hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের বর্ণনা

লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী

১৪
কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে মৃত ব্যক্তির শ্রবণ
মানব জীবনকে শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১- আলমে আরওয়াহঃ আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টির পর আল্লাহ্ তা’লা তার পিঠ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগন্তক সমস্ত বংশধরদের রুহ সৃষ্টি করলেন, তাদেরকে জ্ঞান ও বাক শক্তি দিয়ে তার রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্বের) স্বীকৃতি এভাবে নিলেনঃ الست بربكم আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? সমস্ত রুহেরা উত্তর দিল “ بلى ” আবশ্যই! এ আলমে আরওয়াহ থেকে মানব জীবনের প্রথম সফর শুরু হয়।[1]

২ - মায়ের জরায়ু জগৎঃ

জরায়ুতে রুহের সাথে মানুষের শরীর ও গঠিত হয়। এখানে মানুষ মোটামুটি নয় মাস সময় অতিবাহিত করে। আল্লাহ্ তালা কোর‘আন মাজীদে মায়ের জরায়ুতে মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন।

حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ کُرۡہًا وَّ وَضَعَتۡہُ کُرۡہًا

অর্থঃ তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে। (সূরা আহ ক্বফ -১৫) মানব জীবনে সফরের এটা দ্বিতীয় স্তর।[2]

৩ -জীবন জগৎ (পৃথিবী)

জীবন সফরের এটা তৃতীয় স্তর, যেখানে মানুষ অল্প সময়ের জন্য অবস্থান নেয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মতের হায়াত ৬০থেকে ৭০ বছরের মাঝে, (তিরমিযী)

মোটা মুটি এতটুকু সময় মানুষ পৃথিবীতে অবস্থান করে এর পর শুরু হয় তার সফরের পরবর্তী স্তর।

৪ - আলমে বারযাখঃ আলামে বারযাখে আমাদের সফরের সময়কাল দুনিয়ার তুলনায় লম্বা হবে, এ সফর কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

৫ - পরকালঃ এ হবে আমাদের সফরের সর্বশেষ স্তর, যেখানে মানুষ পৃথিবীতে দেয়া তার এ শরীর ও প্রাণ নিয়ে উঠবে, হিসাব-কিতাব হবে, মানুষ তার প্রকৃত অবস্থান স্থল, জান্নাত বা জাহান্নামে চির দিনের জন্য অবস্থান নিবে। উল্লেখিত পাঁচটি স্তর নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, একটি স্তর অন্য স্তর থেকে ভিন্ন। যেমন প্রথম স্তরে আল্লাহ্ তা’লা সমস্ত রুহ দেরকে প্রশ্ন করেছেন যে, আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? রুহেরা একথা শোনে, চিন্তা করে বুঝে, বলে ছিল অবশ্যই। রুহ জগৎ এর শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলা কি দুনিয়ার শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলার মত ছিল? স্পষ্ট যে তা এরকম ছিল না। কেননা সেখানে আমাদের রুহ এ শরীরের বাহিরে ছিল, অতএব ওখানের শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলা দুনিয়ার চিন্তা, বুঝা এবং বলা থেকে ভিন্ন ছিল। রুহ জগতে রুহদের শোনা, চিন্তা, বুঝা এবং বলার উপর আমাদের ঈমান (বিশ্বাস আছে। কিন্তু তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। এখন আসুন দ্বিতীয় স্তরের কথায়, মায়ের জরায়ু, যেখানে মানুষের শরীর তৈরি হয়। রুহ ও শরীর সংমিশ্রিত হয়।

দিল, দেমাগ, চোখ, নাক, কান, সবকিছু তৈরি হয়, কিন্তু জরায়ু জগৎ বাহিরের জগৎ থেকে এতটা পার্থক্য পূর্ণ হয় যেমন কোন বাচ্চাকে যদি বলা হয় যে তুমি কিছু দিন পরে এমন এক দুনিয়ায় প্রদার্পন করবে, যেখানে বহু মাইল ব্যাপী লম্বা, প্রশস্ত, আসমান রয়েছে, চক্ষু দৃষ্টির বাহিরে প্রশস্ত জমিন, এ বিশাল জমিনের চেয়েও বড় এক গোলাকৃতির আগুনের টুকরা...সূর্য প্রতি দিন আকাশের এক পার্শ্বে উদিত হয়ে সারা পৃথিবীকে আলোক ময় করে তোলে। আবার কিছুক্ষন পর সে অস্তমিত হয়ে যায়, ফলে সারা পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে যায়। রাতের আকাশে সুন্দর উজ্জল চাঁদের উদয় ঘটে, এর সাথে অসংখ্য ছোট ছোট তারকারাজী চমকাতে থাকে, বলুন তো মায়ের ছোট্ট জরায়ুতে অবস্থান কারী বাচ্চা কি এ সত্যতাকে বিশ্বাস করবে? মূলত মায়ের ছোট্ট জরায়ুতে থেকে, এ দুনিয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহ্ তা’লা মানুষের এ অবস্থা সম্পর্কে, কোর‘আন মাজীদে, অল্প কথায় অত্যন্ত সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ

وَ اللّٰہُ اَخۡرَجَکُمۡ مِّنۡۢ بُطُوۡنِ اُمَّہٰتِکُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ شَیۡئًا

অর্থঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে তখন তোমরা কিছুই জানতে না। (সূরা নাহাল-৭৮)

এখন চলুন চতুর্থ স্তর আলামে বারযাখের দিকে। কিতাব ও সুন্নাত থেকে আলামে বারযাখ সম্পর্কে আমরা যা জানতে পারি তা নিম্ন রুপঃ

১ - মৃত ব্যক্তি কথা বলেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মৃত্যুর পর সৎলোকেরা বলতে থাকে যে আমাকে জলদি নিয়ে চল, আমাকে জলদি নিয়ে চল।” আর খারাপ লোক বলতে থাকে যে, আফসোস! আমাকে তোমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ, (বোখারী)

এ হাদীস থেকে মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তি কথা বলার কথা প্রমাণিত হয়। মোন কার নাকীরের প্রশ্নের উত্তরে মোমেন ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমানদার বলে সাক্ষী দেয়। আর কাফের মোনাফেক বলে যে, আমি কিছুই জানিনা। (বোখারী, আবুদাউদ, ইত্যাদি)

এ হাদীস সমূহ থেকে যেখানে একথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি কথা বলে সেখান থেকে একথা ও প্রমাণিত হয় যে, কথা বলার মধ্যে কোন প্রকার বুযুর্গী বা কোন ওলীর কোন বাহাদুরী নেই। মৃত ব্যক্তি চাই মোমেন হোক বা কাফের, ভাল হোক আর পাপী হোক, সকলেই কথা বলবে।

২ -মৃত ব্যক্তি শোনেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন মোমেন বা কাফের বান্দাকে কবরে দাফন করে জীবিত লোকেরা ফেরৎ আসতে থাকে তখন মৃত ব্যক্তি তার সাথীদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। (মুসলিম)

কবরে মোনকার নাকীরের প্রশ্ন মৃত ব্যক্তি শোনে এবং তার ঈমান অনুযায়ী তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়। (দেখুন ৭৪ নং মাসআলা)

বদরের যুদ্ধের পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদরের যুদ্ধে নিহতদেরকে সম্ভোধন করে বলে ছিলেন তোমাদের সাথে তোমাদের রব যে ওয়াদা করেছিল তাকি তোমরা সত্য পেয়েছ? আমার সাথে আমার রব যে ওয়াদা করে ছিল তা আমি সত্য পেয়েছি। ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল! তারাকি শোনে বা উত্তর দেয়? এরা তো মৃত্যু বরণ করেছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আমি তাদেরকে যা কিছু বলছি তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শোনতেছ না। অবশ্য তারা আমাদের মত উত্তর দিতে পারে না। (মুসলিম)

এ হাদীস সমূহ থেকেও একথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি শোনে এবং তাদের এ শোনা কোন বুযুর্গী বা ওলীর বাহাদুরী নয়। বরং প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি, চাই কাফের হোক আর মোমেন হোক সকলেই শোনে থাকে।

৩ - মৃত ব্যক্তি দেখতে পায়ঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তরে সফল কাম হওয়ার পর মোমেন ব্যক্তিকে প্রথমে জাহান্নাম দেখানো হবে, অতঃপর জান্নাতে তাকে তার ঠিকানা দেখানো হবে। আর কাফেরকে প্রথমে জান্নাত দেখানো হয়, অতঃপর তাকে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। (আহমদ, আবুদাউদ,) এ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে মৃত ব্যক্তি মোমেন হোক আর কাফের হোক সে দেখতে ও পায়।

৪ - মৃত ব্যক্তি উঠা বসাও করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মোন কার নাকীর কবরে এসে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসায়। (বোখারী, মুসলিম, আহমদ)

৫ - মৃত ব্যক্তি আরাম বা কষ্ট অনুভব করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন মোনকার নাকীর কাফেরকে উঠিয়ে বসায় তখন সে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। অথচ মোমেন ব্যক্তি কোন প্রকার ভয় ভীতি হিন হয়ে উঠে বসে (আহমদ)। তিনি আরো এরশাদ করেনঃ জাহান্নামে স্বীয় ঠিকানা দেখার পর কাফের ব্যক্তির চিন্তা ও লজ্জা আরো বৃদ্ধি পায়, অথচ জান্নাতে তার ঠিকানা দেখার পর মোমেন ব্যক্তির আনন্দ আরো বৃদ্ধি পায়। (ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, হাকেম)

৬ - মৃত ব্যক্তি আশা আকাঙ্খা পেশ করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ মোমেন ব্যক্তিকে যখন কবরে জান্নাত দেখানো হয় তখন সে এ আকাঙ্খা করে যে আমাকে একটু সুযোগ দাও আমি আমার পরিবার পরি জনদেরকে এ সুপরিনতির কথা বলে আসি। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে মোমেন ব্যক্তি এ কামনা করে যে হে আমার প্রভূ কিয়ামত দ্রুত কায়েম কর, অথচ কাফের ব্যক্তি এ কামনা করে যে, হে আমার প্রভূ কিয়ামত কায়েম কর না। (আহমদ, আবুদাউদ)

এসমস্ত হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির আশা আকাঙ্খা প্রকাশের কথা প্রমাণিত হয়।

৭ -মৃত ব্যক্তি ঘুমায় এবং জাগেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোমেন ব্যক্তিকে প্রশ্ন উত্তরের পর বলা হবে নতুন বরের ন্যায় ঘুমিয়ে যাও, যেখান থেকে তার পরিবারের প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ তাকে উঠাতে পারবে না। (তিরমিযী)

এখান থেকে মৃত ব্যক্তির ঘুমানো এবং কিয়ামতের দিন উঠার কথা প্রমাণিত হয়।

৮-মৃত ব্যক্তি চিন্তে পারেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে মোমেন ব্যক্তির নিকট একজন সুন্দর চেহারা সমপন্ন লোক সুন্দর পোশাক পরে, উন্নত মানের সুগন্ধি মেখে এসে মোমেন ব্যক্তিকে তার। সুপরিনতির সংবাদ দিতে আসবে, মোমেন ব্যক্তি তখন তাকে জিজ্ঞেস করবে যে কে তুমি? তোমার চেহারা কত সুন্দর তুমি কল্যাণ নিয়ে এসেছ, সে ব্যক্তি বলবে আমি তোমার নেক আমল। কাফেরের নিকট এক কুৎসিত চেহারা সমপন্ন, ময়লা কাপড় পরিহিত অবস্থায়, দূর্গন্ধময়, লোক এসে বলবেঃ তুমি তোমার খারাপ পরিণতির সু সংবাদ গ্রহণ কর, এ ঐ দিন যার ওয়াদা তোমাকে পূর্বে দেয়া হয়েছিল, কাফের তখন জিজ্ঞেস করবে কে তুমি? তুমি খারাপ চেহারা সমপন্ন, দূর্গন্ধময়, তুমি অকল্যাণ নিয়ে এসেছ, সে বলবেঃ আমি তোমার বদ আমল। (আহমদ, আবু দাউদ)

এহাদীস থেকে মৃত ব্যক্তি লোকদেরকে চিন্তে পারার কথা প্রমাণিত হয়।

৯ - মৃত ব্যক্তি উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কবরে কাফেরের জন্য অন্ধ মুক ফেরেশতা নির্ধারন করে দেয়া হয়, সে তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে প্রহার করতে থাকে, আর তখন কাফের উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করতে থাকে। কাফেরের এ কান্না কাটির আওয়াজ মানুষ এবং জ্বিন ব্যতীত সমস্ত সৃষ্টি জীব শোনতে পায়। (আহমদ, আবু দাউদ)

এ হাদীস থেকে মৃত ব্যক্তির উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করার কথা প্রমাণিত হয়।

১০- মোমেন মৃতরা জীবিত এবং তারা পানাহার করেঃ আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ করেন?

وَ لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ قُتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتًا ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ یُرۡزَقُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾ۙ

অর্থঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত ধারণা করনা, বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। (সূরা আল ইমরান ১৬৯)

কিতাব ও সুন্নাতের উল্লেখিত দলীল প্রমাণ সমূহ থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, বারযাখের জীবন একটি পরিপূর্ণ জীবন, যেখানে মৃত ব্যক্তি খায়, পান করে, শোনে, কথা বলে, দেখে, চিনে, চিন্তা করে, বুঝে, আরাম আনন্দ উপভোগ করে, উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করে। কিন্ত বারযাখে মৃত ব্যক্তির কান্না কাটি করা দুনিয়ার কান্না থেকে ভিন্ন, বারযাখে মৃত ব্যক্তির দেখা এবং চিনা দুনিয়ার দেখা এবং চিনা থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির পানাহার দুনিয়ার পানাহার থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির চিন্তা করা ও বুঝা দুনিয়ায় চিন্তা করা ও বুঝা থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির আরাম ও আনন্দ উপভোগ করা, দুনিয়ায় আরাম আনন্দ উপভোগ করা থেকে ভিন্ন। কাফেরের পরকালে লজ্জাবোধ দুনিয়ার লজ্জা বোধ থেকে ভিন্ন। বারযাখে মৃত ব্যক্তির উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করা দুনিয়ায় উচ্চ স্বরে কান্না কাটি করা থেকে ভিন্ন। যা এখন পৃথিবীতে বেচেঁ থাকা অবস্থায় আমাদের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। মূলত আলমে আরওয়াহর অবস্থা যেমন আমাদের পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়, বা মায়ের জরায়ুতে লালিত শিশু বাচ্চার যেমন এ দুনিয়ার অবস্থা অনুভব করা কষ্টকর, এমনি ভাবে এ দুনিয়ায় থাকা কালে বারযাখের অবস্থা অনুভব করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোর‘আন মাজিদে এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴﴾

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদেরকে তোমরা মৃত বলনা, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা অনুভব করতে পারনা। (সূরা বাকারা -১৫৪)

আল্লাহ্ তা’লার এ স্পষ্ট ঘোষনার পরও যে সমস্ত হযরতদের এ হঠকারিতা আছে যে সে বারযাখী জিন্দিগীর অনুভুতি রাখে এবং জানে যে মৃতরা সেখানে এরকম ই শোনে, যেমন পৃথিবীতে শোনত, মৃত ঐ রকমই বলে যেমন পৃথিবীতে বলত, ঐ রকমই খায় যেমন পৃথিবীতে খেত, তাদের বিশ্বাস শুধু যে বিবেকের ফায়সালায় ভুল তা নয় বরং কোর’আন মাজীদের উল্লেখিত আয়াতটিকেও স্পষ্ট ভাবে তারা অস্বিকার করছে। পরিশেষে আমরা “মৃতরা শোনতে পায়” একথার দাবীদারদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে বারযাখে মৃত ব্যক্তি (চাই মোসলমান হোক আর কাফের, ভাল হোক আর পাপী, ওলী হোক আর সাধারণ) সকলেই শোনবে, বলবে, দেখবে, জিজ্ঞেস করবে, চিনবে, মোমেন হলে সে আরাম আনন্দ উপভোগ করবে, দ্রুত কিয়ামত কায়েম হওয়ার জন্য দুয়া করবে। ইত্যাদি কোর‘আন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এরপরও কেন শুধু ওলীদের শোনার কথাই আলোচিত হয়, সর্ব সাধারনের সোনার কথা আলোচনায় আসে না? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই যে, ওলীরা শোনেন এটাই শুধু আলোচিত হয় কেন, তাদের বলা, দেখা, জিজ্ঞেস করা, আরাম আনন্দ উপভোগ, পানাহার, ইত্যাদি কেন আলোচনা হয়না? এর কারণ খুবই স্পষ্ট যে, বারযাখে ওলীদের শোনাকে ভীত্তি করেই তাদের মাজারে উপস্থিত হওয়া, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দূয়া করা, বিপদাপদে তাদের স্মরনাপন্ন। হওয়া, তাদের মাধ্যমে গোনাহ সমূহ মাফ করানোর আক্বীদা পোষন করা হয়।

আর এ আক্বীদার উপর ভীত্তি করেই মানুষের কাছ থেকে নযর নেয়াজ হাসিল করা হয়ে থাকে। যদি মানুষকে পরিস্কার ভাবে একথা বলে দেয়া হয় যে, মৃতরা বারযাখে শুধু শোনে তাই নয় বরং তারা সেখানে কথা বলে, দেখে, চিনে, পানাহার করে, আরাম আনন্দ উপভোগ করে, কিন্তু এগুলি দুনিয়ার জীবনের মত নয়। বরং তা এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাহলে এর ফল দারাবে এই যে, খানকার ব্যবসা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ হয়ে যাবে, মাজারের চাকচিক্য ও ওরস চলবেনা, দরগার প্রভাব প্রতিপত্তি, ঠিকাদারিত্ব থাকবেনা। আধ্যাত্মিক গুরু গদ্দীনসিন, খাদেম, দরবেশ, মোজায়ের, ইত্যাদি পদাধিকারীরা সাধারণ মানুষের মত পেটের দায়ে কঠিন পরিশ্রম শুরু করতে হবে। আরামের আবাস ছেড়ে কে ঘাম ঝড়াতে যাবে!

ফুটনোট

[1] - বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আ’রাফ-১৭২

[2] - বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা নাহল-৭৮। সূরা মোমেনুন-১৪। সুরা লোকমান-১৪।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন