hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৪৭
হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সিরিয়া ও মিসরে হিজরত এবং অবশেষে ফিলিস্তিনে স্থায়ী বসতি স্থাপন
এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ

( فَآمَنَ لَهُ لُوطٌ ۘ وَقَالَ إِنِّي مُهَاجِرٌ إِلَىٰ رَبِّي ۖ إِنَّهُ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ * وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَجَعَلْنَا فِي ذُرِّيَّتِهِ النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ وَآتَيْنَاهُ أَجْرَهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ ) [Surat Al-Ankabut 26 - 27]

অর্থাৎ, লূত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। ইবরাহীম বলল, 'আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করছি। তিনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আমি ইবরাহীমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং বংশধরদের জন্যে স্থির করলাম নবুওত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম। আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্ম পরায়ণদের অন্যতম হবে (সূরা আনকাবূতঃ ২৬-২৭)

আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ

( وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ * وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ * وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ ۖ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ ) [Surat Al-Anbiya' 71 - 73]

অর্থাৎ, এবং আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্যে এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকূব, আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ; এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত, তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তারা আমারই ইবাদত করত। (সূরা আম্বিয়াঃ ৭১-৭৩)

হযরত ইবরাহীম (আ) নিজের দেশ ও জাতিকে ত্যাগ করে আল্লাহর রাহে হিজরত করেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা, কোন সন্তান হত না এবং তাঁর কোন পুত্র সন্তান ছিল না বরং ভ্রাতুস্পুত্র লূত ইবন হারান ইব্‌ন আযর তাঁর সঙ্গে ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে একাধিক পুত্র সন্তান দান করেন এবং তাঁদের সকলেই পূণ্যবান ছিলেন। ইবরাহীম (আ)-এর বংশে নবুওত এবং কিতাব প্রেরণের ধারা চালু রাখেন। সুতরাং ইবরাহীম (আ)-এর পরে যিনিই নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন তার বংশ থেকেই হয়েছেন এবং তার পরে যে কিতাবই আসমান থেকে কোন নবীর উপর অবতীর্ণ হয়েছে, তা তাঁর বংশধরদের উপরই অবতীর্ণ হয়েছে। এ সব পুরস্কার আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন তাঁর ত্যাগ ও কুরবানী এবং আল্লাহর জন্যে দেশ, পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে পরিত্যাগ করার বিনিময়ে। এমন দেশের উদ্দেশে তিনি হিজরত করলেন যেখানে আল্লাহর ইবাদত এবং বান্দাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবানের সুযোগ ছিল। তার সেই হিজরতের দেশটি হল শাম বা সিরিয়া। এ দেশ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ

( إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ )

[Surat Al-Anbiya' 71]

অর্থাৎ, ‘সে দেশের দিকে যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখে দিয়েছি।’ উবাই ইবন কা’ব আল আলিয়া, কাতাদা প্রমুখ এই মত পোষণ করেন। কিন্তু আওফীর সূত্রে ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণিত। উপরোক্ত আয়াতে যে দেশের কথা বলা হয়েছে, সে দেশ হল মক্কা এবং সমর্থনে তিনি নিম্নের আয়াত উল্লেখ করেনঃ

( إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ )

[Surat Aal-E-Imran 96]

অর্থাৎ, নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে স্থাপিত হয়েছে সেটাই হচ্ছে এ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের জন্যে হিদায়াত ও বরকতময়। (সূরা আল-ইমরানঃ ৯৬)

কা’ব আহবার (রা)-এর মতে, সে দেশটি ছিল হারান। ইতিপূর্বে আমরা আহলি কিতাবদের বরাত দিয়ে বলে এসেছি যে, হযরত ইবরাহীম (আ), তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র লূত (আ), ভাই নাহুর স্ত্রী সারাহ্ ও ভাইয়ের স্ত্রী মালিকাসহ বাবিল থেকে রওয়ানা হন এবং হারানে পৌঁছে সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ইবরাহীম (আ)-এর পিতা তারাখ-এর মৃত্যু হয়।

সুদ্দী (র) লিখেছেন, ইবরাহীম (আ) ও লুত (আ) সিরিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন। পথে সারাহর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সারাহ ছিলেন হারানের রাজকুমারী। তিনি তার সম্প্রদায়ের ধর্মকে কটাক্ষ করতেন। ইবরাহীম (আ) তাঁকে এই শর্তে বিবাহ করেন যে, তাঁকে ত্যাগ করবেন না। ইবন জারীর (র) এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন কিন্তু ঐতিহাসিকদের আর কেউ এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন নি। প্রসিদ্ধ মতে, সারাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর চাচা হারান-এর কন্যা। যার নামে হারান রাজ্যের পরিচিতি। সুহায়লী (র) কুতায়বী ও নাফফাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, সারাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সহোদর হারানের কন্যা লূত-এর ভগ্নি। এ মত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। এ মত পোষণকারীরা দাবি করেছেন যে, ঐ সময় ভাতিজী বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু এ দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। যদি ধরেও নেয়া হয় যে, কোন এক সময়ে ভাতিজী বিবাহ করা বৈধ ছিল। যেমন ইহুদী পণ্ডিতরা বলে থাকেন তবুও এটা সম্ভব নয়। কেননা, নিরুপায় অবস্থায় কোন কিছু বৈধ হলেও তার সুযোগ গ্রহণ নবী-রাসূলগণের উন্নত চরিত্রের মর্যাদার পক্ষে শোভনীয় নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

প্রসিদ্ধ মত হল, হযরত ইবরাহীম (আ) যখন বাবিল থেকে হিজরত করেন, তখন সারাহকে সাথে নিয়েই বের হয়েছিলেন যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত। আহলি কিতাবদের বর্ণনা মতে, হযরত ইবরাহীম (আ) যখন সিরিয়ায় যান তখন আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে জানান, তোমার পরে এই দেশটি আমি তোমার উত্তরসুরিদের আয়ত্তে দেব। এই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরূপ তিনি তথায় কুরবানীর একটি কেন্দ্র নির্মাণ করেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের পূর্ব প্রান্তে তিনি নিজের থাকার জন্যে একটি গম্বুজ বিশিষ্ট প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করেন। অতঃপর তিনি জীবিকার অন্বেষণে বের হন। এ সময় বায়তুল মুকাদ্দাস অঞ্চলে ছিল প্রচণ্ড আকাল ও দুর্ভিক্ষ, তাই সবাইকে নিয়ে তিনি মিসরে চলে যান। এই সাথে আহলি কিতাবরা সারাহ্ এবং তথাকার রাজার ঘটনা, সারাহকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতে শিখিয়ে দেয়া, রাজা কর্তৃক সারাহ্ (র)-এর খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান; অতঃপর সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা এবং বরকতময় বায়তুল মুকাদ্দাস অঞ্চলে বহু জীব-জন্তু, দাস-দাসী ও ধন-সম্পদসহ প্রত্যাগমন করার কথা উল্লেখ করেছেন।

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন; হযরত ইবরাহীম (আ) তিনবার অসত্য উক্তি করেছিলেন। এর দুটি আল্লাহ সংক্রান্ত (১) তিনি বলেছিলেনঃ

اني سقيم

—আমি পীড়িত; (২) আর একবার বলেছিলেনঃ

( بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَاَ )

[Surat Al-Anbiya' 63]

অর্থ এই বড় মূর্তিটিই এ কর্মটি করেছে। এবং তৃতীয় উক্তিটি করেছিলেন নিজের ব্যাপারে। ঘটনা এই; হযরত ইবরাহীম (আ) স্ত্রী সারাহসহ কোন এক জালিম বাদশাহর এলাকা অতিক্রম করছিলেন। বাদশাহর নিকট সংবাদ গেল যে, এই এলাকায় একজন লোক আছে যার সাথে রয়েছে এক পরমা সুন্দরী নারী। জালিম বাদশাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট লোক পাঠান। আগন্তুক এসে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে সারাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, ইনি কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমার বোন। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ) সারাহ্ কাছে এসে বলেন, দেখ সারাহ্! এই ধরাপৃষ্ঠে আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কোন মুমিন নেই। এই আগন্তুক তোমার সাথে আমার সম্পর্কের কথা জানতে চেয়েছে। আমি তাকে এই কথা বলে দিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। এখন আমাকে তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না। এরপর ঐ জালিম বাদশাহ সারাহকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে লোক পাঠান।

সারাহ বাদশাহর দরবারে নীত হলে, বাদশাহ তাঁর প্রতি হাত বাড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে সে খোদার গযবে পতিত হয়। বাদশাহ বলল, সারাহ্ আমার জন্যে দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করব না। সারাহ্ দু’আ করলেন। ফলে বাদশাহ ছাড়া পায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার সে সারাহ্ প্রতি হাত বাড়ায়। এবারও সে পূর্বের ন্যায় কিংবা তদপেক্ষা কঠিনভাবে তাঁর প্রতি শাস্তি নেমে আসে। পুনর্বার বাদশাহ বলল, আমার জন্যে দু’আ কর। আমি তোমার কোন অনিষ্ট করব না। সারাহ্ দু’আ করলে সে পুনরায় রক্ষা পায়। তখন বাদশাহ্ তার একান্ত সচিবকে ডেকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানবী আননি, এনেছ এক দানবী। পরে বাদশাহ সারাহর খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান করল। সারাহ্ ইবরাহীম (আ)-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে সালাত আদায়রত দেখতে পান। হযরত ইবরাহীম (আ) সালাতে থেকেই হাতের ইশারা দ্বারা ঘটনা জানতে চাইলেন। সারা বললেন, আল্লাহ অনাচারী কাফিরের চক্রান্ত নস্যাত করে দিয়েছেন এবং ঐ জালিম আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দিয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, হে বেদুঈন আরব সন্তানগণ! এই হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা। ইমাম বুখারী (র) এই একক সূত্রে হাদীসটি মওকুফ রূপে বর্ণনা করেছেন। হাফিজ আবু বকর আল বাযযার (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ হযরত ইবরাহীম (আ) মাত্র তিনবার ব্যতীত কখনও অসত্য উক্তি করেন নি। ঐ তিনটি উক্তিই ছিল আল্লাহ সংক্রান্ত। (১) নিজেকে

اني سقيم

(আমি পীড়িত বলা;) (২)

( بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمَْ )

[Surat Al-Anbiya' 63]

(এদের এ বড়টাই এ কাজ করেছে বলা;) (৩) হযরত ইবরাহীম কোন এক জালিম রাজার এলাকা দিয়ে সফর করার সময় কোন এক মঞ্জিলে অবতরণ করেন। জালিম রাজা তথায় আগমন করে। তাকে জানানো হয় যে, এখানে একজন লোক এসেছে যার সাথে এক পরমা সুন্দরী রমণী আছে। রাজা তখনই ইবরাহীম (আ)-এর নিকট লোক প্রেরণ করে। সে এসে মহিলাটি সম্পর্কে ইবরাহীম (আ)-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, সে আমার বোন। এরপর ইবরাহীম (আ) তাঁর স্ত্রীর কাছে আসেন এবং বলেন, একটি লোক তোমার সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছে। আমি তোমাকে আমার বোন বলে পরিচয় দিয়েছি। এখন আমি আর তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম নেই। এ হিসেবে তুমি আমার বোনও বটে। সুতরাং রাজার কাছে আমাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না যেন। রাজা তার দিকে হাত বাড়াতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আযাব এসে তাকে পাকড়াও করে। রাজা বলল, তুমি আল্লাহর কাছে দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তিনি দু’আ করেন। ফলে সে মুক্ত হয়। কিন্তু পরক্ষণে আবার তাকে ধরার জন্যে হাত বাড়ায়। এবারও আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্বের ন্যায় কিংবা তদপেক্ষা শক্তভাবে পাকড়াও হয়। রাজা পুনরায় বলল, আমার জন্যে আল্লাহর নিকট দু’আ কর, তোমার কোন ক্ষতি আমি করব না। সুতরাং দু’আ করায় সে মুক্তি পেয়ে যায়। এরূপ তিনবার ঘটে। অতঃপর রাজা তার সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ অনুচরকে ডেকে বললো, তুমি তো কোন মানবী আননি; এনেছ এক দানবী। একে বের করে দাও এবং হাজেরাকেও সাথে দিয়ে দাও। বিবি সারাহ্ ফিরে আসলেন। ইবরাহীম (আ) তখন সালাতে রত ছিলেন। সারাহর শব্দ পেয়েই তিনি তাঁর দিকে ফিরে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি? সারাহ্ বললেন, আল্লাহ জালিমের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আর সে আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান করেছে।’ বাযযার (র) বলেছেন, মুহম্মদ (র)-এর সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে হিশাম ব্যতীত কেউ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। অন্যরা একে ‘মওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ) তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা কথা বলেননি। (১) কাফিররা যখন তাদের মেলায় যাওয়ার জন্যে আহবান জানায়, তখন তিনি বলেছিলেন,

اني سقيم

(আমি পীড়িত) (২) তিনি মূর্তি ভেঙ্গে বলেছিলেন,

( بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَاَ )

[Surat Al-Anbiya' 63]

(এদের মধ্যে এই বড়টিই এ কাজ করেছে); (৩) নিজের স্ত্রী সারাহ্ পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেনঃ

انها اختى

(এ আমার বোন)। বর্ণনাকারী বলেনঃ হযরত ইবরাহীম (আ) একবার কোন এক জনপদে প্রবেশ করেন। সেখানে ছিল এক জালিম রাজা। তাকে জানানো হল যে, এ রাত্রে ইবরাহীম এক পরমা সুন্দরী নারীসহ এখানে এসেছে। রাজা তার কাছে দূত পাঠাল। দূত হযরত ইবরাহীম (আ)-কে জিজ্ঞেস করল। আপনার সাথী এ রমণীটি কে? ইবরাহীম (আ) বললেন, আমার বোন। দূত বলল, একে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিন। হযরত ইবরাহীম (আ) পাঠিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, আমার উক্তিকে তুমি মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না যেন। কারণ রাজাকে আমি জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন হও। মনে কর যে, এ পৃথিবীর বুকে আমি এবং তুমি ছাড়া আর কোন মু’মিন নেই। সারাহ রাজার দরবারে পৌঁছলে সে সারাহর দিকে অগ্রসর হল। সারাহ্ তখন অযূ করে সালাত আদায় করতে উদ্যত হলেন এবং নিম্নের দু’আটি পড়লেনঃ

اللهم ان كنت تعلم اني آمنت بك وبرسولك واحصنت فرجی الا على

زوجي فلا تسلط على الكافر .

অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি আপনার উপর ও আপনার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি। আমার স্বামী ব্যতীত অন্য সবার থেকে আমার লজ্জাস্থানকে হিফাজত করেছি। অতএব, কোন কাফিরকে আমার উপর হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না।

জালিম রাজাকে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনভাবে টুটি চেপে ধরা হলো যে, পায়ের সাথে পা ঘর্ষণ করে ছটফট করতে লাগলো। আবূয যিনাদ (র) আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে বলেন, সারাহ্ তখন পুনরায় দু’আ করেন, হে আল্লাহ! লোকটি এভাবে মারা গেলে লোকে বলবে আমিই তাকে হত্যা করেছি। অতএব, রাজা শাস্তি থেকে মুক্তিলাভ করল। কিন্তু পুনরায় রাজা তার দিকে অগ্রসর হলো। সারাহও পূর্বের ন্যায় অযু ও সালাত শেষে ঐ দু’আটি পড়লেন। রাজা পুনরায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছটফট করতে থাকে। এ দেখে সারাহ্ বললেন, “হে আল্লাহ! এ যদি মারা যায় তবে লোকে বলবে ঐ মহিলাটিই তাকে হত্যা করেছে।” অতঃপর সে মুক্তি লাভ করে। এ ভাবে তৃতীয় বা চতুর্থ বারের পর জালিম রাজা তার লোকদেরকে ডেকে বলল, তোমরা আমার কাছে তো একটা দানবী পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও আর হাজেরাকেও এর সাথে দিয়ে দাও। বিবি সারাহ্ ফিরে এসে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে জানালেন, আপনি কি জানতে পেরেছেন, আল্লাহ কাফিরদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং ঐ জালিম একজন দাসীকেও দান করেছে? কেবল ইমাম আহমদ (র) এই সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, অবশ্য সহীহ সনদের শর্ত অনুযায়ী। ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে মারফু’ভাবে হাদীসটি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছেন। ইবন আবী হাতিম আবু সাঈদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ হযরত ইবরাহীম (আ) যে তিনটি কথা বলেছিলেন তার প্রতিটিই আল্লাহর দীনের গ্রন্থি উম্মোচন করে। তাঁর প্রথম কথাঃ

اني سقيم

(আমি পীড়িত), দ্বিতীয় কথাঃ

( بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَٰذَا )

[Surat Al-Anbiya' 63]

(বরং এদের বড়জনই এ কাজ করেছে), তৃতীয় কথাঃ যখন রাজা তার স্ত্রীকে কামনা করেছিল তখন বলেছিলেন, এ (সে আমার বোন) অর্থাৎ আল্লাহর দীনের সম্পর্কে বোন। হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন—“এ জগতে আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কোন মু’মিন নেই।” তাঁর এ কথার অর্থ হল, আমরা ব্যতীত আর কোন মু’মিন দম্পতি নেই। এ ব্যাখ্যা এ জন্যে প্রয়োজন, যেহেতু হযরত লূত (আ)-ও তখন তাদের সফরসঙ্গী ছিলেন আর তিনি ছিলেন একজন নবী। বিবি সারাহ যখন জালিম বাদশাহর নিকট যাওয়ার জন্যে রওয়ানা হন, তখন থেকেই হযরত ইবরাহীম (আ) সালাত আদায়ে রত থাকেন এবং দু’আ করতে থাকেন, যেন আল্লাহ তাঁর স্ত্রীকে হিফাজত করেন এবং জালিমের কুমতলব ব্যর্থ করে দেন। বিবি সারাহও অনুরূপ আমল করেন। আল্লাহর দুশমন তাকে ধরতে গেলে তিনি অযূ করে সালাত আদায়ান্তে দু’আ করেন। আল্লাহ বলেনঃ

( وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ )

[Surat Al-Baqarah 45]

অর্থাৎ, তোমরা ধৈর্য ও সালাত দ্বারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। (২ বাকারাঃ ৪৫)। এভাবে আল্লাহ তাঁর খলীল, হাবীব, রাসূল ও বান্দার খাতিরে তাঁর স্ত্রীর সম্ভ্রম রক্ষা করলেন।

কোন কোন বিজ্ঞ আলিমের মতে, তিনজন মহিলা নবী ছিলেন (১) সারাহ (২) হযরত মূসা (আ)-এর মা, (৩) মারয়াম। কিন্তু অধিকাংশের মতে, তারা তিনজন সিদ্দীকা (সত্যপরায়ণা) (আল্লাহ্ তাদের প্রতি প্রসন্ন হোন) ছিলেন। আমি কোন কোন বর্ণনায় দেখেছি বিবি সারাহ্ যখন ইবরাহীম (আ)-এর নিকট থেকে জালিম বাদশাহর কাছে যান, তখন থেকে তাঁর ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহ ইবরাহীম (আ) ও সারাহর মধ্যকার পর্দা উঠিয়ে নেন। ফলে রাজার কাছে তাঁর থাকাকালীন যা যা ঘটছিল সবই তিনি প্রত্যক্ষ করছিলেন। আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ইবরাহীম (আ)-এর হৃদয় পবিত্র থাকে, চক্ষু শীতল থাকে এবং তিনি অন্তরে প্রশান্তি বোধ করেন। কেননা, হযরত ইবরাহীম (আ) সারাহকে তার দীনের জন্যে, আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্যে ও অনুপম সৌন্দর্যের জন্যে তাকে প্রগাঢ় মহব্বত করতেন। কেউ কেউ বলেছেন, বিবি হাওয়ার পর থেকে সারাহ্ যুগ পর্যন্ত তার চাইতে অধিক সুন্দরী কোন নারীর জন্ম হয়নি। সকল প্রশংসা আল্লাহরই।

কোন কোন ইতিহাসবিদ লিখেছেন, এই সময়ে মিসরের ফিরআউন ছিল বিখ্যাত জালিম বাদশাহ জাহহাকের ভাই। সে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে মিসরের শাসনকর্তা ছিল। তার নাম কেউ বলেন সিনান ইবন আলওয়ান ইবন উবায়দ ইবন উওয়ায়জ ইবন আমলাক ইবন লাওদ ইব্‌ন সাম ইবন নূহ। ইবন হিশাম ‘তীজান’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, যে রাজা সারাহর উপর লোভ করেছিল তার নাম আমর ইবন ইমরুল কায়স ইবন মাইন ইবন সাবা। সে মিসরের শাসনকর্তা ছিল। সুহায়লী (র) এ তথ্য বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।

অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ) মিসর থেকে তার পূর্ববর্তী বাসস্থান বরকতের দেশ তথা বায়তুল মুকাদ্দাসে যান। তাঁর সাথে বহু পশু সম্পদ, গোলাম, বাদী ও ধন-সম্পদ ছিল। মিসরের কিবতী বংশোদ্ভূত হাজেরাও সাথে ছিলেন। এই সময় হযরত লূত (আ) তার ধন-সম্পদসহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর আদেশক্রমে গাওর দেশে চলে যান। ‘গাওরে-যাগার’ নামে এ স্থানটি প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি সে অঞ্চলে ঐ যুগের প্রসিদ্ধ শহর সাদ্দূমে অবতরণ করেন। শহরের বাসিন্দারা ছিল কাফির, পাপাসক্ত ও দুষ্কৃতকারী। আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে দৃষ্টি প্রসারিত করে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে তাকাতে বলেন এবং সু-সংবাদ দেন যে, এই সমুদয় স্থান তোমাকে ও তোমার উত্তরসুরিদেরকে চিরদিনের জন্য দান করব। তোমার সন্তানদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি করে দেব যে, তাদের সংখ্যা পৃথিবীর বালুকণার সংখ্যার সমান হয়ে যাবে। এই সুসংবাদ পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত হয়, বিশেষ করে এই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ক্ষেত্রে।

একটি হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ আমার সম্মুখে পৃথিবীর এক অংশকে ঝুঁকিয়ে দেন। আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত দেখে নিলাম। অচিরেই আমার উম্মতের রাজত্ব এই দেখান সীমানা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, কিছুদিন পর ঐ দুরাচার লোকেরা হযরত লূত (আ)-এর উপর চড়াও হয় এবং তার পশু ও ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাকে বন্দী করে রাখে। এ সংবাদ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি তিনশ’ আঠারজন সৈন্য নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করেন এবং লূত (আ)-কে উদ্ধার করেন, তাঁর সম্পদ ফিরিয়ে আনেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপুল সংখ্যক শত্রুকে হত্যা করেন। শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করেন ও তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে তিনি দামেশকের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছেন। শহরের উপকণ্ঠে বারযাহ্ নামক স্থানে সেনা ছাউনি স্থাপন করেন। আমার ধারণা– এই স্থানকে “মাকামে ইবরাহীম” বলার কারণ এটাই যে, এখানে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর সৈন্য বাহিনীর শিবির ছিল।

তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর সাহায্যপুষ্ট অবস্থায় বিজয়ীর বেশে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের শহরসমূহের শাসকবর্গ শ্রদ্ধাভরে ও বিনীতভাবে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন