hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অধ্যয়ন ও জ্ঞানসাধনা

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

৬৯
হক্কানী উলামায়ে কেরামের পরিচিতি
এক. রব্বানী বা হক্কানী ওলামায়ে কেরামের প্রথম পরিচিতির ভিত্তি হচ্ছে ইলম। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

﴿ مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤۡتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادٗا لِّي مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّ‍ۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ ﴾ [ ال عمران : ٧٩ ]

‘কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার বান্দা হয়ে যাও’। বরং সে বলবে, ‘তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯}

আলোচ্য আয়াতে কিতাব পাঠ করার ইলম দ্বারা আলেমদের প্রধান শর্ত ইলমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে-

وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ

(যেহেতু তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করতে।) এ আয়াত দ্বারা তাদের দরস প্রদান, ফিকহ-ফাতাওয়া নিয়ে গবেষণা করা, শায়খ-মুফতি হওয়ার প্রতি ইশারা করা হয়েছে।

দুই. হক্কানী ওলামায়ে কেরামের দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে, ইত্তেবার গুণ অর্জন করা। অর্থাৎ কুরআন-হাদীছ ও সাহাবায়ে কেরাম, সালফে সালেহীন এবং আয়িম্মায়ে মুজতাহিদিনের পথে চলা। কুরআন-হাদীছে ইলমের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ইরশাদ হয়েছে-

﴿ مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤۡتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادٗا لِّي مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّ‍ۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ ﴾ [ ال عمران : ٧٩ ]

‘কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার বান্দা হয়ে যাও’। বরং সে বলবে, ‘তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯}

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল এবং পূর্ববতী নবীগণের ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তার শিক্ষা গ্রহণ এবং তার অনুসরণ করা।

আল্লামা ইবন রজব হাম্বলী (রহ.) বলেন,

العلم النافع من هذه العلوم كلها ضبطُ نصوصِ الكتاب و السنة و فهمُ معانيها و التقيُّدُ في ذلكِ بالمأثور

‘ইলমে নাফে হচ্ছে কিতাবের স্পষ্ট বর্ণনা আয়ত্ব করা, সুন্নাহ আয়ত্ব করা এবং এগুলোর অর্থ অনুধাবন এবং সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনার আলোকে সেগুলো আয়ত্ব করা।’

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন,

العلم هو المعرفة الحاصلة بالدليل

‘ইলম হচ্ছে দলিলের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান।’

তিন. হক্কানী আলেমের তৃতীয় গুণ হচ্ছে ইখলাস ও বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। একারণে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইখলাস ও নিয়তের পরিশুদ্ধি। উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَلِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى »

‘নিশ্চয় আমলের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই থাকবে যা সে নিয়ত করবে।’ [বুখারী: ১]

নিয়ত সহীহ থাকলে ইলমও যে নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে সেটা ইমাম মালেক (রহ.)-এর অভিমত দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি তার শাগরেদ ইবন ওয়াহাবকে বলেছিলেন-

على رسلك ! ترفَّق ! ليس الذي تقوم إليه - يعني من التنفل قبل الفريضة - بأفضل مما تقوم عنه إذا صحَّت النية

‘দাঁড়াও, কোমলতা অবলম্বন করো। তুমি যেখানে যাচ্ছ অর্থাৎ ইলম অর্জন ছেড়ে নফল সালাত আদায়ের দিকে, সেটা তার থেকে শ্রেষ্টতর নয় যাতে তুমি নিরত আছো, যদি তোমার নিয়ত ঠিক হয়।’

চার. চতুর্থ গুণ হচ্ছে ইলমের সঙ্গে মানানসই ব্যবহার ও আদব-কায়দা রক্ষা করা। আর এটা অর্জিত হয় ভাবগাম্ভীর্য, পরিশীলিত আচরণ ও স্বভাব দ্বারা। এবং এক্ষেত্রে আদর্শ হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও উস্তাদ হয়েও যে আদর্শ ও অন্যদের প্রতি পরিশীলিত আচরণ করেছেন, তা এক কথায় সকলের জন্য পালনীয় ও অনুসরণীয়।

পাঁচ. হক্কানী আলেমের পঞ্চম গুণ হচ্ছে আদর্শ শিক্ষা ও দীন বিস্তারের স্বার্থে মানুষের সঙ্গে মেশা ও সম্পর্ক রাখা। আপনি কীভাবে তাদেরকে দীন শিক্ষা দেবেন, অথচ আপনি অবস্থান করছেন দুর্ভেদ্য প্রাসাদে! কীভাবে মানুষকে তালিম দেবেন, আপনি যদি থাকেন আপনার নির্দিষ্ট মাদরাসা-মসজিদে আবদ্ধ? আপনি কীভাবে তাদেরকে কুরআন-হাদীছের জ্ঞান শিক্ষা দেবেন, যদি আপনার ঘরের দরজার সামনে প্রতিবন্ধকতার তালা ঝুলানো থাকে? আপনি তাদেরকে কীভাবে ধর্মীয় জ্ঞান ও নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেবেন যদি আপনি তাদের থেকে থাকেন আলাদা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে?

তাই সাধারণ লোকদের মধ্যে কুরআন-হাদীছের শিক্ষা বিস্তার করতে হলে তাদের সঙ্গে মিশতে হবে, তাদেরকে সময় দিতে হবে। হাদীছে এ কথারই সমর্থন রয়েছে। বর্ণিত হয়েছে-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «الْمُؤْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ، وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ، أَعْظَمُ أَجْرًا مِنَ الْمُؤْمِنِ الَّذِي لَا يُخَالِطُ النَّاسَ، وَلَا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ»

‘আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মুমিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশে এবং তাদের দেওয়া কষ্ট হজম করে সে ওই মুমিন থেকে উত্তম, যে মানুষের সঙ্গে মেশে না এবং তাদের দেওয়া কষ্টও সে হজম করে না।’ [তিরমিযী: ২৫০৭; ইবন মাজাহ: ৪০৩২; সহীহ]

আজ আমাদের মধ্যে এই গুণের বড় অভাব। ওলামায়ে কেরামের অনেকেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে চান না এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা ও চলাফেরা করাকে দোষের কারণ বলে মনে করেন। একথা ঠিক যে, সাধারণ মানুষের দীনী অবস্থা অত্যন্ত নাযুক ও শোচনীয় হওয়ার কারণে তাদের সঙ্গে ব্যাপক মেলামেশা ও সম্পর্ক রাখা নিজের দীনী গায়রতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কিন্তু এটাও ভাবতে হবে যে, আলেমগণ যদি তাদেরকে এভাবে ছেড়ে রাখেন তবে শয়তান নামের বাঘ তাদেরকে মরুভূমিতে একাকি পেয়ে ছিঁড়েফেঁড়ে খেয়ে ফেলবে। টিভি, সিনেমা, গান-বাজনার সয়লাবে তাদের অবশিষ্ট ঈমানটুকুও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ঈমান ও আমল বাঁচানোর স্বার্থে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশা, সম্পর্ক রাখা এবং তাদের দীনী পরিবেশ চাঙ্গা রাখা অপরিহার্য। অন্তত আলোচ্য হাদীছের বাণী আমাদের জন্য সান্ত্বনা যে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশা দোষের নয় বরং দীনীস্বার্থে হলে তা প্রশংসনীয়।

ছয়. ষষ্ঠ গুণ হচ্ছে ইলমের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা। জাগতিক হীনস্বার্থে ইলমকে ব্যবহার করা থেকে নিজেকে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যাকে কুরআন, হিকমত এবং ইলম দান করেছেন তিনি কেন দুনিয়ার লালসা করে এর অবমূল্যায়ন করবেন?

আলেমের শান হলো বাতিলের সঙ্গে আপস না করা। যেমন, ইয্য ইবন আবদুস সালাম (রহ.)-কে বলা হলো, আপনি সুলতানের মাথায় চুম্বন করুন, তিনি আপনাকে মার্জনা করবেন। তখন তিনি হাসলেন এবং বললেন-

مساكين ! أنت في وادٍ و أنا في واد ! أنا ما أرضى أن يقبلَ السلطانُ رأسي فكيف أقبِّل رأسَه ؟ !

‘মিসকিনের দল! তুমি এক উপত্যকায় আর আমি আরেক উপত্যকায়। আমি তো এটাই পছন্দ করি না যে, সুলতান আমার মাথা চুম্বন করুক, সেখানে আমি তার মাথা চুম্বন করব সেটা কী করে সম্ভব?’

আহ্! ইসলামের এই বীরসন্তানরা আজ কোথায়? এঁদের একেকজনের অস্তিত্ব গোটা মানবতার জন্য ছিল মুক্তির কারণ। কিন্তু এঁদের স্থান দখল করেছি আমরা নামধারী কতক অথর্ব মানুষ। যারা নিজেদের গায়রত হারিয়ে সামান্য অর্থকড়ির আশায় বিকিয়ে দিয়েছি নিজেদের স্বকীয়তা ও ধর্মীয় আভিজাত্য। পরিণামে লাঞ্ছিত হচ্ছি অহর্নিশ।

সাইয়েদ কুতুব (রহ.)-কে অন্যায়ভাবে শুধু ইসলামী আন্দোলন ও জিহাদ করার অপরাধে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর সময় বলা হলো, নিজের ওজর পেশ করে শুধু একটি বাক্য লিখে দিন। ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। জবাবে তিনি বললেন-

إن السبَّابة التي تشهد ألا إله إلا الله ، لا يمكن أن تكتب كلمةَ اعتذارٍ واحدةٍ تقرُّ بها حكمَ طاغية !

‘যে শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর সাক্ষ্য দেওয়া হয় সেই শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে এমন কোনো কথা লেখা সম্ভব নয়, যা বাতিল শাসকদের হুকুম বা আইনকে সমর্থন করে।’

সাত. সপ্তম গুণ হচ্ছে হেকমত। অর্থাৎ আলেমকে হেকমত ও প্রজ্ঞার গুণ অর্জন করা চাই। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু وَلَكِن كُونُواْ رَبَّانِيِّينَ আয়াতের তাফসীর করেছেন হাকিম এবং ফকিহ হওয়ার দ্বারা। অর্থাৎ তিনি এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন - أي حكماء فقهاء রব্বানী হওয়ার অর্থ হলো তারা হবেন ফকীহ এবং হাকিম।’

আট. অষ্টম গুণ হচ্ছে নিজের সত্তাকে বিলিয়ে দেয়া। অর্থাৎ বিনয়ী হওয়া এবং নিজের সত্তাকে ইলমের জন্য উৎসর্গ করে দেয়া। সুতরাং ইলমের জন্য নিজের সুবিধা ত্যাগ করা এবং কোনো কথা বা কাজে অন্যকে কষ্ট না দেয়া, হক বিষয় অনুধাবন করার পর তা মেনে নিতে সংকোচ না রাখা। মানুষের দোষের পেছনে না পড়া। ইবন দাকীকুল ঈদ (রহ.) জনৈক ব্যক্তিকে ইলম অন্বেষণ করতে দেখে বললেন-

أنت رجلٌ فاضلٌ و السعيد من تموت سيآتُه بموته فلا تهجوَنَّ أحداً

‘আপনি সম্মানিত ব্যক্তি। সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সেই, যার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার গুনাহরও মৃত্যু ঘটে। সুতরাং আপনি কাউকে বদনামী করে হেয়প্রতিপন্ন করবেন না।’

ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব আসলে বিনয়ে, অহংকারে নয়। জনৈক শায়ের বলেন,

تَواضَعْ تَكُن كالنَّجمِ لاحَ لناظِرٍ  عَلَى طَبَقَاتِ الماءِ و هو رَفِيعُ

و لا تَكُ كالدُّخَانِ يعلُو مكانَه  على طَبَقَاتِ الجَوِّ و هو وَضِيعُ

‘বিনয়ী হও, দর্শকের দৃষ্টিতে নক্ষত্রের মর্যাদা লাভ করবে। নক্ষত্র পানির স্তরে যদিও নিচে মনে হয় কিন্তু আসলে তা সমুন্নত। কিন্তু অহংকারী হয়ো না। সেটা ধোঁয়ার মতো শূন্যে উচ্চ অনুমিত হলেও বাস্তবে তা মূল্যহীন, পতিত।’

সাত. সপ্তম গুণ হচ্ছে আমল। আলেমে রব্বানীর যাবতীয় গুণাবলীর ভিত্তি হচ্ছে আমল। আর আমলই হচ্ছে ইলমের ফলাফল। এ কারণেই সালফে সালেহীন আমল এবং ইলম উভয়ের সমষ্টিকে ফিকহ বলে নামকরণ করেছেন। আইউব সুখতিয়ানী (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল-

أيهما أكثرُ العلمُ اليومَ أم في الماضي ؟ فقال الكلامُ اليومَ أكثر ،لكنَّ العلمَ فيما تقدَّم أكثر

‘অতীতকাল এবং বর্তমানকাল, কোনকালে ইলম বেশি চর্চিত? তিনি বললেন, বর্তমান বেশি চর্চিত হচ্ছে ‘কথা’। আর অতীতকালে বেশি চর্চিত হতো ইলম।’

কথাটি কি আমাদের সময় আরো বেশিমাত্রায় প্রযোজ্য নয়? আমাদের সময়ে কথাই হচ্ছে বেশি। কিন্তু কলব পর্যন্ত পৌঁছে যে ইলম এবং ইলমের ফলাফল যা, তথা আমল ও সততা, তা আজ ক্রমেই বিরল হয়ে পড়ছে।

মারূফ কারখী (রহ.) বুযুর্গ, মুত্তাকী, দুনিয়াবিমুখ ও বিশ্বখ্যাত একজন আবেদ ছিলেন। তাঁর তাকওয়া-পরহেজগারী এবং ইবাদত-বন্দেগি ছিল প্রবাদতুল্য। অনেক কিতাবে তার বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। একবার আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.)-এর মজলিসে উপস্থিতদের একজন বললেন-

معروف قصيرُ العلم

‘মারূফ (কারখীর {রহ.}) তো ইলম কম!’

লোকটির কথায় ইমাম আহমাদ (রহ.) নাখোশ হলেন এবং বললেন-

أَمْسِكْ عافاكَ الله ، و هل يُرادُ من العلمِ إلاَّ ما وَصَل إليه معروف ؟ !

‘থামো! আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে মাফ করুন। আরে ইলম দ্বারা তো সেটাই উদ্দেশ্য, যেখানে মারূফ কারখী (রহ.) পৌঁছেছেন।’

অর্থাৎ আমরা তো ইলম দ্বারা এর পরিণাম বা ফলাফল বুঝি তথা আমল। আর এই বিষয়টি মারূফ কারখীর (রহ.) মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। তাই তিনি ইলমে দুর্বল একথা বলার সুযোগ নেই।

আরেকবারের ঘটনা। একবার আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.)-এর পুত্র আবদুল্লাহ পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন-

يا أبَتِ هل كان معروف معه شيءٌ من العلم ؟

‘সম্মানীত পিতা! মারূফ কারখী (রহ.) কি ইলমের কারণে প্রসিদ্ধ?!

জবাবে আহমাদ ইবন হাম্বল (রহ.) বললেন-

يا بني ! معه رأسُ العلمِ خشيةُ الله تعالى

‘বৎস! তাঁর মধ্যে তো ইলমের সর্বোচ্চ চূড়াই বিদ্যমান। আর তা হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার ভয়।’

বস্তুত পুণ্যবান পূর্বসূরীদের এসব কথা হাদীছে নববীরই প্রতিধ্বনি। ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : «إِنَّ مَثَلَ مَا بَعَثَنِيَ اللهُ بِهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الْهُدَى، وَالْعِلْمِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَصَابَ أَرْضًا، فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفَةٌ طَيِّبَةٌ، قَبِلَتِ الْمَاءَ فَأَنْبَتَتِ الْكَلَأَ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ، فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ، فَشَرِبُوا مِنْهَا وَسَقَوْا وَرَعَوْا، وَأَصَابَ طَائِفَةً مِنْهَا أُخْرَى، إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ لَا تُمْسِكُ مَاءً، وَلَا تُنْبِتُ كَلَأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللهِ، وَنَفَعَهُ بِمَا بَعَثَنِيَ اللهُ بِهِ، فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ»

‘আবূ মূসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে, এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা পানি সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকে না, ফলে তাতে পানি আটকা পড়েনি, ফসলও হয়নি। ঠিক এটাই হলো ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে, ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে। (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ভূমি)। এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়েত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি। (তৃতীয় শ্রেণর ভূমি) ।’ [সহীহ বুখারী: ৭৯, সহীহ মুসলিম: ২২৮২] 

সুতরাং আমলকারী ও ইলম বিস্তারকারী আলেম ওই কার্যকর মাটির মতো, যাতে বৃষ্টির পানি পতিত হয় এবং তাতে মাটি সিক্ত, কোমল ও তরুতাজা হয় এবং সবুজ-শ্যামল ফলমূল ও ফসল উৎপন্ন করে। অতএব ইলমের ফলাফল হচ্ছে আমল, ইবাদাত, দাওয়াত এবং সবর।

হাদীছের ভাষ্যানুযায়ী দ্বিতীয় প্রকার মাটির সঙ্গে তুলনীয় হচ্ছেন ওইসব ব্যক্তি, যাদের কাছে কুরআন-হাদীছের বর্ণনা আছে বটে কিন্তু সে অনুযায়ী আমল নেই। ফলে তারা ওই মাটির মতো যে মাটি পানি ধরে রাখে কিন্তু নিজে এর দ্বারা উপকৃত হয় না। বরং অন্যরা উপকৃত হয়। ঠিক তদ্রূপ এসব লোক ইলম দ্বারা নিজেরা উপকৃত হয় না বরং তাদের দ্বারা অন্য লোকেরা উপকৃত হয়।

আর তৃতীয় প্রকার মাটির সঙ্গে তুলনীয় হচ্ছে ওইসব লোক, যাদের নিজেদের মধ্যে ইলম নেই। ফলে নিজেরাও এর দ্বারা উপকৃত হয় না এবং অন্যরাও উপকৃত হতে পারে না। ফলে তারা ওই সব পাথুরে মাটির মতো, যা পানি ধরে না রাখার কারণে নিজেও উপকৃত হতে পারে না এবং অন্যদেরকেও উপকৃত করতে পারে না।

ইলমহীন তালেবে ইলমের অবস্থা বর্ণনা করে কবি বলেন,

زَوَامِلَ للأسفارِ لا عِلْمَ عندَهُم  بجيّدِهَا إلا كعِلْمِ الأباعِرِ

لَعَمْرُكَ ما يدري البعيرُ إذا غَدَا  بأسفارِهِ أو رَاحَ ما في الغَرَائِرِ !

‘কিছু কিতাবাদীর সঙ্গী, যাদের কাছে উত্তম কোনো ইলম নেই, তবে উটের বিষ্টার মতো।

তোমার জীবনের শপথ! কিতাবের বোঝা নিয়ে উট চলাচলের সময় সে জানে না তার থলে বা পিঠে কী আছে।’

আল্লাহ আমলহীন ইলমধারীকে বোঝাবহনকারী গর্দভের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

﴿ مَثَلُ ٱلَّذِينَ حُمِّلُواْ ٱلتَّوۡرَىٰةَ ثُمَّ لَمۡ يَحۡمِلُوهَا كَمَثَلِ ٱلۡحِمَارِ يَحۡمِلُ أَسۡفَارَۢاۚ بِئۡسَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥ ﴾ [ الجمعة : ٥ ]

‘যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল তারপর তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে। সে সম্প্রদায়ের উপমা কতইনা নিকৃষ্ট, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।’ {সূরা আল-জুমুআ‘, আয়াত: ৫}

যাহোক, ইলম হচ্ছে পথনির্দেশক আর আমল হচ্ছে ফলাফল। এবং উভয়ের সমষ্টিই হচ্ছে ফিকহ। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-

«مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ »

‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তাকে দীনী বিষয়ে প্রাজ্ঞতা দান করেন।’ [বুখারী: ৩১১৬; মুসলিম: ১০৩৭]

মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

وأنت في صلاتك تقول : اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ ، و ما الصراط المستقيم إلا العلم و العمل بالهدى و دين الحق .

‘তুমি সালাতে বলো হে আল্লাহ! আমাকে সোজা পথ দেখান। সোজা পথ তো ইলম এবং হেদায়াত ও দীনে হকের ওপর আমল করা ছাড়া আর কিছু নয়।’

দশ. আলেমের দশম গুণ হচ্ছে তালিম বা শিক্ষাপ্রদান। বস্তুত নবী-রাসূলগণের প্রধান কর্তব্যই ছিল তালিমে দীন। আর দীনী ইলম শিক্ষাপ্রদানকারীর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সীমাহীন করুণা রয়েছে। তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা খাস রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য কল্যাণের দু‘আ করেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনী শিক্ষা বিস্তারের গুরুত্ব প্রদান করে ইরশাদ করেন-

بلغوا عني وَ لَو آيةً

‘তুমি একটি আয়াত জানলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ [সহীহুল জামে: ২৮৩৭]

দীনের প্রচার-প্রসারের কাজে ব্যাপৃত লোকদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের জীবন সুখী-সমৃদ্ধ হওয়ার ঘোষণা এসেছে হাদীছে। ইরশাদ হয়েছে-

«نَضَّرَ اللَّهُ امَرَءًا سَمِعَ مِنَّا حَدِيثًا فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ »

‘আল্লাহ তা‘আলা ওই ব্যক্তির জীবন সুখী-সমৃদ্ধ করুন, যে আমার হাদীছ শ্রবণ করে অতপর তা মুখস্থ করে এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়।’ [সহীহ ইবন হিব্বান: ৬৯, হাসান]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন