মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) বারযাখী জীবন সম্পর্কে মোসল মানদের মাঝে দুটি দল দেখা যায়। এক দলের নিকট রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় কবরে এমন ভাবে জীবিত আছেন যেমন ভাবে তিনি পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। অন্য দলের মতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন ভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন, যেমন ভাবে অন্যান্য মানুষ মৃত্যু বরণ করে। অতএব এখন তিনি জীবিত নন বরং মৃত। প্রথম দলটির কিছু আকীদা নিচে পেশ করা হলঃ
১ - আম্বীয়া আলাইহিস্সালাম গণের বারযাখী জীবন দুনিয়াবী জীবনের ন্যায় প্রকৃত, তাদের উপর আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্য তারা ক্ষনিকের জন্য মৃত্যু বরণ করেছিল বটে, কিন্তু পরক্ষনেই তাদেরকে পূর্বের ন্যায় জীবন দেয়া হয়েছে।[1]
২ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) জীবন ও মৃত্যুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। স্বীয় উম্মতদেরকে দেখেন, তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। তাদের নিয়্যত এমন কি মনের কথাও জানেন।[2]
৩ - আম্বীয়া (আলাইহিস সালাম) দের পবিত্র কবরে তাদের পবিত্র স্ত্রী গণকে পেশ করা হয় এবং তারা তাদের সাথে রাত্রি যাপন করে।[3]
৪ - ইমাম ও কুতুব সায়্যেদেনা আহমদ রেফায়ী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) পবিত্র রওজা মোবারকের সামনে দাড়িয়ে আরয করল যে, হাত মোবারক পেশ করুন, যাতে করে আমার ঠোঁট সেখানে স্পর্শ করে ধন্য হতে পারে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাত রওজা মোবারক থেকে বের হল, আর ইমাম রেফায়ী তাতে চুমু খেলেন।[4]
৫ - সন্ধা সাড়ে ছয়টার সময়, নবুয়তের দরবার খুব সাজ-সজ্জাময় ছিল, ২৫ বছর ধরে দরবারে নবুয়তে উপস্থিত থাকার সুযোগ আমার হয়েছে, সম্মানিত দুই শাইখ আবু বকর ও ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সে দিকে খুবই মোতাওয়াজ্জেহ পরায়ন (মুখ করে থাকা) পেলাম, বিশেষ ভাবে হযরত জী মাওলানা আল্লাহ ইয়ার খাঁন সে দিকে অত্যন্ত নিমগ্ন ছিলেন, আমিও তাদের সহযাত্রী ছিলাম, হযরত জীর শরীরে খুব উন্নত মানের পোশাক ছিল, আর মাথার তাজ ছিল অত্যন্ত উজ্জল। তিনি বিশেষ আকর্ষণীয় ছিলেন, রহমতের নবী মুচকি হাসি হেসে তার প্রতি রহমত বর্ষন করছিলেন, আমি চিন্তা করছিলাম, সম্মানের যে অপূর্ব অবস্থানে তিনি আছেন তাতে মনে হচ্ছিল যে, হযরত জী আজ কোন বিশেষ পদভী লাভ করছেন। এ অবস্থা সাড়ে ছয়টা থেকে পোনে আটটা পর্যন্ত বিদ্ধমান ছিল।[5]
৬ - স্বয়ং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) সাথে আমার বায়াত বিনা মাধ্যমে এমন ভাবে হয়েছে যে, আমি দেখতে পেলাম যে একটি উচু স্থানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রওনাক বখশ হয়ে আছেন, আর সায়্যেদ আহমদ শহীদের হাত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) হাতের মধ্যে ছিল। ঐ স্থানে আমিও আদবের সাথে দাড়িয়ে আছি, হযরত সায়্যেদ তখন আমার হাত নিয়ে হুজুরের (রাসূলের) হাতে দিয়ে দিলেন।[6]
৭ - হযরত জী মাওলানা আল্লাহ ইয়ার খাঁন উন্মুক্ত আলোচনায় বলতেন যে, আমাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাড়ী সেব করা কোন ব্যক্তিকে দরবারে নবুবীতে সাথে নিতে নিষেধ করেছেন। মূলত হযরত জী ইচ্ছা করে কখনো তা করতেন না, আর এ সতর্কতার পর অবস্থা এ দাড়াল যে, দরবারে নবুবীতে উপস্থিতির সময় বিষেশ ভাবে লক্ষ রাখা হত এবং ঘোষনা হত যে, দাড়ী সেব করা কোন সাথী যেন সাথে না আসে।
“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” এ আকীদা পোষন কারীদের কিছু উদাহরণ আমরা এখানে পেশ করলাম, এখন আসুন কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে যাচাই করা যাক যে এ আকীদা সঠিক না বেঠিক।[7]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর ব্যাপারে কোর‘আন ও সুন্নাতের ভাষ্য নিম্ন রূপঃ
১ - সূরা যুমারে এরশাদ হয়েছে যে,
اِنَّکَ مَیِّتٌ وَّ اِنَّہُمۡ مَّیِّتُوۡنَ ﴿۫ ۳۰﴾
নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল (সূরা যুমার-৩০)
এ আয়তে আল্লাহ তালা মৃত্যুর ব্যাপারে যে শব্দটি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন ঠিক একই শব্দ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ব্যাপারেও ব্যবহার করেছেন।
অর্থঃ “আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করি নাই। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবি হয়ে থাকবে। (সূরা আম্বীয়া-৩৪)
এ আয়াতে আল্লাহ্ তালা দুটি বিষয় বর্ণনা করেছেন। প্রথমতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) পূর্বে যত নাবীগণ অতিক্রম করেছেন তারাও মৃত্যু বরণ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ তোমরাও মৃত্যু বরণ করবে। চিরস্থায়ী জীবন আমি না তাদেরকে দিয়েছি না তোমাকে।
৩ - উহুদের যুদ্ধে রাসূলের শাহাদাতের সংবাদ ছড়িয়ে পরল, এতে সাহাবাগণ যুদ্ধের ময়দানে নিরাশ হয়ে বসে গেল। এর পরিপেক্ষিতে আল্লাহ তা’লা এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ
অর্থঃ যদি তিনি মৃত্যু বরণ করে, অথবা নিহত হয় তবে কি তোমরা পশ্চাদ পদে ফিরে যাবে? (সূরা আল ইমরান -১৪৪)
যদি কিছুক্ষণ পর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়াবী হায়াত ফিরে পেতেন তাহলে, এ কথা বলা হত যে, চিন্তা কর না। মারা যাওয়া বা কতল হওয়ার পরও মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের মাঝে বিদ্ধমান থাকবে। তোমাদের নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু একথা বলা হয় নাই।
৪ - সূরা আল ইমরানে আল্লাহ তা’লা পূর্ববর্তী নবী গণের কথা উল্লেখ করে বলেনঃ যে তারাও মৃত্যু বরণ করেছেন। অতএব তোমরাও মৃত্যু বরণ করবে। পূর্ববর্তী নবী গণের মধ্যে দুই জনের মৃত্যুর কথা কোর‘আনে উল্লেখ হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে আম্বীয়া আলাই হিস্সালাম গণের মৃত্যুর কথা সত্যায়ন করে। সূরা সাবায় সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে আল্লাহ তা’লা বলেনঃ সে লাঠির উপর ভর করে দাড়িয়ে ছিল, হটাৎ তার মৃত্যু এসে গেল, আর ঐ জ্বিন যারা গায়েব জানার দাবী দার ছিল (বা যারা মনে করে যে জ্বীনেরা গায়েব যানে) তারা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনুভবই করতে পারে নাই যে, সোলাই মান (আলাইহিস সালাম) মৃত্যু বরণ করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা এরশাদ করেনঃ
অর্থঃ “যখন আমি তার (সুলায়মান) (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যু ঘটালাম, জ্বিনদেরকে তখন তার মৃত্যুর বিষয়ে জানাল শুধু মাটির পোকা, যা সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর লাঠি খাচ্ছিল। যখন সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) পড়ে গেল তখন জ্বিনেরা বুঝতে পারল যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয়ে অবগত থাকত, তাহলে তারা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না।” (সূরা সাবা-১৪)
কোন কোন আলেমের মতে সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর লাঠিকে গুণে খেতে এক বছর সময় লেগেছিল। যদি এটাকে ছয় মাসও ধরা হয় তবু ও “আম্বীয়া (আলাইহিস সালাম) গণ ক্ষনিকের জন্য মৃত্যু বরণ করেন আবার পরক্ষনেই তাদেরকে জীবন দান করা হয়” এ দাবী মিথ্যা বলে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ঠ। আল্লাহ্র বাণী অনুযায়ী সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) তার মৃত্যুর পর যতক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন, ততক্ষন তার লাঠির উপর ভর করেই দাড়িয়ে ছিলেন। যদি তিনি জীবিতই থাকতেন, তাহলে লাঠির উপর ভর করে থাকার কি দরকার ছিল? যখন উই পোকা লাঠিটিকে খেয়ে দিল, তখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। যদি তিনি জীবিতই থাকতেন তাহলে কেন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন? সূরা বাক্বারায় আল্লাহ্ তা’লা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর মৃত্যুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ যখন তার মৃত্যুর সময় হল তখন তিনি তার সন্তানদেরকে ডেকে বললঃ
ما تعبدون من بعدي
অর্থঃ আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? ছেলেরা এর উত্তরে বললঃ
অর্থঃ আমরা ঐ এক আল্লাহর ইবাদত করব যার ইবাদত করতে তুমি, তোমার পিতা, তোমার দাদা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক (আলাইহিস সালাম)। (সূরা বাক্বারা -১৩৩)
যদি নবীগণকে মৃত্যুর কিছু ক্ষন পর পুনরায় জীবিত করে দেয়া হয়, তাহলে ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) তাঁর মৃত্যুর পর স্বীয় সন্তানদের ব্যাপারে চিন্তিত কেন ছিলেন? বা তাদেরকে এ প্রশ্ন করার প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন যে আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে? যদি নবীগণ মৃত্যুর পরও জীবিত থাকতেন তাহলে তো সন্তানদের এ উত্তর দেয়া দরকার ছিল যে, আব্বাজান! আপনি আমাদের ব্যাপারে কেন চিন্তা করছেন, আপনি তো আবার ও জীবিত হয়ে আসতেছেন। আপনি এসে তো দেখতেই পাবেন যে, আমরা কার ইবাদত করছি। এ থেকে বুঝা যায় যে, না পিতার এ আকীদা ছিল না সন্তানদের যে, নবীগণ দ্বিতীয় বার পৃথিবীর জীবন পাবেন। বরং তাদের ঈমান ছিল ঐ মৃত্যুর প্রতি যা পূর্ববর্তী নবীগণ বরণ করেছেন, যে মৃত্যুর পর তারা আর পৃথিবীর এ জীবন পান নাই।
৫ - যোবাইর বিন মোতএম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, এক মহিলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) নিকট এসে কিছু কথা বলল, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য কোন সময় তাকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! যদি আমি এসে আপনাকে না পাই তাহলে আমি কি করব? বর্ণনা কারী বলেন একথার মাধ্যমে মহিলা যেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর প্রতি ইশারা করছিল।
তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি আমাকে না পাও তাহলে আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) সাথে কথা বলবে। (বোখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস থেকে নিম্ন লিখিত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ
ক - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) যোগে সাহাবাগণের আক্বীদা ছিল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর পর, না আমরা তাঁকে আমাদের কথা শোনাতে পারব, না তিনি আমাদের কোন কথা শোনতে পারবেন এবং না তিনি আমাদেরকে কোন রাস্তা দেখাতে পারবেন, না কোন সাহায্য তিনি আমাদেরকে করতে পারবেন।
খ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর উম্মতকে এ শিক্ষা কখনো দেন নাই যে, নবীগণ মৃত্যুবরণ করে না বা যদি আমি মারা যাই তাহলে আমার কবরে এসে সব কথা বলবে। বা মৃত্যুর পরও আমি পৃথিবীর জীবনের ন্যায় জীবিত থাকব অতএব আমি এসে তোমাদের কথা শোনব। বরং তিনি বলেছেন যে, আমার মৃত্যুর পর আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) নিকট আসবে।
৬ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর সাহাবাগণের মধ্যেও এ কথার গুন্জন হচ্ছিল যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি সত্যিই মৃত্যু বরণ করেছেন না করেন নাই? ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) মত পন্ডিত, ও বুদ্ধিমান সাহাবীও এ ভুলে নিপতিত ছিলেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল মৃত্যু বরণ করেন নাই, মোনাফেকদের কেল্লা উটপাটনের পূর্বে তিনি মৃত্যু বরণও করবেন না। (ইবনে মাজাহ)
এপরিস্থিতিতে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার ঐতিহাসিক বক্তব্য পেশ করলেন। তাঁর ঐ মূল্যবান বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত না মৃত” তাঁর ফায়সালা দিয়ে দিলেন। তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ এছিল যে,
من كان يعبد الله فان الله حي لايموت ومن كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات
যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে সে যেন জেনে রাখে যে, আল্লাহ্ চিরজীব, কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। আর যে, মোহাম্মদের ইবাদত করত সে যেন যেনে রাখে, যে নিশ্চয় মোহাম্মদ মুত্যু বরণ করেছেন। (ইবনে মাযাহ)
আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) বক্তব্য শোনার পর ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ “আল্লাহর কসম আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) বক্তব্য শোনে আমার কোমর ভেঙ্গে গেছে, আমি আমার পা উঠাতে পারছি না। আমি যেন জমিনে মিশে যাচ্ছিলাম, কেননা এতক্ষনে আমার বিশ্বাস হচ্ছে যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যু বরণ করেছেন। (বোখারী)
৭ - রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর আহলে বাইত (তার বংশধর) এবং সাহাবাগণের মাঝে চিন্তা ছেয়ে গেল। ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) অত্যন্ত বেদনা ভরে আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কি করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) শরীরে মাটি চাপাই লা? সাবেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহার) কষ্টের কথা বর্ণনা করতে করতে নিজেই কাঁদতে শুরু করলেন। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুতে মদীনার সর্বত্র শোকের ছায়া ছিল। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা আমাদের আন্তর সমূহকে নূরে নবুয়্যত থেকে বঞ্চিত পেয়েছি। এখন প্রশ্ন হল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যদি ক্ষনিকের জন্যই মৃত্যু বরণ করে থাকেন, তাহলে আহলে বাইত আবু বকর, ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সহ সমস্ত সাহাবাগণের মাঝে কেন চিন্তা ছেয়ে গেল। সৎ সাহশী সাহাবী ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) কোমর কেন ভেঙ্গে যাচ্ছিল?
কোর‘আন ও হাদীসের প্রমাণাদীর বাহিরে অন্য এক দিক থেকেও আমরা এ ব্যাপারে সমাধান পেশ করব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মৃত্যুর পর সা‘য়েদা বংশের একস্থানে সাহাবাগণের মধ্যে খলীফা নির্ধারণ নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছিল। আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) শাসনামলে যাকাত প্রদানে আসম্মতির ফেতনা দেখা দিয়ে ছিল। ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিরপরাধী হওয়া সত্বেও শাহাদাত বরণ করলেন।
সাহাবাগণের মাঝে সিফ্ফীন ও জামালের যুদ্ধের ন্যায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হল। কার বালায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রিয় নাতীকে নির্মম ভাবে শহীদ করা হল। আজও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মোসল মানদের উপর কতইনা নির্যাতন হচ্ছে। এর পরও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি করে জীবিত আছেন। যে তিনি খলীফা নির্ধারণের ব্যাপারে সাহাবাগণকে কোন দিক নির্দেশনা দিলেন না, না যাকাত প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপক মোরতাদদের ব্যাপারে আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে কোন দিক নির্দেশনা দিলেন।
না স্বীয় জামাতা ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) কোন সাহায্য করলেন। না সিফ্ফীন ও জামালের যুদ্ধ বন্ধ করলেন, না কারবালার প্রান্তরে স্বীয় নাতীকে কোন সহযোগীতা করলেন, এভাবে আজও যে মোসলমানদের উপর কাফেরদের পক্ষ থেকে নির্যাতন চলছে তার সবকিছু বুঝে শোনে তিনি চুপ আছেন, তাঁর প্রিয় উম্মতদেরকে কোন প্রকার সাহায্য করছেন না, না অত্যাচারীদেরকে কোন বাধা দিচ্ছেন, না তাদের বিরুদ্ধে কোন নির্দেশ প্রদান করছেন, অথচ অন্যদিকে ওলী ও সূফী গণের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন, তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সম্মানিত করছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হচ্ছেন? আমরা বিনয়ের সাথে “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” একথার দাবীদারদের খেদমতে পেশ করতে চাই যে, অনুগ্রহ করে চিন্তা করুন যে, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিত আছেন” এ আক্বীদা পোষন করে, রহমতের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) মর্যাদাকে বুলন্দ করা হচ্ছে না তাঁর মর্যাদাকে ক্ষুন করা হচ্ছে? মূলত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) বারযাখী জীবন সম্পর্কে কোর‘আন ও হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে, তা হল এই যে তিনি সমস্ত নবী, শহীদ, ওলী, থেকে উত্তম, পরিপূর্ণ, ঊর্ধে, যা না এ দুনিয়ার জীবনের ন্যায় না আখেরাতের জীবনের ন্যায়, বরং তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত আছেন। তার পবিত্র শরীর মদীনার কবরে, এমন ভাবে অক্ষত আছে যেমন আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে দাফনের সময় ছিল এবং কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই অক্ষত থাকবে। আর তার রুহ জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে আল্লাহর আরশের নিকটে আছে। আল্লাহ্ তা’লা যা চান তাকে তা পানাহার করান। (আল্লাহ্ ই এব্যাপারে সর্বধিক অবগত আছেন)
[5] - মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম লিখিত এরশাদুস্সালেকীন, ২য় খঃপৃঃ ১৯
[6] - হাজী এমদাদুল্লাহ লিখিত শামায়েম এমদাদিয়া ১০৮
[7] - এরশাদুস্সালেকীন, ১ম খঃ পৃঃ ৮০।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/298/16
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।