মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলমানদের পতন অতীত বর্তমান (সালাহউদ্দীন আইউবীর আবির্ভাব পূর্ব ইসলামি বিশ্ব ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা)
লেখকঃ মুহাম্মদ আল আবদাহ
১৩
১. ওবায়দী সম্পদ্রায় (হিজরী ২৯৭-৫৬৭ সাল)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/13
খেলাফতের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গোপন আন্দোলন আর গুপ্ত তৎপরতা চরমে পৌঁছে এবং তাদের জন্য একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ তীব্র গতিতে চলতে থাকে। এ আন্দোলন এমন একটা আবরণে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, যার বাহ্যিক রূপ ছিল শিয়া ইজমের প্রচার আর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল নিছক কুফরি, তথা নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। সামিয়া শহর2 থেকে যে গোপন ইসমাঈলী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তা ‘সামিয়াকে কেন্দ্র করে উত্তর আফ্রিকায় উর্বর ভূমি অধিকার করতে সক্ষম হয়। তারা পথের কাঁটা অপসারণের মাধ্যমে ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করে। এদের মূল নেতা ছিল হুসাইন ইবনে আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া ছানআনী। যার উপাধি ছিল আবু আব্দুল্লাহ। শিয়া ধর্মমতের প্রচারক হিসেবে সে পরিচিত ছিল। তার পরিচয় নিয়ে জানা যায় যে, লোকটি ছিল অতি ধুরন্ধর। নিঃস্ব আর নিঃসঙ্গ অবস্থায় নিতান্ত একাকী সে আফ্রিকায় প্রবেশ করে নিজের চেষ্টার বদৌলতে আফ্রিকার মালিক বনে বসে3। নিজ মিশনের কাজে তার গুরু ছিল ইবনে হাওশাব। গুরু তাকে শিখিয়ে দেয় যে, হজের মওসুমে মরক্কোর কাতামা গোত্রের সঙ্গে গোপনে মিলিত হবে। তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গোপনে তাদেরকে প্রভাবিত করতে চালাকির জোরে সে সক্ষম হয়। সে তাদের জ্ঞান- বুদ্ধি নিয়ে খেলা শুরু করে। সে তাদেরকে চমৎকৃত করে তোলে এবং তাদের সঙ্গে তাদের দেশে গমন করে। কাতামা এবং অন্যান্য সম্প্রদায় তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠে। তারা অন্যান্য গোত্রের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রবৃত্ত হয়। ফলে মধ্য মরক্কোর শহরগুলোর পতন ঘটে। এসব শহরের মধ্যে সাজমাসা, মিলা, তাহারাত এবং রিকাদা ইত্যাদির নাম উল্লেখযোগ্য। ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করে স্থির হওয়ার পর আন্দোলনের নেতাকে সেখানে আগমন করে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করার জন্য আহবান জানায়। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে এই নেতা ছিল ওবায়দুল্লাহ। সে পারসিক বংশোদ্ভুত বাতেনী সম্প্রদায় ভুক্ত আব্দুল্লাহ ইবনে মায়মুন আল- ফাদাহা- এর বংশধর। আবার কেউ কেউ বলেন, সে ছিল হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মায়মুন আল- ফাদাহ এর পালক পুত্র।4 কিন্তু সে নিজেকে রাসূল তনয়া ফাতেমা রা. এর বংশধর বলে দাবি করতো। অধিকাংশ আলেম, ঐতিহাসিক এবং বংশ বিশারদ তার এ দাবি অস্বীকার করেন। সিরিয়া ত্যাগের পর চরম আত্মগোপন থেকে ওবায়দুল্লাহ নিষ্কৃতি লাভ করে। এ অবস্থায় সে মরক্কো পৌঁছে। কিন্তু সাজমাসার শাসনকর্তা তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়ে হত্যা না করে কারাগারে আটক রাখে। এটা ছিল তার এক চরম ভুল। অতঃপর শিয়া ধর্মমতের অনুসারী আবু আব্দুল্লাহ তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় এবং শিয়া ধর্মমত প্রচারের নেতা হিসাবে জনগণের সামনে উপস্থিত করে। এরা তার হাতে শপথও করে। সে নিজে মাহদী উপাধি ধারণ করে। সেই ছিল ওবায়দিয়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, যা ফাতেমী শাসক গোষ্ঠী নামে ইতিহাসে পরিচিত। উদ্ভব থেকে পতন পর্যন্ত ওবায়দী বা ফাতেমী রাষ্ট্রের উপস্থাপন করা আমাদের লক্ষ্য নয়। তাদের কর্মকান্ড এবং আহলে সুন্নাহ সম্পর্কে তাদের ভূমিকার প্রতি আমরা শুধু পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। ইসলামের মানদন্ডে আমরা তাদের মূল্যায়ন করব, প্রয়োজন অনুপাতে তাদেরকে ওজন করব মাত্র।
ওবায়দী রাষ্ট্র একটা বাতেনী রাষ্ট্র, ফাতেমী নয়। কেবল মাত্র আমাদের নয়, বরং উম্মতের অধিকাংশ আলেমেরই এ মত। যারা তাদের বংশধারা সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন, যারা তাদের অন্তর্নিহিত রহস্য আর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতেন, তাদের বংশধারা সঠিক এবং নির্ভুল হয়ে থাকলে কেন তারা তা খোলাখুলি ব্যক্ত করেনি? তারাতো মিশর, সিরিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার শাসন-কর্তৃত্ব লাভ করেছিল। তখন তাদের ছিল দোর্দন্ড প্রতাপ, অপ্রতিহত শক্তি আর অপ্রতিরোধ্য দাপট। তারা কাদেরকে ভয় পেতো? কেন তারা বলেনি . আমাদের প্রাণ নাশ হতে পারে- এ আশঙ্কায় গোপন আন্দোলন কালে আমরা বংশ ধারা গোপন রাখতে বাধ্য ছিলাম। মিশর বিজেতা তাদের রাজা ইবনে তাবাতাবা, যার উপাধি ছিল আল-মুইয আল- ওবায়দী, শরীফ তাঁকে বংশধারা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তরবারি কোষ মুক্ত করে তিনি জবাব দেন . এটাই হচ্ছে আমার বংশধারা এই বলে তিনি স্বর্ণ ছড়ান। এবার তিনি বলেন; এটাই হচ্ছে আমার বংশ পরিচয়।5 তাদের সম্পর্কে কবি যথার্থই বলেছেনঃ6
إنا سمعنا نسَباًمنكراً يُتلى على المنبر فى الجامع
إن كنتَ فيما تدَّعي صادقاًفاذكر أباً بعدَ الأب الرابع
আমরা শুনতে পাই মিথ্যা বংশের কথা।
মসজিদের মিম্বরে যা পাঠ করা হয়।
তোমার দাবিতে তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে,
চতুর্থ পুরুষের পর কে বলদেখি হে!
আন্দালুসিয়ায় উমাইয়া বংশের খলিফা হাকাম ইবনে আব্দুর রহমান নাছের- এর নিকট আযীয ওবায়দী তাকে গাল-মন্দ আর নিন্দা করে লিখেন- গাল-মন্দের জবাবে চারটা কথা বলা আমি যথেষ্ট মনে করি: তুমি আমাদেরকে জান, তাই নিন্দা কর। আমরা তোমাদের জানলে অবশ্যই জবাব দিতাম।7 আরো একটা বিষয় বিবেচ্য। সে পরিবারটি যে নবী কন্যা ফাতেমার পরিবার হবে- তা প্রকৃতিগত ভাবেই অসম্ভব, অবাস্তব- ফাতেমা রা. এর পরিবারের জন্য এবং ইসলামের জন্য এটা হবে দুঃখ আর কলঙ্ক। তাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তির উদ্ভব হবে, যিনি তাদেরকে আসল বংশধারায় ফিরিয়ে নেবেন। তাঁর সত্য উৎস তাকে সত্যের দিকে নিয়ে যাবে। তবে একটা পরিবার সম্পূর্ণরূপে বাতেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে, তাতো হতে পারে না। মুহাম্মদ ইবনে তুমার্ত এর আহবানে সাড়া দিয়ে মুওয়াহহেদীনরা মরক্কোয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। মুহাম্মদ ইবনে তুমার্ত নিজে মাহদী উপাধি ধারণ করে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সে নিহত ব্যক্তিদের হাড় হাজির করে এবং নানা অলৌকিক কর্মকান্ডের দাবিও উপস্থাপন করে। এরপর তার সঙ্গী এবং তারপরে দ্বিতীয় ব্যক্তি মু'মেনের পরিবার দেশ শাসন করে। আব্দুল মু'মেনের বংশে এমন সব শাসকের উদ্ভব হয়, যারা ইবনে তুমার্ত এর মাহদী আর মাসুম হওয়ার দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করে। অতঃপর হাশেমী বংশের উদ্ভব হয় এবং তারা আন্দালুসে শাসন কার্য চালায়। যারা বানু-হামদুন নামে পরিচিত। তাবারিস্তানে বানু হাসান ইবনে যায়েদ শাসন কার্য চালায়। কেউ তাদের বংশধারা অস্বীকার করেনি। ওবায়দিয়ার শাসন কর্তাদের মতো আচরণও তারা করেনি। আমরা এদের এমন সব কর্মকান্ড দেখতে পাই, যাতে তাদের বীভৎস চরিত্র আর উৎকট অন্তরাত্মার পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা দেখতে পাবো যে, তারা ছিল মুসলমানদের গলার কাঁটা এবং মু'মেনদের উপর চেপে বসা একটা আপদ। সুলতান সালাহউদ্দীনের হাতে তাদের পতন আর ন্যায়পরায়ণ শাসন নূরুদ্দীনের নির্দেশক্রমে তাদের পতন হলে তখন আর তাদের কোন আলামতই অবশিষ্ট থাকে না .
‘‘যেমন নোংরা বৃক্ষ, যাকে মাটির উপর থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে এর কোন স্থিতি নেই (সূরা ইবরাহীম : ২৬)
তাদের কর্মকান্ড আর অন্তর্নিহিত রহস্যের কিছু দৃষ্টান্ত এখানে পেশ করা হচ্ছে .
১. ওবায়দুল্লাহর অপরাধমূলক কর্মকান্ডের একটি হচ্ছে . তার ঘোড়া মসজিদে প্রবেশ করে। তার লোকজনকে বলা হয় . কীভাবে তোমরা মসজিদে ঘোড়া প্রবেশ করালে? জবাবে তারা বলে: তার মল-মূত্র পাক, কারণ, তা মাহদীর ঘোড়া। মসজিদের কর্মকর্তারা এ কথার প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মাহদীর দরবারে নিয়ে হত্যা করা হয়। তার সম্পর্কে ইবনুল আসীর বলেন . শেষ জীবনে ওবায়দুল্লাহ এক বীভৎস ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তার গুহ্যদ্বারে কীট দেখা দেয়। এসব একটি একটি অন্ত্র কেটে কেটে খেতে থাকে। মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকে।8 আবু শামা ওবায়দুল্লাহ সম্পর্কে বলেন . সে ছিল খাবীছ যিন্দীক এবং ইসলামের দুশমন। শিয়া ধর্মমতে বিশ্বাসী বলে জাহির করতো। মিল্লাতে ইসলামির বিনাশে সে ছিল আগ্রহী। ফকীহ, মুহাদ্দিস এবং বিপুল সংখ্যক লোককে সে হত্যা করে। তার সন্তানরাও সেভাবেই গড়ে উঠে। সুযোগ পেলে তারা ঐ রূপ কাজ করতো, অন্যথায় গোপন রাখতো।9
২. মনসুর ইবনে আযীয, যর উপাধি ছিল অ হাকেম বিআমরিল্লাহ, তার নির্দেশে কায়রো শহর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ফলে কায়রোর অধিবাসীরা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। শাসনকর্তা ওবায়দ এবং তার সৈন্যদের সঙ্গে ঘোরতর সংঘর্ষ হয়। বাড়ীঘরে আগুন জ্বলে। ফলে হাকেম ওবায়দ প্রতিদিন বের হয়ে এ দৃশ্য দেখে কেঁদে কেঁদে বলতো . ওবায়দদের সঙ্গে এমন আচর করার এ নির্দেশ কে দিয়েছে? সে নিজে বেরিয়ে আসার কথা প্রকাশ করতো, যে সে উভয় পক্ষের মধ্যে বিচ্ছেদ চাচ্ছে।10
আর এসব এমনই তৎপরতা, যা বাতেনীরা ছাড়া অন্য কেউ বিশ্বাস করতোনা। এ ক্ষেত্রে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, আর যাদের রক্তের সঙ্গে বাতেনীদের রক্ত মিশে গেছে। এ যুগের অর্থাৎ হিজরী ১৫শ শতকের কেউ বাতেনীদের এসব কর্মতৎপরতার ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। এ ব্যাখ্যা দিতে গেলে তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। লোকেরা অবাক হবে আর বিস্ময় প্রকাশ করবে যে, কীভাবে লেবাননে বাতেনীরা ফিলিস্তিনীদেরকে মার দিচ্ছে। এরপর আবার তারাই ফিলিস্তিনীদের জন্য মায়াকান্না কাঁদছে। তারাই আবার দুশমনদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং ফিলিস্তিনী ভূমি মুক্ত করার খায়েশ জাহির করছে! কীভাবে তারা আহলে সুন্নাহকে মার দিচ্ছে এবং জাতীয়তার ধ্বজা উত্তোলন করছে। যারা ইতিহাস অধ্যয়ন করে না, সে সব অবচেতনরা আবার কিনা এসব দাবিতে বিশ্বাসও করছে!
৩. ওবায়দীদের ইতিহাস যারা অধ্যয়ন করেছে, তারা কেবল তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই জানে না। তারা কেবল এতটুকুই জানে যে, অমুক প্রস্থান করেছে আর অমুক তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। ওবায়দীদের সম্পর্কে তারা কেবল এটাই জানে যে, এরা জ্ঞান- বিজ্ঞানকে ভালোবাসে আর তার বিস্তার ঘটায়। এদের উদ্দেশ্য দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ প্রচার করা। যারা আলেমদের জীবনী রচনা আর আলোচনা করেন, তারা ছাড়া একথা আর কেউ বলে না যে, এসব জালিমরা আহলে সুন্নাহর আলেমদের প্রতি হস্ত প্রসারিত করেছে। ওদের রক্তে নিজেদের হস্ত রঞ্জিত করেছে। বরং যেসব ছাত্ররা ইসলামের ইতিহাস পাঠ করে, তারা মাআদ ইবনে ইসমাঈলের কথাও উল্লেখ করে, যার উপাধি ছিল মুইয্ . তা এমন ভঙ্গিতে উল্লেখ করে, যেন সে ইতিহাসের কোন মহান হিরো। যেন সে-ই কায়রো নগরীর পত্তন করেছে এবং আল-আজহারের ভিত্তি স্থাপন করেছে। বরং কায়রোকে তার নামের সঙ্গে যুক্ত করে তারা বলে মুইয্- এর কায়রো। অথচ . সেনাপতি জাওহর মিসরবাসীদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেন যে, সুন্নাহর প্রতি অবিচল থাকার জন্য তারা প্রয়োজনে স্বাধীনতা বিসর্জন দিতেও দ্বিধাবোধ করবে না। কিন্তু সৈন্যরা যখন দেশে প্রবেশ করে শক্ত হয়ে বসে এবং মুইজ কায়রোয় ফিরে আসে, তখন আর এ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং তখন ফাতেমীরা মিশরীয়দেরকে উস্কে দিতে ত্রুটি করেনি।11 এই বিশ্বাসঘাতক মুইযই প্রখ্যাত আলেম আবু বকর নাবলসীকে হেস্তনেস্ত করেন, যখন উক্ত আলেমকে মুইজ এর সম্মুখে উপস্থিত করা হয় এবং তাদের মধ্যে নিম্নরূপ কথোপকথন হয়: মুইজ . তুমি না সে ব্যক্তি, যে বলে আমার কাছে দশটি তীর থাকলে নয়টি রোমানদের প্রতি নিক্ষেপ করতাম এবং একটি নিক্ষেপ করতাম মিসরিদের (ওবায়দী) প্রতি?
শায়খ . না, বরং আমি তোমাদের প্রতি নয়টি তীর নিক্ষেপ করতাম আর একটি নিক্ষেপ করতাম রোমানদের প্রতি।
. কেন?
. কারণ তোমরা মুসলিম উম্মার দীনে পরিবর্তন সাধন করেছ, নেককার লোকদেরকে হত্যা করেছ এবং তোমরা আল্লাহর আলোকে নির্বাপিত করেছ।
তখন এ মহান আলেমকে চাবুক মারা হয়। অতঃপর তাঁর গায়ের চামড়া ছিলে ফেলা হয়। অবশেষে তাঁকে হত্যা করা হয়। আর এ কাজটি করে একজন ইহুদি। জালিমদের উপর আল্লাহর লা’নত।
এদের হাতে যেসব আলেমকে জীবন দিতে হয়, বারাকা শহরের কাজি মুহাম্মদ ইবনে হুবলা তাদের অন্যতম। বারাকা শহরের শাসক কাজির নিকট আগমন করে বলে- আগামী কাল ঈদ হবে। কাজি বললেন, চাঁদ না দেখলে ঈদ হবে না। মানুষ রোজা ভাঙবে না। জোরপূর্বক ঈদ করালে পাপের দায়িত্ব বহন করতে হবে তোমাকে। এরপর শাসক ঈদের প্রস্ত্ততি শুরু করে। কাজি বললেন . আমি বের হব না এবং নামাজও পড়াব না। ওবায়দুল্লাহর দৌহিত্র মনসুর ওবায়দী কাজিকে তলব করে বললেন . তুমি পদত্যাগ কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করলেন। ফলে তাঁকে সূর্যের তাপে দগ্ধ করে শাস্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রৌদ্রের তাপে ছটফট করতে করতে তিনি ইন্তিকাল করেন। পিপাসায় কাতর হয়ে পানি চাইলে তাঁকে পানি পান করাতে অস্বীকার করা হয়। অতঃপর তাঁর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। জালিমদের প্রতি আল্লাহর লা’নত।12
তাদের হাতে নিহত আলেমদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছেন ইমাম ইবনুল বারদূন। ইনি আবু ওসমান ইবনুল হাদ্দাদ এর শিষ্য ছিলেন। শিয়া মতাবলম্বী আবু আব্দুল্লাহ তাঁকে হত্যা করে। তাঁকে হত্যার জন্য প্রস্ত্তত করার পর জিজ্ঞাসা করা হয় . তুমি কি তোমার ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করবে? তিনি পালটা প্রশ্ন করলেন . আমি কি ইসলাম ত্যাগ করব? অতঃপর তাঁকে শূলী বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলেম আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন।13
তাঁদের মধ্যে আর একজন ছিলেন ইমাম আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে খাইরূন আল-মাগাফিরী। ওবায়দুল্লাহ মাহদীর নির্দেশক্রমে সেনাবাহিনীর সদস্যরা চরম নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হত্যা করে। এর কারণ তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মুজাহিদ। ওবায়দুল্লাহ এবং তার সৈন্যদেরকে তিনি ঘৃণা করতেন।14
ওবায়দীদের বিরুদ্ধে বিপ্লবে যে সব আলেম অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অপর একজন হচ্ছেন আবুল আরব মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে তামীম আল- মাগরেবী। আবু ইয়াযীদ খারেজীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে তিনি অংশগ্রহণ করেন। আহলে সুন্নাহর আলেমগন বলতেন . কাফির ওবায়দীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে আমরা আহলে কিবলা অর্থাৎ খারেজিদের সঙ্গে এক যোগে কাজ করতে পারি।
হাফেজ শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন . ওবায়দ বংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্পর্কে মরক্কোর আলেমগন একমত। কারণ, ঐ আলেমগন ওবায়দীদের মধ্যে স্পষ্ট কুফরি প্রত্যক্ষ করেন, যার কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। এ বিষয়ে আমি অনেক ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। ইতিহাসের সকল ঘটনাই এর স্বপক্ষে মত দেয়। ওবায়দুল্লাহর পুত্র কায়েস এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য অনেক আলেম এবং আবিদ আবু ইয়াযীদ খারেজীর সঙ্গে এক জোট হয়ে বহির্গত হন। তাঁরা বলেন . যারা আহলে কেবলা নয়, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমরা সকল কেবলা পন্থীরা এক জোট হয়ে কাজ করতে পরি। 15
হিজরী ৩৮১ সালের ঘটনাবলীতে দেখা যায়, জনৈক মিশরীয় ব্যক্তিকে প্রহার করে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরানো হয়। তার অপরাধ এই যে, তাঁর কাছে ইমাম মালেক সংকলিত হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা পাওয়া গেছে।16 বিশিষ্ট তার্কিক এবং আলেম মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল- হাজবী বলতেন . আরবের জালিম বর্বররা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কারণে কায়রোয়ান, তিউনিসিয়া এবং আলজেরীয়ার অনেক অঞ্চলে মালেকি মাজহাব প্রচার হতে পারেনি। ফাতেমীরা এসব বর্বরকে মিশর থেকে বিতাড়িত করে যেন তাদেরকে আজাবের ঘোড়ার মতো চাবুক মেরে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এসব বর্বররা ৪৪৯ হিজরীতে কায়রোয়ান শহর ধ্বংস করে সেখান থেকে আলেম দেরকে নির্বাসিত করে। অনেকেই তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।17
ওবায়দীদের আক্বীদা-বিশ্বাস এবং কারামেতাদের সঙ্গে যোগসূত্র
যেসব গ্রন্থকার, মুহাদ্দেসীন ওবায়দী রাষ্ট্র সম্পর্কে লিখেছেন, তাঁরা কেবল তাদের রাজনৈতিক জীবন চরিত লিপিবদ্ধ করেছেন। কাছে বা দূরে থেকে তাদের শাসকদের জঘন্য বিশ্বাস সম্পর্কে তারা কোন আলোচনাই করেননি। তাঁরা একথাও বলেন না যে, তারা আসলে ছিল বাতেনী সম্প্রদায়ের লোক, যদিও তারা তা অস্বীকার করতো। কারণ, যে জাতিকে তারা শাসন করতো, তাদের সম্মুখে তারা ‘তাকিয়া’ নীতি প্রয়োগ করতো। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ওবায়দীদের সর্বশেষ শাসক আল- আযেদ-এর উপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করার ব্যাপারে আলেম সমাজের নিকট ফতোওয়া তলব করেন। তাকে হত্যা করা জায়েয হবে বলে আলেমগন ফতোওয়া দান করেছেন। কারণ, আযেদ এবং তার সঙ্গী-সাথীদের আক্বীদা-বিশ্বাসে বিকৃতি-বিচ্যুতি ঘটেছিল। এ ফতোওয়া দানে শায়খ নাজমুদ্দীন খাবুশানী ছিলেন অত্যন্ত কঠোর নীতির লোক। তিনি এদের এক একটি কুকীর্তি শুমার করে তাদের ঈমান-ই নেই বলে মত প্রকাশ করেন।18
তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লিকান বলেন . আযেদ ছিল চরমপন্থী শিয়া। সাহাবায়ে কেরামের নিন্দাবাদে সে ছিল অত্যন্ত কঠোর নীতির অনুসারী। কোন সুন্নী মতাবলম্বীকে দেখতে পেলেই তার রক্ত হালাল বলে মনে করতো।19 নাস্তিক কারামেতা সম্প্রদায়ের সঙ্গে এদের ছিল গভীর সম্পর্ক। উভয় সম্প্রদায়ের আহবান আর প্রচারের মূল সূর ছিল এক ও অভিন্ন। মিশর দুর্গ অবরোধের খবর শুনে ফাতেমী খলিফা মুইজ কারামেতাদের নিকট পত্র প্রেরণ করে। এতে সে নিজের ফজিলত আর কৃতিত্ব বর্ণনার পাশাপাশি নিজের পরিবার-পরিজনেরও কৃতিত্ব বর্ণনা করে বলে যে, কারামেতা আর আমাদের মূল আহবান এক ও অভিন্ন। কারামেতারা এ আহবানই জানিয়ে আসছে বলেও সে উল্লেখ করে।20 ইমাম শাতেবী বলেন . ওবায়দীয়াদের মুইদ হচ্ছে অন্যতম দাজ্জাল। এরা আফ্রিকার শাসন কর্তৃত্ব লাভ করে। এদের সম্পর্কে কথিত আছে যে, এরা মুয়াযযিনকে আশহাদু আন্না মুইদ্দান রাসূলুল্লাহ অর্থাৎ ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুইদ আল্লাহর রাসূল’’ বলতে বাধ্য করে। মুসলমানরা সে মুয়াযযিনকে হত্যা করতে উদ্যত হলে মুইদ তাকে এ নির্দেশ দিয়েছে কিনা, তা প্রমাণ করার তাকে মুইদের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কথা পেশ হলে সে বলে . তাদের প্রতি আজান ছুঁড়ে মার। তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক।21
আবু তাহের কারামেতী পবিত্র মক্কা নগরীতে অশ্লীল অপকর্ম চালাতে উদ্যত হলে ওবায়দুল্লাহ মাহদী সে সম্পর্কে জানতে পেরে তার ঐ উদ্যোগের নিন্দা করে তাকে লিখে . তুমি যা কিছু করেছ, তার দ্বারা তুমি আমাদের দল আর আমাদের রাষ্ট্রের প্রচারকদের উপর কুফরি ও নাস্তিক্যবাদী নাম আরোপ করলে, আমাদেরকে কাফের এবং নাস্তিক বলে প্রমাণ করলে22 বাগদাদে বাতেনীদের ধর-পাকড় শুরু হলে জনৈক কারামেতী বলে . মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে জা’ফর ছাদেক আমাদের ইমাম। তিনি মাহদী। মরক্কোয় তিনি অবস্থান করছেন।23
হিজরী ৪১৪ সালের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে জানা যায় যে, মিসরে ওবায়দী শাসকদের একজন ভারী অস্ত্র দ্বারা হাজরে আসওয়াদে আঘাত হানতে থাকে। তার অপর হাতে ছিল তরবারি এবং সে বলছিল . হাজরে আসওয়াদ, মুহাম্মদ এবং আলীর কত কাল ধরে পূজা চলবে? ইয়া মানের জনৈক হাজি তার এসব কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ফলে খঞ্জর দ্বারা তাকে খুন করেন।24
তাদের সম্পর্কে এটাই হচ্ছে আসল কথা। রিসালাত আর নবী- রাসূলদের প্রতি তাদের ঈমান নেই। তাদের আহবানে বিশ্বাসী জনৈক ব্যক্তির বক্তব্য থেকে এ কথার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। মুসলিম বিশ্বের দিকে দিকে হাশাশী সম্প্রদায়ের লোকেরা যে সন্ত্রাস আর ভয়-ভীতির বীজ বপন করে, তা ছিল মিসরে ইসমাঈলী ওবায়দীদের কর্মকান্ডের ফল। মিসরে আল-মাওত দুর্গের নেতা হাসান সাববাহ, আলেম -ওলামা, ওমারা আর মুজাহিদদের হত্যা করার জন্য যে লোক প্রেরণ করতো, মিসরে ওবায়দীদের হাতেই সে এ দীক্ষা গ্রহণ করে। এই হাশাশী সম্প্রদায়ের লোকেরাই আলেম - ওলামাদেরকে হত্যা করে, যাদের সম্পর্কে পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি। আর শাম দেশে দুরূজ আন্দোলনও ওবায়দী শাসকদের কর্মকান্ডের ফল। ওবায়দী শাসকদেরকে তারা খোদা মনে করে। এরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। এদের রাজনৈতিক ভূমিকা কলঙ্কময়। উক্ত অঞ্চলে রাজনীতি সম্পর্কে ব্রিটেন ছিল তাদের প্রতি আস্থাবান। ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের দুরূজ গ্রুপের রয়েছে ঘনিষ্ঠ এবং গভীর সম্পর্ক। এমনকি এ সম্পর্ক উল্লেখ করার জন্য দুরূজ গ্রুপের কোন কোন লেখক ব্যাকুল হয়ে উঠে। আর তাদের সম্পর্ক স্থাপনকে বৈধতা দেয়ার জন্যও তারা প্রচেষ্টা চায়।25 বর্তমানের সঙ্গে অতীতের যোগসূত্র প্রমাণ করার জন্য আমরা এখানে তাদের কেবল একটা ভূমিকার উল্লেখ করব, ১৯৮২ সালে ইসরাঈল দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালিয়ে বৈরুত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সুন্নীণ মুসলমানরা এ হামলার প্রতিবাদ করে এবং তাদের যা অস্ত্রশস্ত্র আছে, তা দিয়ে প্রতিরোধ করে। কিন্তু দুরূজ গ্রুপ আদৌ কোন প্রতিরোধের চেষ্টাই চালায়নি। ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার জনৈক নেতা স্পষ্ট বলেন . শেষ যুদ্ধে দুরুজরা কোন চেষ্টাই চালায়নি, অথচ তাদের হাতে ছিল উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র।26 কোন রকম প্রতিরোধ ছাড়াই ইসরাইলী সৈন্যদের একটা দল শাওফ অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। দুরূজ গ্রুপের নেতা মুহাম্মদ আবু শোকরা জনৈক মার্কিন সাংবাদিকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন . ইসরাইলী সৈন্যরা দুরূজদের ছিনিয়ে নেয়া অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছে।
তাদের মন্ত্রী বর্গ
শাসনকার্য পরিচালনায় ওবায়দীরা, ইহুদি-নাছারা এবং চরমপন্থী শিয়াদের সহায়তা গ্রহণ করে। তাদের একজন প্রসিদ্ধ মন্ত্রী এয়াকুব ইবনে কালস ছিল ইহুদি বংশদ্ভুত। বদর জামী এবং তার পুত্র আকম ছিল একজন শিয়া। তাদের রাষ্ট্রে এটাই ছিল বৈশিষ্ট্য। এজন্য কেউ তাদেরকে ঈর্ষা করতোনা। আসলে তারা মুসলিম জাহান গ্রাস করার পরিকল্পনা আঁটে। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছে মাধ্যমের কোন গুরুত্ব ছিল না। কার কাছে থেকে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, তা দেখতো না তারা। যেমন সাম্প্রতিক কালে আমরা খোমেনী এবং তার দলকে দেখতে পাই।
এদের কয়েকজন মন্ত্রী সম্পর্কে নমুনা স্বরূপ কিছুটা আলোচনা করা হচ্ছে।
১. ইয়া’কুব ইবনে কালস
আজীজ উপাধি ধারী নেযারের শাসনামলে ইয়াকুব ছিল প্রথম মন্ত্রী। তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে আসাকের বলেন .
বাগদাদের বাসিন্দাদের মধ্যে সে ছিল একজন খাবীছ ইহুদি। ধুরন্ধর এ লোকটি অনেক চালাকি জানতো। কাফুর আখশীদির শাসনামলে সে মিসরে আগমন করে। তার মধ্যে পাকা বুদ্ধিমত্তা লক্ষ্য করে কাফুর বললেন . লোকটি যদি মুসলমান হতো তাহলে তার মন্ত্রী হতে পারত। এ কথা শুনে তার মধ্যে মন্ত্রী হওয়ার লোভ সৃষ্টি হয়। আর এ লোভেই সে মুসলমান হয়। উজির ইবনে খানজাবা তার মতলব বুঝতে পারেন। তিনি এ মতলববাজ লোকটাকে পাকড়াও করতে মনস্থ করেন। ধুরন্ধর লোকটা তা টের পেয়ে মরক্কোর দিকে পালিয়ে যায়। সেখানে সে কিছু ইহুদির সঙ্গে যোগ দেয়, যারা এক সময় মুইজ এর সঙ্গী ছিল। দুর্দিনে এরা মুইজ-এর জন্য টাকা কড়ি খরচ করে, তার জন্য অনেক পথ উন্মুক্ত করে, শাসক হওয়ার সুন্দর উপায় বের করে এবং তার সঙ্গে মিসরে আগমন করে।27 তার মৃত্যুতে শাসক আজীজ বেশ ব্যথিত হয়। ইবনে কালস এত বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ আর মণি-মাণিক্য ছেড়ে যায়, যার বর্ণনা দেয়া অসম্ভব।28 ঐতিহাসিকরা বলেন- সে মুসলমান হয়েছিল। তার অর্থ সে ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে ইসমাঈলী মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছি। আর এ ইসমাঈলী ধর্মমত ছিল তার গুরুদের ধর্ম। এটা কোন ইসলাম?
২. ঈসা ইবনে নাসতূরাস নাছরানী
ইবনে কালসের পর ঈসা ইবনে নাসতুরাস বাদশাহ আজীজের উজির হয়। এ সময় তার স্ব গোত্রীয় খ্রিস্টানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে মুসলমানরা চিৎকার জুড়ে দেয়। ইহুদিদেরকেও সে সহায়তা করে। ইহুদি মিনসাকে সে নিজের প্রতিনিধি করে সিরিয়ায় প্রেরণ করে। মিসরবাসীদের এ অভিযোগ শাসক আজীজের নিকট পৌঁছাবার জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করে। তারা এক খন্ড কাগজের টুকরায় লিখে রৌপ্যের মূর্তির হাতে স্থাপন করে। তাতে লেখা ছিল . যিনি মিনসা দ্বারা ইহুদিদেরকে এবং ঈসা ইবনে নাসূতরাস দ্বারা খ্রিস্টানদেরকে সম্মানিত করেছেন, তার শপথ, আর শপথ তার, যিনি তোমার দ্বারা মুসলমানদেরকে অপদস্ত করেছেন। আর সে মূর্তিটাকে স্থাপন করে রাখে বাদশাহ আজীজের পথে। বাদশাহ আজীজ দেখে তা যে মূর্তি, সে কথা বুঝতে পারেনি। মূর্তির হাত থেকে পত্রটি তুলে নিয়ে তা পাঠ করে দেখে। এরপর কিছু দিন উযীরকে দূরে রাখে। পরে বাদশাহের কন্যার সুপারিশে তাকে পুনরায় কাছে ফিরিয়ে আনে।29
৩. শাসক ইবনুল আজীজ এর শাসনামলে (৩৮৬-৪৪১ হি:)
শাসক ইবনুল আজিজ হুসাইন ইবনে জাওহারকে সর্বময় কর্তা নিযুক্ত করে আর রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব তার হাতে ন্যস্ত করে। আর হুসাইন ইবনে জাওহার ফাহাদ ইবনে ইবরাহিম খ্রিস্টানকে তার সহকারী নিযুক্ত করে। এই হাফেজের শাসনামলে মনসুর ইবনে আবদুন নামে জনৈক খ্রিস্টান উজিরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। ইতিপূর্বে সে সিরিয়ায় একটা দফতরের দায়িত্বে ছিল। ইবনে ফানেস তার পরিচয় দিয়ে বলে . সে ছিল একজন ভীষণ খাবীছ লোক।30 এই হাকিমের শাসনামলে জুরয়া ইবনে ইসা ইবনে নাসরাস এবং ছায়েদ ইবনে ঈসা ইবনে নাসতূরাসকেও মন্ত্রীর পদে নিয়োজিত করা হয়।
৪. মুস্তানসিরের শাসনামলে (৪২৭-৪৮৭ হি:)
তার শাসনামলে ছাদকা ইবনে ইউসুফ আল ফালাহী মন্ত্রিত্ব লাভ করে, যে ছিল একজন ইহুদি। সে ইসমাঈলী ধর্মমত গ্রহণ করে। হিজরী ৪৩৬ থেকে ৪৩৯ সন পর্যন্ত মন্ত্রীপদে বহ ছিল। তার সময়ের প্রসিদ্ধ উজিরদের অন্যতম হচ্ছে বদর জামি। সেও ছিল একজন শিয়া মতাবলম্বী।
৫. মুস্তা’লী এবং আমের এর শাসনামল
এ যুগে মন্ত্রিত্ব লাভ করে বদর জামির পুত্র আফজ। তার সময়ে খলিফার মাতার প্রাসাদের দায়িত্ব গ্রহণ করে জনৈক ইহুদি। ফলে ইহুদিদের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং রাষ্ট্রীয় পদে ইহুদিদেরকে নিযুক্ত করা হয়।31 আর ইংরেজরা আন্তাকিয়া (এন্টিয়ক) শহরে প্রবেশ করলে এই আফজ তাদের নিকট সিরিয়াকে বিভক্ত করার প্রস্তাব পেশ করে। ফলে উত্তর সিরিয়া অধিকার করে নেয় ইংরেজরা, আর মিশর করায়াত্ত করে ফিলিস্তিন।32 কিন্তু পরবর্তীকালে প্রকাশ পায় যে, তার এ প্রস্তাব কোন সুফল বহন করে আনেনি। কারণ ক্রুসেডারদের প্রধান টার্গেট ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস। ফলে ৪৯১ হিজরীতে বায়তুল মুকাদ্দাস অধিকার করে নেয়। আমরা দেখতে পাই যে, এ সময় সুন্নীণ উজির ইবনুস সার ক্রুসেডারদের প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন ফেরত দানের ব্যাপারে নূরুদ্দীন মাহমুদের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চালায়। এ সময় তাদের উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ছিল আমির উসামা ইবনে মুনকেয আল-কেনানী। তখন ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য সুন্নীণ উজির ইবনুস সালার নৌবহর প্রস্ত্তত করেন। এজন্য তিনি তিন লক্ষ দীনার ব্যায় করেন।33
হাফেজের শাসনামলে ৫২৪-৫৪৪ হিজরীতে বাহরাম আরমানী উজির হন। হাফেজ তাকে সাইফুল ইসলাম এবং তাজুল খেলাফত উপাধি দান করেন। অথচ সে ছিল একজন ইহুদি। সে ইসলাম গ্রহণ করেনি। তাদের শেষ দিকের মন্ত্রীদের মধ্যে ছিল ‘তায়ে ইবনে রুজেক’, যে ছিল একজন আর্মেনীয় শিয়া।
তারা কি বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষা করেছে?
ক্রুসেডাররা যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালনা করে তখন ফাতেমী খলিফা মুস্তা’লীর উজির আফজ জামী ছিল সেনা প্রধান। বায়তুল মুকাদ্দাস হেফাজত করা ছিল তার দায়িত্ব। ক্রুসেডাররা যখন বায়তুল মুকাদ্দাস অবরোধ করে রাখে, তখন তারা যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। ফলে ইংরেজরা অতি সহজে তা অধিকার করে নেয়। এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান বলেন . তখন বায়তুল মুকাদ্দাস যদি সিরিয়ার তুর্কি শাসকদের অধীনে থাকত, তাহলে মুসলমানদের জন্য তাই-হতো কল্যাণকর।34 ‘শাওর’ ক্রুসেডারদের সাহায্য কামনা করে। সুলতান সালাহউদ্দিন যখন মিশর অধিকার করেন এবং ওবায়দীরা যখন শাসন-ক্ষমতা হারায় তখনও অবশিষ্ট ওবায়দীরা শাসন ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য একমত হয়ে কাজ করে। তারা সিসিলির ইংরেজদের সহায়তা কামনা করে তাদের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করে। কিন্তু ষড়যন্ত্র প্রকাশ পেয়ে যায় এবং ষড়যন্ত্রের বড় হোতা নিহত হয়।35 তবে কি বাতেনীদের হাতে সর্বদা মুসলমানরা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, যারা আল্লাহর দুশমনদের হাতে দেশ তুলে দেয়? এরপরও মুসলমানরা এ জঘন্য আচরণের কথা ভুলে যায়। এরা মুসলমানদেরকে জাতীয়তা আর গণ স্বার্থের কথা বলে এখনও কি ধোঁকা দেবে?
রাষ্ট্র কি নিরপেক্ষ ছিল?
কোন কোন ঐতিহাসিক লেখক লিখেন যে, ওবায়দী রাষ্ট্র তাদের ইসমাঈলী ধর্মের ক্ষেত্রে গোঁড়া ছিল না। তারা একথা লিখেন যে, ওবায়দীরা শক্তি প্রয়োগ করে তাদের বাণী প্রচার করেনি। কিন্তু আসল সত্য এর বিপরীত। আসলে ওবায়দী রাষ্ট্রের শাসনকর্তারা তাদের ধর্ম প্রচার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে। তারা প্রচার কার্য আর প্রচারকদের যথাযথ আয়োজন করে। এ জন্য যথারীতি একটা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ইসমাঈলী ধর্মমত প্রচার আর তা সংগঠিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার করেছে উজির ইবনে কালস। তার চেষ্টা আর উদ্যোগে জামেয়া আযহারে একটা সুসংগঠিত পাঠ দানের ব্যবস্থা গড়ে তো হয়। জামেয়া আযহারে উজির ইবনে কালসকে শিক্ষা দানের জন্য এক দল ফকীহ নিযুক্ত করা হয়।36 এসব প্রচারকদের উপরে ছিল নকিব বা প্রধান। এদের সকলের উপর ছিল আরো বড় একজন কর্মকর্তা। তাকে রাষ্ট্র প্রধান আর ধর্মমতের অনুসারীদের যোগসূত্র বলে মনে করা হতো। সমস্ত রাষ্ট্রীয় ফকীহ আর প্রচারক এ প্রধান কর্মকর্তার অধীনে থাকতো। ধর্মের মূলনীতি বিষয়ে এদের রচিত নিবন্ধ সে প্রধান কর্মকর্তার নিকট উপস্থাপন করা হতো।37 প্রধান প্রচারক কাজি নোমান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মনসুর নিজে মালেকী মাজহাবের অনুসারী হলেও এদের জন্য গ্রন্থ রচনা করেন। তাদের ধর্মমত প্রচারে সহায়তা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বাতেনী ধর্মমত গ্রহণ করেন। এমনকি হানাফি, মালেকি এবং শাফেয়ি মাযহাবের38 বিরুদ্ধে তিনি গ্রন্থও রচনা করেন। আর দ্রুজদের প্রচারকরা সিরিয়া দেশের ওয়াদী মতী অঞ্চলে আরবদের মধ্যে তাদের প্রচার কার্য চালায়। হাসান ইবনে সাববাহ- এর মতো এরা ভীতি আর সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে মুসলিম বিশ্বে। তাদের আহবান আর আন্দোলনের প্রভাব এমনই ছিল যে হালব বা আলোপ্পোর শাসক মাহমুদ ইবনে ছালেহ ইবনে মিরদাস ওবায়দীদেরকে বাদ দিয়ে বনু আববাস এবং সেলজুকদের নামে খুতবা পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আলোপ্পোর সাধারণ মানুষ এ উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যান করে। তার এর বিরুদ্ধে মসজিদে যা কিছু পাওয়া যায়, তা হাতে নিয়ে বলে . এগুলোতো আলী ইবনে আবু তালিবের চাটাই। আবু বাহর অন্য চাটাই নিয়ে আসুক, যার উপর মানুষ নামাজ পড়বে। দামেশকে যখন তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয় তখন তারা দিকে দিকে ‘হাইয়্যা আলা খাইরিল আমাল’ বলে আজান দেয়া হয়। আবু বকর (রা:) এবং ওমর (রা:) কে গালিগালাজ করে নানা কথা মসজিদের দরজায় লেখা হয়। তুর্কি এবং কুর্দী শাসকদের শাসনামলে পরিবর্তন সাধনের পূর্ব পর্যন্ত তা বহ ছিল।39
হাফেজ শামসুদ্দীন আ্য-যাহাবী তাদের সাধারণ সৈন্যদের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, তারা ছিল মন্দের মূল আর বদমেজাজি। বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা যিন্দীক ছিল, তারা ছিল মন্দের এক শেষ। মুসলমানরা তাদের দ্বারা হত্যা, গালমন্দ আর ছিনতাইয়ের শিকার হয়। এমনকি ‘সূর’ অঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের জুলুম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোমের খ্রিস্টানদের সহায়তা কামনা করেছিল। তারা রাস্তাঘাট আর হাম্মামখানা থেকে নারীদেরকে অপহরণ করে নিয়ে যোতো।40 মিসরে আহলে সুন্নাহর আলেমদের ওপর এসব নির্যাতন কখনো কিছুটা হ্রাস করা হতো, যখন তারা প্রত্যক্ষ করতো যে, মরক্কোর আলেমদের উপর তাদের এসব নির্যাতন ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ তারা মনে করতো যে, নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক তাদেরকে বাতেনী ধর্মে দীক্ষিত করার সাধ্য তাদের রয়েছে।
ঐতিহাসিক ইবনে কাসীর ওবায়দীয়া রাষ্ট্রের শাসকদের সম্পর্কে বলেন যে, চরিত্রের দিক থেকে তারা ছিল সবচেয়ে অপবিত্র শাসক। আর অভ্যন্তরীণ রীতি-নীতির বিচারে এরা ছিল সবচেয়ে খাবীছ। তাদের শাসনামলে বেদআত আর অন্যায়-অশ্লীলতা দেখা দেয়। সন্ত্রাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সৎ আলেমদের সংখ্যা হ্রাস পায়। শাম দেশে খ্রিস্টান, দ্রুজ আর হাশিমী সম্প্রদায়ের লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং সাহেলী অঞ্চলে ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে।
এখানে একটা প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, এসব ওবায়দী যদি কারামেতাদের মতো একই ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকে অথবা শিয়া হিসাবে হামদানীদের সঙ্গে যদি তাদের যোগসূত্র থাকে, তবে তারা কেন পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, কেন এক দল অপর দলকে হত্যা করে? আলোপ্পোর অধিকার করার জন্য ওবায়দীদেরকে সৈন্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আবুল ফাজায়েল হামদানী তাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, রোমানদের সাহায্য গ্রহণ করেন। রোমান বাহিনীর অধিনায়ক হস্তক্ষেপের মূল্য আদায় করে হেমছ এবং শিজার অঞ্চল অধিকার করে নেয়।41 আর কারামেতা সম্প্রদায় মিসরে অভিযান পরিচালিত করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে গোপনে বাহরাইনে তাদের নিজ অঞ্চলে সরে যায়।
এ প্রশ্নের জবাব এই যে, সেকালে যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটানো ছিল সাধারণ ব্যাপার। আশপাশের সম্প্রসারণবাদী দেশগুলোর প্রতিরোধের জন্য শত্রুর কাছ থেকেও সাহায্য নেওয়া হতো। তখন নৈতিক মূল্যবোধ আর মানসিক শক্তি সাহস এমনই নীচে নেমে যায় যে, তারা কোন ধর্মের ধারে কাছেও ছিল না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/494/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।