hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

যেসব কারণে ইবাদাত বরবাদ হয়

লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

১০
যেসব কারণে ইবাদাত বিনষ্ট হয়ে যায়
এমনকিছু বিষয় আছে যার কারণে মানুষের ইবাদাত নষ্ট হয়ে যায়। নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো :

কুফরী করা :

কাফিরদের কোন ভালো কাজ পরকালে কাজে আসবে না এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন,

﴿وَمَنْ يَّكْفُرْ بِالْاِيْمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ وَهُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾

কেউ ঈমান প্রত্যাখ্যান করলে তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়িদা- ৫)

﴿اَلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ اَضَلَّ اَعْمَالَهُمْ﴾

যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে, আল্লাহ তাদের সকল আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ১)

কাফিরদের ইবাদাতের তুলনা :

﴿مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ اَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِنِ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ - لَا يَقْدِرُوْنَ مِمَّا كَسَبُوْا عَلٰى شَيْءٍ ذٰلِكَ هُوْ الضَّلَالُ الْبَعِيْدُ﴾

যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের আমলসমূহের উপমা হচ্ছে ছাইয়ের মতো, যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের কাজে লাগবে না। এটা তো ঘোর বিভ্রামিত্ম। (সূরা ইবরাহীম- ১৮)

অন্য একটি আয়াতে তাদের আমলকে মরুভূমির মরীচিকা ও সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে,

﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْاۤ اَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ ۢبِقِيْعَةٍ يَّحْسَبُهُ الظَّمَاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءَهٗ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وََّوَجَدَ اللهَ عِنْدَهٗ فَوَفَّاهُ حِسَابَهٗؕ وَاللهُ سَرِيْعُ الْحِسَابِ﴾

যারা কুফরী করে তাদের কর্ম মরুভূমির ঐ মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে থাকে। কিন্তু যখন সে তার নিকট উপস্থিত হয়, তখন কিছুই পায় না। অতঃপর সে সেথায় আল্লাহকে পাবে; তখন তিনি তার কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে খুবই তৎপর। (সূরা নূর- ৩৯)

এ উপমায় এমনসব লোকের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা কুফরী ও মুনাফিকী সত্ত্বেও বাহ্যত সৎকাজও করে এবং আখিরাতও মানে। আবার এ অসার চিন্তাও পোষণ করে যে, প্রকৃত ঈমান ও মুমিনের গুণাবলি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া তাদের এসব কার্যাবলি আখিরাতে কোন কাজে লাগবে না। উপমার আকারে তাদেরকে জানানো হচ্ছে, তোমরা নিজেদের যেসব বাহ্যিক ও প্রদর্শনীমূলক সৎকাজের মাধ্যমে আখিরাতে লাভবান হওয়ার আশা কর, সেগুলো নিছক মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। মরুভূমিতে দূর থেকে চিকচিক করা বালুরাশি দেখে পিপাসার্ত যেমন একে পানির নদী মনে করে সেদিকে ছুটে যায়, ঠিক তেমনি তোমরাও এসব কর্মের উপর মিথ্যা ভরসা করে চলেছ। কিন্তু যেমন মরীচিকার দিকে ছুটে চলা ব্যক্তি যে স্থানে পানির নদী আছে বলে মনে করেছিল সেখানে পৌঁছে কিছুই পায় না, ঠিক তেমনি তোমরাও যখন মৃত্যুর দ্বারে প্রবেশ করবে তখন জানতে পারবে সেখানে এমন কোন জিনিস নেই, যা থেকে তোমরা লাভবান হতে পারবে। বরং এর বিপরীতে দেখবে তোমাদের কুফরী ও মুনাফিকী এবং লোকদেখানো সৎকাজ ও অন্যান্য যেসব খারাপ কাজ করছিলে সেগুলোর হিসাব নেয়ার এবং প্রতিদান দেয়ার জন্য আল্লাহ সেখানে উপস্থিত রয়েছেন।

ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা :

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির উপর যেসকল বিধান দিয়েছেন তা তিনি জেনে বুঝেই দিয়েছেন। যেহেতু তিনি হলেন মানুষের স্রষ্টা, তাই তিনিই ভালো জানেন যে, মানুষের জন্য কোনটি কল্যাণকর এবং কোনটি অকল্যাণকর। এজন্য আল্লাহর কোন বিধানকে অপছন্দ করা অথবা এর কোন ত্রুটি অন্বেষণ করা মারাত্মক অন্যায়। যারা এমনটি করবে তাদের ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,

﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَاَضَلَّ اَعْمَالَهُم ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾

যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য ধ্বংস এবং আল্লাহ তাদের আমল নিষ্ফল করে দিয়েছেন। কারণ আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করেছে। তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৮, ৯)

আখেরাতকে অস্বীকার করা :

আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কেননা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখা ছাড়া কোন মানুষ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে না। যে ব্যক্তি আখেরাতকে অস্বীকার করবে সে দুনিয়াতে সকল পাপই করতে পারবে। এজন্য এমন লোকের সকল ইবাদাত বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَالَّذِيْنَ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَلِقَآءِ الْاٰخِرَةِ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ هَلْ يُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾

যারা আমার নিদর্শন ও আখেরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করবে তাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারা যা করে তদানুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৪৭)

মুরতাদ (দ্বীনত্যাগী) হয়ে যাওয়া :

﴿وَمَنْ يَّرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِيْنِهٖ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولٰٓئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ﴾

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যাবে। দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা বাকারা- ২১৭)

আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করা :

মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর বিধান মেনে চলা। কিন্তু অনেক লোক আছে যারা নিজেরা আল্লাহর বিধান তো পালন করেই না; বরং অন্যান্য লোকদেরকেও আল্লাহর পথ থেকে দূরে রাখতে চায়। এমন অপরাধীদের ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَصَدُّوْا عَنْ سَبِيْلِ اللهِ وَشَآقُّوا الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدٰى لَنْ يَّضُرُّوا اللهَ شَيْئًا وَّسَيُحْبِطُ اَعْمَالَهُمْ﴾

যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথে (মানুষকে আসতে) বাধা দিয়েছে এবং হেদায়াতের পথ তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের সাথে ঝগড়া করেছে, তারা বাস্তবে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না বরং আল্লাহ তাদের সব আমল বরবাদ করে দেবেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩২)

মুনাফিকী করা :

বাহ্যিক ঈমান এনে ভেতরে কুফরী লুকিয়ে রাখা- এটা মারাত্মক অপরাধ। শরীয়াতে এমন লোকদেরকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে। মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু। কেননা তারা বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের সাথে মিশে থাকে। এজন্য অনেক সময় তাদেরকে চেনা যায় না। তাই তাদের দ্বারা ইসলামের আরো বেশি ক্ষতি হয়। এজন্য মুনাফিকী রুগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইবাদাত আল্লাহ ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ذٰلِكَ بِاَنَّهُمُ اتَّبَعُوْا مَا اَسْخَطَ اللهَ وَكَرِهُوْا رِضْوَانَهٗ فَاَحْبَطَ اَعْمَالَهُمْ﴾

এটা এ কারণে যে, তারা (মুনাফিকরা) এমন পথে চলেছে, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তারা অপছন্দ করেছে। তাই তিনি তাদের সব আমল বরবাদ করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মাদ- ২৮)

যারা খাঁটি মনে ঈমান এনে মুসলিম হয়েছে বটে, কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বা অসচেতনতার কারণে কখনো ছোটখাট নিফাকের কাজ করে ফেলে। কিন্তু পরক্ষণেই লজ্জিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তারা উল্লেখিত আয়াতের বিধানে পড়বে না; বরং এ বিধান এমন মুনাফিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা প্রকৃত মুনাফিক। এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরে ঈমান প্রকাশ করে ভেতরে কুফরীর ভিত্তি মজবুত করা, ঈমানদারদেরকে সহ্য করতে না পারা, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি।

সত্য প্রচারকদেরকে হত্যা করা :

যারা সত্য প্রচার করে অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনকে সঠিকভাবে প্রচার করে তারা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। সুতরাং যারা তাদেরকে হত্যা করে তারা হলো ইসলামের দুশমন। আল্লাহ তাদের ইবাদাতকে বরবাদ করে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿اِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاٰيَاتِ اللهِ وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَّيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ اَلِيْمٍ - اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ﴾

নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করেছে, আরো হত্যা করেছে তাদেরকে, যারা ইনসাফের নির্দেশ দেয়- তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দাও। এরা তো সেই সব লোক দুনিয়া ও আখেরাতে যাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে গেছে। তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। (সূরা আলে ইমরান- ২১, ২২)

শিরক করা :

আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইবাদাতের ক্ষেত্রে বা আল্লাহর গুণাবলি ও ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে সে ব্যক্তি মুশরিক বলে গণ্য হবে। এমন ব্যক্তির অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য এবং তার কোন প্রকার সৎকর্মই গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ اُوْحِيَ اِلَيْكَ وَاِلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ اَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾

নিশ্চয় তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা যুমার- ৬৫)

﴿وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾

তারা যদি শিরক করত তবে তাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত। (সূরা আন‘আম- ৮৮)

এ ব্যাপারে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهٗ وَشِرْكَهٗ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে উর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোন নেক আমল করে এবং তাতে আমার সাথে কাউকে শরীক করে আমি তাকে ও তার ঐ শিরকী আমলকে ত্যাগ করি। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৬৬৬; মুসনাদে উমার ইবনে খাত্তাব, হা/১১১৩।]

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : اَنَا اَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ ، فَمَنْ عَمِلَ لِيْ عَمَلًا اَشْرَكَ فِيْهِ غَيْرِيْ ، فَاَنَا مِنْهُ بَرِيْءٌ ، وَهُوَ لِلَّذِيْ اَشْرَكَ .

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে অমুখাপেক্ষী। অতএব যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে এমন আমল করল, যার মধ্যে আমার সাথে শরীক করা হয় তাহলে আমি তার থেকে মুক্ত। আর এ আমল তার জন্য হবে, যাকে সে শরীক করেছে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪২০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬১৭; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১১১৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৪।]

লোক দেখানো আমল করা :

নিজের আমল দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির সাথে সৃষ্ট জীবের সন্তুষ্টি অথবা নিজের সুখ্যাতি কামনা করা এটা নিঃসন্দেহে রিয়া ও গোপন শিরক। এর মাধ্যমে বান্দার আমল নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ مَحْمُوْدِ بْنِ لَبِيْدٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اِنَّ اَخْوَفَ مَا اَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا الشِّرْكُ الْاَصْغَرُ ؟ قَالَ : اَلرِّيَاءُ اِنَّ اللهَ يَقُوْلُ : يَوْمَ تُجَازَى الْعِبَادُ بِاَعْمَالِهِمْ اِذْهَبُوْا اِلَى الَّذِيْنَ كُنْتُمْ تُرَاؤُوْنَ بِاَعْمَالِكُمْ فِي الدُّنْيَا ، فَانْظُرُوْا هَلْ تَجِدُوْنَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً

মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের জন্য যে বিষয়টিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হলো ছোট শিরক। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো আমল। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাঁর বান্দাদেরকে আমলের প্রতিদান দেবেন। কিন্তু যারা লোক দেখানো আমল করেছে তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করেছ তাদের কাছে যাও; দেখো, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৮০; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৩৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৪১২; সিলসিলা সহীহা, হা/৯৫১।]

দান করে খোটা দেয়া :

দান করা একটি সওয়াবের কাজ। যাকে কিছু দান করা হয় সে এতে অত্যন্ত খুশি হয়। কিন্তু এই দান করার পর যদি খোটা দেয়া হয় বা দানকারীকে কষ্ট দেয়া হয় তাহলে এ দানের সওয়াব থাকে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْاَذٰى كَالَّذِيْ يُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ﴾

হে ঈমানদারগণ! খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করো না, ঐ ব্যক্তির মতো যে লোক দেখানোর জন্য তার মাল খরচ করে। (সূরা বাকারা- ২৬৪)

তবে কেউ কারো বিবেককে জাগ্রত করার জন্য বা সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য কৃত উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তা খোটা বা তিরস্কার হিসেবে গণ্য হবে না। শর্ত হলো, এতে নিজের বড়ত্ব প্রকাশ ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য থাকবে না।

আসরের সালাত ছেড়ে দেয়া :

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা মুমিনের একটি মৌলিক দায়িত্ব। কেননা সালাত হচ্ছে ঈমান ও কুফুরের মধ্যে পার্থক্যকারী। সালাত দ্বারাই একজন মুমিন কাফিরদের থেকে পৃথক হয়। আর বিশেষ করে আসরের সালাতের সময় মানুষ বেশি গাফলতি করে। তাই নবী ﷺ আসরের সালাতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যার আসরের সালাত ছুটে গেল তার আমল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِي الْمَلِيْحِ قَالَ : كُنَّا مَعَ بُرَيْدَةَ فِيْ غَزْوَةٍ فِيْ يَوْمٍ ذِيْ غَيْمٍ فَقَالَ بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فَاِنَّ النَّبِيَّ قَالَ : مَنْ تَرَكَ صَلَاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهٗ

আবুল মালীহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে বৃষ্টির দিনে বুরাইদা (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা আসরের সালাত তাড়াতাড়ি আদায় করো। কেননা নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দিল তার আমল বরবাদ হয়ে গেল। [সহীহুল বুখারী, হা/৫৫৩; সুনানে নাসাঈ, হা/৪৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৪৭০; আহমাদ হা: ২৩১০৫।]

কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করা :

কোন মুসলিমের মান-ইজ্জতে আঘাত করা মারাত্মক অপরাধ। কেননা এক মুসলিম অপর মুসলিমের জন্য আয়নাস্বরূপ। সে তাকে সংশোধন করে দিতে পারে, কিন্তু তাকে অপমান ও বে-ইজ্জত করতে পারে না। যারা এমনটি করবে তাদের আমল নষ্ট হবে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اِبْرَاهِيْمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ اَبِيْهِ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ مَا عِنْدَنَا كِتَابٌ نَقْرَؤُهٗ اِلَّا كِتَابُ اللهِ، غَيْرَ هٰذِهِ الصَّحِيْفَةِ‏ . ‏ قَالَ فَاَخْرَجَهَا فَاِذَا فِيْهَا اَشْيَاءُ مِنَ الْجِرَاحَاتِ وَاَسْنَانِ الْاِبِلِ‏ . ‏ قَالَ وَفِيْهَا الْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ اِلٰى ثَوْرٍ، فَمَنْ اَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا، اَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ، وَمَنْ وَالٰى قَوْمًا بِغَيْرِ اِذْنِ مَوَالِيْهِ، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ، وَذِمَّةُ الْمُسْلِمِيْنَ وَاحِدَةٌ، يَسْعٰى بِهَا اَدْنَاهُمْ فَمَنْ اَخْفَرَ مُسْلِمًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَّلَا عَدْلٌ‏

ইবরাহীম তাইমী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, এ ক্ষুদ্র পুস্তিকা ছাড়া এবং আল্লাহর কিতাব ছাড়া পড়ার মতো অন্য কোন কিতাব আমার কাছে নেই। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, অতঃপর আলী (রাঃ) তা বের করেন। তখন দেখা গেল, এর মধ্যে আহতদের প্রতিদান সংক্রান্ত বিধিবিধান (দিয়াত) ও উট (বয়স হিসেবে যাকাত)-এর বিবরণ সম্বলিত নানা বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। বর্ণনাকারী আরো বলেন, তাতে এও উল্লেখ আছে, মাদীনার ‘আঈর’ পাহাড় থেকে অমুক স্থানের মধ্যবর্তী স্থানটি হারাম (মর্যাদাসম্পন্ন)। অতএব যে কেউ এর মধ্যে (নিজের খেয়াল-খুশিমতো দ্বীন সম্পর্কীয়) নতুন কিছু সংযোজন অর্থাৎ কোন বিদআত প্রচলন করবে, অথবা বিদআত প্রচলনকারীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির কোন ফরয-নফল (আমল) গ্রহণ করবেন না। যে ব্যক্তি অভিভাবকদের অনুমতি ব্যতিত অন্য সম্প্রদায়কে অভিভাবক নিযুক্ত করে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত বর্ষিত হবে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয অথবা নফল (আমল) গ্রহণ করা হবে না।

আর সকল মুসলিমের অঙ্গীকার মূলত একই, ফলে তাদের সাধারণ ব্যক্তিরাও তা মেনে চলবে (অর্থাৎ একজন কোন অঙ্গীকার বা চুক্তি করলে সকলে তা মেনে চলবে)। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ইজ্জত ক্ষুণ্ণ করবে, তার উপরও আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয এবং নফল আমল গ্রহণ করা হবে না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৭৫৫; আবু দাউদ, হা/২০৩৬।]

গণক ও জ্যোতিষীর কাছে গমন করা :

জ্যোতিষ বা গণকের কাছে যাওয়া এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা- এসব শিরকী কাজ। কেননা এরা গায়েবের সংবাদ দেয় অথচ গায়েব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যে ব্যক্তি তাদের কথা বিশ্বাস করবে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ صَفِيَّةَ عَنْ بَعْضِ اَزْوَاجِ النَّبِىِّ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ : مَنْ اَتٰى عَرَّافًا فَسَاَلَهٗ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهٗ صَلَاةٌ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً

সাফিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কতিপয় স্ত্রী হতে বর্ণনা করেন। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট আসবে এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করবে, সে ব্যক্তির চল্লিশ রাত (দিনের) নামায কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৯৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৮৯; সুনানে কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬৯৫২।]

মদ্য পান করা :

মদ হচ্ছে সকল পাপের মূল। নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করলে মানুষের জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়। আর জ্ঞানবুদ্ধি হচ্ছে আল্লাহর একটি বিরাট নিয়ামত। মানুষকে আল্লাহ এটা দান করেছেন, যেন মানুষ এটাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এখন যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন কাজ করে বা এমন কোন জিনিস খায়, যা তার এই জ্ঞান নামক নিয়ামতের ক্ষতি সাধন করে তবে সে মহা অন্যায় করে। তার ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الْخَمْرُ اُمُّ الْخَبَائِثِ وَمَنْ شَرِبَهَا لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فَاِنْ مَاتَ وَهِىَ فِىْ بَطْنِهٖ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মদ হচ্ছে সকল খবীসের মা। যে মদ পান করে তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবে না। তার পেটে মদ থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহেলিয়্যাতের মৃত্যুবরণ করল। [দারেমী, হা/৪৬৬৯; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৮৫৪। ۚۚ ]

عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيْدَ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ : مَنْ شَرِبَ مُسْكِرًا مَا كَانَ، لَمْ يَقْبَلِ اللهُ لَهٗ صَلَاةً اَرْبَعِيْنَ يَوْمًا

সায়েব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করবে- তা যা-ই হোক না কেন তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৫৩২; তাবারানী, হা/৬৫৩২।]

উল্লেখ্য যে, সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেকটি নেশা জাতীয় দ্রব্যকে মদ বলেছেন। তাই হেরোইন, ফেনসিডিল, গাজা, আফীম, হুইসকি, ইয়াবা, পেস্টিং ও তামাকজাত দ্রব্য ইত্যাদি মাদকের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব নেশাজাতীয় জিনিস থেকে দূরে থাকা সকলের কর্তব্য।

মাতাপিতার অবাধ্যতা করা ও তাকদীর অস্বীকার করা :

আল্লাহর পরে কোন মানুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার বর্তায় তার মাতাপিতার। কেননা মাতাপিতাই ছোটকালে তাকে লালনপালন করেন এবং তার জন্য অনেক কষ্ট শিকার করেন। এখন সেই মাতাপিতার সাথেই যদি কোন ব্যক্তি খারাপ আচরণ করে এবং তাদের অবাধ্য হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তার নামায কবুল করেন না। তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। কোন ব্যক্তি এই তাকদীরকে অস্বীকার করবে তারও ইবাদাত নষ্ট হয়ে যাবে। এ মর্মে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ، وَلَا عَدْلٌ : عَاقٌّ، وَمَنَّانٌ، وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোকের ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করেন না : (১) মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান। (২) দান করে খোটাদানকারী ও (৩) তাকদীর অস্বীকারকারী। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/৭৪২৫; সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৭৮৫।]

মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে আমল কবুল হয় না :

ইসলাম মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে। কোন বৈধ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তার ফরয ও নফল কোন ইবাদাতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। হাদীসে এসেছে,

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ اَنَّهٗ قَالَ : مَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا فَاعْتَبَطَ بِقَتْلِهٖ لَمْ يَقْبَلِ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا

উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করবে এবং তাকে হত্যা করে খুশি হবে, তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করবেন না। [আবু দাউদ, হা/৪২৭২; সুনানুল কুবরা লি বায়হাকী, হা/১৬২৮২।]

নেতার পক্ষপাতিত্ব করা :

নেতৃত্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেউ যদি কোন পদে দায়িত্বশীল হয় তবে তাকে ন্যায় ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জরুরি। কেননা জনসাধারণ বিভিন্ন বিষয়ে তার মুখাপেক্ষী হয়। এখন যদি কোন ব্যক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়ে স্বার্থপর হয়ে যায় এবং বিভিন্ন কাজকর্মে পক্ষপাতিত্ব করে তবে এটা মহা অন্যায়। এমন লোকের ইবাদাত আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ يَزِيْدَ بْنِ اَبِيْ سُفْيَانَ ، قَالَ : قَالَ لِيْ اَبُوْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقُ حِيْنَ بَعَثَنِيْ اِلَى الشَّامِ : يَا يَزِيْدُ ، اِنَّ لَكَ قَرَابَةً عَسَيْتَ اَنْ تُؤْثِرَهُمْ بِالْاِمَارَةِ ذٰلِكَ اَكْثَرُ مَا اَخَافُ عَلَيْكَ ، فَقَدْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَنْ وَلِيَ مِنْ اَمْرِ الْمُسْلِمِيْنَ شَيْئًا فَاَمَّرَ عَلَيْهِمْ اَحَدًا مُحَابَاةً فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ صَرْفًا وَلَا عَدْلَا حَتّٰى يُدْخِلَهٗ جَهَنَّمَ .

ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) যখন আমাকে শামের দিকে পাঠালেন তখন বললেন, হে ইয়াযীদ! নিশ্চয় তোমার অনেকের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। আমি সবচেয়ে বেশি ভয় করি যে, তুমি কাউকে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে পার। শুন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোন কিছুর নেতৃত্ব পায় এবং তাদের উপর কারো ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করে তার উপর আল্লাহর লানত রয়েছে। আল্লাহ এমন ব্যক্তির কোন প্রকার ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল করবেন না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭০২৪।]

হারাম পন্থায় উপার্জন করা :

হালাল উপায়ে উপার্জন করা একটি বড় ধরনের আবশ্যকীয় কাজ। আল্লাহ তা‘আলা সকল নবীদেরকেও হালাল খেয়ে ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করা মারাত্মক অপরাধ। যে ব্যক্তি হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন করে সে কোন না কোনভাবে অন্যের হক নষ্ট করে অথবা নিষিদ্ধ জিনিসের কেনাবেচা করে। এসবকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। আর আল্লাহর কাছে ইবাদাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য হালাল খাদ্য খাওয়াকে শর্তারোপ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি হারাম থেকে দান করে তার এ দান আল্লাহ গ্রহণ করেন না। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنِ ابْنَ عُمَرَ . قَالَ اِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না; আর হারাম পন্থায় উপার্জিত মালের সদাকা কবুল হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৫৫৭; আবু দাউদ, হা/৫৯; তিরমিযী, হা/১; নাসাঈ, হা/১৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/২৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৯৬৯; ইবনে খুযাইমা, হা/৮; ইবনে হিববান, হা/১৭০৫।]

অন্য হাদীসে নবী ﷺ ইরশাদ করেন,

عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا اِيْمَانَ لِمَنْ لَا اَمَانَةَ لَهٗ، وَلَا دِيْنَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهٗ، وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهٖ، لَا يَسْتَقِيْمُ دِيْنَ عَبْدٍ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ لِسَانُهٗ، وَلَا يَسْتَقِيْمُ لِسَانُهٗ حَتّٰى يَسْتَقِيْمَ قَلْبُهٗ، وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لَا يَأْمَنُ جَارُهٗ بَوَائِقَهٗ، قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَمَا الْبَوَائِقُ؟ قَالَ : غَشْمُهٗ وَظُلْمُهٗ، وَاَيُّمَا رَجُلٍ اَصَابَ مَالَا مِنْ غَيْرِ حِلِّهٖ، وَاَنْفَقَ مِنْهُ، لَمْ يُبَارَكْ لَهٗ فِيْهِ، وَاِنْ تَصَدَّقَ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ، وَمَا بَقِيَ فَزَادُهٗ اِلَى النَّارِ، اِنَّ الْخَبِيْثَ لَا يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ، وَلٰكِنَّ الطَّيِّبَ يُكَفِّرُ الْخَبِيْثَ .

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই, যার মধ্যে আমানতদারী নেই এবং ঐ ব্যক্তির দ্বীনদারী নেই যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। ঐ সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোন ব্যক্তির দ্বীন সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার জিহবাকে সঠিক করবে অর্থাৎ জবানকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আর কোন ব্যক্তির জবান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হবে। ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার অত্যাচার থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। কোন বান্দা হারাম বা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে খরচ করলে তাতে বরকত হবে না। যদি সে তা থেকে দান করে তবে তা কবুল হবে না। তার সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেলে তা তার জন্য জাহান্নামের পুঁজি হবে। মন্দের দ্বারা মন্দ কাটে না (অর্থাৎ হারাম মাল দান করলে গোনাহ মাফ হয় না)। কিন্তু ভালো দ্বারা মন্দ কেটে যায় (অর্থা হালাল মাল দান করলে গোনাহ মাফ করা হয়)। [মু‘জামুল কাবীর লিত ত্বাবারানী, হা/১০৪০১।]

উপার্জন হালাল না হলে দু‘আ বিফলে যায় :

সকল নবীকে আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা যেন হালাল খেয়ে তার ইবাদাত করে। আর আল্লাহর এ নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও রয়েছে। এজন্য হালাল রুজি করা এবং হালাল খাওয়া ইবাদাত ও দু‘আ কবুলের জন্য একটি মৌলিক শর্ত। যে ব্যক্তি হালাল-হারাম বাছাই করে না তার দু‘আও আল্লাহ তা‘আলা কবুল করেন না। যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : اَيُّهَا النَّاسُ اِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ اِلَّا طَيِّبًا وَّاِنَّ اللهَ اَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا اَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ : يَا اَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا اِنِّى بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ وَقَالَ : يَا اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ . ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ اَشْعَثَ اَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ اِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَّمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَّمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَاَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোন কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’ আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’

অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হচ্ছে, সুতরাং কীভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [মুসলিম, হা/২৩৯৩, মিশকাত, হা/২৭৬০।]

সৎকাজের আদেশ না দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ না করা :

সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কেননা সমাজে যদি অন্যায় হতে থাকে আর কেউ এর প্রতিবাদ না করে তাহলে এর ফলে যে শাস্তি বা গযব আসে তা সকলকে ভোগ করতে হয়। এজন্য যথসাধ্য সৎকাজের আদেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে মানুষকে বারণ করা প্রত্যেকটি মুমিনের মৌলিক দায়িত্ব। যারা এ দায়িত্বের অবহেলা করবে তাদের দু‘আ আল্লাহ ইবাদাত করবে না। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ اليَمَانِ ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهٖ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ اَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ اَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهٗ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ .

হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার জীবন! তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করো। নতুবা তোমরা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবে। অতঃপর তোমাদের দু‘আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। [তিরমিযী, হা/২১৬৯।]

মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে না থাকা :

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুমিনদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা সকলে মিলে আল্লাহর দ্বীনকে অাঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। যদি মুসলিমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে যায় তাহলে তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের দুশমনদেরকে তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে এরই বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মুসলিম জাতি আজ অসংখ্য দল ও ফিরকায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি অনেক ছোট-খাট বিষয় নিয়েও বিভিন্ন দলাদলি শুরু হয়েছে। অথচ ইসলামের মূল জিনিস তাওহীদের আলোকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দুশমনদের মুকাবিলা করা উচিত ছিল। কিন্তু এটা না করার কারণে প্রায় সারা পৃথিবীতেই কাফির মুশরিকরা রাজত্ব করছে এবং মুসলমানদেরকে দাবিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব হলো ছোট-খাট বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে মূল তাওহীদের দিকে সবাইকে ফিরে আসা এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দ্বীনকে সকল বাতিল দ্বীনের উপর বিজয়ী করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করা। এ বিষয়টিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ যারা মুসলিমদের জামা‘আতের সাথে মিলিত না হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে থাকবে তাদের ব্যাপারে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে। এমনকি তাদের ইবাদাতও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ اَبِيْ مَالِكٍ الْاَشْعَرِيِّ ، اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : اِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ اَمَرَنِيْ اَنْ اٰمُرَكُمْ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ : عَلَيْكُمْ بِالْجِهَادِ ، وَالسَّمْعِ ، وَالطَّاعَةِ ، وَالْهِجْرَةِ ، فَمَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ قَيْدَ قَوْسٍ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ صَلَاةٌ وَلَا صِيَامٌ ، وَأُولٰئِكَ هُمْ وَقُوْدُ النَّارِ

আবু মালেক আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন। (এক) তোমরা জিহাদ করবে। (দুই) নেতার আনুগত্য করবে। (তিন) নেতার আদেশ মান্য করবে। (চার) হিজরত করবে। (পাঁচ) তোমরা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। কেননা, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক ধনুক পরিমাণ সরে যাবে, তার নামায ও রোযা কবুল হয় না। তারা জাহান্নামের অধিবাসী। [মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৩৯০।]

যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে থাকবে না তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু :

عَنِ ابْنَ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ، عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ رَاٰى مِنْ اَمِيْرِهٖ شَيْئًا يَكْرَهُهٗ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ ، فَاِنَّهٗ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ اِلَّا مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً

ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূলুললাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার নেতার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাবে সে যেন ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যায় এবং সে এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তবে সে জাহেলী মৃত্যুবরণ করে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫৪; সহীহ মুসলিম, হা/৪৮৯৬।]

عَنْ عَاصِمُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ ، اَنَّ النَّبِيَّ قَالَ .... مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ، وَمَنْ نَكَثَ الْعَهْدَ ، وَمَاتَ نَاكِثًا لِلْعَهْدِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا حُجَّةَ لَهٗ

আসেম ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচিছন্ন হবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু। আর যে ব্যক্তি ওয়াদা ভঙ্গ করবে এবং এ অবস্থায় মারা যাবে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৮১।]

জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি ইসলামের বাঁধন ছিড়ে ফেলে :

عَنْ اَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهٖ

আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিন্দু পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে যেন তার ঘাড় থেকে ইসলামের বাঁধন খুলে নিল। [আবু দাউদ, হা/৪৭৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫৬১।]

যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শয়তান তাকে আয়ত্ত করে নেয় :

عَنْ عَرْفَجَةَ بْنِ شُرَيْحٍ الاَشْجَعِىِّ قَالَ رَاَيْتُ النَّبِىَّ عَلَى الْمِنْبَرِ يَخْطُبُ النَّاسَ فَقَالَ : اِنَّهٗ سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ هَنَاتٌ وَهَنَاتٌ فَمَنْ رَاَيْتُمُوْهُ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ اَوْ يُرِيْدُ تَفْرِيْقَ اَمْرِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ كَائِنًا مَنْ كَانَ فَاقْتُلُوْهُ فَاِنَّ يَدَ اللهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَاِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ يَرْكُضُ

আরফাজাহ ইবনে শুরাইহ আল আশজাঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন যে, আমার পরে অচিরেই এমন এমন দলের আগমন ঘটবে। সুতরাং তোমরা যখন এমন ব্যক্তিকে দেখতে পাবে যে, সে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছে অথবা উম্মতে মুহাম্মাদী থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছে তখন তোমরা তাকে হত্যা করবে। কেননা আল্লাহর হাত হচ্ছে জামা‘আতের উপর। আর শয়তান ঐ ব্যক্তির সাথে থাকে, যে জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে যায়। [সুনানে নাসাঈ, হা/৪০২০।]

জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে :

عَنْ مُعَاوِيَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا دَخَلَ النَّارَ

মু‘আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ পৃথক হয়ে যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৭।]

জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি দলীল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে :

عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ ، قَالَ : اَتَيْتُ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ لَيَالِيَ سَارَ النَّاسُ اِلٰى عُثْمَانَ ، فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ : مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ وَاسْتَذَلَّ الْاِمَارَةَ لَقِيَ اللهَ وَلَا حُجَّةَ لَهٗ

রাবী ইবনে হারাশ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) এর কাছে আসলাম। তিনি তখন উসমান (রাঃ) এর কাছে গমন করছিলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং নেতৃত্বকে হেয় করবে (কিয়ামতের দিন) সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে; কিন্তু তার সাথে কোন প্রমাণ থাকবে না। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪০৯।]

বিদআত করা :

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। একজন মানুষ যত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে তার সবই নবী ﷺ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এখন নতুন করে কোন ইবাদাত সৃষ্টি করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কারণ এই সুযোগ যদি থাকে তাহলে যার যার মতো করে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ইবাদাত তৈরি করে ফেলবে। এতে করে সহীহ ইবাদাত এবং বিদআতী ইবাদাত একাকার হয়ে যাবে। মানুষ সহীহ আমল কোনটি তা বুঝতে পারবে না। সমাজের দিকে তাকালে এটাই লক্ষ্য করা যায়। কেননা অনেক বিদআতী আমল এমনভাবে চালু হয়েছে যে, কোনভাবেই মানুষ এটাকে ছাড়তে রাজি নয়। এ কারণে নবী ﷺ এ বিদআতের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এমনকি যে ব্যক্তি বিদআত করবে তার আমলও বরবাদ হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন হাদীসে এসেছে,

عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী, হা/১৮৬৭, সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৮৯।]

বিদআত ও মনগড়া আমল যতই ভালো হোক না কেন, তা বরবাদ হয়ে যাবে এবং পরকালে কোন কাজে আসবে না। আর বান্দা এর জন্য কোন ফলাফলও পাবে না। এমনকি তাকে হাউজে কাওসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে।

عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : ‏ اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ ‏‏ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ‏ . ‏ قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : ‏ اِنَّهُمْ مِنِّيْ‏ . ‏ فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ

সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে, আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি চিনতে পারব (উম্মত হিসেবে) আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও-দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছে। [সহীহ বুখারী, হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৫৮৮।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন