HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের বর্ণনা

লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
কবরের বর্ণনা

মূলঃ

মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী

ভাষান্তরঃ

আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ

প্রকাশনায়ঃ

মাকতাবা বইতুসসালাম

রিয়াদ

অনুবাদকের আরয
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ তা’লার জন্য, যিনি এ পৃথিবীতে মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। আর অসংখ্য দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সে নাবীর প্রতি, যিনি দীর্ঘ ২৩ বছর পর্যন্ত তাঁর উম্মতকে ঐ পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার সমস্ত পন্থা সমূহ অত্যান্ত পরিস্কার ভাবে বর্ণনা করে, এ পৃথিবীথেকে চির বিদায় নিয়েছেন।

ইহকাল ত্যাগের পর পরকালের প্রথম স্তর হল কবর, কবরে ছোট তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাতার জন্য পরকালের অনন্ত জীবন আরাম দায়ক হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে, পক্ষান্তরে এ প্রশ্নসমূহের উত্তর দিতে অপারগ ব্যক্তির জন্য রয়েছে, পরকালের অনন্ত জীবন বর্ণনাতীথ দুঃখ্যময় হওয়ার পূর্বাভাষ। উর্দুভাষী সুলেখক জনাব ইকবাল কীলানী সাহেব “কবর কা বায়ান” নামক গ্রন্থে অত্যন্ত সুন্দর করে তুলে ধরেছেন পরকালের প্রথম স্তর কবরের পরিণতির কথা। যা জানা প্রত্যেক পরকাল বিশ্বাসীর জন্য প্রয়োজন। পার্থিব চাকচিক্যতার মোহে মোসলমান আজ কবরের কথা ভুলতে বসেছে প্রায়। লেখক এ বইটির বাংলা অনুবাদের দায়িত্ব আমি নগন্যের উপর অর্পন করলে, আমি আমার কাঁচা হাতে তার অনুবাদের কাজ শুরু করি এ আশায়, যে এ গ্রন্থ পাঠে বাংলা ভাষী মোসলমান কবর সম্পর্কে অবগত হয়ে পরকালকে স্মরণ করবে এবং তার পাথেয় সংগ্রহে আগ্রহী হবে। আর এ উসীলায় মহান আল্লাহ এ গোনাগারের প্রতি সদয় হয়ে তাকে ক্ষমা করবে।

শেষে সহৃদয় পাঠক বর্গের নিকট এ আবেদন থাকল যে এ গ্রন্থ পাঠান্তে কোন ভুল ভ্রান্তি তাদের দৃষ্টি গোচর হলে, আর তা আমাকে অবগত করালে পরবর্তী সংস্করনে তা সংশোধনের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ফকীর ইলা আফবি রাব্বিহি

আবদুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ

রিয়াদ, সউদী আরাব।

পি, ও, বক্স -৭৮৯৭ (৮২০)

রিয়াদ ১১১৫৯।

কে, এস, এ,

মোবাইল- ০৫০৪১৭৮৬৪৪

প্রশংসনীয় পদক্ষেপ
( الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على عبده ورسوله محمد سيد المرسلین وعلى آله وصحبه ومن اهتدى بهديه الى يوم الدين، أما بعد )

যখন ইসলামের দাওয়াত শুরু হয়, তখন এ দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাসীদের সামনে শুধু একটি রাস্তাই খোলা ছিল যে, এ পথের আহবায়ক মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে যে দিক নির্দেশনা আসে, তা গ্রহণ করা। আর যা থেকে তিনি বাধা দেন, তা থেকে বিরত থাকা। এ দাওয়াত যখন সামনে অগ্রসর হতে থাকল তখন এ মূল নীতিটি বারংবার বিভিন্ন ভাবে লোকদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এরশাদ হয়েছে–

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ لَا تُبۡطِلُوۡۤا اَعۡمَالَکُمۡ ﴿۳۳﴾

অর্থঃ “হে ঈমানদ্বারগণ তোমরা আল্লাহ্‌র অনুসরণ কর এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ কর। তোমরা তোমাদের আমল সমূহকে বিনষ্ট কর না।” (সূরা মোহাম্মদ - ৩৩)

যতক্ষণ পর্যন্ত উম্মত এ মূল নীতির উপর অটল ছিল, ততক্ষণ কল্যাণ ও মুক্তি তাদের পদ লেহান করেছে। কিন্ত যখন উম্মতের মধ্যে সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তখন দার্শনিকদের বিভিন্ন দল তৈরী হয়েছে, যারা আক্বীদা, বিধি-বিধান, মূল নীতি ও শাখা নীতিকে তাদের নিজস্ব দর্শনের আলোকে মেপে, উম্মতের মাঝে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে। ফলে এর রেজাল্ট এদাড়াল যে উম্মত পশ্চাদ মুখী হতে লাগল। ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) এর অত্যন্ত উপযুক্ত সমাধান পেশ করেছেন। এবলে যে,

( لن يصلح آخر هذه الأمة إلا بما صلح اولها )

পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে মতালম্বনে বিশুদ্ধ হয়েছিল, তা ব্যতিরেকে পরবর্তীগণ কখনো বিশুদ্ধ হতে পারে না। অর্থাৎ নিরংকুশ কিতাব ও সুন্নাতের অনুসরণ। দুঃখ্য জনক হল এই যে, উম্মতকে দর্শনের ঐ বিষ বাষ্প আজও গ্রাস করে রেখেছে, আর তারা এর অনুসরণে পশ্চাদ মুখী হচ্ছে। এরও সামাধান ঐ কথাই যা ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলে গেছেন।

প্রশংসনীয় পদক্ষেপ
আনন্দের বিষয় হল এই যে, কিং সউদ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইকবাল কীলানী একজন উচুমানের ইসলামী চিন্তাবিদ। শুরু থেকেই তিনি দ্বীনি সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে, তার ছায়া তলে কাজ করেছেন। এর ফলে তার মধ্যে এ চিন্তা জেগেছে যে, উম্মতের সংশোধনের মূল কাজ এই যে, তাদেরকে নিরংকুশ কিতাব ও সুন্নাতের শিক্ষার সাথে জড়ানো, যাতে করে তারা বিভিন্ন মুখী দর্শন ও চিন্তা-চেতনায় জড়িয়ে না পড়ে। তাই তিনি এ কাজে আন্‌জম দিতে গিয়ে ঐ পদ্ধতিই গ্রহণ করেছেন।

আর সাধারণ মানুষের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় বিষয় সমূহের সাথে সম্পৃক্ত, মাসলা মাসায়েল এক মাত্র কিতাব ও সুন্নাত থেকে সংগ্রহ ও সাজাতে শুরু করেছেন। তাই দেখতে দেখতেই তিনি বেশ কিছু কিতাব প্রস্তুত করেছেন। যা যুবক ও হেদায়েত কামীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি কোর্স। লিখক তাফহিমুস্‌সুন্নায় মাসলা মাসায়েল ও বিধি-দিধানের পর্যালোচনা ও তার সমাধান কল্পে যে পদ্ধতি অবলম্ভন করেছেন, নিঃস্বন্দেহে এটি একক পদ্ধতি, যাতে কোন মতভেদের গুন্‌জায়েস নেই এবং এটা বিলকুল নির্ভুল পদ্ধতি। হয়ত বা কোন কোন মাসলা মাসায়েলের বিশ্লেষনে বিভিন্ন বর্ণনার মধ্য থেকে, তার দৃষ্টি ভঙ্গি শুধু একটি বর্ণনার উপরই সীমাবদ্ধ ছিল। এমনি ভাবে তিনি যে রেজাল্ট গ্রহণ করেছেন তাতেও মতভেদ করা যেতে পারে। কিন্ত তার পদ্ধতির নির্ভুলতা এবং সংসয় মুক্ত তাতে কোন মতভেদ ও সন্দেহ নেই।

তাই তার কিতাব সমূহ থেকে মোটামুটি পূর্ণ আত্মতৃপ্তী, নিয়ে উপকৃত হওয়া যেতে পারে এবং এর উপর পরিপূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল ও হওয়া যেতে পারে। আল্লাহর মেহেরবাণীতে মাওলানা কীলানীর লিখনীসমূহ থেকে যুবকদের একটি দল হেদায়েতের সন্ধান পেয়েছে, আর তারা সুন্নাতে রাসূলের বর্ণনাময় এ কিতাব সমূহ পেয়ে বর্ণনাতীত আত্মতৃপ্তী এবং আনন্দ লাভ করেছে। আল্লাহ্ তাদের এ আনন্দকে কিয়ামতের দিনও কায়েম ও স্থায়ী রাখে, আর লিখক ও উপকৃতদেরকে উত্তম প্রতিদান দিক।

সফীউররহমান মোবারক পুরী

২০শে সফর ১৪২১ হিঃ

হে আমার ভায়েরা এ পরিণতি (কবরে যাওয়ার) জন্য প্রস্তুতি নেও
হে সবুজ, শ্যামল, স্বতেজ, পৃথিবীতে জীবন যাপন কারীরা!

হে পৃথিবীর স্বাদে ও আনন্দে উন্মাদ ব্যক্তিবর্গ।

হে রঙিন ও মনপুত পৃথিবীর মরিচিকার প্রতি আকর্ষিত ব্যক্তি বর্গ।

হে সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর্যে মিশে যাওয়া ব্যক্তি বর্গ।

হে চিরস্থায়ী ঠিকানাকে ভুলে গিয়ে অস্থায়ী ঠিকানার অন্বেশন কারীরা!

* ঐ দুঃখ্য ভরাক্রান্ত পথ অন্দকার রাতের ন্যায় হবে।

সেখানে না থাকবে সূর্যের কিরণ না চাঁদের আলো, না থাকবে কোন তারকা রাজীর আলো, না কোন ইলিকট্রিক বাল্পের আলো, না কোন সাধারণ চেরাগের আলো, না চোখে পরবে কোন জোনাকী পোকার ঝাক।

* ঐ দুঃখ্য ভরাক্রান্ত পথে একক কোন মরুচারীর ন্যায় হবে।

সেখানে না থাকবে পিতা-মাতা, না স্ত্রী-সন্তান, না কোন সহানুভূতিশীল, না কোন সান্তনা দাতা, না কোন পীর-মোরশেদ, না থাকবে অবস্থা সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাস কারী, না কোন সমস্যা দূর কারী, না থাকবে কোন সংরক্ষন কারী, না কোন দেহ রক্ষী, সেখানে না থাকবে কোন দল, না কোন দল নেতা, না থাকবে কোন সভাপতী না কোন মন্ত্রীত্বের বড়াই। না থাকবে সিনেট ও এসেম্বলীর কোন ঠাট বাট, না আদালতের কোন কঠোরতার হুমকী, না থাকবে পুলিশী শাসন, না কোন প্রতিরক্ষা বাহিনীর রেংকের জাঁক জমক, না থাকবে সরকারী উচ্চপদস্ত কোন কর্মকর্তা, না থাকবে জমিদারিত্বের কোন অহংকার, না থাকবে কোন অপহরণ কারী চক্র, না থাকবে কোন ভারাটিয়া হত্যাকারী দল, না থাকবে সুপারীশ করার মত কোন চাচা-মামু, না থাকবে ঘোষ হিসেবে পেশ করার জন্য অঢেল সম্পদ।

* ঐ দুঃখ্য ভরাক্রান্ত পথ কোন বিষাক্ত প্রাণীর আতঙ্কের ন্যয় আতঙ্ক ময় হবে।

মাটির ঘর, মাটির বিছানা, আলো-বাতাশ শুন্য, পোকামাকর, বিষাক্ত সাপ বিচ্ছু, সর্বোপরী অন্ধ মূর্ক ফেরেশতা এসে দাড়াবে মাথার উপর.......! না থাকবে ভাগার সুযোগ না হবে সান্তি।

হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমানদারগণ! সু সংবাদ দাতা ও সর্তক কারী রূপে প্রেরিত রাসূল মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বাণীসমূহ মনোযোগ সহকারে শোন!

( مارأيت منظر قط إلا القبر انقلع منه )

অর্থঃ “আমি কবরের চেয়ে অধিক ভিতিকর স্থান আর কোথাও দেখি নাই।” (তিরমিযী)

হে হুশিয়ার ব্যক্তি বর্গ! হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ
হে একক, অন্ধকার, ভয়ানক, দুঃখ ভরাক্রান্ত পথের যাত্রিরা শোন! খালী হাতে, সাথী বিহীন দুঃখ্য ভরাক্রান্ত যাত্রা পথে, ঈমান, ও নেক আমল..... নামায, যাকাত, রোজা, হজ-ওমরা, কোর‘আন তেলাওয়াত, দূয়া-দরূদ, দান-খয়রাত, নফল ইবাদত, পিতা-মাতার প্রতি সদ ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, এতীম-বিধবাদের প্রতি সদ আচরণ, ন্যায় পরায়নতা, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদি পাথেয় হবে। যা আতঙ্ক দূর করবে, আলোদিবে, একাকীত্ব দূর করবে, যান ও জীবনের জন্য আরামের পাথেয় যোগাবে।

অতএব হে দুঃখ ভরাক্রান্ত পথের পথিক....! রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশী অনুগ্রহ পরায়ন, সবচেয়ে বেশী মায়াবী, সবচেয়ে বেশী কল্যাণ কামী এবং সবচেয়ে বেশী সহানুভুতিশীল, দয়াল নবীর উপদেশ একটু মনোযোগ সহ শোন....! একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দুঃখ্যভরাক্রান্ত পথের (কবরের) পার্শ্বে বসে অশ্রুসজল হয়েগেলেন এমন কি তাঁর চোখের পানিতে কবরের মাটি ভিজে গেল, আর তিনি তাঁর সাহাবাগণকে সম্ভোধন করে বললেনঃ

( زبان خوانی لمثل هذا فأعدوا )

অর্থঃ “হে আমার ভায়েরা এমন পরিণতী বরণে প্রস্তুতি নেও”। (ইবনে মাযাহ)

অতএব আমাদের মাঝে কে আছে যে রহমতের নাবীর কথাগুলি মানবে, এবং ঐ দুঃখ ভরাক্রান্ত পথে সফরের প্রস্তুতি নিবে।

( وصلی انه على نبينا محمد و آله و صحبه اجمعين )

পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি

সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আলামীনের জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বিশস্ত রাসূলের প্রতি আর শেষ পরিণতি মোত্তাকীনদের জন্য।

এ মনপুত আরামদায়ক জীবনের শেষে আগত সবচেয়ে কঠিন, বেদনাদায়ক, স্তর হল মৃত্যু। মৃত্যু ঐ তিক্ত স্বাদ যা প্রত্যেক প্রাণীকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡت

অর্থঃ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা আম্বীয়া-৩৫)

অন্যত্র আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

کُلُّ شَیۡءٍ ہَالِکٌ اِلَّا وَجۡہَہ

অর্থঃ “আল্লাহর চেহারা (সত্বা) ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল।” (সূরা কাসাস- ৮৮)

মৃত্যুর পর কোন মানুষ ফিরে আসে না, তাই মৃত্যুর ভয়াবহতা হুবহু বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কিন্ত কোর‘আন ও হাদীসে মৃত্যুর কঠিনতা ও ভয়াবহতার ব্যপারে, যা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে অনুমান হয় যে পৃথিবীর সর্বপ্রকার দুঃখ্য ব্যথা, চিন্তা, কষ্ট, বিপদ যদি একত্রিত হয়, তাহলে মৃত্যুর কষ্ট কয়েক গুণ বেশী হবে। সূরা ক্বাফে আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

وَ جَآءَتۡ سَکۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَق

অর্থঃ “মৃত্যুযন্ত্রনা সত্যই আসবে।” (সূরা ক্বাফ-১৯)

আয়াতে বণিত ( حق ) থেকে উদ্দেশ্যঃ আলমে বারযাখের প্রকৃত অবস্থা। ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাওয়া যাবে, আযাব বা সোয়াব সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যাবে। মৃত্যুর কঠোরতা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা ক্বিয়ামায় বর্ণিত হয়েছেঃ

کَلَّاۤ اِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِیَ ﴿ۙ ۲۶﴾ وَ قِیۡلَ مَنۡ ٜ رَاقٍ ﴿ۙ ۲۷﴾ وَّ ظَنَّ اَنَّہُ الۡفِرَاقُ ﴿ۙ ۲۸﴾ وَ الۡتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ ﴿ۙ ۲۹﴾

অর্থঃ কিছুতেই (তোমাদের ধারনা ঠিক) নয়, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হবে, এবং বলা হবেঃ কে তাকে রক্ষা করবে? তখন তার প্রত্যয় হবে যে, এটা তাদের বিদায় ক্ষণ! এবং পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাবে।” (সূরা ক্বিয়ামাহ-২৬-২৯)

পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাওয়ার অর্থ হল মৃত্যুর সময় মৃত্যু যন্ত্রনা পর্যায় ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে মানুষের প্রাণ বের হয়ে যায়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ মৃত্যু যন্ত্রনা অত্যন্ত কঠিন। (আহমদ)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ স্বাদ বিনষ্টকারীকে (মৃত্যু) বেশি বেশি স্মরণ কর। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে অসুস্থতায় পতিত হয়ে মৃত্যু বরন করেন সেখানে তাঁর অবস্থা এ ছিল যে পানির পাত্র সাথে রাখতেন এবং সেখানে বারংবার হাত ভিজিয়ে চেহারায় মুছতেন, স্বীয় চাদর দিয়ে কখোন মুখ ঢাকতেন, আবার কখোন তা মুখ থেকে সড়িয়ে নিতেন, যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় বেহুশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতেন তখন তিনি তার চেহারা থেকে ঘাম মুছতেন আর বলতেন?

سبحان انه ان للموت لسكر انت سبحان الله !

অর্থঃ “মৃত্যু যন্ত্রনা বড় কঠিন।” (বোখারী)

আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) মৃত্যু যন্ত্রনা দেখার পর কারো মৃত্যু যন্ত্রনা আমার নিকট আর কঠিন বলে মনে হতনা।” (বোখারী)

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) যবানে অস্পষ্টতা এসে গিয়েছিল। (ইবনে মাযাহ)

(মিশর বিজয়ী সাহাবী) আমর ইবনুল আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বার বার বলতেন ঐ সমস্ত লোকদেরকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে মৃত্যুর সময় যাদের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকে অথচ তারা কেন যেন মৃত্যুর হাকীকত বর্ণনা করেনা। আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন মৃত্যু সয্যায় সায়িত ছিলেন তখন তাকে আবদুল্লা বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তার ঐ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) শীতল নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলতে লাগলেনঃ মৃত্যুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করার মত নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি যে আমার মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর উপর আকাশ ভেঙ্গে পরেছে আর আমি এ উভয়ের মাধ্যমে পেশিত হচ্ছি এবং আমার কাঁধে মনে হয় কোন পাহাড় রাখা হয়েছে, পেটে খেজুরের কাটা ভরে দেয়া হয়েছে, আর মনে হচ্ছে যে আমার শ্বাস সূয়ের ছিদ্র দিয়ে বের হচ্ছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মোমেন ও কাফেরের মৃত্যুর আলাদা ধরনের কথা বর্ণনা করেছেন। যার সার সংক্ষেপ এই যে যখন মোমেনের মৃত্যুর সময় হয়, তখন সূর্যের ন্যায় আলোক ময় চেহারা সম্পন্ন ফেরেশতা জান্নাত থেকে সুগন্ধময় রেশমী কাফন সাথে নিয়ে এসে মোমেন ব্যক্তিকে সালাম করে, মালাকুল মাওত তার রুহ কবজ করার পূর্বে তাকে সুসংবাদ দেয় যে হে পবিত্র আত্মা! তুমি খুশী হও তোমার জন্য রয়েছে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের নে’মত সমূহ। এ সু সংবাদ সোনে মোমেন ব্যক্তির অন্তর আল্লাহর নিকট যাওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে যায়।

আর মোমেন ব্যক্তির আত্মা তার শরীর থেকে এমন ভাবে বের হয় যেন কোন পানির বোতলের মুখ খুলে দিলে পানি বের হয়ে যায়। ফেরেশতা রুহ কবজ করার পর তা সুগন্ধময় সাদা রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে আকাশের দিকে নিয়ে যায়, তখন মোমেন ব্যক্তির রুহ থেকে এত বেশী সুগন্ধ বের হয় যে, আকাশের ফেরেশতাগণ তা অনুভব করে একে অপরকে বলতে থাকে যে কোন মোমেন ব্যক্তির রুহ উপরে আসছে।” ফেরেশতাগণ আকাশের দরজা নখ করা মাত্র প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাস করে যে এ কোন পবিত্র আত্মা? উত্তরে তাকে বহন কারী ফেরেশতাগণ বলে যে সে অমুকের ছেলে অমুক, তখন আকাশের ফেরেশতাগণ তার জন্য দরজা খুলে দেয় এবং তাকে সু স্বাগতম জানায়।

ঐ পবিত্র আত্মাকে আল্লাহর রহমত ও নে’মতের সুসংবাদ দেয়। ফেরেশতাগণ তাকে দ্বিতীয় আকাশে নিয়ে যায় প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ তাকে সম্মান সরুপ দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত তাকে বিদায় জানাতে তার সাথে যায়। দ্বিতীয় আকাশে মোমেনের আত্মাকে প্রথম আকাশের ন্যায় সু স্বাগতম জানানো হয়, অতঃপর তৃতীয় চতুর্থ, এমন কি সপ্তম আকাশ পর্যন্ত রুহ পৌঁছে যায়। ওখানে পৌঁছার পর আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে নির্দেশ আশে যে আমার এবান্দার নাম ইল্লিয়ীনে (উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের তালিকায়) লিখ। অতঃপর প্রশ্ন উত্তরের জন্য তার রুহ পুনরায় শরীরে ফেরত পাঠানো হয়।

কবরে আগন্তক ফেরেশতা গণকে মোনকার ও নাকীর বলে, তাদের, চেহারা কালো চোখ মোটা মোটা উজ্জল, দাত গভীর সিংয়ের ন্যায় বড় বড় বিজলির ন্যায় চমক দার, ঐ দাত দিয়ে মাটি ঘসতে ঘসতে এসে কর্কশ স্বরে বলবেঃ ( من ربك ) তোমার প্রভু কে? ( من نبيك ) তোমার নবী কে? ( مادينك ) তোমার দ্বীন কি ছিল? কবরের অন্ধকার, একাকীত্ব, মোনকার নাকীরের ভয়ানক চেহারা দেখা সত্বে ও মোমেন ব্যক্তি কোন প্রকারের ভয় অনুভব করবে না। বরং ধিরস্থিরতার সাথে মোন কার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দিবে। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় কোন কোন ঈমানদারের নিকট সূর্য অস্তমিত হওয়ার মত মনে হবে।

তাই মোমেন ব্যক্তি ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তরে বলবে একটু দাড়াও আমাকে আগে নামায পড়তে দাও, এর পর আমি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিব। অতঃপর যখন সে অনুভব করবে যে, এটা নামায আদায়ের স্থান নয়, তখন সে মোনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুরু করবে। প্রশ্ন উত্তরের পর জাহান্নামের দিকে একটি ছিদ্র করে মোমেন ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুণ দেখানো হবে এবং বলা হবে যে ঐটা জাহান্নাম, যেখান থেকে আল্লাহ স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাকে রক্ষা করেছে। অতঃপর জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্র বা দরজা খুলে দেয়া হবে, যার ফলে মোমেন ব্যক্তি জান্নাতের নে’মত সমূহ দেখে আনন্দ অনুভব করবে।

ঐ সময়ে মোমেনকে জান্নাতে তার বাসস্থান ও দেখানো হবে, তার কবর সত্তর হাত বা যতদূর দৃষ্টি যাবে তত দূর পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে এবং তার কবরকে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আলোর ন্যায় আলোক ময় করে দেয়া হবে জান্নাতের সুগন্ধিময় পোশাক তাকে পরানো হবে। জান্নাতের সুগন্ধিময় আরামদায়ক নরম বিছানা তার জন্য প্রস্তুত করে দেয়া হবে। কবরে মোমেন ব্যক্তির সামনে খুব সুন্দর চেহারা সম্পণ্য সুগন্ধিময় পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি আসবে, মোমেন ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাস করবে যে তুমি কে? সে বলবে আমি তোমার নেক আমল, তোমাকে পরকালীন জীবনে আরাম ও সুখ-শান্তির সু সুংবাদ দিতে এসেছি।

তখন মোমেন ব্যক্তি দূয়া করবে যে হে আমার প্রভূ! তুমি তাড়াতাড়ি কিয়ামত সংঘটিত কর। যাতে করে আমি আমার পরিবার পরিজনের সাথে দ্রুত সাক্ষাৎ করতে পারি। কোন কোন হাদীসে এও বর্ণিত হয়েছে যে, মোমেন ব্যক্তি বলবে যে আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট ফেরৎ যেতে চাই, যাতে করে তাদেরকে আমার শুভ পরিণতি সম্পর্কে আবগত করাতে পারি। উত্তরে ফেরেশতাগণ বলবে যে তুমি এখন বরের ন্যায় আরামে শুয়ে যাও কেননা ফেরৎ যাওয়া সম্ভব নয়। তখন মোমেন ব্যক্তি শুয়ে যাবে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সে এভাবে ঘুমাতে থাকবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে উঠাবেন এবং তখন থেকে তার পরকালীন সফরের পরবর্তী স্তর শুরু হবে।

যার বিস্তারিত বর্ণনা ইনশআল্লাহ সামনে আসবে। যখন কাফেরের মৃত্যুর সময় আসে তখন তার যান কবজ করার জন্য অত্যন্ত কুৎসিত চেহারা সম্পন্য ফেরেশতা দূরগন্ধ ময় কাফন সাথে নিয়ে এসে তাকে হে খবীছ রুহ! হে অসন্তুষ্ট রুহ! ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে সম্বোদন করে তাকে আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নামের সু সংবাদ দেয়। শোনে কাফেরের রুহ শরীর থেকে বের হতে চায়না। তখন ফেরেশতাগণ তার রুহ এমন ভাবে যোর করে বের করে যেমন অকেজু লোহা কোন খুঁটি থেকে যোর করে বের করা হয়। কোর‘আন মাজীদে তা বের করার পদ্ধতির কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,

وَ النّٰزِعٰتِ غَرۡقًا ۙ ﴿۱﴾

অর্থঃ শপথ তাদের (ফেরেশতার) যারা নির্মম ভাবে উৎপাটন করে। (সূরা নাযিয়াত-১)

অর্থাৎ তাদের রুহ বের হতে চায়না কিন্তু ফেরেশতাগণ তা যোর করে বের করে নেয়।

অন্যত্র আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেনঃ

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡہُوۡنِ بِمَا کُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ کُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِہٖ تَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۹۳﴾

অর্থঃ আর যদি তুমি দেখতে পেতে ঐ সময়ের অবস্থা যখন যালিমরা সম্মুখীন হয় মৃত্যু সংকটে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবেঃ নিজেদের প্রানগুলো বের কর, আজ তোমাদেরকে সে সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে লাঞ্ছনাময় শাস্তি দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা দোষারোপ করে অকারণে প্রলাপ বকছিলে এবং তার আয়াত সমূহ কবুল করতে অহংকার করছিলে। (সূরা আনআম -১৯৩)

এ সময়ে কাফেরের রুহ থেকে এত দূরগন্ধ আসে, যেমন কোন পচা গলা মৃত দেহ থেকে বর্ণনাতীথ দূর গন্ধ আসে। ফেরেশতা যখন তাকে আকাশের দিকে নিয়ে যেতে থাকে, তখন আকাশের ফেরেশতাগণ ওখানে থেকেই অনুভব করেন এবং বলেন যে কোন খবীছ রুহ আকাশের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে। যখন মালাকুল মাওত কাফেরের দূর গন্ধময় রুহ নিয়ে প্রথম আকাশে পৌঁছে তখন দরজায় টোকাদেয় মাত্র জিজ্ঞাস করা হয় যে কে সে? উত্তরে মালাকুল মাওত বলেঃ সে ওমকের ছেলে ওমক।

তখন আকাশের ফেরেশতাগণ বলেন এই খবীছ শরীরের খবীছ আত্মার জন্য কোন সু-স্বাগতম নেই। তার জন্য আকাশের দরজা সমূহ খোলা হবেনা। তাকে অপদস্ত ভাবে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাও। তখন ফেরেশতা তাকে প্রথম আকাশ থেকেই মাটিতে ফেরত পাঠায়। এদিকে আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে তার নাম সিজ্জিনে (পাপিষ্ঠদের লিষ্ট ভুক্ত কর)। অতঃপর তার রুহকে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন- উত্তরের জন্য তার শরীরে পাঠানো হয়। কবরে মোনকার নাকীর যখন কাফেরের নিকট আসে তখন সে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়।

মোনকার নাকীর তাকে জিজ্ঞেস করে যেঃ ( من ربك؟ ) তোমার প্রভূ কে? ( من نبيك؟ ) তোমার নাবী কে? ( مادينك؟ ) তোমার দ্বীন কি ছিল? কাফের উত্তরে বলবেঃ ( هاه هاه لاادزى؟ ) আফসোস! আমি কিছুই জানিনা। আর যদি মৃত ব্যক্তি মোনাফেক হয় তাহলে বলবেঃ মানুষকে আমি যা কিছু বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম।

কাফের বা মোনাফেকের এই উত্তরের পর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে, জান্নাতের নে’মত সমূহ তাদেরকে এক পলক দেখানো হয় এবং বলা হয় যে, এ হল ঐ জান্নাত যেখান থেকে আল্লাহ তোমাকে তোমার কুফরী বা মোনাফেকীর কারণে বঞ্চিত করেছে। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয়, যেখান থেকে সে জাহান্নামের শাস্তি পেতে থাকবে, সাথে সাথে জাহান্নামে তার অবস্থান স্থল ও তাকে দেখানো হবে এর পর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম আসবে যে তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও।

অতঃপর অন্ধ এবং বোবা ফেরেশতা তার উপর তাকে নেস্ত করা হবে, যে তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে প্রহাড় করতে থাকবে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ ঐ হাতুড়ী এত ভারী হবে যে, এর দ্বারা যদি কোন পাহাড়ে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। এর সাথে আরো থাকবে বিভিন্ন সাপ বিচ্ছু যা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে ছোবল মারতে থাকবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ কবরের সাপ-বিচ্ছু এত বিষাক্ত হবে যে যদি তা যমিনে এক বার নিঃস্বাস ত্যাগ করে, তাহলে যমিনে আর কোন দিন ঘাস উৎপন্ন হবে না।

এসমস্ত আযাবের সাথে কাফেরকে আরো একটি অতিরিক্ত আযাব দেয়া হবে আর তাহল, কবরের দুই পার্শ্বের মাটি তাকে বারবার চাপতে থাকবে। যার ফলে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বে চলে যাবে। এ সমস্ত আযাব কিয়ামত পর্যন্ত সে ভোগ করতে থাকবে। কবরে কাফেরের পার্শ্বে এক কুৎসিত চেহারা সম্পন্য, দূর্গন্ধময়, ভীতিকর এক ব্যক্তি আসবে, তাকে দেখে কাফের বলবে? কে তুমি? সে বলবে আমি তোমার আমল তোমাকে তোমার খারাপ পরিনতির কথা জানাতে এসেছি। কাফের ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলবেঃ হে আমার প্রভূ! কিয়ামত সংঘটিত করিওনা।

এ কাফের মৃত্যুর পর থেকেই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত এ সমস্ত শাস্তি সমূহে নিপতিত থাকবে। আল্লাহ তা’লা তার দয়া ও অনুগ্রহে সমস্ত মোসলমানদেরকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমীন! প্রশ্ন-উত্তরের পর মোমেন ব্যক্তির রুহ ইল্লিয়িনে রাখা হয়। আর কাফের ও মোনাফেকদের রুহ রাখা হয় সিজ্জিনে। উল্লেখ্যঃ ইল্লিয়িন বয়ের নাম ও যেখানে ঈমানদার গণের নাম লিখিত হয় এবং তা স্থানেরও নাম, যেখানে ঈমানদারগনের রূহ কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। অনুরূপ ভাবে সিজ্জিন বয়েরও নাম যেখানে কাফের ও মোশরেকদের নাম লিখা হয় এবং স্থানেরও নাম যেখানে কাফের ও মোশরেকদের রুহ সমূহ কেয়ামত পর্যন্ত বন্দী হয়ে থাকবে। এব্যাপারে আল্লাই ভাল জানেন!

এহল কঠিন তম স্থান কবর যে ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কবরের চেয়ে কঠিনতম স্থান আর কোথাও দেখিনাই। (তিরমিযী)

ঐ কবরের ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা তিনি তার সাহাবা গনকে শিক্ষা দিতেন, যে তোমরা তাথেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। (আহমদ)

আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কবরের ফেতনাথেকে আশ্রয় চাওয়ার দূয়া এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যে ভাবে কোর‘আনের আয়াত শিক্ষা দিতেন। (নাসায়ী)

একদা খুৎবা দিতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাগণকে সতর্ক করলেন যে “তোমরা কবরে দাজ্জালের ফেতনার মত পরীক্ষায় নিপতিত হবে।” একথা সোনে সাহাবাগণ এত ভীত সন্ত্রস্ত হলেন যে তারা কাঁদতে শুরু করলেন। (নাসায়ী)

আমীরুল মোমেনীন ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের কথা স্মরণ হলে এত কাঁদতেন যে তার দাড়ী ভিজে যেত। তিনি বলতেনঃ কবর আখেরাতের মন্জিল সমূহের সর্বপ্রথম মন্জিল। যে এখান থেকে মুক্তি পাবে তার জন্য পরবর্তী মনজিল সমূহ সহজ হবে। আর যে এখান থেকে মুক্তি না পাবে তার জন্য পরবর্তী মন্জিল সমূহ আরো কঠিন হবে। (তিরমিযী)

ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবর ও আখেরাতের কথা স্মরণ করে এত কাঁদতেন যে তার চেহারায় দুইটি কালো দাগ পরে গিয়েছিল। (বাইহাকী)

আবু জার গেফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যু ও বারযাখের জিন্দিগীর ব্যপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) এক খুৎবা সুনে আফসোস করতে লাগলেন যে হায়! যদি আমি কোন বৃক্ষ হতাম তাহলে তা আমার জন্য কতইনা ভাল ছিল, যে এক সময় মালিক আমাকে কেটে ফেলত (আর আমার জীবনের সমাপ্তি হত)। (ইবনে মাযাহ)

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) যখন মৃত্যুর সময় হল তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন, লোকেরা জিজ্ঞেস করল যে কি আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছ তাই কাঁদতেছ? উত্তরে তিনি বললেনঃ না বরং দীর্ঘ সফরে সল্প পাথেয়র কারণে কাঁদছি। আমি এমন এক সন্ধায় এসে উপনিত হয়েছি, যার সমনে রয়েছে জান্নাত অথবা জাহান্নাম, কিন্তু আমি জানিনা যে আমার ঠিকানা কোথায়? (কিতাবুয জুহুদ) আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মওত ও কবরের ভয়ে কত ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন তা বুঝা যাবে নিচের কবিতার পুংতি থেকে।

حانی یا الهی لیس بی خیر العمل كيف سوء اعمال

کثیر زاد طاعاتي قليل

হে প্রভূ কি অবস্থা আমার হবে, সৎ আমল আমার নেই, অসৎ আমল অসংখ্য, পাথেয় সল্প।

কবরের কঠিন ঘাটিকে আমাদের পূর্ব সূরীরা যতটা ভয় পেত আজ আমরা তা থেকে ততটা অন্য মনস্ক এবং নির্ভয়ে আছি। পৃথিবীর রং তামশায় আমরা এতটা মত্ত হয়ে গেছি যে ভূলে ও কখনো কবরের কথা স্মরণ হয়না। আমাদের এ অন্য মনস্কতার ব্যপারে কোর‘আন কারীমের এদিক নির্দেশনা যথার্ত বলে প্রমানিত হয়েছে।

اِقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُہُمۡ وَ ہُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ مُّعۡرِضُوۡنَ ۚ ﴿۱﴾

অর্থঃ “মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় অন্যমনস্ক রয়েছে। (সূরা আম্বীয়া-১)

আল্লাহ তাঁর স্বীয় দয়ায় আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করূন এবং মৃত্যুর পূর্বে আমাদেরকে কবরের কঠিন ঘাটি পার হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার তাওফীক দিন। আমীন!

কবরে তিনটি প্রশ্ন
কবরে মোনকার নাকীর তিনটি প্রশ্ন করবেঃ ( من ربك؟ ) তোমার প্রভূ কে? ( من نبيك؟ ) তোমার নাবী কে? ( مادينك؟ ) তোমার দ্বীন কি ছিল? বাহ্যিক ভাবে তিনটি প্রশ্নের উত্তরই সংক্ষিপ্ত এবং সহজ। যে আমার প্রভূ আল্লাহ, আমার নাবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দ্বীন ইসলাম। প্রকৃত ঘটনা হল এই যে তিনটি প্রশ্নই এত ব্যপক যে মানুষের সারা জীবনের আমলের সার সংক্ষেপ এ প্রশ্ন সমূহের মধ্যে রয়েছে। কবরে এ প্রশ্ন সমূহের উত্তর শুধু ঐ ব্যক্তিই দিতে পারবে যে তার সারা জীবন এ প্রশ্ন গুলির উত্তরের আলোকে ঘড়ে তুলেছে। জ্ঞান ও পদ মর্যাদার বড়াই, চাতুরতা সেদিন মানুষের কোন কাজে আসবে না।

১৯৩০-৪০ দশকের কথা, আমার সম্মানিত পিতা, (লেখকের) হাফেজ মোহাম্মদ ইদ্রীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) জামেয়া মোহাম্মাদীয়া গোযরা নোয়ালায় শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করতেন যে, কিলয়া নোয়ালা গ্রাম থেকে, গোজরা নোয়ালা শহরে যেতে হলে আমাদেরকে গোন্দা নোয়ালা আডাহ হয়ে যেতে হত, সেখানে এক ব্যক্তি ঘোড়ার ঘাস বিক্রি করত। যখন ই আমর ঐ দিক দিয়ে যেতাম তখনই ঐ ব্যক্তির কণ্ঠে ধারাবাহিক ভাবে সোনতে পেতাম যে “দুই পয়সা আটি, দুই পয়সা আটি”। তার সারা জীবন এভাবেই ঘাষ বিক্রি করতে করতে পার হয়েছে। কোন দিন সে না নামায পড়েছে না কোর’আন তেলওয়াত করেছে না আল্লাহ ও তার রাসূলের কথা স্মরণ করেছে।

যখন সে মৃত্যু শয্যায় সায়িত হল, তখন তার আত্মীয়-স্বজনরা তার পাশে বসে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে শুরু করল, যাতে তার মুখেও এ কালেমা জারী হয়। কিন্তু আফসোস! মৃত্যুর সময় ও তার মুখ থেকে ঐ কথা গুলিই বের হতে থাকল যা সে তার সারাজীবন বলতে ছিল। “দুই পয়শা আটি, দুই পয়সা আটি”। আর একথা বলতে বলতেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। মূলত মৃত্যুর সময় মানুষের সারা জীবনের আমলের আলোকে তার মৃত্যু হয়ে থাকে। মৃত্যুর সময় লা ইলাহা ইল্লাল্লা শুধু ঐ সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মুখ দিয়েই বের হবে, যে মূলত তার সারাজীবনে নিরন্‌কুশ ভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবী পূরণ করেছে। এ একই অবস্থা হবে কবরে প্রশ্নের উত্তরের বেলায় ও, সেখানে ঐ প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর সেই দিতে পারবে যে তার সারাজীবনকে ঐ প্রশ্নের উত্তর গুলির আলোকে পরিচালনা করেছে। তোমার প্রভূ কে? এর উত্তরে– আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা’বুদ নেই। তা ঐ ব্যক্তিই বলতে পারবে যে প্রকৃত অর্থেই আল্লাহকে তার প্রভূ হিসেবে মেনেছে। যে শুধু এক আল্লাহর সাথেই সম্পর্ক রেখেছে।

এক আল্লাহ কেই দাতা ও চাহিদা পুরণ কারী হিসেবে বিশ্বাস করেছে। এক আল্লাহ কেই স্বীয় গাউস এবং সমস্যা দূর কারী হিসেবে বিশ্বাস করেছে। এক আল্লাহ কেই স্বীয় ভাগ্য নির্ধারক ও স্বীয় জীবন ও মরনের মালিক হিসেবে জেনেছে। তারই নামে নযর নেওয়াজ করেছে। তারই নামে মান্নত মেনেছে। তারই নামে নামায আদায় করেছে, রোযা রেখেছে, দান-খয়রাত করেছে। শুধু তারই ভয় অন্তরে রেখেছে। কিন্তু যে আল্লাহর সাথে অন্যকে ও স্বীয় ভাগ্য নির্ধারক, জীবন- মরনের মালিক বলে মনে করেছে। আল্লাহর সাথে অন্য কাওকে দাতা, চাহিদা পূরণ কারী, বলে মেনেছে। অন্য কাওকে স্বীয় গাউস ও সমস্যা দূর কারী হিসেবে মেনেছে। অন্যের নামে নযর নেওয়াজ করেছে। অন্যের নামে মান্নত মেনেছে, আল্লাহর সাথে অন্যের নামে ও নামায পড়েছে, অন্যের নামে দান খয়রাত ও করেছে। এমন ব্যক্তির যবানে মৃত্যুর সময় কি করে লা-ইলাহাইল্লাল্লাহ আসবে? এ একই অবস্থা হবে দ্বিতীয় প্রশ্নের ব্যাপারেও।

যে তোমার নবী কে? সুনে তো মনে হয় যে উত্তর বহুত সহজ ও সংক্ষেপ। যে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। কিন্ত এ সহজ প্রশ্নের উত্তর ও মানুষের সারা জীবনের আমলের সাথে সম্পৃক্ত। যে ব্যক্তি নামায, রোজা, দান খয়রাত, থেকে নিয়ে উঠা-বসা, সোয়া -জাগা, খানা-পিনা, ব্যবসায়ী লেন-দেন, বিয়ে শাদী, জীবন-মরণ, সকল বিষয়ে শুধু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) ত্বরীকা অনুযায়ী চলেছে তাকেই শুধু পথ পদর্শক হিসেবে মেনেছে, তাকেই শুধু নিজের ইমাম মেনেছে, তাকেই শুধু আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাঁকে স্বীয় পিতা- মাতা পরিবার পরিজন সহ অন্যন্য সকলের চেয়ে অধীক মোহাব্বত করেছে, তারই যবানে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আসবে। আর যে পদে পদে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) হাদীসের বিপক্ষ্যে স্বীয় ইমাম গণের কথাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তাঁর দিক নির্দেশনার বিপক্ষ্যে স্বীয় পীর মুরসিদের দিক নির্দেশনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার সুন্নাতের বিপক্ষ্যে স্বীয় ওলামাদের প্রচলণ কৃত বিদআত সমূহকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তাঁর শিক্ষার বিপক্ষ্যে স্বীয় বুযুর্গদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তাঁর আদেশের বিপক্ষ্যে স্বীয় হযরতদের কাশফকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বিপক্ষে অন্যন্য দলীয় বা রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গকে অধিক মোহাব্বত এবং বিশ্বাস করেছে তাদের যবানে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি করে আসবে? তৃতীয় প্রশ্ন দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমার দ্বীন কি ছিল? উল্লেখ্য যে আরবী ভাষায় দ্বীন শব্দটি ব্যাপক অর্থ বোধক, মানুষ যে পদ্ধতি অবলম্ভনে জীবন যাপন করে তাকে তার দ্বীন বলা হয়। অতএব যে তার সারা জীবন ইসলামী ভাব ধারা অনুযায়ী যাপন করেছে, ইসলামী আদব অনুযায়ী জীবন চালিয়েছে, ইসলামী রিতী-নীতিতে জীবন চালিয়েছে, ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলেছে, ইসলামী নিদর্শন সমূহকে সম্মান করেছে, তার মুখদিয়ে সঠিক উত্তর বের হবে।

কিন্তু যে ইহুদী, নাসারা, হিন্দুদের রীতি নীতি, সংস্কৃতি পালন করেছে, তাদের পোশাক তাদের অভ্যাসকে নিজের পোশাক ও অভ্যাসে পরিনত করেছে তাদের আচার আচরণকে নিজের আচার আচরণে পরিনত করেছে, তাদের সংস্কৃতিকে পছন্দ করেছে, তাদের নির্দশন সমূহকে মহাব্বত করেছে, তাদের রাজনৈতিক, দলীয়, সামাজিক, সাহিত্যিক ব্যক্তি বর্গকে মহাব্বত করেছে, তাদের আইন কানুন মেনে চলেছে। তাদের মুখ দিয়ে কি করে বের হবে যে আমার দ্বীন ইসলাম? পরীক্ষা চাই বড় হোক আর ছোট তার স্বভাবই হল এই যে পরীক্ষার্তীর মনের মধ্যে চিন্তা ঢুকিয়ে দেয়া। তাই অধিকাংশ মানুষ পরীক্ষার পূর্বেই চিন্তিত থাকে। যে ব্যক্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যতীত হলে আসে তার কথা তো বাদই, বরং যে ব্যক্তি সারা বছর ব্যাপী প্রস্তুতি নিয়েছে সেও মাঝে মধ্যে এত চিন্তিত হয়ে যায়, যার ফলে ভাল করে মুখস্ত করা উত্তর ও ভুলে যায়। অথচ পৃথিবীর এপরীক্ষায় ফেল করার ভয় ব্যতীত আর কোন ভয় নেই।

গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখুন কবরের অন্ধকার, একাকীত্ব, মানুষ নয় এমন সৃষ্টি, হাতে লোহার হাতুড়ী, জীবনের প্রথম এমন পরিস্থিতীর সম্মুক্ষীন হওয়া, ফেল হলে শাস্তির ভয়, সেখানে না পাওয়া যাবে কোন মুক্তি দাতা না থাকবে পালানোর মত কোন স্থান! অধিকাংশ মানুষের অবস্থা তো এই যে, রাতের বেলায় যদি কোন ব্যক্তি হটাৎ করে দরজায় নক করে তাহলে ভয়ে রক্ত শুকাতে শুরু করে, পুলিশের সাধারণ কোন সীপাহীকে নিজের দিকে আসতে দেখলে শরীর ঘামতে থাকে। বন্ধ ঘরে বসে থাকার মুহূর্তে হটাৎ কারেন্ট চলে গেলে অন্ধকারে কিছুক্ষন বসে থাকতে মানুষ ভয় পায়। সাহাবাগণ এ ভয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেছিল যে হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তির মাথার উপর ফেরেশতা হাতুড়ী নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে সে তো ভয়ে মাটির ভুত হয়ে যাবে কি করে সে উত্তর দিবে? তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’লা ঈমানদার লোকদেরকে কালেমায়ে তাওহীদের বরকতে দুনিয়া এবং আখেরাতে (কবরে) দৃঢ় পদ করবেন। (আহমদ)

আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এভয়ের কথা প্রকাশ করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমিতো একজন দূর্বল মহিলা কবরে আমার কি অবস্থা হবে? তিনি তাকেও একই কথা বললেন যে, আল্লাহ তা’লা ঈমানদার লোকদেরকে কালেমায়ে তাওহীদের বরকতে কবরের প্রশ্ন উত্তরের সময় দৃঢ় পদ রাখবেন। (বায্‌যার)

অন্যান্য সাহাবাগণের প্রশ্নের উত্তরে ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথার ই পুনরাবৃত্তি করলেন যা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

(১) কবরের পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য সর্ব প্রথম ও প্রধান শর্ত হল আক্বীদা ও তাওহীদ বিত্তিক আমল। তাই সমস্ত মোসলমানের উচিত স্বিয় আক্বীদাকে বড় ও ছোট শিরক থেকে মুক্ত রাখা এবং এরই আলোকে অন্যন্য সমস্ত আমল করা।

(2) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) দিক নির্দেশনা থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে আক্বীদা ও তাওহীদ ভিত্তিক আমল হওয়া সত্বে ও কবরের পরীক্ষায় দৃঢ় পদ থাকা শুধু আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমেই সম্ভব। তাই স্বীয় আক্বীদা ও আমল শুদ্ধ করার পর আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ প্রাপ্তির জন্যও দূয়া করতে হবে।

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا ٜ وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ ﴿۲۳﴾

হে আমাদের প্রতি পালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে আমরা ক্ষতি গ্রস্তদের অন্তর ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা আ’রাফ-২৩)

উল্লেখিত দুইটি বিষয়ের আলোকে আমল করলে আশা করা যায় যে আল্লাহ তাঁর এ দূর্বল ও গোনাগার বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় তিনি দানশীল, অনুগ্রহ পরায়ন, ক্ষমতাবান, অত্যন্ত দয়ালু।

চতুর্থ প্রশ্নঃ কবরে উল্লেখিত তিনটি প্রশ্ন ব্যতীত আরো একটি প্রশ্ন করা হবে, এ প্রশ্ন সফল কাম সৌভাগ্যবান এবং ব্যর্থ দূর্ভাগ্য বানদের কেও করা হবে। সফল কামদেরকে ফেরেশতা জিজ্ঞেস করবে যে, এ প্রশ্ন সমূহের উত্তর তুমি কি ভাবে যেনেছ। সে বলবেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তার প্রতি ঈমান এনেছি, এবং তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। (আহমদ, আবু দাউদ)

ব্যর্থ দূভাগ্য বানদেরকে ফেরেশতাগণ প্রশ্ন করবেন যে, لادروت لا تليت؟ তুমি শিখ নাই, জান নাই? অতঃপর তার উভয় কানের মাঝে হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করা হবে ফলে সে করুন ভাবে কাঁদতে থাকবে, তার কান্যার আওয়াজ জ্বীন ও ইনসান ব্যতীত সকল সৃষ্টিজীব শোনতে পাবে। (বোখারী, মুসলিম)

এ চতুর্থ প্রশ্ন যা মোমেন ও কাফের সকলকে ই করা হবে এ থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়।

(১) কোর‘আন মাজীদই একমাত্র কিতাব যা আমাদেরকে কবরের তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ঠ হবে।

(২) কবরের পরীক্ষায় শুধু ঐ সমস্ত লোকই সফল কাম হবে যারা কোর‘আন মাজীদের প্রতি ঈমান এনেছে, তা তেলওয়াত করেছে, তা বুঝেছে এবং সে অনুযায়ী আমল করেছে।

(৩) মৃত্যুর পর কাফের ও মোশরেকদের প্রতি সর্বপ্রথম যে কঠোরতা আরোপ হবে তাহল এই যে কোর‘আন মাজীদ শিখার জন্য কেন চেষ্টা কর নাই?

(৪) কোর‘আন মাজীদ না পড়া বা না বোঝার অন্যায়ের কারণে অপরাধীর উভয় কাধের মাঝে হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করা হবে। যার অর্থ দাড়ায় এই যে মস্তিস্ক আল্লাহ দান করেছেন কোর‘আন শিখা ও বুঝার জন্য, এ মস্তিস্ককে সঠিক ভাবে কাজে না লাগানোর কারণে কাফেরকে এ শাস্তি দেয়া হবে।

এ চারটি পয়েন্ট থেকে এ অনুমান করা দূরহ নয় যে প্রত্যেক মোসলমানের জন্য কোর‘আন মাজীদ পড়া, বুঝা, এবং সে অনুযায়ী আমল করা কত গুরত্ব পূর্ণ। কোর‘আন মাজীদের বরকত, সোয়াব অবশ্যই আছে, কিন্তু কোর‘আন অবর্তীণের মূল উদ্দেশ্য হল এই যে, তা মানুষের জন্য হেদায়েত সরুপ, যাতে করে তারা পথ ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা পায় এবং পরকালীন শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

فَمَنِ اتَّبَعَ ہُدَایَ فَلَا یَضِلُّ وَ لَا یَشۡقٰی ﴿۱۲۳﴾

অর্থঃ যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ্য কষ্ট পাবে না। (সূরা ত্বোয়-হা-১২৩)

অর্থাৎ পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হবে না।

অন্যত্র আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

فَمَنۡ تَبِعَ ہُدَایَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۳۸﴾

অর্থঃ যে আমার উপদেশ অনুসরণ করবে বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না। (সূরা বাকারা -৩৮)

ভিন্ন অর্থে বলা যেতে পারে যে যারা কোর‘আন মাজীদ তেলওয়াত করবে না সে অনুযায়ী আমল করবে না, নিঃসন্দেহে সে পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট হবে এবং পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হবে। আর এ শাস্তির শুরু হবে কবর থেকে। এদিক থেকে উচিত ছিল আমাদের সর্বাধিক শ্রম, সর্বাধিক সময়, সর্বাধিক যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা কোর‘আন শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় করা, কোর‘আন তেলওয়াত আমাদের প্রতিদিনের রুটিং ভিত্তিক কাজের একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য হওয়া। কোর‘আন মাজীদ শ্রবণ আমাদের মন- মস্তিস্কের প্রশান্তির কারণ হওয়া।

সকাল-সন্ধা আমাদের বাসস্থান থেকে সুমধুর কন্ঠে তার তেলওয়াত ভেসে আসা। আমাদের সন্তানরা বালেগ হওয়ার পূর্বে কোর‘আন মাজীদের প্রতি এতটা আশেক হওয়া যে জীবন ভর তাঁর তেলওয়াত, অর্থ বুঝা, তা নিয়ে গবেষনা করা তাদের অজিফা হিসেবে গ্রহণ করা। কিন্তু আফসোস! আজ সবচেয়ে বেশি অমনযোগিতা, অবমূল্যায়ন, এ কোর‘আন মাজীদেরই এবং তা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা পৃথিবী, কবর, পরকালে আমাদের সফলতার চাবিকাঠি। এ বাস্তবতা কতইনা বেদনা দায়ক যে, আমরা প্রতিদিন সংবাদ পত্র পাঠের জন্য ঘন্টা দুইঘন্টা সময় পাই, কিন্ত কোর‘আন মাজীদ শিখা, বুঝা, অনুধাবনের জন্য পোনের বিশ মিনিট ও মিলে না।

আমাদের প্রিয় জন্মভূমির শতকরা ৯০ জন লোকই পরিবার-পরিজনকে নিয়ে টিভির সামনে বসে প্রিয় জীবনের মূল্যবান সময় বরবাদ করে কিন্তু স্বীয় পরিবার-পরিজন নিয়ে বসে কোর‘আন মাজীদ শিখার শিখানোর জন্য সামান্য সময় ও জোটেনা। বাচ্চা চার-পাঁচ বৎসরে উপনিত হলেই পিতা-মাতা, তাকে দুনিয়াবী শিক্ষা দীক্ষা, দেয়ার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে যায়, যে তাকে কোন স্কুলে ভর্তী করানো যায়, ভবিষ্যতে তাকে কি বানানো যায়। অথচ কোর‘আন শিখানোর ব্যাপারে মোটে ও চিন্তা আসে না। দুনিয়াবী শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে পিতা-মাতা পানির মত টাকা-পয়সা খরচ করে অথচ কোর‘আন শিখার ব্যাপারে এর দশ ভাগের এক ভাগ খরচ করাও পিতা- মাতার জন্য কষ্ট কর হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় যে বিশ-পঁচিশ বছরের একটি ছেলের নিকট চাকুরির ব্যাপারে তার নিকট তিন চার রকমের ডিগ্রী থাকে, কিন্ত পঞ্চাশ-ষাট বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও কোর‘আন মাজীদ একবার খতম করার মত সৌভাগ্য হয়না।

কোর‘আন মাজীদ শিক্ষার ব্যাপারে ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের (লেখকের দেশ) সার্বিক অবস্থাও দুঃখ জনক। কোন মহল্লা, বাজার, মার্কেট, পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কোন বাসে আরোহণ করলে চতুর্দিক থেকে লজ্জাকর গান, কান ফাটা মিউজিকের আওয়াজ শোনা যায়। এমনকি আযান, নামায, জু‘মার খোতবার সময়ও আমাদের মোসলমান ভায়েরা তা মজা করে শোনা থেকে বঞ্চিত থাকতে অপ্রস্তুত। এর বিপরীতে কতজন দোকান দার, কয়টি মহল্লা বা কয়টি বাস এমন পাওয়া যাবে যেখানে গান বাজানোর পরিবর্তে কোর’আন কারীম তেলওয়াত হচ্ছে! হয়ত বা হাজারে একটি। লা হওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়ুল আযীম। কোর’আন মাজীদের শিক্ষা থেকে এ মারাত্বক গাফিলতি এবং অমনযোগীতার একটি কারণ এই হতে পারে যে কোর‘আন মাজীদের গুরত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতা, আমাদের এধারণাই নেই যে পৃথিবীতে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, সর্ব প্রকার চিন্তা, দুঃখ্য, অসুস্থতার চিকিৎসা এ কোর’আন মাজীদে রয়েছে।

দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর আলমে বারযাখে (কবরে) এ কোর‘আন মাজীদই আমাদের নাজাতের বাহন হবে। এমনি ভাবে আলমে বারযাখের পর, পরকালে এ কোর‘আন মাজীদ ই আমাদের সুপারীশ কারী হবে। আমাদের এ বিষয়ে কোন অনুভুতিই নেই যে আল্লাহ তা’লা কোর‘আন মাজীদকে আমাদের জন্য কত বড় নে’মত হিসেবে দান করেছেন। কোর‘আন মাজীদ থেকে হেদায়েত প্রাপ্ত হওয়ার পরিবর্তে আমরা একে শুধু খায়র ও বরকতের কিতাব মনে করে বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে উপহার হিসেবে পেশ করা, মেয়েকে বিদায় দেয়ার সময় তাঁর ছায়া দিয়ে তাকে অতিক্রম করানো, ঝগরা-ঝাটির সময় তা নিয়ে কসম করা বা তাকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করা, জ্বিন তাড়ানোর ব্যাপারে তাঁ দিয়ে তাবীজ বানানো। বিপদের সময় এর মাধ্যমে শুভ-অশুভ নির্ধারণ। মৃতদেরকে ইসলামে সোয়াবের উদ্দেশ্যে তা পাঠ করিয়ে নেয়া ইত্যাদিকে আমরা ধরে নিয়েছি যে এই বুঝি কোর‘আন অবতীর্নের উদ্দেশ্য। অথচ তা হল এমন যে কোন পাগলের হাতে হিরা, জাওহরের বহুত বড় ভান্ডার থাকা এবং সে তা পাথরের টুকরা মনে করে উদ্দেশ্য হিন ভাবে নষ্ট করার মত।

কোর‘আন মাজীদ থেকে দূরে থাকা এবং তার প্রতি অমনযোগীতার একটি কারণ এও যে একথা মনে করা যে, কোর‘আন মাজিদ বহুত কঠিন গ্রন্থ। এটা পড়া এবং বুঝা শুধু আলেম ওলামাদের কাজ, এটা সবার বুঝার বিষয় নয়। যদি এধারনা সঠিক হত তাহলে কবরে প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারা প্রত্যেক লোকের উপর এ কঠোরতা কেন করা হয় যে, তুমি কি শিখ নাই এবং পড় নাই? আল্লাহ তা’লা কোর‘আন মাজীদে এ ভ্রান্তির অপনোদন কল্পে বলেন যে,

وَ لَقَدۡ یَسَّرۡنَا الۡقُرۡاٰنَ لِلذِّکۡرِ فَہَلۡ مِنۡ مُّدَّکِرٍ ﴿۱۷﴾

অর্থঃ শিক্ষা গ্রহণের জন্য এ কোর‘আনকে আমি তোমাদের জন্য সহজ করেছি, আছে কি কেউ যে এখান থেকে শিক্ষা নিবে। (সূরা কামার -১৭)

আমরা একথা মানি যে সত্যই কোর‘আন মাজীদে এমন কিছু স্থান আছে যা সকলের জন্য বুঝা কষ্ট কর। কিন্তু প্রশ্ন হল যে, একারণে কি পূর্ণ কোর‘আন পড়া থেকে বিরত থাকা ঠিক হবে? যদি কোন ছাত্রের কেমিষ্ট্রি বা ফিজিক্সের কোন ফরমূলা বুঝতে কষ্ট হয় তাহলে তো তার পিতা-মাতা একথা বলেনা যে বাবা এটা বাদ দাও, এটা তোমার বুঝার বিষয় নয়। বরং ছেলের জন্য উচু মানের কোন টিউটর ঠিক করে দেয়া হয়, যাতে করে ছেলে পরীক্ষায় সফল হতে পারে দুনিয়াবী ব্যাপারে আমাদের মাথা এত কাজ করে কিন্ত দ্বীনের ব্যাপার হলে আমরা কেন এত অবুঝ হয়ে যাই। যদি কোর‘আন মাজিদে কোন কঠিন স্থান চলে আসে তাহলে তা বুঝার চেষ্টা না করে দ্রুত তা পড়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অথচ উচিত ছিল এই যে গভীর ভাবে তা অধ্যয়ন করা, এর পর যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে কোন ভাল আলেমের কাছ থেকে দিক নির্দেশনা নেয়া এবং কবরের পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্তক সাধনা করা এমন না করা যে প্রথম দিনই না পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরীক্ষায় ফেলের ব্যাপারে শীল মোহর মেরে বসে না থাকা।

কোর‘আন মাজীদ বুঝা থেকে দূরে থাকার আরো একটি কারণ এও হতে পারে যে কিছু কিছু মানুষ অধিক জ্ঞান অর্জন করাকে ধ্বংশের কারণ মনে করে, তাদের ধারনা যে ইবলীস ও বড় পন্ডিত ছিল এবং স্বীয় পান্ডিত্ত্বের কারণেই পথ ভ্রষ্ট হয়েছে। সুতরাং যতটুকু জানা আছে এর উপর আমল করাই যথেষ্ঠ। এ ভ্রান্তিও শয়তানের একটি কু প্রবঞ্চনা। ইবলীস তার পান্ডিত্ত্বের কারণে নয় বরং সে পথভ্রষ্ট হয়েছিল তার অহংকারের কারণে। এজন্য দেখুন সূরা বাক্বারার ৩৪নং আয়াত। জ্ঞানীদের প্রশংসায় আল্লাহ তা’লা বলেনঃ

اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰہَ مِنۡ عِبَادِہِ الۡعُلَمٰٓؤُا

অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।” (সূরা ফাতের-২৮)

অন্যত্র আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ করেনঃ

قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

অর্থঃ “বলুন যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?” (সূরা যুমার-৯)

চিন্তার বিষয় যে কোর‘আন কারীমে আল্লাহ তা’লা যার প্রশংসা করেছেন তা মানুষের জন্য মুক্তির মাধ্যম না ধ্বংশের? কোন কোন মানুষ বয়সের কারণে কোর’আন মাজীদ পড়তে লজ্জা বোধ করে মূলত এটা ও একটি খারাপ দিক, কেননা দুনিয়াবী ব্যাপারে প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত তার উন্নতি কল্পে সাধনা চালায় অথচ এটাকে সে বেমানান বলে মনে করে না। কিন্ত দ্বীনের ব্যাপার হলে এ সমস্ত চিন্তা-ভাবনা কি করে চলে আসে? সাহাবাগনের মধ্যে কেউ পঞ্চাশ বছর বয়সে মোসল মান হয়েছে, কেউ ষাট বছর বয়সে, এর পর তারা কোর‘আন মাজীদ শিখেছে, কেউ কেউ তা মুখস্ত ও করেছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ দ্বীনি এলম অর্জন করা প্রত্যেক মোসলমানের উপর ফরজ। (ত্বাবারানী)

এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বয়স নির্ধারণ করেন নাই। কোর‘আন মাজীদ শিখা থেকে মানুষের দুরে থাকার আরো একটি কারণ হল এই যে, বিভিন্ন ধরনের পাঁচ সূরা বিভিন্ন ওযিফার বই, যা মানুষ নিত্য দিনের রুটিন ভীত্তিক কাজে পরিনত করেছে, মূলত তা করা দরকার ছিল কোর‘আন মাজীদের ব্যাপারে। আর যারা এগুলি পাঠ করে তারা এর পরে কোর‘আন মাজীদ পাঠের আর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনা। কোর‘আন মাজীদের কিছু কিছু সূরা এবং আয়াতের অবশ্যই ফযিলত আছে, কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে শুধু এসমস্ত সূরা সমূহকে যথেষ্ঠ মনে করে বাকী পুরা কোর‘আন তেলওয়াত থেকে বিরত থাকবে। বরং এর অর্থ হল এই যে, কোর‘আন মাজীদ প্রতিদিন তেলওয়াতের পর যে অধিক সোয়াব অর্জন করতে চাইবে সে এ সূরা সমূহ তেলওয়াত করবে।

এমনি ভাবে কিছু কিছু দ্বীনি সংগঠন নিজেদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে তাদের সদশ্যদের জন্য নির্দিষ্ট সিলেবাস তৈরী করে দেয় যদিও তা কোন দোষনীয় ব্যাপার নয়, কিন্ত এ সিলেবাসকে এত গুরত্ব দেয়া যে দাওয়াতের মূল ভীত্তি এরই উপর তা নিঃসন্দেহে দোষনীয় ব্যাপার। কোর‘আন মাজীদের বাছাইকৃত কতগুলী আয়াত তেলওয়াত করা মোটেও কোর‘আন তেলওয়াতের উদ্দেশ্য নয়। বরং মূল উদ্দেশ্য হল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরা কোর‘আন পাঠ করা, এর বিধি-বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং সে অনুযায়ী আমল করা। সাধারণ মানুষকে কোর‘আন মাজীদ শিখা থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী কাজ করেছে সূফী বাদীদের আকীদা। তাদের মতে কোর‘আন মাজীদের একটি জাহেরী অর্থ আর একটি বাতেনী, তাদের মতে কোর‘আনের জাহেরী অর্থের চেয়ে বাতেনী অর্থই উত্তম তবে তা পড়ার মাধ্যমে হাসীল হয়না বরং তা সিনা বা সিনায় হাসীল হয়ে থাকে।

সূফীদের নিকট একথা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ যে “ইলম দারসী না বুধ দারসিনা বুদ” ইলম পড়ার মাধ্যমে হাসীল হয়না বরং তা হয়ে থাকে সিনা বাসিনা (অন্তর থেকে অন্তরে) কোন কোন সূফী আরো এক কদম অগ্রসর হয়ে বলেছঃ “আল ইলমু হিজাবুল আকবার”কোর’আনী ইলম ত্বরীকতের রাস্তায় সবচেয়ে বড় বাধা। চিন্তা করুন যে দলের মূল ভীত্তি কোর‘আন মাজীদ থেকে দূরে রাখার উপর ঐ দলে কোর‘আন মাজীদে হাত রাখার মত এত বড় অন্যায় কে করবে। কোর’আন মাজীদের ব্যাপারে আমাদের এ গাফিলতি ও অমনযোগীতা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ক্ষতী বয়ে আনবে এবং আমাদের লজ্জার কারণ হবে। এ থেকে বাঁচার মত রাস্তা শুধু এই যে আমরা যত দ্রুত সম্ভব কোর‘আন পড়া শুরু করব, অতীত জীবনে কোর‘আন মাজীদের প্রতি গাফিলতি এবং অমনযোগীতার ক্ষতী পুরনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা, কোর‘আন মাজীদ আমাদেরকে শুধু এ দুনিয়াতেই হেদায়েত, কল্যান ও বরকতে আলোকময় করবে না বরং কবরে ও দৃঢ়পদ থাকা ও পরকালে মুক্তির পথ সুগম করবে। ইনশাআল্লাহ!

কবরের ফেতনা থেকে বাঁচার আমল সমূহ
কবরের ফেতনা থেকে উদ্দেশ্য মোনকার নাকীরের প্রশ্ন এবং কবরের আযাব উভয়ই। অতএব কবরের ফেতনা থেকে বাঁচার অর্থ হল এই যে কোন ব্যক্তি মোনকার নাকীরের প্রশ্ন এবং কবরের আযাব এ উভয় থেকে রক্ষা পাওয়া।

কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার অর্থ এও হতে পারে যে মোন কার নাকীর প্রশ্ন করবে কিন্ত আল্লাহ তা’লা স্বীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে তাকে দৃঢ় পদ রাখবে এবং স্বীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে তার শাস্তি যোগ্য গোনাহ সমূহকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আল্লাহই এব্যাপারে ভাল জানেন। কবরের ফেতনা থেকে বাঁচার মত কতিপয় আমল নিম্ন রুপঃ

১-শাহাদাত বরণঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ কারী কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাবে। (নাসায়ী)

২-পাহারা দানঃ অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া বা ইসলামী সৈন্যদেরকে পাহারা দেয়া ও কবরের ফেতনা থেকে বাঁচার মাধ্যম। (তিরমিযী)

৩-বেশি বেশি করে সূরা মুলক তেলাওয়াত করাঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “সূরা মূলক কবরের আযাবের প্রতিবন্দক হবে। (হাকেম)

উল্লেখ্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দিন সোয়ার পূর্বে সূরা মূলক তেলওয়াত করতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন কবরে যখন আযাবের ফেরেশতা মাথার দিক থেকে আসবে তখন নামায বলবে যে এদিক দিয়ে রাস্তা নেই অন্য কোন দিক দিয়ে আস। তখন ফেরেশতা মৃত ব্যক্তির ডান দিক দিয়ে আসবে, তখন রোজা বলবে যে এদিক দিয়ে রাস্তা নেই অন্য কোন দিক দিয়ে আস, ফেরেশতা তখন বাম দিক থেকে আসবে তখন যাকাত বলবে যে এদিক দিয়ে রাস্তা নেই তুমি অন্য কোন দিক দিয়ে আস, তখন ফেরেশতা পায়ের দিক দিয়ে আসবে তখন অন্য সোয়াব সমূহ যেমন দান খয়রাত, আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং মানুষের সাথে সদাচরণ ইত্যাদি বলবে যে এদিক দিয়ে রাস্তা নেই অন্য কোন দিক দিয়ে যাও। (ইবনে হিব্বান)

উল্লেখিত বারটি আমল ব্যাতীত আরো দুইটি পদ্ধতি আছে যা মানুষকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবে, তার মধ্যে একটি হলঃ জুম’আর দিন বা রাতে মৃত্যু বরণ করা অপরটিঃ পেটের কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করা। কিন্তু এদুইটি অবস্থা কোন মানুষের হাতে নেই। কবরের ফেতনা থেকে বাঁচার আমল সমূহের ব্যাপারে প্রিয় পাঠক বর্গকে আমরা এ দৃষ্টি আকর্ষন করছি যে, দ্বীন ইসলামের সমস্ত বিধি-বিধান সমূহ একটি আরেকটির সাথে এমন ভাবে সু-সম্পর্কিত যে একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করে কোন রেজাল্ট বের করার চেষ্টা করা মারাত্তক ভুল।

যেমন কোন লোক যদি শুক্রবার রাতে বা দিনে মারা যায়, কিন্ত সে ছিল বে-নামাযী, তাহলে তার বেলায় শুক্রবারে মারা যাওয়া কোন কাজে আসবে না। শুক্র বারে মৃত্যু বরন তার বেলায় ই কাজে আসবে যে ইসলাম অনুযায়ী চলেছে, পিতা-মাতা, স্ত্রি, সন্তান এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের অধিকার সংরক্ষণ করেছে হালাল-হারামের মধ্যে পার্থক্য করেছে এবং অন্যান্য বিষয়ে ও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের এতায়াত করেছে। এমনি ভাবে যদি কোন ব্যক্তি প্রতি দিন সূরা মুলক তেলওয়াত করে কিন্ত সে কোন ফরজ ত্যাগ কারী, সুদ খোর অন্যান্য কবীরা গোনাগার তাহলে ঐ ব্যক্তিকে সূরা মুলক কি করে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবে? উল্লেখিত আমল সমূহ বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হল, কোন ব্যক্তি ইসলামের ফরজ সমূহ পালন করে, কবীরা গোনাহ থেকে বেচে থাকে প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ এবং তার রাসূলের অনুসরনের চেষ্টা করে অতঃপর উল্লেখিত আমল সমূহের মধ্যে এক বা একাধিক আমলের প্রতি বিশেষভাবে মনযোগী হবে। যেমন নফল নামায বেশি করে আদায় করে বা নফল রোযা বেশি করে রাখে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজিয়ে রাখে, আল্লাহর পথে বেশি বেশি ব্যায় করে, এমন ব্যক্তির জন্য ঐ আমল গুলির মধ্যে কোন একটি আমল বা একাধিক আমল ইনশাআল্লাহ কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা কারী হিসেবে কাজ করবে; সঠিক বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত! দ্বীনের ব্যাপারে মানুষ কিভাবে শয়তানের ধোকায় পরে আছে তা প্রত্যেক ব্যক্তি তার দুনিয়াবী কর্মের সাথে তুলনা করলে তা সহজেই অনুভব করতে পারবে।

চিন্তা করুন পৃথিবীতে যদি কোন মানুষকে প্রথম বার অন্য কোন দেশে সফর করতে হয় তাহলে মানুষ গন্তব্য স্থলে সহীহ সালামতে পৌঁছার জন্য প্রত্যেকটি বিষয়ে কিভাবে জাচাই বাছাই করে। রাস্তার খুটি-নাটি সমস্যা সম্পর্কেও ঐ সমস্ত লোকদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যারা ঐ দেশে কোন সময় গিয়ে ছিল। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেট ইত্যাদি বিষয়ে আপ্রান চেষ্টা করে যেন তার সব কিছু বৈধ হয়, যাতে করে রাস্তায় কোন রকমের সমস্যা না হয়। তার সাথে বহন কৃত মাল পত্রের ব্যাপারে এত সজাগ দৃষ্টি রাখে যেন কোন অবৈধ জিনিস সাথে না থাকে এবং রাস্তায় চেকের সময় অপমান না হতে হয়। প্লেনে আরোহনের পর বিচক্ষন ব্যক্তি যথেষ্ট সতর্কতার সাথে চিন্তা করে যে যাতে কোন অনাকাঙ্খিত অঘটন ঘটে না যায়।

ভ্রমন কালে সব প্রকার সমস্যা যা থেকে ইতিপূর্বে তাকে সর্তক করা হয়েছে তা থেকে বেচেঁ থাকার ব্যাপারে সে সার্বক্ষনিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এত গেল দুনিয়াবী ব্যাপারে, এখন দ্বীনি বিষয়ে দেখুন.....পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী, সবচেয়ে আমানত দার, মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণ কামী, মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পৃথিবীর এ জীবনের পর আগত সর্ব প্রকার বিপদাপদ সম্পর্কে একটি একটি করে আমাদেরকে সর্তক করেছেন, অতঃপর ঐ বিপদ থেকে বাঁচার পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এর পরও আমাদের মধ্যে কত জন লোক আছে যারা এবিপদাপদ থেকে বাঁচার ব্যাপারে চিন্তিত? অধিকাংশের অবস্থাতে এই যে খালী হাতেই সেখানে পারি জমাচ্ছে। আল্লাহ তা’লা আমাদেরকে শয়তানের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করুন, দ্বীনের ব্যাপারে আমাদেরকে সত্য বোঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন, আমীন!

কবরে নামাযের মহাত্ম
নামায ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, এর ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি এরশাদ করেনঃ প্রতি দিন পাঁচবার করে গোসল কারী যেমন ময়লা আবর্জনা থেকে পরিস্কার থাকে, এমনি ভাবে প্রতি দিন পাঁচবার নামায আদায় কারী ব্যক্তি পাপ মুক্ত থাকে। (বোখারী, মুসলিম)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে পাচঁ ওয়াক্ত নামায আদায় কারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্ তা’লা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন (আহমদ, আবুদাঊদ)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযকে তাঁর চক্ষু তৃপ্তি নির্ধারণ করেছেন। (আহমাদ, নাসায়ী)

কোর‘আন মাজীদে আল্লাহ তা’লা সফল কাম লোকদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে তারা তাদের, নামাযকে সংরক্ষন করে। (সূরা মু’মেনুন-৯)

নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনের সর্ব শেষ উপদেশ ছিল নামাযের ব্যাপারেই। যে হে মানব মন্ডলী! নামায সংরক্ষন কর এবং কর্মচারীদের প্রতি সদয় হও। (ইবনে মাযাহ)

পরকালীন জীবনে নামাযের ফযিলতের গুরত্বপূর্ণ একটি দিক আমাদের সামনে রয়েছে আর তা হলঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ মোনকার নাকীর যখন মোমেন ব্যক্তিকে কবরে বসাবে তখন তার মনে হবে যেন সূর্য ডুবতেছে। অতঃপর মোমেন ব্যক্তি এবং মোনকার নাকীরের মধ্যে নিম্নোক্ত কথা বার্তা চলবেঃ

মোনকার নাকীরঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি, প্রেরিত হয়েছিল তার সম্পর্কে তোমার ধারনা কি?

মোমেনঃ একটু থাম প্রথমে আমাকে নামায আদায় করতে দাও।

মোনকার নাকীরঃ নামায পরে আদায় করবে প্রথমে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দাও।

মোমেনঃ ঐ ব্যক্তি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে তোমরা আমাকে কি জিজ্ঞেস করতে চাও।

মোনকার নাকীরঃ আমরা যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।

মোমেনঃ একটু থাম প্রথমে আমাকে নামায আদায় করতে দাও।

মোনকার নাকীরঃ নামায পরে আদায় করবে প্রথমে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দাও।

মোমেনঃ তোমরা বার বার আমাকে কি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেছ?

মোনকার নাকীরঃ আমাদেরকে বল তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল। অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে তোমার ধারনা কি? তার ব্যাপারে তুমি কি সাক্ষী দাও?

মোমেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং আমি আরো সাক্ষী দিচ্ছি যে সে আল্লাহর পক্ষ্য থেকে সত্য সহ কারে প্রেরিত হয়েছে।

মোনকার নাকীরঃ তুমি এই আক্বীদা (বিশ্বাসের) উপর জীবন যাপন করেছ, এরই উপর মৃত্যু বরণ করেছ, এবং এরই উপর কিয়ামতের দিন উত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ’।[1] মোনকার নাকীর এবং মোমেন ব্যক্তির মধ্যে যে কথপোকতন হবে তা একটু গভীর ভাবে পড়ে চিন্তা করুন যে একদিকে মানব জগতের বাহিরে অন্য এক সৃষ্টি, ভয়ংকর চেহারা, কর্কশ ভাষা, একাকিত্ব, অন্ধকার, বন্ধ স্থান। অন্য দিকে নামাযীর এ মহাত্ম যে চিন্তার লেশ মাত্র নেই। কথাবার্তায় ধিরস্থিরতা যেন কোন মনিবের সামনে তার গোলাম দন্ডয়মান হয়ে কোন বিষয়ে বার বার জানতে চাচ্ছে, আর মনিব সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অন্য কোন কাজে অন্যমনস্ক আছে।

সুবহানাল্লাহ! কবরে নামাযী ব্যক্তির এ ধিরস্থিরতা, নিভয়, শুধু শুধু নামাযের বরকতেই হবে যে ব্যাপারে সে পৃথিবীতে এত অভ্যস্ত ছিল যে সূর্য ডুবতে দেখেই সর্ব প্রকার ভয় ভীতির কথা ভুলে গিয়ে নামাযের চিন্তায় চিন্তিত হয়ে যাবে, ফেরেশতাদের বার বার চাপের পরে ও সে ঐ দিকে দৃষ্টিপাত করবে। নামাযী ব্যক্তি যখন নিজে অনুভব করবে যে এটা আলমে বারযাখ এটা নামাযের স্থান নয় তখন ফেরেশ্‌তাদের প্রতি মনোনিবেশ করে ধিরস্থিরতার সাথে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিবে। ইতি পূর্বে পাঠকগণ এ গ্রন্থে পাঠ করেছেন যে কবরের আযাব থেকে রক্ষা কারী আমল সমূহের মধ্যে নামায ও একটি আমল। এ থেকে একথা অনুমান করা যায় যে, কেয়ামতের পূর্বেই নামায নামাযীর জন্য কিভাবে রহমত ও আরামের কারণ হবে। উল্লেখ্যঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর হক সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। (তিরমিযী)

তিনি পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিতঃ

কিতাব ও সুন্নাতের প্রতি আমাদের অজ্ঞতা আমাদের আকীদার (বিশ্বাসের দূর্বলতাকে এত বিস্তার করেছে যে ডানে-বামে সামনে পিছনে সর্বত্রই শিরক আর শিরক চোখে পরে। বুযুর্গ এবং অলী গণের নামে এমন আকীদা ও ঘটনা রটানো হয়েছে যে এর ফলে পৃথিবীর কোথাও আল্লাহ তা’লার তাওহীদ এবং নবী গণের রিসালাতের নাম গন্ধ ও দেখা যায় না বললেই চলে। নাউজু বিল্লাহ্! এ সমস্ত আক্বীদার দাবী অনুযায়ী অলীগণের ক্ষমতা শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আলমে বারযাখ এবং পরকালে ও তা কার্যকর থাকবে।

আলমে বারযাখে তাদের ক্ষমতার কার্য কারীতা সংক্রান্ত আক্বীদার কিছু উদাহরণ নিম্নরূপঃ

১-মহিউদ্দীন ইবনে আরাবীকে সমকালের বাদশাহ বললঃ যে আমার ছেলেকে অসুস্থ মনে হচ্ছে, আপনার চিকিৎশায় সে সুস্থ হবে, মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী এসে বললঃ আযরাইল তো তার রুহ কবজ করার জন্য এসে গেছে। একথা শোনে বাদশা তার পায়ে পরে গিয়ে বলল এর চিকিৎসা আপনারই হাতে। ইবনে আরাবী আযরাইলকে বললঃ থাম! আমি আমার ছেলেকে তোমার সাথে পাঠাচ্ছি, তাই সে ঘরে ফিরে এসে দরজার দিকে মুখ করে বললঃ আযরাইল! এ ছেলে উপস্থিত, সাথে সাথে ছেলেটি মাটিতে পরে গেল এবং মৃত্যু বরণ করল, এদিকে বাদশার ছেলে সুস্থ হয়ে গেল।[2]

এ ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক- আযরাইল আল্লাহকে বেতিরেখে ওলীগণের নির্দেশ পালনে বাধ্য।

খ-মানুষের জীবন ও মরন নির্ভর করে ওলীগণের ইচ্ছার উপর।

গ-ওলীগণ আল্লাহর ফায়সালা পরিবর্তন করতে সক্ষম।

২ - খাজা মাইনুদ্দীন চিশতির ঘনিষ্ঠ জনদের কেউ মারা গেছে, তখন জানাযার সাথে খাজা সাহেব ও গেলেন, দাফনের পর সকলেই চলে গেল আর খাজা সাহেব ওখানেই থাকলেন। শাইখুল ইসলাম কতুবুদ্দীন বললেনঃ আমি আপনার সাথে থেকে দেখতে ছিলাম যে প্রতিনিয়ত আপনার চেহারার রং পরিবর্তন হচ্ছিল আর এতক্ষনে পূর্বের অবস্থায় তা ফিরে এসেছে, তখন তিনি ওখান থেকে একটু সরে গিয়ে বললেনঃ আলহামদু লিল্লাহ! বায়াত বহুত ভাল জিনিস, শাইখুল ইসলাম কতুবুদ্দীন এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যখন তাকে দাফন করে সব লোক চলে গেল তখন আমি দেখলাম যে আযাবের ফেরেশতা এসে তাকে আযাব দিতে চাইতেছে, তখন শাইখ ওসমান হারুনী (খাজা সাহেবের মরহুম পীর) উপস্থিত হয়ে ফেরেশতাদেরকে বললঃ এ ব্যক্তি আমার মুরীদ, এদিকে ফেরেশতাদেরকে বলা হল যে, তোমরা বল যে সে তোমার বিরোধী ছিল। খাজা সাহেব বললঃ সে আমার বিরোধী ছিল বটে কিন্তু এরপরও সে এ ফকীরের দলে ছিল, তাই আমি চাইনা যে সে আযাব ভোগ করুক। ফরমান হল যে শাইখের মুরিদের উপর থেকে হাত তুলে নাও আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।[3]

এ ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক-আযাব দেয়া ও না দেয়ার অধিকার ওলীগণের ও আছে।

খ-গোনাহ মাফের ক্ষমতাও ওলীগণের আছে।

গ-ওলীগণের হাতে বায়াত করাই গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট।

৩ - গাউস পাকের যোগে এক ব্যক্তি অত্যন্ত বেশী পাপী ছিল। কিন্ত গাউস পাকের সাথে তার যথেষ্ট ভাল সম্পর্কও ছিল, তার মৃত্যুর পর যখন মোনকার নাকীররা তাকে প্রশ্ন করতে লাগল তখন সে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরে বলতে ছিল “আব্দুল কাদের”। আল্লাহর পক্ষ্য থেকে মোনকার নাকীরকে বলা হল এবান্দা যদি ও ফাসেক, কিন্ত সে আব্দুল কাদেরকে মহাব্বত করত, অতএব আমি তাকে ক্ষমা করেদিলাম।[4] এঘটনা থেকে একথা পরিস্কার ভাবে বুঝা যায় যে, ওলীগণকে মহব্বত কারীরা যদিও ফাসেকই হোকনা কেন অবশ্যই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। উল্লেখ্য যে আলেমগণের মতে ফাসেক ঐ ব্যক্তি যে কবীরা গোনাগার যেমনঃ নামায ত্যাগকরী, ব্যভীচার কারী, মদপান কারী ইত্যাদি।

৪ - যখন শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী এ পৃথিবী থেকে মৃত্যুবরণ করলেন তখন তিনি এক বুযর্গকে স্বপ্ন যোগে বললেনঃ যে মোনকার নাকীররা যখন আমাকে প্রশ্ন করল যে তোমার প্রভূ কে? আমি তখন তাদেরকে বললামঃ ইসলামী ত্বরীকা হল এইযে প্রথমে সালাম এবং মোসাফাহা করা, তখন ফেরেশ্‌তারা লজ্জিত হয়ে মোসাফাহা করল আর শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রাহিমাহুল্লাহ) শক্ত করে তার হাত ধরে নিলেন এবং বললেনঃ আদমকে সৃষ্টি করার সময় তোমরা আদম সৃষ্টির ব্যপারে।

قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَ یَسۡفِکُ الدِّمَآءَ

অর্থঃ “আপনি কি যমিনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে অশান্তি সৃষ্টি করবে।” (সূরা বাকারা-৩০)

একথা বলে নিজেদের জ্ঞানকে আল্লাহর জ্ঞানের চেয়ে অধিক বলে মনে করার মত বেয়াদবী করলা কেন? এবং সমস্ত আদম সন্তানদেরকে ফাসাদ কারী বলে অপবাদ কেন দিয়ে ছিলা? তোমরা যদি আমার এ প্রশ্ন সমূহের উত্তর দিতে পার তাহলে আমি তোমাদেরকে ছাড়ব অন্যথায় নয়। মোনকার নাকীররা হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকল এবং নিজে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু এ যাবারুত এবং বাহরে লাহুতের সাথে ফেরশ্‌তার শক্তি কি কাজে আসবে। অপারগ হয়ে ফেরেশতা আরয করল জনাব একথা সমস্ত ফেরেশ্‌তারা বলেছিল আমি একা বলি নাই অতএব আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, যাতে করে আমি অন্য ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিতে পারি, তখন হযরত গাউসুস সাকালাইন (রাহিমাহুল্লাহ) এক ফেরেশতাকে ছেড়ে অপর জনকে ধরে রাখলেন, ঐ ফেরেশতা গিয়ে অন্যদেরকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললঃ তখন সমস্ত ফেরেশতারা এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ হয়ে গেল।

অতঃপর আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসল যে তোমরা আমার মাহবুবের খেদমতে উপস্থিত হয়ে তোমাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করাও। ফলে সমস্ত ফেরেশতা মাহবুবে সুবহানাহু (রাহিমাহুল্লাহ) খেদমতে উপস্থিত হয়ে ওযুর পেশ করল, ততক্ষনে আল্লাহ তালার পক্ষ থেকেও সাফাআতের ইশারা আসল, তখন গাউসে আজম আল্লাহ্ তালার নিকট আরয করল যে, হে খালেকে কুল (সবকিছুর স্রষ্টা! হে সর্বশ্রেষ্ট রব্ব! স্বীয় রহম ও করমে তুমি আমার মুরীদদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদেরকে মোনকার ও নাকীরের প্রশ্ন থেকে মুক্ত রাখ, তাহলে আমি এ ফেরেশতাদেরকে ক্ষমা করব। ফরমানে এলাহী জারী হল যে হে আমার মাহবুব আমি তোমার দূয়া কবুল করলাম, তুমি ফেরেশতাদেরকে ক্ষমা কর। তখন জনাব গাউস ফেরেশতাদেরকে ছেড়ে দিলেন এবং তারা ফেরেশতা জগতে চলে গেল।[5]

উল্লেক্ষিত ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ঃ

ক- ফেরেশতাদেরকে ওলীদের নিকট জওয়াব দেহি হতে হবে।

খ-ফেরেশতাগণ ওলীদের মোকাবেলায় অক্ষম।

গ-আব্দুল কাদের জিলানীর সমস্ত মুরীদরা কবরের ফেতনা থেকে মুক্ত।

আওলীয়ায়ে কেরাম ও সূফিয়ে এজামদের ঘটনাবলীর পর নবীর যোগে মৃত্যুবরণ কারী সাহাবাগণের কিছু ঘটনা শুনুনঃ

১- আওস কাবীলার সরদার সা’আদ বিন মোয়াজ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর পর রহমতের নবী এসে সা’দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মাথা স্বীয় রানের উপর রাখলেন এবং আল্লাহর নিকট দূয়া করলেনঃ হে আল্লাহ! সা’দ তোমার দ্বীনেব ব্যাপারে বহু কষ্ট স্বীকার করেছে, তোমার রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলেছে, হে আল্লাহ! তার রুহের প্রতি ঐ আচরণ কর যা তুমি তোমার প্রিয় জনদের সাথে কর। সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন সা‘দের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে। (বোখারী, মুসলিম)

সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযা যখন বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তা হালকা মনে হচ্ছিল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযা ফেরেশতাগণও বহন করছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই তার জানাযা পড়িয়েছেন এবং নিজের প্রিয় সাহাবীর জন্য মাগফেরাতের দূয়া করেছেন। জানাযার নামাযের পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেনঃ সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযায় সত্তর হাজার ফেরেশতা অংশ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো এরশাদ করলেনঃ সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর রুহের জন্য আকাশের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়েছে যাতে করে যে দরজা দিয়ে খুশী সে দরজা দিয়ে তার রুহ উপরে আরোহন করতে পারে। মদীনার বাকীউল গারকাদ নামক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। আবুসায়ীদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার কবর খনন করছিলেন আর বলছিলেন যে, আল্লাহর কসম আমি এ কবর থেকে মেসক আম্বরের গ্রাণ পাচ্ছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পবিত্র হাতে এ লাশ কবরস্ত করেছেন। কবরে মাটি দেয়ার পর তিনি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! বলতে থাকলেন। সাহাবাগণও তাঁকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলুই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলেন।

এরপর তিনি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, বলতে শুরু করলেন সাহাবীগণও তাঁকে লক্ষ করে এ কথাগুলোই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলেন। দূয়া শেষ করার পর সাহাবাগণ আরয করলেন “হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি তাসবীহ ও তাকবীর কেন দিলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন দাফনের পর কবর সা’আদকে চেপে ধরে ছিল তাই আমি আল্লাহর নিকট দূয়া করলাম তখন আল্লাহ তা প্রশস্ত করে দিলেন। অন্যত্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন যে কবরের চেপে ধরা থেকে যদি কেউ মুক্তি পাওয়ার মত থেকে থাকে তাহলে সে ছিল সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)।[6]

সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক- গোনাহ মাফের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর ই হাতে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে, সে ঈমানদার বলে সাক্ষী দিয়েছেন বটে কিন্তু এরপরে ও তার জন্য মাগফেরাত কামনা করেছেন আল্লাহর নিকট।

খ- সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযার নামায তিনি নিজেই পড়িয়েছেন, সত্তর হাজার ফেরেশতা তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছে। তার রুহের জন্য আকাশের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল, তার মৃতদেহ রহমতের নবী তাঁর পবিত্র হাতে ধরে কবরস্ত করেছেন, এর পরও কবর সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে চেপে ধরে ছিল, এ থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তার ফায়সালাকে আল্লাহর রাসূল পরিবর্তন করতে পারেন নাই, না সত্তর হাজার ফেরেশতা।

গ- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দেখলেন যে কবর সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে চেপে ধরেছে তখন তিনি চিন্তিত হয়ে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর পবিত্রতা, তাঁর বড়ত্বের গুণ গান করতে থাকলেন এবং ততক্ষন পর্যন্ত তা করলেন যতক্ষন না সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের কষ্ট থেকে মুক্তি পেলেন। এ থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহর নিকট বিনয় ও নম্রতার সাথে দরখাস্ত করা যায় কিন্ত যবর দুস্তি করে আল্লাহর রাসূল ও কোন কথা আল্লাহকে মানাতে পারে না।

২-দ্বিতীয় ঘটনাটি ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহুর)। ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মক্কা থেকে হিজরত করে মদী নায় আসার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণ কৃত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে উম্মুল আলা আনসারিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহার) ঘরে অবস্থান নেন। তার মৃত্যুর পর উম্মুল আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপুস্থিতিতে বললেনঃ “হে আবু সায়েব! ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর উপাধি, তোমার প্রতি আল্লাহ্ রহম করুন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তোমাকে তোমার মৃত্যুর পর ইজ্জত দিয়েছেন” তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন “তুমি কি করে তা বুঝতে পারলে যে আল্লাহ তাকে ইজ্জত দিয়েছেন?” তখন উম্মুল আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক আল্লাহ্ যদি তাকে ইজ্জত না দেন তাহলে আর কাকে ইজ্জত দিবেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় ওসমান মৃত্যু বরন করেছে, আল্লাহর কসম আমিও তার জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করি। কিন্ত আল্লাহর কসম আমি জানিনা যে কিয়ামতের দিন আমার কি অবস্থা হবে অথচ আমি আল্লাহর রাসূল। (বোখারী)

উল্লেখ্য যে ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দুই বার হাবশায় হিযরত করেছেন এবং তৃতীয় বার মদীনায় হিযরত করার সুভাগ্য হয়ে ছিল তার। তার মৃত্যুর পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন বার তার কপালে চুমা দিয়েছেন এবং বলছেন যে তুমি পৃথিবী থেকে এমন ভাবে বিদায় নিলে, যে পৃথিবীর লোভ লালসা তোমাকে বিন্দু পরিমানে ও স্পর্শ করতে পারে নাই। ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়।

ক-আল্লাহর নিকট কার কি মর্যাদা তা কেউ জানেনা।

খ- গোনাহ মাফ করা বা না করা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাদিন।

গ- আল্লাহ্ তা’লার বরত্ব ও মর্যাদার সামনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও অক্ষম।

প্রিয় পাঠক আপনি অবগত আছেন যে দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি হল কোর‘আন ও সুন্নাতের উপর। আর এ দুইটি বস্তু আমাদেরকে এশিক্ষা দেয় যে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর সমস্ত বান্দাদের উপর সর্ব শক্তি মান। কারো গোনাহ মাফ করে দেয়া বা না দেয়া তাঁরই ইচ্ছা দিন। কাওকে আযাব থেকে মুক্ত করে দেয়া বা না দেয়া ও তারই ইচ্ছা দিন। তিনি যা খুশী তাই করেন, সারা পৃথিবীর আম্বীয়া এবং ফেরেশতাগণ মিলেও তাঁর বিধানের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না। তার সমস্ত সিদ্ধান্ত সমূহকে বাস্তবায়ন করার একছত্র অধিকারী তিনিই। সমস্ত জগত সমূহে তিনিই একমাত্র “আজীজ” (পরাক্রমশালী) তিনি একাই জাব্বার (প্রবল), তিনি একাই মোতকাব্বের (অতীব মহিমান্বিত)। এমন বিষয় থেকে তিনি অত্যন্ত পুত ও পবিত্র যে তিনি কোন নবী বা ওলীর নিকট সুপারিশ করবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যোগে ঘটে যাওয়া দুইটি ঘটনা থেকে এশিক্ষাই পাওয়া যায়। বুযর্গ এবং ওলীগণের নামে রটানো ঘটনাবলী নবীর যোগের শিক্ষা এবং উপরে উল্লেক্ষিত দুইটি ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরিত, প্রকৃত পক্ষে বুযর্গ এবং ওলীগণের নামে রটনা কৃত ঘটনাবলী আল্লাহ্‌র সানে অত্যন্ত বড় ধরনের বেয়াদবী, যে এর ফলে কারো উপর আকাশ ভেঙ্গে পরা বা কাওকে নিয়ে যমিন ধসে গেলে আশ্চার্য হওয়ার কিছু নেই। আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ তা’লা এ সমস্ত শিরকী কথা বার্তা থেকে বহু ঊর্ধে যা মোশরেকরা বলে থাকে।

سبحان ربك رب العزة عما يصفون

অর্থঃ “তোমার ইজ্জত ওয়ালা রব্ব তারা যা বলে তা থেকে অত্যন্ত পুত ও পবিত্র।”

ফুটনোট

[1] - মোস্তাদরাক হাকেম ১/১৪৪৩

[2] - মুরশিদে কামেল, তরজমা হাদায়েকুল আখবার, সাদেক ফারখান পৃঃ২৩

[3] - রাহাতুল কুলুব, মালহুযাত খাজা ফরিদুদ্দীন সাকের গন্‌জ, নেজামুদ্দীন আওলীয়া সংকলিত ১৩২পৃঃ।

[4] - সীরাতে গাউস পৃঃ২১৪

[5] - মোখতাসারুল মাজালেছ, হযরত রিয়াজ আহমদ গাওহার সাহী লিখিত পৃঃ ৮-১০

[6] বিস্তারিত দেখুন মোস্তাদরাক হাকেম - (৪/৪৯৮১-৪৯৮৩)।

১০
একটি ভ্রান্তির অপনোদন
মোসলমানদের একটি দল কবরের আযাব বা শান্তিকে অস্বীকার করে, তাদের দলীল সমূহের মধ্যে একটি এই যে সাস্তি বা শান্তির দিন কিয়ামতের দিন সুতরাং কিয়ামতের পূর্বে তা হওয়া ন্যায় পরায়নতা বিরোধী। তাই কবরে আযাব বা শান্তি হতে পারেনা। এ ভ্রান্তির একটি কারণ এই যে বারযাখী জীবন আমাদের বর্তমান জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং তা পরকালের জীবনের চেয়েও ভিন্ন। তাই বারযাখী জীবনের পরিপূর্ণ ধরনকে বর্তমান জীবনের সাথে তুলনা করে বুঝার চেষ্টা করা আমাদের জন্য অসম্ভব। এ বিষয়ে আমি এগ্রন্থে ভূমিকার পর পয়েন্ট আকারে বারযাখী জীবন কেমন? এ সিরোনামে তা বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। তা পাঠ করলে এ ধরনের ভ্রান্তি ইনশাআল্লাহ্ দূর হবে।

এ ভ্রান্তির আরেকটি কারণ কবরের আযাব ও সোয়াবের ধরণ সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকাও। বারযাখী জীবনের আযাব ও সোয়াব আমরা একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করার চেষ্টা করব। ধরুন কোন পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করল এবং পুলিশকে উপর থেকে জানিয়ে দেয়া হল যে এ ব্যক্তি সত্যিই অন্যায় কাজের সাথে জড়িত আছে। আদালতের ফায়সালার পূর্বে পুলিশ তাকে কোন প্রকার শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা বটে কিন্তু সে অন্যায় কারী বলে জানার কারণে তাকে তারা খারাপ চোখে দেখে এবং হুমকি ধমকি দেয়, তাকে ভয় দেখায় যে আদালতের ফায়সালা হতে দাও এরপর দেখ যে তোমার সাথে কি আচরণ করা হয়। সেখানে তার সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করা হয়। তাকে না কোন চেয়ারে বসার সুযোগ দেয়া হয়, না কোন খাটে সোয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

তার আসপাস দিয়ে চলাচল কারী পুলিশরা তার প্রতি এমন ভাবে তাকায় যেন তার জান তারা বের করে ফেলবে। এ ধরনের আসামী কখনো চাইবে না যে তার মামলা আদালতে যাক এবং তার ব্যাপারে কোন ফায়সালা হোক। কিন্তু যখনই আদালত থেকে তার ব্যাপার কোন রায় আসবে তখনই তার মূল সাজা শুরু হবে। চাবুক মারা বা জরিমানা বা অন্য কোন সাস্তি তখন তাকে দেয়া হবে। জেলের পূর্বে হাজতে থাকা কালে সে যে শাস্তি ভোগ করেছে যদিও তা জেলের শাস্তির চয়ে আলাদা তবুও তো সেটা এক প্রকার শাস্তি। এমনি ভাবে কবরে শাস্তির ধরণ হাজতে বন্দী আসামীর মত, আদালতে যার ফায়সালা হওয়া এবং শাস্তি ধার্য হওয়া এখনও বাকী যা মূলত কেয়ামতের দিন হবে। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে কাফেরকে তার পরিনতি সম্পর্কে অবগত করানো তাকে লাঞ্ছিত, অপদস্ত করাও এক প্রকার সাজা।

যদিও এর ধরণ জাহান্নামের শাস্তি থেকে ভিন্ন। এমনি ভাবে কবরে মোমেন ও মোত্তাকী ব্যক্তির সোয়াবের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির সাথে মিলে যাকে পুলিশ উপরের নির্দেশে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে কিন্তু উপর থেকে পুলিশকে একথা ও জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি নির্দোষ, সে আইন মেনে চলে, ভদ্র লোক, অতএব তার সাথে ভদ্রতা মূলক আচরণ করবে। আদালতের ফায়সালার পূর্বে পুলিশ তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে না বটে কিন্তু সে ভাল লোক হওয়ার কারণে সমস্ত পুলিশ তাকে ভাল চোখে দেখবে। সে যেন কোন কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ রাখবে এবং তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যবস্থা করে দিবে এবং তাকে শান্তনাও দিবে যে আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আপনি নির্দোষ আপনি আদালত থেকে ইজ্জতের সাথে মুক্তি পাবেন।

এমন ব্যক্তি কামনা করবে যে তার মামলাটি যত দ্রুত সম্ভব আদালতে পেশ হোক, যাতে করে সে দ্রুত আরাম দায়ক জীবন যাপন করতে পারে আদালতে তার মামলা পেশ হওয়ার পর যখন আদালত তাকে ইজ্জতের সাথে নির্দোষ বলে প্রমাণ করবে তখন পুলিশ তাকে যথেষ্ঠ ইজ্জত ও সম্মানের সাথে বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দিবে। নিঃসন্দেহে হাজতে থাকা কালে সে ঐ আরাম পায় নাই যা সে তার নিজের ঘরে পৌঁছার পর পাবে। কিন্তু তবু ও সেখানে সে ভদ্র মানুষ হওয়ার কারণে কিছুটা হলে ও আরাম পেয়েছে। ঠিক এ ধরনেরই সম্মান জনক আচরণ কবরে করা হবে মোমেন ব্যক্তির সাথে। তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হবে, জান্নাতের অন্যান্য নে’মত সমূহ দেখানো হবে, সর্ব প্রকার আরামের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু জান্নাতের নে’মতের স্বাদ মূল মোমেন ব্যক্তি তখনই পাবে যখন সে আল্লাহ্ তা’লার আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে সম্মানের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ্ ই এব্যাপারে সর্বাধিক অবগত।

১১
কবর শিক্ষার স্থান না তামশার?
ইতিপূর্বে আমি আলোচনা করেছি যে, সত্যিই কবর অত্যন্ত ভীতি কর স্থান। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ “আমি কবরের চেয়ে ভীতি কর স্থান আর দেখি নাই।” (তিরমিযী)

এক লোকের জানাযার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পার্শ্বে বসেছিলেন তিনি কবরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে এত কাঁদলেন যে এতে তাঁর চোখের পানিতে কবরের মাটি ভিজে গেল, আর তিনি বললেনঃ আমার ভাইগণ এই স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেও। (তিরমিযী)

তিনি নিজে কবরের ফেতনা থেকে পানা চাইলেন এবং স্বীয় উম্মতদেরকে কবরের ফেতনা থেকে পানা চাওয়ার জন্য উপদেশ দিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) অভ্যাস এই ছিল যে কবরের কথা স্মরণ হলে তিনি এবং তাঁর সাহাবাগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যেতেন। সালমান ফারসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ তিনটি বিষয় আমাকে চিন্তিত করে তোলে এবং এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে যাই।

১- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) সাহাবাগণের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়। ২-কবরের আযাব ৩- কিয়ামতের ভয়। ৪ -মালেক বিন দীনার (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করে কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হয়ে যেতেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মত বর্গকে কবর যিয়ারতের নির্দেশ এজন্যই দিয়েছেন, যে এর মাধ্যমে পরকালের কথা স্মরণ হবে। (তিরমিযী)

মোসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে যে কবর যিয়ারত কর, এতে শিক্ষার পাথেয় রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ দুনিয়ার কথা ভুলে গিয়ে পরকালের কথা স্মরণ করে। দুনিয়ার অস্থায়িত্যের কথা ভাবার সুযোগ হয়। অন্যের কবর দেখে নিজের কবরের কথা স্মরণ হয়। ক্ষনস্থায়ী দুনিয়ার লোভে পরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নফরমানী করার কারণে লজ্জাবোধ সৃষ্টি হয়।

স্বীয় গোনাহ থেকে তাওবা করার আগ্রহ জাগে। কিন্তু আমাদের সামাজে যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ এর বিপরিত। চিন্তা করুন যে কবরে শিরক সম্ভলিত কাওয়ালীর আসর জমে আছে, সেখান থেকে কি করে পরকালের কথা স্মরণ হবে। যেখানে ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে যুবক ও যুবতীরা উন্মাদ হয়ে আছে, সেখানে কি করে মোন কার নাকীরের কথা স্মরণ হবে? যেখানে সুন্দর চেহারা ও সুঠাম দেহের অধিকারীদের নৃত্য চলে, সেখানে কে কবরের আযাব ও শান্তি নিয়ে চিন্তা করতে যাবে? যেখানে সিনামা থেয়েটারের নির্লজ্জ গান বাদ্য চলছে, সেখানে মৃত্যুর কথা কি করে স্মরণ হবে?

যেখানে পর্দা হিন যুবক যুবতীর অবাদ মিলা মিশা চলে, সেখানে কি করে তওবার আগ্রহ জাগবে? যেখানে মুরীদ ও ভক্তদের মদ পানের আসর জমজমাট হয়ে আছে, সেখানে কি করে পরকালের কথা স্মরন হবে? যেখানে রাত-দিন শুধু নযরানা ও মান্নত গ্রহণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে কে পরকালের ওয়াজ করবে আর কেইবা তা শোনবে?

উল্লেখ্য ২০০১ ইং সালে বাবা ফরীদের মাজারে ওরসের সময় বেহেসতি দরজা দিয়ে অতিক্রম করতে আগ্রহীদের ভীরের চাপে ৬০ ব্যক্তি নিহত হয়। তার কারণ দর্শাতে গিয়ে বলা হয়েছে যে সরকার দরবারের খেদমতের জন্য আধ্যাত্মিক গুরুকে প্রতি বছর দেড় লক্ষ্য গ্রেন্ট দিত কিন্তু সে দিন বেহেশতী দরজা খোলার কয়েক ঘন্টা পূর্বে আধ্যাত্মিক গুরু কর্তীপক্ষের সাথে তর্ক শুরু করেন যে তার গ্রান্ট দেড় লক্ষ্যের পরিবর্তে ১৫ লক্ষ্য করা হোক, তাহলে সে দরজা খোলবে। তাই দরজা খুলতে দেরী হয়েছিল এবং দরজার আসে পাশে প্রচন্ড ভীরের কারণে এ দূর্ঘটনা ঘটেছিল।[1]

কবর পুজার শিরক পরকালে মানুষের ধ্বংশের কারণ, পৃথিবীতে তার সামাজিক অবক্ষয়, চারিত্রিক বিপর্জয়, ইত্যাদি বিষাক্ত পরিনতির অনুমান করা যাবে নিম্নে উল্লেখিত সংবাদ সমূহ থেকে।

১- বাহাদুল পুর জিলায় খাজা মাহকামুদ্দীনের মাজারে বাৎসরিক ওরসে আগত বাহাদুল পুর ইউনিভাসিটির দুই ছাত্রিকে আধ্যাত্মিক গুরুর ছেলে অপহরণ করেছে। পুলিশ আধ্যাত্মিক গুরুকে গ্রেপ্তার করেছে।[2]

২- রায়ভেন্ডে বাবা রহমত শাহের মাজারে ওরসের সময় ভেরাইটি প্রগ্রামের নামে সাত কেম্প জুড়ে চলছে মাদকতার প্রভাবে মাতলামী। ডজন ডজন যুবতী অশ্লীল নৃত্যের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে লুটে নিচ্ছে অর্থ, দর্শনার্থীরা টাকার ভান্ডিল নিয়ে এখানে পৌঁছে যায়, রাত ভর নুপুরের ঝন্‌কার আর মদ পানের পালা চলতে থাকে। সাইকেল সু প্রগ্রামে যুবক যুবতীদের নৃত্যের মাধ্যমে যৌনতার আহ্বান চলে। ওরসের নামে জুয়া, মদপান, অস্ররে মহড়া চলে। শহরের অধিবাসীদের বিরোধিতার পরও তা প্রতিরোধের কোন লক্ষন নেই।[3]

৩ - দাতা মিলি আরো মদপান, অশ্লীল গান ও নৃত্য, পুলিশ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ্যের সহযোগীতায় ডজন ডজন মদের আসর জমে উঠেছে। অশ্লীল গান ও নৃত্য দেখার জন্য ১০ বছরের বাচ্চা থেকে নিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ ও অসংখ্য হারে এখানে উপস্থিত হচ্ছে। মাদকতা, অশ্লীলতা, ভাং-এর আসর পরিস্থিতিকে সার গরম করে রেখেছে। শত শত নোট সেখানে উড়ানো হচ্ছে, এক এক গ্রুপের নায়ক নায়িকারা একে অপরের সাথে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত গলা গলি করছে, যুবকেরা তাদের পছন্দের নায়ক নায়িকাদেরকে বেছে রেখেছে, তার নাম নেয়া মাত্রই সে ইষ্টেজে এসে তাদেরকে মনরোঞ্জন করছে। এক নৃত্যশলায় নৃত্যরত অবস্থায় নায়ক নায়িকারা মাটিতে পরে গিয়ে ছিল আর এ দৃশ্য দেখতে গিয়ে নৃত্যশলার শত শত চেয়ার ভেঙ্গেছে।[4]

৪-ডাব্বা পীরেরা ভিনদেশী এজেন্টদের দায় দায়িত্বও পালন করতেছে। সরকারের উপরস্তদের সাথে গভীর সম্পর্ক, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ আসামীদেরকে রাজনৈতিক এবং সরকারী উচ্চ পর্যায়ের ভয়ে গ্রেপ্তার করতে পারেনা, তারা পীর মুরীদির আড়ালে অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত থাকে। দরবারের সাথে সমপৃক্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সমূহে রিতিমত অংশ গ্রহণ করে থাকে।[5]

৫-নারী দেহে তাবীজ প্রয়োগ কারী রাজপুত্র গ্রেপ্তার হয়েছে। আসামী ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত। বিভিন্ন থানার পুলিশ তাকে খুঁজতে ছিল, মুলতানে পীরের দরবার খুলে দান্ধা করছিল।[6]

প্রিয় পাঠক এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু নমুনা তুলে ধরা হল। মাজার, খনকা, আস্তানাসমূহের অবস্থা সাধারণ স্থান থেকে ভিন্ন এবং রঙিন। কোথাও মনোরঞ্জন চলে আবার কোথাও চলে প্রদর্শনী। এমন কবর ও মাজার সমূহে গেলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হবে? আখেরাতের স্মরণ কিভাবে হবে? আযাব ও সোয়াবের চিন্তা কি করে হবে। আল্লাহর ভয় কার অন্তরে পয়দা হবে। দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ কি করে পয়দা হবে। এ কারণেই ইসলামে কবরে মেলা, মাহফিল, মদের আসর জমানো, মাজার আবাদ করা, ওরস করা, ফুল বিশিষ্ট চাদর দেয়া, কবর বা মাজারকে চুমা দেয়া, কবর ও মাজারে সিজদা করা, কবরের চতুর্পার্শ্বে ত্বওয়াফ করা, কবরে কোরবানী করা, খাবার বন্টন করা, কবরে শায়িত ব্যক্তির নিকট নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করা, সম্পূর্ণ রুপে হারাম, বড় শিরক। যে সমস্ত আলেমগণ এসমস্ত কার্যকলাপকে জায়েজ বলে মনে করেন তাদের নিকট আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই যে, মেহের বানী করে একটু চিন্তা করুন যে, কবরকে রং ঢং করা, ওরস করা, নযরনেয়াজ পেশ করা, মান্নত মানা, দান-খয়রাত করা, মনের আশা পুরনের জন্য দরখাস্ত করা, ইত্যাদি অপকর্মের সাথে জড়িত নারী-পুরুষরা যে লজ্জাকর অশ্লীল সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে এর দায় দায়িত্য কে বহন করবে? কিয়ামতের দিন এর জওয়াব দেহিতা কে করবে?

দ্বিতীয়তঃ এসমস্ত ওলামাগনকে আমরা আরো একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই যে, একটি গ্রহণ যোগ্য বিষয় হল এই যে, ভাল কাজের ফল ভাল হয়, আর খারাপ কাজের ফল খারাপ হয়। এমন কখনো হয় নাই যে, আমের গাছে কলা হয়, আর কলা গাছে আম হয়। যদি মাজার ও খানকা সমূহে নযর নেয়াজ দেয়া, আশা পূরনের জন্য দরখাস্ত করা, ওরস ও মেলা বসানো ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে এ ভাল কাজ থেকে অশ্লীলতা অন্যায় অপরাধ কেন সৃষ্টি হচ্ছে? ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্থানে জুয়া ব্যভীচার, মদ পান, সহ অন্যান্য অপকর্ম থেকে তা পাক করার ব্যাপারে কি ওলামাগণ চেষ্টা করবে?

ফুটনোট

[1] - বিস্তারিত দেখুন মাজাল্লাতুত দাওয়াহ, সফর ১৪২২হিঃ মোবেক মে ২০০১ইং, লাহোর, পাকিস্থান।

[2] - রোজ নামা খবরে, লাহোর আক্টবর১৯৮২ইংং।

[3] - রোজ নামা, “নাওয়ে ওয়াক্ত” লাহোর, ৬ আগষ্ট ২০০১ইং।

[4] - খবরে রিপোর্ট, শাহারা বেহেশত, আমীর হামযা, পৃ-৭৯।

[5] - খবরে রিপোর্ট, শাহারা বেহেশত, আমীর হামযা, পৃ-৭৯।

[6] - খবরে রিপোর্ট, শাহারা বেহেশত, আমীর হামযা, পৃ-৬৭।

১২
মৃত্যুর পয়গাম
নিশ্চয় মৃত্যু একটি করুন ঘটনা, ঘরের কোন এক ব্যক্তি মারা গেলে হটাৎ করে জীবনের অনেক কার্যক্রম থেমে যায়। তার রেখে যাওয়া কত কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, কত স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে যায়। কত নাবালগ বাচ্চা এতিম হয়ে যায়, কত বৃদ্ধ পিতা-মাতা নিরুপায় হয়ে যায়, কত সোহাগিনী তার সোহাগ তেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, কত বোন তার ভায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় সাধারণত শোকাহতদের মাঝে দুইটি প্রতিকৃয়া দেখা যায়।

১-মৃত ব্যক্তিকে হারানোর চিন্তাঃ এটা মানুষের মানবিক স্বভাব গত ব্যাপার, ইসলামী সীমারেখার ভিতরে থেকে তার এ শোক প্রকাশ করা জায়েজ।

২-মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া কাজ কর্মঃ ঘরের কোন গুরুত্ব পূর্ণ ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে পরিবারের বাকী লোকদের জীবন যাপনে ভিগ্ন ঘটে, তার স্থলাভিসিক্ত নির্নিত হওয়া, ওয়ারিশদের ধন সম্পদ বন্টন করা, ইত্যাদি এমন এক বিষয় যে মানুষকে তা করতেই হয়। ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে দুনিয়াবী এ সমস্ত বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা এবং তার ব্যবস্থাপনা করা জায়েজ এবং তা অপরি হার্য। কিন্ত দুঃখ্য জনক বিষয় হল এই যে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা ইসলামের সীমারেখা পার হয়ে তাদের মন মস্তিস্ক এমন হয়ে যায় যে, মৃত্যুর মূল কথা তাদের স্মরণে থাকে না। হায়াত ও মওতের এ সংগ্রাম নিয়ে তারা এত ব্যস্ত থাকে যে, তারা ভাবার সুযোগ পায়না যে এদুইয়ের বাহিরে আর কোন কিছু আছে কি না? অথচ ওয়ারিশদের জন্য মূল পয়গাম হল এই যে, “আজ তার আর আগামী দিন তোমার পালা।” ফেরেশতা সকলের পিছনেই অপেক্ষা করছে।

আমাদের পূর্বসূরীদের মধ্যে এ ধরনের কত উদাহরণ অতিবাহিত হয়েছে যে, সুস্থ, ভাল লোক অভ্যাস মোতাবেক রাতে বিছানায় শুয়েছে, অথচ সকালে আর উঠতে পারে নাই কত লোক বাড়ি থেকে হজ্ব ওমরার উদ্যেশ্যে বের হয়, অথচ আর বাড়িতে ফিরে আসে না। কত বর যাত্রী সানাই নিয়ে বের হয়, অথচ ফিরার মুহূর্তে চলে তার মাতাম। কত মানুষ তার নিত্য নৈমত্বিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর সে মুহূর্তে তার ডাক চলে আসে, তখন সে ভাবেই সে চলে যায়, তার সমস্ত কাজ এলমেল ভাবে থেকেই যায়। জিন্দেগি আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তো যেমন “আজ ও কাল” বলার মত। এ সত্যতাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কত সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন।

اليوم عمل ولا حساب و غدا حساب ولا عمل

অর্থঃ “আজ আমলের সময় হিসাবের সময় নয়, আগামি দিন হিসাবের দিন আমলের নয়।” (বোখারী)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুল্লা বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে) উপদেশ দিতে গিয়ে বলেনঃ “আবদুল্লা! দুনিয়াতে মুসাফির বা পথিকের ন্যায় সময় কাটাও।” তাই আবদুল্লাবিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলতেনঃ “হে মানব মন্ডলী! যদি সন্ধা হয়ে যায় তাহলে সকাল পর্যন্ত তুমি বেচে থাকবে তা ভাবিওনা। আর যদি সকাল হয়ে যায় তাহলে সন্ধা পর্যন্ত তুমি বেচে থাকবে তাও ভাবিও না। সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে, গনীমত মনে কর। (বোখারী)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি চাটায়ের উপর খালী শরীরে শুয়ে ছিলেন এতে তাঁর শরীরে চাটায়ের দাগ পরে গেছে, তা দেখে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! যদি আপনি বলতেন তাহলে আমরা আপনার জন্য ভাল বিছানার ব্যবস্থা করে দিতাম।” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ “দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? দুনিয়ার সাথে তো আমার সম্পর্ক এতটুক যেমন কোন পথিক পথ চলার সময় কোন একটি গাছের নিচে শুয়ে আরাম করে তার ক্লান্তি দূর করে, আবার ক্লান্তি কেটে গেলে চলতে শুরু করে, আর গাছ তার যথাস্থানেই থেকে যায়। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)

দুনিয়াতে মানুষের ক্ষনস্থায়ী জিন্দিগীর কথা একটি উদাহরণের মাধ্যমে সুন্দর করে, অনুভব করা সম্ভব হবে এ দুনিয়া একটি পান্থ শালার ন্যায়, যেখানে পথিকরা কিছু সময়ের জন্য বসে আরাম করে, অতঃপর সামনে চলতে শুরু করে। পান্থশালায় কিছুক্ষনের জন্য আরাম গ্রহণ কারী মুসাফির এখানে জমিন ক্রয় করা, ব্যবসা করা, বাড়ি করা ইত্যাদি বিষয়ে কখনো চিন্তা করবে না। বরং লোভ হিন ব্যক্তি একথা চিন্তা করে যে এখানে একটু আরাম করতে পারলে ই হল। ক্ষনস্থায়ী জীবনের জন্য মানুষ কি ধোকায় পরে আছে, মাস বছর অতিক্রম হচ্ছে আর সে ভাবছে যে আমি যুবক হচ্ছি। অথচ প্রতি মুহূর্তে সে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

হে গাফেল! ঘড়ির ঘন্টা তোমাকে সতর্ক করছে,

যে তোমার জীবনের একটি ঘন্টা কমে গেছে।

যত সময় অতিক্রম করছে মনে করছে যে সে যুবক হচ্ছে, নিজের কামনা বাসনাকে পুরণ করার জন্য দিন রাতকে একাকার করে দিচ্ছে, জীবন খুব সুন্দর ও সুখময় মনে হয়। মানুষ ১৮/২০ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে, রাত দিন কাজ করে করে চুল সাদা হয়ে যায়, তখনো মানুষ চিন্তা করে যে আমি এখনো যুবকই আছি সময়ের স্রোত সফলতা, ব্যর্থতা, সুখ, দুখ, নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকে, আস্তে আস্তে মানুষ তার শক্তির অবনতি অনুভব করে, বার্ধক্য মৃত্যুর দরজায় নক করে, কিন্তু মৃত্যু থেকে গাফেল মানুষ জীবনের ক্রান্তি লগ্নে এসে ও তীব্রতা নিয়েই থাকে, আর চিন্তা করে যে এখনো সময় অনেক বাকী। দীর্ঘ কামনা-বাসনা, বিভিন্ন পদ লাভের আকাঙ্খা করতেই থাকে। ডলার, রিয়াল, দীনার, টাকা, রুপিয়া, প্লট, ফ্লাট, প্রাসাদ ইত্যাদির চক্করে জীবন চলতে থাকে, উচ্চ ভিলাস পূর্ণ জীবন যাপনের নেশায় রাত দিন অতিক্রম হতে থাকে, ডানে, বামে, সামনে, পিছনে, আত্মীয়- স্বজন মৃত্যু বরণ করতে থাকে, মানুষ বাহ্যিক শোক পালন করে, আবার জীবনের পিছনে ছুটতে শুরু করে, তার একথা ভাবার সুযোগই হয়না যে মৃত্যুর ফেরেশতা আমার জন্যও কোন সংবাদ রেখে গেছে। লিখিত বানী সামনেই থাকে কিন্ত দুনিয়া হাছিলে পাগল মনে তা পড়ার সুযোগ ই হয়না।

বলা হয়ে থাকে যে, কোন এক ব্যক্তির মালাকুল মাওতের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়ে ছিল। তখন সে মালাকুল মাওতকে বললঃ তুমি আমার নিকট আসার এক বছর পূর্বে আমাকে জানাবে, যে এত তারিখে তুমি আমার নিকট আসতেছ, যাতে করে আমি মৃত্যুর প্রস্তুতি নিতে পারি, মালাকুল মাওত তাকে ওয়াদা দিল বটে কিন্তু হটাৎ করে এক দিন শাহী ফরমান নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হয়ে গেল, মালাকুল মাওতকে হটাৎ সামনে দেখে সে আশ্চার্য হয়ে গিয়ে বললঃ তুমিতো একবছর পূর্বে আমার নিকট আসার ব্যাপারে ওয়াদা করে ছিলা, কিন্তু এখন হটাৎ করে চলে আসলা? মালাকুল মওত উত্তরে বললঃ এবছরের মাঝে আমি তোমার ওমক ওমক পরিচিত ব্যক্তি এবং ওমক ওমক আত্মীয় ও ওমক ওমক বন্ধুর নিকট এসে ছিলাম এবং তার মাধ্যমে তোমাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে তুমি ও প্রস্তুতি নিয়ে থাক, তোমার নিকট ও আমি আসব। আমি ভেবে ছিলাম যে তুমি যথেষ্ঠ বুদ্ধিমান অতএব তুমি ইশারায় তা বুঝে নিবে, কিন্ত তুমি এত বড় বোকা ছিলে যে তা বুঝতে পার নাই, তাহলে এখন আমার কি করার আছে? যখন মালাকুল মাওত মাথার নিকট এসে দাড়ায় তখন মানুষ চিন্তা করে যে, ৬০/৭০ বছরের জীবন চোখ ফিরাতেই শেষ হয়ে গেল, শৈসব তো গতকালই অতিক্রম করলাম, যৌবন এক সুন্দর স্বপ্নের মত চলে গেল, কি পেলাম আর কি হারালাম তার হিসাব নিকাসের সুযোগই হয় নাই... এত দীর্ঘ অথচ এত সংক্ষিপ্ত জীবন...! তখন মানুষ আফসোসের সাথে বলবেঃ হায়...চেয়ে নিয়ে ছিলাম চার দিনের জীবন,

তার দুদিন কেটেছে আশা আকাঙ্খায়

আর দু দিন কেটেছে অপেক্ষায়।

হায় আমাদের সামনে, পিছনে, ঘটে যাওয়া মৃত্যুর ঘটনাবলী থেকে যদি আমরা নিজের মৃত্যুর কথা স্মরনে নিতাম!

প্রিয় পাঠক! এটা আল্লাহ্ তা’লার অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহ যে তিনি আমার মত এক সাধারন, গোনাগার, জ্ঞান হিন, আমল হিন, মানুষকে “তাফহিমুস্‌ সুন্নাহ” নামে ১৭ টি গ্রন্থ লিখার তাওফীক দান করেছেন। এ বিষয়ে আমি যতই আল্লাহর প্রশংসা করিনা কেন, তা হবে প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ কল্যাণ মুলক কাজে, আমি আমার একনিষ্ঠ সাথী বর্গের ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যে তারা কখনো আমাকে আমার এ একনিষ্ঠ কাজে সহযোগিতা করা থেকে বঞ্চিত করে নাই। আল্লাহ তা’লার নিকট দুয়া করি যেন তিনি এ কল্যাণ মুলক কাজে অংশ গ্রহণ কারী, সকল সাথীদের কে, দুনিয়া ও আখেরাতে ইজ্জত দান করেন। আমীন!

পূর্বের ন্যায় সহীহ হাদীসের আলোকে তা লিখার চেষ্টা করা হয়েছে, এর পরও যদি কোথাও কোন ভুল জ্ঞানীদের চোখে ধরা পরে তাহলে তারা অনুগ্রহ পূর্বক অবগত করাবেন, যাতে করে আমি তার কৃতজ্ঞতা পরায়ন হতে পারি। পরবর্তী গ্রন্থ হবে “আলামতে কিয়মত কা বায়ান।” ইনশা আল্লাহ!

তাফহিমুস্‌সুন্নার এখনো প্রায় অর্ধেক কাজ বাকী আছে, কতটুক পূর্ণতা পাবে, আর কতটুকু না পাবে তার সঠিক জ্ঞান আল্লাহর নিকট, যদি আল্লাহ্ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে বাকী কাজ টুকু পূর্ণ করার তাওফীক এ গোনা গারকে দেন তাহলে তা হবে তাঁর একান্ত করুনা ও অতুলনীয় ক্ষমতা বলে,

وما ذلك على الله بعزيز

অর্থঃ আর তা আল্লাহর জন্য কঠিন কিছু নয়। প্রিয় পাঠক বর্গের নিকট একনিষ্ঠ দুয়ার দরখাস্ত থাকল।

الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات و ألف الف صلاة و سلام على افضل البريات و على اله و أصحابه اجمعين برحمتك يا ارحم الرحمين

মোহাম্মদ ইকবাল কীলানী (আফাল্লাহু আনহু)।

রিয়াদ, সৌদী আরব।

৪ঠা রবিউল আওয়াল ১৪২২হিঃ।

২৫ জুন ২০০১ ইং।

১৩
বারযাখী জীবন কেমন?
ভূমিকাঃ বারযাখী জীবন কেমন? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর এই যে এ ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সর্বাধিক অবগত আছেন, যে জিনিষ মানুষ কোন দিন দেখে নাই, যে ব্যাপারে মানুষের কোন অবিজ্ঞতা নেই, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কথা বলা মোটেও সম্ভব নয়। এর পরও কোন কোন হযরতগণ বারযাখী জীবন সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন যা মোটেও কিতাব ও সুন্নাত মোতাবেক নয়। যেমনঃ

১ - আওলিয়ায়ে কেরাম তাদের কবরে তারা স্থায়ীভাবে জীবিত আছেন, তাদের জ্ঞান, পঞ্চইন্দ্রিয় আগের চেয়ে বেশী গুণে সক্রিয় আছে।[1]

২ - শেখ আবদুল কাদের জিলানী (রাহিমাহুল্লাহ) সব সময় দেখেন এবং সকলের ডাক শোনেন।[2]

৩ - সে মৃত কিন্তু সব কিছু শোনেন এবং প্রিয় জনদের মৃত্যুর পর তাদেরকে সহযোগীতা করেন।

৪ - ইয়া আলী, ইয়া গাউস, বলা জায়েজ, কেননা আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বারযাখে থেকে তা শোনেন।[3]

৫ - ওলীগণ মৃত্যুর পর জীবিত থাকে, তাদের কার্যক্রম, কেরামাত, এবং তাদের ফয়েজ, রিতিমত চালু আছে, তাদের গোলাম, খাদেম, মাহবুব, এবং তাদের প্রতি সুধারণা পোষণ কারীরা এ থেকে উপকৃত হয়ে থাকে।[4]

৬ - আল্লাহর ওলী মৃত্যুবরণ করে না বরং এক ঘর থেকে অন্য ঘরে স্থানান্তরিত হয়, তাদের রুহ সমূহ শুধু একদিনের জন্য বের হয়, আবার তা তাদের শরীরে পূর্বের ন্যায় স্থাপিত হয়ে যায়।[5]

৭ - মাশায়েখ গণের রুহানিয়্যত থেকে উপকৃত হওয়া এবং তাদের সিনা ও কবর থেকে বাতেনী ফায়েজ লাভ করা জায়েজ।[6]

৮ - হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী স্বীয় মোরশেদ মিয়া হাজী নূর মোহাম্মদ সাহেবের মৃত্যুর সময় তার পার্শ্বেই ছিলেন, তিনি বলেনঃ “মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সময় যখন আপনি বলেছিলেনঃ যে পরকালের সফরের সময় চলে এসেছে, তখন আমি পালকীর কিনারা ধরে কাঁদতে ছিলাম, হযরত তখন আমাকে সান্তনা দিতে গিয়ে বললেনঃ “ফকীর মৃত্যুবরণ করেনা, বরং এক এক স্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয়, ফকীরের কবর থেকেও ঐ উপকার হাসীল করা যাবে যা সে জীবিত থাকা কালে তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে।”[7]

৯ - মাওলানা আহমদ ইয়ার (রাহিমাহুল্লাহ) দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কিন্ত স্মরণ রাখুন! সিলসিলা নখশা বন্দীয়া ওআইসিয়ার প্রতিষ্ঠাতা তিনিই ছিলেন এবং তিনিই থাকবেন। ওআইসিয়ার সম্পর্ক রুহ থেকে রুহের ফয়দা হাসিলের নাম। দুনিয়া হোক আর বারযাখ, রুহ থেকে একই রকমের ফায়দা হাসিল হয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে দুনিয়াতে সবাই তার খেদমতে উপস্থিত হতে পারত, আর বারযাখে এমন এক ব্যক্তির প্রয়োজন হয় যে তাকে বারযাখ পর্যন্ত পথ দেখাবে এবং ওখান পর্যন্ত লোকদেরকে পৌঁছাবে। আর একাজ ঐ লোকেরাই করতে পারে যারা ঐ হযরতদের খাদেম ছিল, ফয়েজ তারাই হাসিল করবে, তবে এ ফয়েজের বন্টন হয় খলীফাদের মাধ্যমে।[8]

১০ - হযরতজী (রাহিমাহুল্লাহ) (মওলানা ইয়ার খাঁন) মৃত্যুবরণ করেছেন, তার শরীর মোবারক তার রুমে আরাম করছিল, আর রুহ মোবারক উচ্চ ইল্লিয়ীনে আল্লাহর প্রতি মোতাওজ্জেহ ছিল, ফজরের নামায দরুল ইরফানে আদায় করেছেন, আর এখানে আমি তার আত্মাকে দরুল ইরফানের দিকে মোতাওজ্জেহ অবস্থায় দেখতে পেলাম, ভাই কণেল মতিলুব হুসাইন বার বার বলতে লাগলেন যে হযরত জীর কাছ থেকে কেন অনুমতি নিচ্ছেন না, যে তাকে দারুল ইরফানে দাফন করা হোক আমি অনুমতি পাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ চেষ্টা করতে গিয়ে বলেছি, যে হযরত আপনার পরিবার বর্গকে এখানে ঘর বানিয়ে দেই, তাহলে তারা ইনশাআল্লাহ পরিপূর্ণ ভাবে আরাম ভোগ করতে পারবে। কিন্ত না তিনি বললেনঃ জীবিত কালে বহু মানুষ আমার উপর নির্ভরশীল ছিল, আর আল্লাহ আমাকে তাদের আশ্রয় স্থল নির্ধারণ করেছেন, তুমি তাদের সবাইকে এখানে আনতে পারবে না, এখন আমার কবর তাদের জন্য ঐ রকম আশ্রয় স্থল হিসেবে কাজ করবে, যেমন আমার জীবিত কালে আমি তাদের প্রয়োজন পুরা করেছিলাম,[9]

১১ - আবুসাঈদ ফাররাজ বলেনঃ আমি মক্কা মোকররামায় ছিলাম সেখানে বানী শাইবা গেটে এক ব্যক্তির লাশ পরে ছিল, আমি যখন তার দিকে তাকালাম তখন সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁশি হাশতে লাগল এবং বললঃ হে আবুসাঈদ তুমি জাননা যে আল্লাহর মাহবুবরা জীবিত থাকে, যদিও বাহ্যিক ভাবে মৃত্যু বরণ করে, কিন্তু হাকীকতে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানন্তরিত হয়।[10]

উল্লেখিত আক্বীদা সমূহের মূল কথা হল মৃতরা শোনতে পায়। তাই আমাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে দেখতে হবে যে মৃতরা শোনতে পায় এটা কি সঠিক আক্বীদা না ভূল?

ফুটনোট

[1] - আমজাদ আলী লিখিত “বাহারে শরীয়ত পুঃ ৫৮।

[2] - মুফতী আবদুল কাদের লিখিত ইলাতুজ জালালাপূঃ ৭।

[3] - আনোয়ারুল্লাহ কাদেরী লিখিত ফতোয়া রেজবিয়া পৃঃ৫৩৭।

[4] - আহমদ ইয়ার খাঁন বেরলোভী লিখিত ফতোয়া রেজভীয়া, ৪খঃপৃঃ২৩।

[5] - একতেদার বিন আহমদ ইয়ার খাঁন বেরলভী লিখিত ফতোয়া নায়ীমিয়্যা পৃঃ ২২৫।

[6] - খলীল আহমদ সাহারান পুরী লিখিত আল মোহান্নাদ আলা আল মোনাফফাদ পূঃ ৩৯।

[7] - মাওলানা যাকারিয়া লিখিত তারিখ মাশায়েখে চিশত পৃঃ২৩৪।

[8] - মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম লিখিত এরশাদুস্‌সালেকীন ১/খঃ পৃঃ ২৫।

[9] - মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম লিখিত ইরশাদুস্‌সালেকীন পৃঃ২০।

[10] - রিসালা আহকাম কবুরুল মুমেনীন, ২/খঃ পৃঃ২৪৩।

১৪
কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে মৃত ব্যক্তির শ্রবণ
মানব জীবনকে শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১- আলমে আরওয়াহঃ আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টির পর আল্লাহ্ তা’লা তার পিঠ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগন্তক সমস্ত বংশধরদের রুহ সৃষ্টি করলেন, তাদেরকে জ্ঞান ও বাক শক্তি দিয়ে তার রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্বের) স্বীকৃতি এভাবে নিলেনঃ الست بربكم আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? সমস্ত রুহেরা উত্তর দিল “ بلى ” আবশ্যই! এ আলমে আরওয়াহ থেকে মানব জীবনের প্রথম সফর শুরু হয়।[1]

২ - মায়ের জরায়ু জগৎঃ

জরায়ুতে রুহের সাথে মানুষের শরীর ও গঠিত হয়। এখানে মানুষ মোটামুটি নয় মাস সময় অতিবাহিত করে। আল্লাহ্ তালা কোর‘আন মাজীদে মায়ের জরায়ুতে মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন।

حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّ وَضَعَتۡہُ کُرۡہًا

অর্থঃ তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে। (সূরা আহ ক্বফ -১৫) মানব জীবনে সফরের এটা দ্বিতীয় স্তর।[2]

৩ -জীবন জগৎ (পৃথিবী)

জীবন সফরের এটা তৃতীয় স্তর, যেখানে মানুষ অল্প সময়ের জন্য অবস্থান নেয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মতের হায়াত ৬০থেকে ৭০ বছরের মাঝে, (তিরমিযী)

মোটা মুটি এতটুকু সময় মানুষ পৃথিবীতে অবস্থান করে এর পর শুরু হয় তার সফরের পরবর্তী স্তর।

৪ - আলমে বারযাখঃ আলামে বারযাখে আমাদের সফরের সময়কাল দুনিয়ার তুলনায় লম্বা হবে, এ সফর কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

৫ - পরকালঃ এ হবে আমাদের সফরের সর্বশেষ স্তর, যেখানে মানুষ পৃথিবীতে দেয়া তার এ শরীর ও প্রাণ নিয়ে উঠবে, হিসাব-কিতাব হবে, মানুষ তার প্রকৃত অবস্থান স্থল, জান্নাত বা জাহান্নামে চির দিনের জন্য অবস্থান নিবে। উল্লেখিত পাঁচটি স্তর নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, একটি স্তর অন্য স্তর থেকে ভিন্ন। যেমন প্রথম স্তরে আল্লাহ্ তা’লা সমস্ত রুহ দেরকে প্রশ্ন করেছেন যে, আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? রুহেরা একথা শোনে, চিন্তা করে বুঝে, বলে ছিল অবশ্যই। রুহ জগৎ এর শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলা কি দুনিয়ার শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলার মত ছিল? স্পষ্ট যে তা এরকম ছিল না। কেননা সেখানে আমাদের রুহ এ শরীরের বাহিরে ছিল, অতএব ওখানের শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলা দুনিয়ার চিন্তা, বুঝা এবং বলা থেকে ভিন্ন ছিল। রুহ জগতে রুহদের শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলার উপর আমাদের ঈমান (বিশ্বাস আছে। কিন্তু তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। এখন আসুন দ্বিতীয় স্তরের কথায়, মায়ের জরায়ু, যেখানে মানুষের শরীর তৈরি হয়। রুহ ও শরীর সংমিশ্রিত হয়।

দিল, দেমাগ, চোখ, নাক, কান, সবকিছু তৈরি হয়, কিন্তু জরায়ু জগৎ বাহিরের জগৎ থেকে এতটা পার্থক্য পূর্ণ হয় যেমন কোন বাচ্চাকে যদি বলা হয় যে তুমি কিছু দিন পরে এমন এক দুনিয়ায় প্রদার্পন করবে, যেখানে বহু মাইল ব্যাপী লম্বা, প্রশস্ত, আসমান রয়েছে, চক্ষু দৃষ্টির বাহিরে প্রশস্ত জমিন, এ বিশাল জমিনের চেয়েও বড় এক গোলাকৃতির আগুনের টুকরা...সূর্য প্রতি দিন আকাশের এক পার্শ্বে উদিত হয়ে সারা পৃথিবীকে আলোক ময় করে তোলে। আবার কিছুক্ষন পর সে অস্তমিত হয়ে যায়, ফলে সারা পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে যায়। রাতের আকাশে সুন্দর উজ্জল চাঁদের উদয় ঘটে, এর সাথে অসংখ্য ছোট ছোট তারকারাজী চমকাতে থাকে, বলুন তো মায়ের ছোট্ট জরায়ুতে অবস্থান কারী বাচ্চা কি এ সত্যতাকে বিশ্বাস করবে? মূলত মায়ের ছোট্ট জরায়ুতে থেকে, এ দুনিয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ্ তা’লা মানুষের এ অবস্থা সম্পর্কে, কোর‘আন মাজীদে, অল্প কথায় অত্যন্ত সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ

وَ اللّٰہُ اَخۡرَجَکُمۡ مِّنۡۢ بُطُوۡنِ اُمَّہٰتِکُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا

অর্থঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে তখন তোমরা কিছুই জানতে না। (সূরা নাহাল-৭৮)

এখন চলুন চতুর্থ স্তর আলামে বারযাখের দিকে। কিতাব ও সুন্নাত থেকে আলামে বারযাখ সম্পর্কে আমরা যা জানতে পারি তা নিম্ন রুপঃ

১ - মৃত ব্যক্তি কথা বলেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মৃত্যুর পর সৎলোকেরা বলতে থাকে যে আমাকে জলদি নিয়ে চল, আমাকে জলদি নিয়ে চল।” আর খারাপ লোক বলতে থাকে যে, আফসোস! আমাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ, (বোখারী)

এ হাদীস থেকে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তি কথা বলার কথা প্রমাণিত হয়। মোন কার নাকীরের প্রশ্নের উত্তরে মোমেন ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমানদার বলে সাক্ষী দেয়। আর কাফের মোনাফেক বলে যে, আমি কিছুই জানিনা। (বোখারী, আবুদাউদ, ইত্যাদি)

এ হাদীস সমূহ থেকে যেখানে একথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি কথা বলে সেখান থেকে একথা ও প্রমাণিত হয় যে, কথা বলার মধ্যে কোন প্রকার বুযুর্গী বা কোন ওলীর কোন বাহাদুরী নেই। মৃত ব্যক্তি চাই মোমেন হোক বা কাফের, ভাল হোক আর পাপী হোক, সকলেই কথা বলবে।

২ -মৃত ব্যক্তি শোনেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন মোমেন বা কাফের বান্দাকে কবরে দাফন করে জীবিত লোকেরা ফেরৎ আসতে থাকে তখন মৃত ব্যক্তি তার সাথীদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। (মুসলিম)

কবরে মোনকার নাকীরের প্রশ্ন মৃত ব্যক্তি শোনে এবং তার ঈমান অনুযায়ী তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়। (দেখুন ৭৪ নং মাসআলা)

বদরের যুদ্ধের পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদরের যুদ্ধে নিহতদেরকে সম্ভোধন করে বলে ছিলেন তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিল তাকি তোমরা সত্য পেয়েছ? আমার সাথে আমার রব যে ওয়াদা করে ছিল তা আমি সত্য পেয়েছি। ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল! তারাকি শোনে বা উত্তর দেয়? এরা তো মৃত্যু বরণ করেছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আমি তাদেরকে যা কিছু বলছি তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শোনতেছ না। অবশ্য তারা আমাদের মত উত্তর দিতে পারে না। (মুসলিম)

এ হাদীস সমূহ থেকেও একথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি শোনে এবং তাদের এ শোনা কোন বুযুর্গী বা ওলীর বাহাদুরী নয়। বরং প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি, চাই কাফের হোক আর মোমেন হোক সকলেই শোনে থাকে।

৩ - মৃত ব্যক্তি দেখতে পায়ঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তরে সফল কাম হওয়ার পর মোমেন ব্যক্তিকে প্রথমে জাহান্নাম দেখানো হবে, অতঃপর জান্নাতে তাকে তার ঠিকানা দেখানো হবে। আর কাফেরকে প্রথমে জান্নাত দেখানো হয়, অতঃপর তাকে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। (আহমদ, আবুদাউদ,) এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি মোমেন হোক আর কাফের হোক সে দেখতে ও পায়।

৪ - মৃত ব্যক্তি উঠা বসাও করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মোন কার নাকীর কবরে এসে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসায়। (বোখারী, মুসলিম, আহমদ)

৫ - মৃত ব্যক্তি আরাম বা কষ্ট অনুভব করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন মোনকার নাকীর কাফেরকে উঠিয়ে বসায় তখন সে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। অথচ মোমেন ব্যক্তি কোন প্রকার ভয় ভীতি হিন হয়ে উঠে বসে (আহমদ)। তিনি আরো এরশাদ করেনঃ জাহান্নামে স্বীয় ঠিকানা দেখার পর কাফের ব্যক্তির চিন্তা ও লজ্জা আরো বৃদ্ধি পায়, অথচ জান্নাতে তার ঠিকানা দেখার পর মোমেন ব্যক্তির আনন্দ আরো বৃদ্ধি পায়। (ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, হাকেম)

৬ - মৃত ব্যক্তি আশা আকাঙ্খা পেশ করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মোমেন ব্যক্তিকে যখন কবরে জান্নাত দেখানো হয় তখন সে এ আকাঙ্খা করে যে আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি আমার পরিবার পরি জনদেরকে এ সুপরিনতির কথা বলে আসি। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে মোমেন ব্যক্তি এ কামনা করে যে হে আমার প্রভূ কিয়ামত দ্রুত কায়েম কর, অথচ কাফের ব্যক্তি এ কামনা করে যে, হে আমার প্রভূ কিয়ামত কায়েম কর না। (আহমদ, আবুদাউদ)

এসমস্ত হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির আশা আকাঙ্খা প্রকাশের কথা প্রমাণিত হয়।

৭ -মৃত ব্যক্তি ঘুমায় এবং জাগেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোমেন ব্যক্তিকে প্রশ্ন উত্তরের পর বলা হবে নতুন বরের ন্যায় ঘুমিয়ে যাও, যেখান থেকে তার পরিবারের প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ তাকে উঠাতে পারবে না। (তিরমিযী)

এখান থেকে মৃত ব্যক্তির ঘুমানো এবং কিয়ামতের দিন উঠার কথা প্রমাণিত হয়।

৮-মৃত ব্যক্তি চিন্তে পারেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোমেন ব্যক্তির নিকট একজন সুন্দর চেহারা সমপন্ন লোক সুন্দর পোশাক পরে, উন্নত মানের সুগন্ধি মেখে এসে মোমেন ব্যক্তিকে তার। সুপরিনতির সংবাদ দিতে আসবে, মোমেন ব্যক্তি তখন তাকে জিজ্ঞেস করবে যে কে তুমি? তোমার চেহারা কত সুন্দর তুমি কল্যাণ নিয়ে এসেছ, সে ব্যক্তি বলবে আমি তোমার নেক আমল। কাফেরের নিকট এক কুৎসিত চেহারা সমপন্ন, ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায়, দূর্গন্ধময়, লোক এসে বলবেঃ তুমি তোমার খারাপ পরিণতির সু সংবাদ গ্রহণ কর, এ ঐ দিন যার ওয়াদা তোমাকে পূর্বে দেয়া হয়েছিল, কাফের তখন জিজ্ঞেস করবে কে তুমি? তুমি খারাপ চেহারা সমপন্ন, দূর্গন্ধময়, তুমি অকল্যাণ নিয়ে এসেছ, সে বলবেঃ আমি তোমার বদ আমল। (আহমদ, আবু দাউদ)

এহাদীস থেকে মৃত ব্যক্তি লোকদেরকে চিন্তে পারার কথা প্রমাণিত হয়।

৯ - মৃত ব্যক্তি উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে কাফেরের জন্য অন্ধ মুক ফেরেশতা নির্ধারন করে দেয়া হয়, সে তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে প্রহার করতে থাকে, আর তখন কাফের উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করতে থাকে। কাফেরের এ কান্না কাটির আওয়াজ মানুষ এবং জ্বিন ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পায়। (আহমদ, আবু দাউদ)

এ হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করার কথা প্রমাণিত হয়।

১০- মোমেন মৃতরা জীবিত এবং তারা পানাহার করেঃ আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ করেন?

وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾ۙ

অর্থঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। (সূরা আল ইমরান ১৬৯)

কিতাব ও সুন্নাতের উল্লেখিত দলীল প্রমাণ সমূহ থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, বারযাখের জীবন একটি পরিপূর্ণ জীবন, যেখানে মৃত ব্যক্তি খায়, পান করে, শোনে, কথা বলে, দেখে, চিনে, চিন্তা করে, বুঝে, আরাম আনন্দ উপভোগ করে, উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করে। কিন্ত বারযাখে মৃত ব্যক্তির কান্না কাটি করা দুনিয়ার কান্না থেকে ভিন্ন, বারযাখে মৃত ব্যক্তির দেখা এবং চিনা দুনিয়ার দেখা এবং চিনা থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির পানাহার দুনিয়ার পানাহার থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির চিন্তা করা ও বুঝা দুনিয়ায় চিন্তা করা ও বুঝা থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির আরাম ও আনন্দ উপভোগ করা, দুনিয়ায় আরাম আনন্দ উপভোগ করা থেকে ভিন্ন। কাফেরের পরকালে লজ্জাবোধ দুনিয়ার লজ্জা বোধ থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করা দুনিয়ায় উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করা থেকে ভিন্ন। যা এখন পৃথিবীতে বেচেঁ থাকা অবস্থায় আমাদের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। মূলত আলমে আরওয়াহর অবস্থা যেমন আমাদের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়, বা মায়ের জরায়ুতে লালিত শিশু বাচ্চার যেমন এ দুনিয়ার অবস্থা অনুভব করা কষ্টকর, এমনি ভাবে এ দুনিয়ায় থাকা কালে বারযাখের অবস্থা অনুভব করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোর‘আন মাজিদে এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত বলনা, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পারনা। (সূরা বাকারা -১৫৪)

আল্লাহ্ তা’লার এ স্পষ্ট ঘোষনার পরও যে সমস্ত হযরতদের এ হঠকারিতা আছে যে সে বারযাখী জিন্দিগীর অনুভুতি রাখে এবং জানে যে মৃতরা সেখানে এরকম ই শোনে, যেমন পৃথিবীতে শোনত, মৃত ঐ রকমই বলে যেমন পৃথিবীতে বলত, ঐ রকমই খায় যেমন পৃথিবীতে খেত, তাদের বিশ্বাস শুধু যে বিবেকের ফায়সালায় ভুল তা নয় বরং কোর’আন মাজীদের উল্লেখিত আয়াতটিকেও স্পষ্ট ভাবে তারা অস্বিকার করছে। পরিশেষে আমরা “মৃতরা শোনতে পায়” একথার দাবীদারদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে বারযাখে মৃত ব্যক্তি (চাই মোসলমান হোক আর কাফের, ভাল হোক আর পাপী, ওলী হোক আর সাধারণ) সকলেই শোনবে, বলবে, দেখবে, জিজ্ঞেস করবে, চিনবে, মোমেন হলে সে আরাম আনন্দ উপভোগ করবে, দ্রুত কিয়ামত কায়েম হওয়ার জন্য দুয়া করবে। ইত্যাদি কোর‘আন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এরপরও কেন শুধু ওলীদের শোনার কথাই আলোচিত হয়, সর্ব সাধারনের সোনার কথা আলোচনায় আসে না? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই যে, ওলীরা শোনেন এটাই শুধু আলোচিত হয় কেন, তাদের বলা, দেখা, জিজ্ঞেস করা, আরাম আনন্দ উপভোগ, পানাহার, ইত্যাদি কেন আলোচনা হয়না? এর কারণ খুবই স্পষ্ট যে, বারযাখে ওলীদের শোনাকে ভীত্তি করেই তাদের মাজারে উপস্থিত হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দূয়া করা, বিপদাপদে তাদের স্মরনাপন্ন। হওয়া, তাদের মাধ্যমে গোনাহ সমূহ মাফ করানোর আক্বীদা পোষন করা হয়।

আর এ আক্বীদার উপর ভীত্তি করেই মানুষের কাছ থেকে নযর নেয়াজ হাসিল করা হয়ে থাকে। যদি মানুষকে পরিস্কার ভাবে একথা বলে দেয়া হয় যে, মৃতরা বারযাখে শুধু শোনে তাই নয় বরং তারা সেখানে কথা বলে, দেখে, চিনে, পানাহার করে, আরাম আনন্দ উপভোগ করে, কিন্তু এগুলি দুনিয়ার জীবনের মত নয়। বরং তা এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাহলে এর ফল দারাবে এই যে, খানকার ব্যবসা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ হয়ে যাবে, মাজারের চাকচিক্য ও ওরস চলবেনা, দরগার প্রভাব প্রতিপত্তি, ঠিকাদারিত্ব থাকবেনা। আধ্যাত্মিক গুরু গদ্দীনসিন, খাদেম, দরবেশ, মোজায়ের, ইত্যাদি পদাধিকারীরা সাধারণ মানুষের মত পেটের দায়ে কঠিন পরিশ্রম শুরু করতে হবে। আরামের আবাস ছেড়ে কে ঘাম ঝড়াতে যাবে!

ফুটনোট

[1] - বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ-১৭২

[2] - বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা নাহল-৭৮। সূরা মোমেনুন-১৪। সুরা লোকমান-১৪।

১৫
শহীদ গনের পরকালীন জীবন
কোর‘আন মাজীদের দুই জায়গায় আল্লাহ তালা শহীদদেরকে জীবিত বলেছেন এবং সাথে সাথেই তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এদুটি আয়াত যারা বলে যে মৃতরা শোনে তাদের বড় দলীল। ইমাম আহলুসসুন্নাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী স্বীয় গ্রন্থে নিম্নে উল্লেখিত ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন। “দুই ভাই আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ হয়েছে, তাদের তৃতীয় আরেক ভাই ছিল, যে জীবিত ছিল, যখন তার বিয়ের দিন আসল তখন ঐ উভয় শহীদ ভাই তার বিয়েতে অংশ গ্রহনের জন্য তাশরীফ নিলেন। তৃতীয় ভাই আশ্চার্য হয়ে বললঃ তোমরা তো মৃত্যুবরণ করেছ, তারা বললঃ আল্লাহ্ আমাদেরকে তোমার বিয়েতে অংশ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেছেন। অতঃপর এ দুই ভাই তাদের তৃতীয় ভায়ের বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে আবার আলমে বারযাখে ফেরত চলে গেল।

শহীদ, ওলী, সৎলোকদেরকে তাদের কবর সমূহে জীবিত বলে প্রমাণ করার পর তাদের নিকট প্রয়োজন মিটানোর জন্য দূয়া করা, বিপদাপদে তাদের স্মরনাপন্ন হওয়া, তাদের নামে নযর নেয়াজ করা, তাদের মাজারে এটা সেটা দান করা, ওরস করা, জায়েজ বলে প্রমাণিত করা হয়। এখানেও “মৃতরা শোনতে পায়” একথার দাবীদাররা ঐ ভ্রান্তিতে আছে যা আমি পূর্বের পৃষ্ঠা সমূহে উল্লেখ করেছি। যে তারা শহীদদের বারযাখী জিন্দেগিকে দুনিয়ার জিন্দেগির মত মনে করে। বারযাখে তাদের পানাহারকে দুনিয়ার পানাহারের ন্যায় মনে করে।[1]

বারযাখে তাদের শোনা ও বলাকে দুনিয়ায় তাদের শোনা ও বলার মত মনে করে। একথা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি যে বারযাখের জীবন একটি পরিপূর্ণ জীবন, যেখানে মৃতদের পানাহার, বলা, শোনা, দেখা, চিনা, চিন্তা, আনন্দ আরাম উপভোগ করা ইত্যাদি প্রমাণিত। কিন্তু এগুলি দুনিয়ার পানাহার, জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বলা, শোনা, দেখা, চিনা, চিন্তা, আনন্দ আরাম উপভোগ করা ইত্যাদি, থেকে ভিন্ন। আমরা পূর্বে উল্লেখিত দুটি আয়াতের শানে নুযুল থেকে মূল বিষয়টি বুঝার ব্যাপারে অনেক সহযোগীতা পাব। তাই আমরা এখানে পূর্বে উল্লেখিত আয়াত দুটির শানে নুযুল উল্লেখ করব। সূরা বাকারার এ আয়াত–

وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত বলনা, বরং তারা জীবিত, কিন্ত তোমরা তা অনুভব করতে পারনা? (সূরা বাক্বারা -১৫৪)

এ আয়াতে শহীদ গণকে জীবিত বলার পেক্ষাপট হল এই যে, বদরের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ কারী সাহাবাগণ সম্পর্কে কাফেররা বলেছিল যে, ওমক ওমক মারা গেছে এবং জীবনের আরাম আয়েশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরই উত্তরে আল্লাহ তা’লা এ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। শহীদদেরকে মৃত বলনা বরং তারা জীবিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) নিকট এ আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হল, তখন তিনি বললেনঃ শহীদগণের রুহ সবুজ পাখীর আকৃতিতে এমন এক বেলুনের মধ্যে থাকে যা আল্লাহর আরশের সাথে জুলন্ত।

যখন মন চায় তখন জান্নাতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে চলে যায় আবার ঐ বেলুনে ফিরে আসে। এক বার আল্লাহ্ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে তোমাদের কি কোন মনবাসনা আছে? শহীদ গণের রুহেরা উত্তরে বললঃ জান্নাতের যেখানে খুশী সেখানেই আমরা যাই, এর পর আমরা আর কি চাই। আল্লাহ্ তালা তাদেরকে তিন বার এ প্রশ্ন করলেন, অতঃপর শহীদ গণের রুহ যখন দেখলো যে উত্তর দেয়া ব্যতীত মুক্তি নেই তখন তারা বললঃ হে আল্লাহ আমরা চাই যে আমাদের রুহ সমূহকে আমাদের শরীরে ফেরত দেয়া হোক আর আমরা দ্বিতীয় বার আল্লাহর পথে শহীদ হই। যখন আল্লাহ দেখলেন যে তাদের আর কোন চাহিদা নেই তখন তাদেরকে ছাড়লেন। (মুসলিম)

সূরা আল ইমরানের আয়াতঃ

وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾ۙ

অর্থঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। (সূরা আল ইমরান ১৬৯)

এ আয়াতে শহীদ গণকে জীবিত বলার প্রেক্ষাপট এই যে, উহুদের যুদ্ধে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার মোশরেকদের সাথে মদীনা শহরের বাহিরে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মোনাফেকরা এ বলে যুদ্ধের ময়দান থেকে দূরে সরে পরল যে, মদীনা শহরে থেকে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় নাই। তাই আমরা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করব না। যুদ্ধের পর মোনাফেকরা বলতে লাগল যে, যদি আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হত, তাহলে এ যুদ্ধে মোসলমানরা মার খেতনা। মোনাফেকদের এদৃষ্টি ভঙ্গির উত্তর আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে দিলেন। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়।

উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ কারি আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) কথা হাদীসে এসেছে যে, আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) ছেলে যাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে যাবের আমি কি তোমাকে ঐ কথা বলবনা, যে আচরণ আল্লাহ্ তা’লা তোমার পিতার সাথে করেছেন? যাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললঃ কেন না? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’লা কোন ব্যক্তির সাথে পর্দার আড়াল ব্যতীত কোন কথা বলেন নাই, কিন্ত তোমার পিতার সাথে সরাসরী কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে হে আমার বান্দা! যা মন চায় তা আমার নিকট চাও আমি তোমাকে তা দিব।

তোমার পিতা বলছে। হে আমার রব! আমাকে পুনরায় জীবিত কর যাতে করে আমি তোমার পথে যুদ্ধ করে আবার শাহাদাত বরণ করতে পারি। আল্লাহ তা’লা বললেনঃ এ সিদ্ধান্ত তো আমি পূর্বেই দিয়েছি যে, মৃত্যুর পর দুনিয়াতে আর ফেরত আসা যাবে না। তখন তোমার পিতা আবার বললঃ হে আমার রব! আমার পক্ষ থেকে দুনিয়া বাসীকে একথা জানিয়ে দিন যে, আমি এ কামনা করেছি, যে আমাকে পুনরায় জীবিত কর, যাতে করে আমি তোমার পথে যুদ্ধ করে আবার শাহাদাত বরণ করতে পারি। তখন আল্লাহ্ তা’লা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন যে, যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। (সূরা আল ইমরান ১৬৯) (ইবনে মাজাহ)

সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরানের আয়াতদ্বয় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়।

১ - শহীদ গণের শরীর কবরে থাকে আর তাদের রুহ শাহাদাতের পর সরাসরী জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়।

২ - শহীদ গণের রুহ জান্নাতে প্রবেশের পর পৃথিবীতে ফেরত আসা সম্ভব নয়। কিতাব ও সুন্নাতের উল্লেখিত দলীল সমূহের সাথে সাথে, নিম্নোক্ত বিধান গুলির প্রতি ও একটু দৃষ্টি দিন, যা এ বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করবে, যে শহীদ গণের বারযাখী জীবন এপৃথিবীর জীবনের মত নয়।

ক - শহীদ, ওলীগনের মৃত্যুর পর তাদের বিধবা স্ত্রীর জন্য অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ, যেমন সাধারণ কোন মোসলমান মৃত্যু বরণ করলে, তার স্ত্রীর জন্য অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ। যদি শহীদ ও ওলীগণ জীবিত থাকে তাহলে তাদের স্ত্রীদের জন্য অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুমতি কেন দেয়া হল?

খ - শহীদ, ওলীগণ মৃত্যুর পর তাদের সম্পদ তাদের উত্তর সূরীদের মাঝে এমন ভাবে বন্টন করা হয়, যেমন কোন সাধারণ মোসলমান মারা গেলে তার সম্পদ সমূহ, তার উত্তর সূরীদের মাঝে বন্টন করা হয়। যদি শহীদ ও ওলীগণ জীবিত থাকে তাহলে তাদের সম্পদ তাদের উত্তর সূরীদের মাঝে কেন বন্টন করার নির্দেশ দেয়া হল।

গ - শহীদ ও ওলীগণের মৃত্যুর পর তাদের জন্য জানাযার নামাযে এমন ভাবে মাগফেরাত কামনা করে দূয়া করা হয় যেমন সাধারণ কোন মোসলমান মারা গেলে তার জানাযার নামাযে মাগফেরাত কামনা করে দূয়া করা হয়।

ঘ - শহীদ ও ওলীগণ মৃত্যুবরন করার পর তাদেরকে এমন ভাবে কবরে দাফন করা হয়, যেমন কোন এক জন সাধারণ মোসল মান মারা গেলে দাফন করা হয়। যদি শহীদ ও ওলীগণ মৃত্যুর পর দুনিয়ার মতই জীবিত থাকে তাহলে তাদেরকে দাফন করার নির্দেশ কেন দেয়া হল?

শহীদ গণের বারযাখী জীবন সম্পর্কে কোর‘আন ও সুন্নার বর্ণনা এত স্পষ্ট যে সাধারণ কোন শিক্ষিত মোসলমানও তা বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বর্ণনা সমূহের আলোকে শহীদ ও ওলীগণের রুহ তাদের কবর সমূহে নেই। বরং তা জান্নাতে বা ইল্লীয়ীনে আছে। আর তারা জান্নাত বা ইল্লীয়ীন থেকে দুনিয়াতে ফেরত আসতে পারবে না, না তারা কারো কোন আহ্বান শোনে, না কোন মনবাসনা পুরনের জন্য কোন দূয়াকারীর ডাকে সারা দিতে পারে। না কোন মোরাকাবা মোশাহাদার মাধ্যমে কোন কিছু জানতে পারে। না তারা কোন কথাবার্তা বলতে পারে। এ ধরনের বাতিল, বিত্তীহিন কথার দাবী এমন লোকেরাই করতে পারে, যার মূল লক্ষ উদ্দেশ্য শুধু দুনিয়ার সম্পদ অর্জন ও মর্যাদা হাসিল করা। আর যে আল্লাহ্‌র নিকট জওয়াব দেহিতার কথা একেবারেই ভুলে গেছে।

ফুটনোট

[1] - মাজমূয়া রাসায়েল আ’লা হযরত। ১ম খঃ পৃঃ ১৭৫

১৬
রাসূল (সাঃ) বারযাখী জীবন
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) বারযাখী জীবন সম্পর্কে মোসল মানদের মাঝে দুটি দল দেখা যায়। এক দলের নিকট রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় কবরে এমন ভাবে জীবিত আছেন যেমন ভাবে তিনি পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। অন্য দলের মতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন ভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন, যেমন ভাবে অন্যান্য মানুষ মৃত্যু বরণ করে। অতএব এখন তিনি জীবিত নন বরং মৃত। প্রথম দলটির কিছু আকীদা নিচে পেশ করা হলঃ

১ - আম্বীয়া আলাইহিস্‌সালাম গণের বারযাখী জীবন দুনিয়াবী জীবনের ন্যায় প্রকৃত, তাদের উপর আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্য তারা ক্ষনিকের জন্য মৃত্যু বরণ করেছিল বটে, কিন্তু পরক্ষনেই তাদেরকে পূর্বের ন্যায় জীবন দেয়া হয়েছে।[1]

২ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) জীবন ও মৃত্যুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। স্বীয় উম্মতদেরকে দেখেন, তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। তাদের নিয়্যত এমন কি মনের কথাও জানেন।[2]

৩ - আম্বীয়া (আলাইহিস সালাম) দের পবিত্র কবরে তাদের পবিত্র স্ত্রী গণকে পেশ করা হয় এবং তারা তাদের সাথে রাত্রি যাপন করে।[3]

৪ - ইমাম ও কুতুব সায়্যেদেনা আহমদ রেফায়ী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) পবিত্র রওজা মোবারকের সামনে দাড়িয়ে আরয করল যে, হাত মোবারক পেশ করুন, যাতে করে আমার ঠোঁট সেখানে স্পর্শ করে ধন্য হতে পারে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাত রওজা মোবারক থেকে বের হল, আর ইমাম রেফায়ী তাতে চুমু খেলেন।[4]

৫ - সন্ধা সাড়ে ছয়টার সময়, নবুয়তের দরবার খুব সাজ-সজ্জাময় ছিল, ২৫ বছর ধরে দরবারে নবুয়তে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছে, সম্মানিত দুই শাইখ আবু বকর ও ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সে দিকে খুবই মোতাওয়াজ্জেহ পরায়ন (মুখ করে থাকা) পেলাম, বিশেষ ভাবে হযরত জী মাওলানা আল্লাহ ইয়ার খাঁন সে দিকে অত্যন্ত নিমগ্ন ছিলেন, আমিও তাদের সহযাত্রী ছিলাম, হযরত জীর শরীরে খুব উন্নত মানের পোশাক ছিল, আর মাথার তাজ ছিল অত্যন্ত উজ্জল। তিনি বিশেষ আকর্ষণীয় ছিলেন, রহমতের নবী মুচকি হাসি হেসে তার প্রতি রহমত বর্ষন করছিলেন, আমি চিন্তা করছিলাম, সম্মানের যে অপূর্ব অবস্থানে তিনি আছেন তাতে মনে হচ্ছিল যে, হযরত জী আজ কোন বিশেষ পদভী লাভ করছেন। এ অবস্থা সাড়ে ছয়টা থেকে পোনে আটটা পর্যন্ত বিদ্ধমান ছিল।[5]

৬ - স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) সাথে আমার বায়াত বিনা মাধ্যমে এমন ভাবে হয়েছে যে, আমি দেখতে পেলাম যে একটি উচু স্থানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রওনাক বখশ হয়ে আছেন, আর সায়্যেদ আহমদ শহীদের হাত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাতের মধ্যে ছিল। ঐ স্থানে আমিও আদবের সাথে দাড়িয়ে আছি, হযরত সায়্যেদ তখন আমার হাত নিয়ে হুজুরের (রাসূলের) হাতে দিয়ে দিলেন।[6]

৭ - হযরত জী মাওলানা আল্লাহ ইয়ার খাঁন উন্মুক্ত আলোচনায় বলতেন যে, আমাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাড়ী সেব করা কোন ব্যক্তিকে দরবারে নবুবীতে সাথে নিতে নিষেধ করেছেন। মূলত হযরত জী ইচ্ছা করে কখনো তা করতেন না, আর এ সতর্কতার পর অবস্থা এ দাড়াল যে, দরবারে নবুবীতে উপস্থিতির সময় বিষেশ ভাবে লক্ষ রাখা হত এবং ঘোষনা হত যে, দাড়ী সেব করা কোন সাথী যেন সাথে না আসে।

“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” এ আকীদা পোষন কারীদের কিছু উদাহরণ আমরা এখানে পেশ করলাম, এখন আসুন কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে যাচাই করা যাক যে এ আকীদা সঠিক না বেঠিক।[7]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর ব্যাপারে কোর‘আন ও সুন্নাতের ভাষ্য নিম্ন রূপঃ

১ - সূরা যুমারে এরশাদ হয়েছে যে,

اِنَّکَ مَیِّتٌ وَّ اِنَّہُمۡ مَّیِّتُوۡنَ ﴿۫ ۳۰﴾

নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল (সূরা যুমার-৩০)

এ আয়তে আল্লাহ তালা মৃত্যুর ব্যাপারে যে শব্দটি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন ঠিক একই শব্দ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ব্যাপারেও ব্যবহার করেছেন।

২ - সূরা আম্বীয়ায় আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

وَ مَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ الۡخُلۡدَ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مِّتَّ فَہُمُ الۡخٰلِدُوۡنَ ﴿۳۴﴾

অর্থঃ “আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করি নাই। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবি হয়ে থাকবে। (সূরা আম্বীয়া-৩৪)

এ আয়াতে আল্লাহ্ তালা দুটি বিষয় বর্ণনা করেছেন। প্রথমতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) পূর্বে যত নাবীগণ অতিক্রম করেছেন তারাও মৃত্যু বরণ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ তোমরাও মৃত্যু বরণ করবে। চিরস্থায়ী জীবন আমি না তাদেরকে দিয়েছি না তোমাকে।

৩ - উহুদের যুদ্ধে রাসূলের শাহাদাতের সংবাদ ছড়িয়ে পরল, এতে সাহাবাগণ যুদ্ধের ময়দানে নিরাশ হয়ে বসে গেল। এর পরিপেক্ষিতে আল্লাহ তা’লা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ

اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُم

অর্থঃ যদি তিনি মৃত্যু বরণ করে, অথবা নিহত হয় তবে কি তোমরা পশ্চাদ পদে ফিরে যাবে? (সূরা আল ইমরান -১৪৪)

যদি কিছুক্ষণ পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়াবী হায়াত ফিরে পেতেন তাহলে, এ কথা বলা হত যে, চিন্তা কর না। মারা যাওয়া বা কতল হওয়ার পরও মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের মাঝে বিদ্ধমান থাকবে। তোমাদের নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু একথা বলা হয় নাই।

৪ - সূরা আল ইমরানে আল্লাহ তা’লা পূর্ববর্তী নবী গণের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ যে তারাও মৃত্যু বরণ করেছেন। অতএব তোমরাও মৃত্যু বরণ করবে। পূর্ববর্তী নবী গণের মধ্যে দুই জনের মৃত্যুর কথা কোর‘আনে উল্লেখ হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে আম্বীয়া আলাই হিস্‌সালাম গণের মৃত্যুর কথা সত্যায়ন করে। সূরা সাবায় সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে আল্লাহ তা’লা বলেনঃ সে লাঠির উপর ভর করে দাড়িয়ে ছিল, হটাৎ তার মৃত্যু এসে গেল, আর ঐ জ্বিন যারা গায়েব জানার দাবী দার ছিল (বা যারা মনে করে যে জ্বীনেরা গায়েব যানে) তারা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনুভবই করতে পারে নাই যে, সোলাই মান (আলাইহিস সালাম) মৃত্যু বরণ করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ করেনঃ

فَلَمَّا قَضَیۡنَا عَلَیۡہِ الۡمَوۡتَ مَا دَلَّہُمۡ عَلٰی مَوۡتِہٖۤ اِلَّا دَآبَّۃُ الۡاَرۡضِ تَاۡکُلُ مِنۡسَاَتَہٗ ۚ فَلَمَّا خَرَّ تَبَیَّنَتِ الۡجِنُّ اَنۡ لَّوۡ کَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ الۡغَیۡبَ مَا لَبِثُوۡا فِی الۡعَذَابِ الۡمُہِیۡنِ ﴿ؕ ۱۴﴾

অর্থঃ “যখন আমি তার (সুলায়মান) (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যু ঘটালাম, জ্বিনদেরকে তখন তার মৃত্যুর বিষয়ে জানাল শুধু মাটির পোকা, যা সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর লাঠি খাচ্ছিল। যখন সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) পড়ে গেল তখন জ্বিনেরা বুঝতে পারল যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত থাকত, তাহলে তারা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না।” (সূরা সাবা-১৪)

কোন কোন আলেমের মতে সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর লাঠিকে গুণে খেতে এক বছর সময় লেগেছিল। যদি এটাকে ছয় মাসও ধরা হয় তবু ও “আম্বীয়া (আলাইহিস সালাম) গণ ক্ষনিকের জন্য মৃত্যু বরণ করেন আবার পরক্ষনেই তাদেরকে জীবন দান করা হয়” এ দাবী মিথ্যা বলে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ঠ। আল্লাহ্‌র বাণী অনুযায়ী সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) তার মৃত্যুর পর যতক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন, ততক্ষন তার লাঠির উপর ভর করেই দাড়িয়ে ছিলেন। যদি তিনি জীবিতই থাকতেন, তাহলে লাঠির উপর ভর করে থাকার কি দরকার ছিল? যখন উই পোকা লাঠিটিকে খেয়ে দিল, তখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। যদি তিনি জীবিতই থাকতেন তাহলে কেন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন? সূরা বাক্বারায় আল্লাহ্ তা’লা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ যখন তার মৃত্যুর সময় হল তখন তিনি তার সন্তানদেরকে ডেকে বললঃ

ما تعبدون من بعدي

অর্থঃ আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? ছেলেরা এর উত্তরে বললঃ

قَالُوۡا نَعۡبُدُ اِلٰہَکَ وَ اِلٰـہَ اٰبَآئِکَ اِبۡرٰہٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ اِلٰـہًا وَّاحِدًا

অর্থঃ আমরা ঐ এক আল্লাহর ইবাদত করব যার ইবাদত করতে তুমি, তোমার পিতা, তোমার দাদা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক (আলাইহিস সালাম)। (সূরা বাক্বারা -১৩৩)

যদি নবীগণকে মৃত্যুর কিছু ক্ষন পর পুনরায় জীবিত করে দেয়া হয়, তাহলে ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) তাঁর মৃত্যুর পর স্বীয় সন্তানদের ব্যাপারে চিন্তিত কেন ছিলেন? বা তাদেরকে এ প্রশ্ন করার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন যে আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? যদি নবীগণ মৃত্যুর পরও জীবিত থাকতেন তাহলে তো সন্তানদের এ উত্তর দেয়া দরকার ছিল যে, আব্বাজান! আপনি আমাদের ব্যাপারে কেন চিন্তা করছেন, আপনি তো আবার ও জীবিত হয়ে আসতেছেন। আপনি এসে তো দেখতেই পাবেন যে, আমরা কার ইবাদত করছি। এ থেকে বুঝা যায় যে, না পিতার এ আকীদা ছিল না সন্তানদের যে, নবীগণ দ্বিতীয় বার পৃথিবীর জীবন পাবেন। বরং তাদের ঈমান ছিল ঐ মৃত্যুর প্রতি যা পূর্ববর্তী নবীগণ বরণ করেছেন, যে মৃত্যুর পর তারা আর পৃথিবীর এ জীবন পান নাই।

৫ - যোবাইর বিন মোতএম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, এক মহিলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) নিকট এসে কিছু কথা বলল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য কোন সময় তাকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! যদি আমি এসে আপনাকে না পাই তাহলে আমি কি করব? বর্ণনা কারী বলেন একথার মাধ্যমে মহিলা যেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর প্রতি ইশারা করছিল।

তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি আমাকে না পাও তাহলে আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) সাথে কথা বলবে। (বোখারী ও মুসলিম)

এ হাদীস থেকে নিম্ন লিখিত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) যোগে সাহাবাগণের আক্বীদা ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর পর, না আমরা তাঁকে আমাদের কথা শোনাতে পারব, না তিনি আমাদের কোন কথা শোনতে পারবেন এবং না তিনি আমাদেরকে কোন রাস্তা দেখাতে পারবেন, না কোন সাহায্য তিনি আমাদেরকে করতে পারবেন।

খ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর উম্মতকে এ শিক্ষা কখনো দেন নাই যে, নবীগণ মৃত্যুবরণ করে না বা যদি আমি মারা যাই তাহলে আমার কবরে এসে সব কথা বলবে। বা মৃত্যুর পরও আমি পৃথিবীর জীবনের ন্যায় জীবিত থাকব অতএব আমি এসে তোমাদের কথা শোনব। বরং তিনি বলেছেন যে, আমার মৃত্যুর পর আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) নিকট আসবে।

৬ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর সাহাবাগণের মধ্যেও এ কথার গুন্জন হচ্ছিল যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি সত্যিই মৃত্যু বরণ করেছেন না করেন নাই? ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) মত পন্ডিত, ও বুদ্ধিমান সাহাবীও এ ভুলে নিপতিত ছিলেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল মৃত্যু বরণ করেন নাই, মোনাফেকদের কেল্লা উটপাটনের পূর্বে তিনি মৃত্যু বরণও করবেন না। (ইবনে মাজাহ)

এপরিস্থিতিতে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার ঐতিহাসিক বক্তব্য পেশ করলেন। তাঁর ঐ মূল্যবান বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত না মৃত” তাঁর ফায়সালা দিয়ে দিলেন। তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ এছিল যে,

من كان يعبد الله فان الله حي لايموت ومن كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات

যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে সে যেন জেনে রাখে যে, আল্লাহ্ চিরজীব, কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। আর যে, মোহাম্মদের ইবাদত করত সে যেন যেনে রাখে, যে নিশ্চয় মোহাম্মদ মুত্যু বরণ করেছেন। (ইবনে মাযাহ)

আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) বক্তব্য শোনার পর ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ “আল্লাহর কসম আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) বক্তব্য শোনে আমার কোমর ভেঙ্গে গেছে, আমি আমার পা উঠাতে পারছি না। আমি যেন জমিনে মিশে যাচ্ছিলাম, কেননা এতক্ষনে আমার বিশ্বাস হচ্ছে যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যু বরণ করেছেন। (বোখারী)

৭ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর আহলে বাইত (তার বংশধর) এবং সাহাবাগণের মাঝে চিন্তা ছেয়ে গেল। ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) অত্যন্ত বেদনা ভরে আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কি করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) শরীরে মাটি চাপাই লা? সাবেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহার) কষ্টের কথা বর্ণনা করতে করতে নিজেই কাঁদতে শুরু করলেন। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুতে মদীনার সর্বত্র শোকের ছায়া ছিল। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা আমাদের আন্তর সমূহকে নূরে নবুয়্যত থেকে বঞ্চিত পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি ক্ষনিকের জন্যই মৃত্যু বরণ করে থাকেন, তাহলে আহলে বাইত আবু বকর, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সহ সমস্ত সাহাবাগণের মাঝে কেন চিন্তা ছেয়ে গেল। সৎ সাহশী সাহাবী ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) কোমর কেন ভেঙ্গে যাচ্ছিল?

কোর‘আন ও হাদীসের প্রমাণাদীর বাহিরে অন্য এক দিক থেকেও আমরা এ ব্যাপারে সমাধান পেশ করব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর সা‘য়েদা বংশের একস্থানে সাহাবাগণের মধ্যে খলীফা নির্ধারণ নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছিল। আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) শাসনামলে যাকাত প্রদানে আসম্মতির ফেতনা দেখা দিয়ে ছিল। ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিরপরাধী হওয়া সত্বেও শাহাদাত বরণ করলেন।

সাহাবাগণের মাঝে সিফ্‌ফীন ও জামালের যুদ্ধের ন্যায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হল। কার বালায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রিয় নাতীকে নির্মম ভাবে শহীদ করা হল। আজও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মোসল মানদের উপর কতইনা নির্যাতন হচ্ছে। এর পরও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি করে জীবিত আছেন। যে তিনি খলীফা নির্ধারণের ব্যাপারে সাহাবাগণকে কোন দিক নির্দেশনা দিলেন না, না যাকাত প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপক মোরতাদদের ব্যাপারে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে কোন দিক নির্দেশনা দিলেন।

না স্বীয় জামাতা ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) কোন সাহায্য করলেন। না সিফ্‌ফীন ও জামালের যুদ্ধ বন্ধ করলেন, না কারবালার প্রান্তরে স্বীয় নাতীকে কোন সহযোগীতা করলেন, এভাবে আজও যে মোসলমানদের উপর কাফেরদের পক্ষ থেকে নির্যাতন চলছে তার সবকিছু বুঝে শোনে তিনি চুপ আছেন, তাঁর প্রিয় উম্মতদেরকে কোন প্রকার সাহায্য করছেন না, না অত্যাচারীদেরকে কোন বাধা দিচ্ছেন, না তাদের বিরুদ্ধে কোন নির্দেশ প্রদান করছেন, অথচ অন্যদিকে ওলী ও সূফী গণের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন, তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত করছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হচ্ছেন? আমরা বিনয়ের সাথে “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” একথার দাবীদারদের খেদমতে পেশ করতে চাই যে, অনুগ্রহ করে চিন্তা করুন যে, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” এ আক্বীদা পোষন করে, রহমতের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মর্যাদাকে বুলন্দ করা হচ্ছে না তাঁর মর্যাদাকে ক্ষুন করা হচ্ছে? মূলত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) বারযাখী জীবন সম্পর্কে কোর‘আন ও হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে, তা হল এই যে তিনি সমস্ত নবী, শহীদ, ওলী, থেকে উত্তম, পরিপূর্ণ, ঊর্ধে, যা না এ দুনিয়ার জীবনের ন্যায় না আখেরাতের জীবনের ন্যায়, বরং তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত আছেন। তার পবিত্র শরীর মদীনার কবরে, এমন ভাবে অক্ষত আছে যেমন আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে দাফনের সময় ছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই অক্ষত থাকবে। আর তার রুহ জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে আল্লাহর আরশের নিকটে আছে। আল্লাহ্ তা’লা যা চান তাকে তা পানাহার করান। (আল্লাহ্ ই এব্যাপারে সর্বধিক অবগত আছেন)

ফুটনোট

[1] - আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী লিখিত মালহুজাত ২য় খঃ পৃঃ ২৭৬।

[2] - খালেসুল এতে‘কাদ পৃঃ ৩৯।

[3] - আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী লিখিত মালহুজাত ৩য় খঃ পৃঃ ২৭৬

[4] - আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী লিখিত মাজমূ’য়া রাসায়েল। ১ম খঃ পৃঃ১৭৩

[5] - মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম লিখিত এরশাদুস্‌সালেকীন, ২য় খঃপৃঃ ১৯

[6] - হাজী এমদাদুল্লাহ লিখিত শামায়েম এমদাদিয়া ১০৮

[7] - এরশাদুস্‌সালেকীন, ১ম খঃ পৃঃ ৮০।

১৭
একটি ভ্রান্তির আপনোদন
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) জীবন দুনিয়ার জীবনের মত বলে প্রমাণ করার জন্য কোন কোন হযরতগণ নিম্নলিখিত হাদীস সমূহ পেশ করেনঃ

১- যখন কোন লোক আমাকে সালাম করে, তখন আল্লাহ্ আমার রুহ আমার শরীরে ফেরত দেন এবং আমি সালামের উত্তর দেই। (আবুদাউদ)

২ - আমার প্রতি বেশি বেশি করে দরূদ পাঠ কর, আল্লাহ আমার কবরে এক জন ফেরেশতা নির্ধারণ করবেন, যখন আমার কোন উম্মত আমার উপর দরূদ পাঠ করবে তখন ফেরেশতা আমাকে বলবে “হে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওমকের ছেলে ওমক, ওমক সময় তোমার প্রতি দরূদ পাঠ করেছে।” (দাইলামী)

৩ - জু‘মার দিন বেশি করে আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি জু‘মার দিন আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, তাকে আমার সামনে পেশ করা হয়। (হাকেম, বাইহাকী)

শেখ নাসেরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রথম দুইটি হাদীসকে “হাসান” বলেছেন। আর তৃতীয় হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। এসমস্ত হাদীস থেকে “হায়াতুন্নবী” (নবী জীবিত আছেন। প্রমাণকারী হযরতগণ ঐ ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন যার উল্লেখ আমরা ইতি পূর্বে “বারযাখী জীবন কেমন” শিরো নামে আলোচনা করেছি। এ প্রকৃত সত্যকে অস্বীকার করার তো কোন পথ নেই যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারযাখে সমস্ত নবী, শহীদ, ওলী, থেকে উত্তম ও সর্বোচ্চ মর্যাদায় কালাতিপাত করছেন। কিন্ত বারযাখী জীবন যেহেতু, এ পৃথিবীর জীবন যাপন পদ্ধতি থেকে ভিন্ন, তাই একে এ পৃথিবীর জীবনের সাথে তুলনা করাই ভুল। মানুষকে ঐ বুঝ ও অনুভুতি শক্তি দেয়াই হয় নাই যে, সে দুনিয়ায় থেকে বারযাখী জীবনকে অনুভব করবে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা বাক্বারা-১৫৪)

চিন্তা করুন! মানুষের সালামের উত্তর দেয়ার জন্য, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) রুহ তার শরীরে ফেরত দেয়ার একাধিক পদ্ধতি থাকতে পারে। যেমনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির সালামের উত্তরের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) রুহ তার শরীরে ফেরত দেয়া হয়, অথবা দিনে এক বার কোন এক সময় রুহকে তাঁর শরীরে ফেরত দেয়া হয়, অথবা সাপ্তায় এক বার অথবা মাসে এক বার, অথবা বছরে এক বার, সমস্ত মানুষের সালাম এক সাথে তার সামনে পেশ করা হয় এবং তিনি এক সাথে সকলের সালামের উত্তর দেন। রুহকে শরীরে ফেরত দেয়া কি উল্লেখিত কোন এক পদ্ধতিতে হয়, না এর বাহিরে অন্য কোন পদ্ধতিতে হয়, তা এক মাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। এ একই অবস্থা দরূদের ব্যাপারেও, যে তা কি প্রত্যেক দিন তাঁর সামনে পেশ করা হয়, না শুধু জু‘মার দিন যেমন পূর্বে উল্লেখিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মূলত এ সমস্ত বিষয় সমূহ এমন, যে এর জ্ঞান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কার জানা নেই। তবে আমাদের জন্য এসমস্ত বিষয় সমূহ বিশ্বাস করা জরুরী, কিন্তু এর পদ্ধতি বুঝা আমাদের পক্ষে মোটেও সম্ভব নয় এবং কোন প্রয়োজনও নেই।

কোন কথা বিশ্বাস করা এর পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। কত বিষয় এমন আছে যে, এর প্রতি আমাদের ঈমান আছে, কিন্তু এর পদ্ধতি আমরা এ দুনিয়ায় থেকে বুঝতে অপারগ। যেমন রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসার ব্যাপারে আমাদের ঈমান আছে, কিন্তু এর পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কিরামান কাতেবীন আমাদের আমল নামা লেখে, এ বিষয়ে আমাদের ঈমান আছে কিন্তু তার পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কিয়ামতের দিন আমাদের আমল সমূহ ওজন করা হবে এব্যাপারে আমাদের ঈমান আছে, কিন্তু এর পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মে’রাজের ব্যাপারে আমাদের ঈমান আছে কিন্তু এর পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। এর উদাহরণ এখানেই শেষ নয়, বরং এর বাহিরেও আরো অনেক উদাহরণ আছে যে বিষয় গুলির প্রতি আমাদের ঈমান আছে, কিন্তু তার পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। বারযাখী জীবনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) রুহ তার শরীরে ফেরত দেয়া, লোকদের সালামের উত্তর দেয়া, ফেরেশতা কর্তৃক তার নিকট লোকদের সালাম পৌঁছানো, জু‘মার দিন তাঁর সামনে পেশ করানো ইত্যাদি ও ঐ সমস্ত বিষয়ের ই অন্তর্ভুক্ত, যার পদ্ধতি ও পকৃত অবস্থা বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

কিন্তু এব্যাপারে ঈমান রাখা ওয়াজিব। অতএব এ সমস্ত হাদীস সমূহ থেকে, না রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) স্বীয় কবরে জীবিত থাকার কথা প্রমাণ হয়, না এ হাদীস সমূহ থেকে এ কথা কিয়াস করা বৈধ হবে যে, যেহেতু তিনি আমাদের সালাম শোনেন এবং এর উত্তর দেন তাহলে আমাদের অন্যান্য দূয়াও তিনি শোনেন এবং এর উত্তর দেন। বা আমাদের উদ্দেশ্য সমূহ পূরণ করেন। বা আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বা কবর থেকে বাহিরে বের হয়ে এসে ওলীগণের সাথে বৈঠক করেন। এ সবই বাতীল ও ভ্রান্তি মূলক কিয়াস। কিতাব ও সুন্নাতের শিক্ষার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যে সমস্ত কথা বলেছেন তা নিঃশ্চিন্তে বলতে হবে এবং তার প্রতি ঈমান রাখতে হবে। আর যে কথা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল বলেন নাই, সে ব্যাপারে নিজে কিয়াস করে কোন কথা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ

من کذب علی متعمدا فلیتبوا مقعده من النار

অর্থঃ যে ইচ্ছা করে আমার ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলল, সে যেন নিজে নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (বোখারী ও মুসলিম)

১৮
কবরের আযাব রুহের উপর হয় না শরীরের উপর?
কবরে আযাব ও সোয়াব সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ার পর, স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগে যে বারযাখের আযাব বা সোয়াব কি রুহের উপর হবে, না শরীরের উপর, না উভয়ের উপর?

জ্ঞানীরা এ ব্যাপারে লম্বা আলোচনা করেছে, কেউ কেউ মনে করে যে, কিছুদিনের মধ্যেই মাটি শরীরকে নষ্ট করে দেয়, অথচ সোয়াব বা আযাব তো কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকে, অতএব এ সোয়াব বা আযাব রুহের উপর হয়।

কেউ কেউ মনে করে যে, বারযাখে সোয়াব বা আযাবের সম্পর্ক যেহেতু কবরের সাথে, সুতরাং মোমেনের জন্য কবরকে প্রশস্ত করা হয়, কবরকে আলোকিত করা হয়, কাফেরের কবরে সাপ তাকে ধ্বংশন করতে থাকে, কবরের উভয় পাশ্ব বার বার মৃত ব্যক্তিকে চাপ দিতে থাকে, আর কবরে শুধু শরীর ই থাকে অতএব আযাব বা সোয়াব শরীরের উপরই হয়, চাই শরীরের এক ক্ষুদ্র অংশই বাকী থাকুক না কেন? কোন কোন হযরত মনে করেন যে রুহ ও শরীর পৃথক পৃথক হওয়া সত্ত্বেও এ উভয়ের মাঝে একটি অদৃশ্য সম্পর্ক থেকে যায়, অতএব সোয়াব বা আযাব উভয়কেই হয়। আমার মতে (লেখকের) এ বিষয়টিও ঐসমস্ত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যার প্রতি ঈমান থাকা ওয়াজিব, কিন্তু এর পদ্ধতি জানা অসম্ভব। আল্লাহ্ তা’লা এব্যাপারে যথেষ্ঠ ক্ষমতাবান, যদি তিনি চান তাহলে মাটিতে ধুলিসাৎ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে আযাব বা সোয়াব দিতে পারেন, তিনি চাইলে রুহকে দিতে পারেন, তিনি চাইলে রুহ ও শরীর উভয়কেই দিতে পারেন।

আমার মতে এটা একটা উদ্দেশ্য হিন আলোচনা, যার পিছনে পরে আমি না আমার নিজের সময় নষ্ট করতে চাই, না পাঠকদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই! যদি এ বিষয়টি আমাদেরকে দিক নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে সামান্যতম গুরুত্ব বহন করত তাহলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই এব্যাপারে স্পষ্ট করে কোন কথা বলতেন, অতএব এব্যাপারে আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ঠ হবে, যতটুকু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন। আর তিনি বলেনঃ কবরের আযাব সত্য তা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।

এব্যাপারে এতটুকুই আমার বলার ছিল, এর সঠিক জ্ঞান আল্লাহ্ ভাল রাখেন, তিনি সব বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত।

وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه اجمعين

১৯
হে চক্ষুশমান ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ কর
(কবরের আযাব ও সোয়াব সংক্রান্ত কতিপয় শিক্ষামূলক ঘটনা)

কবরের আযাব বা সোয়াব সংক্রান্ত ভুরী ভুরী খবর সংবাদ পত্রের পাতায় ছাপা হয়, বা লোক মোখে শোনা যায়। এ ধরনের ঘটনাবলী বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করা যেহেতু কষ্টকর হয়ে যায়, তাই তা লেখার ব্যাপারেও আমি চিন্তা করছিলাম, এমনি মুহূর্তে সহী বোখারীতে আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনা আমার চোখে পরল, যার মাধ্যমে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, স্বাভাবিকতা বহির্ভুত কোন ঘটনা ঘটা মোটামুটি অসম্ভব, হয়ত বা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কারী মহান সত্ত্বা এ ধরনের ঘটনা বলীর মাধ্যমে সুস্থ আত্মার অধিকারীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চান। নিম্ন লিখিত ঘটনা বলী এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পেশ করা যাচ্ছে, হয়ত বা তা পাঠে সুভাগ্য বানরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। তবে এসমস্ত ঘটনা বলীর শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতা নির্ভর করবে ঐসমস্ত পত্র-পত্রিকা বা বর্ণনা কারীদের উপর যার রেফারেন্স সাথে দেয়া হয়েছে।

১- নবী যোগের ঘটনাবলীঃ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, এক খৃষ্টান মোসলমান হয়ে সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান মুখস্ত করেছে, সে ওহীর লেখকও ছিল (যাদের উপর কোর‘আন লেখার দায়িত্ব ছিল। পরিশেষে সে মোরতাদ হয়ে গেল, আর বলতে লাগল যে, মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো কোন কিছুই জানে না, আমি তাকে যা কিছু লেখে দিয়েছি সে তাই বলে। যখন তার মৃত্যু হল তখন খৃষ্টানরা তাকে দাফন করল, সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে সে কবরের বাহিরে পরে আছে। খৃষ্টানরা বললঃ এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাথীদের কাজ কেননা সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল, তাই তারা তার কবর খুড়ে তার লাশ বের করে রেখেছে, পরের দিন খৃষ্টানরা নতুন করে, আরো গভীর ভাবে কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করল, কিন্তু সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে তার লাশ আবারো কবরের বাহিরে পরে আছে।

খৃষ্টানরা আবারো বললঃ এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তার সাথীদের কাজ। কেননা সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল, তাই তারা তার কবর খুড়ে তার লাশ বের করে রেখেছে, পরের দিন খৃষ্টানরা নতুন করে আরো বেশি গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করল, কিন্তু সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে তার লাশ আবারো কবরের বাহিরে পরে আছে। তখন খৃষ্টানদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে এটা মোসলমানদের কাজ নয়, এরপর তারা ঐ লাশকে ঐ ভাবে ফেলে রাখল।[1]

২ - কবরের বিচ্ছুঃ

বিশ্ব যুদ্ধের সময় পরাশক্তিধরদের হিন্দুস্থানে আক্রমণ করার সময় ইংরেজ বাহিনীকে সিঙ্গাপুর ও বারমায় অস্ত্র রাখতে হয়েছিল, অস্ত্র রাখার সময় ইংরেজ জেনারেল সৈন্যদেরকে অনুমতি দিল যে, যে সৈন্য পলায়ন করে জান বাঁচাতে পারবে সে যেন তার জান বাচাঁয়, সৈন্যদের এক মেজর তোফায়েল তার এক সাথী মেজর নেহাল সিং এর সাথে ভেগে গেল, মেজর তোফায়েল বর্ণনা করেন যে, আমরা উভয়ে এক অন্ধকার রাতে ঘোড়ায় চড়ে বের হলাম এবং বারমার রণাঙ্গন ধরে ঘোড়া হাকাঁলাম, বারমা ঘন, জনবহুল, অন্ধকার, ভয়ানক জঙ্গল বিশিষ্ট এলাকা, অতিক্রম করা অত্যন্ত দূরহ কাজ ছিল, যাই হোক আমরা অনুমানের ভিত্তিতে হিন্দুস্থানের জেলা আসাম মুখি হলাম, যেখানে জাপানীদের আক্রমণ থাকা সত্বেও ইংরেজদের প্রধান্য বিস্তার করছিল। পরামর্শের ভিত্তিতে রাস্তা অতিক্রম করতে থাকলাম, এর মধ্যে কত রাত অতিক্রম হয়েছে তার কোন হিসেব আমাদের কাছে ছিলনা, পানাহার সামগ্রী শেষ হয়ে আসছিল। জঙ্গল ও নদ-নদীর উপর দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, কোন কোন সময় ভয়ংকর সাপ-বিচ্ছুর মোখো মুখিও হতে হয়েছে, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পথ চলেছি।

একদিন সামনে এক খালী জায়গায় একটি কবরস্থান চোখে পরল, প্রায় ২৫-৩০টি কবর হবে সেখানে, এক কবরে মৃতের প্রায় অর্ধেক দেহ কবরের বাহিরে পরে ছিল। পচা গলা অবস্থায় ছিল, লাশের উপর ছোট একটি বিচ্ছু তাকে বার বার ধ্বংশন করছিল, আর লাশ খুব ভয়ংকর ভাবে চিল্লাচ্ছিল, কোন জীবিত মানুষকে যেমন কোন বিচ্ছু ধ্বংশন করলে তার বিষাক্ততার ফলে সে কাঁদত তা এমন মনে হচ্ছিল, যা জীবিত অন্যান্য মানুষ ও প্রাণীকে বেহুশ করে দিতে যথেষ্ঠ ছিল। সত্যিই এ এক ভয়ানক দৃশ্য ছিল। মেজর নেহাল শিং আমার বাধা সত্ত্বেও বিচ্ছুটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল, এতে একটি অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হল বটে কিন্তু বিচ্ছুর কিছুই হয় নাই। নেহাল শিং আবারো গুলি করার প্রস্তুতি নিল, আমি তাকে কঠোর ভাবে বাধা দিলাম এবং তার পথে তাকে চলতে বললাম, কিন্তু সে আমার কথায় কর্ণপাত না করে কবর স্থানের এক মৃতকে বাচাতে গিয়ে বিচ্ছুকে আবার গুলি করল। আবারো একটি অগ্নি শিখা বিচ্ছুরিত হল বটে কিন্ত বিচ্ছুর কিছুই হল না।

বরং বিচছু তখন লাশকে ছেড়ে আমাদের দিকে ছুটে আসতে লাগল, আমি তখন নিহাল শিংকে বললাম বিচ্ছু ও লাশ ছেড়ে এখান থেকে ভাগ, বিচ্ছু আমদের দিকে এগিয়ে আসা আশঙ্কা মুক্ত নয়। আমরা ঘোড়া চালাতে শুরু করলাম, কিছু দূর যাওয়ার পর পিছনে তাকিয়ে দেখছি যে ঐ বিচ্ছুটি আমাদের পিছনে পিছনে, খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা ঘোড়াকে আরো দ্রুত চালাতে শুরু করলাম, কয়েক মাইল চলার পর এক নদী সামনে পরল, যা খুবই গভীর মনে হচ্ছিল। আমরা একটু থেমে চিন্তা করতে লাগলাম যে, নদীতে ঘোড়া নিক্ষেপ করব না নদীর তীর ধরে চলে চলে কোন রাস্তা খোঁজব, কিন্তু কোন ফায়সালা করার পূর্বেই ঐ বিচ্ছু আমাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল, আমরা লক্ষ্য করছিলাম যে আমরা সশস্ত্র হওয়া সত্বেও এ বিচ্ছুটি আমাদেরকে আতংকিত করে তুলেছিল। এমনকি আমাদের ঘোড়াও লাফাচ্ছিল যেন সে ও ভয়ে ভিত সন্ত্রস্ত ছিল। বিচ্ছু নিহাল শিং এর দিকে এগোচ্ছিল। নেহাল শিং ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘোড়া নিয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পরল। আর তার পিছে পিছে বিচ্ছু ও নদীতে ঝাপিয়ে পরল। আল্লাহ ভাল জানেন বিচ্ছুটি তার শরীরের কোন অংশে কেটে ছিল যার ফলে ঘোড়াও এ অস্বাভাবিক আঘাতের ভয়ে ভিত সন্ত্রস্ত ছিল। ঘোড়াটি কাঁপতে শুরু করল। নেহাল শিং ভয়ানক ভাবে চিৎকার করে আমাকে ডাকতে লাগল, যে তোফায়েল আমি ডুবে যাচ্ছি, জ্বলে যাচ্ছি, আমাকে বিচ্ছু থেকে বাচাও! বাচাও!

আমিও তখন ঘোড়া নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম এবং বাম হাত তার দিকে বাড়ালাম, সে তখন আমাকে খুব শক্ত করে ধরে নিল, আমার মনে হচ্ছিল যে এটা নদীর স্বাভাবিক পানি নয়, বরং কোন বিষাক্ত পানি, যা শুধু আমার হাতই নয় বরং সমস্ত শরীর জ্বালিয়ে দিবে। আমি তখন আমার অস্ত্র বের করে আমার বাম হাত কেটে ফেলে নিজেকে রক্ষা করে দ্রুত নদীর তীর ধরে চলতে শুরু করলাম। মেজর নেহাল শিং আমাকে চিৎকার করে ডাকতে থাকল, আর পানিতে ডুবতে লাগল। নদীর বড় বড় ঢেউ তাকে গ্রাস করতে লাগল। এ হল আল্লাহর শাস্তি... বিচ্ছু নিজের কাজ করে চলে যাচ্ছিল, আমার সামনে আসে নাই। আল্লাহর সৈন্যদের মধ্যে সে একাই এক গাইবী সৈন্যের মত। সে আমার কোন ক্ষতি করে নাই। যেদিক থেকে এসে ছিল সে দিকেই চলে গেল।[2]

৩- বাকা কবরঃ

গত কাল এক পুলিশ অফিসারকে কবরস্ত করার সময় তার কবর বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। যখন পুনরায় নতুন কবর খনন করা হল তখন তা ও বাকা হয়ে যাচ্ছিল। এতে লোকেরা মনে করল যে কবর খনন কারীদের হয়ত বা কোন ক্রটি আছে। কিন্তু যখন এক এক করে পাচঁটি কবর খনন করা হল এবং বারবার তা বাকা হয়ে যেতে লাগল, তখন জানাজায় অংশ গ্রহণ কারী লোকেরা সম্মিলিত ভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনা করল এবং পঞ্চম বারে লোকেরা জোর পূর্বক তাকে কবরস্ত করল। কিন্ত কবর প্রথম বারের ন্যায়ই বাঁকা হয়ে গেল। এ ঘটনা রাওয়াল পেন্ডির প্রসিদ্ধ কবরস্থান আতরা মারালে ঘটেছে।[3]

৪- কবরে সাপ ও বিচ্ছুঃ

নারাং মান্ডি শাইখু পুরা জিলার উপকণ্ঠে কসবে জিসিং নামক স্থানে দুই গ্রুপের মাঝে ফায়ারিং হয়। এতে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে একজনকে তার উত্তর সূরীরা বক্স বন্দী করে দাফন করার জন্য নিয়ে এসেছে, কবর খননের পর বক্সের ভিতর থেকে সাপ বিচছু বেরিয়ে আসছিল, এদেখে উত্তর সূরীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দূর থেকে তার কবরে মাটি নিক্ষেপ করেছে এবং বক্সটি ফিরত নিয়েছে।[4]

৫- কবরের কম্পনঃ

গুজরা নাওয়ালার উপকণ্ঠে কাসবা খিয়ালীর কবরস্থানে দাফন কৃত এক মহিলার কবরের কম্পন এলাকায় ভয় সৃষ্টি করেছে। বর্ণনা অনুযায়ী মহিলাকে যখন কবরস্ত করা হয়, তখন ওখানকার লোকেরা অনুভব করছিল যে মৃত মহিলার কবর কাঁপতেছে, কোন কোন লোক কবরের সাথে কান লাগিয়ে আওয়াজ শোনছিল, তারা কবর থেকে ঠক ঠক শব্দ এবং ধমকের আওয়াজ পাচ্ছিল, তখন কোন প্রসিদ্ধ আলেমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৃত মহিলাকে অন্য কোন স্থানে দাফনের জন্য পরামর্শ দিলেন। এর উপর ভিত্তি করে লোকেরা ঐ আলেমের উপস্থিতিতে মৃত মহিলার কবর খনন করে কবরের উপর থেকে আচ্ছাদন সরানো মাত্রই কবর খনন কারীরা কবরের ভিতর থেকে আশচার্য ধরণের পচা বমির গন্ধ শোনতে পেয়ে কবর পুনরায় বন্ধ করে দিল এবং মৃত মহিলার জন্য মাগফেরাত কামনা করে দূয়া করল এতে আস্তে আস্তে কবরের কম্পন বন্ধ হল।[5]

৬ - সাপ সাপঃ

এক জমিদার লোকের উত্তর সূরী পৈত্রিক সূত্রে বিরাট সম্পদের মালিক হয়, আল্লার পথে ধন সম্পদ খরচ করতে সে খুব কুণ্ঠিত ছিল। যদি কেউ তার নিকট কোন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতীম, বিধবার ব্যাপারে কোন সাহায্য চাইত তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যেত, আমি সর্বশেষ তাকে ১৯৬৮ ইং সালে বেহুশ অবস্থায় লাহোরের এক হাসপাতালের মর্গে তাকে অত্যন্ত মুমুর্ষু অবস্থায় (i.c.u.) দেখে ছিলাম, তার নাড়ী -ভুরী শুকিয়ে আসছিল, থেমে থেমে নিঃস্বাস ত্যাগ করছিল, চক্ষুসমূহ পাথরের মত হয়ে গিয়েছিল, ডাক্তার সামনেই দাড়িয়ে তার মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য অপেক্ষা কর ছিল, হটাৎ করে তার শরীর কাঁপতে শুরু করল, তার চেহারায় ভয়ের নির্দশন ফুটে উঠল। পশম গুলো দাড়িয়ে গেল, শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছিল, ঠোট সমূহ কাঁপছিল, সমস্ত লোকেরা শোনছিল যে সে ভীত স্বরে সাপ সাপ বলে তা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে হাত পা নাড়াচ্ছিল, আমি তা দেখে ভীত হয়ে গেলাম, এবং ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম যে, চিকিৎশা শাস্ত্রের আলোকে তার সর্বশেষ নড়াচড়াকে কি বলবেন? ডাক্তার সাহেব পেরেশান হয়ে বললেন যে আমার জন্য এ দৃশ্য চিকিৎশার ক্ষেত্রে এক আশ্চার্য ঘটনা, এ নড়াচরা এবং সাপ সাপ বলে চিৎকার করা এক মৃত ব্যক্তির মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল, যে বেহুশ অবস্থায় না কোন কথা বলতে পারতে ছিল না কোন প্রকার নড়াচড়া করতে পারছিল।[6]

এগুলী কতিপয় ঘটনা কবরের আযাব সম্পর্কে বর্ণনা করা হল এখন কিছু ঘটনা কবরে সোয়াব সম্পর্কে বর্ণনা করা হবে।

১- কবরের সু ঘ্রাণঃ

ডাঃ সায়্যেদ যাহেদ আলী বর্ণনা করেন যে, মাউনইউনিটের সময়কালে, রাতুরডের জিলার লারকানায় মেডিকেল অফিসার হিসেবে আমি কর্মরত ছিলাম, একদিন এক পুলিশ কর্মকর্তা কিছু কাগজ নিয়ে আসল, সোলসারজেন জিলার সমস্ত মেডিকেল সমূহ আমার পরিচালনাধিন ছিল, জিলা মেজিসট্রেট কবর প্রশস্ত করার জন্য বোর্ড ঘটন করেছেন, ডাঃ মোহাম্মদ শফী সাহেবের সাথে আমিও ছিলাম, কবরস্থানটি রাতোডয়ের থেকে দুই মাইল দূরে এক গ্রামে অবস্থিত ছিল, পুলিশের কাগজপত্রের মাধ্যমে জানা গেল যে এটা এক মহিলার কবর ছিল। যা প্রায় দুই মাস আগে দাফন করা হয়েছে। তার স্বামী তাকে একারণে হত্যা করেছে যে, অন্য কোন পুরুষের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। নির্দিষ্ট দিনে আমি ঐ গ্রামের এক গৃহে এসে উপস্থিত হলাম। পুলিশ বাহিনীও চলে এসেছিল, গৃহকতার ঐকান্তিক দাবী ছিল যে চা পান করে বের হতে হবে।

এদিকে পুলিশ কবরস্থানে পৌঁছে গেছে, যখন চা নিয়ে আসল তখন দেখা গেল যে এ তো চা নয় বরং দুপরের খাবার। ইতিমধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে জানা গেল যে, এ মহিলা আল্লাহ ভীরু ছিল, যার বয়স হয়েছিল প্রায় ২৭ বছর, নামায রোযার পাবন্দ ছিল। বিয়ের পাঁচ বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু কোন সন্তান ই হয় নাই। ইতিমধ্যে অন্য কোন মহিলার সাথে স্বামীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর সে চাচ্ছিল এ মহিলাকে রাস্তা থেকে সরাতে, তাই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিল যে ওমুকের সাথে তোমার অবৈধ সম্পর্ক আছে, তাকে প্রতি দিন মার ধর করত, যে ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে সে এ মহিলার বাপের ও বড় ছিল। একদিন সকালে এ মহিলাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। যত মুখ তত কথা, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছিল, কিন্ত অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যাচ্ছিল যে, মহিলা নির্দোষ ছিল।

কবর খুড়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়, আমরা ডাঃ, আমাদের কাছে এটা স্বাভাবিক বিষয়, কবরের ভিতরের অবস্থা, লাশের পরিনতি বড় বড় অন্তর দিয়ে দেখা যায় না। আমি (লেখক) প্রায় একশ কবর খুড়েছি কিন্তু মেজিসট্রেট বা পুলিশ কাছে আসতে পারে নাই। তারা ডিউটিতে ঠিকই থাকে কিন্ত কিছু একটু করেই দূরে সরে পড়ে। ঐ দিন কবর খুড়ার দায়িত্বশীলরা তাদের অভ্যাস মোতাবেক কবর খুড়ছিল মাটি সরাচ্ছিল। আমরা মাথার পার্শ্বে দাড়িয়ে ছিলাম, আগত ঘটনাবলী পর্যবেক্ষনের জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। এক সময় কবর থেকে আতরের ঘ্রাণ বের হতে লাগল, যেন আমরা কোন চামেলী বাগানে অবস্থান করছিলাম। আমি কবরের দিকে ঝুকে দেখলাম যে, দাফন করার সময় কেউ কোন ফুল রেখে দিয়েছিল কিনা।

মূলত এটা শুধু আমার মনের ধারনাই ছিল। যদিও ফুল রাখা হয়ে থাকে কিন্তু মৃত দেহ থেকে যে ঘ্রাণ আসছিল তা ফুলের চেয়েও অধিক সুগন্ধময় ছিল। পুলিশরা বলল যে এ চিন্তা আমরাও করছিলাম, কিন্ত যখন লাশ বের করা হল, তখন সুগন্ধিতে দেহ মন মুহিত হয়ে গেল, এমনকি দূর দুরান্ত পর্যন্ত সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পরল। মেজিস্ট্রেট ও উঠে কাছে চলে আসল। ওখানে পুলিশ না থাকলে বিরাট মজমা যমে যেত। ডাঃ শফী বললঃ মৃতদেহের সুঘ্রাণ পেয়ে মনে হচ্ছে আমরা জান্নাতের বাগানে বসে আছি। সুবহানাল্লা, সুবহানাল্লা, বলতে বলতে তার যবান ক্লান্ত হয়ে আসছিল।

লাশটি সম্পূর্ণ তরুতাজা ছিল। চেহারা অত্যন্ত উজ্জল ছিল। মনে হচ্ছিল যে, মৃতা আরামে ঘুমাচ্ছে, পুলিশরা বলতে লাগল আল্লাহর ইচ্ছা, একথা প্রমাণিত হয়েগেছে যে, মৃতাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছিল। আমি একটু পিছনে সরতেই পুলিশ কর্মকর্তাও পিছনে চলে আসল, তাকে পোষ্ট মরটেম করতে আমাদের মন চাচ্ছিলনা, ইতি মধ্যে তার স্বামী, (হত্যাকারী) যে স্ত্রীকে হত্যার পর পলাতক ছিল সে অগ্যাত স্থান থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে চলে আসল, এবং পুলিশকে বলতে লাগল যে আমাকে গ্রেপ্তার কর, আমার স্ত্রী নির্দোষ ছিল, তাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে পুলিশ ও মেজিস্ট্রেট সেখানেই ছিল, তার যবানবন্দী নেয়া হল, যেখানে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করল। তাই আর পোষ্ট মরটেম করা হলনা।

২- মৃতদেহ থেকে সুগন্ধিঃ

আমার (লেখকের) মরহুম দাদা নূর এলাহীর ছোট ভাই হাফেজ আঃ হাই (রাঃ) অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু লোক ছিল, প্রায় ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত বেচেঁ ছিল, জীবন ভর কিতাব ও সুন্নাতের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেছেন। হালাল উপার্জনের প্রতি এত খেয়াল রাখতেন যে, একদা লাহোর থেকে স্বীয় গ্রাম মান্ডেওয়ার বার্টেন শাইখুপুরা জিলায় আসছিলেন, পকেটে পয়শা ছিলনা, ট্রেনে চেপে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলেন, ষ্টেশনে কারো কাছ থেকে টাকা ধার করে মান্ডেওয়ার বার্টেন থেকে শাইখুপুরার একটি টিকেট কিনে তা ওখানেই ছিড়ে ফেলে দিলেন, যাতে করে সরকারের পাওনা সরকার পেয়ে যায়।

কোর‘আন তেলওয়াতে এত আকর্ষণ ছিল যে, কোথাও যেতে হলে পায়ে হেটে যাওয়াকে যান বাহনে করে যাওয়া থেকে এজন্য প্রধান্য দিতেন যে, পায়ে হেটে গেলে অধিক তেলওয়াত করা যাবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধন এত গভীর ছিল যে, তিনি হৃদ রুগী ছিলেন, একদা তার খুব ব্যাথা শুরু হল, ঘরের লোকেরা কান্নাকাটি করতে লাগল, তার অবস্থা যখন একটু ভাল হল তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কেন কাঁদতেছিলা? তারা বলল ও আমরা মনে করেছিলাম যে, এই বুঝি আপনার শেষ সময়, তিনি বললেনঃ এতে চিন্তার কি আছে, আমি আমার বন্ধুর নিকট যাচ্ছিলাম কোন শত্রুর নিকট যাচ্ছিলাম না। মরহুমের ছেলে শাইখুল হাদীস আল্লামা আঃ ছালাম কীলানী, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, তিনি বলেনঃ দাফনের সময় তার শরীর থেকে এত সুগন্ধি বের হচ্ছিল যে, উপস্থিত সমস্ত লোকদের শরীর সুগন্ধময় হয়ে গেল। কোন কোন লোকের ধারণা ছিল যে, হয়ত কেউ কবরে সুগন্ধি ঢেলে দিয়েছে, মূলত তা ছিলনা।

৩ - কবরে আলোঃ

সোহাদরা জিলার গুজরা নাওয়ালা শহরের প্রশিদ্ধ আলেম, মাওলানা হাফেজ মোঃ ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এক রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম প্রায় একটার সময় কিছু লোক এসে দরজায় নক করল, আমি দরজা খোললাম তখন তারা বললঃ যে আমাদের এক নিকট আত্মীয় মারা গেছে, অসুস্থতার কারণে লাশ দীর্ঘ সময় দাফন কাফনের বাকী রাখা সম্ভব নয়। তাই এখনই আমরা তার দাফন করতে চাই। আপনি জানাযার নামায পড়িয়ে দিন, আমি জানাযার নামায পড়িয়ে দিলাম কবর খনন কারীরা দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করতে লাগল, হটাৎ করে পার্শ্বের কবর খুলে গিয়ে তা থেকে আলো আসতে শুরু করল, যেন সূর্য মাথার উপর আছে, আমি পরামর্শ দিলাম যে দ্রুত ঐ কবরের দেয়াল ঠিক করে দিন, কেননা আল্লাহর কোন নেক বান্দা আরাম করতেছে, তারা ঐ কবরের দেয়াল ঠিক করে দিল এবং পার্শ্বের কবরে এ মৃতকে দাফন করা হল।

৪ - মৃতের শরীর থেকে সুগন্ধিঃ

এ ঘটনার বর্ণনা কারী আমার সম্মানিত পিতা হাঃ মোঃ ইদ্রীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি বলেন উপমহাদেশ ভাগা ভাগির পূর্বে, দিল্লীতে উস্তাদ কুল শিরমনী শাইখুল হাদীস সায়্যেদ মিয়া মোঃ নাযীর হুসাইন মোহাদ্দেস দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) মাদ্ রাসার এক ছাত্র ইন্তেকাল করল, আর ঐ মৃত দেহ থেকে এত আকর্ষণীয় সুগন্ধি বের হচ্ছিল যে, আশপাশের এলাকা সুগন্ধময় হয়ে গেল। লোকেরা মিয়া মোঃ নাযীর হুসাইন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনার কি এ ছাত্র সম্পর্কে এমন কোন আমলের কথা জানা আছে, যার ফলে আল্লাহ্ তাকে এ ইয্যত দান করেছেন? তখন মিয়া সাহেব নিম্নোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেনঃ অন্যান্য ছাত্রদের ন্যায় এ ছাত্রের খাবারের ব্যবস্থাও এক ঘরে ছিল, উল্লেখ্য যে কিছুদিন পূর্বে আজকালের ন্যায় ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা মাদ্রাসায় ছিল না, বরং শহরের বিভিন্ন সক্ষম ব্যক্তিরা একজন দুই জন করে খাওয়াত।

সে যে বাড়ীতে খাবার খেত ঐ বাড়ীর এক যুবতী তাকে মোহাব্বত করত, একদিন বাড়ীর লোকেরা অন্য কোন বাড়ীতে বেড়াতে গেছে, আর ঐ মেয়ে বাড়ীতে একাই ছিল, এদিকে অভ্যাস মোতাবেক ছেলে খাবার খেতে এসেছে, আর মেয়ে তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাকে অশ্লীল কাজের প্রতি আহ্বান করল। ছেলে সে ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকার করল, মেয়ে তাকে ধমক দিয়ে বললঃ যে তুমি যদি আমার ডাকে সাড়া না দাও তা হলে আমি তোমার বদনাম করব। ছাত্র তখন পায়খানা পেশাবের অজুহাত দেখিয়ে বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি চাইল, মেয়ে তখন তাকে ঘরের উপরের তলায় যাওয়ার অনুমতি দিল। ছাত্র ঘরের উপরের তলায় উঠে বাথ রুমে ডুকে, সমস্ত শরীরে পায়খানা মেখে বের হল। মেয়েটি তাকে এ অবস্তায় দেখে, তাকে ঘৃনা করে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

ঠান্ডার মৌসম ছিল, ছাত্র মসজিদে এসে গোসল করে, কাপর ধুয়ে বাহিরে আসল, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কাঁপতে ছিল। ইতি মধ্যে তাহাজ্জদের নামাযের জন্য আমি মসজিদে গেছি, ছাত্রকে এ অবস্থায় দেখে আশ্চার্য হলাম, তাকে জিজ্ঞেস করলে সে কতক্ষন চুপ থেকে পূর্ণ ঘটনা বলল। আমি তখন আল্লাহ্‌র নিকট দূয়া করলাম “হে আল্লাহ! এ ছাত্র তোমার ভয়ে নিজের শরীরে না পাকী মেখে নিজেকে পাপ মুক্ত রেখেছে তুমি তোমার দয়া ও অনুগ্রহে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে ইয্যত সম্মান দাও। সম্ভবত আল্লাহ তা’লা এ ছাত্রকে তার ঐ আমলের জন্য এ ইজ্জত দান করেছেন।[7]

কবরের আযাব ও সোয়াব সংক্রান্ত উল্লেখিত ঘটনা বলী স্পষ্ট প্রমাণিত, আর এখানে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষার খোরাক, আমরা কি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব?

ফুটনোট

[1] - বোখারী, কিতাবুল মানাকেব, বাবু আলামাতিন্নাবুয়্যা ফীল ইসলাম।

[2] - কবর কা বিচ্ছু, উর্দু ডাইজেস্ট, এপ্রিল ১৯৯২।

[3] - রোজ নামা জন্‌গ, লাহোর, ১৭ ডিসেম্বর১৯৯০। ২৮ জমাদিউল আওয়াল ১৪১১ হিঃ সোম বার।

[4] - রোজ নামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ৯ আগষ্ট ২০০০ইং।

[5] - রোজ নামা নাওয়ায়ে ওয়াক্ত, লাহোর, ২৩জুন ১৯৯৩ইং।

[6] - দৌলত ছে মোহাব্বত কা আনজাম, মোহাম্মদ আকরাম রানজাহাফত রোযাহ আল এতে‘সাম, লাহোর, সেপ্টেম্বর, ১৯৯ইং।

[7] - সম্মানিত পিতা হাঃ মোঃ ইদ্রীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় গ্রাম কিলয়া নাওয়ালা জিলার গুজরা নাওয়ালার জামে মসজিদে জু‘মার খুৎবায় এ ঘটনাটি একাধিকবার বলতে আমি শুনেছি, এ ঘটনাটি আমি লিখতেছি ইতি মধ্যে সাপ্তাহিক “আল এ‘তেসাম” ১৪ সংখ্যার ২৫ মহাররম ১৪২২হিঃ “গাইর মাহরাম মহিলার সাথে একাকিত্বের আতঙ্ক” শিরোনামে ডঃ আঃ গফুর রাশেদ সাহেবও উল্লেখ করেছেন, যা পাঠে তা সত্যতার ব্যাপারে আমার আত্মবল আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। (লেখক)

২০
মৃত্যুর কথা স্মরণ করা মোস্তাহাব
মাসআলা-১ মৃত্যুর কথা বেশি করে স্মরণ করাঃ

عن أبي هريرة بينه قال : قال رسو الله . واكثروا ذكر هاذم اللذات ) يعني الموت . رواه ابن ماجة

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাধসমূহ কতন কারী অর্থাৎ মৃত্যুর কথা বেশি বেশি করে স্মরণ কর। (ইবনে মাযাহ)[1]

মাসআলা-২ মৃত্যুকে বেশি বেশি করে স্মরণ কারীরাই জ্ঞানীঃ

عن ابن عمر رضي الله عنهما أنه قال كنت مع رسول الله : فجاءه رجل من الانصار ثم قال يا رسول الله يا المؤمنين افضل ؛ قال (( احسنهم خلقا ، قال فسلم على النبي ؟ قال (( اكثرهم بنموت ذکر اور اخسهم لما بعده استعدادا، اولئک قصر المؤمنين اكي الايا )) رواه ابن ماجة

আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম হটাৎ করে তখন আনসারদের এক লোক তাঁর নিকট আসল এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম দিল, অতঃপর বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মোমেন সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ তাদের মধ্যে যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, সে আরো জিজ্ঞেস করল যে মোমেনদের মধ্যে অধিক বুদ্ধিমান কে? তিনি বললেন ও তাদের মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যুর কথা স্মরণ কারী এবং মৃত্যুর পরবর্তী স্তর সমূহের জন্য সর্বাধিক প্রস্তুতি গ্রহণ কারী, সেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান।[2]

عشر عشرة . فقام رجل من الانصار ، عن ابن عمر رضي الله عنهما ، قال أتيت النبي ، من كيش الناس و اخزم الناس ؟ قال (( اكثرهم ذكرا للموت ، و اكثرهم فقال : يا نبى الله ا عدادا لمؤت، أولبك الاكياس ذهبوا بشرف الدنيا و كرامة الأخرة )) رواه الطبرانی

আবদুল্লাহ্ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে উপস্থিত দশজন ব্যক্তির মধ্যে আমি দশম ছিলাম, আনসারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বললঃ যে, হে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ? এবং কে সবচেয়ে হুশিয়ার? তিনি বললেনঃ যে তাদের মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং যে, এর জন্য সর্বাধিক প্রস্তুত থাকে। তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান, তারাই পৃথিবীতে সম্মান ও পরকালে মর্যাদাবান হয়েছে। (তাবারানী)[3]

মাসআলা-৩ মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ইবাদতঃ

كر عند البيت رجل بعبادة و اجنها فقال : (( كيف ذكر صاحبكم بنه قال عن أنس كرة ، قال : (( ليس صاحبكم هناك )) رواه البار للمؤت؟ )) قالوا ما تشمع ( حسن )

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক ব্যক্তির এবাদত ও সাধনার কথা বলা হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের সাথী মৃত্যুর কথা কিরকম স্মরণ করে? তারা বললঃ আমরা তাকে তা স্মরণ করতে শুনিনা। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমাদের সাথী ইবাদতের সঠিক স্তরে পৌঁছতে পারে নাই।[4]

، فجعل اصحاب عن سهل بن غيرن الساعدی دننه قال مات رجل من أصحاب النبي الله را ساکت ، فلما سكتوا قال شول الله ويثنون عليه ، ويذكرون م عبادته و رش ر ذكر الموت؟ )) قالوا : لا . قال : (( فهل كان يد كثيرا مما رسول الله صلى الله عليه وسلم (( هل كان ي يشتهى؟ )) قالوا : لا . قال : (( ما بلغ صاحبكم كثيرا ما تذهبون اليه )) رواه الطبرانی ( حسن )

অর্থঃ সাহাল বিন সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবাগণের মধ্যে কোন এক সাহাবী ইন্তেকাল করল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবাগণ তার ইবাদতের কথা স্মরণ করতে লাগল, আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ করে থাকলেন, যখন তারা চুপ করল তখন তিনি বললেনঃ যে সে কি মৃত্যুর কথা বেশি বেশি করে স্মরন করত? তারা বললঃ না, তিনি বললেনঃ সে কি মনের চাহিদাকে ত্যাগ করেছিল? তারা বললঃ না, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা যে মর্যাদা পেয়েছ সে তা পায় নাই। (ত্বাবারানী)[5]

মাসআলা-৪ মৃত্যু ও কবরকে স্মরণ কারী সঠিক অর্থে আল্লাহর ব্যাপারে লজ্জা করেঃ

عن عبدالله بن مسعود ده قال : قال رسول الله : (( استخيوا من الله حق الحياء )) قلنا : إنا نتخي و الحمد لله، قال (( ليس اك و لكن الاستياء من الله حق الحياء یا نبی الله أن تخفظ الأس، وما وعى ، و تحفظ البطن، وما حوى ، و تتذكر الموت و البلى ، ومن اراذ الآخرة ترك زينة الدنيا فمن فعل ذلك فقد اشتخیی )) يعنى من الله حق الحياء . رواه الترمذی

অর্থঃ আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর ব্যাপারে লজ্জা করার মত লজ্জা কর, আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! অবশ্যই আমরা লজ্জা করি আলহামদুলিল্লাহ্, তিনি বললেনঃ এটা উদ্দেশ্য নয়, বরং আল্লাহর ব্যাপারে লজ্জা করার মত লজ্জা করার অর্থ হল এই যে, তোমার মাথা এবং মাথায় যা কিছু আছে তা সংরক্ষন করবে, (অর্থাৎ চোখ, কান, যবান ইত্যাদি) এবং পেট সংরক্ষন করবে, (যাতে সেখানে হারাম কোন কিছু না যায়) ও পেটের সাথে যা কিছু আছে তাও সংরক্ষন করবে, (অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও হাত, পা, ইত্যাদি) এবং স্মরণ কর মৃত্যু ও কবরে হাড্ডি সমূহ চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা, আর যে ব্যক্তি পরকালে মুক্তির আশা রাখে সে যেন পৃথিবীর চাকচিক্যতাকে ত্যাগ করে, আর যে তা করবে সে লজ্জা করার মত লজ্জা করল) অর্থাৎঃ আল্লাহর ব্যাপারে লজ্জা করার মত লজ্জা করল।[6]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুযযুহদ, বাবু যিকরিল মাওত ওয়াল ইন্তে’দাদ লাহু (২/৩৪৩৪)।

[2] - কিতাবুযযুহদ, বাবু যিকরিল মাওত ওয়াল ইস্তে’দাদ লাহু (২৩৪৩৪)

[3] - মহীউদ্দীন দীব লিখিত আত তারগীব ওয়াত তারহীব, (৪ খৃঃ হাদীস নং-৪৮৮৬)

[4] - মহীউদ্দীন দীব লিখিত আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, (৪ খঃ হাদীস নং-৪৮৮৮)

[5] - মহীউদ্দীন দীব লিখিত আত তারগীব ওয়াত তারহীব, (৪ খঃ হাদীস নং-৪৮৮৭)

[6] - আবওয়াব সিফাতুল ক্বিয়ামা ১৪ (২/২০০০)

২১
মৃত্যু কামনা করা নিষেধ
মাসআলা- ৫ মৃত্যু কামনা করা নিষেধঃ

لا يتمنين أحدكم الموت إما خيرا فلعله أن عن أبي هريرة ، قال : قال رو الله داد خيرا و إما مسيئا فلعله أن يتغيب ). وواه البخاری

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মৃত্যু কামনা করবে না, হয়ত বা সে ভাল লোক তাহলে তার ভালর পরিমান আরো বৃদ্ধি পাবে, অথবা খারাপ লোক, হয়ত সে তওবা করার সুযোগ পাবে। (বোখারী)[1]

মাসআলা-৬ একান্ত অপারগ হলে নিম্ন লিখিত শব্দাবলীর মাধ্যমে মৃত্যুর জন্য দুয়া করা যাবে।

أخذكم الموت . ض أصابه فإن : ( لايتم قال : قال النبي عن أنس بن مالک كان لا بد فاعلا فليقل : اللهم أحيني ماكانت الحياة خيرا لى و توني اذا كانت الوفاة خيرا لى ) ان

আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিপদ গ্রস্ত হয়ে তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে, আর একান্তই যদি বাধ্য হয় তাহলে বলবেঃ হে আল্লাহ্ যত দিন আমার জন্য বেচে থাকা ভাল হয়, তত দিন তুমি আমাকে বাচিয়ে রাখ। আর যখন আমার জন্য মৃত্যু ভাল হবে তখন আমাকে মৃত্যু দিও। (বোখারী)[2]

মাসআলা- ৭ শাহাদাতের জন্য দূয়া করা জায়েজঃ

لا يقول (( والذي نفسي بيده لوددت أن أقتل عن أبي هريرة عنه قال : قال شوق البى في سبيل الله ثم أحيقا ثم أقتل ثم أحيا ثم أقتل ثم أحيا ثم قتل )). رواه البخارى

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি” ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই আমি কামনা করি, যে আমি আল্লাহর পথে শহিদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহিদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহিদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহিদ হই। (বোখারী)[3]

মাসআলা-৮ কল্যাণময় মৃত্যুর জন্য আল্লাহ্‌ও নিকট দুয়া করতে হবেঃ

يقول (( اللهم اصلح لى دينى الذى قال : كان رسول الله عن أبي هريرة هوعضمة أمر و أضنخ لی دنیای التي فيها معاشی و أصلح لي آخرتي التي فيها معاډی و اجعل الحياة زيادة لى في كل خير واجعل الموت راحة لي من كل شر )). رواه مسلم

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দূয়া করতেন “হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনি অবস্থাকে সংশোধন কর যা আমার পরিনতির সংরক্ষক, তুমি আমার পার্থিব অবস্থাকে ভাল কর যেখানে আমি রুযী রোজগার করি, এবং তুমি আমার পরকালকে সংরক্ষন কর যা আমার প্রত্যাবর্তন স্থল, আর তুমি আমার হায়াতকে ভাল কাজ বৃদ্ধির মাধ্যম কর, আর আমার মৃত্যুকে সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে বাঁচার মাধ্যম কর।[4]

ফুটনোট

[1] - যোবাইদী লিখিত সংক্ষিপ্ত সহীহ বোখারী, হাদীস নং-১৯৬০

[2] - যোবাইদী লিখিত সংক্ষিপ্ত সহীহ বোখারী, হাদীস নং-১৯৫৮।

[3] - কিতাবুল জিহাদ, বাবু তামান্নিশ্‌ শাহাদাহ।

[4] - আলবানী সংকলিত সংক্ষিপ্ত সহীহ মুসরিম, হাদীস নং ১৮৬৯

২২
মৃত্যু যন্ত্রনা
মাসআলা- ৯ মৃত্যু যন্ত্রনা সত্যঃ

وَ جَآءَتۡ سَکۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَق

অর্থঃ মৃত্যু যন্ত্রনা সত্যিই আসবে। সূরা ক্বাফ-১৯

মাসআলা- ১০ মৃত্যু যন্ত্রনা অত্যন্ত বেদনা দায়কঃ

عن جابر عنه قال : قال رسول الله : (( لاتمو الموت فاين هول المطلع شيريدوا من السعادة أن طول عمر العبير ويرتزقه الله عوجل الإنابة )). رواه أحمد

অর্থঃ যাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা মৃত্যু কামনা করনা, কেননা প্রাণ নির্গত হওয়ার যন্ত্রনা অত্যন্ত বেদনা দায়ক, আর সুপরিনতির নির্দশন হল বান্দার হায়াত দীর্ঘায়িত হওয়া এবং বান্দা তওবা করার সুযোগ লাভ করা। (আহমদ)

মাসআলা- ১১ মৃত্যু যন্ত্রনা যতটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোগ করেছেন ততটা অন্য কেউ আর ভোগ করবে না?

من كرب الموت ما وجد، قالت فاطمة رضی قال لما وجد رسول الله عن انس بن مالك الله عنها واكوب ایتاة فقال رسول الله خير لا کب غلی اپیک بعد اليوم انه قد حضر من آبیک بتاري منه أحد الموافاة يوم القيامة )). رواه ابن ماجة مالي ( صحیح )

অর্থঃ আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু যন্ত্রনা শুরু হল, তখন ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেনঃ আফসোস আমার পিতার এ মৃত্যু যন্ত্রনা! রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজকের পর তোমার পিতা এ রকম কষ্ট আর পাবে না, মৃত্যুর মুহূর্তে তোমার পিতা এমন কষ্ট পেল যে, কিয়ামত পর্যন্ত অন্য কেউ এ কষ্ট পাবে না। (ইবনে মাযাহ)[1]

মাসআলা- ১২ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যু যন্ত্রনা সম্পর্কে আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর উক্তি?

عن عائشة رضي الله عنها قالت مات النبی و وانه بين حاقی و اقتتى ق اكره ښة رواه البخاري الموت لأحد أبدا بعد النبي

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যুর সময় তাঁর মাথা আমার সিনা ও থুতনির মাঝে ছিল। তার মৃত্যু যন্ত্রনা দেখার পর, আমি অন্য কারো ব্যাপারেই মৃত্যু যন্ত্রনাকে কষ্ট কর বলে মনে করিনা। (বুখারী)[2]

ফুটনোট

[1] - আবওয়াবুল জানায়েয, বাবু যিকরি ওফাতিহি ওয়া দাফনিহি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (১/১৩২০)

[2] - কিতাবুল মাগাযী, বাবু মারাজিন নাবিয়্যি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়া ওফাতিহি।

২৩
মৃত্যুর সময় মোমেনের সন্মানী
মাসআলা- ১৩ মৃত্যুর সময় মোমেন ব্যক্তিকে নিম্ন লিখিত দশটি বা এর মধ্য থেকে কিছু সন্মানী প্রদান করা হয়।

১ - ফেরেশতা আসার পর, রুহ কবজ করার পূর্বে, “আসসালামু আলাইকুম” বলে।

২ - মোমেন ব্যক্তির রুহ কবজ করার জন্য সূর্যের ন্যায় উজ্জল চেহারা সম্পন্য ফেরেশতা আসে।

৩ - মোমেন ব্যক্তির রুহ নেয়ার জন্য ফেরেশতা জান্নাত থেকে সাদা রেশমী কাফন সাথে নিয়ে আসে।

৪ - রুহকে সুগন্ধিময় করার জন্য ফেরেশতা জান্নাত থেকে সুগন্ধিও সাথে নিয়ে আসে।

৫ - মোমেন ব্যক্তির রুহ কবজ করার সময় ফেরেশতা মোমেন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টির সুসংবাদ দেয়।

৬ - মোমেন ব্যক্তির রুহ শরীর থেকে বের করার পর তা থেকে পৃথিবীতে বিদ্ধমান উন্নত সুগন্ধির ন্যায় সুঘ্রাণ বের হয়।

৭ - মোমেন ব্যক্তির রুহের জন্য আকাশ ও যমিনের মাঝে বিদ্ধমান সমস্ত ফেরেশতা রহমতের জন্য দূয়া করে।

৮ - মোমেন ব্যক্তির রুহ আকাশে বহন কারী ফেরেশতাগণ আকাশের দরজায় মোমেন ব্যক্তির পরিচয় পেশ করে, তখন দরজায় অবস্থান কারী ফেরেশতা তাকে সু স্বাগতম জানিয়ে আকাশের দরজা খুলে দেয়।

৯ - প্রত্যেক আকাশের ফেরেশতাগণ মোমেন ব্যক্তির রুহকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে পরবর্তী আকাশ পর্যন্ত তার সাথে যায়।

১০ - সপ্তম আকাশে পৌঁছার পর মোমেন ব্যক্তির রুহ আল্লাহর নির্দেশে ইল্লিয়্যিনে ডুকিয়ে পুনরায় তা কবরে পাঠানো হয়।

নোটঃ উল্লেখিত বিশেষ সম্মানীর প্রমাণ পরবর্তী পৃষ্ঠা সমূহে মাসায়েলের সাথে উল্লেখিত হাদীস সমূহে দেখুন।

মাসআলা- ১৪ রুহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা মোমেন ব্যক্তিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছায়ঃ

الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ طَیِّبِیۡنَ ۙ یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡکُم

অর্থঃ ফেরেশ্‌তাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায় তাঁরা তাদেরকে বলবে তোমাদের প্রতি সালাম! (সূরা নাহাল -৩২)

تَحِیَّتُہُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَہٗ سَلٰمٌ

অর্থঃ যেদিন তারা (মোমেনরা) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, সেদিন তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। (সূরা আহযাব-৪৪)

মাসআলা-১৫ মোমেন ব্যক্তির রূহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির সু সংবাদ দেয়, যার ফলে মোমেনের আত্মা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব থাকেঃ

: قال رر من احب لقاء الله احب الله لقاءه ومن ، عن النبي عن عبادة ابن الشاير كرة لقاء الله كره الله لقاءه )) قالت عائشة رضي الله عنها او بغض ازواجه انا لنكرة الموت قال ر ( ليس ذلك ولكن المؤمن اذا حضرة الموت بشر برضوان الله و كرامته فليس شئ أحب إليه مما أمامه فأحب لقاء الله و احب الله لقاء هو ان الكافر اذا خضر بشر بعذاب الله وعقوبته فليس شيء اكره اليه مما أمامه فكره لقاء الله و كره الله لقاءه )) رواه البخار

অর্থঃ উবাদা বিন সামেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে পছন্দ করে আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাত করাকে পছন্দ করেন, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করাকে অপছন্দ করেন। আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বা রাসূলের কোন এক স্ত্রী বললেনঃ অবশ্যই আমরা মৃত্যুকে অপছন্দ করি, তিনি বললেনঃ “এটা উদ্দেশ্য নয়, বরং মোমেন ব্যক্তি যখন মৃত্যু মুখে পতিত হয়, তখন তাকে তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং দয়া সম্পর্কে সু সংবাদ দেয়া হয়। তখন মোমেনের জন্য অপেক্ষমান প্রতি দান সমূহ থেকে আর কোন কিছুই তার নিকট অধিক পছন্দনীয় থাকে না। তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পাওয়াকে অধিক পছন্দ করে। আর আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাত করাকে অধিক পছন্দ করেন। পক্ষান্তরে কাফের যখন মৃত্যু মুখে পতিত হয়। তখন তাকে আল্লাহর আযাবের সু সংবাদ দেয়া হয়। তখন তার জন্য অপেক্ষমান শাস্তির চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কিছুই থাকে না। তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পাওয়াকে অধিক অপছন্দ করে। আর আল্লাহ ও তার সাথে সাক্ষাত করাকে অধিক অপছন্দ করেন। (বোখারী)[1]

মাসআলা- ১৬ মোমেন ব্যক্তির রুহ কবজ করার জন্য সূর্যের ন্যায় উজ্জল চেহারা সম্পন্ন ফেরেশতা আসে।

মাসআলা- ১৭ মোমেন ব্যক্তির রুহ কবজ করার জন্য ফেরেশতা জান্নাত থেকে কাফন ও সুগন্ধি নিয়ে আসে।

মাসআলা-১৮ মোমেন ব্যক্তির রুহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা মোমেন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলে হে পবিত্র আত্মা আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির প্রতি অগ্রসর হও।

মাসআলা- ১৯ মোমেন ব্যক্তির রুহ শরীর থেকে এত দ্রুত বের হয় যেমন পানির পাত্র থেকে পানি দ্রুত বের হয়।

মাসআলা-২০ মোমেন ব্যক্তির রুহ থেকে পৃথিবীতে বিদ্ধমান উন্নত সুগন্ধির ন্যায় সুঘ্রাণ আসতে থাকে।

মাসআলা-২১ মোমেন ব্যক্তির রুহ আসমানে বহন কারী ফেরেশতা প্রত্যেক আকাশের দরজায় দন্ডয়মান ফেরেশতার নিকট পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন সেখানে দন্ডয়মান ফেরেশতা তাকে সু স্বাগতম জানিয়ে আকাশের দরজা খুলে দেয়।

মাসআলা-২২ মোমেন ব্যক্তির রুহকে সু স্বাগতম জানাতে প্রত্যেক আকাশের ফেরেশতা পরবর্তী আকাশ পর্যন্ত যায়।

মাসআলা-২৩ সপ্তম আকাশে পৌঁছার পর আল্লাহর নির্দেশে মোমেন ব্যক্তির রুহ ইল্লিয়ীনে প্রবেশ করিয়ে তাকে দ্বিতীয় বার কবরে ফেরত পাঠানো হয়।

في جنازة رجل من الانصار فانتهينا قال خرجنا مع رشول الله عن البراء بن عازب إلى القبر ولما يحد بعد فجلس شؤل الله فجلسنا حوله كانما على رءوسنا الطير في يده عود نفت به في الأرض فرفع رأسه فقال (( اشتعيدوا بالله من عذاب القبر )) مرتين او ثلاثا ، ثم قال : (( إن العبد المؤمن إذا كان في انقطاع من الدنيا و إقبال من الأجرة نزل اليه ملايكة من الماء بيض الوجوه، كأن وجوههم الشمس معهم كفن من أفان الجنة وختو من تؤط الجنية خشي يخلوا منه مد البصر ، ثم يجيء ملك الموت عليه السلام حتى يجلس عند رأيه فيقول : ايها النفس الطيبة : أخرجي إلى مغفرة من الله و رضوان قال : تخرج تسيل كما تيل القطرة من في الشقاء فيها ، فإذا اخدها لم يدعوها في يده طرفة عين حتى يأخذوها فيجعلوها في ذلك الكفن، وفي ذلك الحنوط ويخرج منه وجذث على وجه الأرض قال : فيصعدون بها فلا يمرون على فلامن أطيب نفحة مش الملايكة إلا قالوا : ما هذا الروح الطيب ؟ فيقولون : فلان ابن فلان، بأحسن أسمائه التى كان يسمون بها في الدينا، حتى ينتهوا بها إلى السماء الدنيا فيكون له فيفتح له، فيشية من ماء مقبنوها إلى الشماء التي تليها حتى ينتهي بها إلى الماء السابعة فيقول الله عز كل وجل : اكتبوا كتاب عبير في عليين وأعيدوه إلى الأرض في جسده )) رواه أحمد ( حسن )

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক আনসারী সাহাবীর জানাযায় অংশ গ্রহণ করার জন্য বের হই, আমরা যখন কবরের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম তখনও কবর পরি পূর্ণ হয় নাই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন, আমরাও তার সাথে বসে গেলাম, আমরা নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলাম, তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল তা দিয়ে তিনি মাটিতে দাগ কাটতে ছিলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হটাৎ তাঁর মাথা উঠিয়ে বললঃ কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ কথা তিনি দুই বা তিন বার বললেনঃ অতঃপর বললেনঃ যখন মোমেন ব্যক্তি দুনিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, পরকাল অভিমুখে রওয়ানা হয়, তখন তার নিকট সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল চেহারা সম্পন্ন ফেরেশতা জান্নাত থেকে কাফন ও সুগন্ধি নিয়ে এসে তার সামনে বসে, অতঃপর মালাকুলমাওত এসে তার মাথার নিকট বসে বলেঃ হে পবিত্র আত্মা! তুমি আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হয়ে আস, অতঃপর রুহ শরীর থেকে এত দ্রুত বের হয় যেমন পানির পাত্র থেকে পানি দ্রুত নিচে পড়ে যায়।

সাথে সাথে মালাকুর মাওত তাকে ধরে ফেলে এবং মালাকুল মাওত তাকে ধরা মাত্রই চোখের পলকে অন্য ফেরেশতা তাকে জান্নাতের কাফনে পেচিয়ে, জান্নাতের সুগন্ধি দিয়ে তাকে সু গন্ধময় করে দেয়। তখন ঐ রুহ থেকে পৃথিবীতে বিদ্ধমান উন্নত সুগন্ধির ঘ্রাণ আসতে থাকে। অতঃপর এ রুহকে নিয়ে ফেরেশতা আকাশ অভিমুখে রওয়ানা হয়, পথিমধ্যে যেখানেই ফেরেশতাদের সাথে সাক্ষাত হয় সেখানেই ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করে যে এ পবিত্র আত্মা কার? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলে যে, এ ওমুকের ছেলে ওমুক, যে পৃথিবীতে ওমুক সুন্দর নামে পরিচিত ছিল, ফেরেশতা তাকে নিয়ে পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছে, তার জন্য দরজা খোলার আবেদন করে, তখন তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, অতঃপর ঐ আকাশের ফেরেশতা মোমেন ব্যক্তির রুহকে বিদায় জানাতে জানাতে পরবর্তী আকাশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। এভাবে ফেরেশতা ঐ রুহ নিয়ে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, আমার বান্দার নাম ইল্লিয়ীনে লিখে নিয়ে তাকে পৃথিবীতে তার শরীরে ফেরত পাঠাও। (আহমদ)[2]

মাসআলা-২৪ মোমেনের রুহ কবজ করার জন্য রহমতের ফেরেশতাগণ সাদা রেশমী কাফন সাথে নিয়ে আসে।

মাসআলা-২৫ রুহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা মোমেন ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং রহমতের সুসংবাদ দেয়।

মাসআলা-২৬ মোমেন ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত সুগন্ধি ফেরেশতাদেরকেও আনন্দিত করে।

মাসআলা-২৭ মৃত ঈমানদ্বার ব্যক্তির রুহ সমূহ যখন ইল্লিয়ীনে পৌঁছে তখন পূর্বের ঈমান দ্বারদের রুহের সাথে মিসে তারা আনন্দ উপভোগ করে এবং তারা একে অপরের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।

عن أبي هريرة بينه عن النبي ، قال : (( إن المؤمن إذا اختضر اتت ملائكة الرحمة بحريرة بيضاء فيقولون : أخرجي راضية مرضية عنك إلى روح الله و ريحان ورب غير غضبان تخرج أطيب ريح المشي حتى انهم ليناوله بعضهم بعضا يشمونة حتى ياتوا به باب الشماء فيقولون حتى يأتوا به ارواح : ما أطيب هذه الريح التي جاءتكم منالارض فكلما اتوا سماء قالوا ذلك المؤين قال له أفرح به من أخبركم بغائيه إذا قدم عليه قال فيشلون ما فعل فلان قال - يقولون مموه حتى يشتريح فإنه كان في ممم الدنيا ، فاذا قال لهم : أما اتاكم فائه فذ ما قال : فيقولون دهب به إلى أمه الهاوية قال : وأما الكافر فإن ملائكة العذاب تأتيه فيقول أرجی م ؤطا عليك إلى عذاب الله وسخطه فيخرج كانتي رح جيفة فينطقون به إلى باب اخط لما أتو على الأرض قالوا ذلك حتى ياتوا به أرواح الأرض فيقولون : ما أنت هذه الري المحار )) رواه الحاكم وابن حبان

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন মোমেনের মৃত্যুর সময় কাছিয়ে আসে তখন রহমতের ফেরেশতা সাদা রেশমী কাফন নিয়ে আসে এবং বলেঃ হে রুহ আল্লাহর রহমত, জান্নাতের সুঘ্রাণ এবং তোমার প্রতি সন্তুষ্ট প্রভুর প্রতি, এ শরীর থেকে এমন ভাবে বের হও যে তুমি তোমার প্রভুর প্রতি সন্তষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তষ্ট, মোমেন ব্যক্তির রুহ যখন শরীর থেকে বের হয় তখন তা থেকে উন্নত সু গন্ধির ঘ্রাণ আসে, এমনকি ফেরেশতারা একে অপরের কাছ থেকে নিয়ে এ সুগন্ধি শুকে, আর যখন আকাশের দরজায় পৌঁছে তখন আকাশের ফেরেশতারা পরস্পরে বলতে থাকে, এ কত উন্নত সুগন্ধি ময় রুহ যা পৃথিবী থেকে তোমাদের নিকট আসছে, যখনই ফেরেশতা তা নিয়ে পরবর্তী আকাশে পৌঁছে তখন ঐ আকাশের ফেরেশতারাও এ ধরনের মন্তব্যই করে, শেষ পর্যন্ত তা বহন কারী ফেরেশতারা ঐ রুহকে ঈমানদ্বারদের রুহ জগৎ ইল্লিয়ীনে নিয়ে যায়, এ রুহ ওখানে পৌঁছার পর পূর্ববর্তী রুহ সমূহ এত বেশী খুশী হয় যেমন তোমাদের কেউ তার আপন ভায়ের সাক্ষাতে খুশী হয়, এমন কি কিছু কিছু রুহ নতুন রুহ সমূহকে জিজ্ঞেস করে যে, ওমক ব্যক্তি কেমন আছে? অতঃপর তারা পরস্পরে বলতে থাকে যে, তাকে একটু ছেড়ে দাও আরাম করতে দাও, সে দুনিয়ার দুঃখ কষ্টের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল, আরাম করার পর এ রুহ পুরাতন রুহ দেরকে বলতে থাকে যে, ঐ রুহ কি তোমাদের নিকট আসে নাই সে তো আগেই মৃত্যু বরণ করেছে, যা শোনে তারা দুঃখ করে বলে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

কাফেরের নিকট আযাবের ফেরেশতা এসে বলে যে, হে অসন্তুষ্ট রুহ আল্লাহ্‌র শাস্তি ও অসন্তুষ্টির প্রতি বের হও, কাফেরের রুহ যখন শরীর থেকে বের হয় তখন তা থেকে এত দূর গন্ধ আসতে থাকে, যেমন কোন মৃত দেহ থেকে দূর গন্ধ আসে, ফেরেশতা যখন তাকে নিয়ে পৃথিবীর দরজায় আসে তখন ওখানের দারওয়ান বলে যে, এত দূরগন্ধ ময়! যখনই ফেরেশতা তাকে নিয়ে পৃথিবীর পরবর্তী দরজার সামনে আসে তখন ওখানের ফেরেশতাও এমনই বলে, শেষে আযাবের ফেরেশতা তাকে নিয়ে কাফেরদের রুহের সাথে সিজ্জিনে রেখে দেয়। (হাকেম, ইবনে হিব্বান)[3]

নোটঃ উল্লেখ্যঃ মৃত্যুর পর ঈমান দ্বারদের রুহ সমূহ সরকারী মেহমান খানায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয় যা সপ্তম আকাশের উপর, যার নাম ইল্লিয়ীন আর কাফেরদের রূহ সমূহ সরকারী জেল খানায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয় যা সপ্তম যমিনের নিচে, যার নাম সিজ্জিন। এব্যাপারে আল্লাহ্ ই সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন!

মাসআলা-২৮ মোমেন ব্যক্তির রুহ শরীর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে ফেরেশতা সু সংবাদ দিতে থাকে।

মাসআলা- ২৯ রুহকে আরশে আযীম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক আকাশের দারওয়ান ফেরেশতা তাকে যথেষ্ঠ সম্মানের সাথে সু স্বাগতম জানাতে থাকে।

: قال ( و السميث تخضره الملائكة فإذا كان الرجل صالحا ، عن النبي عن أبي هريرة قالوا : أخرج ابنتها النفس الطيبة ! كانت في الجسد الطيب أخرج حميدة و أبشری بروح و ريحان ورب غير غضبان ، فلا يزال يقال لها حتى تخرج ثم يعرج بها الى السماء فيفتح لها فيقال : من هنا فيقولون فلان ، فقال : مرحبا بالنفس الطيبة كانت في الجسد الطيب أدخلى حميذ و أبشرى بروح وريحان ورب غير غضبان فلا يزال يقال لها ذلك حتى ينتهي بها الى الماء التي فيها الله عزوجل و اذا كان الرجل الشؤء قال : أخزجى ايتها النفس الخبيثة ! كانت في الجسد الخبي أخرجي ذميمة و ابشری بحميم و غشاق وآخر من شكله اواج فلا يزال يقال لها ذلك حتى تخرج ثم يعرج بها الى السماء فلا يفتح لها فيقال : من هذا ؟ فيقال فلان ، فقال :” مرحبا بالقس الخبيثة كانت في الجسد الخبيث از جعى ديمة فإنها لا تفتح لي ابواب الماء فيرسل بها من الماء ثم تصير إلى القبر )) رواه ابن ماجة ( صحيح )

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তি সৎ লোক হলে তার নিকট ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে বলেঃ হে পবিত্র রুহ বের হও! তুমি এক পবিত্র দেহে ছিলা, তুমি প্রশংসা যোগ্য, আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমার জন্য রয়েছে জান্নাতের নে’মত সমূহ, তোমার প্রভু তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, ফেরেশতা মৃত ব্যক্তিকে তার রুহ বের হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে একথা বলতে থাকে, অতঃপর যখন রুহ বের হয়ে আসে তখন ফেরেশতা তাকে নিয়ে আকাশের দিকে যেতে থাকে, তার জন্য আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, এবং জিজ্ঞেস করা হয় যে, কে এ? ফেরেশ্‌তা উত্তরে বলে যে, এ ওমুক ব্যক্তি, উত্তরে বলা হয় যে এ পবিত্র আত্মার জন্য সু সংবাদ পৃথিবীতে সে এক পবিত্র শরীরের মধ্যে ছিল, হে পবিত্র আত্মা আকাশের দরজা দিয়ে খুশী হয়ে প্রবেশ কর, তোমার জন্য আল্লাহর রহমতের সু সংবাদ, জান্নাতের নে’মতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমার প্রতি সন্তুষ্ট প্রভূর সাক্ষাতে তুমি মোবারক ময় হও, প্রত্যেক আকাশ অতিক্রমের সময় ধারাবাহিক ভাবে তাকে এ সু সংবাদ দেয়া হতে থাকে, এভাবে ঐ রুহ আরশ পর্যন্ত পৌঁছে।

মৃত ব্যক্তি যদি খারাপ লোক হয়, তখন ফেরেশতারা বলে, হে খবীস রুহ! এ শরীর থেকে বের হও তুমি খবীস শরীরে ছিলা, লাঞ্ছিত হয়ে বের হও, এবং সু সংবাদ গ্রহণ কর উত্তপ্ত পানি ও পুঁজ এবং অন্যান্য আযাবের, ফেরেশতা রুহ বের করা পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে একথা বলতে থাকে, অতঃপর তাকে নিয়ে আকাশের দিকে যায়, তার জন্য আকাশের দরজা খোলা হয় না, আকাশের ফেরেশতা জিজ্ঞাস করে কে এ? উত্তরে বলা হয়, এ ওমুক ব্যক্তি আকাশের ফেরেশতা বলে, এ খবীস রুহ যা খবীস শরীরের মধ্যে ছিল এর জন্য কোন সু সংবাদ নেই, তাকে লাঞ্ছিত করে ফেরত পাঠাও, এ ধরনের খবীস রুহের জন্য আকাশের দরজা খোলা হয় না, তখন ফেরেশতা তাকে আকাশ থেকে নিচে নিক্ষেপ করে এবং সে কবরে ফিরত আসে, (ইবনে মাযা)[4]

মাসআলা- ৩০ মোমেন ব্যক্তির রুহ আকাশে পৌঁছার পূর্বেই ফেরেশতা তার জন্য রহমতের জন্য দূয়া করতে থাকে।

زوخ المؤمن تلقاها ملكان يعدانها قال حماد : فذكر عن أبي هريرة عنه قال إذا خرج من طيب ريحها و ذكر المشک ، قال : ويقول اهل الشماء : روح طيبة جاءت من قبل الأرض صلى الله و عليك وعلى جير كنت تغمريئه فينطلق به إلى ربه عزوجل ثم يقول : انطلقوا به إلى آخر الأجل ، قال : واين الكافر إذا خرجت وخله قال حماد وذكر بين نتنها وذكر غناو قول أهل الماء : ؤخ خبيثة جاء من قبل الأرض قال : فيقال : إنطلقوا به الى آخر ريطة كانت عليه على انفه هكذا . رواه مسلم الأجل قال أبو هريرة، فرد شؤن الله

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ যখন মোমেন ব্যক্তির রুহ বের হয়, তখন দুই জন ফেরেশতা তা নিয়ে আকাশের দিকে যায়, হাদীসের বর্ণনা কারী হাম্মাদ বলেনঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রুহ ও সুগন্ধির কথা উল্লেখ করে বলেনঃ আকাশের ফেরেশতারা ঐ রুহের সুঘ্রাণ পেয়ে বলে যে, কোন পবিত্র আত্মা হবে যা যমিনের দিক থেকে আসতেছে, আল্লাহ্ তোমার প্রতি এবং ঐ শরীরের প্রতি রহম করুন যেখানে তুমি লালিত হয়েছ, অতঃপর ফেরেশতা এ রুহকে তার প্রভূর নিকট নিয়ে যায়, আল্লাহ্ তখন এরশাদ করেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত তাকে তার সুনির্দিষ্ট স্থান ইল্লিয়ীনে পৌঁছে দাও। হাদীসের বর্ণনা কারী কাফেরের রুহ বের হওয়ার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রুহকে দুর্গন্ধময় এবং ফেরেশতার লা’নতের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ আকাশের ফেরেশতারা বলে যে, কোন অপবিত্র আত্মা হবে যা যমিনের দিক থেকে আসতেছে, অতঃপর আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, কিয়ামত পর্যন্ত তাকে তার সুনির্দিষ্ট স্থান সিজ্জিনে পৌঁছে দাও, আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ যখন (রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাফেরের আত্মার দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ করছিলেন তখন ঘৃণায় স্বীয় চাদরের আচল এভাবে স্বীয় নাকের উপর রেখেছিলেন, অতঃপর তিনি তার চাদর নাকের উপর রেখে দেখালেন। (মুসলিম)[5]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুর রাকায়েক, বাবু মান আহাব্বা লিকাআল্লাহি আহাব্বা আল্লাহু লিকাআহু।

[2] - মহিউদ্দীন দিব সংকরিত আত্ তারগীব ওয়াত্তারহিব, ৪র্থ খন্ড হাদীস নং-৫২২১।

[3] - হাকেম কিতাবুল জানায়েজ, বাবু হালি ক্বাবজি রুহিল মোমেন ওয়া ক্বাবজি রুহিল কাফের, (১/১৩৪২) তাহকীক আবু আবদিল্লাহ আবদুস্‌সালাম বিন মোহাম্মদ বিন ওমার ওলুস।

[4] - আবওয়াবুয যুহদ, বাবু যিকরিল মাওতি ওয়াল ইস্তি’দাদ লাহু (২/ ৩৪৩৭)

[5] - কিতাবুল জান্নাহ, বাবু আরযিল মকআ’দ আলাল মায়্যেতি ওয়া আযাবিল কবর।

২৪
মৃত্যুর মুহূর্তে কাফেরের শাস্তি
মাসআলা-৩১ মৃত্যুর সময় কাফের দেরকে নিম্নে উল্লেখিত দশ প্রকার অথবা এর মধ্য থেকে কিছু কিছু শাস্তি দেয়া হয়।

১ - কাফেরের রুহ কবজ করার জন্য অত্যন্ত ভীতি কর কাল চেহারা সম্পন্ন ফেরেশতা আসে।

২ - কাফেরের রুহ কবজ করার জন্য ফেরেশতা চটের কাফন সাথে করে নিয়ে আসে।

৩ - রুহ কবজ করার পূর্বেই ফেরেশতা কাফেরকে এ বলে ভয় দেখাতে থাকে যে, হে নাপাক রুহ এ শরীর থেকে বের হয়ে আল্লাহর গজবের দিকে বের হও।

৪ - কাফেরের রুহ কবজ করার সময় ফেরেশতা তার চেহারা ও পিঠে থাপ্পর দেয়।

৫ - কাফেরের রুহ কবজ করার সময় ফেরেশতা তাকে আগুনের আযাবের সু সংবাদও দেয়।

৬ - মৃত্যুর সময় কাফেরের রুহ থেকে পৃথিবীতে বিদ্ধমান নিকৃষ্টতম গলা মৃত দেহের দূর্গন্ধ আসে।

৭ - কাফেরের রুহের দূর্গন্ধ শোনে আকাশ ও যমিনের মধ্যবর্তী এবং আকাশে উপস্থিত সমস্ত ফেরেশ্‌তা তার প্রতি লা’নত করে।

৮ - আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, এ কাফের আত্মা সিজ্জিনে রেখে দাও।

৯ - সিজ্জিনে অনু প্রবেশের পর কাফেরের রুহ অত্যন্ত লাঞ্ছনার সাথে প্রথম আকাশ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়।

মাসআলা-৩২ কাফেরের রুহ কবজ করার পূর্বেই ফেরেশতা তাকে জাহান্নামে প্রবেশের সুসংবাদ দেয়ঃ

الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ ظَالِمِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ ۪ فَاَلۡقَوُا السَّلَمَ مَا کُنَّا نَعۡمَلُ مِنۡ سُوۡٓءٍ ؕ بَلٰۤی اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۸﴾ فَادۡخُلُوۡۤا اَبۡوَابَ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ فَلَبِئۡسَ مَثۡوَی الۡمُتَکَبِّرِیۡنَ ﴿۲۹﴾

অর্থঃ যাদের মৃত্যু ঘটায় ফেরেশতাগণ তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করতে থাকা অবস্থায়, অতঃপর তারা আত্মসমর্পন করে বলবেঃ আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না, হাঁ তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত। সুতরাং তোমরা দ্বার সমূহের মাধ্যমে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেথায় স্থায়ী হওয়ার জন্য, দেখ অহংকার কারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট! (সূরা নাহাল ২৮-২৯)

মাসআলা-৩৩ কাফেরের রুহ কবজ করার সময় ফেরেশতা তার চেহারা ও পিঠে থাপ্পর দেয় এবং সাথে সাথে তাকে জাহান্নামের সুসংবাদও দেয়ঃ

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ یَتَوَفَّی الَّذِیۡنَ کَفَرُوا ۙ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡہَہُمۡ وَ اَدۡبَارَہُمۡ ۚ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿۵۰﴾

অর্থঃ হে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তুমি যদি ঐ অবস্থা দেখতে যখন ফেরেশতাগণ কাফেরদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাতহেনে তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছে, (আর বলছে) তোমরা যন্ত্রনা দায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আনফাল-৫০)

فَکَیۡفَ اِذَا تَوَفَّتۡہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡہَہُمۡ وَ اَدۡبَارَہُمۡ ﴿۲۷﴾

অর্থঃ ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কি হবে? (সূরা মোহাম্মদ-২৭)

মাসআলা-৩৪ কাফেরের রুহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা তাকে খুব ধমকায় এবং লাঞ্ছনাময় শাস্থির ভয় দেখায়।

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡہُوۡنِ بِمَا کُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ کُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِہٖ تَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۹۳﴾

অর্থঃ আর তুমি যদি দেখতে পেতে যখন যালিমরা সম্মুখীন হবে মৃত্যু সংকটে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে, নিজেদের প্রাণ গুলি বের কর, আজ তোমাদেরকে সে সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে লাঞ্ছনাময় শাস্তি দেয়া হবে যে, তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা দোষারোপ করে অকারণ প্রলাপ বকছিলে এবং তার আয়াত সমূহ কবুল করতে অহংকার করছিলে। (সূরা আনআ’ম -৯৩)

মাসআলা-৩৫ কাফেরের রুহ কবজ করার জন্য কাল চেহারা বিশিষ্ট আযাবের ফেরেশতা আসবেঃ

মাসআলা-৩৬ কাফেরের রুহ পেচানোর জন্য ফেরেশতা সাথে করে চটের কাফন নিয়ে আসেঃ

মাসআলা-৩৭ কাফেরের রুহ তার শরীর থেকে এত কষ্টের সাথে বের হয়, যেমন কোন লোহার শিখ কোন খুটি থেকে বের করা কষ্ট কর।

মাসআলা-৩৮ কাফেরের রুহ থেকে পৃথিবীতে বিদ্ধমান নিকৃষ্ট তম দূর্গন্ধের ন্যায় দূগন্ধ আসে।

মাসআলা-৩৯ আকাশে নেয়ার পথে যে সমস্ত ফেরেশতাদের পাশ দিয়ে তাকে অতিক্রম করতে হয় সে সমস্ত ফেরেশতা গণই তাকে লা’নত করে।

মাসআলা-৪০ কাফেরের রুহ আল্লাহর নিকট নেয়ার জন্য প্রথম আকাশের দারওয়ান ফেরেশতার নিকট দরজা খোলার জন্য দরখাস্ত করলে সে দরজা খোলতে অসম্মতি জানাবে।

মাসআলা-৪১ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে এ কাফেরের নাম সপ্তম যমিনের নিচে সিজ্জিনে রের্কড কর।

মাসআলা-৪২ সিজ্জিনে রের্কড করার পর কাফেরের রুহ অত্যন্ত লাঞ্ছনার সাথে প্রথম আকাশ থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়।

عن البراء بن عازب ، قال : خرجنا مع رشول الله تجز في جنازة رجل من الأنصار فانتهينا إلى القبر وما يلحد بعد، فجلس رسول الله وجلسنا حوله كانما على زر ويا الطير فى يده غؤد ينگ به في الأرض فرفع رأسه فقال : (( استعينوا بالله من عذاب القبر )) مرتين أو ثلاثا ثم قال (( و إن العبد الكافر إذا كان في انقطاع من الدنيا و اقبال من الآخرة نزل اليه من الماء ملائكة ود الؤ جو معهم المشوح فيجلسون منه مد البصر ، ثم يجى ملك الموت حتى يجلس عند رأسه فيقول : ايتها التفت الخبيثة ؛ أخرجي إلى خط من الله وغضب قال فتفرق في جسده فينتزعها كما ينتزع الشفوذ من الزي المؤل، فيأخدها ، فإذا اخدها لم يدعوها فى يده طرفة عين حتى يجعلوها في تلك المشوح، ويخرج منها كانت ريح جيفة وجدت على وجه الارض فيضعذون بها فلا يميزون بها على ملاء من الملائكة الأ قالوا : ماهذه الريح الخبيثة ؛ فيقولون : فلان ابن فلان ، باقبح أسمائه التى كان يسمى بها في الدنيا ، حتى ينتهي بها الى السماء الدنيا - أشتقت له فلا يفتح له ، ثم قرأ رسول الله بن لا تفتح لهم ابواب السماء، ولا يدخلون الجنة حتى يلج الجمل في سم الخياط ب ( الاعراف : 40 ، فيقول الله عز وجل : اكتبوا كتاب فى سجين في الارض الشفلى ، فتطرح روح طحا، ثم قرأ : ومن يشرك بالله فكانما تمر من الماء فتخطفة الطير او تفوی به اليخ في مكان سحيق ( الحج : 31) رواه أحمد

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক আনসারী সাহাবীর জানাযায় অংশ গ্রহণ করার জন্য বের হই, আমরা যখন কবরের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম তখনও কবর খনন পরিপূর্ণ হয় নাই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন আমরাও তার সাথে বসে গেলাম, আমরা নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলাম, তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল তা দিয়ে তিনি মাটিতে দাগ কাটতে ছিলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হটাৎ তাঁর মাথা উঠিয়ে বললঃ কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। এ কথা তিনি দুই বা তিন বার বললেনঃ অতঃপর বললেনঃ কাফের ব্যক্তি যখন পৃথিবী ত্যাগ করে পরকাল মুখী হয় তখন তার নিকট কাল চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতা চটের কাফন নিয়ে এসে তার দৃষ্টি শক্তির নাগালে বসে অতঃপর মালাকুল মাওত এসে তার মাথার নিকট বসে এবং বলে হে খবীস রুহ! আল্লাহর রাগ ও অসন্তুষ্টির প্রতি বের হও। তখন রুহ শরীর থেকে বের হতে চায় না আর ফেরেশতা তাকে এমন ভাবে বের করে যে ভাবে লোহার শিখ কাঠের খুটি থেকে বের করা হয়।

ফেরেশতা ঐ রুহকে ক্ষনিকের জন্যও ঐ ফেরেশতার হাতে থাকতে দেয় না বরং সাথে সাথে চটের কাফনে পেচিয়ে নেয়। পৃথিবীতে বিদ্ধমান নিকৃষ্ট তম মৃত দেহের দূর্গন্ধের ন্যায় দূর্গন্ধ ঐ রুহ থেকে বের হয়। তখন ফেরেশতা তাকে নিয়ে উপরের আকাশের দিকে যায়, পথিমধ্যে যখনই সে কোন ফেরেশতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে যে, এ কোন খবীস রুহের দূগন্ধ। উত্তরে ফেরেশতা বলে যে, এটা ওমকের ছেলে ওমকের রুহ, তার নিকৃষ্ট কোন নামের কথা উল্লেখ করা হয় যে নিকৃষ্ট নামে পৃথিবীতে তাকে ডাকা হত। এভাবে ফেরেশতা তাকে নিয়ে পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশের নিকট পৌঁছে গিয়ে আকাশের দরজা খোলার জন্য আবেদন করে, কিন্তু দরজা খোলা হয় না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেন। তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করবে না। যতক্ষন না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। (সূরা আ’রাফ-৪০) অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, পৃথিবীর নিন্য স্তরে অবস্থিত সিজ্জিনে তাকে রাখ এবং তখন কাফেরের রুহ অত্যন্ত নিকৃষ্ট ভাবে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়।

অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেন। আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করল সে যেন আকাশ থেকে পড়ল, অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। কিংবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জ -৩১)

মাসআলা-৪৩ কাফেরের রুহ কবজ করার পূর্বে ফেরেশতা কাফেরকে আল্লাহর আযাবের আওয়াজ শোনায় যার ফলে কাফের আল্লাহর নিকট যাওয়া অপছন্দ করে।

নোটঃ প্রমাণ ১৬নং মাসআলার হাদীস।

মাসআলা-৪৪ কাফেরের রুহ কবজ করার সময় ফেরেশতা তাকে সম্ভোধন করে বলে যে, হে খুবীস রুহ! তুমি এক খবীস শরীরে ছিলা এখন লাঞ্ছিত হয়ে বের হও। আর আজ তোমার জন্য সুসংবাদ জাহান্নামের গরম পানি ও পুঁজের ও অন্যন্য আযাবের।

নোটঃ প্রমাণ ২৯ নং মাসআলার হাদীস।

মাসআলা-৪৫ কাফেরের রুহের দূর্গন্ধ অনুভব করে ফেরেশতা তাকে লা’নত করে।

নোটঃ প্রমাণ ৩০ নং মাসআলার হাদীস।

মাসআলা-৪৬ কাফেরের রুহ সিজ্জিনের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় যমিনের দরজার পাহারাদার ফেরেশতা ঐ রুহের দূর্গন্ধ অনুভব করে বর্ণনাতীথ ঘৃনা প্রকাশ করে।

নোটঃ প্রমাণ ২৭ নং মাসআলার হাদীস।

২৫
মৃতের কথাবার্তা শ্রবণ
মাসআলা-৪৭ মৃত্যুর পর নেককার ও বদকার উভয়েই তার পরিণতি পরিলক্ষ করে তার মৃত দেহ বহন কারী লোকদেরকে লক্ষ করে যে কথা বলে তা মৃতদেহ বহণ কারীরা শোনতে পারে না, যদি শোনতে পারত তাহলে তারা বেহুশ হয়ে যেত।

عن أبی سعيين الذری، زنده يقول : قال رسول الله و (( اذا وضعت الجنازة فاحتملها الرجال على اعتاقهم إن كانت صالحة قالت قدمونی قدمونی وان كانت غير صالحة قالت يا وينها اين يذهبون بها ؛ يشع صوتها كل شيء الا الإنسان ولو سمعها الإنسان تصعق )). رواه البخار

অর্থঃ আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লাশ প্রস্তুত করার পর লোকেরা যখন তাকে কাধে বহণ করে তখন নেককার লোকেরা বলে যে আমাকে জলদী নিয়ে চল আমাকে জলদী নিয়ে চল, আর যদি বদকার হয় তাহলে বলে যে, হায়! আফসোস আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মৃতের একথা মানুষ ও জ্বিন ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পায়। আর যদি মানুষ ঐ কথা শোনতে পারত তাহলে তারা বেহুশ হয়ে যেত। (বোখারী)

নোটঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত কবরস্ত কর, কেননা যদি সে নেককার হয় তাহলে সে দ্রুত তার সু পরিণতি ভোগ করতে থাকবে আর যদি বদকার হয় তাহলে তার ভার থেকে দ্রুত কাঁধ খালি হয়ে যাবে। (বোখারী)

মাসআলা-৪৮ বদরের যুদ্ধে নিহত কাফেররা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা শোনে ছিল।

عن أنس بن مالک یا رسول الله تم ترك قتلى بذر ثلاثا ثم أتاهم فقام عليهم فنادهم فقال (( يا أبا جهل بن هشام ! يا أمية بن خلف ! يا عتبة بن ربيعة ! يا شيبة بن ربيعة : اليس قذ وجدتم ما وعدكم ربكم حقا ؟ فانی قد و جذث ما وعدنی ربی حقا ) فسمع عمر رضي الله عنه كيف يسمعوا وانى يجيبوا وقذ جيفوا قال (( والذي نفسي فقال : يا رسول الله قول النبي بيده إما انتم باشمع لما اقول منهم و لكنهم لا يقدرون ان يجيبوا )) ثم امر بهم فسحبوا فالوا في قليب بدر . رواه مسلم

আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদরের নিহত দেরকে তিন দিন পর্যন্ত পড়ে থাকতে দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তাদের নিকট গেলেন এবং তাদের পাশে দাড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে বললেনঃ হে আবু জাহেল বিন হিশম, হে উমাইয়্যা বিন খালফ, হে ওতবা বিন রাবিয়া, হে শাইবা বিন রাবিয়া! তোমাদের প্রভূ আমার মাধ্যমে তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিল তোমরা কি তা সত্য পেয়েছ? আমার প্রভু আমার সাথে যে ওয়াদা করে ছিল তাতো আমি সত্য পেয়েছি, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর একথা শোনে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তারা কিভাবে শোনবে এবং কি ভাবে উত্তর দিবে? তারা মৃত্যু বরণ করেছে। তিনি বললেনঃ ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আমি তাদেরকে যা কিছু বলছি তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশি শোনতেছ না। কিন্ত তারা উত্তর দিতে পারে না। অতঃপর তিনি তাদেরকে সনাক্ত করার জন্য নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তাদেরকে সনাক্ত করে, টেনে বদরের কুঁয়ায় নিক্ষেপ করা হল। (মুসলিম)[1]

মাসআলা-৪৯ দাফনের পর যখন মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনরা ফিরত যায়, তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়ঃ

عن أنس بن مالک بنه قال : قال رسول الله : (( أن العبد اذا وضع في قبره وتولى عنه أصحابه إنه ليشمع خفق يعالهم اذا انصرفوا )) رواه مسلم

আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন করে তার সাথীরা ফিরে আসে তখন মৃত ব্যক্তি তার সাথীদের পায়ের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। (মুসলিম)[2]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জান্না ওয়া সিফাতিহি, বাবু আরযিল মাকআ’দ আলাল মায়্যিতি ওয়া আযাবিল কবরি।

[2] - কিতাবুল জান্না ওয়া সিফাতিহি, বাবু আরযিল মাকআ’দ আলাল মায়্যিতি ওয়া ‘আযাবিল কবরি।

২৬
কবর কি?
মাসআলা-৫০ কবর অর্থ কোন কিছু গোপন করা বা দাফন করা

فَبَعَثَ اللّٰہُ غُرَابًا یَّبۡحَثُ فِی الۡاَرۡضِ لِیُرِیَہٗ کَیۡفَ یُوَارِیۡ سَوۡءَۃَ اَخِیۡہِ

অতঃপর আল্লাহ্ একটি কাক প্রেরণ করলেন যে মাটি খুঁড়তে লাগল, যেন সে তাকে শিখিয়ে দেয় যে কিভাবে স্বীয় তার মৃত দেহ ঢাকবে। সূরা (মায়েদাহ -৩১)

ثُمَّ اَمَاتَہٗ فَاَقۡبَرَہٗ ﴿ۙ ۲۱﴾

তারপর তিনি তাকে মৃত্যু দেন এবং তাকে কবরস্থ করেন।

সূরা আবাসার ২১ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আরবরা বলেঃ অর্থঃ আমি ওমুক ব্যক্তিকে দাফন করেছি। যখন কোন ব্যক্তি বলবে যে আমি ওমুকের জন্য কবর বানিয়েছি এবং তাকে কবরস্ত করেছি, তখন এর অর্থ হয় আমি তাকে দাফন করেছি (বোখারী)

মাসআলা-৫১ কবরের জীবনকে আলমে বারযাখও বলা হয়ঃ

وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾

অর্থঃ তাদের সামনে বারযাখ থাকবে পুনরুত্থান দিবশ পর্যন্ত। (সূরা মুমিনূন ১০০)

নোটঃ মৃত্যুর পর মৃত দেহ মাটিতে দাফন করা হোক, অথবা পানিতে ডুবে যাক, অথবা কোন জন্তু ভক্ষন করুক, অথবা জ্বলে ছাই হয়ে যাক, যেখানেই মৃত ব্যক্তির শরীরের কোন অংশ পাওয়া যাবে, সেটাকেই তার কবর হিসেবে ধরা হবে।

২৭
কবরের নে’মত সমূহ সত্য
মাসআলা-৫২ ঈমানদারগণ কবরে জান্নাতের নে’মত ভোগ করবে।

الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ طَیِّبِیۡنَ ۙ یَقُوۡلُوۡنَ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمُ ۙ ادۡخُلُوا الۡجَنَّۃَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۳۲﴾

ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়, ফেরেশতাগণ বলবে তোমাদের প্রতি শান্তি তোমরা যা করতে এর ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা নাহাল- ৩০)

মাসআলা-৫৩ কবর মোমেনের জন্য সবুজ বাগান হবে যেখানে ১৪ তারিখের পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ন্যায় আলো হবেঃ

قال ان المؤمن في قبره لفي روضة خضراء غير حب له عن ابي هريرة بينا عن رسول الله قبره سبعون ذراعا و ينوله كالقمر ليلة البذور )) رواه أبو يعلى

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মোমেন তার কবরে সবুজ বাগানের মধ্যে থাকবে। তার কবরকে ৭০ হাত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। আর তা ১৪ তারিখের পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ন্যায় আলোকময় হবে। (আবু ইয়া’লা)[1]

নোটঃ অন্য হাদীসে কবরের প্রশস্ততার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে সত্তর হাত দৈর্ঘ এবং সত্তর হাত প্রশস্ত। কবরের প্রশস্ততা মোমেনের আমল অনুযায়ী হবে। এব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন।

মাসআলা-৫৪ ঈমানদারগণকে কবরে, জান্নাতে তাদের ঠিকানা সকাল সন্ধায় দেখানো হয়।

قال اين احدکم اذا مات غرض عليه مقعدة عن ابن عمر رضى الله عنهما اثر رسول الله بالغداة و العشى ان كان من أهل الجنة في أهل الجنة وان كان من أهل النار فمن أهل النار يقال الله إليه يوم القيمة ) رواه مسلم هذا مقعدك حتى بعث

আবদুল্লা বিন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন মৃত্যু বরণ করে তখন সকাল সন্ধায় তাকে তার ঠিকানা দেখানো হয়। যদি জান্নাতী হয় তাহলে জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়। আর যদি জাহান্নামী হয় তাহলে জাহান্নামে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয় এবং তাকে বলা হয় যে, এ হল তোমার আবাস স্থল, কিয়ামতের দিন তোমাকে এখানে পাঠানো হবে। (মুসলিম)[2]

মাসআলা-৫৫ মোমেনকে কবরে জান্নাতের বিছানা এবং পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়।

নোটঃ প্রমাণ ৯১ নং মাসআলার হাদীস।

মাসআলা-৫৬ মোমেনের কবর থেকে জান্নাতের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয়।

নোটঃ প্রমাণ ৯২ নং মাসআলার হাদীস।

ফুটনোট

[1] - মহিউদ্দীন আদিব লিখিত আত্ তারগিব ওয়াত্তারহিব, হাদীস নং-৫২১৬

[2] - কিতাবুল জান্না ওয়া সিফাতিহি, বাবু আরযিল মাকআ’দ আলাল মায়্যিতি।

২৮
কবরের আযাব সত্য
মাসআলা-৫৭ কবরের আযাব সত্যঃ

عن عائشة رضي الله عنها أن يهودية دخلت عليها فذكر عذاب القبر فقالت لها : الله من عذاب القبر ، فسألت عائشة رضي الله عنها : رسول الله خير عن عذاب القبر ؟ أعاذ فقال : (( نعم ، عذاب القبر حق )) قالت عائشة رضي الله عنها : فما رأيت رسول الله من بعد لي صلاة الله تعود من عذاب القبر . رواه البخاري

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত এক ইহুদী মহিলা তার নিকট এসে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেনঃ আল্লাহ্ তোমাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুক, আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কবরের আযাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরের আযাব সত্য, আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ এর পর আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে এমন কোন নামায পড়তে দেখি নাই যেখানে তিনি কবরের আযাব থেকে ক্ষমা চান নাই। (বোখারী)[1]

মাসআলা-৫৮ আল্লাহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওহীর মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে সতর্ক করেছেন।

وعندى امرأة من اليهود وهى عن عايشة رضي الله عنها قالت : دخل على رسول الله و قال : ور انما تفتن يهود )) و قالت عائشة تقول : إنكم تفتنون في القبور ، فارتاع دون الله ا ( راه أوحي إلى انكم تفتنون في الفيور » قالت رضى الله عنها : قلبنا لیالی ثم قال رسول تعيده من عذاب القبر . رواه النسائي بعد عائشة رضي الله عنها فسمعت رسول الله

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে দেখলেন এক ইহুদী মহিলা আমার নিকট বসে বলতেছিল যে, তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হবে। অর্থাৎ (কবরে তোমরা শাস্তি পাবে) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একথা শোনে গাবরিয়ে গিয়ে বললেনঃ বরং তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হবে। আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ এরপর কয়েক দিন আমরা ওহীর অপেক্ষায় থাকলাম অতঃপর একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়েছে যে, তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হবে। আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ এরপর সব সময় আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শোনেছি। (নাসায়ী)[2]

নোটঃ উল্লেখিত হাদীসটি ওহী মাতলু (কোর‘আন মাজীদ) ব্যতীত ওহী গাইর মাতলুর স্পষ্ট উদাহরণ।

মাসআলা-৫৯ কাফেরদেরকে কবরে আযাব দেয়া হয় আর তাদের কান্না কাটির আওয়াজ জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পায়।

قال (( ان المؤتي ليعذبون في قبورهم حتى أن البهائم عن ابن مسعود ورد عن النبي لتسمع أصواتهم )) رواه الطبرانی ( حسن )

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেনঃ কবরে মৃত ব্যক্তিকে (কাফের বা মোসলমান) কে আযাব দেয়া হয়। আর তাদের কান্নাকাটির আওয়াজ সমস্ত চতুষ্পদ জন্তু শোনতে পায়। (ত্বাবারানী)[3]

عن أیوب به قال خرج رسول الله و بعد ماغر بت الشمس فسمع صوتا فقال (( يهود تعب في قبورها )). رواه مسلم

আয়্যুব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূর্য ডুবার পর ঘর থেকে বের হয়ে কবরস্থানে একটি আওয়াজ শোনতে পেলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ইহুদীদেরকে তাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে। (মুসলিম)[4]

মাসআলা-৬০ নবী যোগের কবরের আযাব সংক্রান্ত একটি শিক্ষনীয় ঘটনা যা মদীনার সমস্ত লোকেরা দেখে ছিল।

، انه قال كان رجل نسرانی فاسلم وقرء البقرة وآل عمران فكان ينب عن أنس الأماكتبت له . فأماته الله فدفنوه لب پر فعاد نضرانيا ، فكان يقول : ماذری محمد فاضح وقد لفظته الأرض قالوا : هذا فعل محمد پر واضحابد نبشوا عن صاحبنا لما هرب وأصحابه منهم فألقوه ، فحفروا له فأغمقوا فأصيح وقد لفظته الأرض فقالوا : هذا فعل محمد نشوان صاحبنا لما هرب منهم فألقوه خارج القبر فحفروالة ، و أغمقوا له في الأرض ما استطاعوا فأصبح قد لفظته الأوض فعلموا أنه ليس من الناس فألفوه . رواه البخارگ

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত এক ইহুদী মোসলমান হয়ে সে সূরা বাক্বারা ও আল ইমরান পড়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্য ওহী লিখতে শুরু করল, কিন্তু পরে সে মোরতাদ হয়ে গেল। আর বলতে লাগল যে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছুই জানেনা আমি যা কিছু লিখে দিয়েছি সে তাই বলে। আল্লাহর ইচ্ছায় যখন সে মৃত্যু বরণ করল তখন ইহুদীরা তাকে কবরে দাফন করল, সকালে উঠে দেখল যে তার লাশ কবরের বাহিরে পড়ে আছে। ইহুদীরা বলতে লাগল যে, এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের কাজ, কেন না সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল তাই তারা তার কবর খুড়ে তাকে বাহিরে বের করে রেখেছে।

ইহুদীরা তার জন্য পুনরায় কবর খুঁড়ল এবং প্রথমটির তুলনায় একে বেশি গভীর করল এবং লাশ দ্বিতীয় বার দাফন করল। সকালে উঠে দেখল যে তার লাশ আবারও মাটির উপর পড়ে আছে,। ইহুদীরা আবার বলতে লাগল যে, এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের কাজ, কেন না সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল তাই তারা তার কবর খুড়ে তাকে বাহিরে বের করে রেখেছে। ইহুদীরা তার জন্য পুনরায় কবর খুঁড়ল এবং দ্বীতীয়টির তুলনায় একে বেশি গভীর করল এবং লাশ তৃতীয় বার দাফন করল। সকালে উঠে দেখল যে তার লাশ আবারও মাটির উপর পড়ে আছে, তখন তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, এটা মোসলমানদের কাজ নয়। বরং এটা আল্লাহর আযাব, তখন ইহুদীরা তার লাশ এভাবেই ছেড়ে দিল। (বোখারী)[5]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েজ, বাবু মাযাআ ফী আযাবিল কাবরী।

[2] - কিতাবুল জানায়েয, বাবু ত তাওয়াউজ মিন আযাবিল কবর :

[3] - মহিউদ্দীন আদিব লিখিত আত্ তারগিব ওয়াত্তারহিব।

[4] - কিতাবুল জান্না ও সিফাতিহি, বাবু আরযিল মাকআ‘দ আলাল মায়্যিতি ওয়া আযাবিল কাবর।

[5] - কিতাবুল মানাকেব বাবু আলমাতিন নাবুয়্যা ফিল ইসলাম।

২৯
কোর‘আনের আলোকে কবরের আযাব
মাসআলা-৬১ সমুদ্রে ডোবার পরও সকাল-সন্ধায় ফেরাউনের বংশ ধরদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেয়া হয়।

فَوَقٰىہُ اللّٰہُ سَیِّاٰتِ مَا مَکَرُوۡا وَ حَاقَ بِاٰلِ فِرۡعَوۡنَ سُوۡٓءُ الۡعَذَابِ ﴿ۚ ۴۵﴾ اَلنَّارُ یُعۡرَضُوۡنَ عَلَیۡہَا غُدُوًّا وَّ عَشِیًّا ۚ وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ السَّاعَۃُ اَدۡخِلُوۡۤا اٰلَ فِرۡعَوۡنَ اَشَدَّ الۡعَذَابِ ﴿۴۶﴾

অর্থঃ এবং কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফেরাউন সম্প্রদায়কে। সকাল-সন্ধায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুণের সম্মুখে এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে, ফেরাউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে। (সূরা মুমিন -৪৫-৪৬)

মাসআলা-৬২ মৃত্যুর পর থেকেই কাফেরদের আযাব শুরু হয়ে যায়।

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡہُوۡنِ بِمَا کُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ کُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِہٖ تَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۹۳﴾

অর্থঃ আর তুমি যদি দেখতে পেতে (ঐ সময়ের অবস্থা) যখন যালিমরা সম্মুখীন হবে মৃত্যু সংকটে আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবেঃ নিজেদের প্রাণগুলো বের কর, আজ তোমাদেরকে সে সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে লাঞ্ছনাময় শাস্তি দেয়া হবে যে, তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অকারণে প্রলাপ বকছিলে, এবং তাঁর আয়াত সমূহ কবুল করতে অহংকার করছিলে। (সূরা আন’আম -৯৩)

মাসআলা-৬৩ কাফেরের রুহ কবজ করা মাত্রই ফেরেশতা তাকে আযাবে নিক্ষেপ করেঃ

الَّذِیۡنَ تَتَوَفّٰىہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ ظَالِمِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ ۪ فَاَلۡقَوُا السَّلَمَ مَا کُنَّا نَعۡمَلُ مِنۡ سُوۡٓءٍ ؕ بَلٰۤی اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۸﴾ فَادۡخُلُوۡۤا اَبۡوَابَ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ فَلَبِئۡسَ مَثۡوَی الۡمُتَکَبِّرِیۡنَ ﴿۲۹﴾

যাদের মৃত্যু ঘটায় ফেরেশতাগণ তারা নিজেদের প্রতি যুলুম করা অবস্থায়, অতঃপর তারা আত্মসমর্পন করে বলবেঃ আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না, তবে তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

সুতরাং তোমরা দ্বার গুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেথায় স্থায়ী হওয়ার জন্য, দেখ অহংকার কারীদের অবস্থান স্থল কত নিকৃষ্ট। (সূরা নাহাল২৮-২৯)

মাসআলা-৬৪ কাফেরের রুহ কবজ করা মাত্রই ফেরেশতা তাকে মারধর শুরু করে দেয়।

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ یَتَوَفَّی الَّذِیۡنَ کَفَرُوا ۙ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡہَہُمۡ وَ اَدۡبَارَہُمۡ ۚ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ ﴿۵۰﴾

অর্থঃ (হে নবী)! তুমি যদি ঐ অবস্থা দেখতে যখন ফেরেশতাগণ কাফেরদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত হেনে তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছে, (আর বলছে) তোমরা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আনফাল- ৫০)

فَکَیۡفَ اِذَا تَوَفَّتۡہُمُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡہَہُمۡ وَ اَدۡبَارَہُمۡ ﴿۲۷﴾

অর্থঃ ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করে তাদের প্রাণ হরণ করবে তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে। (সূরা মোহাম্মদ-২৭)

মাসআলা-৬৫ কাওমে নুহের শলীল সমাধির পরই তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

مِمَّا خَطِیۡٓـئٰتِہِمۡ اُغۡرِقُوۡا فَاُدۡخِلُوۡا نَارًا ۬ۙ فَلَمۡ یَجِدُوۡا لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اَنۡصَارًا ﴿۲۵﴾

তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদেরকে দাখিল করা হয়েছিল জাহান্নামে, অতঃপর তারা কাউকে আল্লাহ্‌র মুকাবেলায় পায়নি সাহায্যকারী হিসেবে। সূরা নূহ-২৫)

৩০
কবরের আযাবের কঠোরতা
মাসআলা-৬৬ কবরের পার্শ্বে বসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত কাঁদতেন যে এর ফলে কবরের মাটি ভিজে যেত।

في جنازة ، فجلس على شفير القبر ، فبكى حتى بل فقال : كنا مع رسول الله عن البراء الثرى ، ثم قال ( يا اخوانی مثل هذا فاوا )). رواه ابن ماجة

অর্থঃ বারা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একটি জানাযায় আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ছিলাম, তিনি কবরের পার্শ্বে বসে কাঁদতে লাগলেন এমন কি তার চোখের পানিতে কবরের মাটি পর্যন্ত ভিজে গিয়ে ছিল। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আমার ভায়েরা এমন পরিস্থিতি বরণ করার জন্য প্রস্তুতি নেও।[1]

মাসআলা-৬৭ কবরে মানুষ দাজ্জালের ফেতনার ন্যায় ফেতনার সম্মুখীন হবে।

قال (( ولقد اوحی الی انځم عن أسماء بنت ابی بکر رضی الله عنهما أن رسول الله ثممتنون فی الفور ممثل أو قريبا من فتنة الدجال )) ، لا ادري انهما قالت اسماء رواه البخاری

অর্থঃ আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত রাসূল। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে আমার নিকট ওহী এসেছে যে তোমরা কবরে দাজ্জালের ফেতনার ন্যায় বা এর কাছাকাছি ফেতনার সম্মুক্ষীন হবে। আসমা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) “দাজ্জালের ফেতনার ন্যায় না এর কাছাকাছি কোন শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা স্পষ্ট নয়। (বোখারী)[2]

كان يستعيذ من عذاب القبر ومن فتنة الدجال وقال عن عائشة رضي الله عنها أن النبي (( انكم تفتنون في قبوركم )). رواه النسائي

আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের আযাব ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, আর বলতেন যে, তোমরা তোমাদের কবরে ফেতনার সম্মুক্ষীন হবে। (নাসায়ী)[3]

মাসআলা-৬৮ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

عن عائشة رضي الله عنها أنها قالت : قال رسول الله : (( اللهم رب جبرانیل و میکائیل من حر النار ومن عذاب القبر )). رواه النسائی ورب اشرافیل آغوب ( صحیح )

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দুয়া করতেন যে, হে আল্লাহ জিবরাঈল, মিকাঈল, ও ইসরাফীলের প্রভূ, আগুণের গরম থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। (নাসায়ী)[4]

মাসআলা-৬৯ যদি মানুষ কবরের আযাব দেখত তা হলে মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন করা বাদ দিতঃ

الله ان يسمعكم من عذاب قال رر لولا ان تدافنوا ندعو عن انس نه أن النبي القبر )). رواه مسلم

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যদি এভয় না হত যে, তোমরা তোমাদের মৃত দেহসমূহ দাফন করা থেকে বিরত থাকবে না, তাহলে আমি আল্লাহর নিকট এ দুয়া করতাম যে, তিনি যেন তোমাদেরকে কবরের আযাবের শব্দ শোনায়। (মুসলিম)[5]

মাসআলা-৭০ যদি মানুষ কবরের আযাব দেখত তাহলে হাঁশত কম আর কাদত বেশি, মহিলাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভুলে যেত, আবাস ভূমি ছেড়ে দিয়ে মাঠে-ময়দানে এবং বন-জঙ্গলে গিয়ে বসবাস করত।

( رانی ارى ما لا ترون، و اشمه ما لا تسمعونا عن أبي ذر قال قال رسول الله و حق لها أن تيط ما فيها موضع اربع اصابع ا وملك واضع جبهته ساجدا لله الماء أ والله لو تعلمون ما أعلم لضحكتم قليلا ولبكيتم كثيرا و ما تلذذتم بالنساء على الفرشات . و الخرجم إلى العدات تارون الى الله ) وقال أبو ذر منه والله لوددت أني كنت شجرة تعضد . رواه ابن ماجة

অর্থঃ আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয় আমি ঐ সমস্ত বিষয় সমূহ দেখি যা তোমরা দেখনা এবং আমি ঐ সমস্ত বিষয় শ্রবণ করি যা তোমরা শ্রবণ করনা। আকাশ আল্লাহর ভয়ে আবল তাবল বকছে, আর তার উচিত ও আবল তাবল বকা, ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আকাশে চার আঙ্গুল স্থান এমন নাই যেখানে কোননা কোন ফেরেশতা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সেখানে সেজদা করে নাই। যদি তোমরা তা যানতে যা আমি জানি, তাহলে তোমরা কম হাঁশতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে বিছানায় স্ত্রীর সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারতেনা। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে মাঠে-ময়দানে বের হয়ে যেতে। আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আফসোস! আমি যদি একটি বৃক্ষ হতাম যা একসময় কেউ কেটে ফেলত। (ইবনে মাযাহ)[6]

মাসআলা-৭১ কবরের চেয়ে ভয়ানক আর কোন স্থান নেইঃ

عن ثمان ، قال : قال رسول الله : (( مار آیت منظر ا ق ا و القير افظع مته )). رواه الترمذی

অর্থঃ ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কবরের চেয়ে ভয়ানক আর কোন স্থান আমি দেখি নাই। (তিরমিযী)[7]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুয যুহদ, বাবুল হুজন ওয়াল বুকা (২/৩৩৮৩)

[2] - আবওয়াবুল কুসুফ, বাবু সালাতিন নিসা মায়ার রিজাল ফীল কুসুফ।

[3] - কিতাবুল জানায়েজ, বাবুত্তাওয়াউজ মিন আযাবিল কাবরি, (২/১৯৫১)

[4] - কিতাবুল ইস্তেআযা, বাবুল ইস্তেআযা মিন হাররিন্নার (৩/৫০৯২)

[5] - কিতাবুল জান্নাত ওয়া সিফতু নায়ীমিহা, বাবু আরজিল মাকআদে আলাল মায়্যিতি ওয়া আযাবিল কাবরি।

[6] - কিতাবুজ্জুহদ, বাবুলহুযনি ওয়াল বুকা (২/৩৩৭৮।

[7] - আবওয়াবুজ্জুহদ, বাবু ফি ফাযায়ীলিল কবরি (২/১৮৭৭)

৩১
কবিরা গোনাহ কবরে আযাব হওয়ার কারণ
মাসআলা-৭২ পেসাবের ছিটা ফোটা থেকে সর্তকতা অবলম্ভন না করায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরে আযাব হবে বলে সর্তক করেছেনঃ

মাসআলা-৭৩ গীবত কারীরাও কবরে আযাব পাবেঃ

على قبرين فقال (( انهما ليعذبان وما يعبان في عن ابن عباس رضی الله عنهما مر النبى كبير ) ثم قال (( بلی أما أحدهما فكان يسعى بالنميمة واما الأخر فكان لا يستر من بوله )). رواه البخار

অর্থঃ আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুইটি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, এ উভয় কবর বাসীরই শাস্তি হচ্ছিল, তবে কোন বড় ধরনের গোনার কারণে তাদের শাস্তি হচ্ছিল না। কবরস্তদের একজন চোগলখুরী করত আর অন্য জন পেশাব পায়খানা থেকে শতর্কতা অবলম্ভন করত না। (বোখারী)[1]

নোটঃ এমন কোন বড়ধরনের পাপের কারণে নয় অর্থাৎ তাদের এ পাপ গুলু এমন ছিলনা যে তা থেকে তারা বিরত থাকতে পারত না। বরং তারা ইচ্ছা করলে এপাপ থেকে বিরত থাকা তাদের জন্য সহজ ছিল।

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েয, বাবু আযাবিল কাবরি মিনাল গীবা ওয়াল বাউল।

৩২
কবরের ফেরেশতা... মোনকার নাকীর
মাসআলা-৭৩ মৃত ব্যক্তি কবরে দাফনের পর তার নিকট দুইজন ফেরেশতা আসে যাদের শরীরের রং থাকে কাল এবং চোখ থাকে নীল রং বিশিষ্ট, তাদেরকে বলা হয় মোনকার ও নাকীরঃ

قال : قال رسول الله : (( اذا قبر الميت راو قال أحذكم اتاه ملكان عن ابي هريرة اودان آزرقان يقال لأخيهما المنكر و الأخر النكير فيقولان ما كنت تقول في هذا الرجل ؟ )). رواه الترم

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়, অথবা তিনি বলেছেন যে, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তিকে দাফন করা হয়, তখন তার পার্শ্বে দুইজন ফেরেশতা আসে যাদের শরীরের রং থাকে কাল এবং চোখ থাকে নীল রং বিশিষ্ট, তাদের এক জনকে বলা হয় মোনকার এবং অপর জনকে বলা হয় নাকীরঃ তারা উভয়ে মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাস করে যে, তুমি এ ব্যক্তি (মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কি জান? (তিরমিযী)[1]

মাসআলা-৭৪ মোনকার নাকীরের চোখ তামার ডেগের সমান, দাত গাভীর শিংয়ের ন্যায়, তাদের কণ্ঠ বিদ্যুৎ গর্জনের ন্যায়।

عن أبي هريرة يخنه قال شهدنا جتازة مع نبى الله ور فلما فرغ من دفنها، وانصرف النأ ، قال نبي الله خير (( إنه الآن يسمع خفق يعالكم ، أتاه منكر و نكير اغينهما مثل هذور النحاس و أنيابهما مثل عاصی البقر، وأصواتهما مثل الوعد، فيجلسانه فيا لانه ما كان يعبد و من كان به ؟ ). رواه الطبرانى

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ কোন এক জানাযায় আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে ছিলাম যখন আমরা তার দাফন কাফন শেষ করলাম এবং লোকেরা ফেরত যেতে শুরু করল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে এখন তোমাদের ফেরত যাওয়ার সময়ে তোমাদের জুতার শব্দ শোনতেছে, তার নিকট মোনকার ও নাকীর এসেছে, যাদের চোখ সমূহ তামার ডেগের ন্যায়, দাত সমূহ গাভীর শিংয়ের মত, কণ্ঠ সমূহ বিদ্যুৎ গর্জনের ন্যায়। তারা উভয়ে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসাবে, এবং জিজ্ঞেস করবে, যে তুমি কার ইবাদত করতে এবং তোমার নবী কে? (ত্বাবারানী)[2]

মাসআলা-৭৫ মোনকার ও নাকীর দাত দিয়ে যমিন উপড়াতে উপড়াতে আসবে, তাদের কণ্ঠে থাকবে বাদলের গর্জনের ন্যায় আওয়াজ, আর চোখে বিজলীর চমকঃ

قال في ذكر المؤمن رزفيرة إلى مضجعه فيأتيه منكر و نكيز عن البراء بنه عن النبي يثيران الأرض بأنيابهما و يجفان الارض باشعارهما فيجلسانده ثم يقال له يا هذا من ربک ؟ )) وقال في ذكر الكافر (( فيأتيه منكر و نكير يثيران الأرض بانیابهما و يلجفان الأرض بشفاههم أصولهما كالغير القاصف و أبصارهما كالبرق الخاطف فيجلسانه ثم يقال له يا هذا من بك؟ )). رواه أحمد والبيهقى

অর্থঃ বারা বিন আযেব নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি মোমেন ব্যক্তির মৃত্যুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তাকে কবরে রাখার পর তার নিকট মোনকার ও নাকীর স্বীয় দাত সমূহ দিয়ে যমিন উপড়াতে উপড়াতে এবং চুল দিয়ে যমিন ঘসতে ঘসতে এসে মোমেন ব্যক্তিকে বসিয়ে দেয়, এবং জিজ্ঞেস করে যে, হে ওমুক তোমার প্রভু কে? এবং কাফেরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে, তিনি এরশাদ করেন, মোনকার ও নাকীর তার নিকট আসে দাত দিয়ে যমিন উপড়াতে উপড়াতে, এবং স্বীয় বড় বড় ঠোট দিয়ে যমিন ঘসতে ঘসতে, তাদের কণ্ঠ বাদলের গর্জনের ন্যায়, আর তাদের চোখ বিজলীর চমকের মত করে সে কাফেরকে উঠিয়ে বসায় এবং তাকে জিজ্ঞেস করে, যে, হে ওমক বল তোমার প্রভূ কে? (আহমদ, বায় হাকী)[3]

ফুটনোট

[1] - আবওয়াবুল জানায়েজ, বাবু মা জায়া ফি আযাবিল কাবরি (১৮৫৬)

[2] - মহিউদ্দীন আদব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, ২৪, হাদীস নং- ৫২২৩

[3] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২১।

৩৩
কবরে প্রশ্ন উত্তরের সময় মৃত ব্যক্তির অবস্থা
মাসআলা-৭৭ কবরে দাফনের পর মানুষের শরীরে রুহ ফেরত পাঠানো হয়, প্রশ্ন উত্তরের জন্য মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধিও দেয়া হয়।

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن رسول الله ذ ذكر فتان القبور فقال عمر أتر ؟ فقال رسول الله : (( نعم كهيئتكم اليوم ) ، فقال عمر : بفه علينا عقولنا يا شول الله الحجر )). رواه أحمد والطبرانی

আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরের ফেরেশতাদের কথা বর্ণনা করতে ছিলেন তখন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে কি আমাদের এ জ্ঞান বুদ্ধিও ফেরত দেয়া হবে? তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আজকের মতই এ জ্ঞান বুদ্ধি ফেরত দেয়া হবে। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ তাদের মুখে পাথর (আমি তাদেরকে লা জওয়াব করে দিব) (আহমদ, ত্বাবারানী)[1]

عن عمر بن الخطاب ، لما أخبر النبی ا بفتنة الميت في قبره و سوال منكر و نكير وهما مگان قال له يارسول الله في أيرجع إلى عقلی ؟ قال (( نعم ) ، قال إذا اكفيكهما و الله ! لبن الان سألتهما اقول لهما اين ربي الله ! فمن ربما انتما !. رواه البيهقى

অর্থঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবা কেরাম গণকে কবরের আযাব এবং মোনকার ও নাকীরের প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে বলতে ছিলেন তখন তারা জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে কি আমার এ জ্ঞান বুদ্ধিও ফেরত দেয়া হবে? তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যা। ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ তাহলে আল্লাহর কসম আমি তাদের (ফেরেশতাদের) জন্য যথেষ্ঠ হব। যদি ঐ ফেরেশতারা আমাকে জিজ্ঞেস করে যে, তোমাদের প্রভূ কে? তাহলে আমি উত্তরে বলবঃ আমার প্রভু তো আল্লাহ্। এখন বল তোমাদের প্রভূ কে? (বায়হাকী)[2]

নোটঃ প্রশ্ন উত্তরের সময় জ্ঞান বুদ্ধি এ জন্যই দেয়া হবে যাতে জেনে বুঝে উত্তর দিতে পারে। কিন্ত বারযাখী জীবন দুনিয়ার জীবন থেকে ভিন্ন। তাই তাকে পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে তুলনা করা ঠিক নয়। তার অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেনা।

ফুটনোট

[1] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত অত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২১৭।

[2] - আত্তায় কিরা লিল ইমাম কুরতুবী, বাবু যিকরি হাদীস বারা।

৩৪
কবরে নে’মতের ভিন্নতা
মাসআলা-৭৮ কবরে নে’মতের প্রকার সমূহঃ মোমেন ব্যক্তি কবরে নিম্ন লিখিত নে’মত সমূহ বা এর মধ্য থেকে কিছু নে’মত ভোগ করবে।

১ - কবরে নির্ভয় এবং প্রশান্তি।

২ - জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ।

৩ - জান্নাতের সুসংবাদ, জান্নাতের ভরপুর নে’মত ও আরামের মনোলোভা দৃশ্য।

৪ - জান্নাতের নে’মত সমূহের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার জন্য জান্নাতের দিকে এক দরজা খুলে দেয়া হবে।

৫ - জান্নাতের বিছানা ও লেবাছ।

৬ - কবর ৭০ হাত প্রশস্ত।

৭ - কবরে ১৪ তারিখের রাতের ন্যায় চাঁদের আলো এবং সবুজ বাগানের দৃশ্য।

৮ - কবরে একাকীত্ব দূর করার জন্য নেক আমল সমূহকে সুন্দর আকৃতির মানুষে পরিনত করে সাথী বানানো।

৯ - কিয়ামতের দিন ঈমানের সাথে উঠার সু সংবাদ।

১০ - কিয়ামত পর্যন্ত শান্তি ও আরামের ঘুম।

নোটঃ উল্লেখিত নে’মত সমূহের হাদীস পরবর্তী মাসআলা সমূহে দেখুন।

মাসআলা-৭৯ মোমেন ব্যক্তি কবরে কোন চিন্তা ও পেরেসানী ব্যতীত উঠে বসে।

মাসআলা-৮০ প্রশ্ন উত্তরে কামিয়াব হওয়ার পর মোমেন ব্যক্তিকে জাহান্নাম দেখানো হয় এবং তা থেকে মুক্তির সু সংবাদ দেয়া হয়।

মাসআলা-৮১ জান্নাতের দিকে এক রাস্তা খুলে দিয়ে মোমেন ব্যক্তিকে জান্নাতের নে’মত সমূহ দেখিয়ে জান্নাতে তার অবস্থান স্থল ও তাকে দেখানো হয়।

মাসআলা-৮২ মোমেনকে কিয়ামতের দিন ঈমানের সাথে উঠানোর সুসংবাদও দেয়া হয়।

عن عايشة رضي الله عنها قالت : جاءت يهودية استطعست علی بابى فقالت : اطعمونی اغاكم الله من فتنة الجال و من فتنة عذاب القبر قال : فلم ازل اخبسها حتى جاء رسول الله فقلت : يا رسول الله ما تقول هذه اليهودية ؟ قال (( و ما تقول ؟ )) قلت : تفون اغاكم الله من فتنة الدجال ، و من فتنة عذاب القبر ، قالت عائشة ، فقام رسول الله و رفع يديه ما يتعيذ بالله من فتنة الدجال و من فتنة عذاب القبر ، ثم قال رو اما فتنة الدجال فانة لم يكتب الله قد حر افته و سأحدثكم بحديث لم يحذر نبی أمته انه اغوز ، و ان الله ليس باور ، م وت بين عينيه كافر يقرء كل مؤمن ، فأما فتنة القبر فی تفتنزن و عن تسالون فإذا كان الرجل الالخ أجلي في قبره غير فرع ولا مشغوف ، ثم قال له : فما كنت تقول في الإسلام؛ فيقول : الله ربي ، فقال : ما هذا الرجل الذى كان فيكم ؛ فيفون محمد رسول الله از جاءنا بالبينات من عند الله فصدناه فيفرج له فرجة قبل النار ، فينظر اليها يخطم بعضها بعضا، فيقال له : أنظر إلى ما وقال الله ، ثم يفرج له فرجة إلى الجنة فينظر إلى زهرتها وما فيها ، فيقال له : هذا مقعدك منها ويقال : على اليقين كنت ، و عليه مت ، و عليه تبع إن شاء الله )). رواه أحمد

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ এক ইহুদী মহিলা আমার নিকট এসে খাবার চাইল এবং বললঃ আল্লাহ তোমাকে দাজ্জাল ও কবরের ফেতনা থেকে মুক্তি দেন, আমাকে খাবার খাওয়াও, আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসা পর্যন্ত আমি তাকে আটকিয়ে রাখলাম, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ইহুদী মহিলাকি বলতেছে? তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে সে কি বলতেছে? আমি বললাম সে বলছে যে, আল্লাহ তোমাকে দাজ্জাল ও কবরের ফেতনা থেকে মুক্তি দেন, আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ তিনি তখন দাড়িয়ে গেলেন এবং স্বীয় উভয় হাত প্রশস্ত করে দাজ্জাল ও কবরের ফেতনা থেকে মুক্তি চাইতে লাগলেন। অতঃপর বললেনঃ এমন কোন নবী আসে নাই যে তার উম্মতকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সর্তক করে নাই। কিন্তু আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ব্যাপারে এমন সংবাদ দিচ্ছি যা ইতি পূর্বে কোন নবী তার উম্মতদেরকে দিতে পারে নাই। আর তাহল এই যে, দাজ্জাল অন্ধ হবে। (অর্থাৎঃ তার এক চোখ থাকবে) তার উভয় চোখের মাঝে লিখা থাকবে কাফের যা প্রত্যেক মোমেন পড়তে পারবে।

আর কবরের ফেতনার ব্যাপার এইযে সেখানে তোমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। কবরে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, যদি সৎ লোক হয় তাহলে তাকে কোন প্রকার চিন্তা ও পেরেসানী ব্যতীত উঠে বসাবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে ইসলামের ব্যাপারে তুমি কি বল? সৎ লোক বলবে আমার প্রভু আল্লাহ। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে যে, তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি এসে ছিল সে কে? সৎ লোক বলবে সে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনি আল্লাহর স্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসে ছিল আমরা তা বিশ্বাস করেছি, অতঃপর জাহান্নামের দিকে এক রাস্তা খোলা হবে মোমেন ব্যক্তি তখন জাহান্নামের আগুন দেখতে পাবে যে তা অত্যন্ত গরম ও তার এক অংশ অপর অংশকে বিনষ্ট করছে। ফেরেশতা তাকে বলবে যে, দেখ এ ঐ আগুন যেখান থেকে আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দিয়েছে। অতঃপর জান্নাতের দিকে তার জন্য এক রাস্তা খোলা হবে এবং মোমেন ব্যক্তি জান্নাতের আলো দেখতে পাবে, তাকে বলা হবে যে জান্নাতে এ স্থানে তোমার বাস স্থান। অতঃপর ফেরেশতা তাকে বলবে যে তুমি ঈমানের উপর জীবন যাপন করেছ, এবং ঈমানের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছ। কিয়া মতের দিন ইনশাআল্লাহ ঈমান সহ উঠবে। (আহমদ)[1]

মাসআলা-৮৩ মোমেন ব্যক্তিকে জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হয় যে আল্লাহ তোমাকে এখান থেকে রক্ষা করেছেন অতঃপর তাকে জান্নাতে তার ঠিকানা দেখানো হয় এবং বলা হয় যে আল্লাহ্ তোমাকে এ স্থান প্রদান করেছেন।

মাসআলা-৮৪ মোমেন ব্যক্তি তার সু পরিনতির কথা তার পরিবার পরি জনদেরকে জানাতে চায় কিন্ত তাকে এ অনুমতি দেয়া হয় না।

، ان رسول الله . قال (( ان المؤمن اذا وضع في قبره اتاه ملك عن أنس بن مالك فيقول له ما كنت تغذ؛ فإن الله تعالى هذاة قال : كنت اعبد الله ، فقال : ما كنت تقول في هذا الرجل ؟ فيقول : هو عبدالله و رسوله ، فما يسال ع شي و غيرها بغذها ، فينطلق به الى بيت كان لك في النار ، ولكن الله عصمک و حمک كان له في النار ، فقال له : هذا بيت فأبدلك به بيتا في الجنة فيراه فيقول : دعون حتى اذهب فأبشر اهلی ، فيقال له : اسكن )). رواه أبو داود

অর্থঃ আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন মোমেন ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন তার নিকট এক ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে, যে তুমি কার ইবাদত করতে? আল্লাহ্ তাকে হেদায়েত দিলে সে বলবে আমি আল্লাহর ইবাদত করতাম। অতঃপর ফেরেশতা তাকে বলেঃ এ ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তোমার ধারনা কি? তখন সে বলে তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। এর পর তাকে আর কোন প্রশ্ন করা হয় না। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একটি ঘর দেখানো হয় এবং বলা হয় এটা তোমার জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং এর পরিবর্তে জান্নাতে তোমাকে এক ঘর তৈরী করে দিয়েছেন। মোমেন ব্যক্তি ঐ ঘর দেখে বলবে যে আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি আমার পরিবারের লোকদেরকে এ সুসংবাদ দিয়ে আসি। (যে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে ঠাই দিয়েছেন) কিন্তু তাকে বলা হবে যে তুমি এখানেই থাক। (আবুদাউদ)[2]

নোটঃ ১- উল্লেখিত হাদীসে এক ফেরেশতার কথা এসেছে অথচ অন্যান্য হাদীসে দুই ফেরেশতার কথা এসেছে। এর অর্থ হল এই যে, কোন কোন লোকের নিকট এক ফেরেশতা আসবে আবার কোন কোন লোকের নিকট দুই ফেরেশতা আসবে।

২ - নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য দুইটি স্থান আছে একটি জান্নাতে অপরটি জাহান্নামে, যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর জাহান্নামে চলে যায় তখন জান্নাত বাসীরা তার জায়গার ওয়ারীস হয়ে যায়। (ইবনে মাযাহ)

৩ - নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে যে প্রশ্ন করা হবে এব্যাপারে বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন রকমের শব্দ বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন হাদীসের শব্দ থেকে মনে হয় যে, তাঁর চেহারা দেখিয়ে প্রশ্ন করা হবে। মূলত তা নয় বরং এটা হবে এমন যেমন কোন অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়। যে ওমক ব্যক্তি কে?

মাসআলা-৮৫ নামাযি ব্যক্তি কবরে সামান্যতম ভয় ভীতি ও পাবে না।

মাসআলা-৮৬ মোমেন ব্যক্তি প্রশ্ন উত্তরে কামিয়াব হওয়ার পর জান্নাতের অন্যান্য নে’মত সহ ও তার বাসস্থান তাকে দেখানো হয়ঃ

মাসআলা-৮৭ কোন কোন ঈমানদারের কবর সত্তর হাত প্রশস্ত করা হবে।

মাসআলা-৮৮ ঈমানদারদের কবর আলোক ময় করা হবে।

মাসআলা-৮৯ ঈমানদারদেরকে সমস্ত নে’মত ও সুসংবাদ দেয়ার পর তাকে তৃপ্তীদায়ক ঘুম দেয়া হয়।

মাসআলা-৯০ কোন কোন ঈমানদারের রুহ পাখীর আকৃতিতে জান্নাতের গাছ- পালার মাঝে উড়ে বেড়াবে।

عن أبي هريرة ، عن النبي قال (( ان السمیت اذا وضع في قبره انه يسمع خفق يعالهم جين يؤلون مدبرين فإن كان مؤمنا يقال له اجلس فيجلس قذ مثلث له الشمس ، وقد أذنيث الغروب ، فيقال له ار ایتک هدا الذي كان قبلكم ما تقول فيه؟ و ما ذا تشهد عليه؛ فيقول : دغونی ی اصلی ، فيقولون : إنك ستفعل ، اخبرنا عما نسألك عنه : أرأيتك هذا الرجل الذي كان قبلكم ماذا تقول فيه ؟ و ما ذا تشهد عليه ؛ قال : فيقول : محمد ، اشهد ائة وسؤل الله خ، و انه جاء بالحق من عند الله ، فيقال له على ذلك خييت ، و علی ذلک مت، و على ذلك تبع إن شاء الله ، ثم يفتح له باب من أبواب الجنة فيقال له : هذا مقعدك منها ، و ما أعد الله لك فيها فيزداد غبطة ومرورا ، ثم يفتح له باب من أبواب النار، فيقال له : هذا مقعد منها وما أعد الله لك فيها لو عصيته ، فيزداد غبطة و شرورا ، ثم يفسح له في قبره بغون ډراغا، و نور له فيه ، و يعاد الجسد لما بدی منه ، فتجعل نسمته في النسيم الطيب ، وهى طير تغلق في شجر الجنة فذلك قوله مبحانة ن يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحیوۃ الدنيا و في الأخرة ( الاية ... ابراهيم : 27) : رواه الطبرانی و ابن حبان والحاكم ( حسن )

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফনের পর যখন লোকেরা ফিরে আসতে শুরু করে তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। যদি মৃত ব্যক্তি মোমেন হয় তাহলে তাকে বলা হয় “বস” তখন সে বসে অতঃপর তাকে সূর্যডোবার মুহূর্ত দেখানো হয় এবং জিজ্ঞেস করা হয় যে, অনেক আগে তোমাদের মাঝে এ ব্যক্তি প্রেরিত হয়ে ছিল এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের ধারনা কি? এবং তার ব্যাপারে তুমি কি সাক্ষী দেও? মোমেন ব্যক্তি বলে, একটু বস আমাকে আসরের নামায আদায় করতে দাও, (সূর্যডোবার সময় হয়ে গেল) ফেরেশতা তখন বলবেঃ নিশ্চয় দুনিয়াতে তুমি নামায পড়তে, তবে আমরা তোমাকে যা জিজ্ঞেস করতেছি এর উত্তর আগে দাও। বল অনেক আগে তোমাদের মাঝে এ ব্যক্তি প্রেরিত হয়ে ছিল এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের ধারনা কি? এবং তার ব্যাপারে তুমি কি সাক্ষী দেও?

মোমেন ব্যক্তি বলে তিনি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি সত্য সহকারে প্রেরিত হয়েছেন। তখন তাকে বলা হয় যে, এবিশ্বাস নিয়েই তুমি বেচে ছিলা এবং এর উপরই মৃত্যু বরণ করেছ, এবং এর উপরই তুমি পুনরুত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ্। অতঃপর জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্য থেকে একটি দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হবে এবং তাকে বলা হবে যে, এটি জান্নাতে তোমার ঠিকানা এবং তোমার জন্য আল্লাহ জান্নাতে যা কিছু নির্মাণ করে রেখেছে তা দেখে নাও। এত কিছু দেখে জান্নাত পাওয়ার জন্য তার কামনা ও বাসনা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর জাহান্নামের দরজা সমূহের মধ্য থেকে একটি দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হবে এবং বলা হবে যে, যদি তুমি আল্লাহর নাফরমানী করতে তাহলে এ জাহান্নাম ছিল তোমার ঠিকানা এবং তোমার জন্য আল্লাহ জাহান্নামে যা কিছু নির্মান করে রেখেছিলেন তাও দেখে নাও। এত কিছু দেখে জান্নাত পাওয়ার জন্য তার কামনা ও বাসনা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত ও তা আলোক ময় করে দেয়া হবে, অতঃপর তার শরীরকে পূর্বের অবস্থায় ফেরত দেয়া হয়, তার রুহকে পবিত্র ও সুগন্ধি ময় করা হয়। আর তা পাখীর আকৃতিতে জান্নাতে উড়ে বেড়ায়। কবরে মোমেনের শু পরিনতি আল্লাহ্ তা’লার এ বাণীর তাফসীরঃ আল্লাহ্ তা’লা ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে কালেমা তয়্যেবার বরকতে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে সুদৃঢ় রাখবেন। (ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, হাকেম)[3]

মাসআলা-৯১ প্রশ্ন উত্তরে কামিয়াবীর পর মোমেন ব্যক্তির জন্য কবরে জান্নাত থেকে বিছানা এনে বিছিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে জান্নাতের পোশাক পড়ানো হবে।

মাসআলা-৯২ জান্নাতের নে’মত সমূহ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য মোমেন ব্যক্তির কবরের সাথে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয়।

মাসআলা-৯৩ কোন কোন ঈমানদারের কবর যত দূর দৃষ্টি যায় তত দূর পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়।

মাসআলা-৯৪ মোমেন ব্যক্তির কবরে তার নেক আমল সমূহ অত্যন্ত সুন্দর চেহারা সম্পন্ন লোকের আকৃতিতে আসে যা দেখে তার আনন্দ আরো বৃদ্ধি পায়।

মাসআলা-৯৫ মোমেন ব্যক্তি স্বীয় নেক আঞ্জাম দেখে এত খুশি হয় যে, কিয়ামত দ্রুত কায়েম হওয়ার জন্য দূয়া করতে থাকে।

মাসআলা-৯৬ মোমেন ব্যক্তি স্বীয় নেক আনজাম দেখে দ্রুত স্বীয় পরিবার - পরিজনের সাথে মিশতে চায়!

قال : قال رسول الله ت ( راين العبد المؤمن ويأتيه ملكان عن البراء بن عازب فيجلسانه فيقولان له : من ربك ؟ فيقول : ربي الله ، فيقولان له : ما دينك ؟ فيقول : ډینی فيقولان : وما الإسلام، فيقولان له ما هذا الرجل الذي بعث فيكم ؟ فيقول کو رسول الله دریک ؟ فيقول : قرأت كتاب الله قامت به و قت ، فينادى مناد من الماء : أن قد صدق عبدى فقير شؤه من الجنة والشؤه من الجنة وافتحوا له بابا الى الجنة )) قال : (( فيأتيه من روحها و طيبها ، ويفتح له فيها قبره مد بصره )) ، قال : (( و يأتيه رجل حسن الوجه، خس الثياب ، طيب الريح، فيقول : ابشر بالذی سڑک، هذا يومك الذی کنت توعد، فيقول : من الوجة التي يجى و بالخير؟ فيقول : أنا عملك الصالح ، فيقول : رب اقم انت ؟ قوجه الشائعة، رب أقم الساعة ، حتى ترجع إلى أهلی و مالی )). رواه أحمد و ابو داؤد ( حسن )

বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মোমেন বান্দার কবরে দুইজন ফেরেশতা আসে তারা তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয় এবং বলে তোমার প্রভূ কে? মোমেন ব্যক্তি উত্তরে বলে আমার প্রভূ আল্লাহ। ফেরেশ্‌তাগণ আবার প্রশ্ন করেন তোমার দ্বীন কি? মোমেন ব্যক্তি উত্তরে বলে আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর তারা জিজ্ঞেস করে এ ব্যক্তি যে তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিল সে কে? মোমেন ব্যক্তি উত্তরে বলে তিনি আল্লাহর রাসূল ছিলেন। অতঃপর তারা জিজ্ঞেস করে যে তুমি তা কি করে বুঝলে? মোমেন ব্যক্তি উত্তরে বলে যে আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে এক আহ্বান কারী আহ্বান করে বলেঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে, তার জন্য জান্নাতের বিছানা ও পোশাক নিয়ে আস এবং জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও যেখান থেকে তার প্রতি আলো-বাতাশ আসতে থাকবে আর তার কবরকে যত দূর দৃষ্টি যায় তত দূর পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর তার নিকট সুন্দর চেহারা সম্পন্ন এক ব্যক্তি খুব সুন্দর পোশাক পড়ে সুগন্ধি মেখে আসে এবং বলে তোমাকে আরাম ও শান্তির সু সংবাদ। এ হল ঐ দিন যার ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়ে ছিল, মোমেন ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? তোমার চেহারা কত সুন্দর তুমি সুসংবাদ নিয়ে এসেছ? সে বলে আমি তোমার নেক আমল। তখন মোমেন দূয়া করে হে আমার প্রভূ! কিয়ামত কায়েম কর হে আমার প্রভূ! কিয়ামত দ্রুত কায়েম কর, যাতে আমি আমার পরিবার - পরিজনের সাথে মিলতে পারি। (আহমদ- আবুদাউদ)[4]

নোটঃ এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, চোখের দৃষ্টি যত দূর যায় তত দূর পর্যন্ত কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হয়। অথচ অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়, আবার কোন কোন হাদীসে সুধু সত্তর হাত দীর্ঘের কথা এসেছে, আবার কোন হাদীসে চল্লিশ হাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। মূলত এ পার্থক্য হবে ঈমানদারের ঈমান ও নেক আমলের পার্থক্য অনুযায়ী। আল্লাহই এব্যাপারে ভাল জানেন।

মাসআলা-৯৭ কোন কোন ঈমানদারের কবর সত্তর হাত দৈর্ঘ ও সত্তর হাত প্রশস্ত করা হয়।

মাসআলা-৯৮ ঈমানদারের কবর নূর দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়।

মাসআলা-৯৯ মোমেন ব্যক্তি তার সুপরিনতি সম্পর্কে তার পরিবার পরিজনকে অবগত করাতে চায় কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হয় না।

মাসআলা-১০০ মোমেন ব্যক্তিকে অত্যন্ত আদব ও এহতেরামের সাথে আরামদায়ক ভাবে ঘুমানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়, যেখান থেকে সে কিয়ামতের দিন জাগ্রত হবে।

মাসআলা-১০১ প্রশ্ন-উত্তরে বিফল হওয়ার পর মোনাফেক ব্যক্তিকে তার কবরের দুপার্শ্বের দেয়াল তাকে চেপে ধড়ে।

মাসআলা-১০২ মোনাফেক ব্যক্তি কিয়ামত পর্যন্ত কবরে এ আযাব ভোগ করতে থাকে।

عن أبي هريرة ، قال : قال رسول الله خية رر اذا قبر الميت ............ او قال أحذكم .. اتاه مكان اشوان ازرقان يقال لاحدهما : المنكر و الآخر النكير ، فيقولان : ما كنت تقول في هذا الرجل ؟ فيقول ما كان يقول : هو عبد الله و رسوله، اشهد ان لا اله الا الله ، و أن محمدا عبده و شؤله ، فيقولان : قد كنا نعلم انک تقول هذا . ثم يفسح له في قبره بعون فيراغا في سبعين ، ثم تؤ له فيه ، ثم قال له : نه . فيقول : ارجع الى اهلى فاخبرهم؟ فيقولان : نم كتومة العروس الذي لا يوقظه إلا أحب أهله إليه، حتى يبعثه الله من مضجعه ذلك و إن كان منافقا قال : سمعت الناس يقولون قولا فقلت له لا اذری . فيقولان : فذكنا نعلم انك تقول ذلك . فيقال لارض : التي عليه . فتلتم عليه ، فتختلف اضلاغة ، فلا يزال فيها معذبا حتى يبعثه الله من مضجعه ذلك )) رواه الترمذى

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয় অথবা তিনি বলেনঃ যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে দাফন করা হয়, তখন তার নিকট দুই জন কাল কাপড় পরিহিত নীল চোখ বিশিষ্ট ফেরেশতা আসে, যাদের একজনকে বলা হয় মোনকার আর অপর জনকে বলা হয় নাকীর। তারা উভয়ে মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে যে, এ ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তুমি কি জান? মোমেন ব্যক্তি তখন ঐ উত্তর ই দিবে যা সে দুনিয়াতে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে বিশ্বাস করত। যে তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। এমন কি মোমেন বলবেঃ আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা’বুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তখন ফেরেশতাগণ বলবে, আমরা জানতাম যে তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর তার কবর সত্তর হাত দৈর্ঘ এবং সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। কবরকে আলোক ময় করে দেয়া হবে, অতঃপর তাকে বলা হবে শুয়ে যাও, মৃত ব্যক্তি বলবে আমি আমার পরিবার - পরিজনের নিকট ফেরত যেতে চাই এবং তাদেরকে আমার এ শুভ পরিনতির কথা জানাতে চাই।

উত্তরে ফেরেশতাগণ বলবে সম্ভব নয় এখন তুমি বরের ন্যায় শুয়ে যাও। আর তাকে তার এ ঘুম থেকে তার পরিবারের মধ্যে তার নিকট সবচেয়ে প্রিয় জন এসে উঠাবে। এভাবে সে ঘুমাতে থাকবে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার এঘুম ভাঙ্গাবেন। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি যদি মোনাফেক হয় তাহলে সে ফেরেশতাগনের প্রশ্নের উত্তরে বলবেঃ দুনিয়াতে আমি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে শুনেছি আমিও তাই বলেছি। এর বেশি কিছু আমি জানিনা। ফেরেশতাগণ বলবে যে আমরা জানতাম যে তুমি এ উত্তরই দিবে। অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যমিনকে হুকুম করা হবে যে, তাকে চেপে ধর, কবর তখন তাকে চেপে ধরবে। এর ফলে মোনাফেকের এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বে চলে যাবে এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তার কবর থেকে উঠানো পর্যন্ত সে এ আযাব ভোগ করতে থাকবে। (তিরমিযি)[5]

মাসআলা-১০৩ কবরে মোমেন ব্যক্তির কোন চিন্তা ভাবনা থাকবে না।

মাসআলা-১০৪ কবরে মোমেন ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়।

মাসআলা-১০৫ আল্লাহ রাসূলের প্রতি ঈমান নিয়ে জীবন যাপন কারীদেরকে কিয়ামতের দিন ঈমানের সাথে পুনরুত্থানের সুসংবাদ দেয়া হয়।

মাসআলা-১০৬ গোনাগার ব্যক্তিরা কবরে অত্যন্ত চিন্তার মধ্যে থাকবে।

মাসআলা-১০৭ প্রশ্নের উত্তরে অপারগ গোনাগার ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামে তার বাসস্থান দেখানো হয়।

মাসআলা-১০৮ গোনাগার ব্যক্তিদেরকে ঐ সন্দেহের উপর পুনরুত্থানের সুসংবাদ দেয়া হয় যে সন্দেহ নিয়ে সে জীবন যাপন করেছে।

عن أبي هريرة عنه قال (( إن الميت يصير إلى القبر فيجلس الرجل الصالح في قبره غير فزع ولا مشغوف ثم يقال له فيم كنت ؟ فيقول : كنت في الاسلام . فيقال له : ما هذا الرجل ؟ ، جاء نا بالبينات من عند الله فصد قناة . فيقال له : هل رأیت الله ؟ فيقول : محمد رسول الله فيقول : ما بی خبر ان يرى الله : يفرج له فوجة قبل النار فينظر اليها يخطم بعضها بعضا . فقال له : أنظر إلى ما وقاك الله ، ثم يفرج له فزجة قبل الجنة فينظر إلى زهرتها و ما فيها . يقال له : هذا مقعدك ، و يقال له : على اليقين كنت وعليه ف و عليه تبعث ، إن شاء الله و الرجل الشؤ في قبره فزعا مشغو . فيقال له : فيم كنت ؟ فيقول : لا أدري، فقال له : جل ما هذا الرجل؟ فيقول : سمعت الناس يقولون قولا فقلته . فيفرج له قبل الجنة . فينظر الى فترتها وما فيها يقال له : أنظر إلى ما صرف الله عنك ثم يفر له فرجة قبل النار . فينظر اليها يحطم بعضها بعضا . فيقال له : هذا معقدك . على الشك گنت و عليه م . و عليه تبعث ، ان شاء الله تعالی )). رواه ابن ماجة

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয় তখন সৎ লোক কোন চিন্তা ভাবনা ব্যতীত কবরের মধ্যে উঠে বসে যায়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তুমি কোন দ্বীন মানতে? সে উত্তরে বলে আমি ইসলামের উপর ছিলাম। অতপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এ ব্যক্তিকে ছিল যে, তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিল? সে উত্তরে বলে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনি আল্লাহর রাসূল ছিলেন। তিনি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আমাদের নিকট মো’জেজা নিয়ে এসে ছিলেন এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তুমি কি আল্লাহকে দেখেছিলা? সে উত্তরে বলে যে, পৃথিবীতে আল্লাহকে দেখা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি ছিদ্র করে দেয়া হয় তখন সে দেখতে পায় যে, কি ভাবে অগ্নি শিখা সমূহ পরস্পর পরস্পরকে গ্রাস করছে। তাকে বলা হয় যে, এ ঐ জাহান্নাম যা থেকে আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন।

অতঃপর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং মোমেন ব্যক্তি জান্নাতের নে’মত সমূহ দেখতে পায় তখন তাকে বলা হয় যে এটা হবে জান্নাতে তোমার ঠিকানা। তুমি ঈমানের সাথে জীবন যাপন করেছ, ঈমানের উপর মৃত্যু বরণ করেছ এবং এ ঈমানের সাথেই পুনরুত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ। পক্ষান্তরে মোনাফেককে যখন কবরে তুলে বসানো হয় তখন সে অত্যন্ত চিন্তিত ও ভিত থাকে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, তুমি কোন দ্বীনের উপর ছিলে? সে বলে আমি কিছু জানিনা। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হয় যে, এ ব্যক্তিকে ছিল? যে, তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিল? সে বলে যে, আমি মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলেছি। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয় এবং সে জান্নাতের নে’মত সমূহ দেখতে পায় তখন তাকে বলা হয় যে, এ জান্নাত থেকে আল্লাহ তোমাকে বঞ্চিত করেছেন। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয় এবং তাকে বলা হয় যে, এ হল তোমার ঠিকানা। তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলের ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিলা এবং এ সন্দেহ নিয়েই মৃত্যু বরণ করেছ এবং এ সন্দেহের উপরই পুনরুত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ্। (ইবনে মাযাহ)[6]

মাসআলা- ১০৯ মোমেনের কবর সবুজ থাকে যা ১৪ তারিখের চাঁদের আলোর ন্যায় আলোকময় থাকে।

মাসআলা-১১০ কবরে আযাবের ধরণ। কাফের, মোনাফেক, ও গোনাগার লোকদেরকে কবরে নিম্নলিখিত দশ ধরণের বা তন্মধ্য থেকে কিছু আযাব দেয়া হবে।

১- কবরে ভীষণ ভয় ও চিন্তার মাধ্যমে শাস্তি।

২ - জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আফসোসের মাধ্যমে শাস্তি।

৩ - জাহান্নামের বিষাক্ত ও গরম হাওয়ার মাধ্যমে শাস্তি।

৪ - জাহান্নামে তার ভয়ানক ঠিকানা দেখানোর শাস্তি।

৫ - আগুণের বিছানার মাধ্যমে শাস্তি।

৬ - আগুণের পোশাকের মাধ্যমে আযাব।

৭ - কবরের দুই পার্শ্ব থেকে চেপে ধরার মাধ্যমে আযাব।

৮ - লোহার হাতুড়ীর আঘাতের মাধ্যমে আযাব।

৯ - সাপ ও বিচ্ছুর ধ্বংশনের মাধ্যমে আযাব।

১০ - বদ আমল সমূহ নিকৃষ্ট মানুষের চেহারা নিয়ে সামনে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে আযাব।

নোটঃ উল্লেখিত আযাবের ধরন সম্পর্কে হাদীস সমূহ পরবর্তী মাসআলা সমূহে লক্ষ করুন।

মাসআলা-১১১ গোনাহগার ব্যক্তি কবরে অত্যান্ত ভয় ও চিন্তা নিয়ে উঠে বসবেঃ

মাসআলা-১১২ প্রশ্ন উত্তরে বিফল হওয়ার পর গোনাগার ব্যক্তিকে প্রথমে জান্নাত দেখানো হয় এবং তাকে বলা হয় যে আল্লাহ্ তোমাকে এ নে’মত থেকে বঞ্চিত করেছেন।

মাসআলা-১১৩ জান্নাত দেখানোর পর গোনাগার ব্যক্তিকে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়।

মাসআলা-১১৪ গোনাগার ব্যক্তি ইসলামের ব্যাপারে যে স্বন্দেহ নিয়ে জীবন যাপন করত কিয়ামতের দিন তাকে ঐ স্বন্দেহের উপর উত্থিত হওয়ার সংবাদ শোনানো হয়।

عن عائشة رضي الله عنها قال : قال رشول الله : (( و اذا كان الرجل الشؤ أجلس في بره زغامشوا ، فقال له قمانت تقول ؟ فيقول : سمعت الناس يقولون قولا فقلت كما قالوا . ففرج له فرجة إلى الجنة ، فينظر إلى زهرتها و ما فيها ، فيقال له : أنظر إلى ما صرف الله نمک . ثم يفرج له فرجة قبل النار فينظر اليها يحطم بعضها بعضا ، و يقال : هذا مقعدك منها ، ان شاء الله . ثم يعذب )). رواه أحمد ، و عليه تبع ت و عليه على الشك ( صحیح )

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ গোনাগার ব্যক্তি যখন কবরে উঠে বসে তখন সে অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত থাকে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে তুমি পৃথিবীতে আল্লাহ ও তার রাসূল সম্পর্কে কি ধারণা রাখতে? সে উত্তরে বলে আমি মানুষকে যা কিছু বলতে শুনেছি তাই বলতাম। তখন তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি রাস্তা খোলা হয় আর সে তখন জান্নাতের আলো ও অন্যান্য নে’মত সমূহ দেখতে পায়। তখন তাকে বলা হয় দেখ এ ঐ জান্নাত যা থেকে আল্লাহ তোমাকে বঞ্চিত করেছেন। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খোলা হয়, তখন সে দেখতে পায় যে জাহান্নামের আগুনের শিখা সমূহ একে অপরকে ধ্বংশ করছে। তখন তাকে বলা হয় যে এ হল তোমার অবস্থান স্থল এবং তাকে বলা হয় যে তুমি স্বন্দেহ নিয়ে জীবন যাপন করেছ আর এ সন্দেহের উপরই মৃত্যু বরণ করেছ। ইনশাআল্লাহ্ কিয়ামতের দিন এস্বন্দেহের উপরই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তাকে আযাব দেয়া শুরু হয়। (আহমদ)[7]

মাসআলা-১১৫ কাফের ও মোনাফেকদেরকে মোনকার ও নাকীর অত্যন্ত রুক্ষ ভাষায় প্রশ্ন করবে।

মাসআলা-১১৬ প্রশ্ন উত্তরের পর ফেরেশতা লোহার হাতুড়ী দিয়ে কাফের ও মোনাফেকের উভয় কাঁধের মাঝে আঘাত করতে থাকবে আর এআঘাতের ফলে সে খুব উচ্চ কণ্ঠে চিল্লাতে থাকবে যা জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি শোনতে পারবে।

دخل نخلا لبني النجار فسمع صوتا ففزع فقال عن أنس بن مالك عنه أن رسول الله ناس ماتوا في الجاهلية فقال (( تعوذوا در من أصحاب هذه القبور؟ )) قالوا يا شول الله ؟ قال (( وإن بالله من عذاب النار ومن فتنة الدجال )) قالوا وهم ذاک یارسول الله الكافر إذا وضع في قبره أتاه ملك فينته، فيقول له : ما كنت تعب ؟ فيقول : لا أدري . فيقال كه دريت ولا تليت . فيقال له : ما كنت تقول في هذا الرجل ؟ فيقول : كنت اقول ما يقول الا فيضربه بمطراق من حديد بين أذنيه ، فيصيح صيحة يسمعها الخلق غير التقلين )). رواه أبو داود

অর্থঃ আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বনি নাজ্জারের এক বাগানে ছিলেন হটাৎ একটি আওয়াজ শোনে চমকিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ এ কবরের অধিবাসী কারা? সাহাবাগণ বললেনঃ এ কবর বাসীরা জাহেলিয়াতের যুগের লোকছিল, তিনি বললেনঃ জাহান্নামের শাস্তি ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা কর। সাহাবাগণ আরয করল হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমরা কেন তা করব? তিনি বললেনঃ কবরে দাফন কৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মোনাফেক হয় তাহলে তার নিকট ফেরেশতা এসে তাকে ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করে যে, তুমি কার এবাদত করতা? কাফের বা মোনাফেক উত্তরে বলে যে, আমি কিছু জানিনা। ফেরেশতাগণ তখন তাকে বলে যে তুমি নিজের জ্ঞান বুদ্ধিকে কাজে লাগাও নাই এবং কোর‘আন ও পাঠ কর নাই। অতঃপর ফেরেশতা জিজ্ঞেস করে যে, এ ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তোমার কি ধারনা? কাফের বা মোনাফেক উত্তরে বলে এ ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। এ উত্তর শোনে ফেরেশতাগণ তার উভয় কানের মাঝে লোহার হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আর সে উচ্চ স্বরে কাঁদতে থাকে। তার এ কান্নার আওয়াজ জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পায়। (আবুদাউদ)[8]

قال (( العبد إذا وضع في قبره و تولی و ذهب اصحابه حتى الله عين انس و عن النبي مع قرع نعالهم ، أتاه ملكان فاقعداه فيقولان له : ما كنت تقول في هذا الرجل محمد ر فقول : أشهد الله عبدالله و سؤله ، فقال : أنظر إلى مقعدك من النار ابدلك الله به مقعدا من : (( فيراهما جميعا ، و أما الكافر او المنافق فيقول : لا آذری كنت اقول الجنة )) ، قال النبي ما يقول الناس ، فقال : لا دريت ولا تليت ، ثم يضرب بمطرقة من حديد ضربة بين أذنيه فيصيح صيحة يسمعها من يليه الأ الثقلين )) رواه البخارى

আনাস বিন মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী নাজ্জারের এক বাগানে প্রবেশ করে এক আওয়াজ শোনে চিন্তিত হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে এ কবর কার? উত্তরে সাহাবাগণ বললেনঃ এ কবরের অধিবাসীরা জাহেলিয়্যাতের যুগে ইন্তেকাল করেছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জাহান্নামের শাস্তি এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। সাহাবাগণ বললেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল কেন তা করতে হবে? তিনি বললেনঃ যদি মৃত ব্যক্তি কাফের বা মোনাফেক হয় তাহলে তার নিকট এক ফেরেশ্‌তা এসে ধমক দিয়ে বলে যে, তুমি কার ইবাদত করতে? তখন কাফের বা মোনাফেক বলে আমি জানিনা? ফেরেশতা তখন তাকে এর উত্তরে বলে যে, তুমি তোমার বুদ্ধিকে কাজে লাগাও নাই এবং কোর‘আনও পড় নাই। অতঃপর ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে যে, এ ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে তোমার কি ধারনা? তখন কাফের বা মোনাফেক বলে লোকেরা যা বলত আমি তাই বলতাম। এ উত্তর শোনে ফেরেশতা তার উভয় কানের মাঝে লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে? আর তখন সে খুব করুন ভাবে কাঁদতে থাকে, তার কান্নার আওয়াজ জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব সোনতে পায়। (আবুদাউদ)[9]

قال (( العبد إذا وضع في قبره و تولی و ذهب اصحابه حتى انه عن أنس عنه عن النبي ليسمع قرع نعالهم ، أتاه ملكان قاعداه فيقولان له : ما كنت تقول في هذا الرجل محمد ون ؟ يقول : أشهد الله عبدالله و مموله ، فقال : أنظر إلى مقعدك من النار أبدلك الله يه مقعدا من : (( فيراهما جميعا ، و أما الكافر او المنافق فيقول : لا ادري كنت اقول الجة )) ، قال البى مايقول الناس ، قال : لا دريت ولا تليت ، ثم يضرب بمطرقة من حديد ضربة بين أذنيه فيمي ممي يممممممها . يليه إلا التقلين )) رواه البخاري

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন কোন বান্দাকে কবরে রেখে তার সাথীরা প্রত্যাবর্তন করে তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। (এমন সময়) তার নিকট দুই জন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায় অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করে যে, এ ব্যক্তি মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে তোমার কি ধারনা ছিল? তখন সে বলে যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সে আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। অতঃপর তাকে বলা হয় যে, জাহান্নামে তোমার বাসস্থানের দিকে তাকাও এর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে বাসস্থান দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে উভয় ঠিকানাই দেখানো হয়। আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মোনাফেক হয় তাহলে সে বলে লোকেরা যা বলত আমি তাই বলতাম! এ উত্তর শোনে ফেরেশতারা তাকে জিজ্ঞেস করে যে, তুমি কি পড়াশোনা কর নাই? অতঃপর তার উভয় কানের মাঝে লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে? আর তখন সে খুব করুন ভাবে কাঁদতে থাকে, তার কান্নার এ আওয়াজ জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব সোনতে পায়। (বোখারী)[10]

মাসআলা-১১৭ কাফেরের জন্য কবরে আগুণের বিছানা বিছানো হয় এবং তাকে আগুনের পোশাক পরানো হয়।

মাসআলা-১১৮ কাফেরের কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে ধারাবাহিক ভাবে তাকে জাহান্নামের আগুন ও বিশাক্ত হাওয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়।

মাসআলা-১১৯ কাফেরকে তার কবরের দুই পার্শ্বের দেয়াল বারংবার কঠিন ভাবে চাপতে থাকে, ফলে তার ডান পার্শ্বের হাড্ডি বাম পার্শ্বে এবং সামনের হাড্ডি পিছনে চলে যায়।

মাসআলা-১২০ কাফেরকে তার কবরে আঘাত করার জন্য অন্ধ ও মূর্ক ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়।

قال (( ان الميت إذا وضع في قبره انه يسمع خفق نعالهم عن أبي هريرة عنه عن النبي چين يوو مدبرين و إن الكافر إذا أتى من قبل رأسه فلا يوجد شيء ، ثم أتی عن يمينه فلا يوجد ، ثم أتى عن شماله فلا يوجد شيء ، ثم أتى من قبل رجليه فلا يوجد شين ، فيقال له : الجلي في مرغوبا خائفا ، فقال : أرأيتك هذا الرجل الذي كان فيكم ماذا تقول فيه؟ و ما فيقول : لا ادري ، دا تشهد ليه ؟ فيقول : اى رجل؟ ولا يهتدي لامه، فيقال له : محمد حييت ، و عليه م و كما قال الناس . فيقال له : على ذلك الناس قالوا قولا فقل مع إن شاء الله ثم يفتح له باب من أبواب النار فيقال له : هذا مقعدك من النار و ما اعد عليه تبع الله لك فيها قژداد خرة و بورا ، ثم يفتح له باب من أبواب الجنة فيقال له : هذا معذک منها وما أعد الله لك فيها لو أطعته فيزداد حشرة و بورا ، ثم يضيق عليه قبره حتى تختلف فيه صلاة ، فتلك المشة الضنك التى قال الله فإن له معيشة ضنكا و نخشرة يوم القيمة أغمی ( طه : 124). رواه الطبرانی و ابن حبان و الحاكم

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা প্রত্যাবর্তন করে তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। মৃত ব্যক্তি যদি কাফের হয় তখন আযাবের ফেরেশতা তার মাথার দিক থেকে আসে অথচ কোন বাধার সম্মুক্ষীন হয় না। অতঃপর তার ডান দিক থেকে আসে তখনও কোন বাধার সম্মুক্ষীন হয় না। অতঃপর তার বাম দিক থেকে আসে তখনও কোন বাধার সম্মুক্ষীন হয় না। অতঃপর তার পায়ের দিক থেকে আসে তখনও কোন বাধার সম্মুক্ষীন হয় না। অতঃপর তাকে বলা হয় বস তখন সে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় উঠে বসে। তখন তারা তাকে প্রশ্ন করে যে, এ ব্যক্তি যে তোমাদের মাঝে ছিল তার সম্পর্কে তোমার কি ধারনা ছিল? তখন সে বলে কোন ব্যক্তি? সে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামও জানে না।

অতঃপর তাকে বলা হয় মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কাফের বলে আমি কিছু জানি না, লোকদেরকে তার ব্যাপারে যাকিছু বলতে শুনেছি আমি তাই বলেছি। তখন ফেরেশতা তাকে লক্ষ করে বলে যে তুমি সন্দেহ নিয়ে জীবন যাপন করেছ, আর এ সন্দেহের উপরই মৃত্যু বরণ করেছ। আর এ সন্দেহের উপরই পুনরুত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর জাহান্নামের দরজা সমূহের মধ্যে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং তাকে বলা হয় যে এ জাহান্নাম এবং তোমার জন্য আল্লাহ ওখানে যে আযাব প্রস্তুত করে রেখেছে সেখানে তোমার আবাস স্থল। তখন তাকে তার চিন্তা ও লজ্জা আরো বেশী করে গ্রাস করে। অতঃপর জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যে একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বলা হয়, যদি তুমি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী চলতে তাহলে এ জান্নাত এবং এখানে আল্লাহ যাকিছু নির্মান করে রেখেছেন তা ছিল তোমার আবাস স্থল, তখন তাকে তার চিন্তা ও লজ্জা আরো বেশী করে গ্রাস করে। অতঃপর তার কবর তাকে চেপে ধরে, ফলে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বে চলে যায়। আর এই হল সংকুচিত জীবন যে ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’লা বলেনঃ তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (সূরা ত্ব-হা- ১২৪) তাবারানী, ইবনে হিব্বান, হাকেম।[11]

মাসআলা-১২১ কাফেরের জন্য কবরে আগুনের বিছানা বিছানো হয় এবং তাকে আগুনের পোশাক পরানো হয়।

মাসআলা- ১২২ কাফেরের কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে ধারাবাহিক ভাবে তাকে জাহান্নামের আগুন ও বিশাক্ত হাওয়ার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়।

মাসআলা-১২৩ কাফেরকে তার কবরের দুই পার্শ্বের দেয়াল এমন কঠিন ভাবে চাপতে থাকে, ফলে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বের হাড্ডির সাথে মিসে যায়।

মাসআলা-১২৪ কবরে কাফেরের খারাপ আমল সমূহ অত্যন্ত কুৎসিত চেহারা সম্পন্ন মানুষের আকৃতি নিয়ে তার সামনে এসে উপস্থিত হয়, ফলে কাফেরকে চিন্তা ও ভয় আরো বেশি করে গ্রাস করে।

মাসআলা-১২৫ কাফেরকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করার জন্য তার কবরে অন্ধ ও মূর্ক ফেরেশতা নিয়োগ করা হয়, যাদের হাতুড়ীর আঘাতে কাফেরের শরীর ছিন্ন-বিন্ন হয়ে যায়। অতপর তাকে পূর্ব আকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হয়। এর পর ফেরেশতা তাকে আবার আঘাত করতে করতে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়, কিয়ামত পর্যন্ত কাফের এ আযাবের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে।

عن البراء بن عازب بينه قال : قال رول الله : (( و ان العبد الكافر فتعاذ روحه في جسده ، ويايه ملكان فيجلسانه فيقولان له : من ربك؟ فيقول : هاد هاه لا اذر . قال فيقولان له : ما دينك ؟ فيقول : ها هاه لا أدرى . قال فيقولان له : ما هذا الرجل الذي بعت فيكم ؟ فيقول : هاة هاه لا أثر . فينادى منابر من الماء : ا كذب فافرشوا له من النار رو البشؤه من النار ) وافتحوا له بابا إلى النار فيأتيه من خرها و سمومها ، و يضيق عليه قبة حتى تختلف فيه الاعة ، ويتيه رجل قبيح الوجه ، قبيخ الثياب من الريح ، فيقول : ابشر بالذى يسوءك، هذا يؤمک الذی کنت توعد . فيقول : من أنت وجهک الوجه القبيح يجيء بالشر ! فيقول : أنا عملک الخبيث . فيقول : رب لا تقم الشاعة .)) وفي رواية له بمعناه و زاد (( فیانیه آب قبيخ الوجه ، الريح . فيقول : ابشر بهوان من الله و عذاب مقيم . فيقول : بشرک الله قبيخ الثياب ، من بالشر، من أنت ؟ فيقول : و انت انا عملت الخبيث كنت بطينا عن طاعة الله سريعا في معصيته جزاك الله شرا ، ثم يقيض له اغمی اصمم ابكم في يده مرزبة لو ضرب بها جبل كان ترابا ، فيضربه ضربة حتى يصير ترابا ، ثم يعيده الله كما كان ، فيضرب ضربة اخرى فيصيح صيحة شمعه كل شئ إلا الثقلين . قال البراء ثم يفتح له باب من النار و يمهد له من فرش النار )). رواه أخمد ( حسن )

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কাফের ব্যক্তির রুহ যখন তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, তখন তার নিকট দুইজন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায়। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞেস করে যে, তোমার প্রভূ কে? উত্তরে সে বলে হায় হায় আমি কিছুই জানিনা। তখন ফেরেশতাগণ তাকে জিজ্ঞেস করে যে, তোমার দ্বীন কি ছিল? উত্তরে সে বলে হায় হায় আমি কিছুই জানিনা। তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে, যে ঐ ব্যক্তি যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল সে কে ছিল? উত্তরে সে বলে হায় হায় আমি কিছুই জানিনা। তখন আকাশ থেকে এক আহ্বান কারী আহ্বান করে যে সে মিথ্যুক, তাকে আগুণের বিছানা বিছিয়ে দাও, আগুণের পোশাক পরিধান করে দাও, জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দাও।

তখন জাহান্নামের গরম ও বিষাক্ত হাওয়া তার দিকে আসতে থাকে। তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়। ফলে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বের হাড্ডির সাথে মিসে যায়। অতঃপর তার নিকট কুৎসিত চেহারা সম্পন্ন, ময়লা যুক্ত কাপড় পরিহিত, দূর্গন্ধময়, ব্যক্তি আসে এবং বলেঃ তুমি অসুভ পরিনতির সুসংবাদ গ্রহণ কর, আজ সে দিন যে দিনের অঙ্গিকার তোমাকে দেয়া হয়ে ছিল, কাফের বলবে তুমি কে?

তোমার চেহারা অত্যন্ত কুৎসিত তুমি আমার জন্য খারাপ সংবাদ নিয়ে এসেছ। সে উত্তরে বলে আমি তোমার খারাপ আমল। তখন কাফের বলে হে আমার প্রভূ! কিয়ামত কায়েম করনা। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, কুৎসিত চেহারা সম্পন্ন, ময়লা যুক্ত কাপর পরিহিত, দূর্গন্ধময়, ব্যক্তি আসে এবং বলে? তুমি লাঞ্ছনা ও চিরস্থায়ী আযাবের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তখন কাফের বলে আল্লাহ তোমার পরিণতি অসূভ করুক তুমি কে? সে উত্তরে বলে আমি তোমার খারাপ আমল। পৃথিবীতে তুমি আল্লাহর নির্দেশ পালনে ছিলা কুণ্ঠিত আর তার নাফরমানিতে ছিলা সরব। আল্লাহ্ তোমাকে খারাপ প্রতিদান দিক। অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ, মূর্ক ফেরেশতা নিয়োগ করে দেয়া হয়, যার হাতে থাকে।

লোহার হাতুড়ী, ঐ হাতুড়ী দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হয় তাহলে পাহাড় ধুলায় পরিনত হবে। এর মাধ্যমে ফেরেশতা তাকে কঠোরভাবে আঘাত হানবে, এক আঘাতেই সে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে, আল্লাহ্ তাকে পুনরায় সুস্থ করবেন। আবার ফেরেশতা তাকে আঘাত হানবে আর কাফের করুন ভাবে কাঁদতে থাকবে, যে আওয়াজ জ্বিন ও ইনসান ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পাবে। বর্ণনা কারী বলেনঃ অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয় এবং তার জন্য আগুণের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হয়। (আহমদ)[12]

মাসআলা-১২৬ কবরে কাফেরকে ধ্বংশন করার জন্য এমন সাপ ও বিচছু নির্ধারণ করা হয় যে এর কোন একটি যদি কখনো পৃথিবীতে নিঃশ্বাস ফেলে তাহলে পৃথিবীতে কখনো কোন কিছু পয়দা হবে না।

عن أبي هريرة منه قال شهدنا جنائية مع نبي الله ، فلما فرغ من دفنها، و انصرف الناس ، قال نبى الله (( إنه الآن يسمع خفق نعالكم ، اتاه منكر و نكيز اينهما مثل قدور الحاس، و ثيابهما ممثل صياصي البقر ، و اصواتهما مثل الغد، فيجلسانه فيا لانه ما كان يعبد و من كان نبيه ، فإن كان من يعبد الله قال : أعبدالله ، و بين محمد ، جاء نا بالبينات و الهدی فآمنا به واتبعناه ، فذلك قول الله يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا و في الأخرة ...... کوه ( ابراهيم : 27) فقال لة : على اليقين ييت ، و عليه م، و عليه تبعث ثم يفتح له باب إلى الجنة ، و يوشع له في خفته و إن كان من اهل الشك، قال : لا اذری، سبغث الناس يقولون شيئا مملثة، فقال له : على الشك خييت ، و عليه م ، و عليه تبعث . ثم يفتح له باب الی النار ، و تسلط عليه عقارب و تتانين لو نفخ احدهم على الدنيا ما انبتت شینا تنهشه ، و تؤمر الأرض فتنضم عليه حتى تختلف اضلاعله )). رواه الطبراني في الأوسط ( حسن )

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একটি জানাযায় আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম, যখন দাফন শেষ করে লোকেরা ফেরত যাচ্ছিল তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এখন সে তোমাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পাচ্ছে। তার নিকট মোনকার ও নাকীর এসেছে। তাদের চোখ সমূহ তামার ডেগের ন্যায় বড় বড়, দাত সমূহ গরুর শিং এর ন্যায়, কণ্ঠ সমূহ বিজলীর গর্জনের ন্যায়। এ উভয় ফেরেশতা তাকে উঠিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে, তুমি কার ইবাদত করতে, তোমার নাবী কে ছিল, যদি আল্লাহর ইবাদত কারী হয় তাহলে বলবে? আমি আল্লাহর ইবাদত করতাম, আমার নাবী ছিল মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে আমাদের নিকট স্পষ্ট দলীল ও হেদায়েত নিয়ে এসে ছিল। আমরা তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তার অনুসরণ করেছি। আর আল্লাহ্‌র এ বাণীর ও এই মর্মার্থঃ যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ জীবনে এবং পর জীবনে সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। (সূরা ইবরাহিম-২৭)

অতঃপর তাকে বলা হবে যে, তুমি ইয়াকীনের উপর জীবিত ছিলা এবং ইয়াকীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছ, আর ইয়াকীন অবস্থায়ই পুনরুত্থিত হবে। তার জন্য তখন জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তার কবরকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি যদি আল্লাহ ও তার রাসূলের ব্যাপারে স্বন্দিহান হয়, তাহলে সে মোনকার ও নাকীরের প্রশ্নের উত্তরে বলবেঃ আমি কিছুই জানিনা। মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম, তখন তাকে বলা হবে যে, তুমি স্বন্দেহের উপর জীবিত ছিলা এবং স্বন্দেহের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছ, আর স্বন্দেহের অবস্থায়ই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হবে আর তার শাস্তির জন্য এমন বিষাক্ত সাপ নির্ধারণ করা হবে যে, এর কোন একটি যদি কখনো পৃথিবীতে নিঃস্বাস ত্যাগ করে তাহলে পৃথিবীতে আর কখনো কোন কিছু উৎপন্ন হবে না। এমন বিষাক্ত সাপ তাকে ধ্বংশন করতে থাকবে। অতঃপর যমিনকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, কাফেরের উপর তুমি সংকীর্ণ হয়ে যাও, তখন যমিন তার জন্য এতটা সংকীর্ণ হয়ে আসবে যে, তার শরীরের এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বের হাড্ডির সাথে গিয়ে মিশবে। (ত্বাবারানী)[13]

নোটঃ উল্লেখ্য জাহান্নামে কাফেরদেরকে সাপ ও বিচ্ছু ধ্বংশন করবে, জাহান্নামের সাপ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ সাপ সমূহ উটের সমান হবে, আর তাদের একেক।

বারের ধ্বংশনের ফলে জাহান্নামী চল্লিশ বছর পর্যন্ত তার প্রতিক্রিয়া ভোগ করবে। আর বিচ্ছুর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, তা খচ্চরের সমান হবে, আর তাদের একেক বারের ধ্বংশনের ফলে জাহান্নামী চল্লিশ বছর পর্যন্ত তার প্রতিক্রিয়া ভোগ করবে। (আহমদ)

মাসআলা-১২৭ কবরে কাফেরের জন্য বিভিন্ন রকমের সাপ নির্ধারন করা হবে। প্রত্যেকটি সাপের সত্তরটি মাথা থাকবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে ধ্বংশন করতে থাকবে।

قال (( إن المؤمن في قبره لفي روضة خضراء في محب له عن رسول الله عن أبي هريرة قبره سبعون ذراعا، ويؤله كالقمر ليلة البدر أتذرون فيما أنزلت هذه الاية فإن له معيشة نگا و خشتره يوم القيمة اغمی به رطه : 124) قال : أتدرون ما المعيشة الضنك؟ )) قالوا : الله ورسوله أعلم . قال : (( عاب الكافر في قبره ، والذي نفسي بيده يسلط عليه يعة و تيممون و ما التنين؟ بعون تحية إكل حنية سبعة رؤوس ينعون و يخشونه إلى يوم القيمة )) نینا، ت رواه أبو يعلى و ابن حبان

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মোমেন ব্যক্তি কবরে একটি সবুজ বাগানে থাকবে, তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তার কবরকে ১৪ তারিখের চাঁদের আলোর ন্যায় আলোক ময় করে দেয়া হবে। তোমরা কি জান যে, এ আয়াত টি কি ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে? “তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সূরা ত্ব-হা- ১২৪)

তিনি আরো বলেন তোমরা কি জান সংকুচিত জীবন কি? তারা বললঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ই ভাল জানেন? তখন তিনি বললেনঃ কবরে কাফেরের আযাব। ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ তার কবরে ৯৯ টি সাপ থাকবে, প্রত্যেকটি সাপের সত্তর টি করে মাথা থাকবে, এগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তাকে ধ্বংশন করতে থাকবে। (আবু ইয়া’লা, ইবনে হিব্বান)[14]

ফুটনোট

[1] - আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২০

[2] - কিতাবুস সুন্না, বাবু পীল মাসআলা ফীল কাবর (৩/৩৯৭৭)

[3] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২৫।

[4] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২১।

[5] - আবওয়াবুরল জানায়েজ, বাবু আযাবির কবরি (১৮৫৬)

[6] - কিতাবুযযুহদ, বাবু যিকরিল কাবরি ওয়াল বালা (২/৩৪৪৩)

[7] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২০।

[8] - কিতাবুস্‌সুন্না, বাবু মাসআলা ফী আযাবিল কাবরি (৩৯৭৭/৩)

[9] - কিতাবুস সুন্নাহ, বাবুল মাসআরা ফীল কাবরি ওয়া আযাবিল কাবরি।

[10] - কিতাবুল জানায়েজ, বাবু আল মায়্যেতু ইয়াস মাউ খাফাকান নিয়াল।

[11] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২৫।

[12] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২১।

[13] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২৩।

[14] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২১৬।

৩৫
মৃত মোমেনের প্রতি কবরের চাপ
মাসআলা-১২৮ সা’দ বিন মোয়াজ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে তার কবর চাপতে ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দূয়ার বরকতে তা থেকে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।

قال ( ر هذا الذي تحرك له العرش ، عن ابن عمر رضي الله عنهما عن رشول الله وفتحت له أبواب السماء، وشهده ميعون الله من الملكة لقد ضم ضمة ثم فرج عنه )). رواه الائی

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, সা’দ বিন মোয়াজ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ঐ ব্যক্তি যার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেপে উঠেছিল, আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়ে ছিল, সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছিল, তাকেও তার কবর চেপে ধরে ছিল অতঃপর ছেড়ে দিয়েছে। (নাসায়ী)[1]

سعد في القبر ضمة فدعوت عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : قال رسول الله بن الله أن يكف عنه ). رواه الحاكم

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, সা’দ বিন মোয়াজ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে তার কবর চেপে ধরেছিল অতঃপর আমি তার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দূয়া করেছি যেন তার এ কষ্টকে দূর করা হয়, অতঃপর আল্লাহ তা দূর করেছেন। (হাকেম)[2]

নোটঃ বলা হয়ে থাকে যে মোমেন মৃত ব্যক্তিকে কবর এমন ভাবে চেপে ধরে, যেমন মা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে চেপে ধরে আদর করে। পক্ষান্তরে কাফের মৃতকে কবর আযাব দেয়ার জন্য এমন ভাবে চেপে ধরে, যে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বের হাড্ডির সাথে মিশে যায়। এ ও বলা হয়ে থাকে যে, সা’দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কোন এক মুহূর্তে পেশাবের সময় অসাবধান ছিলেন তাই তাকে তার কবর চেপে ধরেছিল। আল্লাহ্ ই এব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত।

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েয, বাবু জম্মিল কবর ওয়া যগতুহু ২/১৯৪২)

[2] - কিতাবু মা’রেফাতুস্‌সাহাবা, বাবু তাহাররুকির আরসে রি সায়া’দ।

৩৬
তাওহীদে বিশ্বাস ও মোনকার ও নাকীরের প্রশ্ন উত্তর
মাসআলা-১২৯ একনিষ্ঠ তাওহীদে বিশ্বাস ই ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তরে কামিয়াবের মাধ্যমঃ

عن البراء بن عازب بين عن النبي نيز قال (( اذا اقعد المؤمن في قبره أتى ثم شهد أن لا إله الا الله و محمد رسول الله فذلك قوله : ينبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت ه . رواه البخارى

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মোমেন ব্যক্তিকে যখন কবরে বসানো হয় তখন তার নিকট ফেরেশতা আসে এবং মোমেন ব্যক্তি এ সাক্ষি দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আর এটাই এর ব্যাখ্যা “যারা শাশ্বত বাণী তে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন”। (বোখারী)[1]

মাসআলা-১৩০ কবরে মোনকার ও নাকীরের ভয় ভীতি থেকে কালিমায়ে তাওহীদই মানুষকে সংরক্ষন করবে।

قال بعض القوم یا رسول الله بير ما احد يقوم عليه ملك في يده عن أبي سعيد ن الذرى يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في ؟ فقال رسول الله طراف الأهبل أهلك ) عند ذلك الحيوة الأيان . رواه أحمد

অর্থঃ আবুসাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ কবরের আযাবের কথা শোনে কেউ কেউ প্রশ্ন করল যে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ব্যক্তির সামনে ফেরেশতা হাতুড়ী নিয়ে দাড়াবে সে তো ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ধ্বংশ হয়ে যাবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ জীবনে সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন”। (আহমদ)[2]

، تلى هذه الأمة في قبورها ، عن عايشة رضي الله عنها قالت : قلت يا رسول الله فكيف بئ و أنا امرأة ضعيفة ؛ قال ، يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا و في الأخرة . رواه البزار

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলাম যে হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ স্ব স্ব কবরে পরীক্ষার সম্মুক্ষীণ হবে কিন্তু আমার কি অবস্থা হবে, আমি তো এক জন দূর্বল মহিলা? তিনি বললেনঃ “যারা শাশ্বত বাণী তে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ জীবনে এবং পর জীবনে সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন”। সূরা - ইবরাহীম (বায্‌যার)[3]

মাসআলা- ১৩১ কালিমা তাওহীদের বরকতে ঈমানদারগণ অত্যন্ত ধিরস্থিরতার সাথে মোনকার ও নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দিবে!

عن البراء بن عازب وته قال رسول الله : ( رو يأتيه ملكان فيجلسانه ، فيقولان له : من ربك ؟ فيقول ربی الله ، فيقولان له : ما دينك ؟ فيقون ديني الإسلام . فيقولان له : ما هذا الرجل الذى بك فيكم ؟ قال فيقول : هو شول الله . فيقولان : و ما یدریک ؛ فيقول : قرأت به و صدف )) زاد في حديث جريره (( فذلك قول الله عزوجل و يثبث كتاب الله ام الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا وفي الآخرة :)) رواه أبو داؤد ( صحیح )

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দুইজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে, তোমার প্রভূ কে? তখন উত্তরে সে বলবে আমার প্রভূ আল্লাহ্। তখন তারা তাকে আবার প্রশ্ন করবে যে, তোমার দ্বীন কি ছিল? তখন উত্তরে সে বলবে আমার দ্বীন ছিল ইসলাম। তখন তারা তাকে আবার প্রশ্ন করবে যে, এ লোকটি যে তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিল সে কে? তখন সে উত্তরে বলবে? তিনি আল্লাহ্‌র রাসূল। তখন তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে যে, কি করে তুমি তা জানলে? তখন সে বলবেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পাঠ করেছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি আর তা সত্য বলে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। জারীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে, এটিই আল্লাহর বাণীর অর্থ যে, “যারা শাশ্বত বাণী তে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ জীবনে এবং পর জীবনে সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন”। (আবুদাউদ)[4]

মাসআলা-১৩২ কালেমা তায়্যেবার বিশেষ আয়াতটি কবরের আযাবের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে।

قال : يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت عن البراء بن عازب نينه عن النبي فذلک و قال نزلت في عذاب القبر يقال له ممن ترك فيقول ربي الله و نبی محمد قوله عوجل ويثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحيوة الدنيا و في الأخيرة به . رواه مشليم

অর্থঃ বারা বিন আযেব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে, “যারা শাশ্বত বাণী তে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ সু প্রতিষ্ঠিত রাখবেন” (সূরা ইবরাহীম-২৭) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে, কবরের আযাব সম্পর্কে, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে যে, তোমার প্রভূ কে? সে তখন উত্তরে বলবে আমার প্রভূ আল্লাহ এবং আমার নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মুসলিম)[5]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুর জানায়েয, বাবু মাযায় ফী আযাবিল কবরি।

[2] - আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ ৪, হাদীস নং- ৫২১৯।

[3] - আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ ৪, হাদীস নং- ৫২১৮।

[4] - কিতাবুস্‌সুন্নাহ, বাবু ফীল মাসআলাতি ফীল কবরি ওয়া আযাবিল কবরি (৩/৩৯৭৯)

[5] - কিতাবুল জান্নাতি ওয়াছিফাতুহু, বাবু আরযিল মাকআদে আলাল মায়্যিতি ওয়া আযাবির কাবরি।

৩৭
নেক আমল কবরের আযাব থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে ঢাল স্বরুপ
মাসআলা-১৩৩ নেক আমল......নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ, আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে বাধা, ইত্যাদি....... কবরে মৃত ব্যক্তিকে আযাব থেকে রক্ষা করে।

عن أبي هريرة عنه عن النبي وقال (( إن الميت إذا وضع في قبره انه يسمع خفق بعالهم حين يوؤين مدبرین ، فإن كان هنا كانت الصلوة عند رأسه وكان الصيام عن يمينه ، وكانت الزكاه عن شماله، وكان فعل الخيرات من الدقة والصلة و المعروف والإحسان إلى الناس عند رجليه ، فيؤتى من قبل رأسه فتقول الصلوة : ماقبلی مذخل ثم يؤتى عن يمينه فيقول الصيام : مالی مدخل ثم يؤتى من قبل رجليه فيقول فعل الخيرات من الدقة والصلة والمعروف والإحسان إلى الناس : ماقبل مدخل )). رواه ابن حبان

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রেখে তার সাথীরা প্রত্যাবর্তন করে তখন সে তার সাথীদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়, যদি সে মোমেন হয় তাহলে তার নামায তার মাথার নিকট থাকে, রোজা তার ডান দিকে থাকে, যাকাত তার বাম দিকে থাকে, এবং তার সৎ কর্ম সমূহ যেমন দান-খয়রাত, আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন, সৎকাজের আদেশ, মানুষের প্রতি দয়া, তার পায়ের নিকট থাকে। ফেরেশতা যখন তার মাথার দিক থেকে আসে তখন নামায বলে, আমার এদিক দিয়ে রাস্তা নেই, ফেরেশতা তখন তার ডান দিক দিয়ে আসে, তখন রোজা বলে, আমার এদিক দিয়ে রাস্তা নেই, ফেরেশতা তখন তার পায়ের দিক দিয়ে আসে, তখন সৎ আমল যেমন দান-খয়রাত আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন, সৎকাজের আদেশ, মানুষের প্রতি দয়া, বলে, আমার এ দিক দিয়ে রাস্তা নেই, (ইবনে হিব্বান)[1]

মাসআলা-১৩৪ সমস্ত নেক আমল এমনকি নামাযের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়াও মৃত ব্যক্তিকে কবরের আযাব থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্দক হবে।

قال (( يؤتى الرجل في قبره فإذا أتى من قبل سه دفعه عين أبي هريرة رفونه عن النبي تلاوه القرآن وادا أتى من قبل يديه قعة الدقة واذا أتى من قبل رجليه دفعته مشيرة الى الماجد )). رواه الطبرانی

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষকে কবরে দাফন করার পর তার নিকট আযাবের ফেরেশতা তার পায়ের দিক থেকে আসবে, তখন তার কোর‘আন তেলওয়াত ফেরেশতাকে বাধা দিবে, ফেরেশতা যখন তার সামনের দিক থেকে আসবে তখন তার দান-খয়রাত ফেরেশতাকে বাধা দিবে, আবার যখন ফেরেশতা তার পায়ের দিক থেকে আসবে তখন তার পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া ফেরেশতাকে বাধা দিবে। (ত্বাবারানী)[2]

ফুটনোট

[1] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং-৫২২৫।

[2] - আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫২২৫।

৩৮
কবরের ফেতনা থেকে নিরাপত্তা প্রাপ্তরা
মাসআলা-১৩৫ ইসলামী সেনাদলকে পাহাড়ারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ কারী কবরের ফেতনা থেকে নিরাপত্তা পাবে।

عن فضالة بن غبيير وما يحدث عن رسول الله : انه قال (( كل ميت يختم على عمله الا الذي مات مترابطا في سبيل الله فإنه ينمي له عمله الى يوم القيامة و يأمن فتنة القبر )) رواه الترميرى

অর্থঃ ফুযালা বিন ওবাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর সাথে সাতে তার আমলের দরজা বন্দ হয়ে যায়, কিন্ত যে আল্লাহর রাস্তায় পাহাড়া রত অবস্থায় মারা গেছে সে ব্যতীত, কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলের সোয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকে, এমন কি সে কবরের ফেতনা থেকেও নিরাপত্তা পাবে। (তিরমিযী)[1]

قال (( من مات مرابطا في سبيل الله أجرى عليه اجر عن أبي هريرة عنه عن رشول الله عمله الصالح الذي كان يعمل و أجرى عليه رزقا و أمن من الفتان و بعثه الله يوم القيامة أما من القرع )). رواه ابن ماجة

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পাহাড়ারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তার নেক আমল সমূহ যা সে জীবিত অবস্থায় পালন করত তার সোয়াব সে কিয়ামত পর্যন্ত পেতে থাকবে। তাকে রিযিক ও দেয়া হয় এবং কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হয়। আর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে এমন ভাবে উঠাবেন যে তার কোন চিন্তা ভাবনা থাকবে না। (সহীহ সুনানে ইবনে মাযাহ, আলবানী, ২য় খন্ড, হাদীস নং ২২৩৪)

মাসআলা-১৩৬ জুমা’র দিন বা রাতে মৃত্যু বরণ কারীও কবরের ফেতনা থেকে নিরাপত্তা পাবে।

عن عبد الله بن عمرو رضی الله عنهما قال : قال رسول الله (( مامن مسلم يموث يوم الجمعة أو ليلة الجمعة الأوقاه الله فتنة القبر )). رواه أحمد والترمذی ( حسن )

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে মোসলমান জু‘মার দিনে বা রাতে মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ্ তাকে কবরের ফেতনা থেকে নিরাপদে রাখেন। (আহমদ, তিরমিযী)[2]

মাসআলা-১৩৭ সূরা মুলক নিয়মিত পাঠ কারী কবরের আযাব থেকে নিরাপদে থাকবে।

عن عبد الله بن مسعود بند قال تنورة تبارك هى المانعة من عذاب القبر . رواه الحاكم

অর্থঃ আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ সূরা তাবারাক (সূরা মুলক) তার পাঠ কারীর জন্য কবরের আযাব থেকে নিরাপদে রাখবে। (হাকেম)[3]

মাসআলা-১৩৮ শহীদ কবরের ফেতনা থেকে নিরাপদে থাকবে।

أن رجلا قال : يا رسول الله و مابال عن ابي بي غير عن رجل من أصحاب النبي المؤمنين يفتنون في قبورهم الأالشهيد ؛ قال : (( کفی ببارقة الشوف على رأسه فتنة )) رواه الائی

অর্থঃ রাসেদ বিন সা’দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবাগণের মধ্যে এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত মোসলমানরা কবরে ফেতনার সম্মুক্ষীন হয় অথচ শহীদরা কেন এ ফেতনার সম্মুক্ষীন হয় না? তিনি বললেনঃ তাদের জন্য পৃথিবীতে তাদের মাথার উপর তরবারীর চমকই যথেষ্ঠ হবে।

মাসআলা-১৩৯ পেটের কোন রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ কারী ও কবরের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।

، وخالد بن غفطة بنده عن عبير الله بن يسار بند قال : كنت جالسا و سلیمان بن صرد فذكروا أن رجلا تؤفي مات ببطنه ، فإذا هما شنهيان أن يكونا شهداء جنازته فقال أحدهما : (( من يقتله بطنه ، لم يعب في قبره )) فقال الآخر : بلی ! رواة للآخر : ألم يقل ممول الله النسائی

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আমি বসে ছিলাম আর সোলাইমান বিন সুরদ ও খালেদ বিন আরফাতা এক মৃত ব্যক্তির কথা আলোচনা করছিল যে পেটের রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তারা কামনা করছিল যে ঐ ব্যক্তির জানাযায় অংশ গ্রহণ করবে। তখন তাদের একজন অপরজনকে বললঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেন নাই যে, পেটের রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। সে কবরে আযাবের সম্মুক্ষীন হবে না। (নাসায়ী)[4]

নোটঃ যুদ্ধের ময়দানে শহিদ হওয়া ছাড়াও পেটের রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ কারী সম্পর্কেও যেহেতু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে বলে সু সংবাদ দিয়েছেন, তাই উলামাগণ শহিদের অন্যান্য স্তর সম্পর্কেও এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ঐ শহিদগণও ইনশাআল্লাহ কবরের আযাব থেকে নিরাপদ থাকবে। আল্লাহই এব্যাপারে ভাল জানেন।

ফুটনোট

[1] - আলবানী সংকলিত সিলসিলাতু আহাদীস আস সহীহা ৩য় খন্ড হাদীস নং- ১১৪০।

[2] - জামে তিরমিযী, কিতাবুল জানায়েয, বাবু মাজায়া ফীমান ইয়ামুতু ইয়াওমুল জুমআ।

[3] - আলবানী সংকলিত সিলসিলাতু আহাদীস আস সহীহা ৩য় খন্ড হাদীস নং- ১১৪০।

[4] - কিতাবুর জানায়েয বাবু মান কাতালাহু বতনুহু (৯ ১৯৩৯/২)

৩৯
শহিদের অন্যান্য স্তরসমূহ নিম্নরূপ
১ -প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ কারী।

২-পেটের রোগে রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ কারী।

৩ - পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ কারী।

৪ - দেয়ালের চাপে পরে মৃত্যুবরণ কারী।

৫ - প্রসূতী অবস্থায় মৃত্যুবরণ কারী।

৬ - আগুণে পুড়ে মৃত্যুবরণ কারী।

৭ - নিমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ কারী। (ইবনে মাযাহ)

৮ - নিজের সম্পদ সংরক্ষন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ কারী।

৯ - নিজের সন্তানদেরকে সংরক্ষন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ কারী।

১০ - নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ কারী।

১১ - দ্বীনকে সংরক্ষন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ কারী।

১২ - জুলুমের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ কারী।

১৩ - খালেছ অন্ত করনে শাহাদাতের দূয়া কামনা কারী। (মুসলিম)

১৪ - সকাল সন্ধায় সূরা হাশরের তিন আয়াত পাঠ কারী। (তিরমিযী, দারেমী)

৪০
কবরে শরীরের অবস্থা
মাসআলা-১৪০ আম্বীয়া আলাইহিস্‌সালাম গণের শরীর কবরে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে।

، قال : قال رسول الله : (( إن من أفضل ايامكم يوم الجمعة فيه عن أوس بن أوس وفيه النفخة ، وفيه الصفقة ، فأكثروا على من الصلاة فيه فإن صلاتكم خلق آدم وفيه قبض وكيف تعرض صلاتنا علیک وقد أرمت ؟ معروضة على )) قال : قالوا يا رسول الله قال يقولون بليت فقال : (( ان الله عز وجل حرم على الأرض اجساد الأنبياء )). رواه ابوداؤد

অর্থঃ আবদুল্লাহ্ বিন আওস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দিন সমূহের মধ্যে জু‘মার দিন উত্তম, এদিনে আদম আলাইহিস্‌সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং এ দিনেই তাকে মৃত্যু দেয়া হয়েছে, আর এদিনেই সিঙ্গায় ফু দেয়া হবে এবং এদিনেই পুনরুত্থান হবে। অতএব এদিন আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর। কেননা তোমাদের দরূদ সমূহ আমার নিকট পেশ করা হয়। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের দরূদ সমূহ কি করে আপনার নিকট পেশ করা হবে অথচ আপনার হাড্ডি সমূহ গলে যাবে, অথবা আপনার শরীর মাটি হয়ে যাবে। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ নবীগণের শরীরকে মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (আবুদাউদ)[1]

মাসআলা-১৪১ ওলী ও শহিদ গনের মধ্য থেকে যাদেরকে যতক্ষন আল্লাহ চান তাদের শরীর ততক্ষন মাটিতে থেকেও সংরক্ষিত থাকে।

عن هشام بن عروة رحمه الله عن ابيه لما سقط عليهم الحائط في زمان الوليد بن عبدالملك أخذوا في بنائه فبدث لهم قذم ففزعوا و ظنوا أنها قدم النبي : فما وجذوا أحدا يعلم ذلك حتى قال لهم غيرو : لا والله ! ماهی قدم النبي ما هي الا قدم غمره . رواه البخارى

অর্থঃ হিশাম বিন ওরওয়া (রাহিমাহুল্লাহ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, ওলীদ বিন আবদুল মালেকের যুগে যখন আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহার) ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন তা সংস্কার করার সময় একটি পা দেখা গেল। এতে লোকেরা চিন্তিত হয়ে গেল এবং ভাবল যে এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পা হবে, কিন্তু তখন এমন কোন লোক পাওয়া যাচ্ছিল না যে, সনাক্ত করবে যে, এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পা কি না। ততক্ষনে ওরওয়া বিন যোবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এসে বললঃ আল্লাহর কসম এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পা নয়। বরং এটা ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) পা। (বোখারী)[2]

মাসআলা-১৪২ উহুদের যুদ্ধে শহিদ গণের লাশ ৪৬ বছর পরও তরুতাজা অবস্থায় পাওয়া গেছে।

عن عبد الرحمن ابن أبي صعصعة رحمه الله انه بلغة ان عمرو بن الجموح به و عبد الله بن الأنصاريين ثم الشليميين كانا فذ حفر الشيل من قبريهما و كان قبر اهما مما يلي السيل عمرو وكان في قبر واجد وهما من اشهد يوم أخد فخفر عنهمالبعيرا من مكانهما فوجدا لم يتغير اكائهما ماتا بالأمس وكان أحدهما قد جرح فوضع يده على جرحه فذفن و هو كذلک فاط يده ع جرحه ثم أرسلت فرجعت كما كانت وكان بين أخي و بين يوم خفر عنهما ست و أربعون سنة . رواه مالك

আবদুর রহমান বিন আবু সা’সা (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত যে আমর বিন জুমুহ এবং আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তারা উভয়ে উহুদের যুদ্ধে শহিদ হয়েছে, পানির স্রোতে তাদের কবর ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল, তাদের উভয়কে একই কবরে দাফন করা হয়ে ছিল, তখন তাদের কবর খনন করা হল যাতে তাদের মৃতদেহ অন্যত্র স্থানান্তর করা যায়। তাদের উভয়ের মৃত দেহে কোন প্রকার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় নাই। বরং দেখে মনে হচ্ছিল যে তারা যেন গতকাল শহিদ হয়েছে। তাদের উভয়ের একজনের শরীরে যখন যখম লাগল তখন তিনি ব্যাথায় সেখানে হাত রাখলেন, তাকে অন্যত্র দাফন করার সময় লোকেরা তাঁর হাত ওখান থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইল কিন্তু হাত ওখানেই থেকে গেল। এ কবর খননের ঘটনা ঘটেছিল উহুদ যুদ্ধের চল্লিশ বছর পর। (মালেক)[3]

মাসআলা-১৪৩ নবীগণ ব্যতীত অন্য লোকদের শরীর মেরুদন্ডের হাড্ডি ব্যতীত সমস্ত শরীর মাটি হয়ে যায়।

(( ليس شيء من الانسان الا يبلی ا عظما عن أبي هريرة ، قال : قال رؤل الله واجدا وهو عجب الأب ومن يركب الخلق يوم القيامة )). رواه ابن ماجة ( صحيح )

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষের শরীরের একটি হাড্ডি ব্যতীত সরীরের সমস্ত হাড্ডি মাটি হয়ে যায়। আর তাহল মেরুদন্ডের হাড্ডি। কিয়ামতের দিন তা থেকেই মানুষকে পুনরুত্থান করা হবে। (ইবনে মাযাহ)[4]

ফুটনোট

[1] - সহীহ সুনানে আবিদাউদ লি আলবানী ১ম খঃ হাদীস নং- ৯২৫।

[2] - কিতাবুল জানায়ে বাবু মাযায়া ফী কবরিন ন্নাব্বীয়ী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

[3] - কিতাবুল জিহাদ, বাবু দাফনি ফী কবরিন ওয়াহেদ মিন জরুরা।

[4] - কিতাবুযযুহদ বাবু যিকরিল কাবরি ওয়াল বালা। (৩৪৪১/২)

৪১
মানব দেহ থেকে বের হওয়ার পর রুহ কোথায় থাকে?
মাসআলা-১৪৪ মৃত্যুর পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রুহ আল্লাহর আরশের নিকটবর্তী জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে আছে।

إذا صلى صلاة اقبل علينا بوجهه فقال (( من ، قال كان النبى عن سمرة بن جندب ب رای تکم الليلة ويا ) قال : فإن اى احد قصها ، فيقول (( ما شاء الله )) فالنا يوما فقال ( قال أحدهما ) (( هل وای منکم اذا ؟ )) قلنا : لا، قال لكني رأيت الليلة رجلين إنباتی انا جبريل وهذا ميگايل ارفع رأسك فرفعت رأسي فودا فوقى مثل السحاب قالا : ذلك ، فقلت : انى دخل منزلى ، قالا : إنه بقى لك غمز لم تستكمله لواشتملت اتيت منزل ملک . رواه البخارى

অর্থঃ সমুরা বিন জুনদাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফযর নামাযের পর আমাদের দিকে মোখ ফিরিয়ে বলতেন আজ রাতে তোমাদের মধ্যে কি কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ। (বর্ণনা কারী বলেন) যদি কেউ কোন স্বপ্ন দেখত তাহলে তা বলত, আর তিনি তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তার ব্যাখ্যা করতেন। এক দিন তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ। আমরা বললাম না। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম যে আমার নিকট দুইজন লোক এসেছে এবং তাদের একজন বলছে আমি জিবরীল আর সে মিকাঈল, তুমি তোমার মাথা উঠাও আমি আমার মাথা উঠিয়ে দেখছি যে আমার মাথার উপর বাদলের ন্যায় একটা কিছু, তখন তারা উভয়ে আমাকে বললঃ জান্নাতে এটা আপনার স্থান। আমি বললাম যে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও আমি আমার অবস্থান স্থল একটু দেখে আসি, তখন তারা বললঃ এখনো আপনার হায়াত বাকী আছে আপনি তা এখনো পুরণ করেন নাই, যদি আপনি তা পুরণ করতেন তা হলে আপনি আপনার অবস্থান স্থলে পৌঁছে যেতেন। (বোখারী)[1]

মাসআলা-১৪৫ কোন কোন ঈমানদারের রুহ জান্নাতে অবস্থান করে।

عن عبد الرحمن بن كعب الانصاری به أنه أخبره أن أباه كان يحدث أن رسول الله قال (( إنمائمة المؤمن طائر يعلق في شجر الجنة حتى يرجع إلى جسده يم يع )). رواه ابن ماجة

অর্থঃ আবদুর রহমান বিন কা’ব আল আনসারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন যে তার পিতা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বর্ণনা করত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত্যুর পর মোমেন ব্যক্তির রুহ জান্নাতের বৃক্ষসমূহে উড়ে বেড়ায়। পুনরুত্থানের দিন ঐ রুহ সমূহ তাদের শরীরে ফেরত দেয়া হবে। (ইবনে মাযাহ)[2]

মাসআলা-১৪৬ কোন কোন মোমেন ব্যক্তির রুহ কিয়ামত পর্যন্ত ইল্লিয়ীনে অবস্থান করে।

নোটঃ ২৭ নং মাসলার হাদীস দেখুন।

মাসআলা-১৪৭ শহীদদের রুহ সমূহ পাখীর আকৃতিতে জান্নাতের মধ্যে এমন ফানুশের মধ্যে থাকবে যা আল্লাহর আরশের সাথে জুলন্ত আছে।

، قال النا عبدالله يزيد عن هذه الأية ولا تحسبن الذين قتلوا في سبيل عن مسروق الله امواتا بل أحياء عند ربهم يرزقون به، قال أما أنا قد سألنا عن ذلك فقال (( اژ و اخهم في جوف طير خضر، لها قناديل معلقة بالعرش تسرع من الجنة حيث شاءت ثم تأوي إلى تلك القناديل قاطلع إليهم ربهم اطلاعة فقال : هل تشتهون شيئا ؛ قالوا ای شئ نشته؟ و رخ من الجنة حيث بيننا ، ففعل ذلک بهم ثلاث مرات ، فلما راو انهم لن يتركوا من نخ أن يألوا قالوا : يا رب ! تريد أن ترد ارواحنا في أجسادنا حتى نقتل في سبيلک ميزة أخرى فلما رأى أن ليس لهم حاجة تركوا )). رواه مسلم

অর্থঃ মাসরুক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা আবদুল্লাহকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, যারা আল্লাহর পথে শহিদ হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত মনে কর না বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। (সূরা আল ইমরান- ১৬৯)

তখন আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ আমি এ আয়াতের ব্যাখ্যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেছি, তখন তিনি বলেছেন, শহিদদের রুহ সমূহ সবুজ পাখির আকৃতিতে এমন এক ফানুসের মধ্যে থাকে যা আল্লাহর আরশের সাথে জুলন্ত আছে। যখন খুশি তখন জান্নাতে বেড়াতে বেড়িয়ে যায়, আবার ঐ ফানুসে চলে আসে। একদা তাদের প্রভূ তাদের প্রতি লক্ষ করে বললেনঃ তোমাদের কি মন চায়?

শহিদদের রুহ সমূহ বলল। আমরা জান্নাতের যেখানে খুশি সেখানে ঘুরেবেড়াই আমদের আর কি চাই। আল্লাহ তাদেরকে তিন বার এ প্রশ্ন করলেন, যখন শহিদদের রুহ সমূহ দেখল যে, উত্তর দেয়া ব্যতীত মুক্তি নেই তখন তারা বললঃ হে আমাদের প্রভূ আমরা চাই যে, আমাদের রুহ সমূহ আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হোক যাতে করে আমরা তোমার পথে দ্বিতীয় বার শহিদ হতে পারি, যখন আল্লাহ দেখলেন যে তাদের আর কোন আগ্রহ নেই তখন তিনি তাদেরকে ছেড়ে দিলেন। (মুসলিম)[3]

মাসআলা-১৪৮ কোন কোন শহিদদের রুহ সমূহ জান্নাতের দরজার সামনে ঝর্নার পারে সবুজ গুম্বুজের মধ্যে থাকে।

عن ابن عباس عنه قال : قال شول الله في (( الشهداء علی بارق نهر بباب الجنة في قبة خضرآء يخرج عليهم فهم بكره و نما » . رواه الحمد و الطبرانی و الحاكم ( حسن )

অর্থঃ ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শহিদদের রুহ সমূহ জান্নাতের দরজার পার্শ্বে প্রবাহ মান ঝর্নার পার্শ্বে অত্যন্ত সুন্দর গুম্বুজে থাকবে যেখানে তাদেরকে সকাল-সন্ধায় খাবার পরিবেশন করা হয়। (আহমদ, ত্বাবারানী, হাকেম)[4]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েয, বাবু মাকীলা ফি আওলাদিল মোশরেকীন, ২ নং অধ্যায়।

[2] - কিতাবুয যুহদ বাবু যিকরিল কাবরি। (৩৪৪৬/২)

[3] - কিতাবুল ইমারা, বাবু আন্না আরওয়াহাসসুহাদা ফীল জান্না।

[4] - সহীহুল জামে’ আসসগীর লি আলবানী। ৩য় খন্ড’ হাদীস নং- ৩৬৩৬।

৪২
রুহদের কি পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব?
মাসআলা-১৪৯ মৃত্যুর পর কোন নবী, ওলী, শহিদের রুহ পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব কি?

وَ جَآءَ مِنۡ اَقۡصَا الۡمَدِیۡنَۃِ رَجُلٌ یَّسۡعٰی قَالَ یٰقَوۡمِ اتَّبِعُوا الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿ۙ ۲۰﴾ اتَّبِعُوۡا مَنۡ لَّا یَسۡئَلُکُمۡ اَجۡرًا وَّ ہُمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ ﴿۲۱﴾ وَ مَا لِیَ لَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡ فَطَرَنِیۡ وَ اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۲۲﴾ ءَاَتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اٰلِہَۃً اِنۡ یُّرِدۡنِ الرَّحۡمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغۡنِ عَنِّیۡ شَفَاعَتُہُمۡ شَیۡئًا وَّ لَا یُنۡقِذُوۡنِ ﴿ۚ ۲۳﴾ اِنِّیۡۤ اِذًا لَّفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۲۴﴾ اِنِّیۡۤ اٰمَنۡتُ بِرَبِّکُمۡ فَاسۡمَعُوۡنِ ﴿ؕ ۲۵﴾ قِیۡلَ ادۡخُلِ الۡجَنَّۃَ ؕ قَالَ یٰلَیۡتَ قَوۡمِیۡ یَعۡلَمُوۡنَ ﴿ۙ ۲۶﴾ بِمَا غَفَرَ لِیۡ رَبِّیۡ وَ جَعَلَنِیۡ مِنَ الۡمُکۡرَمِیۡنَ ﴿۲۷﴾

অর্থঃ নগরীর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে আসল, সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! রাসূলদের অনুসরণ কর। অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চায়না এবং তারা সৎ পথ প্রাপ্ত। আমার কি হয়েছে যে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তীত হবে আমি তারই ইবাদত করব না? আমি কি তার পরিবর্তে অন্য মাবুদ গ্রহণ করব? দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইলে তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার ও করতে পারবে না। এরুপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, অতএব তোমরা আমার কথা শোন।

তাকে বলা হলঃ জান্নাতে প্রবেশ কর, সে বললঃ হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত। কি কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন। (সূরা ইয়াসীন -২০-২৭)

নোটঃ মৃত্যুর পর যদি রুহেরা পৃথিবীতে আসা এবং কারো সাথে কথা বার্তা বলা সম্ভব হত তাহলে মোমেন ব্যক্তি এ দুঃখ প্রকাশ করত না। হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত। কি কারনে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন।

মাসআলা-১৫০ কবরের প্রশ্ন উত্তরে কামিয়াব ও জান্নাতের নে’মত পাওয়ার পর মোমেন ব্যক্তি পৃথিবীতে পুণরায় এসে তার আত্মীয়- স্বজনদেরকে তার সু পরিনতির কথা জানানোর আশা প্রকাশ করে কিন্তু অনুমতি পায় না।

নোটঃ হাদীস মাসলা নং- ৪৮ এবং ১০০ দ্রঃ।

মাসআলা-১৫১ শাহাদাত বরণের পর শহিদের আত্মা পুণরায় দুনিয়ায় এসে আবারো শহিদ হওয়ার আশা ব্যক্ত করে কিন্ত অনুমতি পায় না।

নোটঃ হাদীস মাসলা নং- ১৪৭ দ্রঃ।

৪৩
কবরের আযাব ও সালফে সালেহীন
মাসআলা-১৫২ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের পর কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

নোটঃ হাদীস মাসলা নং- ৫৭ দ্রঃ।

মাসআলা-১৫৩ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহার) কবরের আযাবের ভয়।

নোটঃ হাদীস মাসলা নং- ১৩০ দ্রঃ।

মাসআলা-১৫৪ ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের আযাবের ভয়ে এত কাপঁতেন যে তার দাড়ি ভিজে যেত।

عن هانی مولی عثمان بنه قال : كان عثمان إذا وقف على قبر کی حتى يبل إيثة ، فقيل له : ذكر الجنة والنار ، فلا تبكى وتى من هذا ؟ فقال : ان رؤل الله ، قال : (( اين القبر أول منزل من منازل الأخرة، إن نجا منه فما بعده أيسر منه وان لم ينج منه فما بعده أ نه ، قال : وقال وشؤل الله صلى الله عليه وسلم (( مارأيت منظرا قط إلا و القبر أفظع منه )). رواه الترمذی ( حسن )

অর্থঃ হানী মাওলা ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন কোন কবরের পার্শ্বে দাড়াতেন তখন কাঁদতে কাঁদতে তার দাড়ি ভিজে যেত, তাকে জিজ্ঞেস করা হল যে, আপনি জান্নাত জাহান্নামের কথা স্মরণ করেন তখন এত কাদেন না অথচ কবরের কথা স্মরণ করে এত কাদেন? তিনি বললেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবর পরকালের স্তর সমূহের মধ্যে প্রথম স্তর, যদি এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তাহলে পরবর্তী স্তর সমূহ সহজ হবে। আর যদি এখান থেকে মুক্তি না পাওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী স্তর সমূহ আরো কঠিন হয়ে যাবে। বর্ণনা কারী বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ কবরের চেয়ে চিন্তনীয় আর কোন স্থান আমি আর কখনো দেখি নাই। (তিরমিযী)[1]

মাসআলা-১৫৫ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের কথা বর্ণনা করলে সাহাবাগণ ভয়ে উচ্চ কণ্ঠে কাঁদতে শুরু করতেন।

فكر الفتنة التى يفتن بها عن أسماء بنت ابی بر رضي الله عنها قالت : قام شول الله الم في قبره فلما ذكر ذلک، ضج المسلمون ضجة خال بيني وبين أن أفهم كلام رسول فلما گئث ضجتهم ، ل لرجل قريب من : أي بارك الله لك ، ماذا قال ترشول الله في آخر قوله ؟ قال : (( قد أوحى إلى انكم تفنون في القبور ، قريبا من فتنة الدجال )). الله رواه النسائي

অর্থঃ আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে ঐ ফিতনার কথা বর্ণনা করতে লাগলেন প্রত্যেক মানুষ কবরে যে ফেতনার সম্মুক্ষীন হবে। যখন তিনি কবরের ফেতনার কথা বর্ণনা করতে শুরু করলেন তখন মোসলমানরা অত্যান্ত করুন ভাবে কাঁদতে শুরু করল, এতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। যখন তাদের কান্না থামল, তখন আমি আমার পাশ্ববর্তী লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবশেষে কি বললেন? সে বললঃ আমার নিকট ওহী করা হয়েছে যে, তোমরা কবরে ফেতনার সম্মুক্ষীন হবে। যা দাজ্জালের ফেতনার কাছাকাছি হবে। (নাসায়ী)[2]

خطيبا فكر فتنة القبر التى عن أسماء بنت ابی بکر رضى الله عنها تقول : قام شول الله يتبين فيها المتر فلما كر ذلك ضج الليمون ضجة . رواه البخاری

অর্থঃ আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়িয়ে ঐ ফিতনার কথা বর্ণনা করতে লাগলেন, প্রত্যেক মানুষ কবরে যে ফেতনার সম্মুক্ষীন হবে। যখন তিনি কবরের ফেতনার কথা বর্ণনা করতে শুরু করলেন তখন মোসলমানরা অত্যান্ত করুন ভাবে কাঁদতে শুরু করল। (বোখারী)[3]

মাসআলা-১৫৬ আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর সময় শেষ পরিনতির কথা স্মরণ করে দীর্ঘক্ষন কাপঁতে ছিলেন।

মাসআলা-১৫৭ আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের প্রশ্ন উত্তরের ভয়ে স্বীয় সন্তানদেরকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, আমাকে দাফনের পর দীর্ঘক্ষন আমার কবরের পার্শ্বে দাড়িয়ে দূয়া করবে।

ال۔ عن ابن شماسة المهري قال : حضرنا عمرو بن العاص نه و هو فى سياقة الموت يكى طويلا و خؤل وجهه إلى الجدار ، فجعل ابنه يقول : يا أبتاه ! أما بشرک زشؤل الله بگذا؟ أما بشرك و الله بگذا؟ قال : قال بوجهه وقال : اين أفضل ما تعد شهادة أن لا إله الا الله وأن محمدا رول الله اني قد غلى اطباق ثلا لقد رأی و ما أحد أشد بغضا لشؤل الله مني، ولا أحب إلى أن أكون قد اشتمكن من قتلته منه ، قوم على تلك الحال لكن من أهل النار، فلما جعل الله الإسلام في قلب ات النبي فقلت : أينشط يمينگ فايفك بسط يمينه ، قال : فقبضت يدي، قال (( ما لك يا عمرو؟ )) قال قلت : أردت أن أشترط ، قال (( تشترط بماذا؟ )) قلت : أن يغفرلى ، قال (( أما علمت يا عمرو ؟ أين الإسلام يهدم ما كان قبله ؟ و أن الهجرة تهدم ما كان قبلها ؟ و أين الحج يهدم ما كان قبله؟ )) و ما كان أحد أب إلى من ترشول الله ولا جل في غنى منه ، وما أطيق آن ام عينى منه إجلالا له ، ولو ث أن أصقه ما اطق لاني لم اكن آمأعين منه ، و لو مضى على تلك الحال جو ان اكون من أهل الجنة ، ثم ولينا اشياء ما أدري ما خالتي فيها ، فادا انا م فلا تضحی ناخة ولا ناز فاذا دقتمونى و على الراب ا . ثم أقيموا حول قبر قدر ما تنحر جزوز و بنفسم تخمها حتی آسانس بكم ، و انظر ماذا راجع به ژل ربی . رواه مسلم

অর্থঃ সমাসা বিন মেহরী বলেনঃ আমরা আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) মৃত্যুর সময় তার নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিনি দীর্ঘক্ষন যাবত কাঁদতে কাঁদতে দেয়ালের দিকে মোখ ফিরালেন, তার ছেলেরা বললঃ হে আব্বা! রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনাকে এই এই সুসংবাদ দেয় নাই? তখন আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার চেহারা সামনের দিকে আনলেন এবং বললেনঃ আমরা কালেমায়ে শাহাদাত “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এ স্বীকৃতিকে সর্বোত্তম কথা বলে মনে করতাম, আমার তিনটি অবস্থা অতিক্রম হয়েছে, প্রথমতঃ তখন আমি কাওকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেয়ে অধিক খারাপ মনে করতাম না। আর আমি খুবই আশান্বিত ছিলাম যে, আমি তাকে হাতের কাছে পেলে কতল করব। ঐ অবস্থায় যদি আমি মৃত্যু বরণ করতাম তাহলে আমি জাহান্নামী হতাম। দ্বিতীয়তঃ যখন আল্লাহ আমার অন্তরে ইসলামের মোহাব্বত জাগ্রত করলেন, আর আমি তখন তার নিকট উপস্থিত হলাম এবং বললাম যে আপনার হাত প্রসারিত করুন, তিনি তার হাত প্রসারিত করলেন, তিনি তার ডান হাত প্রসারিত করলেন তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম, তিনি বললেন হে আমর কি হয়েছে? আমি বললাম যে আমি একটি শর্ত করতে চাই।

তিনি বললেনঃ কি শর্ত? আমি বললাম আমার গোনাহ সমূহ ক্ষমার শর্ত! তিনি বললেনঃ হে আমর তুমি কি জাননা যে, ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হিযরত করলে পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হজ্ব করলে পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে যায়। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আমার এত বেশি মোহাব্বত জাগল যে, এত বেশি মোহাব্বত আর কারো প্রতি আমার ছিল না। আর তিনি আমার নিকট এমন এক গুরুত্ব পূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন, যে এর চেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ আর কেউ ছিল না। আমি তাঁর মর্যাদা ও ভয়ে তার দিকে নয়ন ভরে কখনো তাকাই নাই। ঐ অবস্থায় যদি আমি মৃত্যু বরণ করতাম তাহলে আমি আশান্বিত ছিলাম যে, আমি জান্নাতী হব। কিন্ত এর পর আমি কিছু পার্থিব কাজে নিমগ্ন হয়ে গেছি, তাই আমি বুঝতেছিনা যে এ তৃতীয় স্তরে এসে আমার পরিনতি কি হবে? তাই আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তখন যেন আমার জন্য কোন মহিলা কান্নাকাটি না করে, আর আমার লাশের সামনে যেন কেউ আগুণ জ্বেলে বসে না থাকে।

আর যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে তখন ভাল করে কবরে মাটি দিবে, এবং আমার কবরের পার্শ্বে এত দীর্ঘক্ষন দাড়িয়ে দূয়া করবে, যতক্ষন কোন উট কোরবানী করে তার গোশত বন্টন করা যায়। যাতে আমি আত্ব তৃপ্তি লাভ করতে পারি এবং বুঝতে পারি যে আমার প্রভূর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতার প্রশ্নের কি উত্তর দিব? (মুসলিম)[4]

নোটঃ উল্লেখ্য যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বহু স্থানে আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) প্রশংসা করেছেন, একদা বলেছেন যে, আমর সত্য মোমেন, একদা বলেছেন আমর বিন আস কোরাইশদের সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত। একদা তার জন্য এ দুয়া করলেন যে, হে আল্লাহ্ আমর বিন আসকে ক্ষমা কর। অন্য এক সময় তার জন্য এ দূয়া করলেন হে আল্লাহ্ আমরের প্রতি রহম কর। (আল্লাহ্ ই এব্যাপারে ভাল জানেন।)

মাসআলা-১৫৮ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খচ্চর কবরের আযাব শোনে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গিয়ে ছিল। তখন তিনি তাঁর সাহাবাগণকে কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিলেন।

عین الخدرى عن زيد بن ثابت رضی الله عنهما قال أبو سعيد بينه و لم اشهدة عن ابی فى حائط لبني النجار على تعلة له من النبى ا ولكن حده زيد بن ثابت عنه قال بينما النبى ونحن معه إثر حادث به فكادت تقيه وادا ازية أو خمسة أو أربعة قال كذا كان يقول الجبير فقال : (( من يعرف أصحاب هذه الاقبر؟ )) قال رجل : أنا ، قال : (( قمتی مات هؤلاء؟ )) قال : ماتوا في الإشتراك فقال (( إن هذه الأمة بتلى في بورها لولا أن لا تدافا تدعو الله أن من عذاب القبر الذي اسمع منه )) مممم اقبل علينا بوجهه فقال : (( تعودوا بالله من عذاب النار )) فقالوا : تعود بالله من عذاب النار فقال : (( تعوا بالله من عذاب القبر )) قالوا تعود بالله من عذاب القبر قال : (( تعوا بالله من الفتن ما ظهر منها وما بطن، قالوا نعود بالله من الفتن ما ظهر منها وما بطن قال : (( تعوا بالله من فتنة الدجال )) قالوا نعود بالله من فتنة الدجال . رواه مسلم

অর্থঃ আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে আমি এ হাদীস সরাসরি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনি নাই। বরং যায়েদ বিন সাবেত (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে শুনেছি আর তিনি বর্ণনা করেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা বানী নাজ্জারের একটি বাগানে একটি খচ্চরের উপর আরোহন করে যাচ্ছিলেন, আমিও তাঁর সাথে ছিলাম, হটাৎ তাঁর খচ্চরটি তাঁকে পিঠ থেকে ফেলে দিতে চাচ্ছিল। ওখানে ৬টি বা ৫টি বা ৪টি কবর ছিল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, যে এ কবর বাসীদের সম্পর্কে কি কেউ জানে? যে তারা কারা? এক ব্যক্তি বলল আমি জানি! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তারা কখন মৃত্যু বরণ করেছে। সে বলল শিরকরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে।

তখন তিনি বললেনঃ তারা কবরে পরিক্ষিত হচ্ছে, যদি আমার এ আশঙ্কা না থাকত যে, তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা ছেড়ে দিবে না, তাহলে আমি আল্লাহর নিকট দূয়া করতাম যে তিনি যেন তোমাদের কেও কবরের আযাব শোনায় যেমন আমি শুনি। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ জাহান্নামের আগুণ থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। লোকেরা বললঃ আমরা জাহান্নামের আগুণ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ কবরের ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। লোকেরা বললঃ আমরা কবরের ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। লোকেরা বললঃ আমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফেতনা থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। লোকেরা বললঃ আমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (মুসলিম)[5]

মাসআলা-১৫৯ আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবর ও আখেরাত সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খোৎবা শোনে এ আকাঙ্খা প্রকাশ করলেন যে, হায়! যদি আমি কোন বৃক্ষ হতাম আর মানুষ আমাকে কেটে ফেলত তাহলে কতইনা ভাল হত।

নোটঃ হাদীস মাসলা নং- ৭০ দ্রঃ।

মাসআলা-১৬০ কবরের ভীতি থেকে বাঁচার ব্যাপারে আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) উপদেশঃ

اين بار برندگان قول یا ایها الناس إنى لكم ناصح اى عليكم شفيق ، صلوا في ظلمة الليل يؤشة القبور . ذكره أبو نعيم

অর্থঃ আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন হে লোক সকল আমি তোমাদের কল্যাণ কামী এবং তোমাদের প্রতি সদয়, কবরের একাকীত্ব থেকে বাঁচার জন্য রাতের অন্ধকারে নামায পড়। (তাহাজ্জদ নামায)

মাসআলা-১৬১ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর সময় এ দীর্ঘ সফরে পাথেয়র অভাবে কাঁদতে ছিল।

أن أبا هريرة عنه بگی في مرضه فقيل ما يبكيك؟ فقال أما إني لا ابكي على دنیام هډه و لكن انك على بعد قرى و قلة ادبی و انى امسيت ف صعود مهبطة على جنة ونار لا أدري على أيهما يوخنی

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যু সয্যায় সায়িত অবস্থায় খুব কাঁদতে ছিলেন। লোকেরা জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কাদঁছেন কেন? তিনি বললেনঃ আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি এজন্য কাঁদছি না, বরং আমি কাঁদতেছি এজন্য যে এ দীর্ঘ সফরে আমার পাথেয় সল্প। আমি এমন এক অবস্থায় এসে উপনিত হয়েছি, যে আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম অথচ আমি জানিনা যে এ উভয়ের মধ্যে আমার ঠিকানা কোথায়?

মাসআলা-১৬২ কবরের কথা স্মরণ করে মালেক বিন দীনার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গিয়ে ছিলেন।

قال مالك بن دينار عجبا لمن يعلم أن الموت مصيرة ، و القبر مؤرده ، كيف تق بالدنيا حتى يسقط مغشيا عليه عينه و كيف يطيب فيها عيشة ؟ قال ثم يبكى مالك

অর্থঃ মালেক বিন দীনার বলেনঃ আশ্চার্য লাগে ঐ ব্যক্তিকে দেখে যে জানে যে, মৃত্যু তার শেষ পরিনতি, আর কবর তার ঠিকানা, কি করে সে পৃথিবীতে আত্মা তৃপ্তী লাভ করে, বর্ণনা কারী বলেনঃ মালেক বিন দীনার একথা বলে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গিয়ে ছিলেন (সাফওয়া তৃতীয় খন্ড পৃঃ৩৪)

ফুটনোট

[1] - আবওয়াবুযযুহদ, বাবু মাযায়া ফী ফাযায়ীল কবরি.....

[2] - কিতাবুলজানায়েজ, বাবুত তাওয়াউজ মিন আযাবিল কবর। (২/১৯৪৯)

[3] - কিতাবুলজানায়েজ, বাবুত মাযায়া ফী আযাবিল কবর। (২/১৯৪৯)

[4] - কিতাবুল ঈমান, বাবু কাওনিল ইসলাম ইয়াহদিমু মা কাবলাহু, ওয়া কাযাল হিযরা।

[5] - কিতাবুল জান্না ওয়া নায়ীমিহা! বাবু আরযির মাকআদে আলাল মায়্যিতি ওয়া আযাবিল কবরি।

৪৪
কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা
মাসআলা-১৬৩ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্ন লিখিত শব্দ সমূহের মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেনঃ

، قال كان رسول الله . يذعر (( اللهم انی اعوذبک من عذاب القبر و عن أبي هريرة من عذاب النار و من فتنة المحيا و الممات و من فتنة المسيح الدجال )). رواه البخار

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্ন লিখিত শব্দ সমূহের মাধ্যমে দূয়া করতেন। হে আল্লাহ্ আমি কবরের আযাব ও জাহান্নামের আগুণ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (বোখারী)[1]

মাসআলা- ১৬৪ কবরের আযাব থেকে ক্ষমা প্রার্থনার আরো একটি দূয়া।

عن عائشة رضي الله عنها أنها قالت : قال رسول الله : (( اللهم رب جبرائیل و میکائیل و رب ارافيل أعوذبک من حر النار ومن عذاب القبر )). رواه النسائی ( صحیح )

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ হে জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভূ, আমি জাহান্নামের আগুণ ও কবরের আযাব থেকে তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (নাসায়ী)[2]

নোটঃ মক্কার মোশরেকরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বা তাঁর কন্যা বলে বিশ্বাস করত। দূয়ার শুরুতে জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভূ বলে তিনি মোশরেকদের আকীদার ভ্রান্তির অপনোদন করছেন। যে এ ফেরেশতাগণ আল্লাহর মেয়ে বা তার সমকক্ষ নয়। বরং তাঁর একটি দূর্বল সৃষ্টি, আর তিনি তাদের সৃষ্টি কর্তা ও মালিক, তাই এ শব্দসমূহের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে কোন ওসীলা হিসেবে স্মরণ করেছেন এ অর্থ বুঝা ভুল।

মাসআলা-১৬৫ কবরের ফেতনা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দূয়া নিম্নরূপঃ

يقول في صالاتنه (( اللهم انی اعوذبک من فتنة قال سمعت أبا القاسم عن أبي هريرة القبر ومن فتنة الدجال ومن فتنة المحيا و الممات و من حرجهم )). رواه النسائی ( صحيح )

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে নিম্ন লিখিত শব্দ সমূহের মাধ্যমে দূয়া করতেন। হে আল্লাহ্ আমি কবরের ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং জীবন মৃত্যুর ফেতনা ও জাহান্নামের আগুণ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (নাসায়ী)[3]

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েয, বাবুত্তাওয়াউজ মিন আযাবির করি!

[2] - কিতাবুর ইস্তেআযা, বাবুল ইস্তেআজা মিন হাররিন্নার (৫০৯২/২)

[3] - কিতাবুর ইস্তেয়াযা বাবুল ইস্তেয়া মিনান্নার (৫০৯৩/২)

৪৫
কবর বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা?
মাসআলা-১৬৬ কবরস্থানে গিয়ে অথবা কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় নিম্ন লিখিত দূয়া করা উচিতঃ

عن بريدة أنه قال : كان رشول الله يعلمهم اذا خرجوا إلى المقابر فكان قائلهم ، يقول : (( السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين و المسلمين و انا ان شاء الله بكم للاحقون اسال الله لنا ولكم العافية )). رواه مسلم

অর্থঃ বুরাইদা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ কবর স্থানে বের হওয়ার সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে এ দূয়া শিক্ষা দিতেন। এ ঘরের মোসলমান ও মোমেন অধিবাসীরা তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আমরাও তোমাদের সাথী হব ইনশাআল্লাহ। আমি আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য কল্যাণ ও ক্ষমার দূয়া করছি। (মুসলিম)[1]

মাসআলা-১৬৭ কবর বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দ্বিতীয় দূয়াঃ

كما كان ليلتها من رسول الله عن عائشة رضي الله عنها أنها قالت : كان رسول الله لا يخرج من آخر الليل إلى البقيع فيقول : (( اللام عليكم دار قوم مؤمنين و اتاكم ما توعدون غذا مؤجلون و انا ان شاء الله بكم لاحقون اللهم اغفر لأهالي بقيع الغرقد )). رواه مسلم

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে রাতে আমার এখানে থাকতেন ঐ রাতের শেষ অংশে বাকী (কবরস্থানের) উদ্দেশ্যে বের হতেন, এবং ওখানে গিয়ে বলতেনঃ এ কবরস্থানের মোমেনদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের যে অঙ্গিকার দেয়া হয়েছিল তার কিছু তোমরা পেয়েছ, আর বাকী অংশ কিয়ামতের দিন পাবে। আমরাও তোমাদের সাথী হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ্ এ বাকীউল গারকাদে শায়ীতদেরকে ক্ষমা কর। (মুসলিম)[2]

ফুটনোট

[1] - কিতাবল জানায়েয, বাবু মা ইয়াকুলু ইন্দাল কুবুরি ওয়াদ্দূয়ায়ী লি আহলিহা।

[2] - কিতাবল জানায়েয, বাবু মা ইয়াকুলু ইন্দাল কুবুরি ওয়াদ্দূয়ায়ী লি আহলিহা।

৪৬
বিভিন্ন মাসায়েল
মাসআলা-১৬৮ কোন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ভ্রমণ কারী ভ্রমণ রত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতী হবেঃ

عن عبدالله بن عمرو ، قال : مات رجل بالمدينة من ولذ بها فصلى عليه رسول الله با ؟ قال : (( ان الرجل اذا ثم قال : (( يا ليته مات بغير مولده )) قالوا : ولم ذاک یا رسول الله مات بغير مولده فيس له من مؤيده إلى منقطع اثره ، في الجنة )). رواه النسائی ( حسن )

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ মদীনা বাসীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ওখানে মৃত্যুবরণ করল, আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযা পড়ালেন, অতঃপর বললেনঃ হায়! এ ব্যক্তি যদি মদীনায় মৃত্যুবরণ না করে অন্য কোথায় ও মৃত্যু বরণ করত। সাহাবাগণ বললেনঃ কেন হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি - ওয়া সাল্লাম)। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি কোন ব্যক্তি তার জন্ম স্থান ব্যতীত অন্য কোথায় ও মৃত্যুবরণ করে তা হলে তার জন্ম স্থান থেকে তার মৃত্যু স্থলের দূরত্ব সমপরিমান জায়গা তাকে জান্নাতে দেয়া হয়।[1]

মাসআলা-১৬৯ মোমেন ব্যক্তির মৃত্যু স্বয়ং মৃত ব্যক্তির জন্য আরামের কারণ হয় পক্ষান্তরে ফাসেক ব্যক্তির মৃত্যু সমস্ত সৃষ্টিজীব চতুষ্পদ প্রাণী, পাথর বৃক্ষ সকলের আরামের কারণ হয়।

ما عليه بجنازة قان (( متريخ و مترات منة )) قالوا : يا عن أبی قتادة بينه أن رسول الله المستريح و المستراح منه ؟ قال : رر العبد المؤمن يشتريخ من نصب الدنيا و اذاها ممول الله إلى رحمة الله عزوجل و العبد الفاجر يستريح منه العباد و البلاد و الشجر والذوا )). رواه البخاري

অর্থঃ আবু কাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি বললেনঃ আরাম প্রাপ্ত না আরাম দাতা? সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ আরাম প্রাপ্ত এবং আরাম দাতার অর্থ কি? তখন তিনি বললেনঃ মোমেন ব্যক্তি মৃত্যুর পর পৃথিবীর দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতে আরামে থাকে, আর ফাসেকের মৃত্যুর পর মানুষ, শহর, চতুষ্পদ জন্তু আরাম ভোগ করে। (বোখারী)[2]

মাসআলা-১৭০ কোন ব্যক্তির নিকট উপদেশ মূলক কোন কিছু থাকলে তার উচিত তা লিখে সাথে রাখাঃ

عن ابن عمر رضي الله عنهما : ان رسول الله ؟ قال (( ما حق امری مسلم له شيء يوصی فيه يي ليلتين الأو وصيتة مكتوبة عنده )). متفق عليه

অর্থঃ ইবনে ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তির নিকট উপদেশ মূলক কোন কিছু থাকলে তা লিখা ব্যতীত দুই রাত অতিক্রম করা তার উচিত নয়। (বোখারী ও মুসলিম)[3]

মাসআলা-১৭১ বৃদ্ধ বয়সে দীর্ঘায়ু কামনা বৃদ্ধি পায়ঃ

قال وریفرم ابن آدم و پشت منه اثنتان : الحرص على الغمر عن انس بنه أن رسول الله و الحرص على المال )). رواه الترميى

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনিত হয় তখন তার মধ্যে দুটি কামনা যৌবন পায় আয়ু বৃদ্ধি ও সম্পদ। (তিরমিযী)[4]

মাসআলা-১৭২ মৃত্যুর পূর্বে সৎ আমলের সুযোগ পাওয়া আল্লাহর অনুগ্রহঃ

أن النبي و قال (( اذا أراد الله بعبد خيرا استعملة ) قيل : كيف يستعمله؟ عن أنس قال ( يوفقه لعمل صالح قبل الموت )). رواه الحاكم

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন আল্লাহ কোন বান্দার ভাল কামনা করেন তখন তার কাছ থেকে কাজ আদায় করেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল যে, কিভাবে আল্লাহ কাজ আদায় করে নেন? তিনি বললেনঃ মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ্ তাকে সৎ কাজের তাওফীক দান করেন। (হাকেম)[5]

মাসআলা-১৭৩ মৃত্যু মোমেনের জন্য ফেতনার চেয়ে উত্তমঃ

قال ( راثنتان ي ههما ابن آدم يكره الموت و المؤث عن محمود بن لبيبر یا النبي ه قلة المال و قلة المال أقل للحساب )). رواه أحمد ير للمؤمن من الفتنة و ي

অর্থঃ মাহমুদ বিন লাবীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দুটি বিষয়কে আদম সন্তান অপছন্দ করে, (তার মধ্যে একটি হল মৃত্যু) অথচ মৃত্যু মোমেনের জন্য ফেতনা থেকে উত্তম। (অপরটি হল) সম্পদের সল্পতা অথচ সম্পদের সল্পতা হিসাবের দিক থেকে সহজ। (আহমদ)[6]

মাসআলা-১৭৪ মৃত্যুর পর একমাত্র মানুষের আমল ই তার সাথে থাকবে?

ه قال : قال رؤ الله خر (( يتبع الميت ثلاثة فيرجع اثنان ويبقى واحد ع آن يتبعه أهله وماله وعمله فيرجع أهله و ماله و يبقى عمله )). متفق عليه

অর্থঃ আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (প্রথমে) তিনটি বস্ত মৃত ব্যক্তির সাথে থাকে। এর মধ্যে দুটি ফেরত চলে আসে আর একটি তার সাথে থাকে। মৃত্যু ব্যক্তির পরিবার, সম্পদ, আমল, এর মধ্যে তার পরিবার ও সম্পদ ফেরত চলে আসে আর তার আমল সাথে থেকে যায়। (বোখারী ও মুসলিম)[7]

মাসআলা-১৭৫ মানুষের মৃত্যুর পর ফেরেশতারা প্রশ্ন করে যে, সে পরকালের জন্য কি পাঠিয়েছে।

عن أبي هريرة بنته يبلغ به قال إذا مات الميت قالت الملكة ما قدم؛ وقال بنو آدم ناخلف ؟ رواه البيهقى

অর্থঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে যে, সে পরকালের জন্য কি পাঠিয়েছে? আর মানুষ জানতে চায় যে সে কি রেখে গেছে? (বায়হাকী)[8]

মাসআলা-১৭৬ মৃত্যু যন্ত্রনা মোমেনের জন্য তার গোনাসমূহের কাফফারাঃ

(( لايصيب المؤمن شوكة فما فوقها الا رفعه الله عن عائية ونه قال قال رسول الله بها درجة وحط عنه بها خطيئة )). رواه الترمذ

অর্থঃ আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মোমেন যদি কোন কাটার আঘাত পায় অথবা এর চেয়েও হালকা কোন ব্যথা পায় এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার গোনাহ মাফ করেন। (তিরমিযী)[9]

عن أبي سعيد ن الذى ، قال : قال رسول الله : (( مام شیء يصيب المؤمن من نصب و لا حزن ولا وصب حتى الهم يهمه الا يكفر الله به غنه سيانه )). رواه الترمذی ( حسن )

অর্থঃ আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মোমেন যখনই কোন বিপদ, চিন্তা, অথবা ব্যাথা পায়, এমনকি কোন চিন্তা যা তাকে পেরেশান করে তোলেছে এ সবগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তার গোনাহ সমূহকে ক্ষমা করেন। (তিরমিযী)[10]

قال (( ما من عبد يضرع ضرغة من مرض الا بعثه عن أبي أمامة الباهلى ننه عن النبي الله منها طاها )). رواه الطبراني في الكبير

অর্থঃ আবু উমামা আল বাহেলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেনঃ যখন কোন বান্দাকে কোন রোগ মারাত্তক ভাবে আক্রান্ত করে তখন এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে তার গোনাসমূহ থেকে মুক্ত করেন। (ত্বাবারানী ফীল কাবীর)[11]

মাসআলা-১৭৭ মৃত্যু মোমেনের জন্য একটি উপহারঃ

قال (( تحفة المزمن عن غير الله بن عمرو رضی الله عنهما عن النبي المؤث )). رواه الطبرانی

অর্থঃ আবদুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেনঃ মৃত্যু মোমেনের জন্য একটি উপহার। (ত্বাবারানী ফীল কাবীর)[12]

নোটঃ মৃত্যুর মাধ্যমে মোমেনের পৃথিবীর দুঃখ কষ্ট শেষ হয়ে যায় এবং - পরকালীন নে’মত সমূহের ভোগ শুরু হয়ে যায়। তাই মৃত্যু তার জন্য একটি উপহার।

ফুটনোট

[1] - কিতাবুল জানায়েয ত বাবুল মাওতি বিগাইরি মাওলিদিহি (২/ ১৭২৮)

[2] - কিতাবুররিকাক, বাবু সাকারাতিল মাওত।

[3] - মোখতাসার সহীহ বোখারী, হাদীস নং ১১৯৪

[4] - কিতাবুযযুহদ, বাবু মাযায়া ফী কালবিস শইখ আবা আলা হুব্বি ইসনাতাইন।

[5] - মহিউদ্দীন আদীব সংকলিত আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং ৪৯১৯।

[6] - আলবানী ব্যখ্যাকৃত মেশকাতুল মাসাবীহ খঃ৩য়, হাদীস নং ৫২৫১।

[7] - মোখতাসার সহীহ মুসলিম, আলবানী, হাদীস নং ৫২৫১।

[8] - কিতাবুল মালহেম, বাবু ফী তাদায়ীল উমাম আলাল ইসলাম (৩/৩৬১০)

[9] - আবওয়াবুল জানায়েজ, বাবু মাযায়া ফী সাওয়াবির মারায (১/৭৭১)

[10] - আবওয়াবুল জানায়েজ, বাবু ফী সাওয়াবিল মারায়! (২৭৭৪)

[11] - আত্ তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫০৩৮।

[12] - আত তারগীব ওয়াত্তার হিব, খঃ৪, হাদীস নং- ৫১২৩

৪৭
হে প্রভূ তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ কর
হে বিশ্ব প্রভূ! আকাশ, যমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর সৃষ্টি কর্তা ও মালিক তুমিই। আকাশ, যমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর ভরণ-পোষণ কারী তুমিই। আকাশ, যমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর পরিচালনা কারী তুমিই। আকাশ, যমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর লালন পালন কারী তুমিই। সর্ব প্রকার প্রশংসার মালিক ও তুমিই।

ইয়া জাল জালালে ওয়াল ইকরাম!

তুমি তোমার সত্ত্বা ও গুণাবলিতে একক। তোমার কোন তুলনা নেই। তোমার কোন সমকক্ষ ও সমপর্যায়ের কোন কিছু নেই। তুমি সর্ব প্রকার ক্রটি মুক্ত। সর্ব প্রকার প্রশংসার উপযুক্ত এক মাত্র তুমিই।

ইয়া আকরামাল আকরামীন!

তুমি সমস্ত বিচারকদের বিচারক, তুমি সমস্ত দয়াবানদের চেয়ে বড় দয়াবান, সমস্ত করুনা কারীদের চেয়ে বড় করুনা কারী, সমস্ত ইজ্জত ময়দের চেয়ে বড় ইজ্জত ময়। সমস্ত আত্ব সম্ভ্রমবোধ সম্পন্নদের চেয়ে অধিক আত্বসম্ভ্রমবোধ সম্পন্ন। সর্ব প্রকার প্রশংসার উপযুক্ত এক মাত্র তুমিই।

ইয়া আরহামাররাহিমীন!

কিতাব অবতীর্ণ কারী তুমিই। মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ্কে রাসূল বানিয়ে প্রেরণ কারীও তুমিই। মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সু সংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শন কারী রুপে প্রেরণ কারীও তুমিই। মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দয়ালু রুপে প্রেরণ কারীও তুমিই। আমাদেরকে সর্বোত্ত উম্মতের মর্যাদা দাতা তুমিই। আমাদের জন্য দ্বীনের উপর চলা সহজ কারী তুমিই। সর্ব প্রকার প্রশংসার উপযুক্ত এক মাত্র তুমিই।

ইয়া আজওয়াদাল আজওয়াদীন!

আমাদের এ দীর্ঘ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কল্যাণ ও সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করার তাওফীক দাতাও তুমিই। আর এখন এ জীবন সফর অতিক্রম করা, জীবনের তরীকে সহিহ সালামতে তটে ভিরানোর মালিক ও তুমিই। সামনে যে জীবন আসছে এর প্রতিটি মুহূর্তকে আমি তোমার ক্ষমা ও করুনা, দয়া ও অনুগ্রহ, রহমত ও মাগফেরাতের মোখাপেক্ষী, তোমার অমোখাপেক্ষী দরবারে তোমার গোনাগার, অন্যায় কারী বান্দা হাত পেতে তোমার দয়া ও করুনা কামনা করছে।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনা দিয়ে আমাদের জন্য মৃত্যু জন্ত্রনার মুহূর্তটিকে সহজতর করে তোল।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় মৃত্যুর সময় রহমতের ফেরেশতা প্রেরণ করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় মৃত্যুর সময় “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা নসীব করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় আমাদের রুহের জন্য আকাশের দরজা খুলে দিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভু! তোমার দয়া ও করুনায় তোমার বিশ্বাস ভাজন ফেরেশতাদেরকে আমাদের ব্যাপারে সাক্ষী করি ও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় আমাদের নামসমূহ ইল্লিয়ীনে লিখার ফরমান জারি করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় কবরের ভয়, চিন্তা ও একাকীত্ব থেকে রক্ষা করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভু! তোমার দয়া ও করুনায় আমাদের কবরকে ১৪ তারিখের চাঁদের আলোর ন্যায় আলোক ময় করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় আমাদের কবরকে যতদূর চোখের দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত প্রশস্ত করিও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার দয়া ও করুনায় আমাদের কবরকে জান্নাতের বাগান সমূহের মধ্যে একটি বাগান বানাও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! আমরা গোনাগার, অন্যায় কারী, তোমার দয়া ও অনুগ্রহের ভিক্ষুক আমরা তোমার দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করছি।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! তোমার বেশুমার দয়ায় আমাদের ঝুলি সমূহ ভরে দাও।

হে আমাদের দয়া ও করুনাময় প্রভূ! আমাদের প্রতি রহম কর। হে আমাদের ক্ষমাশীল প্রভূ! তুমি আমাদের প্রতি রহম কর।

হে আমাদের অনুগ্রহ কারীও দাতা প্রভূ আমাদের প্রতি রহম কর।

হে আমাদের প্রভূ (তুমি আমাদের গোনাসমূহ) ক্ষমা কর, (আমাদের প্রতি) রহম কর তুমি সর্বোত্তম রহম কারী। (সূরা মোমেনুন- ১১৮)

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন