hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

শাশ্বত জীবন ব্যবস্থা (হক দীন)

লেখকঃ আশ-শাইখ আবদুর রহমান ইবন হাম্মাদ আ-লে উমার

প্রথম অধ্যায়: মহান স্রষ্টা আল্লাহ [(আল্লাহ) সমগ্র জগত, মানুষ ও সবকিছুর ইলাহ এর নাম। এটি হচ্ছে তাঁর সত্তার নাম। পবিত্র সত্তাকে তিনি এ নামে নামকরণ করেছেন। তিনি (الإله الحق) সত্যিকারের ইলাহ।] সম্পর্কে জ্ঞান
হে জ্ঞানবান, জেনে রাখুন, নিশ্চয় যিনি আপনাকে নাস্তি (অস্তিত্বহীন) থেকে তৈরী করেছেন, সেই আল্লাহই বিশ্বজগতের রব্ব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার [( تعالى ) সম্মানসূচক ও আল্লাহর গুণগান সম্বলিত শব্দ যা তাঁর সর্বোচ্চতা ও পবিত্রতাকে নির্দেশ করে ( سبحانه ) অর্থাৎ আল্লাহ পবিত্র।] প্রতি ঈমান গ্রহণকারী জ্ঞানীরা তাঁকে চোখে না দেখলেও, এমন বহু নিদর্শনাবলী রয়েছে যা প্রমাণ করছে যে, তিনি বিদ্যমান, তিনি স্রষ্টা, তিনি সকল বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণকারী, যার মাধ্যমে তারা তাঁকে জেনেছেন। এ সকল প্রমাণাদি হচ্ছে:

১. জগত, মানুষ ও জীবন: এগুলো সবই নশ্বর। যার প্রথম ও শেষ রয়েছে। যা অন্যের মুখাপেক্ষী। নশ্বর ও অন্যের মুখাপেক্ষী সবই সৃষ্ট, আর প্রত্যেক সৃষ্টের জন্যই স্রষ্টা অত্যাবশ্যক, এ মহান স্রষ্টাই হচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাহ স্বয়ং নিজের পবিত্র সত্তা সম্পর্কে বলেছেন, তিনি স্রষ্টা, তিনি সমস্ত বিশ্বজগতের নিয়ন্ত্রণকারী। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর অবতীর্ণ কিতাবসমূহে এটি আলোচিত হয়েছে।

আল্লাহর রাসূলগণ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়াসাল্লাম) তাঁর বাক্যকে মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছেন। তাঁর প্রতি ঈমান আনা ও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআনে বলেছেন,

﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [ الاعراف : ٥٤ ]

“নিশ্চয় আল্লাহই তোমাদের রব্ব, যিনি আকাশমালা এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠলেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন, যা দ্রুতগতিতে এর পিছে অনুসরণ করে। সূর্য, চন্দ্র এবং নক্ষত্ররাজি তাঁর নির্দেশ পালনে নিয়োজিত। অবশ্যই সৃষ্টি ও নির্দেশের অধিকার তাঁরই। সুতরাং সমগ্র বিশ্ব জগতের রব্ব আল্লাহই অতীব বরকতময়।” (আল-আরাফ: ৪৫)

আয়াতটির সারমর্ম:

আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, নিশ্চয় তিনিই তাদের রব্ব যিনি সমগ্র আসমান যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। [সময়ের ক্রমানুসারে আল্লাহর ইচ্ছাকৃত এ সৃষ্টি তার হিকমাতেরই অন্তর্ভুক্ত। অন্যথায় তিনি চোখের পলকের চেয়েও কম সময়ে সমগ্র সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করার ক্ষমতা রাখেন। কেননা তিনিই তো বলেছেন ‘‘যখন তিনি কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন, বলেন ‘হয়ে যাও’, আর তা হয়ে যায়।’’] তিনি এটিও জানাচ্ছেন যে, তিনি আরশের উপর উঠেছেন। [আরবদের ভাষা তথা কুরআনের ভাষায় কোনো কিছুর উপরে উপরে উঠাকে ( استوى على شيء ) বলা হয়। তাই ( استوى على عرشه ) এর অর্থ, তিনি আরশের উপরে উঠেছেন, যা তার সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার জন্য মানানসই। তবে সে উপরে উঠার স্বরূপ কী তা তা কেউ জানে না। ( استوى ) এর অর্থ কখনও ( استولى ) নয়। অর্থাৎ আধিপত্য বিস্তার করা নয়, যেমন ভ্রষ্টলোকেরা ধারণা করে থাকে, যারা আল্লাহ যে সমস্ত গুণে নিজেকে ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে গুণান্বিত করেছেন, সে সমস্ত গুণাবলীর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, তারা এটা এ ভেবে করে যে, যদি ঐ সমস্ত গুণে আল্লাহকে গুণান্বিত করা হয় তাহলে কোনো সৃষ্টির সমতুল্য বলে তিনি গণ্য হবেন। বস্তুত এটি ভিত্তিহীন মতবাদ। কেননা সৃষ্ট তুল্য অর্থ হচ্ছে এ বলা যে, তাঁর এ গুণাবলী সৃষ্টের এ গুণাবলীর সমতুল্য তাঁর এ গুণাবলী তাদের এ গুণের মত। কিন্তু কাল্পনিক তুলনা, উপমা, কেমনত্ব দ্বারা আমরা আল্লাহর গুণাগুণ তথা বিশেষণকে বুঝতে অক্ষম। এসব কিছুকে গ্রহণ করে তাঁর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্য যে কোনো গুণে তাঁকে গুণাম্বিত করাই হচ্ছে রাসূলগণের পদ্ধতি। এটাকেই আমাদের সালাফে ছালেহীন অনুসরণ করেছেন। এটাই সত্য, যেটাকে মুমিনদের আঁকড়ে ধরা ওয়াজিব, যদিও অনেকেই এটাকে পরিত্যাগ করেছে।] আরশ হচ্ছে আসমানসমূহের উপরে, যা সৃষ্টের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বপ্রশস্ত।

আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপর থেকে সমগ্র সৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এগুলোর কোনো বিষয় তাঁর অগোচরে থাকে না। তিনি এটিও জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি রাতকে সৃষ্টি করেছেন যা দিনকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে ফেলে এবং দ্রুতগতিতে তা দিনকে অনুসরণ করে। তিনি সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্ররাজী সবকিছুকে বিন্যাস করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরই নির্দেশে তারা তাদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। তিনি আরো বলেছেন- সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দেয়ার অধিকার একক তার জন্যই সংরক্ষিত। তিনি সদা-সর্বদা অনেক কল্যাণ দান করে থাকেন, তিনিই বিশ্বজগতের রব্ব যিনি তাদেরকে নাস্তি থেকে তৈরী করেছেন। তাদেরকে নিয়ামত দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧ ﴾ [ فصلت : ٣٧ ]

“আর তাঁর নির্দশনসমূহের মধ্যে রাত্র, দিন, সূর্য ও চন্দ্র অন্যতম। সূর্যকে তোমরা সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও না। ঐ আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি এগুলো তৈরী করেছেন, যদি তোমরা একমাত্র তার ইবাদত করতে চাও”। (হামীম সিজদা: ৩৭)

আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে,

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, রাত্র-দিন, সূর্য-চন্দ্র তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম। সাথে সাথে সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদাও করতে তিনি নিষেধ করেছেন। কেননা এ দুটিও অন্যান্য জিনিসের মত সৃষ্টের অন্তর্ভুক্ত, আর সৃষ্টকে ইবাদত করা একেবারেই অবৈধ। আর এ সিজদাও ইবাদতের অংশ বিশেষ এবং অন্যান্য আয়াতের মত এখানেও তিনি একক আল্লাহকে সিজদার নির্দেশ দিচ্ছেন। কেননা তিনিই স্রষ্টা, তিনিই নিয়ন্ত্রণকারী এবং একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য সত্তা।

২. নর-নারীর সৃষ্টি: আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আমাদেরকে যে অকাট্য প্রমাণসমূহের পথ নির্দেশনা দিচ্ছে, তন্মধ্যে পুরুষ ও মহিলাদের সৃষ্টি অন্যতম। এ দু’য়ের বিদ্যমানতা আল্লাহর অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ।

৩. ভাষা ও রং-এর ভিন্নতা: কখনও দু’জন একই কণ্ঠের ও একই রং-এর পাওয়া না বরং এদের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয়।

৪. তাকদীরের পার্থক্য: একই সময় অনেকেই জ্ঞানী চিন্তাশীল বিদ্বান হওয়া সত্ত্বেও ধন মর্যাদা ও সুন্দরী স্ত্রী লাভ করতে আগ্রহী। কেউ ধনী, দরিদ্র, কেউ শাসক, কেউ শাসিত হয়েই থাকতে হয়। কেননা, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা ব্যতীত সে অন্যকিছু অর্জন করবে না। এর মধ্যে আল্লাহ চান এমন ধরনের গুঢ় রহস্য নিহিত রয়েছে; সেটি হচ্ছে. মানুষদের একের দ্বারা অপরকে তিনি পরীক্ষা করতে চান এবং সকলের প্রয়োজন পূরণ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য একের দ্বারা অপরের খেদমত করাতে চান। এ পৃথিবীতে আল্লাহ যার তাকদীর ভাল নির্ধারণ করেন নি তার জন্য জান্নাতে অতি উত্তম নিয়ামত সংরক্ষণ করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন; যদি সে আল্লাহর উপর ঈমান নিয়ে মারা গিয়ে থাকে। এর পরেও আল্লাহ তা‘আলা দরিদ্রদের মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে এমন বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা অনেক ধনীজন পায় নি। এটি আল্লাহর হিকমত ও ন্যায় বিচারের নিদর্শন।

৫. নিদ্রা ও সত্য স্বপ্ন : যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে অনেক অজানা বিষয়ের সুসংবাদ দান বা ভীতি প্রদর্শণ করে থাকেন। তিনি বলেন,

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ مَنَامُكُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ﴾ [ الروم : ٢٣ ]

“দিন ও রাত্রে তোমাদের স্বপ্ন তারই নিদর্শন।” (আর-রূম: ২৩)

৬. রূহ: যার বাস্তবতা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

৭. মনুষ্য শরীর: মানুষ এবং তার শরীরের ইন্দ্রিয়, শিরা ও উপশিরা ও মস্তিষ্কের সরঞ্জাম ও পরিপাকের যন্ত্রাংশ প্রভৃতি।

৮.বৃষ্টি: আল্লাহ মৃত পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন রং এর, বিভিন্ন প্রয়োজনের বিভিন্ন তৃণ ও বৃক্ষের উৎপত্তি হয়। এগুলো আল্লাহর অস্তিত্বের অসংখ্য প্রমাণাদির মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রমাণ। যে সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং যে সম্পর্কে এ মর্মে বিবৃতি দিয়েছেন যে, এগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অস্তিত্ব ও তিনি যে স্রষ্টা ও সকল সৃষ্টের নিয়ন্ত্রণকারী তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

৯. মনুষ্য প্রকৃতি: যে প্রকৃতি দিয়ে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে সে তার স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর উপর ঈমান আনবে। যে এটাকে অস্বীকার করে সে তার আত্মাকে ভ্রান্তি ও হতাশায় নিক্ষেপ করে। উদাহরণস্বরূপ কম্যুনিষ্টের কথা উল্লেখ করা যায়। সে [যদি সে তওবা করে ফিরে আসে, আল্লাহর উপর, তাঁর রাসূল ও তাঁর দ্বীনের উপর ঈমান আনার মত ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী আমল করে তাহলে আল্লাহও তাওবাকারীদের দিকে ফিরে আসেন।] এ জীবনে ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে বাস করে এবং যিনি অস্তিত্বহীনতা থেকে তাকে তৈরী করলেন ও নিয়ামতের দ্বারা বড় করলেন তাকে মিথ্যা বলার কারণে মৃত্যুর পরে তার গন্তব্যস্থান হবে জাহান্নাম। যদি না সে আল্লাহর কাছে তাওবা করে, তার উপর, তার দীনের উপর এবং তার রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করে।

১০. আল্লাহর কোনো কোনো সৃষ্টিতে বরকত ও প্রাচুর্যের সমাহার ঘটা: যেমন ছাগল; আর বরকতের বিপরীত হচ্ছে অকর্মণ্য ও নিষ্ফল হওয়া যেমন কুকুর ও বিড়ালে।

আল্লাহর গুণের ভিতরে এটিও যে, তিনি প্রথম, যার কোনো শুরু নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, মৃত্যুবরণ করবেন না এবং কখনও শেষ হবেন না। তিনি ধনাঢ্য, নিজেই প্রতিষ্ঠিত, অন্যের মুখাপেক্ষী নন। তিনি এক এবং তাঁর কোনো শরীক নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ * قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [ الاخلاص : ١، ٤ ]

“অসীম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। তুমি বল, তিনিই আল্লাহ, তিনি অদ্বিতীয়, তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কারো জন্ম দেননি, কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং কেউ তাঁর সমতুল্যও নেই” (সূরা ইখলাস: ১-৪)

আয়াতের মর্মার্থ:

যখন কাফেররা শেষ নবীর কাছে আল্লাহর গুণ সম্পর্কে প্রশ্ন করল তখন আল্লাহ এ সূরা অবতীর্ণ করেন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তাদের উদ্দেশ্যে এ বলার নির্দেশ দিলেন যে, আল্লাহ এক এবং তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী ও সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী। সমগ্র বিশ্বজগত, মানুষ জাতি ও সব কিছুর উপরে তাঁরই একক কর্তৃত্ব রয়েছে। সকল প্রয়োজন মিটানোর জন্য মানুষদের শুধুমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী হওয়া ওয়াজিব। তিনি জন্ম দেন নি, জন্মও নেন নি। তাঁর কোনো পুত্র বা কন্যা, পিতা অথবা মাতা হতেই পারে না। তাঁর ক্ষেত্রে এগুলো যে হতেই পারে না, অন্য সূরাগুলোতেও তিনি তার প্রমাণ দিয়েছেন। কেননা, পর্যায়ক্রমে আসা ও জন্মলাভ সৃষ্টির গুণ বিশেষ। এর দ্বারা তিনি খৃষ্টানদের কথা- ঈসা আল্লাহর পুত্র’ ও ইয়াহূদীদের কথা ‘উযায়ের আল্লাহর পুত্র’ এবং অন্যান্যদের কথা ‘ফিরিশতারা আল্লাহর কন্যা’ কে রহিত করেছেন। তাদের তিরষ্কার করেছেন এবং তাদের কথা বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং একথাও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি নিজ কুদরতে আল্লাহ মাসীহ ঈসা আলাইহিস সালামকে মাটি হতে ও মানব মাতা হাওয়া আলাইহাস সালামকে আদমের পাঁজর হতে সৃষ্টি করেছিলেন। অতঃপর আদম আলাইহিস সালাম হাওয়া আলাইহাস সালামকে তার পার্শ্বে দেখলেন। এরপর আদম সন্তানদেরকে নর-নারীর বীর্য হতে তৈরী করলেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন সব কিছুকে অবিদ্যমানতা হতে এবং এরপর সকল সৃষ্টিকে বিশেষ নিয়ম ও পদ্ধতিতে সৃষ্টি করেছেন। যা তিনি ছাড়া অন্য কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। যখন তিনি এ নিয়ম পদ্ধতিকে যেমন ইচ্ছা পরিবর্তন করতে চান, করেন। যেমন তিনিই ঈসা আলাইহিস সালামকে পিতা ছাড়া মাতা হতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে দোলনায় কথা বলানো, মূসা আলাইহিস সালামের লাঠিকে ধাবমান সাপ বানানো, তদ্বারা সমুদ্রের উপরে আঘাত করে তন্মধ্যে তিনি ও তাঁর কওমের অতিক্রমযোগ্য রাস্তা বানানো, সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করা, অতিক্রমের সময় গাছ কর্তৃক তাঁকে সালাম জানানো। প্রাণীর পক্ষ থেকে তার বিশ্বস্ততার এমন সাক্ষ্য প্রদান যা মানুষেরা শুনেছে, এর কথা ছিল আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ঠিক তেমনিভাবে তাঁকে মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আকসা পর্যন্ত বোরাকে করে রাত্র ভ্রমণ করানো হয়। তাঁর সাথী ছিলেন জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম। যখন আসমানের উপরে পৌছলেন, আল্লাহ তাঁর সাথে কথা বললেন। তাঁর উপর ছালাত ফরয করার পর তিনি তিনি মসজিদে হারামে ফিরে আসেন এবং আসমানের প্রত্যেক অধিবাসীগণ চলার পথে তাঁকে দেখেছেন। এটা ছিল এক রাত্রিতে সূর্য উঠার পূর্বে। রাত্র ভ্রমণ ও মিরাজের ঘটনা কুরআন, হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে।

আল্লাহর অন্যান্য গুণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শ্রবণ, দর্শন, জ্ঞান, ক্ষমতা ইচ্ছাশক্তি। তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন। কোনো পর্দা তাঁর শোনা ও দেখার প্রতিবন্ধক হতে পারে না। মাতৃগর্ভে কি রয়েছে এবং মানুষের অন্তরে কি লুকায়িত, যা হয়েছে ও যা হবে, সব কিছুই তিনি জানেন। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি ইচ্ছা পোষণকারী, যখন যা ইচ্ছা করেন বলেন, “হয়ে যাও” অতঃপর তা হয়ে যায়।

তাঁর পবিত্র সত্তা নিজেকে যে গুণে গুণান্বিত করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তিনি যখন চান, যার সাথে চান, তার সাথে কথাবার্তা বলেন। তিনি মূসা আলাহিস সালাম ও সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে কথা বলেছেন। পবিত্র কুরআনের অক্ষরসমূহ ও অর্থসমূহ আল্লাহরই বাণী। তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর তিনি এটি অবতীর্ণ করেছেন। তাঁর ‘বাণী’ (কুরআন)ও তাঁর গুণাবলীর মধ্য থেকে একটি গুণ; এটি সৃষ্ট কিছু নয় যেমনটি পথভ্রষ্ট মু‘তাযিলারা বলে থাকে।

তিনি নিজকে নিজে ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে যে গুণে গুণান্বিত করেছেন তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চেহারা, হাত, উর্ধ্বাবস্থান, অবতীর্ণ হওয়া [ঐ হাদীসের আলোকে যেখানে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের রব্ব শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন”।] খুশি হওয়া, রাগ করা। তিনি তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রতি খুশী হন এবং কাফির ও তাঁর অপছন্দ কার্যাদিতে নিমজ্জিতদের প্রতি রাগান্বিত হন। তাঁর খুশী হওয়া, রাগ করা, চেহারা ও হাত থাকা, উর্ধ্বাবস্থান নেয়া, অবতীর্ণ হওয়া তাঁর অন্যান্য গুণাবলীর মত তার শ্রেষ্ঠত্বের সাথে সামঞ্জস্যশীল গুণাবলী, যা কোনো সৃষ্টের গুণের সাথে তুলনা হয় না। কোনো অপব্যাখ্যা ও ধরন নির্ধারণ ব্যতীতই সাব্যস্ত করতে হবে।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও হাদীছে এটি প্রমাণিত যে, মুমিন বান্দাগণ কেয়ামতের মাঠে ও জান্নাতে স্বচক্ষে আল্লাহ রব্বুল আলামীনকে দেখবেন।

আল্লাহর গুণাবলী মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। আপনি সেগুলো বিস্তারিতভাবে দেখে নিন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন