hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অধ্যয়ন ও জ্ঞানসাধনা

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

৫৬
ইলম হাসিলের সহায়ক
ইলমের অনেক ফযীলত। সীমাহীন এর গুরুত্ব। পূর্বোক্ত বর্ণনা ও আলোচনায় তা স্পষ্ট হলো। কিন্তু কীভাবে তা হাসিল হবে? ইলম কী খুব সহজেই হাসিল হয়? কোনো কষ্ট-ক্লেশ বরদাশত করা ছাড়া? না, ইলম হাসিলের জন্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা করতে হয়। সময় ব্যয় করতে হয়। শ্রম দিতে হয় এবং অনেক গুণের অধিকারী হতে হয় কিংবা নিজের মধ্যে গুণ সৃষ্টি করতে হয়। বুযুর্গানে কেরাম ইলম হাসিলের জন্য ছয়টি গুণ আবশ্যক বলেছেন। যথা-

এক. মেধা। মেধা এমন এক বস্তু, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে কমবেশি বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা একেবারে মেধাশূন্য কোনো মানুষ সৃষ্টি করেননি। কম হোক বেশি হোক প্রত্যেকের মধ্যেই মেধা আছেই। এটাই আল্লাহ তা‘আলার ইনসাফ। একেবারে মেধাশূন্য করে তিনি কোনো বান্দার প্রতি বে-ইনসাফ করেন নি। সুতরাং যারা মেধাশূন্যতার দোহাই দেয় তারা ভুল করে এবং ভুল বিশ্বাসের সঙ্গে বাস করে।

দুই. ইলম অন্বেষণের প্রতি তীব্র বাসনা থাকা। সুতরাং ইলম শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীনির কর্তব্য হচ্ছে ইলম অন্বেষণের প্রতি তীব্র বাসনা ও আগ্রহ রাখা। ইলমের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য উদগ্রীব থাকা। ইলম শিক্ষার জন্য ছোটো-বড় সকলের শরণাপন্ন হওয়া। ইলমের সূক্ষ্মতা ও গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছার ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা এবং সর্বোচ্চ মেধা খরচ করা।

তিন. ইলম হাসিলের জন্য সবর, ত্যাগ ও মুজাহাদা করা। একজন তালেবে ইলমের জন্য এই গুণ খুবই জরুরী। এই গুণ অর্জন করা ছাড়া কেউ তালেবে ইলম হওয়ারই যোগ্যতা রাখে না। ইলম তো সবর ও চেষ্টার অপেক্ষায় থাকে। তাই এই গুণ দুটি ছাড়া ইলম হাসিলে সাফল্য লাভ করার কল্পনা করা বৃথা চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

তালেবে ইলমের জন্য চাই অপরিসীম সবর ও ধৈর্য। মনে রাখতে হবে, ইলমের পথ সংক্ষিপ্ত নয়। বরং দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েই কেবল ইলম সাধনায় সফলতা পাওয়া যায়। ইলমের পথপরিক্রমা তো সেই দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত! এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে কিঞ্চিত কষ্ট বরদাশত করতে হবে না! নফসকে দমন করতে হবে না!

ইলম অন্বেষণে নফসকে দমন ও কষ্ট স্বীকারে প্রস্তুত করার জন্য দুইভাবে সবর ও ধৈর্য্যরে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। প্রথমত. এ কথার শিক্ষা যে, ইলম হচ্ছে ইবাদত। আর প্রতিটি ইবাদত পালনেই কষ্ট স্বীকার করতে হয়। দ্বিতীয়ত. ইলম শিক্ষার পথপরিক্রমায় অহর্নিশ ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে থাকা।

কী রকম ধৈর্য? শুধু পাঠকক্ষে উপস্থিত হওয়ার কষ্ট স্বীকারের ধৈর্য? না। শুধু উস্তাদগণের সান্নিধ্যে থাকার ধৈর্য? না। দরসের পড়া শ্রবণ ও তা ধরে রাখার ধৈর্য? না। শুধু এসব বিষয়ের ধৈর্যই যথেষ্ট নয়। বরং ইলম থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এধরনের যাবতীয় বস্তু থেকে দূরে থাকাই হচ্ছে ইলম হাসিলে ধৈর্যধারণ করা। যুবক ও তরুণদের জন্য এই বিষয়টি বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার। কেননা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তারা পথ হারিয়ে ফেলে। যুগের নানা রকম আহ্বান তাদেরকে ভ্রান্ত পথে চালিত করে। তাই তাদেরকে ইলমের পথে টিকে থাকার জন্য অপরিসীম ধৈর্যধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইলম শিক্ষা করতে এসে কিছুটা কষ্টের সম্মুখীন না হলে, ত্যাগ স্বীকার করতে না পারলে পরবর্তী জীবনে সফলতা পাওয়া যায় না।

ইবন আতাউল্লাহ (রহ.) বলেন,

من كانت بداياته محرقة قوية كانت نهاياته مشرقة .

‘যার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় কষ্টের তার শেষ জীবন হয় উজ্জ্বল।’

বস্তুত ইলমের গভীরতা ও সূক্ষ্ম ইলম হাসিল করতে হলে কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। মনে রাখা চাই, ইলম সাধারণ ওয়াজ-নছিহত নয় যে, যেখান সেখান থেকে, যেভাবে সেভাবে সংগ্রহ করা যায়। বরং খাঁটি ইলম সংগ্রহ করতে হলে অবশ্যই কষ্ট স্বীকার করতে হবে এবং কষ্ট স্বীকারে ধৈর্যও ধারণ করতে হবে। ইবন মুবারক (রহ.)-এর কথায় এই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন-

إذا رأيت موعظة، أو إذا مررت بجدار فرأيت مكتوبا عليه موعظة، فقف عندها لتتعظ؛ ولكن الفقه في الدين إنما يكون بالمشافهة والسماع

‘যদি কোথাও ওয়াজ শুনতে পাও অথবা পথ চলতে দেয়ালের গায়েও উপদেশ বাক্য লেখা দেখতে পাও তবে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যাও এবং নছিহত গ্রহণ করো। কিন্তু মনে রেখো, দীনের ফিকহ হাসিল করা এরকম সহজ নয়। বরং তা সরাসরি ও উস্তাদের কাছে শ্রবণ করে হাসিল করতে হয়।’

এই বাণীতে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন মানুষ সাধারণ ওয়াজ-নছিহত, আদেশ-উপদেশ সুযোগ অনুযায়ী যে কোনো স্থান থেকেই হাসিল করতে পারে। কিন্তু ইলম হাসিলের বিষয়টি আদৌ এমন নয়। বরং এর জন্য ত্যাগ স্বীকার ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় এবং কষ্টসহিষ্ণু হতে হয়। নফসের সঙ্গে তুমুল লড়াই করতে হয়। আরো মনে রাখা উচিত, কেউ যদি ইলম হাসিলের জন্য নিজেকে দীর্ঘদিন আবদ্ধ না রাখে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলে তবে তাকে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ইলমের ভাণ্ডার থেকে মাহরুম হবে। উদাহরণস্বরূপ মূসা (আ.)-এর ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি খিযির (আ.)-এর সঙ্গে বেশিদিন অবস্থান করার ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি বলে তিনি বেশি উপকৃত হতে পারেননি এবং এ কারণে আমরাও অনেক ইলম থেকে বঞ্চিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى لَوَدِدْنَا أَنَّهُ صَبَرَ حَتَّى يَقُصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَخْبَارِهِمَا

‘আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আ.)-এর ওপর রহম করুন। আক্ষেপ, তিনি যদি আরেকটু ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমরা তাদের আরো অনেক কিছু জানতে পারতাম।’ [বুখারী: ১২২; মুসলিম: ১৭০]

বর্ণিত আছে-

لو صبرتَ لأتيتُ بك على ألفي عجيبة، كلها مما رأيت

‘খিজির (আ.) বললেন, আপনি যদি ধৈর্যধারণ করতেন তবে আমি আপনার সামনে আমার দেখা দুই হাজার বিস্ময়কর ও হেকমতপূর্ণ ঘটনা পেশ করতাম।’ [তাফসীর আল-বাহরুল মাদীদ: ১১/২৭৭]

সুতরাং সবর করতে হবে এবং দীর্ঘসময় নিয়ে ইলম অন্বেষণে ব্যস্ত থাকতে হবে। এমনকি ঘরে-বাইরে, সমাজে-রাষ্ট্রে সর্বদা ইলমেরই চর্চা করতে হবে। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, আমি আমার পরিবারের লোকদের সঙ্গে থাকার সময়ও আমার সামনে মাসআলা হাজির হয় এবং আমি ইলমী বিষয়ে মশগুল থাকি।

আমাদের পূর্বসূরীগণের অনেকেই ইলম হাসিলে এত বিমগ্ন থাকতেন যে, এ কারণে কেউ হয়ত বিবাহই করেননি, আবার কেউ অনেক বিলম্বে বিয়ে করেছেন।

আল্লামা আবদুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (রহ.) ‘আল-উলামাউল উয্যাব’ নামে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাতে ইসলামী ইতিহাসের বহু বিখ্যাত মনীষীর জীবনী আলোচনা করা হয়েছে, যারা শুধু দীনী ইলম হাসিল এবং তা মানুষের মধ্যে বিস্তারের জন্যই বিবাহের পার্থিব সুখানন্দ থেকে নিজেদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত রেখেছেন।

এছাড়াও অনেক মাশায়েখ শুধু ইলম হাসিলের স্বার্থে বিয়েশাদী বিলম্ব করতেন। যেমন, বিখ্যাত মনীষী আল্লামা ইবন রজব হাম্বলী রহ. (৭৯৫ হি.)। তিনি ইলম হাসিলে এত বিমগ্ন ছিলেন যে, অনেক বয়স হওয়ার পর তাকে বিয়ে করতে হয়েছিল। আর বিয়ের দিনেও মুতালা‘আ বা অধ্যয়ণ এবং জ্ঞানসাধনায় এত মগ্ন ছিলেন যে, স্ত্রী সেজেগুজে, সুগন্ধি মাখিয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ানোর পরও তিনি টের পেলেন না। তিনি স্ত্রীর দিকে দৃষ্টিপাতের ঘটনা বর্ণনা করে বলতেন, অনেকক্ষণ পর আমি তার দিকে অপ্রত্যাশিতভাবে নজর দিয়েছিলাম। এরপর তিনি স্ত্রীর কিছু বিবরণ দেয়ার পর বলেন, অতপর আমি কিতাবের দিকে মনোনিবেশ করলাম এবং অসমাপ্ত পড়া শেষ করলাম। কিন্তু স্ত্রী এতে দারুণ ক্রুদ্ধ হলো এবং সেখান থেকে চলে গেল।

বস্তুত তারা নিজেরাও জানেন, যে ব্যক্তি যে হকের অধিকারী তাকে সেই হক প্রদান করা জরুরী। কিন্তু কখনও কখনও এই বাস্তবতার ওপর মানুষের স্বভাব প্রবল হয়ে ওঠে এবং যে যেভাবে জীবন গড়ে তুলেছে তার মধ্যে সেই বস্তু প্রবলভাবে আত্মপ্রকাশ করে। যেহেতু ইবন রজব হাম্বলী (রহ.) সারা জীবন গ্রন্থ অধ্যয়ণ ও জ্ঞানসাধনায় মগ্ন থেকেছেন, একারণে বাসর রজনীতেও নববধূর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করার কথা ভুলে গেছেন এবং সারা জীবনের সঙ্গী কিতাবপত্রের সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন! অনেকে তো কিতাবাদির সঙ্গে এত সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন যে, রাতে শোয়ার সময় শিয়রে বইপত্র ও অধ্যয়নের সামগ্রী নিয়ে শুতেন!

চার. পানাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকা। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান সময়ে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন তাতে সকলের জন্য এই শর্ত সহজ এবং ইলম শিক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত খরচাদির অনকূল ব্যবস্থা হয়ে গেছে।

পাঁচ. যোগ্য ও স্নেহপ্রবণ উস্তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ। সার্বক্ষণিক উস্তাদের সান্নিধ্যে থেকে ইলম হাসিল করতে হবে। মনে রাখতে হবে, উস্তাদ ছাড়া শুধু বই-পুস্তক ঘেঁটে আলেম হওয়া যায় না।

ছয়. ইলম অন্বেষণের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করা, দ্রুততা অবলম্বন না করা। একজন খাঁটি আলেম হতে হলে অবশ্যই তাকে সময় দিতে হয়। সাধনা করতে হয়। ইলম তো মেশিনে প্রাপ্ত কোনো বস্তু নয় যে, সকালে ঢুকে বিকেলে আলেম হয়ে বের হওয়া যাবে! ইবন শিহাব যুহরী (রহ.) বলতেন,

ومن أراد العلم جملة ذهب عنه جملة

‘যে ব্যক্তি একসঙ্গে সব ইলম পেতে চায় তার সব কিছু একসঙ্গে হারিয়ে যায়।’

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এক কবিতায় এই ছয়টি বস্তুকে একত্রিত করেছেন। যথা-

أخي لن تنال العلم إلا بستة  سأنبيك عنـــــها ببيان

ذكاء وحرص وافتقار وغربة  وتلقين أستاذ وطول زمان

‘ভাই! ছয়টি বস্তু ছাড়া তুমি ইলম হাসিল করতে পারবে না। আমি তোমাকে সেই ছয়টি বস্তু বর্ণনা করে শোনাবো। মেধা, বাসনা, আগ্রহ, সফর, উস্তাদের সাহচার্য এবং দীর্ঘ সময় ব্যয়।’

জনৈক ফার্সি কবির ভাষাতেও এই ছয়টি গুণের কথা প্রকাশিত হয়েছে। যথা-

علم را هر گز نيابى تا نه داري شش خصال

حرص قطع فهم كامل جمع خاطر كل حال

خدمت استاذ بايد هم سبق خواني مدام

لفظ را تحقيق كنى تا شوي مرد كمال

‘তুমি ছয়টি গুণ ছাড়া কিছুতেই ইলম পাবে না। তীব্র আকাঙ্ক্ষা, পূর্ণ বোধ, সর্বাবস্থায় মনসংযোগ, শিক্ষকগুরুর সেবা, সর্বোপরি সারাক্ষণ অধ্যয়নে অভিনিবেশ আর শব্দের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বুঝে পাঠ- এসব বৈশিষ্ট্য আমলে নাও যাতে তুমি একজন পরিণত মানুষ হতে পার।’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন