hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের বর্ণনা

লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী

কবরে নামাযের মহাত্ম
নামায ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, এর ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি এরশাদ করেনঃ প্রতি দিন পাঁচবার করে গোসল কারী যেমন ময়লা আবর্জনা থেকে পরিস্কার থাকে, এমনি ভাবে প্রতি দিন পাঁচবার নামায আদায় কারী ব্যক্তি পাপ মুক্ত থাকে। (বোখারী, মুসলিম)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে পাচঁ ওয়াক্ত নামায আদায় কারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ্ তা’লা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন (আহমদ, আবুদাঊদ)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযকে তাঁর চক্ষু তৃপ্তি নির্ধারণ করেছেন। (আহমাদ, নাসায়ী)

কোর‘আন মাজীদে আল্লাহ তা’লা সফল কাম লোকদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে তারা তাদের, নামাযকে সংরক্ষন করে। (সূরা মু’মেনুন-৯)

নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনের সর্ব শেষ উপদেশ ছিল নামাযের ব্যাপারেই। যে হে মানব মন্ডলী! নামায সংরক্ষন কর এবং কর্মচারীদের প্রতি সদয় হও। (ইবনে মাযাহ)

পরকালীন জীবনে নামাযের ফযিলতের গুরত্বপূর্ণ একটি দিক আমাদের সামনে রয়েছে আর তা হলঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ মোনকার নাকীর যখন মোমেন ব্যক্তিকে কবরে বসাবে তখন তার মনে হবে যেন সূর্য ডুবতেছে। অতঃপর মোমেন ব্যক্তি এবং মোনকার নাকীরের মধ্যে নিম্নোক্ত কথা বার্তা চলবেঃ

মোনকার নাকীরঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি, প্রেরিত হয়েছিল তার সম্পর্কে তোমার ধারনা কি?

মোমেনঃ একটু থাম প্রথমে আমাকে নামায আদায় করতে দাও।

মোনকার নাকীরঃ নামায পরে আদায় করবে প্রথমে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দাও।

মোমেনঃ ঐ ব্যক্তি অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে তোমরা আমাকে কি জিজ্ঞেস করতে চাও।

মোনকার নাকীরঃ আমরা যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।

মোমেনঃ একটু থাম প্রথমে আমাকে নামায আদায় করতে দাও।

মোনকার নাকীরঃ নামায পরে আদায় করবে প্রথমে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দাও।

মোমেনঃ তোমরা বার বার আমাকে কি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেছ?

মোনকার নাকীরঃ আমাদেরকে বল তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি প্রেরিত হয়েছিল। অর্থাৎ মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে তোমার ধারনা কি? তার ব্যাপারে তুমি কি সাক্ষী দাও?

মোমেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা এবং আমি আরো সাক্ষী দিচ্ছি যে সে আল্লাহর পক্ষ্য থেকে সত্য সহ কারে প্রেরিত হয়েছে।

মোনকার নাকীরঃ তুমি এই আক্বীদা (বিশ্বাসের) উপর জীবন যাপন করেছ, এরই উপর মৃত্যু বরণ করেছ, এবং এরই উপর কিয়ামতের দিন উত্থিত হবে ইনশাআল্লাহ’।[1] মোনকার নাকীর এবং মোমেন ব্যক্তির মধ্যে যে কথপোকতন হবে তা একটু গভীর ভাবে পড়ে চিন্তা করুন যে একদিকে মানব জগতের বাহিরে অন্য এক সৃষ্টি, ভয়ংকর চেহারা, কর্কশ ভাষা, একাকিত্ব, অন্ধকার, বন্ধ স্থান। অন্য দিকে নামাযীর এ মহাত্ম যে চিন্তার লেশ মাত্র নেই। কথাবার্তায় ধিরস্থিরতা যেন কোন মনিবের সামনে তার গোলাম দন্ডয়মান হয়ে কোন বিষয়ে বার বার জানতে চাচ্ছে, আর মনিব সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অন্য কোন কাজে অন্যমনস্ক আছে।

সুবহানাল্লাহ! কবরে নামাযী ব্যক্তির এ ধিরস্থিরতা, নিভয়, শুধু শুধু নামাযের বরকতেই হবে যে ব্যাপারে সে পৃথিবীতে এত অভ্যস্ত ছিল যে সূর্য ডুবতে দেখেই সর্ব প্রকার ভয় ভীতির কথা ভুলে গিয়ে নামাযের চিন্তায় চিন্তিত হয়ে যাবে, ফেরেশতাদের বার বার চাপের পরে ও সে ঐ দিকে দৃষ্টিপাত করবে। নামাযী ব্যক্তি যখন নিজে অনুভব করবে যে এটা আলমে বারযাখ এটা নামাযের স্থান নয় তখন ফেরেশ্‌তাদের প্রতি মনোনিবেশ করে ধিরস্থিরতার সাথে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিবে। ইতি পূর্বে পাঠকগণ এ গ্রন্থে পাঠ করেছেন যে কবরের আযাব থেকে রক্ষা কারী আমল সমূহের মধ্যে নামায ও একটি আমল। এ থেকে একথা অনুমান করা যায় যে, কেয়ামতের পূর্বেই নামায নামাযীর জন্য কিভাবে রহমত ও আরামের কারণ হবে। উল্লেখ্যঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহর হক সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। (তিরমিযী)

তিনি পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিতঃ

কিতাব ও সুন্নাতের প্রতি আমাদের অজ্ঞতা আমাদের আকীদার (বিশ্বাসের দূর্বলতাকে এত বিস্তার করেছে যে ডানে-বামে সামনে পিছনে সর্বত্রই শিরক আর শিরক চোখে পরে। বুযুর্গ এবং অলী গণের নামে এমন আকীদা ও ঘটনা রটানো হয়েছে যে এর ফলে পৃথিবীর কোথাও আল্লাহ তা’লার তাওহীদ এবং নবী গণের রিসালাতের নাম গন্ধ ও দেখা যায় না বললেই চলে। নাউজু বিল্লাহ্! এ সমস্ত আক্বীদার দাবী অনুযায়ী অলীগণের ক্ষমতা শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আলমে বারযাখ এবং পরকালে ও তা কার্যকর থাকবে।

আলমে বারযাখে তাদের ক্ষমতার কার্য কারীতা সংক্রান্ত আক্বীদার কিছু উদাহরণ নিম্নরূপঃ

১-মহিউদ্দীন ইবনে আরাবীকে সমকালের বাদশাহ বললঃ যে আমার ছেলেকে অসুস্থ মনে হচ্ছে, আপনার চিকিৎশায় সে সুস্থ হবে, মহিউদ্দীন ইবনে আরাবী এসে বললঃ আযরাইল তো তার রুহ কবজ করার জন্য এসে গেছে। একথা শোনে বাদশা তার পায়ে পরে গিয়ে বলল এর চিকিৎসা আপনারই হাতে। ইবনে আরাবী আযরাইলকে বললঃ থাম! আমি আমার ছেলেকে তোমার সাথে পাঠাচ্ছি, তাই সে ঘরে ফিরে এসে দরজার দিকে মুখ করে বললঃ আযরাইল! এ ছেলে উপস্থিত, সাথে সাথে ছেলেটি মাটিতে পরে গেল এবং মৃত্যু বরণ করল, এদিকে বাদশার ছেলে সুস্থ হয়ে গেল।[2]

এ ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক- আযরাইল আল্লাহকে বেতিরেখে ওলীগণের নির্দেশ পালনে বাধ্য।

খ-মানুষের জীবন ও মরন নির্ভর করে ওলীগণের ইচ্ছার উপর।

গ-ওলীগণ আল্লাহর ফায়সালা পরিবর্তন করতে সক্ষম।

২ - খাজা মাইনুদ্দীন চিশতির ঘনিষ্ঠ জনদের কেউ মারা গেছে, তখন জানাযার সাথে খাজা সাহেব ও গেলেন, দাফনের পর সকলেই চলে গেল আর খাজা সাহেব ওখানেই থাকলেন। শাইখুল ইসলাম কতুবুদ্দীন বললেনঃ আমি আপনার সাথে থেকে দেখতে ছিলাম যে প্রতিনিয়ত আপনার চেহারার রং পরিবর্তন হচ্ছিল আর এতক্ষনে পূর্বের অবস্থায় তা ফিরে এসেছে, তখন তিনি ওখান থেকে একটু সরে গিয়ে বললেনঃ আলহামদু লিল্লাহ! বায়াত বহুত ভাল জিনিস, শাইখুল ইসলাম কতুবুদ্দীন এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যখন তাকে দাফন করে সব লোক চলে গেল তখন আমি দেখলাম যে আযাবের ফেরেশতা এসে তাকে আযাব দিতে চাইতেছে, তখন শাইখ ওসমান হারুনী (খাজা সাহেবের মরহুম পীর) উপস্থিত হয়ে ফেরেশতাদেরকে বললঃ এ ব্যক্তি আমার মুরীদ, এদিকে ফেরেশতাদেরকে বলা হল যে, তোমরা বল যে সে তোমার বিরোধী ছিল। খাজা সাহেব বললঃ সে আমার বিরোধী ছিল বটে কিন্তু এরপরও সে এ ফকীরের দলে ছিল, তাই আমি চাইনা যে সে আযাব ভোগ করুক। ফরমান হল যে শাইখের মুরিদের উপর থেকে হাত তুলে নাও আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।[3]

এ ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক-আযাব দেয়া ও না দেয়ার অধিকার ওলীগণের ও আছে।

খ-গোনাহ মাফের ক্ষমতাও ওলীগণের আছে।

গ-ওলীগণের হাতে বায়াত করাই গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট।

৩ - গাউস পাকের যোগে এক ব্যক্তি অত্যন্ত বেশী পাপী ছিল। কিন্ত গাউস পাকের সাথে তার যথেষ্ট ভাল সম্পর্কও ছিল, তার মৃত্যুর পর যখন মোনকার নাকীররা তাকে প্রশ্ন করতে লাগল তখন সে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরে বলতে ছিল “আব্দুল কাদের”। আল্লাহর পক্ষ্য থেকে মোনকার নাকীরকে বলা হল এবান্দা যদি ও ফাসেক, কিন্ত সে আব্দুল কাদেরকে মহাব্বত করত, অতএব আমি তাকে ক্ষমা করেদিলাম।[4] এঘটনা থেকে একথা পরিস্কার ভাবে বুঝা যায় যে, ওলীগণকে মহব্বত কারীরা যদিও ফাসেকই হোকনা কেন অবশ্যই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। উল্লেখ্য যে আলেমগণের মতে ফাসেক ঐ ব্যক্তি যে কবীরা গোনাগার যেমনঃ নামায ত্যাগকরী, ব্যভীচার কারী, মদপান কারী ইত্যাদি।

৪ - যখন শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী এ পৃথিবী থেকে মৃত্যুবরণ করলেন তখন তিনি এক বুযর্গকে স্বপ্ন যোগে বললেনঃ যে মোনকার নাকীররা যখন আমাকে প্রশ্ন করল যে তোমার প্রভূ কে? আমি তখন তাদেরকে বললামঃ ইসলামী ত্বরীকা হল এইযে প্রথমে সালাম এবং মোসাফাহা করা, তখন ফেরেশ্‌তারা লজ্জিত হয়ে মোসাফাহা করল আর শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রাহিমাহুল্লাহ) শক্ত করে তার হাত ধরে নিলেন এবং বললেনঃ আদমকে সৃষ্টি করার সময় তোমরা আদম সৃষ্টির ব্যপারে।

قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡہَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡہَا وَ یَسۡفِکُ الدِّمَآءَ

অর্থঃ “আপনি কি যমিনে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে অশান্তি সৃষ্টি করবে।” (সূরা বাকারা-৩০)

একথা বলে নিজেদের জ্ঞানকে আল্লাহর জ্ঞানের চেয়ে অধিক বলে মনে করার মত বেয়াদবী করলা কেন? এবং সমস্ত আদম সন্তানদেরকে ফাসাদ কারী বলে অপবাদ কেন দিয়ে ছিলা? তোমরা যদি আমার এ প্রশ্ন সমূহের উত্তর দিতে পার তাহলে আমি তোমাদেরকে ছাড়ব অন্যথায় নয়। মোনকার নাকীররা হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকল এবং নিজে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু এ যাবারুত এবং বাহরে লাহুতের সাথে ফেরশ্‌তার শক্তি কি কাজে আসবে। অপারগ হয়ে ফেরেশতা আরয করল জনাব একথা সমস্ত ফেরেশ্‌তারা বলেছিল আমি একা বলি নাই অতএব আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, যাতে করে আমি অন্য ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করে উত্তর দিতে পারি, তখন হযরত গাউসুস সাকালাইন (রাহিমাহুল্লাহ) এক ফেরেশতাকে ছেড়ে অপর জনকে ধরে রাখলেন, ঐ ফেরেশতা গিয়ে অন্যদেরকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললঃ তখন সমস্ত ফেরেশতারা এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ হয়ে গেল।

অতঃপর আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসল যে তোমরা আমার মাহবুবের খেদমতে উপস্থিত হয়ে তোমাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করাও। ফলে সমস্ত ফেরেশতা মাহবুবে সুবহানাহু (রাহিমাহুল্লাহ) খেদমতে উপস্থিত হয়ে ওযুর পেশ করল, ততক্ষনে আল্লাহ তালার পক্ষ থেকেও সাফাআতের ইশারা আসল, তখন গাউসে আজম আল্লাহ্ তালার নিকট আরয করল যে, হে খালেকে কুল (সবকিছুর স্রষ্টা! হে সর্বশ্রেষ্ট রব্ব! স্বীয় রহম ও করমে তুমি আমার মুরীদদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদেরকে মোনকার ও নাকীরের প্রশ্ন থেকে মুক্ত রাখ, তাহলে আমি এ ফেরেশতাদেরকে ক্ষমা করব। ফরমানে এলাহী জারী হল যে হে আমার মাহবুব আমি তোমার দূয়া কবুল করলাম, তুমি ফেরেশতাদেরকে ক্ষমা কর। তখন জনাব গাউস ফেরেশতাদেরকে ছেড়ে দিলেন এবং তারা ফেরেশতা জগতে চলে গেল।[5]

উল্লেক্ষিত ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ঃ

ক- ফেরেশতাদেরকে ওলীদের নিকট জওয়াব দেহি হতে হবে।

খ-ফেরেশতাগণ ওলীদের মোকাবেলায় অক্ষম।

গ-আব্দুল কাদের জিলানীর সমস্ত মুরীদরা কবরের ফেতনা থেকে মুক্ত।

আওলীয়ায়ে কেরাম ও সূফিয়ে এজামদের ঘটনাবলীর পর নবীর যোগে মৃত্যুবরণ কারী সাহাবাগণের কিছু ঘটনা শুনুনঃ

১- আওস কাবীলার সরদার সা’আদ বিন মোয়াজ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যুর পর রহমতের নবী এসে সা’দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মাথা স্বীয় রানের উপর রাখলেন এবং আল্লাহর নিকট দূয়া করলেনঃ হে আল্লাহ! সা’দ তোমার দ্বীনেব ব্যাপারে বহু কষ্ট স্বীকার করেছে, তোমার রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলেছে, হে আল্লাহ! তার রুহের প্রতি ঐ আচরণ কর যা তুমি তোমার প্রিয় জনদের সাথে কর। সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন সা‘দের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে। (বোখারী, মুসলিম)

সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযা যখন বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তা হালকা মনে হচ্ছিল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযা ফেরেশতাগণও বহন করছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই তার জানাযা পড়িয়েছেন এবং নিজের প্রিয় সাহাবীর জন্য মাগফেরাতের দূয়া করেছেন। জানাযার নামাযের পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেনঃ সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযায় সত্তর হাজার ফেরেশতা অংশ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরো এরশাদ করলেনঃ সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর রুহের জন্য আকাশের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়েছে যাতে করে যে দরজা দিয়ে খুশী সে দরজা দিয়ে তার রুহ উপরে আরোহন করতে পারে। মদীনার বাকীউল গারকাদ নামক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। আবুসায়ীদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার কবর খনন করছিলেন আর বলছিলেন যে, আল্লাহর কসম আমি এ কবর থেকে মেসক আম্বরের গ্রাণ পাচ্ছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পবিত্র হাতে এ লাশ কবরস্ত করেছেন। কবরে মাটি দেয়ার পর তিনি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! বলতে থাকলেন। সাহাবাগণও তাঁকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলুই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলেন।

এরপর তিনি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, বলতে শুরু করলেন সাহাবীগণও তাঁকে লক্ষ করে এ কথাগুলোই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলেন। দূয়া শেষ করার পর সাহাবাগণ আরয করলেন “হে আল্লাহর রাসূল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি তাসবীহ ও তাকবীর কেন দিলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন দাফনের পর কবর সা’আদকে চেপে ধরে ছিল তাই আমি আল্লাহর নিকট দূয়া করলাম তখন আল্লাহ তা প্রশস্ত করে দিলেন। অন্যত্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন যে কবরের চেপে ধরা থেকে যদি কেউ মুক্তি পাওয়ার মত থেকে থাকে তাহলে সে ছিল সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)।[6]

সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়ঃ

ক- গোনাহ মাফের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর ই হাতে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ব্যাপারে, সে ঈমানদার বলে সাক্ষী দিয়েছেন বটে কিন্তু এরপরে ও তার জন্য মাগফেরাত কামনা করেছেন আল্লাহর নিকট।

খ- সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর জানাযার নামায তিনি নিজেই পড়িয়েছেন, সত্তর হাজার ফেরেশতা তাঁর জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছে। তার রুহের জন্য আকাশের সমস্ত দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল, তার মৃতদেহ রহমতের নবী তাঁর পবিত্র হাতে ধরে কবরস্ত করেছেন, এর পরও কবর সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে চেপে ধরে ছিল, এ থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তার ফায়সালাকে আল্লাহর রাসূল পরিবর্তন করতে পারেন নাই, না সত্তর হাজার ফেরেশতা।

গ- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দেখলেন যে কবর সা‘আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে চেপে ধরেছে তখন তিনি চিন্তিত হয়ে আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর পবিত্রতা, তাঁর বড়ত্বের গুণ গান করতে থাকলেন এবং ততক্ষন পর্যন্ত তা করলেন যতক্ষন না সা’আদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের কষ্ট থেকে মুক্তি পেলেন। এ থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহর নিকট বিনয় ও নম্রতার সাথে দরখাস্ত করা যায় কিন্ত যবর দুস্তি করে আল্লাহর রাসূল ও কোন কথা আল্লাহকে মানাতে পারে না।

২-দ্বিতীয় ঘটনাটি ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহুর)। ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মক্কা থেকে হিজরত করে মদী নায় আসার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারণ কৃত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে উম্মুল আলা আনসারিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহার) ঘরে অবস্থান নেন। তার মৃত্যুর পর উম্মুল আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপুস্থিতিতে বললেনঃ “হে আবু সায়েব! ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর উপাধি, তোমার প্রতি আল্লাহ্ রহম করুন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তোমাকে তোমার মৃত্যুর পর ইজ্জত দিয়েছেন” তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন “তুমি কি করে তা বুঝতে পারলে যে আল্লাহ তাকে ইজ্জত দিয়েছেন?” তখন উম্মুল আলা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক আল্লাহ্ যদি তাকে ইজ্জত না দেন তাহলে আর কাকে ইজ্জত দিবেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় ওসমান মৃত্যু বরন করেছে, আল্লাহর কসম আমিও তার জন্য আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করি। কিন্ত আল্লাহর কসম আমি জানিনা যে কিয়ামতের দিন আমার কি অবস্থা হবে অথচ আমি আল্লাহর রাসূল। (বোখারী)

উল্লেখ্য যে ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দুই বার হাবশায় হিযরত করেছেন এবং তৃতীয় বার মদীনায় হিযরত করার সুভাগ্য হয়ে ছিল তার। তার মৃত্যুর পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন বার তার কপালে চুমা দিয়েছেন এবং বলছেন যে তুমি পৃথিবী থেকে এমন ভাবে বিদায় নিলে, যে পৃথিবীর লোভ লালসা তোমাকে বিন্দু পরিমানে ও স্পর্শ করতে পারে নাই। ওসমান বিন মাজউন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর মৃত্যুর ঘটনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ স্পষ্ট হয়।

ক-আল্লাহর নিকট কার কি মর্যাদা তা কেউ জানেনা।

খ- গোনাহ মাফ করা বা না করা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাদিন।

গ- আল্লাহ্ তা’লার বরত্ব ও মর্যাদার সামনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও অক্ষম।

প্রিয় পাঠক আপনি অবগত আছেন যে দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি হল কোর‘আন ও সুন্নাতের উপর। আর এ দুইটি বস্তু আমাদেরকে এশিক্ষা দেয় যে আল্লাহ্ তা’লা তাঁর সমস্ত বান্দাদের উপর সর্ব শক্তি মান। কারো গোনাহ মাফ করে দেয়া বা না দেয়া তাঁরই ইচ্ছা দিন। কাওকে আযাব থেকে মুক্ত করে দেয়া বা না দেয়া ও তারই ইচ্ছা দিন। তিনি যা খুশী তাই করেন, সারা পৃথিবীর আম্বীয়া এবং ফেরেশতাগণ মিলেও তাঁর বিধানের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না। তার সমস্ত সিদ্ধান্ত সমূহকে বাস্তবায়ন করার একছত্র অধিকারী তিনিই। সমস্ত জগত সমূহে তিনিই একমাত্র “আজীজ” (পরাক্রমশালী) তিনি একাই জাব্বার (প্রবল), তিনি একাই মোতকাব্বের (অতীব মহিমান্বিত)। এমন বিষয় থেকে তিনি অত্যন্ত পুত ও পবিত্র যে তিনি কোন নবী বা ওলীর নিকট সুপারিশ করবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যোগে ঘটে যাওয়া দুইটি ঘটনা থেকে এশিক্ষাই পাওয়া যায়। বুযর্গ এবং ওলীগণের নামে রটানো ঘটনাবলী নবীর যোগের শিক্ষা এবং উপরে উল্লেক্ষিত দুইটি ঘটনার সম্পূর্ণ বিপরিত, প্রকৃত পক্ষে বুযর্গ এবং ওলীগণের নামে রটনা কৃত ঘটনাবলী আল্লাহ্‌র সানে অত্যন্ত বড় ধরনের বেয়াদবী, যে এর ফলে কারো উপর আকাশ ভেঙ্গে পরা বা কাওকে নিয়ে যমিন ধসে গেলে আশ্চার্য হওয়ার কিছু নেই। আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ তা’লা এ সমস্ত শিরকী কথা বার্তা থেকে বহু ঊর্ধে যা মোশরেকরা বলে থাকে।

سبحان ربك رب العزة عما يصفون

অর্থঃ “তোমার ইজ্জত ওয়ালা রব্ব তারা যা বলে তা থেকে অত্যন্ত পুত ও পবিত্র।”

ফুটনোট

[1] - মোস্তাদরাক হাকেম ১/১৪৪৩

[2] - মুরশিদে কামেল, তরজমা হাদায়েকুল আখবার, সাদেক ফারখান পৃঃ২৩

[3] - রাহাতুল কুলুব, মালহুযাত খাজা ফরিদুদ্দীন সাকের গন্‌জ, নেজামুদ্দীন আওলীয়া সংকলিত ১৩২পৃঃ।

[4] - সীরাতে গাউস পৃঃ২১৪

[5] - মোখতাসারুল মাজালেছ, হযরত রিয়াজ আহমদ গাওহার সাহী লিখিত পৃঃ ৮-১০

[6] বিস্তারিত দেখুন মোস্তাদরাক হাকেম - (৪/৪৯৮১-৪৯৮৩)।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন