hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

অধ্যয়ন ও জ্ঞানসাধনা

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

৯৬
তৃতীয় পর্ব: ছাত্রদের সঙ্গে উস্তাদের আচার-আচরণ
এক.

তালীম ও শিক্ষাদীক্ষা প্রদানকে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন, ইলমের প্রচার-প্রসার, ইয়াহইয়ে দীন, হক জাহির ও দায়েম রাখা, বাতিল ধ্বংস করা, আলেমের সংখ্যা বাড়িয়ে উম্মতের কল্যাণ বৃদ্ধি করা, এদের সর্বশেষ ব্যক্তি থেকেও সদকায়ে জারিয়ার একটি অংশ এবং তাদের পক্ষ থেকে রহমত প্রাপ্তির দু‘আ লাভ, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে ইলমের সিলসিলায় প্রবিষ্ট করা এবং দীনের বাহক ও ইলমে ওহীর ধারকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নেক কাজের অংশ বলে মনে করা চাই। কেননা ইলমে দীন শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়া দীনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

দুই.

তালেবে ইলমের ইখলাস নাই- এই অযুহাতে তাকে ইলম থেকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। কেননা তার নেক নিয়তের আশা সুদূরপরাহত নয়। অনেক সময় তালেবে ইলমের সহীহ সমঝ না থাকার কারণে প্রথমে নেক নিয়ত থাকে না কিন্তু বুঝ আসার পর নিয়ত ঠিক হয়ে যায়। পূর্বসূরীগণ বলতেন,

طلبنا العلم لغير الله فأبى أن يكون إلا لله،

‘প্রথমে গায়রুল্লাহর জন্য ইলম শিখতাম কিন্তু তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য হওয়া বৈ অস্বীকার করেছে।’

কথাটির অর্থ হচ্ছে হয়ত প্রথম প্রথম নিয়ত সহীহ ছিল না বটে, কিন্তু পরবর্তীতে বুঝ আসার পর তা ঠিক হয়ে গেছে। আর উস্তাদের কর্তব্য হচ্ছে ছাত্রদেরকে নিয়ত সহীহ করার জন্য তাগিদ দেয়া। তাদের অন্তরে একথা বদ্ধমূল করতে প্রচেষ্টা চালানো যে, একমাত্র নেক নিয়তের দ্বারাই উচ্চমর্যাদা, ইলম-আমল ও হিকমত লাভ করা সম্ভব।

তিন.

আল্লাহ তা‘আলা ওলামায়ে কেরামের মর্যাদার যে ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রদের অধিকহারে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং তাদের কুরআন, হাদীছ, শের-আশআর ও বিভিন্ন প্রবন্ধে ইলমের যে ফযীলতের কথা বলা হয়েছে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা ও জ্ঞান দেয়া। যাতে তারা হীনমন্যতায় না ভোগে।

চার.

উস্তাদ নিজে যা পছন্দ করবেন ছাত্রদের জন্যও তাই পছন্দ করা উচিত। নিজের সন্তানকে যেভাবে মায়ামমতা প্রদান করা হয় তালেবে ইলমের প্রতিও সেই মায়ামমতা প্রদর্শন করা কর্তব্য। খুব সাধারণ ভাবেই কখনও কখনও তাদের দ্বারা ভুলভ্রান্তি প্রকাশ পাবে। এরজন্য কখনও শাসনও করতে হবে আবার কখনও মাফও করে দিতে হবে। উস্তাদগণ একথা অবশ্যই মনে রাখবেন যে, কঠোরতাই সংশোধনের একমাত্র পথ নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে আদেশ উপদেশের দ্বারা কঠোরতার চেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়।

পাঁচ.

দরস প্রদানের ক্ষেত্রে ফলপ্রসু পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই। ছাত্রদেরকে নীতিমালা, কায়েদা-কানুন এবং সূক্ষ্ম ও উপকারী বিষয়াদি মুখস্ত করাতে উৎসাহিত করা খুবই জরুরী। আর অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন জ্ঞান- যা ছাত্রদের মস্তিষ্ককে বিচলিত করে- তা থেকে দূরে রাখা একান্ত বিচক্ষণতার লক্ষণ।

ছয়.

