মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ক- ইলাহ্ (মা'বূদ) হিসেবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের অর্থ: এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে কেবল মাত্র আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল প্রকার ইবাদাতের হক্বদার এবং যোগ্য। যেমন: দুয়া', ভয়, ভরসা, সহযোগীতা প্রার্থনা করা, সালাত, যাকাত, সিয়াম (রোযা) ইত্যাদী। নিশ্চিতভাবে বান্দার জানা উচিৎ আল্লাহ্ তায়ালাই হলেন প্রকৃত মা'বূদ বা ইবাদাতের যোগ্য, তাঁর কোন শরীক নেই। অতএব, আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত সত্য কোন মা'বূদ-উপাস্য নেই। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:
অর্থ: আর তোমাদের মা'বূদ তো এক-ই মা'বূদ, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য মা'বূদ নেই, তিনি করুণাময় ও মহান দয়ালু। সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ আয়াত ১৬৩।
আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) সংবাদ দিয়েছেন উপাস্য এবং মা'বূদ হলেন একজন। অতএব, আল্লাহ্ ব্যতীত কাউকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করা এবং তিনি (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত কারও ইবাদত করা জায়েয নয়।
খ- আল্লাহর উলূহিয়্যাতে বিশ্বাস: তা হলো এ কথা স্বীকার করা যে আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) একমাত্র সত্য মা'বূদ, তাঁর কোন শরীক নেই। ইলাহ্ শব্দের অর্থ মাহলুহ্ অর্থাৎ ভালবাসা ও সম্মান সহকারে যার ইবাদাত করা হয়। অতএব, উলুহিয়্যাহ্ হলো, সকল প্রকার ইবাদাতে আল্লাহর একত্ববাদ।
তাই আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে ডাকিনা, তিনি (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত কাউকে ভয় করি না।
আমরা কেবল তাঁর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) উপরই ভরসা করি, তাঁকেই সিজদাহ্ করি, তাঁর নিকটেই নত হই। সঙ্গত কারনেই আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়। এ কথারই প্রমাণমেলে আল্লাহ তায়ালার বাণী:
অর্থ: আমার ইবাদাত করার জন্যই আমি মানব ও জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি। সূরাহ্ আয্-যারিয়াত আয়াত ৫৬।
* রাসূলগণ (আলাইহিমুস্ সালাম) এবং আসমানি কিতাবসমূহ প্রেরণের উদ্দেশ্য হলো এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে আল্লাহ্ তায়ালাই একমাত্র সত্য মা'বূদ। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং ত্বাগুত থেকে নিরাপদ থাক। সূরাহ্ আন্ নাহ্ল আয়াত ৩৬।
* প্রত্যেক ব্যক্তির উপর সর্ব প্রথম আল্লাহ তায়ালার উলূহিয়্যাতে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরয। যেমন: আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুয়ায বিন জাবাল কে ইয়েমেনে পাঠান তখন তাঁকে যে ওসিয়ত করেন তা হল:
অর্থ: তুমি এমন জাতির নিকটে যাচ্ছ যারা আহ্লে কিতাব। অতএব, তাদেরকে সর্বপ্রথম আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি দাওয়াত দিবে। বুখারী ও মুসলিম। অর্থাৎ: সকল প্রকার ইবাদাতে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহ্বান করবে।
ঘ- ( لاإله إلاالله ) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর গুরুত্ব: জীবনের প্রথম ও শেষে এই মর্যাদাপূর্ণ বাক্য বা কালিমাটি পাঠ ও বিশ্বাস করা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। যে ব্যক্তি এ কালিমার উপর ( বিশ্বাস সহকারে) মৃত্যু বরণ করবে তিনি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। নবী কারীম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বূদ নেই, একথা জানা ও বিশ্বাস করা অবস্থায় যে ব্যক্তি ইন্তেকাল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ্ মুসলিম ১/১২৫।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইহা স্পষ্ট যে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বূদ নেই) এর জ্ঞানার্জন করা সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ন ওয়াজিব।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ( لاإله الاالله ) এর অর্থ: এক আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বূদ নেই। এখানে আল্লাহ্ ছাড়া সকলের থেকে উলূহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতের যোগ্যতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। অপর দিকে সকল প্রকার ইবাদাতকে একমাত্র লাশারীক আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ইলাহ্ শব্দের অর্থ: মা'বূদ বা যার ইবাদত করা হয়। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত অন্যকারো ইবাদাত করল, সে তাকে ইলাহ্ বা মা'বূদ হিসেবে গ্রহণ করল। এক অদ্বিতীয় আল্লাহ্ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করা হয় তারা বাতিল। আল্লাহ্ তায়া'লাই একমাত্র ইলাহ্, অন্তরসমূহ ভালবাসা, সম্মান, বিনয়, নম্রতা, ভয়-ভরসা এবং দুআ'র মাধ্যমে যার ইবাদাত করবে।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর অর্থ বাস্তবায়ন ব্যতীত কোন অন্তর খুশী, সুখী ও সৌভাগ্যশীল হতে পারে না। কেননা, কেবল মাত্র এক আল্লাহর ইবাদাতেই রয়েছে পূর্ণ সুখ, শান্তি, নিয়ামত এবং সুন্দর জীবন।
ঙ -اركان لاإله الا الله : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর ভিত্তিসমূহ: এই মর্যাদাপূর্ণ কালিমাটির দু'টি রোকন বা ভিত্তি রয়েছে, তা হল: না বোধক এবং হাঁ বোধক।
প্রথম রুকন: لاإله ) ( লা-ইলাহা: আর ইহা হলো আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের ইবাদাতকে অস্বীকার করা, শির্ককে বাতিল হিসেবে বিশ্বাস করা এবং অত্যাবশ্যকভাবে আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত যাদের ইবাদাত করা হয় তা কুফরী বলে জানা।
দ্বিতীয় রুকন: ( إِلَّا اللَّه ) ইল্লাল্লাহ্: ইহা হলো সকল প্রকার ইবাদাত এক আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা এবং তা কেবলমাত্র আল্লাহর নিমিত্তেই সম্পাদন করা। এর দলীল হলো আল্লাহর বাণী:
অর্থ: যারা গোমরাহ্কারী ত্বাগুতদেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল। সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ আয়াত ২৫৬।
আল্লাহর বাণী: فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ হলো প্রথম রুকন লা-ইলাহার অর্থ। وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ দ্বিতীয় রোকনের তথা ইল্লাল্লাহর অর্থ।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহের শর্তাবলী:
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহের সাতটি শর্ত রয়েছে যা একসাথে পাওয়া আবশ্যক। একসাথে সাতটি শর্ত পাওয়া না গেলে তা পাঠকারীর কোন উপকারে আসবে না।
শর্তগুলো নিম্নরুপ:
১ - العلم আল্ ইলম: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) এর অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ﴾ ( سورة محمد ১৯)
অর্থ: জেনে রাখুন, আল্লাহ্ ব্যতীত (সত্য) কোন উপাস্য নেই। সূরাহ্ মুহাম্মাদ আয়াত ১৯।
২ -اليقين (দৃঢ় বিশ্বাস): এ কালিমা যে সকল বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে তাতে দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া। যদি তাতে সন্দিহান ও দোদুল্যমান হয় তবে এ কালিমা তার উপকারে আসবে না। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: তারাই মু'মিন, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না। সূরাহ্ আল্ হুজরাত ১৫।
৩ - القبول (গ্রহণ করা): এ কালিমা একমাত্র আল্লাহ্ তায়া'লার যে সকল ইবাদাত করা এবং তিনি (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত অন্যের ইবাদাত পরিত্যাগ করার প্রমাণ বহন করে তা গ্রহণ করা। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি এ কালিমা পাঠ করতঃ এক আল্লাহর ইবাদাত গ্রহণ না করে, তাহলে সে ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেছেন:-
অর্থ: তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব। সূরাহ্ আস্ সাফ্ফাত আয়াত ৩৫-৩৬।
৪ - الإنقياد ) (এ কালিমা যে সকল বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে তা স্বীকার করা: আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে। সূরাহ্ লুক্বমান আয়াত ২২। يُسْلِمْ وَجْهَهُ এর অর্থ: স্বীকার করা ও বিনয়ী হওয়া। الْعُرْوَةِ الْوُثْقَى হল: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ যার অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বূদ নেই।
৫ - الصدق )) সত্যবাদীতা: তা হলো এ কালিমা সত্যিকার অর্থে অন্তর থেকে পাঠ করা। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
অর্থ: (যে ব্যক্তিই সত্যিকার অর্থে অন্তর থেকে সাক্ষ্য দিবে আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের উপর হারাম করে দিবেন। বুখারী ও মুসলিম।
৬- ( الإخلاص ) খাঁটি একনিতা: তা হলো আমলকে সকল প্রকার শিরক থেকে মুক্ত করা। ফলে মুখলেস ব্যক্তি এ কালিমা পাঠের মাধ্যমে দুনিয়ার কোন লোভ লালসা করবে না। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
অর্থ: নিশ্চয় যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করে আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। বুখারী ও মুসলিম।
৭ - المحبة ) ( ভালবাসা: এ কালিমা ও যে সকল বিষয়ের উপর তা প্রমাণ বহন করে এবং এর প্রতি আমলকারীগণের প্রতি ভালবাসা থাকা। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তূ যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।
অতএব, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠকারী মু'মিনগণ আল্লাহকে খালেসভাবে ভালবাসেন। আর মুশরিকরা আল্লাহর সাথে তিনি ব্যতীত অন্য মা'বূদদেরকেও ভালবাসে। আর ইহা (আল্লাহর সাথে অন্য মা'বূদকে ভালবাসা) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর পরিপন্থি ও তা ভঙ্গকারী বিষয়।
চ - معنى العبادة ) ( ইবাদাতের অর্থ: যে সকল প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ভালবাসেন এবং তাতে খুশী হন তার সমষ্টিকে ইবাদাত বলা হয়। যেমন: আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ভালবাসা, আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) উপর ভরসা করা, তাঁর নিকটে প্রার্থনা করা, সালাত, যাকাত, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, আল্লাহকে স্মরণ করা, মুনাফিক্ব ও কাফিরদের সাথে জিহাদ করা ইত্যাদী।
ইবাদাত অনেক প্রকার। আল্লাহর আনুগত্য মূলক যাবতীয় কাজ ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন: কুরআন তেলাওয়াত করা, গরীব দূঃখীদের প্রতি দয়া করা, সত্যবাদীতা, আমানত রক্ষা করা এবং সুন্দর কথা। মু'মিনের যাবতীয় কাজ ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে যদি মু'মিন ব্যক্তি তাঁর কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করে।
বরং আমাদের কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে শক্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে খায় বা পান করে অথবা ঘুমায় তবে এর বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেওয়া হবে।
অতএব, সৎ নিয়ত ও সঠিক ইচ্ছার কারণে এ সকল অভ্যাস ইবাদাতে পরিণত হয় এবং এর জন্য সওয়াব দেওয়া হয়। তাই জানাগেল সালাত সিয়ামের মত কিছু নির্দিষ্ট নিদর্শনে ইবাদাত সীমাবদ্ধ নয়।
ছ- ইবাদাতের জন্যই আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) সকল মাখলুক্বকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: আমার ইবাদাত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহ্ তায়ালাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। সূরাহ্ আয্ যারিয়াত আয়াত ৫৬-৫৮।
আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) সংবাদ দিয়েছেন জ্বিন এবং ইনসানকে কেবলমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বান্দার ইবাদাতের কোন প্রয়োজন আল্লাহর নেই। বরং আল্লাহর নিকটে নিজের প্রয়োজন থাকার কারণে বান্দারই তাঁর ইবাদাত করা একান্ত আবশ্যক।
শিরক বিহীন এককভাবে আল্লাহর ইবাদাত করার প্রয়োজনীয়তা বান্দার পানাহারের প্রয়োজনীয়তা থেকেও বেশী। মানব হৃদয় একবার আল্লাহর ইবাদাত ও ইখলাসের (একনিষ্টভাবে তাঁর ইবাদাত করা) স্বাদ আসাদন করলে দুনিয়ার কোন বস্তু তার নিকটে এর চাইতে সু-স্বাদু, মিষ্টি এবং উত্তম মনে হবে না। আল্লাহর ইবাদাতকে বাস্তবায়ন করা ব্যতীত কেউ দুনিয়ার কষ্ট ও সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেনা।
জ- ইবাদাতের রোকন বা ভিত্তিসমূহ:
আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) যে ইবাদাতের আদেশ দিয়েছেন তা দু'টি গুরুত্বপূর্ণ রোকনের উপর প্রতিতিঃ
১- পরিপূর্ণ বিনয়-নম্রতা এবং ভয়।
২- পরিপূর্ণ ভালবাসা।
অতএব, বান্দার প্রতি আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) যে ইবাদাত ফরয করেছেন তাতে তাঁর প্রতি পূর্ণ বিনয়-নম্রতা, ভয়, ভালবাসা, আগ্রহ এবং আশা থাকা আবশ্যক।
ভয় ও বিনয়-নম্রতা ব্যতীত শুধু ভালবাসা (যেমন, খাদ্য ও সম্পদের ভালবাসা) ইবাদাত হতে পারে না। তেমনি মহব্বত বা ভালবাসা বিহীন ভয় ইবাদাত নয়, যেমন: হিংস্র জন্তুকে ভয়করা ইবাদাত হিসেবে গণ্য নয়। তাই আমলে যখন ভয় ও ভালবাসা একত্রিত হবে তখনি তা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। আর ইবাদাত আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত কারো জন্য করা জায়েয নয়।
ঝ- তাওহীদ তথা একত্ববাদ ইবাদাত ক্ববুলের কারণ: আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) যে ইবাদাতের আদেশ দিয়েছেন তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ ব্যতীত তা ইবাদাত বলে গৃহিত হবে না। শির্ক মিশ্রিত ইবাদাত সঠিক নয়। তাওহীদের বাস্তবায়ন এবং ইবাদাতে আল্লাহর একত্ববাদ ছাড়া কেউ আল্লাহর ইবাদাত করেছে বলা যাবে না। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত করতে গিয়ে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে সে আল্লাহর ইবাদাত করে না।
আল্লাহর নিকটে ইবাদাত ক্ববুলের শর্ত হলো, আল্লাহর একত্ববাদ, ইবাদাতে আল্লাহর জন্য ইখলাস থাকা, শির্ক না করা। সাথে রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করতে হবে। অতএব, প্রত্যেক আমল আল্লাহর নিকটে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য দু'টি শর্ত রয়েছে:
১- কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করা (এটাই হলো তাওহীদ)।
২- আল্লাহ যে সকল আদেশ করেছেন তার মাধ্যমে ইবাদাত করা। (আর সেটাই হলো রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য)। যেমন আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ আয়াাত ১১২।
أَسْلَمَ وَجْهَه এর অর্থ: তাওহীদের বাস্তবায়ন করতঃ বান্দা তার ইবাদাতকে আল্লাহর জন্যই একনিষ্ট ভাবে করে। وَهُوَ مُحْسِنٌ এর অর্থ: রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্যকারী।
ঞ- শির্ক: শির্ক ঈমান ও তাওহীদ পরিপন্থি বিষয়। কেবলমাত্র এক আল্লাহর উপাস্যে ঈমান আনা এবং সকল ইবাদাতে তাঁকে একক হিসেবে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব। অপর দিকে আল্লাহর নিকটে শির্ক হলো সবচেয়ে বড় অবাধ্যতা ও মারাত্মক পাপ যা আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ক্ষমা করেন না। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন: ﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ﴾ [ النساء : ৪৮
অর্থ: নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। সূরাহ্ আন নিসা আয়াত ৪৮। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ্র সাথে শরীক করা মহা অন্যায়। সূরাহ্ লুক্বমান আয়াত ১৩। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে বড় গুনাহের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ﴿ أ َنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ﴾ অর্থ: সবচেয়ে বড় গুনাহ্ হলো, তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। বুখারী ১৩/৩৯৪, মুসলিম ১/২৩৮।
শির্ক সকল ভাল আমল নষ্ট ও বাতিল করে দেয়। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: যদি তারা শির্ক করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত। সূরাহ্ আল আন্আম আয়াত ৮৮। শির্ক তাতে নিমজ্জিত ব্যক্তিকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী করে দেয়। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ্ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। সূরাহ্ আল্ মায়িদাহ্ আয়াত ৭২।
শির্কের প্রকার:
প্রকাশ থাকে যে, শির্ক দুই প্রকার: (১) বড় শির্ক ও (২) ছোট শির্ক। নিম্নে উভয় প্রকার শির্কের আলোচনা পেশ করা হল:
১- শির্কে আকবার বা বড় শির্ক: যে কোন আমল আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য করাই হলো শির্কে আকবার বা বড় শির্ক। অতএব, প্রত্যেক কথা ও কাজ যা আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) পছন্দ করেন তা তাঁর জন্য করাই হলো তাওহীদ (একত্ববাদ) ও ঈমান। আর তিনি ভিন্ন অন্য কারো জন্য করাই হলো শির্ক ও কুফরী।
এ প্রকার শির্কের উদাহরণ: আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) ব্যতীত অন্যের নিকটে কোন রিযিক্ব বা সুস্থতা কামনা করা, তিনি ভিন্ন অন্যের উপর ভরসা রাখা, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য সিজদাহ্ করা ইত্যাদী। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
অর্থ: আর আল্লাহর উপর ভরসা কর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ আয়াত ২৩। আল্লাহ্ (আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন:
[ النجم : ৬২] ﴿فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا﴾ অর্থ: অতএব আল্লাহকে সিজদাহ্ কর এবং তাঁর ইবাদাত কর। সূরাহ্ আন্ নাজম- ৬২। দুয়া', ভরসা রাখা এবং সিজদাহ্ করা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত, যার আদেশ আল্লাহ্ তায়ালা দিয়েছেন।
অতএব, যে ব্যক্তি এসকল ইবাদাত আল্লাহর জন্য করবেন তিনি মু'মিন ও একত্ববাদী (আস্তিক), আর যে তা গাইরুল্লাহর জন্য করবে সে মুশরিক ও কাফির (নাস্তিক)।
২- শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক: শির্কে আসগার ঐ সকল কথা বা কাজ যা শির্কে আকবারের (বড় শির্কের ) কারণ এবং তাতে পতিত হওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। যেমন: কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা। তা কবরের নিকটে সালাত আদায় করা অথবা কোন কবরের উপরে মসজিদ তৈরী করার মাধ্যমে হতে পারে। এ কাজ সম্পূর্ণ হারাম, তা যে করবে তার জন্য রয়েছে অভিশাপ ও আল্লাহর রহমাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার ওয়াদা। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
অর্থ: ইহুদী এবং নাসারাদের (খ্রীষ্টানদের) উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হউক, কারণ তারা তাদের নাবীদের কবরগুলোকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। (বুখারী, মুসলিম )।
অতএব, কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা হারাম, জায়েয নয়। ইহা মৃত ব্যক্তির নিকটে চাওয়া ও প্রার্থনার পথ খুলে দেয়। আর মৃত ব্যক্তির নিকটে চাওয়া শির্কে আকবার বা বড় শির্ক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/51/24
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।