hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

২৬
পরিচ্ছেদ
আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَوَ ﴿۲﴾ هُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ﴿۳﴾ وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

[Surat Ar-Ra'd 2 - 4]

অর্থাৎ - আল্লাহই উর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত তোমরা তা দেখতে পাও। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করেন, প্রত্যেক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপন করতে পার।

তিনি ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।

পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখণ্ড তাতে আঙ্গুর বাগান, শস্য ক্ষেত্র, একাধিক শিরবিশিষ্ট অথবা এক শিরবিশিষ্ট খেজুর গাছ- সিঞ্চিত একই পানিতে এবং ফল হিসেবে এগুলোর কতক কতকের উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে। (১৩ঃ ২-৪)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

أَمَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنْزَلَ لَكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَنْبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُنْبِتُوا شَجَرَهَا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ يَعْدِلُونَ . أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خِلَالَهَا أَنْهَارًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا ۗ أَإِلَٰهٌ مَعَ اللَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ .

অর্থাৎ- বরং তিনি যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি; তারপর আমি তা দিয়ে মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, তার গাছপালা উদগত করবার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তবুও তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা সত্য-বিচ্যুত হয়।

বরং তিনি, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং তার মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দু’ সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়, আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তবুও তাদের অনেকেই জানে না। (২৭ঃ ৬০-৬১)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَكُمْ مِنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ . يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ . وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ .

অর্থাৎ—তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন; তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তোমাদের জন্য তিনি তা দিয়ে জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর সব ধরনের ফল-ফলারি। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।

তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিন, সূর্য এবং চন্দ্র আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তারই বিধানে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (১৬ঃ ১০-১২)।

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, যেমনঃ পাহাড়-পর্বত, গাছ-গাছড়া, ফলমূল, নরম ও শক্ত ভূমি এবং জলে-স্থলে সৃষ্ট নানা প্রকার জড়পদার্থ ও প্রাণীকুল, যা তার মাহাত্ম্য ও কুদরত, হিকমত ও রহমতের প্রমাণ বহন করে, আবার সাথে সাথে সৃষ্টি করেছেন ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল প্রাণীর জীবিকা। দিনে রাতে, শীতে গ্রীষ্মে ও সকাল সন্ধ্যায় তারা যার মুখাপেক্ষী।

وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ .

অর্থাৎ- ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবই আছে। (১১ঃ ৬)

হাফিজ আবু ইয়ালা বর্ণনা করেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে,

خلق الله ألف أمة منها ستمأة في البحر واربعمأة في البر وأول شيئ يهلك من هذه الأمم الجراد فإذا هلك تتابعت مثل النطام اذ قطع سلكه .

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা এক হাজারটি প্রজাতি সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে ছ’শ হলো জলভাগে আর চারশ স্থল ভাগে। আর এ প্রজাতিসমূহের যেটি সর্বপ্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, তা হলো পঙ্গপাল। পঙ্গপাল ধ্বংস হয়ে গেলে অপরাপর প্রজাতি মালার সূতা ছিড়ে গেলে দানাগুলো যেভাবে পর পর পড়তে থাকে ঠিক সেভাবে একের পর এক ধ্বংস হতে শুরু করবে।

এ হাদীসের সনদে উল্লেখিত একজন রাবী অত্যন্ত দুর্বল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ ۚ مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ .

ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই অথবা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোন পাখি উড়ে না, যা তোমাদের মত একটি উম্মত নয়। কিতাবে কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি; তারপর তাদের প্রতিপালকের দিকে তাদের সকলকেই একত্র করা হবে। (৬ঃ ৩৮)

আকাশসমূহ ও তন্মধ্যস্থ নিদর্শনাবলীর সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা

উপরে আমরা একথা বলে এসেছি যে, পৃথিবী সৃষ্টি আকাশ সৃষ্টির আগে হয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ .

অর্থাৎ- তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তাকে সাত আকাশে বিন্যস্ত করেন; তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (২ঃ ২৯)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

قُلْ أَئِنَّكُمْ لَتَكْفُرُونَ بِالَّذِي خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ وَتَجْعَلُونَ لَهُ أَنْدَادًا ۚ ذَٰلِكَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ . ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ ائْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ . فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ .

অর্থাৎ-বল, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবেই, যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও? তিনি তো জগতসমূহের প্রতিপালক!

তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনের মধ্যে এতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের, সমভাবে যাচনাকারীদের জন্য। তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন। যা ছিল ধূমপুঞ্জ বিশেষ, তারপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।

তারপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দু’দিনে সাত আকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করলেন, এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (৪১ঃ ৯-১২)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ ۚ بَنَاهَا . رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا . وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا . وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا .

অর্থাৎ- তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই এটা নির্মাণ করেছেন; তিনিই একে সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করেছেন।

তিনি রাতকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং প্রকাশ করেছেন সূর্যালোক; এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন। (৭৯ঃ ২৭-৩০)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ . الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا ۖ مَا تَرَىٰ فِي خَلْقِ الرَّحْمَٰنِ مِنْ تَفَاوُتٍ ۖ فَارْجِعِ الْبَصَرَ هَلْ تَرَىٰ مِنْ فُطُورٍ . ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ . وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيرِ .

অর্থাৎ- মহা মহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না; আবার তাকিয়ে দেখ, কোন ত্রুটি দেখতে পাও কি?

তারপর তুমি বার বার দৃষ্টি ফিরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমাদের দিকে ফিরে আসবে। আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং তাদেরকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তি। (৬৭ঃ ১-৫)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا . وَجَعَلْنَا سِرَاجًا وَهَّاجًا .

অর্থাৎ- আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ঊধ্বদেশে সুস্থিত সাত আকাশ এবং সৃষ্টি করেছি প্রোজ্জ্বল দীপ। (৭৮ঃ ১২-১৩)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقًا . وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا .

অর্থাৎ- তোমরা কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন সাত স্তরে বিন্যস্ত আকাশমণ্ডলী? এবং সেখানে চন্দ্রকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে। (৭১ঃ ১৫-১৬)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا .

অর্থাৎ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও। তাদের অনুরূপভাবে তাদের মধ্যে নেমে আসে তার নির্দেশ; ফলে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। (৬৫ঃ ১২)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُنِيرًا . وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا .

অর্থাৎ- কত মহান তিনি যিনি নভোমণ্ডলে সৃষ্টি করেছেন রাশিচক্র এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র এবং যারা উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায় তাদের জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিন পরস্পরের অনুগামীরূপে। (২৫ঃ ৬১-৬২)

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ . وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ . لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ . دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ . إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌد .

অর্থাৎ- আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে। ফলে তারা উর্ধ্বজগতের কিছু শুনতে পায় না এবং তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক থেকে বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ কিছু শুনে ফেললে জুলন্ত উল্কাপিণ্ড তার পিছু ধাওয়া করে। (৩৭ঃ ৬-১০)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ . وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ . إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُبِينٌ .

অর্থাৎ-আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে করেছি সুশোভিত দর্শকদের জন্য; প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে আমি তাকে রক্ষা করে থাকি। আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে তার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা। (১৫ঃ ১৬-১৮)

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ .

অর্থাৎ-আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী। (৫১ঃ ৪৭)

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ . وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ .

অর্থাৎ- এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে। (২১ঃ ৩২-৩৩)

وَآيَةٌ لَهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُمْ مُظْلِمُونَ . وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ . وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ . لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ .

অর্থাৎ তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত্রি, তা থেকে আমি দিবালোক অপসারিত করি, সকলেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এবং সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনযিল, অবশেষে তা শুষ্ক বক্র পুরাতন খেজুর শাখার আকার ধারণ করে।

সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষ পথে সাঁতার কাটে। (৩৬ঃ ৩৭-৪০)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فَالِقُ الْإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ . وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ .

অর্থাৎ-তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত্রি এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন; এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ। তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন যেন তা দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও; জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি। (৬ঃ ৯৬-৯৭)

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ .

অর্থাৎ-তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী ছ’দিনে সৃষ্টি করেন; তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই দিনকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, যাতে তাদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি যা তারই আজ্ঞাধীন, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। জেনে রেখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই। মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্। (৭ঃ ৫৪)

উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে প্রচুর আয়াত রয়েছে। এই তাফসীরে আমরা তার প্রতিটির উপর আলোকপাত করেছি। মোটকথা, আল্লাহ্ তা’আলা আকাশসমূহ সৃষ্টি, তার বিশাল ও উচ্চতা সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করছেন, আরো সংবাদ দিচ্ছেন যে, তা যারপর নাই রূপ ও সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত। যেমনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ والسماء ذات الحبك অর্থাৎ- শপথ! সুষমামণ্ডিত আকৃতি বিশিষ্ট আকাশের।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فارجع البصر هل ترى من فطور . ثم ارجع البصر گتين ينقلب

إليك البصر خاسئا وهو حسي .

অর্থাৎ- আবার তাকিয়ে দেখ, (দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে) কোন ত্রুটি পাও কি? তারপর তুমি বার বার দৃষ্টি ফিরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।

অর্থাৎ আকাশের সৃষ্টিতে কোন প্রকার ত্রুটি কিংবা খুঁত দেখার ব্যাপারে তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে এবং সে দৃষ্টি এতই দুর্বল যে, দেখতে দেখতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে গেলেও তাতে সে কোন ত্রুটি বা খুঁত খুঁজে বের করতে পারবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে অত্যন্ত শক্তভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তার দিগন্তকে নক্ষত্ররাজি দ্বারা সুভোশিত করেছেন। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ واسماء ذات البروج অর্থাৎ শপথ গ্রহ নক্ষত্র বিশিষ্ট আকাশের। (৮৫ঃ ১)

البروج অর্থ النجوم অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্র। কেউ কেউ বলেছেন البروج অর্থ প্রহরার স্থানসমূহ, যেখান থেকে চুরি করে শ্রবণকারীর প্রতি উল্কাপিণ্ড নিক্ষেপ করা হয়। এ দু’টি অভিমতের মাঝে কোন বিরোধ নেই। এক স্থানে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ . وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ .

অর্থাৎ- আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে করেছি সুশোভিত দর্শকদের জন্য; প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে আমি তাকে রক্ষা করে থাকি। (১৫ঃ ১৬-১৭)

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা একথা ব্যক্ত করেছেন যে, তিনি আকাশের দৃশ্যকে স্থির ও গতিশীল গ্রহরাজি দ্বারা সুশোভিত করেছেন। যেমনঃ সূর্য, চন্দ্র ও উজ্জ্বল নক্ষত্রমালা এবং তিনি তার সীমান্তকে শয়তানের অনুপ্রবেশ থেকে সংরক্ষণ করেছেন। আর এক অর্থে এও এক প্রকার শোভা। এ প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেনঃ وحفظنا ها من كل شيطان رجيم .

অর্থাৎ- আর আমি তাকে প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে রক্ষা করেছি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ . وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ . لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَىٰ وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ . دُحُورًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ .

অর্থাৎ- আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং রক্ষা করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে। ফলে তারা ঊধ্বজগতের কিছু শুনতে পায় না। (৩৭ঃ ৬-৯)

ইমাম বুখারী (র) সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে বলেছেনঃ ولقد زينا السماء الدنيا بمصابيح এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদা (র) বলেন, এ তিন নক্ষত্রকে আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের শোভা, শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং পথের দিশা লাভের চিহ্নরূপে সৃষ্টি করেছেন। কেউ এর ভিন্ন ব্যাখ্যা করলে সে ভুল করবে, নিজের ভাগ্য নষ্ট করবে এবং যে বিষয়ে তার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে পণ্ডশ্রম করবে। কাতাদা (র)-এর এ বক্তব্য নিচের আয়াত দু’টোতে সুস্পষ্ট বিবৃত হয়েছেঃ

وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ .

অর্থাৎ- নিকটবর্তী আকাশকে আমি প্রদীপমালা দ্বারা সুশেভিত করেছি এবং তাদেরকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ। (৬৭ঃ ৫)

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ .

অর্থাৎ- তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন যেন তদ্দারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথের দিশা পাও। (৬ঃ ৯৭)

অতএব, যদি কেউ এ তিনটির বাইরে এর অন্য কোন মর্ম বের করার চেষ্টা করে তাহলে সে মারাত্মক ভুল করবে। যেমন এগুলোর চলাচল ও একটির সঙ্গে আরেকটির মিলন ঘটলে কী হবে সে জ্ঞান আহরণ করা এবং এ বিশ্বাস করা যে, এগুলো পৃথিবীতে কোন অঘটন ঘটার প্রমাণ দেয়। এ সংক্রান্তে তাদের অধিকাংশ বক্তব্যই ভিত্তিহীন, মিথ্যা ধারণা ও অবাস্তব দাবি।

আবার আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি স্তরে স্তরে অর্থাৎ একটির উপর একটি করে সাত আকাশ সৃষ্ট করেছেন কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে যে, সেগুলো কি পরস্পর মিশ্রিত নাকি বিচ্ছিন্ন, মধ্যে ফাঁকা রয়েছে। তবে দ্বিতীয় অভিমতটিই সঠিক। তার প্রমাণ পার্বত্য ছাগল اعوال সংক্রান্ত হাদীসে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে আহনাফ সূত্রে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবন উমায়রার হাদীস যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ

اتدرون كم بين السماء والأرض قلنا الله ورسوله أعلم قال بينهما مسيرة خمسماة عام ومن كل سماء إلى سماء خمسمأة سنة وكثف كل سماء خمسماة سنة .

অর্থাৎ- তোমরা কি জান যে, আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে ব্যবধান কতটুকু? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক অবহিত। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে পাঁচশ বছরের দূরত্ব এবং এক আকাশ থেকে আরেক আকাশ পর্যন্ত দূরত্ব পাঁচশ বছর আর প্রত্যেক আকাশের স্থুলত্ব হলো পাঁচশ বছর।

ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, ইবন মাজাহ ও তিরিমিযী (র) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি হাসান বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মিরাজ সংক্রান্ত হাদীস আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন, ‘এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) নিকটবর্তী আকাশে আদম (আ)-কে পান, তখন জিবরাঈল (আ) তাকে বললেন, ইনি আপনার পিতা আদম (আ)। ফলে তিনি তাঁকে সালাম করেন এবং তিনি সালামের জবাব দেন ও বলেন, مرحبا واهلايابني نعم الابن انت (মারহাবা স্বাগতম হে আমার পুত্র, আপনি কতই না উত্তম পুত্র!) আনাস (রা) এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আকাশে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আরোহণ ও এর কথা উল্লেখ করেন, তা আকাশসমূহের মধ্যে বিস্তর ব্যবধানের প্রমাণ বহন করে। আবার রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও বলেছেনঃ

ثم عرج بنا حتى أتينا السماء الثانية فاستفتح فقيل من هذا .

অর্থাৎ- তারপর সে (বোরাক) আমাদেরকে নিয়ে উপরে আরোহণ করে। এমনকি আমরা দ্বিতীয় আকাশে এসে উপনীত হই। তিনি (জিবরাঈল) দরজা খুলতে বললে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইনি কে? এ হাদীস আমাদের বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ বহন করে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

ইবন হাযম, ইবনুল মুনীর ও আবুল ফায়জ ইবনুল জাওযী (র) প্রমুখ এ ব্যাপারে আলিমগণের ঐকমত্যের কথা বর্ণনা করেছেন যে, আকাশমণ্ডলী হলো একটি গোলাকার বল স্বরূপ। আল্লাহর বাণী, كل في قلك يسبحون (প্রত্যেকে আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করো) এ আয়াত দ্বারা তার সপক্ষে প্রমাণ দেয়া হয়েছে।

হাসান (র) বলেন, يسنحون অর্থ يدورون অর্থাৎ চক্রাকারে ঘুরে। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, প্রতিটি চক্রে চরকার ন্যায় বৃত্ত আছে। আলিমগণ বলেন, প্রতি রাতে পশ্চিম আকাশে সূর্যের অস্ত যাওয়া এবং শেষে পূর্ব আকাশে আবার উদয় হওয়াও এর প্রমাণ বহন করে। যেমন উমাইয়া ইবন আবুসসালত বলেনঃ

والشمس تطلع كل أخر ليلة - حمراء مطلع لونها متورد

تأبى فلا تبدو النا في رسلها - إلا معذبة وإلا تجلد

অর্থাৎ- সূর্য প্রতি রাতের শেষে লাল হয়ে উদয় হয়। তার উদয় স্থলের রঙ হলো গোলাপী। আমাদের জন্য আত্মপ্রকাশ করতে সূর্য ইতস্তত করে। অবশেষে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করে শাস্তিদানকারী অথবা কশাঘাতকারী রূপে।

ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু যর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন সুর্যাস্তের সময় আমাকে বললেনঃ তুমি কি জান যে, সূর্য কোথায় যায়? বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সম্যক অবগত। তিনি বললেনঃ সূর্য গিয়ে আরশের নিচে সিজদায় পড়ে যায়। তারপর অনুমতি প্রার্থনা করলে তাকে অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু একটি সময় এমন আসবে, যখন সূর্য সিজদা করবে কিন্তু তা কবুল হবে না এবং সে অনুমতি প্রার্থনা করবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও, ফলে সে পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে। والسمس تجري لمستقر لها الخ এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা এ কথাটিই বলেছেন।

এ হলো সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে ইমাম বুখারী (র)-এর ভাষ্য। কিতাবুত তাফসীরেও তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন; আবার তাওহীদ অধ্যায়ে আমাশ-এর হাদীস থেকেও তা বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ (র) হাদীসটি ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করছেন। ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি হাসান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।

উপরে আমরা আকাশসমূহের চক্রাকারে আবর্তিত হওয়ার ব্যাপারে যা বলে এসেছি, এ হাদীসটি তার পরিপন্থী নয় এবং হাদীসটিতে আরশের গোলাকার হওয়ারও প্রমাণ মিলে না। যেমন কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন। ইতিপূর্বে আমরা তাদের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে এসেছি। আবার তা এ কথাও প্রমাণ করে না যে, সূর্য আমাদের দিক থেকে গিয়ে আকাশমণ্ডলীর উপরের দিকে উঠে আরশের নিচে সিজদায় লুটে পড়ে। বরং নিজ কক্ষে সন্তরণ অবস্থাতেই আমাদের দৃষ্টি থেকে অস্তমিত হয়ে যায়। একাধিক তাফসীর বিশেষজ্ঞের মতে, সূর্যের কক্ষ পথ হলো চতুর্থ আকাশ। শরীয়তেও এর বিরোধী কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না বরং বাস্তবে এর পক্ষে প্রমাণ রয়েছে। যেমন সূর্যগ্রহণে তা প্রত্যক্ষ করা যায়। মোটকথা, সূর্য দুপুর বেলায় আরশের সর্ব নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান করলেও, মধ্য রাতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছে—আরশ থেকে দূরবর্তী স্থান, এটাই সূর্যের সিজদার স্থান। এখানে গিয়ে সে পূর্বদিক থেকে উদয় হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করে। অনুমতি পেয়ে সে পূর্বদিক থেকে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে নাফরমান বনী আদমের উপর উদিত হওয়াকে অপছন্দ করে। আর এজন্যই উমাইয়া বলেছিলঃ

تأبى فلا تبد ولنا في رسلها - الا معذبة والا تجلد .

অর্থাৎ—আমাদের উপর উদয় হতে সূর্য ইতস্তত করে। শেষ পর্যন্ত উদয় হয় শাস্তি দানকারীরূপে বা কশাঘাতকারীরূপে।

তারপর যখন সে সময়টি এসে যাবে, যে সময়ে আল্লাহ পশ্চিম দিক থেকে সূর্যকে উদিত করতে মনস্থ করবেন; তখন সূর্য তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী সিজদা করবে এবং নিয়ম অনুযায়ী উদিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করবে, কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। ফলে সে আবারো সিজদায় পড়ে অনুমতি চাইবে কিন্তু অনুমতি দেয়া হবে না। পুনরায় সে সিজদা করে অনুমতি প্রার্থনা করবে কিন্তু এবারও তাকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং সে রাতটি দীর্ঘ হয়ে যাবে, যেমন আমরা তাফসীরে উল্লেখ করেছি। তারপর সূর্য বলবে, হে আমার রব! প্রভাত তো ঘনিয়ে এলো, অথচ পাড়ি অনেক দূর। জবাবে তাকে বলা হবে, তুমি যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও। ফলে সে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। তা দেখে তখন সকলে ঈমানদার হয়ে যাবে কিন্তু ইতিপূর্বে যে ব্যক্তি ঈমান আনেনি কিংবা ঈমান এনে কোন কল্যাণ অর্জন করেনি, তার সে সময়ের ঈমান কোন কাজে আসবে না। আলিমগণ والشمس تجري لمستقرلها এর এ ব্যাখ্যাই করেছেন।

কেউ কেউ বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার আদেশ প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সূর্য এভাবেই চলতে থাকবে।

কেউ কেউ বলেন, مستقوها বলতে আরশের নিচে সূর্যের সিজদার স্থানকেই বুঝানো হয়েছে। কারো কারো মতে, مستقوها অৰ্থ منتهي অর্থাৎ সূর্যের সর্বশেষ গন্তব্যস্থল যা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত।

ইবন আব্বাস (রা) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি والشمس تجري لمستقرلها তিলাওয়াত করে এর ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ সূর্য অবিরাম ভ্রমণ করে কখনো ক্ষান্ত হয় না। এ অর্থে সূর্য চলন্ত অবস্থায়ই সিজদা করে নেয়। আর এ জন্য আল্লাহ্ বলেনঃ

لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ .

অর্থাৎ- সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে। (৩৬ঃ ৪০)

অর্থাৎ - সূর্য চন্দ্রের নাগাল পায় না। ফলে সে নিজ রাজ্যেই উদিত হয় আর চন্দ্রও সূর্যকে ধরতে পারে না। রাত দিনকে অতিক্রম করতে পারে না। অর্থাৎ রাত এমন গতিতে অতিক্রম করে না যে, দিনকে হটে গিয়ে তাকে স্থান করে দিতে হয়। বরং নিয়ম হলো, দিন চলে গেলে তার অনুগামীরূপে তার পেছনে রাতের আগমন ঘটে। যেমন অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

অর্থাৎ তিনি দিবসকে রাত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে তাদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি যা তারই আজ্ঞাধীন, তা তিনি সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁরই; মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্। (৭ঃ ৫৪)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا .

অর্থাৎ এবং যারা উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায় তাদের জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিনকে পরস্পরের অনুগামী রূপে। (২৫ঃ ৬২)

অর্থাৎ রাত ও দিনকে তিনি এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটির পর অপরটি পর্যায়ক্রমে আগমন করে থাকে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

إذا أقبل الليل من ههنا وأدبر النهار من ههنا وغربت الشمس فقد افطر الصائم .

অর্থাৎ-একদিকে রাত ঘনিয়ে এলে অপরদিকে দিনের পরিসমাপ্তি ঘটলে এবং সূর্য ডুবে গেলে রোযাদার যেন ইফতার করে নেয়।

মোটকথা, সময় রাত ও দিন এ দু’ভাগে বিভক্ত। এ দু’য়ের মাঝে অন্য কিছু নেই। আর এজন্যই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى .

আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত করেন। তিনি চন্দ্র-সূর্যকে করেছেন নিয়মাধীন, প্রত্যেকে বিচরণ করে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত (৩১ঃ ২৯)

অর্থাৎ রাত ও দিনের একটির কিছু অংশকে তিনি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন। অর্থাৎ একটির দীর্ঘায়তন থেকে কিছু নিয়ে অপরটি ক্ষুদ্রায়তনে ঢুকিয়ে দেন। ফলে দুটো সমান সমান হয়ে যায়। যেমন বসন্তকালের প্রথম দিকে হয়ে থাকে যে, এর আগে রাত থাকে দীর্ঘ আর দিন থাকে খাটো। তারপর ধীরে ধীরে রাত হ্রাস পেতে থাকে আর দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে এক সময় উভয়ে সমান হয়ে যায়। তাহলে বসন্তের প্রথম অংশ। তারপর দিন দীর্ঘ ও রাত খাটো হতে থাকে। এভাবে পুনরায় হেমন্তের শুরুতে উভয়ই সমান হয়ে যায়। তারপর হেমন্তের শেষ পর্যন্ত রাত বৃদ্ধি পেতে এবং দিন হ্রাস পেতে থাকে। তারপর একটু একটু করে দিন প্রাধান্য লাভ করতে থাকে এবং রাত ক্রমে ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। এভাবে বসন্তের শুরুতে এসে রাত-দিন দু’টো সমান হয়ে যায়। আর প্রতি বছরই এরূপ চলতে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

وَلَهُ اخْتِلَافُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ .

এবং তাঁরই অধিকারে রাত ও দিনের পরিবর্তন। (২৩ঃ ৮০)

অর্থাৎ এ সব কিছু আল্লাহরই হাতে। তিনি এমন এক শাসক, যার বিরুদ্ধাচরণ করা কিংবা যাকে বাধা প্রদান করা যায় না। এ জন্যই তিনি আকাশসমূহ, নক্ষত্ররাজি ও রাত-দিনের আলোচনার সময় আয়াতের শেষে বলেছেনঃ ذالك تقدير العزيز العليم অর্থাৎ-এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণ। (৬ঃ ৯৬)

العزيز অর্থ সবকিছুর উপর যিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং সবই যাঁর অনুগত। ফলে তাঁকে ঠেকানো যায় না, পরাস্ত করা যায় না। আর العليم অর্থ যিনি সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। ফলে সব কিছুকে তিনি যথারীতি একটি অপরিবর্তনীয় ও অলংঘনীয় নিয়মে নিয়ন্ত্রণ করেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

قال الله يوذینی ابن آدم يسب الدهر وأنا الدهر بيدي الأمر . اقلبالليل والنهار .

অর্থাৎ—আল্লাহ বলেন, আদমের সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা সময়কে গালাগাল করে। অথচ আমিই সময়, আমার হাতেই সব ক্ষমতা। রাত ও দিনকে আমিই আবর্তিত করে থাকি।

অন্য বর্ণনায় আছেঃ فأنا الدهر اقلب ليله ونهاه

অর্থাৎ আমিই কাল। তার রাত ও দিনকে আমিই আবর্তিত করে থাকি।

ইমাম শাফেঈ ও আবু উবায়দ কাসিম (র) প্রমুখ আলিম يسب الدهر এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ মানুষ বলে থাকে যে, কাল আমাদের সঙ্গে এরূপ আচরণ করেছে কিংবা বলে যে, হায় কালের করাল গ্রাস! সে আমাদের সন্তানদেরকে ইয়াতীম বানিয়ে দিল, নারীদেরকে বিধবা করল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ وانا الدهر অর্থাৎ প্রকৃত পক্ষে আমিই সে কাল যাকে উদ্দেশ করে মানুষ এসব বলে থাকে। কেননা কালের প্রতি আরোপিত কর্মকাণ্ডের কর্তা তিনিই; আর কাল হলো তাঁরই সৃষ্ট। আসলে যা ঘটেছে আল্লাহই তা ঘটিয়েছেন। সুতরাং সে কর্তাকে গাল দিচ্ছে আর ধারণা করছে যে, এ সব কালেরই কাণ্ড! কর্তা মূলত আল্লাহ যিনি সবকিছুর স্রষ্টা ও সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। যেমন তিনি বলেছেনঃ

ونا الدهربيدي الامر اقلب ليله ونهاره আমিই কাল। আমার হাতেই সব কিছু। তাঁর রাত ও দিবসকে আমিই পরিবর্তন করি।

কুরআনে করীমে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ .

অর্থাৎ—বল, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দাও, আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

তুমিই রাতকে দিনে পরিণত কর এবং দিনকে রাতে পরিণত কর; তুমিই মৃত থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর। (৩ঃ ২৬-২৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ . إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ .

অর্থাৎ—তিনিই সূর্যকে তেজকর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা সাল গণনা ও হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন। দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে মুত্তাকী সম্প্রদায়ের জন্য। (১০ঃ ৫-৬)

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা আলো, আকার-আকৃতি, সময় ও চলাচলের ক্ষেত্রে সূর্য ও চন্দ্রের মাঝে ব্যবধান করেছেন। সূর্যের কিরণকে করেছেন তেজঙ্কর জ্বলন্ত প্রমাণ ও দীপ্ত আলো আর চন্দ্রকে বানিয়েছেন নূর অর্থাৎ জ্বলন্ত সূর্যের প্রমাণের তুলনায় নিষ্প্রভ এবং তার আলো সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত।

আবার তিনি চন্দ্রের মনযিলসমূহও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ চন্দ্র সূর্যের নিকটে থাকার কারণে এবং উভয়ের মুখোমুখিতা কম হওয়ার ফলে মাসের প্রথম রাতে চন্দ্র দুর্বল ও স্বল্প আলোকময় হয়ে উদিত হয়। চন্দ্রের আলো তার সূর্যের মুখোমুখিতা অনুপাতে হয়ে থাকে। তাই দ্বিতীয় রাতে চন্দ্র প্রথম রাতের তুলনায় সূর্যের দ্বিগুণ দূরবর্তী হওয়ার কারণে তার আলোও প্রথম রাতের দ্বিগুণ হয়ে যায়। তারপর চন্দ্র সূর্যের যত দূরে আসতে থাকে তার আলোও তত বাড়তে থাকে। এভাবে পূর্ব আকাশে উভয়ের মুখোমুখি হওয়ার রাতে চন্দ্রের আলো পরিপূর্ণতা লাভ করে। আর তাহলো মাসের চৌদ্দ তারিখের রাত। তারপরে অপরদিকে চন্দ্র সূর্যের নিকটে চলে আসার কারণে মাসের শেষ পর্যন্ত তা হ্রাস পেতে থাকে। এভাবে এক পর্যায়ে তা অদৃশ্য হয়ে দ্বিতীয় মাসের শুরুতে আবার পূর্বের ন্যায় উদিত হয়। এভাবে চন্দ্র দ্বারা মাস ও বছরের এবং সূর্য দ্বারা রাত ও দিনের পরিচয় পাওয়া যায়। এ জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ .

অর্থাৎ—তিনিই সূর্যকে তেজঙ্কর এবং চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মযিলসমূহ নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা সাল গণনা ও হিসাব জানতে পার। (১০ঃ ৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِتَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا .

অর্থাৎ—আমি রাত ও দিনকে করেছি দু’টি নিদর্শন; রাতের নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিবসের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার এবং আমি সবকিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। (১৭ঃ ১২)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ .

অর্থাৎ–লোকে তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে; বল, তা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক। (২ঃ ১৮৯)

তাফসীরে আমরা এসব প্রসংগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মোটকথা, আকাশে যেসব গ্রহ আছে, তন্মধ্যে কিছু হলো গতিশীল। তাফসীরবিদদের পরিভাষায় এগুলোকে মুতাখায়্যারা বলা হয়। এ এমন এক বিদ্যা যার বেশির ভাগই সঠিক। কিন্তু ইলমুল আহকাম অর্থাৎ এগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অবাস্তব এবং অমূলক দাবি মাত্র।

গ্রহ মোট সাতটি। (১) চন্দ্র, প্রথম আকাশে (২) বুধ, দ্বিতীয় আকাশে (৩) শুক্র, তৃতীয় আকাশে (৪) সূর্য, চতুর্থ আকাশে (৫) মঙ্গল, পঞ্চম আকাশে (৬) বৃহস্পতি, ষষ্ঠ আকাশে এবং (৭) শনি, সপ্তম আকাশে।

অবশিষ্ট গ্রহগুলো স্থির, গতিহীন। বিশেষজ্ঞদের মতে তা অষ্টম আকাশে অবস্থিত। পরবর্তী যুগের বহু সংখ্যক আলিমের পরিভাষায় যাকে কুরসী বলা হয়। আবার অন্যদের মতে, সবকটি গ্রহই নিকটবর্তী আকাশে বিরাজমান এবং সেগুলোর একটি অপরটির উপরে অবস্থিত হওয়া বিচিত্র নয়। নিচের দু’টো আয়াত দ্বারা এর সপক্ষে প্রমাণ দেওয়া হয়ে থাকে।

وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ .

অর্থাৎ—আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং তাদেরকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ। (৬৭ঃ ৫)

فَقَضَاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ فِي يَوْمَيْنِ وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ .

অর্থাৎ—তারপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দু’দিনে সাত আকাশে পরিণত করেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করেন এবং আমি প্রদীপমালা দ্বারা আকাশকে সুশোভিত ও সুরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (৪১ঃ ১২)

এ আয়াতদ্বয়ে সবক’টি আকাশের মধ্যে শুধুমাত্র নিকটবর্তী আকাশকেই নক্ষত্র শোভিত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। এর অর্থ যদি এই হয় যে, নক্ষত্রসমূহকে নিকটবর্তী আকাশে গেঁথে রাখা হয়েছে; তাহলে কোন কথা নেই। অন্যথায় ভিন্নমত পোষণকারীদের অভিমত সঠিক হওয়ায় কোন বাধা নেই। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাত আকাশ বরং অষ্টম আকাশও তাদের মধ্যস্থিত গতিহীন ও গতিশীল গ্রহসমূহসহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরে বেড়ায়। চন্দ্র এক মাসে তার কক্ষপথ অতিক্রম করে এবং সূর্য তার কক্ষপথ তথা চতুর্থ আকাশ অতিক্রম করে এক বছরে।

সুতরাং দু’গতির মাঝে যখন কোন তারতম্য নেই এবং উভয়ের গতিই যখন সমান তাই প্রমাণিত হয় যে, চতুর্থ আকাশের পরিমাপ প্রথম আকাশের পরিমাপের চারগুণ। আর শনিগ্রহ ত্রিশ বছরে একবার তার কক্ষপথ সপ্তম আকাশ অতিক্রম করে। এ হিসেবে সপ্তম আকাশ প্রথম আকাশের তিনশ ষাট গুণ বলে প্রমাণিত হয়।

বিশেষজ্ঞগণ এসব নক্ষত্রের আকার ও গতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এমনকি তারা ইলমুল আহকামের পর্যন্ত শরণাপন্ন হয়েছেন। ঈসা (আ)-এর বহু যুগ আগে সিরিয়ায় যে গ্রীক সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করত, এ বিষয়ে তাদের বিশদ বক্তব্য রয়েছে। তারাই দামেশক নগরী নির্মাণ করে তার সাতটি ফটক স্থাপন করে এবং প্রতিটি ফটকের শীর্ষদেশে সাতটি গ্রহের একটি করে প্রতিকৃতি স্থাপন করে সেগুলোর পূজা পার্বণ এবং সেগুলোর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো। একাধিক ঐতিহাসিক এবং আরও অনেকে এসব তথ্য বর্ণনা করেছেন। আসসিররুল মাকতুম ফী মাখাতাজতিশ শামসে ওয়াল কামারে ওয়ান নুজুম ( السر المكتوم في مخاطة الشمس والقمر والنجوم ) গ্রন্থের লেখক হাররানের প্রাচীনকালের দার্শনিক মহলের বরাতে এসব উল্লেখ করেছেন। তারা ছিল পৌত্তলিক। তারা সাত গ্রহের পূজা করত। আর তারা সাবেয়ীদেরই একটির অন্তর্ভুক্ত সম্প্রদায়।

এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ .

অর্থাৎ—তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না চন্দ্রকেও না, সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করে থাকো। (৪১ঃ ৩৭)

আবার আল্লাহ তা’আলা হুদহুদ সম্পর্কে বলেছেন যে, সে সুলায়মান (আ)-কে ইয়ামানের অন্তর্গত সাবার রাণী বিলকীস তার বাহিনী সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করতে গিয়ে বলেছিলঃ

إِنِّي وَجَدْتُ امْرَأَةً تَمْلِكُهُمْ وَأُوتِيَتْ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيمٌ . وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ . أَلَّا يَسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي يُخْرِجُ الْخَبْءَ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُونَ وَمَا تُعْلِنُونَ . اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ .

অর্থাৎ—আমি এক নারীকে দেখলাম তাদের উপর রাজত্ব করছে। তাকে সবকিছু থেকে দেয়া হয়েছে এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন। আমি তাকে এবং তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের নিকট শোভন করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে, ফলে তারা সৎপথ পায় না।

নিবৃত্ত করেছে এ জন্য যে, তারা যেন সিজদা না করে আল্লাহকে যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুক্কায়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি মহা আরশের অধিপতি। (২৭ঃ ২৩-২৬)

অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ ۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ ۗ وَمَنْ يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ مُكْرِمٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ .

অর্থাৎ—তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীব-জন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে। আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউই নেই। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা করেন। (২২ঃ ১৮)

অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ . وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ . يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ .

অর্থাৎ—তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া দক্ষিণে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয়? আল্লাহকেই সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফেরেশতাগণও; তারা অহংকার করে না। তারা ভয় করে তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের প্রতিপালককে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয়। তারা তা করে। (১৬ঃ ৪৮-৫০)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ

وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُمْ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ .

অর্থাৎ-আল্লাহর প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলোও সকাল-সন্ধ্যায়। (১৩ঃ ১৫)

অন্যত্র তিনি বলেনঃ

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ ۚ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَٰكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا .

অর্থাৎ—সাত আকাশ, পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু তারই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করে কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না; তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। (১৭ঃ ৪৪)

এ প্রসংগে আরো প্রচুর সংখ্যক আয়াত রয়েছে। আর যেহেতু আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে দৃশ্যমান বস্তু নিচয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো গ্রহ-নক্ষত্রাদি আবার এগুলোর মধ্যে দর্শনীয় ও শিক্ষণীয় হিসাবে সেরা হলো সূর্য ও চন্দ্র। সেহেতু ইবরাহীম খলীল (আ)-এর কোনটিই উপাসনার যোগ্য না হওয়ার প্রমাণ পেশ করেছিলেন। নীচের আয়াতে তার বিবরণ রয়েছেঃ

فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا ۖ قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ . فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ . فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ . إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ .

অর্থাৎ—তারপর রাতের অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল, এ আমার প্রতিপালক তারপর যখন তা অস্তমিত হলো, তখন সে বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।

তারপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বল রূপে উদিত হতে দেখল তখন সে বলল, এ আমার প্রতিপালক। যখন তাও অস্তমিত হলো তখন সে বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হবো।

তারপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হতে দেখল তখন সে বলল, এ আমার প্রতিপালক, এ সর্ববৃহৎ; যখন তাও অস্তমিত হলো, তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর, তার সাথে আমার কোন সংশ্রব নেই। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে আমার মুখ ফিরাই যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (৬ঃ ৭৬-৭৯)

মোটকথা, ইবরাহীম (আ) অকাট্য প্রমাণ দ্বারা পরিষ্কারভাবে একথা বুঝিয়ে দিলেন যে, নক্ষত্ররাজি, চন্দ্র ও সূর্য প্রভৃতি দৃশ্যমান বস্তু নিচয়ের কোনটিই উপাস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না । কারণ এর সবটিই সৃষ্ট বস্তু, অন্যের দ্বারা প্রতিপালিত, নিয়ন্ত্রিত এবং চলাচলের ক্ষেত্রে অন্যের আজ্ঞাধীন, যাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তা থেকে এতটুকু নড়চড় হওয়ার শক্তি কারো নেই। এগুলো প্রতিপালিত, সৃষ্ট ও অন্যের আজ্ঞাধীন হওয়ার এটাই প্রমাণ। আর এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ .

অর্থাৎ—তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। সিজদা কর আল্লাহকে যিনি এগুলো সূষ্টি করেছেন, যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাকো। (৪১ঃ ৩৭)

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইবন উমর, ইবন আব্বাস (রা) ও আয়েশা (রা) প্রমুখ সাহাবী থেকে সালাতুল কুসুফ (সূর্য গ্রহণের নামায) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন তাঁর ভাষণে বলেনঃ

إن الشمس والقمر آيتان من آيات الله عز وجل وإنهما لا ينكسفان لموت احد ولا لحياته .

অর্থাৎ—“সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের দু’টো নিদর্শন। কারো জীবন বা মৃত্যুর কারণে এগুলোতে গ্রহণ লাগে না।”

ইমাম বুখারী (র) সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়ে বর্ণনা করেন যে, আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ الشمس والقمر مكوران يوم القيامة অর্থাৎ-“সূর্য ও চন্দ্র কিয়ামতের দিন নিষ্প্রভ হয়ে যাবে।”

ইমাম বুখারী (র) এককভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে হাফিজ আবু বকর বাযযার (র)-এর চেয়ে আরো বিস্তারিতভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাহলোঃ

আবুদল্লাহ ইবন দানাজ বলেন, আমি আবু সালামা ইবন আবদুর রহমানকে খালিদ ইবন আবদুল্লাহ আল-কাসবী-এর আমলে কূফার এ মসজিদে হাসান-এর উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি যে, আবু হুরায়রা (রা) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

أن الشمس والقمر ثوران في النار يوم القيامة .

অর্থাৎ—“সূর্য ও চন্দ্র কিয়ামতের দিন জাহান্নামে দু’টো ষাঁড় হবে।"

একথা শুনে হাসান (র) বললেন, ওদের কোন কর্মফলের দরুন? জবাবে আবূ সালামা বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস তোমার নিকট বর্ণনা করছি আর তুমি কি না বলছ ওদের কোন কর্মফলের দরুন তারপর বাযযার (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) থেকে এ সূত্র ব্যতীত হাদীসটি বর্ণিত হয়নি। আর আবদুল্লাহ দানাজ আবু সালামা (রা) থেকে এ হাদীসটি ব্যতীত অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করেননি।

হাফিজ আবু ইয়া’লা আল-মূসিলী য়াযীদ আর রুকাশী নামক একজন দুর্বল রাবী সূত্রে আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ

الشمس والقمر ثوران عقيران في النار .

অর্থাৎ—“সূর্য ও চন্দ্র জাহান্নামে দু’টো ভীত-সন্ত্রস্ত ষাড় হবে।”

ইবন আবু হাতিম (র) বর্ণনা করেন যে, ইবন আব্বাস (রা) اذا الشمس كورت -এর ব্যাখ্যায় বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রসমূহকে সমুদ্রে ফেলে নিষ্প্রভ করে দেবেন। তারপর আল্লাহ পশ্চিমা বায়ু প্রেরণ করবেন, তা সেগুলোকে আগুনে ইন্ধনরূপে নিক্ষেপ করবে।

এসব বর্ণনা প্রমাণ করে যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বিশেষ উদ্দেশ্যে এগুলো সৃষ্টি করেছেন। তারপর আবার একদিন এগুলোর ব্যাপারে তার যা ইচ্ছা তাই করবেন। তিনি অকাট্য প্রমাণ ও নিখুঁত হিকমতের অধিকারী। ফলে তাঁর প্রজ্ঞা, হিকমত ও কুদরতের কারণে তিনি যা করেন তাতে কারো কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই এবং তার কর্তৃত্বকে প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নেই। ইমাম মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) তার সীরাত গ্রন্থের শুরুতে যায়দ ইবন ’আমর ইবন নুফায়ল আকাশ, পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদি সৃষ্টি সম্পর্কিত যে পংক্তিগুলো উল্লেখ করেছেন তা কতই না সুন্দর। ইবন হিশাম বলেন, পংক্তিগুলো উমায়া ইবন আবুস সালত-এর। পংক্তিগুলো এইঃ

الى الله اهدى مدحتى وثنائيا - وقولا رضيا لا يني الدهر باقيا

إلى الملك الاعلى الذي ليس فوقه - اله ولا رب يكون مدانيا

ألا أي تها الإنسان اياك والردی -فإنك لا تخفي من الله فاقيا

واياك لا تجعل مع الله غيره - فإن سبيل الرشد اصبح باديا

حنانيکه ان الجن كانت رجائهم - وانت الهی ربنا ورجيئيا

رضيت بك اللهم ربا فلن ارى - أدين الها غيرك الله ثانيا

وانت الذي من فضل من ورحمة - بعثت إلى موسی رسولا مناديا

فقلت له اذهب وهارون فادعوا - الى الله فرعون الذي كان طاغيا

وقولا له أأنت سويت هذه - بلا وتد حتى اطمأنت كما هيا

وقولا له أأنت رفعت هذه - بلا عمد ارفق إذابك بانيا

وقولا له أأنت سويت وسطها - منيرا اذاما جنه الليل هاديا

وقولا له من يرسل الشمس غدوة - فيصبح ما مست من الارض ضاحيا

وقولا له من ينبت الحب في الثرى - فيصبح منه البقل يهتز رابيا

ويخرج منه حبه في رؤسه - وفي ذالك آيات لمن كان واعيا

وانت بفضل منك نجيت يونسا - وقد بات في اضعاف حوت لياليا

وإني لو سبحت باسمك ربنا - لاكثر إلا غفرت خطائيا

فرب العباد ألق سیبا و رحمة - علي وبارك في بني وماليا

অর্থাৎ—আমার যাবতীয় প্রশংসা, স্তুতি ও প্রেম গাঁথা অনন্তকালের জন্য আল্লাহর সমীপেই আমি উৎসর্গ করছি, যিনি রাজাধিরাজ যাঁর উপরে কোন উপাস্য এবং যার সমকক্ষ কোন রব নেই।

ওহে মানব জাতি! ধ্বংসের হাত থেকে তুমি বেঁচে থাক। আল্লাহর থেকে কিছুই গোপন রাখার সাধ্য তোমার নেই। আর আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে অংশীদার স্থাপন করা থেকে বেঁচে থাকা তোমার একান্ত প্রয়োজন। হেদায়াতের পথ আজ একেবারেই সুস্পষ্ট।

প্রভু! তোমার রহমতই আমার কাম্য; তুমিই তো আমার উপাস্য।

হে আল্লাহ! তোমাকেই আমি রব বলে গ্রহণ করে নিয়েছি; তোমাকে ছাড়া অপর কারো উপাসনা করতে তুমি আমায় দেখবে না।

তুমি তো সে সত্তা, যিনি আপন দয়া ও করুণায় মূসাকে আহবানকারী রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করেছে। আর তাকে বলে দিয়েছ হারূনকে নিয়ে তুমি অবাধ্য ফিরআউনের নিকট যাও এবং তাকে আল্লাহর প্রতি আহবান কর। আর তাকে জিজ্ঞেস কর; তুমি কি স্থির করেছ এ পৃথিবীকে কীলক ব্যতীত? তুমিই কি ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছ আকাশমণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতিরেকে? রাতের আঁধারে পথের দিশারী এ উজ্জ্বল চন্দ্রকে আকাশের মাঝে স্থাপন করেছ কি তুমিই? প্রভাতকালে সূর্যকে কে প্রেরণ করে, যা উদয় হয়ে পৃথিবীকে করে দেয় আলোকময়? বল, কে মাটির মধ্যে বীজ অংকুরিত করে উৎপন্ন করে তাজা শাক-সবজি ও তরিতরকারি? এতে বহু নিদর্শন রয়েছে তার জন্য যে বুঝতে চায়।

আর তুমি নিজ অনুগ্রহে মুক্তি দিয়েছ ইউনুসকে। অথচ সে মাছের উদরে কাটিয়েছিল বেশ ক’টি রাত।

প্রভু! আমি যদি তোমার মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে যাই তা হলে তো তোমার অনেক অনেক মহিমার কথা বলতে হয়, তবে তুমি যদি মাফ করে দাও, তা হলে ভিন্ন কথা!

ওহে মানুষের প্রভু! আমার উপর বর্ষণ কর তুমি তোমার অপার দয়া ও করুণার বারিধারা আর বরকত দাও আমার সন্তান-সন্ততি ও ধন-দৌলতে।

যাহোক, এতটুকু জানার পর আমরা বলতে পারি যে, আকাশে স্থির ও চলমান যেসব নক্ষত্র আছে, তা সবই মাখলুক, আল্লাহ তা’আলা তা সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ

وَأَوْحَىٰ فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا ۚ وَزَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَحِفْظًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

অর্থাৎ—এবং তিনি প্রত্যেক আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করলেন, এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ অল্লিাহর ব্যবস্থাপনা। (৪১ঃ ১২)

পক্ষান্তরে, হারুত ও মারূতের কাহিনী সম্পর্কে অনেক মুফাসসির যে কথাটি বলে থাকেন, যুহরা (শুক্রগ্রহ) ছিল এক মহিলা, তার কাছে তারা অসৎ প্রস্তাব দিলে তারা তাকে ইসমে আজম শিক্ষা দেবে এ শর্তে সে তাতে সম্মত হয়। শৰ্তমত হারূত ও মারুত তাকে ইসমে আজম শিখিয়ে দিলে তা উচ্চারণ করে সে নক্ষত্র হয়ে আকাশে উঠে যায়। আমার ধারণা, এটা ইসরাঈলীদের মনগড়া কাহিনী। যদিও কা’ব আল-আহবার তা বর্ণনা করেছেন এবং তার বরাতে পূর্ববর্তী যুগের একদল আলিম বনী ইসরাঈল-এর কাহিনী হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ এবং ইবন হিব্বান (র) তার সহীহ গ্রন্থে এ প্রসংগে একটি রিওয়ায়েত করেছেন, আহমদ উমর (রা) সূত্রে নবী করীম (সা) থেকে কাহিনীটি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে যে, যুহরাকে (শুক্রগ্রহ) পরমা সুন্দরী এক নারী রূপে হারুত-মারূতের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়।

মহিলাটি তাদের কাছে এলে তারা তাকে প্ররোচিত করে। এভাবে বর্ণনাকারী কাহিনীটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।

হাদীসবিদ আবদুর রাযযাক তাঁর তাফসীর অধ্যায়ে কা’ব আল-আহবার (রা) সূত্রে কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন। আর এটিই সর্বাপেক্ষা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা।

আবার হাকিম (র) তাঁর মুসতাদরাকে এবং ইবন আবু হাতিম (র) তার তাফসীরে ইবন আব্বাস (রা) থেকে কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, সে যুগে এক রমণী ছিল। মহিলাদের মধ্যে তার রূপ ছিল ঠিক নক্ষত্ৰকুলে যুহরার রূপের ন্যায়। এ কাহিনী সম্পর্কে বর্ণিত পাঠসমূহের মধ্যে এটিই সর্বোত্তম পাঠ।

ইবন উমর (রা) সূত্রে বর্ণিত হাফিজ আবু বকর বাযযার (র)-এর হাদীসটিও একইরূপ। তাহলো, রাসূলুল্লাহ (সা) সুহায়ল সম্পর্কে বলেছেনঃ

كان عشارا ظلوما فمسخه الله شهابا .

অর্থাৎ “সুহায়ল কর আদায়ের ব্যাপারে অত্যন্ত জালেম ছিল। ফলে আল্লাহ তাকে উল্কাপিণ্ডে রূপান্তরিত করে দেন।"

আবু বকর বাযযার (র) এ রিওয়ায়াতের সনদে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছেন বলে উল্লেখ করা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে অন্য কোন সূত্রে বর্ণনাটি না পাওয়ার কারণে এ সূত্রেই বর্ণনাটি উপস্থাপিত করলাম। বলাবাহুল্য যে, এ ধরনের সনদ দ্বারা একদম কিছুই প্রমাণিত হয় না। তাছাড়া তাদের ব্যাপারে সুধারণা রাখলেও আমাদের বলতে হবে যে, এটি বনী ইসরাঈলের কাহিনী। যেমনটি ইবন উমর (রা) ও কা’ব আল-আহবার (রা)-এর বর্ণনা থেকে পূর্বে আমরা বলে এসেছি। এসব তাদের মনগড়া অলীক কাহিনী যার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন