতঃপর আহলে সুন্নাহর অথৈ সমুদ্র তলে তা লীন হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন .
‘তারা যতবার যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে, ততবার আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন।’ (সূরা মায়িদা: ৬৪)
তাতার আর ক্রুসেডারদের আগমন ঘটে। বেশ দীর্ঘ কাল তাদের প্রতাপ চলে। অতঃপর সব কিছু তার মূলের দিকে ফিরে যায়। বাহ্যত: প্রকাশ পায় যে, রাফেযী আর বাতেনী সম্প্রদায় হিজরী চতুর্থ এবং পঞ্চম শতকে মুসলিম বিশ্বের উপর জেঁকে বসে। দু’শ বৎসর এ ধারা চলে। অতঃপর দ্রুত পরিবর্তন ঘটে পরিস্থিতির এবং মানুষ ফিরে আসে সুন্নাহর দিকে।
সম্প্রতিকালে কমিউনিস্টরা ধারণা করে যে, তারাই ইতিহাস আর মানব সমাজ অনুধাবনের ক্ষেত্রে কেবল পূর্ণাঙ্গ দর্শনের অধিকারী। একজন মানুষের আয়ুষ্কালেরও কম সময়ের মধ্যে কমিউনিজম এমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেন তা বিগত কালের বিষয়।
আধুনিক যুগের তাগুত, যারা মুসলিম দেশের বিপুল অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফিরাউনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সীমা লঙ্ঘন করে। অবশেষে যখন সময় এসে যায় তখন কেউ তাদের উপর দয়া করে না, জনপদ আর জনপদের বাসিন্দারা তাদের থেকে মুক্তি পায়।
শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য- এ মূলনীতিই কি মানদন্ড নয়?
ব্যক্তিগত পর্যায় সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) বলেন . আমাদের আর বেদআত পন্থীদের মধ্যে পার্থক্যের মাপকাঠি হচ্ছে জানাজা। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চান যে, যে আলেম সুন্নাহর অনুসারী, জনগণ তাকে শ্রদ্ধা করবে, বড় মর্যাদাবান মনে করবে। আল্লাহ সৃষ্টি লোকের অন্তরে তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন। ফলে লোকেরা তার জানাজায় অংশ নেবে। পক্ষান্তরে যারা বেদআত পন্থী, তাদের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা আর জালিম সরকারের নিকট সহায়তা কামনা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তারা জনগণের ভালোবাসার পাত্র হতে পারে না। জনগণ তাদের মধ্যে কোন আকর্ষণ খুঁজে পায় না। প্রাচীন মু’তাযিলা পন্থীদের মধ্যে আজ কি কেউ আহমদ ইবনে আবু দাউদ এবং নায্যাম আর আল্লাফের নাম মুখে নেয়? অথবা কেউ কি চরমপন্থী কালাম শাস্ত্রবিদ বা চরমপন্থী সুফিদের কথা উল্লেখ করে? মানুষ কি তাদেরকে উম্মার পথপ্রদর্শক বলে মনে করে? আমরা দেখতে পাই যে, বিশ্ব সুন্নাহর যতো কাছাকাছি আসে, গ্রাহ্যতা আর জনপ্রিয়তা ততই বৃদ্ধি পায়। বেদআত পন্থীদের মধ্যে যারা ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে গোলযোগ সৃষ্টি করেছিল, আজ কেউ তাদের নাম নেয় না। তাদের বই পড়ে না; কিন্তু হিজরী ৮ম শতাব্দী থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার গ্রন্থ ছড়িয়ে রয়েছে।
ইতিহাস অধ্যয়নের অনুসন্ধান প্রচেষ্টায় আমরা বর্তমানের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যশীল অতীত দেখতে পাই না। যে যুগটা সম্পর্কে আমরা অধ্যয়ন করেছি, তার চেয়ে বেশি শিক্ষণীয় যুগও আমরা আর দেখতে পাই না। হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে অন্ধকার এমন বিস্তার লাভ করেছিল যে, মানুষ ধারণা করে বসে যে, পরিবর্তনের চেষ্টা করে আর কী লাভ হবে? চারিদিকে বেদআত পন্থীদের জয় জয়কার, শাসক গোষ্ঠী জেঁকে বসে আছে তাদের অবস্থানে অন্তত: স্বদেশ ভূমির হিসাবে হলেও; ফেরকাবন্দী আর বিভেদ- বিচ্ছেদ চরমে পৌঁছেছে। অতঃপর প্রশস্ততা দেখা দেয়। সুন্নাহর দিকে ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্ত্তত হয়, জ্ঞান কেন্দ্র ছড়িয়ে পড়ে এবং এমন সব নেতার আবির্ভাব ঘটে, যাদের মধ্যে দ্বীনদারী আছে, আছে বীরত্ব। বর্তমান পরিবেশ- পরিস্থিতির আনুকূল্য এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার কোন নজির ইতিপূর্বে ছিল না। মুসলমানদের সমস্যা লেগে থাকবে তীব্র স্রোতের মতো। আর এসব সমস্যায় তাদের নেতৃত্ব দেবেন জ্ঞানী আর বুদ্ধিজীবীরা। জ্ঞান আর রাজনীতির মিলন অবধি তাদের সমস্যা লেগে থাকবে। ফলে আবির্ভাব ঘটবে জ্ঞানী শাসকের; যেমন মিলন ঘটেছিল নূরুদ্দীন মাহমুদ এবং সালাহউদ্দীনের ব্যক্তিত্বে। আমি মনে করি আল্লাহর পথে আহবান কারীরা অল্পে তুষ্ট হয়ে বসে আছেন যে, আল্লাহ তাঁর কিতাবে যে রীতি গচ্ছিত রেখেছেন, তা নিয়ে উত্থিত হওয়া ছাড়া পরিবর্তন সূচিত হবে না। আল্লাহ বলেন .
‘তোমাকে দেশ থেকে উৎখাত করার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালায় যাতে তোমাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করতে পারে। তা হলে তোমার পরে তারাও সেখানে অল্প কালই কেবল টিকে থাকবে। আমরা রাসূলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে প্রেরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না।’ (বনী ইসরাইল . ৭৬-৭৭) অথবা যে নিয়মের কথা রাসূল উল্লেখ করেছেন- যে সত্য তাঁর উপর নাজিল হয়েছে। মুসলমানরা যতক্ষণ দুর্বলতা আর লাঞ্ছনার কারণ খুঁজে বের না করবে, ততক্ষণ পরিবর্তন সূচিত হবে না। যেমন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া, বিবাদ- বিসংবাদ এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি, চরিত্র আর আমলের মধ্যে যা দ্বারা উম্মত শক্তিশালী হতে পারে, তা দ্বারা ভূষিত হওয়া এবং তার বিপরীত কর্ম থেকে বিরত থাকা। এ সবের মধ্যে সব কিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করা এবং কষ্টদায়ক বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করা, তা যতই বড় হোক না কেন।69 এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে সূক্ষ্ম জ্ঞান আর প্রজ্ঞা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/31
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।