HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
যেসব কারণে ইবাদাত বরবাদ হয়
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ
‘যেসব কারণে ইবাদাত বরবাদ হয়’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
পরকালীন মুক্তির জন্য ইবাদাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ইবাদাত আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। আবার এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যার ফলে মানুষের ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের সমাজে অনেকেই সওয়াব মনে করে বিভিন্ন ধরনের আমল করে যাচ্ছেন। অথচ তারা এটা খুঁজে দেখেন না যে, এসব আমল নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করেছেন কি না। কোন আমল যদি নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক অনুমোদিত না হয় তবে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’’ অর্থাৎ এসব আমল বিফলে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হ/৪৩৮৫)
এ বইয়ে ইবাদাত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এবং বিশেষ করে যেসব কারণে ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায় এবং যেসব বিদআতী আমল সমাজে চালু আছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে কতিপয় কুসংস্কার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে, যা মুসলিম জাতিকে বিজাতির অনুসরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, পাঠকসমাজ এ বইটি পাঠ করে ইবাদাতের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং যেসব বিদআতী আমল ও কুসংস্কার সমাজে চালু আছে তা জেনে এ থেকে নিজেরা বিরত থাকবেন এবং জাতিকে এ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করবেন; ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সকলকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে আমাদের সকলের জন্য নাজাতের একটি ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
‘যেসব কারণে ইবাদাত বরবাদ হয়’ বইটি প্রকাশ করতে পেরে আল্লাহ তা‘আলার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। দরূদ ও সালাম পেশ করছি শেষ নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
পরকালীন মুক্তির জন্য ইবাদাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ইবাদাত আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। আবার এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যার ফলে মানুষের ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয়ে জ্ঞান রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের সমাজে অনেকেই সওয়াব মনে করে বিভিন্ন ধরনের আমল করে যাচ্ছেন। অথচ তারা এটা খুঁজে দেখেন না যে, এসব আমল নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করেছেন কি না। কোন আমল যদি নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক অনুমোদিত না হয় তবে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’’ অর্থাৎ এসব আমল বিফলে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হ/৪৩৮৫)
এ বইয়ে ইবাদাত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এবং বিশেষ করে যেসব কারণে ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায় এবং যেসব বিদআতী আমল সমাজে চালু আছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে কতিপয় কুসংস্কার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে, যা মুসলিম জাতিকে বিজাতির অনুসরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, পাঠকসমাজ এ বইটি পাঠ করে ইবাদাতের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং যেসব বিদআতী আমল ও কুসংস্কার সমাজে চালু আছে তা জেনে এ থেকে নিজেরা বিরত থাকবেন এবং জাতিকে এ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করবেন; ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন
বইটি প্রকাশনার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা যেন সকলকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ ক্ষুদ্র প্রয়াসকে আমাদের সকলের জন্য নাজাতের একটি ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْعِبَادَةُ (আল ইবাদাত) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, দাসত্ব করা, অনুগত হওয়া, নত হওয়া ও অনুসরণ করা। এর পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো,
اَلْعِبَادَةُ اِسْمٌ جَامِعٌ لِكُلِّ مَا يُحِبُّهُ اللهُ وَيَرْضَاهُ مِنَ الْاَقْوَالِ وَالْاَعْمَالِ الظَّاهِرِ وَالْبَاطِنَةِ
প্রকাশ্য ও গোপন যেসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট হন তাকে ইবাদাত বলা হয়। [আছারুল ইবাদাত ফী হায়াতিল মুসলিম, আবদুল মুহসিন।]
ইবাদাতের মূল কথা হচ্ছে :
(১) মানুষ একমাত্র আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, তাঁরই কাছে প্রার্থনা করবে এবং তাঁরই সামনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাথা নত করবে।
(২) মানুষ আল্লাহর বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে। তাঁর মুকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না।
(৩) মানুষ আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করবে ও তাঁর আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না।
اَلْعِبَادَةُ اِسْمٌ جَامِعٌ لِكُلِّ مَا يُحِبُّهُ اللهُ وَيَرْضَاهُ مِنَ الْاَقْوَالِ وَالْاَعْمَالِ الظَّاهِرِ وَالْبَاطِنَةِ
প্রকাশ্য ও গোপন যেসব কথা ও কাজ আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট হন তাকে ইবাদাত বলা হয়। [আছারুল ইবাদাত ফী হায়াতিল মুসলিম, আবদুল মুহসিন।]
ইবাদাতের মূল কথা হচ্ছে :
(১) মানুষ একমাত্র আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, তাঁরই কাছে প্রার্থনা করবে এবং তাঁরই সামনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মাথা নত করবে।
(২) মানুষ আল্লাহর বান্দা ও দাস হয়ে থাকবে। তাঁর মুকাবিলায় স্বেচ্ছাচারী নীতি অবলম্বন করবে না এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না।
(৩) মানুষ আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করবে ও তাঁর আইন মেনে চলবে। মানুষ নিজেই নিজের শাসক হবে না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কর্তৃত্ব স্বীকার করবে না।
ইবাদাতের গুরুত্ব অনেক। আল্লাহ তা‘আলা মানুষ ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদাতের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ﴾
আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদাত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।
(সূরা যারিয়াত- ৫৬)
আল্লাহর আহবান :
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
ইবাদাত হচ্ছে মানুষের প্রতি আল্লাহর হক বা অধিকার :
মানুষের প্রতি আল্লাহর হক বা অধিকার হচ্ছে কোন প্রকার শিরক না করে শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ لَيْسَ بَيْنِيْ وَبَيْنَهٗ اِلَّا مُؤْخِرَةُ الرَّحْلِ فَقَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . ثُمَّ سَارَ سَاعَةَ ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . قَالَ : هَلْ تَدْرِيْ مَا حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ . قَالَ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ . قَالَ : فَاِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ اَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلَا يُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا . ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . قَالَ : هَلْ تَدْرِيْ مَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ اِذَا فَعَلُوْا ذٰلِكَ . قَالَ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ . قَالَ : اَنْ لَا يُعَذِّبَهُمْ
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক সময় নবী ﷺ এর বাহনের পেছনে বসা ছিলাম। আমার ও নবী ﷺ এর মাঝে হাওদার কাঠের টুকরা ব্যতীত অন্য কোন ব্যবধান ছিল না। এমতাবস্থায় নবী ﷺ বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। অতঃপর তিনি কিছু দূর অগ্রসর হয়ে পুনরায় বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। অতঃপর তিনি কিছু দূর অগ্রসর হয়ে পুনরায় বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কী হক রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। নবী ﷺ বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো তারা তাঁর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। অতঃপর কিছু দূর চলার পর আবার বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। নবী ﷺ বললেন, তুমি কি জান, এগুলো করলে আল্লাহর কাছে বানদার কী হক আছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। নবী ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দেবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৪।]
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
﴿وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ﴾
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাকো। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
﴿يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ﴾
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
﴿رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا﴾
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতে অগ্রগামী হওয়ার জন্য নবী ﷺ এর তাকিদ :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : بَادِرُوْا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِىْ كَافِرًا أَوْ يُمْسِىْ مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيْعُ دِيْنَهٗ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা আমলের ব্যাপারে দ্রুতগামী হও, অন্ধকার রাতের মতো ঘনিয়ে আসা ফিতনা আগমনের পূর্বে। তখন কোন ব্যক্তি সকাল করবে মুমিন অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়। আবার সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায় এবং সকাল করবে কাফির অবস্থায়। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের কারণে সে তার দ্বীনকে বিক্রি করে দেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩২৮।]
সকল নবীই মানুষকে ইবাদাতের দিকে আহবান করেছেন
আল্লাহ তা‘আলা যেসকল নবী পাঠিয়েছেন সকল নবীরই মূল দায়িত্ব ছিল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ﴾
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগুতকে বর্জন করবে। (সূরা নাহল- ৩৬)
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ﴾
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه ﴾
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ﴾
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه ﴾
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ﴾
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
﴿اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ﴾
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পর তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মাবুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ﴾
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
﴿قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ﴾
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ﴾
আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদাত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।
(সূরা যারিয়াত- ৫৬)
আল্লাহর আহবান :
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত করো, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাক্বারা- ২১)
ইবাদাত হচ্ছে মানুষের প্রতি আল্লাহর হক বা অধিকার :
মানুষের প্রতি আল্লাহর হক বা অধিকার হচ্ছে কোন প্রকার শিরক না করে শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ لَيْسَ بَيْنِيْ وَبَيْنَهٗ اِلَّا مُؤْخِرَةُ الرَّحْلِ فَقَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . ثُمَّ سَارَ سَاعَةَ ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . قَالَ : هَلْ تَدْرِيْ مَا حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ . قَالَ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ . قَالَ : فَاِنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ اَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلَا يُشْرِكُوْا بِهٖ شَيْئًا . ثُمَّ سَارَ سَاعَةً ثُمَّ قَالَ : يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ . قُلْتُ لَبَّيْكَ رَسُوْلَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ . قَالَ : هَلْ تَدْرِيْ مَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ اِذَا فَعَلُوْا ذٰلِكَ . قَالَ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهٗ اَعْلَمُ . قَالَ : اَنْ لَا يُعَذِّبَهُمْ
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক সময় নবী ﷺ এর বাহনের পেছনে বসা ছিলাম। আমার ও নবী ﷺ এর মাঝে হাওদার কাঠের টুকরা ব্যতীত অন্য কোন ব্যবধান ছিল না। এমতাবস্থায় নবী ﷺ বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। অতঃপর তিনি কিছু দূর অগ্রসর হয়ে পুনরায় বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। অতঃপর তিনি কিছু দূর অগ্রসর হয়ে পুনরায় বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। তিনি বললেন, তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কী হক রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। নবী ﷺ বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো তারা তাঁর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। অতঃপর কিছু দূর চলার পর আবার বললেন, হে মু‘আয ইবনে জাবাল! আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি। নবী ﷺ বললেন, তুমি কি জান, এগুলো করলে আল্লাহর কাছে বানদার কী হক আছে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। নবী ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দেবেন না। [সহীহ মুসলিম, হা/১৫৪।]
ইবাদাত করতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত :
﴿وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى يَاْتِيَكَ الْيَقِيْنُ﴾
হে নবী! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদাত করতে থাকো। (সূরা হিজর- ৯৯)
ইবাদাতের সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে :
﴿يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنَّ اَرْضِيْ وَاسِعَةٌ فَاِيَّايَ فَاعْبُدُوْنِ﴾
হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার পৃথিবী প্রশস্ত; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আনকাবূত- ৫৬)
ইবাদাত করতে হবে দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে :
﴿رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهٖؕ هَلْ تَعْلَمُ لَهٗ سَمِيًّا﴾
তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও তাদের মধ্যবর্তী সবকিছুর প্রতিপালক। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত করো এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল হও। তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়াম- ৬৫)
ইবাদাতে অগ্রগামী হওয়ার জন্য নবী ﷺ এর তাকিদ :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : بَادِرُوْا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِىْ كَافِرًا أَوْ يُمْسِىْ مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيْعُ دِيْنَهٗ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা আমলের ব্যাপারে দ্রুতগামী হও, অন্ধকার রাতের মতো ঘনিয়ে আসা ফিতনা আগমনের পূর্বে। তখন কোন ব্যক্তি সকাল করবে মুমিন অবস্থায় এবং সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়। আবার সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায় এবং সকাল করবে কাফির অবস্থায়। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের কারণে সে তার দ্বীনকে বিক্রি করে দেবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৩২৮।]
সকল নবীই মানুষকে ইবাদাতের দিকে আহবান করেছেন
আল্লাহ তা‘আলা যেসকল নবী পাঠিয়েছেন সকল নবীরই মূল দায়িত্ব ছিল মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহবান করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ﴾
আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি (এ নির্দেশ দিয়ে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাগুতকে বর্জন করবে। (সূরা নাহল- ৩৬)
﴿وَمَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا نُوْحِيْۤ اِلَيْهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَاْ فَاعْبُدُوْنِ﴾
আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি, যার প্রতি এ ওহী করিনি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো। (সূরা আম্বিয়া- ২৫)
নূহ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿لَقَدْ اَرْسَلْنَا نُوْحًا اِلٰى قَوْمِه فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه ﴾
আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৫৯)
হুদ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمْ هُوْدًاؕ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ﴾
আমি আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা তাঁকে ভয় করবে না? (সূরা আ‘রাফ- ৬৫)
সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى ثَمُوْدَ اَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُه ﴾
সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন ইলাহ্ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৭৩)
শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿وَاِلٰى مَدْيَنَ اَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِّنْ اِلٰهٍ غَيْرُهٗ﴾
আমি মাদইয়ানবাসীর নিকট তাদেরই ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। (সূরা আ‘রাফ- ৮৫)
ইয়াকূব (আঃ) এর সন্তানদের ঘোষণা :
﴿اَمْ كُنْتُمْ شُهَدَآءَ اِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ اِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ ۢبَعْدِيْؕ قَالُوْا نَعْبُدُ اِلٰهَكَ وَاِلٰهَ اٰبَآئِكَ اِبْرَاهِيْمَ وَاِسْمَاعِيْلَ وَاِسْحَاقَ اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ﴾
তোমরা কি ঐ সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকূবের মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার (মৃত্যুর) পর তোমরা কোন জিনিসের ইবাদাত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ্ এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মাবুদের ইবাদাত করব। তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব। (সূরা বাক্বারা- ১৩৩)
ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ اَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ‐ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِه ۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍؕ اِنِ الْحُكْمُ اِلَّا لِلّٰهِؕ اَمَرَ اَلَّا تَعْبُدُوْاۤ اِلَّاۤ اِيَّاهُؕ ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ ﴾
হে কারাসঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যে নামগুলো তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরাই রেখেছ। এগুলোর কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। বিধান দেয়ার অধিকার কেবল আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁরই ইবাদাত করবে, আর এটাই শাশ্বত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। (সূরা ইউসুফ- ৩৯, ৪০)
ঈসা (আঃ) এর দাওয়াত :
﴿اِنَّ اللهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ আমার এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদাত করো; এটাই সঠিক পথ। (সূরা আলে ইমরান- ৫১)
মুহাম্মাদ ﷺ এর দাওয়াত :
﴿قُلْ يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍ ۢبَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ اَلَّا نَعْبُدَ اِلَّا اللهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا اَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللهِؕ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ﴾
বলো, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালিমার দিকে এসো, যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান। আর তা হলো, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না এবং তার সাথে কোনকিছুকে শরীক স্থাপন করব না; আর আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিম। (সূরা আলে ইমরান- ৬৪)
ইবাদাতের ফলাফল বা উপকারিতা অপরিসীম। বান্দা যতবেশি আন্তরিকতা নিয়ে আল্লাহর ইবাদাতে মনোনিবেশ করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ততবেশি পছন্দ করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তার পুরস্কার অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন।
আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায় :
﴿وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ﴾
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার সকল কাজ সমাধা করে দেন :
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ يُسْرًا﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকর্ম সহজ করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ৪)
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (সংকট থেকে বের হওয়ার) পথ বের করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
আল্লাহ ইবাদাতকারীদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন :
﴿وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ﴾
অতঃপর যারা মুমিন ও মুত্তাক্বী ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামল- ৫৩)
যারা সৎকর্ম করে সৃষ্টির মধ্যে তারাই উত্তম :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
ইবাদাতকারীরা সফলতা লাভ করবে :
﴿فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ﴾
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে অতিশীঘ্রই সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
সৎকর্মই প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা লাভের ভিত্তি :
﴿مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًاؕ اِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ﴾
যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক), সকল সম্মান আল্লাহর জন্যই। উত্তম বাক্যসমূহ তাঁরই দিকে পৌঁছে, আর সৎকাজ তাকে তাঁরই কাছে পৌঁছে দেয়। (সূরা ফাতির- ১০)
কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ এর মুকাবিলায় যা কিছু করেছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা মেনে নেয়া হয় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব খতম হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছ, তা মিথ্যা মর্যাদা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত ও চিরস্থায়ী মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তুমি যদি তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে সে মর্যাদার অনুসন্ধান কর, তবে তা পেয়ে যাবে। কিন্তু যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।
সৎকর্মের পুরস্কারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
﴿وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিক পাবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ﴾
মুমিন থাকাবস্থায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, দয়াময় (আল্লাহ) অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের তাওবা কবুল করেন :
﴿ اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَوَّابِيْنَ غَفُوْرًا﴾
যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা বনী ইসরাইল- ২৫)
﴿وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى﴾
আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তাওবা করে, ঈমান আনয়ন করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
আল্লাহ ইবাদাতকারীদের দু‘আ কবুল করেন :
﴿وَيَسْتَجِيْبُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيْدُهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ﴾
তিনি মুমিন ও সৎ আমলকারীদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন। (সূরা শূরা- ২৬)
আল্লাহ সৎকর্মীদের গোনাহ ক্ষমা করেন :
﴿وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ﴾
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা ফাতির- ৭)
﴿فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
সৎকর্মের দ্বারা গোনাহ ক্ষমা হয় :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ ﴾
তুমি সালাত কায়েম করো- দিবসের দুপ্রামত্মভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে জান্নাত দেবেন :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফ- ১০৭)
﴿وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ وَعْدَ اللهِ حَقًّاؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে অচিরেই তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
ব্যক্তির আমল যত ভালো হবে মর্যাদা তত বাড়বে :
﴿وَمَنْ يَّاْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا – جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى﴾
যারা মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তাঁর নিকট উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্যই, যারা পবিত্র। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
আল্লাহ মুমিন বান্দার নেক আমল নষ্ট করেন না :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, এমন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি নষ্ট করব না। (সূরা কাহফ- ৩০)
﴿وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ কাউকে ঠকাবেন না :
﴿وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ﴾
তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
﴿وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا﴾
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তার জন্য অবিচার এবং অন্য কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
আল্লাহ সৎকর্মের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেন :
﴿وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًاؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ﴾
যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা শূরা- ২৩)
আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে রিযিক বৃদ্ধি পায় :
﴿وَلَوْ اَنَّ اَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ﴾
যদি সকল জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ‘রাফ- ৯৬)
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا ‐ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন এবং তিনি ঐ ব্যক্তিকে এমন দিক হতে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সূরা তালাক্ব- ২, ৩)
ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার সকল কাজ সমাধা করে দেন :
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ يُسْرًا﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকর্ম সহজ করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ৪)
﴿وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا﴾
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (সংকট থেকে বের হওয়ার) পথ বের করে দেন। (সূরা তালাক্ব- ২)
আল্লাহ ইবাদাতকারীদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন :
﴿وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ﴾
অতঃপর যারা মুমিন ও মুত্তাক্বী ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। (সূরা নামল- ৫৩)
যারা সৎকর্ম করে সৃষ্টির মধ্যে তারাই উত্তম :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اُولٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির সেরা। (সূরা বায়্যিনাহ- ৭)
ইবাদাতকারীরা সফলতা লাভ করবে :
﴿فَاَمَّا مَنْ تَابَ وَ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤى اَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ﴾
তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকর্ম করবে অতিশীঘ্রই সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা ক্বাসাস- ৬৭)
সৎকর্মই প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা লাভের ভিত্তি :
﴿مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلّٰهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًاؕ اِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهٗ﴾
যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক), সকল সম্মান আল্লাহর জন্যই। উত্তম বাক্যসমূহ তাঁরই দিকে পৌঁছে, আর সৎকাজ তাকে তাঁরই কাছে পৌঁছে দেয়। (সূরা ফাতির- ১০)
কুরাইশ সরদাররা নবী ﷺ এর মুকাবিলায় যা কিছু করেছিল সবই ছিল তাদের নিজেদের ইজ্জত ও মর্যাদার খাতিরে। তাদের ধারণা ছিল, যদি মুহাম্মাদ ﷺ এর কথা মেনে নেয়া হয় তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব খতম হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও কুফরী করে তোমরা নিজেদের যে মর্যাদা তৈরি করে রেখেছ, তা মিথ্যা মর্যাদা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমাদের মৃত্যুর সাথে সাথেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত ও চিরস্থায়ী মর্যাদা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তুমি যদি তাঁর ইবাদাতের মাধ্যমে সে মর্যাদার অনুসন্ধান কর, তবে তা পেয়ে যাবে। কিন্তু যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে।
সৎকর্মের পুরস্কারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান :
﴿وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُوْنَ فِيْهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾
পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎ আমল করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা অসংখ্য রিযিক পাবে। (সূরা মু’মিন- ৪০)
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ﴾
মুমিন থাকাবস্থায় পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে, নিশ্চয় আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمٰنُ وُدًّا﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, দয়াময় (আল্লাহ) অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারইয়াম- ৯৬)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদের তাওবা কবুল করেন :
﴿ اِنْ تَكُوْنُوْا صَالِحِيْنَ فَاِنَّهٗ كَانَ لِلْاَوَّابِيْنَ غَفُوْرًا﴾
যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও, তবে (জেনে রেখো) নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য অতিশয় ক্ষমাশীল। (সূরা বনী ইসরাইল- ২৫)
﴿وَاِنِّيْ لَغَفَّارٌ لِّمَنْ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدٰى﴾
আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তাওবা করে, ঈমান আনয়ন করে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরা ত্বা-হা- ৮২)
আল্লাহ ইবাদাতকারীদের দু‘আ কবুল করেন :
﴿وَيَسْتَجِيْبُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيْدُهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ﴾
তিনি মুমিন ও সৎ আমলকারীদের আহবানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন। (সূরা শূরা- ২৬)
আল্লাহ সৎকর্মীদের গোনাহ ক্ষমা করেন :
﴿وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّاَجْرٌ كَبِيْرٌ﴾
আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (সূরা ফাতির- ৭)
﴿فَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّرِزْقٌ كَرِيْمٌ﴾
যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। (সূরা হজ্জ- ৫০)
সৎকর্মের দ্বারা গোনাহ ক্ষমা হয় :
﴿وَاَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِؕ اِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِؕ ذٰلِكَ ذِكْرٰى لِلذَّاكِرِيْنَ ﴾
তুমি সালাত কায়েম করো- দিবসের দুপ্রামত্মভাগে ও রজনীর প্রথমাংশে। নিশ্চয় সৎকর্ম অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ। (সূরা হুদ- ১১৪)
আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে জান্নাত দেবেন :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস। (সূরা কাহফ- ১০৭)
﴿وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَاۤ اَبَدًاؕ وَعْدَ اللهِ حَقًّاؕ وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে অচিরেই তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার পাদদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? (সূরা নিসা- ১২২)
ব্যক্তির আমল যত ভালো হবে মর্যাদা তত বাড়বে :
﴿وَمَنْ يَّاْتِهٖ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا – جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى﴾
যারা মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তাঁর নিকট উপস্থিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এ পুরস্কার তাদের জন্যই, যারা পবিত্র। (সূরা ত্বা-হা- ৭৫, ৭৬)
আল্লাহ মুমিন বান্দার নেক আমল নষ্ট করেন না :
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ اِنَّا لَا نُضِيْعُ اَجْرَ مَنْ اَحْسَنَ عَمَلًا﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, এমন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি নষ্ট করব না। (সূরা কাহফ- ৩০)
﴿وَاَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ اَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না। (সূরা আলে ইমরান- ১৭১)
প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ কাউকে ঠকাবেন না :
﴿وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ يُّوَفَّ اِلَيْكُمْ وَاَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ﴾
তোমরা উত্তম যা কিছুই দান করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমরা পাবে এবং তোমাদের উপর কোন অন্যায় করা হবে না। (সূরা বাক্বারা- ২৭২)
﴿وَمَنْ يَّعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًا وَّلَا هَضْمًا﴾
যে ব্যক্তি মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তার জন্য অবিচার এবং অন্য কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। (সূরা ত্বা-হা- ১১২)
আল্লাহ সৎকর্মের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেন :
﴿وَمَنْ يَّقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهٗ فِيْهَا حُسْنًاؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ﴾
যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও বড়ই কৃতজ্ঞ। (সূরা শূরা- ২৩)
ইবাদাত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কোন ইবাদাত রয়েছে, যা অন্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যেমন সহীহ আকীদা-বিশ্বাস অবলম্বন করা, ঈমান আনা ইত্যাদি। আবার কোন ইবাদাত রয়েছে, যা শরীর দ্বারা সম্পাদিত হয় যেমন নামায, রোযা। আবার কোনটি অর্থ দ্বারা সম্পাদিত হয় যেমন যাকাত, আবার কোনটি শরীর ও অর্থ উভয়ের সমন্বয়ে সম্পাদিত হয় যেমন হজ্জ। আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের উপর যেসব ইবাদাত নির্ধারণ করেছেন তার কিছু নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. اَلْاِيْمَانُ (আল ঈমান) তথা বিশ্বাস স্থাপন করা :
اَلْاِيْمَانِ اَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهٖ وَشَرِّهٖ
ঈমান হলো, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তুমি তাকদীর ও তার ভালো-মন্দের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩।]
২. اَلْاِحْسَانُ (আল ইহসান) তথা নিষ্ঠার সাথে কাজ করা :
اَلْاِحْسَانِ اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তাহলে মনে করবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩।]
৩. اَلْخَوْفُ (আল খাওফ) তথা আল্লাহকে ভয় করা :
﴿اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَه۪ٗ فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমাদের সে শয়তান, যে তার অনুসারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করে। কিন্তু যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকেই ভয় করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৫)
৪. اَلرَّجَاءُ (আর রাজা) তথা আল্লাহর উপর আশা রাখা :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
৫. اَلتَّوَكُّلُ (আত তাওয়াক্কুল) তথা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া :
﴿وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
আল্লাহর উপর নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
৬. اَلرَّغْبَةُ (আর রাগবাহ) তথা আল্লাহর প্রতি আগ্রহ ও ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা প্রকাশ করা :
﴿اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ﴾
তারা (নবীগণ) সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত এবং তারা আমাকে আশা ও ভীতির সাথে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনীত। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)
৭. اَلْاِنَابَةُ (আল ইনাবাহ) তথা কৃত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করা :
﴿وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ﴾
তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো, নতুবা তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
৮. اَلْاِسْتِعَانَةُ (আল ইস্তে‘আনাহ) তথা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা :
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ﴾
আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (সূরা বাক্বারা- ৪৫)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ اَنَّهٗ حَدَّثَهٗ اَنَّهٗ رَكِبَ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ يَوْمًا فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ يَا غُلَامُ اِنِّيْ مُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ اِحْفَظِ الله يَحْفَظْكَ اِحْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ وَاِذَا سَأَلْتَ فَلْتَسْأَلِ اللهَ وَاِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَاعْلَمْ اَنَّ الْأُمَّةَ لَوِاجْتَمَعُوْا عَلٰى اَنْ يَنْفَعُوْكَ لَمْ يَنْفَعُوْكَ اِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَنْ يَضُرُّوْكَ لَمْ يَضُرُّوْكَ اِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتْ الْاَقْلَامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে বসেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব। (কথাগুলো মনে রাখবে) তুমি আল্লাহর হেফাযত করো তাহলে আল্লাহ তোমার হেফাযত করবেন। যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন তুমি কোন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। আর জেনে রেখো! যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার উপকার করার জন্য, তবে তারা সকলে মিলে ততটুকুই উপকার করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। পক্ষান্তরে যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার ক্ষতি করার জন্য তবে সকলে মিলে তোমার ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। কলম তুলে রাখা হয়েছে এবং (তাকদীর লিখিত) কিতাব শুকিয়ে গেছে। [তিরমিযী, হা/২৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৯; মিশকাত, হা/৫৩০২।]
৯. اَلْاِسْتِعَاذَةُ (আল ইস্তে‘আযা) তথা আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা
﴿قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ﴾
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (আসল) বাদশার কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মাবুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। (সূরা নাস)
১০. اَلصَّلٰوةُ (আস-সালাত) তথা সালাত কায়েম করা :
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ﴾
অতএব তোমরা সালাত কয়েম করো। আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
১১. اَلزَّكَاةُ (আয-যাকাত) তথা যাকাত আদায় করা :
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
১২. اَلصَّوْمُ (আস-সাওম) তথা রোযা রাখা :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
১৩. اَلْحَجُّ (আল-হজ্জ) তথা হজ্জ সম্পাদন করা :
﴿وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ﴾
যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে সেসব মানুষের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বাঘরে হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
১৪. اَلْقِتَالُ (আল ক্বিতাল) তথা জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা :
﴿كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
১৫. اَلدُّعَاءُ (আদ দু‘আ) তথা আল্লাহর নিকট চাওয়া :
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ﴾
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন- ৬০)
اَلدَّعْوَةُ (আদ দা‘ওয়াতু) অর্থ নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর তাৎপর্য হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ করে সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
১৬. اَلنَّذْرُ (আন নযর) তথা মান্নত করা :
﴿يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُوْنَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِيْرًا﴾
তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ব্যাপারে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্টতা হবে ব্যাপক। (সূরা দাহর- ৭)
১৭. اَلذَّبْحُ (আয যাব্হ) তথা কুরবানী করা :
﴿قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ﴾
বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাঁকেই ভয় করা, তাঁরই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তাঁর আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তাঁর সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
নিচের কাজগুলোও ইবাদাত -
কুরআন পাঠ করা ও গবেষণা করা, আল্লাহর পথে দান করা, করজে হাসানা দেয়া, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা, চাকর/কর্মচারীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো, কন্যাসন্তান লালনপালন করা, এতীম লালনপালন করা, মেহমানদারী করা, ক্ষুধার্তকে আহার দেয়া, রোগীর সেবা করা, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার নামাযে শরীক হওয়া, মসজিদ নির্মাণ করা, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, পরিবারের জন্য খরচ করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, মাতাপিতার সাথে সদাচরণ করা, মানুষের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করা, খুশী মনে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করা, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া, লজ্জা বজায় রাখা, ভালো কাজের দিকে মানুষকে আহবান করা, পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখানো, ভালো কাজের সুপারিশ করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, স্বামীর হক আদায় করা, স্ত্রীর হক আদায় করা, সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া, হালাল উপায়ে উপার্জন করা, ধৈর্যধারণ করা ও তওবা-ইস্তেগফার করা।
১. اَلْاِيْمَانُ (আল ঈমান) তথা বিশ্বাস স্থাপন করা :
اَلْاِيْمَانِ اَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهٖ وَكُتُبِهٖ وَرُسُلِهٖ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهٖ وَشَرِّهٖ
ঈমান হলো, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তুমি তাকদীর ও তার ভালো-মন্দের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে। [সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩।]
২. اَلْاِحْسَانُ (আল ইহসান) তথা নিষ্ঠার সাথে কাজ করা :
اَلْاِحْسَانِ اَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَاَنَّكَ تَرَاهُ فَاِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَاِنَّهٗ يَرَاكَ
ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তাহলে মনে করবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৫০; সহীহ মুসলিম, হা/১০২; আবু দাউদ, হা/৪৬৯৭; তিরমিযী, হা/২৬১০; নাসাঈ, হা/৪৯৯০; ইবনে মাজাহ, হা/৬৩।]
৩. اَلْخَوْفُ (আল খাওফ) তথা আল্লাহকে ভয় করা :
﴿اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ اَوْلِيَآءَه۪ٗ فَلَا تَخَافُوْهُمْ وَخَافُوْنِ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমাদের সে শয়তান, যে তার অনুসারীদেরকে ভয় প্রদর্শন করে। কিন্তু যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকেই ভয় করো। (সূরা আলে ইমরান- ১৭৫)
৪. اَلرَّجَاءُ (আর রাজা) তথা আল্লাহর উপর আশা রাখা :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
৫. اَلتَّوَكُّلُ (আত তাওয়াক্কুল) তথা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়া :
﴿وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوْاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ﴾
আল্লাহর উপর নির্ভর করো, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। (সূরা মায়েদা- ২৩)
৬. اَلرَّغْبَةُ (আর রাগবাহ) তথা আল্লাহর প্রতি আগ্রহ ও ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা প্রকাশ করা :
﴿اِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِى الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًاؕ وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ﴾
তারা (নবীগণ) সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত এবং তারা আমাকে আশা ও ভীতির সাথে ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনীত। (সূরা আম্বিয়া- ৯০)
৭. اَلْاِنَابَةُ (আল ইনাবাহ) তথা কৃত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করা :
﴿وَاَنِيْبُوْاۤ اِلٰى رَبِّكُمْ وَاَسْلِمُوْا لَهٗ مِنْ قَبْلِ اَنْ يَّاْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ﴾
তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো, নতুবা তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। (সূরা যুমার- ৫৪)
৮. اَلْاِسْتِعَانَةُ (আল ইস্তে‘আনাহ) তথা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা :
﴿وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِؕ وَاِنَّهَا لَكَبِيْرَةٌ اِلَّا عَلَى الْخَاشِعِيْنَ﴾
আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় এ কাজ খুবই কঠিন, তবে বিনয়ীগণ ব্যতীত। (সূরা বাক্বারা- ৪৫)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ اَنَّهٗ حَدَّثَهٗ اَنَّهٗ رَكِبَ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ يَوْمًا فَقَالَ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ يَا غُلَامُ اِنِّيْ مُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ اِحْفَظِ الله يَحْفَظْكَ اِحْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ وَاِذَا سَأَلْتَ فَلْتَسْأَلِ اللهَ وَاِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ وَاعْلَمْ اَنَّ الْأُمَّةَ لَوِاجْتَمَعُوْا عَلٰى اَنْ يَنْفَعُوْكَ لَمْ يَنْفَعُوْكَ اِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوْا عَلٰى اَنْ يَضُرُّوْكَ لَمْ يَضُرُّوْكَ اِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ رُفِعَتْ الْاَقْلَامُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে বসেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব। (কথাগুলো মনে রাখবে) তুমি আল্লাহর হেফাযত করো তাহলে আল্লাহ তোমার হেফাযত করবেন। যখন তুমি কিছু চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন তুমি কোন সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। আর জেনে রেখো! যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার উপকার করার জন্য, তবে তারা সকলে মিলে ততটুকুই উপকার করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। পক্ষান্তরে যদি গোটা জাতি একত্র হয় কোন বিষয়ে তোমার ক্ষতি করার জন্য তবে সকলে মিলে তোমার ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। কলম তুলে রাখা হয়েছে এবং (তাকদীর লিখিত) কিতাব শুকিয়ে গেছে। [তিরমিযী, হা/২৫১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৯; মিশকাত, হা/৫৩০২।]
৯. اَلْاِسْتِعَاذَةُ (আল ইস্তে‘আযা) তথা আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা
﴿قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِكِ النَّاسِ – اِلٰهِ النَّاسِ – مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ – اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ – مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ﴾
(হে নবী) বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (আসল) বাদশার কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) মানুষের (একমাত্র) মাবুদের কাছে। (আমি আশ্রয় চাই) কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে (প্ররোচনা দিয়েই) গা ঢাকা দেয়। যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে। (সূরা নাস)
১০. اَلصَّلٰوةُ (আস-সালাত) তথা সালাত কায়েম করা :
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُوْنُوْا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ﴾
অতএব তোমরা সালাত কয়েম করো। আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা রূম- ৩০, ৩১)
১১. اَلزَّكَاةُ (আয-যাকাত) তথা যাকাত আদায় করা :
﴿وَاَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَاٰتُوا الزَّكَاةَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (সূরা নূর- ৫৬)
১২. اَلصَّوْمُ (আস-সাওম) তথা রোযা রাখা :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেরকমভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছিল। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে। (সূরা বাক্বারা- ১৮৩)
১৩. اَلْحَجُّ (আল-হজ্জ) তথা হজ্জ সম্পাদন করা :
﴿وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَيْهِ سَبِيْلًاؕ وَمَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ﴾
যারা যাতায়াতের সামর্থ্য রাখে সেসব মানুষের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা‘বাঘরে হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)
১৪. اَلْقِتَالُ (আল ক্বিতাল) তথা জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা :
﴿كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئًا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْئًا وَّهُوَ شَرٌّ لَّكُمْؕ وَاللهُ يَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ﴾
যুদ্ধ করাকে তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে, যা তোমাদের নিকট খুবই অপ্রিয়। হ্যাঁ, তোমরা যা অপছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার তোমরা যা পছন্দ করছ, হতে পারে তা-ই তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। মূলত আল্লাহই জানেন, কিন্তু তোমরাই জান না। (সূরা বাক্বারা- ২১৬)
১৫. اَلدُّعَاءُ (আদ দু‘আ) তথা আল্লাহর নিকট চাওয়া :
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُوْنِۤيْ اَسْتَجِبْ لَكُمْؕ اِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ﴾
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, অবশ্যই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন- ৬০)
اَلدَّعْوَةُ (আদ দা‘ওয়াতু) অর্থ নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর তাৎপর্য হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ করে সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
১৬. اَلنَّذْرُ (আন নযর) তথা মান্নত করা :
﴿يُوْفُوْنَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُوْنَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهٗ مُسْتَطِيْرًا﴾
তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ব্যাপারে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্টতা হবে ব্যাপক। (সূরা দাহর- ৭)
১৭. اَلذَّبْحُ (আয যাব্হ) তথা কুরবানী করা :
﴿قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‐ لَا شَرِيْكَ لَهٗۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ﴾
বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি; আর আমিই প্রথম মুসলিম। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
মানুষ যেসব পদ্ধতিতে আল্লাহ ছাড়া অন্যের দাসত্ব করে সেগুলোকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, রুকূ করা, সিজদা করা, আর্থিক নযরানা পেশ করা, রোযা রাখা, কুরবানী করা, কেবল তাঁকেই ভয় করা, তাঁরই আনুগত্য করা, নির্দ্বিধায় তাঁর আইন ও বিধান মেনে চলা ইত্যাদি কাজকর্মসমূহকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। অতঃপর তাঁর সাথে এসব বিষয়ে অন্য কাউকে শরীক না করা। কেননা এগুলো একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট; এতে অন্য কেউ অংশীদার হতে পারে না। তাছাড়া সকল নবী ও রাসূল মানবজাতিকে এ পথেই আহবান করে গেছেন। যদিও তাদের মধ্যে আমলের পদ্ধতিগত পার্থক্য ছিল, কিন্তু সকলের মূল উদ্দেশ্য ছিল একই।
নিচের কাজগুলোও ইবাদাত -
কুরআন পাঠ করা ও গবেষণা করা, আল্লাহর পথে দান করা, করজে হাসানা দেয়া, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা, চাকর/কর্মচারীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো, কন্যাসন্তান লালনপালন করা, এতীম লালনপালন করা, মেহমানদারী করা, ক্ষুধার্তকে আহার দেয়া, রোগীর সেবা করা, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার নামাযে শরীক হওয়া, মসজিদ নির্মাণ করা, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, পরিবারের জন্য খরচ করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, মাতাপিতার সাথে সদাচরণ করা, মানুষের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করা, খুশী মনে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ করা, উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া, লজ্জা বজায় রাখা, ভালো কাজের দিকে মানুষকে আহবান করা, পশু-পাখির প্রতি দয়া দেখানো, ভালো কাজের সুপারিশ করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, স্বামীর হক আদায় করা, স্ত্রীর হক আদায় করা, সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়া, হালাল উপায়ে উপার্জন করা, ধৈর্যধারণ করা ও তওবা-ইস্তেগফার করা।
অনেক মানুষ শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতকে ইবাদাত মনে করে থাকেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন- এসব বিষয়কে ইবাদাত মনে করেন না। আসলে এ ধারণা মোটেই সঠিক নয়। কেননা ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্নাঙ্গ দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা। একজন মানুষ তার জীবন পরিচালনা করতে যতগুলো বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় সকল বিষয়ের সমাধা ইসলামে রয়েছে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নবীর সুন্নাহ মুতাবিক মানবজীবনের সকল কাজই ইবাদাতের মধ্যে গণ্য হয়। যদি কিছু বিষয়কে দ্বীনের বাহিরে রাখা হয় এবং কিছু বিষয়কে দ্বীন মনে করা হয় তাহলে এটাই বুঝা যায় যে, ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন নয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
যারা মানবজীবনের কিছু বিষয়কে দ্বীনের বাহিরে রাখেন বা মনে করেন যে, এ ব্যাপারে ইসলামের কোন দিকনিদের্শনা নেই, তারা কি কুরআনের এ আয়াতটিকে মিথ্যা মনে করেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা কখনো মিথ্যা বলেন না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا﴾
আল্লাহর কথার চেয়ে সত্য কথা আর কার হতে পারে? (সূরা নিসা- ৮৭)
সুতরাং মানব জীবনের ব্যক্তিগত জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল দিক ও বিভাগ দ্বীনের আওতাভুক্ত। একজন মানুষ যেমন তার ব্যক্তি জীবনকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলবে অনুরূপভাবে তার পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্মকেও ইসলামের আওতায় নিয়ে আসবে। সমাজের সর্বত্র আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রমই ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
জীবনের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে করলে তা ইবাদাতে পরিণত হয়ে যায়।
খানা খাওয়াও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে খাবার খায় যে, সে এ খাবার খেয়ে শক্তি অর্জন করে আল্লাহ দ্বীন পালন করবে, তাহলে তার এ খাওয়াটাও ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সুস্থ থাকার জন্য খাবার গ্রহণ করাও আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
জ্ঞানার্জন করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে জ্ঞানার্জন করে যে, আমি ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব, তাহলে এটা তার জন্য ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ﴾
তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করত। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসত তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করত, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা- ১২২)
বিয়ে-শাদী করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে বিয়ে-শাদি করে যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। তাহলে বৈবাহিক জীবনটা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদেরকে বিবাহ দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ﴾
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
উপার্জন করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে উপার্জন করে যে, আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল বেতন পাওয়ার জন্য নয় বরং উদ্দেশ্য থাকবে- আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দেব এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, ফলে তারা ইহকালীন ও পরকালীন জগতে লাভবান হতে পারবে এবং অন্যকে শিক্ষা দানের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। কোন ব্যক্তি যদি সৎভাবে উপার্জন করে এবং পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় করে তবে এটার জন্য সে আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবে। বান্দা স্ত্রীর মুখে যে লোকমা উঠিয়ে দেয় তার জন্যও সে পুরস্কার পায়, যা নবী ﷺ এর নিচের হাদীস থেকে জানা যায়।
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِي وَقَّاصٍ قَالَ جَاءَ النَّبِيُّ يَعُوْدُنِيْ وَاَنَا بِمَكَّةَ وَهُوَ يَكْرَهُ اَنْ يَمُوْتَ بِالْاَرْضِ الَّتِيْ هَاجَرَ مِنْهَا قَالَ يَرْحَمُ اللهُ ابْنَ عَفْرَاءَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أُوْصِيْ بِمَالِيْ كُلِّهٖ قَالَ : لَا، قُلْتُ فَالشَّطْرُ قَالَ : لَا، قُلْتُ الثُّلُثُ قَالَ فَالثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ اِنَّكَ اَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ اَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ اَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ فِيْ اَيْدِيْهِمْ وَاِنَّكَ مَهْمَا اَنْفَقْتَ مِنْ نَفَقَةٍ فَاِنَّهَا صَدَقَةٌ حَتَّى اللُّقْمَةُ الَّتِيْ تَرْفَعُهَا اِلٰى فِي امْرَاَتِكَ وَعَسَى اللهُ اَنْ يَرْفَعَكَ فَيَنْتَفِعَ بِكَ نَاسٌ وَيُضَرَّ بِكَ اٰخَرُوْنَ وَلَمْ يَكُنْ لَهٗ يَوْمَئِذٍ اِلَّا ابْنَةٌ
সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মক্কায় রোগাক্রান্ত থাকাকালীন নবী ﷺ আমাকে দেখতে আসলেন। আর সা‘দ (রাঃ) এমন জায়গায় ইন্তিকাল করতে অপছন্দ করতেন, যে স্থান হতে তিনি হিজরত করেছেন। তিনি বললেন, ইবনে আফরার উপর আল্লাহ রহম করুন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সমুদয় মালের অসীয়ত করব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করা যায় আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তোমার ওয়ারিসগণকে গরীব ও মানুষের নিকট হাত পাতবে এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে মালদার রেখে যাওয়া উত্তম এবং তুমি নেকীর উদ্দেশ্যে যা ব্যয় করবে, তা সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুমি যে লোকমা তুলে দাও সেটিও সাদাকার অন্তর্ভুক্ত। অতি শীঘ্রই আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তোমার দ্বারা কিছু সংখ্যক লোক উপকৃত ও কিছু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে সময় তার একটি মাত্র মেয়ে ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৪২।]
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা করে তাহলে তার রাজনৈতিক জীবনটাও ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে তার এই রাষ্ট্র পরিচালনা করাটাও একটি ইবাদাত। বরং এটি আরো বড় ইবাদাত। কেননা যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তখন সমাজের সর্বত্র আল্লাহর বিধান কায়েম হবে। সকল মানুষ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার পরিবেশ পাবে। এতে করে ইবাদাত করা সকলের জন্য সহজসাধ্য হবে। নতুবা রাষ্ট্র যদি ইসলামের আওতায় না আসে বরং কুফরী নীতি-আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাহলে কোন ব্যক্তি যতই চেষ্টা করুক না কেন সে ইসলামের সকল বিধান পালন করতে সক্ষম হবে না। এমনকি আল্লাহর অনেক ফরয বিধানও সে পালন করতে পারবে না।
এজন্য যেসব ইমাম বা নেতা ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন নবী ﷺ তাদের বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা হাশরের ময়দানে যে সাত দল ব্যক্তিকে তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই তারা অন্তর্ভুক্ত হবেন। নিচের হাদীসটিতে এর প্রমাণ রয়েছে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِىْ ظِلِّهٖ يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهٗ اَ لْاِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَاَ فِيْ عِبَادَةِ رَبِّهٖ وَرَجُلٌ قَلْبُهٗ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَاَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ اِنِّيْ اَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ اَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهٗ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهٗ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫০৫; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; ইবনে খুযাইমা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৫।]
সুতরাং আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সকল বিধান পালন করতে হবে। কিছু বিধান পালন করলাম এবং কিছু বিধানকে ছেড়ে দিলাম- এটা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি এমনটি করবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও আখেরাতে শাস্তির বিধান রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ﴾
তবে তোমরা কি গ্রন্থের (কুরআনের) কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে অমনোযোগী নন। (সূরা বাকারা- ৮৫)
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
যারা মানবজীবনের কিছু বিষয়কে দ্বীনের বাহিরে রাখেন বা মনে করেন যে, এ ব্যাপারে ইসলামের কোন দিকনিদের্শনা নেই, তারা কি কুরআনের এ আয়াতটিকে মিথ্যা মনে করেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা কখনো মিথ্যা বলেন না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا﴾
আল্লাহর কথার চেয়ে সত্য কথা আর কার হতে পারে? (সূরা নিসা- ৮৭)
সুতরাং মানব জীবনের ব্যক্তিগত জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল দিক ও বিভাগ দ্বীনের আওতাভুক্ত। একজন মানুষ যেমন তার ব্যক্তি জীবনকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলবে অনুরূপভাবে তার পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় কাজকর্মকেও ইসলামের আওতায় নিয়ে আসবে। সমাজের সর্বত্র আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রমই ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
﴿اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾
আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে (নিবেদিত)। (সূরা আন‘আম- ১৬২, ১৬৩)
জীবনের সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে করলে তা ইবাদাতে পরিণত হয়ে যায়।
খানা খাওয়াও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে খাবার খায় যে, সে এ খাবার খেয়ে শক্তি অর্জন করে আল্লাহ দ্বীন পালন করবে, তাহলে তার এ খাওয়াটাও ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা সুস্থ থাকার জন্য খাবার গ্রহণ করাও আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوْا لِلّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ যা দান করেছি সেই পবিত্র বস্তুসমূহ হতে খাও এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত করে থাক। (সূরা বাক্বারা- ১৭২)
জ্ঞানার্জন করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে জ্ঞানার্জন করে যে, আমি ইসলাম সম্পর্কে জেনে নিজে আমল করব এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেব, তাহলে এটা তার জন্য ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَآئِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوْا فِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ اِذَا رَجَعُوْاۤ اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ﴾
তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করত। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে আসত তখন তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করত, যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা- ১২২)
বিয়ে-শাদী করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে বিয়ে-শাদি করে যে, এতে আমার চরিত্র ও সতিত্বের হেফাযত হবে। পারিবারিক সুখ-শান্তি অর্জিত হবে। তাহলে বৈবাহিক জীবনটা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদেরকে বিবাহ দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَنْكِحُوا الْاَيَامٰى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَاِمَآئِكُمْؕ اِنْ يَّكُوْنُوْا فُقَرَآءَ يُغْنِهِمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهٖؕ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ ﴾
তোমাদের মধ্যে যাদের স্ত্রী নেই তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। যদি তারা অভাবী হয়, (তাহলে) আল্লাহ (অচিরেই) তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ। (সূরা নূর- ৩২)
উপার্জন করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি এ নিয়তে উপার্জন করে যে, আমি উপার্জন করব নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এবং দান-সাদাকা করে সওয়াব অর্জনের জন্য। আমি চাকুরী করব কেবল বেতন পাওয়ার জন্য নয় বরং উদ্দেশ্য থাকবে- আমার এ কাজ দ্বারা জনগণ উপকৃত হবে। জ্ঞান শিক্ষা দেব এ উদ্দেশ্যে যে, এতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করবে, ফলে তারা ইহকালীন ও পরকালীন জগতে লাভবান হতে পারবে এবং অন্যকে শিক্ষা দানের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। কোন ব্যক্তি যদি সৎভাবে উপার্জন করে এবং পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয় করে তবে এটার জন্য সে আল্লাহর কাছে সওয়াব পাবে। বান্দা স্ত্রীর মুখে যে লোকমা উঠিয়ে দেয় তার জন্যও সে পুরস্কার পায়, যা নবী ﷺ এর নিচের হাদীস থেকে জানা যায়।
عَنْ سَعْدِ بْنِ اَبِي وَقَّاصٍ قَالَ جَاءَ النَّبِيُّ يَعُوْدُنِيْ وَاَنَا بِمَكَّةَ وَهُوَ يَكْرَهُ اَنْ يَمُوْتَ بِالْاَرْضِ الَّتِيْ هَاجَرَ مِنْهَا قَالَ يَرْحَمُ اللهُ ابْنَ عَفْرَاءَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ أُوْصِيْ بِمَالِيْ كُلِّهٖ قَالَ : لَا، قُلْتُ فَالشَّطْرُ قَالَ : لَا، قُلْتُ الثُّلُثُ قَالَ فَالثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ اِنَّكَ اَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ اَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ اَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ فِيْ اَيْدِيْهِمْ وَاِنَّكَ مَهْمَا اَنْفَقْتَ مِنْ نَفَقَةٍ فَاِنَّهَا صَدَقَةٌ حَتَّى اللُّقْمَةُ الَّتِيْ تَرْفَعُهَا اِلٰى فِي امْرَاَتِكَ وَعَسَى اللهُ اَنْ يَرْفَعَكَ فَيَنْتَفِعَ بِكَ نَاسٌ وَيُضَرَّ بِكَ اٰخَرُوْنَ وَلَمْ يَكُنْ لَهٗ يَوْمَئِذٍ اِلَّا ابْنَةٌ
সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মক্কায় রোগাক্রান্ত থাকাকালীন নবী ﷺ আমাকে দেখতে আসলেন। আর সা‘দ (রাঃ) এমন জায়গায় ইন্তিকাল করতে অপছন্দ করতেন, যে স্থান হতে তিনি হিজরত করেছেন। তিনি বললেন, ইবনে আফরার উপর আল্লাহ রহম করুন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সমুদয় মালের অসীয়ত করব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করা যায় আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তোমার ওয়ারিসগণকে গরীব ও মানুষের নিকট হাত পাতবে এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে মালদার রেখে যাওয়া উত্তম এবং তুমি নেকীর উদ্দেশ্যে যা ব্যয় করবে, তা সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুমি যে লোকমা তুলে দাও সেটিও সাদাকার অন্তর্ভুক্ত। অতি শীঘ্রই আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। তোমার দ্বারা কিছু সংখ্যক লোক উপকৃত ও কিছু সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে সময় তার একটি মাত্র মেয়ে ছিল। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৪২।]
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করাও ইবাদাত :
কোন ব্যক্তি যদি বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ যে পদ্ধতিতে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ঠিক সে নিয়মে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা করে তাহলে তার রাজনৈতিক জীবনটাও ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে তার এই রাষ্ট্র পরিচালনা করাটাও একটি ইবাদাত। বরং এটি আরো বড় ইবাদাত। কেননা যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তখন সমাজের সর্বত্র আল্লাহর বিধান কায়েম হবে। সকল মানুষ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার পরিবেশ পাবে। এতে করে ইবাদাত করা সকলের জন্য সহজসাধ্য হবে। নতুবা রাষ্ট্র যদি ইসলামের আওতায় না আসে বরং কুফরী নীতি-আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হয় তাহলে কোন ব্যক্তি যতই চেষ্টা করুক না কেন সে ইসলামের সকল বিধান পালন করতে সক্ষম হবে না। এমনকি আল্লাহর অনেক ফরয বিধানও সে পালন করতে পারবে না।
এজন্য যেসব ইমাম বা নেতা ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন নবী ﷺ তাদের বিরাট পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা হাশরের ময়দানে যে সাত দল ব্যক্তিকে তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন তাদের মধ্যে প্রথম সারিতেই তারা অন্তর্ভুক্ত হবেন। নিচের হাদীসটিতে এর প্রমাণ রয়েছে।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِىْ ظِلِّهٖ يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلَّا ظِلُّهٗ اَ لْاِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَاَ فِيْ عِبَادَةِ رَبِّهٖ وَرَجُلٌ قَلْبُهٗ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَاَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ اِنِّيْ اَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ اَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهٗ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهٗ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না :
১। ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২। সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়।
৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। যখন সে বেরিয়ে আসে তখন পুনরায় মসজিদে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
৪। সেই দুব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একত্রিত হয় এবং পৃথক হয়।
৫। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখে অশ্রু বিসর্জন দেয় অর্থাৎ কান্না করে।
৬। সেই ব্যক্তি যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (খারাপ কাজের জন্য) আহবান করে; কিন্তু সে বলে ‘‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’’।
৭। সেই ব্যক্তি যে গোপনে দান করে এমনকি তার বাম হাত জানে না তার ডান হাত কী দান করেছে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/৩৫০৫; সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; ইবনে খুযাইমা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৫।]
সুতরাং আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সকল বিধান পালন করতে হবে। কিছু বিধান পালন করলাম এবং কিছু বিধানকে ছেড়ে দিলাম- এটা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না। কারণ যে ব্যক্তি এমনটি করবে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা ও আখেরাতে শাস্তির বিধান রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَآءُ مَنْ يَّفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ اِلَّا خِزْيٌ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ اِلٰۤى اَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ﴾
তবে তোমরা কি গ্রন্থের (কুরআনের) কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? অতএব তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে তাদের পার্থিব জীবনে দুর্গতি ব্যতীত কিছুই নেই এবং কিয়ামত দিবসে তারা কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে অমনোযোগী নন। (সূরা বাকারা- ৮৫)
ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে-
১. اَ لْاِيْمَانُ (আল ঈমান) তথা ঈমানের সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
২. اَ لْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস) তথা ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা।
৩. اِتِّبَاعُ السُّنُّةِ (ইত্তিবাউস সুন্নাহ) তথা রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে এসেছে তার অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদাত করা।
১. اَ لْاِيْمَانُ (আল ঈমান)
ঈমান ব্যতিত কোন ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা আমল কবুল হওয়ার জন্য ঈমানকে শর্তারোপ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ﴾
তাদের দান গ্রহণে বাধা কেবল এই ছিল যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করত। (সূরা তওবা- ৫৪)
যদি অমুসলিমের ক্ষেত্রে তাদের দানের মতো ইবাদাতও কবুল না হয়, তাহলে অন্যান্য ইবাদাত কীভাবে কবুল হবে? আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
সুতরাং বুঝা গেল যে, মুমিন ছাড়া অন্য কারো সৎকর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যক্তি যতই সৎকর্ম করুন না কেন যদি তার মধ্যে সঠিক ঈমান না থাকে, তবে তার সকল আমল বা ইবাদাত পরিত্যাজ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’।
২. اَ لْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস)
اَلْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস) হচ্ছে, সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং নিয়তকে গাইরুল্লাহ থেকে পবিত্র করে ইবাদাতকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদন করা এবং তারই সামনে বিনয় প্রকাশ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْن﴾
অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
﴿وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ﴾
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
﴿اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ﴾
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
﴿قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ﴾
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি। (সূরা যুমার- ১১)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
﴿قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ﴾
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
ব্যক্তির নিয়তের উপরই সকল আমলের সওয়াব নির্ভরশীল :
عَنْ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَاِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوٰى ، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيْبُهَا ، اَوْ اِلَى امْرَاَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهٗ اِلٰى مَا هَاجَرَ اِلَيْهِ
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি কেবলমাত্র তা-ই পায়, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত হবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের জন্য তার হিজরত আল্লাহ এবং রাসূলের জন্যই হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া অর্জনের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত সেদিকেই হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/১; সহীহ মুসলিম, হা/ ; আবু দাউদ, হা/২২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২২৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮৪।]
যে ব্যক্তি ইখলাস নিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করবে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ فَارَقَ الدُّنْيَا عَلَى الْاِخْلَاصِ لِلّٰهِ وَحْدَهٗ ، وَعِبَادَتِهٖ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، وَاِقَامِ الصَّلَاةِ ، وَاِيْتَاءِ الزَّكَاةِ ، مَاتَ وَاللهُ عَنْهُ رَاضٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যে, সে ইখলাস অর্জন করেছে, আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে শরীক করেনি, সালাত কায়েম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে সে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উপর মৃত্যুবরণ করবে। [ইবনে মাজাহ, হা/৭০।]
আল্লাহ মানুষের আকৃতি দেখেন না বরং তার অন্তর দেখেন :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ اِلٰى صُوَرِكُمْ وَلَا اَمْوَالِكُمْ، وَلٰكِنْ اِنَّمَا يَنْظُرُ اِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা বা তোমাদের সম্পদের দিকে লক্ষ্য করবেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও তোমাদের আমলের দিকে লক্ষ্য করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৪; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাওয়াহা, হা/৩৭৯।]
যার নিয়তে গলদ থাকবে হাশরের ময়দানে তা প্রকাশ পেয়ে যাবে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهٖ وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِهٖ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মের সুনামের জন্য লোকসমাজে ইচ্ছাপূর্বক প্রচার করে বেড়ায়, আল্লাহ তা‘আলাও (কিয়ামতের দিন) তার কৃতকর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদেরকে জানিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে কোন সৎকাজ করবে, আল্লাহও (কিয়ামতের দিন) তার প্রকৃত উদ্দেশের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৬৭; সুনানুল কুবরা, হা/১১৬৩৬।]
ইখলাছবিহীন ইবাদাত আল্লাহ গ্রহণ করেন না :
عَنْ اَبِىْ اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِىِّ فَقَالَ اَرَاَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الْاَجْرَ وَالذِّكْرَ مَا لَهٗ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا شَىْءَ لَهٗ . فَاَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُوْلُ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ : لَا شَىْءَ لَهٗ . ثُمَّ قَالَ : اِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ اِلَّا مَا كَانَ لَهٗ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهٖ وَجْهُهٗ
আবু উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সওয়াব এবং মানুষের কাছে সুনাম অর্জনের জন্য যুদ্ধ করেছে। তার প্রাপ্য কী? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে কিছুই পাবে না। লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তিনবার একই প্রশ্ন করলে তিনি তিনবারই বললেন, সে কিছুই পাবে না। অতঃপর রাসূলূল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ কেবল সেই আমলই কবুল করেন, যা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্যই করা হয় এবং এর মাধ্যমে শুধু তাঁর সন্তুষ্টিই কামনা করা হয়। [সুনান নাসায়ী, হা/৩১৪০; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/৫২।]
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ تَفَرَّقَ النَّاسُ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ لَهٗ نَاتِلُ أَهْلِ الشَّامِ أَيُّهَا الشَّيْخُ حَدِّثْنَا حَدِيثًا سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضٰى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيْكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ حَتّٰى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهٗ وَقَرَأَ الْقُرْاٰنَ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهٗ وَقَرَأْتُ فِيْكَ الْقُرْاٰنَ . قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ . وَقَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ حَتّٰى أُلْقِيَ فِي النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهٖ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيْلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيْهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ
সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহ.) বললেন, হে শাইখ! আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একটি হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! (শুনাব)। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি, যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামতরাজির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষপর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি এ জন্যই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর; আর (দুনিয়াতে) তা বলাও হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত বড় নিয়ামত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এ জন্য যে, যাতে লোকেরা তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যে, যাতে লোকে বলে- তুমি একজন ক্বারী; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সচ্ছলতা এবং সম্পদ দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের কথা বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এসব নিয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছ? জবাবে সে বলবে, যেসব খাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সেসব খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি বরং এ জন্য তা করেছিলে, যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫০৩২।]
যে ব্যক্তি ইখলাছ নিয়ে কাজ করবে সে প্রশান্তি লাভ করবে :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : مَنْ كَانَتْ نِيَّتُهٗ طَلَبُ الْاٰخِرَةِ ، جَعَلَ اللهُ غِنَاهُ فِيْ قَلْبِهٖ ، وَجَمَعَ لَهٗ شَمْلَهٗ ، وَاَتَتْهُ الدُّنْيَا ، وَهِيَ رَاغِمَةٌ ، وَمَنْ كَانَتْ نِيَّتُهٗ طَلَبُ الدُّنْيَا ، جَعَلَ اللهُ الْفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ، وَشَتَّتَ عَلَيْهِ اَمْرَهٗ ، وَلَا يَأْتِيْهِ مِنْهَا اِلَّا مَا كُتِبَ لَهٗ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যার উদ্দেশ্য হয় পরকালের সওয়াব অর্জন করা আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার জন্য সবকিছু একত্র করে দেন। তখন দুনিয়া তার কাছে আসে অথচ সে দুনিয়ার প্রতি বিমুখ থাকে। আর যার উদ্দেশ্য হয় দুনিয়া অর্জন করা আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার কাজকর্মকে ভিন্নমুখী করে দেন। কিন্তু দুনিয়া থেকে সে ততটুকুই অর্জন করতে পারে যতটুকু তার জন্য বরাদ্ধ ছিল। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৪৭৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৪২।]
তাফসীরে কুরতুবীতে আছে,
وَسُئِلَ الْحَسَنُ عَنِ الْاِخْلَاصِ وَالرِّيَاءِ فَقَالَ : مِنَ الْاِخْلَاصِ اَنْ تُحِبَّ اَنْ تَكْتُمَ حَسَنَاتَكَ وَلَا تُحِبُّ اَنْ تَكْتُمَ سَيِّئَاتَكَ، فَاِنْ اَظْهَرَ اللهُ عَلَيْكَ حَسَنَاتَكَ تَقُوْلُ هٰذَا مِنْ فَضْلِكَ وَاِحْسَانِكَ، وَلَيْسَ هٰذَا مِنْ فِعْلِيْ وَلَا مِنْ صَنِيْعِيْ
একদা হাসান বসরী (রহ.) কে ইখলাস ও রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, ইখলাস হচ্ছে ভালো কাজের গোপনীয়তা পছন্দ করা এবং মন্দ কাজের গোপনীয়তা পছন্দ না করা। এরপর যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার আমল মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেন, তবে তুমি এ কথা বলো, হে আল্লাহ! এটা আপনার অনুগ্রহ ও কৃপা; আমার কর্ম ও প্রচেষ্টার ফল নয়। [তাফসীরে কুরতুবী, সূরা কাহফের ১১০নং আয়াতের তাফসীর।]
যে আমল খাঁটিভাবে আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে এবং লোকমুখে সুখ্যাতি ও প্রশংসার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না, সে আমল যদি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করে লোকের মাঝে প্রসিদ্ধ করে দেন এবং মানুষের মুখ দিয়ে প্রশংসা করিয়ে দেন, তবে এর সাথে রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
عَنْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ اَرَاَيْتَ الرَّجُلَ يَعْمَلُ الْعَمَلَ مِنَ الْخَيْرِ وَيَحْمَدُهُ النَّاسُ عَلَيْهِ قَالَ : تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُؤْمِنِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আবেদন করা হলো, ঐ লোক সম্পর্কে আপনার কী মতামত, যে সৎ আমল করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? তিনি বললেন, এটা মুমিনের অগ্রীম সুসংবাদ। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৬।]
৩. اِتِّبَاعُ السُّنُّةِ (ইত্তেবাউস সুন্নাহ)
ইত্তিবাউস সুন্নাহ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণে ইবাদাত করা। এর অর্থ নবী ﷺ যে কাজ যেভাবে করেছেন সে কাজ সেই নিয়মে করা, কোন প্রকার কমবেশি না করা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনা বাদ দিয়ে অন্য কারো নির্দেশনা অনুযায়ী না করা।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে নবী ﷺ এর আনুগত্য করতে হবে :
﴿قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর ভালোবাসা পাওয়াকে নবী ﷺ এর আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে, আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করবে এবং জান্নাতে যেতে চাইবে তাকে অবশ্যই নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে।
নবী ﷺ এর আদেশ-নিষেধ পালন করা উম্মতের জন্য অত্যাবশ্যক :
﴿وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বক্তৃতাকালে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা অমুক অমুক ফ্যাশনকারিণী মহিলাকে লানত করেছেন।’’ এটা শুনে এক মহিলা বলল, এ কথা আপনি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব পড়ে থাকলে এ কথা অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا পড়েছ? সে বলল, হ্যাঁ, এ আয়াত তো আমি পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরূপ কাজে লিপ্ত নারীদের উপর আল্লাহ তা‘আলা লানত করেছেন। তখন মাহিলাটি বলল, এখন আমি বুঝতে পারলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬, মুসলিম হা/৫৬৯৫।]
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : دَعُوْنِيْ مَا تَرَكْتُكُمْ اِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِسُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلٰى اَنْبِيَائِهِمْ فَاِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَاجْتَنِبُوْهُ ، وَاِذَا اَمَرْتُكُمْ بِاَمْرٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমাকে প্রশ্ন করা ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে কিছু বলি (অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া প্রশ্ন করো না)। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা অধিক প্রশ্ন এবং তাদের নবীদের সাথে মতভেদ করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই যখন আমি কোন বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তখন তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে। আর যখন কোন বিষয়ে আদেশ করি, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের শক্তি সামর্থ্য থাকবে তা করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩২১।]
নবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ না করলে আমল বাতিল হয়ে যাবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনা অনুযায়ী।
নবী ﷺ এর আনুগত্য না করা মানে তাকে অস্বীকার করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : كُلُّ أُمَّتِيْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ، اِلَّا مَنْ اَبٰى . قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَنْ يَأْبٰى . قَالَ : مَنْ اَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ اَبٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে অস্বীকার করবে। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার আনুগত্য না করে অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৮০।]
১. اَ لْاِيْمَانُ (আল ঈমান) তথা ঈমানের সকল বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
২. اَ لْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস) তথা ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা।
৩. اِتِّبَاعُ السُّنُّةِ (ইত্তিবাউস সুন্নাহ) তথা রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে এসেছে তার অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদাত করা।
১. اَ لْاِيْمَانُ (আল ঈমান)
ঈমান ব্যতিত কোন ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা আমল কবুল হওয়ার জন্য ঈমানকে শর্তারোপ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ﴾
তাদের দান গ্রহণে বাধা কেবল এই ছিল যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করত। (সূরা তওবা- ৫৪)
যদি অমুসলিমের ক্ষেত্রে তাদের দানের মতো ইবাদাতও কবুল না হয়, তাহলে অন্যান্য ইবাদাত কীভাবে কবুল হবে? আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةًۚ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ اَجْرَهُمْ بِاَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে ব্যক্তি সৎকর্ম করবে, অবশ্যই তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল- ৯৭)
সুতরাং বুঝা গেল যে, মুমিন ছাড়া অন্য কারো সৎকর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যক্তি যতই সৎকর্ম করুন না কেন যদি তার মধ্যে সঠিক ঈমান না থাকে, তবে তার সকল আমল বা ইবাদাত পরিত্যাজ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗؗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
আর যে ব্যক্তি ঈমান প্রত্যাখ্যান করবে, তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়েদা- ৫)
ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আমাদের বই ‘‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়’’।
২. اَ لْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস)
اَلْاِخْلَاصُ (আল ইখলাস) হচ্ছে, সকল ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং নিয়তকে গাইরুল্লাহ থেকে পবিত্র করে ইবাদাতকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদন করা এবং তারই সামনে বিনয় প্রকাশ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَادْعُوْهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْن﴾
অতএব তোমরা তাঁর ইবাদাতে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকেই আহবান করো। (সূরা মু’মিন- ৬৫)
﴿وَمَاۤ اُمِرُوْاۤ اِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَۚ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ﴾
তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই করা হয়েছে যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (সূরা বায়্যিনাহ- ৫)
﴿اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ﴾
আমি আপনার প্রতি এ কিতাব সত্যসহ নাযিল করেছি। অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদাত করুন। (সূরা যুমার- ২)
﴿قُلْ اِنِّۤيْ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّيْنَ﴾
বলো, অবশ্যই আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করি। (সূরা যুমার- ১১)
ইবাদাতের মধ্যে শিরক করা যাবে না :
﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا﴾
যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহফ- ১১০)
﴿قُلْ اِنَّمَاۤ اُمِرْتُ اَنْ اَعْبُدَ اللهَ وَلَاۤ اُشْرِكَ بِهٖ﴾
বলো, নিশ্চয় আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি। (সূরা রা‘দ- ৩৬)
আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শুধু তাঁরই বিধিবিধান ও আদেশ-নিষেধ পালন করতে হবে। কারণ নির্ভেজাল আনুগত্য পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া একনিষ্ঠভাবে অন্য কারো দাসত্ব করে, তাহলে সে ভ্রান্ত কাজ করে। অনুরূপভাবে সে যদি আল্লাহর দাসত্বের সাথে সাথে অন্য কারো দাসত্বের সংমিশ্রণ ঘটায়, তাহলে সেটাও সরাসরি ন্যায় ও সত্যের পরিপন্থী হিসেবে গণ্য হবে।
ব্যক্তির নিয়তের উপরই সকল আমলের সওয়াব নির্ভরশীল :
عَنْ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَاِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوٰى ، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيْبُهَا ، اَوْ اِلَى امْرَاَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهٗ اِلٰى مَا هَاجَرَ اِلَيْهِ
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি কেবলমাত্র তা-ই পায়, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং যার হিজরত হবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের জন্য তার হিজরত আল্লাহ এবং রাসূলের জন্যই হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া অর্জনের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিয়ে করার জন্য, তার হিজরত সেদিকেই হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/১; সহীহ মুসলিম, হা/ ; আবু দাউদ, হা/২২০৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২২৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৮৮; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/১৮৪।]
যে ব্যক্তি ইখলাস নিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করবে আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ فَارَقَ الدُّنْيَا عَلَى الْاِخْلَاصِ لِلّٰهِ وَحْدَهٗ ، وَعِبَادَتِهٖ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، وَاِقَامِ الصَّلَاةِ ، وَاِيْتَاءِ الزَّكَاةِ ، مَاتَ وَاللهُ عَنْهُ رَاضٍ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা যাবে যে, সে ইখলাস অর্জন করেছে, আল্লাহর ইবাদাতে কাউকে শরীক করেনি, সালাত কায়েম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে সে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উপর মৃত্যুবরণ করবে। [ইবনে মাজাহ, হা/৭০।]
আল্লাহ মানুষের আকৃতি দেখেন না বরং তার অন্তর দেখেন :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ اِلٰى صُوَرِكُمْ وَلَا اَمْوَالِكُمْ، وَلٰكِنْ اِنَّمَا يَنْظُرُ اِلٰى قُلُوْبِكُمْ وَاَعْمَالِكُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা বা তোমাদের সম্পদের দিকে লক্ষ্য করবেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও তোমাদের আমলের দিকে লক্ষ্য করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৭০৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৮১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৯৪; মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাওয়াহা, হা/৩৭৯।]
যার নিয়তে গলদ থাকবে হাশরের ময়দানে তা প্রকাশ পেয়ে যাবে :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهٖ وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِهٖ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মের সুনামের জন্য লোকসমাজে ইচ্ছাপূর্বক প্রচার করে বেড়ায়, আল্লাহ তা‘আলাও (কিয়ামতের দিন) তার কৃতকর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদেরকে জানিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে কোন সৎকাজ করবে, আল্লাহও (কিয়ামতের দিন) তার প্রকৃত উদ্দেশের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৬৭; সুনানুল কুবরা, হা/১১৬৩৬।]
ইখলাছবিহীন ইবাদাত আল্লাহ গ্রহণ করেন না :
عَنْ اَبِىْ اُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ اِلَى النَّبِىِّ فَقَالَ اَرَاَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الْاَجْرَ وَالذِّكْرَ مَا لَهٗ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا شَىْءَ لَهٗ . فَاَعَادَهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ يَقُوْلُ لَهٗ رَسُوْلُ اللهِ : لَا شَىْءَ لَهٗ . ثُمَّ قَالَ : اِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ اِلَّا مَا كَانَ لَهٗ خَالِصًا وَابْتُغِىَ بِهٖ وَجْهُهٗ
আবু উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সওয়াব এবং মানুষের কাছে সুনাম অর্জনের জন্য যুদ্ধ করেছে। তার প্রাপ্য কী? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সে কিছুই পাবে না। লোকটি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে তিনবার একই প্রশ্ন করলে তিনি তিনবারই বললেন, সে কিছুই পাবে না। অতঃপর রাসূলূল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ কেবল সেই আমলই কবুল করেন, যা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্যই করা হয় এবং এর মাধ্যমে শুধু তাঁর সন্তুষ্টিই কামনা করা হয়। [সুনান নাসায়ী, হা/৩১৪০; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/৫২।]
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ تَفَرَّقَ النَّاسُ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ فَقَالَ لَهٗ نَاتِلُ أَهْلِ الشَّامِ أَيُّهَا الشَّيْخُ حَدِّثْنَا حَدِيثًا سَمِعْتَهٗ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ نَعَمْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضٰى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ قَاتَلْتُ فِيْكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ . قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ حَتّٰى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهٗ وَقَرَأَ الْقُرْاٰنَ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهٗ وَقَرَأْتُ فِيْكَ الْقُرْاٰنَ . قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ . وَقَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ حَتّٰى أُلْقِيَ فِي النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهٖ فَأُتِيَ بِهٖ فَعَرَّفَهٗ نِعَمَهٗ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيْهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيْلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيْهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيْهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلٰكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ . فَقَدْ قِيْلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهٖ فَسُحِبَ عَلٰى وَجْهِهٖ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ
সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রহ.) বললেন, হে শাইখ! আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একটি হাদীস আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! (শুনাব)। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তি, যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামতরাজির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি তোমারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষপর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। বরং তুমি এ জন্যই যুদ্ধ করেছিলে যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর; আর (দুনিয়াতে) তা বলাও হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে যে জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত বড় নিয়ামত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এ জন্য যে, যাতে লোকেরা তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে যে, যাতে লোকে বলে- তুমি একজন ক্বারী; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সচ্ছলতা এবং সম্পদ দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের কথা বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এসব নিয়ামতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছ? জবাবে সে বলবে, যেসব খাতে সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ কর, আমি সেসব খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি বরং এ জন্য তা করেছিলে, যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৫০৩২।]
যে ব্যক্তি ইখলাছ নিয়ে কাজ করবে সে প্রশান্তি লাভ করবে :
عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : مَنْ كَانَتْ نِيَّتُهٗ طَلَبُ الْاٰخِرَةِ ، جَعَلَ اللهُ غِنَاهُ فِيْ قَلْبِهٖ ، وَجَمَعَ لَهٗ شَمْلَهٗ ، وَاَتَتْهُ الدُّنْيَا ، وَهِيَ رَاغِمَةٌ ، وَمَنْ كَانَتْ نِيَّتُهٗ طَلَبُ الدُّنْيَا ، جَعَلَ اللهُ الْفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ ، وَشَتَّتَ عَلَيْهِ اَمْرَهٗ ، وَلَا يَأْتِيْهِ مِنْهَا اِلَّا مَا كُتِبَ لَهٗ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যার উদ্দেশ্য হয় পরকালের সওয়াব অর্জন করা আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে অমুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার জন্য সবকিছু একত্র করে দেন। তখন দুনিয়া তার কাছে আসে অথচ সে দুনিয়ার প্রতি বিমুখ থাকে। আর যার উদ্দেশ্য হয় দুনিয়া অর্জন করা আল্লাহ তাকে মুখাপেক্ষী করে দেন এবং তার কাজকর্মকে ভিন্নমুখী করে দেন। কিন্তু দুনিয়া থেকে সে ততটুকুই অর্জন করতে পারে যতটুকু তার জন্য বরাদ্ধ ছিল। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৪৭৫৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৪২।]
তাফসীরে কুরতুবীতে আছে,
وَسُئِلَ الْحَسَنُ عَنِ الْاِخْلَاصِ وَالرِّيَاءِ فَقَالَ : مِنَ الْاِخْلَاصِ اَنْ تُحِبَّ اَنْ تَكْتُمَ حَسَنَاتَكَ وَلَا تُحِبُّ اَنْ تَكْتُمَ سَيِّئَاتَكَ، فَاِنْ اَظْهَرَ اللهُ عَلَيْكَ حَسَنَاتَكَ تَقُوْلُ هٰذَا مِنْ فَضْلِكَ وَاِحْسَانِكَ، وَلَيْسَ هٰذَا مِنْ فِعْلِيْ وَلَا مِنْ صَنِيْعِيْ
একদা হাসান বসরী (রহ.) কে ইখলাস ও রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, ইখলাস হচ্ছে ভালো কাজের গোপনীয়তা পছন্দ করা এবং মন্দ কাজের গোপনীয়তা পছন্দ না করা। এরপর যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার আমল মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেন, তবে তুমি এ কথা বলো, হে আল্লাহ! এটা আপনার অনুগ্রহ ও কৃপা; আমার কর্ম ও প্রচেষ্টার ফল নয়। [তাফসীরে কুরতুবী, সূরা কাহফের ১১০নং আয়াতের তাফসীর।]
যে আমল খাঁটিভাবে আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে এবং লোকমুখে সুখ্যাতি ও প্রশংসার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না, সে আমল যদি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করে লোকের মাঝে প্রসিদ্ধ করে দেন এবং মানুষের মুখ দিয়ে প্রশংসা করিয়ে দেন, তবে এর সাথে রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
عَنْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قِيْلَ لِرَسُوْلِ اللهِ اَرَاَيْتَ الرَّجُلَ يَعْمَلُ الْعَمَلَ مِنَ الْخَيْرِ وَيَحْمَدُهُ النَّاسُ عَلَيْهِ قَالَ : تِلْكَ عَاجِلُ بُشْرَى الْمُؤْمِنِ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আবেদন করা হলো, ঐ লোক সম্পর্কে আপনার কী মতামত, যে সৎ আমল করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? তিনি বললেন, এটা মুমিনের অগ্রীম সুসংবাদ। [সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৪১৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৬৬।]
৩. اِتِّبَاعُ السُّنُّةِ (ইত্তেবাউস সুন্নাহ)
ইত্তিবাউস সুন্নাহ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শরীয়াত নিয়ে এসেছেন তার অনুসরণে ইবাদাত করা। এর অর্থ নবী ﷺ যে কাজ যেভাবে করেছেন সে কাজ সেই নিয়মে করা, কোন প্রকার কমবেশি না করা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনা বাদ দিয়ে অন্য কারো নির্দেশনা অনুযায়ী না করা।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে নবী ﷺ এর আনুগত্য করতে হবে :
﴿قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
এ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর ভালোবাসা পাওয়াকে নবী ﷺ এর আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে, আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করবে এবং জান্নাতে যেতে চাইবে তাকে অবশ্যই নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ করতে হবে।
নবী ﷺ এর আদেশ-নিষেধ পালন করা উম্মতের জন্য অত্যাবশ্যক :
﴿وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ﴾
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) একবার বক্তৃতাকালে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা অমুক অমুক ফ্যাশনকারিণী মহিলাকে লানত করেছেন।’’ এটা শুনে এক মহিলা বলল, এ কথা আপনি কোথায় পেয়েছেন? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব পড়ে থাকলে এ কথা অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا পড়েছ? সে বলল, হ্যাঁ, এ আয়াত তো আমি পড়েছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, এরূপ কাজে লিপ্ত নারীদের উপর আল্লাহ তা‘আলা লানত করেছেন। তখন মাহিলাটি বলল, এখন আমি বুঝতে পারলাম। [সহীহ বুখারী, হা/৪৮৮৬, মুসলিম হা/৫৬৯৫।]
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : دَعُوْنِيْ مَا تَرَكْتُكُمْ اِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِسُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلٰى اَنْبِيَائِهِمْ فَاِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَاجْتَنِبُوْهُ ، وَاِذَا اَمَرْتُكُمْ بِاَمْرٍ فَأْتُوْا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমাকে প্রশ্ন করা ছেড়ে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে কিছু বলি (অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া প্রশ্ন করো না)। কেননা, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা অধিক প্রশ্ন এবং তাদের নবীদের সাথে মতভেদ করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই যখন আমি কোন বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তখন তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে। আর যখন কোন বিষয়ে আদেশ করি, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের শক্তি সামর্থ্য থাকবে তা করবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৩৩২১।]
নবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ না করলে আমল বাতিল হয়ে যাবে :
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনা অনুযায়ী।
নবী ﷺ এর আনুগত্য না করা মানে তাকে অস্বীকার করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : كُلُّ أُمَّتِيْ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ، اِلَّا مَنْ اَبٰى . قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَنْ يَأْبٰى . قَالَ : مَنْ اَطَاعَنِيْ دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ اَبٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু ঐ ব্যক্তি ছাড়া যে অস্বীকার করবে। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার আনুগত্য না করে অবাধ্য হবে সেই অস্বীকারকারী। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৮০।]
সুন্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, اَلطَّرِيْقُ পথ, রাস্তা, নির্দেশনা, নিয়ম ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا﴾
এটাই আল্লাহর সুন্নাত, যা পূর্ব থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে। আর আল্লাহর এ সুন্নাতে কখনো কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না। (সূরা ফাতহ- ২২, ২৩)
আল্লামা মুহাম্মাদ বশীর সাহসোয়ানীর ভাষায় সুন্নাত হলো :
اَلطَّرِيْقَةُ الْمَخْصُوْصَةُ الْمَسْلُوْكَةُ الْمُتَّبَعَةُ بِالْفِعْلِ فِىْ اَمْرِ الَّذِيْنَ فِعْلًا وَتَرْكًا مِّنْ عَهْدِ النَّبِىِّ
সুন্নাত হচ্ছে সেই বিশেষ পথ, পন্থা ও পদ্ধতি, যা নবী করীম ﷺ এর সময় থেকেই দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোন কাজ করার বা না করার দিক দিয়ে বাস্তবভাবে অনুসরণ করা হয়।
এ হিসেবে সুন্নাত হলো সেই মূল আদর্শ, যা আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ব-মানবের জন্য নাযিল করেছেন এবং যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে তাঁর বাস্তব জীবনে অনুসরণ করেছেন। কেননা নবী করীম ﷺ যা বাস্তবভাবে অনুসরণ করেছেন, তার উৎস হলো ওহী। ওহীর সূত্রে নাযিল হওয়া আদর্শই রাসূলুল্লাহ ﷺ কাজে ও কর্মে অনুসরণ করেছেন। এটাই হচ্ছে সুন্নাত। এ সুন্নাতেরই অপর নাম হচ্ছে ইসলাম।
কুরআন মাজীদে এ সুন্নাতকেই সিরাতুল মুস্তাকীম বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
এ আয়াত থেকে সিরাতুল মুস্তাকীম বলতে সেই জিনিসকেই বুঝানো হয়েছে, যা বুঝা যায় সুন্নাত শব্দ থেকে।
ইমাম শাতেবী (রহ.) সিরাতুল মুস্তাকীম এর পরিচয় দান প্রসঙ্গে লিখেছেন :
فَالصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيْمُ هُوَ سَبِيْلُ اللهِ الَّذِىْ دَعَا اِلَيْهِ وَهُوَ السُّنَّةُ وَالسُّبُلُ هِىَ سُبُلُ اَهْلِ الْاِخْتِلَافِ الْحَائِدِيْنَ عَنِ الصِّرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ وَهُمْ اَهْلُ الْبِدَعِ
অর্থাৎ সিরাতুল মুস্তাকীম হচ্ছে আল্লাহর সেই পথ, যা অনুসরণের জন্য তিনি দাওয়াত দিয়েছেন; এটাই হলো সুন্নাত। আর অন্যান্য পথ বলতে বুঝানো হয়েছে বিরোধ ও বিভেদপন্থীদের পথ, যা মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে বিদআতপন্থী। [আল ই‘তিসাম লিইমাম শাতেবী, ১/৫৭।]
﴿سُنَّةَ اللهِ الَّتِيْ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُۚ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيْلًا﴾
এটাই আল্লাহর সুন্নাত, যা পূর্ব থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে। আর আল্লাহর এ সুন্নাতে কখনো কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না। (সূরা ফাতহ- ২২, ২৩)
আল্লামা মুহাম্মাদ বশীর সাহসোয়ানীর ভাষায় সুন্নাত হলো :
اَلطَّرِيْقَةُ الْمَخْصُوْصَةُ الْمَسْلُوْكَةُ الْمُتَّبَعَةُ بِالْفِعْلِ فِىْ اَمْرِ الَّذِيْنَ فِعْلًا وَتَرْكًا مِّنْ عَهْدِ النَّبِىِّ
সুন্নাত হচ্ছে সেই বিশেষ পথ, পন্থা ও পদ্ধতি, যা নবী করীম ﷺ এর সময় থেকেই দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে কোন কাজ করার বা না করার দিক দিয়ে বাস্তবভাবে অনুসরণ করা হয়।
এ হিসেবে সুন্নাত হলো সেই মূল আদর্শ, যা আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ব-মানবের জন্য নাযিল করেছেন এবং যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে তাঁর বাস্তব জীবনে অনুসরণ করেছেন। কেননা নবী করীম ﷺ যা বাস্তবভাবে অনুসরণ করেছেন, তার উৎস হলো ওহী। ওহীর সূত্রে নাযিল হওয়া আদর্শই রাসূলুল্লাহ ﷺ কাজে ও কর্মে অনুসরণ করেছেন। এটাই হচ্ছে সুন্নাত। এ সুন্নাতেরই অপর নাম হচ্ছে ইসলাম।
কুরআন মাজীদে এ সুন্নাতকেই সিরাতুল মুস্তাকীম বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُۚ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِهٖؕ ذٰلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
এ পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো এবং অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না, নতুবা তোমরা তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (সূরা আন‘আম- ১৫৩)
এ আয়াত থেকে সিরাতুল মুস্তাকীম বলতে সেই জিনিসকেই বুঝানো হয়েছে, যা বুঝা যায় সুন্নাত শব্দ থেকে।
ইমাম শাতেবী (রহ.) সিরাতুল মুস্তাকীম এর পরিচয় দান প্রসঙ্গে লিখেছেন :
فَالصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيْمُ هُوَ سَبِيْلُ اللهِ الَّذِىْ دَعَا اِلَيْهِ وَهُوَ السُّنَّةُ وَالسُّبُلُ هِىَ سُبُلُ اَهْلِ الْاِخْتِلَافِ الْحَائِدِيْنَ عَنِ الصِّرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ وَهُمْ اَهْلُ الْبِدَعِ
অর্থাৎ সিরাতুল মুস্তাকীম হচ্ছে আল্লাহর সেই পথ, যা অনুসরণের জন্য তিনি দাওয়াত দিয়েছেন; এটাই হলো সুন্নাত। আর অন্যান্য পথ বলতে বুঝানো হয়েছে বিরোধ ও বিভেদপন্থীদের পথ, যা মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর তারাই হচ্ছে বিদআতপন্থী। [আল ই‘তিসাম লিইমাম শাতেবী, ১/৫৭।]
এমনকিছু বিষয় আছে যার কারণে মানুষের ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায়। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :
কুফরী করা :
কাফিরদের কোন ভালো কাজ পরকালে কাজে আসবে না এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,
﴿وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
কেউ ঈমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়িদা- ৫)
﴿اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ اَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে, আল্লাহ তাদের সকল আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১)
কাফিরদের ইবাদাতের তুলনা :
﴿مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ اَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِنِ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ - لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰى شَيْءٍ ذٰلِكَ هُوْ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ﴾
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহের উপমা হচ্ছে ছাইয়ের মতো, যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের কাজে লাগবে না। এটা তো ঘোর বিভ্রামিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ১৮)
অন্য একটি আয়াতে তাদের আমলকে মরুভূমির মরীচিকা ও সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ ۢبِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمَاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وََّوَجَدَ اللهَ عِنْدَهٗ فَوَفَّاهُ حِسَابَهٗؕ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾
যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির ঐ মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু যখন সে তার নিকট উপস্থিত হয়, তখন কিছুই পায় না। অতঃপর সে সেথায় আল্লাহকে পাবে; তখন তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা নূর- ৩৯)
এ উপমায় এমনসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা কুফরী ও মুনাফিকী সত্ত্বেও বাহ্যত সৎকাজও করে এবং আখিরাতও মানে। আবার এ অসার চিন্তাও পোষণ করে যে, প্রকৃত ঈমান ও মুমিনের গুণাবলি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া তাদের এসব কার্যাবলি আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। উপমার আকারে তাদেরকে জানানো হচ্ছে, তোমরা নিজেদের যেসব বাহ্যিক ও প্রদর্শনীমূলক সৎকাজের মাধ্যমে আখিরাতে লাভবান হওয়ার আশা কর, সেগুলো নিছক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মরুভূমিতে দূর থেকে চিকচিক করা বালুরাশি দেখে পিপাসার্ত যেমন একে পানির নদী মনে করে সেদিকে ছুটে যায়, ঠিক তেমনি তোমরাও এসব কর্মের উপর মিথ্যা ভরসা করে চলেছ। কিন্তু যেমন মরীচিকার দিকে ছুটে চলা ব্যক্তি যে স্থানে পানির নদী আছে বলে মনে করেছিল সেখানে পৌঁছে কিছুই পায় না, ঠিক তেমনি তোমরাও যখন মৃত্যুর দ্বারে প্রবেশ করবে তখন জানতে পারবে সেখানে এমন কোন জিনিস নেই, যা থেকে তোমরা লাভবান হতে পারবে। বরং এর বিপরীতে দেখবে তোমাদের কুফরী ও মুনাফিকী এবং লোকদেখানো সৎকাজ ও অন্যান্য যেসব খারাপ কাজ করছিলে সেগুলোর হিসাব নেয়ার এবং প্রতিদান দেয়ার জন্য আল্লাহ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির উপর যেসকল বিধান দিয়েছেন তা তিনি জেনে বুঝেই দিয়েছেন। যেহেতু তিনি হলেন মানুষের স্রষ্টা, তাই তিনিই ভালো জানেন যে, মানুষের জন্য কোনটি কল্যাণকর এবং কোনটি অকল্যাণকর। এজন্য আল্লাহর কোন বিধানকে অপছন্দ করা অথবা এর কোন ত্রুটি অন্বেষণ করা মারাত্মক অন্যায়। যারা এমনটি করবে তাদের ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَاَضَلَّ اَعْمَالَهُم ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য ধ্বংস এবং আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৮, ৯)
আখেরাতকে অস্বীকার করা :
আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কেননা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ছাড়া কোন মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে না। যে ব্যক্তি আখেরাতকে অস্বীকার করবে সে দুনিয়াতে সকল পাপই করতে পারবে। এজন্য এমন লোকের সকল ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
যারা আমার নিদর্শন ও আখেরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করবে তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারা যা করে তদানুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
মুরতাদ (দ্বীনত্যাগী) হয়ে যাওয়া :
﴿وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যাবে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা- ২১৭)
আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা :
মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর বিধান মেনে চলা। কিন্তু অনেক লোক আছে যারা নিজেরা আল্লাহর বিধান তো পালন করেই না; বরং অন্যান্য লোকদেরকেও আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে চায়। এমন অপরাধীদের ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًا وَّسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে এবং হেদায়াতের পথ তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না বরং আল্লাহ তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
মুনাফিকী করা :
বাহ্যিক ঈমান এনে ভেতরে কুফরী লুকিয়ে রাখা- এটা মারাত্মক অপরাধ। শরীয়াতে এমন লোকদেরকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু। কেননা তারা বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের সাথে মিশে থাকে। এজন্য অনেক সময় তাদেরকে চেনা যায় না। তাই তাদের দ্বারা ইসলামের আরো বেশি ক্ষতি হয়। এজন্য মুনাফিকী রুগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اتَّبَعُوْا مَا اَسْخَطَ اللهَ وَكَرِهُوْا رِضْوَانَهٗ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾
এটা এ কারণে যে, তারা (মুনাফিকরা) এমন পথে চলেছে, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তারা অপছন্দ করেছে। তাই তিনি তাদের সব আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৮)
যারা খাঁটি মনে ঈমান এনে মুসলিম হয়েছে বটে, কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বা অসচেতনতার কারণে কখনো ছোটখাট নিফাকের কাজ করে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই লজ্জিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তারা উল্লেখিত আয়াতের বিধানে পড়বে না; বরং এ বিধান এমন মুনাফিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা প্রকৃত মুনাফিক। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরে ঈমান প্রকাশ করে ভেতরে কুফরীর ভিত্তি মজবুত করা, ঈমানদারদেরকে সহ্য করতে না পারা, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
সত্য প্রচারকদেরকে হত্যা করা :
যারা সত্য প্রচার করে অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে সঠিকভাবে প্রচার করে তারা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। সুতরাং যারা তাদেরকে হত্যা করে তারা হলো ইসলামের দুশমন। আল্লাহ তাদের ইবাদাতকে বরবাদ করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ﴾
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে, আরো হত্যা করেছে তাদেরকে, যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়- তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। এরা তো সেই সব লোক দুনিয়া ও আখেরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
শিরক করা :
আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইবাদাতের ক্ষেত্রে বা আল্লাহর গুণাবলি ও ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে সে ব্যক্তি মুশরিক বলে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তির অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য এবং তার কোন প্রকার সৎকর্মই গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
﴿وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তারা যদি শিরক করত তবে তাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত। (সূরা আন‘আম- ৮৮)
এ ব্যাপারে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهٗ وَشِرْكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে উর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোন নেক আমল করে এবং তাতে আমার সাথে কাউকে শরীক করে আমি তাকে ও তার ঐ শিরকী আমলকে ত্যাগ করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৬৬; মুসনাদে উমার ইবনে খাত্তাব, হা/১১১৩।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ ، فَمَنْ عَمِلَ لِيْ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ غَيْرِيْ ، فَاَنَا مِنْهُ بَرِيْءٌ ، وَهُوَ لِلَّذِيْ اَشْرَكَ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী। অতএব যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে এমন আমল করল, যার মধ্যে আমার সাথে শরীক করা হয় তাহলে আমি তার থেকে মুক্ত। আর এ আমল তার জন্য হবে, যাকে সে শরীক করেছে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১১১৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪।]
লোক দেখানো আমল করা :
নিজের আমল দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির সাথে সৃষ্ট জীবের সন্তুষ্টি অথবা নিজের সুখ্যাতি কামনা করা এটা নিঃসন্দেহে রিয়া ও গোপন শিরক। এর মাধ্যমে বান্দার আমল নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ اَخْوَفَ مَا اَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ ؟ قَالَ : اَلرِّيَاءُ اِنَّ اللهَ يَقُوْلُ : يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِاَعْمَالِهِمْ اِذْهَبُوْا اِلَى الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُرَاؤُوْنَ بِاَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا ، فَانْظُرُوْا هَلْ تَجِدُوْنَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً
মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য যে বিষয়টিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো ছোট শিরক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো আমল। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদেরকে আমলের প্রতিদান দেবেন। কিন্তু যারা লোক দেখানো আমল করেছে তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করেছ তাদের কাছে যাও; দেখো, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৮০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৩৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৪১২; সিলসিলা সহীহা, হা/৯৫১।]
দান করে খোটা দেয়া :
দান করা একটি সওয়াবের কাজ। যাকে কিছু দান করা হয় সে এতে অত্যন্ত খুশি হয়। কিন্তু এই দান করার পর যদি খোটা দেয়া হয় বা দানকারীকে কষ্ট দেয়া হয় তাহলে এ দানের সওয়াব থাকে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْاَذٰى كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ﴾
হে ঈমানদারগণ! খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করো না, ঐ ব্যক্তির মতো যে লোক দেখানোর জন্য তার মাল খরচ করে। (সূরা বাকারা- ২৬৪)
তবে কেউ কারো বিবেককে জাগ্রত করার জন্য বা সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য কৃত উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তা খোটা বা তিরস্কার হিসেবে গণ্য হবে না। শর্ত হলো, এতে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য থাকবে না।
আসরের সালাত ছেড়ে দেয়া :
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক দায়িত্ব। কেননা সালাত হচ্ছে ঈমান ও কুফুরের মধ্যে পার্থক্যকারী। সালাত দ্বারাই একজন মুমিন কাফিরদের থেকে পৃথক হয়। আর বিশেষ করে আসরের সালাতের সময় মানুষ বেশি গাফলতি করে। তাই নবী ﷺ আসরের সালাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যার আসরের সালাত ছুটে গেল তার আমল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِي الْمَلِيْحِ قَالَ : كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِيْ غَزْوَةٍ فِيْ يَوْمٍ ذِيْ غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فَاِنَّ النَّبِيَّ قَالَ : مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ
আবুল মালীহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে বৃষ্টির দিনে বুরাইদা (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা আসরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করো। কেননা নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিল তার আমল বরবাদ হয়ে গেল। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৭০; আহমাদ হা: ২৩১০৫।]
কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করা :
কোন মুসলিমের মান-ইজ্জতে আঘাত করা মারাত্মক অপরাধ। কেননা এক মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তাকে সংশোধন করে দিতে পারে, কিন্তু তাকে অপমান ও বে-ইজ্জত করতে পারে না। যারা এমনটি করবে তাদের আমল নষ্ট হবে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ اَبِيْهِ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ مَا عِنْدَنَا كِتَابٌ نَقْرَؤُهٗ اِلَّا كِتَابُ اللهِ، غَيْرَ هٰذِهِ الصَّحِيْفَةِ . قَالَ فَاَخْرَجَهَا فَاِذَا فِيْهَا اَشْيَاءُ مِنَ الْجِرَاحَاتِ وَاَسْنَانِ الْاِبِلِ . قَالَ وَفِيْهَا الْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ اِلٰى ثَوْرٍ، فَمَنْ اَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا، اَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ، وَمَنْ وَالٰى قَوْمًا بِغَيْرِ اِذْنِ مَوَالِيْهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ، وَذِمَّةُ الْمُسْلِمِيْنَ وَاحِدَةٌ، يَسْعٰى بِهَا اَدْنَاهُمْ فَمَنْ اَخْفَرَ مُسْلِمًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ
ইবরাহীম তাইমী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, এ ক্ষুদ্র পুস্তিকা ছাড়া এবং আল্লাহর কিতাব ছাড়া পড়ার মতো অন্য কোন কিতাব আমার কাছে নেই। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর আলী (রাঃ) তা বের করেন। তখন দেখা গেল, এর মধ্যে আহতদের প্রতিদান সংক্রান্ত বিধিবিধান (দিয়াত) ও উট (বয়স হিসেবে যাকাত)-এর বিবরণ সম্বলিত নানা বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তাতে এও উল্লেখ আছে, মাদীনার ‘আঈর’ পাহাড় থেকে অমুক স্থানের মধ্যবর্তী স্থানটি হারাম (মর্যাদাসম্পন্ন)। অতএব যে কেউ এর মধ্যে (নিজের খেয়াল-খুশিমতো দ্বীন সম্পর্কীয়) নতুন কিছু সংযোজন অর্থাৎ কোন বিদআত প্রচলন করবে, অথবা বিদআত প্রচলনকারীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির কোন ফরয-নফল (আমল) গ্রহণ করবেন না। যে ব্যক্তি অভিভাবকদের অনুমতি ব্যতিত অন্য সম্প্রদায়কে অভিভাবক নিযুক্ত করে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয অথবা নফল (আমল) গ্রহণ করা হবে না।
আর সকল মুসলিমের অঙ্গীকার মূলত একই, ফলে তাদের সাধারণ ব্যক্তিরাও তা মেনে চলবে (অর্থাৎ একজন কোন অঙ্গীকার বা চুক্তি করলে সকলে তা মেনে চলবে)। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করবে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয এবং নফল আমল গ্রহণ করা হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫৫; আবু দাউদ, হা/২০৩৬।]
গণক ও জ্যোতিষীর কাছে গমন করা :
জ্যোতিষ বা গণকের কাছে যাওয়া এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা- এসব শিরকী কাজ। কেননা এরা গায়েবের সংবাদ দেয় অথচ গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যে ব্যক্তি তাদের কথা বিশ্বাস করবে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ اَزْوَاجِ النَّبِىِّ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : مَنْ اَتٰى عَرَّافًا فَسَاَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
সাফিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় স্ত্রী হতে বর্ণনা করেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসবে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তির চল্লিশ রাত (দিনের) নামায কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৮৯; সুনানে কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬৯৫২।]
মদ্য পান করা :
মদ হচ্ছে সকল পাপের মূল। নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করলে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। আর জ্ঞানবুদ্ধি হচ্ছে আল্লাহর একটি বিরাট নিয়ামত। মানুষকে আল্লাহ এটা দান করেছেন, যেন মানুষ এটাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে বা এমন কোন জিনিস খায়, যা তার এই জ্ঞান নামক নিয়ামতের ক্ষতি সাধন করে তবে সে মহা অন্যায় করে। তার ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْخَمْرُ اُمُّ الْخَبَائِثِ وَمَنْ شَرِبَهَا لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فَاِنْ مَاتَ وَهِىَ فِىْ بَطْنِهٖ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল খবীসের মা। যে মদ পান করে তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। তার পেটে মদ থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহেলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। [দারেমী, হা/৪৬৬৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৮৫৪। ۚۚ ]
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : مَنْ شَرِبَ مُسْكِرًا مَا كَانَ، لَمْ يَقْبَلِ اللهُ لَهٗ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا
সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করবে- তা যা-ই হোক না কেন তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৫৩২; তাবারানী, হা/৬৫৩২।]
উল্লেখ্য যে, সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেকটি নেশা জাতীয় দ্রব্যকে মদ বলেছেন। তাই হেরোইন, ফেনসিডিল, গাজা, আফীম, হুইসকি, ইয়াবা, পেস্টিং ও তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি মাদকের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব নেশাজাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকা সকলের কর্তব্য।
মাতাপিতার অবাধ্যতা করা ও তাকদীর অস্বীকার করা :
আল্লাহর পরে কোন মানুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার বর্তায় তার মাতাপিতার। কেননা মাতাপিতাই ছোটকালে তাকে লালনপালন করেন এবং তার জন্য অনেক কষ্ট শিকার করেন। এখন সেই মাতাপিতার সাথেই যদি কোন ব্যক্তি খারাপ আচরণ করে এবং তাদের অবাধ্য হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তার নামায কবুল করেন না। তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কোন ব্যক্তি এই তাকদীরকে অস্বীকার করবে তারও ইবাদাত নষ্ট হয়ে যাবে। এ মর্মে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ، وَلَا عَدْلٌ : عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোকের ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করেন না : (১) মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান। (২) দান করে খোটাদানকারী ও (৩) তাকদীর অস্বীকারকারী। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৭৪২৫; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৭৮৫।]
মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে আমল কবুল হয় না :
ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে। কোন বৈধ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তার ফরয ও নফল কোন ইবাদাতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهٖ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করবে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হবে, তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না। [আবু দাউদ, হা/৪২৭২; সুনানুল কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬২৮২।]
নেতার পক্ষপাতিত্ব করা :
নেতৃত্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ যদি কোন পদে দায়িত্বশীল হয় তবে তাকে ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জরুরি। কেননা জনসাধারণ বিভিন্ন বিষয়ে তার মুখাপেক্ষী হয়। এখন যদি কোন ব্যক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে স্বার্থপর হয়ে যায় এবং বিভিন্ন কাজকর্মে পক্ষপাতিত্ব করে তবে এটা মহা অন্যায়। এমন লোকের ইবাদাত আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ اَبِيْ سُفْيَانَ ، قَالَ : قَالَ لِيْ اَبُوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ حِيْنَ بَعَثَنِيْ اِلَى الشَّامِ : يَا يَزِيْدُ ، اِنَّ لَكَ قَرَابَةً عَسَيْتَ اَنْ تُؤْثِرَهُمْ بِالْاِمَارَةِ ذٰلِكَ اَكْثَرُ مَا اَخَافُ عَلَيْكَ ، فَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ وَلِيَ مِنْ اَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ شَيْئًا فَاَمَّرَ عَلَيْهِمْ اَحَدًا مُحَابَاةً فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلَا حَتّٰى يُدْخِلَهٗ جَهَنَّمَ .
ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) যখন আমাকে শামের দিকে পাঠালেন তখন বললেন, হে ইয়াযীদ! নিশ্চয় তোমার অনেকের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি যে, তুমি কাউকে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে পার। শুন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন কিছুর নেতৃত্ব পায় এবং তাদের উপর কারো ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করে তার উপর আল্লাহর লানত রয়েছে। আল্লাহ এমন ব্যক্তির কোন প্রকার ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করবেন না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭০২৪।]
হারাম পন্থায় উপার্জন করা :
হালাল উপায়ে উপার্জন করা একটি বড় ধরনের আবশ্যকীয় কাজ। আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদেরকেও হালাল খেয়ে ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করা মারাত্মক অপরাধ। যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করে সে কোন না কোনভাবে অন্যের হক নষ্ট করে অথবা নিষিদ্ধ জিনিসের কেনাবেচা করে। এসবকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। আর আল্লাহর কাছে ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য হালাল খাদ্য খাওয়াকে শর্তারোপ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি হারাম থেকে দান করে তার এ দান আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ . قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না; আর হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; ইবনে খুযাইমা, হা/৮; ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
অন্য হাদীসে নবী ﷺ ইরশাদ করেন,
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهٗ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهٗ، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهٖ، لَا يَسْتَقِيْمُ دِيْنَ عَبْدٍ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهٗ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ لِسَانُهٗ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهٗ، وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَمَا الْبَوَائِقُ؟ قَالَ : غَشْمُهٗ وَظُلْمُهٗ، وَاَيُّمَا رَجُلٍ اَصَابَ مَالَا مِنْ غَيْرِ حِلِّهٖ، وَاَنْفَقَ مِنْهُ، لَمْ يُبَارَكْ لَهٗ فِيْهِ، وَاِنْ تَصَدَّقَ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ، وَمَا بَقِيَ فَزَادُهٗ اِلَى النَّارِ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ، وَلٰكِنَّ الطَّيِّبَ يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ .
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই, যার মধ্যে আমানতদারী নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীনদারী নেই যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তির দ্বীন সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার জিহবাকে সঠিক করবে অর্থাৎ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কোন ব্যক্তির জবান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। কোন বান্দা হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খরচ করলে তাতে বরকত হবে না। যদি সে তা থেকে দান করে তবে তা কবুল হবে না। তার সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। মন্দের দ্বারা মন্দ কাটে না (অর্থাৎ হারাম মাল দান করলে গোনাহ মাফ হয় না)। কিন্তু ভালো দ্বারা মন্দ কেটে যায় (অর্থা হালাল মাল দান করলে গোনাহ মাফ করা হয়)। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১০৪০১।]
উপার্জন হালাল না হলে দু‘আ বিফলে যায় :
সকল নবীকে আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা যেন হালাল খেয়ে তার ইবাদাত করে। আর আল্লাহর এ নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও রয়েছে। এজন্য হালাল রুজি করা এবং হালাল খাওয়া ইবাদাত ও দু‘আ কবুলের জন্য একটি মৌলিক শর্ত। যে ব্যক্তি হালাল-হারাম বাছাই করে না তার দু‘আও আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ اِلَّا طَيِّبًا وَّاِنَّ اللهَ اَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا اَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ : يَا اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا اِنِّى بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ وَقَالَ : يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ . ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ اِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَّمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَّمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَاَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’ আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’
অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হচ্ছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [মুসলিম, হা/২৩৯৩, মিশকাত, হা/২৭৬০।]
সৎকাজের আদেশ না দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ না করা :
সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কেননা সমাজে যদি অন্যায় হতে থাকে আর কেউ এর প্রতিবাদ না করে তাহলে এর ফলে যে শাস্তি বা গযব আসে তা সকলকে ভোগ করতে হয়। এজন্য যথসাধ্য সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে মানুষকে বারণ করা প্রত্যেকটি মুমিনের মৌলিক দায়িত্ব। যারা এ দায়িত্বের অবহেলা করবে তাদের দু‘আ আল্লাহ ইবাদাত করবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ اليَمَانِ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهٖ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ اَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ اَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهٗ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ .
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করো। নতুবা তোমরা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবে। অতঃপর তোমাদের দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। [তিরমিযী, হা/২১৬৯।]
মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে না থাকা :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিনদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীনকে অাঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। যদি মুসলিমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যায় তাহলে তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের দুশমনদেরকে তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে এরই বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মুসলিম জাতি আজ অসংখ্য দল ও ফিরকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক ছোট-খাট বিষয় নিয়েও বিভিন্ন দলাদলি শুরু হয়েছে। অথচ ইসলামের মূল জিনিস তাওহীদের আলোকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দুশমনদের মুকাবিলা করা উচিত ছিল। কিন্তু এটা না করার কারণে প্রায় সারা পৃথিবীতেই কাফির মুশরিকরা রাজত্ব করছে এবং মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ছোট-খাট বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে মূল তাওহীদের দিকে সবাইকে ফিরে আসা এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সকল বাতিল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করা। এ বিষয়টিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ যারা মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে মিলিত না হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে তাদের ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে। এমনকি তাদের ইবাদাতও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِيْ مَالِكٍ الْاَشْعَرِيِّ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اَمَرَنِيْ اَنْ اٰمُرَكُمْ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ : عَلَيْكُمْ بِالْجِهَادِ ، وَالسَّمْعِ ، وَالطَّاعَةِ ، وَالْهِجْرَةِ ، فَمَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قَيْدَ قَوْسٍ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ صَلَاةٌ وَلَا صِيَامٌ ، وَأُولٰئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। (এক) তোমরা জিহাদ করবে। (দুই) নেতার আনুগত্য করবে। (তিন) নেতার আদেশ মান্য করবে। (চার) হিজরত করবে। (পাঁচ) তোমরা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। কেননা, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক ধনুক পরিমাণ সরে যাবে, তার নামায ও রোযা কবুল হয় না। তারা জাহান্নামের অধিবাসী। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৩৯০।]
যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে থাকবে না তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু :
عَنِ ابْنَ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ رَاٰى مِنْ اَمِيْرِهٖ شَيْئًا يَكْرَهُهٗ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ ، فَاِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ اِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূলুললাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার নেতার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাবে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যায় এবং সে এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে সে জাহেলী মৃত্যুবরণ করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯৬।]
عَنْ عَاصِمُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ .... مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ، وَمَنْ نَكَثَ الْعَهْدَ ، وَمَاتَ نَاكِثًا لِلْعَهْدِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهٗ
আসেম ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচিছন্ন হবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। আর যে ব্যক্তি ওয়াদা ভঙ্গ করবে এবং এ অবস্থায় মারা যাবে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৮১।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ইসলামের বাঁধন ছিড়ে ফেলে :
عَنْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهٖ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে যেন তার ঘাড় থেকে ইসলামের বাঁধন খুলে নিল। [আবু দাউদ, হা/৪৭৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৬১।]
যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শয়তান তাকে আয়ত্ত করে নেয় :
عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ شُرَيْحٍ الاَشْجَعِىِّ قَالَ رَاَيْتُ النَّبِىَّ عَلَى الْمِنْبَرِ يَخْطُبُ النَّاسَ فَقَالَ : اِنَّهٗ سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ رَاَيْتُمُوْهُ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ اَوْ يُرِيْدُ تَفْرِيْقَ اَمْرِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ كَائِنًا مَنْ كَانَ فَاقْتُلُوْهُ فَاِنَّ يَدَ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ يَرْكُضُ
আরফাজাহ ইবনে শুরাইহ আল আশজাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন যে, আমার পরে অচিরেই এমন এমন দলের আগমন ঘটবে। সুতরাং তোমরা যখন এমন ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, সে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে অথবা উম্মতে মুহাম্মাদী থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে তখন তোমরা তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহর হাত হচ্ছে জামা‘আতের উপর। আর শয়তান ঐ ব্যক্তির সাথে থাকে, যে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যায়। [সুনানে নাসাঈ, হা/৪০২০।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
عَنْ مُعَاوِيَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا دَخَلَ النَّارَ
মু‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৭।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি দলীল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে :
عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ ، قَالَ : اَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ لَيَالِيَ سَارَ النَّاسُ اِلٰى عُثْمَانَ ، فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَاسْتَذَلَّ الْاِمَارَةَ لَقِيَ اللهَ وَلَا حُجَّةَ لَهٗ
রাবী ইবনে হারাশ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) এর কাছে আসলাম। তিনি তখন উসমান (রাঃ) এর কাছে গমন করছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং নেতৃত্বকে হেয় করবে (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে; কিন্তু তার সাথে কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৯।]
বিদআত করা :
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। একজন মানুষ যত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে তার সবই নবী ﷺ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এখন নতুন করে কোন ইবাদাত সৃষ্টি করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কারণ এই সুযোগ যদি থাকে তাহলে যার যার মতো করে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ইবাদাত তৈরি করে ফেলবে। এতে করে সহীহ ইবাদাত এবং বিদআতী ইবাদাত একাকার হয়ে যাবে। মানুষ সহীহ আমল কোনটি তা বুঝতে পারবে না। সমাজের দিকে তাকালে এটাই লক্ষ্য করা যায়। কেননা অনেক বিদআতী আমল এমনভাবে চালু হয়েছে যে, কোনভাবেই মানুষ এটাকে ছাড়তে রাজি নয়। এ কারণে নবী ﷺ এ বিদআতের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এমনকি যে ব্যক্তি বিদআত করবে তার আমলও বরবাদ হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী, হা/১৮৬৭, সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮৯।]
বিদআত ও মনগড়া আমল যতই ভালো হোক না কেন, তা বরবাদ হয়ে যাবে এবং পরকালে কোন কাজে আসবে না। আর বান্দা এর জন্য কোন ফলাফলও পাবে না। এমনকি তাকে হাউজে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে, আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি চিনতে পারব (উম্মত হিসেবে) আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও-দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৮৮।]
কুফরী করা :
কাফিরদের কোন ভালো কাজ পরকালে কাজে আসবে না এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,
﴿وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
কেউ ঈমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়িদা- ৫)
﴿اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ اَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে, আল্লাহ তাদের সকল আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১)
কাফিরদের ইবাদাতের তুলনা :
﴿مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ اَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِنِ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ - لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰى شَيْءٍ ذٰلِكَ هُوْ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ﴾
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহের উপমা হচ্ছে ছাইয়ের মতো, যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের কাজে লাগবে না। এটা তো ঘোর বিভ্রামিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ১৮)
অন্য একটি আয়াতে তাদের আমলকে মরুভূমির মরীচিকা ও সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ ۢبِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمَاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وََّوَجَدَ اللهَ عِنْدَهٗ فَوَفَّاهُ حِسَابَهٗؕ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾
যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির ঐ মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু যখন সে তার নিকট উপস্থিত হয়, তখন কিছুই পায় না। অতঃপর সে সেথায় আল্লাহকে পাবে; তখন তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা নূর- ৩৯)
এ উপমায় এমনসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা কুফরী ও মুনাফিকী সত্ত্বেও বাহ্যত সৎকাজও করে এবং আখিরাতও মানে। আবার এ অসার চিন্তাও পোষণ করে যে, প্রকৃত ঈমান ও মুমিনের গুণাবলি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া তাদের এসব কার্যাবলি আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। উপমার আকারে তাদেরকে জানানো হচ্ছে, তোমরা নিজেদের যেসব বাহ্যিক ও প্রদর্শনীমূলক সৎকাজের মাধ্যমে আখিরাতে লাভবান হওয়ার আশা কর, সেগুলো নিছক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মরুভূমিতে দূর থেকে চিকচিক করা বালুরাশি দেখে পিপাসার্ত যেমন একে পানির নদী মনে করে সেদিকে ছুটে যায়, ঠিক তেমনি তোমরাও এসব কর্মের উপর মিথ্যা ভরসা করে চলেছ। কিন্তু যেমন মরীচিকার দিকে ছুটে চলা ব্যক্তি যে স্থানে পানির নদী আছে বলে মনে করেছিল সেখানে পৌঁছে কিছুই পায় না, ঠিক তেমনি তোমরাও যখন মৃত্যুর দ্বারে প্রবেশ করবে তখন জানতে পারবে সেখানে এমন কোন জিনিস নেই, যা থেকে তোমরা লাভবান হতে পারবে। বরং এর বিপরীতে দেখবে তোমাদের কুফরী ও মুনাফিকী এবং লোকদেখানো সৎকাজ ও অন্যান্য যেসব খারাপ কাজ করছিলে সেগুলোর হিসাব নেয়ার এবং প্রতিদান দেয়ার জন্য আল্লাহ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।
ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা :
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির উপর যেসকল বিধান দিয়েছেন তা তিনি জেনে বুঝেই দিয়েছেন। যেহেতু তিনি হলেন মানুষের স্রষ্টা, তাই তিনিই ভালো জানেন যে, মানুষের জন্য কোনটি কল্যাণকর এবং কোনটি অকল্যাণকর। এজন্য আল্লাহর কোন বিধানকে অপছন্দ করা অথবা এর কোন ত্রুটি অন্বেষণ করা মারাত্মক অন্যায়। যারা এমনটি করবে তাদের ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَاَضَلَّ اَعْمَالَهُم ‐ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য ধ্বংস এবং আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৮, ৯)
আখেরাতকে অস্বীকার করা :
আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কেননা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ছাড়া কোন মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে না। যে ব্যক্তি আখেরাতকে অস্বীকার করবে সে দুনিয়াতে সকল পাপই করতে পারবে। এজন্য এমন লোকের সকল ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
যারা আমার নিদর্শন ও আখেরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করবে তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারা যা করে তদানুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)
মুরতাদ (দ্বীনত্যাগী) হয়ে যাওয়া :
﴿وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যাবে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা- ২১৭)
আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা :
মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর বিধান মেনে চলা। কিন্তু অনেক লোক আছে যারা নিজেরা আল্লাহর বিধান তো পালন করেই না; বরং অন্যান্য লোকদেরকেও আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে চায়। এমন অপরাধীদের ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًا وَّسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ﴾
যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে এবং হেদায়াতের পথ তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না বরং আল্লাহ তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)
মুনাফিকী করা :
বাহ্যিক ঈমান এনে ভেতরে কুফরী লুকিয়ে রাখা- এটা মারাত্মক অপরাধ। শরীয়াতে এমন লোকদেরকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু। কেননা তারা বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের সাথে মিশে থাকে। এজন্য অনেক সময় তাদেরকে চেনা যায় না। তাই তাদের দ্বারা ইসলামের আরো বেশি ক্ষতি হয়। এজন্য মুনাফিকী রুগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اتَّبَعُوْا مَا اَسْخَطَ اللهَ وَكَرِهُوْا رِضْوَانَهٗ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾
এটা এ কারণে যে, তারা (মুনাফিকরা) এমন পথে চলেছে, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তারা অপছন্দ করেছে। তাই তিনি তাদের সব আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৮)
যারা খাঁটি মনে ঈমান এনে মুসলিম হয়েছে বটে, কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বা অসচেতনতার কারণে কখনো ছোটখাট নিফাকের কাজ করে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই লজ্জিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তারা উল্লেখিত আয়াতের বিধানে পড়বে না; বরং এ বিধান এমন মুনাফিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা প্রকৃত মুনাফিক। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরে ঈমান প্রকাশ করে ভেতরে কুফরীর ভিত্তি মজবুত করা, ঈমানদারদেরকে সহ্য করতে না পারা, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
সত্য প্রচারকদেরকে হত্যা করা :
যারা সত্য প্রচার করে অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে সঠিকভাবে প্রচার করে তারা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। সুতরাং যারা তাদেরকে হত্যা করে তারা হলো ইসলামের দুশমন। আল্লাহ তাদের ইবাদাতকে বরবাদ করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ﴾
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে, আরো হত্যা করেছে তাদেরকে, যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়- তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। এরা তো সেই সব লোক দুনিয়া ও আখেরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)
শিরক করা :
আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইবাদাতের ক্ষেত্রে বা আল্লাহর গুণাবলি ও ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে সে ব্যক্তি মুশরিক বলে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তির অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য এবং তার কোন প্রকার সৎকর্মই গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা যুমার- ৬৫)
﴿وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
তারা যদি শিরক করত তবে তাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত। (সূরা আন‘আম- ৮৮)
এ ব্যাপারে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهٗ وَشِرْكَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে উর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোন নেক আমল করে এবং তাতে আমার সাথে কাউকে শরীক করে আমি তাকে ও তার ঐ শিরকী আমলকে ত্যাগ করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৬৬; মুসনাদে উমার ইবনে খাত্তাব, হা/১১১৩।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ ، فَمَنْ عَمِلَ لِيْ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ غَيْرِيْ ، فَاَنَا مِنْهُ بَرِيْءٌ ، وَهُوَ لِلَّذِيْ اَشْرَكَ .
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী। অতএব যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে এমন আমল করল, যার মধ্যে আমার সাথে শরীক করা হয় তাহলে আমি তার থেকে মুক্ত। আর এ আমল তার জন্য হবে, যাকে সে শরীক করেছে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১১১৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪।]
লোক দেখানো আমল করা :
নিজের আমল দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির সাথে সৃষ্ট জীবের সন্তুষ্টি অথবা নিজের সুখ্যাতি কামনা করা এটা নিঃসন্দেহে রিয়া ও গোপন শিরক। এর মাধ্যমে বান্দার আমল নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ اَخْوَفَ مَا اَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ ؟ قَالَ : اَلرِّيَاءُ اِنَّ اللهَ يَقُوْلُ : يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِاَعْمَالِهِمْ اِذْهَبُوْا اِلَى الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُرَاؤُوْنَ بِاَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا ، فَانْظُرُوْا هَلْ تَجِدُوْنَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً
মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য যে বিষয়টিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো ছোট শিরক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো আমল। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদেরকে আমলের প্রতিদান দেবেন। কিন্তু যারা লোক দেখানো আমল করেছে তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করেছ তাদের কাছে যাও; দেখো, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৮০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৩৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৪১২; সিলসিলা সহীহা, হা/৯৫১।]
দান করে খোটা দেয়া :
দান করা একটি সওয়াবের কাজ। যাকে কিছু দান করা হয় সে এতে অত্যন্ত খুশি হয়। কিন্তু এই দান করার পর যদি খোটা দেয়া হয় বা দানকারীকে কষ্ট দেয়া হয় তাহলে এ দানের সওয়াব থাকে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْاَذٰى كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ﴾
হে ঈমানদারগণ! খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করো না, ঐ ব্যক্তির মতো যে লোক দেখানোর জন্য তার মাল খরচ করে। (সূরা বাকারা- ২৬৪)
তবে কেউ কারো বিবেককে জাগ্রত করার জন্য বা সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য কৃত উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তা খোটা বা তিরস্কার হিসেবে গণ্য হবে না। শর্ত হলো, এতে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য থাকবে না।
আসরের সালাত ছেড়ে দেয়া :
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক দায়িত্ব। কেননা সালাত হচ্ছে ঈমান ও কুফুরের মধ্যে পার্থক্যকারী। সালাত দ্বারাই একজন মুমিন কাফিরদের থেকে পৃথক হয়। আর বিশেষ করে আসরের সালাতের সময় মানুষ বেশি গাফলতি করে। তাই নবী ﷺ আসরের সালাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যার আসরের সালাত ছুটে গেল তার আমল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِي الْمَلِيْحِ قَالَ : كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِيْ غَزْوَةٍ فِيْ يَوْمٍ ذِيْ غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فَاِنَّ النَّبِيَّ قَالَ : مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ
আবুল মালীহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে বৃষ্টির দিনে বুরাইদা (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা আসরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করো। কেননা নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিল তার আমল বরবাদ হয়ে গেল। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৭০; আহমাদ হা: ২৩১০৫।]
কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করা :
কোন মুসলিমের মান-ইজ্জতে আঘাত করা মারাত্মক অপরাধ। কেননা এক মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তাকে সংশোধন করে দিতে পারে, কিন্তু তাকে অপমান ও বে-ইজ্জত করতে পারে না। যারা এমনটি করবে তাদের আমল নষ্ট হবে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ اَبِيْهِ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ مَا عِنْدَنَا كِتَابٌ نَقْرَؤُهٗ اِلَّا كِتَابُ اللهِ، غَيْرَ هٰذِهِ الصَّحِيْفَةِ . قَالَ فَاَخْرَجَهَا فَاِذَا فِيْهَا اَشْيَاءُ مِنَ الْجِرَاحَاتِ وَاَسْنَانِ الْاِبِلِ . قَالَ وَفِيْهَا الْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ اِلٰى ثَوْرٍ، فَمَنْ اَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا، اَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ، وَمَنْ وَالٰى قَوْمًا بِغَيْرِ اِذْنِ مَوَالِيْهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ، وَذِمَّةُ الْمُسْلِمِيْنَ وَاحِدَةٌ، يَسْعٰى بِهَا اَدْنَاهُمْ فَمَنْ اَخْفَرَ مُسْلِمًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ
ইবরাহীম তাইমী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, এ ক্ষুদ্র পুস্তিকা ছাড়া এবং আল্লাহর কিতাব ছাড়া পড়ার মতো অন্য কোন কিতাব আমার কাছে নেই। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর আলী (রাঃ) তা বের করেন। তখন দেখা গেল, এর মধ্যে আহতদের প্রতিদান সংক্রান্ত বিধিবিধান (দিয়াত) ও উট (বয়স হিসেবে যাকাত)-এর বিবরণ সম্বলিত নানা বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তাতে এও উল্লেখ আছে, মাদীনার ‘আঈর’ পাহাড় থেকে অমুক স্থানের মধ্যবর্তী স্থানটি হারাম (মর্যাদাসম্পন্ন)। অতএব যে কেউ এর মধ্যে (নিজের খেয়াল-খুশিমতো দ্বীন সম্পর্কীয়) নতুন কিছু সংযোজন অর্থাৎ কোন বিদআত প্রচলন করবে, অথবা বিদআত প্রচলনকারীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির কোন ফরয-নফল (আমল) গ্রহণ করবেন না। যে ব্যক্তি অভিভাবকদের অনুমতি ব্যতিত অন্য সম্প্রদায়কে অভিভাবক নিযুক্ত করে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয অথবা নফল (আমল) গ্রহণ করা হবে না।
আর সকল মুসলিমের অঙ্গীকার মূলত একই, ফলে তাদের সাধারণ ব্যক্তিরাও তা মেনে চলবে (অর্থাৎ একজন কোন অঙ্গীকার বা চুক্তি করলে সকলে তা মেনে চলবে)। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করবে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয এবং নফল আমল গ্রহণ করা হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫৫; আবু দাউদ, হা/২০৩৬।]
গণক ও জ্যোতিষীর কাছে গমন করা :
জ্যোতিষ বা গণকের কাছে যাওয়া এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা- এসব শিরকী কাজ। কেননা এরা গায়েবের সংবাদ দেয় অথচ গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যে ব্যক্তি তাদের কথা বিশ্বাস করবে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ اَزْوَاجِ النَّبِىِّ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : مَنْ اَتٰى عَرَّافًا فَسَاَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً
সাফিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় স্ত্রী হতে বর্ণনা করেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসবে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তির চল্লিশ রাত (দিনের) নামায কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৮৯; সুনানে কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬৯৫২।]
মদ্য পান করা :
মদ হচ্ছে সকল পাপের মূল। নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করলে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। আর জ্ঞানবুদ্ধি হচ্ছে আল্লাহর একটি বিরাট নিয়ামত। মানুষকে আল্লাহ এটা দান করেছেন, যেন মানুষ এটাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে বা এমন কোন জিনিস খায়, যা তার এই জ্ঞান নামক নিয়ামতের ক্ষতি সাধন করে তবে সে মহা অন্যায় করে। তার ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْخَمْرُ اُمُّ الْخَبَائِثِ وَمَنْ شَرِبَهَا لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فَاِنْ مَاتَ وَهِىَ فِىْ بَطْنِهٖ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল খবীসের মা। যে মদ পান করে তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। তার পেটে মদ থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহেলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। [দারেমী, হা/৪৬৬৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৮৫৪। ۚۚ ]
عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : مَنْ شَرِبَ مُسْكِرًا مَا كَانَ، لَمْ يَقْبَلِ اللهُ لَهٗ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا
সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করবে- তা যা-ই হোক না কেন তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৫৩২; তাবারানী, হা/৬৫৩২।]
উল্লেখ্য যে, সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেকটি নেশা জাতীয় দ্রব্যকে মদ বলেছেন। তাই হেরোইন, ফেনসিডিল, গাজা, আফীম, হুইসকি, ইয়াবা, পেস্টিং ও তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি মাদকের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব নেশাজাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকা সকলের কর্তব্য।
মাতাপিতার অবাধ্যতা করা ও তাকদীর অস্বীকার করা :
আল্লাহর পরে কোন মানুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার বর্তায় তার মাতাপিতার। কেননা মাতাপিতাই ছোটকালে তাকে লালনপালন করেন এবং তার জন্য অনেক কষ্ট শিকার করেন। এখন সেই মাতাপিতার সাথেই যদি কোন ব্যক্তি খারাপ আচরণ করে এবং তাদের অবাধ্য হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তার নামায কবুল করেন না। তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কোন ব্যক্তি এই তাকদীরকে অস্বীকার করবে তারও ইবাদাত নষ্ট হয়ে যাবে। এ মর্মে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ، وَلَا عَدْلٌ : عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোকের ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করেন না : (১) মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান। (২) দান করে খোটাদানকারী ও (৩) তাকদীর অস্বীকারকারী। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৭৪২৫; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৭৮৫।]
মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে আমল কবুল হয় না :
ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে। কোন বৈধ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তার ফরয ও নফল কোন ইবাদাতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهٖ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করবে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হবে, তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না। [আবু দাউদ, হা/৪২৭২; সুনানুল কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬২৮২।]
নেতার পক্ষপাতিত্ব করা :
নেতৃত্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ যদি কোন পদে দায়িত্বশীল হয় তবে তাকে ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জরুরি। কেননা জনসাধারণ বিভিন্ন বিষয়ে তার মুখাপেক্ষী হয়। এখন যদি কোন ব্যক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে স্বার্থপর হয়ে যায় এবং বিভিন্ন কাজকর্মে পক্ষপাতিত্ব করে তবে এটা মহা অন্যায়। এমন লোকের ইবাদাত আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ يَزِيْدَ بْنِ اَبِيْ سُفْيَانَ ، قَالَ : قَالَ لِيْ اَبُوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ حِيْنَ بَعَثَنِيْ اِلَى الشَّامِ : يَا يَزِيْدُ ، اِنَّ لَكَ قَرَابَةً عَسَيْتَ اَنْ تُؤْثِرَهُمْ بِالْاِمَارَةِ ذٰلِكَ اَكْثَرُ مَا اَخَافُ عَلَيْكَ ، فَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ وَلِيَ مِنْ اَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ شَيْئًا فَاَمَّرَ عَلَيْهِمْ اَحَدًا مُحَابَاةً فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلَا حَتّٰى يُدْخِلَهٗ جَهَنَّمَ .
ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) যখন আমাকে শামের দিকে পাঠালেন তখন বললেন, হে ইয়াযীদ! নিশ্চয় তোমার অনেকের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি যে, তুমি কাউকে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে পার। শুন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন কিছুর নেতৃত্ব পায় এবং তাদের উপর কারো ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করে তার উপর আল্লাহর লানত রয়েছে। আল্লাহ এমন ব্যক্তির কোন প্রকার ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করবেন না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭০২৪।]
হারাম পন্থায় উপার্জন করা :
হালাল উপায়ে উপার্জন করা একটি বড় ধরনের আবশ্যকীয় কাজ। আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদেরকেও হালাল খেয়ে ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করা মারাত্মক অপরাধ। যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করে সে কোন না কোনভাবে অন্যের হক নষ্ট করে অথবা নিষিদ্ধ জিনিসের কেনাবেচা করে। এসবকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। আর আল্লাহর কাছে ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য হালাল খাদ্য খাওয়াকে শর্তারোপ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি হারাম থেকে দান করে তার এ দান আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَ . قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না; আর হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; ইবনে খুযাইমা, হা/৮; ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]
অন্য হাদীসে নবী ﷺ ইরশাদ করেন,
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهٗ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهٗ، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهٖ، لَا يَسْتَقِيْمُ دِيْنَ عَبْدٍ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهٗ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ لِسَانُهٗ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهٗ، وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَمَا الْبَوَائِقُ؟ قَالَ : غَشْمُهٗ وَظُلْمُهٗ، وَاَيُّمَا رَجُلٍ اَصَابَ مَالَا مِنْ غَيْرِ حِلِّهٖ، وَاَنْفَقَ مِنْهُ، لَمْ يُبَارَكْ لَهٗ فِيْهِ، وَاِنْ تَصَدَّقَ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ، وَمَا بَقِيَ فَزَادُهٗ اِلَى النَّارِ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ، وَلٰكِنَّ الطَّيِّبَ يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ .
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই, যার মধ্যে আমানতদারী নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীনদারী নেই যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তির দ্বীন সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার জিহবাকে সঠিক করবে অর্থাৎ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কোন ব্যক্তির জবান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। কোন বান্দা হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খরচ করলে তাতে বরকত হবে না। যদি সে তা থেকে দান করে তবে তা কবুল হবে না। তার সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। মন্দের দ্বারা মন্দ কাটে না (অর্থাৎ হারাম মাল দান করলে গোনাহ মাফ হয় না)। কিন্তু ভালো দ্বারা মন্দ কেটে যায় (অর্থা হালাল মাল দান করলে গোনাহ মাফ করা হয়)। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১০৪০১।]
উপার্জন হালাল না হলে দু‘আ বিফলে যায় :
সকল নবীকে আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা যেন হালাল খেয়ে তার ইবাদাত করে। আর আল্লাহর এ নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও রয়েছে। এজন্য হালাল রুজি করা এবং হালাল খাওয়া ইবাদাত ও দু‘আ কবুলের জন্য একটি মৌলিক শর্ত। যে ব্যক্তি হালাল-হারাম বাছাই করে না তার দু‘আও আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ اِلَّا طَيِّبًا وَّاِنَّ اللهَ اَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا اَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ : يَا اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا اِنِّى بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ وَقَالَ : يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ . ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ اِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَّمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَّمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَاَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’ আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’
অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হচ্ছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [মুসলিম, হা/২৩৯৩, মিশকাত, হা/২৭৬০।]
সৎকাজের আদেশ না দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ না করা :
সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কেননা সমাজে যদি অন্যায় হতে থাকে আর কেউ এর প্রতিবাদ না করে তাহলে এর ফলে যে শাস্তি বা গযব আসে তা সকলকে ভোগ করতে হয়। এজন্য যথসাধ্য সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে মানুষকে বারণ করা প্রত্যেকটি মুমিনের মৌলিক দায়িত্ব। যারা এ দায়িত্বের অবহেলা করবে তাদের দু‘আ আল্লাহ ইবাদাত করবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ اليَمَانِ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهٖ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ اَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ اَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهٗ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ .
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করো। নতুবা তোমরা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবে। অতঃপর তোমাদের দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। [তিরমিযী, হা/২১৬৯।]
মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে না থাকা :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিনদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীনকে অাঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। যদি মুসলিমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যায় তাহলে তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের দুশমনদেরকে তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে এরই বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মুসলিম জাতি আজ অসংখ্য দল ও ফিরকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক ছোট-খাট বিষয় নিয়েও বিভিন্ন দলাদলি শুরু হয়েছে। অথচ ইসলামের মূল জিনিস তাওহীদের আলোকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দুশমনদের মুকাবিলা করা উচিত ছিল। কিন্তু এটা না করার কারণে প্রায় সারা পৃথিবীতেই কাফির মুশরিকরা রাজত্ব করছে এবং মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ছোট-খাট বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে মূল তাওহীদের দিকে সবাইকে ফিরে আসা এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সকল বাতিল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করা। এ বিষয়টিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ যারা মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে মিলিত না হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে তাদের ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে। এমনকি তাদের ইবাদাতও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِيْ مَالِكٍ الْاَشْعَرِيِّ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اَمَرَنِيْ اَنْ اٰمُرَكُمْ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ : عَلَيْكُمْ بِالْجِهَادِ ، وَالسَّمْعِ ، وَالطَّاعَةِ ، وَالْهِجْرَةِ ، فَمَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قَيْدَ قَوْسٍ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ صَلَاةٌ وَلَا صِيَامٌ ، وَأُولٰئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ
আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। (এক) তোমরা জিহাদ করবে। (দুই) নেতার আনুগত্য করবে। (তিন) নেতার আদেশ মান্য করবে। (চার) হিজরত করবে। (পাঁচ) তোমরা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। কেননা, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক ধনুক পরিমাণ সরে যাবে, তার নামায ও রোযা কবুল হয় না। তারা জাহান্নামের অধিবাসী। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৩৯০।]
যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে থাকবে না তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু :
عَنِ ابْنَ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ رَاٰى مِنْ اَمِيْرِهٖ شَيْئًا يَكْرَهُهٗ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ ، فَاِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ اِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূলুললাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার নেতার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাবে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যায় এবং সে এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে সে জাহেলী মৃত্যুবরণ করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯৬।]
عَنْ عَاصِمُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ .... مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ، وَمَنْ نَكَثَ الْعَهْدَ ، وَمَاتَ نَاكِثًا لِلْعَهْدِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهٗ
আসেম ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচিছন্ন হবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। আর যে ব্যক্তি ওয়াদা ভঙ্গ করবে এবং এ অবস্থায় মারা যাবে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৮১।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ইসলামের বাঁধন ছিড়ে ফেলে :
عَنْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهٖ
আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে যেন তার ঘাড় থেকে ইসলামের বাঁধন খুলে নিল। [আবু দাউদ, হা/৪৭৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৬১।]
যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শয়তান তাকে আয়ত্ত করে নেয় :
عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ شُرَيْحٍ الاَشْجَعِىِّ قَالَ رَاَيْتُ النَّبِىَّ عَلَى الْمِنْبَرِ يَخْطُبُ النَّاسَ فَقَالَ : اِنَّهٗ سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ رَاَيْتُمُوْهُ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ اَوْ يُرِيْدُ تَفْرِيْقَ اَمْرِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ كَائِنًا مَنْ كَانَ فَاقْتُلُوْهُ فَاِنَّ يَدَ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ يَرْكُضُ
আরফাজাহ ইবনে শুরাইহ আল আশজাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন যে, আমার পরে অচিরেই এমন এমন দলের আগমন ঘটবে। সুতরাং তোমরা যখন এমন ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, সে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে অথবা উম্মতে মুহাম্মাদী থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে তখন তোমরা তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহর হাত হচ্ছে জামা‘আতের উপর। আর শয়তান ঐ ব্যক্তির সাথে থাকে, যে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যায়। [সুনানে নাসাঈ, হা/৪০২০।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে :
عَنْ مُعَاوِيَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا دَخَلَ النَّارَ
মু‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৭।]
জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি দলীল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে :
عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ ، قَالَ : اَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ لَيَالِيَ سَارَ النَّاسُ اِلٰى عُثْمَانَ ، فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَاسْتَذَلَّ الْاِمَارَةَ لَقِيَ اللهَ وَلَا حُجَّةَ لَهٗ
রাবী ইবনে হারাশ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) এর কাছে আসলাম। তিনি তখন উসমান (রাঃ) এর কাছে গমন করছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং নেতৃত্বকে হেয় করবে (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে; কিন্তু তার সাথে কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৯।]
বিদআত করা :
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। একজন মানুষ যত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে তার সবই নবী ﷺ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এখন নতুন করে কোন ইবাদাত সৃষ্টি করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কারণ এই সুযোগ যদি থাকে তাহলে যার যার মতো করে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ইবাদাত তৈরি করে ফেলবে। এতে করে সহীহ ইবাদাত এবং বিদআতী ইবাদাত একাকার হয়ে যাবে। মানুষ সহীহ আমল কোনটি তা বুঝতে পারবে না। সমাজের দিকে তাকালে এটাই লক্ষ্য করা যায়। কেননা অনেক বিদআতী আমল এমনভাবে চালু হয়েছে যে, কোনভাবেই মানুষ এটাকে ছাড়তে রাজি নয়। এ কারণে নবী ﷺ এ বিদআতের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এমনকি যে ব্যক্তি বিদআত করবে তার আমলও বরবাদ হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী, হা/১৮৬৭, সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮৯।]
বিদআত ও মনগড়া আমল যতই ভালো হোক না কেন, তা বরবাদ হয়ে যাবে এবং পরকালে কোন কাজে আসবে না। আর বান্দা এর জন্য কোন ফলাফলও পাবে না। এমনকি তাকে হাউজে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে, আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি চিনতে পারব (উম্মত হিসেবে) আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও-দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৮৮।]
বিদআত শব্দের অর্থ হচ্ছে, কোনরূপ পূর্ব নমুনা না দেখে এবং অন্য কিছুর অনুসরণ না করেই কোন কাজ নতুনভাবে সৃষ্টি করা। শরীয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে,
اَلْمُرَادُ بِالْبِدْعَةِ مَا اَحْدَثَ فِي الدِّيْنِ مَا لَا اَصْلٌ لَهٗ فِى الشَّرِيْعَةِ يَدِلُّ عَلَيْهِ
বিদআত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, শরীয়াতে নব আবিস্কৃত ঐ সকল ইবাদাত, যার কোন ভিত্তি নেই। [মির‘আতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ১৬৫ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য।]
ইমাম কুরতুবী বলেছেন,
مَا لَمْ تُوَافِقْ كِتَابًا اَوْ سُنَّةً اَوْ عَمَلَ الصَّحَابَةِ
যা কিছু আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাত অথবা সাহাবাদের আমলের অনুরূপ নয় তা-ই বিদআত। [তাফসীরে কুরতুবীর ১১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় দ্রষ্টব্য।]
বিদআতের এ সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, বৈষয়িক জীবন যাপনের জন্য নিত্য নতুন উপায় উদ্ভাবন এবং নব আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি নির্মাণের সঙ্গে শরীয়াতী বিদআতের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা তার কোনটিই ইবাদাত হিসেবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় না। অবশ্য এ পর্যায়েও শর্ত এই যে, তার কোনটিই শরীয়াতের মূল আদর্শের বিপরীত হতে পারবে না। অনুরূপভাবে নবী করীম ﷺ এর সময় যে কাজ করার প্রয়োজন হয়নি; কিন্তু পরবর্তীকালে কোন দ্বীনি কাজের জন্য দ্বীনি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই তা করার প্রয়োজন দেখা দেবে, তা করাও বিদআতের পর্যায়ে গণ্য হতে পারে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা ও প্রচারমূলক সংস্থা ও দ্বীনি প্রচার বিভাগ কায়েম করা, কুরআন হাদীস বুঝানোর জন্য আরবি ব্যাকরণ রচনা করা, ইসলাম বিরোধীদের জবাব দেয়ার জন্য যুক্তিবিজ্ঞান ও দর্শন রচনা করা, জিহাদের জন্য আধুনিক অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষাদান, দ্রুতগামী ও সুবিধাজনক যানবাহন ব্যবহার করা- এসব জিনিস যদিও রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে বর্তমান রূপে প্রচলিত ছিল না; তা সত্ত্বেও এগুলোকে বিদআত বলা যাবে না। কেননা এসবের ব্যবস্থা করার কোন প্রয়োজন সেকালে দেখা যায়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলেই তা করা হয়েছে এবং তা দ্বীনের জন্যই জরুরি।
এক কথায় সুন্নাত হচ্ছে, নবী ﷺ আল্লাহর নিকট থেকে যে দ্বীন লাভ করেছেন, আর নিজে বাস্তব জীবনে যার অনুসরণ করে চলেছেন এবং জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন ও অনুসরণ করে চলতে বলেছেন। আর তার বিপরীত যা কিছু আছে তথা আকীদা-বিশ্বাস, কথা, আমল ও চরিত্র যে কোন ক্ষেত্রেই হোক তা-ই হলো বিদআত। এ দৃষ্টিতে সুন্নাত ও বিদআত দুটো পরস্পর বিপরীত মতাদর্শ। অর্থাৎ যা সুন্নাত তা বিদআত নয়, আর যা বিদআত তা সুন্নাত নয়।
اَلْمُرَادُ بِالْبِدْعَةِ مَا اَحْدَثَ فِي الدِّيْنِ مَا لَا اَصْلٌ لَهٗ فِى الشَّرِيْعَةِ يَدِلُّ عَلَيْهِ
বিদআত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, শরীয়াতে নব আবিস্কৃত ঐ সকল ইবাদাত, যার কোন ভিত্তি নেই। [মির‘আতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, ১৬৫ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য।]
ইমাম কুরতুবী বলেছেন,
مَا لَمْ تُوَافِقْ كِتَابًا اَوْ سُنَّةً اَوْ عَمَلَ الصَّحَابَةِ
যা কিছু আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাত অথবা সাহাবাদের আমলের অনুরূপ নয় তা-ই বিদআত। [তাফসীরে কুরতুবীর ১১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় দ্রষ্টব্য।]
বিদআতের এ সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট জানা গেল যে, বৈষয়িক জীবন যাপনের জন্য নিত্য নতুন উপায় উদ্ভাবন এবং নব আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি নির্মাণের সঙ্গে শরীয়াতী বিদআতের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা তার কোনটিই ইবাদাত হিসেবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় না। অবশ্য এ পর্যায়েও শর্ত এই যে, তার কোনটিই শরীয়াতের মূল আদর্শের বিপরীত হতে পারবে না। অনুরূপভাবে নবী করীম ﷺ এর সময় যে কাজ করার প্রয়োজন হয়নি; কিন্তু পরবর্তীকালে কোন দ্বীনি কাজের জন্য দ্বীনি লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই তা করার প্রয়োজন দেখা দেবে, তা করাও বিদআতের পর্যায়ে গণ্য হতে পারে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, মাদ্রাসা শিক্ষা ও প্রচারমূলক সংস্থা ও দ্বীনি প্রচার বিভাগ কায়েম করা, কুরআন হাদীস বুঝানোর জন্য আরবি ব্যাকরণ রচনা করা, ইসলাম বিরোধীদের জবাব দেয়ার জন্য যুক্তিবিজ্ঞান ও দর্শন রচনা করা, জিহাদের জন্য আধুনিক অস্ত্র বা যন্ত্রপাতি ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষাদান, দ্রুতগামী ও সুবিধাজনক যানবাহন ব্যবহার করা- এসব জিনিস যদিও রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে বর্তমান রূপে প্রচলিত ছিল না; তা সত্ত্বেও এগুলোকে বিদআত বলা যাবে না। কেননা এসবের ব্যবস্থা করার কোন প্রয়োজন সেকালে দেখা যায়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলেই তা করা হয়েছে এবং তা দ্বীনের জন্যই জরুরি।
এক কথায় সুন্নাত হচ্ছে, নবী ﷺ আল্লাহর নিকট থেকে যে দ্বীন লাভ করেছেন, আর নিজে বাস্তব জীবনে যার অনুসরণ করে চলেছেন এবং জনগণের সামনে উপস্থাপন করেছেন ও অনুসরণ করে চলতে বলেছেন। আর তার বিপরীত যা কিছু আছে তথা আকীদা-বিশ্বাস, কথা, আমল ও চরিত্র যে কোন ক্ষেত্রেই হোক তা-ই হলো বিদআত। এ দৃষ্টিতে সুন্নাত ও বিদআত দুটো পরস্পর বিপরীত মতাদর্শ। অর্থাৎ যা সুন্নাত তা বিদআত নয়, আর যা বিদআত তা সুন্নাত নয়।
আল্লাহ বিদআতীকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন :
﴿وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا﴾
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
যে হেদায়াত সুস্পষ্ট মূলত তা-ই সুন্নাত। এ সুন্নাতই হেদায়াতের একমাত্র রাজপথ। যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করে চলতে প্রস্তুত হয় না এবং মুমিনদের অনুসৃত আদর্শকে বাদ দিয়ে অপর কোন আদর্শ অনুসরণ করে চলে, তারাই বিদআতী। এদের পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতকে অনুসরণ করে চলাই কল্যাণ ও মুক্তি লাভের একমাত্র উপায়।
বিদআতী আমল যতই সুন্দর হোক কোন কাজে আসবে না :
﴿قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا﴾
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
অত্র আয়াতে বিদআতের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মূলত যাবতীয় কাজকর্ম ভুল ভিত্তিতে সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও যারা নিজেদের কাজকে খুবই ভালো ও খুবই ন্যায়সঙ্গত বা সওয়াবের কাজ বলে মনে করে, অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লোক। বিদআতপন্থীরাও ঠিক তেমনি। তারা যেসব কাজ করে, আসলে তা আল্লাহর দেয়া নীতির ভিত্তিতে নয়। তা সত্ত্বেও তারা এসব সওয়াবের কাজ বলে মনে করে। উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন,
وَاِنَّمَا هِيَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ مَنْ عَبَدَ اللهَ عَلٰى غَيْرِ طَرِيْقَةٍ مَّرْضِيَّةٍ يَّحْسَبُ اَنَّه مُصِيْبٌ فِيْهَا، وَاِنَّ عَمَلُه مَقْبُوْلٌ، وَهُوَ مُخْطِئٌ، وَعَمَلُه مَرْدُوْدٌ
এ আয়াত সাধারণভাবে এমন সব লোকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থার বিপরীত পন্থায়। তারা যদিও মনে করছে যে, তারা ঠিক কাজই করছে এবং আশা করছে যে, তাদের আমল আল্লাহর নিকট স্বীকৃত ও গৃহীত হবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ভুল নীতির অনুসারী এবং তাদের আমল আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَحْدَثَ فِي اَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই, সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৩৩।]
উপরোক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ اَمْرِنَا هٰذَا দ্বারা আমর বলতে ইসলামকেই বুঝিয়েছেন। এ দ্বীন এক পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন বা দ্বীনের কোন মৌলিক খুঁটিনাটি দিকও লুকায়িত নেই। এখন যদি কেউ এতে দ্বীন-বহির্ভূত কোন জিনিস বৃদ্ধি করতে চায় অথবা কোন দ্বীন বহির্ভূত বিষয়কে দ্বীনী বিষয় হিসেবে চালিয়ে দিতে চায় তাহলে সে গোটা দ্বীনকেই বিনষ্ট করে দেবে।
বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য নবী ﷺ কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন :
তিনি ﷺ বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَآءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ فَتَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَاِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْاُمُوْرِ
তোমাদের উপর আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত ধারণ করা। তোমরা একে শক্তভাবে ধারণ করো এবং তোমাদের মাড়ির দাঁত দিয়ে অাঁকড়ে ধরো। সাবধান! ইবাদাতের নামে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তৈরি করা সকল নব উদ্ভাবিত কাজ থেকে বিরত থাকো। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৭; সুনানে বায়হাকী আল কুবরা, হা/২০১২৫; দারেমী, হা/৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৫।]
সকল বিদআতই গোমরাহী :
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ .. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وَاِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَاِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইবরায বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৭; দারেমী, হা/৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৪।]
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। এটি দ্বীনের একটি বিশেষ মূলনীতি। সুতরাং যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করবে এবং তাকে দ্বীনের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করবে, সেটিই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। দ্বীন এ সকল বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
অনেকে বিদআতকে হাসানাহ ও সাইয়্যেআহ- এভাবে ভাগ করে থাকেন। কিন্তু এভাবে ভাগ করার কোন প্রয়োজন নেই। হাদীসে সকল বিদআতকেই গোমরাহী বলা হয়েছে। সুতরাং বিদআতকে ভাগ করা হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। বিদআতে হাসানাহ বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা মূলত বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না।
নবী ﷺ এর সাহাবীরা বিদআতকে সহ্য করেননি :
عَنْ عُمَرٍو بْنِ يَحْيٰى ، قَالَ : سَمِعْتُ اَبِيْ يُحَدِّثُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كُنَّا نَجْلِسُ عَلٰى بَابِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَبْلَ صَلَاةِ الْغَدَاةِ فَاِذَا خَرَجَ مَشَيْنَا مَعَهٗ اِلَى الْمَسْجِدِ فَجَاءَنَا اَبُوْ مُوْسَى الْاَشْعَرِيُّ فَقَالَ اَخَرَجَ اِلَيْكُمْ اَبُوْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بَعْدُ قُلْنَا لَا بَعْدُ فَجَلَسَ مَعَنَا حَتّٰى خَرَجَ فَلَمَّا خَرَجَ قُمْنَا اِلَيْهِ جَمِيْعًا فَقَالَ لَهٗ اَبُوْ مُوْسٰى يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ اِنِّيْ رَاَيْتُ فِي الْمَسْجِدِ اٰنِفًا اَمْرًا اَنْكَرْتُهٗ وَلَمْ اَرَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ اِلَّا خَيْرًا . قَالَ فَمَا هُوَ فَقَالَ اِنْ عِشْتَ فَسَتَرَاهُ ، قَالَ : رَاَيْتُ فِي الْمَسْجِدِ قَوْمًا حِلَقًا جُلُوْسًا يَنْتَظِرُوْنَ الصَّلَاةَ فِيْ كُلِّ حَلْقَةٍ رَجُلٌ وَفِيْ اَيْدِيْهِمْ حَصًى فَيَقُوْلُ : كَبِّرُوْا مِائَةً فَيُكَبِّرُوْنَ مِائَةً فَيَقُوْلُ : هَلِّلُوْا مِائَةً فَيُهَلِّلُوْنَ مِائَةً وَيَقُوْلُ : سَبِّحُوْا مِائَةً فَيُسَبِّحُوْنَ مِائَةً قَالَ فَمَاذَا قُلْتَ لَهُمْ قَالَ مَا قُلْتُ لَهُمْ شَيْئًا انْتِظَارَ رَأْيِكَ ، اَوِ انْتِظَارَ اَمْرِكَ قَالَ اَفَلَا اَمَرْتَهُمْ اَنْ يَعُدُّوْا سَيِّئَاتِهِمْ وَضَمِنْتَ لَهُمْ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِهِمْ ، ثُمَّ مَضٰى وَمَضَيْنَا مَعَهٗ حَتّٰى اَتٰى حَلَقَةً مِنْ تِلْكَ الْحِلَقِ فَوَقَفَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ مَا هٰذَا الَّذِيْ اَرَاكُمْ تَصْنَعُوْنَ قَالُوْا : يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ حَصًى نَعُدُّ بِهٖ التَّكْبِيْرَ وَالتَّهْلِيْلَ وَالتَّسْبِيْحَ قَالَ فَعُدُّوْا سَيِّئَاتِكُمْ فَاَنَا ضَامِنٌ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِكُمْ شَيْءٌ وَيْحَكُمْ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا اَسْرَعَ هَلَكَتَكُمْ هٰؤُلَاءِ صَحَابَةُ نَبِيِّكُمْ مُتَوَافِرُوْنَ وَهٰذِهٖ ثِيَابُهٗ لَمْ تَبْلَ وَاٰنِيَتُهٗ لَمْ تُكْسَرْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّكُمْ لَعَلٰى مِلَّةٍ هِيَ اَهْدٰى مِنْ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ اَوْ مُفْتَتِحُوْا بَابِ ضَلَالَةٍ قَالُوْا وَاللهِ يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ مَا اَرَدْنَا اِلَّا الْخَيْرَ قَالَ وَكَمْ مِنْ مُرِيْدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيْبَهٗ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَدَّثَنَا اَنَّ قَوْمًا يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ , وَايْمُ اللهِ مَا اَدْرِيْ لَعَلَّ اَكْثَرَهُمْ مِنْكُمْ ، ثُمَّ تَوَلّٰى عَنْهُمْ
আমর ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের সালাতের পূর্বে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর দরজায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে হেটে বের হলেন। এমন সময় আবু মুসা আশআরী (রাঃ)ও আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান কি তোমাদের নিকট এসেছে? আমরা বললাম, না- আসেনি। অতঃপর তিনি আবু আবদুর রহমান না আসা পর্যন্ত আমাদের সাথে বসলেন। পরে যখন তিনি আসলেন তখন আমরা সকলে তার দিকে অগ্রসর হলাম। অতঃপর আবু মুসা (রাঃ) বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি এখনি মসজিদের মধ্যে এমন কিছু দেখতে পেলাম, যা আমি পছন্দ করিনি এবং ইতোপূর্বে আমি তা কখনো দেখিনি। তবে আমি এর মধ্যে ভালো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটা কি? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, তুমি বেঁচে থাকলে দেখতে পাবে। এরপর বললেন, আমি মসজিদে দেখলাম যে, কিছু লোক একসাথে বসে আছে। তারা সালাতের অপেক্ষা করছে আর তাদের প্রত্যেকের হাতে পাথরকণা রয়েছে এবং প্রত্যেক হালকাতে একজন লোক রয়েছে যে বলছে, তোমরা একশ’ বার সুবহানাল্লাহ, একশ’ বার আল্লাহু আকবার এবং একশ’ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ পড়। তাই তারা এ পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করছিল।
এটা শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাদেরকে কী বলেছ? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আপনার মতামত জানার আগে আমি কিছুই বলিনি। তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে এটা বলতে পারলে না যে, তারা যেন তাদের পাপসমূহ গণনা করে। আর তাদের নেক আমলসমূহ নষ্ট না হওয়ার জন্য তুমি জামিন হতে পারলে না?
এরপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাদের সামনে আসলেন এবং আমরাও তার সাথে গেলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে এটা কী দেখতে পেলাম। তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! এগুলো হলো পাথরকণা, যা দ্বারা আমরা তাসবীহ গণনা করি। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি এভাবে তোমাদের নেক আমলগুলো নষ্ট করতে শুরু করেছ। আমি জামিন হচ্ছি যে, তোমাদের কোন নেক আমল নষ্ট হবে না। শুন, হে মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত! তোমরা এত দ্রুত কীভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। অথচ নবীর সাহাবীরা এখনো জীবিত, তার পোষাকগুলো এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, তার বাসনগুলো এখনো ভেঙ্গে যায়নি। আল্লাহর কসম! তোমরা মুহাম্মাদের আদর্শের চেয়ে উত্তম কোন আদর্শ পেয়ে বসেছ? নাকি তোমরা কোন গোমরাহীর দরজা খুলে দিচ্ছ? তখন তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা তো এর দ্বারা ভালো ছাড়া অন্য কিছু চাইনি। তিনি বললেন, শুন! অনেক কল্যাণকামী আছে কল্যাণের আকাংখা করে কিন্তু সে মূলত কল্যাণ পায় না। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় এমন একটি সম্প্রদায় আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছবে না। আল্লাহর কসম! আমি জানি না যে, তাদের মধ্যে কি তোমাদের সংখ্যা বেশি হবে? এরপর তিনি তাদের থেকে সরে গেলেন। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২১০।]
যেখানেই কোন বিদআত শুরু হয় সেখান থেকে সমপরিমাণ সুন্নাত উঠে যায় :
عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ : مَا اَخَذَ رَجُلٌ بِبِدْعَةٍ فَرَاجَعَ سُنَّةً
ইবনে সীরীন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যে পরিমাণ বিদআত করে সেই পরিমাণ সুন্নাত তার থেকে বিলিন হয়ে যায়। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২১৪।]
সুন্নাতের উপর সীমাবদ্ধ থাকা বিদআতে কষ্ট স্বীকার করার চেয়ে উত্তম :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : اَ لْقَصْدُ فِي السُّنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الْاِجْتِهَادِ فِي الْبِدْعَةِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুন্নাতের উপর আমল করে প্রতিষ্ঠিত থাকা বিদআতের উপর প্রচেষ্টা করার চেয়ে অনেক উত্তম। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২২৩।]
﴿وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا﴾
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা- ১১৫)
যে হেদায়াত সুস্পষ্ট মূলত তা-ই সুন্নাত। এ সুন্নাতই হেদায়াতের একমাত্র রাজপথ। যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ অনুসরণ করে চলতে প্রস্তুত হয় না এবং মুমিনদের অনুসৃত আদর্শকে বাদ দিয়ে অপর কোন আদর্শ অনুসরণ করে চলে, তারাই বিদআতী। এদের পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতকে অনুসরণ করে চলাই কল্যাণ ও মুক্তি লাভের একমাত্র উপায়।
বিদআতী আমল যতই সুন্দর হোক কোন কাজে আসবে না :
﴿قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا﴾
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রসত্মদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
অত্র আয়াতে বিদআতের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মূলত যাবতীয় কাজকর্ম ভুল ভিত্তিতে সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও যারা নিজেদের কাজকে খুবই ভালো ও খুবই ন্যায়সঙ্গত বা সওয়াবের কাজ বলে মনে করে, অথচ তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত লোক। বিদআতপন্থীরাও ঠিক তেমনি। তারা যেসব কাজ করে, আসলে তা আল্লাহর দেয়া নীতির ভিত্তিতে নয়। তা সত্ত্বেও তারা এসব সওয়াবের কাজ বলে মনে করে। উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন,
وَاِنَّمَا هِيَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ مَنْ عَبَدَ اللهَ عَلٰى غَيْرِ طَرِيْقَةٍ مَّرْضِيَّةٍ يَّحْسَبُ اَنَّه مُصِيْبٌ فِيْهَا، وَاِنَّ عَمَلُه مَقْبُوْلٌ، وَهُوَ مُخْطِئٌ، وَعَمَلُه مَرْدُوْدٌ
এ আয়াত সাধারণভাবে এমন সব লোকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থার বিপরীত পন্থায়। তারা যদিও মনে করছে যে, তারা ঠিক কাজই করছে এবং আশা করছে যে, তাদের আমল আল্লাহর নিকট স্বীকৃত ও গৃহীত হবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ভুল নীতির অনুসারী এবং তাদের আমল আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ اَحْدَثَ فِي اَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই, সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০৩৩।]
উপরোক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ اَمْرِنَا هٰذَا দ্বারা আমর বলতে ইসলামকেই বুঝিয়েছেন। এ দ্বীন এক পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন বা দ্বীনের কোন মৌলিক খুঁটিনাটি দিকও লুকায়িত নেই। এখন যদি কেউ এতে দ্বীন-বহির্ভূত কোন জিনিস বৃদ্ধি করতে চায় অথবা কোন দ্বীন বহির্ভূত বিষয়কে দ্বীনী বিষয় হিসেবে চালিয়ে দিতে চায় তাহলে সে গোটা দ্বীনকেই বিনষ্ট করে দেবে।
বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য নবী ﷺ কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন :
তিনি ﷺ বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَآءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ فَتَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَاِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْاُمُوْرِ
তোমাদের উপর আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত ধারণ করা। তোমরা একে শক্তভাবে ধারণ করো এবং তোমাদের মাড়ির দাঁত দিয়ে অাঁকড়ে ধরো। সাবধান! ইবাদাতের নামে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তৈরি করা সকল নব উদ্ভাবিত কাজ থেকে বিরত থাকো। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৭; সুনানে বায়হাকী আল কুবরা, হা/২০১২৫; দারেমী, হা/৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৫।]
সকল বিদআতই গোমরাহী :
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ .. قَالَ رَسُوْلُ اللهِ وَاِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَاِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইবরায বিন সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, তোমরা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেক নব আবিষ্কৃত বিষয়ই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। [আবু দাউদ, হা/৪৬০৭; দারেমী, হা/৯৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৪৪।]
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। এটি দ্বীনের একটি বিশেষ মূলনীতি। সুতরাং যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন ও প্রবর্তন করবে এবং তাকে দ্বীনের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করবে, সেটিই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। দ্বীন এ সকল বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
অনেকে বিদআতকে হাসানাহ ও সাইয়্যেআহ- এভাবে ভাগ করে থাকেন। কিন্তু এভাবে ভাগ করার কোন প্রয়োজন নেই। হাদীসে সকল বিদআতকেই গোমরাহী বলা হয়েছে। সুতরাং বিদআতকে ভাগ করা হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। বিদআতে হাসানাহ বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা মূলত বিদআতের সংজ্ঞায় পড়ে না।
নবী ﷺ এর সাহাবীরা বিদআতকে সহ্য করেননি :
عَنْ عُمَرٍو بْنِ يَحْيٰى ، قَالَ : سَمِعْتُ اَبِيْ يُحَدِّثُ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ : كُنَّا نَجْلِسُ عَلٰى بَابِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَبْلَ صَلَاةِ الْغَدَاةِ فَاِذَا خَرَجَ مَشَيْنَا مَعَهٗ اِلَى الْمَسْجِدِ فَجَاءَنَا اَبُوْ مُوْسَى الْاَشْعَرِيُّ فَقَالَ اَخَرَجَ اِلَيْكُمْ اَبُوْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بَعْدُ قُلْنَا لَا بَعْدُ فَجَلَسَ مَعَنَا حَتّٰى خَرَجَ فَلَمَّا خَرَجَ قُمْنَا اِلَيْهِ جَمِيْعًا فَقَالَ لَهٗ اَبُوْ مُوْسٰى يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ اِنِّيْ رَاَيْتُ فِي الْمَسْجِدِ اٰنِفًا اَمْرًا اَنْكَرْتُهٗ وَلَمْ اَرَ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ اِلَّا خَيْرًا . قَالَ فَمَا هُوَ فَقَالَ اِنْ عِشْتَ فَسَتَرَاهُ ، قَالَ : رَاَيْتُ فِي الْمَسْجِدِ قَوْمًا حِلَقًا جُلُوْسًا يَنْتَظِرُوْنَ الصَّلَاةَ فِيْ كُلِّ حَلْقَةٍ رَجُلٌ وَفِيْ اَيْدِيْهِمْ حَصًى فَيَقُوْلُ : كَبِّرُوْا مِائَةً فَيُكَبِّرُوْنَ مِائَةً فَيَقُوْلُ : هَلِّلُوْا مِائَةً فَيُهَلِّلُوْنَ مِائَةً وَيَقُوْلُ : سَبِّحُوْا مِائَةً فَيُسَبِّحُوْنَ مِائَةً قَالَ فَمَاذَا قُلْتَ لَهُمْ قَالَ مَا قُلْتُ لَهُمْ شَيْئًا انْتِظَارَ رَأْيِكَ ، اَوِ انْتِظَارَ اَمْرِكَ قَالَ اَفَلَا اَمَرْتَهُمْ اَنْ يَعُدُّوْا سَيِّئَاتِهِمْ وَضَمِنْتَ لَهُمْ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِهِمْ ، ثُمَّ مَضٰى وَمَضَيْنَا مَعَهٗ حَتّٰى اَتٰى حَلَقَةً مِنْ تِلْكَ الْحِلَقِ فَوَقَفَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ مَا هٰذَا الَّذِيْ اَرَاكُمْ تَصْنَعُوْنَ قَالُوْا : يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ حَصًى نَعُدُّ بِهٖ التَّكْبِيْرَ وَالتَّهْلِيْلَ وَالتَّسْبِيْحَ قَالَ فَعُدُّوْا سَيِّئَاتِكُمْ فَاَنَا ضَامِنٌ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِكُمْ شَيْءٌ وَيْحَكُمْ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا اَسْرَعَ هَلَكَتَكُمْ هٰؤُلَاءِ صَحَابَةُ نَبِيِّكُمْ مُتَوَافِرُوْنَ وَهٰذِهٖ ثِيَابُهٗ لَمْ تَبْلَ وَاٰنِيَتُهٗ لَمْ تُكْسَرْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّكُمْ لَعَلٰى مِلَّةٍ هِيَ اَهْدٰى مِنْ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ اَوْ مُفْتَتِحُوْا بَابِ ضَلَالَةٍ قَالُوْا وَاللهِ يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ مَا اَرَدْنَا اِلَّا الْخَيْرَ قَالَ وَكَمْ مِنْ مُرِيْدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيْبَهٗ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَدَّثَنَا اَنَّ قَوْمًا يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ , وَايْمُ اللهِ مَا اَدْرِيْ لَعَلَّ اَكْثَرَهُمْ مِنْكُمْ ، ثُمَّ تَوَلّٰى عَنْهُمْ
আমর ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের সালাতের পূর্বে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর দরজায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে হেটে বের হলেন। এমন সময় আবু মুসা আশআরী (রাঃ)ও আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান কি তোমাদের নিকট এসেছে? আমরা বললাম, না- আসেনি। অতঃপর তিনি আবু আবদুর রহমান না আসা পর্যন্ত আমাদের সাথে বসলেন। পরে যখন তিনি আসলেন তখন আমরা সকলে তার দিকে অগ্রসর হলাম। অতঃপর আবু মুসা (রাঃ) বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি এখনি মসজিদের মধ্যে এমন কিছু দেখতে পেলাম, যা আমি পছন্দ করিনি এবং ইতোপূর্বে আমি তা কখনো দেখিনি। তবে আমি এর মধ্যে ভালো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটা কি? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, তুমি বেঁচে থাকলে দেখতে পাবে। এরপর বললেন, আমি মসজিদে দেখলাম যে, কিছু লোক একসাথে বসে আছে। তারা সালাতের অপেক্ষা করছে আর তাদের প্রত্যেকের হাতে পাথরকণা রয়েছে এবং প্রত্যেক হালকাতে একজন লোক রয়েছে যে বলছে, তোমরা একশ’ বার সুবহানাল্লাহ, একশ’ বার আল্লাহু আকবার এবং একশ’ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ পড়। তাই তারা এ পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করছিল।
এটা শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাদেরকে কী বলেছ? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আপনার মতামত জানার আগে আমি কিছুই বলিনি। তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে এটা বলতে পারলে না যে, তারা যেন তাদের পাপসমূহ গণনা করে। আর তাদের নেক আমলসমূহ নষ্ট না হওয়ার জন্য তুমি জামিন হতে পারলে না?
এরপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাদের সামনে আসলেন এবং আমরাও তার সাথে গেলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে এটা কী দেখতে পেলাম। তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! এগুলো হলো পাথরকণা, যা দ্বারা আমরা তাসবীহ গণনা করি। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি এভাবে তোমাদের নেক আমলগুলো নষ্ট করতে শুরু করেছ। আমি জামিন হচ্ছি যে, তোমাদের কোন নেক আমল নষ্ট হবে না। শুন, হে মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত! তোমরা এত দ্রুত কীভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। অথচ নবীর সাহাবীরা এখনো জীবিত, তার পোষাকগুলো এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, তার বাসনগুলো এখনো ভেঙ্গে যায়নি। আল্লাহর কসম! তোমরা মুহাম্মাদের আদর্শের চেয়ে উত্তম কোন আদর্শ পেয়ে বসেছ? নাকি তোমরা কোন গোমরাহীর দরজা খুলে দিচ্ছ? তখন তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা তো এর দ্বারা ভালো ছাড়া অন্য কিছু চাইনি। তিনি বললেন, শুন! অনেক কল্যাণকামী আছে কল্যাণের আকাংখা করে কিন্তু সে মূলত কল্যাণ পায় না। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় এমন একটি সম্প্রদায় আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছবে না। আল্লাহর কসম! আমি জানি না যে, তাদের মধ্যে কি তোমাদের সংখ্যা বেশি হবে? এরপর তিনি তাদের থেকে সরে গেলেন। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২১০।]
যেখানেই কোন বিদআত শুরু হয় সেখান থেকে সমপরিমাণ সুন্নাত উঠে যায় :
عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ : مَا اَخَذَ رَجُلٌ بِبِدْعَةٍ فَرَاجَعَ سُنَّةً
ইবনে সীরীন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যে পরিমাণ বিদআত করে সেই পরিমাণ সুন্নাত তার থেকে বিলিন হয়ে যায়। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২১৪।]
সুন্নাতের উপর সীমাবদ্ধ থাকা বিদআতে কষ্ট স্বীকার করার চেয়ে উত্তম :
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ : اَ لْقَصْدُ فِي السُّنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الْاِجْتِهَادِ فِي الْبِدْعَةِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুন্নাতের উপর আমল করে প্রতিষ্ঠিত থাকা বিদআতের উপর প্রচেষ্টা করার চেয়ে অনেক উত্তম। [মুসনাদুদ দারেমী, হা/২২৩।]
দ্বীনে কোন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করার কোন অধিকারই কারো থাকতে পারে না। বস্তুত দ্বীন পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তাতে কোন জিনিসের বৃদ্ধি করা বা কোন নতুন জিনিসকে দ্বীন মনে করে তদানুযায়ী আমল করা- আমল করলে সওয়াব হবে বলে মনে করাই হচ্ছে বিদআতের মূল কথা। যে বিষয়েই এরূপ অবস্থা হবে, তা-ই হচ্ছে বিদআত। কেননা এরূপ করা হলে আল্লাহ দ্বীনকে পূর্ণ করে দেয়ার পরও মনে করা হচেছ যে, তা পূর্ণ নয়। এ ভাবধারা কুরআনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন,
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন হিসেবে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। তাতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। অতএব তা মানবজাতির জন্য চিরকালের যাবতীয় দ্বীনি প্রয়োজন পূরণে পূর্ণমাত্রায় সক্ষম। সুতরাং এ দ্বীনের অনুসরণকারীদের এমন কোন প্রয়োজন হবে না যে, তাদেরকে এ দ্বীন ছাড়া অন্য কোন দ্বীন বা বিধিবিধানের দিকে তাকাতে হবে অথবা এতে অতিরিক্ত কোনকিছু সংযুক্ত করতে হবে। কেননা এতে মানুষের সব মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এতে কোন অপ্রয়োজনীয় বিধান নেই। অতএব এতে কোন কিছু বৃদ্ধি করা যেতে পারে না, আবার তা থেকে কোন কিছু বাদও দেয়া যাবে না। আর ইবাদাতের ক্ষেত্রে সওয়াবের কাজ বলে এমন সব অনুষ্ঠানের উদ্ভাবন করা, যা নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে চালু হয়নি, তা দেখতে যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন তা স্পষ্ট বিদআত এবং উপরোক্ত আয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইবাদাতের কাজকর্মে যদি মনগড়া নিয়ম, শর্ত ও অনুষ্ঠানাদিকে বরদাশত করে নেয়া হয়, তাহলে তাতে নতুন নতুন জিনিস এত বেশি শামিল হয়ে যাবে যে, পরে কোন্টি আসল আর কোন্টি নকল- তা নির্দিষ্ট করাই সম্ভব হবে না। অতীত কালের নবীদের উম্মতদের দ্বারা নবীর উপস্থাপিত দ্বীন বিকৃত হয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ এটাই। তারা নবীর প্রবর্তিত ইবাদাতে মনগড়াভাবে নতুন জিনিস শামিল করে নিয়েছিল। ফলে কিছুকাল পর আসল দ্বীনকেই হারিয়ে ফেলেছিল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنَ سَارِيَةَ يَقُوْلُ : وَعَظَنَا رَسُوْلُ اللهِ مَوْعِظَةً , ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ ، وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ ، فَقُلْنَا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّ هٰذِهٖ لَمَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ ، فَمَا تَعْهَدُ اِلَيْنَا ؟ قَالَ : قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا ، لَا يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِيْ اِلَّا هَالِكٌ ، فَمَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا ، فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِيْ ، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ ، عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ ، وَعَلَيْكُمْ بِالطَّاعَةِ ، وَاِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا ، فَاِنَّمَا الْمُؤْمِنُ كَالْجَمَلِ الْاَنِفِ ، حَيْثُمَا قِيْدَ انْقَادَ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ করলেন এবং উপদেশ দিলেন। তার প্রতিক্রিয়া ও প্রভাবে উপস্থিত লোকদের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। তাদের অন্তর নরম হয়ে গেল এবং কেঁপে উঠল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো বিদায় গ্রহণকারীর মতো বক্তব্য দিলেন। তাহলে আমাদের প্রতি আপনি কী নির্দেশ দিচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি তোমাদেরকে এমন এক উজ্জ্বল আদর্শের উপর রেখে যাচ্ছি, যার দৃষ্টিতে সত্য রাত ও দিনের মতোই উদ্ভাসিত। আমার চলে যাওয়ার পর যে-ই এর বিরোধিতা করবে সে-ই ধ্বংস হবে। আর আমার পর যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমাদের উচিত হবে আমার এবং আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা। তোমরা দাঁত দ্বারা কামড় দিয়ে এই সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরবে। আর তোমরা আনুগত্য করবে যদিও কোন হাবশী গোলামকে তোমাদের নেতা বানানো হয়। কেননা মুমিন হচ্ছে বাধা উটের মতো, সে যেখানেই যায় আনুগত্যশীল হয়। [ইবনে মাজাহ, হা/৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫০২৩।]
নবী করীম ﷺ বিশ্ব-মানবতাকে এক উজ্জ্বল পথের দিশা দিয়ে যাওয়ার জন্যই এসেছিলেন। তিনি পূর্ণ মাত্রায় তাঁর এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর তাতে তিনি কোনরূপ অপূর্ণতা রেখে যাননি। এ কারণে ইমাম মালেক (রহ.) বলেন,
مَنْ قَالَ : اِنَّ فِيْ الْاِسْلَامِ بِدْعَةٌ حَسَنَةٌ فَقَدْ زَعَمَ اَنَّ مُحَمَّدًا خَانَ الرِّسَالَةِ؛ لِاَنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ : ﴿ اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾ ثُمَّ قَالَ : مَا لَمْ َيُكُنْ دِيْنًا يَوْمَئِذٍ فَاِنَّهٗ لَا يَكُوْنُ الْيَوْمُ دِيْنًا
যে ব্যক্তি বলবে যে, ইসলামে বিদআতে হাসানাহ-র অস্তিত্ব রয়েছে, সে যেন ধারণা করে নিয়েছে যে, নবী ﷺ রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খিয়ানত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আজ আমি দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি। আর আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে দিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছি।’’ [সূরা মায়েদা- ৩।] এরপর তিনি বলেন, যেসব কাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে দ্বীন হিসেবে স্বীকৃত ছিল না সেসব কাজ আজও দ্বীন হিসেবে স্বীকৃত হবে না। [শারহুস সুনানে আবু দাউদ লি আবদুল মুহসিন আল আববাদ, ২৬/২৯২।] অর্থাৎ যে ইবাদাত নবী ও সাহাবায়ে কেরাম করেননি সেই ইবাদাত আর কেউ আবিষ্কার করতে পারে না।
কুরআনে এ কথাই বলা হয়েছে,
﴿يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ﴾
হে আহলে কিতাব, তোমরা নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং ঈসার ঘটনা নিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কোনকিছুই (মিথ্যা) বলো না। (সূরা নিসা- ১৭১)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে সম্বোধন করে দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে ও ঈসা (আঃ) এর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। কেননা ইয়াহুদিরা তাদের নবীর মৃত্যুর পরপরই দ্বীনের ব্যাপারে বাড়বাড়ি শুরু করে দিয়েছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা তাদের আসল দ্বীন থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ) কে তাদের প্রভুর আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর এসবই ছিল তাদের আলেমদের উদভাবিত বিদআতের ফল। তাদের নানা ধরণের উদ্ভাবিত বিদআতের মধ্যে সন্ন্যাসবাদও ছিল এক ধরনের বিদআত। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,
﴿وَرَهْبَانِيَّةَنِ ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ اِلَّا ابْتِغَآءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا﴾
সন্ন্যাসবাদ (সংসারত্যাগী) তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করে নিয়েছিল। অথচ আমি তাদেরকে এর বিধান দেইনি, কিন্তু এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। (সূরা হাদীদ- ২৭)
অতএব দ্বীনকে যথাযথভাবে গ্রহণ করাই মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাতে নিজ থেকে কিছু বাড়িয়ে দেয়া বা কোন কিছু বাদ দিয়ে কমানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কাজ। এমনকি আল্লাহর দ্বীনে যে কাজের যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সে কাজকে ঠিক ততটুকু গুরুত্ব না দিয়ে কম-বেশি করা নিতান্ত বাড়াবাড়ি। এমন কোন কাজকে দ্বীনের কাজ হিসেবে চালিয়ে দেয়া, যা আদৌ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়- তা সুস্পষ্টভাবে দুষণীয় ও মারাত্মক অপরাধ।
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
এ আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দ্বীন হিসেবে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। তাতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। অতএব তা মানবজাতির জন্য চিরকালের যাবতীয় দ্বীনি প্রয়োজন পূরণে পূর্ণমাত্রায় সক্ষম। সুতরাং এ দ্বীনের অনুসরণকারীদের এমন কোন প্রয়োজন হবে না যে, তাদেরকে এ দ্বীন ছাড়া অন্য কোন দ্বীন বা বিধিবিধানের দিকে তাকাতে হবে অথবা এতে অতিরিক্ত কোনকিছু সংযুক্ত করতে হবে। কেননা এতে মানুষের সব মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এতে কোন অপ্রয়োজনীয় বিধান নেই। অতএব এতে কোন কিছু বৃদ্ধি করা যেতে পারে না, আবার তা থেকে কোন কিছু বাদও দেয়া যাবে না। আর ইবাদাতের ক্ষেত্রে সওয়াবের কাজ বলে এমন সব অনুষ্ঠানের উদ্ভাবন করা, যা নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে চালু হয়নি, তা দেখতে যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন তা স্পষ্ট বিদআত এবং উপরোক্ত আয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
ইবাদাতের কাজকর্মে যদি মনগড়া নিয়ম, শর্ত ও অনুষ্ঠানাদিকে বরদাশত করে নেয়া হয়, তাহলে তাতে নতুন নতুন জিনিস এত বেশি শামিল হয়ে যাবে যে, পরে কোন্টি আসল আর কোন্টি নকল- তা নির্দিষ্ট করাই সম্ভব হবে না। অতীত কালের নবীদের উম্মতদের দ্বারা নবীর উপস্থাপিত দ্বীন বিকৃত হয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ এটাই। তারা নবীর প্রবর্তিত ইবাদাতে মনগড়াভাবে নতুন জিনিস শামিল করে নিয়েছিল। ফলে কিছুকাল পর আসল দ্বীনকেই হারিয়ে ফেলেছিল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ الْعِرْبَاضِ بْنَ سَارِيَةَ يَقُوْلُ : وَعَظَنَا رَسُوْلُ اللهِ مَوْعِظَةً , ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ ، وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ ، فَقُلْنَا : يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اِنَّ هٰذِهٖ لَمَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ ، فَمَا تَعْهَدُ اِلَيْنَا ؟ قَالَ : قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا ، لَا يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِيْ اِلَّا هَالِكٌ ، فَمَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيْرًا ، فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِيْ ، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ الْمَهْدِيِّيْنَ ، عَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ ، وَعَلَيْكُمْ بِالطَّاعَةِ ، وَاِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا ، فَاِنَّمَا الْمُؤْمِنُ كَالْجَمَلِ الْاَنِفِ ، حَيْثُمَا قِيْدَ انْقَادَ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ করলেন এবং উপদেশ দিলেন। তার প্রতিক্রিয়া ও প্রভাবে উপস্থিত লোকদের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। তাদের অন্তর নরম হয়ে গেল এবং কেঁপে উঠল। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো বিদায় গ্রহণকারীর মতো বক্তব্য দিলেন। তাহলে আমাদের প্রতি আপনি কী নির্দেশ দিচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আমি তোমাদেরকে এমন এক উজ্জ্বল আদর্শের উপর রেখে যাচ্ছি, যার দৃষ্টিতে সত্য রাত ও দিনের মতোই উদ্ভাসিত। আমার চলে যাওয়ার পর যে-ই এর বিরোধিতা করবে সে-ই ধ্বংস হবে। আর আমার পর যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমাদের উচিত হবে আমার এবং আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা। তোমরা দাঁত দ্বারা কামড় দিয়ে এই সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরবে। আর তোমরা আনুগত্য করবে যদিও কোন হাবশী গোলামকে তোমাদের নেতা বানানো হয়। কেননা মুমিন হচ্ছে বাধা উটের মতো, সে যেখানেই যায় আনুগত্যশীল হয়। [ইবনে মাজাহ, হা/৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৫০২৩।]
নবী করীম ﷺ বিশ্ব-মানবতাকে এক উজ্জ্বল পথের দিশা দিয়ে যাওয়ার জন্যই এসেছিলেন। তিনি পূর্ণ মাত্রায় তাঁর এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর তাতে তিনি কোনরূপ অপূর্ণতা রেখে যাননি। এ কারণে ইমাম মালেক (রহ.) বলেন,
مَنْ قَالَ : اِنَّ فِيْ الْاِسْلَامِ بِدْعَةٌ حَسَنَةٌ فَقَدْ زَعَمَ اَنَّ مُحَمَّدًا خَانَ الرِّسَالَةِ؛ لِاَنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ : ﴿ اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾ ثُمَّ قَالَ : مَا لَمْ َيُكُنْ دِيْنًا يَوْمَئِذٍ فَاِنَّهٗ لَا يَكُوْنُ الْيَوْمُ دِيْنًا
যে ব্যক্তি বলবে যে, ইসলামে বিদআতে হাসানাহ-র অস্তিত্ব রয়েছে, সে যেন ধারণা করে নিয়েছে যে, নবী ﷺ রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খিয়ানত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আজ আমি দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি। আর আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে দিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছি।’’ [সূরা মায়েদা- ৩।] এরপর তিনি বলেন, যেসব কাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে দ্বীন হিসেবে স্বীকৃত ছিল না সেসব কাজ আজও দ্বীন হিসেবে স্বীকৃত হবে না। [শারহুস সুনানে আবু দাউদ লি আবদুল মুহসিন আল আববাদ, ২৬/২৯২।] অর্থাৎ যে ইবাদাত নবী ও সাহাবায়ে কেরাম করেননি সেই ইবাদাত আর কেউ আবিষ্কার করতে পারে না।
কুরআনে এ কথাই বলা হয়েছে,
﴿يَاۤ اَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوْا فِيْ دِيْنِكُمْ وَلَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلَّا الْحَقَّ﴾
হে আহলে কিতাব, তোমরা নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং ঈসার ঘটনা নিয়ে আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া কোনকিছুই (মিথ্যা) বলো না। (সূরা নিসা- ১৭১)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে সম্বোধন করে দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে ও ঈসা (আঃ) এর ব্যাপারে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। কেননা ইয়াহুদিরা তাদের নবীর মৃত্যুর পরপরই দ্বীনের ব্যাপারে বাড়বাড়ি শুরু করে দিয়েছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা তাদের আসল দ্বীন থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আর খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ) কে তাদের প্রভুর আসনে বসিয়ে দিয়েছিল। আর এসবই ছিল তাদের আলেমদের উদভাবিত বিদআতের ফল। তাদের নানা ধরণের উদ্ভাবিত বিদআতের মধ্যে সন্ন্যাসবাদও ছিল এক ধরনের বিদআত। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন,
﴿وَرَهْبَانِيَّةَنِ ابْتَدَعُوْهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ اِلَّا ابْتِغَآءَ رِضْوَانِ اللهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا﴾
সন্ন্যাসবাদ (সংসারত্যাগী) তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রবর্তন করে নিয়েছিল। অথচ আমি তাদেরকে এর বিধান দেইনি, কিন্তু এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। (সূরা হাদীদ- ২৭)
অতএব দ্বীনকে যথাযথভাবে গ্রহণ করাই মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাতে নিজ থেকে কিছু বাড়িয়ে দেয়া বা কোন কিছু বাদ দিয়ে কমানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কাজ। এমনকি আল্লাহর দ্বীনে যে কাজের যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সে কাজকে ঠিক ততটুকু গুরুত্ব না দিয়ে কম-বেশি করা নিতান্ত বাড়াবাড়ি। এমন কোন কাজকে দ্বীনের কাজ হিসেবে চালিয়ে দেয়া, যা আদৌ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়- তা সুস্পষ্টভাবে দুষণীয় ও মারাত্মক অপরাধ।
বিদআত চালু হওয়ার মূলে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। তা হলো :
১. বিদআতী তা নিজের থেকে উদ্ভাবন করে সমাজে চালিয়ে দেয়। পরে তা সাধারণভাবে সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
২. কোন আলিম ব্যক্তি হয়তো শরীয়াত বিরোধী একটা কাজ করেছেন; কিন্তু তা দেখে জাহেল লোকেরা মনে করতে শুরু করে যে, এ কাজ শরীয়াতসম্মত না হয়ে পারে না। এভাবে এক ব্যক্তির কারণে গোটা সমাজেই বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
৩. মূর্খ লোকেরা শরীয়াত বিরোধী কোন কাজ করতে শুরু করে। তখন সমাজের আলিমগণ সে ব্যাপারে নীরব হয়ে থাকেন। তারা এ কাজের কোন প্রতিবাদ করেন না, নিষেধও করেন না এবং এ কথাও বলেন না যে, এ কাজ শরীয়াত বিরোধী, তোমরা এ কাজ কিছুতেই করতে পারবে না। বিদআত বা শরীয়াত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ না করার ফলে সাধারণ লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, নিশ্চয় এ কাজ জায়েয হবে। নতুবা আলিম সাহেবরা তো এর প্রতিবাদ করতেন। এভাবে সমাজে বিদআত বা নাজায়েয কাজ শরীয়াতসম্মত কাজরূপে পরিচিত ও প্রচলিত হয়ে পড়ে।
৪. বিদআত প্রচলিত হওয়ার আরো একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো এই যে, মানুষ স্বভাবতই চিরন্তন সুখ- জান্নাত লাভ করার আকাঙ্ক্ষী। এ কারণে সে বেশি বেশি নেক কাজ করতে উৎসাহি হয়ে থাকে। দ্বীনের হুকুম আহকাম যথাযথ পালন করা কঠিন বোধ হলেও সহজসাধ্য সওয়াবের কাজ করার জন্য লালায়িত হয় খুব বেশি। আর তখনি সে শয়তানের ষড়যন্ত্রে পড়ে যায়। এই লোভ ও শয়তানী ষড়যন্ত্রের কারণে খুব তাড়াহুড়া করে কতক সহজ সওয়াবের কাজ করার সিন্ধান্ত করে ফেলে। তারা নিজ থেকেই মনে করে নেয় যে, এগুলো সব নেক ও সওয়াবের কাজ। তা করলে এত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে যে, জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ লাভ করা কোন কঠিন হবে না। কিন্তু এ সময় যে কাজগুলোকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করা হয়, সেগুলো শরীয়াতের ভিত্তিতেও বাস্তবিকই সওয়াবের কাজ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো ইসলামী যোগ্যতা তাদের যেমন থাকে না, তেমনি সেটা জানার জন্যও তারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
একটি দ্বীনী সমাজে দ্বীনের নামে বিদআত চালু হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দ্বীন যখন প্রথম প্রচারিত হয় তখন তার ভিত্তি রচিত হয় ইল্মের উপর। পরবর্তীকালে সেই ইল্ম যখন সমাজের অধিকাংশ বা প্রভাবশালী লোকেরা হারিয়ে ফেলে তখন দ্বীনের প্রতি জনমনে যে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ থাকে, তার মাধ্যমে দ্বীনের নামে বেদ্বীন ঢুকে পড়ে। মানুষ নির্দ্বিধায় সেই কাজগুলোকে দ্বীনি কাজ মনে করেই করতে থাকে। ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, আরবরা ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) এর বংশধর ছিল। তাদের মধ্যে তাওহীদ ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক শতাব্দীকাল পর্যন্ত তথায় তাওহীদি দ্বীন প্রবল ছিল। কিন্তু পরে সুদীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের আকীদা ও আমলে হক এর সাথে বাতিল সংম্রিশ্রিত হয়ে পড়ে। ভালো কাজ হিসেবে এক সময় মূর্তিপূজা, পাহাড়-পাথর পূজাও ব্যাপকভাবে চালু হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগমনকালে তাদের দ্বীনী ও নৈতিক অবস্থা চরমভাবে অধঃপতিত হয়ে পড়েছিল।
যেখানেই বিদআত আসন গেড়ে বসেছে সেখান থেকেই সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। যে কাজ মূলত সুন্নাত; কিন্তু বহুকাল পর্যন্ত সমাজে তার প্রচলন না থাকায় লোকদের ধারণা হয় যে, নিশ্চয় এ কাজ ভালো নয়; এভাবে লোকেরা একটি শরীয়াতসম্মত কাজকে শেষ পর্যন্ত শরীয়াত বিরোধী কাজ বলে মনে করতে থাকে। তখন আর সুন্নাতের কোন গুরুত্ব থাকে না। এমনকি কেউ যদি সেই সুন্নাতের উপর আমল করে তাহলে লোকেরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
১. বিদআতী তা নিজের থেকে উদ্ভাবন করে সমাজে চালিয়ে দেয়। পরে তা সাধারণভাবে সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
২. কোন আলিম ব্যক্তি হয়তো শরীয়াত বিরোধী একটা কাজ করেছেন; কিন্তু তা দেখে জাহেল লোকেরা মনে করতে শুরু করে যে, এ কাজ শরীয়াতসম্মত না হয়ে পারে না। এভাবে এক ব্যক্তির কারণে গোটা সমাজেই বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
৩. মূর্খ লোকেরা শরীয়াত বিরোধী কোন কাজ করতে শুরু করে। তখন সমাজের আলিমগণ সে ব্যাপারে নীরব হয়ে থাকেন। তারা এ কাজের কোন প্রতিবাদ করেন না, নিষেধও করেন না এবং এ কথাও বলেন না যে, এ কাজ শরীয়াত বিরোধী, তোমরা এ কাজ কিছুতেই করতে পারবে না। বিদআত বা শরীয়াত বিরোধী কাজের প্রতিবাদ না করার ফলে সাধারণ লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, নিশ্চয় এ কাজ জায়েয হবে। নতুবা আলিম সাহেবরা তো এর প্রতিবাদ করতেন। এভাবে সমাজে বিদআত বা নাজায়েয কাজ শরীয়াতসম্মত কাজরূপে পরিচিত ও প্রচলিত হয়ে পড়ে।
৪. বিদআত প্রচলিত হওয়ার আরো একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো এই যে, মানুষ স্বভাবতই চিরন্তন সুখ- জান্নাত লাভ করার আকাঙ্ক্ষী। এ কারণে সে বেশি বেশি নেক কাজ করতে উৎসাহি হয়ে থাকে। দ্বীনের হুকুম আহকাম যথাযথ পালন করা কঠিন বোধ হলেও সহজসাধ্য সওয়াবের কাজ করার জন্য লালায়িত হয় খুব বেশি। আর তখনি সে শয়তানের ষড়যন্ত্রে পড়ে যায়। এই লোভ ও শয়তানী ষড়যন্ত্রের কারণে খুব তাড়াহুড়া করে কতক সহজ সওয়াবের কাজ করার সিন্ধান্ত করে ফেলে। তারা নিজ থেকেই মনে করে নেয় যে, এগুলো সব নেক ও সওয়াবের কাজ। তা করলে এত বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে যে, জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ লাভ করা কোন কঠিন হবে না। কিন্তু এ সময় যে কাজগুলোকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করা হয়, সেগুলো শরীয়াতের ভিত্তিতেও বাস্তবিকই সওয়াবের কাজ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো ইসলামী যোগ্যতা তাদের যেমন থাকে না, তেমনি সেটা জানার জন্যও তারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।
একটি দ্বীনী সমাজে দ্বীনের নামে বিদআত চালু হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। দ্বীন যখন প্রথম প্রচারিত হয় তখন তার ভিত্তি রচিত হয় ইল্মের উপর। পরবর্তীকালে সেই ইল্ম যখন সমাজের অধিকাংশ বা প্রভাবশালী লোকেরা হারিয়ে ফেলে তখন দ্বীনের প্রতি জনমনে যে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ থাকে, তার মাধ্যমে দ্বীনের নামে বেদ্বীন ঢুকে পড়ে। মানুষ নির্দ্বিধায় সেই কাজগুলোকে দ্বীনি কাজ মনে করেই করতে থাকে। ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, আরবরা ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) এর বংশধর ছিল। তাদের মধ্যে তাওহীদ ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক শতাব্দীকাল পর্যন্ত তথায় তাওহীদি দ্বীন প্রবল ছিল। কিন্তু পরে সুদীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের আকীদা ও আমলে হক এর সাথে বাতিল সংম্রিশ্রিত হয়ে পড়ে। ভালো কাজ হিসেবে এক সময় মূর্তিপূজা, পাহাড়-পাথর পূজাও ব্যাপকভাবে চালু হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগমনকালে তাদের দ্বীনী ও নৈতিক অবস্থা চরমভাবে অধঃপতিত হয়ে পড়েছিল।
যেখানেই বিদআত আসন গেড়ে বসেছে সেখান থেকেই সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। যে কাজ মূলত সুন্নাত; কিন্তু বহুকাল পর্যন্ত সমাজে তার প্রচলন না থাকায় লোকদের ধারণা হয় যে, নিশ্চয় এ কাজ ভালো নয়; এভাবে লোকেরা একটি শরীয়াতসম্মত কাজকে শেষ পর্যন্ত শরীয়াত বিরোধী কাজ বলে মনে করতে থাকে। তখন আর সুন্নাতের কোন গুরুত্ব থাকে না। এমনকি কেউ যদি সেই সুন্নাতের উপর আমল করে তাহলে লোকেরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।
বিদআত সনাক্ত করার জন্য একটি মাপকাঠি রয়েছে। আর এই মাপকাঠি হলো, কুরআন ও সহীহ হাদীস। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
﴿فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا﴾
অতঃপর তোমাদের মাঝে যদি কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে থাক; এটাই উত্তম এবং চূড়ান্ত সিন্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। (সূরা নিসা- ৫৯)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ مَالِكٍ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এই সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড়ে গিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দুটি জিনিস অাঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি জিনিস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৪; মিশকাত, হা/১৮৬।]
সুতরাং সমাজে যেসব ইবাদাত চালু আছে বা কোন আলেম, বুযুর্গ, পীর সাহেব, মুরববী সাহেব যেসব ইবাদাত করতে বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মাপকাঠি দেয়া আছে আমরা তাতে যাচাই করে দেখব। যদি কুরআন ও সুন্নাহতে এর কোন দলিল না থাকে তবেই বুঝতে হবে এগুলো বিদআত।
﴿فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا﴾
অতঃপর তোমাদের মাঝে যদি কোন মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করে থাক; এটাই উত্তম এবং চূড়ান্ত সিন্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধিকতর উপযুক্ত। (সূরা নিসা- ৫৯)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ مَالِكٍ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ تَرَكْتُ فِيْكُمْ اَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে এই সংবাদ পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড়ে গিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দুটি জিনিস অাঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি জিনিস হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৫৯৪; মিশকাত, হা/১৮৬।]
সুতরাং সমাজে যেসব ইবাদাত চালু আছে বা কোন আলেম, বুযুর্গ, পীর সাহেব, মুরববী সাহেব যেসব ইবাদাত করতে বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মাপকাঠি দেয়া আছে আমরা তাতে যাচাই করে দেখব। যদি কুরআন ও সুন্নাহতে এর কোন দলিল না থাকে তবেই বুঝতে হবে এগুলো বিদআত।
বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, ভালো কাজ মনে করে এমন কতগুলো আমল মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে, যা সরাসরি কুসংস্কার ও বিদআত। সমাজে এগুলোর প্রচলন আছে, এ কারণে মানুষ এগুলো পালন করে যাচ্ছে। তাই যেসব আমলের কোন শরয়ী দলীল নেই তা যেহেতু বিদআতের পর্যায়ে পড়ে সেজন্য এসব কাজকর্ম থেকে অবশ্যই আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআতী কাজকর্ম নিম্নে উল্লেখ করা হলো এবং এক্ষেত্রে প্রকৃত সুন্নাত ও করণীয় কী তাও উল্লেখ করা হলো :
ওযু করার সময় বিশেষ দু‘আ পাঠ করা :
ওযু করার সময় ‘‘বিসমিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল ‘আজীম ওয়াল হামদুলিল্লাহি ‘আলা দ্বীনিল ইসলাম....’ এই দু‘আ পাঠ করা বিদআত। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ ওযু করার সময় এই দু‘আ পাঠ করেছেন কিংবা পাঠ করতে বলেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া ওযুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় দু‘আ হিসেবে যেসব বাক্য আছে তাও কোন হাদীসের কিতাবে নেই।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
মূলত ওযুর সুন্নাত হলো- প্রথমত বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا مَسَّ طَهُوْرَهٗ يُسَمِّى اللهَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পবিত্রতা অর্জন করতেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন। [দার কুতনী, হা/২৩১।]
ওযু শেষ হলে নিচের দু‘আটি পড়বে :
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ ، فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ ، ثُمَّ يَقُوْلُ : أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ، إِلَّا فُتِحَتْ لَهٗ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুসলিম ওযু করবে এবং সুন্দরভাবে ওযু করবে তারপর এ দু‘আটি পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; সুনানে নাসাঈ, হা/১৪৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৫২; ইবনে খুযাইমা, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
অন্য হাদীসে উপরোক্ত দু‘আর সাথে এ অংশটুকুও বর্ণিত রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীন, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫।]
ওযু করার সময় ‘‘বিসমিল্লাহিল ‘আলিয়্যিল ‘আজীম ওয়াল হামদুলিল্লাহি ‘আলা দ্বীনিল ইসলাম....’ এই দু‘আ পাঠ করা বিদআত। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ ওযু করার সময় এই দু‘আ পাঠ করেছেন কিংবা পাঠ করতে বলেছেন তার কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া ওযুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় দু‘আ হিসেবে যেসব বাক্য আছে তাও কোন হাদীসের কিতাবে নেই।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
মূলত ওযুর সুন্নাত হলো- প্রথমত বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا مَسَّ طَهُوْرَهٗ يُسَمِّى اللهَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পবিত্রতা অর্জন করতেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন। [দার কুতনী, হা/২৩১।]
ওযু শেষ হলে নিচের দু‘আটি পড়বে :
اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহু ওয়াআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহ্।
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ ، فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ ، ثُمَّ يَقُوْلُ : أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ ، إِلَّا فُتِحَتْ لَهٗ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন কোন মুসলিম ওযু করবে এবং সুন্দরভাবে ওযু করবে তারপর এ দু‘আটি পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪৭০; সুনানে নাসাঈ, হা/১৪৮; সহীহ মুসলিম, হা/৫৭৬; আবু দাউদ, হা/১৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৫২; ইবনে খুযাইমা, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৪।]
অন্য হাদীসে উপরোক্ত দু‘আর সাথে এ অংশটুকুও বর্ণিত রয়েছে,
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ ، وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাজ‘আল্নী মিনাত্তাওয়া-বীন, ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল্ মুতাত্বাহ্হিরীন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। [তিরমিযী, হা/৫৫।]
আযান দেয়ার পূর্বে সালাত ও সালাম পেশ করা :
ফরয নামাযের জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আযানের উদ্দেশ্য হলো এলাকাবাসী সকলে যেন একই সময়ে মসজিদে সমবেত হতে পারে এবং জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করতে পারে তার সুব্যবস্থা করা। আযানের শব্দগুলো যেমনভাবে সালফে সালেহীনদের থেকে নকল হয়ে আসছে সেভাবেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বর্তমান সময়ের বিভিন্ন জায়গায় আযানের পূর্বে সালাত ও সালাম ইত্যাদি যা বলা হয় তা সালফে সালেহীনদের কাছ থেকে নকল না থাকার কারণে বিদআত এবং এটা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা অতিক্রম করল, সে নিজের উপর যুলুম করল।
(সূরা তালাক- ১)
আযান দেয়ার সময় শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করা :
আযান দেয়ার সময় কিংবা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম শুনলে শাহাদাত আঙ্গুল বা বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে দুচোখে লাগানো এটাও একটি বিদআত। কারণ এ সম্পর্কিত প্রচলিত হাদীসগুলোকে সকল হাদীস বিশারদগণই জাল বলেছেন।
আযান দেয়ার পর মাইকে আযানের দু‘আ পাঠ করা :
মাইকের আযান দেয়ার লক্ষ্য হলো মানুষ যাতে নামাযের আহবান শুনতে পায়। কিন্তু দু‘আর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কোনটিই মানুষের শুনার জন্য নয়। বরং দু‘আ করতে হবে আল্লাহর কাছে এবং এর লক্ষ্য হবে তিনি যাতে তা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করার নিয়ম হলো, চুপে চুপে অনুচ্চৈঃস্বরে এবং কাকুতি-মিনতি সহকারে দু‘আ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اُدْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةً اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো- বিনয় ও ভয় সহকারে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ- ৫৫)
আযানের পর হাত তুলে দু‘আ করা :
যে সমস্ত দু‘আয় হাত উঠানোর বর্ণনা নেই, সেসব দু‘আয় হাত উঠানোর প্রয়োজন নেই।
عَنْ حُصَيْنٌ قَالَ : سَمِعْتُ عُمَارَةَ بْنَ رُوَيْبَةَ ، وَبِشْرُ بْنُ مَرْوَانَ يَخْطُبُ ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ فِى الدُّعَاءِ ، فَقَالَ عُمَارَةُ : قَبَّحَ اللهُ هَاتَيْنِ الْيُدَيَّتَيْنِ القُصَيَّرَتَيْنِ ، لَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، وَمَا يَزِيْدُ عَلٰى اَنْ يَقُوْلَ هٰكَذَا، وَاَشَارَ هُشَيْمٌ بِالسَّبَّابَةِ .
হুসাইন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমারাহ ইবনে রুওয়াইবা (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, একদা বিশর ইবনে মারওয়ান (রহ.) খুতবা দিচ্ছিলেন এবং দু‘আ করার সময় হাত উত্তোলন করেন। তখন উমারাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ ছোট হাত দুটিকে ধ্বংস করুন। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খুতবা দিতে দেখেছি, কিন্তু এ থেকে অতিরিক্ত কিছু করতে দেখিনি। অতঃপর তিনি শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন সেভাবে ইশারা করে তিনি দেখালেন। [তিরমিযী, হা/৫১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৭৯।]
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
আযানের পর নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে এবং তা সাহাবায়ে কেরাম এবং সালফে সালেহীনদের সময়কাল থেকে নিঃসন্দেহে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। কিন্তু দু‘আ পাঠ করার সময় হাত উঠানো কিছুতেই প্রমাণিত নয়। আযান শেষ হলে প্রথমে নবীর উপর দরূদ পড়া সুন্নাত। তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে-
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান কর ওসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাঁকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ اَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : اِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَاِنَّهٗ مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَاِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِىْ اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَاَرْجُوْ اَنْ اَكُوْنَ اَنَا هُوَ فَمَنْ سَاَلَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهٗ الشَّفَاعَةُ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুওয়ায&&যনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরাও তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ওসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, ওসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা করবে তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৮; ইবনে খুযাইমা, হা/৪১৮; ইবনে হিববান, হা/১৬৯০।]
ফরয নামাযের জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আযানের উদ্দেশ্য হলো এলাকাবাসী সকলে যেন একই সময়ে মসজিদে সমবেত হতে পারে এবং জামা‘আতের সাথে নামায আদায় করতে পারে তার সুব্যবস্থা করা। আযানের শব্দগুলো যেমনভাবে সালফে সালেহীনদের থেকে নকল হয়ে আসছে সেভাবেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বর্তমান সময়ের বিভিন্ন জায়গায় আযানের পূর্বে সালাত ও সালাম ইত্যাদি যা বলা হয় তা সালফে সালেহীনদের কাছ থেকে নকল না থাকার কারণে বিদআত এবং এটা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা অতিক্রম করল, সে নিজের উপর যুলুম করল।
(সূরা তালাক- ১)
আযান দেয়ার সময় শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করা :
আযান দেয়ার সময় কিংবা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম শুনলে শাহাদাত আঙ্গুল বা বৃদ্ধাঙ্গুলি চুম্বন করে দুচোখে লাগানো এটাও একটি বিদআত। কারণ এ সম্পর্কিত প্রচলিত হাদীসগুলোকে সকল হাদীস বিশারদগণই জাল বলেছেন।
আযান দেয়ার পর মাইকে আযানের দু‘আ পাঠ করা :
মাইকের আযান দেয়ার লক্ষ্য হলো মানুষ যাতে নামাযের আহবান শুনতে পায়। কিন্তু দু‘আর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কোনটিই মানুষের শুনার জন্য নয়। বরং দু‘আ করতে হবে আল্লাহর কাছে এবং এর লক্ষ্য হবে তিনি যাতে তা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করার নিয়ম হলো, চুপে চুপে অনুচ্চৈঃস্বরে এবং কাকুতি-মিনতি সহকারে দু‘আ করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اُدْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةً اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো- বিনয় ও ভয় সহকারে। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ- ৫৫)
আযানের পর হাত তুলে দু‘আ করা :
যে সমস্ত দু‘আয় হাত উঠানোর বর্ণনা নেই, সেসব দু‘আয় হাত উঠানোর প্রয়োজন নেই।
عَنْ حُصَيْنٌ قَالَ : سَمِعْتُ عُمَارَةَ بْنَ رُوَيْبَةَ ، وَبِشْرُ بْنُ مَرْوَانَ يَخْطُبُ ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ فِى الدُّعَاءِ ، فَقَالَ عُمَارَةُ : قَبَّحَ اللهُ هَاتَيْنِ الْيُدَيَّتَيْنِ القُصَيَّرَتَيْنِ ، لَقَدْ رَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، وَمَا يَزِيْدُ عَلٰى اَنْ يَقُوْلَ هٰكَذَا، وَاَشَارَ هُشَيْمٌ بِالسَّبَّابَةِ .
হুসাইন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমারাহ ইবনে রুওয়াইবা (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, একদা বিশর ইবনে মারওয়ান (রহ.) খুতবা দিচ্ছিলেন এবং দু‘আ করার সময় হাত উত্তোলন করেন। তখন উমারাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ ছোট হাত দুটিকে ধ্বংস করুন। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে খুতবা দিতে দেখেছি, কিন্তু এ থেকে অতিরিক্ত কিছু করতে দেখিনি। অতঃপর তিনি শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন সেভাবে ইশারা করে তিনি দেখালেন। [তিরমিযী, হা/৫১৫; শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৭৯।]
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
আযানের পর নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে এবং তা সাহাবায়ে কেরাম এবং সালফে সালেহীনদের সময়কাল থেকে নিঃসন্দেহে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। কিন্তু দু‘আ পাঠ করার সময় হাত উঠানো কিছুতেই প্রমাণিত নয়। আযান শেষ হলে প্রথমে নবীর উপর দরূদ পড়া সুন্নাত। তারপর নিচের দু‘আটি পড়বে-
اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَنِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَنِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্তা-ম্মাহ, ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়ালফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আত্তাহ।
অর্থ : হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু। মুহাম্মাদ ﷺ কে দান কর ওসীলা নামক স্থান ও মর্যাদা। আর তাঁকে অধিষ্ঠিত কর সেই প্রশংসিত স্থানে, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ।
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ اَنَّهٗ سَمِعَ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : اِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَىَّ فَاِنَّهٗ مَنْ صَلّٰى عَلَىَّ صَلَاةً بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ فَاِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِى الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِىْ اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَاَرْجُوْ اَنْ اَكُوْنَ اَنَا هُوَ فَمَنْ سَاَلَ لِىَ الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهٗ الشَّفَاعَةُ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুওয়ায&&যনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরাও তাই বলো। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ করো। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ওসীলা প্রার্থনা করো। কেননা, ওসীলা জান্নাতের একটি সম্মানজনক স্থান। এটা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজনকেই দেয়া হবে। আমি আশা করি, আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা করবে তার জন্য (আমার) শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫; আবু দাউদ, হা/৫২৩; তিরমিযী, হা/৩৬১৪; নাসাঈ, হা/৬৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৬৮; ইবনে খুযাইমা, হা/৪১৮; ইবনে হিববান, হা/১৬৯০।]
নামাযের জন্য নিয়ত পড়া :
আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় মুখে উচ্চারণ করে নামাযের জন্য নিয়ত পড়া বিদআত। নামাযের জন্য নিয়ত করা ফরয, তবে তা আরবি বা অন্য কোন ভাষায় মুখে উচ্চারণ করে নয়। রবং তা হবে মনে মনে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযে দাঁড়িয়ে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করে পড়েছেন এমন কোন প্রমাণ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। যারা বলেন, নিয়ত মনে মনে করতে হয় ঠিক, তবে আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় বলা উত্তম- একথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ শরীয়াতে এমন কোন বিষয় অবশিষ্ট নেই, যা আমল বা ইবাদাতের জন্য উত্তম অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম তা বর্ণনা করেননি। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম যা উত্তম মনে করেননি উম্মতের মধ্যে আর কেউ তা উত্তম মনে করার প্রশ্নই ওঠে না।
জায়নামাযের দু‘আ পড়া :
নামায শুরু করার পূর্বে জায়নামাযে বা নামাযের জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু .....’’ এ দু‘আ পাঠ করা বিদআত। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায শুরু করার পূর্বে জায়নামাযে বা নামাযের জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহ আকবার’ এ তাকবীর বলতেন। কিন্তু এর আগে কোন কিছু পড়েছেন বলে কোন হাদীসে প্রমাণিত নেই।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
নামাযের শুরুতে যেটা করণীয় তা হলো প্রথমে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। অর্থাৎ কোন্ ওয়াক্তের কোন্ নামায পড়বে তা মনে মনে স্থির করবে। তারপর তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধবে। তারপর সানা পাঠ করবে।
যে দু‘আটি জায়নামাযের দু‘আ হিসেবে পাঠ করা হয় সেটি মূলত কুরআনের একটি আয়াত। নবী ﷺ এ দু‘আর সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ একত্র করে তাকবীরে তাহরীমার পর সানা হিসেবে পাঠ করতেন। তাই তাকবীর বলার পূর্বে না পড়ে তাকবীর বলার পর সানা হিসেবে হাদীসে যেভাবে এসেছে সেভাবে দু‘আটি পাঠ করতে হবে। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ، قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، -لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা-বিকা ওয়া ইলাইক, তাবা-রাকতা ওয়া তা‘আ-লাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই মালিক, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসি। [মুসলিম, হা/১৮৪৮।]
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে নামায না পড়ে বয়ান শুনার জন্য বসে যাওয়া :
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে বসে যাওয়া বা জুমু‘আর দিন মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে সুন্নাত নামায না পড়ে খুতবা শুনতে বসে যাওয়া কিংবা ইমাম কর্তৃক প্রথমে খুতবা শুনার জন্য সুন্নাত নামায পড়তে বাধা দেয়া এবং খুতবার পরেই সুন্নাত নামাযের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া বিদআত।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
কোন ব্যক্তি যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর দুরাক‘আত সালাত আদায় করা, এমনকি খুতবা চলাকালীন সময়ে হলেও, তারপর বসবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুরাক‘আত নামায কিংবা কোন সুন্নাত নামায না পড়ে বসতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর স্পষ্ট নির্দেশ থাকার কারণে এ দুরাক‘আত নামায খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ بْنَ رِبْعِيٍّ الْانْصَارِيِّ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ اِذَا دَخَلَ اَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتّٰى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন দুরাক‘আত সালাত আদায় করার পূর্বে না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৬৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩২০৪; সুনানুল বায়হাকী, হা/৪৭০২।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِىُّ وَرَسُوْلُ اللهِ - - يَخْطُبُ فَقَالَ لَهُ : أَصَلَّيْتَ شَيْئًا قَالَ لَا . قَالَ : صَلِّ رَكْعَتَيْنِ تَجَوَّزْ فِيهِمَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সুলায়েক গাতফানী নামক এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন নবী ﷺ খুতবা দিচ্ছিলেন। নবী ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। তখন নবী ﷺ বললেন, তুমি দুরাক‘আত নামায আদায় করো এবং সংক্ষেপ করো। [আবু দাউদ, হা/১১১৮; নাসাঈ, হা/১৪০৮।]
জুমু‘আর খুতবার সময় মসজিদের জন্য চাঁদা উঠানো :
জুমু‘আর দ্বিতীয় খুতবার সময় কোন টাকা-পয়সা উঠানো এবং কোন টাকা-পয়সা দেয়া বা নেয়া নাজায়েয। এ সময় কোন টাকা-পয়সা দেয়া-নেয়া তো দূরের কথা, বরং কোন কথা না বলাও ঠিক নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ اَنْصِتْ . يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْاِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন খুতবা চলাকালীন সময়ে তুমি যদি তোমার ভাইকে এ কথা বল যে, চুপ থাকো- তাহলেও তুমি অনর্থক কাজ করলে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩২; সহীহ মুসলিম, হা/২০০২; নাসাঈ, হা/১৪০২; ইবনে মাজাহ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৭২; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮০৫; ইবনে হিববান, হা/২৭৯৩।]
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
টাকা-পয়সা উঠানোর বিশেষ প্রয়োজন হলে নামাযের সালাম ফিরানোর পরপরই তার ব্যবস্থা করা যায়।
আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় মুখে উচ্চারণ করে নামাযের জন্য নিয়ত পড়া বিদআত। নামাযের জন্য নিয়ত করা ফরয, তবে তা আরবি বা অন্য কোন ভাষায় মুখে উচ্চারণ করে নয়। রবং তা হবে মনে মনে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযে দাঁড়িয়ে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করে পড়েছেন এমন কোন প্রমাণ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। যারা বলেন, নিয়ত মনে মনে করতে হয় ঠিক, তবে আরবি বা নিজের মাতৃভাষায় বলা উত্তম- একথা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ শরীয়াতে এমন কোন বিষয় অবশিষ্ট নেই, যা আমল বা ইবাদাতের জন্য উত্তম অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম তা বর্ণনা করেননি। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম যা উত্তম মনে করেননি উম্মতের মধ্যে আর কেউ তা উত্তম মনে করার প্রশ্নই ওঠে না।
জায়নামাযের দু‘আ পড়া :
নামায শুরু করার পূর্বে জায়নামাযে বা নামাযের জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘‘ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু .....’’ এ দু‘আ পাঠ করা বিদআত। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ নামায শুরু করার পূর্বে জায়নামাযে বা নামাযের জায়গায় দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহ আকবার’ এ তাকবীর বলতেন। কিন্তু এর আগে কোন কিছু পড়েছেন বলে কোন হাদীসে প্রমাণিত নেই।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
নামাযের শুরুতে যেটা করণীয় তা হলো প্রথমে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। অর্থাৎ কোন্ ওয়াক্তের কোন্ নামায পড়বে তা মনে মনে স্থির করবে। তারপর তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধবে। তারপর সানা পাঠ করবে।
যে দু‘আটি জায়নামাযের দু‘আ হিসেবে পাঠ করা হয় সেটি মূলত কুরআনের একটি আয়াত। নবী ﷺ এ দু‘আর সাথে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ একত্র করে তাকবীরে তাহরীমার পর সানা হিসেবে পাঠ করতেন। তাই তাকবীর বলার পূর্বে না পড়ে তাকবীর বলার পর সানা হিসেবে হাদীসে যেভাবে এসেছে সেভাবে দু‘আটি পাঠ করতে হবে। আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ নামায শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন।
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ، قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، -لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ . اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْ لِىْ ذُنُوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ، وَاهْدِنِىْ لِاَحْسَنِ الْاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لِاَحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهٗ فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ، اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন। লা-শারীকালাহু ওয়াবি যা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযানবী। ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আ। ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-ক। লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সায়্যিআহা লা-ইয়াসরিফু আন্নী সায়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফী ইয়াদাইক। ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইক, আনা-বিকা ওয়া ইলাইক, তাবা-রাকতা ওয়া তা‘আ-লাইত। আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন। হে আল্লাহ! তুমিই মালিক, তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তুমি আমার রব এবং আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অনেক অন্যায় করেছি এবং আমি আমার পাপের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আর তুমি আমাকে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দান করো। কেননা উত্তম চরিত্র তুমি ছাড়া আর কেউ দান করতে পারে না। আর তুমি আমাকে খারাপ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখো। কেননা তুমি ছাড়া কেউ মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত। আমি তোমার সামনে হাযির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে। অমঙ্গল তোমার দিক থেকে নয়। আমি তোমার সাহায্যে তোমার দিকেই মনোনিবেশ করি। হে আল্লাহ! তুমি বরকতময় এবং মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরে আসি। [মুসলিম, হা/১৮৪৮।]
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে নামায না পড়ে বয়ান শুনার জন্য বসে যাওয়া :
মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে বসে যাওয়া বা জুমু‘আর দিন মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে সুন্নাত নামায না পড়ে খুতবা শুনতে বসে যাওয়া কিংবা ইমাম কর্তৃক প্রথমে খুতবা শুনার জন্য সুন্নাত নামায পড়তে বাধা দেয়া এবং খুতবার পরেই সুন্নাত নামাযের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া বিদআত।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
কোন ব্যক্তি যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার সর্বপ্রথম দায়িত্ব হলো তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর দুরাক‘আত সালাত আদায় করা, এমনকি খুতবা চলাকালীন সময়ে হলেও, তারপর বসবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুরাক‘আত নামায কিংবা কোন সুন্নাত নামায না পড়ে বসতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর স্পষ্ট নির্দেশ থাকার কারণে এ দুরাক‘আত নামায খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِىْ قَتَادَةَ بْنَ رِبْعِيٍّ الْانْصَارِيِّ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ اِذَا دَخَلَ اَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتّٰى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
আবু কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন দুরাক‘আত সালাত আদায় করার পূর্বে না বসে। [সহীহ বুখারী, হা/১১৬৭; তিরমিযী, হা/৩১৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭০৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩২০৪; সুনানুল বায়হাকী, হা/৪৭০২।]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِىُّ وَرَسُوْلُ اللهِ - - يَخْطُبُ فَقَالَ لَهُ : أَصَلَّيْتَ شَيْئًا قَالَ لَا . قَالَ : صَلِّ رَكْعَتَيْنِ تَجَوَّزْ فِيهِمَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সুলায়েক গাতফানী নামক এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন নবী ﷺ খুতবা দিচ্ছিলেন। নবী ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। তখন নবী ﷺ বললেন, তুমি দুরাক‘আত নামায আদায় করো এবং সংক্ষেপ করো। [আবু দাউদ, হা/১১১৮; নাসাঈ, হা/১৪০৮।]
জুমু‘আর খুতবার সময় মসজিদের জন্য চাঁদা উঠানো :
জুমু‘আর দ্বিতীয় খুতবার সময় কোন টাকা-পয়সা উঠানো এবং কোন টাকা-পয়সা দেয়া বা নেয়া নাজায়েয। এ সময় কোন টাকা-পয়সা দেয়া-নেয়া তো দূরের কথা, বরং কোন কথা না বলাও ঠিক নয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ اَنْصِتْ . يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْاِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, জুমু‘আর দিন খুতবা চলাকালীন সময়ে তুমি যদি তোমার ভাইকে এ কথা বল যে, চুপ থাকো- তাহলেও তুমি অনর্থক কাজ করলে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৩২; সহীহ মুসলিম, হা/২০০২; নাসাঈ, হা/১৪০২; ইবনে মাজাহ, হা/১১১০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৭২; ইবনে খুযাইমা, হা/১৮০৫; ইবনে হিববান, হা/২৭৯৩।]
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
টাকা-পয়সা উঠানোর বিশেষ প্রয়োজন হলে নামাযের সালাম ফিরানোর পরপরই তার ব্যবস্থা করা যায়।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের জাম‘আত শেষে ইমাম কর্তৃক সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা বিদআত।
মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনে অনেক ফরয নামায আদায় করেছেন। কিন্তু এ বিরাট সংখ্যক ফরয নামাযের কোন একটির পরও সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করেছেন এমন কোন বর্ণনা কোন হাদীসে নেই। বিশুদ্ধ হাদীস তো দূরের কথা, কোন দুর্বল কিংবা জাল হাদীসে বা বানোয়াট হাদীসেও তার কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কোন হাদীস গ্রন্থের কোন একটিতেও পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের কোন অধ্যায় বা কোন পরিচ্ছেদ পাওয়া যায় না। এমনকি ফিকহের কিতাবসমূহের কোথাও উক্ত মুনাজাতের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয় : দু‘আর মধ্যে সুন্নাত হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরু করেই বলেন, ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষের বাক্য। এটা দু‘আ শুরু করার বাক্য নয়। তাই ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা, আল্লাহুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ বলে শেষ করা সুন্নাতের পরিপন্থী।
এ দু‘আ সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত :
(১) শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) কে ফরয নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদআত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল নামাযের মধ্যে। কারণ নামাযের মধ্যে মুসল্লী স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে। আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ। [মাজমূআ ফাতাওয়া ২২/৫১৯।]
(২) শাইখ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ও নফল নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদআত। কারণ এরূপ দু‘আ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগেও ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর অথবা নফল নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে। [হায়াতু কিবারিল ওলামা ১/২৪৪।]
ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। নামায আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু‘আ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলিফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। এরপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশনা ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মু্ক্তাদীগণ হাত তুলে আমীন আমীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথা (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হলে) তা পরিত্যাজ্য। [হায়াতু কিরাবিল ওলামা ১/২৫৭পৃ:]
আমার জানা মতে, ফরয নামাযের পর হাত তুলে দু‘আ করা, না রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, না সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। ফরয নামাযের পর যারা হাত তুলে দু‘আ করে, তাদের এ কাজ সুস্পষ্ট বিদআত। এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার এ দ্বীনে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৫; ইবনে হিববান, হা/২৭; বায়হাকী, হা/২০১৫৮; দার কুতনী, হা/৪৫৯০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯; মিশকাত, হা/১৪০।]
(৩) শাইখ সালেহ আল উছাইমিন (রহ.) বলেন, নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা এমন বিদআত, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণ থেকেও নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। [ফাতাওয়া ওয়ায়মীন, পৃ:১২০।]
(৪) আল্লামা আবদুল হাই (রহ.) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত যে প্রথা, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলে, এ প্রথা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না। [ফতয়ায়ে আবদুল হাই, ১ম খন্ড, পৃ: ১০০।]
(৫) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী (রহ.) বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে প্রমাণিত নয়। [মা‘আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড পৃ: ৪০৭।]
(৬) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্টতম বিদআত। [এমাদুদ্দীন, পৃ: ৩৯৭।]
(৭) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রথা অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটি সহীহ অথবা দুর্বল হাদীসও নেই। [যাদুল মা‘আদ, ১ম খন্ড, পৃ: ৬৬।]
(৮) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিত মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায়নি। [ছিফরুস সা‘আদাত, পৃ: ২০।]
(৯) আল্লামা শাত্বেবী (রহ.) (৭০০ খ্রীঃ) বলেন, শেষ কথা হলো এই যে, ফরয নামাযের পর সর্বদা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনের কোন প্রমাণও পাওয়া যায় না। [আল-ই‘তেছাম, ১ম খন্ড, পৃ: ৩৫২।]
(১০) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায়নি। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করাই উত্তম এবং করা বিদআত। [মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃ: ৮৩।]
(১১) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ্ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে নামাযের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। [এস্তেহবাবুদ দাওয়াহ।]
(১২) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে নামায শেষ করেই (দু‘হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না বুঝে আমীন, আমীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ: ৫৭৭।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনে এযাম হতে এবং শরীয়াতের চার মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতের পরিপন্থী। [আহকামে দু‘আ,পৃ:১৩।]
(১৩) পাকিস্তানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা‘আত সহকারে পড়তেন। যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয় একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন। কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সর্ম্পকে পাওয়া যায়নি। তারপর কিছু সময়ের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরূপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিদআত। [ইহছানুল ফাতাওয়া,৩য় খন্ড,পৃ:৬৮।]
প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন আলেম ফরয নামাযান্তে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার পক্ষে মতামত দিলেও বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। কারণ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে দু‘আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমগণও করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদআত।
পর্যালোচনা :
যারা ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা পালন করে যাচ্ছেন তারা সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, এটা নামাযের কোন অংশ নয় এবং এভাবে দু‘আ করা জরুরিও নয় আর তা না করলে নামাযের কোন ক্ষতিও হয় না।
এখন কথা হলো, যে কাজটি জরুরি নয় এবং না করলে কোন ক্ষতি হয় না, সে কাজটিকে আমল বানিয়ে যারা নিয়মিত পালন করেন তারা বড়জোর এটাকে উত্তম বলতে পারেন। কিন্তু যে কাজটির বিপক্ষে বিশ্বমানের অনেক আলেম অবস্থান করেন এবং এটাকে স্পষ্ট বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এমন একটি কাজকে নিয়মিত পালন করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কারণ এটা পালন না করলে কোন গোনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না। কিন্তু যদি এটা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে এ আমলকারীর পরিণতি কত যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু বিদআতির আমল কবুল হয় না এবং পরকালে বিদআতিকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাই রাসূলুল্লাহ এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করেনি এমন একটি কাজকে উত্তম আমল মনে করে পালন করার চেয়ে পরিত্যাগ করাই উত্তম।
সম্মানিত ইমাম সাহেবদের প্রতি বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা মুসল্লিদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই মেনে নেবে। কেননা আমরাও এ মুনাজাত করতাম। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর মুসল্লিদেরকে আমরা বুঝিয়েছি এবং এটা ছেড়ে দিয়েছি। অনেকেই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিরা কী বলবে বা একটা ফিতনা সৃষ্টি হবে- এ ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু এমনটি করা উলামায়ে কেরামদের জন্য ঠিক হবে না। কারণ উলামায়ে কেরাম এবং ইমামরা হচ্ছেন জাতির অভিভাবক। তারাই যদি সঠিক জিনিসটি জাতির সামনে তুলে না ধরেন তাহলে এ জাতি কখনোই সঠিক পথ পাবে না এবং এর দায় শুধু মুসল্লিদের নয়, আলেম-উলামাদের উপরেও বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হক বুঝার এবং হকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনে অনেক ফরয নামায আদায় করেছেন। কিন্তু এ বিরাট সংখ্যক ফরয নামাযের কোন একটির পরও সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু‘আ করেছেন এমন কোন বর্ণনা কোন হাদীসে নেই। বিশুদ্ধ হাদীস তো দূরের কথা, কোন দুর্বল কিংবা জাল হাদীসে বা বানোয়াট হাদীসেও তার কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কোন হাদীস গ্রন্থের কোন একটিতেও পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের কোন অধ্যায় বা কোন পরিচ্ছেদ পাওয়া যায় না। এমনকি ফিকহের কিতাবসমূহের কোথাও উক্ত মুনাজাতের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না।
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয় : দু‘আর মধ্যে সুন্নাত হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরু করেই বলেন, ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষের বাক্য। এটা দু‘আ শুরু করার বাক্য নয়। তাই ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা, আল্লাহুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ বলে শেষ করা সুন্নাতের পরিপন্থী।
এ দু‘আ সম্বন্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমগণের অভিমত :
(১) শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে তায়মিয়াহ (রহ.) কে ফরয নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা জায়েয কি-না এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা বিদআত। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ দু‘আ ছিল না। বরং তাঁর দু‘আ ছিল নামাযের মধ্যে। কারণ নামাযের মধ্যে মুসল্লী স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে। আর নীরবে কথা বলার সময় দু‘আ করা যথাযথ। [মাজমূআ ফাতাওয়া ২২/৫১৯।]
(২) শাইখ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ও নফল নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা স্পষ্ট বিদআত। কারণ এরূপ দু‘আ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগেও ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয নামাযের পর অথবা নফল নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করে। [হায়াতু কিবারিল ওলামা ১/২৪৪।]
ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে দু‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কথা, কর্ম ও অনুমোদনগত (কওলী, ফে‘লী ও তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্ত কল্যাণ। নামায আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদীর দু‘আ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলিফাসহ সাহাবীগণ এবং তাবেয়ীগণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। এরপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নির্দেশনা ব্যতীত কোন আমল করবে তা পরিত্যাজ্য। কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু‘আ করবেন এবং মু্ক্তাদীগণ হাত তুলে আমীন আমীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে। অন্যথা (তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হলে) তা পরিত্যাজ্য। [হায়াতু কিরাবিল ওলামা ১/২৫৭পৃ:]
আমার জানা মতে, ফরয নামাযের পর হাত তুলে দু‘আ করা, না রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, না সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত। ফরয নামাযের পর যারা হাত তুলে দু‘আ করে, তাদের এ কাজ সুস্পষ্ট বিদআত। এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমার এ দ্বীনে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে তা পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৮৯; আবু দাউদ, হা/৪৬০৮; ইবনে মাজাহ, হা/১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৫; ইবনে হিববান, হা/২৭; বায়হাকী, হা/২০১৫৮; দার কুতনী, হা/৪৫৯০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯; মিশকাত, হা/১৪০।]
(৩) শাইখ সালেহ আল উছাইমিন (রহ.) বলেন, নামাযের পর দলবদ্ধভাবে দু‘আ করা এমন বিদআত, যার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণ থেকেও নেই। মুসল্লীদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। [ফাতাওয়া ওয়ায়মীন, পৃ:১২০।]
(৪) আল্লামা আবদুল হাই (রহ.) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত যে প্রথা, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলে, এ প্রথা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না। [ফতয়ায়ে আবদুল হাই, ১ম খন্ড, পৃ: ১০০।]
(৫) আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী (রহ.) বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে প্রমাণিত নয়। [মা‘আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড পৃ: ৪০৭।]
(৬) আল্লামা আবুল কাসেম নানুতুবী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্টতম বিদআত। [এমাদুদ্দীন, পৃ: ৩৯৭।]
(৭) আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, নিঃসন্দেহে এ প্রথা অর্থাৎ ইমাম সালাম ফিরিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটি সহীহ অথবা দুর্বল হাদীসও নেই। [যাদুল মা‘আদ, ১ম খন্ড, পৃ: ৬৬।]
(৮) আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিত মুনাজাত করেন, তা কখনো রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায়নি। [ছিফরুস সা‘আদাত, পৃ: ২০।]
(৯) আল্লামা শাত্বেবী (রহ.) (৭০০ খ্রীঃ) বলেন, শেষ কথা হলো এই যে, ফরয নামাযের পর সর্বদা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনের কোন প্রমাণও পাওয়া যায় না। [আল-ই‘তেছাম, ১ম খন্ড, পৃ: ৩৫২।]
(১০) আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেছেন, এরূপ কখনো দেখা যায়নি। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করাই উত্তম এবং করা বিদআত। [মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃ: ৮৩।]
(১১) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, ফরয নামাযের পর ইমাম সাহেব দু‘আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ্ এবং ইমাম গাবরহিনী বলেন, এ দু‘আকে নামাযের সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েয। [এস্তেহবাবুদ দাওয়াহ।]
(১২) আল্লামা মুফতী মোহাম্মদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে নামায শেষ করেই (দু‘হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না বুঝে আমীন, আমীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ: ৫৭৭।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনে এযাম হতে এবং শরীয়াতের চার মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতের পরিপন্থী। [আহকামে দু‘আ,পৃ:১৩।]
(১৩) পাকিস্তানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা‘আত সহকারে পড়তেন। যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীদেরকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয় একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন। কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সর্ম্পকে পাওয়া যায়নি। তারপর কিছু সময়ের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরূপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিদআত। [ইহছানুল ফাতাওয়া,৩য় খন্ড,পৃ:৬৮।]
প্রকাশ থাকে যে, কোন কোন আলেম ফরয নামাযান্তে হাত উঠিয়ে দু‘আ করার পক্ষে মতামত দিলেও বিষয়টি বিতর্কিত নয়। সিদ্ধান্তহীনতার ফলে অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। কারণ এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইমাম-মুক্তাদী মিলে হাত উঠিয়ে দু‘আ করেননি এবং পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় আলেমগণও করেননি এবং বর্তমানেও করেন না। কাজেই এটি স্পষ্ট বিদআত।
পর্যালোচনা :
যারা ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন এবং তা পালন করে যাচ্ছেন তারা সবাই এ কথা স্বীকার করেন যে, এটা নামাযের কোন অংশ নয় এবং এভাবে দু‘আ করা জরুরিও নয় আর তা না করলে নামাযের কোন ক্ষতিও হয় না।
এখন কথা হলো, যে কাজটি জরুরি নয় এবং না করলে কোন ক্ষতি হয় না, সে কাজটিকে আমল বানিয়ে যারা নিয়মিত পালন করেন তারা বড়জোর এটাকে উত্তম বলতে পারেন। কিন্তু যে কাজটির বিপক্ষে বিশ্বমানের অনেক আলেম অবস্থান করেন এবং এটাকে স্পষ্ট বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেন এমন একটি কাজকে নিয়মিত পালন করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। কারণ এটা পালন না করলে কোন গোনাহ হবে না এবং কোন ক্ষতিও হবে না। কিন্তু যদি এটা বিদআত হয়ে থাকে তাহলে এ আমলকারীর পরিণতি কত যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেহেতু বিদআতির আমল কবুল হয় না এবং পরকালে বিদআতিকে হাউজে কাউসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। তাই রাসূলুল্লাহ এবং তাঁর সাহাবীগণ পালন করেনি এমন একটি কাজকে উত্তম আমল মনে করে পালন করার চেয়ে পরিত্যাগ করাই উত্তম।
সম্মানিত ইমাম সাহেবদের প্রতি বিনীত অনুরোধ যে, আপনারা মুসল্লিদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই মেনে নেবে। কেননা আমরাও এ মুনাজাত করতাম। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর মুসল্লিদেরকে আমরা বুঝিয়েছি এবং এটা ছেড়ে দিয়েছি। অনেকেই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও মুসল্লিরা কী বলবে বা একটা ফিতনা সৃষ্টি হবে- এ ভয়ে বিষয়টি প্রকাশ করছেন না। কিন্তু এমনটি করা উলামায়ে কেরামদের জন্য ঠিক হবে না। কারণ উলামায়ে কেরাম এবং ইমামরা হচ্ছেন জাতির অভিভাবক। তারাই যদি সঠিক জিনিসটি জাতির সামনে তুলে না ধরেন তাহলে এ জাতি কখনোই সঠিক পথ পাবে না এবং এর দায় শুধু মুসল্লিদের নয়, আলেম-উলামাদের উপরেও বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে হক বুঝার এবং হকের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
প্রকৃতপক্ষে জামা‘আত শেষে সুন্নাত হলো- নিজে নিজে ঐসব দু‘আ পড়া, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাযের সালাম ফেরানোর পর পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। ফরয নামাযসমূহের পর নবী ﷺ যেসব তাসবীহ, হামদ, তাকবীর, তাহলীল, ইস্তেগফার, সূরা ও প্রাণ জুড়ানো যেসব অনুপম কালেমা ও দু‘আ পাঠ করেছেন তা-ই হচ্ছে উম্মতের জন্য অনুসরণীয় সুন্নাত ও আদর্শ। নবী ﷺ বলেছেন-
وَمَنْ اَحْيَا سُنَّتِىْ فَقَدْ اَحَبَّنِىْ . وَمَنْ اَحَبَّنِىْ كَانَ مَعِىْ فِى الْجَنَّةِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল সে তো আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মিশকাত, হা/১৭৫।]
ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর নবী ﷺ নিজে যেসব দু‘আ পাঠ করতেন তা হাদীসের সকল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই দু‘আগুলো বাদ দিয়ে প্রচলিত মুনাজাত করার কারণে অনেকেই ঐ দু‘আগুলো শিখেন না বা আমল করেন না। এজন্য উচিত হলো হাদীসে বর্ণিত ঐ দু‘আগুলো সালাম ফিরানোর পর এককভাবে পাঠ করা। দু‘আগুলো নিম্নরূপ :
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলা :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : : كُنْتُ اَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلَاةِ النَّبِيِّ بِالتَّكْبِيْرِ
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর নামায শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ, আসতাগ্ফিরুল্লা-হ, আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - اِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ . قَالَ الْوَلِيْدُ فَقُلْتُ لِلْاَوْزَاعِىِّ كَيْفَ الْاِسْتِغْفَارُ قَالَ تَقُوْلُ اَسْتَغْفِرُ اللهَ اَسْتَغْفِرُ اللهَ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সলাত শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেন- আমি আওযা‘ঈকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে ইস্তিগফার করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেন- ‘আস্তাগ্ফিরুল্লা-হ, আস্তাগ্ফিরুল্লা-হ’। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِىْ الزُّبَيْرِ قَالَ كَانَ ابْنُ الزُّبَيْرِ يَقُوْلُ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ حِيْنَ يُسَلِّمُ : لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ .... وَقَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُهَلِّلُ بِهِنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ ......। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ وَرَّادٍ كَاتِبِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ اَمْلٰى عَلَيَّ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ فِيْ كِتَابٍ اِلٰى مُعَاوِيَةَ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقُوْلُ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ .........
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা ও উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اَخَذَ بِيَدِهٖ وَقَالَ : يَا مُعَاذُ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ . فَقَالَ : اُوْصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُوْلُ : اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/ ১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ فَتِلْكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُوْنَ وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَاِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) এবং একবার- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ’বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖ اِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমূদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ قَرَاَ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
وَمَنْ اَحْيَا سُنَّتِىْ فَقَدْ اَحَبَّنِىْ . وَمَنْ اَحَبَّنِىْ كَانَ مَعِىْ فِى الْجَنَّةِ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল সে তো আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২৮৯৪; মিশকাত, হা/১৭৫।]
ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর নবী ﷺ নিজে যেসব দু‘আ পাঠ করতেন তা হাদীসের সকল কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। সেই দু‘আগুলো বাদ দিয়ে প্রচলিত মুনাজাত করার কারণে অনেকেই ঐ দু‘আগুলো শিখেন না বা আমল করেন না। এজন্য উচিত হলো হাদীসে বর্ণিত ঐ দু‘আগুলো সালাম ফিরানোর পর এককভাবে পাঠ করা। দু‘আগুলো নিম্নরূপ :
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলা :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : : كُنْتُ اَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلَاةِ النَّبِيِّ بِالتَّكْبِيْرِ
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর নামায শেষ হয়েছে। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৭০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩২।]
(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَسْتَغْفِرُ اللهَ ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগ্ফিরুল্লা-হ, আসতাগ্ফিরুল্লা-হ, আসতাগ্ফিরুল্লা-হ।
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।
(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া-যাল্যালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - اِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا وَقَالَ : اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ . قَالَ الْوَلِيْدُ فَقُلْتُ لِلْاَوْزَاعِىِّ كَيْفَ الْاِسْتِغْفَارُ قَالَ تَقُوْلُ اَسْتَغْفِرُ اللهَ اَسْتَغْفِرُ اللهَ
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সলাত শেষ করে তিনবার ইসতিগ্ফার করতেন এবং আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম.... এ দু‘আ পাঠ করতেন। বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেন- আমি আওযা‘ঈকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে ইস্তিগফার করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেন- ‘আস্তাগ্ফিরুল্লা-হ, আস্তাগ্ফিরুল্লা-হ’। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২; নাসাঈ, হা/১৩৩৭।]
(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ : লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ্, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হ, লাহুন্নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফায্লু ওয়ালাহুস্ সানা-উলহাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِىْ الزُّبَيْرِ قَالَ كَانَ ابْنُ الزُّبَيْرِ يَقُوْلُ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ حِيْنَ يُسَلِّمُ : لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ .... وَقَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُهَلِّلُ بِهِنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবু যুবায়ের (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ ......। তিনি (ইবনে যুবায়ের) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের পর কথাগুলো বলে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১; আবু দাউদ, হা/১৫০৮; নাসাঈ, হা/১৩৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬১৫০।]
(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ ‐ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা, ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা-ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং যা তুমি বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ وَرَّادٍ كَاتِبِ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ اَمْلٰى عَلَيَّ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ فِيْ كِتَابٍ اِلٰى مُعَاوِيَةَ اَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقُوْلُ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ .........
মুগীরা ইবনে শু‘বার কাতিব (সেক্রেটারী) ওয়ার্রাদ (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনে শু‘বা আমাকে দিয়ে মু‘আবিয়াকে এ ব্যাপারে একটি চিঠি লিখালেন যে, নবী ﷺ প্রত্যেক ফরয নামাযের পর উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৪৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬৬; আবু দাউদ, হা/১৫০৭; সুনানে নাসাঈ, হা/১৩৪১।]
(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা-যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়াহুসনি ‘ইবা-দাতিক।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা ও উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ اَخَذَ بِيَدِهٖ وَقَالَ : يَا مُعَاذُ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ وَاللهِ اِنِّىْ لَاُحِبُّكَ . فَقَالَ : اُوْصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُوْلُ : اَللّٰهُمَّ اَعِنِّىْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
মু‘আয (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে খুবই ভালোবাসি। তখন মু‘আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। এরপর নবী ﷺ বললেন, তুমি প্রত্যেক নামাযের পর এ দু‘আটি পাঠ করা ছেড়ে দিও না। [আবু দাঊদ, হা/১৫২৪; নাসাঈ, হা/ ১৩০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৭২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হা/৭৫১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০২০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১০১০; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৬।]
(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) এবং একবার-
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ : লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা- কুল্লি শায়ইন্ ক্বাদীর।
অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِيْنَ فَتِلْكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُوْنَ وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَاِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) এবং একবার- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ’বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো বেশি হয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৮২০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২০১৬; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১০১।]
(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :
﴿اَللهُ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖ اِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾
উচ্চারণ : আল্লা-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা-তা’খুযুহূ সিনাতুঁ ওয়ালা- নাঊম। লাহূ মা- ফিস্সামা-ওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরয্। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা- বিইয্নিহ, ইয়া‘লামু মা- বাইনা আইদীহিম ওয়া মা-খাল্ফাহুম ওয়ালা-ইউহীতূনা বিশায়ইম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা- বিমা-শা-আ ওয়াসি‘আ কুর্সিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরয্, ওয়ালা-ইয়াউদুহূ হিফ্যুহুমা- ওয়া হুয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম।
অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানসমূদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
এ সংক্রান্ত হাদীসটি হলো :
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ قَرَاَ اٰيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। [সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৭৪০৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৫৯৫।]
আশুরা কেন্দ্রিক বিদআত :
মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে খিচুড়ি বা বিরানী খাওয়া এবং মাতমের অনুষ্ঠান করা, তাজিয়া মিছিল করা ইত্যাদি বিদআত।
প্রকৃতপক্ষে আশুরার দিন ও তার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী দিন- এ দুদিন একমাত্র নফল রোযা রাখাই সুন্নাত। এছাড়া অন্য কোন আমলের শরয়ী ভিত্তি নেই। নবী ﷺ বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَه ̒
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; ইবনে খুযাইমা, হা/২০৮৭; ইবনে হিববান, হা/৩৬৩২; মিশকাত, হা/২০৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
সফর মাসের শেষ বুধবার ‘আখেরী চাহার শোম্বা’ পালন করা :
সফর মাসের শেষ বুধবারকে ফার্সীতে বলা হয় ‘আখেরী চাহার শোম্বা’। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে সফর মাসের শেষ বুধবারে অসুস্থতা থেকে সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। তাই ঐ দিনকে কেন্দ্র করে তা পালন করা এবং ঐ দিন কলাপাতা কিংবা কাগজে কোন দু‘আ লিখে তা ভিজিয়ে ঐ পানি দিয়ে গোসল করা হলে এবং ঐ পানি পান করা হলে সারা বছর রোগমুক্ত থাকা যাবে- এসব আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ নব উদ্ভাবিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন ঐ দিনের কোন ফযীলত বর্ণনা করেননি কিংবা ঐ দিনে কাউকে কোন আমল করতে বলেননি, তেমনি কোন সাহাবায়ে কেরামও ঐ দিবস পালন করেছেন কিংবা ঐ দিনকে কেন্দ্র করে কোন আমল করছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং ঐ দিনকে কেন্দ্র করে কোন দিবস পালন করা বা কোন ধরনের আমল করা সম্পূর্ণ বিদআত।
১২ই রবিউল সম্পর্কিত বিদআত :
১২ই রবিউল আওয়াল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ কিংবা ‘ঈদে আজম’ বলে আখ্যায়িত করা, ঐ দিনকে উদযাপন করা, ঐ দিন কিংবা ঐ মাসকে কেন্দ্র করে গরু-ছাগল যবেহ করা, খানাপিনার আয়োজন করা, ঐ দিন বা ঐ মাসকে কেন্দ্র করে ঈদে মিলাদুন্নাবী মাহফিল করা, জশনে-জুলুছ করা এসব কাজকর্ম সম্পূর্ণ বিদআত।
রবিউল আওয়াল মাসেই সীরাতুন্নাবী মাহফিল করা কিংবা ঐ মাসেই বার্ষিক সীরাতুন্নাবী মাহফিল করা বাধ্যতামূলক নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সীরাত উম্মতের জন্য পথ ও পাথেয় হিসেবে তাঁর সীরাতের উপর মাহফিল বা আলোচনা বৎসরের যেকোন মাস বা যেকোন দিন করা যেতে পারে। তার জন্য রবিউল আওয়াল মাস নির্দিষ্ট করার কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
শবে মেরাজের বিশেষ আমল :
রজব মাসের ২৭ তারিখ শবে মিরাজকে কেন্দ্র করে মেরাজের নামায পড়া ও মেরাজের রোযা রাখা বিদআত। কারণ ঐ তারিখের দিনে বা রাতে কোন আমলের কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়নি। আর যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি কিংবা তিনি করতে বলেননি, সে ব্যাপারে কেউ কোন আমল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
শবে বরাতের বিশেষ অনুষ্ঠান :
শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘নিসফু শা‘বানের’ পরিবর্তে ‘শবে বরাত’ আখ্যায়িত করা, ঐ রাতকে কেন্দ্র করে মসজিদ আলোকসজ্জা করা, শবে বরাতের নিয়তে ১২ রাক‘আত বা ১০০ রাক‘আত নামায পড়া, মাহফিল করা, বিশেষ মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা, ফজরের জামাআতের সময় এগিয়ে আনা, ঐ দিন গরু-ছাগল, মুরগী জবেহ করা ইত্যাদি সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা বিদআত।
প্রকৃতপক্ষে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের নাম হলো ‘নিসফু শা‘বান’। এ নিসফু শা‘বানকে ‘শবে বরাত’ হিসেবে নামকরণ করা কোন শরয়ী পরিভাষা নয়। বরং শবে বরাত হলো ফার্সী পরিভাষা। যার অর্থ ভাগ্য রজনী। নিসফু শা‘বান বা শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত কোন ভাগ্য রজনী নয়। মূলত ভাগ্য রজনী হলো ক্বদরের রাতসমূহ।
অনেক মানুষ ধর্মীয় জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার কারণে তাদের অবস্থা হীতে বিপরীত হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা অনেক কাজকে সওয়াব মনে করে থাকে; কিন্তু এর দ্বারা সওয়াব না হয়ে বরং গোনাহ হয়ে যায়। যেমন শবে বরাতে খানার বিশেষ ব্যবস্থা করা, গরু, ছাগল, মোরগ ইত্যাদির গোস্ত সংগ্রহ করাকে আবশ্যক মনে করা এবং হালুয়া-রুটি পাকানো ইত্যাদি। ঐ রাতগুলোতে বেশি করে বাতি জ্বালানো, চাই মসজিদে হোক অথবা ঘরে হোক, এগুলো হিন্দুদের বৈশিষ্ট্য। তারা তাদের পূজার মধ্যে এগুলো করে থাকে। মুসলমানদের এগুলো করা মানে হিন্দুদের সাথে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করা।
এ রাতে আতশবাজীর মধ্যে টাকা-পয়সা ব্যয় করা, নিজে করুক বা ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে করানো হোক, অপব্যয়কারীদের মধ্যে শামিল হয়ে বড় গোনাহগার হবে। এর জন্য তাওবা করা জরুরি।
এ রাতে হালুয়া-রুটি পাকানোর প্রচলন শিয়া সম্প্রদায় থেকেই প্রবেশ করেছে। আর এ প্রথাকে এত গুরুত্ব দেয়া হয় যে, যদি হালুয়া পাকানো না হয়, তাহলে শবে বরাতই আর হবে না। এটাকে ফরয-ওয়াজিবের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
নিসফু শা‘বান বা শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ব্যাপারে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত আমলগুলো যেমন সহীহ হাদীস সম্মত নয়, তেমনি একে কেন্দ্র করে প্রচলিত যেসব প্রাসঙ্গিক আমল সৃষ্টি হয়েছে তা সবই বিদআত।
বস্তুত কেউ প্রতি রাত যেসব ইবাদাত করে এ রাতেও তা-ই করবে। যেমন তাহাজ্জুদের নামায পড়বে ও দু‘আ, যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি করতে পারবে।
মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনকে কেন্দ্র করে খিচুড়ি বা বিরানী খাওয়া এবং মাতমের অনুষ্ঠান করা, তাজিয়া মিছিল করা ইত্যাদি বিদআত।
প্রকৃতপক্ষে আশুরার দিন ও তার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী দিন- এ দুদিন একমাত্র নফল রোযা রাখাই সুন্নাত। এছাড়া অন্য কোন আমলের শরয়ী ভিত্তি নেই। নবী ﷺ বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَه ̒
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; ইবনে খুযাইমা, হা/২০৮৭; ইবনে হিববান, হা/৩৬৩২; মিশকাত, হা/২০৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
সফর মাসের শেষ বুধবার ‘আখেরী চাহার শোম্বা’ পালন করা :
সফর মাসের শেষ বুধবারকে ফার্সীতে বলা হয় ‘আখেরী চাহার শোম্বা’। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে সফর মাসের শেষ বুধবারে অসুস্থতা থেকে সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। তাই ঐ দিনকে কেন্দ্র করে তা পালন করা এবং ঐ দিন কলাপাতা কিংবা কাগজে কোন দু‘আ লিখে তা ভিজিয়ে ঐ পানি দিয়ে গোসল করা হলে এবং ঐ পানি পান করা হলে সারা বছর রোগমুক্ত থাকা যাবে- এসব আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ নব উদ্ভাবিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন ঐ দিনের কোন ফযীলত বর্ণনা করেননি কিংবা ঐ দিনে কাউকে কোন আমল করতে বলেননি, তেমনি কোন সাহাবায়ে কেরামও ঐ দিবস পালন করেছেন কিংবা ঐ দিনকে কেন্দ্র করে কোন আমল করছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং ঐ দিনকে কেন্দ্র করে কোন দিবস পালন করা বা কোন ধরনের আমল করা সম্পূর্ণ বিদআত।
১২ই রবিউল সম্পর্কিত বিদআত :
১২ই রবিউল আওয়াল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ কিংবা ‘ঈদে আজম’ বলে আখ্যায়িত করা, ঐ দিনকে উদযাপন করা, ঐ দিন কিংবা ঐ মাসকে কেন্দ্র করে গরু-ছাগল যবেহ করা, খানাপিনার আয়োজন করা, ঐ দিন বা ঐ মাসকে কেন্দ্র করে ঈদে মিলাদুন্নাবী মাহফিল করা, জশনে-জুলুছ করা এসব কাজকর্ম সম্পূর্ণ বিদআত।
রবিউল আওয়াল মাসেই সীরাতুন্নাবী মাহফিল করা কিংবা ঐ মাসেই বার্ষিক সীরাতুন্নাবী মাহফিল করা বাধ্যতামূলক নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সীরাত উম্মতের জন্য পথ ও পাথেয় হিসেবে তাঁর সীরাতের উপর মাহফিল বা আলোচনা বৎসরের যেকোন মাস বা যেকোন দিন করা যেতে পারে। তার জন্য রবিউল আওয়াল মাস নির্দিষ্ট করার কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
শবে মেরাজের বিশেষ আমল :
রজব মাসের ২৭ তারিখ শবে মিরাজকে কেন্দ্র করে মেরাজের নামায পড়া ও মেরাজের রোযা রাখা বিদআত। কারণ ঐ তারিখের দিনে বা রাতে কোন আমলের কথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে বর্ণিত হয়নি। আর যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি কিংবা তিনি করতে বলেননি, সে ব্যাপারে কেউ কোন আমল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
শবে বরাতের বিশেষ অনুষ্ঠান :
শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘নিসফু শা‘বানের’ পরিবর্তে ‘শবে বরাত’ আখ্যায়িত করা, ঐ রাতকে কেন্দ্র করে মসজিদ আলোকসজ্জা করা, শবে বরাতের নিয়তে ১২ রাক‘আত বা ১০০ রাক‘আত নামায পড়া, মাহফিল করা, বিশেষ মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা, ফজরের জামাআতের সময় এগিয়ে আনা, ঐ দিন গরু-ছাগল, মুরগী জবেহ করা ইত্যাদি সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা বিদআত।
প্রকৃতপক্ষে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের নাম হলো ‘নিসফু শা‘বান’। এ নিসফু শা‘বানকে ‘শবে বরাত’ হিসেবে নামকরণ করা কোন শরয়ী পরিভাষা নয়। বরং শবে বরাত হলো ফার্সী পরিভাষা। যার অর্থ ভাগ্য রজনী। নিসফু শা‘বান বা শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত কোন ভাগ্য রজনী নয়। মূলত ভাগ্য রজনী হলো ক্বদরের রাতসমূহ।
অনেক মানুষ ধর্মীয় জ্ঞানে অজ্ঞ থাকার কারণে তাদের অবস্থা হীতে বিপরীত হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা অনেক কাজকে সওয়াব মনে করে থাকে; কিন্তু এর দ্বারা সওয়াব না হয়ে বরং গোনাহ হয়ে যায়। যেমন শবে বরাতে খানার বিশেষ ব্যবস্থা করা, গরু, ছাগল, মোরগ ইত্যাদির গোস্ত সংগ্রহ করাকে আবশ্যক মনে করা এবং হালুয়া-রুটি পাকানো ইত্যাদি। ঐ রাতগুলোতে বেশি করে বাতি জ্বালানো, চাই মসজিদে হোক অথবা ঘরে হোক, এগুলো হিন্দুদের বৈশিষ্ট্য। তারা তাদের পূজার মধ্যে এগুলো করে থাকে। মুসলমানদের এগুলো করা মানে হিন্দুদের সাথে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করা।
এ রাতে আতশবাজীর মধ্যে টাকা-পয়সা ব্যয় করা, নিজে করুক বা ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে করানো হোক, অপব্যয়কারীদের মধ্যে শামিল হয়ে বড় গোনাহগার হবে। এর জন্য তাওবা করা জরুরি।
এ রাতে হালুয়া-রুটি পাকানোর প্রচলন শিয়া সম্প্রদায় থেকেই প্রবেশ করেছে। আর এ প্রথাকে এত গুরুত্ব দেয়া হয় যে, যদি হালুয়া পাকানো না হয়, তাহলে শবে বরাতই আর হবে না। এটাকে ফরয-ওয়াজিবের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।
নিসফু শা‘বান বা শা‘বানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতের ব্যাপারে আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত আমলগুলো যেমন সহীহ হাদীস সম্মত নয়, তেমনি একে কেন্দ্র করে প্রচলিত যেসব প্রাসঙ্গিক আমল সৃষ্টি হয়েছে তা সবই বিদআত।
বস্তুত কেউ প্রতি রাত যেসব ইবাদাত করে এ রাতেও তা-ই করবে। যেমন তাহাজ্জুদের নামায পড়বে ও দু‘আ, যিকির, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি করতে পারবে।
১. মৃত ব্যক্তির চারপাশে বসে কুরআন পাঠ করা।
২. গোসলের জন্য গরম পানি দেয়ার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে পানি গরম করা।
৩. মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।
৪. কাফন পরানোর সময় নির্ধারিত পরিমাণের চাউল, বিস্কুট ও ফলের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো কবরস্থানে আগত ফকিরদের মাঝে বিলি করা।
৫. জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু রাববী, মুহাম্মাদ নবী’ কিংবা ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করা।
৬. জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগরবাতি জ্বালানো এবং জানাযা যাত্রীদের উপর গোলাপজল ছিঁটানো।
৭. জানাযা নামায শেষে ‘‘এ মানুষটি কেমন ছিল’’ উপস্থিত সবাই ‘‘বেশ ভালো ছিল’’ একথা বলা।
৮. জানাযা পড়ানোর সময় ইমাম একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা, যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।
৯. কাফনের উপর যেকোন রকমের দু‘আ লিখে দেয়া কিংবা দু‘আ লিখা কাপড়খন্ড কাফনের সাথে লাগিয়ে দেয়া।
১০. কোন কাপড়খন্ডের উপর কালিমা লিখে ঐ কাপড়খন্ড কবরের ভেতর মৃতের ডান পাশে মুখ বরাবর কবরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া।
১১. নেককার বা বুযুর্গ ব্যক্তি হিসেবে কোন বিছানা-বালিশ দেয়া।
১২. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো ও খানা পাক না করা।
১৩. মৃত ব্যক্তির কাযা নামায থাকলে কিংবা মৃত ব্যক্তি বে-নামাযী হলে তার নামাযের আর্থিক কাফফারা হিসাব করে কাফফারা আদায় করা এবং এ মৃত ব্যক্তি গরীব হলে কাফফারার পরিবর্তে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদিয়া প্রদান করা ইত্যাদি।
১৪. মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা, ঐ দিন মিলাদ পাঠ করানো, মেজবানের ব্যবস্থা করা কিংবা কাঙ্গালি ভোজের অনুষ্ঠান করা অথবা কুরআনখানি, খতমে কুরআন বা খতমে বুখারী পড়ানো।
১৫. মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা।
১৬. কবরের উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা।
১৭. মৃত ব্যক্তির জন্য শোকসভা করা।
১৮. দুই ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাকে জরুরি মনে করা।
১৯. নেককার মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দু‘আ করা হলে দু‘আ কবুল হবে মনে করা।
২০. মৃত ব্যক্তিকে তার কোন আত্মীয়স্বজন স্বপ্নে দেখল তার জন্য যেকোন খতম পড়ানো বা কোন অনুষ্ঠান করা।
সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হোক কিংবা বরকত লাভের নিয়তে হোক- এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা কুরআন-হাদীস ও সালফে সালেহীন থেকে এসব কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না।
২. গোসলের জন্য গরম পানি দেয়ার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে পানি গরম করা।
৩. মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।
৪. কাফন পরানোর সময় নির্ধারিত পরিমাণের চাউল, বিস্কুট ও ফলের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো কবরস্থানে আগত ফকিরদের মাঝে বিলি করা।
৫. জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু রাববী, মুহাম্মাদ নবী’ কিংবা ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করা।
৬. জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগরবাতি জ্বালানো এবং জানাযা যাত্রীদের উপর গোলাপজল ছিঁটানো।
৭. জানাযা নামায শেষে ‘‘এ মানুষটি কেমন ছিল’’ উপস্থিত সবাই ‘‘বেশ ভালো ছিল’’ একথা বলা।
৮. জানাযা পড়ানোর সময় ইমাম একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা, যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।
৯. কাফনের উপর যেকোন রকমের দু‘আ লিখে দেয়া কিংবা দু‘আ লিখা কাপড়খন্ড কাফনের সাথে লাগিয়ে দেয়া।
১০. কোন কাপড়খন্ডের উপর কালিমা লিখে ঐ কাপড়খন্ড কবরের ভেতর মৃতের ডান পাশে মুখ বরাবর কবরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া।
১১. নেককার বা বুযুর্গ ব্যক্তি হিসেবে কোন বিছানা-বালিশ দেয়া।
১২. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো ও খানা পাক না করা।
১৩. মৃত ব্যক্তির কাযা নামায থাকলে কিংবা মৃত ব্যক্তি বে-নামাযী হলে তার নামাযের আর্থিক কাফফারা হিসাব করে কাফফারা আদায় করা এবং এ মৃত ব্যক্তি গরীব হলে কাফফারার পরিবর্তে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদিয়া প্রদান করা ইত্যাদি।
১৪. মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা, ঐ দিন মিলাদ পাঠ করানো, মেজবানের ব্যবস্থা করা কিংবা কাঙ্গালি ভোজের অনুষ্ঠান করা অথবা কুরআনখানি, খতমে কুরআন বা খতমে বুখারী পড়ানো।
১৫. মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা।
১৬. কবরের উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা।
১৭. মৃত ব্যক্তির জন্য শোকসভা করা।
১৮. দুই ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাকে জরুরি মনে করা।
১৯. নেককার মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দু‘আ করা হলে দু‘আ কবুল হবে মনে করা।
২০. মৃত ব্যক্তিকে তার কোন আত্মীয়স্বজন স্বপ্নে দেখল তার জন্য যেকোন খতম পড়ানো বা কোন অনুষ্ঠান করা।
সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হোক কিংবা বরকত লাভের নিয়তে হোক- এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা কুরআন-হাদীস ও সালফে সালেহীন থেকে এসব কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না।
অনেক অঞ্চলে জানাযার নামাযের পর বা মৃত ব্যক্তির দাফনের পর সম্মিলিতভাবে উপস্থিত সকলে মিলে মোনাজাত করে থাকেন। এ প্রচলিত মোনাজাত নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন কারো যুগে ছিল না। সুতরাং এ প্রচলিত মোনাজাতসমূহ বিদআতের অন্তুর্ভুক্ত।
মিরকাত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন,
لَا يَدْعُوْا لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ لِاَنَّهٗ يَشْبَهُ الزِّيَادَةَ فِىْ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ
অর্থাৎ জানাযার নামাযের পর দ্বিতীয়বার মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে না। কারণ এর দ্বারা জানাযার নামাযের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু প্রসার হওয়ার সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। [মিরকাত, ২/২১৯।]
তবে জানাযার নামাযের পর বা দাফনের পর এককভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা উত্তম।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে খতমের ব্যবস্থা করা :
প্রায় লক্ষ্য করা যায় যে, কারো আত্মীয়স্বজন মারা গেলে আশপাশের মাদ্রাসায় অথবা মসজিদে গিয়ে ছাত্র এবং ইমাম বা মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে খুঁজ করা হয় খতম পড়ানোর জন্য। আর অনেকেই এ দাওয়াত কবুল করেন এবং খতমও করেন। এরপর সম্মিলিত দু‘আ অনুষ্ঠান করে খাবার ও হাদিয়া গ্রহণ করেন। আসলে ইসলামে এ কাজের কোন ভিত্তি নেই। শাইখ আবদুল হক মোহাদ্দেছ দেহলবী (রহ.) তার ‘‘রদ্দে বিদআত’’ নামক কিতাবে লিখেছেন,
اَلْاِجْتِمَاعُ لِلْقِرَأَةِ بِالْقُرْاٰنِ عَلَى الْمَيِّتِ بِالتَّخَصُّصِ فِى الْمَقْبَرَةِ اَوِ الْمَسْجِدِ اَوِ الْبَيْتِ بِدْعَةٌ مَذْمُوْمَةٌ لِاَنَّهٗ لَمْ يَنْقُلْ مِنَ الصَّحَابَةِ شَيْئًا وَ فِيْهِ تَرْكُ الْاَدَابِ بِالْاَنْوَاعِ
অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ক্বারীদেরকে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে একত্রিত করা, বিশেষ করে কবরে বা মসজিদে অথবা ঘরে এসব নিন্দনীয় বিদআত। কেননা সাহাবাদের থেকে তার কোন চিহ্নমাত্র পাওয়া যায় না এবং এতে অনেক প্রকার আদবের খেলাফ কাজ হতে দেখা যায়।
খতমে শবিনা পড়া :
খতমে শবিনা পড়া বা পড়ানো কিংবা কোন হাফেজে কুরআন কর্তৃক সারা রাত জেগে অথবা দিনে মাইক দিয়ে কুরআন পড়া বিদআত। এ আমল তো একদিকে বিদআত, যার কারণে কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না। অপর দিকে যারা এভাবে কুরআন পড়ে ও পড়ায় তারা সবাই গোনাহগার হবে। কারণ এভাবে কুরআন পাঠ করা হলে তা শুনার হক আদায় হয় না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং নিরব থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
হাদীসে তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : لَمْ يَفْقَهْ مَنْ قَرَاَ القُرْاٰنَ فِيْ اَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কুরআন খতম করে সে কুরআনের কিছুই বুঝেনি। [তিরমিযী, হা/২৯৪৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৮০১৩; সুনানুস সুগরা লিল বায়হাকী, হা/৭৭৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৮১।]
এ সম্পর্কে অন্য এক হাদীসে আয়েশা (রাঃ) বলেন,
وَلَا اَعْلَمُ نَبِىَّ اللهِ - - قَرَاَ الْقُرْاٰنَ كُلَّهٗ فِىْ لَيْلَةٍ وَلَا صَلّٰى لَيْلَةً اِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شَهْرًا كَامِلًا غَيْرَ رَمَضَانَ
নবী ﷺ এক রাত্রে সমস্ত কুরআন তিলাওয়াত করেছেন এবং সমস্ত রাত্রব্যাপী নামায পড়েছেন অথবা রমাযান ব্যতীত অন্য কোন সময় পূর্ণ মাস রোযা রেখেছেন বলে আমার জানা নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৩; নাসাঈ, হা/১৬০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩১৪; ইবনে খুযাইমা, হা/১১৭৭; মিশকাত, হা/১৫২৭।]
যেহেতু অধিকাংশ হাফেজই আলেম নন বিধায় তারা অনেকেই কুরআন-হাদীসের অর্থ বুঝেন না। অর্থের লোভে তারা আখেরাতের ব্যাপারে আরো অন্ধ হয়ে যান, তাদের তাকওয়া-পরহেজগারীও তেমন থাকে না। অথচ ইসালে সাওয়াব হিসেবে খতমে শবীনা পড়ে পারিশ্রমিক নেয়া ও দেয়া উভয়ই হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًا﴾
আমার আয়াতসমূহ (কুরআন) অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
অধিকাংশ মানুষ উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে সঠিক অর্থ বুঝার ব্যাপারে খুবই অন্ধ। ثَمَنًا قَلِيْلًا বা স্বল্প মূল্যের অর্থ সম্পর্কে তাফসীরে খাজেনে বলা হয়েছে, দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যাবতীয় সম্পদ। হাদীসে এসেছে,
قَالَ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ شِبْلٍ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا الْقُرْاٰنَ ، وَلَا تَغْلُوْا فِيْهِ ، وَلَا تَجْفُوْا عَنْهُ ، وَلَا تَأْكُلُوْا بِهٖ ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوْا بِهٖ
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো এবং এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। আর তোমরা কুরআনকে রিযিকের মাধ্যম বানিয়ো না এবং এর দ্বারা অধিক কোন কিছু আশা করো না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬৮।]
মাওলানা মহিউদ্দীন খান অনুদিত সৌদি আরব থেকে এক খন্ডে ছাপা সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মা‘রেফুল কুরআনের ৩৫ পৃষ্ঠার ডানের কলামে লিখা আছে, ‘‘ইসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে নাজায়েয। আল্লামা শামী দুর্রে মুখতারের শরাহ এবং শিফাউল আলীল নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলসহ একথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষা দান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যূতি দেখা দিলে গোটা শরীয়াতের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে। সুতরাং এ অনুমতি এসব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এ জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোন দু‘আ-কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। কারণ, এর উপর কোন ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয়। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়াবে এবং যে পড়বে, তারা উভয়ই গোনাহগার হবে। বস্তুত যে পড়েছে সে-ই যখন কোন সওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কী পৌঁছাবে? কবরের পাশে কুরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণের দ্বারা কোথাও প্রমাণিত নেই। সুতরাং এগুলো নিঃসন্দেহে বিদআত।’’
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফত খাওয়া :
আমাদের দেশে লক্ষ্য করা যায় যে, কারো বাপ-মা বা আত্মীয়স্বজন মারা গেলে তিন দিন, চল্লিশ দিন বা প্রতি বৎসর মৃত্যুর তারিখে বড় আকারে খাবারের আয়োজন করে এবং তারা মনে করে যে, এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির অনেক উপকার হয়। সমাজে এসব কাজ রেওয়াজ হিসেবে চালু থাকার কারণে অনেকে কষ্ট করে হলেও খাবারের আয়োজন করে। সমাজের নিয়ম রক্ষার জন্য সওয়াবের নিয়তে এসব কাজ করা স্পষ্ট বিদআত।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্র হওয়া এবং তাদের জন্য খানার ব্যবস্থা করা জাহেলী যুগের বিলাপ প্রথার অন্তর্ভুক্ত। ফুকাহাগণ বলেন, তৃতীয়া, দশমী, বিশা, চল্লিশা, তিন মাসী, ছয় মাসী ইত্যাদি দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে ইসালে সওয়াবের নামে যে প্রথা চালু আছে, তা মাকরূহ এবং বিদআত।
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ ، قَالَ : كُنَّا نَرَى الْاِجْتِمَاعَ اِلٰى اَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنْعَةَ الطَّعَامِ مِنَ النِّيَاحَةِ
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্রিত হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানা পাকানোর ব্যবস্থা করা উভয়টিকেই জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯০৫।]
উক্ত হাদীসটিতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মৃত ব্যক্তির দাফনের পর, চাই কবরস্থানে হোক বা তার বাড়িতে হোক খাবারের আয়োজন করা মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই এসব কাজ থেকে মুসলিম সমাজকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী তা পরে আসছে- ইনশা-আল্লাহ।
মিরকাত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন,
لَا يَدْعُوْا لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ لِاَنَّهٗ يَشْبَهُ الزِّيَادَةَ فِىْ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ
অর্থাৎ জানাযার নামাযের পর দ্বিতীয়বার মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে না। কারণ এর দ্বারা জানাযার নামাযের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু প্রসার হওয়ার সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। [মিরকাত, ২/২১৯।]
তবে জানাযার নামাযের পর বা দাফনের পর এককভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা উত্তম।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে খতমের ব্যবস্থা করা :
প্রায় লক্ষ্য করা যায় যে, কারো আত্মীয়স্বজন মারা গেলে আশপাশের মাদ্রাসায় অথবা মসজিদে গিয়ে ছাত্র এবং ইমাম বা মাদ্রাসার শিক্ষকদেরকে খুঁজ করা হয় খতম পড়ানোর জন্য। আর অনেকেই এ দাওয়াত কবুল করেন এবং খতমও করেন। এরপর সম্মিলিত দু‘আ অনুষ্ঠান করে খাবার ও হাদিয়া গ্রহণ করেন। আসলে ইসলামে এ কাজের কোন ভিত্তি নেই। শাইখ আবদুল হক মোহাদ্দেছ দেহলবী (রহ.) তার ‘‘রদ্দে বিদআত’’ নামক কিতাবে লিখেছেন,
اَلْاِجْتِمَاعُ لِلْقِرَأَةِ بِالْقُرْاٰنِ عَلَى الْمَيِّتِ بِالتَّخَصُّصِ فِى الْمَقْبَرَةِ اَوِ الْمَسْجِدِ اَوِ الْبَيْتِ بِدْعَةٌ مَذْمُوْمَةٌ لِاَنَّهٗ لَمْ يَنْقُلْ مِنَ الصَّحَابَةِ شَيْئًا وَ فِيْهِ تَرْكُ الْاَدَابِ بِالْاَنْوَاعِ
অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য ক্বারীদেরকে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে একত্রিত করা, বিশেষ করে কবরে বা মসজিদে অথবা ঘরে এসব নিন্দনীয় বিদআত। কেননা সাহাবাদের থেকে তার কোন চিহ্নমাত্র পাওয়া যায় না এবং এতে অনেক প্রকার আদবের খেলাফ কাজ হতে দেখা যায়।
খতমে শবিনা পড়া :
খতমে শবিনা পড়া বা পড়ানো কিংবা কোন হাফেজে কুরআন কর্তৃক সারা রাত জেগে অথবা দিনে মাইক দিয়ে কুরআন পড়া বিদআত। এ আমল তো একদিকে বিদআত, যার কারণে কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না। অপর দিকে যারা এভাবে কুরআন পড়ে ও পড়ায় তারা সবাই গোনাহগার হবে। কারণ এভাবে কুরআন পাঠ করা হলে তা শুনার হক আদায় হয় না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ﴾
যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে এবং নিরব থাকবে, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। (সূরা আ‘রাফ- ২০৪)
হাদীসে তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : لَمْ يَفْقَهْ مَنْ قَرَاَ القُرْاٰنَ فِيْ اَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি তিন দিনের কম সময়ে কুরআন খতম করে সে কুরআনের কিছুই বুঝেনি। [তিরমিযী, হা/২৯৪৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৪৭; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৮০১৩; সুনানুস সুগরা লিল বায়হাকী, হা/৭৭৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৮১।]
এ সম্পর্কে অন্য এক হাদীসে আয়েশা (রাঃ) বলেন,
وَلَا اَعْلَمُ نَبِىَّ اللهِ - - قَرَاَ الْقُرْاٰنَ كُلَّهٗ فِىْ لَيْلَةٍ وَلَا صَلّٰى لَيْلَةً اِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شَهْرًا كَامِلًا غَيْرَ رَمَضَانَ
নবী ﷺ এক রাত্রে সমস্ত কুরআন তিলাওয়াত করেছেন এবং সমস্ত রাত্রব্যাপী নামায পড়েছেন অথবা রমাযান ব্যতীত অন্য কোন সময় পূর্ণ মাস রোযা রেখেছেন বলে আমার জানা নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/১৭৭৩; নাসাঈ, হা/১৬০১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩১৪; ইবনে খুযাইমা, হা/১১৭৭; মিশকাত, হা/১৫২৭।]
যেহেতু অধিকাংশ হাফেজই আলেম নন বিধায় তারা অনেকেই কুরআন-হাদীসের অর্থ বুঝেন না। অর্থের লোভে তারা আখেরাতের ব্যাপারে আরো অন্ধ হয়ে যান, তাদের তাকওয়া-পরহেজগারীও তেমন থাকে না। অথচ ইসালে সাওয়াব হিসেবে খতমে শবীনা পড়ে পারিশ্রমিক নেয়া ও দেয়া উভয়ই হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًا﴾
আমার আয়াতসমূহ (কুরআন) অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
অধিকাংশ মানুষ উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে সঠিক অর্থ বুঝার ব্যাপারে খুবই অন্ধ। ثَمَنًا قَلِيْلًا বা স্বল্প মূল্যের অর্থ সম্পর্কে তাফসীরে খাজেনে বলা হয়েছে, দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যাবতীয় সম্পদ। হাদীসে এসেছে,
قَالَ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ شِبْلٍ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : اِقْرَؤُوا الْقُرْاٰنَ ، وَلَا تَغْلُوْا فِيْهِ ، وَلَا تَجْفُوْا عَنْهُ ، وَلَا تَأْكُلُوْا بِهٖ ، وَلَا تَسْتَكْثِرُوْا بِهٖ
আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো এবং এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না। আর তোমরা কুরআনকে রিযিকের মাধ্যম বানিয়ো না এবং এর দ্বারা অধিক কোন কিছু আশা করো না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৬৮।]
মাওলানা মহিউদ্দীন খান অনুদিত সৌদি আরব থেকে এক খন্ডে ছাপা সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মা‘রেফুল কুরআনের ৩৫ পৃষ্ঠার ডানের কলামে লিখা আছে, ‘‘ইসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে নাজায়েয। আল্লামা শামী দুর্রে মুখতারের শরাহ এবং শিফাউল আলীল নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলসহ একথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষা দান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যূতি দেখা দিলে গোটা শরীয়াতের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে। সুতরাং এ অনুমতি এসব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এ জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোন দু‘আ-কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। কারণ, এর উপর কোন ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয়। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়াবে এবং যে পড়বে, তারা উভয়ই গোনাহগার হবে। বস্তুত যে পড়েছে সে-ই যখন কোন সওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কী পৌঁছাবে? কবরের পাশে কুরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণের দ্বারা কোথাও প্রমাণিত নেই। সুতরাং এগুলো নিঃসন্দেহে বিদআত।’’
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফত খাওয়া :
আমাদের দেশে লক্ষ্য করা যায় যে, কারো বাপ-মা বা আত্মীয়স্বজন মারা গেলে তিন দিন, চল্লিশ দিন বা প্রতি বৎসর মৃত্যুর তারিখে বড় আকারে খাবারের আয়োজন করে এবং তারা মনে করে যে, এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির অনেক উপকার হয়। সমাজে এসব কাজ রেওয়াজ হিসেবে চালু থাকার কারণে অনেকে কষ্ট করে হলেও খাবারের আয়োজন করে। সমাজের নিয়ম রক্ষার জন্য সওয়াবের নিয়তে এসব কাজ করা স্পষ্ট বিদআত।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্র হওয়া এবং তাদের জন্য খানার ব্যবস্থা করা জাহেলী যুগের বিলাপ প্রথার অন্তর্ভুক্ত। ফুকাহাগণ বলেন, তৃতীয়া, দশমী, বিশা, চল্লিশা, তিন মাসী, ছয় মাসী ইত্যাদি দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে ইসালে সওয়াবের নামে যে প্রথা চালু আছে, তা মাকরূহ এবং বিদআত।
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ ، قَالَ : كُنَّا نَرَى الْاِجْتِمَاعَ اِلٰى اَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنْعَةَ الطَّعَامِ مِنَ النِّيَاحَةِ
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্রিত হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানা পাকানোর ব্যবস্থা করা উভয়টিকেই জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯০৫।]
উক্ত হাদীসটিতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন মৃত ব্যক্তির দাফনের পর, চাই কবরস্থানে হোক বা তার বাড়িতে হোক খাবারের আয়োজন করা মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই এসব কাজ থেকে মুসলিম সমাজকে বিরত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী তা পরে আসছে- ইনশা-আল্লাহ।
মৃত ব্যক্তি যত বড় ওলী-বুযুর্গ কিংবা কামেল লোকই হোক না কেন তার কবরের উপর ছাউনি দিয়ে দরগাহ বা মাযার স্থাপন করা, কবরে বাতি জ্বালানো বিদআত। ওলীগণের মাযারকে বড় করা এবং এর উপর গম্বুজ নির্মাণ করা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَاَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَاَنْ يُبْنٰى عَلَيْهِ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কবর বড় করা, পাকা বানানো, এর উপর ঘর নির্মাণ করা এবং এর উপর বসা থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৯।]
যখন নবী ﷺ এ থেকে বারণ করেছেন তাহলে এমন কে আছে, যে এ নিষিদ্ধ জিনিসের মধ্যে মঙ্গল বা উপকার প্রমাণ করতে পারে?
গম্বুজ ভূপতিত করার নির্দেশ :
عَنْ اَبِىْ الْهَيَّاجِ الْاَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ اَبِىْ طَالِبٍ اَ لَا اَبْعَثُكَ عَلٰى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا اِلَّا طَمَسْتَهٗ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا اِلَّا سَوَّيْتَهٗ
আবুল হাইয়াজ আল আছাদী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে ঐ কাজের জন্য প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে প্রেরণ করেছিলেন। আর তা ছিল ছবি ও মূর্তিকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এসবের কোন কিছু অবশিষ্ট না রাখা; আর সমস্ত উঁচু কবরকে মাটির সাথে সমান করে দেয়া। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৬৬।]
ইমাম নববী (রহ.) বলেন,
اَنَّ السُّنَّةَ اَنَّ الْقَبْرَ لَا يُرْفَعُ عَلَى الْاَرْضِ رَفْعًا كَثِيْرًا ، وَلَا يُسَنَّمُ ، بَلْ يُرْفَعُ نَحْوَ شِبْرٍ وَيُسَطَّحُ
কবরের সুন্নাত নিয়ম হলো, এটা জমিন থেকে অর্ধ হাতের চেয়ে বেশি উঁচু হবে না। বরং শুধু অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু হবে এবং উপর সমান করে দেবে। [শরহে মুসলিম, ৩/৩৮৯।]
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (মৃতঃ ৯৭৪ হিঃ) লিখেন,
تَجِبُ الْمُبَادَرَةُ اِلٰى هَدْمِهَا وَهَدْمِ الْقُبَابِ الَّتِىْ عَلَيْهَا
ঐ সমস্ত উঁচু কবরসমূহ এবং কবরের উপর যে গম্বুজ এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে তা ভেঙ্গে দেয়া ওয়াজিব।
মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন,
وَيَجِبُ الْهَدْمُ وَلَوْ كَانَ مَسْجِدًا
কবরের উপর সৌধ তা মসজিদ আকারে হলেও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। [মিরকাত, ২/৩৭২।]
যেকোন কবরকে কেন্দ্র করে দরগাহ বা মাযার স্থাপন করা এবং তাতে যেকোন রকমের বাতি জ্বালানো ও নাম লেখা শুধু বিদআতই নয় বরং এসব কাজকে কেন্দ্র করে বর্তমানে মুসলিম জাতির বিরাট অংশ শিরকের মতো পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
হাদীসে মাযার করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং উঁচু কবরকে ভেঙ্গে সমান করে দিতে বলা হয়েছে। তাই কোন মাযার ভেঙ্গে দিলে আউলিয়া-বুযুর্গদের সাথে কোন বেয়াদবী করা হয় না বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীকে মান্য করা হয়। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীকে মান্য করা হলো ঈমানের দাবি।
মাযারের দান বাক্স :
বিভিন্ন মাযারের নামে দান বাক্সে যে টাকা পয়সা দেয়া হয় তা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সবই অবৈধ তথা হারাম। উক্ত টাকা পয়সা মসজিদ, মাদ্রাসায় খরচ করা জায়েয হবে না। বর্তমানে আমাদের দেশে এই শিরকজনিত কাজের ঢল নেমে গেছে। সুতরাং মাযারের নামে এ সমস্ত বাক্স কায়েম করা থেকে সকলেরই বিরত থাকা ওয়াজিব।
অবশ্য মসজিদ, মাদ্রাসায় প্রয়োজনের ভিত্তিতে যদি বাক্স স্থাপন করা হয়, তাহলে তা মাযার থেকে দূরবর্তী কোন জায়গায় মাদ্রাসা বা মসজিদের স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে স্থাপন করতে হবে।
قَالَ فِى الدُّرِّ الْمُخْتَارِ وَالْعِلْمُ اَنَّ النَّذْرَ الَّذِىْ يَقَعُ لِلْاَمْوَاتِ مِنْ اَكْثَرِ الْعَوَامِ وَمَا يُؤْخَذُ مِنَ الدَّرَاهِمِ وَالشَّمْعِ وَالزَّيْتِ وَنَحْوِهٖ اِلَى الْاَوْلِيَاءِ الْكِرَامِ تَقَرُّبَا اِلَيْهِمْ فَهُوَ بِالْاِجْمَاعِ بَاطِلٌ وَحَرَامٌ
দুররে মুখতারের মধ্যে রয়েছে, এটা জানা বিষয় যে, যেসকল মান্নত মৃত ব্যক্তির জন্য করা হয়, যা অধিকাংশ মূর্খ লোকেরা করে থাকে এবং যেসকল দান, তৈল এবং আরো অন্যান্য যা কিছু ওলী-আউলিয়াদের নামে গ্রহণ করা হয় তাদের নৈকট্য লাভের জন্য তা ইজমা দ্বারা বাতিল এবং হারাম। [ফতোয়ায়ে শামী, পৃঃ ১৭০।]
কবরে বাতি জ্বালানো :
কবরের মধ্যে বাতি জ্বালানো, মোমবাতি, বিজলী বাতি ইত্যাদি জ্বালানোর কোন ভিত্তি শরীয়াতে নেই; বরং সত্য ধর্ম এ জাতীয় নোংরা চালচলনের বিরোধিতা করে। তিরমিযীর শরাহ উরফুস সাজী কিতাবে রয়েছে,
اَلْغُلُوُّ الَّذِيْ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ مِنْ إِيْقَادِ النَّارِ
অর্থাৎ কবরে আগুন দেয়া জাহেলী যুগের বাড়াবাড়ি। [উরফুস সাজী, ২/৪০৮।]
সুতরাং বুঝা গেল যে, কবরওয়ালা যে-ই হোন না কেন, কবরে বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَاَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَاَنْ يُبْنٰى عَلَيْهِ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কবর বড় করা, পাকা বানানো, এর উপর ঘর নির্মাণ করা এবং এর উপর বসা থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৯।]
যখন নবী ﷺ এ থেকে বারণ করেছেন তাহলে এমন কে আছে, যে এ নিষিদ্ধ জিনিসের মধ্যে মঙ্গল বা উপকার প্রমাণ করতে পারে?
গম্বুজ ভূপতিত করার নির্দেশ :
عَنْ اَبِىْ الْهَيَّاجِ الْاَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ اَبِىْ طَالِبٍ اَ لَا اَبْعَثُكَ عَلٰى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا اِلَّا طَمَسْتَهٗ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا اِلَّا سَوَّيْتَهٗ
আবুল হাইয়াজ আল আছাদী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে ঐ কাজের জন্য প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে প্রেরণ করেছিলেন। আর তা ছিল ছবি ও মূর্তিকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এসবের কোন কিছু অবশিষ্ট না রাখা; আর সমস্ত উঁচু কবরকে মাটির সাথে সমান করে দেয়া। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৬৬।]
ইমাম নববী (রহ.) বলেন,
اَنَّ السُّنَّةَ اَنَّ الْقَبْرَ لَا يُرْفَعُ عَلَى الْاَرْضِ رَفْعًا كَثِيْرًا ، وَلَا يُسَنَّمُ ، بَلْ يُرْفَعُ نَحْوَ شِبْرٍ وَيُسَطَّحُ
কবরের সুন্নাত নিয়ম হলো, এটা জমিন থেকে অর্ধ হাতের চেয়ে বেশি উঁচু হবে না। বরং শুধু অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু হবে এবং উপর সমান করে দেবে। [শরহে মুসলিম, ৩/৩৮৯।]
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (মৃতঃ ৯৭৪ হিঃ) লিখেন,
تَجِبُ الْمُبَادَرَةُ اِلٰى هَدْمِهَا وَهَدْمِ الْقُبَابِ الَّتِىْ عَلَيْهَا
ঐ সমস্ত উঁচু কবরসমূহ এবং কবরের উপর যে গম্বুজ এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে তা ভেঙ্গে দেয়া ওয়াজিব।
মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন,
وَيَجِبُ الْهَدْمُ وَلَوْ كَانَ مَسْجِدًا
কবরের উপর সৌধ তা মসজিদ আকারে হলেও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। [মিরকাত, ২/৩৭২।]
যেকোন কবরকে কেন্দ্র করে দরগাহ বা মাযার স্থাপন করা এবং তাতে যেকোন রকমের বাতি জ্বালানো ও নাম লেখা শুধু বিদআতই নয় বরং এসব কাজকে কেন্দ্র করে বর্তমানে মুসলিম জাতির বিরাট অংশ শিরকের মতো পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
হাদীসে মাযার করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং উঁচু কবরকে ভেঙ্গে সমান করে দিতে বলা হয়েছে। তাই কোন মাযার ভেঙ্গে দিলে আউলিয়া-বুযুর্গদের সাথে কোন বেয়াদবী করা হয় না বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীকে মান্য করা হয়। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণীকে মান্য করা হলো ঈমানের দাবি।
মাযারের দান বাক্স :
বিভিন্ন মাযারের নামে দান বাক্সে যে টাকা পয়সা দেয়া হয় তা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সবই অবৈধ তথা হারাম। উক্ত টাকা পয়সা মসজিদ, মাদ্রাসায় খরচ করা জায়েয হবে না। বর্তমানে আমাদের দেশে এই শিরকজনিত কাজের ঢল নেমে গেছে। সুতরাং মাযারের নামে এ সমস্ত বাক্স কায়েম করা থেকে সকলেরই বিরত থাকা ওয়াজিব।
অবশ্য মসজিদ, মাদ্রাসায় প্রয়োজনের ভিত্তিতে যদি বাক্স স্থাপন করা হয়, তাহলে তা মাযার থেকে দূরবর্তী কোন জায়গায় মাদ্রাসা বা মসজিদের স্পষ্ট নাম উল্লেখ করে স্থাপন করতে হবে।
قَالَ فِى الدُّرِّ الْمُخْتَارِ وَالْعِلْمُ اَنَّ النَّذْرَ الَّذِىْ يَقَعُ لِلْاَمْوَاتِ مِنْ اَكْثَرِ الْعَوَامِ وَمَا يُؤْخَذُ مِنَ الدَّرَاهِمِ وَالشَّمْعِ وَالزَّيْتِ وَنَحْوِهٖ اِلَى الْاَوْلِيَاءِ الْكِرَامِ تَقَرُّبَا اِلَيْهِمْ فَهُوَ بِالْاِجْمَاعِ بَاطِلٌ وَحَرَامٌ
দুররে মুখতারের মধ্যে রয়েছে, এটা জানা বিষয় যে, যেসকল মান্নত মৃত ব্যক্তির জন্য করা হয়, যা অধিকাংশ মূর্খ লোকেরা করে থাকে এবং যেসকল দান, তৈল এবং আরো অন্যান্য যা কিছু ওলী-আউলিয়াদের নামে গ্রহণ করা হয় তাদের নৈকট্য লাভের জন্য তা ইজমা দ্বারা বাতিল এবং হারাম। [ফতোয়ায়ে শামী, পৃঃ ১৭০।]
কবরে বাতি জ্বালানো :
কবরের মধ্যে বাতি জ্বালানো, মোমবাতি, বিজলী বাতি ইত্যাদি জ্বালানোর কোন ভিত্তি শরীয়াতে নেই; বরং সত্য ধর্ম এ জাতীয় নোংরা চালচলনের বিরোধিতা করে। তিরমিযীর শরাহ উরফুস সাজী কিতাবে রয়েছে,
اَلْغُلُوُّ الَّذِيْ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ مِنْ إِيْقَادِ النَّارِ
অর্থাৎ কবরে আগুন দেয়া জাহেলী যুগের বাড়াবাড়ি। [উরফুস সাজী, ২/৪০৮।]
সুতরাং বুঝা গেল যে, কবরওয়ালা যে-ই হোন না কেন, কবরে বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ।
বুযুর্গানে দ্বীনের তিরোধানের পর শরীয়াতসম্মত নিয়মের অধীনে থেকে ইসালে সওয়াব করা এবং তাদের জন্য দু‘আ করা শরীয়াতে একটি ভালো কাজ। যদি কেউ কোন বুযুর্গের কবরের নিকটবর্তী হয় তাহলে তথায় উপস্থিত হয়ে সুন্নাত মোতাবেক সালাম বলা জায়েয। তবে দূর-দূরান্ত থেকে যিয়ারতের জন্য উপস্থিত হওয়া নিষেধ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ اِلَّا اِلٰى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ : اَلْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُوْلِ وَمَسْجِدِ الْاَقْصٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে যাওয়ার জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে না। এ তিন মসজিদ হলো- (১) মসজিদে হারাম অর্থাৎ খানায়ে কা‘বা, (২) মসজিদুর রাসূল অর্থাৎ মসজিদে নববী, (৩) মসজিদে আক্সা বা বাইতুল মাক্বদিস (শুধু এ তিন মসজিদের উদ্দেশে বিশেষভাবে সফর করা জায়েয। এ ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদই সমমর্যাদার অধিকারী)। [সহীহ বুখারী, হা/১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৩৪৫০; আবু দাউদ, হা/২০৩৫; তিরমিযী, হা/৩২৬; নাসাঈ, হা/৭০০; ইবনে মাজাহ, হা/১৪০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬১৯।]
শাহ ওলীউল্লাহ (রহ.) উক্ত হাদীসের বরাত দিয়ে লিখেন যে, আমার নিকট সত্য হলো এটাই যে, কোন ওলীর মাযারে দূর-দূরান্ত থেকে যিয়ারতের জন্য উপস্থিত হওয়া উক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। [হুজ্জাতুল্লাহীল বালেগাহ- ১/১৯২।]
তিনি আরো লিখেন, যে ব্যক্তি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) এর কবরে এবং এ জাতীয় কোন বুযুর্গের কবরে উপস্থিত হয়ে দু‘আ করে এ বিশ্বাসে যে, উক্ত স্থানে দু‘আ করলে কবুল হয়, তাহলে সে যেন হত্যা এবং জিনাকারীর চেয়েও বেশি গোনাহের কাজ করল। [তাফহীমাতে এলাহিয়া- ২/৪৮।]
এমনিভাবে কবর যিয়ারতের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা এবং উক্ত নির্দিষ্ট দিনে বা তারিখে ইজতেমা করা কিছুতেই শরীয়াত কর্তৃক প্রমাণিত নয়। বিশেষ করে বছরান্তে উরসের নামে যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা হয় শরীয়াতে তার কোন অস্তিত্ব বা ভিত্তি বলতে কিছুই নেই। নবী ﷺ বলেন,
لَا تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا
অর্থাৎ তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিও না। [আবু দাউদ, হা/২০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৯০।]
হাদীস বিশারদগণ এ হাদীসকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন মিশকাত গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ গ্রন্থে বলা হয়েছে,
لَا تَجْتَمِعُوْا لِلزِّيَارَةِ اِجْتِمَاعُكُمْ لِلْعِيْدِ
অর্থাৎ তোমরা ঈদের ন্যায় যিয়ারতের জন্য একত্রিত হয়ো না। [মির‘আতুল মাফঅতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৯৩২ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
ওরসের গোশত খাওয়া হারাম :
প্রচলিত আছে যে, বিভিন্ন ওলী-আওলিয়াদের মাযারকে কেন্দ্র করে, এমনকি অনেক ভন্ড পীর-ফকীরের কবরকে মাযার নাম দিয়ে তাতে বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে গরু, ছাগল জবাই করে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। মূলত এই খাবার মাযারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবাই করা জন্তু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللهِۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীবজন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেসব জীবজন্তু, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্যই যেসকল লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয় তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা মহান ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা বাকারা- ১৭৩)
কোন ওলী-আওলিয়ার মাযারে গরু, ছাগল, মুরগী, মোমবাতি, মিষ্টি এ জাতীয় যা কিছু উৎসর্গ করা হয় এসবই হারামের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এসব কাজকর্ম হিন্দুদের ধর্মীয় কাজকর্মের সাথে সাদৃশ্য রাখে, যা মুসলিমদের জন্য অনুসরণ করা কোনভাবেই বৈধ নয়।
আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য জবাই করা বা উৎসর্গ করা জন্তুর দুটি দিক হতে পারে :
প্রথমত : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা উৎসর্গ করা হয় এবং যবেহ করার সময়ও সে নাম নিয়েই যবেহ করা হয়, এমতাবস্থায় যবেহকৃত জন্তু সকল আলেম ও ফকীহগণের দৃষ্টিতে হারাম এবং নাপাক। এর কোন অংশের দ্বারাই ফায়দা গ্রহণ করা বৈধ নয়। কারণ এ প্রাণী মৃত প্রাণীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। আর مَا اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللهِ আয়াতে যে অবস্থার কথা বুঝানো হয়েছে তা সরাসরি এই অবস্থারই নমুনাস্বরূপ। এ ব্যাপারে কারো কোন মতভেদ নেই।
দ্বিতীয়ত : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা যবেহ করা হয়, তবে যবেহ করার সময় তা আল্লাহর নাম নিয়েই যবেহ করা হয়। যেমন অনেক অজ্ঞ মুসলিম পীর-বুযুর্গদের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে গরু, ছাগল, মুরগী ইত্যাদি মান্নত করে তা যবেহ করে থাকে। কিন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিয়েই যবেহ করে থাকে। এ অবস্থায়ও ফকীহগণের সর্বসম্মতিক্রমে তা হারাম এবং যবেহকৃত জন্তু মৃতের মধ্যে শামিল। ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) বলেন,
قَالَ الْعُلَمَاءُ : لَوْ ذَبَحَ مُسْلِمٌ ذَبِيْحَةً وَقَصَدَ بِذَبْحِهِ التَّقَرُّبَ بِهَا اِلٰى غَيْرِ اللهِ تَعَالٰى صَارَ مُرْتَدًّا وَذَبِيْحَتُهٗ ذَبِيْحَةُ مُرْتَدٍّ
আমাদের আলেমগণ বলেন, যদি কোন মুসলিম কোন জন্তু যবেহ করে এবং এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য করে তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং তার যবেহটা মুরতাদের যবেহের ন্যায় হবে। [তাফসীরুল মানার, ৮/২৪।]
মোটকথা, মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াব কিংবা সওয়াব পৌঁছানোর নামে উল্লিখিত কাজগুলো সম্পূর্ণ বিদআত এবং নাযায়েজ। তার কারণ হলো এসব কাজের মধ্যে কোনটিই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর তাঁর কোন সাহাবায়ে কেরামও এসব কাজ কোন মৃত ব্যক্তির জন্য করেছেন বলে তার কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং দ্বীনি আমলের ক্ষেত্রে মূলত যে কাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় কিংবা সাহাবায়ে কেরামের কোন আমল থেকেও প্রমাণিত নয় তা হলো বিদআত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম সমাজে এসব কাজ নিয়মিত হচ্ছে। কিছু আলেম-উলামা এতে অংশ গ্রহণ করার কারণে সাধারণ লোকজন এসব কাজকে সওয়াবের কাজ মনে করে নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- এসব কুপ্রথা ও বিদআত থেকে বিরত থাকা। যারা এসব অনুষ্ঠানের জন্য দাওয়াত করে তাদেরকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলে এবং এ ব্যাপারে জায়েয পদ্ধতিতে ইসালে সওয়াবের পথ বলে দিলে আশা করা যায়, তারা তা মেনে নেবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বিদআত ও কুপ্রথা থেকে হেফাজত করুন এবং সুন্নাতের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ اِلَّا اِلٰى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ : اَلْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُوْلِ وَمَسْجِدِ الْاَقْصٰى
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে যাওয়ার জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে না। এ তিন মসজিদ হলো- (১) মসজিদে হারাম অর্থাৎ খানায়ে কা‘বা, (২) মসজিদুর রাসূল অর্থাৎ মসজিদে নববী, (৩) মসজিদে আক্সা বা বাইতুল মাক্বদিস (শুধু এ তিন মসজিদের উদ্দেশে বিশেষভাবে সফর করা জায়েয। এ ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদই সমমর্যাদার অধিকারী)। [সহীহ বুখারী, হা/১১৮৯; সহীহ মুসলিম, হা/৩৪৫০; আবু দাউদ, হা/২০৩৫; তিরমিযী, হা/৩২৬; নাসাঈ, হা/৭০০; ইবনে মাজাহ, হা/১৪০৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১৯১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬১৯।]
শাহ ওলীউল্লাহ (রহ.) উক্ত হাদীসের বরাত দিয়ে লিখেন যে, আমার নিকট সত্য হলো এটাই যে, কোন ওলীর মাযারে দূর-দূরান্ত থেকে যিয়ারতের জন্য উপস্থিত হওয়া উক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। [হুজ্জাতুল্লাহীল বালেগাহ- ১/১৯২।]
তিনি আরো লিখেন, যে ব্যক্তি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) এর কবরে এবং এ জাতীয় কোন বুযুর্গের কবরে উপস্থিত হয়ে দু‘আ করে এ বিশ্বাসে যে, উক্ত স্থানে দু‘আ করলে কবুল হয়, তাহলে সে যেন হত্যা এবং জিনাকারীর চেয়েও বেশি গোনাহের কাজ করল। [তাফহীমাতে এলাহিয়া- ২/৪৮।]
এমনিভাবে কবর যিয়ারতের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা এবং উক্ত নির্দিষ্ট দিনে বা তারিখে ইজতেমা করা কিছুতেই শরীয়াত কর্তৃক প্রমাণিত নয়। বিশেষ করে বছরান্তে উরসের নামে যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা হয় শরীয়াতে তার কোন অস্তিত্ব বা ভিত্তি বলতে কিছুই নেই। নবী ﷺ বলেন,
لَا تَجْعَلُوْا قَبْرِىْ عِيْدًا
অর্থাৎ তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিও না। [আবু দাউদ, হা/২০৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৭৯০।]
হাদীস বিশারদগণ এ হাদীসকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন মিশকাত গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ গ্রন্থে বলা হয়েছে,
لَا تَجْتَمِعُوْا لِلزِّيَارَةِ اِجْتِمَاعُكُمْ لِلْعِيْدِ
অর্থাৎ তোমরা ঈদের ন্যায় যিয়ারতের জন্য একত্রিত হয়ো না। [মির‘আতুল মাফঅতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৯৩২ নং হাদীসের ব্যাখ্যা।]
ওরসের গোশত খাওয়া হারাম :
প্রচলিত আছে যে, বিভিন্ন ওলী-আওলিয়াদের মাযারকে কেন্দ্র করে, এমনকি অনেক ভন্ড পীর-ফকীরের কবরকে মাযার নাম দিয়ে তাতে বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে গরু, ছাগল জবাই করে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। মূলত এই খাবার মাযারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবাই করা জন্তু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيْرِ وَمَاۤ اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللهِۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ اِثْمَ عَلَيْهِؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীবজন্তু, রক্ত, শুকরের গোশত এবং সেসব জীবজন্তু, যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্যই যেসকল লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয় তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা মহান ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা বাকারা- ১৭৩)
কোন ওলী-আওলিয়ার মাযারে গরু, ছাগল, মুরগী, মোমবাতি, মিষ্টি এ জাতীয় যা কিছু উৎসর্গ করা হয় এসবই হারামের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া এসব কাজকর্ম হিন্দুদের ধর্মীয় কাজকর্মের সাথে সাদৃশ্য রাখে, যা মুসলিমদের জন্য অনুসরণ করা কোনভাবেই বৈধ নয়।
আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য জবাই করা বা উৎসর্গ করা জন্তুর দুটি দিক হতে পারে :
প্রথমত : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা উৎসর্গ করা হয় এবং যবেহ করার সময়ও সে নাম নিয়েই যবেহ করা হয়, এমতাবস্থায় যবেহকৃত জন্তু সকল আলেম ও ফকীহগণের দৃষ্টিতে হারাম এবং নাপাক। এর কোন অংশের দ্বারাই ফায়দা গ্রহণ করা বৈধ নয়। কারণ এ প্রাণী মৃত প্রাণীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। আর مَا اُهِلَّ بِهٖ لِغَيْرِ اللهِ আয়াতে যে অবস্থার কথা বুঝানো হয়েছে তা সরাসরি এই অবস্থারই নমুনাস্বরূপ। এ ব্যাপারে কারো কোন মতভেদ নেই।
দ্বিতীয়ত : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা যবেহ করা হয়, তবে যবেহ করার সময় তা আল্লাহর নাম নিয়েই যবেহ করা হয়। যেমন অনেক অজ্ঞ মুসলিম পীর-বুযুর্গদের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে গরু, ছাগল, মুরগী ইত্যাদি মান্নত করে তা যবেহ করে থাকে। কিন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নিয়েই যবেহ করে থাকে। এ অবস্থায়ও ফকীহগণের সর্বসম্মতিক্রমে তা হারাম এবং যবেহকৃত জন্তু মৃতের মধ্যে শামিল। ফখরুদ্দীন রাজী (রহ.) বলেন,
قَالَ الْعُلَمَاءُ : لَوْ ذَبَحَ مُسْلِمٌ ذَبِيْحَةً وَقَصَدَ بِذَبْحِهِ التَّقَرُّبَ بِهَا اِلٰى غَيْرِ اللهِ تَعَالٰى صَارَ مُرْتَدًّا وَذَبِيْحَتُهٗ ذَبِيْحَةُ مُرْتَدٍّ
আমাদের আলেমগণ বলেন, যদি কোন মুসলিম কোন জন্তু যবেহ করে এবং এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য করে তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং তার যবেহটা মুরতাদের যবেহের ন্যায় হবে। [তাফসীরুল মানার, ৮/২৪।]
মোটকথা, মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াব কিংবা সওয়াব পৌঁছানোর নামে উল্লিখিত কাজগুলো সম্পূর্ণ বিদআত এবং নাযায়েজ। তার কারণ হলো এসব কাজের মধ্যে কোনটিই রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর তাঁর কোন সাহাবায়ে কেরামও এসব কাজ কোন মৃত ব্যক্তির জন্য করেছেন বলে তার কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং দ্বীনি আমলের ক্ষেত্রে মূলত যে কাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় কিংবা সাহাবায়ে কেরামের কোন আমল থেকেও প্রমাণিত নয় তা হলো বিদআত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম সমাজে এসব কাজ নিয়মিত হচ্ছে। কিছু আলেম-উলামা এতে অংশ গ্রহণ করার কারণে সাধারণ লোকজন এসব কাজকে সওয়াবের কাজ মনে করে নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- এসব কুপ্রথা ও বিদআত থেকে বিরত থাকা। যারা এসব অনুষ্ঠানের জন্য দাওয়াত করে তাদেরকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলে এবং এ ব্যাপারে জায়েয পদ্ধতিতে ইসালে সওয়াবের পথ বলে দিলে আশা করা যায়, তারা তা মেনে নেবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বিদআত ও কুপ্রথা থেকে হেফাজত করুন এবং সুন্নাতের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন
কোন মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে জীবিতদের উপর যেসব কাজ করণীয় হয়ে দাঁড়ায় তা নবী ﷺ এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত আছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো,
১. কারো মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে নিচের দু‘আ পাঠ করা :
اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জি‘উন।
অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্যই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
(সূরা বাকারা- ১৫৬)
কোন মুসলিমের মৃত্যুর সংবাদে হাদীসে নিচের দু‘আটিও পাঠ করার কথা বলা হয়েছে,
اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ أْجُرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا
উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জি‘উন। আল্লা-হুম্মা’জুরনী ফীমুসীবাতী ওয়াখ্লুফলী খায়রাম মিনহা।
অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করো।
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন মুসলিমের উপর কোন বিপদ আসে এবং উক্ত দু‘আ পড়ে, তাহলে আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৭৭; তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৯০;।]
২. শোকের আঘাতের শুরুতেই ধৈর্যধারণ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَقُوْلُ اللهُ تَعَالٰى مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِيْ جَزَاءٌ اِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهٗ مِنْ اَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهٗ اِلَّا الْجَنَّةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন মু’মিন ব্যক্তির প্রিয়জনকে দুনিয়া থেকে তুলে নেয়ার সময় সে যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে অবশ্যই জান্নাত তার বিনিময় হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৫৪৮।]
৩. মৃত ব্যক্তির জন্য অযথা কান্নাকাটি না করে দু‘আ করা :
عَنْ اَبِيْ بُرْدَةَ ، عَنْ اَبِيْهِ ، قَالَ : لَمَّا أُصِيْبَ عُمَرُ ، جَعَلَ صُهَيْبٌ يَقُوْلُ وَاَخَاهُ فَقَالَ عُمَرُ اَمَا عَلِمْتَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَىِّ
আবু বুরদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন উমর (রাঃ) মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন সুহাইব (রাঃ) বলতে লাগলেন, হায় ভাই! হায় ভাই! তখন উমর (রাঃ) বললেন, তুমি কি জান না যে, নবী ﷺ বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃতদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯০; সহীহ মুসলিম, হা/২১৮৫অ]
عَنِ الْمُغِيْرَةِ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلٰى اَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : مَنْ نِيْحَ عَلَيْهِ يُعَذَّبُ بِمَا نِيْحَ عَلَيْه .
মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো উপর মিথ্যারোপ করার সমান নয়। কাজেই যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে, সে যেন নিশ্চিতরূপে জাহান্নামে তার জায়গা করে নেয়। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি নবী ﷺ-কে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তির জন্য শোকাহত সুরে কাঁদা হয়, সেই কাঁদার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২২৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৪২১।]
তবে বিলাপ না করে বা শব্দ না করে দরদজনিত কারণে কারো মৃত্যুতে চোখ দিয়ে পানি পড়া দূষণীয় নয়। বরং এটা দয়া-ভালোবাসার নিদর্শন।
৪. মৃত ব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা :
عَنِ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، زَوْجَ النَّبِيِّ قَالَتْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ حِينَ تُوُفِّيَ سُجِّيَ بِبُرْدٍ حِبَرَةٍ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকাল করলে তাঁকে ‘হিবারা’ চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮১৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮৫১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৬৯।]
৫. মৃত ব্যক্তির চোখ খোলা থাকলে তা বন্ধ করে দেয়া :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى اَبِىْ سَلَمَةَ وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهٗ فَاَغْمَضَهٗ ثُمَّ قَالَ : اِنَّ الرُّوْحَ اِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আবু সালামার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তার চোখ খোলা ছিল। পরে তিনি তার চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর বললেন, যখন জান কবজ করা হয় তখন চক্ষু তার অনুসরণ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৮৫; ইবনে হিববান, হা/৭০৪১; বায়হাকী, হা/৬৩৯৮।]
৬. মৃত ব্যক্তির কাফন দাফনে বিলম্ব না করা :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِيْ طَالِبٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : ثَلَاثٌ يَا عَلِيُّ لَا تُؤَخِّرْهُنَّ : اَلصَّلَاةُ اِذَا اٰنَتْ ، وَالْجَنَازَةُ اِذَا حَضَرَتْ ، وَالْاَيِّمُ اِذَا وَجَدَتْ كُفْؤًا
আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে আলী! তুমি তিনটি কাজে দেরী করো না। (এক) যখন নামাযের সময় হয়ে যায়। (দুই) যখন জানাযা উপস্থিত হয়। (তিন) যখন যুবক-যুবতীর উপযুক্ত জোড়া পাওয়া যায়। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৮৬; তিরমিযী, হা/১০৭৫।]
৭. মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় এ দু‘আ পাঠ করা :
بِسْمِ اللهِ وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হি ওয়া‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হ।
অর্থ : আল্লাহর নামে এবং তাঁর রাসূলের মিল্লাতের উপর (লাশকে কবরে রাখছি)।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا أَدْخَلَ الْمَيِّتَ الْقَبْرَ ، قَالَ : بِسْمِ اللهِ ، وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হতো তখন নবী ﷺ উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৯০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১০৯; বায়হাকী, হা/৬৮৫২; মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৮২৩;।]
৮. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার জন্য খালেছভাবে দু‘আ করা : যেমন-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ وَ ثَبِّتْهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়া সাববিতহু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তাকে অবিচল রাখুন।
উসমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন লাশকে দাফন করে অবসর গ্রহণ করতেন তখন বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তোমরা তার জন্য কবরে প্রতিষ্ঠিত থাকার দু‘আ করো। (অর্থাৎ সে যেন ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে)। কেননা এখন তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। [আবূ দাঊদ,হা/৩২২১; দাওয়াতুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/৬৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/ ৩৫১১।]
উল্লেখ্য যে, দাফনের পর উপরোক্ত দু‘আ ও এর সাথে জানাযার দু‘আগুলিও ব্যক্তিগতভাবে পড়া যায়।
তাছাড়া সবসময়ের জন্য যেকোন মুমিন বান্দা তার অন্য কোন মুমিন মৃত ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি কীভাবে দু‘আ করতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। আর তা হলো :
﴿رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ﴾
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা আমাদের পূর্বে ঈমানের সাথে অগ্রগামী হয়েছে। আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হাশর- ১০)
৯. তিন দিনের বেশি শোক পালন না করা :
عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ اَبِيْ سَلَمَةَ قَالَتْ دَخَلْتُ عَلٰى أُمِّ حَبِيْبَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ فَقَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا يَحِلُّ لِاِمْرَاَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ تُحِدُّ عَلٰى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَعَشْرًا
যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে মহিলা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করবে। তবে তার স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৪৬; সহীহ বুখারী, হা/১২৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৩৭৯৯; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৫২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮০৮।]
১০. মৃত ব্যক্তির সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা চালু রাখা :
মৃত ব্যক্তি যদি সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা রেখে যায় যেমন- রাস্তাঘাট তৈরি করা, পানির ব্যবস্থা করা কিংবা মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপন করা, শিক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা, দুঃস্থ ও ইয়াতীমের পুনর্বাসন করা ইত্যাদি, তাহলে এসব চালু রাখা উচিত। এগুলোর সওয়াব মৃত ব্যক্তি পাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهٗ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهٖ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহﷺ বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিন ধরনের আমলের সওয়াব সর্বদা অব্যাহত থাকে। ১. সাদকায়ে জারিয়া। ২. ঐ ইলিম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হয়। ৩. সুসন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে। [মুসলিম, হ/৪৩১০।]
১১. মৃত ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয থাকলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : كَانَ الْفَضْلُ رَدِيْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَاءَتِ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمَ، فَجَعَلَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَتَنْظُرُ إِلَيْهِ، وَجَعَلَ النَّبِيُّ يَصْرِفُ وَجْهَ الْفَضْلِ إِلَى الشِّقِّ الْاٰخَرِ فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فَرِيْضَةَ اللهِ عَلٰى عِبَادِهٖ فِي الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِيْ شَيْخًا كَبِيرًا، لَا يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ، أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ : نَعَمْ، وَذٰلِكَ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সময়) ফযল ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরোহীর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় খাস‘আম সম্প্রদায়ের এক নারী আসলে ফযল তার দিকে দেখছিলেন। মহিলাটিও তাকে দেখ ছিলো। নবী ﷺ বার বার ফযলের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দিতে থাকলেন। অতঃপর মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত হজ্জ আমার বৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে। তিনি আরোহীর উপর ঠিক হয়ে বসে থাকতে পারেন না। অতএব আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? নবী ﷺ বললেন, হ্যাঁ, পার। এটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা। [সহীহ বুখারী, হা/১৫১৩।]
১২. মৃত ব্যক্তির কোন ঋণ থাকলে তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা :
মৃত ব্যক্তির যে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাকি থাকে তা দ্বারা তার দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা। সেক্ষেত্রে স্ত্রীর দেনমোহরও দেনার মধ্যে গণ্য হবে যদি তা পূর্বে আদায় না করা হয়।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ : نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهٖ , حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিনের আত্মা ঋণের কারণে ঝুলে থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়। [তিরমিযী, হা/১০৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৭৭; ইবনে হিববান, হা/৩০৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২২১৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১১।]
১৩. মৃত ব্যক্তির কোন (শরীয়াত সম্মত) অসিয়ত করে থাকলে তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ করা :
দেনা পরিশোধের পর যে সম্পত্তি বাকি থাকে তা হতে ঐ ব্যক্তির অসিয়ত পূর্ণ করা।
১৪. বাকি সম্পত্তি কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা :
﴿مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصٰى بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَلِيْمٌ﴾
(ওয়ারিসরা অংশ পাবে) অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর (অবশিষ্ট সম্পদ থেকে)। (তবে শর্ত হচ্ছে) অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়- এ বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। (সূরা নিসা- ১২)
১৫. মৃত ব্যক্তির জন্য কবর যিয়ারত করা :
কবর যিয়ারতের দু‘আ :
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَاِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ ‐ اَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলাইকুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু‘মিনীনা ওয়ালমুসলিমীন, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূন, আসআলুল্লা-হা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্।
অর্থ : হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলমান! তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩০২; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৪০; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৮৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭১১০; বায়হাকী, হা/৭০০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৯০৯।]
১. কারো মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে নিচের দু‘আ পাঠ করা :
اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জি‘উন।
অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্যই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
(সূরা বাকারা- ১৫৬)
কোন মুসলিমের মৃত্যুর সংবাদে হাদীসে নিচের দু‘আটিও পাঠ করার কথা বলা হয়েছে,
اِنَّا لِلّٰهِ وَاِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ ‐ اَللّٰهُمَّ أْجُرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا
উচ্চারণ : ইন্না লিল্লা-হি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জি‘উন। আল্লা-হুম্মা’জুরনী ফীমুসীবাতী ওয়াখ্লুফলী খায়রাম মিনহা।
অর্থ : আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করো।
উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কোন মুসলিমের উপর কোন বিপদ আসে এবং উক্ত দু‘আ পড়ে, তাহলে আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করবেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৭৭; তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪৯০;।]
২. শোকের আঘাতের শুরুতেই ধৈর্যধারণ করা :
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : يَقُوْلُ اللهُ تَعَالٰى مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِيْ جَزَاءٌ اِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهٗ مِنْ اَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهٗ اِلَّا الْجَنَّةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন মু’মিন ব্যক্তির প্রিয়জনকে দুনিয়া থেকে তুলে নেয়ার সময় সে যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে অবশ্যই জান্নাত তার বিনিময় হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৮২; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৫৪৮।]
৩. মৃত ব্যক্তির জন্য অযথা কান্নাকাটি না করে দু‘আ করা :
عَنْ اَبِيْ بُرْدَةَ ، عَنْ اَبِيْهِ ، قَالَ : لَمَّا أُصِيْبَ عُمَرُ ، جَعَلَ صُهَيْبٌ يَقُوْلُ وَاَخَاهُ فَقَالَ عُمَرُ اَمَا عَلِمْتَ اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ : اِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ الْحَىِّ
আবু বুরদা (রহ.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন উমর (রাঃ) মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন সুহাইব (রাঃ) বলতে লাগলেন, হায় ভাই! হায় ভাই! তখন উমর (রাঃ) বললেন, তুমি কি জান না যে, নবী ﷺ বলেছেন, জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে মৃতদেরকে শাস্তি দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯০; সহীহ মুসলিম, হা/২১৮৫অ]
عَنِ الْمُغِيْرَةِ قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلٰى اَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : مَنْ نِيْحَ عَلَيْهِ يُعَذَّبُ بِمَا نِيْحَ عَلَيْه .
মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যারোপ করা তোমাদের কারো উপর মিথ্যারোপ করার সমান নয়। কাজেই যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে, সে যেন নিশ্চিতরূপে জাহান্নামে তার জায়গা করে নেয়। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি নবী ﷺ-কে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তির জন্য শোকাহত সুরে কাঁদা হয়, সেই কাঁদার কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮২২৭; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৪২১।]
তবে বিলাপ না করে বা শব্দ না করে দরদজনিত কারণে কারো মৃত্যুতে চোখ দিয়ে পানি পড়া দূষণীয় নয়। বরং এটা দয়া-ভালোবাসার নিদর্শন।
৪. মৃত ব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা :
عَنِ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، زَوْجَ النَّبِيِّ قَالَتْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ حِينَ تُوُفِّيَ سُجِّيَ بِبُرْدٍ حِبَرَةٍ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইন্তিকাল করলে তাঁকে ‘হিবারা’ চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৫৮১৪; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৬৮৫১; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৪৬৯।]
৫. মৃত ব্যক্তির চোখ খোলা থাকলে তা বন্ধ করে দেয়া :
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ عَلٰى اَبِىْ سَلَمَةَ وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهٗ فَاَغْمَضَهٗ ثُمَّ قَالَ : اِنَّ الرُّوْحَ اِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আবু সালামার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তার চোখ খোলা ছিল। পরে তিনি তার চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর বললেন, যখন জান কবজ করা হয় তখন চক্ষু তার অনুসরণ করে। [সহীহ মুসলিম, হা/২১৬৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৮৫; ইবনে হিববান, হা/৭০৪১; বায়হাকী, হা/৬৩৯৮।]
৬. মৃত ব্যক্তির কাফন দাফনে বিলম্ব না করা :
عَنْ عَلِيِّ بْنِ اَبِيْ طَالِبٍ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : ثَلَاثٌ يَا عَلِيُّ لَا تُؤَخِّرْهُنَّ : اَلصَّلَاةُ اِذَا اٰنَتْ ، وَالْجَنَازَةُ اِذَا حَضَرَتْ ، وَالْاَيِّمُ اِذَا وَجَدَتْ كُفْؤًا
আলী ইবনে আবু তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, হে আলী! তুমি তিনটি কাজে দেরী করো না। (এক) যখন নামাযের সময় হয়ে যায়। (দুই) যখন জানাযা উপস্থিত হয়। (তিন) যখন যুবক-যুবতীর উপযুক্ত জোড়া পাওয়া যায়। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৬৮৬; তিরমিযী, হা/১০৭৫।]
৭. মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় এ দু‘আ পাঠ করা :
بِسْمِ اللهِ وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
উচ্চারণ : বিস্মিল্লা-হি ওয়া‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হ।
অর্থ : আল্লাহর নামে এবং তাঁর রাসূলের মিল্লাতের উপর (লাশকে কবরে রাখছি)।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ إِذَا أَدْخَلَ الْمَيِّتَ الْقَبْرَ ، قَالَ : بِسْمِ اللهِ ، وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হতো তখন নবী ﷺ উক্ত দু‘আ পাঠ করতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৯০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১০৯; বায়হাকী, হা/৬৮৫২; মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৮২৩;।]
৮. মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার জন্য খালেছভাবে দু‘আ করা : যেমন-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهٗ وَ ثَبِّتْهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহু ওয়া সাববিতহু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তাকে অবিচল রাখুন।
উসমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন লাশকে দাফন করে অবসর গ্রহণ করতেন তখন বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো, তোমরা তার জন্য কবরে প্রতিষ্ঠিত থাকার দু‘আ করো। (অর্থাৎ সে যেন ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে)। কেননা এখন তাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। [আবূ দাঊদ,হা/৩২২১; দাওয়াতুল কাবীর লিল বায়হাকী, হা/৬৩৬; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/ ৩৫১১।]
উল্লেখ্য যে, দাফনের পর উপরোক্ত দু‘আ ও এর সাথে জানাযার দু‘আগুলিও ব্যক্তিগতভাবে পড়া যায়।
তাছাড়া সবসময়ের জন্য যেকোন মুমিন বান্দা তার অন্য কোন মুমিন মৃত ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি কীভাবে দু‘আ করতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। আর তা হলো :
﴿رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ﴾
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইদেরকে ক্ষমা করুন, যারা আমাদের পূর্বে ঈমানের সাথে অগ্রগামী হয়েছে। আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আপনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হাশর- ১০)
৯. তিন দিনের বেশি শোক পালন না করা :
عَنْ زَيْنَبَ بِنْتِ اَبِيْ سَلَمَةَ قَالَتْ دَخَلْتُ عَلٰى أُمِّ حَبِيْبَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ فَقَالَتْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا يَحِلُّ لِاِمْرَاَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ تُحِدُّ عَلٰى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلَاثٍ اِلَّا عَلٰى زَوْجٍ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَعَشْرًا
যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে মহিলা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে মৃতের জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করবে। তবে তার স্বামী মারা গেলে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১২৪৬; সহীহ বুখারী, হা/১২৮১; সহীহ মুসলিম, হা/৩৭৯৯; সুনানে নাসাঈ, হা/৩৫২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৮০৮।]
১০. মৃত ব্যক্তির সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা চালু রাখা :
মৃত ব্যক্তি যদি সাদকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা রেখে যায় যেমন- রাস্তাঘাট তৈরি করা, পানির ব্যবস্থা করা কিংবা মসজিদ মাদ্রাসা স্থাপন করা, শিক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা, দুঃস্থ ও ইয়াতীমের পুনর্বাসন করা ইত্যাদি, তাহলে এসব চালু রাখা উচিত। এগুলোর সওয়াব মৃত ব্যক্তি পাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ قَالَ إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ اِنْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهٗ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهٖ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহﷺ বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিন ধরনের আমলের সওয়াব সর্বদা অব্যাহত থাকে। ১. সাদকায়ে জারিয়া। ২. ঐ ইলিম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হয়। ৩. সুসন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে। [মুসলিম, হ/৪৩১০।]
১১. মৃত ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরয থাকলে তার পক্ষ থেকে হজ্জ করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : كَانَ الْفَضْلُ رَدِيْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَاءَتِ امْرَأَةٌ مِنْ خَثْعَمَ، فَجَعَلَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَتَنْظُرُ إِلَيْهِ، وَجَعَلَ النَّبِيُّ يَصْرِفُ وَجْهَ الْفَضْلِ إِلَى الشِّقِّ الْاٰخَرِ فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فَرِيْضَةَ اللهِ عَلٰى عِبَادِهٖ فِي الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِيْ شَيْخًا كَبِيرًا، لَا يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ، أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ : نَعَمْ، وَذٰلِكَ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বিদায় হজ্জের সময়) ফযল ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আরোহীর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় খাস‘আম সম্প্রদায়ের এক নারী আসলে ফযল তার দিকে দেখছিলেন। মহিলাটিও তাকে দেখ ছিলো। নবী ﷺ বার বার ফযলের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দিতে থাকলেন। অতঃপর মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ ! আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত হজ্জ আমার বৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে। তিনি আরোহীর উপর ঠিক হয়ে বসে থাকতে পারেন না। অতএব আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? নবী ﷺ বললেন, হ্যাঁ, পার। এটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা। [সহীহ বুখারী, হা/১৫১৩।]
১২. মৃত ব্যক্তির কোন ঋণ থাকলে তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা :
মৃত ব্যক্তির যে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাকি থাকে তা দ্বারা তার দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা। সেক্ষেত্রে স্ত্রীর দেনমোহরও দেনার মধ্যে গণ্য হবে যদি তা পূর্বে আদায় না করা হয়।
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ : نَفْسُ الْمُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهٖ , حَتّٰى يُقْضٰى عَنْهُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিনের আত্মা ঋণের কারণে ঝুলে থাকে, যতক্ষণ না তা পরিশোধ করা হয়। [তিরমিযী, হা/১০৭৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৪১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৭৭; ইবনে হিববান, হা/৩০৬১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২২১৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮১১।]
১৩. মৃত ব্যক্তির কোন (শরীয়াত সম্মত) অসিয়ত করে থাকলে তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ করা :
দেনা পরিশোধের পর যে সম্পত্তি বাকি থাকে তা হতে ঐ ব্যক্তির অসিয়ত পূর্ণ করা।
১৪. বাকি সম্পত্তি কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা :
﴿مِنْ ۢبَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصٰى بِهَاۤ اَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَآرٍّۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَلِيْمٌ﴾
(ওয়ারিসরা অংশ পাবে) অসিয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর (অবশিষ্ট সম্পদ থেকে)। (তবে শর্ত হচ্ছে) অসিয়ত যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়- এ বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। (সূরা নিসা- ১২)
১৫. মৃত ব্যক্তির জন্য কবর যিয়ারত করা :
কবর যিয়ারতের দু‘আ :
اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ اَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَاِنَّا اِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلَاحِقُوْنَ ‐ اَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
উচ্চারণ : আসসালা-মু ‘আলাইকুম আহলাদ দিয়া-রি মিনাল মু‘মিনীনা ওয়ালমুসলিমীন, ওয়াইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূন, আসআলুল্লা-হা লানা ওয়ালাকুমুল ‘আ-ফিয়াহ্।
অর্থ : হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলমান! তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক, আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। [সহীহ মুসলিম, হা/২৩০২; সুনানে নাসাঈ, হা/২০৪০; ইবনে মাজাহ, হা/১৫৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৮৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭১১০; বায়হাকী, হা/৭০০৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/১১৯০৯।]
ইসলামী শরীয়াতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘোষিত ঈদ হলো দু’টি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোন ঈদের কথা আল্লাহর রাসূলের পক্ষ হতে বর্ণিত হয়নি এবং ঐ দিন উদযাপন করার কোন কথাও রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেননি। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ নির্দিষ্ট করে উক্ত তারিখে প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, জসনে জুলুস করা, ঐ দিনকে নির্দিষ্ট করে উক্ত দিনে ফকির মিসকীন এবং মানুষ একত্রিত করে খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করার কোন রেওয়াজ নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে তার কোন প্রমাণ নেই। যদি তার প্রমাণ থাকত, তাহলে সে ব্যাপারে সমালোচনা করার মতো কারো অধিকার থাকত না। কেননা তারা যা করেছেন তাদের আনুগত্য করা এবং যা পরিহার করেছেন তা বর্জন করার নামই হলো দ্বীন। আর তার বিপরীত করাই হলো বেদ্বীন এবং শরীয়াত পরিপন্থী।
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নবী ﷺ দীর্ঘ ২৩ বছর জীবিত ছিলেন। তারপর খুলাফায়ে রাশিদীনের সময়কাল ছিল ৩০ বছর। তারপর ১০০ বছর ছিল সাহাবায়ে কেরামের। আর কম বেশি ২২০ বছর পর্যন্ত ছিল তাবেয়ীগণের যুগ। আর তাদের মধ্যে নবী ﷺ এর পরিপূর্ণ ভালোবাসা ছিল; কিন্তু তাদের সময় মিলাদের কোন অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল না।
বর্তমানে প্রচলিত মিলাদের সার সংক্ষেপ হলো, কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে একই সাথে একই আওয়াজে উচ্চৈঃস্বরে সুর মিলিয়ে দরূদ এবং সালাম পাঠ করে। আর কোন কোন জায়গায় এই মিলাদের স্বরূপ হলো এক পর্যায়ে কিয়াম করবে এবং সবশেষে একটি দীর্ঘ মোনাজাত করবে। অথচ এ জাতীয় প্রচলিত মিলাদের নাম নিশানা ইসলামের সোনালী যুগে ছিল বলে তার বিন্দুমাত্র দলীল বা প্রমাণ নেই। তাই এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সর্বসম্মতিক্রমে বিদআত, গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় সম্ভব হয়নি।
১. ইবনে আবদুল বার্র মনে করেন, তিনি রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন।
২. কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের ১০ তারিখ, যেমন আবু জাফর বাকের।
৩. কেউ বলেছেন, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, যেমন ইবনে ইসহাক।
৪. কেউ বলেছেন, তিনি রমাযান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যেমন ইবনে আব্দুল বার্র জুবাইর ইবনে বাক্কার থেকে বর্ণনা করেছেন। [আস-সিরাতুন নববিয়াহ’’ পৃ: ১৯৯-২০০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে আলেমদের এ মতবিরোধই প্রমাণ করে যে, তার জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে নিশ্চয়তা ছিল না; সুতরাং এ দিনটি পালন করা তো আরো পরের কথা।
আরো একটি বিষয় বিবেচনা যোগ্য, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে কোন বাধা না থাকা সত্ত্বেও মীলাদুন্নবী উদযাপন না করা। নবী ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা সাহাবীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, যার ভিত্তিতে তারা ইচ্ছা করলে মীলাদুন্নবী উদযাপন করতে পারতেন, এতে কোন বাধাও ছিল না। এ সত্ত্বেও যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম মীলাদুন্নবী উদযাপন করেননি, তাই এটা বিদআত।
মিলাদের সূচনা :
সর্বপ্রথম এ দিনটি উদযাপন করা হয় মিসরের কায়রোতে। ফাতেমি খলিফারা চতুর্থ শতাব্দীতে এর প্রচলন আরম্ভ করে। তারা ছয়টি মীলাদ বা জন্মউৎসব প্রবর্তন করে, মীলাদুন্নবী, মীলাদে আলী, মীলাদে ফাতেমাতুজ জোহরা, মীলাদে হাসান ও হুসাইন এবং তখনকার খলিফার মীলাদ। সপ্তম শতাব্দীতে ‘ইরবিল’ শহরে সর্বপ্রথম এ মীলাদ আরম্ভ করে বাদশাহ আবু সাঈদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা চলে আসছে এবং তাতে আরো বৃদ্ধি ও সংযোজন ঘটেছে। তারা এতে তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু যোগ করেছে। তাদেরকে এর প্রত্যাদেশ করেছে মানব ও জিন শয়তানরা। [আল-ইবাদা ফি মাদাররিল ইবতেদা, পৃ: ২৫১।]
প্রত্যেক যুগে এই মিলাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে :
এই প্রচলিত মিলাদ মাহফিল নামক ধর্মীয় কুসংস্কার দমনের ব্যাপারে প্রত্যেক যুগের উলামায়ে হাক্কানীগণ জোর প্রতিবাদ করে গেছেন। যেমন,
وَمِنْ جُمْلَةِ مَا اَحْدَثُوْهُ مِنَ الْبِدَعِ مِنْ اِعْتِقَادِهِمْ اَنَّ ذٰلِكَ مِنْ اَكْبَرِ الْعِبَادَاتِ وَاِظْهَارِ الشَّعَائِرِ مَا يَفْعَلُوْنَهٗ فِى الشَّهْرِ الْرَبِيْعِ الْاَوَّلِ مِنَ الْمَوْلَدِ وَقَدْ اِحْتَوٰى ذٰلِكَ عَلٰى بِدَعٍ وَمُحَرَّمَاتٍ اِلٰى اَنْ قَالَ وَهٰذِهِ الْمَفَاسِدُ مُتَرَتَّبَةٌ عَلٰى فِعْلِ الْمَوْلَدِ اِذَا عَمِلَ بِالسِّمَاعِ فَاِنْ خَلَا مِنْهُ وَعَمِلَ طَعَامًا فَقَطْ وَنَوٰى بِهِ الْمَوْلَدَ وَدَعَا اِلَيْهِ الْاَخَوَانَ وَالْمُسْلِمَ مِنْ كُلِّ تَقَدُّمِ ذِكْرِهٖ فَهُوَ بِدَعٌ بِنَفْسِ نِيَّتِهٖ فَقَطْ لِاَنَّ ذٰلِكَ زِيَادَةٌ فِى الدِّيْنِ لَيْسَ مِنْ عَمَلِ السَّلَفِ الْمَاضِيْنَ وَاِتِّبَاعُ السَّلَفِ اَولٰى
বিশ্বাসগতভাবে মানুষ যে সমস্ত নতুন বিদআত আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে যাকে তারা বড় ইবাদাত হিসেবে মনে করে এবং যার বাস্তবায়নকে শরীয়াতের বড় নিদর্শন বলে প্রকাশ করেন তা হলো মিলাদ মাহফিল। তারা রবিউল আউয়াল মাসেই এ উৎসবটি করে থাকে। সুতরাং এ ব্যাপারে বাস্তব ও সত্য কথা হলো এটা সম্পূর্ণভাবে বিদআত এবং অনৈসলামিক প্রথা ও হারাম কাজ। তিনি আরো বলেন, ঐ মজলিসে মিলাদের অন্যতম খারাপের দিক হলো, এর মধ্যে ছেমা (গান বাদ্য জনিত কাজ) হয়। অবশ্যই মজলিসে মিলাদ ছেমা থেকে পবিত্র থাকলেও মিলাদের নিয়তে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এতে আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করা, যদিও তা এক প্রকার কুসংস্কারমুক্ত, তথাপি কেবল নিয়তের (মিলাদ অনুষ্ঠানের) কারণে তা বিদআত এবং এটা ধর্মের মধ্যে এক নতুন কাজের উদ্ভাবন, যা সালফে সালেহীনের যামানায় ছিল না। অথচ সালফে সালেহীনদের পদাংক অনুসরণ করা এবং তাদের আনুগত্য করাই উত্তম। [মাদাখিলু ইবনে হাজ্জ, মিশরী ছাপা ১/৮৫।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, কতক লোকের মীলাদুন্নবীর আবিষ্কার, তারা হয়তো নাসারাদের অনুকরণে করেছে, যেমন তারা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মানুষ্ঠান পালন করে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিপূর্ণ মুহাববত ও সম্মানের পরিচয় হচ্ছে, তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তাঁর নির্দেশ পালন করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাঁর সুন্নাত জীবিত করা, তাঁর আনিত দ্বীন প্রচার করা এবং এজন্য অন্তর, হাত ও মুখ দ্বারা জিহাদ করা। কারণ এটাই আমাদের পূর্বসূরি মুহাজির, আনসার ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের নীতি ও আদর্শ ছিল। [ইকতেদাউস সিরাত : পৃ: ২৯৪-২৯৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুসরণের মধ্যেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আরো প্রকাশ পায় তাঁর সুন্নাতের শিক্ষা বিস্তার ও প্রসার করা এবং তাঁর সুন্নাতের উপর থেকে যে কোন হামলা প্রতিরোধ করা ইত্যাদিতে। মূলত এটাই ছিল সাহাবাদের পদ্ধতি। কিন্তু পরবর্তী যুগের লোকেরা নিজেদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শয়তানও তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিয়ে বছরে শুধু একদিন কিংবা একমাসই ঈদ বা আনন্দবোধ করতে হবে কেন? তিনি তো আমাদের জন্য প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তের জন্যই আনন্দের উৎস। কারণ যখন যেখানেই আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ বা আনুগত্য করতে হয়, তখন সেখানেই তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করেই তা করতে হয়। অন্যথায় আল্লাহর স্মরণ বা আনুগত্যই শুদ্ধ নয়। সুতরাং শুধু ঐ দিন বা ঐ মাস নয়, বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পুরো জীবনই অনুকরণের জন্য সর্বোত্তম আর্দশ। [সূরা আহযাব- ২১।]
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নবী ﷺ দীর্ঘ ২৩ বছর জীবিত ছিলেন। তারপর খুলাফায়ে রাশিদীনের সময়কাল ছিল ৩০ বছর। তারপর ১০০ বছর ছিল সাহাবায়ে কেরামের। আর কম বেশি ২২০ বছর পর্যন্ত ছিল তাবেয়ীগণের যুগ। আর তাদের মধ্যে নবী ﷺ এর পরিপূর্ণ ভালোবাসা ছিল; কিন্তু তাদের সময় মিলাদের কোন অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল না।
বর্তমানে প্রচলিত মিলাদের সার সংক্ষেপ হলো, কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে একই সাথে একই আওয়াজে উচ্চৈঃস্বরে সুর মিলিয়ে দরূদ এবং সালাম পাঠ করে। আর কোন কোন জায়গায় এই মিলাদের স্বরূপ হলো এক পর্যায়ে কিয়াম করবে এবং সবশেষে একটি দীর্ঘ মোনাজাত করবে। অথচ এ জাতীয় প্রচলিত মিলাদের নাম নিশানা ইসলামের সোনালী যুগে ছিল বলে তার বিন্দুমাত্র দলীল বা প্রমাণ নেই। তাই এটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে সর্বসম্মতিক্রমে বিদআত, গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় সম্ভব হয়নি।
১. ইবনে আবদুল বার্র মনে করেন, তিনি রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন।
২. কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের ১০ তারিখ, যেমন আবু জাফর বাকের।
৩. কেউ বলেছেন, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ, যেমন ইবনে ইসহাক।
৪. কেউ বলেছেন, তিনি রমাযান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যেমন ইবনে আব্দুল বার্র জুবাইর ইবনে বাক্কার থেকে বর্ণনা করেছেন। [আস-সিরাতুন নববিয়াহ’’ পৃ: ১৯৯-২০০।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে আলেমদের এ মতবিরোধই প্রমাণ করে যে, তার জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে নিশ্চয়তা ছিল না; সুতরাং এ দিনটি পালন করা তো আরো পরের কথা।
আরো একটি বিষয় বিবেচনা যোগ্য, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে কোন বাধা না থাকা সত্ত্বেও মীলাদুন্নবী উদযাপন না করা। নবী ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা সাহাবীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, যার ভিত্তিতে তারা ইচ্ছা করলে মীলাদুন্নবী উদযাপন করতে পারতেন, এতে কোন বাধাও ছিল না। এ সত্ত্বেও যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম মীলাদুন্নবী উদযাপন করেননি, তাই এটা বিদআত।
মিলাদের সূচনা :
সর্বপ্রথম এ দিনটি উদযাপন করা হয় মিসরের কায়রোতে। ফাতেমি খলিফারা চতুর্থ শতাব্দীতে এর প্রচলন আরম্ভ করে। তারা ছয়টি মীলাদ বা জন্মউৎসব প্রবর্তন করে, মীলাদুন্নবী, মীলাদে আলী, মীলাদে ফাতেমাতুজ জোহরা, মীলাদে হাসান ও হুসাইন এবং তখনকার খলিফার মীলাদ। সপ্তম শতাব্দীতে ‘ইরবিল’ শহরে সর্বপ্রথম এ মীলাদ আরম্ভ করে বাদশাহ আবু সাঈদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা চলে আসছে এবং তাতে আরো বৃদ্ধি ও সংযোজন ঘটেছে। তারা এতে তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু যোগ করেছে। তাদেরকে এর প্রত্যাদেশ করেছে মানব ও জিন শয়তানরা। [আল-ইবাদা ফি মাদাররিল ইবতেদা, পৃ: ২৫১।]
প্রত্যেক যুগে এই মিলাদের প্রতিবাদ করা হয়েছে :
এই প্রচলিত মিলাদ মাহফিল নামক ধর্মীয় কুসংস্কার দমনের ব্যাপারে প্রত্যেক যুগের উলামায়ে হাক্কানীগণ জোর প্রতিবাদ করে গেছেন। যেমন,
وَمِنْ جُمْلَةِ مَا اَحْدَثُوْهُ مِنَ الْبِدَعِ مِنْ اِعْتِقَادِهِمْ اَنَّ ذٰلِكَ مِنْ اَكْبَرِ الْعِبَادَاتِ وَاِظْهَارِ الشَّعَائِرِ مَا يَفْعَلُوْنَهٗ فِى الشَّهْرِ الْرَبِيْعِ الْاَوَّلِ مِنَ الْمَوْلَدِ وَقَدْ اِحْتَوٰى ذٰلِكَ عَلٰى بِدَعٍ وَمُحَرَّمَاتٍ اِلٰى اَنْ قَالَ وَهٰذِهِ الْمَفَاسِدُ مُتَرَتَّبَةٌ عَلٰى فِعْلِ الْمَوْلَدِ اِذَا عَمِلَ بِالسِّمَاعِ فَاِنْ خَلَا مِنْهُ وَعَمِلَ طَعَامًا فَقَطْ وَنَوٰى بِهِ الْمَوْلَدَ وَدَعَا اِلَيْهِ الْاَخَوَانَ وَالْمُسْلِمَ مِنْ كُلِّ تَقَدُّمِ ذِكْرِهٖ فَهُوَ بِدَعٌ بِنَفْسِ نِيَّتِهٖ فَقَطْ لِاَنَّ ذٰلِكَ زِيَادَةٌ فِى الدِّيْنِ لَيْسَ مِنْ عَمَلِ السَّلَفِ الْمَاضِيْنَ وَاِتِّبَاعُ السَّلَفِ اَولٰى
বিশ্বাসগতভাবে মানুষ যে সমস্ত নতুন বিদআত আবিষ্কার করেছে তার মধ্যে যাকে তারা বড় ইবাদাত হিসেবে মনে করে এবং যার বাস্তবায়নকে শরীয়াতের বড় নিদর্শন বলে প্রকাশ করেন তা হলো মিলাদ মাহফিল। তারা রবিউল আউয়াল মাসেই এ উৎসবটি করে থাকে। সুতরাং এ ব্যাপারে বাস্তব ও সত্য কথা হলো এটা সম্পূর্ণভাবে বিদআত এবং অনৈসলামিক প্রথা ও হারাম কাজ। তিনি আরো বলেন, ঐ মজলিসে মিলাদের অন্যতম খারাপের দিক হলো, এর মধ্যে ছেমা (গান বাদ্য জনিত কাজ) হয়। অবশ্যই মজলিসে মিলাদ ছেমা থেকে পবিত্র থাকলেও মিলাদের নিয়তে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এতে আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করা, যদিও তা এক প্রকার কুসংস্কারমুক্ত, তথাপি কেবল নিয়তের (মিলাদ অনুষ্ঠানের) কারণে তা বিদআত এবং এটা ধর্মের মধ্যে এক নতুন কাজের উদ্ভাবন, যা সালফে সালেহীনের যামানায় ছিল না। অথচ সালফে সালেহীনদের পদাংক অনুসরণ করা এবং তাদের আনুগত্য করাই উত্তম। [মাদাখিলু ইবনে হাজ্জ, মিশরী ছাপা ১/৮৫।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, কতক লোকের মীলাদুন্নবীর আবিষ্কার, তারা হয়তো নাসারাদের অনুকরণে করেছে, যেমন তারা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মানুষ্ঠান পালন করে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিপূর্ণ মুহাববত ও সম্মানের পরিচয় হচ্ছে, তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তাঁর নির্দেশ পালন করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাঁর সুন্নাত জীবিত করা, তাঁর আনিত দ্বীন প্রচার করা এবং এজন্য অন্তর, হাত ও মুখ দ্বারা জিহাদ করা। কারণ এটাই আমাদের পূর্বসূরি মুহাজির, আনসার ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের নীতি ও আদর্শ ছিল। [ইকতেদাউস সিরাত : পৃ: ২৯৪-২৯৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত অনুসরণের মধ্যেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আরো প্রকাশ পায় তাঁর সুন্নাতের শিক্ষা বিস্তার ও প্রসার করা এবং তাঁর সুন্নাতের উপর থেকে যে কোন হামলা প্রতিরোধ করা ইত্যাদিতে। মূলত এটাই ছিল সাহাবাদের পদ্ধতি। কিন্তু পরবর্তী যুগের লোকেরা নিজেদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শয়তানও তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ কে নিয়ে বছরে শুধু একদিন কিংবা একমাসই ঈদ বা আনন্দবোধ করতে হবে কেন? তিনি তো আমাদের জন্য প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তের জন্যই আনন্দের উৎস। কারণ যখন যেখানেই আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ বা আনুগত্য করতে হয়, তখন সেখানেই তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করেই তা করতে হয়। অন্যথায় আল্লাহর স্মরণ বা আনুগত্যই শুদ্ধ নয়। সুতরাং শুধু ঐ দিন বা ঐ মাস নয়, বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পুরো জীবনই অনুকরণের জন্য সর্বোত্তম আর্দশ। [সূরা আহযাব- ২১।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর সালাত ও সালাম পেশ করা বিদআত নয়। কিন্তু সালাত ও সালাম পেশ করার সময় দাঁড়ানো এবং ব্যক্তি বিশেষের রচিত সালাত ও সালাম পেশ করা বিদআত। এর মধ্যে দাঁড়ানোর কারণ যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে আল্লাহ তা‘আলার মতো উপস্থিত বা হাযির-নাযির মনে করা হয়, তাহলে দাঁড়ানো শুধু বিদআত নয়; বরং তা সুস্পষ্ট শিরক। আর যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে হাযির-নাযির মনে না করে দাঁড়ানো হয়, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা, এর কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
কিয়ামের প্রচলন :
৭৫১ হিজরী সনে খাজা তকীউদ্দীন সাবকী এর দরবারে একজন কবি রেসালাতের মাহাত্ম্য বর্ণনায় কবিতা পাঠ করে। এ সময় খাজা সাহেব আত্মহারা হওয়ার কারণে প্রভাবান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তার সম্মান রক্ষার্থে উপস্থিত সকলেই তার অনুকরণ করে। জানা আবশ্যক যে, যার থেকে মিলাদের প্রচলন হয়েছে তার থেকে কিয়ামের প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ দুটিই সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার।
নবী ﷺ তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করতেন না।
অনেকের ধারণা রাসূলগণ বিভিন্ন জায়গায় হাযির হন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে থাকেন। এ আকীদা পোষণকারীরা মিলাদ পড়তে যেয়ে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায়, এর দ্বারা তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সম্মান দেয়া বুঝাতে চায়। অথচ নবী ﷺ এর জীবদ্ধশায় সাহাবীরা তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকুক- এটা তিনি পছন্দ করতেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ قَالَ مَا كَانَ شَخْصٌ اَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ وَكَانُوْا اِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا لِمَا يَعْلَمُوْا مِنْ كَرَاهِيَتِه لِذٰلِكَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে অধিক ভালোবাসা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আর কারো ছিল না। তারপরও যখন তারা নবী ﷺ কে দেখতেন, তখন দাঁড়াতেন না। কারণ তারা জানতেন যে, নবী ﷺ এটা পছন্দ করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৭৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৪৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ مِجْلَزٍ قَالَ : خَرَجَ مُعَاوِيَة فَقَامَ عَبْدُ الله بْنِ الزُّبَيْرِ وَابْنِ صَفْوَانَ حِيْنَ رَأَوْهُ فَقَالَ اِجْلِسَا , سَمِعْتُ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু মিজলায (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু সুফইয়ান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে দেখলেন তখন বললেন, তোমরা বসে পড়ো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ লাভ করে যে, লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। [তিরমিযী, হা/২৭৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৬০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৯; মিশকাত, হা/৪২৯৯।]
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ مُتَوَكِّئًا عَلٰى عَصًا فَقُمْنَا إِلَيْهِ فَقَالَ : لَا تَقُوْمُوْا كَمَا تَقُوْمُ الْاَعَاجِمُ يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ রোগের কারণে লাঠিতে ভর করে ঘরের বাইরে বের হলেন। তখন আমরা উপস্থিত সকলেই তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাই। এটা দেখে তিনি বলেন, তোমরা দাঁড়িয়ো না যেমনিভাবে অনারবি ব্যক্তিগণ একে অপরের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায়। [আবু দাউদ, হা/৫২৩২; মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৬০৯৪।]
তবে সম্মান প্রদর্শন ছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে বা কাউকে এগিয়ে আনার লক্ষ্যে দাঁড়ানো জায়েয আছে। যেমন সাদ (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য সাহাবীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
عَنْ اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ بَنُوْ قُرَيْظَةَ عَلٰى حُكْمِ سَعْدٍ هُوَ ابْنُ مُعَاذٍ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَانَ قَرِيْبًا مِنْهُ فَجَاءَ عَلٰى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُولُ اللهِ قُوْمُوْا اِلٰى سَيِّدِكُمْ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাদ ইবনে মু‘আয (রাঃ) এর বিচারের রায়ের প্রেক্ষিতে বনী কুরাইযা গোত্রের লোকরা দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসল তখন নবী ﷺ সাদ ইবনে মু‘আয (রাঃ)-কে আনার জন্য লোক পাঠান। তিনি একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসেন। তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী হলে নবী ﷺ আনসারদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যাও। [সহীহ বুখারী, হা/৩০৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৮০।]
এ হাদীসে সাদ (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য নবী ﷺ সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিয়ামের প্রচলন :
৭৫১ হিজরী সনে খাজা তকীউদ্দীন সাবকী এর দরবারে একজন কবি রেসালাতের মাহাত্ম্য বর্ণনায় কবিতা পাঠ করে। এ সময় খাজা সাহেব আত্মহারা হওয়ার কারণে প্রভাবান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তার সম্মান রক্ষার্থে উপস্থিত সকলেই তার অনুকরণ করে। জানা আবশ্যক যে, যার থেকে মিলাদের প্রচলন হয়েছে তার থেকে কিয়ামের প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ দুটিই সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার।
নবী ﷺ তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করতেন না।
অনেকের ধারণা রাসূলগণ বিভিন্ন জায়গায় হাযির হন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে থাকেন। এ আকীদা পোষণকারীরা মিলাদ পড়তে যেয়ে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যায়, এর দ্বারা তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সম্মান দেয়া বুঝাতে চায়। অথচ নবী ﷺ এর জীবদ্ধশায় সাহাবীরা তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকুক- এটা তিনি পছন্দ করতেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ قَالَ مَا كَانَ شَخْصٌ اَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ وَكَانُوْا اِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا لِمَا يَعْلَمُوْا مِنْ كَرَاهِيَتِه لِذٰلِكَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে অধিক ভালোবাসা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আর কারো ছিল না। তারপরও যখন তারা নবী ﷺ কে দেখতেন, তখন দাঁড়াতেন না। কারণ তারা জানতেন যে, নবী ﷺ এটা পছন্দ করতেন না। [তিরমিযী, হা/২৭৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৩৪৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ مِجْلَزٍ قَالَ : خَرَجَ مُعَاوِيَة فَقَامَ عَبْدُ الله بْنِ الزُّبَيْرِ وَابْنِ صَفْوَانَ حِيْنَ رَأَوْهُ فَقَالَ اِجْلِسَا , سَمِعْتُ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু মিজলায (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু সুফইয়ান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে দেখলেন তখন বললেন, তোমরা বসে পড়ো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ লাভ করে যে, লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। [তিরমিযী, হা/২৭৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৬০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৯; মিশকাত, হা/৪২৯৯।]
عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ مُتَوَكِّئًا عَلٰى عَصًا فَقُمْنَا إِلَيْهِ فَقَالَ : لَا تَقُوْمُوْا كَمَا تَقُوْمُ الْاَعَاجِمُ يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ রোগের কারণে লাঠিতে ভর করে ঘরের বাইরে বের হলেন। তখন আমরা উপস্থিত সকলেই তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাই। এটা দেখে তিনি বলেন, তোমরা দাঁড়িয়ো না যেমনিভাবে অনারবি ব্যক্তিগণ একে অপরের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায়। [আবু দাউদ, হা/৫২৩২; মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/২৬০৯৪।]
তবে সম্মান প্রদর্শন ছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে বা কাউকে এগিয়ে আনার লক্ষ্যে দাঁড়ানো জায়েয আছে। যেমন সাদ (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য সাহাবীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
عَنْ اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ بَنُوْ قُرَيْظَةَ عَلٰى حُكْمِ سَعْدٍ هُوَ ابْنُ مُعَاذٍ بَعَثَ رَسُوْلُ اللهِ وَكَانَ قَرِيْبًا مِنْهُ فَجَاءَ عَلٰى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُولُ اللهِ قُوْمُوْا اِلٰى سَيِّدِكُمْ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সাদ ইবনে মু‘আয (রাঃ) এর বিচারের রায়ের প্রেক্ষিতে বনী কুরাইযা গোত্রের লোকরা দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসল তখন নবী ﷺ সাদ ইবনে মু‘আয (রাঃ)-কে আনার জন্য লোক পাঠান। তিনি একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসেন। তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী হলে নবী ﷺ আনসারদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যাও। [সহীহ বুখারী, হা/৩০৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৮০।]
এ হাদীসে সাদ (রাঃ) কে এগিয়ে আনার জন্য নবী ﷺ সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অনেকে মনগড়া দরূদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা, মুস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম, হাজারো সালাম, আসসালামাই নূরে চশমে আম্বিয়া...., সালাতুন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আলাইকুম, সালামুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম, অজিফার নামে দরূদে লাখি, দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, দরূদে মুকাদ্দাস, দরূদে তুনাজ্জিনা, দরূদে ফুতুহাত, দরূদে মাহী, দরূদে মোজাদ্দেদিয়া, দরূদে কাদেরিয়া, দরূদে চিশতিয়া, দরূদে নকশবন্দিয়া ইত্যাদি।
ব্যক্তি বিশেষের স্বরচিত যে সালাত ও সালাম তা একদিকে বানানো ইবাদাত, অপরদিকে তা আদবের খেলাফ। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করার সময় ‘ইয়া রাসূল’, ‘ইয়া নবী’ এভাবে সম্বোধন করা। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করার আদব হলো ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া আইয়ুহান নবী’ এভাবে। অথচ প্রচলিত বিদআতপূর্ণ সালাত ও সালাম পেশের ক্ষেত্রে এ আদব রক্ষা করা হয় না। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুপস্থিতে তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশের ক্ষেত্রে ‘ইয়া’ এর পরিবর্তে হবে ‘আলা’। যেমন- ‘আসসালাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ’।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসূলের উপর সেসব দরূদ ও সালাম পড়াই সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীসে তা বিদ্যমান। সহীহ হাদীসের সূত্রে যেসব দরূদ ও সালামের বই রচিত হয়েছে তা থেকেই শিখে দরূদ ও সালাম পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
কয়েকটি সহীহ দরূদ :
সাহাবীগণ নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো :
(১) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মিশকাত, হা/৯১৯।]
তাছাড়াও আরো যেসব সহীহ দরূদ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর উপরও আমল করা যাবে।
কাব ইবনে উজরা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর কীভাবে সালাম পড়ব তা আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন, এখন বলুন! কীভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো-
(২) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجيْدٌ . اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুমা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর করেছিলেন; নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলেন, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৫; সুনানে নাসাঈ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬৪।]
(৩) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা বা-রকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন যেমনটি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর আপনি করেছিলেন। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনটি আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর করেছিলেন। [নাসায়ী, হা/১২৮৬।]
(৪) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিক, ওয়া সাল্লি ‘আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-ত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার বান্দা এবং রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর সকল মুমিন ও মুসলিম নর-নারীর উপরও রহমত বর্ষণ করুন। [হাকেম ৪/১৩০১২৯।]
(৫) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [আবু দাউদ, হা/৯৮৩।]
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ (৬)
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [নাসায়ী, হা/১২৯২।]
ব্যক্তি বিশেষের স্বরচিত যে সালাত ও সালাম তা একদিকে বানানো ইবাদাত, অপরদিকে তা আদবের খেলাফ। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করার সময় ‘ইয়া রাসূল’, ‘ইয়া নবী’ এভাবে সম্বোধন করা। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করার আদব হলো ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া আইয়ুহান নবী’ এভাবে। অথচ প্রচলিত বিদআতপূর্ণ সালাত ও সালাম পেশের ক্ষেত্রে এ আদব রক্ষা করা হয় না। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুপস্থিতে তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পেশের ক্ষেত্রে ‘ইয়া’ এর পরিবর্তে হবে ‘আলা’। যেমন- ‘আসসালাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ’।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসূলের উপর সেসব দরূদ ও সালাম পড়াই সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীসে তা বিদ্যমান। সহীহ হাদীসের সূত্রে যেসব দরূদ ও সালামের বই রচিত হয়েছে তা থেকেই শিখে দরূদ ও সালাম পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
কয়েকটি সহীহ দরূদ :
সাহাবীগণ নবী ﷺ কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো :
(১) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া‘আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মিশকাত, হা/৯১৯।]
তাছাড়াও আরো যেসব সহীহ দরূদ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর উপরও আমল করা যাবে।
কাব ইবনে উজরা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর কীভাবে সালাম পড়ব তা আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন, এখন বলুন! কীভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো-
(২) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجيْدٌ . اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إبْرَاهِيْمَ ، إنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুমা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর করেছিলেন; নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলেন, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ মুসলিম, হা/৯৩৫; সুনানে নাসাঈ, হা/১২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯৬৪।]
(৩) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা ‘আলা আ-লি ইবরা-হীম। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, কামা বা-রকতা ‘আলা আ-লি ইবরাহীম।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন যেমনটি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর আপনি করেছিলেন। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনটি আপনি ইবরাহীমের পরিবারবর্গের উপর করেছিলেন। [নাসায়ী, হা/১২৮৬।]
(৪) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিক, ওয়া সাল্লি ‘আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-ত।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার বান্দা এবং রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। আর সকল মুমিন ও মুসলিম নর-নারীর উপরও রহমত বর্ষণ করুন। [হাকেম ৪/১৩০১২৯।]
(৫) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِىِّ الْأُمِّىِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [আবু দাউদ, হা/৯৮৩।]
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ ، وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ (৬)
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [নাসায়ী, হা/১২৯২।]
ধর্মজ্ঞানে অজ্ঞ অধিকাংশ মানুষের আকিদা বা বিশ্বাস হলো, পীরের কাছে মুরিদ হওয়া ব্যতীত জান্নাতে যাওয়া যায় না। কিছু কিছু মহল পীরের নাম নিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সরলমনা মানুষকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য কতগুলি যুক্তি দিয়ে থাকে, যা ধর্মের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অলীক ও ভিত্তিহীন। যেমন অনেকে বলে থাকে- যার পীর নেই, তার পীর হলো শয়তান। যার পীর নেই তার শীর নেই ইত্যাদি। আবার অনেকে বলেন, পীর হলো জান্নাতের উকিল অর্থাৎ হাকীমের সামনে বাদী বিবাদীর যেমন কোন কথা চলে না, সমস্ত জেরা উকিলকেই করতে হয়। তেমনি কিয়ামতের মাঠেও পীর সাহেব উকিলের ন্যায় জেরা করে মুরীদকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (নাউজুবিল্লাহ)
পীর কাউকে জান্নাতে নিয়ে যাবে- এর কোন দলিল-প্রমাণ নেই। চাই সে যত বড় পীর আর যত বড় কামেল ওলীই হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই এ ব্যাপারে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَمَّا اُنْزِلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ ﴿وَانْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾ دَعَا رَسُوْلُ اللهِ - قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوْا فَعَمَّ وَخَصَّ فَقَالَ : يَا بَنِىْ كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ شَمْسٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ هَاشِمٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا فَاطِمَةُ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ فَإِنِّىْ لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়- ‘‘তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও’’ [সূরা শু‘আরা- ২১৪।] তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরাইশদেরকে ডাকলেন। ফলে তারা একত্রিত হলো। তারপর তিনি তাদের সাধারণ ও বিশেষ সকলকে সম্বোধন করে বললেন, হে কা‘ব ইবনে লুওয়াই এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে মুর্রা ইবনে কা‘ব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আব্দে শামস্-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আব্দে মানাফ-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে হাশিমের বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। কারণ, আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য আমি তোমাদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করব। [সহীহ মুসলিম, হা/৫২২; নাসাঈ, হা/৩৬৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২, ৮৭২৬, ১০৭২৫; মিশকাত, হা/৫৩৭৩।]
কারো আনুগত্য করা যাবে না যদি সে আল্লাহর শরীয়াতের বিপরীতে কোন হুকুম করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
﴿إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ﴾
আনুগত্য কেবল সৎ কাজে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৭২; সহীহ বুখারী, হা/৪৬১৫।]
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শরীয়াতের বিরুদ্ধে কারো হুকুমের আনুগত্য করা যাবে না।
বর্তমানে পীর-মুরিদীর যে সিলসিলা দেখা যাচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ নতুন ও মনগড়াভাবে উদ্ভাবিত। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না, তিনি কখনো পীর-মুরিদি করেননি। তিনি নিজে বর্তমান অর্থে না ছিলেন পীর আর না ছিল তাঁর কোন মুরিদ। সাহাবায়ে কেরামও কখনো এই পীর-মুরিদী করেননি। তাঁদের কেউ কারো পীর ছিলেন না এবং তাদের মুরিদও কেউ ছিল না। তাবেয়ীন ও তাবে তবেয়ীনের যুগেও এ পীর-মুরিদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ বর্তমানকালের এক শ্রেণির পীর নামে কথিত জাহেল লোক ও তাদের ততোধিক জাহেলী মুরিদ এ পীর-মুরিদীকে ইসলামের অন্যতম ভিত্তিগত জিনিস বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে অজ্ঞ লোকদেরকে মুরিদ বানিয়ে এক একটি বড় আকারের বিনা পুঁজির ব্যবসা সাজিয়ে বসেছে।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
কেউ যদি ওসীলা নিতে চায় তবে যেসব ওসীলা কুরআন ও সুন্নাহতে রয়েছে বা যেসব বিষয়ের ওসীলা নেয়া জায়েয আছে সেসব বিষয়ের ওসীলা নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوْاۤ اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِيْ سَبِيْلِهٖ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর ওসীলা তালাশ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৩৫)
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ওসীলা তালাশ করা শুধু জায়েয নয়; বরং আল্লাহর নির্দেশ। কিন্তু প্রশ্ন থাকল যে, সেই ওসীলা কী জিনিস? উত্তর হলো- ওসীলা হচ্ছে নেক আমল। ব্যক্তি যে কোন নেক আমল করে আল্লাহর কাছে ওসীলা নিতে পারে। এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নামের ওসীলা নিয়ে তাঁর কাছে চাওয়া যায় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
যেমন বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি বিপদে পড়ে তারা নিজেদের নেক আমলের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
ইবনে উমর (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে রাস্তা চলতে থাকাকালে ভারী বৃষ্টি শুরু হলে তারা একটি পাহাড়ের গর্তে প্রবেশ করল। (এ সময়) উপর থেকে একটি বড় পাথর খন্ড পড়ে গর্তের মুখ অাঁটকে গেল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তখন তারা একজন অন্যজনকে বলল, তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট আমলের কথা বলে (পাথর দূর হওয়ার জন্য) আল্লাহর নিকটে দু‘আ করো। সুতরাং তাদের একজন এ বলে প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ! আমার বাবা-মা অত্যন্ত বয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন। আমি দুধ দোহন করে দুধের বাঁটি নিয়ে (সর্বপ্রথম) আমার (বৃদ্ধ) বাবা-মার কাছে যেতাম। এরপর আমার ছেলে-মেয়ে ও আমার স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একদিন আমি (বাড়ি) এসে দেখলাম আমার মা-বাবা ঘুমাচ্ছে। তাই আমি তাদেরকে জাগানো ভালো মনে করলাম না। আমার ছেলে-মেয়েরা ক্ষুধায় চিৎকার করে আমার পায়ের কাছে কাঁদতে থাকল। তথাপি আমি তাদের জেগে উঠার আশায় থাকলাম এবং এভাবেই ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেল। হে আল্লাহ! তুমি যদি জানো যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এমনটি করেছিলাম, তাহলে গর্তের মুখ থেকে পাথরটি একটু ফাঁক করে দাও। এরপর গুহার মুখ থেকে পাথর কিছুটা সরে গেল।
অন্যজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জানো, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে খুব বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু সে বলল, তুমি আমাকে একশ’ দীনার না দেয়া পর্যন্ত আমার ভালোবাসা লাভ করতে পারবে না। সুতরাং অনেক কষ্টে আমি তা যোগাড় করলাম। অতঃপর আমি যখন তার পদদ্বয়ের মাঝে বসলাম তখন সে বলল, আল্লাহকে ভয় করো এবং (বিয়ে না করে) হারামভাবে আমার কুমারীত্ব ও সতীত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়লাম। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমি তা করেছিলাম, তাহলে পাথরটি আরো একটু ফাঁক করে দাও। এরপর পাথরটি দুই-তৃতীয়াংশ সরে গেল।
তৃতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জানো, আমি তিন সা‘ খাদ্যশস্যের বিনিময়ে একজন কাজের লোক নিয়োগ করেছিলাম। অতঃপর আমি যখন তাকে তার মজুরী প্রদান করলাম তখন সে তা নিতে আপত্তি জানাল। আমি তা নিয়ে ক্ষেতে বপন করলাম এবং এভাবে তা দিয়ে গরু কিনলাম ও রাখালের ব্যবস্থা করলাম। পরে (এক সময়ে) সে লোক এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পাওনাটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি বললাম, গরুর পাল ও রাখাল যেখানে আছে সেখানে যাও এবং সেগুলো তোমারই মাল। সে বলল, আপনি কি আমার সাথে তামাশা করছেন? আমি বললাম, না, বরং ওগুলো সত্যিই তোমার। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমি এরূপ করেছিলাম, তাহলে পাথরটি অপসারণ করে গুহার মুখ খুলে দাও। সুতরাং গুহার মুখ খুলে দেয়া হলো। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩৩।]
এভাবে যেকোন নেক আমলের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা যায় বা কিছু চাওয়া যায়। কিন্তু মাযার, পীর, ফকীর অথবা কোন ওলীর ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়া ইসলামে জায়েয নয়। এটা হলো শিরক। প্রত্যেক মুসলিমকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কারণ মুশরিক অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়।
পীর কাউকে জান্নাতে নিয়ে যাবে- এর কোন দলিল-প্রমাণ নেই। চাই সে যত বড় পীর আর যত বড় কামেল ওলীই হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই এ ব্যাপারে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ لَمَّا اُنْزِلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ ﴿وَانْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْاَقْرَبِيْنَ﴾ دَعَا رَسُوْلُ اللهِ - قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوْا فَعَمَّ وَخَصَّ فَقَالَ : يَا بَنِىْ كَعْبِ بْنِ لُؤَىٍّ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ شَمْسٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ مَنَافٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ هَاشِمٍ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِىْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا فَاطِمَةُ أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ فَإِنِّىْ لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়- ‘‘তোমার নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও’’ [সূরা শু‘আরা- ২১৪।] তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরাইশদেরকে ডাকলেন। ফলে তারা একত্রিত হলো। তারপর তিনি তাদের সাধারণ ও বিশেষ সকলকে সম্বোধন করে বললেন, হে কা‘ব ইবনে লুওয়াই এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে মুর্রা ইবনে কা‘ব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আব্দে শামস্-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আব্দে মানাফ-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে হাশিমের বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে আবদুল মুত্তালিব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। কারণ, আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য আমি তোমাদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করব। [সহীহ মুসলিম, হা/৫২২; নাসাঈ, হা/৩৬৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪০২, ৮৭২৬, ১০৭২৫; মিশকাত, হা/৫৩৭৩।]
কারো আনুগত্য করা যাবে না যদি সে আল্লাহর শরীয়াতের বিপরীতে কোন হুকুম করে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
﴿إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ﴾
আনুগত্য কেবল সৎ কাজে। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৭২; সহীহ বুখারী, হা/৪৬১৫।]
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শরীয়াতের বিরুদ্ধে কারো হুকুমের আনুগত্য করা যাবে না।
বর্তমানে পীর-মুরিদীর যে সিলসিলা দেখা যাচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ নতুন ও মনগড়াভাবে উদ্ভাবিত। এটা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল না, তিনি কখনো পীর-মুরিদি করেননি। তিনি নিজে বর্তমান অর্থে না ছিলেন পীর আর না ছিল তাঁর কোন মুরিদ। সাহাবায়ে কেরামও কখনো এই পীর-মুরিদী করেননি। তাঁদের কেউ কারো পীর ছিলেন না এবং তাদের মুরিদও কেউ ছিল না। তাবেয়ীন ও তাবে তবেয়ীনের যুগেও এ পীর-মুরিদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ বর্তমানকালের এক শ্রেণির পীর নামে কথিত জাহেল লোক ও তাদের ততোধিক জাহেলী মুরিদ এ পীর-মুরিদীকে ইসলামের অন্যতম ভিত্তিগত জিনিস বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে অজ্ঞ লোকদেরকে মুরিদ বানিয়ে এক একটি বড় আকারের বিনা পুঁজির ব্যবসা সাজিয়ে বসেছে।
এ ক্ষেত্রে করণীয় :
কেউ যদি ওসীলা নিতে চায় তবে যেসব ওসীলা কুরআন ও সুন্নাহতে রয়েছে বা যেসব বিষয়ের ওসীলা নেয়া জায়েয আছে সেসব বিষয়ের ওসীলা নিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوْاۤ اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوْا فِيْ سَبِيْلِهٖ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর ওসীলা তালাশ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা- ৩৫)
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, ওসীলা তালাশ করা শুধু জায়েয নয়; বরং আল্লাহর নির্দেশ। কিন্তু প্রশ্ন থাকল যে, সেই ওসীলা কী জিনিস? উত্তর হলো- ওসীলা হচ্ছে নেক আমল। ব্যক্তি যে কোন নেক আমল করে আল্লাহর কাছে ওসীলা নিতে পারে। এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার গুণবাচক নামের ওসীলা নিয়ে তাঁর কাছে চাওয়া যায় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
যেমন বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি বিপদে পড়ে তারা নিজেদের নেক আমলের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
ইবনে উমর (রাঃ) কর্তৃক নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে রাস্তা চলতে থাকাকালে ভারী বৃষ্টি শুরু হলে তারা একটি পাহাড়ের গর্তে প্রবেশ করল। (এ সময়) উপর থেকে একটি বড় পাথর খন্ড পড়ে গর্তের মুখ অাঁটকে গেল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তখন তারা একজন অন্যজনকে বলল, তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট আমলের কথা বলে (পাথর দূর হওয়ার জন্য) আল্লাহর নিকটে দু‘আ করো। সুতরাং তাদের একজন এ বলে প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ! আমার বাবা-মা অত্যন্ত বয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন। আমি দুধ দোহন করে দুধের বাঁটি নিয়ে (সর্বপ্রথম) আমার (বৃদ্ধ) বাবা-মার কাছে যেতাম। এরপর আমার ছেলে-মেয়ে ও আমার স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একদিন আমি (বাড়ি) এসে দেখলাম আমার মা-বাবা ঘুমাচ্ছে। তাই আমি তাদেরকে জাগানো ভালো মনে করলাম না। আমার ছেলে-মেয়েরা ক্ষুধায় চিৎকার করে আমার পায়ের কাছে কাঁদতে থাকল। তথাপি আমি তাদের জেগে উঠার আশায় থাকলাম এবং এভাবেই ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেল। হে আল্লাহ! তুমি যদি জানো যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি এমনটি করেছিলাম, তাহলে গর্তের মুখ থেকে পাথরটি একটু ফাঁক করে দাও। এরপর গুহার মুখ থেকে পাথর কিছুটা সরে গেল।
অন্যজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জানো, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে খুব বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু সে বলল, তুমি আমাকে একশ’ দীনার না দেয়া পর্যন্ত আমার ভালোবাসা লাভ করতে পারবে না। সুতরাং অনেক কষ্টে আমি তা যোগাড় করলাম। অতঃপর আমি যখন তার পদদ্বয়ের মাঝে বসলাম তখন সে বলল, আল্লাহকে ভয় করো এবং (বিয়ে না করে) হারামভাবে আমার কুমারীত্ব ও সতীত্ব নষ্ট করো না। তখন আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়লাম। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমি তা করেছিলাম, তাহলে পাথরটি আরো একটু ফাঁক করে দাও। এরপর পাথরটি দুই-তৃতীয়াংশ সরে গেল।
তৃতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জানো, আমি তিন সা‘ খাদ্যশস্যের বিনিময়ে একজন কাজের লোক নিয়োগ করেছিলাম। অতঃপর আমি যখন তাকে তার মজুরী প্রদান করলাম তখন সে তা নিতে আপত্তি জানাল। আমি তা নিয়ে ক্ষেতে বপন করলাম এবং এভাবে তা দিয়ে গরু কিনলাম ও রাখালের ব্যবস্থা করলাম। পরে (এক সময়ে) সে লোক এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পাওনাটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি বললাম, গরুর পাল ও রাখাল যেখানে আছে সেখানে যাও এবং সেগুলো তোমারই মাল। সে বলল, আপনি কি আমার সাথে তামাশা করছেন? আমি বললাম, না, বরং ওগুলো সত্যিই তোমার। হে আল্লাহ! তুমি যদি মনে কর যে, একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্যই আমি এরূপ করেছিলাম, তাহলে পাথরটি অপসারণ করে গুহার মুখ খুলে দাও। সুতরাং গুহার মুখ খুলে দেয়া হলো। [সহীহ বুখারী, হা/২৩৩৩।]
এভাবে যেকোন নেক আমলের ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা যায় বা কিছু চাওয়া যায়। কিন্তু মাযার, পীর, ফকীর অথবা কোন ওলীর ওসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে চাওয়া ইসলামে জায়েয নয়। এটা হলো শিরক। প্রত্যেক মুসলিমকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কারণ মুশরিক অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়।
যেসব কাজ বিভিন্ন প্রথা ও রেওয়াজের ভিত্তিতে করা হয় এবং যা শরীয়াত অনুমোদিত ও সমর্থিত নয় এরূপ কাজকে কুসংস্কার বলা হয়। কুসংস্কার আজ সমাজে এতই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, পদে পদে অসংখ্য কুসংস্কার আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। অনেক মানুষ নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করেও কুসংস্কার মেনে চলাকে অপরিহার্য বলে মনে করে। কুসংস্কার সমাজ ও জাতির জন্য মারাত্মক ব্যাধি। একে পরিত্যাগ করা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি, বিবাহ-শাদী, আচার-অনুষ্ঠান তথা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। আমরা এখনও তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি; অথচ কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরবরা ইসলামের পরশ পেয়ে ইসলামের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, হিন্দুয়ানা অনেক কুসংস্কার এখনও এদেশের মুসলিমদের ঘাড়ে চেপে আছে।
সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার মেনে চলার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
বিজাতির অনুসরণ না করার জন্য নবী ﷺ সতর্কবাণী করেছেন :
عَنْ اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتّٰى لَوْ دَخَلُوْا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوْهُمْ قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى قَالَ فَمَنْ
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থাগুলো (এমনভাবে) অনুসরণ করবে যে, এক এক বিঘত এক এক হাত পরিমাণও ব্যবধান হবে না। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও ঢুকে থাকে, তাহলে তোমরাও তাতে ঢুকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও নাসারাদের? তিনি বললেন, তবে আর কারা হবে? [সহীহ বুখারী, হা/৭৩২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮১৮; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৩৪৮।]
عَنْ اَبِىْ وَاقِدٍ اللَّيْثِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - لَمَّا خَرَجَ اِلٰى خَيْبَرَ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ اَنْوَاطٍ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا اَسْلِحَتَهُمْ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ اَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ اَنْوَاطٍ . فَقَالَ النَّبِىُّ - سُبْحَانَ اللهِ هٰذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى اجْعَلْ لَنَا اِلٰهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
আবু ওয়াকীদ আল লাইসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খায়বারের উদ্দেশ্যে বের হলেন তখন তিনি এমন একটি গাছের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন যার নাম ছিল ‘‘যাতে আনওয়াত’’। মুশরিকরা এ গাছের সাথে তাদের অস্ত্র-শস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। তখন কতক লোক বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্যও এরকম একটি গাছ নির্ধারণ করুন যেমন তাদের জন্য রয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, তোমাদের এ কথাটি মূসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের কথার মতো। তারা বলেছিল, আমাদের জন্য একটি উপাস্য তৈরি করুন যেমন তাদের উপাস্য রয়েছে। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অচিরেই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২১৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯৫০; ইবনে হিববান, হা/৬৭০২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১১২১; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৩২১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৮৫৩০।]
অপর হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী ﷺ বলেছেন,,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا
যে ব্যক্তি বিজাতির অনুসরণ করে সে আমাদের অর্থাৎ মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। [তিরমিযী, হা/২৬৯৫।]
অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩৩।]
সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার মেনে চলার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
বিজাতির অনুসরণ না করার জন্য নবী ﷺ সতর্কবাণী করেছেন :
عَنْ اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتّٰى لَوْ دَخَلُوْا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوْهُمْ قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارٰى قَالَ فَمَنْ
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থাগুলো (এমনভাবে) অনুসরণ করবে যে, এক এক বিঘত এক এক হাত পরিমাণও ব্যবধান হবে না। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তেও ঢুকে থাকে, তাহলে তোমরাও তাতে ঢুকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও নাসারাদের? তিনি বললেন, তবে আর কারা হবে? [সহীহ বুখারী, হা/৭৩২০; ইবনে মাজাহ, হা/৩৯৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৮১৮; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৩৪৮।]
عَنْ اَبِىْ وَاقِدٍ اللَّيْثِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - - لَمَّا خَرَجَ اِلٰى خَيْبَرَ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ اَنْوَاطٍ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا اَسْلِحَتَهُمْ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ اَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ اَنْوَاطٍ . فَقَالَ النَّبِىُّ - سُبْحَانَ اللهِ هٰذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوسَى اجْعَلْ لَنَا اِلٰهًا كَمَا لَهُمْ اٰلِهَةٌ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهٖ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
আবু ওয়াকীদ আল লাইসী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খায়বারের উদ্দেশ্যে বের হলেন তখন তিনি এমন একটি গাছের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন যার নাম ছিল ‘‘যাতে আনওয়াত’’। মুশরিকরা এ গাছের সাথে তাদের অস্ত্র-শস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। তখন কতক লোক বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্যও এরকম একটি গাছ নির্ধারণ করুন যেমন তাদের জন্য রয়েছে। তখন নবী ﷺ বললেন, তোমাদের এ কথাটি মূসা (আঃ) এর সম্প্রদায়ের কথার মতো। তারা বলেছিল, আমাদের জন্য একটি উপাস্য তৈরি করুন যেমন তাদের উপাস্য রয়েছে। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অচিরেই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে থাকবে। [তিরমিযী, হা/২১৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৯৫০; ইবনে হিববান, হা/৬৭০২; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/১১১২১; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৩২১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৮৫৩০।]
অপর হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী ﷺ বলেছেন,,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا
যে ব্যক্তি বিজাতির অনুসরণ করে সে আমাদের অর্থাৎ মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। [তিরমিযী, হা/২৬৯৫।]
অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩৩।]
আমাদের মুসলিম সমাজে এমন অনেক কাজকর্ম হতে দেখা যায়, যা মূলত ইসলাম সমর্থিত নয়। এসব কাজ ও ধ্যান-ধারনা হয়তোবা কল্পনা প্রসুত অথবা অন্য কোন ধর্ম থেকে আমদানীকৃত। আমাদের মুসলিম সমাজে এমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যা অনেকটাই হিন্দুদের কাজকর্মের সাথে মিলে যায়। এসব কুসংস্কারমূলক কথা ও কাজ থেকে অবশ্যই আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিচে কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. সন্ধ্যায় ঘরে আলো না জ্বালালে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
২. কুকুর কাঁদলে বিপদ আসবে বলে মনে করা।
৩. কাক ডাকলে কেউ মারা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৪. ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দেখলে অমঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস করা।
৫. বাম চোখ ফরকালে বিপদ, ডান চোখ ফরকালে সৌভাগ্য বলে মনে করা।
৬. ডান হাতের তালু চুলকালে পয়সা আসে বলে মনে করা।
৭. বাম হাতের তালু চুলকালে পয়সা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৮. নাক ও কপালে ফোঁড়া হলে ধন আসবে বলে মনে করা।
৯. ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে/গালে হাত দিয়ে বসাকে কুলক্ষণ মনে করা।
১০. জন্মগ্রহণের মাসে বিয়ে করলে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
১১. জোড় কলা খেলে জোড়া বাচ্চা হবে বলে ধারণা করা।
১২. ফাঁটা বা ভাঙ্গা প্লেটে খেলে অলক্ষ্মি ঘরে আসে বলে মনে করা।
১৩. পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম না খাওয়া।
১৪. পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছরই ভালো খাবার জুটবে বলে মনে করা।
১৫. যাত্রার সময় কেউ হাঁচি দিলে/পেছন থেকে ডাকলে কুলক্ষণ মনে করা।
১৬. যাত্রাকালে কিছুতে হোচট খেলে অমঙ্গল হয় মনে করে একটু বসে পুনরায় যাত্রা করা।
১৭. শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলে যাত্রা অশুভ ভাবা।
১৮. শনি, মঙ্গল ও আমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করে শুভ কাজ না করা।
১৯. সকাল বেলা দোকান খোলার পর বাকিতে বিক্রি করলে- সারাদিন বাকি বা ফাঁকি যাবে বলে মনে করা।
২০. ১ম বিক্রির বা ১ম ভাড়ার টাকা পেলে বরকতের আশায় চুমু খাওয়া, কপালে লাগানো।
২১. জামাকাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় সেলাই করা কুলক্ষণ মনে করা।
২২. বন্ধ্যা মহিলা ধরলে বা তাকালে অশুভ বা অমঙ্গল হবে বলে মনে করা।
২৩. পরপর সন্তান মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সন্তান জন্মিলে কান ছিদ্র করে দেয়া বা বাজে নাম রাখা। যেমন- হেঁজা, মরা, মরণ ইত্যাদি। তাদের ধারণা এসব করলে সন্তান আর মরবে না।
২৪. চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় যদি কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোক কিছু কাটাকাটি করে তাহলে তার সন্তানের অঙ্গহানি ঘটবে বলে মনে করা।
২৫. কোন লোকের আলোচনা চলছে, ইতোমধ্যে সে এসে পড়লে বা ফোন করলে- তার দীর্ঘজীবী হওয়ার আলামত বলে মনে করা।
২৬. নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, মডেলিং, ফ্যাশন, নাটক, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, রাখিবন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি প্রয়োজন মনে করা।
২৭. শনিবার দিন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, তাতে অকল্যাণ হবে মনে করা।
২৮. মৃত ব্যক্তির জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা।
২৯. পেঁচা ডাকলে বিপদ আসন্ন মনে করা।
৩০. পায়ে তিল থাকলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না মনে করা।
৩১. ঠোঁটের নিচে তিল, কানের নিচে তিল থাকলে অকল্যাণ হয় মনে করা।
৩২. চোখ টেরা থাকলে ভাগ্যবান হওয়া মনে করা।
৩৩. নাক বোঁচা থাকলে বেশি করে বিয়ের প্রস্তাব আসে মনে করা।
৩৪. বাজী ধরা।
৩৫. নজর লাগবে বলে সমান খাবার ফেলে দিয়ে খাবার শুরু করা।
৩৬. খাবার সময় সালাম না দেয়া।
৩৭. প্লেটের সম্পূর্ণ খাবার শেষ না করে কিছু রেখে দেয়া।
৩৮. সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাজার থেকে মাছ আনলে মাছের সাথে দুষ্ট জিন আসে মনে করা।
৩৯. খাবার সময় জিহবায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিয়েছে ও কাশি দিলে কেউ তাকে স্মরণ করেছে বলে মনে করা।
৪০. কপালে টিপ লাগানো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করা।
৪১. প্রথম যৌবনে মেয়েদের পর্দা করা জরুরি নয় মনে করা।
৪২. প্রথম সন্তান মেয়ে হলে মন খারাপ করা।
৪৩. অভাবী মেয়েদের অলক্ষ্মী ও পোড়া কপালী বলা।
৪৪. প্রথম সন্তান গর্ভধারণের সপ্তম মাসে সাতাশা করা, কোন কোন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে গর্ভধারণের পর মেয়েদের বাড়ি থেকে ছেলেদের বাড়িতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পাঠানো।
৪৫. গর্ভাবস্থায় সুন্দর বাচ্চার ছবি দেখলে বাচ্চা সুন্দর হবে বলে ধারণা করা।
৪৬. গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খেতে ইচ্ছা হলে তা না খেলে বাচ্চার লালা পড়বে বলে ধারণা করা।
৪৭. গর্ভাবস্থায় সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ লাগা দেখলে সন্তান পঙ্গু হবে বলে মনে করা।
৪৮. কোন মাসে বা দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে অমঙ্গল মনে করা।
৪৯. বিয়ের লগন অনুষ্ঠানে কুলাতে প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে কনের চেহারার সামনে দিয়ে ঘুরানো।
৫০. সবার সামনে বর কনেকে সালাত আদায় করানো।
৫১. কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বর-কনে পরস্পর পরস্পরকে ভাতের দানা খাওয়ানো, জামাইয়ের ঝুঠা ভাত নিয়ে কনেকে খাওয়ানো।
৫২. গেট ধরে বর পক্ষ থেকে টাকা-পয়সা নেয়া।
৫৩. গায়ে হলুদের দিন নারী-পুরুষ একসঙ্গে গায়ে হলুদ মাখানো।
৫৪. বরকে ভাবীদের দ্বারা হলুদ মাখানো ও গোসল দেয়া।
৫৫. গায়ে হলুদের নামে অনুষ্ঠান করে বরের কপালে নারীরা, কনের কপালে পুরুষরা হলুদ লাগানো ও মিষ্টি খাওয়ানো।
৫৬. জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস, ম্যারিজ ডে (বিয়ে দিবস), ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, বসন্ত দিবস, এপ্রিল ফুল দিবস উদযাপন করা।
৫৭. বিভিন্ন দিবসে কবরে ও স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া, খালি পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়ে নীরবতা পালন করা ও শপথ নেয়া।
৫৮. নতুন বর্ষ শুরু উপলক্ষে বোমা ফাটানো ও আতশবাজি করা।
৫৯. বছরের প্রথম দিন ক্রেতাকে বাকি না দেয়া।
৬০. সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিতভাবে দোকানে আগরবাতি জ্বালানো ও পানি ছিটানো।
৬১. সবসময় ক্যাশ খালি না রেখে কিছু না কিছু টাকা পয়সা রাখা।
৬২. ছেলেদের কান ছিদ্র করা ও তাতে দুল পরিধান করা।
৬৩. ছেলেদের গলায় চেইন পরিধান করা।
৬৪. শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তনের নামে প্রজ্বলিত আগুনে সালাম দেয়া ও ফুল দেয়া।
৬৫. ছোট বাচ্চারা নতুন হাঁটা শুরু করলে তার উপর দিয়ে বিভিন্ন ফল, পিঠা ছোট ছোট টুকরো করে ঘরে বা বারান্দায় ফেলা। এরূপ করলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারবে বলে মনে করা।
৬৬. ছোট বাচ্চার নজর লাগবে বলে কপালে কাজলের ফোঁটা দেয়া।
৬৭. ছোট বাচ্চাদের নতুন দাঁত উঠলে যে প্রথমে দেখবে তার সবাইকে পায়েস বা মিষ্টি খাওয়াতে হবে মনে করা।
৬৮. বাচ্চাদের লাঠি বা ঝাড়ুর ছোঁয়া লাগলে জ্বর আসবে বলে মনে করা এবং পানি ছিটিয়ে দেয়া।
৬৯. বাচ্চাদের উপর দিয়ে টপকিয়ে গেলে আর বড় হবে না মনে করা।
৭০. বাচ্চাদের মন ভোলানোর জন্য মিথ্যা বলা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া।
৭১. নারী-পুরুষ দুজন মিলে জবাই করা যাবে না বলে মনে করা।
৭২. বাচ্চাদের আজেবাজে নাম রাখা : অনেকে অর্থের দিকে খেয়াল না করে নায়ক-নায়িকা বা সমাজে প্রচলিত নাম অনুসারে সন্তানদের আজেবাজে নাম রেখে থাকে। যেমন, সান্টু, মন্টু, মিন্টু, হ্যাপি, বাপ্পি, প্রিন্স, জেমস ইত্যাদি। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে চম্পা, ডেজী, মিমি, মায়া, দিয়া, আখি, শিল্পী, পপি, পুতুল, ডলি, বেবী, ডায়না, প্রিয়াঙ্কা, বন্যা, বাসন্তী ইত্যাদি।
৭৩. কদমবুসী করা : অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় ভক্তি-শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পা স্পর্শ করে সালাম করা তা মা-বাপ, উস্তাদ, কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি যে কেউ হোক না কেন।
তাছাড়া কদমবুসী করার সময় অন্যের সামনে মাথা নত হয়। অথচ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে সম্মান প্রদর্শনের জন্য মাথা নত করা ইসলামে জায়েয নেই। যারা বলেন, মা-বাবা, উস্তাদ ও শ্বশুর-শাশুড়িকে কদমবুসী বা পা ধরে সালাম করা যায়, তাদের এ কথার কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
প্রকৃতপক্ষে সম্মান করার সুন্নাত নিয়ম হলো- সালাম দেয়া এবং সালামের পর মুসাফাহা করা এবং দূরাগত ব্যক্তি হলে তার সাথে মুয়ানাকা (আলিঙ্গন) করা। এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করলে কী করতে হবে এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের কয়েকটি হক রয়েছে :
عَنْ عَلِيٍّ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لِلْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتَّةٌ بِالْمَعْرُوْفِ : يُسَلِّمُ عَلَيْهِ اِذَا لَقِيَهٗ ، وَيُجِيْبُهٗ اِذَا دَعَاهُ ، وَيُشَمِّتُهٗ اِذَا عَطَسَ ، وَيَعُوْدُهٗ اِذَا مَرِضَ ، وَيَتْبَعُ جِنَازَتَهٗ اِذَا مَاتَ ، وَيُحِبُّ لَهٗ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهٖ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৬টি হক রয়েছে। তা হলো :
১. সাক্ষাৎ হলে সালাম দেবে। (এখানে পা ধরে সালাম দিতে বলা হয়নি)
২. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।
৩. হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে ‘আল্লহামদুলিল্লাহ’ বলার পর উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।
৪. অসুস্থ হলে সেবা করবে।
৫. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে এবং
৬. সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে। [তিরমিযী, হা/২৭৩৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩। সমাপ্ত]
১. সন্ধ্যায় ঘরে আলো না জ্বালালে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
২. কুকুর কাঁদলে বিপদ আসবে বলে মনে করা।
৩. কাক ডাকলে কেউ মারা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৪. ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দেখলে অমঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস করা।
৫. বাম চোখ ফরকালে বিপদ, ডান চোখ ফরকালে সৌভাগ্য বলে মনে করা।
৬. ডান হাতের তালু চুলকালে পয়সা আসে বলে মনে করা।
৭. বাম হাতের তালু চুলকালে পয়সা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৮. নাক ও কপালে ফোঁড়া হলে ধন আসবে বলে মনে করা।
৯. ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে/গালে হাত দিয়ে বসাকে কুলক্ষণ মনে করা।
১০. জন্মগ্রহণের মাসে বিয়ে করলে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
১১. জোড় কলা খেলে জোড়া বাচ্চা হবে বলে ধারণা করা।
১২. ফাঁটা বা ভাঙ্গা প্লেটে খেলে অলক্ষ্মি ঘরে আসে বলে মনে করা।
১৩. পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম না খাওয়া।
১৪. পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছরই ভালো খাবার জুটবে বলে মনে করা।
১৫. যাত্রার সময় কেউ হাঁচি দিলে/পেছন থেকে ডাকলে কুলক্ষণ মনে করা।
১৬. যাত্রাকালে কিছুতে হোচট খেলে অমঙ্গল হয় মনে করে একটু বসে পুনরায় যাত্রা করা।
১৭. শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলে যাত্রা অশুভ ভাবা।
১৮. শনি, মঙ্গল ও আমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করে শুভ কাজ না করা।
১৯. সকাল বেলা দোকান খোলার পর বাকিতে বিক্রি করলে- সারাদিন বাকি বা ফাঁকি যাবে বলে মনে করা।
২০. ১ম বিক্রির বা ১ম ভাড়ার টাকা পেলে বরকতের আশায় চুমু খাওয়া, কপালে লাগানো।
২১. জামাকাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় সেলাই করা কুলক্ষণ মনে করা।
২২. বন্ধ্যা মহিলা ধরলে বা তাকালে অশুভ বা অমঙ্গল হবে বলে মনে করা।
২৩. পরপর সন্তান মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সন্তান জন্মিলে কান ছিদ্র করে দেয়া বা বাজে নাম রাখা। যেমন- হেঁজা, মরা, মরণ ইত্যাদি। তাদের ধারণা এসব করলে সন্তান আর মরবে না।
২৪. চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় যদি কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোক কিছু কাটাকাটি করে তাহলে তার সন্তানের অঙ্গহানি ঘটবে বলে মনে করা।
২৫. কোন লোকের আলোচনা চলছে, ইতোমধ্যে সে এসে পড়লে বা ফোন করলে- তার দীর্ঘজীবী হওয়ার আলামত বলে মনে করা।
২৬. নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, মডেলিং, ফ্যাশন, নাটক, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, রাখিবন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি প্রয়োজন মনে করা।
২৭. শনিবার দিন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, তাতে অকল্যাণ হবে মনে করা।
২৮. মৃত ব্যক্তির জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা।
২৯. পেঁচা ডাকলে বিপদ আসন্ন মনে করা।
৩০. পায়ে তিল থাকলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না মনে করা।
৩১. ঠোঁটের নিচে তিল, কানের নিচে তিল থাকলে অকল্যাণ হয় মনে করা।
৩২. চোখ টেরা থাকলে ভাগ্যবান হওয়া মনে করা।
৩৩. নাক বোঁচা থাকলে বেশি করে বিয়ের প্রস্তাব আসে মনে করা।
৩৪. বাজী ধরা।
৩৫. নজর লাগবে বলে সমান খাবার ফেলে দিয়ে খাবার শুরু করা।
৩৬. খাবার সময় সালাম না দেয়া।
৩৭. প্লেটের সম্পূর্ণ খাবার শেষ না করে কিছু রেখে দেয়া।
৩৮. সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাজার থেকে মাছ আনলে মাছের সাথে দুষ্ট জিন আসে মনে করা।
৩৯. খাবার সময় জিহবায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিয়েছে ও কাশি দিলে কেউ তাকে স্মরণ করেছে বলে মনে করা।
৪০. কপালে টিপ লাগানো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করা।
৪১. প্রথম যৌবনে মেয়েদের পর্দা করা জরুরি নয় মনে করা।
৪২. প্রথম সন্তান মেয়ে হলে মন খারাপ করা।
৪৩. অভাবী মেয়েদের অলক্ষ্মী ও পোড়া কপালী বলা।
৪৪. প্রথম সন্তান গর্ভধারণের সপ্তম মাসে সাতাশা করা, কোন কোন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে গর্ভধারণের পর মেয়েদের বাড়ি থেকে ছেলেদের বাড়িতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পাঠানো।
৪৫. গর্ভাবস্থায় সুন্দর বাচ্চার ছবি দেখলে বাচ্চা সুন্দর হবে বলে ধারণা করা।
৪৬. গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খেতে ইচ্ছা হলে তা না খেলে বাচ্চার লালা পড়বে বলে ধারণা করা।
৪৭. গর্ভাবস্থায় সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ লাগা দেখলে সন্তান পঙ্গু হবে বলে মনে করা।
৪৮. কোন মাসে বা দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে অমঙ্গল মনে করা।
৪৯. বিয়ের লগন অনুষ্ঠানে কুলাতে প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে কনের চেহারার সামনে দিয়ে ঘুরানো।
৫০. সবার সামনে বর কনেকে সালাত আদায় করানো।
৫১. কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বর-কনে পরস্পর পরস্পরকে ভাতের দানা খাওয়ানো, জামাইয়ের ঝুঠা ভাত নিয়ে কনেকে খাওয়ানো।
৫২. গেট ধরে বর পক্ষ থেকে টাকা-পয়সা নেয়া।
৫৩. গায়ে হলুদের দিন নারী-পুরুষ একসঙ্গে গায়ে হলুদ মাখানো।
৫৪. বরকে ভাবীদের দ্বারা হলুদ মাখানো ও গোসল দেয়া।
৫৫. গায়ে হলুদের নামে অনুষ্ঠান করে বরের কপালে নারীরা, কনের কপালে পুরুষরা হলুদ লাগানো ও মিষ্টি খাওয়ানো।
৫৬. জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস, ম্যারিজ ডে (বিয়ে দিবস), ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, বসন্ত দিবস, এপ্রিল ফুল দিবস উদযাপন করা।
৫৭. বিভিন্ন দিবসে কবরে ও স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া, খালি পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়ে নীরবতা পালন করা ও শপথ নেয়া।
৫৮. নতুন বর্ষ শুরু উপলক্ষে বোমা ফাটানো ও আতশবাজি করা।
৫৯. বছরের প্রথম দিন ক্রেতাকে বাকি না দেয়া।
৬০. সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিতভাবে দোকানে আগরবাতি জ্বালানো ও পানি ছিটানো।
৬১. সবসময় ক্যাশ খালি না রেখে কিছু না কিছু টাকা পয়সা রাখা।
৬২. ছেলেদের কান ছিদ্র করা ও তাতে দুল পরিধান করা।
৬৩. ছেলেদের গলায় চেইন পরিধান করা।
৬৪. শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তনের নামে প্রজ্বলিত আগুনে সালাম দেয়া ও ফুল দেয়া।
৬৫. ছোট বাচ্চারা নতুন হাঁটা শুরু করলে তার উপর দিয়ে বিভিন্ন ফল, পিঠা ছোট ছোট টুকরো করে ঘরে বা বারান্দায় ফেলা। এরূপ করলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারবে বলে মনে করা।
৬৬. ছোট বাচ্চার নজর লাগবে বলে কপালে কাজলের ফোঁটা দেয়া।
৬৭. ছোট বাচ্চাদের নতুন দাঁত উঠলে যে প্রথমে দেখবে তার সবাইকে পায়েস বা মিষ্টি খাওয়াতে হবে মনে করা।
৬৮. বাচ্চাদের লাঠি বা ঝাড়ুর ছোঁয়া লাগলে জ্বর আসবে বলে মনে করা এবং পানি ছিটিয়ে দেয়া।
৬৯. বাচ্চাদের উপর দিয়ে টপকিয়ে গেলে আর বড় হবে না মনে করা।
৭০. বাচ্চাদের মন ভোলানোর জন্য মিথ্যা বলা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া।
৭১. নারী-পুরুষ দুজন মিলে জবাই করা যাবে না বলে মনে করা।
৭২. বাচ্চাদের আজেবাজে নাম রাখা : অনেকে অর্থের দিকে খেয়াল না করে নায়ক-নায়িকা বা সমাজে প্রচলিত নাম অনুসারে সন্তানদের আজেবাজে নাম রেখে থাকে। যেমন, সান্টু, মন্টু, মিন্টু, হ্যাপি, বাপ্পি, প্রিন্স, জেমস ইত্যাদি। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে চম্পা, ডেজী, মিমি, মায়া, দিয়া, আখি, শিল্পী, পপি, পুতুল, ডলি, বেবী, ডায়না, প্রিয়াঙ্কা, বন্যা, বাসন্তী ইত্যাদি।
৭৩. কদমবুসী করা : অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় ভক্তি-শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পা স্পর্শ করে সালাম করা তা মা-বাপ, উস্তাদ, কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি যে কেউ হোক না কেন।
তাছাড়া কদমবুসী করার সময় অন্যের সামনে মাথা নত হয়। অথচ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে সম্মান প্রদর্শনের জন্য মাথা নত করা ইসলামে জায়েয নেই। যারা বলেন, মা-বাবা, উস্তাদ ও শ্বশুর-শাশুড়িকে কদমবুসী বা পা ধরে সালাম করা যায়, তাদের এ কথার কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
প্রকৃতপক্ষে সম্মান করার সুন্নাত নিয়ম হলো- সালাম দেয়া এবং সালামের পর মুসাফাহা করা এবং দূরাগত ব্যক্তি হলে তার সাথে মুয়ানাকা (আলিঙ্গন) করা। এক মুসলিম অপর মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করলে কী করতে হবে এ ব্যাপারে নবী ﷺ এর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের কয়েকটি হক রয়েছে :
عَنْ عَلِيٍّ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لِلْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتَّةٌ بِالْمَعْرُوْفِ : يُسَلِّمُ عَلَيْهِ اِذَا لَقِيَهٗ ، وَيُجِيْبُهٗ اِذَا دَعَاهُ ، وَيُشَمِّتُهٗ اِذَا عَطَسَ ، وَيَعُوْدُهٗ اِذَا مَرِضَ ، وَيَتْبَعُ جِنَازَتَهٗ اِذَا مَاتَ ، وَيُحِبُّ لَهٗ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهٖ
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ৬টি হক রয়েছে। তা হলো :
১. সাক্ষাৎ হলে সালাম দেবে। (এখানে পা ধরে সালাম দিতে বলা হয়নি)
২. দাওয়াত দিলে কবুল করবে।
৩. হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে ‘আল্লহামদুলিল্লাহ’ বলার পর উত্তরে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।
৪. অসুস্থ হলে সেবা করবে।
৫. মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় অংশগ্রহণ করবে এবং
৬. সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে। [তিরমিযী, হা/২৭৩৬; ইবনে মাজাহ, হা/১৪৩৩। সমাপ্ত]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন