মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
৫ম পর্ব: উস্তাদ ও শায়খদের সঙ্গে তালেবে ইলমের ব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/550/98
এক.
ছাত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কোন মাদরাসায় ও কোন উস্তাদের কাছ থেকে ইলম হাসিল করবে তা ইস্তেখারার মাধ্যমে নির্ধারণ করা। কোথায় তার মেধার বিকাশ ঘটবে, উস্তাদগণের স্নেহপ্রবণতায় নিজের ইলমী যোগ্যতা বিকশিত হবে, তাকওয়া-পরহেজগারী, সততা-দীনদারী অর্জন হবে, লেখাপড়ার মান নিশ্চিত হবে ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। তবে বেশি ইলম হাসিল করতে গিয়ে কিংবা প্রসিদ্ধি হাসিল করতে গিয়ে দীন, আমল ও শিষ্টাচার বিসর্জন দিতে হয় এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা যাবে না। আকাবিরে সলফ বলতেন,
هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم
‘এটা হচ্ছে দীন। সুতরাং আপনি দেখুন, কার কাছ থেকে ইলম তথা দীন হাসিল করবেন।’
আমলহীন প্রসিদ্ধ লোকদের কাছ থেকে ইলম হাসিল করার চেষ্টা করবে না। ইমাম গাযালী (রহ.) এটাকে অহংকারের মধ্যে শামিল করেছেন। কারণ মূল হচ্ছে ইলম হাসিল করা। বলা হয়-
الحكمة ضالة المؤمن يلتقطها حيث وجدها
‘প্রজ্ঞা মুমিনের হারানো সম্পদ, যেখানে তা পায় কুড়িয়ে নেয়।’ অতএব এখানে ব্যক্তিত্বের অহংবোধ গৌণ। তাই যেখানেই বিশুদ্ধ ইলম পাওয়া যাবে সেখানেই ছুটে যাবে এবং বাঘ থেকে পলায়ন করার ন্যায় মূর্খতা থেকে পলায়ন করবে। আর বাঘ থেকে পলায়নকারী ব্যক্তি কিন্তু যে-ই তাকে মুক্তির পথ দেখায় তার কথাই মানে। তার ব্যক্তিত্বের খোঁজ-খবর করতে যায় না। আবূ নুআইম হিলয়াগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জয়নুল আবেদীন (রহ.) গোলাম যায়দ ইবন আসলামের কাছে যেতেন এবং তার মজলিসে বসে ইলম হাসিল করতেন। কেউ তাকে বললেন, আপনি সাইয়েদ বংশের লোক হয়ে এই গোলামের কাছে যাচ্ছেন! জবাবে তিনি বললেন-
العلم يُتَبع حيث كان ومن كان
‘ইলম হচ্ছে অনুসরণীয়। চাই যার কাছেই হোক এবং যেখানেই হোক।’
‘তাই মর্যাদায় নিচু হলেও তার কাছ থেকে ইলম হাসিল করাতে দোষ নেই এবং এতে মর্যাদা বাড়বে, ইলমে বরকত হবে। অবশ্য মুত্তাকী, পরহেগার ব্যক্তি হলে তার মাধ্যমে তো আরো বেশি উপকৃত হওয়া যাবে, এত কোনো সন্দেহ নেই। কিতাবের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। যে কিতাব দ্বারা সত্যিকারের ইলমী উপকারিতা হাসিল হয়, আমলের উন্নতি ঘটে তা পাঠ করতে কার্পণ্য করবে না।
তবে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, উস্তাদ যেন শরীয়তের ইলমের ব্যাপারে দক্ষ হন। তার ব্যাপারে সমকালীন ব্যক্তিগণ আস্থাশীল থাকেন। যে আলেম শুধু কিতাবের পেট থেকে ইলম হাসিল করেছেন তার কাছে ইলম হাসিল করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলতেন,
من تفقه من بطون الكتب ضيع الأحكام،
‘যে ব্যক্তি কিতাবের পেট থেকে ইলম হাসিল করে সে আহকামকে ধ্বংস করে।’
অন্য এক বুযুর্গ বলেন,
من أعظم البلية مشيخة الصحيفة، أي الذين يتعلمون من الصحف
‘কিতাবী শায়খ’ হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ অর্থাৎ যারা শুধু কিতাবের পাতা থেকে ইলম অর্জন করে তারা জাতির জন্য বিপদের কারণ।’
দুই.
উস্তাদকে জটিল রোগীর দক্ষ চিকিৎসক মনে করে তার যাবতীয় আদেশ ও পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। তার সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখবে এবং খেদমত করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করার চেষ্টা করবে। আর একথার দৃঢ়বিশ্বাস রাখবে যে, উস্তাদের জন্য নিজের যিল্লতিতে প্রকৃত সম্মান, বিনয়ী হওয়াতে ফখর এবং নম্র হওয়াতে উচ্চমর্যাদা নিহিত। ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসের মতো এমন সম্মানী ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের লোক হওয়া সত্ত্বেও যায়দ ইবন ছাবেতের বাহনের রেকাবি ধরতেন। কারণ তিনি তার কাছ থেকে ইলম হাসিল করেছিলেন। আর তিনি একথা বলতেন,
هكذا أمرنا إن نفعل بعلمائنا
‘আমরা আমাদের উস্তাদ ও আলেমদের সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করতেই আদিষ্ট হয়েছি।’ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে-
‘ইলম হাসিল করো এবং ইলম হাসিল করার জন্য গাম্ভীর্য শিক্ষা করো। আর যার কাছ থেকে ইলম হাসিল কর, তার প্রতি বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল হও।’ [মু‘জামুল আওসাত: ৬১৮৪, যঈফ]
মনে রাখতে হবে বিনয়ী হওয়া ছাড়া এবং আনুগত্য প্রদর্শন করা ছাড়া ইলম হাসিল করা যায় না। অতএব ইলমী বিষয়ে উস্তাদের যে কোনো পরামর্শ মাথা পেতে মেনে নেবে। নিজের ‘সঠিক বুঝে’র ওপর উস্তাদের ‘ভুল বুঝ’কেই প্রাধান্য দেবে।
তিন.
উস্তাদকে সর্বদা মর্যাদা ও সম্মানের চোখে দেখতে হবে। তার মর্যাদায় বিশ্বাস রাখবে। কেননা এটা নিজের উপকারিতার জন্য খুবই ফলদায়ক। জনৈক দার্শনিক বলেন,
حسن الأدب ترجمان العقل
‘শিষ্টাচার ব্যক্তির আকলের মুখপাত্র।’
উস্তাদকে সরাসরি ‘আপনি’, ‘সে’, ‘তিনি’ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন করবে না। বরং: يا شيخنا ويا أستاذنا ‘মুহতারাম’, ‘সাইয়েদ’ ইত্যাদি পূর্ণ সম্মানজনক বাক্যে সম্বোধন করবে। ‘উস্তায এ বিষয়ে কী বলেন’, ‘এ ব্যাপারে উস্তাযের রায় কী’ এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করবে। আর অনুপস্থিতিতে এমন কোনো শব্দ উল্লেখ করে তাকে স্মরণ করবে না, যাতে তার মর্যাদাহানী হয়। বরং সম্মান ও মর্যাদাজ্ঞাপক শব্দে স্মরণ করবে। যেমন, মুহতারাম শায়খ....বলেছেন, উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা...বলেছেন ইত্যাদি।
চার.
উস্তাদের মর্যাদা ও হক রক্ষা করে চলবে। তার মর্যাদাহানী ঘটাবে না। আবূ উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
من علم عبداً آية من كتاب الله فهو مولاه
‘যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে একটি আয়াত শিক্ষা দিলো তবে তিনি তার মুনিব।’
এসব কারণে উপস্থিত-অনুপস্থিত উভয় অবস্থাতেই উস্তাদের সম্মান করবে। আর যদি একান্তই এসব করতে না পারে তবে ওই মজলিস ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাবে। ছাত্রদের কর্তব্য হচ্ছে, জীবদ্দশায় উস্তাদের জন্য দু‘আ করবে, তার সন্তান-সন্ততি ও নিকটাত্মীয়দের জন্য দু‘আ করবে এবং মৃত্যুর পরও তার হক রক্ষা করবে এবং কবর যিয়ারত ও ইস্তেগফার করবে। তার পক্ষ থেকে কিছু দান-সদকা করবে। উস্তাদের ইক্তেদা ও আদর্শ কখনও পরিত্যাগ করবে না।
পাঁচ.
উস্তাদ কর্তৃক কোনো কঠোরতার সম্মুখীন হলে তাতে সবর করবে এবং এর ভালো ব্যাখ্যা দাঁড় করবে। এর জন্য কখনই তার মহব্বত ও বিশ্বাস ত্যাগ করবে না। এতেই ছাত্রদের অফুরন্ত কল্যাণ। এক মনীষী বলেন,
من لم يصبرعلى ذل التعليم بقي عمره في عملية الجهالة، ومن صبر عليه آل أمره إلى عز الدنيا والآخرة .
‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করতে গিয়ে উস্তাদের লাঞ্ছনা বরদাশত করতে পারে না, সারাজীবন তার মূর্খতার মধ্যে কেটে যায়। আর কেউ বরদাশত করলে সেটা তার দুনিয়া-আখেরাতের মর্যাদায় পরিণত হয়।’
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
ذللت طالباً فعززت مطلوباً
‘ছাত্র থাকতে লাঞ্ছনা বরদাশত করেছি। তাই উস্তাদ হয়ে মর্যাদা লাভ করতে পেরেছি।’
জনৈক মনীষী বলেন,
اصبر لدائك إن جفوت طبيبه ... و أصبر لجهلك إن جفوت معلما
‘যদি চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করো তবে অসুস্থতার ওপর সন্তুষ্ট থাকো এবং যদি উস্তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করো তবে মূর্খতার ওপর ধৈর্যধারণ করো।’
ছয়.
উস্তাদের কঠোরতা ও শাসনকে নিজের জন্য একথা ভেবে নেয়ামত বলে মনে করবে যে, তিনি আমার সংশোধন ও ভালোর জন্য আমার প্রতি খেয়াল রাখছেন বলেই শাসন ও কঠোরতা করছেন।
সাত.
আম মজলিস ছাড়া অনুমতি ছাড়া উস্তাদের অবস্থানকক্ষে প্রবেশ করবে না। চাই তার সঙ্গে অন্য কেউ থাকুক বা না থাকুক। বার বার অনুমতি তলব করবে না। যদি জানা যায় যে, উস্তাদ তার অনুমতি তলবের বিষয়ে অবগত আছেন তবে তিনবারের বেশি অনুমতি তলব করবে না। যদি দরজায় করাঘাত করতে হয় তবে খুব মৃদভাবে, আঙুলের নখ দিয়ে আঘাত করবে। অতপর আঙুল দিয়ে করবে। শেষে হাতের তালু দিয়ে করবে। অনুমতি লাভ করার পর যদি আম মজলিস লক্ষ্য করা যায় তবে পর্যায়ক্রমে মর্যাদার দিক দিয়ে অগ্রগণ্য ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করতে থাকবে। আর উচিত হচ্ছে উস্তাদের কাছে পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় গায়ে প্রবেশ করা। হাত-পায়ের নখ কর্তিত এবং চুল পরিপাটি থাকা। উস্তাদের কাছে কেউ থাকলে এবং তারা কথাবার্তায় লিপ্ত থাকলে সেখানে গিয়ে কথা না বলে নিশ্চুপ থাকা। আর উস্তাদ যদি একাকী থাকেন কিংবা সালাত, যিকির, লেখা বা মুতালাআয় নিমগ্ন থাকেন এবং তিনি নিজে থেকে কথা শুরু না করেন তবে সালাম দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যাবে। হ্যাঁ, তিনি অবস্থান করার ইশারা করলে অবস্থান করবে এবং অনুমতি ছাড়া সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করবে না।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও ফারেগ কলব নিয়ে উস্তাদের কাছে হাজির হবে। মানসিক উত্তেজনা, ক্ষুৎপিপাসা, রাগ-ক্রোধ, ঘুম-তন্দ্রাভাব ইত্যাদি অবস্থায় প্রবেশ করবে না। যাতে উস্তাদ থেকে উপকৃত হওয়া যায় এবং তিনি যা বলেন তা যথাযথভাবে ধরে রাখা যায়। উস্তাদের কাছে এমন কোনো সময় পড়া জিজ্ঞেস করবে না, যখন তা তার জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিংবা যে সময় তার একান্তই অন্য কাজের জন্য নির্দিষ্ট। উস্তাদের কাছে নিজের জন্য কোনো সময় খাস করে নেবে না, যাতে অন্য কেউ শরীক না হতে পারে। কেননা এটা অবাঞ্ছিত বড়ত্ব ও উস্তাদের প্রতি মূর্খদের আচরণের শামিল।
আট.
উস্তাদের সামনে ভদ্রভাবে উপবেশন করবে। সে সময় নম্রতা, বিনয় ও নিরবতা পালন করবে। উস্তাদের প্রতি তাকিয়ে থাকবে এবং কর্ণ খাড়া রাখবে। সব কথা মনোযোগের সঙ্গে শ্রবণ করবে যাতে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন না হয়। এদিক ওদিক তাকাবে না এবং হাতের আস্তিন গোটাবে না, হাত-পা নিয়ে খেলা করবে না। দাড়ি-গোঁফ ও নাকে হাত দেবে না এবং নাক থেকে কিছু বের করবে না। কেননা এটা খুবই আপত্তিকর এবং ঘৃণিত স্বভাব। মুখ খোলা রাখবে না এবং দাঁত দিয়ে আওয়াজ করবে না। হাতের তালু দিয়ে মাটিতে আঘাত করবে না কিংবা হাতের আঙুল দিয়ে মাটিতে দাগ টানবে না। হাতের আঙুল হাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করবে না। উস্তাদের সামনে দেয়াল বা অন্য কিছুর সঙ্গে হেলান দেবে না। উস্তাদের দিকে পিঠ বা পার্শ্ব দিয়ে বসবে না। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলবে না। এমন কোনো কথা বলবে না, যাতে হাসির উদ্রেক হয় কিংবা যাতে অশ্লীল বাক্য মেশানো থাকে অথবা অশিষ্টাচারপূর্ণ সম্বোধন থাকে। বিনা কারণে হাসাহাসি করবে না এমনকি কারণ থাকলেও উস্তাদের সামনে অমার্জিত ভঙ্গিতে হাসবে না। যদি একান্তই হাসির উদ্রেক হয় তবে শব্দ না করে মুচকি হাসি দেবে। প্রয়োজন ছাড়া গলা খাকাড়ি দেবে না। থুথু নিক্ষেপ করবে না। নাক থেকে শ্লেষ্মা বের করবে না। বরং বিনা শব্দে তা রুমাল বা কাপড়ের টুকরায় মুছে ফেলবে। আলোচনা-পর্যালোচনার সময় হাত ও পা সংযত রাখবে।
উস্তাদকে এরূপ বলবে না যে, ‘অমুকে আপনার মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।’ তার সামনে কারো গীবত করবে না এবং যদি তার দ্বারা কোনো ভুলত্রুটি হয়ে যায় তবু তার দোষ তালাশ করবে না। নিঃসন্দেহে একজন আলেম মুমিনের মর্যাদা অনেক। তাদের কেউ মারা গেলে ইসলামে এমন একটি ছিদ্র দেখা দেয়, যা কোনো কিছু দ্বারা ভরাট করা সম্ভব নয়। খতীব বাগদাদী (রহ.) ‘আল-জামে’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
وإن المؤمن العالم لأعظم أجراً من الصائم القائم الغازي في سبيل الله، وإذا مات العالم، انثلمت في الِإسلام ثلمة لا يسدها شيء إلى يو م القيامة .
‘একজন আলেম নিঃসন্দেহে প্রতিদানপ্রাপ্তির বিবেচনায় রোজাদার, নফল সালাতে রাত্রিজাগরণকারী এবং আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় মুজাহিদের চেয়ে বড়। আর একজন আলেম মারা গেলে ইসলামে একটি ছিদ্র সৃষ্টি হয়, যা কেয়ামত পর্যন্ত কোনো বস্তু দ্বারা ভরাট করা সম্ভব নয়।’
উস্তাদের আসনে, বিছানায় বা জায়নামাজে বসবে না। উস্তাদ যদি বসতে বলেন তবু না বসার চেষ্টা করবে। আর যদি একান্তই আদেশ করেন এবং তা পালন না করলে তার মনোকষ্ট হয় তখন বসবে এবং পরে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
নয়.
উস্তাদ কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে কান পেতে তা শ্রবণ করবে এবং এমনভাবে তা শ্রবণ করবে যেন কোনোদিন তা শোনা হয়নি। এটা শ্রোতার শিষ্টাচার। আতা (রহ.) বলেন, ‘আমি অনেক সময় কোনো ব্যক্তির মুখ থেকে একটি কথা শুনি। সে সম্পর্কে আমি বেশি জানি তবু এমন ভাব করি যাতে মনে হয় তিনি আমার চেয়ে বেশি জানেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক সময় যুবক-তরুণ আমার সামনে কথা বলে আর তা আমি এভাবে শ্রবণ করি যে, মনে হয় আমি কোনোদিন তা শ্রবণ করিনি। অথচ আমি তার বহু আগ থেকেই তা জানি!’
উস্তাদ যদি তার বক্তব্য শুরু করার আগে ছাত্ররা জানে কিনা- জিজ্ঞেস করেন এবং ছাত্রদের তা জানাও থাকে, তবু হ্যাঁ বলবে না। কেননা এটা উস্তাদের ইলমের প্রতি অনীহা বুঝায়। আবার না-ও বলবে না। কেননা তা মিথ্যাকথন হয়ে যায়। বরং বলবে, উস্তাযের মুখে শুনতে চাই অথবা উস্তাযের বর্ণনা আমাদের জানার চেয়ে বেশি শুদ্ধ ইত্যাদি।
দশ.
উস্তাদের কথার আগে কথা বলবে না এবং তার বক্তব্যের আগে বক্তব্য শুরু করবে না। উস্তাদের আগ থেকেই উক্ত বিষয় জানার দাবি করবে না এবং উস্তাদ যে ধরনের বিষয়েই কথা বলুন না কেন, সে কথা কাটার চেষ্টা করবে না। বরং তার কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করবে। সাহাবীগণের আমল ছিল এরূপ-
إن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم كان إذا تكلم أطرق جلساؤه، كأن على رؤوسهم الطير، فإذا سكت تكلموا
‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলতেন, তখন সাহাবীগণ মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখতেন। যেন তাদের মাথার ওপর পাখি বসা রয়েছে। তিনি যখন নীরব হতেন সাহাবীগণ তখন কথা বলা শুরু করতেন।’
এগার.
উস্তাদ কোনো কিছু প্রদান করলে ডানহাতে গ্রহণ করবে এবং তাকে দেয়ার সময়েও ডানহাত দিয়ে দেবে। উস্তাদের কোনো বস্তুর ওপর নিজের বস্তু রাখবে না। তার দিকে হাত, চোখ বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে ইশারা করবে না। তাকে লেখার জন্য কলম দেয়ার প্রয়োজন হলে দেয়ার আগে কলমের হেড খুলে দেবে। সামনে দোয়াত রাখলে মুখ খুলে দেবে এবং তড়িৎ লেখার উপযোগী করে পেশ করবে। তার ছুরি ইত্যাদি দিলে ধারালো অংশ আড়ালে রেখে বাড়িয়ে দেবে। আর কখনও উস্তাদের খেদমত করে ক্লান্তি বা লজ্জাবোধ করবে না। বলা হয়ে থাকে-
أربعة لا يأنف الشريف منهم وإن كان أميراً، قيامه من مجلسه لأبيه وخدمته للعالم يتعلم منه والسؤال عما لا يعلمه وخدمته للضيف .
‘চার ক্ষেত্রে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি লজ্জাবোধ করে না, যদিও তিনি বাদশা হোন না কেন। পিতার কাছে পুত্রের দণ্ডায়মান হওয়া, উস্তাদের খেদমতে তালেবে ইলমের নিয়োজিত হওয়া, না জানা বিষয় জিজ্ঞেস করা এবং মেহমানের খেদমত করা।’
বার.
উস্তাদের সঙ্গে রাতে চললে সামনে সামনে এবং দিনে চললে পেছনে পেছনে চলবে। অবশ্য এর বিপরীত কোনো অবস্থা পালন করতে হলে সেটা ভিন্ন কথা। অপরিচিত জায়গায় আগে আগে চলবে। অপরিচিত লোকদের সামনে উস্তাদকে পরিচিত করিয়ে দেবে। উস্তাদ দূরে থাকলে উচ্চস্বরে ডাক দেবে না এবং পিছন থেকেও ডাকবে না। উস্তাদ কোনো বিষয়ে ভুল করে থাকলে সরাসরী সেটাকে ভুল আখ্যায়িত করবে না এবং এরূপ বলবে না যে, আপনার এই কাজটা ভুল বা এটা কোনো মতই নয়। বরং মার্জিতভাবে তাকে স্বীয় ভুল সম্পর্কে অবহিত করবে। যেমন এরূপ বলবে যে, ‘মনে হয় এরূপ করা ভালো হবে।’ কিন্তু ‘আমার মতে এরূপ করা ভালো হবে’ এরকম কথা বলবে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/550/98
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।