মাসআলা ও আলোচনা বুঝানোর জন্য গ্রহণযোগ্য ও সরল উপস্থাপনা অবলম্বন একজন আদর্শ উস্তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয় এ ধরনের আলোচনা করা যাবে না। উস্তাদ প্রথমে উদাহরণের সাহায্যে মাসআলাটি তুলে ধরবেন। ছাত্রদের মধ্যে যারা ধারণক্ষমতা রাখে না তাদের জন্য শুধু মাসআলার কাঠামো ও উদাহরণ পেশ করেই ক্ষান্ত হবেন। আর যারা সামর্থ্য রাখে তাদের সামনে মাসআলার দলিলের উৎস, হেকমত, ইল্লত এবং অন্যান্য সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। মজলিসে যদি এমন কেউ উপস্থিত থাকে যার সামনে সরাসরি কোনো শব্দ উল্লেখ করা যায় না, তখন কোনো ইঙ্গিতবাহী শব্দ ব্যবহার করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন।

সাত.

কোনো ব্যাখ্যামূলক দরস শেষ করার পর ছাত্রদের মেধা পরীক্ষার জন্য মাসআলা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় ছাত্রদের সামনে পেশ করা যেতে পারে। কেউ জবাব দিতে পারলে তার প্রশংসা করা বাঞ্ছনীয়। আর কেউ না পারলে তাকে হেকমতের সঙ্গে পুনরায় বুঝিয়ে দেবেন।

আট.

মাঝেমধ্যে ছাত্রদের পূর্বের মুখস্ত করা বিষয় জানতে চাইবেন। পূর্বে উল্লিখিত জরুরীমাসায়েল, দুর্লভ বিষয়, কায়েদাকেন্দ্রিক শাখাগত মাসআলা ইত্যাদি উল্লেখ করে স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেওয়া দরকার। যে ছাত্র জবাব দিতে পারবে অন্যের সামনে তার প্রশংসা করে তার হিম্মত ও অন্যের অনুপ্রেরণা বাড়াবেন। আর কেউ না পারলে অন্যের সামনে তাকে হেয় করবেন না। বরং উৎসাহিত করবেন।

নয়.

কোনো ছাত্রকে তার সাধ্যের বাইরে চেষ্টা-মুজাহাদা করতে দেখলে সহজতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যাতে তিনি উম্মতকে তার সাধ্যের বাইরে কাজ করতে বারণ করেছেন। এক্ষেত্রে তার বাণীটি প্রবাদের মতো সর্বজনবিদিত হয়ে আছে। যথা-

« فَإِنَّ الْمُنْبَتَّ لَا أَرْضًا قَطَعَ وَلَا ظَهْرًا أَبْقَى»

‘দিনরাত চলমান বাহন গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না এবং তার পৃষ্ঠদেশও ঠিক থাকে না।’ [শু‘আবুল ঈমান: ৩৮৮৬, যঈফ]

অন্য হাদীছে ইরশাদ করেন-

اكفلوا من العمل ما تطيقون

‘যতটুকু সাধ্য আছে ততটুকু আমলের বোঝা বহন করো।’

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে সর্বত্র সহজতা দান করেছিলেন। কিন্তু কোনো কোনো সাহাবী সেই সহজতা গ্রহণ না করে নিজের ওপর কঠিন আমল চাপিয়ে নিয়েছিলেন। পরে সেজন্য অনেকে অনুশোচনাও করেছেন। যেমন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের ওপর দীর্ঘ কিয়াম আবশ্যক করে নিয়ে পরে তাতে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং বলেছিলেন-

ليتنى قبلت رخصة رسول الله

‘ইশ, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেওয়া অবকাশই যদি গ্রহণ করতাম!’

কারণ হচ্ছে, ধারাবাহিক আমল আল্লাহ তা‘আলার কাছে খুবই প্রিয়। তাই কিছুদিন সাধ্যের বাইরে মেহনত-মুজাহাদায় লিপ্ত থেকে পরে দুর্বল হয়ে সেটা বাদ দেয়ার চেয়ে সার্বক্ষণিক অল্প মুজাহাদাই উত্তম।

দশ.

সর্বদা ছাত্রের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চাল-চলন, আদব-আখলাস ও স্বভাব-চরিত্রের অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখবেন। তাদের দ্বারা নাজায়েয, মাকরূহ, অশিষ্টাচার, উস্তাদদের প্রতি বেয়াদবি কিংবা অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রের নাম উল্লেখ না করে শাসন করা বেশি কার্যকর। এতে কাজ না হলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে বারণ করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে তখন প্রকাশ্যে কঠোরভাবে শাসন করা যাবে। যাতে তার শাস্তি দেখে অন্যরাও শিক্ষা পায়। আর তাতেও কাজ না হলে তখন শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।

এগার.

ছাত্রদের কল্যাণ সাধন এবং তাদের মন স্থির রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবেন। দরকার হলে এবং সাধ্য থাকলে আর্থিক সহযোগিতা করবেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ওই বান্দার সঙ্গে থাকেন যে বান্দা অপরজনের উপকার করে। আর এই বিষয়টি যদি তালেবে ইলমের ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো এর ফযীলতের তুলনাই নেই। কোনো ছাত্র নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজখবর নেবেন, প্রয়োজনে চিঠি বা ফোনের মাধ্যমে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করবেন। কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-যত্ন করবেন। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করবেন। পেরেশান হলে তাকে স্বান্তনা দেবে। মনে রাখতে হবে নেককার তালেবে ইলম উস্তাদের জন্য দুনিয়া-আখেরাতের সবচেয়ে বড় সাফল্য বয়ে আনে এবং সেই তার সবচেয়ে বড় আত্মীয়-আপনজন।

বারো.

ছাত্রদের সঙ্গে কোমল আচরণ করবেন, যদি তারা তাদের যাবতীয় দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেন। তার প্রতি কোমলতার ডানা সম্প্রাসারিত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করে বলেন,

﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [ الشعراء : ٢١٥ ]

‘আপনি মুমিনদের মধ্যে আপনার অনুসারীদের জন্য বিনয়ের ডানা সম্প্রসারিত করুন।’ {সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত ২১৫}

হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّ اللَّهَ أَوْحَى إِلَيَّ أَنْ تَوَاضَعُوا »

‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বিনয়ী হওয়ার আদেশ করেছেন।’ [মুসলিম: ২৮৬৫]

অন্য হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ

‘যে ব্যক্তি বিনয়ী হয় আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ [মুসলিম: ২৫৮৮]

এটা তো সাধারণ মানুষের প্রতি বিনয়ী হওয়ার ফায়েদা। আর এটা যদি হয় সন্তানতূল্য তালেবে ইলমের প্রতি তাহলে তার মর্যাদা কত উঁচুতে হতে পারে? হাদীছে আরো বলা হয়েছে-

لينوا لمن تعلمون ولمن تتعلمون منه

‘তোমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করো।’ [তাখরীজু আহাদীছিল এহইয়া: ৩/২১৮, যঈফ]

ফুজাইল (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে-

إِن الله يحب العالم المتواضع ويبغض الجبار ومن تواضع لله ورثه الله الحكمة

‘আল্লাহ তা‘আলা বিনয়ী আলেমকে পছন্দ করেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার জন্য বিনয়ী হয় তিনি তাকে হিকমতের অধিকারী করেন।’

ছাত্রদের সঙ্গে তাদের মর্যাদা বজায় রেখে কথা বলা, সম্বোধন করা এবং সুন্দর নাম ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত-

كان رسول الله صلى الله عليه وعلى آله وسلم، يكني أصحابه إكراماً لهم .

‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে তাদের সম্মান রক্ষার্থে উপনামের সঙ্গে সম্বোধন করতেন।’

সুতরাং ছাত্ররা সাক্ষাত করতে এলে তাদেরকে মারহাবা বলা, হাসিমুখে কথা বলা আলেমের শান হওয়া চাই। আর যাদের মধ্যে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যায় তাদের প্রতি একটু বেশি যত্ন নেওয়া বিচক্ষণতার পরিচয়। কারণ, হেকমতকে যথাস্থানে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন