মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
এ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাটি যখন ঘটে গেল— কিবতীরা যখন এই তুমুল প্রতিযোগিতায় পরাজয়বরণ করল; জাদুকরগণ মূসা (আ)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন ও নিজেদের প্রতিপালকের সাহায্যপ্রার্থী হলেন; তখন কিবতীদের কুফরী, হঠকারিতা ও সত্য বিমুখতাই কেবল বৃদ্ধি পেল।
আল্লাহ তা’আলা সূরায়ে আ’রাফে তাদের কথা বর্ণনা করে ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ—-ফিরআউনের সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলল, “আপনি কি মূসাকে ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাগণকে বর্জন করতে দেবেন?’ সে বলল, ‘আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব; আর আমরা তো তাদের উপর প্রবল।’ মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বলল, ‘আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। যমীন তো আল্লাহরই; তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছে এটার উত্তরাধিকারী করেন এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।’ তারা বলল, ‘আমাদের নিকট তোমার আসার পূর্বে আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং তোমার আসার পরেও।‘ সে বলল, ‘শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রু ধ্বংস করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে যমীনে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারপর তোমরা কি কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন।’ (সূরা আরাফঃ ১২৭-১২৯)।
এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের সম্প্রদায় সম্পর্কে জানাচ্ছেন যে, তারা ছিল ফিরআউনের পারিষদবর্গ ও গোত্রপ্রধান। তারা তাদের বাদশাহ ফিরআউনকে আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর প্রতি অত্যাচার, অবিচার ও জুলুম করার এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে প্ররোচিত করেছিল। তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করার পরিবর্তে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান, নির্যাতন এবং অগ্রাহ্য করছিল।
অর্থাৎ, আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাগণকে বর্জন করতে দেবেন?’ (আ’রাফঃ ১২৭) একক লা-শরীক আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের প্রতি আহ্বান করা এবং আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত থেকে নিষেধ করাকে তারা বিপর্যয় সৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করেছে। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘আয়াতাংশের অর্থ হচ্ছে, আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে ও আপনার ইবাদতকে বর্জন করতে দেবেন?’ দু’টি অর্থেরই এখানে সম্ভাবনা রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, সে আপনার ধর্মকে বর্জন করে চলে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সে আপনার ইবাদত বর্জন করে। শেষোক্ত সম্ভাবনাটির কথা এজন্যই বলা হয়ে থাকে যে, তারা তাকে উপাস্য বলেও ধারণা করত। তার প্রতি আল্লাহর লানত।
সে (ফিরআউন) বলল, ‘আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব এবং নারীদেরকে জীবিত রাখব’ অর্থাৎ যাতে তাদের মধ্যে যোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে না পারে। আমরা তাদের উপর সর্বদা প্রভাবশালী থাকব।‘ অর্থাৎ বিজয়ীরূপে থাকব। তখন মূসা (আ) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্যধারণ কর।‘ অর্থাৎ যখন তারা তোমাদেরকে দুঃখ-কষ্ট দিতে উদ্যত, তখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্যের প্রার্থনা কর এবং তোমাদের দুঃখ-কষ্টে তোমরা ধৈর্যধারণ কর। জেনে রেখো, এই পৃথিবীর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা’আলা, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে যাকে চান এই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করেন। তবে শেষ শুভ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্যেই। সুতরাং তোমরা মুত্তাকী হতে সচেষ্ট হও যাতে তোমাদের পরিণাম শুভ হয়।
অর্থাৎ, মূসা (আ) বলেছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহতে ঈমান এনে থাক, যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও তবে তোমরা তাঁরই উপর নির্ভর কর।’ তারপর তারা বলল, ‘আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করো না এবং আমাদেরকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হতে রক্ষা কর!’ (সূরা ইউনুসঃ ৮৪-৮৬)
আয়াতাংশ ( قَالُوۤا۟ أُوذِینَا مِن قَبۡلِ أَن تَأۡتِیَنَا وَمِنۢ بَعۡدِ مَا جِئۡتَنَاۚ ) -এর অর্থ হচ্ছে, হে মূসা! তোমার আগমনের পূর্বে আমাদের পুত্র-সন্তানদের হত্যা করা হতো এবং তোমার আগমনের পরেও আমাদের পুত্র-সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। মূসা (আ) তাদেরকে বললেন, ‘অতি শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে যমীনে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।’
অর্থাৎ—আমি আমার নিদর্শন ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসা (আ)-কে প্রেরণ করেছিলাম ফিরআউন, হামান ও কারুণের নিকট কিন্তু তারা বলেছিল, এতো এক জাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী।‘ (সূরা মুমিনঃ ২৩-২৪)
ফিরআউন ছিল রাজা, হামান ছিল তার মন্ত্রী এবং কারুণ ছিল মূসা (আ)-এর সম্প্রদায়ের একজন ইহুদী কিন্তু সে ছিল ফিরআউন ও তার অমাত্যদের ধর্মের অনুসারী, সে ছিল প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক। তার ঘটনা পরে সবিস্তারে বর্ণনা করা হবে।
অর্থাৎ—অতঃপর মূসা আমার নিকট থেকে সত্য নিয়ে তাদের নিকট উপস্থিত হলে তারা বলল, মূসার সাথে যারা ঈমান আনয়ন করেছে, তাদের পুত্রদের হত্যা কর এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ। কিন্তু কাফিরদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই। (সূরা মুমিনঃ ২৫)
মূসা (আ)-এর নবুওত প্রাপ্তির পর পুরুষদের হত্যার উদ্দেশ্য ছিল, বনী ইসরাঈলকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা এবং তাদের কর্মক্ষমদের সংখ্যা হ্রাস করা যাতে তাদের শান-শওকত লোপ পেয়ে যায় এবং তাদের কোন প্রতিপত্তিই অবশিষ্ট না থাকে। আর তারা যেন কিবতীদের বিরুদ্ধে কোন সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে এবং কিবতীদেরকে তারা প্রতিহত না করতে পারে। অন্যদিকে কিবতীরা অবশ্য তাদেরকে যমের মত ভয় করত। তবে এতে তাদের কোন লাভ হয়নি এবং তাদের ভাগ্যলিপি যা আল্লাহ তা’আলার মহাহুকুম كن এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে তা তারা রদ করতে পারেনি।
অর্থাৎ—“আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হউক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দীনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।” (সূরা মুমিনঃ ২৬)
এ জন্যই জনগণ ঠাট্টার ছলে বলত, ‘ফিরআউন নির্দেশদাতা হয়ে গেছে।‘ কেননা ফিরআউন তার ধারণায় জনগণকে ভয় দেখাত যেন মূসা (আ) তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে। আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ—মূসা বলল, যারা বিচার দিবসে বিশ্বাস করে না, সেই সকল উদ্ধত ব্যক্তি থেকে আমি আমার ও তোমাদের প্রতিপালকের শরণাপন্ন হয়েছি। (সূরা মুমিনঃ ২৭)
অর্থাৎ আমি আল্লাহ তা’আলার শাহী দরবারের শরণাপন্ন হচ্ছি যাতে ফিরআউন ও অন্যরা আমার প্রতি অনিষ্টের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করতে না পারে, তারা এতই উদ্ধত যে, তারা আমার প্রতি কোনরূপ ভ্রুক্ষেপই করে না এবং আল্লাহ তা’আলার আযাব ও গযবকে ভয় করে না; কেননা তারা আখিরাতে ও হিসাব-নিকাশে বিশ্বাস রাখে না।
অর্থাৎ——ফিরআউন বংশের এক ব্যক্তি যে মু’মিন ছিল এবং নিজ ঈমান গোপন রাখত; বললেন, তোমরা কি এক ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে, ‘আমার প্রতিপালক আল্লাহ, অথচ সে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছে? সে মিথ্যাবাদী হলে তার মিথ্যাবাদিতার জন্যে সে দায়ী হবে আর যদি সে সত্যবাদী হয়, সে তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলে, তার কিছু তো তোমাদের উপর আপতিত হবেই। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। হে আমার সম্প্রদায়! আজ কর্তৃত্ব তোমাদের দেশে তোমরাই প্রবল; কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে?’ ফিরআউন বলল, “আমি যা বুঝি আমি তোমাদের তাই বলছি। আমি তোমাদের কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি।‘ (সূরা মুমিন ২৮-২৯)
উপরোক্ত ব্যক্তিটি ফিরআউনের চাচাতো ভাই ছিল। সে তার সম্প্রদায়ের কাছে ঈমান গোপন রাখত। কেননা, সে তাদের তরফ থেকে তার জীবন নাশের ভয় করত। কেউ কেউ বলেন, এ লোকটি ছিল ইসরাঈলী। এই অভিমতটি শুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ এবং পূর্বাপরের সাথে শব্দ ও অর্থের দিক দিয়ে তার কোন মিল নেই। আল্লাহ তা’আলাই অধিক জ্ঞাত।
ইবন জুরায়জ (র) ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেন, এই লোকটি এবং যে লোকটি শহরের শেষ প্রান্ত থেকে এসেছিলেন তিনি এবং ফিরআউনের স্ত্রী ব্যতীত কিবতীদের মধ্যকার অন্য কেউ মূসা (আ)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করেনি। বর্ণনাটি ইবন হাতিমের। দারাকুতনী (র) বলেছেন, শাম আন নামে ফিরআউন বংশের উক্ত মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো কথা জানা যায় না। সুহাইলী এরূপ বর্ণনা করেছেন। তাবারানী (র) তার ইতিহাস গ্রন্থে তার নাম খাইর বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলাই অধিকতর জ্ঞাত। মূলত এই ব্যক্তিটি তার ঈমান গোপন রেখেছিলেন। যখন ফিরআউন মূসা (আ)-কে হত্যা করার ইচ্ছে করল এবং এই ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প হল, তখন সে তার আমীরদের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করল। মুমিন বান্দাটি মূসা (আ)-এর ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। তাই তিনি ফিরআউনকে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভয়ভীতিপূর্ণ কথাবার্তা দ্বারা সুকৌশলে এ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করলেন। তিনি তাকে সৎপরামর্শ স্বরূপ এবং যাতে সেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এ জন্য তার সাথে কথা বললেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেছেনঃ
افضل الجهاد كلمة عدل عند سلطان جائر .
অর্থাৎ—‘অত্যাচারী শাসকের সম্মুখে ন্যায় কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।‘ আর এখানে এটার মর্যাদা আরো অধিক। কেননা, ফিরআউন ছিল সর্বাধিক অত্যাচারী। আর মুমিন বান্দার বক্তব্য ছিল অত্যধিক ন্যায়ভিত্তিক। কেননা, এর উদ্দেশ্য ছিল নবীকে নিরাপদ রাখা। আবার এটাও সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি তাদের কাছে নিজের গোপন ঈমানকে প্রকাশ করতেই চেয়েছিলেন। তবে প্রথম সম্ভাবনাই অধিকতর স্পষ্ট। আল্লাহ তাআলাই সম্যক জ্ঞাত। তিনি বললেন, “হে ফিরআউন! আপনি কি এমন একটি লোককে হত্যা করতে যাচ্ছেন যে বলে যে, তার প্রতিপালক আল্লাহ তাআলা! এ ধরনের কথা বা দাবির প্রতিশোধ অবজ্ঞা ও লাঞ্ছনা-গঞ্জনা হয় না। এ ধরনের কথা যারা বলেন বা স্বীকার করেন তাদের সম্মান ও ইজ্জত করতে হয়; তাদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করতে হয়। তাদের কোন কাজের প্রতিশোধ নিতে হয় না। কেননা, তিনি আপনাদের কাছে আপন প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শন তথা মুজিযা নিয়ে এসেছেন; যা তার সত্যতা প্রমাণ করে। কাজেই যদি আপনারা তাকে তার কাজ চালিয়ে যেতে দেন তাহলে আপনারা নিরাপদ থাকবেন। কেননা, যদি তিনি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকেন, তাহলে এই মিথ্যার দায়দায়িত্ব তার উপরেই বর্তাবে; এতে আপনাদের কোন ক্ষতি হবার আশংকা একেবারেই নেই। আর যদি তিনি সত্যবাদী হয়ে থাকেন (আর আসলেও তাই) এবং আপনারা তাঁর বিরোধিতা করেন, তাহলে আপনাদের উপর ঐসব মুসীবতের কিয়দংশ অবতীর্ণ হবে যেগুলো আপনাদের উপর অবতীর্ণ হবে বলে তিনি সতর্ক করছেন। আপনারা ঐসব আযাবের কিয়দংশ অবতীর্ণ হওয়ার আশংকায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। আর যদি ঐসব শাস্তির সবগুলো অবতীর্ণ হয় তাহলে আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে? সেই অবস্থায় ফিরআউনের প্রতি মুমিন বান্দার এরূপ উপদেশ প্রদান তার উচ্চমার্গের বুদ্ধিমত্তা, কর্মকুশলতা ও সতর্কতার পরিচায়ক।
অতঃপর তাঁর উক্তিঃ یَـٰقَوۡمِ لَكُمُ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡیَوۡمَ ظَـٰهِرِینَ فِی ٱلۡأَرۡضِ দ্বারা তিনি তার সম্প্রদায়ের লোকজনদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তাদের এই প্রাণপ্রিয় রাজ্য শীঘ্রই হরণ করে নেয়া হবে। কেননা, যে কোন বাদশাহ বা রাজা যদি ধর্মের বিরোধিতা করে তাহলে তাদের রাজ্য হরণ করে নেয়া হয় এবং তাদেরকে সম্মান প্রদানের পর লাঞ্ছিত করা হয় যা ফিরআউনের সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ঘটেছে।
অতঃপর মূসা (আ) যা কিছু নিয়ে এসেছিলেন এ সম্পর্কে ফিরআউনের অনুসারীরা সন্দেহ পোষণ, বিরোধিতা ও বৈরীভাব পোষণ করায় তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা তাদের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পদ, বিত্তবৈভব, রাজত্ব ও সৌভাগ্য থেকে বহিষ্কার করলেন এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে তাদেরকে সাগরের দিকে ঠেলে দেয়া হলো; আর তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দানের পর তাদের কর্মফলের দরুন তাদের রূহসমূহকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতম পর্যায়ে অধঃপতিত করা হয়। এ জন্যই প্রাজ্ঞ, আপন সম্প্রদায়ের পরম শুভাকাক্ষী সত্যের অনুসারী, সত্যবাদী, পুণ্যবান ও হিদায়াত প্রাপ্ত মুমিন বান্দাটি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আজ কর্তৃত্ব তোমাদের, জনগণের মধ্যে তোমরা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন এবং তাদের উপর তোমরা শাসন চালিয়ে যাচ্ছ, তোমরা সংখ্যায়, সামর্থ্যে, শক্তিতে ও দৃঢ়তায় যদি বর্তমানের চেয়ে অধিক গুণে প্রতিপত্তি অর্জন করতে পার তাহলেও এটা আমাদের কোন উপকারে আসবে না এবং আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ তাআলার আযাবকে আমাদের থেকে প্রতিহত করতে পারবে না।‘ জবাবে ফিরআউন বলল, ‘আমি যা বুঝি, আমি তাই তোমাদের বলছি; আমি তোমাদের কেবল সৎপথই প্রদর্শন করে থাকি।’ উপরোক্ত দুটি বাক্যেই ফিরআউন ছিল মিথ্যাবাদী। কেননা, অন্তরের অন্তস্থল থেকে সে উপলব্ধি করত যে, মূসা (আ)-এর আনীত বিষয়াদি নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তাআলার তরফ থেকেই। তবে সে হঠকারিতা, শত্রুতা, সীমালংঘন ও কুফরীর কারণে মুখে এর বিপরীত প্রকাশ করত।
আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-এর উক্তির বিবরণ দিয়ে ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ-“তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এ সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ। হে ফিরআউন! আমি তো দেখছি তোমার ধ্বংস আসন্ন। তারপর ফিরআউন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল, তখন আমি ফিরআউন ও তার সঙ্গীদের সকলকে ডুবিয়ে দিলাম। এরপর আমি বনী ইসরাঈলকে বললাম, তোমরা যমীনে বসবাস কর এবং যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্র করে উপস্থিত করব।” (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ১০২-১০৪)
অর্থাৎ, তারপর যখন তাদের নিকট আমার স্পষ্ট নিদর্শন আসল তারা বলল, ‘এটা স্পষ্ট জাদু।’ তারা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। দেখ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। (সূরা নামলঃ ১৩-১৪)
আয়াতাংশে বর্ণিত ফিরআউনের উক্তি ( وَمَاۤ أَهۡدِیكُمۡ إِلَّا سَبِیلَ ٱلرَّشَادِ ) অর্থাৎ—“আমি তোমাদেরকে কেবল সৎপথই প্রদর্শন করে থাকি।” এতেও সে মিথ্যা কথা বলেছে। কেননা, সে সঠিক রাস্তায় ছিল না, সে ছিল পথভ্রষ্টতা, নির্বুদ্ধিতা ও সন্ত্রাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। সে প্রথমত নিজে দেবদেবী ও মূর্তিদের পূজা করে। অতঃপর তার মূর্খ ও পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়কে তার অনুকরণ ও অনুসরণ করতে এবং সে যে নিজেকে রব’ বলে দাবি করেছিল এ ব্যাপারে তাকে সত্য বলে স্বীকার করার জন্যে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে।
অর্থাৎ—ফিরআউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলে ঘোষণা করল, ‘হে আমার সম্প্রদায় মিসর রাজ্য কি আমার নয়? এ নদীগুলো আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা এটা দেখ না? আমি তো শ্রেষ্ঠ এই ব্যক্তি থেকে, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলতেও অক্ষম। মূসাকে কেন দেয়া হল না স্বর্ণবলয় অথবা তার সাথে কেন আসল না ফেরেশতাগণ দলবদ্ধভাবে?’ এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধি করে দিল, ফলে ওরা তার কথা মেনে নিল। ওরা তো ছিল এক সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। যখন ওরা আমাকে ক্রোধান্বিত করল আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম ওদের সকলকে। তৎপর পরবর্তীদের জন্যে আমি ওদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। (৪৩ যুখরুফঃ ৫১-৫৬)
অর্থাৎ—অতঃপর মূসা ওকে (ফিরআউনকে) মহা নিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অবাধ্য হল। তারপর সে পেছন ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। সে সকলকে সমবেত করল এবং উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করল আর বলল, ‘আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।‘ তারপর আল্লাহ তাকে আখিরাতে ও দুনিয়ায় কঠিন শাস্তিতে পাকড়াও করলেন। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এটাতে শিক্ষা রয়েছে। (সূরা নাযিআতঃ ২০-২৬)
অর্থাৎ—আমি তো মূসাকে আমার নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়ে ছিলাম ফিরআউন ও তার প্রধানদের নিকট। কিন্তু তারা ফিরআউনের কার্যকলাপের অনুরূপ করত এবং ফিরআউনের কার্যকলাপ ভাল ছিল না। সে কিয়ামতের দিনে তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদেরকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করবে। যেখানে প্রবেশ করানো হবে তা কত নিকৃষ্ট স্থান! এ দুনিয়ায় তাদেরকে করা হয়েছিল অভিশাপগ্রস্ত এবং অভিশাপগ্রস্ত হবে তারা কিয়ামতের দিনেও। কত নিকৃষ্ট সে পুরস্কার—যা ওদেরকে দেওয়া হবে। (সূরা হূদঃ ৯৬-৯৯)
ফিরআউনের উক্তি দুটি যে মিথ্যা তার বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ—ফিরাউন বলল, আমি যা বুঝি, আমি তোমাদের তাই বলছি। আমি তোমাদের কেবল সৎপথই দেখিয়ে থাকি। মুমিন ব্যক্তিটি বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরূপ দুর্দিনের আশংকা করি। যেমন ঘটেছিল নূহ, আদ, ছামূদ ও তাদের পূর্ববর্তীদের ব্যাপারে। আল্লাহ তো বান্দাদের প্রতি কোন জুলুম করতে চান না। হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি আর্তনাদ দিবসের। যেদিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্যে কোন পথপ্রদর্শক নেই। পূর্বেও তোমাদের নিকট ইউসুফ এসেছিল স্পষ্ট নিদর্শনসহ; কিন্তু সে তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছিল তোমরা তাতে বার বার সন্দেহ পোষণ করতে। পরিশেষে যখন ইউসুফের মৃত্যু হল তখন তোমরা বলেছিলে তার পরে আল্লাহ আর কোন রাসূল প্রেরণ করবেন না। এভাবে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন সীমালংঘনকারী ও সংশয়বাদীদেরকে। যারা নিজেদের নিকট কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়, তাদের এই কর্ম আল্লাহ এবং মুমিনদের দৃষ্টিতে অতিশয় ঘৃণার্থ। এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। (সূরা মুমিনঃ ২৯-৩৫)
এমনিভাবে আল্লাহ তাআলার এ ওলী মুমিন বান্দাটি তাদেরকে সতর্ক করে দেন যে, যদি তারা আল্লাহর রাসূল মূসা (আ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাহলে তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলার আযাব ও গযব অবতীর্ণ হবে, যেমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল। তাদের পূর্ববর্তী উম্মত যেমন নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়, আদ, ছামূদ ও তাদের পরবর্তী যুগের উম্মতদের প্রতি আল্লাহ তাআলার গযব অবতীর্ণ হবার বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে দলীলাদির দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ছিল। আরও প্রমাণিত ছিল যে, আম্বিয়ায়ে কিরাম যা কিছু নিয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন তা অস্বীকার করার কারণে তাদের শত্রুদের প্রতি আল্লাহ তা’আলার আযাব ও গযব অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তাঁদের অনুসরণ করার কারণে তাঁদের অনুসারীদেরকে আল্লাহ তাআলা নাজাত দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে কিয়ামত সম্পর্কে সতর্ক করেন। উক্ত আয়াতে কিয়ামতের দিবসকে يوم التناد বা আহ্বানের দিবস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। উক্ত দিবসে যখন লোকজন ছুটাছুটি করতে থাকবে, তখন তারা যদি সমর্থ হয় তবে একে অন্যকে আহ্বান করবে অথচ এরূপ সুযোগ তাদের হয়ে উঠবে না।
অর্থাৎ “হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার, অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা অতিক্রম করতে পারবে না সনদ ব্যতিরেকে। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? তোমাদের প্রতি প্রেরিত হবে অগ্নিশিখা ও ধূম্রপুঞ্জ, তখন তোমরা প্রতিরোধ করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে? (সূরা আর-রহমানঃ ৩৩-৩৬)
আয়াতে উল্লিখিত يوم التناد কে কেউ কেউ দালে তাশদীদ দিয়ে পাঠ করেন তখন তার অর্থ يوم الفرار বা পলায়নের দিন। এটা কিয়ামতের দিনও হতে পারে আবার এটার দ্বারা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আযাব-গযব অবতীর্ণ করার দিনও হতে পারে, যেদিন তারা। মুক্তির জন্যে পলায়ন করতে চাইবে, কিন্তু পবিত্রাণের কোনই উপায় থাকবে না। (সাদঃ ৩)
অর্থাৎ—অতঃপর যখন ওরা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখনই ওরা জনপদ থেকে পলায়ন করতে লাগল। তাদেরকে বলা হয়েছিল পলায়ন কর না এবং ফিরে এস তোমাদের ভোগ সম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। (সূরা আম্বিয়াঃ ১২-১৩)
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে মিসর দেশে ইউসুফ (আ)-এর নবুওত সম্পর্কে সংবাদ দেন। ইউসুফ (আ)-এর নবুওত জনগণের কাছে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্যে একটি নিয়ামত ও আল্লাহর অনুগ্রহ ছিল মূসা (আ) ছিলেন তাঁরই অধঃস্তন বংশধর। তিনি জনগণকে আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ ও ইবাদতের প্রতি আহ্বান করেছিলেন এবং মাখলুকের মধ্য হতে কাউকেও আল্লাহ তা’আলার অংশীদার ধারণা করতে বিরত রাখেন। আল্লাহ তা’আলা ঐ সময়কার মিসরবাসীদের সত্যকে মিথ্যা এবং নবী-রাসূলগণের বিরোধিতা সম্পর্কে সংবাদ দিতে গিয়ে বলেনঃ
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে তাদের কাছে আগত কোন প্রকার দলীল ও প্রমাণ ব্যতীতই তারা আল্লাহ তা’আলার প্রদত্ত খোদায়ী অস্তিত্ব ও একত্ববাদের জন্যে দলীলাদি ও প্রমাণাদি সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করে। আর জনগণ থেকে এ কাজে যারা লিপ্ত হবে তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা চরম অসন্তুষ্ট হন।
অর্থাৎ- এভাবে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক উদ্ধত ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে মোহর মেরে দেন। অত্র আয়াতাংশে উল্লিখিত مُتَكَبِّر ࣲ جَبَّار ࣲ এ শব্দ দুটি বিশেষ্য বিশেষণরূপে বা সম্বন্ধ পদ দু ভাবেই পড়া হয়ে থাকে এবং ঐ দুটির অর্থই এমন যে, একটি অপরটির জন্যে অবশ্যম্ভাবী। যদি কোন সময় জনগণের হৃদয়সমূহ সত্যের বিরোধিতা করে তাহলে তা প্রমাণ ব্যতিরেকেই করে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা এসব হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।
ফিরআউনের ঔদ্ধত্য বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ—“ফিরআউন বলল, হে আমান! আমার জন্য তুমি নির্মাণ কর এক সুউচ্চ প্রাসাদ যাতে আমি পাই অবলম্বন—অবলম্বন আসমানে আরোহণের, যেন দেখতে পাই মূসার ইলাহকে; তবে আমি তো ওকে মিথ্যাবাদীই মনে করি। এভাবেই ফিরআউনের নিকট শোভনীয় করা হয়েছিল তার মন্দ কর্ম এবং তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল সরল পথ থেকে এবং ফিরআউনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে।” (সূরা মুমিনঃ ৩৬-৩৭)
অন্য কথায়, মূসা (আ) দাবি করেছিলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রেরণ করেছেন আর ফিরআউন তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল এবং তার সম্প্রদায়কে সে বলেছিলঃ
“হে পারিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ আছে বলে আমি জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর; হয়ত আমি এটাতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পাব। তবে, আমি অবশ্য মনে করি, সে মিথ্যাবাদী।” (কাসাসঃ ৩৮)।
সূরায়ে মুমিনের ৩৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ফিরআউন বলেছিলঃ ( لَّعَلِّیۤ أَبۡلُغُ ٱلۡأَسۡبَـٰبَ أَسۡبَـٰبَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ تِ ) অর্থাৎ—যাতে আমি পাই অবলম্বন—অবলম্বন আসমানে আরোহণের অর্থাৎ আসমানে আরোহণের রাস্তা।
অর্থাৎ—“হয়ত এটাতে উঠে আমি মূসার ইলাহকে দেখতে পাব। তবে আমি অবশ্য মনে করি সে মিথ্যাবাদী।” শেষোক্ত আয়াতাংশের দুটি সম্ভাব্য অর্থ রয়েছে একটি হল—ফিরআউন বলল, মূসা যে বলেছে ফিরআউন ব্যতীত জগতের জন্যে অন্য কোন প্রতিপালক আছে, এই কথায় আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। দ্বিতীয়টি হল—ফিরআউন বলল, মূসা যে বলেছে তাকে আল্লাহ তাআলা রসূলরূপে প্রেরণ করেছেন এই দাবিতে আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি। প্রথম অর্থটি ফিরআউনের অবস্থার প্রেক্ষিতে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়। কেননা, সে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিল। দ্বিতীয় অর্থটি শব্দগতভাবে সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেননা সে বলেছে অর্থাৎ- আমি মূসার ইলাহর কাছে পৌঁছব এবং তাকে জিজ্ঞাসা করবে তিনি মূসাকে নবীরূপে প্রেরণ করেছেন কিনা।
অধিকন্তু তার কথা وإنى لا ظنه كاذبين এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল লোকজনকে মূসা (আ) থেকে বিরত রাখা—তারা যেন মূসা (আ)-কে বিশ্বাস না করে তাই তাকে মিথ্যাবাদী ধারণা করার জন্য ফিরআউন জনগণকে উৎসাহিত করেছিল।
আবার صد عن السبيل কে صد عن السبيل রূপেও পড়া হয়ে থাকে। আয়াতাংশ وَمَا كَیۡدُ فِرۡعَوۡنَ إِلَّا فِی تَبَاب ࣲ এর তাফসীর প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ও মুজাহিদ (র) বলেনঃ الافي تباب -এর অর্থ হচ্ছে الافي خسار অর্থাৎ সে ব্যর্থ হয়েছে এতে তার কোন উদ্দেশ্যই হাসিল হয়নি। কেননা, মানবজাতির জন্য এটা সম্ভব নয় যে, তাদের শক্তি দ্বারা তারা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে উঠতে পারে, তাহলে তারা কেমন করে উধ্বতর আসমানে কিংবা তারও ঊর্ধ্বের সুউচ্চ আসমানে উঠতে পারবে যার সম্বন্ধে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জ্ঞাত নন। একাধিক তাফসীরকার উল্লেখ করেছেন যে, এই সুউচ্চ প্রাসাদটি ফিরআউনের মন্ত্রী হামান ফিরআউনের জন্যে নির্মাণ করেছিল। এর চাইতে উচ্চতর প্রাসাদ আর দ্বিতীয়টি দেখতে পাওয়া যায়নি। আর এটা ছিল পোড়ানো ইটের তৈরী। এ জন্যেই ফিরআউন হামানকে বলেছিল, “হে হামান! আমার জন্যে তুমি ইট পোড়াও তারপর এর দ্বারা আমার জন্যে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর।“
কিতাবীদের মতে, বনী ইসরাঈলকে ইট বানাবার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তারা ফিরআউনের অনুসারিগণ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের ক্লেশজনক কাজকর্ম আঞ্জাম দিতে বাধ্য হত। তাদেরকে ফিরআউনের জন্য যে সব কাজ করতে বাধ্য করা হত তাতে তাদেরকে কেউ সাহায্য করত না বরং তারা নিজেরাই ফিরআউনের জন্যে মাটি, ভূষি ও পানি সংগ্রহ করত এবং ফিরআউন প্রত্যহ তাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ করিয়ে নিত। তারা যদি তা না করত তাহলে তাদেরকে প্রহার করা হত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা হত এবং তাদেরকে চরম কষ্ট দেয়া হত।
অর্থাৎ—“আমাদের নিকট তোমার আসার পূর্বে আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং তোমার আসার পরেও।’ তিনি বললেন, ‘শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে রাজ্যে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তোমরা কি কর তা তিনি লক্ষ্য করবেন।”
এমনি করে মূসা (আ) তার সম্প্রদায় বনী ইসরাঈলকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, কিবতীদের বিরুদ্ধে পরিণামে তাদেরই জয় হবে। আর কালে এরূপই সংঘটিত হয়েছিল। এটা ছিল নবুওতের সত্যতার একটি প্রমাণ। এখন আমরা আবার মুমিন বান্দার উপদেশ, নসীহত ও যুক্তি-প্রমাণের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি।
“মুমিন ব্যক্তিটি বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করব। হে আমার সম্প্রদায়! এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। কেউ মন্দ কাজ করলে সে কেবল তার কর্মের অনুরূপ শাস্তি পাবে এবং পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎকর্ম করবে তারা দাখিল হবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অপরিমিত জীবনোপকরণ। (সূরা মুমিনঃ ৩৮-৪০)।
অর্থাৎ মুমিন বান্দাটি তাদেরকে সঠিক ও সত্য পথের দিকে আহ্বান করছেন। আর তা হচ্ছে আল্লাহর নবী মূসা (আ)-এর অনুসরণ করা এবং তিনি আপন প্রতিপালকের কাছ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সত্য বলে স্বীকার করা। অতঃপর তিনি তাদেরকে নশ্বর ও নিকৃষ্ট দুনিয়ার মোহ হতে বিরত থাকার উপদেশ দিচ্ছেন যা নিঃসন্দেহে ধ্বংস ও শেষ হয়ে যাবে এবং তিনি তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার কাছে সওয়ার অন্বেষণের জন্যে অনুপ্রাণিত করছেন, যিনি কোন আমলকারীর আমলকে বিনষ্ট করেন না। তিনি এমনই শক্তিশালী যার কাছে প্রতিটি বস্তুর কর্তৃত্ব রয়েছে, যিনি কম আমলের জন্যে বেশি সওয়াব প্রদান করেন, এবং মন্দ কর্মের প্রতিদান তার বেশি প্রদান করেন না। মুমিন বান্দাটি তাদেরকে আরো সংবাদ দিচ্ছেন যে, আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস, যারা আখিরাতের প্রতি অটল ঈমান রেখে সৎকাজ করে যায়, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুউচ্চ ও নিরাপদ প্রাসাদমালা, অসংখ্য কল্যাণ এর চিরস্থায়ী অক্ষয় রিযিক ও ক্রমবর্ধমান কল্যাণসমূহ।
অতঃপর তারা যে মতবাদে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তার অসারতা এবং যেখানে প্রত্যাবর্তন করবে তা সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে তিনি বলেনঃ
অর্থাৎ—“হে আমার সম্প্রদায়! কি আশ্চর্য আমি তোমাদেরকে আহ্বান করছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে ডাকছ আগুনের দিকে। তোমরা আমাকে বলছ আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তার সমকক্ষ দাঁড় করাতে, যার সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই। পক্ষান্তরে আমি তোমাদেরকে আহ্বান করছি পরাক্রমশালী ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে। নিঃসন্দেহে তোমরা আমাকে আহ্বান করছে এমন একজনের দিকে যে দুনিয়া ও আখিরাতের কোথাও আহ্বানযোগ্য নয়। বস্তৃত আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহর নিকট এবং সীমালংঘনকারীরাই জাহান্নামের অধিবাসী। আমি তোমাদেরকে যা বলছি তোমরা তা অচিরেই স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহতে অর্পণ করছি। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন। তারপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন, এবং কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফিরআউন সম্প্রদায়কে। তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে।‘ (সূরা মুমিনঃ ৪১-৪৬)।
অন্য কথায় মুমিন বান্দাটি ফিরআউনের সম্প্রদায়কে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর এমন প্রতিপালকের ইবাদতের প্রতি আহ্বান করছিলেন যিনি কোন বস্তুকে সৃষ্টি করতে হলে বলে থাকেন كن অর্থাৎ ‘হয়ে যাও’ তখন হয়ে যায়। অন্যদিকে তারা তাকে পথভ্রষ্ট মূর্খ ও অভিশপ্ত ফিরআউনের ইবাদতের প্রতি আহ্বান করছিল, এজন্যই তিনি তাদেরকে তাদের অনুসরণ না করার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেনঃ
অতঃপর তিনি তাদের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরলেন যে, তারা আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত এমন দেব-দেবীর ও মূর্তির পূজা-অর্চনা করছে, যারা তাদের কোন প্রকার উপকার বা ক্ষতিসাধন করতে পারে না।
অর্থাৎ দেব-দেবীগুলো এ দুনিয়ায় কোন প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগ বা কর্তৃত্বের অধিকারী নয় বলে প্রমাণিত, তাহলে চিরস্থায়ী আবাসস্থলে তারা কেমন করে এসবের অধিকারী হবে? তবে আল্লাহ্ তা’আলা পরাক্রমশালী, সৃষ্টিকর্তা এবং নেককার ও বদকার সকলের রিযিকদাতা, তিনি বান্দাদের জীবিত করেন, মৃত্যুদান করেন এবং তাদের মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত করবেন। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা নেককার, তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন। এবং অবাধ্যদেরকে জাহান্নামে প্রবিষ্ট করাবেন।
অতঃপর তারা যখন তাদের অবাধ্যতায় অটল থাকে, তখন তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “আমি তোমাদেকে যা বলছি তা অচিরেই তোমরা স্মরণ করবে এবং আমি আমার ব্যাপারে আল্লাহতে অর্পণ করছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সর্বশেষ দৃষ্টি রাখেন।”
অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( فَوَقَىٰهُ ٱللَّهُ سَیِّـَٔاتِ مَا مَكَرُوا )
[Surat Ghafir 45]
অর্থাৎ—মুমিন বান্দাটি ফিরআউন সম্প্রদায়ের অনুসরণকে অস্বীকার করায় তাদের কুফরীর দরুন তাদের উপর আল্লাহ তা’আলা যে কঠিন আযাব-গযব অবতীর্ণ করেন তা থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। আর তারা তার বিরুদ্ধে ও আল্লাহ তাআলার সরল পথ থেকে জনগণকে বিপথে রাখার জন্যে বিভিন্ন মনগড়া ধ্যান-ধারণা প্রচার করে তারা মুমিন বান্দা ও বনী ইসরাঈলের অন্যান্য সদস্যের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল তা থেকে তিনি তাঁকে নিরাপদে রাখলেন। অন্যদিকে তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলার আযাব-গযব বেষ্টন করলো।
আল্লাহ তা’আলা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেনঃ “ফিরআউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল।” কবরে তাদের রূহসমূহকে সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে উপস্থিত করা হয় আর যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে, “ফিরআউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” এই আয়াত্তের মাধ্যমে প্রমাণিত কবর আযাব সম্বন্ধে তাফসীরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই।
মোদ্দা কথা হল, আল্লাহ তাআলা যেমন কোন সম্প্রদায়কে দলীল পূর্ণ করণ ও রাসূল প্রেরণ ব্যতীত ধ্বংস করেন না, তদ্রপ ফিরআউন সম্প্রদায়ের কাছে দলীল-প্রমাণাদি ও রাসূল প্রেরণ করে আল্লাহ তাআলার প্রমাণাদির ব্যাপারে তাদের সন্দেহ নিরসন করে এবং কখনও ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কখনো অনুপ্রেরণা দানের মাধ্যমে তাদের প্রতি রাসূল প্রেরণের পর তারা অমান্য করাতে তিনি তাদেরকে ধ্বংস করেন।
অর্থাৎ, আমি তো ফিরআউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলের ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করেছি যাতে তারা অনুধাবন করে। যখন তাদের কোন কল্যাণ হত, তারা বলত; এটাতো আমাদের প্রাপ্য। আর যখন কোন অকল্যাণ হতো তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অলক্ষুণে গণ্য করত; তাদের অকল্যাণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন; কিন্তু তাদের অধিকাংশ এটা জানে না। তারা বলল, আমাদেরকে জাদু করার জন্যে তুমি যে কোন নিদর্শন আমাদের নিকট পেশ করনা কেন, আমরা তোমাতে বিশ্বাস করবো না। তারপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এগুলি স্পষ্ট নিদর্শন, কিন্তু তারা দাম্ভিকই রয়ে গেল। আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়। (সূরা আ’রাফঃ ১৩০-১৩৩)
এখানে আল্লাহ্ তা’আলা জানাচ্ছেন যে, তিনি ফিরআউনের সম্প্রদায়কে দুর্ভিক্ষ দ্বারা ক্লিষ্ট করেছেন। ফিরআউনের সম্প্রদায় হচ্ছে কিবতীগণ سنينا বা ‘দুর্ভিক্ষের বছরগুলো বলতে এমন সব বছরকে বুঝানো হয়, যে গুলোয় ফসল হয় না এবং গবাদি পশুর দুধ দ্বারাও মানুষ উপকৃত হতে পারে না। আয়াতে উল্লেখিত وَنَقۡص ࣲ مِّنَ ٱلثَّمَرَ ٰ تِ -এর অর্থ হচ্ছে গাছের ফলফলাদি ও কম হওয়া। আয়াতাংশঃ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُونَ -এর দ্বারা ইংগিত করা হয়েছে যে, তারা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেনি বরং তারা আরো অবাধ্য হয়ে উঠে ও কুফরী হঠকারিতার মধ্যে অবিচল থাকে। যখন তাদের কোন কল্যাণ হত, অর্থাৎ প্রচুর ফসলাদি হত তখন তারা বলত আমাদেরই, অর্থাৎ এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা এবং আমরাই এর উপযুক্ত। আর যখন কোন অকল্যাণ হত তখন তারা বলত, এটা মূসা ও তার সঙ্গীরা অলক্ষুণে হওয়ার কারণে আমাদের উপর আরোপিত হয়েছে। অথচ তারা কল্যাণের সময় বলত না যে এটা মূসা ও তার সঙ্গীদের বরকতে কিংবা তাদের শুভ অবস্থানের দরুন হয়েছে। তাদের অন্তরসমূহ দাম্ভিক ও অস্বীকারকারী এবং সত্য থেকে বিমুখ। যখন তাদের প্রতি কোন অকল্যাণ আপতিত হয়, তখন তারা এটি মূসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীদের প্রতি আরোপ করে আর যখন তারা কোন প্রকার কল্যাণ দেখতে পেতো, তখন তারা এটাকে নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করতো।
এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ أَلَاۤ إِنَّمَا طَـٰۤىِٕرُهُمۡ عِندَ ٱللَّهِ তাদের অকল্যাণ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থাৎ আল্লাহ্ তাদেরকে একথার জন্যে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন। তারা বলেঃ
অর্থাৎ—তারা বলল, আমাদেরকে জাদু করার জন্যে তুমি আমাদের কাছে যে কোন নিদর্শন বা মু’জিযা পেশ কর না কেন, আমরা তোমাতে বিশ্বাস করব না, এবং তোমার আনুগত্য করব না।
অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে তাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ—নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে তারা ঈমান আনবে না যদিও তাদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন আসে, যতক্ষণ না তারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। (সূরা ইউনুসঃ ৯৬-৯৭)
তাদের শাস্তি সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
“অতঃপর আমি তাদেরকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এগুলো স্পষ্ট নিদর্শন; কিন্তু তারা দাম্ভিকই রয়ে গেল আর তারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।”
আয়াতে উল্লেখিত الطوفان শব্দটির অর্থ নিয়ে তাফসীরকারদের মধ্যে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। এ الطوفان -এর অর্থ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, অত্যধিক বৃষ্টিপাত যাতে ফসলাদি ও ফলমূল বিনষ্ট হয়। সাঈদ ইবন জুবাইর, কাতাদা, সুদ্দী এবং যাহহাক (র)ও এ মত পোষণ করেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ও আতা (র) থেকে অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তুফানের অর্থ ‘বিপুল হারে মৃত্যুবরণ’। মুজাহিদ বলেন, ‘তুফান’-এর অর্থ সর্বাবস্থায়ই প্লাবন এবং প্লেগ। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তুফানের অর্থ হচ্ছে প্রতিটি মুসীবত যা জনগণকে বেষ্টন করে ফেলে। ইবন জারীর ও ইবন মারইয়াহ (র) হতে বর্ণিত। তাঁরা আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘তুফানের অর্থ মুত্যু’। এই হাদীসটি গরীব পর্যায়ের।
আয়াতে উল্লেখিত الجراد শব্দটির অর্থ যে পঙ্গপাল তা সুবিদিত। সালমান ফারসী (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তা’আলার বাহিনীসমূহের মধ্যে এগুলোর সংখ্যাই সর্বাধিক, এগুলো আমি খাই না এবং এগুলো খাওয়াকে হারামও বলি না। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রুচি বিরুদ্ধ হওয়ার জন্যেই তিনি পঙ্গপাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। যেমন তিনি গুইসাপ খাওয়া থেকে বিরত ছিলেন এবং পিয়াজ ও রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন। বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে যোগদান করেছি। সে সময় আমরা পঙ্গপাল খেতাম। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসসমূহ নিয়ে তাফসীরে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সার কথা হচ্ছে এই যে, আল্লাহু তা’আলা তাদের শস্য-শ্যামল মাঠ ধ্বংস করে দিলেন। তাদের ফল-ফসলাদি ও গবাদি পশু কিছুই বাকি রইলো না, সবই ধ্বংস হয়ে গেল।
আয়াতে উল্লেখিত القمل -এর অর্থ নিয়ে মতানৈক্য দেখা যায়। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, قمل হচ্ছে এমন একটি পোকা যা গমের মধ্য থেকে বের হয়ে আসে। এই বর্ণনাকারী থেকে অন্য একটি বর্ণনা বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন, قمل -এর অর্থ হচ্ছে এমন ছোট পঙ্গপাল যার পাখা নেই। মুজাহিদ, ইকরিমা ও কাতাদা (র)ও একমত পোষণ করেন। সাঈদ ইবন জুবাইর (রা) ও হাসান বসরী (র) বলেন قمل হচ্ছে এমন একটি জীব যা কাল ও ছোট। আবদুর রহমান ইবন যায়দ ইবন আসলাম (র) বলেন قمل হচ্ছে পক্ষবিহীন মাছিসমূহ। ইবন জারীর (র) আরবী ভাষাভাষীদের বরাতে বর্ণনা করেছেন যে, قمل -এর অর্থ হচ্ছে উকুন বা পরজীবী কীট বিশেষ। উকুন দলে দলে তাদের ঘরে ও বিছানায় প্রবেশ করে এবং তাদের প্রতি অশান্তি ঘটায়। ফলে তাদের পক্ষে ঘুমানোও সম্ভব হতো না এবং জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আতা ইবন সাইব (র) قمل কে সাধারণ উকুন বলে ব্যাখ্যা করেছেন। হাসান বসরী (র) এ قمل কে ميم এর তাশদীদ ব্যতিরেকে ‘কুমাল’ রূপে পাঠ করেছেন। ব্যাঙ একটি বহুল পরিচিত প্রাণী। এগুলো তাদের খাবারে ও বাসনপত্রে লাফিয়ে পড়ত। এমন কি তাদের কেউ যদি খাওয়ার বা পান করার জন্যে মুখ খুলত অমনি ওগুলো মুখে ঢুকে পড়ত। রক্তের ব্যাপারটিও ছিল অনুরূপ। যখন তারা পানি পান করতে যেত তখনই পানিকে রক্ত মিশ্রিত পেত। যখনি তারা নীল নদে পানি পান করতে নামত, অমনি তার পানি রক্ত মিশ্রিত পেত। এমনিভাবে কোন নদী-নালা বা কূয়া ছিল না যার পানি ব্যবহারের সময় রক্ত মিশ্রিত মনে না হত। বনী ইসরাঈল বংশীয়রা এসব উপদ্রব থেকে মুক্ত ছিল। এগুলো ছিল পরিপূর্ণ অলৌকিক ঘটনা ও অকাট্য প্রমাণাদি যা মূসা (আ)-এর কাজের মাধ্যমে তাদের জন্যে প্রকাশ পেয়েছিল। বনী ইসরাঈলের আবাল বৃদ্ধবনিতা সকলেই এভাবে লাভবান হয়েছিল। এসব ব্যাপার ছিল তাদের জন্য উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) বলেন, জাদুকররা যখন প্রতিযোগিতায় পরাস্ত ও ব্যর্থকাম হয়ে ঈমান আনয়ন করল তখনও আল্লাহর শত্রু ফিরআউন তার কুফরী ও দুষ্কর্মে অবিচল রইল। তখন আল্লাহ একে একে তার সম্মুখে নিদর্শনাদি প্রকাশ করেন। প্রথমে দুর্ভিক্ষ এবং তারপর তুফান অবতীর্ণ করেন। এরপর পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত স্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে পর পর প্রেরণ করেন। প্লাবনের ফলে তারা ঘর থেকে বের হতে পারতো না এবং কোন প্রকার কাজ-কর্মও করতে পারতো না। ফলে তারা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়।
এরূপে তারা যখন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হল তখন তারা মূসা (আ)-কে বলতে লাগল।
অর্থাৎ—হে মূসা! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্যে প্রার্থনা কর, তোমার সাথে তিনি যে অঙ্গীকার করেছেন সে মতে; যদি তুমি আমাদের ওপর থেকে শাস্তি অপসারিত কর তবে আমরা তো তোমাতে ঈমান আনবই এবং বনী ইসরাঈলকেও তোমার সাথে অবশ্যই যেতে দেব। (সূরা আ’রাফঃ ১৩৪)
তখন মূসা (আ) তার প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের ওপর থেকে তার প্রেরিত শাস্তি অপসারিত করেন। কিন্তু তারা তখন তাদের অঙ্গীকার পূরণ করল না। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি পঙ্গপাল অবতীর্ণ করেন। পঙ্গপাল তাদের গাছপালা সব নিঃশেষ করে ফেলে এমনকি তাদের ঘরের দরজাসমূহের লোহার পেরেকগুলো পর্যন্ত খেতে থাকে। ফলে তাদের ঘরবাড়িগুলো পড়ে যেতে থাকে। তখন তারা পূর্বের মত মূসা (আ)-কে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ জানায়। মূসা (আ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করায় তাদের উপর থেকে আযাব রহিত হয়ে যায়। কিন্তু তারা তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করল না। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের প্রতি উকুন প্রেরণ করেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, মূসা (আ)-কে একটি বালুর ঢিবির কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আরো আদেশ দেয়া হয়েছির তিনি যেন তাঁর লাঠি দ্বারা তাতে আঘাত করেন। তারপর মূসা (আ) একটি বড় ঢিবির দিকে গিয়ে তাতে আপন লাঠি দ্বারা আঘাত করলেন তাতে তাদের উপর উকুন ছড়িয়ে পড়ল। এমনকি উকুন ঘরবাড়ি ও খাদ্য-সম্ভারের উপর ছড়িয়ে পড়তে লাগল। তাদের নিদ্রা ও শান্তি বিঘ্নিত হতে লাগল। যখন তারা এই মুসীবতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল, তখন তারা মূসা (আ)-কে পূর্বের মত আল্লাহর দরবারে দু’আর জন্য অনুরোধ জানাতে লাগল। অতঃপর মূসা (আ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর থেকে আযাব হটিয়ে দিলেন কিন্তু তারা তাদের অঙ্গীকার কিছুই পূরণ করল না। তাতে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর ব্যাঙ প্রেরণ করেন। তাদের ঘরবাড়ি, খানাপিনা, ও হাঁড়ি-পাতিল ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাদের কেউ যখন কোন কাপড় কিংবা খাবারের ঢাকনা উঠাত, অমনি তারা দেখতে পেত যে, সেগুলো ব্যাঙ দখল করে রেখেছে। এই মুসীবতে যখন তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠল, তখন তারা আগের মত মূসা (আ)-এর কাছে দুআর জন্য অনুরোধ জানাতে লাগল। মূসা (আ) তাঁর প্রতিপালককে ডাকলেন এবং তিনি তাদের উপর থেকে আযাব বিদূরিত করলেন। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি মোটেও রক্ষা করল না। তাই আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি রক্তের শাস্তি প্রেরণ করেন। ফিরআউন সম্প্রদায়ের পানির উৎসগুলো রক্তে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তারা যখনই কোন কয়া, নদীনালা ও পাত্র থেকে পানি পান করতে ইচ্ছে করত এগুলো রক্তে পরিণত হয়ে যেত। যায়দ ইবন আসলাম বলেন, আয়াতাংশে উল্লেখিত دم শব্দটির অর্থ رعاف বা নাক থেকে ঝরা রক্ত। বর্ণনাটি ইবন আবী হাতিমের।
অর্থাৎ—এবং যখন তাদের উপর শাস্তি আসত তারা বলত, ‘হে মূসা! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, তোমার সাথে তিনি যে অঙ্গীকার করেছেন সে অনুযায়ী। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে শাস্তি অপসারিত কর, তবে আমরা তো তোমাতে ঈমান আনবই এবং বনী ইসরাঈলকেও তোমার সাথে অবশ্যই যেতে দেব।’ আমি যখনই তাদের উপর থেকে শাস্তি অপসারিত করতাম এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে যা তাদের উপর নির্ধারিত ছিল, তারা তখনই তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করত। সুতরাং আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি।
এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এই সম্বন্ধে তারা ছিল গাফিল। (সূরা আ’রাফ ১৩৪-১৩৬)।
আল্লাহ তা’আলা এখানে ফিরআউনের ও তার সম্প্রদায়ের কুফরী, জোর-জুলুম, পথভ্রষ্টতা ও মূর্খতায় লিপ্ত থাকা এবং আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাদির অনুসরণ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন থেকে বিমুখতা ইত্যাদি সম্বন্ধে বর্ণনা করছেন। অথচ আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি বিভিন্ন প্রকার অলৌকিক নিদর্শনাদি ও অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা প্রমাণিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে নিদর্শনাদি প্রদর্শন করেছেন এবং এগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে দলীল ও প্রমাণ সাব্যস্ত করেছেন। যখনই তারা আল্লাহর কোন নিদর্শন প্রত্যক্ষ করত এবং মুসীবতের শিকার হত তখনই তারা মূসা (আ)-এর কাছে শপথ করে ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় যে, যদি তাদের উপর থেকে এসব মুসীবত দূরীভূত হয়ে যায় তাহলে ফিরআউন মূসা (আ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং মূসা (আ)-এর দলের লোকদেরকে মূসা (আ)-এর সাথে যেতে দেবে। অথচ যখনি তাদের উপর থেকে এরূপ আযাব-গযব উঠিয়ে নেয়া হত, তখনি তারা দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ত এবং প্রেরিত সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করত। আর মুসা (আ) এর দিকে ফিরেও তাকাত না। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের প্রতি অন্য একটি নিদর্শন বা মুসীবত অবতীর্ণ করতেন যা পূর্বের প্রেরিত নিদর্শন ও মুসীবত থেকে অধিকতর কষ্টদায়ক হত। তখন তারা মূসা (আ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মৌখিক অঙ্গীকার করত। কিন্তু পরে তারা মিথ্যাচারে লিপ্ত হত। এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হত কিন্তু তা পূরণ করত না।
ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় বলত, ‘হে মূসা! যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এই মুসীবত দূরীভূত কর, আমরা তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব এবং তোমার সাথে বনী ইসরাঈলকে যেতে দেব। তখন তাদের উপর থেকে এই কঠিন আযাব ও শাস্তি দূর করা হত কিন্তু পুনরায় তারা তাদের নিরেট মূর্খতা ও বোকামিতে ফিরে যেত। মহা পরাক্রমশালী, ধৈর্যশীল আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে অবকাশ দিতেন এবং তড়িঘড়ি করে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করতেন না, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দিতেন এবং আযাব-গযবের ব্যাপারে সতর্ক করতেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণাদি পূর্ণ করার পর তাদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলেন। যাতে এটা পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে এবং তাদের মত অন্যান্য কাফিরের জন্য এটা নজীর স্বরূপ এবং মুমিন বান্দাদের মধ্য থেকে যারা নসীহত গ্রহণ করে তাদের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ, মূসাকে তো আমি আমার নিদর্শনসহ ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রেরিত। সে ওদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসা মাত্র তারা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল। আমি তাদেরকে এমন কোন নিদর্শন দেখাইনি যা এটার অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। তারা বলেছিল, ‘হে জাদুকর! তোমার প্রতিপালকের নিকট তুমি আমাদের জন্য তা প্রার্থনা কর যা তিনি তোমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন; তা হলে আমরা অবশ্যই সৎপথ অবলম্বন করব।’ তারপর যখন আমি তাদের উপর থেকে শাস্তি বিদূরিত করলাম, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বসল। ফিরআউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলে ঘোষণা করল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! মিসর রাজ্য কি আমার নয়? আর এ নদীগুলো আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা এটা দেখ না? আমি তো শ্রেষ্ঠ এই ব্যক্তি হতে, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলতেও অক্ষম। মূসাকে কেন দেয়া হল না স্বর্ণবলয় অথবা তার সংগে কেন আসল না ফেরেশতাগণ দলবদ্ধভাবে?’ এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধি করে দিল, ফলে ওরা তার কথা মেনে নিল। ওরা তো ছিল এক সত্যত্যাগী সম্প্রদায়! যখন ওরা আমাকে ক্রোধান্বিত করল আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম তাদের সকলকে। তারপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত। (সূরা যুখরুফঃ ৪৬-৫৬)
নীচাশয় ও দুরাচার ফিরআউনের নিকট আপন সম্মানিত বান্দা ও রাসূলকে প্রেরণের ঘটনা আল্লাহ্ তা’আলা উপরোক্ত আয়াতসমূহে ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূলকে এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাদিসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তারা জনগণের সম্মান ও আস্থা অর্জনে সমর্থ হন। এবং তারা কুফর ও শিরক পরিত্যাগ করে সত্য ও সরল পথের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে। অথচ তারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন না করে ঐ সব নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টা ও হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয়। এবং আল্লাহ প্রেরিত সত্যপথ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারপর আল্লাহ তা’আলা তাদের প্রতি পরপর নিদর্শনাদি প্রেরণ করেন। যার প্রতিটিই তার পূর্ববর্তীটির তুলনায় অধিকতর গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
অর্থাৎ, আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম যাতে তারা ফিরে আসে। তারা বলেছিল, ‘হে জাদুকর! তোমার প্রতিপালকের নিকট তুমি আমাদের জন্য তা প্রার্থনা কর, যা তিনি তোমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন, তাহলে আমরা অবশ্যই সৎপথ অবলম্বন করব।” (সূরা যুখরুফঃ ৪৮-৪৯)
তাদের সময়ে জাদুকর সম্বোধন সে যুগে দূষণীয় বলে বিবেচিত হতো না। কেননা, তাদের আলিমদেরকে ঐ যুগে জাদুকর বলে আখ্যায়িত করা হতো। এজন্যই তারা প্রয়োজনের সময় মূসা (আ)-কে জাদুকর বলে সম্বোধন করে এবং তাঁর কাছে অনুনয়-বিনয় করে তাদের আর্জি পেশ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“যখন আমি তাদের থেকে শাস্তি বিদূরিত করলাম তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে বসল।”
তারপর আল্লাহ তা’আলা ফিরআউনের দাম্ভিকতার বর্ণনা দেন। ফিরআউনও তার রাজ্যের বিশালতা, সৌন্দর্য এবং বহমান নদী-নালা নিয়ে গর্ববোধ করত। নীল নদের সাথে সংযুক্ত করায় এসব বাড়তি খাল, নালা দেশের শ্রীবৃদ্ধি ঘটায়। অতঃপর ফিরআউন তার নিজের দৈহিক সৌন্দর্য নিয়েও গর্ব করে এবং আল্লাহর রাসূল মূসা (আ)-এর দোষত্রুটি বর্ণনা করতে শুরু করে। স্পষ্ট কথাবার্তা বলতে মূসা (আ)-এর অক্ষমতাকেও সে ত্রুটিরূপে চিহ্নিত করে। বাল্যকালে তার জিহ্বায় কিছুটা জড়তা দেখা দেয়, যা তার জন্যে ছিল পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য ও সম্মানের ব্যাপার যা তার সাথে আল্লাহ তা’আলার কথোপকথন, তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ; এর পর তাঁর কাছে তৌরাত অবতীর্ণ করার ক্ষেত্রে এটা কোন প্রকার অন্তরায় হয়নি। অথচ ফিরআউন এটাকে উপলক্ষ করে মূসা (আ)-এর ত্রুটি নির্দেশ করেছিল। ফিরআউন মূসা (আ)-এর স্বর্ণবলয় ও শরীরে সাজসজ্জা না থাকাকেও ত্রুটি বলে আখ্যায়িত করে অথচ এটা হল নারীদের ভূষণ, পুরুষের ব্যক্তিত্বের সাথে এটা সম্পৃক্ত নয়। তাই নবীদের ব্যক্তিত্বের সাথে তা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কেননা নবীগণ পুরুষদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধি, মারেফাত, সাহস, পরহেজগারী ও জ্ঞানের দিক দিয়ে অধিকতর পরিপূর্ণ। তাঁরা দুনিয়ায় অধিকতর সাবধানতা অবলম্বনকারী এবং আখিরাতে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাঁর ওলীদের জন্যে যে সব নিয়ামতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সে সম্বন্ধে অধিকতর জ্ঞাত।
আয়াতে উল্লেখিত مقترنين আয়াতাংশ দ্বারা দুটি অর্থ নেয়া যায়। প্রথমত, যদি ফিরআউনের উদ্দেশ্য হয় যে, ফেরেশতাগণ কেন মূসা (আ)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন না।
তাহলে তার এই আপত্তি যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা, মূসা (আ)-এর চাইতে কম মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরও ফেরেশতাগণ অনেক সময় সম্মান করে থাকেন। কাজেই ফেরেশতা দলবদ্ধভাবে মূসা (আ)-এর সাথে আগমন করা নবুওতের মর্যাদার জন্য শর্ত নয়। যেমন হাদীস শরীফে রয়েছে-রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, যখন শিক্ষার্থীগণ আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনে ইলম শিক্ষার জন্যে ঘরের বের হয় তখন তাদের সম্মানার্থে ফেরেশতাগণ তাদের চলার পথে তাদের পাখা বিস্তার করে দেন। সুতরাং মূসা (আ)-এর প্রতি ফেরেশতাগণের সম্মান, বিনয় প্রদর্শন যে কী পর্যায়ের ছিল তা সহজেই অনুমেয়। আর যদি এই কথার দ্বারা ফিরআউনের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে যে মূসা (আ)-এর নবুওতের পক্ষে ফেরেশতাগণ সাক্ষীরূপে উপস্থিত হন না কেন, তাহলে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা মূসা (আ)-এর রিসালতকে এমন সব মু’জিযা ও মজবুত দলীলাদি দ্বারা শক্তিশালী করেছেন যা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ এবং সত্য সন্ধানীদের কাছে সুপ্রমাণিত হিসেবে বিবেচ্য। তবে এসব মুজিযা ও মজবুত দলীলাদির ব্যাপারে ঐসব ব্যক্তি অন্ধ, যারা সারবস্তু ছেড়ে কেবল ছাল-বাকল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। যাদের অন্তরে আল্লাহ্ তা’আলা মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের অন্তর সংশয় সন্দেহের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন যেমনটি কিবতী বংশীয় ক্ষমতার মোহে অন্ধ ও মিথ্যাচারী ফিরআউনের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ
فَٱسۡتَخَفَّ قَوۡمَهُۥ فَأَطَاعُوهُۚ
[Surat Az-Zukhruf 54]
অর্থাৎ—এভাবে সে তার সম্প্রদায়কে হতবুদ্ধি করে দিল, তখন তারা তাকে মেনে নিল এবং তার প্রভুত্বকেও স্বীকার করে নিল। যেহেতু তারা ছিল একটি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।
অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( فَلَمَّاۤ ءَاسَفُونَا ٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ )
[Surat Az-Zukhruf 55]
অর্থাৎ—যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম অর্থাৎ নিমজ্জিত করলাম অবমাননা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনায়, নিয়ামত দানের পর আযাবে নিপতিত করে, সুখের পর দুঃখ দিয়ে, আনন্দের পর বিষাদগ্রস্ত করে এবং সুখের জীবনের পর দোযখের কঠিন আযাব দিয়ে। অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের অনুসারীদের জন্যে অতীত ইতিহাস এবং তাদের থেকে যারা শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় ও আযাবকে ভয় করতে চায় তাদের জন্যে দৃষ্টান্তে পরিণত করলাম।
তাদের পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—মূসা (আ) যখন ওদের নিকটে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে আসল—ওরা বলল, এটাতো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্ব-পুরুষগণের কালে কখনও এরূপ কথা শুনিনি। মূসা বলল, আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁর নিকট থেকে পথ-নির্দেশ এনেছে এবং আখিরাতে কার পরিণাম শুভ হবে। জালিমরা কখনও সফলকাম হবে না।
ফিরআউন বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ রয়েছে বলে আমি জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরি কর, হয়ত আমি এতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পাব। তবে আমি অবশ্য মনে করি, সে মিথ্যাবাদী।’ ফিরআউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং ওরা মনে করেছিল যে, ওরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না। অতএব, আমি তাকে ও তার বাহিনীকে ধরলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। দেখ, জালিমদের পরিণাম কী হয়ে থাকে। ওদেরকে আমি নেতা করেছিলাম। ওরা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত; কিয়ামতের দিন ওদেরকে সাহায্য করা হবে না। এ পৃথিবীতে আমি ওদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন ওরা হবে ঘৃণিত। (সূরা কাসাসঃ ৩৬-৪২)
আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যখন ফিরআউন ও তার দলের লোকেরা সত্যের অনুসরণ থেকে অহংকারভরে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং তাদের বাদশাহ মিথ্যা দাবি করল, তারা তাকে মেনে নিল ও তার আনুগত্য করল। তখন মহাশক্তিশালী, মহাপরাক্রমশালী প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ তীব্র আকার ধারণ করল যার বিরুদ্ধে কেউ জয়লাভ করতে পারে না এবং যাকে কেউ প্রতিহত করতে পারে না। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিলেন, ফিরআউন ও তার সৈন্য-সামন্তকে একদিন প্রত্যুষে ডুবিয়ে দিলেন, ফলে তাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তি বা তাদের বাসস্থানের কোন অস্তিত্ব বাকি রইল না। তারা সকলে ডুবে গেল ও দোযখবাসী হল। এই পৃথিবীতে বিশ্ববাসীর মাঝে তারা অভিসম্পাতের শিকার হল এবং কিয়ামতের দিনেও। কিয়ামতের দিনে তাদের পুরস্কার কতই না নিকৃষ্ট হবে এবং তারা হবে ঘৃণিতদের অন্তর্ভুক্ত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/67
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।