hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কবরের বর্ণনা

লেখকঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী

হে হুশিয়ার ব্যক্তি বর্গ! হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ
হে একক, অন্ধকার, ভয়ানক, দুঃখ ভরাক্রান্ত পথের যাত্রিরা শোন! খালী হাতে, সাথী বিহীন দুঃখ্য ভরাক্রান্ত যাত্রা পথে, ঈমান, ও নেক আমল..... নামায, যাকাত, রোজা, হজ-ওমরা, কোর‘আন তেলাওয়াত, দূয়া-দরূদ, দান-খয়রাত, নফল ইবাদত, পিতা-মাতার প্রতি সদ ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, এতীম-বিধবাদের প্রতি সদ আচরণ, ন্যায় পরায়নতা, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ ইত্যাদি পাথেয় হবে। যা আতঙ্ক দূর করবে, আলোদিবে, একাকীত্ব দূর করবে, যান ও জীবনের জন্য আরামের পাথেয় যোগাবে।

অতএব হে দুঃখ ভরাক্রান্ত পথের পথিক....! রওয়ানা হওয়ার পূর্বে মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশী অনুগ্রহ পরায়ন, সবচেয়ে বেশী মায়াবী, সবচেয়ে বেশী কল্যাণ কামী এবং সবচেয়ে বেশী সহানুভুতিশীল, দয়াল নবীর উপদেশ একটু মনোযোগ সহ শোন....! একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দুঃখ্যভরাক্রান্ত পথের (কবরের) পার্শ্বে বসে অশ্রুসজল হয়েগেলেন এমন কি তাঁর চোখের পানিতে কবরের মাটি ভিজে গেল, আর তিনি তাঁর সাহাবাগণকে সম্ভোধন করে বললেনঃ

( زبان خوانی لمثل هذا فأعدوا )

অর্থঃ “হে আমার ভায়েরা এমন পরিণতী বরণে প্রস্তুতি নেও”। (ইবনে মাযাহ)

অতএব আমাদের মাঝে কে আছে যে রহমতের নাবীর কথাগুলি মানবে, এবং ঐ দুঃখ ভরাক্রান্ত পথে সফরের প্রস্তুতি নিবে।

( وصلی انه على نبينا محمد و آله و صحبه اجمعين )

পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি

সমস্ত প্রশংসা রাব্বুল আলামীনের জন্য এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর বিশস্ত রাসূলের প্রতি আর শেষ পরিণতি মোত্তাকীনদের জন্য।

এ মনপুত আরামদায়ক জীবনের শেষে আগত সবচেয়ে কঠিন, বেদনাদায়ক, স্তর হল মৃত্যু। মৃত্যু ঐ তিক্ত স্বাদ যা প্রত্যেক প্রাণীকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡت

অর্থঃ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (সূরা আম্বীয়া-৩৫)

অন্যত্র আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

کُلُّ شَیۡءٍ ہَالِکٌ اِلَّا وَجۡہَہ

অর্থঃ “আল্লাহর চেহারা (সত্বা) ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল।” (সূরা কাসাস- ৮৮)

মৃত্যুর পর কোন মানুষ ফিরে আসে না, তাই মৃত্যুর ভয়াবহতা হুবহু বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কিন্ত কোর‘আন ও হাদীসে মৃত্যুর কঠিনতা ও ভয়াবহতার ব্যপারে, যা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে অনুমান হয় যে পৃথিবীর সর্বপ্রকার দুঃখ্য ব্যথা, চিন্তা, কষ্ট, বিপদ যদি একত্রিত হয়, তাহলে মৃত্যুর কষ্ট কয়েক গুণ বেশী হবে। সূরা ক্বাফে আল্লাহ তা’লা এরশাদ করেনঃ

وَ جَآءَتۡ سَکۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَق

অর্থঃ “মৃত্যুযন্ত্রনা সত্যই আসবে।” (সূরা ক্বাফ-১৯)

আয়াতে বণিত ( حق ) থেকে উদ্দেশ্যঃ আলমে বারযাখের প্রকৃত অবস্থা। ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাওয়া যাবে, আযাব বা সোয়াব সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যাবে। মৃত্যুর কঠোরতা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা ক্বিয়ামায় বর্ণিত হয়েছেঃ

کَلَّاۤ اِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِیَ ﴿ۙ ۲۶﴾ وَ قِیۡلَ مَنۡ ٜ رَاقٍ ﴿ۙ ۲۷﴾ وَّ ظَنَّ اَنَّہُ الۡفِرَاقُ ﴿ۙ ۲۸﴾ وَ الۡتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ ﴿ۙ ۲۹﴾

অর্থঃ কিছুতেই (তোমাদের ধারনা ঠিক) নয়, যখন প্রাণ উষ্ঠাগত হবে, এবং বলা হবেঃ কে তাকে রক্ষা করবে? তখন তার প্রত্যয় হবে যে, এটা তাদের বিদায় ক্ষণ! এবং পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাবে।” (সূরা ক্বিয়ামাহ-২৬-২৯)

পায়ের সাথে পা জড়িয়ে যাওয়ার অর্থ হল মৃত্যুর সময় মৃত্যু যন্ত্রনা পর্যায় ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে মানুষের প্রাণ বের হয়ে যায়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ মৃত্যু যন্ত্রনা অত্যন্ত কঠিন। (আহমদ)

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ স্বাদ বিনষ্টকারীকে (মৃত্যু) বেশি বেশি স্মরণ কর। (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ)

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে অসুস্থতায় পতিত হয়ে মৃত্যু বরন করেন সেখানে তাঁর অবস্থা এ ছিল যে পানির পাত্র সাথে রাখতেন এবং সেখানে বারংবার হাত ভিজিয়ে চেহারায় মুছতেন, স্বীয় চাদর দিয়ে কখোন মুখ ঢাকতেন, আবার কখোন তা মুখ থেকে সড়িয়ে নিতেন, যখন মৃত্যু যন্ত্রনায় বেহুশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতেন তখন তিনি তার চেহারা থেকে ঘাম মুছতেন আর বলতেন?

سبحان انه ان للموت لسكر انت سبحان الله !

অর্থঃ “মৃত্যু যন্ত্রনা বড় কঠিন।” (বোখারী)

আয়শা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) মৃত্যু যন্ত্রনা দেখার পর কারো মৃত্যু যন্ত্রনা আমার নিকট আর কঠিন বলে মনে হতনা।” (বোখারী)

জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) যবানে অস্পষ্টতা এসে গিয়েছিল। (ইবনে মাযাহ)

(মিশর বিজয়ী সাহাবী) আমর ইবনুল আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বার বার বলতেন ঐ সমস্ত লোকদেরকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে মৃত্যুর সময় যাদের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকে অথচ তারা কেন যেন মৃত্যুর হাকীকত বর্ণনা করেনা। আমর বিন আস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন মৃত্যু সয্যায় সায়িত ছিলেন তখন তাকে আবদুল্লা বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তার ঐ কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) শীতল নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলতে লাগলেনঃ মৃত্যুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করার মত নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি যে আমার মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর উপর আকাশ ভেঙ্গে পরেছে আর আমি এ উভয়ের মাধ্যমে পেশিত হচ্ছি এবং আমার কাঁধে মনে হয় কোন পাহাড় রাখা হয়েছে, পেটে খেজুরের কাটা ভরে দেয়া হয়েছে, আর মনে হচ্ছে যে আমার শ্বাস সূয়ের ছিদ্র দিয়ে বের হচ্ছে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মোমেন ও কাফেরের মৃত্যুর আলাদা ধরনের কথা বর্ণনা করেছেন। যার সার সংক্ষেপ এই যে যখন মোমেনের মৃত্যুর সময় হয়, তখন সূর্যের ন্যায় আলোক ময় চেহারা সম্পন্ন ফেরেশতা জান্নাত থেকে সুগন্ধময় রেশমী কাফন সাথে নিয়ে এসে মোমেন ব্যক্তিকে সালাম করে, মালাকুল মাওত তার রুহ কবজ করার পূর্বে তাকে সুসংবাদ দেয় যে হে পবিত্র আত্মা! তুমি খুশী হও তোমার জন্য রয়েছে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের নে’মত সমূহ। এ সু সংবাদ সোনে মোমেন ব্যক্তির অন্তর আল্লাহর নিকট যাওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে যায়।

আর মোমেন ব্যক্তির আত্মা তার শরীর থেকে এমন ভাবে বের হয় যেন কোন পানির বোতলের মুখ খুলে দিলে পানি বের হয়ে যায়। ফেরেশতা রুহ কবজ করার পর তা সুগন্ধময় সাদা রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে আকাশের দিকে নিয়ে যায়, তখন মোমেন ব্যক্তির রুহ থেকে এত বেশী সুগন্ধ বের হয় যে, আকাশের ফেরেশতাগণ তা অনুভব করে একে অপরকে বলতে থাকে যে কোন মোমেন ব্যক্তির রুহ উপরে আসছে।” ফেরেশতাগণ আকাশের দরজা নখ করা মাত্র প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ জিজ্ঞাস করে যে এ কোন পবিত্র আত্মা? উত্তরে তাকে বহন কারী ফেরেশতাগণ বলে যে সে অমুকের ছেলে অমুক, তখন আকাশের ফেরেশতাগণ তার জন্য দরজা খুলে দেয় এবং তাকে সু স্বাগতম জানায়।

ঐ পবিত্র আত্মাকে আল্লাহর রহমত ও নে’মতের সুসংবাদ দেয়। ফেরেশতাগণ তাকে দ্বিতীয় আকাশে নিয়ে যায় প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ তাকে সম্মান সরুপ দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত তাকে বিদায় জানাতে তার সাথে যায়। দ্বিতীয় আকাশে মোমেনের আত্মাকে প্রথম আকাশের ন্যায় সু স্বাগতম জানানো হয়, অতঃপর তৃতীয় চতুর্থ, এমন কি সপ্তম আকাশ পর্যন্ত রুহ পৌঁছে যায়। ওখানে পৌঁছার পর আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে নির্দেশ আশে যে আমার এবান্দার নাম ইল্লিয়ীনে (উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন লোকদের তালিকায়) লিখ। অতঃপর প্রশ্ন উত্তরের জন্য তার রুহ পুনরায় শরীরে ফেরত পাঠানো হয়।

কবরে আগন্তক ফেরেশতা গণকে মোনকার ও নাকীর বলে, তাদের, চেহারা কালো চোখ মোটা মোটা উজ্জল, দাত গভীর সিংয়ের ন্যায় বড় বড় বিজলির ন্যায় চমক দার, ঐ দাত দিয়ে মাটি ঘসতে ঘসতে এসে কর্কশ স্বরে বলবেঃ ( من ربك ) তোমার প্রভু কে? ( من نبيك ) তোমার নবী কে? ( مادينك ) তোমার দ্বীন কি ছিল? কবরের অন্ধকার, একাকীত্ব, মোনকার নাকীরের ভয়ানক চেহারা দেখা সত্বে ও মোমেন ব্যক্তি কোন প্রকারের ভয় অনুভব করবে না। বরং ধিরস্থিরতার সাথে মোন কার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দিবে। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় কোন কোন ঈমানদারের নিকট সূর্য অস্তমিত হওয়ার মত মনে হবে।

তাই মোমেন ব্যক্তি ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তরে বলবে একটু দাড়াও আমাকে আগে নামায পড়তে দাও, এর পর আমি তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিব। অতঃপর যখন সে অনুভব করবে যে, এটা নামায আদায়ের স্থান নয়, তখন সে মোনকার নাকীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়া শুরু করবে। প্রশ্ন উত্তরের পর জাহান্নামের দিকে একটি ছিদ্র করে মোমেন ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুণ দেখানো হবে এবং বলা হবে যে ঐটা জাহান্নাম, যেখান থেকে আল্লাহ স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে তোমাকে রক্ষা করেছে। অতঃপর জান্নাতের দিকে একটি ছিদ্র বা দরজা খুলে দেয়া হবে, যার ফলে মোমেন ব্যক্তি জান্নাতের নে’মত সমূহ দেখে আনন্দ অনুভব করবে।

ঐ সময়ে মোমেনকে জান্নাতে তার বাসস্থান ও দেখানো হবে, তার কবর সত্তর হাত বা যতদূর দৃষ্টি যাবে তত দূর পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে এবং তার কবরকে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আলোর ন্যায় আলোক ময় করে দেয়া হবে জান্নাতের সুগন্ধিময় পোশাক তাকে পরানো হবে। জান্নাতের সুগন্ধিময় আরামদায়ক নরম বিছানা তার জন্য প্রস্তুত করে দেয়া হবে। কবরে মোমেন ব্যক্তির সামনে খুব সুন্দর চেহারা সম্পণ্য সুগন্ধিময় পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি আসবে, মোমেন ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাস করবে যে তুমি কে? সে বলবে আমি তোমার নেক আমল, তোমাকে পরকালীন জীবনে আরাম ও সুখ-শান্তির সু সুংবাদ দিতে এসেছি।

তখন মোমেন ব্যক্তি দূয়া করবে যে হে আমার প্রভূ! তুমি তাড়াতাড়ি কিয়ামত সংঘটিত কর। যাতে করে আমি আমার পরিবার পরিজনের সাথে দ্রুত সাক্ষাৎ করতে পারি। কোন কোন হাদীসে এও বর্ণিত হয়েছে যে, মোমেন ব্যক্তি বলবে যে আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট ফেরৎ যেতে চাই, যাতে করে তাদেরকে আমার শুভ পরিণতি সম্পর্কে আবগত করাতে পারি। উত্তরে ফেরেশতাগণ বলবে যে তুমি এখন বরের ন্যায় আরামে শুয়ে যাও কেননা ফেরৎ যাওয়া সম্ভব নয়। তখন মোমেন ব্যক্তি শুয়ে যাবে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সে এভাবে ঘুমাতে থাকবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে উঠাবেন এবং তখন থেকে তার পরকালীন সফরের পরবর্তী স্তর শুরু হবে।

যার বিস্তারিত বর্ণনা ইনশআল্লাহ সামনে আসবে। যখন কাফেরের মৃত্যুর সময় আসে তখন তার যান কবজ করার জন্য অত্যন্ত কুৎসিত চেহারা সম্পন্য ফেরেশতা দূরগন্ধ ময় কাফন সাথে নিয়ে এসে তাকে হে খবীছ রুহ! হে অসন্তুষ্ট রুহ! ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে সম্বোদন করে তাকে আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নামের সু সংবাদ দেয়। শোনে কাফেরের রুহ শরীর থেকে বের হতে চায়না। তখন ফেরেশতাগণ তার রুহ এমন ভাবে যোর করে বের করে যেমন অকেজু লোহা কোন খুঁটি থেকে যোর করে বের করা হয়। কোর‘আন মাজীদে তা বের করার পদ্ধতির কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,

وَ النّٰزِعٰتِ غَرۡقًا ۙ ﴿۱﴾

অর্থঃ শপথ তাদের (ফেরেশতার) যারা নির্মম ভাবে উৎপাটন করে। (সূরা নাযিয়াত-১)

অর্থাৎ তাদের রুহ বের হতে চায়না কিন্তু ফেরেশতাগণ তা যোর করে বের করে নেয়।

অন্যত্র আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেনঃ

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡہُوۡنِ بِمَا کُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰہِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ کُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِہٖ تَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۹۳﴾

অর্থঃ আর যদি তুমি দেখতে পেতে ঐ সময়ের অবস্থা যখন যালিমরা সম্মুখীন হয় মৃত্যু সংকটে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবেঃ নিজেদের প্রানগুলো বের কর, আজ তোমাদেরকে সে সব অপরাধের শাস্তি হিসেবে লাঞ্ছনাময় শাস্তি দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা দোষারোপ করে অকারণে প্রলাপ বকছিলে এবং তার আয়াত সমূহ কবুল করতে অহংকার করছিলে। (সূরা আনআম -১৯৩)

এ সময়ে কাফেরের রুহ থেকে এত দূরগন্ধ আসে, যেমন কোন পচা গলা মৃত দেহ থেকে বর্ণনাতীথ দূর গন্ধ আসে। ফেরেশতা যখন তাকে আকাশের দিকে নিয়ে যেতে থাকে, তখন আকাশের ফেরেশতাগণ ওখানে থেকেই অনুভব করেন এবং বলেন যে কোন খবীছ রুহ আকাশের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে। যখন মালাকুল মাওত কাফেরের দূর গন্ধময় রুহ নিয়ে প্রথম আকাশে পৌঁছে তখন দরজায় টোকাদেয় মাত্র জিজ্ঞাস করা হয় যে কে সে? উত্তরে মালাকুল মাওত বলেঃ সে ওমকের ছেলে ওমক।

তখন আকাশের ফেরেশতাগণ বলেন এই খবীছ শরীরের খবীছ আত্মার জন্য কোন সু-স্বাগতম নেই। তার জন্য আকাশের দরজা সমূহ খোলা হবেনা। তাকে অপদস্ত ভাবে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাও। তখন ফেরেশতা তাকে প্রথম আকাশ থেকেই মাটিতে ফেরত পাঠায়। এদিকে আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে তার নাম সিজ্জিনে (পাপিষ্ঠদের লিষ্ট ভুক্ত কর)। অতঃপর তার রুহকে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন- উত্তরের জন্য তার শরীরে পাঠানো হয়। কবরে মোনকার নাকীর যখন কাফেরের নিকট আসে তখন সে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়।

মোনকার নাকীর তাকে জিজ্ঞেস করে যেঃ ( من ربك؟ ) তোমার প্রভূ কে? ( من نبيك؟ ) তোমার নাবী কে? ( مادينك؟ ) তোমার দ্বীন কি ছিল? কাফের উত্তরে বলবেঃ ( هاه هاه لاادزى؟ ) আফসোস! আমি কিছুই জানিনা। আর যদি মৃত ব্যক্তি মোনাফেক হয় তাহলে বলবেঃ মানুষকে আমি যা কিছু বলতে শুনতাম আমিও তাই বলতাম।

কাফের বা মোনাফেকের এই উত্তরের পর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে, জান্নাতের নে’মত সমূহ তাদেরকে এক পলক দেখানো হয় এবং বলা হয় যে, এ হল ঐ জান্নাত যেখান থেকে আল্লাহ তোমাকে তোমার কুফরী বা মোনাফেকীর কারণে বঞ্চিত করেছে। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি রাস্তা খুলে দেয়া হয়, যেখান থেকে সে জাহান্নামের শাস্তি পেতে থাকবে, সাথে সাথে জাহান্নামে তার অবস্থান স্থল ও তাকে দেখানো হবে এর পর আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম আসবে যে তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও।

অতঃপর অন্ধ এবং বোবা ফেরেশতা তার উপর তাকে নেস্ত করা হবে, যে তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে প্রহাড় করতে থাকবে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ ঐ হাতুড়ী এত ভারী হবে যে, এর দ্বারা যদি কোন পাহাড়ে আঘাত করা হয়, তাহলে পাহাড় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। এর সাথে আরো থাকবে বিভিন্ন সাপ বিচ্ছু যা কিয়ামত পর্যন্ত তাকে ছোবল মারতে থাকবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেনঃ কবরের সাপ-বিচ্ছু এত বিষাক্ত হবে যে যদি তা যমিনে এক বার নিঃস্বাস ত্যাগ করে, তাহলে যমিনে আর কোন দিন ঘাস উৎপন্ন হবে না।

এসমস্ত আযাবের সাথে কাফেরকে আরো একটি অতিরিক্ত আযাব দেয়া হবে আর তাহল, কবরের দুই পার্শ্বের মাটি তাকে বারবার চাপতে থাকবে। যার ফলে তার এক পার্শ্বের হাড্ডি অপর পার্শ্বে চলে যাবে। এ সমস্ত আযাব কিয়ামত পর্যন্ত সে ভোগ করতে থাকবে। কবরে কাফেরের পার্শ্বে এক কুৎসিত চেহারা সম্পন্য, দূর্গন্ধময়, ভীতিকর এক ব্যক্তি আসবে, তাকে দেখে কাফের বলবে? কে তুমি? সে বলবে আমি তোমার আমল তোমাকে তোমার খারাপ পরিনতির কথা জানাতে এসেছি। কাফের ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলবেঃ হে আমার প্রভূ! কিয়ামত সংঘটিত করিওনা।

এ কাফের মৃত্যুর পর থেকেই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত এ সমস্ত শাস্তি সমূহে নিপতিত থাকবে। আল্লাহ তা’লা তার দয়া ও অনুগ্রহে সমস্ত মোসলমানদেরকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমীন! প্রশ্ন-উত্তরের পর মোমেন ব্যক্তির রুহ ইল্লিয়িনে রাখা হয়। আর কাফের ও মোনাফেকদের রুহ রাখা হয় সিজ্জিনে। উল্লেখ্যঃ ইল্লিয়িন বয়ের নাম ও যেখানে ঈমানদার গণের নাম লিখিত হয় এবং তা স্থানেরও নাম, যেখানে ঈমানদারগনের রূহ কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। অনুরূপ ভাবে সিজ্জিন বয়েরও নাম যেখানে কাফের ও মোশরেকদের নাম লিখা হয় এবং স্থানেরও নাম যেখানে কাফের ও মোশরেকদের রুহ সমূহ কেয়ামত পর্যন্ত বন্দী হয়ে থাকবে। এব্যাপারে আল্লাই ভাল জানেন!

এহল কঠিন তম স্থান কবর যে ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কবরের চেয়ে কঠিনতম স্থান আর কোথাও দেখিনাই। (তিরমিযী)

ঐ কবরের ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা তিনি তার সাহাবা গনকে শিক্ষা দিতেন, যে তোমরা তাথেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। (আহমদ)

আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কবরের ফেতনাথেকে আশ্রয় চাওয়ার দূয়া এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যে ভাবে কোর‘আনের আয়াত শিক্ষা দিতেন। (নাসায়ী)

একদা খুৎবা দিতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাগণকে সতর্ক করলেন যে “তোমরা কবরে দাজ্জালের ফেতনার মত পরীক্ষায় নিপতিত হবে।” একথা সোনে সাহাবাগণ এত ভীত সন্ত্রস্ত হলেন যে তারা কাঁদতে শুরু করলেন। (নাসায়ী)

আমীরুল মোমেনীন ওসমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবরের কথা স্মরণ হলে এত কাঁদতেন যে তার দাড়ী ভিজে যেত। তিনি বলতেনঃ কবর আখেরাতের মন্জিল সমূহের সর্বপ্রথম মন্জিল। যে এখান থেকে মুক্তি পাবে তার জন্য পরবর্তী মনজিল সমূহ সহজ হবে। আর যে এখান থেকে মুক্তি না পাবে তার জন্য পরবর্তী মন্জিল সমূহ আরো কঠিন হবে। (তিরমিযী)

ওমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কবর ও আখেরাতের কথা স্মরণ করে এত কাঁদতেন যে তার চেহারায় দুইটি কালো দাগ পরে গিয়েছিল। (বাইহাকী)

আবু জার গেফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যু ও বারযাখের জিন্দিগীর ব্যপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) এক খুৎবা সুনে আফসোস করতে লাগলেন যে হায়! যদি আমি কোন বৃক্ষ হতাম তাহলে তা আমার জন্য কতইনা ভাল ছিল, যে এক সময় মালিক আমাকে কেটে ফেলত (আর আমার জীবনের সমাপ্তি হত)। (ইবনে মাযাহ)

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহুর) যখন মৃত্যুর সময় হল তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন, লোকেরা জিজ্ঞেস করল যে কি আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছ তাই কাঁদতেছ? উত্তরে তিনি বললেনঃ না বরং দীর্ঘ সফরে সল্প পাথেয়র কারণে কাঁদছি। আমি এমন এক সন্ধায় এসে উপনিত হয়েছি, যার সমনে রয়েছে জান্নাত অথবা জাহান্নাম, কিন্তু আমি জানিনা যে আমার ঠিকানা কোথায়? (কিতাবুয জুহুদ) আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মওত ও কবরের ভয়ে কত ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন তা বুঝা যাবে নিচের কবিতার পুংতি থেকে।

حانی یا الهی لیس بی خیر العمل كيف سوء اعمال

کثیر زاد طاعاتي قليل

হে প্রভূ কি অবস্থা আমার হবে, সৎ আমল আমার নেই, অসৎ আমল অসংখ্য, পাথেয় সল্প।

কবরের কঠিন ঘাটিকে আমাদের পূর্ব সূরীরা যতটা ভয় পেত আজ আমরা তা থেকে ততটা অন্য মনস্ক এবং নির্ভয়ে আছি। পৃথিবীর রং তামশায় আমরা এতটা মত্ত হয়ে গেছি যে ভূলে ও কখনো কবরের কথা স্মরণ হয়না। আমাদের এ অন্য মনস্কতার ব্যপারে কোর‘আন কারীমের এদিক নির্দেশনা যথার্ত বলে প্রমানিত হয়েছে।

اِقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُہُمۡ وَ ہُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ مُّعۡرِضُوۡنَ ۚ ﴿۱﴾

অর্থঃ “মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় অন্যমনস্ক রয়েছে। (সূরা আম্বীয়া-১)

আল্লাহ তাঁর স্বীয় দয়ায় আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করূন এবং মৃত্যুর পূর্বে আমাদেরকে কবরের কঠিন ঘাটি পার হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার তাওফীক দিন। আমীন!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন