মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
(কবরের আযাব ও সোয়াব সংক্রান্ত কতিপয় শিক্ষামূলক ঘটনা)
কবরের আযাব বা সোয়াব সংক্রান্ত ভুরী ভুরী খবর সংবাদ পত্রের পাতায় ছাপা হয়, বা লোক মোখে শোনা যায়। এ ধরনের ঘটনাবলী বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করা যেহেতু কষ্টকর হয়ে যায়, তাই তা লেখার ব্যাপারেও আমি চিন্তা করছিলাম, এমনি মুহূর্তে সহী বোখারীতে আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনা আমার চোখে পরল, যার মাধ্যমে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, স্বাভাবিকতা বহির্ভুত কোন ঘটনা ঘটা মোটামুটি অসম্ভব, হয়ত বা মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কারী মহান সত্ত্বা এ ধরনের ঘটনা বলীর মাধ্যমে সুস্থ আত্মার অধিকারীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে চান। নিম্ন লিখিত ঘটনা বলী এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পেশ করা যাচ্ছে, হয়ত বা তা পাঠে সুভাগ্য বানরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। তবে এসমস্ত ঘটনা বলীর শুদ্ধতা বা অশুদ্ধতা নির্ভর করবে ঐসমস্ত পত্র-পত্রিকা বা বর্ণনা কারীদের উপর যার রেফারেন্স সাথে দেয়া হয়েছে।
১- নবী যোগের ঘটনাবলীঃ
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, এক খৃষ্টান মোসলমান হয়ে সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান মুখস্ত করেছে, সে ওহীর লেখকও ছিল (যাদের উপর কোর‘আন লেখার দায়িত্ব ছিল। পরিশেষে সে মোরতাদ হয়ে গেল, আর বলতে লাগল যে, মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো কোন কিছুই জানে না, আমি তাকে যা কিছু লেখে দিয়েছি সে তাই বলে। যখন তার মৃত্যু হল তখন খৃষ্টানরা তাকে দাফন করল, সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে সে কবরের বাহিরে পরে আছে। খৃষ্টানরা বললঃ এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাথীদের কাজ কেননা সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল, তাই তারা তার কবর খুড়ে তার লাশ বের করে রেখেছে, পরের দিন খৃষ্টানরা নতুন করে, আরো গভীর ভাবে কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করল, কিন্তু সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে তার লাশ আবারো কবরের বাহিরে পরে আছে।
খৃষ্টানরা আবারো বললঃ এটা মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তার সাথীদের কাজ। কেননা সে তাদের দ্বীন ত্যাগ করে এসে ছিল, তাই তারা তার কবর খুড়ে তার লাশ বের করে রেখেছে, পরের দিন খৃষ্টানরা নতুন করে আরো বেশি গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে দাফন করল, কিন্তু সকালে এসে লোকেরা দেখছে যে তার লাশ আবারো কবরের বাহিরে পরে আছে। তখন খৃষ্টানদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে এটা মোসলমানদের কাজ নয়, এরপর তারা ঐ লাশকে ঐ ভাবে ফেলে রাখল।[1]
২ - কবরের বিচ্ছুঃ
বিশ্ব যুদ্ধের সময় পরাশক্তিধরদের হিন্দুস্থানে আক্রমণ করার সময় ইংরেজ বাহিনীকে সিঙ্গাপুর ও বারমায় অস্ত্র রাখতে হয়েছিল, অস্ত্র রাখার সময় ইংরেজ জেনারেল সৈন্যদেরকে অনুমতি দিল যে, যে সৈন্য পলায়ন করে জান বাঁচাতে পারবে সে যেন তার জান বাচাঁয়, সৈন্যদের এক মেজর তোফায়েল তার এক সাথী মেজর নেহাল সিং এর সাথে ভেগে গেল, মেজর তোফায়েল বর্ণনা করেন যে, আমরা উভয়ে এক অন্ধকার রাতে ঘোড়ায় চড়ে বের হলাম এবং বারমার রণাঙ্গন ধরে ঘোড়া হাকাঁলাম, বারমা ঘন, জনবহুল, অন্ধকার, ভয়ানক জঙ্গল বিশিষ্ট এলাকা, অতিক্রম করা অত্যন্ত দূরহ কাজ ছিল, যাই হোক আমরা অনুমানের ভিত্তিতে হিন্দুস্থানের জেলা আসাম মুখি হলাম, যেখানে জাপানীদের আক্রমণ থাকা সত্বেও ইংরেজদের প্রধান্য বিস্তার করছিল। পরামর্শের ভিত্তিতে রাস্তা অতিক্রম করতে থাকলাম, এর মধ্যে কত রাত অতিক্রম হয়েছে তার কোন হিসেব আমাদের কাছে ছিলনা, পানাহার সামগ্রী শেষ হয়ে আসছিল। জঙ্গল ও নদ-নদীর উপর দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, কোন কোন সময় ভয়ংকর সাপ-বিচ্ছুর মোখো মুখিও হতে হয়েছে, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পথ চলেছি।
একদিন সামনে এক খালী জায়গায় একটি কবরস্থান চোখে পরল, প্রায় ২৫-৩০টি কবর হবে সেখানে, এক কবরে মৃতের প্রায় অর্ধেক দেহ কবরের বাহিরে পরে ছিল। পচা গলা অবস্থায় ছিল, লাশের উপর ছোট একটি বিচ্ছু তাকে বার বার ধ্বংশন করছিল, আর লাশ খুব ভয়ংকর ভাবে চিল্লাচ্ছিল, কোন জীবিত মানুষকে যেমন কোন বিচ্ছু ধ্বংশন করলে তার বিষাক্ততার ফলে সে কাঁদত তা এমন মনে হচ্ছিল, যা জীবিত অন্যান্য মানুষ ও প্রাণীকে বেহুশ করে দিতে যথেষ্ঠ ছিল। সত্যিই এ এক ভয়ানক দৃশ্য ছিল। মেজর নেহাল শিং আমার বাধা সত্ত্বেও বিচ্ছুটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ল, এতে একটি অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হল বটে কিন্তু বিচ্ছুর কিছুই হয় নাই। নেহাল শিং আবারো গুলি করার প্রস্তুতি নিল, আমি তাকে কঠোর ভাবে বাধা দিলাম এবং তার পথে তাকে চলতে বললাম, কিন্তু সে আমার কথায় কর্ণপাত না করে কবর স্থানের এক মৃতকে বাচাতে গিয়ে বিচ্ছুকে আবার গুলি করল। আবারো একটি অগ্নি শিখা বিচ্ছুরিত হল বটে কিন্ত বিচ্ছুর কিছুই হল না।
বরং বিচছু তখন লাশকে ছেড়ে আমাদের দিকে ছুটে আসতে লাগল, আমি তখন নিহাল শিংকে বললাম বিচ্ছু ও লাশ ছেড়ে এখান থেকে ভাগ, বিচ্ছু আমদের দিকে এগিয়ে আসা আশঙ্কা মুক্ত নয়। আমরা ঘোড়া চালাতে শুরু করলাম, কিছু দূর যাওয়ার পর পিছনে তাকিয়ে দেখছি যে ঐ বিচ্ছুটি আমাদের পিছনে পিছনে, খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা ঘোড়াকে আরো দ্রুত চালাতে শুরু করলাম, কয়েক মাইল চলার পর এক নদী সামনে পরল, যা খুবই গভীর মনে হচ্ছিল। আমরা একটু থেমে চিন্তা করতে লাগলাম যে, নদীতে ঘোড়া নিক্ষেপ করব না নদীর তীর ধরে চলে চলে কোন রাস্তা খোঁজব, কিন্তু কোন ফায়সালা করার পূর্বেই ঐ বিচ্ছু আমাদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল, আমরা লক্ষ্য করছিলাম যে আমরা সশস্ত্র হওয়া সত্বেও এ বিচ্ছুটি আমাদেরকে আতংকিত করে তুলেছিল। এমনকি আমাদের ঘোড়াও লাফাচ্ছিল যেন সে ও ভয়ে ভিত সন্ত্রস্ত ছিল। বিচ্ছু নিহাল শিং এর দিকে এগোচ্ছিল। নেহাল শিং ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘোড়া নিয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পরল। আর তার পিছে পিছে বিচ্ছু ও নদীতে ঝাপিয়ে পরল। আল্লাহ ভাল জানেন বিচ্ছুটি তার শরীরের কোন অংশে কেটে ছিল যার ফলে ঘোড়াও এ অস্বাভাবিক আঘাতের ভয়ে ভিত সন্ত্রস্ত ছিল। ঘোড়াটি কাঁপতে শুরু করল। নেহাল শিং ভয়ানক ভাবে চিৎকার করে আমাকে ডাকতে লাগল, যে তোফায়েল আমি ডুবে যাচ্ছি, জ্বলে যাচ্ছি, আমাকে বিচ্ছু থেকে বাচাও! বাচাও!
আমিও তখন ঘোড়া নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম এবং বাম হাত তার দিকে বাড়ালাম, সে তখন আমাকে খুব শক্ত করে ধরে নিল, আমার মনে হচ্ছিল যে এটা নদীর স্বাভাবিক পানি নয়, বরং কোন বিষাক্ত পানি, যা শুধু আমার হাতই নয় বরং সমস্ত শরীর জ্বালিয়ে দিবে। আমি তখন আমার অস্ত্র বের করে আমার বাম হাত কেটে ফেলে নিজেকে রক্ষা করে দ্রুত নদীর তীর ধরে চলতে শুরু করলাম। মেজর নেহাল শিং আমাকে চিৎকার করে ডাকতে থাকল, আর পানিতে ডুবতে লাগল। নদীর বড় বড় ঢেউ তাকে গ্রাস করতে লাগল। এ হল আল্লাহর শাস্তি... বিচ্ছু নিজের কাজ করে চলে যাচ্ছিল, আমার সামনে আসে নাই। আল্লাহর সৈন্যদের মধ্যে সে একাই এক গাইবী সৈন্যের মত। সে আমার কোন ক্ষতি করে নাই। যেদিক থেকে এসে ছিল সে দিকেই চলে গেল।[2]
৩- বাকা কবরঃ
গত কাল এক পুলিশ অফিসারকে কবরস্ত করার সময় তার কবর বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। যখন পুনরায় নতুন কবর খনন করা হল তখন তা ও বাকা হয়ে যাচ্ছিল। এতে লোকেরা মনে করল যে কবর খনন কারীদের হয়ত বা কোন ক্রটি আছে। কিন্তু যখন এক এক করে পাচঁটি কবর খনন করা হল এবং বারবার তা বাকা হয়ে যেতে লাগল, তখন জানাজায় অংশ গ্রহণ কারী লোকেরা সম্মিলিত ভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনা করল এবং পঞ্চম বারে লোকেরা জোর পূর্বক তাকে কবরস্ত করল। কিন্ত কবর প্রথম বারের ন্যায়ই বাঁকা হয়ে গেল। এ ঘটনা রাওয়াল পেন্ডির প্রসিদ্ধ কবরস্থান আতরা মারালে ঘটেছে।[3]
৪- কবরে সাপ ও বিচ্ছুঃ
নারাং মান্ডি শাইখু পুরা জিলার উপকণ্ঠে কসবে জিসিং নামক স্থানে দুই গ্রুপের মাঝে ফায়ারিং হয়। এতে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছে, এদের মধ্যে একজনকে তার উত্তর সূরীরা বক্স বন্দী করে দাফন করার জন্য নিয়ে এসেছে, কবর খননের পর বক্সের ভিতর থেকে সাপ বিচছু বেরিয়ে আসছিল, এদেখে উত্তর সূরীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দূর থেকে তার কবরে মাটি নিক্ষেপ করেছে এবং বক্সটি ফিরত নিয়েছে।[4]
৫- কবরের কম্পনঃ
গুজরা নাওয়ালার উপকণ্ঠে কাসবা খিয়ালীর কবরস্থানে দাফন কৃত এক মহিলার কবরের কম্পন এলাকায় ভয় সৃষ্টি করেছে। বর্ণনা অনুযায়ী মহিলাকে যখন কবরস্ত করা হয়, তখন ওখানকার লোকেরা অনুভব করছিল যে মৃত মহিলার কবর কাঁপতেছে, কোন কোন লোক কবরের সাথে কান লাগিয়ে আওয়াজ শোনছিল, তারা কবর থেকে ঠক ঠক শব্দ এবং ধমকের আওয়াজ পাচ্ছিল, তখন কোন প্রসিদ্ধ আলেমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মৃত মহিলাকে অন্য কোন স্থানে দাফনের জন্য পরামর্শ দিলেন। এর উপর ভিত্তি করে লোকেরা ঐ আলেমের উপস্থিতিতে মৃত মহিলার কবর খনন করে কবরের উপর থেকে আচ্ছাদন সরানো মাত্রই কবর খনন কারীরা কবরের ভিতর থেকে আশচার্য ধরণের পচা বমির গন্ধ শোনতে পেয়ে কবর পুনরায় বন্ধ করে দিল এবং মৃত মহিলার জন্য মাগফেরাত কামনা করে দূয়া করল এতে আস্তে আস্তে কবরের কম্পন বন্ধ হল।[5]
৬ - সাপ সাপঃ
এক জমিদার লোকের উত্তর সূরী পৈত্রিক সূত্রে বিরাট সম্পদের মালিক হয়, আল্লার পথে ধন সম্পদ খরচ করতে সে খুব কুণ্ঠিত ছিল। যদি কেউ তার নিকট কোন মসজিদ, মাদ্রাসা, এতীম, বিধবার ব্যাপারে কোন সাহায্য চাইত তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যেত, আমি সর্বশেষ তাকে ১৯৬৮ ইং সালে বেহুশ অবস্থায় লাহোরের এক হাসপাতালের মর্গে তাকে অত্যন্ত মুমুর্ষু অবস্থায় (i.c.u.) দেখে ছিলাম, তার নাড়ী -ভুরী শুকিয়ে আসছিল, থেমে থেমে নিঃস্বাস ত্যাগ করছিল, চক্ষুসমূহ পাথরের মত হয়ে গিয়েছিল, ডাক্তার সামনেই দাড়িয়ে তার মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য অপেক্ষা কর ছিল, হটাৎ করে তার শরীর কাঁপতে শুরু করল, তার চেহারায় ভয়ের নির্দশন ফুটে উঠল। পশম গুলো দাড়িয়ে গেল, শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছিল, ঠোট সমূহ কাঁপছিল, সমস্ত লোকেরা শোনছিল যে সে ভীত স্বরে সাপ সাপ বলে তা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে হাত পা নাড়াচ্ছিল, আমি তা দেখে ভীত হয়ে গেলাম, এবং ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম যে, চিকিৎশা শাস্ত্রের আলোকে তার সর্বশেষ নড়াচড়াকে কি বলবেন? ডাক্তার সাহেব পেরেশান হয়ে বললেন যে আমার জন্য এ দৃশ্য চিকিৎশার ক্ষেত্রে এক আশ্চার্য ঘটনা, এ নড়াচরা এবং সাপ সাপ বলে চিৎকার করা এক মৃত ব্যক্তির মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল, যে বেহুশ অবস্থায় না কোন কথা বলতে পারতে ছিল না কোন প্রকার নড়াচড়া করতে পারছিল।[6]
এগুলী কতিপয় ঘটনা কবরের আযাব সম্পর্কে বর্ণনা করা হল এখন কিছু ঘটনা কবরে সোয়াব সম্পর্কে বর্ণনা করা হবে।
১- কবরের সু ঘ্রাণঃ
ডাঃ সায়্যেদ যাহেদ আলী বর্ণনা করেন যে, মাউনইউনিটের সময়কালে, রাতুরডের জিলার লারকানায় মেডিকেল অফিসার হিসেবে আমি কর্মরত ছিলাম, একদিন এক পুলিশ কর্মকর্তা কিছু কাগজ নিয়ে আসল, সোলসারজেন জিলার সমস্ত মেডিকেল সমূহ আমার পরিচালনাধিন ছিল, জিলা মেজিসট্রেট কবর প্রশস্ত করার জন্য বোর্ড ঘটন করেছেন, ডাঃ মোহাম্মদ শফী সাহেবের সাথে আমিও ছিলাম, কবরস্থানটি রাতোডয়ের থেকে দুই মাইল দূরে এক গ্রামে অবস্থিত ছিল, পুলিশের কাগজপত্রের মাধ্যমে জানা গেল যে এটা এক মহিলার কবর ছিল। যা প্রায় দুই মাস আগে দাফন করা হয়েছে। তার স্বামী তাকে একারণে হত্যা করেছে যে, অন্য কোন পুরুষের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। নির্দিষ্ট দিনে আমি ঐ গ্রামের এক গৃহে এসে উপস্থিত হলাম। পুলিশ বাহিনীও চলে এসেছিল, গৃহকতার ঐকান্তিক দাবী ছিল যে চা পান করে বের হতে হবে।
এদিকে পুলিশ কবরস্থানে পৌঁছে গেছে, যখন চা নিয়ে আসল তখন দেখা গেল যে এ তো চা নয় বরং দুপরের খাবার। ইতিমধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে জানা গেল যে, এ মহিলা আল্লাহ ভীরু ছিল, যার বয়স হয়েছিল প্রায় ২৭ বছর, নামায রোযার পাবন্দ ছিল। বিয়ের পাঁচ বছর অতিক্রম হয়েছে কিন্তু কোন সন্তান ই হয় নাই। ইতিমধ্যে অন্য কোন মহিলার সাথে স্বামীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর সে চাচ্ছিল এ মহিলাকে রাস্তা থেকে সরাতে, তাই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিল যে ওমুকের সাথে তোমার অবৈধ সম্পর্ক আছে, তাকে প্রতি দিন মার ধর করত, যে ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কের মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে সে এ মহিলার বাপের ও বড় ছিল। একদিন সকালে এ মহিলাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। যত মুখ তত কথা, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছিল, কিন্ত অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যাচ্ছিল যে, মহিলা নির্দোষ ছিল।
কবর খুড়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়, আমরা ডাঃ, আমাদের কাছে এটা স্বাভাবিক বিষয়, কবরের ভিতরের অবস্থা, লাশের পরিনতি বড় বড় অন্তর দিয়ে দেখা যায় না। আমি (লেখক) প্রায় একশ কবর খুড়েছি কিন্তু মেজিসট্রেট বা পুলিশ কাছে আসতে পারে নাই। তারা ডিউটিতে ঠিকই থাকে কিন্ত কিছু একটু করেই দূরে সরে পড়ে। ঐ দিন কবর খুড়ার দায়িত্বশীলরা তাদের অভ্যাস মোতাবেক কবর খুড়ছিল মাটি সরাচ্ছিল। আমরা মাথার পার্শ্বে দাড়িয়ে ছিলাম, আগত ঘটনাবলী পর্যবেক্ষনের জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। এক সময় কবর থেকে আতরের ঘ্রাণ বের হতে লাগল, যেন আমরা কোন চামেলী বাগানে অবস্থান করছিলাম। আমি কবরের দিকে ঝুকে দেখলাম যে, দাফন করার সময় কেউ কোন ফুল রেখে দিয়েছিল কিনা।
মূলত এটা শুধু আমার মনের ধারনাই ছিল। যদিও ফুল রাখা হয়ে থাকে কিন্তু মৃত দেহ থেকে যে ঘ্রাণ আসছিল তা ফুলের চেয়েও অধিক সুগন্ধময় ছিল। পুলিশরা বলল যে এ চিন্তা আমরাও করছিলাম, কিন্ত যখন লাশ বের করা হল, তখন সুগন্ধিতে দেহ মন মুহিত হয়ে গেল, এমনকি দূর দুরান্ত পর্যন্ত সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পরল। মেজিস্ট্রেট ও উঠে কাছে চলে আসল। ওখানে পুলিশ না থাকলে বিরাট মজমা যমে যেত। ডাঃ শফী বললঃ মৃতদেহের সুঘ্রাণ পেয়ে মনে হচ্ছে আমরা জান্নাতের বাগানে বসে আছি। সুবহানাল্লা, সুবহানাল্লা, বলতে বলতে তার যবান ক্লান্ত হয়ে আসছিল।
লাশটি সম্পূর্ণ তরুতাজা ছিল। চেহারা অত্যন্ত উজ্জল ছিল। মনে হচ্ছিল যে, মৃতা আরামে ঘুমাচ্ছে, পুলিশরা বলতে লাগল আল্লাহর ইচ্ছা, একথা প্রমাণিত হয়েগেছে যে, মৃতাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছিল। আমি একটু পিছনে সরতেই পুলিশ কর্মকর্তাও পিছনে চলে আসল, তাকে পোষ্ট মরটেম করতে আমাদের মন চাচ্ছিলনা, ইতি মধ্যে তার স্বামী, (হত্যাকারী) যে স্ত্রীকে হত্যার পর পলাতক ছিল সে অগ্যাত স্থান থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে চলে আসল, এবং পুলিশকে বলতে লাগল যে আমাকে গ্রেপ্তার কর, আমার স্ত্রী নির্দোষ ছিল, তাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে পুলিশ ও মেজিস্ট্রেট সেখানেই ছিল, তার যবানবন্দী নেয়া হল, যেখানে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করল। তাই আর পোষ্ট মরটেম করা হলনা।
২- মৃতদেহ থেকে সুগন্ধিঃ
আমার (লেখকের) মরহুম দাদা নূর এলাহীর ছোট ভাই হাফেজ আঃ হাই (রাঃ) অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু লোক ছিল, প্রায় ৯০ বছর বয়স পর্যন্ত বেচেঁ ছিল, জীবন ভর কিতাব ও সুন্নাতের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেছেন। হালাল উপার্জনের প্রতি এত খেয়াল রাখতেন যে, একদা লাহোর থেকে স্বীয় গ্রাম মান্ডেওয়ার বার্টেন শাইখুপুরা জিলায় আসছিলেন, পকেটে পয়শা ছিলনা, ট্রেনে চেপে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলেন, ষ্টেশনে কারো কাছ থেকে টাকা ধার করে মান্ডেওয়ার বার্টেন থেকে শাইখুপুরার একটি টিকেট কিনে তা ওখানেই ছিড়ে ফেলে দিলেন, যাতে করে সরকারের পাওনা সরকার পেয়ে যায়।
কোর‘আন তেলওয়াতে এত আকর্ষণ ছিল যে, কোথাও যেতে হলে পায়ে হেটে যাওয়াকে যান বাহনে করে যাওয়া থেকে এজন্য প্রধান্য দিতেন যে, পায়ে হেটে গেলে অধিক তেলওয়াত করা যাবে। আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধন এত গভীর ছিল যে, তিনি হৃদ রুগী ছিলেন, একদা তার খুব ব্যাথা শুরু হল, ঘরের লোকেরা কান্নাকাটি করতে লাগল, তার অবস্থা যখন একটু ভাল হল তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কেন কাঁদতেছিলা? তারা বলল ও আমরা মনে করেছিলাম যে, এই বুঝি আপনার শেষ সময়, তিনি বললেনঃ এতে চিন্তার কি আছে, আমি আমার বন্ধুর নিকট যাচ্ছিলাম কোন শত্রুর নিকট যাচ্ছিলাম না। মরহুমের ছেলে শাইখুল হাদীস আল্লামা আঃ ছালাম কীলানী, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, তিনি বলেনঃ দাফনের সময় তার শরীর থেকে এত সুগন্ধি বের হচ্ছিল যে, উপস্থিত সমস্ত লোকদের শরীর সুগন্ধময় হয়ে গেল। কোন কোন লোকের ধারণা ছিল যে, হয়ত কেউ কবরে সুগন্ধি ঢেলে দিয়েছে, মূলত তা ছিলনা।
৩ - কবরে আলোঃ
সোহাদরা জিলার গুজরা নাওয়ালা শহরের প্রশিদ্ধ আলেম, মাওলানা হাফেজ মোঃ ইউসুফ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এক রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম প্রায় একটার সময় কিছু লোক এসে দরজায় নক করল, আমি দরজা খোললাম তখন তারা বললঃ যে আমাদের এক নিকট আত্মীয় মারা গেছে, অসুস্থতার কারণে লাশ দীর্ঘ সময় দাফন কাফনের বাকী রাখা সম্ভব নয়। তাই এখনই আমরা তার দাফন করতে চাই। আপনি জানাযার নামায পড়িয়ে দিন, আমি জানাযার নামায পড়িয়ে দিলাম কবর খনন কারীরা দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করতে লাগল, হটাৎ করে পার্শ্বের কবর খুলে গিয়ে তা থেকে আলো আসতে শুরু করল, যেন সূর্য মাথার উপর আছে, আমি পরামর্শ দিলাম যে দ্রুত ঐ কবরের দেয়াল ঠিক করে দিন, কেননা আল্লাহর কোন নেক বান্দা আরাম করতেছে, তারা ঐ কবরের দেয়াল ঠিক করে দিল এবং পার্শ্বের কবরে এ মৃতকে দাফন করা হল।
৪ - মৃতের শরীর থেকে সুগন্ধিঃ
এ ঘটনার বর্ণনা কারী আমার সম্মানিত পিতা হাঃ মোঃ ইদ্রীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি বলেন উপমহাদেশ ভাগা ভাগির পূর্বে, দিল্লীতে উস্তাদ কুল শিরমনী শাইখুল হাদীস সায়্যেদ মিয়া মোঃ নাযীর হুসাইন মোহাদ্দেস দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) মাদ্ রাসার এক ছাত্র ইন্তেকাল করল, আর ঐ মৃত দেহ থেকে এত আকর্ষণীয় সুগন্ধি বের হচ্ছিল যে, আশপাশের এলাকা সুগন্ধময় হয়ে গেল। লোকেরা মিয়া মোঃ নাযীর হুসাইন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনার কি এ ছাত্র সম্পর্কে এমন কোন আমলের কথা জানা আছে, যার ফলে আল্লাহ্ তাকে এ ইয্যত দান করেছেন? তখন মিয়া সাহেব নিম্নোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেনঃ অন্যান্য ছাত্রদের ন্যায় এ ছাত্রের খাবারের ব্যবস্থাও এক ঘরে ছিল, উল্লেখ্য যে কিছুদিন পূর্বে আজকালের ন্যায় ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা মাদ্রাসায় ছিল না, বরং শহরের বিভিন্ন সক্ষম ব্যক্তিরা একজন দুই জন করে খাওয়াত।
সে যে বাড়ীতে খাবার খেত ঐ বাড়ীর এক যুবতী তাকে মোহাব্বত করত, একদিন বাড়ীর লোকেরা অন্য কোন বাড়ীতে বেড়াতে গেছে, আর ঐ মেয়ে বাড়ীতে একাই ছিল, এদিকে অভ্যাস মোতাবেক ছেলে খাবার খেতে এসেছে, আর মেয়ে তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে তাকে অশ্লীল কাজের প্রতি আহ্বান করল। ছেলে সে ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকার করল, মেয়ে তাকে ধমক দিয়ে বললঃ যে তুমি যদি আমার ডাকে সাড়া না দাও তা হলে আমি তোমার বদনাম করব। ছাত্র তখন পায়খানা পেশাবের অজুহাত দেখিয়ে বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি চাইল, মেয়ে তখন তাকে ঘরের উপরের তলায় যাওয়ার অনুমতি দিল। ছাত্র ঘরের উপরের তলায় উঠে বাথ রুমে ডুকে, সমস্ত শরীরে পায়খানা মেখে বের হল। মেয়েটি তাকে এ অবস্তায় দেখে, তাকে ঘৃনা করে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
ঠান্ডার মৌসম ছিল, ছাত্র মসজিদে এসে গোসল করে, কাপর ধুয়ে বাহিরে আসল, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে কাঁপতে ছিল। ইতি মধ্যে তাহাজ্জদের নামাযের জন্য আমি মসজিদে গেছি, ছাত্রকে এ অবস্থায় দেখে আশ্চার্য হলাম, তাকে জিজ্ঞেস করলে সে কতক্ষন চুপ থেকে পূর্ণ ঘটনা বলল। আমি তখন আল্লাহ্র নিকট দূয়া করলাম “হে আল্লাহ! এ ছাত্র তোমার ভয়ে নিজের শরীরে না পাকী মেখে নিজেকে পাপ মুক্ত রেখেছে তুমি তোমার দয়া ও অনুগ্রহে তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে ইয্যত সম্মান দাও। সম্ভবত আল্লাহ তা’লা এ ছাত্রকে তার ঐ আমলের জন্য এ ইজ্জত দান করেছেন।[7]
কবরের আযাব ও সোয়াব সংক্রান্ত উল্লেখিত ঘটনা বলী স্পষ্ট প্রমাণিত, আর এখানে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষার খোরাক, আমরা কি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব?
[6] - দৌলত ছে মোহাব্বত কা আনজাম, মোহাম্মদ আকরাম রানজাহাফত রোযাহ আল এতে‘সাম, লাহোর, সেপ্টেম্বর, ১৯৯ইং।
[7] - সম্মানিত পিতা হাঃ মোঃ ইদ্রীস কীলানী (রাহিমাহুল্লাহ) স্বীয় গ্রাম কিলয়া নাওয়ালা জিলার গুজরা নাওয়ালার জামে মসজিদে জু‘মার খুৎবায় এ ঘটনাটি একাধিকবার বলতে আমি শুনেছি, এ ঘটনাটি আমি লিখতেছি ইতি মধ্যে সাপ্তাহিক “আল এ‘তেসাম” ১৪ সংখ্যার ২৫ মহাররম ১৪২২হিঃ “গাইর মাহরাম মহিলার সাথে একাকিত্বের আতঙ্ক” শিরোনামে ডঃ আঃ গফুর রাশেদ সাহেবও উল্লেখ করেছেন, যা পাঠে তা সত্যতার ব্যাপারে আমার আত্মবল আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। (লেখক)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/298/19
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।