মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)
লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ
৩
মুখবন্ধ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/3
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইতিহাসের একটি বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। আদিকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ কথার ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। ইতিহাসকে যুগভিত্তিক বিভক্ত করা হলেও মূলত: সব যুগের শিক্ষাই এক। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বা একচ্ছত্র মালিকানায় অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা স্বীয় প্রবৃত্তির দাসত্ব, মানুষের উপরে ক্ষমতার দাপটে প্রভুত্ব চালিয়ে ভোগ বিলাসের রাজত্ব কায়েম করা- এ সবই দেখা যায় শক্তিধর বিত্তবানদের মধ্যে। মাত্র কিছুকাল পূর্বে ঘটে যাওয়া প্রলয়ের কথা নূহ পরবর্তী মানুষগুলো ভুলে গেল। আদ-সামুদ আর অন্যান্য জাতিসমূহের ধ্বংসাবশেষ স্বচক্ষে দেখেও মক্কার কোরাইশরা ভ্রষ্টতা ও কুফুরীর পথকেই আঁকড়ে ধরে সৃষ্টিকর্তার প্রভুত্বকে অস্বীকার করে একই পথে অগ্রসর হলো। এমনিভাবে বনী ইসরাঈল ও বারবার তাদের আম্বিয়া কেরামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইতিহাস ধিক্কৃত হয়ে শাস্তি ভোগ করেও শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনে পুনরায় একই আচরণ করল। আল্লাহ তাআলা সূরা আল-ইসরা এর ২য় আয়াত থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে তাদেরকে পূর্ব ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শেষ নবীর সাথে এই একই আচরণের পরিণতির কথা বলে সাবধান করেন। কিন্তু মানবতার শত্রু বনী ইসরাঈল বা ইয়াহুদীরা কি তাদের আচরণে আদৌ কোন পরিবর্তন এনেছে? এর পর আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আরেকটি আয়াতে একটি সার্বজনীন মূলনীতির কথা স্পষ্টভাবেই ঘোষণা করেছেন, ‘‘তোমরা ভাল আচরণ করলে তার সুফল তোমরা পাবে, আর অসৎ আচরণ করলে তার পরিণতি তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে’’। কুরআনের এ নীতি কোন নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর জন্য নয়। যে জাতি ভালভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিচালিত করে খেলাফতের গুরু দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করবে, তার খেলাফতকে প্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে আসবে। আল্লাহ তাঁর সমস্ত কল্যাণ ও রহমতের দ্বার সে জাতির সম্মুখে উদারভাবে খুলে দেবেন। এটাই আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ও অমোঘ বিধান। এই হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতি অন্য কোন বস্ত্তর নাম নয়। আল্লাহর বিধান অনুসারে চলতে পারলেই শান্তি ও কল্যাণ। আর বিপরীত পথে অগ্রসর হলেই বিপর্যয় ও শাস্তি।
গ্রন্থকার মুহাম্মদ আল-আবদাহ আমার ব্যক্তিগত পরিচিত কেউ নন। তাঁর প্রাক সালাহউদ্দীন আইয়ুবী যুগের বিশৃঙ্খলার উপর লিখিত ইতিহাসের বইটি আমাকে অত্যন্ত আকৃষ্ট করেছে।
এই বইটিতে মূলত: হিজরী ৩য় শতাব্দী থেকে প্রায় ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত আরব জাহানের শাসকদের বিলাস বহুল জীবন যাপন, অপব্যয়-অপচয় সহ রাষ্ট্র পরিচালনা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘাত, বাতেনী সম্প্রদায়ের সন্ত্রাস, ওবায়দী, বুয়াইহী, কারামেতা, বনু হামদান, ও সুলাইহী সম্প্রদায়ের কর্তৃত্বের লোভে হত্যা ষড়যন্ত্র ও সংঘর্ষের লোমহর্ষক কাহিনি সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। আরো বর্ণিত হয়েছে আববাসীয় খলিফাদের আমলে সুন্নাহর প্রকাশ ও জ্ঞান- বিজ্ঞান প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা এবং উলামায়ে কেরামের ইসলাম প্রতিষ্ঠার জিহাদ ও সংস্কার আন্দোলনের কথা।
তদানীন্তনকালে ও আজকের ন্যায় মুসলিম বিশ্ব পরস্পর সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছিল। আর এ সব হয়েছিল ব্যক্তিস্বার্থ ও ছোটোখাটো বিষয়ে মতভেদ এবং মতপার্থক্যের কারণে। ক্ষমতার মসনদ দখল করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তারা পরস্পরের সাথে অস্ত্রের ভাষায় কথা বলত। একে অন্যকে পরাজিত করার জন্য অমুসলিমদের নিকট থেকে সাহায্য নিতেও দ্বিধা করতো না। আর এই সব কারণেই তাদের মধ্যে হিংস্রতা চলে আসে। তারা বিভক্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন দল ও সম্প্রদায়ে। দূরীভূত হয় আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া। দুনিয়াবী ভোগবিলাসে আর লালসায় মত্ত হয়ে পড়ে শাসক শ্রেণি। বিত্ত আর ক্ষমতার মোহে তারা ভুলে যায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত সত্য পথে আহবানের কথা।
বর্তমান যুগের ইতিহাসের সঙ্গে সে যুগের কী অভূতপূর্ব সাদৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধরদের দাপট আর স্বার্থান্বেষী ও অর্থ লোভীদের সাম্রাজ্যের কথা একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের দুর্নীতি ও জুলুম অত্যাচারের কাহিনির সাথে আববাসীয় যুগের মন্ত্রীদের অদ্ভুত মিল লক্ষ্য করা যায়। তাই প্রশ্ন জাগে ‘‘ইতিহাসের কি সত্যিই পুনরাবৃত্তি ঘটে?’’
আল-কুরআনে ফেরাউন ও নমরুদের কাহিনির যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা মিশর আর ইরাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এদের কাহিনি শুধু সেই বিশেষ যুগের জন্যও নয় বরং বংশ পরম্পরায় আবহমান কাল থেকেই চলে আসছে। মিশরের জামাল আব্দুল নাসের আর মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পুতুল সরকার মূলত সেই স্বৈরাচারের বংশোদ্ভুত। তাদের হাতে নৃশংসভাবে শহীদ হয়েছেন বিশ্ব বরেণ্য ইসলামি মনীষী হাসানুল বান্না, প্রখ্যাত মোফাসসের ও প্রতিভাবান লেখক সাইয়েদ কুতুবসহ আরও অসংখ্য ইসলামি চিন্তাবিদ, ওলামা ও সংস্কারবাদী মুসলিম মনীষীগণ। এদের অপরাধ ছিল একটাই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েম করে মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার আহবান।
‘‘ওরা (কাফেরগণ) তাদের নিকট থেকে এই অপরাধেরই প্রতিশোধ নিয়েছে যে, তারা সর্বময় ক্ষমতার মালিক আল্লাহর প্রভুত্বেই বিশ্বাস স্থাপন করতো।’’ (সূরা বুরুজ)।
লেখক অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে আববাসীয় যুগের বহু ঘটনার উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ : ইবনে কাসির বর্ণনা করেছেন ‘‘সুলতান মালিক শাহর (হিজরী ৪৮০ সন) কন্যার বিবাহের জৌলুসের কাহিনি। তিনি বলেন, সে বছর মুহররম মাসে রাজধানীতে বাদশাহর মেয়ের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। ১৩০টি উষ্ট্রের পৃষ্ঠ বোঝাই করে মেয়ের জন্য আনা উপঢৌকনগুলো রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়। রোমের মহামূল্যবান দিবাজ’ বস্ত্র দ্বারা উষ্ট্রগুলোকে সাজানো হয়। এসব উপঢৌকনের বেশির ভাগই ছিল স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত তৈজসপত্র। এছাড়া ৭৪টি খচ্চরকে দেশীয় রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ দ্বারা সজ্জিত করে তাদের পৃষ্ঠেও বহন করে আরো উপঢৌকন সামগ্রী রাজধানীতে আনা হয়। এর সঙ্গে কি আমাদের দেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত (২৮ মার্চ ২০০০) ২০ হাজার মেহমান আগমনে বিশ বিবাহ মজলিসের জৌলুসের কথা তুলনা করা যায় না? পত্র পত্রিকা থেকে এই বিয়ের ও বউভাতের যে হিসেব পাওয়া যায়, সেখানে খরচ হয়েছিল কয়েক কোটি টাকা। বিয়ে ও বউভাতের ১ দিনের হিসেবে মোটামুটিভাবে যা জানা গেল তাতে দেখা যায় যে, মেহমান ছিল ২০ হাজার, গরু জবাই হয়েছে ২৬টি, খাসি ৬০ টি ও মুরগি ছিল ২০ হাজার। এটি কি একটি গরিব জাতির দুর্দশার সঙ্গে প্রহসন নয়? অথচ দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছে। মাত্র কয়েক বছর আগের ঘটনা, একটি আরব দেশের প্রেসিডেন্টের ছেলের বিয়ের আনন্দ উৎসবের চিত্র সারা বিশ্বের লোকদের হতবাক করে দিয়েছিল। বিশ্বের আনাচে কানাচে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের হাজার হাজার নর্তক ও নর্তকীদের আমদানি করে দশ দিন যাবৎ নাচ গানের উৎসব করা হয়েছিল। এই বিয়ের মূল বাজেট ছিল কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি কি গরিব মুসলিম বিশ্বের জনসাধারণের সঙ্গে ঠাট্টা করা নয়? এই তো সেদিন খবর বেরিয়েছে যে, বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ গত চার বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনে ফেলেছেন। বাড়ি কিনেছেন লন্ডনে, সিঙ্গাপুরে, দুবাইয়ে, মালয়েশিয়ায়।
বইটিতে আরও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। আর তা হচ্ছে ধর্মের নামে ভন্ডামির নানা চিত্র। তথাকথিত তাসাউফের নামে সরলপ্রাণ মুসলিমদেরকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে জড়ানোর বিচিত্র রূপ হচ্ছে আমাদের দেশের দেওয়ানবাগী, আটরশী, মাইজভান্ডারী। আর ইবলিসের ন্যায় তারাও শিখন্ডী হিসেবে জনগণের মাথায় চেপে বসেছিল ধর্মের দোহাই দিয়ে। আরও মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল শিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন চক্রান্তে। ইসলামের বিজয়ের পর পরাজিত ইহুদি চক্র ছদ্মবেশে মুসলমানদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে আসছিল, খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকেই। আহলে বাইতের নাম করে অত্যন্ত নাজুক ও গুরুত্বপূর্ণ শিরার উপর তারা আঙুল স্থাপন করেছিল সময় ও সুযোগ বুঝেই। যা মুসলিম বিশ্ব আজও ছিন্ন করতে পারেনি। এরা আহলে বাইতের ভালোবাসার ভান করত: মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি দেশ দখল করে নিয়েছিল। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আঘাত করতে থাকে মুসলিম উম্মার পশ্চাৎ দিক থেকে। খ্রিস্টীয় রোমান আর পৌত্তলিক তাতারি হায়েনাদের সম্মুখে মুসলমানদেরকে তুলে দেয় শিকারের জন্তু হিসেবে। টেনে হিঁচড়ে দীর্ঘদিনের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, এভাবেই তারা মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করার গোপন জিঘাংসা পূর্ণ করে। লেখক তাঁর বইতে এই বিষয়টি যথার্থ সফলতার সাথে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। হক্কানি উলামায়ে কেরাম সেই যুগেও বিক্রি হয়ে যায়নি জালিম ষড়যন্ত্রকারী ও বহিরাগতদের কাছে। তাই মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত সে যুগের হক্কানি উলামায়ে কেরামদের নাম ধরে ধরে ড: মুহাম্মদ আবদাহ তার বইতে এ সব উলামায়ে কেরামদের খেদমতকে উজ্জ্বল করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে তখনও মিটি মিটি তারা জ্বলছিল। এ তারাগুলোর সমষ্টিগত আলোকচ্ছটা একদিন উজ্বল হয়ে তার মধ্যে থেকেই চন্দ্রের স্নিগ্ধ আলোর উদ্ভাবন ঘটে। আর এভাবেই দূরীভূত হয়ে যায় মেঘের ঘনঘটা। সুন্নাহ ফিরে পায় তার প্রকৃত উচ্চাসন। তখন উলামায়ে কেরামের অবিরাম প্রচেষ্টায় শিয়া ইজমের বেড়াজল ছিন্ন হয়ে পড়ে। সত্য সমাগত হয়, মিথ্যা অপসারিত হয়।
আল কুদস মুক্তির জন্য আইয়ুবী আন্দোলন মূল তৎপরতা তাদের একার নয়। সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর আগমনের পূর্ব থেকেই উলামায়ে কেরামগণের লাগাতার জেহাদ ও লেখনীরই ফল ছিল এ রক্তক্ষয়ী অভিযান ও ভয়াবহ যুদ্ধ। যে কোন মুক্তি আন্দোলন এক দিনে দানা বাদে না এবং সংগঠিত হয় না। আর গুটিকয় মুজাহিদদের দ্বারাও তা সম্ভব হয়ে উঠে না। সম-সাময়িককালের অন্যান্য আন্দোলনেও আমরা এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করি। বিশেষভাবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন কুসংস্কার আর স্বার্থান্ধতার প্রাচীর দাঁড় করানো হয়, তখন ধর্মান্ধতা ও অজ্ঞতা পথে ছড়িয়ে পড়ে এবং পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে । এসব জাহেলি ঝঞ্জাট দূরীভূত করার সংগ্রাম অত্যন্ত দুরূহ। একটু চোখ মেলে পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই সে সম্পর্কে আমরা ধারণা নিতে পারি। বিভিন্ন ধারার ও রূপের সুফিবাদ তাসাউফ এর নামে পীর মুরিদী ব্যবসা, কবর পূজার শেরকী কার্যক্রম ধর্মীয় আবরণে নানা ধরনের অনাচার রাজনৈতিকভাবে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র মুসলিম সমাজ রূপী বিশ বটবৃক্ষকে যেন পরগাছার ন্যায় সর্বতোভাবে গ্রাস করে ফেলেছে। এখন এ বৃক্ষকে পরগাছার রাহু গ্রাস থেকে আজাদ করা ছোট একটি ব্যাপার নয়। এজন্য প্রয়োজন দুর্দান্ত এক অভিযানের। সর্বোপরি রয়েছে ঠিক সেই যুগের ন্যায় নানা ধরনের আন্তর্জাতিক গোপন ও প্রকাশ্য চক্রান্ত। যা ছিন্ন করার কাজও তত সহজ নয়। কারণ এ সবগুলোই দেশীয় গাদ্দারদের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। সেইজন্যই প্রয়োজন দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলনে অগ্রসর হওয়া। ভাগ্যক্রমে আমাদের বাংলাদেশি সমাজে শিয়া সম্প্রদায় ভুক্ত বিভিন্ন ফিরকার সংখ্যা অতি নগণ্য। কিন্তু ওইসব মতবাদের প্রভাব থেকে এ সমাজও মুক্ত নয়। যা এদেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন রূপে দেশের সাধারণ সরলপ্রাণ মানুষদের বিভ্রান্ত করেছে। সে যুগের বাতেনী ফিরকাগুলোর সাথে আমাদের দেশের শয়তানি পীর- মুরিদী চিন্তা ধারার হুবহু মিল না থাকলেও মূলত: তা একই বৃক্ষেরই নানান ডাল। এটিই মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে রেখেছে অসংখ্য ফেরকায়। আববাসীয়দের সেই আমলের মুসলিম অধঃপতনের মূল কারণগুলো মূলত: অভিন্ন। আমরা কি এর রেশ ধরেই পতনের গভীর সমুদ্রের অতল গহবরে বিলীন হয়ে পড়ছি? আমাদের উলামায়ে কেরাম, লেখক, সাহিত্যিকগণ বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও কুসংস্কার থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্ত করার জন্য জাগ্রত হয়ে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর আগমন পূর্ব পরিস্থিতির মত করে এগিয়ে আসবেন সর্বতোভাবে জেহাদ করার উদ্দেশ্যে? আর আল কুদসসহ ইসলামি উম্মার হারানো অংশগুলোকে পুনরায় একত্রিত করে সারাবিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করবেন? জগৎবাসী আজ তাকিয়ে আছে সেই নেতৃত্বের উপযোগী যোগ্য উলামায়ে কেরামের দিকে। তারা ঐক্যবদ্ধ হলে এখনও সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর আগমন সম্ভব। আমাদের প্রভু, বিশ্ব জগতের মালিক রাববুল আমীন সদা জাগ্রত। বান্দারা প্রস্ত্তত হলেই তিনি সাহায্যের হাত প্রসারিত করবেন; এটিই সত্য আগামী দিনের সূর্যোদয়ের ন্যায়।
ইতিহাসের সম্পূর্ণ পুনরাবৃত্তি ঘটে ঠিক কালে কালে, যুগে যুগে, অক্ষরে অক্ষরে এটা কোন বোকাও বলবে না। ফেরাউন ও নমরূদের স্বেচ্ছাচারিতা, অহমিকা, খোদা দ্রোহী তার সাথে সাথে তাদের তখতে তাউস এর রূপের প্রকাশ ঘটেছিল রেজা শাহ পাহলভীসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বেচ্ছাচারীরা যেমন বিশ্বকে তাদের দাবা খেলার পাতায় রেখে ভাগ বাটোয়ারা করতো, আজকের বিশ্ব পরিস্থিতি কি তার চাইতে ভিন্ন? চেচেনদের ছোট্ট দেশটিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করার ষড়যন্ত্র, কাশ্মীরকে অস্ত্রের মুখে নিশ্চিহ্ন করার ব্রাক্ষণবাদীদের পৌত্তলিক আগ্রাসন, আফগানিস্থান ইরাককে দখল করে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা, সোমালিয়ায় মার্কিন আগ্রাসন, তাতারি চেঙ্গীস খাঁন আর হালাকদের চাইতে কি ভিন্ন? নাম ধামের পার্থক্য থাকলেও মূল দৃশ্যটা কিন্তু একই। বর্তমান বিশ্ব ইহুদি চক্রের হোয়াইট হাউজের লোকেরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলের মূল্যবান সম্পদ। মুসলিম নামধারী দালালদের প্রতারণা, ধোঁকা আর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ছিন্ন ভিন্ন করে খাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের অফুরন্ত সম্পদশালী অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যকে। ইতিহাসের এই অধ্যায়ের সাথে সে অধ্যায়ের সঙ্গে, পরিস্থিতি ও মূল ভাবধারার মিল রয়েছে। যুগ, কাল, তামাদ্দুনিক অবস্থা ভিন্ন হলেও প্রকৃত অবস্থাটি এক ও অভিন্ন।
ইতিহাসের বিবর্তন নামের এই বইটিতে আরব জাহানের বিভিন্ন শাসকদের মধ্যে আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও অসতর্কতার বর্ণনা রয়েছে। আর-এ সুযোগে পূর্ব থেকে ঘাপটি মেরে থাকা মিথ্যাবাদীরা যে সক্রিয় হয়ে সুপরিকল্পিত ভাবে ইসলাম এবং ইসলামি জাহানের ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে তথাকথিত মুসলমান ও ইসলামের দাবি নিয়ে ইহুদিদের গোপন পরামর্শে স্থান-কাল ও অবস্থা ভেদে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে বিভক্ত হয়ে জেগে উঠে ছিল তার কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে। আর এজন্য তখনকার মুসলিম শাসকদেরকে এ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় বহু মূল্য দিতে হয়েছে। মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও মুসলিম জাহানের ঐ সব শত্রুরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধরের মিথ্যা দাবি নিয়ে, মিথ্যা নছব তৈরি করে যুগের পর যুগ বিভিন্ন রাজ্য শাসন করেছে। মূলত: এরা ছিল ইহুদিদের এজেন্ট। তাদের কাজ ছিল মুসলমানদের ক্ষতি ও ধ্বংস সাধন করা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল বাতেনী, ওবায়দী, বুয়াইহী, কারামেতা, বনু হাবদান ও সুলাইহী সম্প্রদায়সমূহ।
প্রথম দিকে ইসলামের ক্ষতি সাধন করতে না পারার কারণে এরা পরদার অন্তরালে থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর মুসলমানদের দুর্বলতার সুযোগে গর্জে উঠে। তথাকথিত এসব মুসলমান নামধারীরা ইসলাম ও ধর্মের দোহাই দিয়ে ক্ষমতা দখল ছাড়াও নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। সুযোগ পেলেই মুসলিম উম্মার পিছন দিক থেকে তারা ছুরিকাঘাত করতো। এভাবে দুনিয়াবী ভোগ বিলাস আর লালসায় মত্ত হয়ে পড়ে তারা। আর ক্ষমতার মোহে হারিয়ে যায় তাদের মনুষ্যত্ব। ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা মুসলমানদের মধ্যে প্রচার করে নানা অপসংস্কৃতি ও ইসলামের অপ ব্যাখ্যা। বিভক্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হয় তারা। তাদের শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লোভে মুসলমানদের উপর যেই সীমাহীন নির্যাতন, হত্যা, সংঘর্ষ আর বর্বর ইতিহাসের সৃষ্টি করেছে, তার বর্ণনাও এই বইটিতে রয়েছে। বইটির শেষাংশে হক্কানি উলামায়ে কেরামের জেহাদ, সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর আন্দোলন ও শাসন এবং আববাসীয় খলিফার আমলে সুন্নাহের প্রকাশ ও জ্ঞান- বিজ্ঞান প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন এবং সংস্কার আন্দোলনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
বইটির অনুবাদ ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে আমাদের অজান্তে ভুলত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। এজন্য সেসব ভুলত্রুটি আমাদেরকে অবহিত করার অনুরোধ থাকল। বইটির অনুবাদ, সম্পাদনা ও প্রকাশনায় যাদের সহযোগিতা পেয়েছি তাদের সকলের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।
এ বইয়ের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব বীর যোদ্ধা গাজী সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর উপর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি আমরা পরিশিষ্টে সংযোজন করলাম।
ভূমিকায় নিজ অভিমত লিখে কলেবর বৃদ্ধি করার চাইতে পাঠকদের দৃষ্টি মূল বইয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে আমি এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০০২
হাফেজ নেছার উদ্দিন আহমদ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/3
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।