মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বনী ইসরাঈলের তীহ প্রান্তরে প্রবেশ ও অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/70
পূর্বোল্লিখিত দুর্দান্ত জাতির বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের জিহাদ করা হতে বিরত থাকার বিষয়টি উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে তীহ প্রান্তরে, ভবঘুরের মত বিচরণের শাস্তি দেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, চল্লিশ বছর তারা সেখান থেকে বের হতে পারবে না। কিতাবীদের গ্রন্থাদিতে জিহাদ থেকে বিরত থাকার বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি বরং তাদের কিতাবে রয়েছে, “মূসা (আলাইহিস সালাম) একদিন ইউশা (আলাইহিস সালাম)-কে কাফিরদের একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার প্রস্তুতি নিতে হুকুম দিলেন। আর মূসা (আলাইহিস সালাম), হারূন (আলাইহিস সালাম) ও খোর নামক এক ব্যক্তি একটি টিলার চূড়ায় বসেছিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর লাঠি উপরের দিকে উঠালেন, যখনই তিনি তাঁর লাঠি উপরের দিকে উঠিয়ে রাখতেন, তখনই ইউশা (আলাইহিস সালাম) শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হতেন। আর যখনই লাঠিসহ তার হাত ক্লান্তি কিংবা অন্য কারণে নিচে নেমে আসত তখনই শত্রুদল বিজয়ী হতে থাকত। তাই হারূন (আলাইহিস সালাম) ও খোর মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দুই হাতকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ডানে, বামে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। ইউশা (আলাইহিস সালাম)-এর সৈন্য দল জয়লাভ করল।
কিতাবীদের মতে, ইউশা (আলাইহিস সালাম)-এর সেনাবাহিনী সকলে মাদায়ানকে পছন্দ করত। মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর শ্বশুরের কাছে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর যাবতীয় ঘটনার সংবাদ পৌঁছল। আর এ খবর পৌঁছল যে, কিভাবে আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে তার শত্রু ফিরআউনের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছেন। তাই তিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আনুগত্য সহকারে উপস্থিত হলেন। তাঁর সাথে ছিলেন তার মেয়ে সাফুরা। সাফুরা ছিলেন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রী। তার সাথে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর দুই পুত্র জারশুন এবং আটিরও ছিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর শ্বশুরের সাথে সাক্ষাত করলেন। তিনি তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করলেন। তাঁর সাথে বনী ইসরাঈলের মুরুব্বীগণও সাক্ষাত করলেন, তারাও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেন।
কিতাবীরা আরো উল্লেখ করে যে, মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর শ্বশুর দেখলেন যে, ঝগড়া বিবাদের সময় বনী ইসরাঈলের একটি দল মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে ভিড় জমায়। তাই তিনি মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে পরামর্শ দিলেন, তিনি যেন জনগণের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক আমানতদার, পরহেযগার ও চরিত্রবান প্রশাসক নিযুক্ত করেন। যারা ঘুষ ও খিয়ানতকে ঘৃণা করেন। তিনি যেন তাদেরকে বিভিন্ন স্তরের প্রধানরূপে নিযুক্ত করেন। যেমন প্রতি হাজারের জন্যে, প্রতি শতের জন্যে, প্রতি পঞ্চাশজনের জন্য এবং প্রতি দশজনের জন্য একজন করে। তারা জনগণের মধ্যে বিচারকার্য সমাধা করবেন। তাদের কর্তব্য সমাধানে যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়, তখন তারা আপনার কাছে ফায়সালার জন্যে আসবে এবং আপনি তাদের সমস্যার সমাধান দেবেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) সেরূপ শাসনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন।
কিতাবীরা আরো বলেন, মিসর থেকে বের হবার তৃতীয় মাসে বনী ইসরাঈলরা সিনাইর কাছে সমতল ভূমিতে অবতরণ করেন। তারা তাদের কাছে চলতি বছরের প্রথম মাসে মিসর থেকে বের হয়েছিলেন। এটা ছিল বসন্ত ঋতুর সূচনাকাল। কাজেই তারা যেন গ্রীষ্মের প্রারম্ভে তীহ নামক ময়দানে প্রবেশ করেছিলেন। আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত।
কিতাবীরা বলেন, বনী ইসরাঈলগণ সিনাইয়ের তূর পাহাড়ের পাশেই অবতরণ করেন। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) তুর পাহাড়ে আরোহণ করেন এবং তাঁর প্রতিপালক তার সাথে কথা বলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে হুকুম দিলেন, তিনি যেন বনী ইসরাইলকে আল্লাহ তা’আলা যেসব নিয়ামত প্রদান করেছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেন। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে যেন শকুনের দুইটি পাখায় উঠিয়ে ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুসা (আলাইহিস সালাম)-কে নির্দেশ দেন, তিনি যেন বনী ইসরাঈলকে পবিত্রতা অর্জন করতে, গোসল করতে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে তৃতীয় দিবসের জন্যে তৈরি হতে হুকুম দেন। তৃতীয় দিন সমাগত হলে তিনি নির্দেশ দেন, তারা যেন পাহাড়ের পাশে সমবেত হন, তবে তাদের মধ্য হতে কেউ যেন মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে না আসে। যদি তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর কাছে আসে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা শিংগার আওয়াজ শুনতে থাকবে, এমনকি একটি প্রাণীও তখন তার কাছে যেতে পারবে না। যখন শিংগার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাবে তখন পাহাড়ে যাওয়া তাদের জন্যে বৈধ হবে। বনী ইসরাঈলও মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর কথা শুনলেন; তাঁর আনুগত্য করলেন, গোসল করলেন; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেন; পবিত্রতা অর্জন করলেন ও খুশবু ব্যবহার করলেন। তৃতীয় দিন পাহাড়ের উপর বিরাট মেঘখণ্ড দেখা দিল; সেখানে গর্জন শোনা গেল; বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল ও শিংগার বিকট আওয়াজ শোনা যেতে লাগল। এতে বনী ইসরাইল ঘাবড়ে গেল ও অত্যন্ত আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তারা বের হল এবং পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়াল। পাহাড়কে বিরাট ধোয়ায় ঢেকে ফেলল, তার মধ্যে ছিল অনেকগুলো নূরের স্তম্ভ।
সমস্ত পাহাড় প্রচণ্ডভাবে কাঁপতে লাগল, শিংগার গর্জন অব্যাহত রইল এবং ক্রমাগত তা বৃদ্ধি পেতে লাগল। মূসা (আলাইহিস সালাম) ছিলেন পাহাড়ের উপরে, আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সাথে একান্তে কথা বলছিলেন। আল্লাহ্ তা’আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে নেমে যেতে হুকুম দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বনী ইসরাঈলকে আল্লাহ্ তা’আলার কালাম শোনার জন্যে পাহাড়ের নিকটবর্তী হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের আলেমদেরকেও তিনি নিকটবর্তী হতে আদেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর অধিক নৈকট্য অর্জন করার জন্যে তাদেরকে পাহাড়েও চড়তে হুকুম দিলেন।
উপরোক্ত সংবাদটি হলো কিতাবীদের গ্রন্থাদিতে লিখিত সংবাদ যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে যায়।( كتاب البدايه والنهاية
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! এরা পাহাড়ে চড়তে সক্ষম নয় আর তুমি পূর্বে একাজ করতে নিষেধ করেছিলে।’ অতঃপর আল্লাহ তা’আলা মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে তার ভাই হারূন (আলাইহিস সালাম)-কে নিয়ে আসতে হুকুম দিলেন। আর আলিমগণ এবং বনী ইসরাঈলের অন্যরা যেন নিকটে উপস্থিত থাকে। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাই করলেন। তাঁর প্রতিপালক তার সাথে কথা বললেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে দশটি কলেমা বা উপদেশ বাণী দিলেন।
কিতাবীদের মতে, বনী ইসরাঈলরা আল্লাহর কালাম শুনেছিল কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, যতক্ষণ না মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আর মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে তারা বলতে লাগল, ‘আপনি প্রতিপালকের কাছ থেকে আমাদের কাছে উপদেশ বাণী পৌঁছিয়ে দিন। আমরা আশংকা করছি হয়তো আমরা মারা পড়ব। অতঃপর মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের কাছে আল্লাহ্ তা’আলার তরফ থেকে প্রাপ্ত দশটি উপদেশ বাণী পৌঁছিয়ে দেন। আর এগুলো হচ্ছেঃ (এক) লা-শরীক আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদতের নির্দেশ, (দুই) আল্লাহ্ তা’আলার সাথে মিথ্যা শপথ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা, (তিন) ‘সাবাত সংরক্ষণের জন্যে নির্দেশ। তার অর্থ হচ্ছে সপ্তাহের একদিন অর্থাৎ শনিবারকে ইবাদতের জন্যে নির্দিষ্ট রাখা। শনিবারকে রহিত করে আল্লাহ তাআলা এর বিকল্পরূপে আমাদেরকে জুমআর দিন দান করেছেন। (চার) তোমার পিতা-মাতাকে সম্মান কর। তাহলে পৃথিবীতে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার আয়ু বৃদ্ধি করে দেবেন, (পাঁচ) নর হত্যা করবে না, (ছয়) ব্যভিচার করবে না, (সাত) চুরি করবে না, (আট) তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না, (নয়) তোমার প্রতিবেশীর ঘরের প্রতি লোভের দৃষ্টিতে তাকাবে না, (দশ) তোমার সাথীর স্ত্রী, গোলাম-বাঁদী, গরু-গাধা ইত্যাদি কোন জিনিসে লোভ করবে না। অর্থাৎ হিংসা থেকে বারণ করা হয়। আমাদের প্রাচীনকালের আলিমগণ ও অন্য অনেকেই বলেন যে, এ দশটি উপদেশ বাণীর সারমর্ম কুরআনের সূরায়ে আনআমের দু’টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
অর্থাৎ—বল, এস তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন, তোমাদেরকে তা পড়ে শুনাই, তাহলো তোমরা তাঁর কোন শরীক করবে না, পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দিয়ে থাকি। প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক, অশ্লীল কাজের কাছে যাবে না; আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা অনুধাবন কর। ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হবে না এবং পরিমাণ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরোপুরি দেবে। আমি কাউকেও তার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে, স্বজনের সম্পর্কে হলেও এবং আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর এবং এপথই আমার সরলপথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে। (সূরা আনআমঃ ১৫১-১৫৩)
তারা এই দশটি উপদেশ বাণীর পরও বহু ওসীয়ত ও বিভিন্ন মূল্যবান নির্দেশাবলীর উল্লেখ করেছেন, যেগুলো বহুদিন যাবত চালু ছিল। তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এগুলো আমল করেছেন কিন্তু এরপরই এগুলোতে আমলকারীদের পক্ষ হতে অবাধ্যতার ছোঁয়া লাগে। তারা এগুলোর দিকে লক্ষ্য করলো এবং এগুলোতে পরিবর্তন সাধন করল, কোন কোনটা একেবারে বদল করে দিল; আবার কোন কোনটার মনগড়া ব্যাখ্যা দান করতে লাগল। তারপর এগুলোকে একেবারেই তারা ছেড়ে দিল। এরূপ এসব নির্দেশ এককালে পূর্ণরূপে চালু থাকার পর পরিবর্তিত ও বর্জিত হয়ে যায়। পূর্বে ও পরে আল্লাহ তাআলার হুকুমই বলবৎ থাকবে, তিনিই যা ইচ্ছে হুকুম করে থাকেন এবং যা ইচ্ছে করে থাকেন, তাঁরই হাতে সৃষ্টি ও আদেশের মূল চাবিকাঠি। জগতের প্রতিপালক আল্লাহই বরকতময়। অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ, হে বনী ইসরাঈল! আমি তো তোমাদেরকে শত্রু থেকে উদ্ধার করেছিলাম, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং তোমাদের কাছে মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করেছিলাম, তোমাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এ বিষয়ে সীমালংঘন করো না, করলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়। আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তাঁর প্রতি, যে তওবা করে ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচলিত থাকে। (সূরা তা-হাঃ ৮০-৮২)
আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলের প্রতি যে দয়া ও অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে দিচ্ছেন। তিনি তাদেরকে শত্রু থেকে রক্ষা করেছিলেন, বিপদ-আপদ ও সংকীর্ণ অবস্থা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। আর তাদেরকে তূর পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে তাদের নবী মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গ দান করার জন্যে অংগীকার করেছিলেন যাতে তিনি তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিধান অবতীর্ণ করতে পারেন। আর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর মান্না আসমান থেকে প্রতি প্রত্যুষে নাযিল করেন। তাদের জন্যে অতি প্রয়োজনের বেলায় কঠিন সময়ে এমন ভূমিতে ভ্রমণ ও অবস্থানকালে যেখানে কোন প্রকার ফসলাদি ও দুধেল প্রাণী ছিল না। প্রতিদিন সকালে তারা মান্না ঘরের মাঝেই পেয়ে যেত এবং তাদের প্রয়োজন মুতাবিক রেখে দিত যাতে ঐদিনের সকাল হতে আগামী দিনের ঐ সময় পর্যন্ত তাদের খাওয়া-দাওয়া চলে। যে ব্যক্তি এরূপ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সঞ্চয় করে রাখত তা নষ্ট হয়ে যেত; আর যে কম গ্রহণ করত এটাই তার জন্যে যথেষ্ট হত; যে অতিরিক্ত নিত তাও অবশিষ্ট থাকতো না। মান্না তারা রুটির মত করে তৈরি করত এটা ছিল ধধবে সাদা এবং অতি মিষ্ট। দিনের শেষ বেলা সালওয়া নামক পাখি তাদের কাছে এসে যেত, রাতের খাবারের প্রয়োজন মত পরিমাণ পাখি তারা অনায়াসে শিকার করত। গ্রীষ্মকাল দেখা দিলে আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর মেঘখণ্ড প্রেরণ করে ছায়া দান করতেন। এই মেঘখণ্ড তাদের প্রখরতা ও উত্তাপ থেকে রক্ষা করত।
“হে বনী ইসরাঈল! আমার সে অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর যা দিয়ে আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর। আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। আমি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে ঈমান আন। এটা তোমাদের কাছে যা আছে তার প্রত্যয়নকারী। আর তোমরাই এটার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করবে না। তোমরা শুধু আমাকে ভয় করবে।" (সূরা বাকারাঃ ৪০-৪১)
অর্থাৎ, হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যা দ্বারা আমি তোমাদেরকে অর্থাৎ অনুগৃহীত করেছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। তোমরা সে দিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারো কোন কাজে আসবে না, কারো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না এবং কারো নিকট থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য প্রাপ্তও হবে না। স্মরণ কর, যখন আমি ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে তোমাদেরকে নিষ্কৃতি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করে ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রেখে তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা ছিল; যখন তোমাদের জন্য সাগরকে বিভক্ত করেছিলাম এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফিরআউনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করেছিলাম আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। যখন মূসার জন্যে চল্লিশ রাত নির্ধারিত করেছিলাম, তার প্রস্থানের পর তোমরা তখন বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে। তোমরা তো জালিম। এরপরও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যখন আমি মূসাকে কিতাব ও ফুরকান দান করেছিলাম যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার কাছে এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা আল্লাহকে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করব না, তখন তোমরা বজ্রাহত হয়েছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখছিলে। তারপর মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে পুনর্জীবিত করলাম, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করলাম। তোমাদের নিকট মান্না ও সালওয়া প্রেরণ করলাম। বলেছিলাম, তোমাদেরকে ভাল যা দান করেছি তা হতে আহার কর। তারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই বরং তারা তাদের প্রতিই জুলুম করেছিল। (সূরা বাকারাঃ ৪৭-৫৭)
অর্থাৎ, স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করল। আমি বললাম, তোমরা লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর। ফলে তাথেকে বারটি ঝরনা প্রবাহিত হল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান চিনে নিল। আমি বললাম, 'আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকা হতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াবে না। যখন তোমরা বলেছিলে, “হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য, শাক-সবজি, ফাঁকুড়, গম, মসুর ও পিঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন। মূসা বলল, তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সাথে বদল করতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যা চাও তা সেখানে রয়েছে। আর তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্রগ্রস্ত হল ও তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো।
এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করবার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল। (সূরা বাকারাঃ ৬০-৬১)
এখানে আল্লাহ তা’আলা বনী ইসরাঈলকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন ও অনুগ্রহ করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে দুটো সুস্বাদু খাবার বিনা কষ্টে ও পরিশ্রমে সহজলভ্য করে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন ভোরে আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্যে মান্না অবতীর্ণ করতেন এবং সন্ধ্যার সময় সালওয়া নামক পাখি প্রেরণ করতেন। মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করার ফলে তাদের জন্যে আল্লাহ তা’আলা পানি প্রবাহিত করে দিয়েছিলেন। তারা এই পাথরটিকে তাদের সাথে লাঠি সহকারে বহন করত। এই পাথর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হত; প্রতিটি গোত্রের জন্যে একটি প্রস্রবণ নির্ধারিত ছিল। এই প্রস্রবণগুলো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত করত। তারা নিজেরা পান করত ও তাদের প্রাণীদেরকে পানি পান করাত এবং তারা প্রয়োজনীয় পানি জমা করেও রাখত। উত্তাপ থেকে বাঁচাবার জন্যে মেঘ দ্বারা তাদেরকে আল্লাহ তাআলা ছায়া দান করেছিলেন। আল্লাহ তাআলার তরফ হতে তাদের জন্যে ছিল এগুলো বড় বড় নিয়ামত ও দান, তবে তারা এগুলোর পূর্ণ মর্যাদা অনুধাবন করেনি এবং এগুলোর জন্যে যথাযোগ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনি। আর যথাযথভাবে ইবাদতও তারা আঞ্জাম দেয়নি। অতঃপর তাদের অনেকেই এসব নিয়ামতের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করল। এগুলোর প্রতি অধৈর্য হয়ে উঠল এবং চাইল যাতে তাদেরকে এগুলো পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এমন সব বস্তু যা ভূমি উৎপন্ন করে যেমন শাক, সবৃজি, ফঁকুড়, গম, মসুর ও পিয়াজ ইত্যাদি। এ কথার জন্যে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে ভৎসনা করলেন এবং ধমক দিলেন, তাদের সতর্ক করে বললেনঃ
অর্থাৎ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল শহরের অধিবাসীর জন্য অর্জিত উৎকৃষ্ট নিয়ামতসমূহের পরিবর্তে কি তোমরা নিকৃষ্টতর বস্তু চাও? তাহলে তোমরা যেসব বস্তু ও মর্যাদার উপযুক্ত নও তার থেকে অবতরণ করে তোমরা যে ধরনের নিকৃষ্ট মানের খাদ্য খাবার চাও তা তোমরা অর্জন করতে পারবে। তবে আমি তোমাদের আবদারের প্রতি সাড়া দিচ্ছি না এবং তোমরা যে ধরনের আকাঙক্ষা পোষণ করছ তাও আল্লাহ তা’আলার দরবারে আপাতত পৌছাচ্ছি না। উপরোক্ত যেসব আচরণ তাদের থেকে পরিলক্ষিত হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদেরকে যেসব কাজ থেকে বিরত রাখতে ইচ্ছে করেছিলেন তা থেকে তারা বিরত থাকেনি।
অর্থাৎ, এ বিষয়ে সীমালংঘন করবে না, করলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়। (সূরা তা-হাঃ ৮১)
বনী ইসরাঈলের উপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলার গযব অবধারিত হয়েছিল। তবে আল্লাহ্ তা’আলা এরূপ কঠোর শাস্তিকে আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথেও সম্পৃক্ত করেছেন, ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে আল্লাহ্ তা’আলার প্রতি প্রত্যাবর্তন করে ও পাপরাশি থেকে তওবা করে এবং বিতাড়িত শয়তানের অনুসরণে আর লিপ্ত না থাকে।
অর্থাৎ, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে। (সূরাঃ তা-হা ৮২)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/70
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।