hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)

লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ

২. অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিছু নমুনা
কোন দেশের নৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থায় যখন চরম ধস নেমে আসে, তখন সে জনপদের মানুষের মনে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার প্রবৃত্তি সৃষ্টি হয়, জেগে উঠে সম্পদ সঞ্চয় করার এক উগ্র বাসনা। আর এ বাসনা এক চরম রূপ ধারণ করে। শুরু হয়ে যায় রাষ্ট্রীয় ধন- ভান্ডার থেকে সম্পদ আহরণের উম্মত প্রতিযোগিতা আর লুঠপাট। সম্পদ আহরণ করার লোভ জাগে সকলের। যেন তা এক অতি মোহনিয় দুর্লভ বস্ত্ত আর কি! মুষ্টিমেয় লোকের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। এরা হালাল-হারামের ধার ধারে না। এমনকি ইহকাল আর পরকালও বুঝে না। ফলে ইহকালেও তারা অখিদন্তু ব্যর্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মালিকানায় নব-নব সংযোজন ঘটে; কিন্তু তাদের বাকি জীবন অতিবাহিত হয় নিতান্ত যিল্লতী আর সংকীর্ণতার মধ্য দিয়ে। মনে এক রাশ দুঃখ নিয়ে তাদের প্রাণ বায়ু নির্বাপিত হয়। সংক্ষেপে আরব জাহান বা তৃতীয় বিশ্ব নামে পরিচিত অঞ্চলে বারবার এ কাহিনির পুনরাবৃত্তি ঘটে। এটাকে বলা যায় মোটা তাজা বিড়ালের কাহিনি। এরা জাতির সম্পদ লুঠপাট করে দেশকে উজাড় করে তোলে, যেন তা মসৃণ সমতল ভূমি আর কি! বিবেক তাদেরকে তিরস্কার করে না, মানবীয় অনুভূতিও না। তবে পূর্বসূরিদের চেয়ে বর্তমানকালের ধন কুবেরা কিছুটা ব্যতিক্রম। বর্তমান কালের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সঞ্চিত অর্থ সুইস আর মার্কিন ব্যাংকগুলোতে পাচার করে দিচ্ছে।

মুইজ্জুদ্দৌলা বুয়াইহীর ক্রীতদাস এবং তুর্কি দেহরক্ষী সুবুক্তগীন এর জীবনেতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি অঢেল সম্পদ রেখে মারা যান। তার পরিত্যক্ত সম্পদের মধ্যে ছিল লক্ষ লক্ষ দীনার এবং মণি-মাণিক্য ভর্তি কয়েকটা সিন্দুক1। মিসরে ফাতেমী খলিফাদের উজির আফয ছিলেন আর্মেনীয় বাহিনীর সেনাধ্যক্ষের পুত্র। তাঁর পরিত্যক্ত সম্পদ সম্পর্কে জানা যায় যে, তিনি এক বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ- রৌপ্য, মণি-মাণিক্য, মূল্যবান পোশাক- আশাক, দাস-দাসী, অশ্ব আর সুগন্ধি ছেড়ে যান, যার সঠিক পরিমাণ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না2।

আয়াদুদ্দৌলা বুয়াইহী একটা বাগান নির্মাণ করান, যাতে পানি সিঞ্চনের খরচসহ ব্যায় করা হয় ৫০ লক্ষ দিরহাম3

উজির ইবনুল ফুরাত সম্পর্কে জানা যায় যে, মহামূল্যবান ধাতু নির্মিত চামচ ছাড়া তিনি আহার্য গ্রহণ করতেন না। উজির ইবনু কালস এর দাস দাসীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। তাঁর নিকট যেসব মণি- মাণিক্য পাওয়া যায়, তার মূল্য ছিল ৪ লক্ষ দিনার। 4

ঐতিহাসিক ইবনে কাছীর হিজরী ৪৮০ সালে সুলতান মালিক শাহ এর কন্যার বিবাহে প্রদত্ত উপঢৌকনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন : সে বৎসর মুহররম মাসে সুলতানের কন্যার উপঢৌকন রাজধানীতে আনা হয় ১৩০ টি উষ্ট্রের পৃষ্ঠে বোঝাই করে। রোমের মহামূল্যবান ‘দীবাজ’ বস্ত্র দ্বারা উষ্ট্রগুলোকে সাজানো হয়। এসব উপঢৌকনের বেশিরভাগ ছিল স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত তৈজসপত্র। এছাড়া ৭৪ টি খচ্চরকে দেশীয় রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ দ্বারা সজ্জিত করে তাদের পৃষ্ঠেও বহন করে আরো উপঢৌকন সামগ্রী রাজধানীতে আনা হয়5

এসব বিরাট অংকের কথা শ্রবণ করে ধারণা জন্মাতে পারে যে, দেশের মানুষের অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু আসলে তা নয়। দেশের অধিকাংশ মানুষ অতি কষ্টে জীবন কাটাতো। করের বোঝা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছিল। তদুপরি তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় সেনাবাহিনী। হিজরী ৩৩১ সালের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে জানা যায় যে, তখন দ্রব্যমূল্য এতটা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মানুষ কুকুর খেতে বাধ্য হয়। পরিণামে দেশে মহামারি দেখা দেয়।6

হিজরী ৩৬১ সালের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে জানা যায় যে, দেশে প্রতারক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এরা বিপর্যয় সৃষ্টি করে। জনগণের ধন- সম্পদ অপহরণ করে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। বাণিজ্য কেন্দ্র আল- কারখ অঞ্চলে আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়া হয়।7 হিজরী ৩৭৬ সালের ঘটনাবলী সম্পর্কে জানা যায় যে, তখন ইরাকে পণ্য মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে অধিকাংশ লোক দেশ ছেড়ে চলে যায়। হিজরী ৩৮৩, ৩৯৭, ৪১৬, ৪২০ এবং ৪২৪ সালেও দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। এ সঙ্গে প্রতারক শ্রেণি এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সংখ্যাও বেড়ে যায়।

হিজরী ৪৪৮ সালেও চুরি- ডাকাতি আর লুট-তরাজের ভয়ে রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে পণ্য-মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। মানুষ মৃত জন্তু ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী গুদাম জানত করে এবং সংকটকালে তা বিক্রয়ের জন্য বাজারে ছাড়ে। এ সময় কায়রোয় জনৈক ব্যক্তি মাত্র ২০ কেজি আটার বিনিময়ে একটা গৃহ ক্রয় করে। অথচ ইতিপূর্বে গৃহটি ক্রয় করা হয় ৯শত দীনার মূল্যে। আর একটা ডিম বিক্রি হতো ১ দীনার মূল্যে।8 ধনী আর অভিজাত শ্রেণির বিদেশ থেকে পণ্য আম দানীর বহর বৃদ্ধি পায়। মিশরের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী আফ্ফান ইবনে সুলায়মানের মৃত্যু হলে শাসক আখশীদ তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ৪ লক্ষ দীনার গ্রহণ করেন। তখন মানুষের মুখে মুখে একটা প্রবাদ বাক্য প্রচলিত হয় ;

‘কেউ মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ সাইফুদ্দৌলা তথা শাসক গোষ্ঠীর জন্য।’9

এ সময় শাসক শ্রেণির সেনাবাহিনীর লোকেরা জনগণের সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এরা গ্রামের কৃষকদের উপর নির্যাতন চালাতো। তাদের শস্য লুট করে নিয়ে যেতো, কিন্তু বাধা দেয়ার সাহস কারো হতো না। এ সময় উজির মুহাল্লাবীর জন্য তিন দিনে ১ হাজার দীনারের ফুল ক্রয় করা হয়। তার মজলিসে এসব ফুল ছিটানো হয় এবং এটাকে মহা কল্যাণকর ও পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।10

এই ছিল শাসক শ্রেণি উজির আর ওমরাদের অবস্থা। এ সময় আমরা দেখতে পাই যে, মালেকী মাযহাবের বিশিষ্ট ফকীহ কাজি আব্দুল ওয়াহহাব তাগলাবী বাগদাদের জন্য দুঃখ করে বাগদাদ ছেলে চলে যান। তাঁকে বিদায় দেওয়ার জন্য যারা সমবেত হয়, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন : শক সন্ধ্যা দুটি রুটিও যদি জুটতো তাহলে তোমাদের শহরের সমকক্ষ আমি অন্য কোন শহরকে বিবেচনা করতাম না। এ সম্পর্কে তিনি একটা কবিতা রচনা করেন। তাতে বলেন : 11

سلام على بغداد فى كل موطنوحق لها منى سلام مضاعف

فوالله ما فارقتها عن قلىً لها وأنى بشطى جانبيها لعارف

ولكنها ضاقت علىّ بأسرها ولم تكن الأرزاق فيها تساعف .

সালাম বাগদাদ নগরীকে সকল দেশ থেকে।

আমার কাছে তার আরো অতিরিক্ত সালাম পাওয়ার অধিকার আছে।

খোদার শপথ, আমি তাকে জানি না বিধায় ত্যাগ করছি না।

তার দু‘তীর সম্পর্কে আমি ভালো করেই জানি।

কিন্তু তা আদপেই আমার প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছে।

সেখানে জীবিকা মোটেই সহজলভ্য নয়।

তিনি আরো বলেন : 12

بغداد دارلاهل المال طيبةوللمفاليس دار الضنك والضيق

ظللت حيرانَ أمشى فى ازقّقتها كاننى مصحف فى بيت زندق

ধনীদের জন্য বাগদাদ চমৎকার বাসস্থান।

আর গরিব- নিঃস্বদের জন্য সংকীর্ণতার স্থান।

তার অলিতে- গলিতে আমি ঘোরাফেরা করেছি, বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে,

যেন আমি নাস্তিকের ঘরে কুরআন শরীফ।

তাঁর সম্পর্কে ইবনে বাসাম ‘যাখীরা’ গ্রন্থে বলেন :

অবশিষ্ট মানুষ ছিল যেন, ধারণা- কল্পনার অনুসারীদের শিকার। আরবি সাহিত্যের কীর্তিমান পুরুষ ব্যক্তিত্ব পন্ডিত আবু আলীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়ালে তিনি ব্যক্তিগত পাঠাগারের মূল্যবান গ্রন্থ রাজি বিক্রয় করতে বাধ্য হন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এসব বই- পুস্তক বিক্রয় করে তিনি আন্দুলুসিয়া তথা স্পেনে চলে যাবেন। এসব গ্রন্থের মধ্যে ‘জামহারা’ গ্রন্থের একটি কপিও ছিল। বইটি বিক্রয় করতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছিল। শরীফ মুর-তাজা নামে জনৈক বিখ্যাত ব্যক্তি বইটি ক্রয় করেন। বইটিতে আবু অর নিজের হাতে নীচের কবিতাটি লেখা ছিল :

أنست بها عشرين حولا وبعتها فقد طال وجدى بعدها وحنينى

وما كان ظنى أننى سأبيعها ولو خلدتنى فى السجون ديونى

ولكن لضعف افتفار وصبيةصغار عليهم تستهل جفونى

-দীর্ঘ কুড়িটা বৎসর তার সঙ্গে কাটিয়ে এখন তা বিক্রয় করতে হচ্ছে

তার সঙ্গে আমার ছিল দীর্ঘ ভালোবাসা, আর তারপরে কান্না,

তা বিক্রয় করতে হবে এমন ধারণা আমার ছিল না কখনো,

যদিও ঋণ আমাকে সারাজীবন কারাগারে বন্দী করে রাখে।

কিন্তু দুর্বলতা, দরিদ্র আর শিশুদের কারণে

তুচ্ছ তাদের কাছে, ক্ষুণ্ণ আমার মান!

অতীত আর বর্তমানের মধ্যে এ মিলের জন্য মানুষ অবাক হতে পারে, কিন্তু সেখানেও একটা স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। আর তা এই যে, অতীতের কোন কোন শাসক সত্যের দিকে ফিরে আসতো। যখন তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হতো, যখন উপদেশ দেয়া হতো। আর এখন? উপদেশ আর প্রচার তাদের কোনই কাজে আসে না, কোনই কল্যাণ বয়ে আনে না। ইতিহাস গ্রন্থ ‘আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া’য় বলা হয়েছে; এক শুক্রবার প্রসিদ্ধ ওয়ায়েয ইবনুল ইবাদী মজলিসে বসে কথা বলছিলেন। সেলজুক বাদশাহ সুলতান মাসঊদও সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জনগণের ক্রয়- বিক্রয়ে অন্যায়ভাবে কর আরোপ করেন। তখন ইবনুল ইবাদী বললেন, হে সুলতান, আপনি খুশি হয়ে গায়িকাদের কর হ্রাস করেন, তাদের করের পরিমাণ মুসলমান জনগণের উপর আরোপিত করের চেয়ে কম। আপনি আমাকে একজন গায়িকা দান করুন, যার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট, আর আপনার প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ এ কর হ্রাস করুন। সুলতান হাতের ইঙ্গিতে বললেন হ্যাঁ আমি তা করব। জনগণ চিৎকার করে তাঁর জন্য দোয়া করে। 13

এ ঘটনা কি আমাদেরকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না যে, আজকাল শাসক শ্রেণি গায়ক-গায়িকাদের প্রতি কেমন কৃপা-বৃষ্টি বর্ষণ করছে। আর এটা করছে অন্যায়ভাবে জনগণের সম্পদ ভক্ষণ করার জন্য। অতঃপর এ সম্পদ চলে যাবে আল্লাহর দুশমনদের হাতে। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জনগণ অতি কষ্টে দিন গুজরান করছে।

অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছে, যখন রাষ্ট্র জামানতের বিধান প্রবর্তন করে। আর তা হচ্ছে কোন ব্যক্তিকে কোন শহর বা অঞ্চল থেকে নির্ধারিত পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করে সরকারের নিকট অগ্রিম জমা দেবে। এভাবে সঞ্চিত আর পরিশোধিত ট্যাক্সের মধ্যে একটা ব্যবধান থাকে। জমিদার ব্যক্তি ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করবে ক্ষমতা প্রয়োগ দ্বারা। আবার কখনো কখনো ক্ষমতা প্রয়োগ ছাড়াই এ কাজ করবে। আদায়কৃত ট্যাক্সের যাবতীয় হিসাবপত্র রাখা হয় সরকারের প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী। অবশ্য এটা স্বাভাবিক যে, এসব ক্ষেত্রে জামিনদার ব্যক্তি আপ্রাণ চেষ্টা করে, কৃষকদের নিকট থেকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স আদায় করার। এজন্য যদি পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করতে হয় তবুও তা করবে। তা যদি কৃষক জনতার সাধ্যাতীত হয়, তবুও করবে। এভাবে সে আদায় করবে সর্বোচ্চ পরিমাণ, কিন্তু সরকারের নিকট জমা দেবে সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পরিমাণ। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির লাভ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ঐতিহাসিক ইবনুল আসীর প্রণীত ‘তারীখুল কামিল’ গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই; আবু আলী ইবনে ফাজল দু’লক্ষ দীনারের বিনিময়ে ওয়াসেত অঞ্চলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আর আবু সাঈদ সাবুর ইবনুল মুজাফ্ফর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বসরা অঞ্চলের।14 বুয়াইহী শাসকরা সেনাবাহিনীর জন্য জায়গীরদারী প্রথার প্রবর্তন করলে ব্যাপারটা আরো চরমে পৌঁছে। তারা সামরিক বাহিনীর লোকজনকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন- ভাতা না দিয়ে ভূমি দান করেন। সেনাবাহিনীর লোকেরা এটাকে তাদের সেবার বিনিময়ের চেয়ে বেশি মনে করল। আর এটা স্বাভাবিক যে, সেনাবাহিনীর লোকেরা চাষাবাদে প্রবৃত্ত হবে না। বরং তাদের কাছে চাষাবাদ করার লোক থাকবে। ভূমির উৎপাদিত ফসলে এরা সন্তুষ্ট না হলে শক্তি প্রয়োগে ভূমি অন্যরা দখল করে নেবে। ফলে অসহায় কৃষক তার ভূমি হারাতে বাধ্য হবে। আর চাষা-বাদ-যোগ্য ভূমি, পতিত ভূমিতে পরিণত হবে। কেউ ভূমিতে কোন কাজ করবে না। যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।15 তারা আরো একটি কুৎসিত নিয়ম প্রবর্তন করে।

এ নিয়মও প্রবর্তিত হয় বুয়াইহী শাসকের শাসনামলে। হিজরী ৩৫০ সালে আবুল আববাস ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল শাওয়ারিব বার্ষিক দু’ লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে কাজি বা বিচারপতির পদ গ্রহণ করেন। তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি অর্থের বিনিময়ে বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতিপূর্বে এমন নিয়ম ছিল না। কিন্তু আববাসীয় খলিফা আল-মুতী লিল্লাহ এ নিয়ম মেনে নিতে পারেননি। ফলে তিনি এই কাজিকে বিচারালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেননি। এই কাজি যখন জামানতের দ্বার উন্মুক্ত করেন, তখন বাগদাদে হিসাব বিভাগ এবং পুলিশ বিভাগেও এ নিয়ম প্রবর্তিত হয়।16 আর এসব হচ্ছে সামাজিক বিকৃতি এবং রাষ্ট্রের দুর্বলতার অন্যতম প্রধান কারণ। ঐতিহাসিক ইবনে খলদুনের নিকট এ বিষয়টির ভয়াবহতা স্পষ্ট ছিল। তাইতো তিনি আল-মুকাদ্দিমায় বলেন : জানা উচিত যে, জনগণের উপর অর্থনৈতিক শোষণ- নির্যাতন চালানো হলে তাদের সম্পদ উপার্জনের স্পৃহা নস্যাৎ হয়ে যায়। আর যখন তাদের স্পৃহা নস্যাৎ হয়ে যায়, তখন জনগণ অর্থকরী কর্মকান্ডে শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ে তখনই বাজারে মন্দা দেখা দেয়। দেশের বাসিন্দারা হয়ে উঠে কর্মবিমুখ এবং উজাড় হয়ে যায় নগর- বন্দর আর জনপদ।17 গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে ইবনে খলদূন আরো বলেন : কোন বিনিময় ব্যতিরেকে সম্পদের মালিকের হাত থেকে সম্পদ নিয়ে নেয়া বা কোন কারণ ছাড়া কারো সম্পদ হস্তগত করা জুলুম বলে যে কথাটা প্রচলিত আছে, কেবল তাকেই জুলুম- শোষণ বলে মনে করবে না, বরং জুলুম আরো ব্যাপক অর্থ জ্ঞাপক। কোন অধিকার ছাড়া যারা সম্পদ আহরণ করে তারা জালিম। যারা সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ করে, তারা জালিম এবং যারা মানুষের ন্যায্য অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে, তারাও জালিম। মালিকানা হরণকারীরাও সাধারণত: জালিম। আর এসব কিছুর খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়ে রাষ্ট্রের উপর সামাজিক বিকৃতির আকারে।18 তিনি আরো বলেন, যেন তিনি বর্তমান কালের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে কথা বলছেন : সমাজ আর রাষ্ট্রের বিকৃতির ক্ষেত্রে এর চেয়েও বড় জুলুম হচ্ছে জনগণের হাতে যা আছে, সব চেয়ে তুচ্ছ মূল্যে তাদের নিকট থেকে সেসব ক্রয় করা। অতঃপর অতি চড়া মূল্যে তাদের উপর মূলধন চাপানো জোর- জবরদস্তি করে ছিনতাইয়ের আকারে।19

যেসব গুরুত্বপূর্ণ কারণে রাষ্ট্র জনগণের সম্পদ আহরণ করে, তার সূক্ষ্ম তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে সমাজ তাত্ত্বিক ইবনে খলদূন বলেন : জানা উচিত যে, এসবের একমাত্র কারণ হচ্ছে রাষ্ট্র আর শাসন- কর্তৃপক্ষের বেশি বেশি সম্পদ আহরণ করার লোভ। এর ফলে তাদের সামনে বিলাসের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ফলে তাদের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এটা রোধ করার জন্য প্রচলিত আইন যথেষ্ট নয়। ফলে তারা কর আরোপের পরিধি আরো সম্প্রসারিত করে। এর ফলে অবশ্যম্ভাবীরূপে বিলাস আর জৌলুস বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় কর আর ট্যাক্সের বহরও। জনগণের সম্পদের প্রতি প্রয়োজন এমনই তীব্র হয়ে দেখা দেয়, যার ফলে সম্পদ সঞ্চয়ের সীমা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, দূর হয়ে যায় তার নিয়ম-নীতিও।20

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন