মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রথম সন্তান ইসমাঈল (আ)। যিনি মিসরের কিবতী বংশীয়া হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর ইবরাহীম (আ)-এর স্ত্রী তার চাচাত বোন সারাহর গর্ভের দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক (আ) জন্মগ্রহণ করেন। তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) কিনআনের কানতুরা বিনত ইয়াকতানকে বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে ছয়টি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তারা হলেন (১) মাদয়ান (২) যামরান (৩) সারাজ (৪) য়াকশান (৫) নাশুক (৬) এ নামটি অজ্ঞাত। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ) হাজুন বিনত আমীনকে বিবাহ করেন। এই পক্ষে পাঁচটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেনঃ (১) কায়সান (২) সুরাজ (৩) উমায়স (৪) লূতান (৫) লাফিস। আবুল কাসিম সহায়লী তার ‘আত-তারীফ ওয়াল আ’লাম’ গ্রন্থে এরূপ উল্লেখ করেছেন।
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর জীবদ্দশায় যে সব বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তন্মধ্যে লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ঘটনা ও তাদের উপর আল্লাহর আযাবের ঘটনা অন্যতম। ঘটনাটি নিম্নরূপঃ হযরত লূত (আ) ছিলেন হারান ইব্ন তারাহ-এর পুত্র। এই তারাহকেই আযরও বলা হত। যা পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। হযরত লূত ছিলেন ইবরাহীম খলীল (আ)-এর ভাতিজা। ইবরাহীম, হারান ও নাজুর এরা ছিলেন তিন ভাই যা পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। হারানের বংশধরকে বনূ হারান বলা হয়। কিন্তু আহলে কিতাবদের ইতিহাস এ মত সমর্থন করে না। হযরত লূত (আ) চাচা ইবরাহীম খলীল (আ)-এর নির্দেশক্রমে গওর যাগার অঞ্চলে সাদ্দুম শহরে চলে যান। এটা ছিল ঐ অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র। অনেক গ্রাম, মহল্লা ও ক্ষেত-খামার এবং ব্যবসায়কেন্দ্র এ শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ছিল। এখানকার অধিবাসীরা ছিল দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, পাপাসক্ত, দুশ্চরিত্র, সংকীর্ণমনা ও জঘন্য কাফির। তারা দস্যুবৃত্তি করতো। প্রকাশ্য মজলিসে অশ্লীল ও বেহায়াপনা প্রদর্শন করত। কোন পাপের কাজ থেকেই তারা বিরত থাকত না। অতিশয় জঘন্য ছিল তাদের কাজ-কারবার। তারা এমন একটি অশ্লীল কাজের জন্ম দেয় যা ইতিপূর্বে কোন আদম সন্তান করেনি। তাহলো, নারীদেরকে ত্যাগ করে তারা সমকামিতায় লিপ্ত হয়। হযরত লূত (আ) তাদেরকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান জানান এবং এসব ঘৃণিত অভ্যাস, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বর্জন করতে বলেন। কিন্তু তারা তাদের ভ্রান্তি, বিদ্রোহ, পাপ ও কুফরের প্রতি অবিচল থাকে। ফলে, আল্লাহ তাদের উপর এমন কঠিন আযাব নাযিল করলেন যা ফেরাবার সাধ্য কারোরই নেই, এ ছিল তাদের ধারণাতীত ও কল্পনাতীত শাস্তি। আল্লাহ তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দিলেন। বিশ্বের বিবেকবানদের জন্যে তা একটি শিক্ষাপ্রদ ঘটনা হয়ে থাকল। এ কারণেই আল্লাহ তার মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সূরা আ’রাফে আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, এবং লূতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, “তোমরা এমন কুকর্ম করছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি; তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্যে নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে গমন কর, তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়। তারপর তাকে ও তার স্ত্রী ব্যতীত তার পরিজনবর্গকে উদ্ধার করেছিলাম, তার স্ত্রী ছিল পেছনে রয়ে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। সুতরাং অপরাধীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা লক্ষ্য কর! (৭ঃ ৮০-৮৪)
অর্থাৎ, আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’, সে অবিলম্বে এক কাবাব করা বাছুর আনল। সে যখন দেখল, তাদের হাত ঐটির দিকে প্রসারিত হচ্ছে না। তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করল এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, আমরা লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’ তখন তার স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল এবং সে হাসল। তারপর আমি তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। সে বলল, ‘কি আশ্চর্য! সন্তানের মা হব আমি যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার।’ তারা বলল, ‘আল্লাহর কাজে তুমি বিস্ময় বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্রশংসাৰ্থ ও সম্মানাহ্।’
তারপর যখন ইবরাহীমের ভীতি দূরীভূত হল এবং তার নিকট সুসংবাদ আসল তখন সে লূতের সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। ইবরাহীম তো অবশ্যই সহনশীল। কোমল-হৃদয়, সতত আল্লাহ অভিমুখী। হে ইবরাহীম! এ থেকে বিরত হও। তোমার প্রতিপালকের বিধান এসে পড়েছে। ওদের প্রতি তো আসবে শাস্তি যা অনিবার্য এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের নিকট আসল তখন তাদের আগমনে সে বিষন্ন হল এবং নিজেকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল এবং বলল, ‘এটি নিদারুণ দিন’! তার সম্প্রদায় তার নিকট উদ্ভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসল এবং পূর্ব থেকে তারা কু-কর্মে লিপ্ত ছিল।
সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! এরা আমার কন্যা, তোমাদের জন্যে এরা পবিত্র। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আমাকে হেয় করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই?’ তারা বলল, ‘তুমি তো জান, তোমার কন্যাদেরকে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই; আমরা কি চাই তা তো তুমি জানই।’ সে বলল, তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি নিতে পারতাম কোন শক্তিশালী আশ্রয়! তারা বলল, হে লূত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনই তোমার নিকট পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি রাতের কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তোমাদের মধ্যে কেউ পেছন দিকে তাকাবে না, তোমার স্ত্রী ব্যতীত। ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। প্রভাত ওদের জন্যে নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়?
তারপর যখন আমার আদেশ আসল তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং তাদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পাথর-কংকর যা তোমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ছিল। এটি জালিমদের থেকে দূরে নয়। (১১ঃ ৬৯-৮৩)
অর্থাৎ, এবং ওদেরকে বল, ইবরাহীমের অতিথিদের কথা, যখন ওরা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন সে বলেছিল, আমরা তোমাদের আগমনে আতংকিত। ওরা বলল, ‘ভয় করো না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিচ্ছি।’ সে বলল, তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিচ্ছ আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কী বিষয়ে শুভ সংবাদ দিচ্ছ? ওরা বলল, ‘আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি, সুতরাং তুমি হতাশ হয়ো না।’ সে বলল, যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হয়? সে বলল, ‘হে প্রেরিতগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে?’ ওরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই ওদের সকলকে রক্ষা করব। কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়। আমরা স্থির করেছি যে, সে অবশ্যই পেছনে রয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
ফেরেশতাগণ যখন লূত পরিবারের কাছে আসল, তখন লূত বলল, তোমরা তো অপরিচিত লোক। তারা বলল, না ওরা সে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল, আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি; ‘আমরা তোমার কাছে সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী, সুতরাং তুমি রাতের কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তুমি তাদের পশ্চাদানুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পেছন দিকে না তাকায়; তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হচ্ছে তোমরা সেখানে চলে যাও। আমি তাকে এ বিষয়ে প্রত্যাদেশ দিলাম যে, প্রত্যুষে ওদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে। ’
নগরবাসিগণ উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হল। সে বলল, ‘ওরা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বে-ইজ্জত করো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে হেয় করো না।’ তারা বলল, ‘আমরা কি দুনিয়াশুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’ লূত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে। তোমার জীবনের শপথ, ওরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে। তারপর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল; এবং আমি জনপদকে উল্টিয়ে উপর নিচ করে দিলাম এবং ওদের উপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে। তা লোক চলাচলের পথের পাশে এখনও বিদ্যমান। অবশ্যই এতে মুমিনদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। (১৫ঃ ৫১-৭৭)
সূরা শুআরায়, আল্লাহ বলেনঃ
( كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ * إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ * إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ * فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ * وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَىٰ رَبِّ الْعَالَمِينَ * أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ * وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ ۚ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ * قَالُوا لَئِنْ لَمْ تَنْتَهِ يَا لُوطُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِينَ * قَالَ إِنِّي لِعَمَلِكُمْ مِنَ الْقَالِينَ * رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ * فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ * إِلَّا عَجُوزًا فِي الْغَابِرِينَ * ثُمَّ دَمَّرْنَا الْآخَرِينَ * وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَطَرًا ۖ فَسَاءَ مَطَرُ الْمُنْذَرِينَ * إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ * وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ ) [Surat Ash-Shu'ara 160 - 175] অর্থাৎ, লূতের সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল, যখন ওদের ভাই লূত ওদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসূল। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের কাছেই আছে। সৃষ্টির মধ্যে তোমরা তো কেবল পুরুষের সাথেই উপগত হও এবং তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীলোক সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক। তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। ওরা বলল, ‘হে নূত! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।’
লূত বলল, ‘আমি তোমাদের এ কাজকে ঘৃণা করি। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে, ওরা যা করে তা থেকে রক্ষা কর।’ অতঃপর আমি তাকে এবং তার পরিবার-পরিজন সকলকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধা ব্যতীত, যে ছিল পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর অপর সকলকে ধ্বংস করলাম। তাদের উপর শাস্তিমূলক বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল, তাদের জন্যে এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট! এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু ওদের অধিকাংশই মুমিন নয়। তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (২৬ঃ ১৬০-১৭৫)
অর্থাৎ, স্মরণ কর, লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা জেনেশুনে কেন অশ্লীল কাজ করছ? তোমরা কি কাম-তৃপ্তির জন্যে নারীকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়। উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র সাজতে চায়। তারপর তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম, তার স্ত্রী ব্যতীত; তাকে করেছিলাম ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের উপর ভয়ংকর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম; যাদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের জন্য এই বর্ষণ ছিল কত মারাত্মক! (২৭ঃ ৫৪-৫৮)
অর্থাৎ, স্মরণ কর লুতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা তো এমন অশ্লীল কাজ করছ; যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করেনি। তোমরাই তো পুরুষে উপগত হচ্ছ। তোমরাই তো রাহাজানি করে থাক এবং তোমরাই তো নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে ঘৃণ্য কাজ করে থাক।’ উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু এই বলল, ‘আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নিয়ে এসো যদি তুমি সত্যবাদী হও।’ সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর। যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলেছিল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। এর অধিবাসীরা তো জালিম। ইবরাহীম বলল, এই জনপদে তো লূত রয়েছে। তারা বলল, ‘সেখানে কারা আছে তা আমরা ভাল জানি; আমরা তো লূতকে ও তার পরিবার-পরিজনবর্গকে রক্ষা করবই; তার স্ত্রী ব্যতীত; সে তো পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত।’
এবং যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আসল, তখন তাদের জন্যে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করল। তারা বলল, ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমরা তোমাকে ও তোমার পরিজনবর্গকে রক্ষা করব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত; সে তো পেছনে রয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আমরা এই জনপদবাসীদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি নাযিল করব, কারণ তারা পাপাচার করেছিল। আমি বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখেছি। (২৯ঃ ২৮-৩৫)
অর্থাৎ, লূতও ছিল রাসূলগণের একজন। আমি তাকে ও তার পরিবারের সকলকে উদ্ধার করেছিলাম-এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল পেছনে রয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তারপর অবশিষ্টদেরকে আমি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিলাম। তোমরা তো ওদের ধ্বংসাবশেষগুলো অতিক্রম করে থাক সকালে ও সন্ধ্যায়, তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না? (৩৭ঃ ১৩৩-১৩৮)
সূরা যারিয়াতে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর মেহমান ও পুত্রের সুসংবাদের ঘটনা উল্লেখ করার পর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ, ইবরাহীম বলল, ‘হে ফেরেশতাগণ! তোমাদের বিশেষ কাজ কী?’ ওরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।’ ওদের উপর নিক্ষেপ করার জন্যে মাটির শক্ত ঢেলা, যা সীমালংঘনকারীদের জন্যে চিহ্নিত, তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে। সেখানে যে সব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম এবং সেখানে একটি পরিবার ব্যতীত কোন আত্মসমর্পণকারী আমি পাইনি। যারা মর্মন্তুদ শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে তাতে একটি নিদর্শন রেখেছি। (৫১ঃ ৩১-৩৭)
অর্থাৎ, লূত সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করেছিল সতর্ককারীদেরকে, আমি ওদের উপর পাঠিয়েছিলাম পাথরবাহী প্রচণ্ড ঝড়। কিন্তু লূত পরিবারের উপর নয়। তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে আমার বিশেষ অনুগ্ৰহস্বরূপ; যারা কৃতজ্ঞ আমি তাদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। লূত ওদেরকে সতর্ক করেছিল আমার কঠোর শাস্তি সম্পর্কে; কিন্তু ওরা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল। ওরা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল, তখন আমি ওদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি বললাম, ‘আস্বাদন কর, আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম। ভোরে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর, আমার শাস্তি এবং সতর্কবাণীর পরিণাম। আমি কুরআন সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্যে; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (৫৪ঃ ৩৩-৪০)
তাফসীর গ্রন্থে এ সব সূরার যথাস্থানে আমরা এই ঘটনার বিশদ আলোচনা করেছি। আল্লাহ হযরত লূত (আ) ও তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। আমরা ইতিপূর্বে কওমে নূহ, কওমে আদ ও কওমে ছামূদ-এর আলোচনায় সেসব উল্লেখ করেছি।
এখন আমরা সে সব কথার সার-সংক্ষেপ বর্ণনা করব, যা তাদের কর্মনীতি ও পরিণতি সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। তাহলো, হযরত লূত (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান জানান। সেইসব অশ্লীল কাজ করতে নিষেধ করেন যার উল্লেখ স্বয়ং আল্লাহ তাআলা করেছেন। কিন্তু একজন লোকও তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি এবং তার উপর ঈমান আনেনি। নিষেধকৃত কর্ম থেকে কেউ বিরত থাকেনি। বরং তারা তাদের অবস্থার উপর অটল অবিচল হয়ে থাকে এবং নিজেদের ভ্রষ্টতা ও মূর্খতা থেকে বিরত থাকেনি। এমনকি তারা তাদের রাসূলকে তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
রাসূল যখন তাদেরকে উদ্দেশ করে উপদেশ দেন, তখন তারা বিবেক না খাটিয়ে এই এক উত্তরই দিতে থাকে যে, লূত পরিবারকে তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। কেননা, তারা এমন মানুষ যারা পাক-পবিত্র সাজতে চায়। এ কথার মধ্য দিয়ে তারা লূত পরিবারের নিন্দা করতে গিয়ে তাদের চরম প্রশংসাই করেছে। আবার এটাকেই তারা বহিষ্কারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। চরম শত্রুতা ও ঘৃণা থাকার কারণেই তারা লূতকে এ কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ হযরত লূত (আ)-কে ও তার পরিবারবর্গকে পবিত্র রাখলেন এবং সম্মানের সঙ্গে সেখান থেকে তাদেরকে বের করে আনলেন, তবে তার স্ত্রীকে নয়। আর তার সম্প্রদায়ের সবাইকে আপন বাসভূমিতে চিরস্থায়ীভাবে থাকতে দিলেন। তবে সে থাকা ছিল দুর্গন্ধময় সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে লীন হয়ে। যা ছিল প্রকৃতপক্ষে উত্তপ্ত আগুন ও তাপ প্রবাহ এবং তার পানি তিক্ত ও লবণাক্ত।
তারা নবীকে এরূপ উত্তর তখনই দিয়েছে, যখন তিনি তাদেরকে জঘন্য পাপ ও চরম অশ্লীলতা যা ইতিপূর্বে বিশ্বের কোন লোক করেনি, তা থেকে নিবৃত্ত থাকতে বলেছেন। এ কারণেই তারা বিশ্ববাসীর জন্যে উদাহরণ ও শিক্ষাপ্রদ হয়ে রয়ে গিয়েছে। এ পাপকর্ম ছাড়াও তারা ছিনতাই, রাহাজানি করত, পথের সাথীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করত। প্রকাশ্য মজলিসে বিভিন্ন রকম নির্লজ্জ কথা বলতো এবং লজ্জাজনক কাজে লিপ্ত হতো। যেমন সশব্দে বায়ু ত্যাগ করত। এতে কোন লজ্জা বোধ করত না। অনেক সময় বড় বড় জঘন্য কাজও করত। কোন উপদেশদানকারীর উপদেশ ও জ্ঞানী লোকের পরামর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করতো না। এ জাতীয় কাজের মাধ্যমে তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং তার চাইতেও অধম ও বিভ্রান্ত বলে পরিচয় দিত। তারা তাদের বর্তমান কাজ থেকে বিরত থাকেনি, বিগত পাপ থেকে অনুশোচনা করেনি এবং ভবিষ্যতে আত্মসংশোধনের ইচ্ছাও করেনি। অতএব, আল্লাহ তাদেরকে শক্ত হাতে পাকড়াও করলেন। তারা হযরত লূত (আ)-কে বলেছিলঃ
ائتنا بعذاب الله إن گفت من الصادقين
(তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আল্লাহর আযাব আমাদের জন্যে নিয়ে এস) অর্থাৎ নবী তাদের যে কঠিন আযাবের ভয় দেখাচ্ছিলেন তারা সেই আযাব কামনা করছিল এবং ভয়াবহ শাস্তির আবেদন জানাচ্ছিল। এই সময় দয়ালু নবী তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান। তিনি বিশ্ব প্রভু ও রাসূলগণের ইলাহ্-এর নিকট অনাচারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ফলে নবীর মর্যাদা হানিতে আল্লাহর ক্রোধের উদ্রেক হয়, নবীর ক্রোধের জন্যে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন। নবীর প্রার্থনা কবুল করেন এবং তাঁর প্রার্থিত বস্তু দান করেন। আপন দূত ও ফেরেশতাগণকে প্রেরণ করেন। তারা আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আ)-এর কাছে আগমন করেন। তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দেন এবং তারা যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে এসেছেন সে বিষয়টিও তাঁকে জানান।
অর্থাৎ, ইবরাহীম বলল, হে ফেরেশতাগণ! আপনাদের আগমনের উদ্দেশ্য কী? তারা বলল, আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। যাতে তাদের উপর শক্ত ঢেলা নিক্ষেপ করি, যা সীমালংঘনকারীদের শাস্তি দেয়ার জন্যে আপনার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত রয়েছে।
অর্থাৎ, আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে আসল, তখন তারা বলেছিল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের ধ্বংস করব। কারণ এর অধিবাসীরা জালিম। ইবরাহীম বলল, এই জনপদে তো লূতও আছে। তারা বলল, ওখানে কারা আছে সে সম্পর্কে আমরা ভালভাবে অবগত আছি। আমরা তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অবশ্যই রক্ষা করব, তবে তার স্ত্রীকে নয়। সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (২৯ঃ ৩১-৩২)
(যখন ইবরাহীমের ভীতি দূর হল ও সুসংবাদ জানান হল, তখন সে দূতের প্রসঙ্গ নিয়ে আমার সাথে বিতর্ক করা আরম্ভ করল) কেননা, ইবরাহীম (আ) আশা করেছিলেন যে, তারা খারাপ পথ পরিহার করে ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।
(নিশ্চয়ই ইবরাহীম বড়ই ধৈর্যশীল, কোমল হৃদয় ও একনিষ্ঠ ইবাদতকারী। হে ইবরাহীম! এ জাতীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাক। তোমার পালনকর্তার নির্দেশ এসে গেছে এবং তাদের উপর সে আযাব অবশ্যই পতিত হবে)। অর্থাৎ এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বল। কেননা, তাদের ধ্বংস ও নির্মূল করার আদেশ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তোমার পালনকর্তার নির্দেশ এসে গেছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়ে গেছে। তাঁর এ নির্দেশ ও শাস্তি ফেরাবার ও প্রতিহত করার সাধ্য কারও নেই। এ নির্দেশ অপ্রতিরোধ্যভাবে আসবেই। (সূরা হূদঃ ৭৪-৭৫)
সাঈদ ইবন জুবায়র, সুদ্দী, কাতাদা ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) উল্লেখ করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম (আ) ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেনঃ আপনারা কি এমন কোন জনপদ ধ্বংস করবেন যেখানে তিনশ’ মুমিন রয়েছে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, যদি দুশ’ থাকে? তারা বললেন না। ইবরাহীম বললেন, যদি চল্লিশ জন মুমিন থাকে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, যদি চৌদ্দজন মুমিন থাকে? তারা বললেন তবুও না। ইবন ইসহাক লিখেছেনঃ ইবরাহীম (আ) এ কথাও বলেছিলেন যে, যদি একজন মাত্র মুমিন থাকে তবে সেই জনপদ ধ্বংস করার ব্যাপারে আপনাদের মত কি? জবাবে তারা বললেনঃ তবুও ধ্বংস করা হবে না। তখন তিনি বললেন, সেখানে তো লূত রয়েছে। তারা বলল, ‘সেখানে কে আছে তা আমাদের ভালভাবেই জানা আছে।’
আহলি কিতাবদের বর্ণনায় এসেছে যে, ইবরাহীম (আ) বলেছিলেন, হে আল্লাহ! লূত সম্প্রদায়ের মধ্যে পঞ্চাশজন সৎকর্মশীল লোক থাকলেও কি আপনি তাদেরকে ধ্বংস করবেন? এভাবে উভয়ের কথোপকথন দশজন পর্যন্ত নেমে আসে। আল্লাহ বলেন, তাদের মধ্যে দশজন সৎকর্মশীল লোক থাকলেও আমি তাদেরকে ধ্বংস করব না।
অর্থাৎ, আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আগমন করল তখন তাদের আগমনে সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হল এবং বলতে লাগল, আজ অত্যন্ত কঠিন দিন। (সূরা হুদঃ ৭৭)
মুফাসসিরগণ বলেছেনঃ এই ফেরেশতাগণ ছিলেন হযরত জিবরাঈল (আ), মীকাঈল (আ) ও ইসরাফীল (আ)। তারা ইবরাহীম (আ)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসেন এবং সাদ্দুম শহরে এসে উপস্থিত হন। লুত (আ)-এর সম্প্রদায়ের পরীক্ষাস্বরূপ এবং তাদের শাস্তিযোগ্য হওয়ার চূড়ান্ত প্রমাণস্বরূপ তারা সুদর্শন তরুণ বেশে হাযির হন। হযরত লূত (আ)-এর বাড়িতে তারা অতিথি হিসাবে ওঠেন। তখন ছিল সূর্য ডোবার সময়। হযরত লূত (আ) তাদের দেখে ভীত হলেন। মনে মনে ভাবলেন, যদি তিনি আতিথ্য প্রদান না করেন, তবে অন্য কেউ তা করবে। তিনি তাদেরকে মানুষই ভাবলেন। দুশ্চিন্তা তাঁকে ঘিরে ধরল। তিনি বললেন, আজ একটা বড় কঠিন দিন।
ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে মুজাহিদ, কাতাদা ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) হযরত লুত (আ)-এর এ কঠিন পরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। হযরত লুত (আ) অন্যান্য সময়ে তাঁর সম্প্রদায়কে নিজের মেহমানদের কাছে ঘেঁষতে নিষেধ করতেন। এ কারণে তারা লূত (আ)-এর উপর শর্ত আরোপ করেছিল যে, তিনি নিজের বাড়িতে কাউকে মেহমান হিসেবে রাখবেন না। কিন্তু সেদিন তিনি এমন লোকদেরকেই মেহমানরূপে দেখতে পেলেন যাদেরকে সরিয়ে দেয়ার উপায়ও ছিল না।
কাতাদা (র) বলেন, হযরত লূত (আ) নিজের ক্ষেতে কাজ করছিলেন, এমন সময় মেহমানগণ তাঁর কাছে উপস্থিত হন এবং তাঁর বাড়িতে মেহমান হওয়ার আবেদন জানান। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতে লজ্জাবোধ করেন এবং সেখান থেকে তাদেরকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হন এবং তাদের আগে আগে হাঁটতে থাকেন। তাদের সাথে তিনি এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে থাকেন, যাতে তারা এ জনপদ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যান। হযরত লূত (আ) তাদেরকে বললেন, হে ভাইয়েরা! এই জনপদের লোকের চেয়ে নিকৃষ্ট ও দুশ্চরিত্র লোক ধরাপৃষ্ঠে আর আছে কিনা আমার জানা নেই। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে তিনি আবার এ কথা উল্লেখ করেন। এভাবে চারবার তাদেরকে কথাটি বলেন। কাতাদা (র) বলেন, ফেরেশতাগণ এ ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন যে, যতক্ষণ নবী তাঁর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যেন তাদেরকে ধ্বংস না করেন।
সুদ্দী (র) বলেন, ফেরেশতাগণ ইবরাহীম (আ)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লূতের সম্প্রদায়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন। দুপুর বেলা তারা সেখানে পৌঁছেন। সাদ্দূম নদীর তীরে উপস্থিত হলে হযরত লূত (আ)-এর এক মেয়ের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। বাড়িতে পানি নেয়ার জন্যে সে এখানে এসেছিল। লূত (আ)-এর ছিলেন দুই কন্যা। বড়জনের নাম রায়ছা এবং ছোট জনের নাম যারাতা। মেয়েটিকে তারা বললেনঃ ওহে! এখানে মেহমান হওয়া যায় এমন কারও বাড়ি আছে কি? মেয়েটি বললেন, আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন। আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত জনপদে প্রবেশ করবেন না। নিজের সম্প্রদায়ের ব্যাপারে মেয়েটির অন্তরে লোকগুলোর প্রতি করুণার উদ্রেক হয়। বাড়ি এসে মেয়েটি পিতাকে সম্বোধন করে বললেনঃ পিতা নগর তোরণে কয়েকজন তরুণ আপনার অপেক্ষায় আছেন। তাদের মত সুদর্শন লোক আমি কখনও দেখিনি। আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদেরকে না লাঞ্ছিত করে! ইতিপূর্বে সম্প্রদায়ের লোকজন হযরত লূত (আ)-কে কোন পুরুষ লোককে মেহমান রাখতে নিষেধ করে দিয়েছিল। যা হোক, হযরত লূত (আ) তাদেরকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং নিজের পরিবারবর্গের লোকজন ছাড়া আর কেউ বিষয়টি জানতে পারেনি। কিন্তু লূতের স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে জনপদের লোকদের কাছে খবরটি পৌঁছিয়ে দেয়। সে জানিয়ে দেয় যে, লূতের বাড়িতে এমন কতিপয় সুশ্রী তরুণ এসেছে যাদের ন্যায় সুন্দর লোক আর হয় না। তখন লোকজন খুশীতে লূত (আ)-এর বাড়ির দিকে ছুটে আসে।
আল্লাহর বাণীঃ
وَمِن قَبۡلُ كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ٱلسَّیِّـَٔاتِۚ
[Surat Hud 78]
(ইতিপূর্বে তারা বিভিন্ন রকম পাপকর্মে লিপ্ত ছিল) অর্থাৎ বহু বড় বড় গুনাহর সাথে এই জঘন্য পাপ কাজও তারা চালিয়ে যেতো।
লূত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! এই যে আমার কন্যারা আছে যারা তোমাদের জন্যে পবিত্রতম।
এ কথা দ্বারা হযরত লূত (আ) তাঁর ধর্মীয় ও দীনী কন্যাদের অর্থাৎ তাদের স্ত্রীদের প্রতি ইংগিত করেছেন। কেননা, নবীগণ তাদের উম্মতের জন্যে পিতৃতুল্য। হাদীস ও কুরআনে এরূপই বলা হয়েছে।
অর্থাৎ, তোমরা বিশ্বের পুরুষদের কাছে গমন করছ। আর তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে যে স্ত্রীকুল সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে পরিত্যাগ করছ; বরং তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (২৬: ১৬৫)
মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবায়র, রাবী ইবন আনাস, কাতাদা, সুদ্দী ও মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) আয়াতের উক্তরূপ ব্যাখ্যা করেছেন এবং এ ব্যাখ্যাই সঠিক। দ্বিতীয় মতটি অর্থাৎ তাঁর নিজের কন্যাগণ হওয়া ভুল। এটা আহলি কিতাবদের থেকে গৃহীত এবং তাদের কিতাবে অনেক বিকৃতি ঘটেছে। তাদের আর একটি ভুল উক্তি এই যে, ফেরেশতারা সংখ্যায় ছিলেন দুইজন এবং রাত্রে তারা লুত (আ)-এর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেন। এছাড়া আহলি কিতাবগণ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক অদ্ভুত মিথ্যা উপাখ্যান সৃষ্টি করেছে।
অতএব, আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে আমাকে হেয় কর না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই? (১১: ৭৮)
এ আয়াতে হযরত লুত (আ) নিজ জাতিকে অশ্লীল কাজ থেকে বারণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি এ কথারও সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তাদের সমাজের একজন লোকও সুস্থ রুচির বা ভাল স্বভাবের ছিল না; বরং সমাজের সমস্ত লোকই ছিল নির্বোধ, জঘন্য পাপাসক্ত ও নিরেট কাফির। ফেরেশতাগণও এটাই চাচ্ছিলেন যে, সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই নবীর কাছ থেকে তাদের সম্পর্কে তারা কিছু শুনবেন। কিন্তু সম্প্রদায়ের অভিশপ্ত লোকেরা নবীর উত্তম কথার উত্তরে বললঃ
অর্থাৎ, আপনি ভাল করেই জানেন, আপনার কন্যাদের দিয়ে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আপনি এও জানেন যে, আমরা কি চাচ্ছি। (১১: ৭৯)
তারা বলছে, হে লূত! আপনি অবগত আছেন যে, স্ত্রীদের প্রতি আমাদের কোন আকর্ষণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য কি, তা আপনি ভাল করেই জানেন। নবীকে উদ্দেশ করে তারা এরূপ কুৎসিৎ ভাষা ব্যবহার করতে আল্লাহকে একটুও ভয় পায়নি। যিনি কঠিন শাস্তিদাতা। এ কারণে হযরত লূত (আ) বলেছিলেনঃ
অর্থাৎ, হায়, তোমাদের উপর যদি আমার শক্তি থাকত অথবা যদি আমি নিতে পারতাম কোন শক্তিশালী আশ্রয়। (১১: ৮০)
অর্থাৎ তিনি কামনা করেছিলেন সম্প্রদায়কে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যদি হযরত লুতের থাকত, অথবা তাকে সাহায্যকারী ধনবল বা জনবল যদি থাকত তা হলে তাদের অন্যায় দাবির উপযুক্ত শাস্তি তিনি দিতে পারতেন।
যুহরী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে মারফুরূপে হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সন্দেহ প্রকাশের ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম (আ)-এর চাইতে বেশি হকদার। আল্লাহ লুত (আ)-এর উপর রহম করুন। কেননা, তিনি শক্তিশালী অবলম্বনের আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। আমি যদি সেই দীর্ঘকাল জেলখানায় অবস্থান করতাম যেমনি ইউসুফ (আ) করেছিলেন তবে আমি অবশ্যই আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিতাম। এ হাদীস আবুয যিনাদ ভিন্ন সূত্রেও বর্ণনা করেছেন এবং মুহাম্মদ ইবন আমর (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, আল্লাহ নূত (আ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। কেননা, তিনি শক্তিশালী অবলম্বন অর্থাৎ আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করেছিলেন। এরপর থেকে আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন তাদেরকে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, নগরবাসীরা উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হলো। সে বলল, ওরা আমার মেহমান, সুতরাং তোমরা আমাকে বে-ইজ্জত করো না। আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হেয় করো না। তারা বলল, হে লূত! আমরা কি তোমাকে দুনিয়া শুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে নিষেধ করিনি? লূত বলল, তোমাদের একান্তই যদি কিছু করতে হয় তাহলে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে। (১৫: ৬৭)
হযরত লুত (আ) সম্প্রদায়ের লোকজনকে তাদের স্ত্রীদের কাছে যেতে আদেশ দেন এবং তাদের কু-অভ্যাসের উপর অবিচল থাকার মন্দ পরিণতির কথা জানিয়ে দেন যা অচিরেই তাদের উপর পতিত হবে। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা নিবৃত্ত হল না। বরং নবী যতই তাদেরকে উপদেশ দেন, তারা ততই উত্তেজিত হয়ে মেহমানদের কাছে পৌঁছার চেষ্টা করে। কিন্তু রাতের শেষে তকদীর তাদেরকে কোথায় পৌঁছিয়ে দেবে তা তাদের আদৌ জানা ছিল না। এ কারণেই আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের কসম করে বলেনঃ
লূত ওদেরকে আমার কঠোর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। কিন্তু ওরা সতর্কবাণী সম্বন্ধে বিতণ্ডা শুরু করল। তারা লুতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল। তখন আমি ওদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি বললাম, আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও সতর্কবাণীর পরিণাম। প্রত্যুষে বিরামহীন শাস্তি তাদেরকে আঘাত করল। (৫৪: ৩৬-৩৮)
মুফাসসির ও অন্যান্য আলিম বলেছেন, হযরত লূত (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে তার ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন এবং তাদেরকে বাধা দেন। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তারা তা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হলো। আর হযরত লূত (আ) দরজার বাইরে থেকে তাদেরকে উপদেশ দিতে এবং ভিতরে যেতে বারণ করতে থাকেন। উভয় পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ চলতে থাকে। অবস্থা যখন সঙ্গীন হয়ে আসল এবং ঘটনা লুত (আ)-এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হল; তখন তিনি বললেন, তোমাদের প্রতিহত করার শক্তি যদি আমার থাকত অথবা কোন শক্তিশালী অবলম্বনের আশ্রয় নিতে পারতাম তবে তোমাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতাম। এ সময় ফেরেশতাগণ বললেনঃ
“হে লূত! আমরা তোমার প্রতিপালক প্রেরিত ফেরেশতা। ওরা কখনই তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না।” (১১: ৮১)
মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেন, জিবরাঈল (আ) ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের সম্মুখে আসেন এবং নিজ ডানার এক প্রান্ত দ্বারা হালকাভাবে তাদের চেহারায় আঘাত করেন। ফলে তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়ে যায়। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের চোখ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। এমনকি চেহারায় চোখের কোন চিহ্নই অবশিষ্ট রইলো না। তারপর তারা দেয়াল হাতড়িয়ে কোন মতে সেখান থেকে ফিরে যায়। আল্লাহর নবী লুত (আ)-কে ধমক দিতে দিতে বলতে থাকেন— কাল সকালে আমাদের ও তার মধ্যে বোঝাপড়া হবে।
অর্থাৎ, ওরা লূতের কাছ থেকে তার মেহমানদেরকে দাবি করল। তখন আমি তাদের দৃষ্টিশক্তি লোপ করে দিলাম এবং আমি বললামঃ এখন আমার শাস্তি ও সতর্ক বাণীর পরিণাম আস্বাদন কর। প্রত্যুষে বিরামহীন শাস্তি ও তাদের উপর আঘাত হানল। (৫৪: ৩৭-৩৮)
ফেরেশতাগণ হযরত লূত (আ)-এর কাছে দু’টি প্রস্তাব পেশ করেন (১) পরিবার-পরিজন নিয়ে রাতের শেষে রওয়ানা হয়ে যাবেন (২) কেউ পেছনের দিকে ফিরে তাকাবেন না। অর্থাৎ সম্প্রদায়ের উপর যখন আযাব পতিত হবে এবং আযাবের শব্দ শোনা যাবে তখন কেউ যেন পশ্চাতে ফিরে না তাকায়। ফেরেশতাগণ আরও জানান যে, তিনি যেন সকলের পেছনে থেকে সবাইকে পরিচালনা করেন। الا امرءتك এই বাক্যাংশের দু’টি অর্থ হতে পারে (১) যাওয়ার সময় তোমার স্ত্রীকে সাথে নেবে না। এ অবস্থায় امراءة এর উপর যবর দিয়ে পড়তে হবে এবং فاسو باهلك থেকে সে ব্যতিক্রম হবে। (২) যাওয়ার পথে দলের কেউ পেছনের দিকে তাকাবে না কিন্তু কেবল তোমার স্ত্রীই এ নির্দেশ অমান্য করে পেছনের দিকে তাকাবে; ফলে সম্প্রদায়ের উপর যে আযাব আসবে ঐ আযাবে সেও গ্রেফতার হবে। এ অবস্থায় امراءة ولا يلتفت احد থেকে মুস্তাসনা (ব্যতিক্রম) হবে। পেশ যুক্ত পাঠ ( امرأتك ) এ অর্থকে সমর্থন করে। কিন্তু প্রথম অর্থই অধিকতর স্পষ্ট।
সুহায়লী বলেন, লুত (আ)-এর স্ত্রীর নাম ওয়ালিহা এবং নূহ (আ)-এর স্ত্রীর নাম ওয়ালিগা। আগন্তুক ফেরেশতাগণ ঐসব বিদ্রোহী পাপিষ্ঠ, সীমালংঘনকারী নির্বোধ অভিশপ্ত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হবে এ সুসংবাদ লুত (আ)-কে শোনান, যারা পরবর্তী যুগের লোকদের জন্যে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
অর্থাৎ, তাদের প্রতিশ্রুত সময় প্রভাত কাল। আর প্রভাত কাল খুব নিকটে নয় কি?
হযরত লূত (আ) নিজ পরিবারবর্গ নিয়ে বের হয়ে আসেন। পরিবারবর্গ বলতে তার দু’টি কন্যাই মাত্র ছিল। সম্প্রদায়ের অন্য কোন একটি লোকও তার সাথে আসেনি। কেউ কেউ বলেছেন, তার স্ত্রীও একই সাথে বের হয়েছিল। কিন্তু সঠিক খবর আল্লাহই ভাল জানেন। তাঁরা যখন সে এলাকা অতিক্রম করে চলে আসেন এবং সূর্য উদিত হয়, তখন আল্লাহর অলংঘনীয় নির্দেশ ও অপ্রতিরোধ্য আযাব তাদের উপর নেমে আসে। আহলি কিতাবদের মতে, ফেরেশতাগণ হযরত লূত (আ)-কে তথায় অবস্থিত একটি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে বলেন। কিন্তু হযরত লূত (আ)-এর নিকট তা অত্যন্ত দুঃসাধ্য ঠেকে। তাই তিনি নিকটবর্তী কোন গ্রামে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ফেরেশতাগণ বললেন, তাই করুন। গ্রামে পৌঁছে সেখানে স্থিত হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো এবং তারপরই আমরা আযাব অবতীর্ণ করব। আহলি কিতাবগণ বলেন, সে মতে হযরত লুত (আ) গওরযাগর নামক একটি ক্ষুদ্র গ্রামে চলে যান এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তাদের উপর আল্লাহর আযাব নেমে আসে।
অর্থাৎ, তারপর যখন আমার আদেশ আসল তখন আমি জনপদকে উল্টিয়ে দিলাম এবং ওদের উপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পাথর, কংকর যা তোমার প্রতিপালকের কাছে চিহ্নিত ছিল। এটি জালিমদের থেকে দূরে নয়। (১১: ৮২)
মুফাসসিরগণ বলেন, হযরত জিবরাঈল (আ) আপন ডানার এক প্রান্ত দিয়ে লূত সম্প্রদায়ের আবাসভূমি গভীর নিচু থেকে উপড়িয়ে নেন। মোট সাতটি নগরে তারা বসবাস করত। কারও মতে তাদের সংখ্যা চারশ’, কারও মতে চার হাজার। সে এলাকার সমস্ত মানুষ, জীব-জন্তু, ঘরবাড়ি ও ধন-সম্পদ যা কিছু ছিল সবকিছুসহ উঠিয়ে নেয়া হয়। উপরে আকাশের সীমানা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়। আসমানের এত কাছে নিয়ে যাওয়া হয় যে, সেখানকার ফেরেশতাগণ মোরগের ডাক ও কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পান। তারপর সেখান থেকে উল্টিয়ে নিচে নিক্ষেপ করা হয়। মুজাহিদ (র) বলেন, সর্বপ্রথম যা নিচে এসে পতিত হয় তা হল তাদের উঁচু অট্টালিকাসমূহ।
وَأَمۡطَرۡنَا عَلَیۡهِمۡ حِجَارَة ࣰ مِّن سِجِّیلٍ
[Surat Al-Hijr 74]
(তাদের উপর পাথর কঙ্কর বর্ষণ করলাম)
سجيل ফার্সী শব্দ, একে আরবীকরণ করা হয়েছে। অর্থ ও অত্যধিক শক্ত ও কঠিন। منضود অর্থ ক্রমাগত। অর্থাৎ আকাশ থেকে একের পর এক যা তাদের উপর আসতে থাকে। مسومة অর্থ চিহ্নিত। প্রতিটি পাথরের গায়ে সেই ব্যক্তির নাম লেখা ছিল যার উপর তা পতিত হবার জন্যে নির্ধারিত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ لِلۡمُسۡرِفِینَ
[Surat Adh-Dhariyat 34]
(তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত যা সীমালংঘনকারীদের জন্যে নির্ধারিত।)।
অর্থাৎ, উৎপাটিত আবাসভূমিকে উল্টিয়ে নিক্ষেপ করেছিলেন। তারপর তা আচ্ছন্ন করে ফেলল কী। সর্বগ্রাসী শাস্তি! (৫৩: ৫৩)
অর্থাৎ আল্লাহ সেই জনপদের ভূখণ্ডকে উপরে তুলে নিচের অংশকে উপরে ও উপরের অংশকে নিচে করে উল্টিয়ে দেন। তারপর শক্ত পাথর-কংকর বর্ষণ করেন অবিরামভাবে যা তাদের সবাইকে ছেয়ে ফেলে। প্রতিটি পাথরের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম লেখা ছিল। এ পাথরগুলো ঐ জনপদে উপস্থিত সকলের উপর পতিত হয়। অনুরূপ যারা তখন সেখানে অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ মুসাফির, পথিক ও দূরে অবস্থানকারী সকলের উপরই তা পতিত হয়। কথিত আছে যে, হযরত লূত (আ)-এর স্ত্রী তার সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে থেকে যায়। অপর মতে বলা হয়েছে যে, সে তার স্বামী ও দুই কন্যার সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন সে আযাব ও শহর ধ্বংস হওয়ার শব্দ শুনতে পায়, তখন সে পেছনে সম্প্রদায়ের দিকে ফিরে তাকায় এবং আগের পরের আল্লাহর সকল নির্দেশ অমান্য করে। ‘হায় আমার সম্প্রদায়! বলে সে বিলাপ করতে থাকে। তখন উপর থেকে একটি পাথর এসে তার মাথায় পড়ে এবং তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলে। এভাবে সে নিজ সম্প্রদায়ের ভাগ্যের সাথে একীভূত হয়ে যায়। কারণ, সে ছিল তার সম্প্রদায়ের ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের সংবাদ সরবরাহকারিণী; হযরত লূত (আ)-এর বাড়িতে মেহমান আসলে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে সে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিত। আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, আল্লাহ কাফিরদের জন্যে নূহ ও লূতের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন। ওরা ছিল আমার বান্দাগণের মধ্যে দুজন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু ওরা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে, নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারল না। তাই ওদেরকে বলা হল, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও ওতে প্রবেশ কর। (৬৬: ১০)
অর্থাৎ তারা নবীদের সাথে দীনের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, নবীর দীন গ্রহণ করেনি এখানে এ অর্থ কিছুতেই নেয়া যাবে না যে, তারা প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কোনভাবে অশ্লীল কাজে জড়িত ছিল। কেননা, আল্লাহ কোন ব্যভিচারিণীকে কোন নবীর স্ত্রী হিসেবে নির্ধারণ করেননি। হযরত ইবন আব্বাস (রা)-সহ অন্যান্য প্রাচীন ও পরবর্তীকালের ইমাম ও মুফাসিরগণ এ কথাই বলেছেন। তারা বলেছেন, কোন নবীর কোন স্ত্রী কখনও ব্যভিচার করেননি। যারা এর বিপরীত মত ব্যক্ত করেছেন, তারা বিরাট ভুল করেছেন। 'ইফকের’ ঘটনায় কতিপয় ব্যক্তি হযরত আয়েশা (রা)-এর প্রতি অপবাদ দিলে আল্লাহ্ তা’আলা আয়েশা (রা)-এর পবিত্রতা ঘোষণা করে যে আয়াত নাযিল করেন, তাতে ঐসব মু’মিন লোকদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, যখন তোমরা মুখে মুখে এ কথা ছড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না এবং তোমরা একে তুচ্ছজ্ঞান করছিলে। যদিও আল্লাহর কাছে এটা ছিল গুরুতর এবং তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না— এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র মহান। এতে এক গুরুতর অপবাদ। (২৪: ১৫-১৬)
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার নবীর স্ত্রী এ দোষে জড়িত হবে এ থেকে আপনি পবিত্র।
আল্লাহ বাণীঃ
وَمَا هِیَ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ بِبَعِید ࣲ
[Surat Hud 83]
(আর এটা জালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়) অর্থাৎ এই শাস্তি বেশি দূরে নয় সেইসব লোকদের থেকে যারা লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের ন্যায় কুকর্মে লিপ্ত হবে। এই কারণে কোন কোন আলিম বলেছেন, পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত ব্যক্তিকে ‘রজম’ বা পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে, চাই সে বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত। ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ, ইবন হাম্বল (র) প্রমুখ ইমাম এই মত পোষণ করেন। তাঁরা বর্ণিত সেই হাদীস থেকেও দলীল গ্রহণ করেছেন যা ইবন আব্বাস (রা) কর্তৃক মুসনাদে আহমদে ও সুনান গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এমন কোন লোক যদি তোমরা পাও, যে লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের অনুরূপ পাপ কাজে লিপ্ত, তখন সংশ্লিষ্ট উভয় ব্যক্তিকেই হত্যা কর। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, পুরুষের সাথে সমকামীকে পাহাড়ের উপর থেকে নীচে ফেলে দিয়ে তার উপর পাথর নিক্ষেপ করতে হবে; যেভাবে লুতের সম্প্রদায়ের সাথে করা হয়েছিল। তিনি দলীলরূপে নিমোক্ত আয়াত পেশ করেছেন।
وَمَا هِیَ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ بِبَعِید ࣲ
[Surat Hud 83]
(এটা জালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়) আল্লাহ তা’আলা লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের গোটা এলাকাকে একটি দুর্গন্ধময় সমুদ্রে পরিণত করেন। ঐ সমুদ্রের পানি ও সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এভাবে স্মরণীয় বিধ্বস্ত এলাকাটি পরবর্তীকালের সেইসব মানুষের জন্যে শিক্ষণীয় ও উপদেশ গ্রহণের বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যারা আল্লাহর অবাধ্য হয়, রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, প্রবৃত্তির অনুসরণ করে ও আপন মনিবের নাফরমানী করে। এ ঘটনা সে বিষয়েও প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আল্লাহর বাণীঃ
অর্থাৎ, তারপর সূর্যোদয়ের সময়ে এক মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল এবং আমি জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নীচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পাথর-কংকর বর্ষণ করলাম। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের জন্যে। লোক চলাচলের পথের পাশে তা এখনও বিদ্যমান। এতে অবশ্যই রয়েছে মু’মিনদের জন্যে নির্দশন। (১৫: ৭৩-৭৭)
متو سمين বলা হয় সেসব লোকদেরকে যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকে। এখানে দূরদৃষ্টির অর্থ হল এই বিষয়ে চিন্তা করা যে, এ জনপদটি ও তার বাসিন্দারা আবাদ হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে আল্লাহ্ তা ধ্বংস ও বিধ্বস্ত করে দিলেন। তিরমিযী ইত্যাদি কিতাবে মারফু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা) বলেছেনঃ
اتقوا فراسة المؤمن فانه ينظر بنور الله
মু’মিনের দূরদৃষ্টিকে তোমরা সমীহ করবে, কেননা সে আল্লাহপ্রদত্ত নূরের সাহায্যে দেখতে পায়। একথা বলে রাসূল (সা) নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ
অর্থাৎ, সেখানে যেসব মুমিন ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম এবং সেখানে একটি পরিবার ব্যতীত আর কোন মুসলিম গৃহ আমি পাইনি। যারা মর্মন্তুদ শাস্তিকে ভয় করে আমি তাদের জন্যে এর মধ্যে একটি নির্দশন রেখেছি। (৫১: ৩৫-৩৭)
অর্থাৎ লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের জনপদটিকে আমি শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের জন্যে রেখে দিয়েছি সেইসব লোকের জন্যে যারা আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। না দেখেই আল্লাহকে ভয় করে, মহান প্রতিপালকের সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়ার ব্যাপারে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে, প্রবৃত্তি পরায়ণতা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দূরে থাকে। তাঁর নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকে এবং লূত (আ)-এর সম্প্রদায়ের মত হওয়ার ব্যাপারে অন্তরে ভয় রাখে ( ومن تشبه بقوم فهو منهم ) যে ব্যক্তি কোন জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত। সকল ব্যাপারে পূর্ণ সাদৃশ্য হতে হবে এমন কোন কথা নেই; বরং কোন কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য থাকলেই হয়। যেমন কেউ কেউ বলেছেন, তোমরা যদি সম্পূর্ণরূপে কওমে লূত হয়ে থাক, তবে কওমে লূত তোমাদের থেকে খুব বেশি পৃথক নয়। অতএব, যে লোক জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও আল্লাহ-ভীরু, সে আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশ মেনে চলবে এবং রাসূলের আদর্শকে অনুসরণ করবে, সে অবশ্যই হালাল স্ত্রী ও যুদ্ধবন্দী দাসী ভোগ করবে। শয়তানের পথে চলতে সে ভয় পাবে। অন্যথায় সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হবে এবং নিমোক্ত আয়াতের আওতায় এসে যাবে
وَمَا هِیَ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ بِبَعِید ࣲ
[Surat Hud 83]
(জালিমদের থেকে তা বেশি দূরে নয়।)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/57
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।