hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

২৮
ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ
নেক আমল যেমন ঈমানকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, অনুরূপ পাপ ঈমানকে কলুষিত করে। তবে কতক পাপ এমন রয়েছে যে, এর দ্বারা ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়। এগুলোর কোন একটি বান্দার দ্বারা সংঘটিত হলে সে ঈমান থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার উপর মুরতাদের হুকুম প্রযোজ্য হয়। যদিও সে কোন কোন ক্ষেত্রে ঈমানদারীর পরিচয় দিয়ে থাকে। যদি সে জীবিত থাকাবস্থায় তওবা করে এর থেকে ফিরে না আসে তবে সে জাহান্নামী হবে। আল্লাহ সবাইকে হেফাযত করুন।

সাধারণত আকীদার কিতাবগুলোতে ঈমান ভঙ্গের দশটি কারণ উল্লেখ রয়েছে। সেগুলো হলো :

১. আল্লাহর সাথে শরীক করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ﴾

যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (ফলে) তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)

২. আল্লাহ এবং তাঁর বান্দার মাঝখানে কোন মাধ্যম স্থির করা এবং তার কাছে সুপারিশ কামনা করা বা তার উপর তাওয়াক্কুল করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ﴾

তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَاۤ اِلَى اللهِ زُلْفٰۤى اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِيْ مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ﴾

যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তাদের ইবাদাত এজন্য করি, যাতে তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। তারা যে বিষয়ে মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মিথ্যুক ও কাফিরদেরকে হেদায়াত করেন না। (সূরা যুমার- ৩)

দুনিয়ার সকল কাফির ও মুশরিকরাও এ কথাই বলে থাকে যে, আমরা স্রষ্টা মনে করে অন্যান্য সত্তার ইবাদাত করি না। আমরা তো আল্লাহকেই প্রকৃত স্রষ্টা বলে মানি এবং তাঁকেই সত্যিকার উপাস্য মনে করি। যেহেতু তাঁর দরবার অনেক উঁচু, আমরা সেখানে কী করে পৌঁছতে পারি? তাই আমরা এসব দেবতাদেরকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি, যাতে তারা আমাদের প্রার্থনা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়।

৩. কাফিরদেরকে কাফির মনে না করা অথবা তাদের কুফরী সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের কুফরী মতবাদকে সঠিক বলে মনে করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾

যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

(সূরা আলে ইমরান- ৮৫)

৪. রাসূল ﷺ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সেই দ্বীন সম্পর্কে অথবা দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ اَبِاللهِ وَاٰيَاتِهٖ وَرَسُوْلِهٖ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ اِنْ نَّعْفُ عَنْ طَآئِفَةٍ مِّنْكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً ۢبِأَنَّهُمْ كَانُوْا مُجْرِمِيْنَ﴾

হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতসমূহের সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে? এখন কোন ওজর পেশ করো না। কেননা তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের একদলকে ক্ষমা করি তবে আমি অপর দলকে শাস্তি প্রদান করব। কেননা তারা অপরাধী। (সূরা তাওবা- ৬৫, ৬৬)

৫. যাদু বা মন্ত্র করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوا الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَۚ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ﴾

সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিত। (সূরা বাক্বারা- ১০২)

৬. মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের পক্ষ নেয়া এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَۘ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍؕ وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْؕ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। কেননা, তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। (এরপরও) তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

ওহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের বাহ্যিক পরাজয় ঘটলে মুনাফিকরা ভাবল ইয়াহুদিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা দরকার। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আশ্রয় মিলবে। অতঃপর ইয়াহুদিরা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, ইবনে উবাই তৎক্ষণাৎ তাদের পক্ষ অবলম্বন করল এবং বলল, আমি ভয় করি; কেননা অভাব অনটনের সময় তাদের ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই। এ সম্বন্ধে এ আয়াতটি নাযিল হয়।

৭. রাসূল ﷺ আল্লাহর পক্ষ হতে যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সেই দ্বীনকে বা দ্বীনের কোন বিষয়কে অপছন্দ করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اتَّبَعُوْا مَاۤ اَسْخَطَ اللهَ وَكَرِهُوْا رِضْوَانَهٗ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾

এটা এজন্য যে, যা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে তারা তার অনুসরণ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করে। এজন্য আল্লাহ তাদের আমলসমূহকে বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৮)

৮. ভালোবাসার ক্ষেত্রে কাউকে আল্লাহর ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ﴾

আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় ভালোবাসে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা এর চেয়ে দৃঢ়তর। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)

৯. মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর পক্ষ হতে যে জীবনব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তার পরিবর্তে অন্য কোন জীবনব্যবস্থাকে উত্তম মনে করা : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا ۢبَيْنَهُمْ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيَاتِ اللهِ فَاِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾

নিশ্চয় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম। যারা মতভেদ করেছে তাদের জ্ঞান আসার পরেই পরস্পরের বাড়াবাড়ির কারণে তারা মতভেদ করেছে। আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৯)

১০. আল্লাহর দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়া : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَاۤ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ﴾

যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেয়া হয়েছে অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা সাজদা- ২২)

তাওহীদ সংক্রান্ত ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ :

আবদুর রহমান ইবনে সালেহ আল মাহমুদ তাঁর রচিত ‘‘আল ঈমান হাকীকাতুহু, খাওয়ারিমুহু ওয়া নায়াকিযুহু’’ নামক কিতাবে ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে তার কিছু আলোচনা করা হলো :

তাওহীদ সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কারো ভুল থাকে অথবা কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন আকীদা পোষণ করে অথবা কথা বলে অথবা আমল করে, যা তাওহীদের বিপরীত তাহলে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ঈমানের মূল বিষয়ই হচ্ছে তাওহীদ। অর্থাৎ ঈমানকে শিরকমুক্ত রাখা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اَ لَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْاۤ اِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ اُولٰٓئِكَ لَهُمُ الْاَمْنُ وَهُمْ مُّهْتَدُوْنَ﴾

যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শিরক) দ্বারা কলুষিত করেনি- নিরাপত্তা কেবল তাদের জন্যই এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আন‘আম– ৮২)

এখন যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর এই একত্ববাদকে কথায় হোক অথবা কাজে হোক অথবা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে হোক অস্বীকার করে অথবা আল্লাহর গুণাবলিতে শরীক স্থাপন করে তাহলে সে মুমিন থাকে না। অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে উদাসীন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا يُؤْمِنُ اَ كْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ﴾

তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ- ১০৬)

মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করত না। তাদেরকে যখন প্রশ্ন করা হতো যে, আসমান ও জমিনের মালিক কে? অথবা কে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন? তখন তারা উত্তরে আল্লাহর কথাই বলত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللهُ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ﴾

আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, কে তোমাদেরকে আকাশ হতে রিযিক দান করে? অথবা শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কার হাতে? অথবা কে জীবিতকে মৃত হতে এবং মৃতকে জীবিত হতে বের করেন? কে সকল বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা বলবে, এসব আল্লাহই করেন। সুতরাং আপনি তাদেরকে বলুন, তারপরেও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরা ইউনুস- ৩১)

তাওহীদের প্রকারভেদের আলোকে ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো :

তাওহীদে রুবূবিয়্যাতের ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণ :

প্রত্যেক এমন বিশ্বাস, কথা অথবা কাজ, যার দ্বারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতকে অথবা আংশিক রুবূবিয়্যাতকে অস্বীকার করা হয়- এমনসব কথা, কাজ বা বিশ্বাস দ্বারা ব্যক্তি ঈমান থেকে বেরিয়ে যায়। অথবা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের গুণে কেউ যদি নিজেকে গুণান্বিত করে তাহলেও সে ঈমান থেকে বেরিয়ে যাবে। যেমন ফিরাউন বলেছিল, اَنَا رَبَّكُمُ الْاَعْلٰى অর্থাৎ আমিই সর্বোচ্চ রব। [সূরা নাযিয়াত- ২৪।] অথবা রাজত্বের মালিক হওয়ার দাবি করা অথবা রিযিকদাতা হওয়ার দাবি করা অথবা এগুলোকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর প্রযোজ্য করা। অনুরূপভাবে যেসব কাজ ও গুণাবলি একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট তা কোন বান্দার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা- এসবই কুফরী। এগুলোর মাধ্যমে বান্দা ঈমান থেকে বেরিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ-

১. সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া অথবা জীবন ও মৃত্যু দেয়া- এসবের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক মনে করা।

২. এ আকীদা পোষণ করা যে, কেউ আল্লাহর সৃষ্টিকে রিযিক দানে সক্ষম অথবা রিযিক থেকে বারণ করতে সক্ষম অথবা আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে লাভ বা ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে- এসব আকীদা পোষণ করা।

৩. এ আকীদা পোষণ করা যে, বান্দার জীবনের সকল সফলতা তার নিজের চেষ্টা এবং কৃতিত্বের ফলাফল।

৪. এ আকীদা পোষণ করা যে, মানুষ আইন অথবা শরীয়াত প্রণয়নের অধিকার রাখে।

আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণ :

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের জন্য অনেক নাম ও গুণাবলি নির্ধারণ করেছেন, যা দ্বারা তিনি বিশেষভাবে গুণান্বিত। কোন ব্যক্তি যদি এসব গুণাবলির কোন একটি দ্বারা নিজেকে গুণান্বিত করে অথবা আল্লাহকে এমনভাবে গুণান্বিত করে, যা দ্বারা তার সিফাতের বিরোধিতা হয়, তাহলে তার এমন কাজ হবে কুফরী। এর উদাহরণ হলো-

১. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি অথবা এর কিছু অংশ অস্বীকার করা অথবা আল্লাহর জন্য এমন কোন গুণ সাব্যস্ত করা, যা তাঁর নাম ও গুণাবলিকে সমর্থন করে না।

২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তার অর্থকে অস্বীকার করা অথবা তার সঠিক অর্থকে বিকৃত করা অথবা ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা তার মূল অর্থকে সরিয়ে ফেলা অথবা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলি থেকে দূরে রাখা।

৩. সৃষ্টির সাথে আল্লাহর কোন গুণাবলির তুলনা করা অথবা আল্লাহকে এমন গুণে গুণান্বিত করা, যা তাঁর সাথে মানায় না। যেমন, আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করা অথবা মনে করা যে, আল্লাহ ঘুমান, আল্লাহ ভুলে যান- এ রকম আরো যত ত্রুটিপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

তাওহীদে উলূহিয়্যাতের ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণ :

আল্লাহ তা‘আলা হলেন একক সত্যিকার উপাস্য। তিনি ছাড়া অন্য যত উপাস্য রয়েছে সবই বাতিল। তারা কেউই ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয়। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি এ আকীদার বিপরীত আকীদা পোষণ করে অথবা এমন কোন কথা বলে বা এমন কোন কাজ করে, যা এই তাওহীদকে অস্বীকার করে অথবা এর কোনটিকে নিষেধ করে অথবা এর থেকে কোন কিছুকে ত্রুটিযুক্ত করে অথবা এর কোন কিছুকে অন্য কারো জন্য নির্দিষ্ট করে, তবে সে অবশ্যই কুফরী করল এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল।

অধিকাংশ মানুষই অতীত ও বর্তমান সর্বযুগে এই তাওহীদে উলূহিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে। কেননা তারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতকে অস্বীকার করে না। বরং তারা এ স্বীকৃতি দেয় যে, আল্লাহ তা‘আলাই হলেন রব, সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা। কিন্তু তারা দাসত্বকে অন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করে। ইবাদাতের ক্ষেত্রে শিরকের কারণে আল্লাহ তা‘আলা এসব লোকদেরকে কাফিরদের মধ্যে গণ্য করেছেন। কারণ ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্যই। সৃষ্টির কেউই এর উপযুক্ত নয়। মানুষের পরীক্ষার মূল বিষয় এটিই যে, বান্দা তার ইবাদাতকে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে কি না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ﴾

আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।

(সূরা যারিয়াত- ৫৬)

﴿اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ﴾

বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত না করতে। এটাই শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়। (সূরা ইউসুফ- ৪০)

আল্লাহর বিধিবিধানের ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ :

দ্বীনে ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান। চাই সেটা আকীদার ক্ষেত্রে অথবা ইবাদাতের ক্ষেত্রে হোক অথবা মুয়ামালাত বা লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক অথবা চারিত্রিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে হোক। এই দ্বীন হচ্ছে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ সম্বলিত। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন যে, কিসের মধ্যে বান্দার কল্যাণ এবং কিসের মধ্যে বান্দার অকল্যাণ রয়েছে।

সুতরাং আল্লাহর শরীয়াত পালন করা প্রত্যেক জ্ঞানবান ও সুস্থ বালেগ ব্যক্তির উপর ফরয। এর বিরোধিতা করা কোনভাবেই জায়েয নয় অথবা আল্লাহর বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে কোন অজুহাত পেশ করাও জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে এ উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন। এ উদ্দেশ্য যদি না থাকত, তাহলে মানুষ সৃষ্টির কোন অর্থ থাকত না।

আল্লাহ তা‘আলার সকল বিধিবিধান অথবা এর মধ্যে কোন একটির বিরোধিতা করা অথবা আল্লাহর কোন বিধিবিধান থেকে বিমুখ হওয়া- এটা হচ্ছে কুফরী কাজ। কেননা ঈমানের চাহিদা হলো, আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং তার নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে বিরত থাকা। মুসলিম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হলো, আল্লাহর শরীয়াতের সামনে আত্মসমর্পণ করা, এর উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং এ কথা বলা যে, আমি শুনলাম এবং মেনে নিলাম। বিশ্বাস করলাম এবং সত্যায়ন করলাম। এ ছাড়া আল্লাহর কোন আদেশ নিষেধের সামনে মুমিন ব্যক্তির কোন কথা থাকতে পারে না। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈসহ সকল নেক বান্দাদের উক্তি এমনই ছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

﴿اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾

মুমিনদের উক্তি তো এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম; মূলত তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা নূর- ৫১, ৫২)

অন্যদিকে সর্বযুগে আল্লাহর বিধিবিধানের ক্ষেত্রে কাফিরের চরিত্র হচ্ছে, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং আল্লাহর শরীয়াত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা এবং আল্লাহর বিধিবিধানের ত্রুটি বের করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اَجْرَمُوْا كَانُوْا مِنَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا يَضْحَكُوْنَ وَاِذَا مَرُّوْا بِهِمْ يَتَغَامَزُوْنَ وَاِذَا انْقَلَبُوْاۤ اِلٰۤى اَهْلِهِمُ انْقَلَبُوْا فَكِهِيْنَ وَاِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوْا اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ لَضَآلُّوْنَ وَمَاۤ اُرْسِلُوْا عَلَيْهِمْ حَافِظِيْنَ فَالْيَوْمَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُوْنَ عَلَى الْاَرَآئِكِ يَنْظُرُوْنَ﴾

যারা অপরাধী তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত এবং তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেত তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করত। যখন তারা পরিবারের কাছে ফিরে যেত তখন আনন্দ করত। আর যখন তারা মুমিনদেরকে দেখত তখন তারা বলত, এরা পথভ্রষ্ট। অথচ এদেরকে (মুমিনদেরকে) তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করা হয়নি। আজ মুমিনগণ কাফিরদের নিয়ে উপহাস করছে এবং সুসজ্জিত আসনে বসে তাদেরকে অবলোকন করছে। (সূরা মুতাফ্ফিফীন, ২৯-৩৫)

সুতরাং আল্লাহর শরীয়াত তথা তার বিধিবিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অথবা তাতে সন্তুষ্ট না হওয়া কুফরী। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। আর এই বিমুখ হওয়া এবং আল্লাহর শরীয়াতের ত্রুটি বের করা আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ ﷺ যা নিয়ে এসেছেন তা অস্বীকার করাকেই বুঝায়। আর এটা হচ্ছে ঈমান ভঙ্গের এক বড় কারণ।

অনুরূপভাবে যেসব মুসলিম আল্লাহর শরীয়াত পালন করেন তাদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা- এ কারণেই যে, তারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করেন অথবা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা- এটাও কুফরী এবং ঈমান ভঙ্গের কারণ। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীনের সাথে শত্রুতা এবং আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার শামিল। আর আল্লাহর শরীয়াত নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার দ্বারা ব্যক্তি এটা বুঝাতে চায় যে, আল্লাহর শরীয়াতে ত্রুটি রয়েছে। এজন্য সে পরোক্ষভাবে শরীয়াত প্রণেতা হওয়ার দাবিদার হয়ে যায়। এভাবে সে নিজেকে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয়।

আল্লাহর বিধিবিধানের ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহ তিনভাবে হয়ে থাকে। (১) বিশ্বাসগত (২) উক্তিগত ও (৩) কর্মগত। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বিশ্বাস, কথা এবং কাজের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াতের অথবা রাসূলের কোন সুন্নাতের ত্রুটি বের করা অথবা এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা অথবা এটাকে মিথ্যারোপ করা অথবা এটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা- এসবই ঈমান ভঙ্গের কারণসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। নিচে এ সংক্রান্ত কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো :

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গের কারণ :

এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি মুখে কোন কিছু বলুক অথবা না বলুক অথবা এ ব্যাপারে কোন কাজ করুক বা না করুক, তাতে কিছু যায় আসে না। শুধু যদি এসব আকীদা পোষণ করে তবে তার ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১. মুহাম্মাদ ﷺ এর রিসালাতকে অস্বীকার করা অথবা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। এমনকি তাঁর রিসালাতের কোন বিষয় অথবা তিনি শেষ নবী হওয়ার বিষয় অথবা তিনি যা কিছু সংবাদ দিয়েছেন তার কোন কিছুকে অস্বীকার করা অথবা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা অথবা বিশ্বাস করার পর এর ত্রুটি অনুসন্ধান করা।

২. ইসলামের রুকনসমূহের কোন একটিকে অস্বীকার করা অথবা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা।

৩. ঈমানের ৬টি রুকনের মধ্য থেকে কোন একটিকে অস্বীকার করা অথবা জান্নাত, জাহান্নাম, পুরস্কার, শাস্তি অথবা জিন, ফেরেশতা অথবা নবী ﷺ এর মিরাজ- এসব অথবা এর কোন একটিকে অস্বীকার করা অথবা এতে সন্দেহ পোষণ করা।

৪. কুরআনের কোন কিছুকে অস্বীকার করা অথবা এ বিশ্বাস রাখা যে, কুরআনের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু আছে।

৫. দ্বীনের কোন মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করা। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদির কোন একটিকে অস্বীকার করা।

৬. দ্বীনের কোন হারাম বিষয়কে হালাল মনে করা। যেমন- হত্যা, যিনা, সুদ ইত্যাদি হারাম বিষয়কে হারাম মনে করা।

৭. রাসূলগণের কোন একজনকে অস্বীকার করা, নিজে নবুওয়াত দাবি করা অথবা কেউ নবুওয়াত দাবি করলে তার সত্যায়ন করা।

৮. এ আকীদা পোষণ করা যে, ইসলামী শরীয়াত থেকে কোন কোন বিষয়ে বের হয়ে যাওয়া জায়েয এবং সে ক্ষেত্রে অন্য কোন বিধান পালন করা জায়েয আছে।

উক্তি বা কথার মাধ্যমে ঈমান ভঙ্গের কারণ :

১. আল্লাহ তা‘আলাকে গালি দেয়া অথবা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে গালি দেয়া অথবা ফেরেশতাদেরকে গালি দেয়া অথবা ইসলামকে গালি দেয়া।

২. আল্লাহ তা‘আলা অথবা তাঁর কোন কথা অথবা কুরআনের কোন আয়াত অথবা তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।

৩. এ কথা বলা যে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই অথবা এ কথা বলা যে, ইসলামের বিধান সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় অথবা এ কথা বলা যে, বর্তমান যুগে ইসলাম প্রযোজ্য নয়।

৪. এ কথা বলা যে, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মুসলিমদেরকে পিছিয়ে দিয়েছে অথবা তাদের দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।

কর্মগত ঈমান ভঙ্গের কারণ :

১. কাফিরদের শি‘আর তথা যেসব চিহ্ন কাফিরদের আলামত বহন করে সেসব চিহ্ন ধারণ করা। যেমন- গলায় ক্রুশ ঝুলানো, ক্রুশ অঙ্কিত পোষাক পরিধান করা, অগ্নিপূজকদের টুপি পরিধান করা, হিন্দুদের ধুতি পরিধান করা অথবা কপালে তিলক লাগানো ইত্যাদি।

২. ইসলামের কোন নিদর্শনের অবমাননা করা। যেমন- মসজিদের অবমাননা করা, কুরআন মাজীদের অবমাননা করা। কাফিরদের জন্য উপাসনালয় তৈরি করা অথবা কাফিরদেরকে তাদের ইবাদাতে সহযোগিতা করা।

৩. এমন কোন কাজ করা, যে ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত যে, এটা একমাত্র কাফিরই করতে পারে।

৪. কাফির ও মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়া।

৫. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এককভাবে নির্ধারণ না করা। যেমন- আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান দ্বারা ফায়সালা করা।

৬. আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করা।

৭. আল্লাহর সাথে অন্য কারো ইবাদাত করা।

৮. আল্লাহ যেভাবে মানুষের লাভ ও ক্ষতি করতে পারেন সেভাবে অন্য কাউকে লাভ-ক্ষতি প্রদানের উপযুক্ত মনে করা।

৯. কোন ইবাদাতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে পালন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চাওয়া।

১০. আল্লাহর বড়ত্বের সমান অন্য কাউকে বড় মনে করা। চাই সে ফেরেশতা হোক অথবা নবী হোক অথবা ওলী অথবা কোন কবরওয়ালা হোক অথবা কোন পাথর হোক অথবা কোন গাছ হোক।

১১. রুকূ, সিজদা, রোযা, তাওয়াফ, কুরবানী, মান্নত ও বিনয় প্রকাশ ইত্যাদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা।

১২. সালাত ত্যাগ করা। কেননা কোন ফরয আমল থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা ঐ আমল পালনের প্রতি অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আর এটা অন্তরে ঈমান না থাকারই প্রমাণ বহন করে। আর সালাত হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পালনীয় বিধান। এটাই ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلَاةُ . فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ

আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের ও কাফিরদের মধ্যে যে পার্থক্যকারী জিনিস রয়েছে তা হলো, সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করল। [তিরমিযী, হা/২৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/১০৭৯; সুনানে বায়হাকী আল কুবরা, হা/৬২৯১।]

وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقٍ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ : كَانَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ -  - لَا يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْاَعْمَالِ تَرْكُهٗ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلَاةِ

আবদুল্লাহ ইবনে শাক্বীক্ব আল উকাইলী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথিগণ সালাত ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কিছুকে কুফরী হিসেবে মনে করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৬২২; মিশকাত, হা/৫৭৯; রিয়াযুস সালিহীন, হা/৪৭০; জামেউল উসূল ফিল আহাদীস, হা/৩২৬৫।]

আবু হাতীম (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর উপর কুফর শব্দকে প্রয়োগ করেছেন। কেননা সালাত ত্যাগ করা কুফরীর প্রথম ধাপ। যখন ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে এবং সালাত ত্যাগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করে নেয় তখন সে অন্যান্য ফরয ইবাদাতও ত্যাগ করে। আর যখন সে সালাত ত্যাগে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন কার্যত সে সালাত অস্বীকারকারী হয়ে যায়। এজন্য নবী ﷺ সালাত ত্যাগকারীর শেষ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করেই তার উপর কুফর শব্দ প্রয়োগ করেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৬৩।]

উপরোক্ত বিষয়গুলো হলো ঈমান ভঙ্গের কারণ। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব হলো সে যেন তার দ্বীনকে হেফাযত করে। অতএব সে মুখ দ্বারা এমন কোন কথা উচ্চারণ করবে না অথবা অন্তরে এমন কোন আকীদা পোষণ করবে না অথবা এমন কোন কাজ করবে না, যার কারণে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।

যদি কোন সময় কারো দ্বারা ঈমান ভঙ্গের কোন কারণ সংঘটিত হয়ে যায়, তবে তার উচিত হলো তাড়াতাড়ি ঈমানকে নবায়ন করা, তওবা-ইস্তেগফার করা, লজ্জিত হওয়া এবং পরবর্তীতে আর যেন তা সংঘটিত না হয়, সে জন্য দৃঢ় সংকল্প করা। কেননা বান্দার প্রত্যেকটি কথা ও কাজ আল্লাহ রেকর্ড করে রাখছেন। আল্লাহর হিসাবের খাতা থেকে কিছুই বাদ পড়ছে না। এমনটি কখনো হবে না যে, বান্দা ঈমান ভঙ্গের কোন কাজ করল, অথচ তা তার ফেরেশতারা লিখে রাখেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ لَا يَرٰى بِهَا بَأْسًا يَهْوِيْ بِهَا سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا فِي النَّارِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় কোন কোন ব্যক্তি এমন কিছু কথা বলে, যার পরিণাম সে লক্ষ করে না। অথচ এর ফলে সে জাহান্নামের আগুনের ৭০ বছরের (রাস্তা পরিমাণ) গভীরে চলে যায়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন