hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)

লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ

১.বাগদাদে খেলাফত এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব- সংঘাত
ঐতিহাসিক ইবনে কাছির হিজরী ৩২৪ সালে আববাসীয় খেলাফতের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন :

খেলাফতের অনুষঙ্গ অতীব দুর্বল হয়ে পড়ে। আশপাশের নবাবরা স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসে এবং বাগদাদের বাইরে খলিফার কোন কর্তৃত্বই অবশিষ্ট ছিল না। আর অন্যান্য আশপাশের অঞ্চলের মধ্যে বসরা যোগ দেয় ইবনে রায়েকের সঙ্গে। খুজিস্তান যোগ দেয় আবু আব্দুল্লাহ বুরাইদীর সঙ্গে। আর পারস্য যোগ দেয় ইমাদুদ দওলাহ ইবনে বুয়াইহ এর সঙ্গে, কেরমান যোগ দেয় আবু আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইলইয়াস ইবনে আল- ইয়াসা এর সঙ্গে; মুসেল, যাজীরা, দিয়ারে বকর এবং মুদার ও রবী’আ গোত্র যোগ দেয় বনু হামদান এর সঙ্গে, আর মিশর এবং সিরিয়া ছিল মুহাম্মদ ইবনে তাগজ- এর হাতে। আফ্রিকান দেশগুলো (তিউনিসিয়া) এবং মরক্কো ছিল ফাতেমী খলিফা কাসেম ইবনে মাহদীর হাতে; খুরাসান আর মা-ওয়ারাউন নহর বা মার্ভে ছিল নছর সামানীর হাতে আর বাহরাইন, হাজর এবং ইয়ামামা ছিল আবু তাহের সুলায়মান ইবনে আবু সাঈদ আল- জানাবী আল- কারমাতীর হাতে1।

এমনই ছিল সে সময়ের দ্বন্দ্ব- সংঘাত, আর এভাবেই তারা টুকরো টুকরো হয়ে পড়েছিল।

আমি মনে করি, ইবনে কাছীর যে বর্ণনা দিয়েছেন, খেলাফতের অবস্থা তার চেয়েও শোচনীয় ছিল। কোন কোন সময় এমনও দাঁড়ায় যে, খলিফা যে প্রাসাদে বাস করতেন, তার বাইরে তাঁর কোন কর্তৃত্ব আছে বলে গণ্য করা হতো না। এটা ছিল এক বিস্ময়কর দুর্বলতা। বাগদাদের খলিফারা ছিল খাদেম আর চাকর- বাকরদের হাতের পুতুল। তারা দ্রুত ছুটে যেত আমির- ওমরাদের সৈন্যের জন্য। তারা নিজেরা এ দুর্বলতা উপলব্ধি করতো কিনা, জানি না। কিন্তু তারা মনে করতো যে, তবে তাদের দাস হয়ে থাকার চেয়ে এভাবে বেঁচে থাকা শ্রেয়। অথবা পদ মর্যাদার প্রতি ভালোবাসা এবং এর পেছনে যে সুখ আর বিলাস ও আরাম- আয়েশ রয়েছে, তা যিল্লতী মেনে নেয়ার সীমা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।2 খলিফা মুহাম্মদ ইবনে আহমদ, যার উপাধি ছিল কাহির বিল্লাহ, তিনি যখন পদচ্যুত হন, তখন একটি জুববা ব্যতীত তাঁর কাছে কোন পরিধেয় বস্ত্র ছিল না। এ বস্ত্র খন্ডই তিনি গায়ে জড়াতেন। আর তাঁর পায়ে ছিল কাবকাব নামক এক প্রকার কাষ্ঠ নির্মিত পাদুকা (আমাদের ভাষায় যাকে খড়ম বলা হয়)। তিনি মসজিদে ঘুরে ঘুরে মানুষের নিকট হাত পাততেন3। আর খলিফা একটা বিপ্লবী অভিযানে ব্যর্থ হওয়ার পর পলায়ন করে বাগদাদের জনৈক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ইবনুল জাসসাস এর নিকট আত্নগোপন করেন। অতঃপর তাঁর উপর হামলা চালিয়ে পৈশাচিকভাবে তাকে হত্যা করা হয় (তাঁর অন্ড-কোষ দ্বয় থেঁতলে দেয়া হয়)। অতঃপর একটা চাদরে আবৃত করে তাঁর লাশ পরিবার- পরিজনের নিকট প্রেরণ করা হয়4। আর খলিফা মুস্তাকফীকে (মৃত্যু ৩৩৪ হিজরী) ভাতা দেয়া হয়, যার পরিমাণ ছিল বার্ষিক ৫ হাজার দিরহাম। এ ভাতা দেয়া হয় সিংহাসনারোহী আহমদ ইবনে বুয়াইহ্ এর পক্ষ থেকে। এরপর পাগড়ি ছিঁড়ে ফেলে চক্ষু ফুটা করে5 তাকে পদচ্যুত করে বন্দী করা হয় এবং বন্দী দশাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। খলিফা মুতি লিল্লাহ শাসনামলে রাষ্ট্রের সকল কর্তৃত্ব ছিল মুইযযুদ দওলাহ বুয়াইহীর হাতে আর বড় পদ, যেমন কাজি বা বিচারপতি, পুলিশ বিভাগ এবং হিসাব বিভাগের পদ কেনা- বেচা হতো (আর এটাই ছিল নিরাপত্তার ধরন)।

আর খলিফা আল- মুকতাদির বিল্লাহ- এর জীবনৈতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ১৩ বৎসর বয়সে তাঁর পক্ষে বায়য়াত গ্রহণ করা হয়। তাঁর শাসনামলে খেলাফত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং তার মান নীচে নেমে যায়। রাজত্বের প্রথম দিকেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইবনে মু’তায এর পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। এটা সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই পুনরায় মুকতাদির পদচ্যুত হন। অতঃপর কাহির এর পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। এরপর আবার মুকতাদিরকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তৃতীয় দফায় তাঁকে হত্যা করা হয়। তিনি সম্পদ অপচয় করতেন। রাষ্ট্র ভান্ডারের সমুদয় অর্থ তিনি ব্যয় করে ফেলেন। এরপর সৈন্যদের বেতন দিতে অভাবে পড়লে বেতন না পেয়ে সৈন্যরা তাঁকে হত্যা করে6 ।

খলিফা মুহাম্মদ ইবনে মুকতাদির আররাযী বিল্লাহ এর জীবনী সম্পর্কে খতিব আবু বকর বলেন : তাঁর অনেক গুণ- বৈশিষ্ট্য আছে। সে সবের অন্যতম হচ্ছে তিনি হচ্ছেন সে খলিফা, যিনি জুমার দিন খুতবা পাঠ করেন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যিনি একক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি ছিলেন দানশীল, আলেম প্রেমিক। হিজরী ৩২৯ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন7।

বর্তমানকালে অনেক বিপ্লবই আমাদেরকে সমকালীন আরবীয় ঘটনাবলীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে যারা এ শিল্পে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাদের নীতি হচ্ছে দেশের পুরোপুরি সর্বনাশ না করে তারা কিছুতেই ক্ষমতা ত্যাগ করবেন না।

আমরা অতীতের উদাহরণের দিকে ফিরে যাই। খলিফা কাহির বিল্লাহ যখন তার দু’ প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে সংঘাতে জয় লাভ করেন, তাদের একজন হচ্ছেন; মুনেস আল- কায়েদ আর অন্যজন হচ্ছে ; উজির আলী ইবনে বুলাইক। তখন তাদের উভয়কেই বন্দী করেন এবং বন্দী দশায় কক্ষে প্রবেশ করে তাদেরকে জবাই করে হত্যা করেন। অতঃপর চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী তাদের কর্তিত মস্তক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রেরণ করা হয়8।

খলিফা মুকতাদির এর পুত্র অ মুত্তাকী লিল্লাহ ইব্রাহীম এর জীবনী সম্পর্কে বলা হয়েছে :

গোলযোগ পূর্ণ সময়ে তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ইবনে রায়েক আর বারিদীর ফিতনার ফলে রাজধানী বাগদাদে লুঠপাট শুরু হলে খলিফা মুত্তাকী এবং তাঁর পুত্র মুসলে পলায়ন করেন। তখন বাগদাদে বারিদীর শাসন কর্তৃত্ব চলে। অতঃপর সাইফুদদৌলা আল হামদানী ওয়াসেত- এ আগমন করে বারিদীকে পরাজিত করেন। অতঃপর তূযুন বাগদাদে প্রবেশ করলে খলিফা তাকে আমীরুল উমারা নিযুক্ত করেন। খলিফা বাগদাদ ত্যাগ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে মিশরের শাসনকর্তা আখশীদের সাহায্য কামনা করেন। আখশীদ তাকে উপদেশ দেন বাগদাদ ছেড়ে সিরিয়া বা মিশর গমন করার জন্য। কিন্তু খলিফা এ উপদেশ প্রত্যাখ্যান করে বাগদাদে ফিরে যান। তাঁর বাগদাদ পৌঁছা মাত্র তুর্কি সেনাপতি তুযূন তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত: চক্ষু উৎপাটন করে। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে কাছির বলেন : এ বৎসর (হিজরী ৩৩১ সালে) বাগদাদে রাফেযী ধর্মমত বিস্তার লাভ করে। তখন শহরে ঘোষণা জারি করা হয়: কেউ কোন সাহাবির নিন্দা করলে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব কেউ গ্রহণ করবে না9।

ঐ চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কেবল বাগদাদেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা ছিল সর্বব্যাপী সর্বগ্রাসী। ব্যক্তি স্বার্থ আর আমিত্ব প্রবল হয়ে দেখা দেয়, এর ফলে দেশে গোলযোগ, বিপর্যয় আর অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। হিজরী ৩৩২ সালের ঘটনাবলীতে রেকর্ড করা হয়েছে যে, আবু আব্দুল্লাহ বারিদী তার ভাই আবু ইউসুফের সম্পদ হস্তগত করার জন্য তাকে হত্যা করে10। বাতীহার অধিপতি হুসাইন ইবনে ইমরান ইবনে শাহিন আপন ভাই গাইলাকে হত্যা করার জন্য লোক নিয়োগ করে।

হিজরী ৪০৩ সালে মুনচেহের আপন পিতা জুরজানের অধিপতি কাবূস ইবনে শামকীরকে হত্যা করার জন্য তার সভাসদদের সঙ্গে পরামর্শ করে, যাতে পুত্র সর্বময় কর্তৃত্ব করায়াত্ত করতে পারে11। হিজরী ৪৮৭ সালে সুলতান বারাকিয়ারক আপন চাচা তকসকে সপুত্রক পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে12। বিবেক- বুদ্ধি কতটা লোপ পেতে পারে, তার প্রমাণ এই যে, সুলতানের মৃত্যু উপস্থিত হলে ৪ বৎসরের শিশু পুত্র মালিক শাহকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেন। অথচ আপন ভাই সুলতান মুহাম্মদ তখন বর্তমান ছিলেন। রাজত্ব নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধও চলে। কিন্তু ভাইয়ের হাতে তিনি শাসন-ভার ন্যস্ত করেননি। কার্যত: তখন তার ভাই-ই ছিলেন কর্তৃত্বের অধিকারী। সেনাবাহিনীও ছিল তার কর্তৃত্বাধীন। কিন্তু এ যোগ্য ভাইকে বাদ দিয়ে বাগদাদে শিশু পুত্রের নামে খুতবা পাঠ করা হয়। অতঃপর সুলতান মুহাম্মদ আগমন করলে বাগদাদের পূর্বাঞ্চলে শিশু পুত্রের পক্ষে খুতবা পাঠ করা হয় এবং পশ্চিমাঞ্চলে খুতবা পাঠ করা হয় সুলতান মুহাম্মদের সমর্থনে13।

সীমাহীন আমিত্বের আরো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যায়, যদিও তা মুসলমানদেরকে দুর্বলতার দিকে চালিত করে এবং দুশমনদেরকে শক্তিশালী করে তোলে। দামেশকের অধিপতি মুঈনুদ্দীন আনর ক্রসেডারদের বিরুদ্ধে মুসেলের অধিপতি গাজি সাইফুদ্দীনের সহায়তা কামনা করে বার্তা প্রেরণ করলে জাবাবে তিনি বলেন : আমি বিদ্রোহের করছি। দামেশক আমার হাতে অর্পণ কর, যাতে আমি নিরাপদে থাকতে পারি। আমি তোমার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করব, যদি সাহায্য আমাদের পক্ষে হয়। আমি দামেশ্ককে অধিকার করব না। সেখানে অবস্থানও করব না। কিন্তু মুঈনুদ্দীন আনর নিশ্চিত হতে পারেননি এবং তাকে দামেশকে প্রবেশের অনুমতিও দেনননি14। দুর্বল অবস্থায় কোন রকমে টিকে থাকাকেও তিনি একজন মুসলমান বাদশাহের সহায়তা গ্রহণ করা থেকে শ্রেয় মনে করেন।

হিল্লাহ অঞ্চলের শাসনকর্তা দাবীস ইবনে ছাদাকা আল- আসাদী দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করলে আববাসীয় খলিফা তাকে তলব করেন। তিনি খলিফার তলবে হাজির না হয়ে পার্শ্ববর্তী রোম দেশে পলায়ন করেন। অথচ এই রোমকরা হালব রাজ্য অবরোধ করে রেখেছিল। দাবিস হালব অবরোধে তাদের সহায়তা করে। এই আশায় যে, তিনি তাদের নিকট থেকে হালব অধিকার করতে পারবেন। কিন্তু আল্লাহ রক্ষা করেছেন। তারা এতে সফল হতে পারেনি15। দাবীসের আশা পূরণ হয়নি। ফলে তিনি খলিফার ভয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ান।

হালবের অধিপতি রিদওয়ান ইবনে তাতাশ আপন দু’ভাইকে হত্যা করে বাতেনী সম্প্রদায়ের সাহায্য গ্রহণ করে। আর এসব কিছুই করা হয় রাজত্ব লাভের লোভে16। রাহা নগরটি দু’জন আমির নিজেদের মধ্যে ভাগ- বাটোয়ারা করে নেন। এ দু’জন আমির হচ্ছেন ইবনু উতাইর এবং নাছরুদ দৌলা ইবনে মারওয়ান। ইবনু উতাইর রোম সম্রাট আরমানুসের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। ২০ হাজার দীনারের বিনিময়ে সে তার অংশ রোম সম্রাট আরমানুসের নিকট বিক্রয় করে দেয়। তখন রোমনরা নগরে প্রবেশ করে তার কর্তৃত্ব গ্রহণ করে, মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে। এমন কি মসজিদ পর্যন্ত ধ্বংস করে17।

হিজরী ৪২৬ সালের ঘটনাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইবনে ওয়াসসার নোমাইরী আরবের বদ্দুদেরসহ অন্যদের সহযোগিতায় এক বিশ বাহিনী সমবেত করে রাহা অঞ্চল থেকে রোমানদেরকে বিতাড়িত করেন। নছর ইবনে মারওয়ান নগরীর উদ্দেশ্যে বহির্গত হয়ে লুট-তরাজ আর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চায়18। এদের সম্পর্কে কবি আবুল আলা আল মাআররী বলেন :

يسوسون الأنام بغير عقل : فينفذ أمرهم ويقال ساسه .

‘কোন জ্ঞান- বুদ্ধি ছাড়াই ওরা জনগণের উপর শাসন- কর্তৃত্ব চায়। এদের নির্দেশ জারি হয় এবং বলা হয়- এরাই রাজনীতিবিদ। ’

আন্দালুস তথা স্পেনেও এ ব্যাধি বিস্তার লাভ করে। এ ছিল যেন এক মহামারী, যা অঞ্চলের পর অঞ্চল উজাড় করেছে। ৩০ ফরসখ আয়তন অঞ্চলের মালিক সেজে বসে ৪ জন লোক। এরা প্রত্যেকেই নিজেকে আমীরুল মুমিনীন বলে দাবি করে। ফলে এটা এক চরম হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়19। কর্ডোভার বিপর্যয় আর অরাজকতার দিনগুলোতে উমাইয়া ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হিশাম ইবনে আব্দুল জববার ইবনে নাছের উঠে দাঁড়ায় এবং প্রাচীর ডিঙিয়ে রাজ প্রাসাদে প্রবেশ করে সহায়তা কামনা করলে কর্ডোভার কোন একজন তাকে বলে: আমার আশঙ্কা হচ্ছে, এ বিপর্যয়ে তোমার জীবন যাবে। কারণ, সৌভাগ্য তোমাদেরকে ত্যাগ করেছে। জবাবে তিনি বলেন, আজ আমার হাতে শপথ কর। কাল আমাকে হত্যা করবে20। কোন একজন সেলজুক শাসক ক্রুসেড হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা চালান, কিন্তু তিনি কোন সাহায্য পাননি। তবে তাদের ফিরে আসার পথে সম্রাট মারদিন পেছন থেকে হামলা করে লুণ্ঠন করে21। নিজের গদি হারাবার আশঙ্কায় ফাতেমী উজির ‘শাওর’ ক্রুসেডারদের সঙ্গে মাখামাখি করে এবং তাদের সাহায্য- সহায়তা কামনা করে। এটা করে এজন্য যাতে মিশর সুলতান নুরুদ্দীন মাহমুদের হাতে চলে না যায়।

এহেন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব- সংঘাতের কারণে বাইরের দুশমনরা লোলুপ দৃষ্টি ফেলে। তারা আশপাশের অঞ্চলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। তখন তাদেরকে বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। হিজরী ৩৫১ সালের ঘটনাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, রোমানরা ‘আইন যারবা’ নগরে চড়াও হয় এবং তা অধিকার করে নেয়। রোমান বাহিনীর অধিনায়ক ‘দামাস্তাক’ শহরের মুসলমানদেরকে একটা মসজিদে সমবেত করে। যারা মসজিদের বাহিরে ছিল তাদের সকলকে হত্যা করে। অতঃপর যারা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে নির্দেশ দেয় যেদিকে খুশি সরে পড়তে। তখন তারা দিক বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এদিক- সেদিক ছুটোছুটি করে। তারা জানে না কোন দিকে যেতে হবে। দামাস্তাক ‘আইন যারাবা’ নগরীতে একুশ দিন অবস্থান করে। আশপাশের অনেক দুর্গ সে অধিকার করে নেয়22। একই বৎসর রোমানরা হালব নগরী অধিকার করে নেয়। সাইফুদ্দৌলা প্রতিরোধের কোন প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেনি। ফলে তাদের নিকট পরাজয় বরণ করতে হয়। রোমানরা নগর অধিকার করে নিয়ে লুঠতরাজ আর হত্যাকান্ড চায়। অনেককে বন্দী করে। বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। এসব ধন-সম্পদের মধ্যে সাইফুদ্দৌলার সম্পদও ছিল। ছিল তার অস্ত্রশস্ত্র এবং অন্যান্য রাজকোষের রসদ সম্ভারও23।

হিজরী ৩৫৩ সালে রোমানরা পুনরায় ফিরে আসে। তারা ‘মুহাইছা’ নগর অবরোধ করে রাখে। নগরবাসীকে হত্যা করে। নগরের বাড়ি- ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তারা ফিরে যায়24।

হিজরী ৩৫৮ সালে রোম সম্রাট সিরিয়ায় প্রবেশ করে। কেউ তাকে বাধা দেয়নি। কেউ তার সঙ্গে লড়াইও করেনি। সে ত্রিপোলী পর্যন্ত ছুটে বেড়ায়। শহর- বন্দর জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে দেয়। অতঃপর হেমস নগরে আগমন করে। উপসাগরীয় অঞ্চলে গমন করত: লুঠতরাজ চায়। শহরের পর শহর ধ্বংস করে। তখন হালব নগরীতে সাইফুদদৌলার গোম ‘কারউইয়া’ অবস্থান করছিল। সে রোমানদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়25।

হিজরী ৫৩৯ সালে রোমানরা আশপাশের খ্রিস্টানদের সহায়তায় এন্তাকিয়া শহর অধিকার করে নেয়। তারা শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদেরকে বহিষ্কার করে এবং যুবক আর যুবতীদেরকে বন্দীকরে26।

এ সময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কী ছিল? কিছুই না। তারা কোন উচ্চ বাচ্যই করেনি। যেমন বর্তমান আমাদের অবস্থা, যখন ইসরাইল যে কোন আরব দেশে হামলা চাচ্ছে, অথচ অন্যান্য আরব দেশগুলো নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। গোটা মুসলিম উম্মাহ সম্পর্কে তাদের কোন উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা নেই। বর্তমানের অবস্থা আরো করুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটো কোন মুসলিম দেশ আক্রমণ করলে অন্যান্য মুসলিম দেশ তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে। আর কাফেরদের সহযোগিতা করে ও তাদের নিকট সহায়তা কামনা করে ইসলামপন্থী ও ইসলামি আন্দোলন কর্মীদের দমনের জন্য। আজ প্রায় সকল মুসলিম শাসকদের ভূমিকা এমনি। তারা পাশ্চাত্যের অনুসারীদেরকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তাদের আনুগত্যে প্রতিযোগিতা করে। মনে করে সকল সুখ-শান্তি আর সম্মান শক্তি আমেরিকা বা পাশ্চাত্যের হাতেই। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তারা সমঝোতা আর সহায়তা করতে ব্যস্ত। সম্পর্ক গড়ে তুলতে তারা উৎকণ্ঠিত। এসব শাসকরা নিজেদের জন্য ইতিহাস রচনা করে। কিন্তু তাদের সে ইতিহাস অন্ধকার ইতিহাস। এ ইতিহাস তাদেরকে মর্যাদা দেয় না। মর্যাদা দেয় না তাদেরকেও, যাদের সম্পর্কে তারা নীরবতা অবলম্বন করে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন