মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা গড়ল একটি বাছুর, একটি অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। তারা কি দেখল না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা এটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল জালিম। তারা যখন অনুতপ্ত হল ও দেখল যে, তারা বিপথগামী হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই। মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবর্তন করল, তখন বলল, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছ। তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বে তোমরা ত্বরান্বিত করলে? এবং সে ফলকগুলো ফেলে দিল আর তার ভাইকে চুলে ধরে নিজের দিকে টেনে আনল। হারূন বললেন, হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল ঠাউরিয়েছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করেই ফেলেছিল। আমার সাথে এমন করো না যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত করো না। মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর। তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু। যারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। যারা অসকার্য করে তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মূসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হলো তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য এতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৮-১৫৪)
অর্থাৎ হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তোমাকে ত্বরা করতে বাধ্য করল কিসে? সে বলল, এই তো তারা আমার পশ্চাতে এবং হে আমার প্রতিপালক! আমি ত্বরায় তোমার কাছে আসলাম, তুমি সন্তুষ্ট হবে এ জন্য। তিনি বললেন, আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামিরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তারপর মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল কুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতিকাল তোমাদের কাছে সুদীর্ঘ হয়েছে; না তোমরা চেয়েছ তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের প্রতিপালকের ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অংগীকার ভংগ করলে? ওরা বলল, ‘আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অংগীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি, তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে। তারপর সে ওদের জন্যে গড়ল একটা বাছুর, একটা অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। ওরা বলল, “এটা তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গিয়েছে। তবে কি ওরা ভেবে দেখে না যে, এটা তাদের কথায় সাড়া দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি অথবা উপকার করবার ক্ষমতাও রাখে না। হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এটার দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। তোমাদের প্রতিপালক দয়াময়। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল। ওরা বলেছিল, আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটার পূজা হতে কিছুতেই বিরত হব না। মূসা বলল, হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল, আমার অনুসরণ করা থেকে? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করলে? হারূন বলল, হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরো না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ ও তুমি আমার বাক্য পালনে যত্নবান হওনি। মূসা বলল, হে সামিরী! তোমার ব্যাপার কি? সে বলল, আমি দেখেছিলাম যা ওরা দেখেনি। তারপর আমি সেই দূতের (জিবরাঈলের) পদচিহ্ন থেকে এবং মুষ্ঠি (ধুলা) নিয়েছিলাম এবং আমি এটা নিক্ষেপ করেছিলাম এবং আমার মন আমার জন্য শোভন করেছিল এইরূপ করা।” মূসা বলল, দূর হও, তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্য এটাই রইল যে তুমি বলবে, “আমি অস্পৃশ্য এবং তোমার জন্য রইল একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ, তোমার বেলায় যার ব্যতিক্রম হবে না এবং তুমি তোমার সেই ইলাহের প্রতি লক্ষ্য কর যার পূজায় তুমি রত ছিলে; আমরা ওটাকে জ্বালিয়ে দেবই। অতঃপর ওটাকে বিক্ষিপ্ত করে সাগরে নিক্ষেপ করবই। তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তাঁর জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত। (সূরা তাহাঃ ৮৩-৯৮)
উপরোক্ত আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইসরাঈলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন আল্লাহ্ তা’আলা নির্ধারিত সময়ে উপনীত হলেন, তখন তিনি তূর পর্বতে অবস্থান করে আপন প্রতিপালকের সাথে একান্ত কথা বললেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা’আলার নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান এবং আল্লাহ তাআলা সে সব বিষয়ে তাকে জানিয়ে দেন। মধ্যকার এক ব্যক্তি যাকে হারূন আস সামিরী বলা হয় সে যেসব অলংকার ধারস্বরূপ নিয়েছিল সেগুলো দিয়ে সে একটি বাছুর-মূর্তি তৈরি করল এবং বনী ইসরাঈলের সামনে ফিরআউনকে আল্লাহ তা’আলা ডুবিয়ে মারার সময় জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর ঘোড়র পায়ের এক মুষ্ঠি ধুলা মূর্তিটির ভিতরে নিক্ষেপ করল। সাথে সাথে বাছুর মূর্তিটি জীবন্ত বাছুরের মত হাম্বা হাম্বা আওয়াজ দিতে লাগল। কেউ কেউ বলেন, এতে তা রক্ত-মাংসের জীবন্ত একটি বাছুরে রূপান্তরিত হয়ে যায় আর তা হাম্বা হাম্বা রব করতে থাকে। কাতাদা (র) প্রমুখ মুফাসসিরীন এ মত ব্যক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, যখন এটার পেছন দিক থেকে বাতাস ঢুকত এবং মুখ দিয়ে বের হত তখনই হাম্বা হাম্বা আওয়াজ হত যেমন সাধারণত গরু ডেকে থাকে। এতে তারা এর চতুর্দিকে নাচতে থাকে এবং উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। তারা বলতে লাগল, এটাই তোমাদের ও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর ইলাহ, কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন। অর্থাৎ মূসা (আলাইহিস সালাম) আমাদের নিকটস্থ প্রতিপালককে ভুলে গেছেন এবং অন্যত্র গিয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করছেন অথচ প্রতিপালক তো এখানেই রয়েছেন। (নির্বোধরা যা বলছে আল্লাহ তাআলা তার বহু বহু ঊর্ধে, তার নাম ও গুণগুলো এসব অপবাদ থেকে পূত-পবিত্র এবং আল্লাহ্ তা’আলা প্রদত্ত নিয়ামত সমূহও অগণিত) তারা যেটাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছিল তা বড় জোর একটা জন্তু বা শয়তান ছিল। তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার অসারতা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তারা কি দেখে না যে, এই বাছুরটি তাদের কথার কোন উত্তর দিতে পারে না এবং এটা তাদের কোন উপকার বা অপকার করতে পারে না। অন্যত্র বলেন, তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের সাথে কথা বলতে পারে না এবং তাদেরকে পথনির্দেশ করতে পারে না। আর এরা ছিল জালিম।" (৭ আরাফঃ ১৪৮)
এখানে আল্লাহ্ তা’আলা উল্লেখ করেন যে, এ জন্তুটি তাদের সাথে কথা বলতে পারে না, তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না, কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না কিংবা কোন উপকার করারও শক্তি রাখে না, তাদেরকে পথনির্দেশও করতে পারে না, তারা তাদের আত্মার প্রতি জুলুম করেছে। তারা তাদের এই মূর্খতা ও বিভ্রান্তির অসারতা সম্বন্ধে সম্যক অবগত। “অতঃপর তারা যখন তাদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হল এবং অনুভব করতে পারল যে, তারা ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে তখন তারা বলতে লাগল, যদি আমাদের প্রতিপালক আমাদের প্রতি দয়া না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব।” (৭ আরাফঃ ১৪৯)
অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের কাছে ফিরে আসলেন এবং তাদের বাছুর পূজা করার বিষয়টি জানতে পারলেন। তাঁর সাথে ছিল বেশ কয়েকটি ফলক যেগুলোর মধ্যে তাওরাত লিপিবদ্ধ ছিল, তিনি এগুলো ফেলে দিলেন। কেউ কেউ বলেন, এগুলোকে তিনি ভেঙ্গে ফেলেন। কিতাবীরা এরূপ বলে থাকে। এরপর আল্লাহ তাআলা এগুলোর পরিবর্তে অন্য ফলক দান করেন। কুরআনুল করীমের ভাষ্যে এর স্পষ্ট উল্লেখ নেই তবে এত দূর আছে যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে, ফলকগুলো ফেলে দিয়েছিলেন। কিতাবীদের মতে, সেখানে ছিল মাত্র দুইটি ফলক। কুরআনের আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, ফলক বেশ কয়েকটিই ছিল। আল্লাহ্ তা’আলা যখন তাঁকে তাঁর সম্প্রদায়ের বাছুর পূজার কথা অবগত করেছিলেন, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তেমন প্রভাবান্বিত হননি। তখন আল্লাহ্ তাকে তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করতে নির্দেশ দেন। এ জন্যেই ইমাম আহমদ (র) ও ইবন হিব্বান (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ ليس الخبر كالمعاينة অর্থাৎ সংবাদ প্রাপ্তি এবং প্রত্যক্ষ দর্শন সমান নয়। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাদেরকে ভৎসনা করলেন এবং তাদের এ হীন কাজের জন্যে তাদেরকে দোষারোপ করলেন। তখন তার কাছে তারা মিথ্যা ওযর আপত্তি পেশ করে বললঃ
অর্থাৎ, তারা বলল, আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি। অনুরূপভাবে সামিরীও নিক্ষেপ করে। (সূরা তা-হাঃ ৮৭)
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ফিরআউন সম্প্রদায়ের অলংকারের অধিকারী হওয়াকে তারা পাপকার্য বলে মনে করতে লাগল অথচ আল্লাহ তাআলা এগুলোকে তাদের জন্য বৈধ করে দিয়েছিলেন। অথচ তারা মহা পরাক্রমশালী অদ্বিতীয় মহাপ্রভুর সাথে হাম্বা হাম্বা রবের অধিকারী বাছুরের পূজাকে তাদের মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে পাপকার্য বলে বিবেচনা করছিল না। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) আপন সহোদর হারূন (আলাইহিস সালাম)-এর প্রতি মনোযোগী হলেন এবং তাঁকে বললেনঃ ( یَـٰهَـٰرُونُ مَا مَنَعَكَ ) (হে হারূন! তুমি যখন দেখলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল আমার অনুসরণ করা থেকে? (সূরা তা-হাঃ ৯২)
অর্থাৎ যখন তুমি তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারটি দেখলে তখন তুমি কেন আমাকে সে সম্বন্ধে অবহিত করলে না? তখন তিনি বললেন, ( خَشِیتُ أَن تَقُولَ فَرَّقۡتَ بَیۡنَ بَنِیۤ )
আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ। (সূরা তা-হাঃ ৯৪)
অর্থাৎ তুমি হয়ত বলতে, তুমি তাদেরকে ছেড়ে আমার কাছে চলে আসলে অথচ আমি তোমাকে তাদের মধ্যে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করে এসেছিলাম।
অর্থাৎ হারূন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! এর দ্বারা তো কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা এ বাছুর ও এর হাম্বা রবকে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষার বিষয় করেছেন।
নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক খুবই দয়াময় অর্থাৎ এ বাছুর তোমাদের প্রভু নয়। (সূরা তা-হাঃ ৯০ আয়াত) فَٱتَّبِعُونِی وَأَطِیعُوۤا۟ أَمۡرِی সুতরাং আমি যা বলি তার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মান্য কর। তারা বলেছিল, আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা এটার পূজা থেকে কিছুতেই বিরত হব না।” (সূরা তা-হাঃ ৯১) আল্লাহ তা’আলা হারূন (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। আর আল্লাহ্ তা’আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। যে হারূন (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে এরূপ জঘন্য কাজ থেকে নিষেধ করেছিলেন, তাদেরকে ভৎসনা করেছিলেন কিন্তু তারা তার কথা মান্য করেনি। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) সামিরীর প্রতি মনোযোগী হলেন এবং বললেন, “তুমি যা করেছ কে তোমাকে এরূপ করতে বলেছি?" উত্তরে সে বলল, “আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে দেখেছিলাম, তিনি ছিলেন একটি ঘোড়ার উপর সওয়ার তখন আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর ঘোড়ার পায়ের ধুলা সংগ্রহ করেছিলাম। আবার কেউ কেউ বলেনঃ সামিরী জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে দেখেছিল। জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর ঘোড়ার খুর যেখানেই পড়ত অমনি সে স্থানটি ঘাসে সবুজ হয়ে যেত। তাই সে ঘোড়ার খুরের নিচের মাটি সংগ্রহ করল। এরপর যখন সে এই স্বর্ণ-নির্মিত বাছুরের মুখে ঐ মাটি রেখে দিল, তখনই সে আওয়াজ করতে লাগল এবং পরবর্তী ঘটনা সংঘটিত হল। এজন্যেই সামিরী বলেছিল—“আমার মন আমার জন্যে এরূপ করা শোভন করেছিল। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাকে অভিশাপ দিলেন এবং বললেন, তুমি সব সময়ে বলবে لا مساس অর্থাৎ আমাকে কেউ স্পর্শ করবে না। কেননা, সে এমন জিনিস স্পর্শ করেছিল যা তার স্পর্শ করা উচিত ছিল না। এটা তার দুনিয়ার শাস্তি। অতঃপর আখিরাতের শাস্তির কথাও তিনি ঘোষণা করেন। অত্র আয়াতে উল্লেখিত لن تخلقه কে কেউ কেউ لن نخلفه পাঠ করেছেন অর্থাৎ এর ব্যতিক্রম হবে না’ স্থলে ‘আমি ব্যতিক্রম করব না। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বাছুরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন।
এ অভিমতটি কাতাদা (র) প্রমুখের। আবার কেউ কেউ বলেন, উখা দিয়ে তিনি বাছুর মূর্তিটি ধ্বংস করেছিলেন। এ অভিমতটি আলী (রাযিআল্লাহু আনহু), আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) প্রমুখের। কিতাবীদের ভাষ্যও তাই। অতঃপর এটাকে মূসা (আলাইহিস সালাম) সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন এবং বনী ইসরাঈলকে সেই সমুদ্রের পানি পান করতে নির্দেশ দিলেন। তারা পানি পান করল। যারা বাছুরের পূজা করেছিল, বাছুরের ছাই তাদের ঠোঁটে লেগে রইল যাতে বোঝা গেল যে, তারাই ছিল এর পূজারী। কেউ কেউ বলেন, তাদের রং হলদে হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আলাইহিস সালাম) সম্বন্ধে আরও বলেন যে, তিনি বনী ইসরাঈলকে বলেছিলেনঃ
অর্থাৎ--'যারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে পার্থিব জীবনে তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই, আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সূরা আরাফঃ ১৫২)
বাস্তবিকই বনী ইসরাঈলের উপর এরূপ ক্রোধ ও লাঞ্ছনাই আপতিত হয়েছিল। প্রাচীন আলিমগণের কেউ কেউ বলেছেন, وَكَذَ ٰ لِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُفۡتَرِینَ আয়াতাংশ -এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী প্রতিটি বিদআত উদ্ভাবনকারীর এরূপ অবশ্যম্ভাবী পরিণামের কথা বলা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আপন ধৈর্যশীলতা, সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও তওবা কবুলের ব্যাপারে বান্দাদের উপর তাঁর অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করে বলেন, 'যারা অসৎ কার্য করে তারা পরে তওবা করলে ও ঈমান আনলে তোমার প্রতিপালক তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আরাফঃ ১৫৩)
কিন্তু বাছুর পূজারীদের হত্যার শাস্তি ব্যতীত আল্লাহ্ তা’আলা কোন তওবা কবুল করলেন না। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
আর স্মরণ কর, যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারাঃ ৫৪)
কথিত আছে, একদিন ভোরবেলা যারা বাছুর পূজা করেনি তারা তরবারি হাতে নিল; অন্যদিকে আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি এমন ঘন কুয়াশা অবতীর্ণ করলেন যে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে এবং একই বংশের একজন অন্যজনকে চিনতে পারছিল না। তারা বাছুর পূজারীদেরকে পাইকারী হারে হত্যা করল এবং তাদের মূলোৎপাটন করে দিল। কথিত রয়েছে যে, তারা ঐ দিনের একই প্রভাতে সত্তর হাজার লোককে হত্যা করেছিল।
অর্থাৎ—“যখন মূসার ক্রোধ প্রশমিত হল তখন সে ফলকগুলো তুলে নিল। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য ওতে যা লিখিত ছিল তাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।” (সূরা আরাফঃ ১৫৪)।
আয়াতাংশে উল্লেখিত وَفِی نُسۡخَتِهَا هُد ࣰ ى وَرَحۡمَة ࣱ এর দ্বারা কেউ কেউ প্রমাণ করেন যে, ফলকগুলো ভেঙে গিয়েছিল। তবে এই প্রমাণটি সঠিক নয়। কেননা, কুরআনের শব্দে এমন কিছু পাওয়া যায় না যাতে প্রমাণিত হয় যে, এগুলো ভেঙে গিয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) ফিনা সম্বলিত হাদীসসমূহে উল্লেখ করেছেন যে, তাদের বাছুর পূজার ঘটনাটি ছিল তাদের সমুদ্র পার হবার পর। এই অভিমতটি অযৌক্তিক নয়; কেননা তারা যখন সমুদ্র পার হলো তখন তারা বলেছিল, “হে মূসা! তাদের যেমন ইলাহসমূহ রয়েছে আমাদের জন্যেও তেমন একটি ইলাহ্ গড়ে দাও।” (সূরা আ’রাফঃ ১০৮)
অনুরূপ অভিমত কিতাবীরা প্রকাশ করে থাকেন। কেননা, তাদের বাছুর পূজার ঘটনাটি ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে আগমনের পূর্বে। বাছুর পূজারীদেরকে হত্যা করার যখন হুকুম দেয়া হয়, তখন প্রথম দিনে তিন হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। তাদের ক্ষমা করা হল এই শর্তে যে, তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ, মূসা তার নিজ সম্প্রদায় থেকে সত্তরজন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হবার জন্যে মনোনীত করল। তারা যখন ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল, তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ তারা যা করেছে সেজন্য কি তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? এটা তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যা দিয়ে তুমি যাকে ইচ্ছে বিপথগামী কর এবং যাকে ইচ্ছে সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। আমাদের জন্য নির্ধারিত কর দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি। আল্লাহ বলেন, আমার শাস্তি যাকে ইচ্ছে দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া, তাতে প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এটা তাদের জন্য নির্ধারিত করব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে। যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইঞ্জিল, যা তাদের নিকট রয়েছে তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায়, যে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসকার্যে বাধা দেয়, যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে ও অপবিত্র বস্তু হারাম করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার থেকে ও শৃংখল থেকে যা তাদের উপর ছিল। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যেই নূর তার সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।” (সূরা আ’রাফঃ ১৫৫-১৫৭)
সুদ্দী (র) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) ও অন্যান্য মুফাস্সির উল্লেখ করেন যে, এই সত্তরজন ছিলেন বনী ইসরাঈলের উলামায়ে কিয়াম। আর তাদের সাথে ছিলেন মূসা (আলাইহিস সালাম), হারূন (আলাইহিস সালাম), ইউশা (আলাইহিস সালাম) নাদাব ও আবীছ। বনী ইসরাঈলের যারা বাছুর পূজা করেছিল তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে তারা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে গিয়েছিলেন। আর তাদেরকে হুকুম দেয়া হয়েছিল তারা যেন পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে গোসল করে ও সুগন্ধি ব্যবহার করে। তখন তারা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে আগমন করলেন, পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন; পাহাড়ের উপরে ঝুলন্ত ছিল মেঘখণ্ড, নূরের স্তম্ভ ছিল সুউচ্চ। মূসা (আলাইহিস সালাম) পাহাড়ে আরোহণ করলেন। বনী ইসরাঈলরা দাবি করেন যে, তারা আল্লাহ তা’আলার কালাম শুনেছেন। কিছু সংখ্যক তাফসীরকারক তাদের এ দাবিকে সমর্থন করেছেন এবং বলেছেন, সূরায়ে বাকারার আয়াতে উল্লেখিত আল্লাহ তা’আলার বাণী শ্রবণকারী যে দলটির কথা বলা হয়েছে, সত্তরজনের দলের দ্বারাও একই অর্থ নেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে, যখন তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে। তারপর তা বুঝবার পর জেনে-শুনে এটা বিকৃত করে। (সূরা বাকারাঃ ৭৫)
তবে এ আয়াতে যে শুধু তাদের কথাই বলা হয়েছে, এটাও অপরিহার্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ- “মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দেবে যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌছিয়ে দেবে। কারণ তারা অজ্ঞ লোক।” (সূরা তওবা: ৬)
অর্থাৎ তাবলীগের খাতিরে তাঁকে আল্লাহ্ তা’আলার বাণী শোনাবার জন্যে হুকুম দেয়া হয়েছে, অনুরূপভাবে তারাও মূসা (আলাইহিস সালাম) থেকে তাবলীগ হিসেবে আল্লাহ তা’আলার বাণী শুনেছিলেন। কিতাবীরা আরো মনে করে যে, এ সত্তর ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে দেখেছিল। এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা বৈ আর কিছুই নয়। কেননা, তারা যখন আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে চেয়েছিল তখনই তারা বজ্রাহত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
“স্মরণ কর, যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না। তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে, আর তোমরা নিজেরাই দেখছিলে, মৃত্যুর পর তোমাদের পুনর্জীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।” (সূরা বাকারাঃ ৫৫-৫৬)
“তারা যখন ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল তখন মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছে করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে .....।”
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) বলেন, “মূসা (আলাইহিস সালাম) বনী ইসরাঈল থেকে সত্তরজন সদস্যকে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ক্রমানুযায়ী মনোনীত করেছিলেন এবং তাদেরকে বলেছিলেন, "আল্লাহ তাআলার দিকে প্রত্যাগমন কর, নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তওবা কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা বাছুর পূজা করে অন্যায় করেছে তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে তোমরা তওবা কর; তোমরা সিয়াম আদায় কর; পবিত্রতা অর্জন কর ও নিজেদের জামা-কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর।” অতঃপর আপন প্রতিপালক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে সীনাই মরুভূমির তূর পাহাড়ে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। আর তিনি কোন সময়ই আল্লাহ তা’আলার অনুমতি ব্যতীত সেখানে গমন করতেন না। আল্লাহ তা’আলার কালাম শোনাবার জন্যে তাদের সেই সত্তরজন মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে অনুরোধ করল। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি একাজটি করতে চেষ্টা করব। মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন পাহাড়ের নিকটবর্তী হলেন, তখন তার উপর মেঘমালার স্তম্ভ নেমে আসল এবং তা সমস্ত পাহাড়কে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মূসা (আলাইহিস সালাম) আরও নিকটবর্তী হলেন এবং মেঘমালায় ঢুকে পড়লেন, আর নিজের সম্প্রদায়কে বলতে লাগলেন, তোমরা নিকটবর্তী হও।’ মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন আল্লাহ তা’আলার সাথে কথা বলতেন, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর মুখমণ্ডলের উপর এমন উজ্জ্বল নূরের প্রতিফলন ঘটত যার দিকে বনী আদমের কেউ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারত না। তাই সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হল, সম্প্রদায়ের লোকেরা অগ্রসর হলেন এবং মেঘমালায় ঢুকে সিজদাবনত হয়ে পড়লেন। আল্লাহ তা’আলা যখন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে কথা বলছিলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে বলছিলেন, এটা কর, ঐটা করো না। তখন তারা আল্লাহ তাআলার কথা শুনছিলেন। আল্লাহ তা’আলা যখন তার নির্দেশ প্রদান সম্পন্ন করলেন এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) থেকে মেঘমালা কেটে গেল ও সম্প্রদায়ের দিকে তিনি দৃষ্টি দিলেন, তখন তারা বলল, হে মূসা! আমরা তোমার কথায় বিশ্বাস করি না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্য দেখতে পাই। তারা তখন বজ্রাহত হল ও তাদের থেকে তাদের রূহ বের হয়ে পড়ল। তাতে তারা সকলেই মৃত্যুবরণ করল।
তৎক্ষণাৎ মূসা (আলাইহিস সালাম) আপন প্রতিপালককে ডাকতে লাগলেন এবং অনুনয় বিনয় করে আরযী জানাতে লাগলেনঃ
অর্থাৎ “হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছে করলে পূর্বেই তো তাদেরকে এবং আমাকেও ধ্বংস করতে পারতে। আমাদের মধ্যে যারা নির্বোধ, তারা যা করেছে সেজন্য তুমি আমাদেরকে কি ধ্বংস করবে?
অন্য কথায়, আমাদের মধ্য হতে নির্বোধরা যা করেছে; তারা বাছুরের পূজা করেছে। তাদের এ কাজের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু), মুজাহিদ (র), কাতাদা (র) ও ইবন জুরায়জ (র) বলেন, বনী ইসরাঈলরা বজ্রাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল, কেননা তারা তাদের সম্প্রদায়কে বাছুর পূজা থেকে বিরত রাখেনি। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত আয়াতাংশ ان هى الا فتنتك -এর অর্থ হচ্ছে, এটা তোমার প্রদত্ত পরীক্ষা ছাড়া কিছুই নয়।’ এ অভিমতটি আবদুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু), সাঈদ ইবন জুবাইর (রাযিআল্লাহু আনহু), আবুল আলীয়া (র), রাবী ইবন আনাস (র) ও পূর্বাপরের অসংখ্য উলামায়ে কিরামের। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই এটা নির্ধারিত করে রেখেছিলে, বা তাদেরকে এটার দ্বারা পরীক্ষা করার জন্যে বাছুর পূজা করার বিষয়টি সৃষ্টি করেছিলে।
অর্থাৎ “তুমিই এই পরীক্ষা দ্বারা যাকে ইচ্ছে পথভ্রষ্ট কর এবং যাকে ইচ্ছে হিদায়ত কর। তুমিই নির্দেশ ও ইচ্ছার মালিক। তুমি যা নির্দেশ বা ফয়সালা কর তা বাধা দেয়ার মত কারো শক্তি নেই এবং কেউ তা প্রতিহতও করতে পারে না।
অর্থাৎ, তুমিই তো আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ। আমাদের জন্য নির্ধারিত কর ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করেছি এবং অনুনয় বিনয় সহকারে তোমাকেই স্মরণ করেছি।
উপরোক্ত তাফসীরটি আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু), মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবাইর, আবুল আলীয়া, ইবরাহীম তায়মী, যাহহাক, সুদ্দী, কাতাদা (র) ও আরো অনেকেই এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। আভিধানিক অর্থও তাই।
আয়াতাংশঃ
( قَالَ عَذَابِیۤ أُصِیبُ بِهِۦ مَنۡ أَشَاۤءُۖ )
[Surat Al-A'raf 156]
অর্থাৎ--‘আমি যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছি এগুলোর কারণে আমি যাকে ইচ্ছে শাস্তি প্রদান করব। আমার রহমত তা তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৬)
সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন সমাপ্ত করেন তখন তিনি একটি লিপি লিখলেন ও আরশের উপর তাঁর কাছে রেখে দিলেন, তাতে লেখা ছিল ان رحتى تغلب غضبى “নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার গযবকে হার মানায়।”
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ “সুতরাং এটা আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে, যাকাত দেবে ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করবে।” অর্থাৎ আমি সুনিশ্চিতভাবে তাদেরকেই রহমত দান করব যারা এসব গুণের অধিকারী হবে। “আর যারা বার্তাবাহক উম্মী নবীর অনুসরণ করবে”- এখানে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর উম্মত সম্বন্ধে উল্লেখ করে তাঁদের মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে একান্ত আলাপে আল্লাহ্ তা’আলা এ বিষয়টিও জানিয়ে দিয়েছিলেন। আমার তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াত ও তার পরবর্তী আয়াতের তাফসীর বর্ণনাকালে আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রয়োজনীয় আলোচনা পেশ করেছি।
কাতাদা (র) বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন এক উম্মতের উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি যারা হবে শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তাদের আবির্ভাব হবে, তারা সৎ কার্যের নির্দেশ দান করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে। হে প্রতিপালক! তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন! আল্লাহ তাআলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত।’ পুনরায় মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি যারা সৃষ্টি হিসেবে সর্বশেষ কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম। হে আমার প্রতিপালক! তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন! আল্লাহ তা’আলা বললেন, 'না, এরা আহমদের উম্মত। আবার মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, যাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলার কালাম সুরক্ষিত, অর্থাৎ ওরা আল্লাহ তা’আলার কালামের হাফিজ। তারা হিফজ হতে আল্লাহ তা’আলার কালাম তিলাওয়াত করবেন। উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্বে যেসব উম্মত ছিলেন তারা দেখে দেখে আল্লাহ তা’আলার কালাম তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু যখন তাদের থেকে আল্লাহ তাআলার কালাম উঠিয়ে নেয়া হতো, তখন তারা আর কিছুই তিলাওয়াত করতে পারতো না। কেননা, তারা আল্লাহ তাআলার কালামের কোন অংশই হিফজ করতে পারেনি। তারা পরবর্তীতে আল্লাহ তা’আলার কালামকে আর চিনতেই সক্ষম হতো না। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহ তা’আলার কালাম হিফজ করার তাওফীক দান করা হয়েছে, যা অন্য কাউকে দান করা হয়নি। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! ওদেরকে আমার উম্মত করে দিন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত।
মূসা (আলাইহিস সালাম) আবারো বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, যারা তাদের পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং শেষ কিতাবের প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে। তারা পথভ্রষ্ট বিভিন্ন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, এমনকি আখেরী যামানার একচক্ষুবিশিষ্ট মিথ্যাবাদী দাজ্জালের বিরুদ্ধেও জিহাদ করবে। তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন।” আল্লাহ তা’আলা বললেন, না, ওরা আহমদের উম্মত। মূসা (আলাইহিস সালাম) পুনরায় বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! ফলকে আমি এমন একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি যারা আল্লাহ তা’আলার নামের সাদকা-খয়রাত নিজেরা খাবে কিন্তু তাদেরকে এটার জন্যে আবার পুরস্কারও দেয়া হবে।” উম্মতে মুহাম্মদীর পূর্বে অন্যান্য উম্মতের কোন ব্যক্তি যদি সাদকা করত এবং তা আল্লাহ তা’আলার দরবারে কবুল হত তখন আল্লাহ তা’আলা আগুন প্রেরণ করতেন এবং সে আগুন তা পুড়িয়ে দিত। কিন্তু যদি তা কবুল না হত তাহলে আগুন তা পোড়াত না। বরং এটাকে পশু-পাখিরা খেয়ে ফেলত এবং আল্লাহ তা’আলা ঐ উম্মতের ধনীদের সাদকা দরিদ্রদের জন্যে গ্রহণ করবেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! এদেরকে আমার উম্মত বানিয়ে দিন।” আল্লাহ তা’আলা বললেন, 'না, ওরা আহমদের উম্মত।’ মূসা (আলাইহিস সালাম) পুনরায় বললেন, “ফলকে আমি এমন এক উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি, তারা যদি একটি নেক কাজ করতে ইচ্ছে করে অথচ পরবর্তীতে তা করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য একটি নেকী লেখা হবে। আর যদি তা তারা করতে পারে, তাহলে তাদের জন্যে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত নেকী দেয়া হবে। ওদেরকে আমার উম্মত করে দিন!” আল্লাহ তা’আলা বললেন, “না, ওরা আহমদের উম্মত।” মূসা (আলাইহিস সালাম) পুনরায় বললেন, “আমি ফলকে এমন একটি উম্মতের উল্লেখ পাচ্ছি যারা অন্যদের জন্যে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে এবং তাদের সে সুপারিশ ককূলও, করা হবে। তাদেরকে আমার উম্মত করে দিন। আল্লাহ তাআলা বললেন, “না, এরা আহমদের উম্মত।”
কাতাদা (র) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) ফলক ফেলে দিলেন এবং বললেন اللهم اجعلنى من امة احمد হে আল্লাহ! আমাকেও আহমদের উম্মতে শামিল করুন। অনেকেই মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর এরূপ মুনাজাত উল্লেখ করেছেন এবং মুনাজাতে এমন বিষয়াদি সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বিশুদ্ধ হাদীস ও বাণীসমূহের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ সংক্রান্ত বিবরণ আল্লাহ তাআলার সাহায্য, তাওফীক, হিদায়াত ও সহায়তা নিয়ে পেশ করব।
হাফিজ আবু হাতিম মুহাম্মদ ইবন হাতিম ইবন হিব্বান (র) তাঁর বিখ্যাত সহীহ’ গ্রন্থে জান্নাতীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার কাছে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর জিজ্ঞাসা সম্পর্কে বলেনঃ মুগীরা ইব্ন শুবা (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা’আলাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতীদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বনিম্ন কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর এক ব্যক্তি আগমন করবে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে ব্যক্তি বলবে, আমি কেমন করে জান্নাতে প্রবেশ করবো অথচ লোকজন সকলেই নিজ নিজ স্থান করে নিয়েছে ও নির্ধারিত নিয়ামত লাভ করেছে। তাকে তখন বলা হবে যে, যদি তোমাকে দুনিয়ার রাজাদের কোন এক রাজার রাজ্যের সমান জান্নাত দেয়া হয়, তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? উত্তরে সে বলবে, “হ্যাঁ, আমার প্রতিপালক!’ তাকে তখন বলা হবে, তোমার জন্যে এটা এটার ন্যায় আরো একটা এবং এটার ন্যায় আরো এক জান্নাত। সে তখন বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি সন্তুষ্ট। তখন তাঁকে বলা হবে, এর সাথে রয়েছে তোমার জন্যে যা তোমার মন চাইবে ও যাতে চোখ জুড়াবে।’ মূসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তাআলার কাছে জানতে চান, জান্নাতীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, “তাদের সম্বন্ধে আমি তোমাকে বলছি, তাদের মর্যাদার বৃক্ষটি আমি নিজ কুদরতী হাতে রোপণ করেছি এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছিয়েছি তা এমন যা কোন দিন কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং যা কোন আদম সন্তানের কল্পনায় আসেনি।”
এ হাদীসের বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ বহন করে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতটিঃ
অর্থাৎ “কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।” (৩২ সাজদাঃ ১৭)
অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম (র) ও ইমাম তিরমিযী (র) সুফিয়ান ইবন উয়াইনা (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, মুসলিমের পাঠ হচ্ছেঃ فيقال له اترضى অতঃপর তাকে বলা হবে যদি পৃথিবীর কোন রাজার রাজ্যের সমতুল্য তোমাকে দান করা হয় তাতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? তখন সে ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি এতে সন্তুষ্ট। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমার জন্যে রয়েছে এটা, এটার অনুরূপ এবং এটার অনুরূপ। এটার অনুরূপ, আরো এটার অনুরূপ পঞ্চম বারের পর সে ব্যক্তি বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! এটাতে আমি সন্তুষ্ট।’ অতঃপর বলা হবে, এটা তো তোমার জন্যে থাকবেই এবং তার সাথে আরো দশগুণ, আর এছাড়াও তোমার জন্যে থাকবে যা তোমার মনে চাইবে ও যাতে তোমার চোখ জুড়াবে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি সন্তুষ্ট।’ আর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! এরাই তাহলে মর্যাদায় সর্বোচ্চ?’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, তাদের সম্মানের বৃক্ষ আমি নিজ হাতে রোপণ করেছি এবং সম্মানের পরিচর্যার কাজও আমিই সমাপ্ত করেছি। তাদের এত নিয়ামত দেয়া হবে, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানবহৃদয় এর কল্পনাও করেনি। ইমাম মুসলিম (র) বলেন, কুরআন মজীদের আয়াতে তার যথার্থতার প্রমাণ রয়েছে। فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡس ࣱ مَّاۤ أُخۡفِیَ لَهُم
ইমাম তিরমিযী (র) হাদীসটি হাসান ও সহীহ বলেছেন। কেউ কেউ বলেন, হাদীসটিকে মওকুফ বললেও বিশুদ্ধ মতে তা মারফু। ইবন হিব্বান (র) তার 'সহীহ’ গ্রন্থে মূসা (আলাইহিস সালাম) কর্তৃক তাঁর প্রতিপালককে সাতটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা প্রসঙ্গে বলেনঃ
আবু হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। একদিন মূসা (আলাইহিস সালাম) আপন প্রতিপালকের কাছে ছয়টি বিষয়ে প্রশ্ন করেন, আর এই ছয়টি বিষয় শুধু তাঁরই জন্যে বলে তিনি মনে করেছিলেন। সপ্তম বিষয়টি মূসা (আলাইহিস সালাম) পছন্দ করেননি। মূসা (আলাইহিস সালাম) প্রশ্ন করেন, (১) হে আমার প্রতিপালক! তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক পরহেজগার কে? আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “যে ব্যক্তি যিকির করে এবং গাফিল থাকে না। (২) মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করে। (৩) মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে মানুষের জন্যে সেরূপ বিচারই করে যা সে নিজের জন্যে করে। (৪) মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী কে? আল্লাহ তা’আলা বলেন, এমন জ্ঞানী যে জ্ঞান আহরণে তৃপ্ত হয় না বরং লোকজনের জ্ঞানকে নিজের জ্ঞানের সাথে যোগ করে। (৫) মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত কে? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যে বান্দা প্রতিশোধ গ্রহণের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়। (৬) মূসা (আলাইহিস সালাম) প্রশ্ন করেন? তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক ধনী কে? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “যে বান্দা তাকে যা দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।’ (৭) মূসা (আলাইহিস সালাম) প্রশ্ন করেনঃ তোমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক দরিদ্র কে? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, 'মানকুস’ —যার মনে অভাববোধ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, “বাহ্যিক ধনীকে প্রকৃত পক্ষে ধনী বলা হয় না, অন্তরের ধনীকেই ধনী বলা হয়। যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দার প্রতি কল্যাণ চান, তখন তাকে অন্তরে ধনী হবার এবং হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি ভয় করার তাওফীক দেন। আর যদি কোন বান্দার অকল্যাণ চান তাহলে তার চোখ দারিদ্রকে প্রকট করে তুলেন। হাদীসে বর্ণিত منقوص শব্দের ব্যাখ্যায় ইন হিব্বান (র) বলেন, এটার অর্থ হচ্ছে তাকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা সে নগণ্য মনে করে এবং আরো অধিক চায়।
ইবন জারীর (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ধিত করে বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সর্বাধিক জ্ঞানী? আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যে নিজের জ্ঞানের সাথে সাথে লোকজনের জ্ঞানও অন্বেষণ করে। অচিরেই সে একটি উপদেশ বাণী পাবে, যা তাকে আমার হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শন করবে কিংবা আমার নিষেধ থেকে বিরত রাখবে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কি পৃথিবীতে কেউ আছেন? আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, হ্যা আছে, সে হচ্ছে খিযির।’ মূসা (আলাইহিস সালাম) খিযির (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্যে পথের সন্ধান চান। পরবর্তীতে এর আলোচনা হবে।
ইবন হিব্বানের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস— ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রাযিআল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, “একদিন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! তোমার মুমিন বান্দা দুনিয়াতে অভাবে-অনটনে দিন যাপন করে। আল্লাহ বলেন, তার জন্যে জান্নাতের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে তা দিয়ে সে জান্নাতের দিকে তাকাবে। ‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “হে মূসা! এটা হচ্ছে সেই বস্তু যা আমি তার জন্যে তৈরি করে রেখেছি।” মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, “হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইযযত ও পরাক্রমের শপথ, যদি তার দুই হাত ও দুই পা কাটা গিয়ে থাকে এবং তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সে হামা দিয়ে চলে আর এটাই যদি তার শেষ গন্তব্যস্থল হয়, তাহলে সে যেন কোনদিন কোন কষ্টই ভোগ করেনি।” রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “পুনরায় মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাফির বান্দা দুনিয়ার প্রাচুর্যের মধ্যে রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “তার জন্যে জাহান্নামের একটি দ্বার খুলে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে মূসা! এটা আমি তার জন্যে তৈরি করে রেখেছি। মূসা (আলাইহিস সালাম) বলেন, “হে আমার প্রতিপালক! তোমার ইযযত ও পরাক্রমের শপথ, তার জন্ম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যদি তাকে পার্থিব সম্পদ দেয়া হত, আর এটাই যদি তার গন্তব্যস্থল হয় তাহলে সে যেন কখনও কোন কল্যাণ লাভ করেনি। তবে এ হাদীসের সূত্রের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।
ইবন হিব্বান (র) মূসা (আলাইহিস সালাম) কর্তৃক আপন প্রতিপালকের কাছে এমন একটি 'যিকির প্রার্থনা’ শিরোনামে আবু সাঈদ (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এটি বর্ণনা করেন যে, একদিন মূসা (আলাইহিস সালাম) আরয করলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যার মাধ্যমে আমি আপনাকে স্মরণ করতে পারি ও ডাকতে পারি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, হে মূসা! তুমি বল, لا اله الا الله মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! আপনার প্রত্যেক বান্দাই তো এই কলেমা বলে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বললেন, তুমি বল, لا اله الا الله মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি এমন একটি কালেমা চাই যা আপনি আমার জন্যেই বিশেষভাবে দান করবেন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, হে মূসা! যদি সাত আসমান ও সাত যমীনের বাসিন্দাদেরকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং لا اله الا الله কলেমাকে অন্য পাল্লায় রাখা হয় তাহলে لا اله الا الله এর পাল্লাটি অপর পাল্লাটি থেকে অধিক ভারী হবে। এই হাদীসের সত্যতার প্রমাণ حديث البطاقة আর অর্থের দিক দিয়ে এ হাদীসের অতি নিকটবর্তী হল নিম্ন বর্ণিত হাদীস যা হাদীসের কিতাবগুলোতে বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম দু’আ হচ্ছে, আরাফাত ময়দানের দুআ।’
আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণের সর্বোত্তম বাণী হলঃ
لا اله الا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شي قدير
অর্থাৎ এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, অংশীদারহীন, তাঁরই জন্য যত প্রশংসা এবং তিনিই সর্বশক্তিমান। اية الكرسى এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইবন আবু হাতিম (র) ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনী ইসরাঈল মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে প্রশ্ন করলেন, তোমার প্রতিপালক কি ঘুমান? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তখন তার প্রতিপালক তাকে ডেকে বললেন, হে মূসা! তারা তোমাকে প্রশ্ন করেছে তোমার প্রতিপালক কি ঘুমান? তাই তুমি তোমার দুই হাতে দুইটি বোতল ধারণ কর এবং রাত জাগরণ কর। মূসা (আলাইহিস সালাম) এরূপ করলেন, যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হল, তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন এবং তাঁর মাথা হাঁটুর উপর ঝুঁকে পড়ল। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বোতল দু’টিকে মজবুত করে ধরলেন। এরপর যখন শেষরাত হলো তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। অমনি তাঁর দুই হাতের দুটি বোতল পড়ে গেল ও ভেঙ্গে গেল।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে বললেন, “হে মূসা! যদি আমি নিদ্রাচ্ছন্ন হতাম তাহলে আসমান ও যমীন পতিত হত এবং তোমার হাতের বোতল দু’টির ন্যায় আসমান-যমীন ধ্বংস হয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা’আলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আয়াতুল কুরসী নাযিল করেন।
ইবন জারীর (র) আবূ হুরায়রা (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মিম্বরে বসে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “একদিন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর অন্তরে এই প্রশ্ন উদিত হল যে, আল্লাহ্ তা’আলা কি নিদ্রা যান? তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে একজন ফেরেশতাকে পাঠালেন, তিনি তাকে তিন রাত অনিদ্রা অবস্থায় রাখলেন। অতঃপর তাকে দুই হাতে দু’টি কাঁচের বোতল দিলেন, আর এই দু’টো বোতলকে সযত্নে রাখার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাঁর ঘুম পেলেই দু’টো হাত একত্র হয়ে যাবার উপক্রম হত এবং তিনি জেগে উঠতেন। অতঃপর তিনি একটিকে অপরটির সাথে একত্রে ধরে রাখতেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। তার দুটো হাত কেঁপে উঠলো এবং দুটো বোতলই পড়ে ভেঙ্গে গেল।” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর জন্যে এই একটি উদাহরণ বর্ণনা করেন যে, যদি আল্লাহ্ তা’আলা নিদ্রা যেতেন তাহলে আসমান ও যমীনকে ধরে রাখতে পারতেন না।
উপরোক্ত হাদীস মারফুরূপে গরীব পর্যায়ের। তবে খুব সম্ভব এটা কোন সাহাবীর বাণী এবং এর উৎস ইহুদীদের বর্ণনা।
“স্মরণ কর যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং তূরকে তোমাদের ঊর্ধে উত্তোলন করেছিলাম; বলেছিলাম, আমি যা দিলাম দৃঢ়তার সাথে তা গ্রহণ কর এবং তাতে যা রয়েছে তা স্মরণ রাখ। যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার। এটার পরেও তোমরা মুখ ফিরালে। আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা তোমাদের প্রতি না থাকলে তোমরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে।” (সূরা বাকারাঃ ৬৩ - ৬৪)
অর্থাৎ “স্মরণ কর, আমি পৰ্বতকে তাদের ঊর্ধে উত্তোলন করি। আর তা ছিল যেন এক চাঁদোয়া। তারা ধারণা করল যে, এটা তাদের উপর পড়ে যাবে। বললাম, আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং ওতে যা আছে তা স্মরণ করো, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও।” (সূরা আরাফঃ ১৭১)
আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রাযিআল্লাহু আনহু) ও প্রাচীন যুগের উলামায়ে কিরামের অনেকেই বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তাওরাত সম্বলিত ফলক নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের কাছে আগমন করলেন তখন সম্প্রদায়কে তা গ্রহণ করতে ও শক্তভাবে তা ধরতে নির্দেশ দিলেন। তারা তখন বলল, তাওরাতকে আমাদের কাছে খুলে ধরুন, যদি এর আদেশ নিষেধাবলী সহজ হয় তাহলে আমরা তা গ্রহণ করব। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, তাওরাতের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা তোমরা কবুল কর, তারা তা কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে হুকুম করেন তারা যেন তূর পাহাড় বনী ইসরাঈলের মাথার উপর উত্তোলন করেন। অমনি পাহাড় তাদের মাথার উপর মেঘখণ্ডের ন্যায় ঝুলতে লাগল, তাদের তখন বলা হল, তোমরা যদি তাওরাতকে তার সব কিছুসহ ককূল না কর এই পাহাড় তোমাদের মাথার উপর পড়বে। তখন তারা তা কবুল করল। তাদেরকে সিজদা করার হুকুম দেয়া হলো, তখন তারা সিজদা করল। তবে তারা পাহাড়ের দিকে আড় নজরে তাকিয়ে রয়েছিল। ইহুদীদের মধ্যে আজ পর্যন্ত এরূপ বলাবলি করে থাকে যে, যে সিজদার কারণে আমাদের উপর থেকে আযাব বিদূরিত হয়েছিল তার থেকে উত্তম সিজদা হতে পারে না।
আবু বকর ইবন আবদুল্লাহ্ (রাযিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মূসা (আলাইহিস সালাম) যখন তাওরাতকে খুলে ধরলেন তখন পৃথিবীতে যত পাহাড়, গাছপালা ও পাথর রয়েছে সবই কম্পিত হয়ে উঠল, আর দুনিয়ার বালক বৃদ্ধ নির্বিশেষে যত ইহুদীর কাছে তাওরাত পাঠ করা হল তারা প্রকম্পিত হয়ে উঠল ও মাথা অবনত করল।
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
ثُمَّ تَوَلَّیۡتُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَ ٰ لِكَۖ
অর্থাৎ তোমরা এই মহাপ্রতিশ্রুতি ও বিরাট ব্যাপার দেখার পর তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছ।
অর্থাৎ তোমাদের প্রতি রাসূল ও কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে যদি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা না থাকত তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/72
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।