hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

৩৩
প্রচলিত শিরকসমূহ
সমাজে অনেক ধরণের শিরক প্রচলিত রয়েছে। এ সম্পর্কে জানা প্রত্যেকটি মুসলিমের উপর ফরয। কেননা কোন্ কোন্ কাজ শিরকের অন্তর্ভুক্ত, তা না জানলে শিরক থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সমাজে প্রচলিত কিছু শিরকের বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো :

১. اَلرِّيَا বা লোক দেখানো আমল গোপন শিরক

اَلرِّيَا (আর রিয়া) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, দেখানো, অবলোকন করানো, দৃশ্যমান করা ইত্যাদি। শরীয়াতের পরিভাষায় রিয়া হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন আমল করার অভিনয় করা অথচ নিয়ত থাকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জন করা অথবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদাত বা ভালো কাজ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾

যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)

হাদীসে এসেছে,

عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ صَلّٰى يُرَائِي فَقَدْ اَشْرَكَ، وَمَنْ صَامَ يُرَائِي فَقَدْ اَشْرَكَ، وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ

শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করল সে শিরক করল, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য রোযা রাখল সে শিরক করল, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য যাকাত দিল সে শিরক করল। [মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৬৯৯৩।]

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ لِمَكَانِ الرَّجُلِ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, গোপন শিরক হলো কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য আমল করে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৯৩৬।]

রিয়ার ভয়াবহতার ব্যাপারে সতর্কবাণী :

রিয়ার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। নবী ﷺ তাঁর উম্মতের ব্যাপারে অন্য কিছুর চেয়ে রিয়াকে বেশি ভয় করেছেন। হাদীসে এসেছে,

عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ قَالُوْا : وَمَا الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ : اَلرِّيَاءُ ، يَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ : اِذْهَبُوْا إِلَى الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُرَاؤُوْنَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوْا هَلْ تَجِدُوْنَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً

মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য যে বিষয়টি আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই তা হলো ছোট শিরক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন, রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষের পুরস্কার দান করবেন তখন তাদেরকে বলবেন, তোমরা তাদের কাছে যাও, দুনিয়াতে তোমরা যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে। অতঃপর দেখো! তাদের কাছ থেকে কিছু পাও কিনা। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০৩০।]

এটি দাজ্জালের ফিতনা থেকেও মারাত্মক :

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ ، قَالَ : خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ ، فَقَالَ : أَ لَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِيْ مِنَ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ ؟ قَالَ : قُلْنَا : بَلٰى ، فَقَالَ : اَلشِّرْكُ الْخَفِيُّ ، أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّيْ ، فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهٗ ، لِمَا يَرٰى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন আমরা মাসীহে দাজ্জালকে নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বললেন, আমার নিকট মাসীহে দাজ্জাল থেকেও বেশি ভয়ের বিষয় কোনটি তা কি বলব? রাবী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, গোপন শিরক। যেমন- কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াল এবং তা সুন্দর করে আদায় করতে থাকল, যাতে কোন লোক তাকে লক্ষ্য করে। আর এটাই হলো গোপন শিরক। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২০৪।]

২. তাবিজ-কবজ ব্যবহার শিরক

আল্লাহই একমাত্র ভালো ভাগ্য ও মন্দ ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক, কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক, রোগ থেকে মুক্তিদাতা ও সন্তানদাতা। তাবিজ-কবজ ব্যবহার করে এসব কিছুর ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত এগুলোর উপর নির্ভর করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া মুসীবত দূর করা অথবা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা (সুতা) ইত্যাদি পরিধান করাও শিরক। যেমন- বিভিন্ন ফকীরের তাবিজ, খাজা আজমিরী দরবারের লাল কিংবা সাদা-কালো সুতা হাতে বাঁধা, দরবারী তাবিজ, বড় হুজুর বা ছোট হুজুরের তাবিজ, ইমাম সাহেবের তাবিজ, পীরের তাবিজ, অষ্টধাতুর আংটি, বিভিন্ন পাথরের আংটি ইত্যাদি। এসব বস্তুর উপর নির্ভরশীল আকীদা-বিশ্বাস শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ اَفَرَاَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ اَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهٖۤ اَوْ اَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهٖ﴾

বলো, তোমরা কি ভেবে দেখেছ যে, যদি আল্লাহ আমার কোন অনিষ্ট চান, তবে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তবে কি তারা সে অনুগ্রহকে বন্ধ করতে পারবে? (সূরা যুমার- ৩৮)

হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে-

عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ أَنَّ النَّبِيَّ أَبْصَرَ عَلٰى عَضُدِ رَجُلٍ حَلْقَةً ، فَقَالَ : وَيْحَكَ مَا هٰذِهِ ؟ قَالَ : مِنَ الْوَاهِنَةِ ؟ قَالَ : أَمَا إِنَّهَا لَا تَزِيْدُكَ إِلَّا وَهْنًا انْبِذْهَا عَنْكَ ؛ فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তির বাহুতে রূপার একটি রিং দেখতে পেয়ে বললেন, ওহে হতভাগা! এটা কী? লোকটি বলল, এটা দুর্বলতা দূর করার জন্য দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এটা খুলে ফেলো। কারণ এটা কেবল তোমার দুর্বলতাকেই বৃদ্ধি করবে। আর এটা তোমার সাথে থাকা অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয় তাহলে তুমি কখনো সফলকাম হবে না। [মুসতাদরাকে হাকেম হা/৭৫০২, সহীহ ইবনে হিববান হা/৬০৮৫।]

عَنْ زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : إِنَّ الرُّقٰى ، وَالتَّمَائِمَ ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ قَالَتْ : قُلْتُ : لِمَ تَقُوْلُ هٰذَا ؟ وَاللهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِيْ تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلٰى فُلَانٍ الْيَهُوْدِيِّ يَرْقِيْنِيْ فَإِذَا رَقَانِيْ سَكَنَتْ ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ : إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخُسُهَا بِيَدِهٖ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا ، إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيْكِ أَنْ تَقُوْلِيْ كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ : أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

আবদুল্লাহ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় মন্ত্র, তাবিজ-কবজ শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি বললাম, তুমি এটা কী বলছ? আল্লাহর শপথ! তখন আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। কেননা আমি এক ইয়াহুদির কাছে ঝাড়ফুঁক নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। অতঃপর সে আমাকে ঝাড়ফুঁক করলে আমার অসুস্থতা ভালো হয়ে গিয়েছিল। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, এটা শয়তানের কাজ। শয়তান তার হাতে এটা করায়। তারপর যখন মন্ত্র ফুঁকে দেয় তখন সে সরে যায়। তোমার জন্য যথেষ্ট হলো এভাবে দু‘আ করা যেভাবে নবী ﷺ দু‘আ করতেন।

أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

অর্থাৎ হে মানুষের প্রতিপালক! তুমি এ অসুস্থতা দূর করে দাও। তুমি আরোগ্য দান করো, কারণ তুমিই আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতীত অন্য কোন আরোগ্য নেই। তুমি এমন আরোগ্য দান করো, যাতে অন্য কোন অসুস্থতা অবশিষ্ট না থাকে। [আবু দাউদ, হা/৩৮৮৫।]

৩. শুভ-অশুভ লক্ষণ বা সংকেত গ্রহণ করা শিরক

ভালো ও মন্দ আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করার এবং আল্লাহপ্রদত্ত বিপদ এড়ানোর ক্ষমতা মানুষের অথবা সৃষ্ট জিনিসের উপর অর্পণ করা শিরক।

عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَسَحَّرَ اَوْ تَسَحَّرَ لَهٗ أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تَكَهَّنَ لَهٗ أَوْ تَطَيَّرَ أَوْ تَطَيَرَ لَهٗ

ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে যাদু করে বা যার জন্য যাদু করা হয়, যে ভবিষ্যৎ বর্ণনা করে এবং যার উদ্দেশ্যে করা হয়, যে তিয়ারা বা অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে বা যার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়, তারা কেউ আমাদের (মুসলিমদের) অন্তর্ভুক্ত নয়। [মুজামুল আওসাত, ৪/৩০২।]

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ الْحَكَمِ السُّلَمِىِّ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أُمُوْرًا كُنَّا نَصْنَعُهَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ كُنَّا نَأْتِى الْكُهَّانَ . قَالَ : فَلَا تَأْتُوا الْكُهَّانَ ، قَالَ قُلْتُ كُنَّا نَتَطَيَّرُ . قَالَ : ذَاكَ شَىْءٌ يَجِدُهٗ أَحَدُكُمْ فِىْ نَفْسِهٖ فَلَا يَصُدَّنَّكُمْ

মু‘আবিয়া ইবনে হাকাম আস সুলামী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললাম, আমরা জাহেলী যুগে কতগুলো কাজ করতাম যেমন গণক ও জ্যোতিষীদের কাছে যেতাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, না! জ্যোতিষীদের কাছে যেও না। আমি বললাম, আমরা পাখি উড়িয়ে শুভ-অশুভ সংকেত নির্ধারণ করতাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এটা তোমরা নিজেরাই তৈরি করেছ, এটা যেন তোমাদেরকে কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে।’’ [সহীহ মুসলিম হা/৫৯৪৯।]

অর্থাৎ তুমি যা করতে চাও এটা যেন তোমাকে তা করতে বাধা না দেয়। কারণ এসব সংকেত মানুষের কল্পনাপ্রসূত বানানো গল্প, যার কোন বাস্তবতা নেই।

কাঠে টোকা দেয়া, লবণ উল্টে পড়া, আয়না ভাঙ্গা, ভাঙ্গা ঝাড়ু, খালি কলসি, তের নম্বর সংখ্যা ইত্যাদি অশুভ লক্ষণ মনে করা শিরকী আকীদা। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ مِنْ حَاجَةٍ ، فَقَدْ أَشْرَكَ ، قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، مَا كَفَّارَةُ ذٰلِكَ ؟ قَالَ : أَنْ يَقُوْلَ أَحَدُهُمْ : اَللّٰهُمَّ لَا خَيْرَ اِلَّا خَيْرُكَ ، وَلَا طَيْرَ إِلَّا طَيْرُكَ ، وَلَا إِلٰهَ غَيْرُكَ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে কেউ তিয়ারার (কুলক্ষণ বা দুর্ভাগ্যের ধারণার) কারণে কোন কিছু থেকে বিরত থাকল, সে শিরক করল। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, এর প্রায়শ্চিত্ত কী? তিনি উত্তর দিলেন, বলো! ‘‘আল্লা-হুম্মা লা-খাইরা ইল্লা খাইরুক, ওয়া লা-ত্বাইরা ইল্লা ত্বাইরুক, ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি প্রদত্ত মঙ্গল ব্যতীত অন্য কোন মঙ্গল নেই এবং তুমি প্রদত্ত অমঙ্গল ব্যতীত কোন অমঙ্গল নেই এবং তুমি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। [মুসনাদে আহমাদ হা/৭০৪৫।]

৪. ‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’ বলা শিরক

عَنْ قُتَيْلَةَ ، اِمْرَأَةٍ مِنْ جُهَيْنَةَ : أَنَّ يَهُوْدِيًّا أَتَى النَّبِيَّ فَقَالَ : إِنَّكُمْ تَنِدُّوْنَ وَإِنَّكُمْ تُشْرِكُوْنَ تَقُوْلُوْنَ : مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ ، وَتَقُوْلُوْنَ : وَالْكَعْبَةِ ؟ فَأَمَرَهُمُ النَّبِيُّ إِذَا أَرَادُوْا أَنْ يَحْلِفُوْا أَنْ يَقُوْلُوْا : وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ، وَيَقُوْلُ أَحَدُهُمْ : مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شِئْتَ

জুহাইনা গোত্রের জনৈক মহিলা সাহাবী কুতাইলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা একজন ইয়াহুদি নবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, আপনারাও আল্লাহর সাথে শিরক করে থাকেন। কারণ আপনারা বলে থাকেন, আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন। আপনারা আরো বলে থাকেন, কা‘বার কসম (এগুলো তো স্পষ্ট শিরক)। এরপর নবী ﷺ বললেন, মুসলমানদের মধ্যে যারা কসম বা হলফ করতে চায়, তারা যেন বলে কা‘বার রবের কসম। আর বলবে, আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর আপনি যা চেয়েছেন। [সুনানে নাসাঈ হা/৩৭৭৩।]

অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ  : مَا شَاءَ اللهُ ، وَشِئْتَ ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ : أَجَعَلْتَنِيْ وَاللهَ عَدْلًا بَلْ مَا شَاءَ اللهُ وَحْدَهٗ

ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি নবী ﷺ এর উদ্দেশ্যে বলল, আপনি এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন (তাই হয়েছে)। তখন নবী ﷺ বললেন, তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে ফেললে? বরং আল্লাহ যা এককভাবে ইচ্ছা করেছেন (তাই হয়েছে)। [মুসনাদে আহমাদ হা/১৮৩৯, সুনানে বায়হাকী হা/৫৬০৩।]

অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ ، أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ رَأٰى فِي النَّوْمِ أَنَّهٗ لَقِيَ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ ، فَقَالَ : نِعْمَ الْقَوْمُ أَنْتُمْ لَوْلَا أَنَّكُمْ تُشْرِكُوْنَ ، تَقُوْلُوْنَ : مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ ، وَذَكَرَ ذٰلِكَ لِلنَّبِيِّ ، فَقَالَ : أَمَا وَاللهِ ، إِنْ كُنْتُ لَاَعْرِفُهَا لَكُمْ ، قُوْلُوْا : مَا شَاءَ اللهُ ، ثُمَّ شَاءَ مُحَمَّدٌ

হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা একজন মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, তিনি একজন আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের লোকের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তখন সে তাকে বলল, তোমরা কতই না উত্তম সম্প্রদায়! যদি তোমরা শিরক না করতে। তোমরা বলে থাক যে, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন এবং মুহাম্মাদ ﷺ যা ইচ্ছা করেছেন। অতঃপর তিনি বিষয়টি নবী ﷺ এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! যদি আমি জানতাম তবে তোমাদেরকে এ কথা বলার আদেশ দিতাম যে, তোমরা বলো, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ যা ইচ্ছা করেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২১১৮; সুনানে দারেমী হা/২৭৫৫।]

৫. বিপদকালে لَوْ বা ‘যদি’ শব্দের ব্যবহার শিরক

হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيْفِ ، وَفِيْ كُلٍّ خَيْرٌ ، اِحْرِصْ عَلٰى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللهِ , وَلَا تَعْجَزْ ، فَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ ، فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا ، وَلٰكِنْ قُلْ : قَدَّرَ اللهُ ، وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, শক্তিশালী মুমিন উত্তম। আর আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনই উত্তম। তবে উভয়ের মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ। অতএব যে জিনিস তোমার উপকার সাধন করবে, তার ব্যাপারে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, আর কখনো অক্ষমতা প্রকাশ করো না। যদি তোমার উপর কোন বিপদ এসে পড়ে, তবে এ কথা বলো না- ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে অবশ্যই এমন হতো’। বরং তুমি এ কথা বলো, আল্লাহ যা তাকদীরে রেখেছেন এবং যা ইচ্ছা করেছেন তাই হয়েছে। কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কুমন্ত্রণার পথ খুলে দেয়। অর্থাৎ ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের চাবি। [সহীহ মুসলিম হা/৬৯৪৫, সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৭৯, মুসনাদে আহমাদ হা/৮৭৯১।]

৬. মৃত ব্যক্তিদের নিকট প্রার্থনা করা শিরক

আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿وَمَنْ اَضَلُّ مِمَّنْ يَّدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَنْ لَّا يَسْتَجِيْبُ لَهٗۤ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَآئِهِمْ غَافِلُوْنَ وَاِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ اَعْدَآءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِيْنَ﴾

ঐ লোকের চেয়ে বেশি গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামতের দিন পর্যন্তও কোন সাড়া দেবে না। বরং তাদেরকে যে ডাকা হয়েছে, সে কথা তারা জানেই না। (হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্র করা হবে, তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদাতকে অস্বীকার করবে। (সূরা আহকাফ- ৫, ৬)

﴿وَالَّذِيْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖ مَا يَمْلِكُوْنَ مِنْ قِطْمِيْرٍ اِنْ تَدْعُوْهُمْ لَا يَسْمَعُوْا دُعَآءَكُمْۚ وَلَوْ سَمِعُوْا مَا اسْتَجَابُوْا لَكُمْؕ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُوْنَ بِشِرْكِكُمْؕ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيْرٍ﴾

যারা তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করে তারা তা প্রদানে সামান্যতম ক্ষমতাও রাখে না। যদি তোমরা তাদেরকে আহবান কর, তবে তারা তোমাদের আহবান শুনতে পাবে না। আর যদিও শুনতে পায় তবুও তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক করাকে অস্বীকার করবে। সর্বজ্ঞ আল্লাহর ন্যায় কেউই তোমাকে সঠিক সংবাদ দিতে পারবে না। (সূরা ফাতির- ১৩, ১৪)

হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ النَّبِيُّ كَلِمَةً وَقُلْتُ أُخْرٰى قَالَ النَّبِيُّ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ وَقُلْتُ أَنَا مَنْ مَاتَ وَهُوَ لَا يَدْعُو لِلّٰهِ نِدًّا دَخَلَ الْجَنَّةَ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ একটি কথা বলেছেন এবং আমি তার সাথে আরেকটি কথা যোগ করলাম। নবী ﷺ বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকে, আর এ অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে আল্লাহর শরীক হিসেবে না ডেকে মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহীহ বুখারী হা/৪৪৯৭।]

কবরবাসীরা জীবিতদের ডাকে সাড়া দিতে অক্ষম :

﴿اِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتٰى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِيْنَ﴾

তুমি তো মৃতকে কথা শুনাতে পারবে না, বধিরকেও কোন আহবান শুনাতে পারবে না যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়। (সূরা নামল- ৮০)

যারা কথা শুনে না তারা কীভাবে অপরকে সাহায্য করবে, অপরকে সান্ত্বনা দেবে এবং অপরের আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ করবে? বরং তারা নিজেরাই নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।

৭. মাযার-দরগায় দান বা ভোগ দেয়া শিরক

عَنْ سَلْمَانَ قَالَ : دَخَلَ رَجُلٌ الْجَنَّةَ فِيْ ذُبَابٍ وَدَخَلَ رَجُلٌ النَّارَ فِيْ ذُبَابٍ , مَرَّ رَجُلَانِ عَلٰى قَوْمٍ قَدْ عَكَفُوْا عَلٰى صَنَمٍ لَهُمْ وَقَالُوْا : لَا يَمُرُّ عَلَيْنَا الْيَوْمَ اَحَدٌ اِلَّا قَدَّمَ شَيْئًا , فَقَالُوْا لِاَحَدِهِمَا : قَدِّمْ شَيْئًا , فَأَبٰى فَقُتِلَ , وَقَالُوْا : لِلْاٰخَرِ : قَدِّمْ شَيْئًا , فَقَالُوْا : قَدِّمْ وَلَوْ ذُبَابًا ، فَقَالَ : وَأَيْشٍ ذُبَابٌ , فَقَدَّمَ ذُبَابًا فَدَخَلَ النَّارَ ، فَقَالَ سَلْمَانُ : فَهٰذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ فِيْ ذُبَابٍ , وَدَخَلَ هٰذَا النَّارَ فِيْ ذُبَابٍ

সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে গিয়েছে এবং একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে। (ঘটনাটি হলো) একদা দুব্যক্তি এক গোত্রের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, আর ঐ গোত্রটির একটি মূর্তি ছিল, সে মূর্তিকে কিছু না দিয়ে কেউ অতিক্রম করতে পারত না। (মূর্তির খাদেমরা) প্রথম ব্যক্তিকে বলল, তুমি কিছু দিয়ে যাও। লোকটি অস্বীকার করল ফলে তারা তাকে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর তারা দ্বিতীয় জনকে বলল, কিছু দিয়ে যাও। তারা আবার বলল, একটি মাছি হলেও দিয়ে যাও। সে বলল, মাছি দ্বারা কী হবে? পরিশেষে সে একটি মাছি দান করল, অতঃপর সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সালমান (রাঃ) বলেন, এই হলো এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করল এবং এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জা‎হান্নামে প্রবেশ করল (এর ব্যাখ্যা)। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হা/৩৩৭০৯, বায়হাকী ফী শু‘আবিল ঈমান হা/৭৩৪৩।]

এ হাদীস থেকে বুঝা গেল গাইরুল্লাহর নামে কোন কিছু দান করা বা ভোগ দেয়া শিরক।

৮. মৃত ব্যক্তিকে অসীলা বানানো শিরক

মৃতদেরকে অসীলা বানানো, তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস চাওয়া অথবা সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি কাজসমূহ শিরকের অন্তর্ভুক্ত। অসীলার অর্থ হলো আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া, যা কেবল ঈমান এবং নেক কাজের দ্বারা সম্ভব। অন্যদিকে মৃৃতদের কাছে দু’আ করা আল্লাহ হতে মুখ ফিরানোর নামান্তর এবং তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿وَلَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ﴾

আর তুমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যারা তোমার কোন উপকারও করতে পারে না এবং অপকারও করতে পারে না। যদি এটা কর তাহলে তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ইউনুস- ১০৬)

৯. মাযারে বা ওরসের নামে যবেহ করা শিরক

পশু যবেহ করা ও দান-সাদাকা করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এগুলো যখন আল্লাহর নামে করে তখন আল্লাহর ইবাদাত বলে গণ্য হয়, আর যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে গাইরুল্লাহর নামে করা হয় তখন তা গাইরুল্লাহর ইবাদাত বলে গণ্য হয়। আর গাইরুল্লাহর ইবাদাত করাই শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾

বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴾

তুমি নামায কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। (সূরা কাওসার- ২)

عَنْ أَبِى الطُّفَيْلِ قَالَ قُلْنَا لِعَلِىِّ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ أَخْبِرْنَا بِشَىْءٍ أَسَرَّهٗ إِلَيْكَ رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ مَا أَسَرَّ إِلَىَّ شَيْئًا كَتَمَهُ النَّاسَ وَلٰكِنِّىْ سَمِعْتُهٗ يَقُوْلُ : لَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ اٰوٰى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ الْمَنَارَ

আবু তুফাইল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) কে অনুরোধ করলাম যে, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু সম্পর্কে বলুন, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ শুধুমাত্র আপনার কাছে গোপন রেখেছেন। আলী (রাঃ) বললেন, না! আমাকে রাসূলুল্লাহ ﷺ গোপনে এমন কিছু বলেননি, যা অন্যের থেকে গোপন করেছেন। তবে আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে চারটি বিষয়ে বলতে শুনেছি, (ক) যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে (পশু) যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লানত। (খ) যে ব্যক্তি কোন বিদ‘আতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লানত। (গ) যে ব্যক্তি নিজ পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লানত। (ঘ) যে ব্যক্তি জমির সীমানা (চিহ্ন) পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লানত। [সহীহ মুসলিম হা/৫২৪০।]

১০. নেককারদের কবরের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা শিরক

নেককারদের কবরের ব্যাপারে অনেকে সীমালঙ্ঘন করে থাকে। এ সীমালঙ্ঘন অনেক সময় শিরকের পর্যায়ে পড়ে। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اَللّٰهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِيْ وَثَنًا يُعْبَدُ اِشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلٰى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُوْرَاَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ

আত্বা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে এমন মূর্তিতে পরিণত করো না, যার ইবাদাত করা হয়। সেই জাতির উপর আল্লাহর কঠিন গযব নাযিল হয়েছে, যারা নবীদের কবরগুলোকে মসজিদে পরিণত করেছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক হা/৪১৪, মুসনাদে আহমাদ হা/৭৩৫২; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৬৮১; মুসনাদে বাযযার, হা/৯০৮৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/১৫৮৭।]

১১. গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক

আশ্রয় কামনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাকে আশ্রয় দেয়ার মালিক। এ জন্য সূরা নাস এবং ফালাকে তাঁর কাছেই আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট আশ্রয় চাওয়ার নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْاِنْسِ يَعُوْذُوْنَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوْهُمْ رَهَقًا﴾

আর কতিপয় মানুষ কতক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করে, ফলে তারা নিজেদের সীমালঙ্ঘন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। (সূরা জিন- ৬)

হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ خَوْلَةَ بِنْتِ حَكِيْمٍ السُّلَمِيَّةِ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : إِذَا نَزَلَ أَحَدُكُمْ مَنْزِلًا فَلْيَقُلْ أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ . فَإِنَّهٗ لَا يَضُرُّهٗ شَىْءٌ حَتّٰى يَرْتَحِلَ مِنْهُ

খাওলা বিনতে হাকীম আস সুলামিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, যে ব্যক্তি কোন মঞ্জিলে অবতরণ করে বলল, আমি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণাঙ্গ কালামের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ মঞ্জিল ত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৫৪।]

১২. বরকত হাসিলের জন্য গাছের নিকট ভোগ দেয়া শিরক

বরকত হাসিলের জন্য গাছের নিকট ভোগ দেয়া ও সুতা বাঁধা শিরক। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে,

عَنْ أَبِيْ وَاقِدٍ اللَّيْثِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ لَمَّا خَرَجَ إِلٰى حُنَيْنٍ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ يُقَالُ لَهَا : ذَاتُ أَنْوَاطٍ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ ، فَقَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : سُبْحَانَ اللهِ هٰذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسٰى ﴿اِجْعَلْ لَّنَا اِلٰهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌ﴾ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ

আবু ওয়াক্বেদ আল লাইছী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে মক্কা থেকে বের হয়ে হুনাইনে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মুশরিকদের জন্য একটি বড়ই গাছ ছিল, যাকে ‘যাতে আনওয়াত’ বলা হতো। এতে তারা তাদের অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য একটি ‘যাতে আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন যেমনিভাবে তাদের জন্য ‘যাতে আনওয়াত’ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ পবিত্র ও মহান! এটা এমন একটি উক্তি যেমনটি মুসা (আঃ) এর সম্প্রদায় করেছিল। তারা বলেছিল, ‘‘আপনি আমাদের জন্য একজন মাবুদ বানিয়ে দিন যেমন তাদের মাবুদ রয়েছে।’’ ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই তোমরা পূর্ববর্তীদের আদর্শ অনুসরণ করতে থাকবে। [সুনানে তিরমিযী হা/২১৮০।]

১৩. আল্লাহ ব্যতীত অন্যকিছুর নামে কসম করা শিরক

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا تَحْلِفُوْا بِالطَّوَاغِىْ وَلَا بِاٰبَائِكُمْ

আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা তাগুতের নামে ও বাপ-দাদার নামে কসম করো না। [সহীহ মুসলিম হা/৪৩৫১, সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২০৯৫।]

অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا تَحْلِفُوْا بِاٰبَائِكُمْ وَلَا بِأُمَّهَاتِكُمْ وَلَا بِالْاَ نْدَادِ وَلَا تَحْلِفُوْا اِلَّا بِاللهِ وَلَا تَحْلِفُوْا بِاللهِ اِلَّا وَأَنْتُمْ صَادِقُوْنَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামে, মা-নানীর নামে এবং প্রতিমার নামে কসম করো না এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে কসম করো না। আর আল্লাহর নামে সত্য কসম ব্যতীত কসম করো না। [সুনানে আবু দাউদ হা/৩২৫০, সুনানে নাসাঈ হা/৩৭৭৮।]

عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ قَالَ سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ رَجُلًا يَحْلِفُ لَا وَالْكَعْبَةِ فَقَالَ لَهُ ابْنُ عُمَرَ إِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ أَشْرَكَ

সা‘দ ইবনে উবায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ইবনে ওমর (রাঃ) এক ব্যক্তিকে এই বলে কসম করতে শুনলেন যে, ‘না- বরং কাবার কসম!’ তখন ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল সে অবশ্যই শিরক করল। [সুনানে তিরমিযী হা/১৫৩৫, সুনানে আবু দাউদ হা/৩২৫৩, মুসনাদে আহমাদ হা/৬০৭২।]

আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো নামে যেমন- কুরআন মাজীদ নিয়ে, মক্কা-মদিনার নামে, মসজিদের নামে, দরগা-মাযারের নামে শপথ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

১৪. নবী ﷺ কে নূরের তৈরি মনে করা শিরক

এক শ্রেণির মানুষ বলে, নবী ﷺ কে তৈরি না করলে আল্লাহ কোনকিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ ব্যাপারে তারা যে হাদীসটি বলে তা একটি জাল বা বানোয়াট হাদীস। তারা আরো বলে আল্লাহ নবী ﷺ কে তাঁর নিজের নূর দিয়ে তৈরি করেছেন, নবী ﷺ নূরের তৈরি। আর নবী ﷺ এর নূরে সমস্ত জগৎ তৈরি। আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম নবী ﷺ কে তাঁর নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তারা আল্লাহর সাথে শিরক করে থাকে। কারণ এতে আল্লাহর সত্তার সাথে সৃষ্টির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়, যা তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাতের ক্ষেত্রে শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ যে মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ﴾

বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন। (সূরা কাহফ- ১১০)

আলোচ্য আয়াতে মুহাম্মাদ ﷺ কে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করতে বলা হয়েছে যে, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে পার্থক্য এই যে, আমার নিকট ওহী আসে।

মুহাম্মাদ ﷺ অন্যান্য মানুষের মতোই আদম সন্তান ছিলেন। মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ ﷺও পানাহার করতেন। অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল। তিনি বলেছেন,

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ أَنْسٰى كَمَا تَنْسَوْنَ فَإِذَا نَسِيْتُ فَذَكِّرُونِىْ

নিশ্চয় আমি মানুষ, আমি তোমাদের মত ভুলে যাই। যদি আমি ভুলে যাই তবে অবশ্যই স্মরণ করিয়ে দেবে। [সহীহ মুসলিম হা/১৩০২, সুনানে আবু দাউদ হা/১০২২, সুনানে নাসাঈ হা/১২৪৩, মুসনাদে আহমদ হা/৪১৭৪।]

তাছাড়া অন্যান্য মানুষের মতো রাসূলুল্লাহ ﷺ এরও বংশ তালিকা ছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বংশ তালিকা হলো,

মুহাম্মাদ ﷺ আবদুল্লাহর পুত্র, তিনি আবদুল মুত্তালিবের পুত্র, তিনি হাশেমের পুত্র, হাশিম কুরাইশ বংশের, কুরাইশ কেনান বংশের, কেনান আরব বংশোদ্ভুত, আরবগণ ইসমাইলের বংশধর, ইসমাইল ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর, ইবরাহীম নূহ (আঃ) এর বংশধর, নূহ (আঃ) আদম (আঃ) এর বংশধর, আর আদম (আঃ) হলেন মাটির তৈরি মানুষ। সর্বোত্তম মানব বংশেই তাঁর জন্ম। মানব পিতামাতার মানব শিশু হিসেবেই তিনি দুনিয়াতে আগমন করেছেন। মাটির তৈরি মানুষের জন্য মাটির তৈরি রাসূল প্রেরণই ছিল মহান আল্লাহর নীতি। মানবজাতির জন্য প্রেরিত কোন রাসূলই মানবজাতির বাহির থেকে আসেননি। এ হচ্ছে কুরআন সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত ইসলামী আকীদা।

১৫. রাসূল ﷺ কে হাযির-নাযির মনে করা শিরক

একদল মানুষ নবী ﷺ এর নামে মিলাদ নামক বিদআত অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে মিলাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে এবং ধারণা করে যে, নবী ﷺ এর রূহ মোবারক মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে থাকে- তাই দাঁড়াতে হয়। অথচ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে-

عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِنَّ لِلّٰهِ مَلَائِكَةً سَيَّاحِيْنَ فِي الْاَرْضِ يُبَلِّغُوْنِيْ عَنْ أُمَّتِي السَّلَامَ

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর একদল ফেরেশতা নির্দিষ্ট রয়েছে, যারা পৃথিবীময় বিচরণ করে আমার উম্মতের পক্ষ থেকে আমার কাছে সালাম পৌঁছায়। [সুনানে নাসাঈ হা/১২৮২, মুসনাদে আহমদ হা/৩৬৬৬, মুসতাদরাকে হাকেম হা/৩৫৭৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হা/৮৭৯৭, সহীহ ইবনে হিববান হা/৯১৪।]

এ হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ মিলাদ মাহফিলসহ অন্য কোথাও হাযির হন না। কেননা সর্বত্র যিনি তাঁর ইলিম ও জ্ঞানের মাধ্যমে হাযির-নাযির তিনি হচ্ছেন শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ কেও হাযির-নাযির মনে করা আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত।

১৬. কাউকে ইলমুল গায়েবের অধিকারী মনে করা শিরক

ইলমুল গায়েবের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। নবী-রাসূল, জিন-ফেরেশতা, ওলী-আওলিয়া কেউই আলেমুল গায়েব নন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ﴾

বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন উত্থিত হবে? (সূরা নামল- ৬৫)

অতএব গায়েবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহই জানেন। এ জ্ঞান নবী ﷺ এর সাথে সম্পৃক্ত করলে আল্লাহর সাথে শিরক হবে। নবী-রাসূলগণ শুধুমাত্র ততটুকুই জ্ঞান রাখেন যতটুকু জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা দান করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ اَحَدًا اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ﴾

তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া। (সূরা জিন- ২৬, ২৭)

১৭. আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- এ ধারণা শিরক

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এ বিশ্বাস ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর বিপরীত শিরকের একটি রূপ। কারণ এটা স্রষ্টার জন্য এমন এক বিশেষণ দাবি করে, যা তাঁর নয়।

তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার সর্বত্র বিরাজমান না হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে মেরাজের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় হিজরত করার দুই বৎসর পূর্বে মক্কা হতে জেরুজালেমে অলৌকিক রাত্রি ভ্রমণ (ইসরা) করেন এবং সেখান হতে মেরাজ ভ্রমণ করেন অর্থাৎ সাত আসমানের উপর সৃষ্টির সর্বোচ্চ সীমায় গমন করেন। যদি আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান হতেন তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে কোথাও যেতে হতো না। তিনি নিজের বাড়িতে সরাসরি আল্লাহর সম্মুখে হাযির হতে পারতেন। সুতরাং এ ঘটনাটি একটি প্রমাণ যে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান নন, তিনি আরশে সমাসীন।

১৮. ভাগ্য গণনা করা শিরক

মানবজাতির মধ্যে অনেকে আছে, যারা অদৃশ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করে। তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- গণক, ভবিষ্যতবক্তা, পূর্ব-পরিজ্ঞেয়ক, দৈবজ্ঞ, যাদুকর, পূর্বাভাসদাতা, দৈববাণী প্রকাশক, জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ ইত্যাদি। গণকরা বিভিন্ন পদ্ধতি এবং মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্যাদি বের করে আনার দাবি করে। যার মধ্যে রয়েছে, চায়ের পাতা পড়া, রেখা অংকন করা, সংখ্যা লেখা, হস্তরেখা-পড়া, রাশিচক্র পরীক্ষা করা, স্ফটিক বলের প্রতি দৃষ্টিপাত করা এবং হাড়গোড়, লাঠি চালনা, বাটি চালান ইত্যাদি।

এদের মধ্যে অনেকে আছে, যাদের সত্যিকার কোন জ্ঞান বা কোন গুপ্ত বিষয় জানা নেই। তারা অনুমান করে অনেকগুলো কথা বলে। তাদের কিছু কিছু অনুমান সত্য হয়ে যায়। বেশির ভাগ লোক যা সত্য হয় সেগুলি স্মরণ রাখে আর যেগুলো সত্য হয় না তার বেশিরভাগই তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। আবার এদের মধ্যে অনেকে আছে, যারা জিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। যারা এ কাজে জড়িত তাদের তথ্যাদি নির্ভুল হয়। এদের কথা বিশ্বাস করলে আল্লাহর অদৃশ্য জ্ঞানকে সৃষ্টির উপর আরোপ করা হয়। ফলে এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ কে অস্বীকার করে।

জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চা শুধু হারামই নয় বরং জ্যোতিষীদের কাছে যাওয়া এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী শোনা, জ্যোতিষশাস্ত্রের বই কেনা অথবা কারো কোষ্ঠী যাচাই সম্পূর্ণ নিষেধ। যেহেতু জ্যোতিষশাস্ত্র প্রধানত ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহৃত হয়, সেহেতু যারা এই বিদ্যা চর্চা করে তাদের জ্যোতিষী বা গণক বলে গণ্য করা হয়। হাদীসে এসেছে,

عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ أَزْوَاجِ النَّبِىِّ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : مَنْ أَتٰى عَرَّافًا فَسَأَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً

সাফিয়্যা (রাঃ) নবী ﷺ এর কোন এক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী ﷺ বলেছেন, যদি কেউ গণকের কাছে যায় এবং তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে ৪০ দিন পর্যন্ত তার সালাত গৃহীত হবে না। [সহীহ মুসলিম হা/৫৯৫৭, মুসনাদে আহমদ হা/১৬৬৩৮।]

এটা হলো জ্যোতিষীর কাছে শুধু যাওয়া এবং প্রশ্ন করার শাস্তি। আর যে তার রাশিচক্রে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করল সে আরো বড় ধরনের অপরাধ করল।

১৯. মানুষের তৈরি আইন মানা শিরক

মানুষকে আইন প্রণয়নকারীর স্তরে পৌঁছে দেয়া শিরক। একমাত্র আইন প্রণয়নকারী হলেন আল্লাহ তা‘আলা। কেননা এ সকল আইন প্রণয়নকারী জনপ্রতিনিধিরা যখন জনগণের জন্য আইন নির্ধারণ করে তখন তারা তা দ্বিধাযুক্ত অবস্থায় অথবা নির্দ্বিধায় মানতে বাধ্য থাকে। আর এভাবেই আল্লাহ প্রদত্ত আদেশগুলোর উপর সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাসমূহ প্রাধান্য পায়। এই অন্যায় অধিকার বাস্তবায়নের অপর নামই হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। যেসব মানুষ আল্লাহর নাযিলকৃত আইনের বিরুদ্ধে শাসন করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাগুত বলে সাব্যস্ত করেছেন।

মুহাম্মাদ আল-আমিন আশ-শানক্বিতি (রহ.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রণীত এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মুখ নিঃসৃত আইনের পরিবর্তে শয়তান ও তার সাহায্যকারীদের মুখ নিঃসৃত স্বরচিত আইনের আনুগত্য স্পষ্ট কুফর এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই। [আদওয়া উল-বায়ান, ৪র্থ খন্ড, পৃ:৮২-৮৫।]

একনজরে কতিপয় শিরক

১. কোন ব্যক্তি বিশেষের মূর্তি তৈরি করা কিংবা কোন নেতা-নেত্রীর অথবা কোন অলী-আওলিয়া বা বুযুর্গের প্রতিকৃতি কিংবা ছবিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলে প্রাণবস্তু মনে করা এবং তা ঘরে অথবা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখা।

২. কোন ওলী-আওলিয়া বা বুযুর্গের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা বা তাঁরা কাউকে সাহায্য করতে পারে বলে বিশ্বাস করা এবং কোন পীর বা ওলী-আওলিয়াকে ‘গাউছুল আজম’ বা ‘গাউছে মুখতার’ আখ্যায়িত করা।

৩. মনের নিয়ত পূর্ণ হওয়া বা কামনা-বাসনা পূরণের জন্য কোন মুরববীর কবরে কিংবা ওলী-আওলিয়া বা বুযুর্গের মাযারে বা দরবারে যিয়ারত করতে যাওয়া কিংবা কোন মাযার যিয়ারতের মাধ্যমে কোন উদ্যোগ বা কোন শুভ কাজের উদ্বোধন কিংবা যাত্রা শুরু করা এবং মাযারে বা দরবারে টাকা-পয়সা, ছাগল, গরু, মহিষ, ইত্যাদি হাদিয়া দেয়া বা দান করা শিরকী কাজ।

৪. কোন ওলী-আওলিয়া বা বুযুর্গ কিংবা কোন পীর-ফকীর কোন নিঃসন্তানকে সন্তান অথবা ছেলের স্থলে মেয়ে বা মেয়ের স্থলে ছেলে দিতে পারে বলে মনে করা একটি বড় শিরক। কেননা প্রকৃতপক্ষে এ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার।

৫. মাযারে গিয়ে যিয়ারত শেষ করে মাযারকে পিঠ না দিয়ে পেছনে হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে আসা এটাও একটা শিরক। কারণ মাযারকে পিঠ দিয়ে আসা হয় না এ বিশ্বাসে যে, মাযারের বুযুর্গ যেহেতু তাকে দেখছেন, সেহেতু সে তাকে কীভাবে পিছ দিতে পারে। অথচ কোন মৃত বুযুর্গ কাউকে দেখছেন এ বিশ্বাস সম্পূর্ণ শিরকী বিশ্বাস।

৬. কবরে বা মাজারে কিংবা কোন বিশেষ ব্যক্তিকে সিজদা করা সুস্পষ্ট শিরক এবং কাউকে সম্মানের উদ্দেশ্যে মাথা ঝুঁকানোও শিরকের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে কোন প্রকার সিজদা করা যায় না। সিজদা পাওয়ার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর জন্য ব্যতীত আর কারো নিকট মাথা ঝুঁকানো হারাম।

৭. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নাম ব্যতীত কোন আওলিয়া বা বুযুর্গের নামে কিংবা কোন দরগাহ বা মাযারের নামে মান্নত মানাও শিরক।

৮. যে কাজ বা কথা আল্লাহ তা‘আলার জন্যই শোভা পায় তা অন্যের ক্ষেত্রে বলা, কোন ওলী-আওলিয়া বা বুযুর্গের নামের অসীলা দেয়া। যেমন- অমুক আওলিয়ার অসীলায় মামলা-মোকাদ্দমায় জেতা হয়েছে, অমুক বুযুর্গের অসীলায় পরীক্ষায় ভালো করা হয়েছে, খাজা বাবার অসীলায় প্রতিপত্তি লাভ হয়েছে। আবদুল কাদের জিলানীর অসীলায় এমন হয়েছে তেমন হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ জাতীয় অসীলায় কথা বলাও শিরক। প্রকৃতপক্ষে কোন ব্যাপারে আল্লাহর মেহেরবানী লাভ করার পর তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তাঁর কৃতিত্বটি অন্য কাউকে দেয়া আল্লাহর উপর চরম অত্যাচার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। [সূরা ফাতির- ১৩, ১৪; সূরা নিসা- ৪৮; সূরা লুকমান- ১৩; সূরা নহল- ৫৪।]

৯. জাতীয় কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের লক্ষ্যে শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন কিংবা মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো।

প্রকৃতপক্ষে উল্লেখিত কাজসমূহে কোন কল্যাণ বা সমৃদ্ধি নেই। বরং সকল কল্যাণ ও সমৃদ্ধির উৎস হলো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে। [সূরা আলে ইমরান- ১২৬।]

১০. জনগণকেই ক্ষমতার উৎস মনে করা এটা একটি শিরকী আকীদা। প্রকৃতপক্ষে জনগণ কোন ক্ষমতার উৎস নয়। বরং জনগণ ক্ষমতার মাধ্যম। ক্ষমতার উৎস বা এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। [সূরা বাকার- ১৬৫; সূরা আলে ইমরান- ২৬।]

শেষ জমানায় কীভাবে ঈমান রক্ষা করতে হবে?

عَنْ اَبِىْ اِدْرِيْسَ الْخَوْلَانِيِّ، اَنَّهٗ سَمِعَ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ، يَقُوْلُ : كَانَ النَّاسُ يَسْاَلُوْنَ رَسُوْلَ اللهِ عَنِ الْخَيْرِ، وَكُنْتُ اَسْاَلُهٗ عَنِ الشَّرِّ مَخَافَةَ اَنْ يُدْرِكَنِيْ ‏ . ‏ فَقُلْتُ : يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّا كُنَّا فِيْ جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ، فَجَاءَنَا اللهُ بِهٰذَا الْخَيْرِ، فَهَلْ بَعْدَ هٰذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ : ‏ نَعَمْ ‏ . ‏ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذٰلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ؟ قَالَ : ‏نَعَمْ، وَفِيْهِ دَخَنٌ ‏ . ‏ قُلْتُ : وَمَا دَخَنُهٗ؟ قَالَ : ‏ قَوْمٌ يَهْدُوْنَ بِغَيْرِ هَدْيِيْ تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ ‏ . ‏ قُلْتُ : فَهَلْ بَعْدَ ذٰلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ؟ قَالَ : ‏ نَعَمْ دُعَاةٌ اِلٰى اَبْوَابِ جَهَنَّمَ، مَنْ اَجَابَهُمْ اِلَيْهَا قَذَفُوْهُ فِيْهَا ‏ . ‏ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا فَقَالَ : هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا، وَيَتَكَلَّمُوْنَ بِاَلْسِنَتِنَا ، ‏ قُلْتُ : فَمَا تَأْمُرُنِيْ اِنْ اَدْرَكَنِيْ ذٰلِكَ؟ قَالَ : ‏ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَاِمَامَهُمْ ‏ . ‏ قُلْتُ فَاِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلَا اِمَامٌ؟ قَالَ : فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا، وَلَوْ اَنْ تَعَضَّ بِاَصْلِ شَجَرَةٍ حَتّٰى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَاَنْتَ عَلٰى ذٰلِكَ

আবু ইদ্রীস খাওলানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত। আর আমি তাঁকে অকল্যাণ ও অমঙ্গল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ আশংকায় যে, আমার জীবনেই তা শুরু হয়ে যায় কিনা। একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমরা ইতোপূর্বে অজ্ঞতা ও অকল্যাণের মধ্যে ছিলাম। তারপর আল্লাহ আমাদেরকে এ কল্যাণ (ইসলাম) দান করলেন। এ কল্যাণের পর আবার কি কোন অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, ঐ অকল্যাণের পর আবার কি কোন কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে তাতে কিছু কলুষতা থাকবে। আমি বললাম, সে কলুষতার স্বরূপ কী হবে? তিনি বললেন, সে কলুষতার স্বরূপ হবে এই যে, একদল লোক আমার প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য পথে লোকদেরকে চালিত করবে। তাদের কোন কোন কাজ শরীয়াত সম্মত হবে আবার কোন কোন কাজ শরীয়াত বিরোধী হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দরজাসমূহের দিকে বহু আহবানকারী লোকদেরকে আহবান করবে। যে ব্যক্তি তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সেদিকে এগিয়ে যাবে তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় কী? তিনি বললেন, তারা হবে আমাদেরই সমগোত্রীয় এবং তারা আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, ঐ অবস্থা যদি আমাকে পেয়ে বসে অর্থাৎ যদি আমি ঐ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে আপনি আমাকে তখন কী করতে বলেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলিমদের দল ও ইমাম না থাকে? তিনি জবাব দিলেন, তবে তোমাকে যদি গাছের মূল খেয়েও জীবন ধারণ করতে হয় তবুও তুমি তাদের সকল দল হতে দূরে থাকবে, এমনকি এ অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যুও ঘটে। অর্থাৎ মরণকে বরণ করে নেবে তবুও পথভ্রষ্টদের দলে যোগ দেবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৩৬০৬; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯০; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৭২৪৪।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন