মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“স্মরণ কর মূসার জন্য আমি ত্রিশ রাত নির্ধারিত করি এবং আরো দশ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয় এবং মূসা তার ভাই হারূন (আলাইহিস সালাম)-কে বলল, আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে; সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না, মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হল এবং তার প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন, তখন সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব।’ তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না, বরং তুমি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, এটা স্বস্থানে স্থির থাকলে তবে তুমি আমাকে দেখবে। যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল। আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল। যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলল, ‘মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।
তিনি বললেন, “হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিয়েছি; সুতরাং আমি যা দিলাম তা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ হও। আমি তার জন্য ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে এগুলোর যা উত্তম তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দাও। আমি শীঘ্র সত্যত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখাব। পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন থেকে ফিরিয়ে দেব, তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস করবে না, তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না। কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে, এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। যারা আমার নিদর্শন ও পরকালে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করে তাদের কার্য নিষ্ফল হয়। তারা যা করে তদনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।” (সূরা আরাফঃ ১৪২-১৪৭)
পূর্ববর্তী যুগের উলামায়ে কিরামের একটি দল, যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) ও মুজাহিদ (র) বলেন, আয়াতে উল্লেখিত ত্রিশ রাত্রের অর্থ হচ্ছে যিলকদ মাসের পূর্ণটা এবং যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত মোট চল্লিশ রাত। এ হিসেবে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্যে আল্লাহ তাআলার বাক্যালাপের দিন হচ্ছে কুরবানীর ঈদের দিন। আর অনুরূপ একটি দিনেই আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্যে তাঁর দীনকে পূর্ণতা দান করেন এবং তাঁর দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মূলত মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তার নির্ধারিত মেয়াদ পরিপূর্ণ করলেন তখন তিনি ছিলেন রোযাদার। কথিত আছে, তিনি কোন প্রকার খাবার চাননি। অতঃপর যখন মাস সমাপ্ত হল তিনি এক প্রকার একটি বৃক্ষের ছাল হাতে নিলেন এবং মুখে সুগন্ধি আনয়ন করার জন্যে তা একটু চিবিয়ে নিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে আরো দশদিন রোযা রাখত আদেশ দিলেন। তাতে চল্লিশ দিন পুরা হলো। আর এ কারণে হাদীস শরীফে রয়েছে যে, خلوف فم الصائم اطيب عند الله من ريح المسك অর্থাৎ রোযাদারের মুখের গন্ধ, আল্লাহ তা’আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি চেয়ে উত্তম।
মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তার নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করার জন্যে পাহাড় পানে রওয়ানা হলেন, তখন ভাই হারূন (আলাইহিস সালাম)-কে বনী ইসরাঈলের কাছে স্বীয় প্রতিনিধিরূপে রেখে গেলেন। হারূন (আলাইহিস সালাম) ছিলেন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সহোদর ভাই। অতি নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল ও জনপ্রিয় ব্যক্তি।
আল্লাহ তা’আলার মনোনীত ধর্মের প্রতি আহ্বানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাহায্যকারী। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে প্রয়োজনীয় কাজের আদেশ দিলেন। নবুওতের ক্ষেত্রে তাঁর বিশিষ্ট মর্যাদা থাকায় মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নবুওতের মর্যাদার কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ ولماجاا موسى لميقاتنا وكلمه ربه অর্থাৎ মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তার জন্যে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছলেন তখন তার প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা পর্দার আড়াল থেকে তার সাথে কথা বললেন। আল্লাহ তাআলা তাকে আপন কথা শুনালেন; মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে আহ্বান করলেন, সংগোপনে তার সাথে কথা বললেন; এবং নিকটবর্তী করে নিলেন, এটা উচ্চ একটি সম্মানিত স্থান, দুর্ভেদ্য দুর্গ, সম্মানিত পদমর্যাদা ও অতি উচ্চ অবস্থান। তার উপর আল্লাহ্ তা’আলার অবিরাম দরূদ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তার উপর আল্লাহ্ তা’আলার সালাম বা শান্তি। যখন তাঁকে উচ্চ মর্যাদা ও মহাসম্মান দান করা হল এবং তিনি আল্লাহ তাআলার কালাম শুনলেন, তখন তিনি পর্দা সরিয়ে নেবার আবেদন করলেন এবং এমন মহান সত্তার উদ্দেশে যাকে দুনিয়ার সাধারণ চোখ দেখতে পায় না, তার উদ্দেশে বললেনঃ
رب ارني انظر اليك হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও! আমি তোমাকে দেখব। আল্লাহ্ উত্তরে বলেনঃ لن ترانى “তুমি আমাকে কখনই দেখতে পাবে না। অর্থাৎ মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ্ তা’আলার প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারবেন না; কেননা পাহাড় যা মানুষের তুলনায় অধিকতর স্থির ও কাঠামোগতভাবে অধিক শক্তিশালী। পাহাড়ই যখন আল্লাহ্ তা’আলার জ্যোতি প্রকাশের সময় স্থির থাকতে পারে না তখন মানুষ কেমন করে পারবে? এ জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর তা স্বস্থানে স্থির থাকলে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে।
প্রাচীন যুগের কিতাবগুলোতে বর্ণিত রয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন, ‘হে মূসা, কোন জীবিত ব্যক্তি আমাকে দেখলে মারা পড়বে এবং কোন শুষ্ক দ্রব্য আমাকে দেখলে উলট-পালট হয়ে গড়িয়ে পড়বে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু মূসা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলার পর্দা হচ্ছে নূর বা জ্যোতির। অন্য এক বর্ণনা মতে, আল্লাহ তা’আলার পর্দা হচ্ছে আগুন। যদি তিনি পর্দা সরান তাহলে তার চেহারার ঔজ্জ্বল্যের দরুন যতদূর তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) আয়াতাংশ لا تدركه الابصار -এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, এটা হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার ঐ নূর যা কোন বস্তুর সামনে প্রকাশ করলে তা টিকতে পারবে না। এজন্যই আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ
“যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করল। আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ল, যখন সে জ্ঞান ফিরে পেল তখন সে বলে উঠল। মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।”
এটার অর্থ হচ্ছে- পাহাড় তোমার চাইতে বড় এবং কাঠামোতেও তোমার চাইতে অধিকতর শক্ত, যখন তার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) পাহাড়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখেন, পাহাড় স্থির থাকতে পারছে না। পাহাড় সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, প্রথম ধাক্কায় তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। মূসা (আলাইহিস সালাম) প্রত্যক্ষ করছিলেন পাহাড় কি করে। অতঃপর তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। ইমাম আহমদ (র) ও তিরমিযী (র) হতে বর্ণিত এবং ইবন জারীর (র) ও হাকিম (র) কর্তৃক সত্যায়িত এ বিবরণটি আমি আমার তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছি। ইন জারীর (র) আনাস (রাযিআল্লাহু আনহু) সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত এটুকু রয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكّ ࣰا আয়াতাংশ তিলাওয়াত করেন এবং আঙ্গুলে ইশারা করে বলেন, এভাবে পাহাড় ধসে গেল বলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃদ্ধাঙ্গুলিকে কনিষ্ঠা আঙ্গুলের উপরের জোড়ায় স্থাপন করলেন।
সুদ্দী (র) ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর জ্যোতি কনিষ্ঠ অঙ্গুলির পরিমাণে প্রকাশ করায় পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল অর্থাৎ মাটি হয়ে গেল। আয়াতাংশ خر এ উল্লেখিত এর وخر موسى صعقا অর্থ হচ্ছে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া। কাতাদা (র) বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে মারা যাওয়া তবে প্রথম অর্থটি বিশুদ্ধতর। কেননা, পরে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ فلما افاق কেননা বেহুঁশ হবার পরই জ্ঞান ফিরে পায়। আয়াতাংশ ( سُبۡحَـٰنَكَ تُبۡتُ إِلَیۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ) (মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করলাম এবং মুমিনদের আমিই প্রথম।) অর্থাৎ আল্লাহ্ যেহেতু মহিমময় ও মহাসম্মানিত সেহেতু কেউ তাঁকে দেখতে পারবে না। মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, এর পর আর কোন দিনও তোমার দর্শনের আকক্ষা করব না। আমিই প্রথম মুমিন অর্থাৎ তোমাকে কোন জীবিত লোক দেখলে মারা যাবে এবং কোন শুল্ক বস্তু দেখলে তা গড়িয়ে পড়বে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবৃ সাঈদ খুদরী (র) থেকে বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “আমাকে তোমরা আম্বিয়ায়ে কিরামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রাধান্য দিও না। কেননা, কিয়ামতের দিন যখন মানব জাতি জ্ঞানহারা হয়ে যাবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম জ্ঞান ফিরে পাব। আর তখন আমি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে আল্লাহ্ তা’আলার আরশের কাছে স্তম্ভ ধরে থাকতে দেখতে পাব। আমি জানি না, তিনি কি আমার পূর্বেই জ্ঞান ফিরে পাবেন, না কি তাঁকে তূর পাহাড়ে জ্ঞান হারাবার প্রতিদান দেয়া হবে।’ পাঠটি বুখারীর।
এ হাদীসের প্রথম দিকে এক ইহুদীর ঘটনা রয়েছে। একজন আনসারী তাকে চড় মেরেছিলেন যখন সে বলেছিল لا والذي اصطفي موسي علي البشر অর্থাৎ না, এমন সত্তার শপথ করে বলছি যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে সমস্ত বনী আদমের মধ্যে অধিকতর সম্মান দিয়েছেন। তখন আনসারী প্রশ্ন করেছিলেন আল্লাহ কি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকেও মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে অধিক সম্মান দিয়েছিলেন? ইহুদী বলল, হ্যা, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ لاتخيروني من بين الانبياء বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। এই হাদীসে لاتخيروني علي موسى অর্থাৎ মূসা (আলাইহিস সালাম) থেকে আমাকে অগ্রাধিকার দেবে না, কথাটিরও উল্লেখ রয়েছে। এরূপ নিষেধ করার কারণ বিভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটা বিনয় প্রকাশ করার জন্য বলেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে আমার প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে কিংবা আম্বিয়ায়ে কিরামকে তুচ্ছ করার উদ্দেশ্যে আমার অগ্রাধিকার বর্ণনা করবে না।
অথবা এটার অর্থ হচ্ছে এরূপঃ এটা তোমাদের কাজ নয় বরং আল্লাহ তাআলাই কোন নবীকে অন্য নবীর উপর মর্যাদা দান করে থাকেন। এই মর্যাদা ও অগ্রাধিকার কারো অভিমতের উপর নির্ভরশীল নয়। এই মর্যাদা অভিমতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় না বরং আল্লাহ্ তা’আলার ওহীর উপর নির্ভরশীল। যিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সকলের মধ্যে উত্তম এই তথ্যটি জানার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ বলতে নিষেধ করেছিলেন, যখন তিনি জানতে পারলেন যে, তিনিই সকলের মধ্যে উত্তম তখন এ নিষেধাজ্ঞাটি রহিত হয়ে যায়। তার এ অভিমতটি সন্দেহমুক্ত নয়। কেননা, উপরোক্ত হাদীসটি আবু সাঈদ খুদরী (র) ও আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে। আর আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) খায়বর যুদ্ধের বছরে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। তাই খায়বর যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানতে পেরেছেন, এর সম্ভাবনা ক্ষীণ। আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ। তবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সমস্ত মানব তথা সমস্ত সৃষ্টির সেরা এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
كنتم خيرامة اخرجت للناس
অর্থাৎ, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরানঃ ১১০)
আর উম্মতের পরিপূর্ণতা তাদের নবীর মান-মর্যাদার দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়। হাদীসের সর্বোচ্চ সূত্র তথা মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “কিয়ামতের দিন আমি থাকব আদম সন্তানদের সর্দার। এটা আমার গর্ব নয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাকামে মাহমূদ যে কেবল তারই জন্য নির্দিষ্ট তা তিনি উল্লেখ করেন। মাকামে মাহমূদ পূর্বের ও পরের সকলের কাছেই ঈর্ষণীয় এবং এই মর্যাদা অন্য সব নবী-রাসূলের নাগালের বাইরে থাকবে। এমনকি নূহ (আলাইহিস সালাম), ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), মূসা (আলাইহিস সালাম) এবং ইসা ইব্ন মারয়াম (আলাইহিস সালাম) প্রমুখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন নবীগণও এ গৌরব লাভ করবেন না।
فاكون اول من يفيق فاجد موسى باطشا بقائمة العرش فلاادرى افاق قبلى ام جوزى لصعقة الطور
হাদীসে উক্ত উপরোক্ত বাক্য দ্বারা বোঝা যায়, বান্দাদের আমলের ফয়সালা করার সময় আল্লাহ তা’আলা যখন জ্যোতি প্রকাশ করবেন, তখন কিয়ামতের মাঠে সৃষ্টিকুল জ্ঞানহারা হয়ে যাবে। অতিরিক্ত ভয়-ভীতি ও আতংকগ্রস্ততার জন্যই তারা এরূপ জ্ঞানহারা হবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি জ্ঞান ফিরে পাবেন তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী এবং সব নবীর চেয়ে আসমান যমীনের প্রতিপালকের প্রিয়তম মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে আরশের স্তম্ভ ধরে থাকতে দেখবেন। সত্যবাদী নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
لا ادرى اصعق فافاق قبلى اوجوزنى بصعقة الطور
অর্থাৎ- আমি জানি না তাঁর জ্ঞানহারা হওয়া কি অতি হালকা ছিল কেননা তিনি দুনিয়ায় একবার জ্ঞানহারা হয়েছিলেন, নাকি তাকে তুর পাহাড়ে জ্ঞান হারানোর প্রতিদান দেয়া হয়েছে অর্থাৎ তিনি আদৌ জ্ঞানহারা হননি। এতে রয়েছে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্য একটি বড় মর্যাদা। তবে এই বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁর সার্বিক মর্যাদাবান বুঝায় না আর এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর মর্যাদা ও ফযীলতের দিকে এভাবে ইংগিত করেন, কেননা যখন ইহুদী বলেছিলঃ لا والذى اصطفى موسى على البشر অর্থাৎ না, শথ যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে সমগ্র মানব জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, আনসারী ইহুদীর গালে চপেটাঘাত করায় মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সম্পর্কে কেউ বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে পারে তাই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন।
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত এবং বাক্যালাপ দ্বারা তোমাকে মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি অর্থাৎ সমসাময়িক যুগের লোকদের উপর পূর্ববর্তীদের উপর নয়, কেননা ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) থেকে উত্তম ছিলেন। যা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর কাহিনীর মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আবার তাঁর পরবর্তীদের উপরও নয়, কেননা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদের উভয় থেকেই উত্তম ছিলেন। যেমন মিরাজের রাতে সকল নবী-রাসূলের উপর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেয়েছে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ ساقوم مقاما يرغب الى الخلق حتى ابراهيم আমি এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হব যার আখাক্ষা সৃষ্টিকুলের সকলেই করবে, এমনকি ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম)-ও।
আমি যে রিসালাত তোমাকে দান করেছি তা শক্তভাবে গ্রহণ কর, তার চাইতে বেশি প্রার্থনা কর না এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তার জন্যে ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি।” ফলকগুলোর উপাদান ছিল খুবই মূল্যবান। সহীহ গ্রন্থে আছে যে, আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতী হাতে মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্য তাওরাত লিখেছিলেন, তার মধ্যে ছিল উপদেশাবলী এবং বনী ইসরাঈলের প্রয়োজনীয় হালাল-হারামের বিস্তারিত ব্যাখ্যা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, فخذها بقوة এগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে নেক নিয়তে ধর। তারপর বলেনঃ وامر قو مك ياخذباحسنها অর্থাৎ, তোমার সম্প্রদায়কে নির্দেশ দাও তারা যেন এগুলোর যা উত্তম তা গ্রহণ করে। তারা যেন তার উত্তম ব্যাখ্যা গ্রহণ করে। আর যারা আমার আনুগত্য পরিহারকারী, আমার আদেশের বিরোধী ও আমার রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণাম গোপন রাখছে। আমি শীঘ্রই সত্য-ত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদেরকে দেখাব।
অর্থাৎ, পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করে বেড়ায় তাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হতে ফিরিয়ে দেব। তারা এগুলোর তাৎপর্য ও মূল অর্থ বুঝতে অক্ষম থাকবে; তারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পরও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে না; তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, এ পথে চলবে না, এ পথের অনুসরণ করবে না, কিন্তু তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে এটাকে তারা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে এটা এজন্য যে, তারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; এগুলো থেকে তারা গাফিল রয়েছে; এগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং সে অনুযায়ী আমল করা থেকে বিরত রয়েছে। যারা আমার নিদর্শন ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের কর্ম নিষ্ফল হবে। তারা যা করবে তদনুযায়ীই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আরাফ ১৪৬-১৪৭)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/71
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।