মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অর্থাৎ, এবং স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই ঘরের স্থান, তখন বলেছিলাম, আমার সাথে কোন শরীক স্থির করো না, এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখিও তাদের জন্যে যারা তাওয়াফ করে এবং যারা (দাঁড়ায় সালাতে), রুকূ করে ও সিজদা করে। এবং মানুষের নিকট হজ্জ-এর ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটসমূহের পিঠে, এরা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ্জঃ২৬-২৭)
মানব জাতির জন্যে সর্বপ্রথম যে ঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায়, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে। যেমন মাকামে ইবরাহীম এবং যে কেউ সেস্থানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে ঐ গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য। এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে-ইমরানঃ ৯৬-৯৮)
অর্থাৎ, এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল, আল্লাহ্ বললেন, ‘আমি তোমাকে মানব জাতির নেতা করছি।’ সে বলল, ‘আমার বংশধরদের মধ্য হতেও?’ আল্লাহ বললেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নয় এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন কা’বা ঘরকে মানব জাতির মিলন-কেন্দ্র ও নিরাপত্তা স্থল করেছিলাম এবং বলেছিলাম, তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থান মাকামে ইবরাহীমকেই সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’ এবং ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্যে আমার ঘরকে পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম। স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর করো। আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা দান করো।’ তিনি বললেন, ‘যে কেউ অবিশ্বাস করবে তাকেও কিছুকালের জন্যে জীবনোপভোগ করতে দেব। তারপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং তা কত নিকৃষ্ট পরিণাম!’
স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা’বা গৃহের প্রাচীর তুলছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত করো এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার এক অনুগত উম্মত করো। আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ করিও যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট আবৃত্তি করবে; তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে। তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারাঃ ১২৪-১২৯)
এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয় বন্ধু ও রাসূল এবং বহু সংখ্যক নবীর পিতৃপুরুষ হযরত ইবরাহীম (আ) সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বায়তুল আতীক বা কাবাঘর নির্মাণ করেন। এটাই সর্বপ্রথম মসজিদ যা সর্বসাধারণের ইবাদতের জন্যে নির্মাণ করা হয়। আল্লাহ এ ঘরের ভিত্তি স্থান নির্দিষ্ট করে দেন। হযরত আলী (রা) প্রমুখ সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ ওহীযোগে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে ঐ স্থান নির্দেশ করে দেন। ইতিপূর্বে আসমানের সৃষ্টি রহস্য অধ্যায়ে আমরা বলে এসেছি যে, কাবাঘর বায়তুল মা’মূরের সোজা নিচে যমীনে অবস্থিত। এমনকি যদি বায়তুল মা’মূর নিচে পতিত হতো তবে তা অবশ্যই কা’বাঘরের উপরেই পড়তো। শুধু তাই নয়, কোন কোন পূর্বসূরি আলিমের মতে, সাত আসমানের প্রতিটি ইবাদত গৃহ এই একই বরাবরে অবস্থিত। তারা বলেছেন, প্রতিটি আসমানে একটি করে ঘর আছে। আসমানবাসীরা সেই ঘরে আল্লাহর ইবাদত করে থাকেন। আসমানবাসীদের জন্যে সেগুলো পৃথিবীর অধিবাসীদের কা’বারই অনুরূপ। তাই আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-কে পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্যে একটি ঘর নির্মাণ করতে আদেশ দেন, যেমনি আকাশের ফেরেশতাদের জন্যে ইবাদতখানা রয়েছে, আল্লাহ্ তাকে সে স্থান দেখিয়ে দেন। আকাশ ও যমীন সৃষ্টির পর থেকেই এই স্থানটিকে উক্ত ঘরের জন্যে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছিল। বুখারী ও মুসলিমে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে যে, এই শহরকে আল্লাহ সেই দিনই ‘হারম’ বলে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন, যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছিলেন। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদায় এটা কিয়ামত পর্যন্ত তা হারমই থাকবে। কোন সহীহ বর্ণনায় কোন নবী থেকে এমন বর্ণনা পাওয়া যায়নি যে, ইব্রাহীম খলীলের নির্মাণের পূর্বে এ ঘরের কোন নির্মিতরূপ ছিল।
আয়াতে উল্লেখিত مكان البيت (ঘরের স্থান) শব্দ থেকে কেউ কেউ প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, এ ঘরের ভিত্তি পূর্ব থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তাদের এ দলীল যথার্থ নয়। কেননা, ঘরের স্থান বলে বোঝান হয়েছে সেই স্থানকে যা আল্লাহর জ্ঞানে নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট ছিল এবং তারই কুদরতে হযরত আদম (আ) থেকে ইবরাহীম খলীল (আ)-এর সময় পর্যন্ত সকল নবীর নিকট তা পরিচিত ছিল। আমরা আগেই বলেছি যে, হযরত আদম (আ) এ ঘরের উপর গম্বুজ নির্মাণ করেছিলেন। ফেরেশতাগণ তাঁকে বলেছিলেন, আমরা আপনার পূর্বেই এ ঘর তওয়াফ করেছি। নূহের কিশতী এ ঘরের চারদিকে চল্লিশ দিন (বা তার কাছাকাছি সময়) ধরে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু এগুলো ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বলেছি যে, ইসরাঈলী বর্ণনাকে আমরা সত্যও জানবো না, মিথ্যাও বলবো না। সুতরাং এর দ্বারা কোন প্রমাণ দেয়া যাবে না। তবে যদি তা সত্যের বিপরীত হয় তবে অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য।
অর্থ, নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতের জন্যে নির্মাণ করা হয়েছে, যা মক্কায় অবস্থিত তা অতি বরকতময় ও বিশ্ববাসীর হিদায়াতের মাধ্যম।
অর্থাৎ প্রথম ঘর যা সর্বসাধারণের কল্যাণার্থে নির্মাণ করা হয়েছে, তা ছিল বরকতের জন্যে ও হিদায়াতের জন্যে। بكة শব্দ দ্বারা ২টি অর্থ বোঝা যায় (১) মক্কা, (২) কা’বা যে জায়গার উপর দাঁড়িয়ে আছে তা। فيه ايات بينات (এতে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ।) কেননা, এটা নির্মাণ করেছেন ইবরাহীম খলীল (আ)যিনি তাঁর পরবর্তী সকল নবীর পিতা। নিজ বংশধরদের মধ্যে যারা তাঁকে অনুসরণ করেছে ও তাঁর রীতি-নীতি গ্রহণ করেছে, তাদের তিনি ইমাম। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন مقام ابرراهيم (ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্থান) অর্থাৎ যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে তিনি কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। কা’বা ঘরের দেওয়াল যখন তাঁর চাইতে উঁচু হয়ে যায়, তখন পুত্র ইসমাঈল (আ) এই প্রসিদ্ধ পাথরখানা এনে পিতার পায়ের নিচে স্থাপন করেন, যাতে তার উপর দাঁড়িয়ে দেওয়াল উঁচু করতে পারেন। ইবন আব্বাস (রা)-এর দীর্ঘ হাদীসে এ কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ পাথরটি সেই প্রাচীনকাল থেকে হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত কা’বার দেওয়াল সংলগ্ন ছিল। তিনি এটাকে কা’বা। ঘর থেকে কিছু পিছিয়ে দেন। যাতে সালাত আদায়কারী ও তাওয়াফকারীদের অসুবিধা না হয়। এ ব্যাপারে হযরত উমর (রা)-এর পদক্ষেপকে সকলে মেনে নেন।
কেননা, যেসব বিষয়ে হযরত উমর (রা)-এর মতামত আল্লাহ তাআলার আনুকূল্য লাভ করে তন্মধ্যে এটি একটি কারণ, একদা তিনি রাসূল (সা)-এর নিকট বলেছিলেনঃ
لواتخذنا من مقام ابراهيم مصلى
কতই না ভাল হত, যদি মাকামে ইবরাহীমকে আমরা সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করতাম! তখন আল্লাহ আয়াত নাযিল করেনঃ
(তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থান রূপে গ্রহণ কর।) ইসলামের প্রাথমিক যুগ পর্যন্ত ঐ পাথরের উপর হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পায়ের দাগ অবশিষ্ট ছিল। আবূ তালিব তাঁর বিখ্যাত কাসীদায়ে লামিয়ায় এ বিষয়ের উল্লেখ করেছেনঃ
وموطىء ابراهيم في الصخر رطبة - على قدميه حافيا غيرناعل
অর্থাৎ-ছাওর পর্বতের কসম এবং যিনি ছাবীর পর্বতকে তার জায়গায় দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন তার কসম এবং যিনি হেরা পর্বতে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন ও অবতরণ করেছিলেন তার কসম। এই ঘরের কসম, মক্কাবাসীদের উপরে এই ঘরের হক রয়েছে। আল্লাহর কসম, তিনি কিছুমাত্র গাফিল নন। কসম হাজরে আসওয়াদের। যখন দিবসের প্রথমভাগে ও শেষভাগে লোকজন তাওয়াফকালে তাকে জড়িয়ে ধরে। কসম মাকামে ইবরাহীমের, যার উপর তার পাদুকাবিহীন নগ্ন পায়ের স্মৃতিচিহ্ন এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম (আ) যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন, সেই পাথরের উপর তার পায়ের চিহ্ন অঙ্কিত হয়ে যায়।
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ কাজ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, আল্লাহর নির্দেশ পালনে তাঁরা উভয়ে ছিলেন একান্ত নিষ্ঠাবান। তাই সর্বশ্রোতা ও সবজান্তা আল্লাহর নিকট তাঁরা দু’আ করছেন তাঁদের এ মহৎ কাজ ও প্রচেষ্টা কবুল করার জন্যে। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হতে তোমার এক অনুগত উম্মত কর। আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারাঃ ১২৭-২৮)
মোটকথা, হযরত ইব্রাহীম খলীল (আ) বিশ্বের সবচেয়ে অধিক সম্মানিত মসজিদকে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন। সে স্থানটি এমন একটি উপত্যকা, যেখানে কোন ফসল উৎপাদিত হয় না। তিনি তথাকার অধিবাসীদের জন্যে বরকতের দু’আ করেন। ফলের দ্বারা তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করতে দু’আ করেন। যদিও সেখানে পানির স্বল্পতা এবং বৃক্ষ, ফল ও ফসলের শূন্যতা ছিল। তিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করেন এ স্থানকে সম্মানিত ও নিরাপদ স্থানে পরিণত করতে। আল্লাহ্ তার প্রার্থনা শোনেন, দু’আ কবূল করেন, আহ্বানে সাড়া দেন ও প্রার্থিত বস্তু দান করেন। আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, আমি কি ওদেরকে এক নিরাপদ হারমে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিযিক স্বরূপ? (সূরা কাসাসঃ ৫৭)
হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর কাছে তাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করার জন্যে দু’আ করেন। অর্থাৎ তাদের স্বজাতির মধ্য থেকে তাদেরই উন্নত ভাষাশৈলীতে পারদর্শী কোন ব্যক্তিকে। যাতে করে দীন ও দুনিয়ার উভয় নিয়ামতের পূর্ণ অধিকারী হতে পারে। আল্লাহ তাঁর এ দু’আও কবূল করেন। তিনি তাদের মধ্য থেকে রাসূল প্রেরণ করেন। যিনি ছিলেন সর্বশেষ নবী, তার পরে আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না। তাঁর দীনকে পূর্ণতা দান করেন, যা ইতিপূর্বে কারও ক্ষেত্রে করেননি। তাঁর দাওয়াতকে সর্বকালে সর্বদেশে পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর জন্যে ব্যাপক ও বিস্তৃত করে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর দীনই বলবৎ থাকবে।
সকল নবীর মধ্যে এটা ছিল তার একক বৈশিষ্ট্য, তাঁর ব্যক্তিত্বের মর্যাদা, তার আনীত দীনের পূর্ণতা, জন্মভূমির গৌরব, ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব, উম্মতের উপর তার অশেষ দয়া ও মমতা, বংশ মর্যাদা এবং তার আচার-আচরণ। এই কারণে হযরত ইব্রাহীম (আ) যখন দুনিয়াবাসীর জন্যে কা’বা নির্মাণ করেন তখন তা সম্মান ও মর্যাদায় সপ্তম আকাশের অধিবাসী ফেরেশতাগণের কা’বা বায়তুল মা’মূরের সমমর্যাদা লাভ করে। বায়তুল মা’মূরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদত করে থাকেন এবং একবার যারা এ সুযোগ পান তারা কিয়ামত অবধি আর দ্বিতীয়বার সে সুযোগ পান না। আমরা সূরা বাকারার তাফসীরে বায়তুল্লাহ্ নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় কথা এবং সংশ্লিষ্ট হাদীস ও বর্ণনাসমূহের উল্লেখ করেছি। আগ্রহী ব্যক্তি তা সেখানে দেখে নিতে পারেন। সে বর্ণনাসমূহের একটি হলো, সকল প্রশংসা আল্লাহরই। সুদ্দী বলেছেন, আল্লাহ্ যখন ইবরাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ)-কে কা’বা নির্মাণের আদেশ করেন, তখন তাঁরা কাবার স্থানটি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। আল্লাহ্ তখন খাজুজ নামক একটি বায়ু প্রেরণ করেন। তার ছিল দুটি পাখা ও সর্পাকৃতির মস্তক। সে বায়ু প্রাচীন কা’বার স্থানটি আবর্জনা মুক্ত করে দেয়। তখন ইব্রাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ) তা অনুসরণ করে কোদাল দ্বারা মাটি খুঁড়ে সেখানে ভিত্তি স্থাপন করেন।
(যখন আমি ইব্রাহীমকে ঘরের স্থান নির্ধারণ করে দিলাম।) ভিত্তির উপর দেয়াল উঠানোর সময় ঘরের স্তম্ভ নির্মাণ করেন। ইবরাহীম (আ) ইসমাঈল (আ)-কে বললেন, প্রিয় বৎস! এখন তুমি আমার জন্যে ভারতবর্ষ থেকে ‘হাজরে আস্ওয়াদ’ নিয়ে এস। মূলত এটা ছিল শুভ্র ইয়াকূত পাথর, দেখতে উট পাখির ন্যায়। হযরত আদম (আ) এ পাথরসহ জান্নাত থেকে অবতরণ করেন। মানুষের পাপ-স্পর্শে এটা কাল হয়ে যায়। ইসমাঈল (আ) একটি পাথর নিয়ে পিতার নিকট এসে উক্ত হাজরে আসওয়াদকে রুকনে কা’বার নিকট দেখতে পান। পিতাকে জিজ্ঞেস করেন, আব্বাজান! এ পাথরটি কে নিয়ে এসেছে। তিনি বললেন, এটা এমন একজন নিয়ে এসেছেন যিনি তোমার চাইতে অধিক গতিসম্পন্ন। এরপর উভয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজে মনোনিবেশ করেন ও দু’আ পাঠ করতে থাকেনঃ
অর্থাৎ, হে আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।
ইবন আবু হাতিম (র) বলেছেন, ইব্রাহীম (আ) পাঁচটি পাহাড়ের পাথর দ্বারা কা’বা নির্মাণ করেছিলেন। ইবরাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আ) যখন নির্মাণ কাজে ব্যাপৃত ছিলেন, তখন গোটা পৃথিবীর বাদশাহ যুলকারনাইন ঐ পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদেরকে এ কাজ করতে কে নির্দেশ দিয়েছে? জবাবে ইব্রাহীম (আ) বললেন, আল্লাহই আমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। যুলকারনাইন বললেন, আপনার কথার যথার্থতা কি করে বুঝবো? তখন পাঁচটি ভেড়া সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহই এ নির্দেশ দিয়েছেন। তখন যুলকারনাইন ঈমান আনলেন এবং তার সত্যতা স্বীকার করে নিলেন।
আযরাকী (র) লিখেছেন, তিনি ইব্রাহীম খলীলুল্লাহর (আ)-এ সাথে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। হযরত ইব্রাহীম খলীল (আ)-এর তৈরি কাবা দীর্ঘকাল যাবত অক্ষত থাকে। পরবর্তীকালে কুরায়শগণ ঘরটি পুনর্নির্মাণ করে। তখন ঘরের উত্তর দিক থেকে যেই দিকে শাম দেশ অবস্থিত, হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর ভিত্তি থেকে কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়, বর্তমানে সেই অবস্থার উপরেই কা’বাঘর আছে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সা) একবার তাঁকে বলেছিলেন, আয়েশা! তুমি তোমার সম্প্রদায়ের লোকদের ব্যাপারটি ভেবে দেখেছ কি? তারা যখন কা’বা পুনঃনির্মাণ করে, তখন ইব্রাহীম (আ)-এর ভিত্তি থেকে ছোট করে ফেলে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন তা ইব্রাহীম (আ)-এর ভিত্তির উপর ফিরিয়ে আনেন না? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের লোকজন যদি নও-মুসলিম না হত, ভিন্ন বর্ণনায় যদি তোমার লোকজন জাহিলী যুগের কিংবা কুফরী যুগের কাছাকাছি সময়ের লোক না হত, তাহলে আমি কা’বার মধ্যে রক্ষিত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে দিতাম, ঘরের দরজা নিচু করে যমীনের সমতলে নিয়ে আসতাম এবং (বাদ-পড়া) হিজর অংশ হাতীম৭৯(কুরায়েশদের পুনঃনির্মাণকালে কাবার বাদ পড়া অংশ হাতীম বা হিজরে ইসমাঈল নামে বিখ্যাত।) অংশটুকু বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম। পরবর্তীকালে হযরত আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা) তাঁর শাসনামলে কা’বাঘর সেভাবেই পুনঃনির্মাণ করেন। যেদিকে রাসূলুল্লাহ (সা) ইঙ্গিত করেছেন বলে তার খালা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা) তাঁকে বলেছিলেন।
হিজরী ৭৩ সালে হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ ইবন যুবায়র (রা)-কে হত্যা করে তদানীন্তন খলীফা আবদুল-মালিক ইবন মারওয়ানের নিকট পত্র লিখে। আবদুল মালিকের সভাসদগণের ধারণা ছিল যে, ইবন যুবায়র (রা) আপন খেয়াল-খুশী মতেই কা’বার সংস্কার করেছিলেন। সুতরাং খলীফা তা ভেঙ্গে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ মত খলীফার লোকজন কা’বার উত্তর-দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে, হাতীম অংশকে ভিতর থেকে বের করে দেয় এবং অন্যান্য পাথর কাবা ঘরের ভিতরে রেখে দেয়াল উঠিয়ে দেয়। ফলে পূর্ব দিকের দরজা উঁচু হয়ে যায় এবং পশ্চিমের দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে এই অবস্থায়ই আছে।
পরে আবদুল মালিক (র)-এর লোকজন যখন জানলো যে, ইবন যুবায়র (রা) হযরত আয়েশা (রা)-এর বর্ণনা অনুসারে কা’বা সংস্কার করেছিলেন, তখন তারা দুঃখ প্রকাশ করে এবং অনুশোচনা করে যে, এরূপ করা না হলে ভাল হত। এরপর খলীফা মাহদী ইবন মানসূর খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে ইমাম মালিক ইবন আনাসের নিকট পরামর্শ চান যে, আবদুল্লাহ ইবন যুবায়র (রা)-এর ভিত্তির উপর কা’বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলে কেমন হয়? ইমাম মালিক (র) বলেন, এতে আমার আশংকা হয় যে, রাজা-বাদশাহরা কা’বাকে খেলার বস্তুতে পরিণত করবে। অর্থাৎ প্রত্যেক বাদশাহ তার ইচ্ছামত কা’বা ঘর সংস্কার করতে চাইবে। সুতরাং কা’বাকে সেই অবস্থার উপর বহাল রাখা হয় এবং আজও পর্যন্ত সেই একই অবস্থায় আছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/52
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।