hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা (হক দীন)

লেখকঃ আশ-শাইখ আবদুর রহমান ইবন হাম্মাদ আ-লে উমার

১০
ইসলামের প্রথম স্তম্ভ: ‘আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ এ সাক্ষ্য প্রদান:
নিশ্চয় আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই ও নিশ্চয় মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ সাক্ষ্য দানের বিশেষ অর্থ রয়েছে, মুসলিমের উপর যা জানা ও সেটা অনুযায়ী আমল করা ফরয।

কেননা, যে শুধু মুখে উচ্চারণ করে ও অর্থ জানে না এবং সে অনুযায়ী আমল করে না, সে এর দ্বারা কোনো লাভবান হয় না। ( لا إله إلا الله ) বা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ হচ্ছে, আসমান ও যমীনে এক আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ (উপাস্য) নেই। তিনিই সত্যিকারের ইলাহ, তিনি ব্যতীত সকল ইলাহই বাতিল। আর ( إله ) ‘ইলাহ’ এর অর্থ হচ্ছে মা‘বূদ। বা উপাস্য (যার ইবাদাত করা হয়)।

আর তাই যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করে, সে আল্লাহকে অস্বীকার করল ও তার সাথে অন্যকে অংশীদার বানালো, যদিও তার এ মাবুদ কোনো নবী বা ওলী হোক না কেন। যদিও এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা ও তাদেরকে ওয়াসীলা হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হোক না কেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমস্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তারা তাদের নবী ও ওলীদের ইবাদত এ বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতেই করত। বস্তুত এগুলো বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ; কেননা আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তাঁর ওয়াসিলা গ্রহণ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদত করার দ্বারা অর্জিত হতে পারে না; বরং নৈকট্য বা ওয়াসিলা গ্রহণ তো কেবলমাত্র আল্লাহর নামসমূহ ও গুণাবলী এবং আমাদের ছালাত, দান, যিকর, ছিয়াম, জিহাদ, হজ্জ, মাতা পিতার প্রতি ভাল ব্যবহার প্রভৃতি নির্দেশিত উত্তম কাজসমূহ আর সম্মূখে উপস্থিত জীবিত মুমিন যদি তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে তাহলে সেই সেই কাজসমূহ ও দো‘আ দ্বারাই করা যায়।

ইবাদতের প্রকারসমূহ: ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে:

তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: দো‘আ:

দো‘আ হচ্ছে, এমন কিছু প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা জানানো, যা পূরণ করার সামর্থ্য আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। যেমন, বৃষ্টি দান, রোগীর আরোগ্য, যে বিপদ আপদ কোনো সৃষ্টজীব দূর করতে সক্ষম নয় তা দূর করান, জান্নাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া, সন্তান সন্ততি, রিযক, কল্যাণ প্রভৃতি চাওয়া।

এ সমস্ত কিছুই আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া যায় না। যদি কেউ মৃত হোক বা জীবিত হোক, কোনো সৃষ্ট জীবের কাছে এগুলো থেকে কিছু চায় তাহলে সে তার ইবাদাত করল। আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র তার নিকটেই দো‘আ করতে নির্দেশ দিয়ে এবং দো‘আ যে ইবাদাত তার সংবাদ প্রদান করে আর সেটাকে যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যমুখী করবে সে জাহান্নামী হবে এ ঘোষণা প্রদান করে বলেন,

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [ غافر : ٦٠ ]

“তোমাদের রব বলেছেন যে, আমার কাছে দো‘আ কর। আমি তোমাদের থেকে তা গ্রহণ করব। নিশ্চয় যারা আমার ইবাদাত সম্পর্কে অহংকার করে, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”। (আল মুমিন-৬০)

অনুরূপভাবে আল্লাহকে ব্যতীত অন্য যাদের কাছে দো‘আ করা হয় তারা নবী অথবা ওলী যাই হোক না কেন, তারা যে অন্যের লাভ বা ক্ষতির কোনো কিছুই মালিক নয়, একথা জানিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُلِ ٱدۡعُواْ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُم مِّن دُونِهِۦ فَلَا يَمۡلِكُونَ كَشۡفَ ٱلضُّرِّ عَنكُمۡ وَلَا تَحۡوِيلًا ٥٦ ﴾ [ الاسراء : ٥٦ ]

“বল, তোমরা যাকে (মাবুদ) দাবী করছ, তাদেরকে আহ্বান কর, অথচ তারাতো তোমাদের কষ্ট দূর করা ও অবস্থা পরিবর্তনের যোগ্যতা রাখে না।” বনী ইসরাইলের ৫৬ আয়াতে ও তার পরবর্তী আয়াত।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,

﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]

“এবং নিশ্চয় সকল মসজিদ আল্লাহর জন্য (নির্ধারিত)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্যকে ডেকো না।’ (সূরা জিন-১৮)

ইবাদতের প্রকারসমূহের অন্যতম হচ্ছে, যবেহ, মানত ও কুরবানী

ইবাদাতের মধ্যে যবেহ, মানত ও কুরবাণী পেশ করাও রয়েছে। সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কোনো মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য পশুর রক্ত প্রবাহিত করবে না। কুরবানী পেশ করবে না। কোনো কিছু মানত করবে না। আর তাই যে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যেমন কবর অথবা জ্বিনের উদ্দেশ্যে যবেহ করল; সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদাত করল এবং আল্লাহর অভিসম্পাতের অধিকারী হল। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন-

﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [ الانعام : ١٦٢، ١٦٣ ]

“তুমি বল, নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আমি এ কাজেরই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে প্রথম”। আল-আন‘আম-১৬২-১৬৩)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:

" لعن الله من ذبح لغير الله "

“যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করে, তাকে আল্লাহ অভিসম্পাত দিয়েছেন”। হাদীসটি সহীহ যা মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।

আর যদি কেউ এ বলে মানত করলো যে, যদি আমি এ এ জিনিস অর্জন করি, তাহলে জনৈকের উদ্দেশ্যে অথবা জনৈক কবরের উদ্দেশ্যে এ পরিমাণ দান করব। তবে এ মানত শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি সৃষ্টের উদ্দেশ্যে মানত করা হয়েছে। আর মানত হচ্ছে ইবাদাত। আল্লাহ ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে এটি বৈধ নয়। শরী‘আতসম্মত মানত হচ্ছে, আমি যদি ওমুক জিনিস প্রাপ্ত হই, তাহলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে অমুক মাল দান করব, অথবা অমুক ভাল কাজ করার মানত করছি।

ইবাদতের প্রকারসমূহের অন্যতম হচ্ছে, বিপদমুক্তি কামনা করা, সাহায্য চাওয়া ও আশ্রয় প্রার্থনা:

বিপদমুক্তি কামনা করা, সাহায্য চাওয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করাও ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে বিপদমুক্তি কামনা করা, সাহায্য চাওয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করা যায় না। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন-

﴿ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [ الفاتحة : ٥ ]

“আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং একমাত্র আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”। (ফাতিহা-৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿ قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ ١ مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ٢ ﴾ [ الفلق : ١، ٢ ]

“তুমি বল, আমি প্রভাতের রবের কাছে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (ফালাক্ব-১,২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

" إنه لا يُستغاث بي وإنما يُستغاث بالله "

“আমার কাছে উদ্ধার প্রার্থনা করা যায় না, উদ্ধার প্রার্থনা করা যায় একমাত্র আল্লাহর কাছে।” হাদীসটি সহীহ, যা ত্বাবারানী বর্ণনা করেছেন।

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

" إذا سألت فاسأل الله، وإذا استعنت فاستعن بالله ". حديث صحيح،

যখন কিছু চাও আল্লাহর কাছে চাও, যখন সাহায্য প্রার্থনা কর, আল্লাহর কাছেই কর”। হাদীসটি সহীহ, যা তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।

জীবিত উপস্থিত মানুষের নিকটে সে যা করতে সামর্থ রাখে, এমন বিষয়ে বিপদ মুক্তির আহ্বান ও সাহায্য চাওয়া বৈধ। তবে আশ্রয় প্রার্থনা কোনো অবস্থাতে একক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। কোনো মৃত ও অনুপস্থিত কারো কাছে বিপদে মুক্তির আহ্বান ও সাহায্য প্রার্থনা কখনো ঠিক নয়। কেননা তিনি নবী অথবা ওলী অথবা ফিরিশতা যাই হউন না কেন বিপদ মুক্তির যোগ্যতা রাখেন না।

আর গায়িবি বিষয়াদি, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না, যে গায়িব জানার দাবী করে সে কাফির। তাকে মিথ্যাবাদী বলা ওয়াজিব। গণকের গণনা করার পরে যদি সত্যিকারে তেমনি কিছু ঘটে যায় তা ঘটনাচক্রে ঘটে যায় (কাকতলীয়)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

«من أتى كاهنًا أو عرَّافًا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد» .

“যে ব্যক্তি গণক অথবা ভবিষ্যৎ বক্তার কাছে এল এবং সে যা বলল বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপরে অবতীর্ণকৃত সব কিছুকে অস্বীকার করল।” এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ও হাকিম বর্ণনা করেছেন।

ইবাদতের আরও অন্যতম প্রকার হচ্ছে: ভরসা করা, কোনো কিছু পাওয়ার আশা ও অবনত হওয়া:

ভরসা করা, পাওয়ার আশা, বিনয় অবনত হওয়াও ইবাদাতের অন্তর্গত। সুতরাং মানুষ একক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপর ভরসা করবে না, কারও নিকট হতে কিছু পাওয়ার আশা করবে না। আল্লাহর কাছে ছাড়া বিনয়াবনত হবে না।

দুঃখের বিষয় যে, অনেক ইসলামধারীরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে অনেক জীবিত অথবা অনেক কবরবাসীর কাছে দো‘আ করার মধ্য দিয়ে শির্ক করে। তাদের কবরকে প্রদক্ষিণ করে। তাদের কাছে প্রয়োজন মিটানোর প্রার্থনা জানায়। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ ছাড়া অন্যেরই ইবাদত। এইরূপ কাজ যারা করে তার মুসলিমের দাবী করলেও, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর রাসূল বললেও, ছালাত আদায় করলেও, ছিয়াম পালন করলেও, আল্লাহর ঘরে হজ্ব করলেও তারা মুসলিম নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [ الزمر : ٦٥ ]

“অবশ্যই তোমার ও তোমার পূর্ববর্তীদের নিকটে ওহী পাঠানো হয়েছিল এই বলে যে, যদি তুমি শির্ক কর, তোমার কর্ম বৃথা যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। (সূরা যুমার-৬৫)

আল্লাহ আরও বলেন,

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [ المائ‍دة : ٧٢ ]

“প্রকৃত বিষয় এ যে, যে আল্লাহর সাথে শির্ক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। জাহান্নাম তার আবাসস্থল। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই”। (সূরা মায়িদা- ৭২)

তাছাড়া আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তিনি মানুষদেরকে বলেন,

﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [ الكهف : ١١٠ ]

“তুমি বলঃ আমি তোমাদের মত একজন মানুষ তবে আমার কাছে ওহী পাঠান হয় (এ মর্মে) যে, নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ হচ্ছে একই ইলাহ। অতঃপর যে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়, সৎ কাজ করা এবং তার রবের সাথে অন্য কাউকে ইবাদাতে শির্ক না করা উচিত।” (সূরা আল-কাহাফ:১১০)

তারা সবাই মূর্খ তাদেরকে এ পথভ্রষ্ট ও নিকৃষ্ট আলেমগণ ধোঁকা দিয়েছে, যারা দ্বীনের কিছু শাখা প্রশাখা সম্পর্কে জানলেও দ্বীনের মূল ভিত্তি তাওহীদ সম্পর্কে অজ্ঞ রয়ে গেছে। তারা তাদেরকে তাওহীদের অর্থ সম্পর্কে মূর্খ থাকার কারণে শাফা‘আত ও ওয়াসীলার নামে শির্কের দিকে আহ্বান জানায়। তাদের প্রমাণাদি হচ্ছে; কিছু আয়াতসমূহের ভুল ব্যাখ্যা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামে প্রণীত নতুন পুরাতন মিথ্যা হাদীসসমূহ, বিভিন্ন ঘটনাবলী ও শয়তান কর্তৃক প্রদর্শিত স্বপ্ন প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার এসব পথভ্রষ্টতা; যা তারা তাদের পুস্তকসমূহে সন্নিবেশিত করেছে। এটা এজন্য যে, প্রথম যুগের মুশরিকদের মত তারা দাদা ও পিতাদের অন্ধ অনুকরণ করে এবং স্বীয় প্রবৃত্তি (অবৈধ খেয়াল খুশী) ও শয়তানের অনুসরণ করে।

বস্তুত: আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে ‘ওয়াসীলা’ তালাশ করতে বলেছেন তার বাণীতে,

﴿وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [ المائ‍دة : ٣٥ ]

“আর তোমরা তাঁর কাছে ওয়াসীলা তালাশ করো”। [সূরা আল-মায়িদাহ: ৩৫] এখানে “ওয়াসীলা” শব্দের অর্থ হচ্ছে, “সৎ কাজসমূহ” যেমন আল্লাহর একত্ববাদ, সালাত আদায় করা, সদকা প্রদান করা, সিয়াম পালন, হজ্জ আদায় করা, জিহাদ করা, ভাল কাজের নির্দেশ দান ও খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করা, আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কে রক্ষা প্রভৃতি। এর বাইরে মৃতদের আহ্বান জানানো, বিপদাপদ ও মুসিবতে তাদের কাছে উদ্ধার কামনা করা তা তো আল্লাহ ব্যতীত তাদের ইবাদাত করারই নামান্তর। (ওয়াসীলার সাতে এর কোনো সম্পর্ক নেই।)

মুসলিমদের নবী ও আউলিয়াগণকে আল্লাহ যে শাফা‘আত বা সুপারিশের অনুমতি দিবেন, যার উপর আমরা ঈমান এনে থাকি, তাও মৃতদের নিকট চাওয়া যাবে না, কেননা শাফা‘আত কেবল আল্লাহরই অধিকার; তার অনুমতি ছাড়া কারো জন্য তা অর্জিত হবে না। আর তাই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসীগণ তা একমাত্র আল্লাহর কাছেই চায়, এ বলে যে, হে আল্লাহ, আপনার রাসূল ও আপনার সৎ বান্দাদেরকে আমার জন্য শাফা‘আতকারী বানিয়ে দিন। তারা এটি বলেন না যে, হে অমুক, আমার জন্য শাফা‘আত করুন। কেননা সে মৃত। আর মৃতের কাছে কক্ষনো কিছু চাওয়া যায় না। আল্লাহ বলেন,

﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ لَّهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٤٤ ﴾ [ الزمر : ٤٤ ]

“তুমি বল: সকল প্রকার শাফা‘আত আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। আসমান জমিনের একচ্ছত্র রাজত্ব তারই, অতঃপর তাঁরই দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করানো হবে।” (সূরা যুমার-৪৪)

ইসলাম বিরোধী হারাম বিদ‘আত, আর যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ছহীহ সুনান গ্রন্থে সংকলিত ছহীহ হাদীসসমূহে নিষেধ করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কবরের উপর মসজিদ বানানো, কবরে বাতি দেওয়া, কবরের উপরের ঘর তৈরী, কবর গাঁথা, কবরের উপরে লেখা, কবরে পর্দা চড়ানো, কবরস্থানে নামায আদায় প্রভৃতি। এগুলো থেকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। কেননা এগুলো কবরবাসীর ইবাদত করার অন্যতম বড় কারণ।

এ দ্বারা পরিষ্কার হয়েছে যে, অনেক দেশে কবরে যেমন মিসরের বাদওয়ী ও যায়নাব এর কবরে, ইরাকে জিলানীর কবর, কারবালা ও নজফের আহলি বাইতের দিকে সম্পৃক্ত কবরসমূহে ও অন্যান্য কবরসমূহে মূর্খরা কবরের তাওয়াফ ও কবর ওয়ালাদের কাছে প্রয়োজন পূরণ করা চাচ্ছে এবং তাদের সাথে ক্ষতি কিংবা উপকারের বিশ্বাস করছে তা আল্লাহর সাথে শির্ক করার শামিল।

এ দ্বারা আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কবরকে যে তাওয়াফ করা হয়, কবরবাসীর কাছে প্রয়োজনীয় জিনিষ চাওয়া হয়, তাদেরকে ভাল মন্দ করার যোগ্যতা আছে বলে বিশ্বাস করা হয় প্রভৃতি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। তারা মুসলিম দাবী করলেও, ছালাত আদায় করলেও, ছিয়াম পালন করলেও আল্লাহর ঘরে হজ্ব করলেও আল্লাহ ছড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই ও মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর রাসূল, একথা উচ্চারণ করলেও তাদের উপরোক্ত কাজ প্রমাণ করে তারা পথ ভ্রষ্ট মুশরিক। কেননা, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার রাসূল; এটাকে মুখে উচ্চারণ করলেই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া যায় না। যতক্ষণ না সে এর অর্থ জানে এবং সে অনুযায়ী আমল করে। যেমন পূর্বে বলা হয়েছে।

অপর দিকে অমুসলিম প্রথমতঃ এ বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমেই ইসলামে প্রবেশ করে ও তাকে মুসলিম বলা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ এটার পরিপন্থি কোনো কিছু তার থেকে প্রকাশ না পায়। যেমন- পূর্বে উল্লেখিত শির্কী কাজসমূহ। অথবা যতক্ষণ না ইসলামের ফরয কাজসমূহ তার কাছে বললে সে সেটাকে অস্বীকার করে। অথবা ইসলাম বিরোধী কোনো দ্বীনের প্রতি ঈমান আনে। নবী ওলীগণ [ওলী আল্লাহ হচ্ছে, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাঁর অনুগত রাসূলের অনুসারী। তন্মধ্যে কেউ কেউ তার ইলম ও অধ্যাবসয়ের কারণে পরিচিতি লাভ করেন, কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করেন না। পরিচিত জন-মানুষ তাদেরকে সম্মান করুক তারা তা চায় না। সত্যিকারের ওলীরা নিজেদের ওলী বলে দাবী করে না। বরং তার অপরাধী হিসাবে নিজেদেরকে প্রকাশ করে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণ ব্যতীত তাদের নিজস্ব কোনো কাপড় বা সাজ সরঞ্জাম নেই। প্রত্যেকে আল্লাহর একত্ববাদী মুসলিম ও তার রাসূলের অনুসারী, তার যোগ্যতা ও আনুগত্যের মাপকাঠি অনুযায়ী সে আল্লাহর ওলীর অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা পরিষ্কার হলো যে, যারা নিজেদেরকে ওলী বলে দাবী করে, লোকে তাদের বড় ভাববে ও সম্মান দেখাবে বলে তারা নির্ধারিত কাপড়ও পরে, তারা আল্লাহর ওলী নয়, তারা মিথ্যাবাদী।] যারা তাদেরকে ডাকে তাদের থেকে বিপদে মুক্তি চায়, তাঁরা তাদের থেকে সম্পর্কহীন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষদেরকে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা এবং নবী কিংবা ওলী ও অন্যান্যদের ইবাদাত পরিত্যাগের জন্য রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন।

আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারী ওলীদের ভালবাসার অর্থ তাদের ইবাদাত করা নয়। কেননা তাদের ইবাদাত তাদের সাথে শত্রুতার নামান্তর। রবং তাদের ভালবাসা, তাদের অনুসরণ এবং তাদের পথে চলারই নাম। সত্যিকারের মুসলিম নবী ও ওলীদেরকে ভালবাসেন, তাদের ইবাদাত করেন না। আমরা ঈমান আনব যে, নিজেদের জান, পরিবার, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে রাসূলকে অধিক ভালবাসা আমাদের প্রতি ওয়াজিব।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন