মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অর্থাৎ, এবং ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল-কিফলের কথা স্মরণ কর, তারা প্রত্যেকেই ছিল সবরকারী। আমি তাদেরকে আমার রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। (২১: ৮৫-৮৬)
সূরা সাদেও আইয়ুব (আ)-এর ঘটনা বলার পরে আল্লাহ বলেন।
অর্থাৎ, স্মরণ কর, আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা, তারা ছিল শক্তিশালী ও সূক্ষ্মদর্শী। আমি তাদেরকে এক বিশেষ গুণের অধিকারী করেছিলাম অর্থাৎ পরকালের স্মরণ। অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত ও উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। স্মরণ কর, ইসমাঈল, আল-ইয়াসা’আ ও যুল-কিফলের কথা। এরা প্রত্যেকেই ছিল সজ্জন। (সূরা সাদঃ ৪৫-৪৮)
কুরআনের এসব আয়াতে উল্লেখিত মহান নবীগণের সাথে যুল-কিফুলের নামও প্রশংসা একত্রে উল্লেখ থাকায় স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তিনিও নবী ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে এ মতই প্রসিদ্ধ। এটা অনেকেরই ধারণা, যুল-কিফল নবী ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একজন পুণ্যবান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। ইবন জারীর (র) এ ব্যাপারে মতামত প্রকাশে বিরত রয়েছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
ইবন জারীর (র) ও ইবন আবু নাজীহ্ (র) মুজাহিদ (র) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, যুল-কিফল নবী ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন একজন পুণ্যবান ব্যক্তি—তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত নবীর পক্ষ থেকে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন যে, তিনি সম্প্রদায়ের লোকজনের দেখাশোনা করবেন এবং ন্যায়-নীতির সাথে তাদের বিচার-মীমাংসা করবেন। এই কারণে তাকে যুল-কিফল (জিম্মাদার) নামে অভিহিত করা হয়।
ইবন জারীর (র) ও ইবন আবী হাতিম (র) মুজাহিদ (র) সূত্রে বর্ণনা করেনঃ হযরত ইয়াসা’আ যখন বয়োবৃদ্ধ হন তখন তিনি ভাবলেন, যদি আমার জীবদ্দশায় একজন লোককে সমাজের বুকে কাজ করার জন্যে দায়িত্ব দিতে পারতাম এবং কিভাবে সে দায়িত্ব পালন করে তা স্বচক্ষে দেখতে পারতাম, তাহলে মনে শান্তি পেতাম। এরপর তিনি লোকজনকে জড়ো করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছ, যে তিনটি কাজ করার অঙ্গীকার করলে তাকে আমি আমার স্থলাভিষিক্ত করব। কাজ তিনটি এইঃ দিনে সওম পালন করবে, রাতে জেগে ইবাদত করবে এবং কখনও রাগান্বিত হতে পারবে না। এ কথার পর বাহ্যদৃষ্টিতে সাধারণ বলে গণ্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল—আমি পারব। তখন তিনি বললেন, ‘তুমি কি দিনে সওম করতে, রাত্রে জেগে ইবাদত করতে ও রাগান্বিত না হয়ে থাকতে পারবে?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ, পারব।’ এরপর সেদিনের মত সবাইকে বিদায় দিলেন। পরের দিন পুনরায় লোকদেরকে জড়ো করে আবার সেই প্রস্তাব রাখেন। সবাই নিরব থাকল, কিন্তু ঐ লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, আমি পারব। অতঃপর নবী আল-ইয়াসা’আ ঐ ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন।
ইবলীস তখন শয়তানদেরকে ডেকে বলল, ঐ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করার দায়িত্ব তোমাদের নিতে হবে। কিন্তু তারা সকলে তাতে ব্যর্থ হলো। তখন ইবলীস বললঃ আচ্ছা আমিই তার দায়িত্ব নিলাম। পরে ইবলীস এক বৃদ্ধ দরিদ্রের বেশে লোকটির কাছে আসে। সে এমন সময়ই আসল, যখন তিনি দুপুরের বিশ্রামের জন্যে শয্যা গ্রহণ করেছিলেন। আর তিনি ঐ বিশেষ সময় ছাড়া দিনে বা রাতের অন্য কোন সময়ই নিদ্রা যেতেন না। তিনি ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ইবলীস এসে দরজা ধাক্কা দেয়। ভিতর থেকে তিনি বললেন, ‘দরজায় কে?’ ইবলীস বলল, ‘আমি একজন অসহায় মজলুম বৃদ্ধ লোক।’ তিনি দরজা খুলে দিলেন। বৃদ্ধ তার ঘটনা বলতে লাগল। সে জানাল, ‘আমার সাথে আমার গোত্রের লোকের বিবাদ আছে। তারা আমার উপর এই এই জুলুম করেছে। বৃদ্ধ তার ঘটনার বিবরণ দিতে দিতে বিকাল হয়ে গেল। দুপুরের নিদ্রার সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। তিনি বলে দিলেন, সন্ধ্যার পরে আমি যখন দরবারে বসব তখন তুমি এসো। তোমার হক আমি আদায় করে দেব। বৃদ্ধ চলে গেল, সন্ধ্যার পরে দরবারে বসে বৃদ্ধ আসছে কিনা তাকিয়ে দেখলেন কিন্তু তাকে উপস্থিত পেলেন না। তালাশ করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।
পরের দিন সকালে বিচার আসনে বসে বৃদ্ধের জন্যে অপেক্ষা করেও তাকে দেখলেন না! মজলিস শেষে তিনি যখন দুপুরের শয্যা গ্রহণে গেলেন তখন বৃদ্ধ এসে দরজায় ধাক্কা দিল। ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘দরজায় কে?’ বলা হল, ‘অসহায় এক মজলুম বৃদ্ধ।’ দরজা খুলে দেয়া হল। বললেন, ‘আমি কি তোমাকে বলিনি যে, যখন আমি দরবারে বসব তখন তুমি আসবে?’ সে বলল, ‘আমার গোত্রের লোকেরা অত্যন্ত জঘন্য প্রকৃতির। যখন তারা জানল যে, আপনি দরবারে বসা। তখন তারা আমাকে আমার হক প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু যখন আপনি দরবার ছেড়ে উঠে যান তখন তারা সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।’ তিনি বললেন, ‘এখন চলে যাও। সন্ধ্যার পরে যখন দরবারে বসব তখন এসো।’ কিন্তু বৃদ্ধের সাথে কথা বলতে বলতে তার আজকের দুপুরের নিদ্রাও আর হল না। রাত্রে দরবারে বসে বৃদ্ধের অপেক্ষা করলেন কিন্তু তাকে দেখা গেল না। অধিক রাত্রি হওয়ায় তন্দ্রা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। তিনি বাড়ির একজনকে বললেন, ‘আমার দারুণ নিদ্রা পাচ্ছে। এখন আমি ঘুমাবো। সুতরাং কেউ যদি দরজার কাছে আসতে চায় তাকে আসতে দিও না।’ একথা বলে যাওয়ার পর মুহুর্তেই বৃদ্ধ সেখানে উপস্থিত হল। পাহারাদার লোকটি বলল, ‘পিছু হটো, পিছু হটো।’ বৃদ্ধ বলল, ‘আমি হুজুরের কাছে গতকাল এসেছিলাম এবং আমার সমস্যার কথা বলেছিলাম।’ কিন্তু পাহারাদার বলল, ‘কিছুতেই দেখা করা যাবে না। আল্লাহর কসম! আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন কোন লোককে তার কাছে যেতে না দিই।’ এভাবে পাহারাদার তাকে নিবৃত্ত করলো।
বৃদ্ধ তখন ঘরের পানে তাকিয়ে দেওয়ালের এক স্থানে একটি ছিদ্রপথ লক্ষ্য করল। ইবলীসরূপী ঐ বৃদ্ধ উক্ত ছিদ্রপথ দিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল এবং ভিতরের দিক থেকে দরজা ধাক্কা দিল। শব্দ শুনে যুল-কিফল-এর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বললেন, ‘ওহে, আমি কি তোমাকে এ সময় আসতে বারণ করিনি?’ সে বলল, ‘আমি আমার নিজ প্রচেষ্টায় এসেছি। আপনি তো আমাকে আসতে দেননি। লক্ষ্য করে দেখুন, কিভাবে আমি এসেছি।’ তিনি দরজার কাছে এসে দেখলেন, তা সেভাবেই বন্ধ রয়েছে যেভাবে তিনি বন্ধ করেছিলেন। অথচ সে ঘরের ভিতরে তার কাছেই রয়েছে। তিনি এতক্ষণে তাকে চিনতে পারলেন এবং বললেন, তুমি তো আল্লাহর দুশমন। সে বলল, ‘হ্যাঁ, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আপনি আমাকে পরাজিত ও নিরাশ করে দিয়েছেন। আপনাকে রাগান্বিত করার জন্যে আমি এসব কাজ করেছি যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন।’ অতঃপর আল্লাহ এই ব্যক্তির নাম রাখেন যুল-কিফল। কারণ তিনি যে কাজ করার জিম্মাদারী গ্রহণ করেছিলেন তা পূরণ করেছেন।
ইবন আবী হাতিম (র) ও ইবন আব্বাস (রা) থেকে প্রায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন হারিছ, মুহাম্মদ ইবন কায়স, ইবন হুজায়রা আল-আকবর ও অন্যান্য আরও ঐতিহাসিক থেকেও এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবন আবী হাতিম (র) কাতাদা (র) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আশআরী (রা)-কে এই মিম্বরের উপর থেকে বলতে শুনেছি যে, যুল-কিফল নবী ছিলেন না। বরং তিনি একজন নেককার লোক ছিলেন। প্রত্যহ একশ’ রাকাত সালাত আদায় করতেন। তাঁর সম্প্রদায়ের নবীর কাছ থেকে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এবং নবীর পরে তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং প্রত্যহ একশ’ রাকাত করে সালাত আদায় করেন। এজন্যে তার নাম রাখা হয় যুল-কিফল। ইবন জারীরও কাতাদা (র) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ মূসা আশআরী (রা) সূত্রে এ বর্ণনা মুনকাতি পর্যায়ের।
ইমাম আহমদ (র) ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে একবার নয় দুইবার নয়, সাতবার নয় বরং তার চেয়ে বেশিবার শুনেছিঃ কিফল বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির নাম। এমন কোন গুনাহের কাজ নেই যা সে করেনি। একদা তার কাছে এক মহিলা আসে, সে তাকে উপভোগ করার উদ্দেশ্যে ষাটটি দীনার দেয়। যখন সে স্বামী-স্ত্রীর মতো তাকে উপভোগে উদ্যত হলো তখন মহিলাটি কম্পিত বদনে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। কিফল তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কাঁদছ কেন? আমি কি তোমার প্রতি বলপ্রয়োগ করছি?’ মহিলাটি বলল, ‘না। বরং কাদার কারণ এই যে, আমি কখনও এ কাজ করিনি। অভাব-অনটনই আমাকে এ কাজে বাধ্য করেছে।’ কিফল বলল, ‘এ কাজ কখনও করনি, এই প্রথমবার?’ অতঃপর তিনি নেমে গেলেন এবং বললেন, ‘যাও, দীনারগুলো তোমারই। এরপর বললেন, আল্লাহর কসম! কিফল আর কখনও আল্লাহর নাফরমানী করবে না।’ ঐ রাত্রেই কিফল মারা যান। সকাল বেলা তার দরজায় লিখিত দেখা যায়, আল্লাহ কিফলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিরমিযী (র)ও আমাশ সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে ‘হাসান বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ একে ইবন উমরের ‘মওকুফ’ বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন। হাদীসটি অত্যন্ত গরীব পর্যায়ের। তাছাড়া এর সনদে আপত্তি আছে। কেননা এর একজন বর্ণনাকারী সা’আদ সম্পর্কে আবু হাতিম বলেছেন , আমি তাকে চিনি না, এই একটা মাত্র হাদীসেই তার উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য ইবন হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। এই সাআদ থেকে কেবল আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ আর-রাযী ব্যতীত অন্য কেউ হাদীস বর্ণনা করেননি। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের কথা
তাওরাত কিতাব নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন জাতিকে ব্যাপক আযাবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। কুরআনে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেনঃ
(আমি পূর্ববর্তী বহু মানব গোষ্ঠীকে বিনাশ করার পর মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম। (সূরা কাসাসঃ ৪৩)। যেমন ইবন জারীর, ইবন আবী হাতিম ও বাযযার (র) আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ তাওরাত নাযিল হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীতে কোন আসমানী কিংবা যমীনী আযাব দ্বারা কোন জাতিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করেননি। কেবল সেই একটি মাত্র জনপদের লোককেই করেছেন যাদেরকে তিনি বানরে পরিণত করেন। আল্লাহ বলেনঃ
বাযযার এ হাদীসকে মারফু বলে বর্ণনা করেছেন কিন্তু সঠিক এই যে, এটা ‘মওকুফ পর্যায়ের হাদীস। সুতরাং এর দ্বারা বোঝা যায় যে, সমস্ত মানব গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তারা সকলেই মূসা (আ)-এর যুগের পূর্বেকার লোক। সেই সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আসহাবুর রসস। সূরা ফুরকানে আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, আমি আদ, ছামূদ, রাসসবাসী এবং তাদের অন্তর্বর্তীকালের বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি। এদের প্রত্যেকের জন্যেই আমি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি এবং প্রত্যেককেই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছি। (সূরা ফুরকানঃ ৩৮-৩৯)
অর্থাৎ, তাদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে নূহের সম্প্রদায়, রসস ও ছামূদ সম্প্রদায়, আদ, ফিরআউন ও লূত সম্প্রদায় এবং আয়কার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায়। ওরা সকলেই রসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি আপতিত হয়েছে। (সূরা কাফঃ ১২-১৪)
এ আয়াত ও এর পূর্বের আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, তারা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও নির্মূল হয়েছে। এ বক্তব্য দ্বারা ইবন জারীর (র)-এর মতামত প্রত্যাখ্যাত হয়ে যায়। কেননা, তার মতে, উক্ত সম্প্রদায় হচ্ছে আসহাবুল উখদূদ বা অগ্নিকুণ্ডের অধিপতিরা— যাদের কথা সূরা বুরুজে বর্ণিত হয়েছে। ইবন জারীর (র)-এর মতামত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণ এই যে, ইবন ইসহাক (র)সহ এক দলের মতে, অগ্নিকুণ্ডের অধিপতিদের ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল হযরত ঈসা মাসীহ (আ)-এর পরে। কিন্তু ইবন ইসহাকের এ মতও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। ইবন জারীর (রা) বর্ণনা করেন, ইবন আব্বাস (রা) বলেন, আসহাবুর রসস হল ছামূদ জাতির জনপদসমূহের মধ্য হতে একটি জনপদের অধিবাসী।
হাফিজ ইবন আসাকির (র) তার ইতিহাস গ্রন্থের শুরুতেই দামেশকের প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে আবুল কাসিম আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ ইবন জারদাদ প্রমুখের ইতিহাসের বরাত দিয়ে লিখেছেন যে, আসহাবুর রসস হাযূর নামক স্থানে বসবাস করত। আল্লাহ তাদের মাঝে হানযালা ইবন সাফওয়ান (আ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারা নবীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে হত্যা করে ফেলে। অতঃপর আদ ইবন আওস ইবন ইরাম ইবন সাম ইবন নূহ আপন পুত্রকে নিয়ে রসস ছেড়ে চলে যান এবং ‘আহকাফে গিয়ে অবস্থান করেন। আল্লাহ রসস-এর অধিবাসীদের ধ্বংস করেন। তারা সমগ্র ইয়ামানে এবং অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাদেরই একজন জায়রূন ইবন সাদ ইবন ‘আদ ইবন আওস ইবন ইরাম ইবন সাম ইবন নূহ দামিশকে চলে যান এবং দামেশক নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর নাম রাখেন জায়রুন। এটাই সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মিত ইরাম নগরী। গোটা দামেশকে এই স্থানের চেয়ে অধিক পাথর নির্মিত প্রাসাদ আর কোথাও ছিল না। আল্লাহ হৃদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন রাবাহ ইব্ন খালিদ ইব্ন হালুদ ইবন আদকে আদ জাতির কাছে অর্থাৎ আহকাফে বসবাসকারী আদের বংশধরদের কাছে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারা নবীকে মিথ্যাবাদী ঠাওরায়। ফলে আল্লাহ তাদেরকে বিনাশ করে দেন। এ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আসহাবুর রসস সম্প্রদায়ের আগমন হয়েছিল আদ জাতির বহুযুগ পূর্বে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ইবন আবী হাতিম (র) ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রসস আযার বাইজানের একটি কূপের নাম। ছাওরী ইকরিমা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রসস একটি কূপ— যার মধ্যে তারা তাদের নবীকে দাফন করেছিল। ইবন জুরায়জ ইকরিমার উক্তি বর্ণনা করেছেন যে, আসহাবুর রসস ফালজ নামক স্থানে বসবাস করত। তাদেরকে আসহাবে ইয়াসীনও বলা হয়। কাতাদা (র) বলেন, ফালজ ইয়ামামার একটি জনপদের নাম। আমি বলতে চাই যে, ইকরিমার মত অনুযায়ী আসহাবুর রসস যদি আসহাবু ইয়াসীন হয়, তবে তারা ব্যাপক আযাবে ধ্বংস হয়েছে।
অর্থাৎ, এটা ছিল কেবলমাত্র একটি মহা নাদ, ফলে ওরা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। (ইয়াসীন : ২৯)
এদের ঘটনা রসস-এর ঘটনার পরে আলোচনা করা হবে। পক্ষান্তরে এরা যদি আসহাবে ইয়াসীন না হয়ে অন্য কোন সম্প্রদায় হয়ে থাকে, যা স্পষ্টতই বোঝা যায়, তবে তারাও সমূলে ধ্বংস হয়েছে। সে যাই হোক না কেন, তা ইবন জারীরের মতের বিরোধী। আবু বকর মুহাম্মদ ইবন হাসান আন নরকাশ উল্লেখ করেছেন যে, আসহাবুর রসসদের একটি কূপ ছিল। তারা সে কুয়ায় পানি পান করত ও যমীনে সিঞ্চন করত। তাদের একজন ন্যায়পরায়ণ উত্তম চরিত্রের অধিকারী বাদশাহ ছিলেন। বাদশাহ মারা গেলে তারা দারুণ মর্মাহত হয়। কিছুদিন যাওয়ার পর শয়তান ঐ বাদশাহর রূপ ধারণ করে তাদের কাছে আসে এবং বলে আমি মরিনি, বরং কিছুদিনের জন্যে গায়েব হয়ে ছিলাম তোমরা কি কর তা দেখার জন্যে। এতে তারা অত্যধিক খুশী হল। সে বলল, তোমরা তোমাদের ও আমার মাঝে একটি পর্দা টাঙ্গিয়ে দাও। সেই সাথে এ সংবাদও দিল যে, সে কখনো মরবে না। অনেকেই তার এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করল। এভাবে তারা ফিতনায় পতিত হয়। তারা তার ইবাদত-উপাসনা করতে শুরু করে। আল্লাহ এদের মধ্যে এক নবী প্রেরণ করেন। নবী তাদেরকে জানান যে, এ হল শয়তান- পর্দার আড়ালে থেকে সে মানুষের সাথে কথা বলে। তিনি সবাইকে তার ইবাদত করতে নিষেধ করেন এবং এক ও লা-শারীক আল্লাহর ইবাদত করার আদেশ দেন।
সুহায়লী (র) বলেন, ঐ নবীর কাছে ঘুমের মধ্যে আল্লাহ ওহী প্রেরণ করতেন। তার নাম ছিল হানজালা ইবন সাফওয়ান (আ)। সম্প্রদায়ের লোকজন তার উপর আক্রমণ করে হত্যা করে এবং তাঁর লাশ কূপের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে কুয়ার পানি শুকিয়ে যায়। এলাকাবাসী সুখে-স্বাচ্ছন্দে থাকা সত্ত্বেও এ ঘটনার পর তারা পানির অভাবে পিপাসায় কাতর হয়। তাদের গাছপালা শুকিয়ে যায়, ফল-ফলাদি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িঘর বিনষ্ট হয়। এভাবে তারা সুখের পরে দুরবস্থায় পতিত হয়, সামাজিক ঐক্য ও সংহতি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং অবশেষে তারা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এখন তাদের বাড়িঘরে জিন-ভূত ও বন্য পশু বসবাস করে। সেখান থেকে এখন ধ্বনিত হয় জিনের শোঁ শোঁ শব্দ, বাঘের গর্জন ও হায়েনার আওয়াজ।
ইবন জারীর (র) মুহাম্মদ ইবন কা’ব আল কুরাজী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কিয়ামতে প্রথম যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে হবে একজন কৃষ্ণকায় লোক। এই কৃষ্ণকায় লোকটি সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিম্নরূপঃ আল্লাহ্ তা’আলা কোন এক জনপদে একজন নবী প্রেরণ করেন। জনপদের কোন লোকই নবীর উপর ঈমান আনল না। কেবল ঐ কৃষ্ণকায় লোকটি একাই ঈমান আনল। এলাকাবাসী নবীর উপর অত্যাচার চালায়। তারা একটি কুয়া খনন করে নবীকে তার মধ্যে ফেলে দেয় এবং বিরাট এক পাথর দ্বারা কুয়াটির মুখ বন্ধ করে দেয় এবং এ অবস্থায় কৃষ্ণকায় লোকটি জঙ্গল থেকে কাঠ এনে বিক্রি করত। বিক্রিলব্ধ টাকা দ্বারা খাদ্য ও পানীয় ক্রয় করে ঐ কুয়ায় গিয়ে পাথর সরিয়ে নিয়ে নবীর কাছে খাদ্য পানীয় নামিয়ে দিতেন এবং তারপরে পাথর দ্বারা মুখ বন্ধ করে রাখতেন। পাথরটি উঠাতে ও নামাতে আল্লাহ তাকে সাহায্য করতেন। আল্লাহর যতদিন মঞ্জুর ছিল ততদিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। অতঃপর একদিন সে নিয়মানুযায়ী কাষ্ঠ সংগ্রহ করল এবং একত্র করে রশি দ্বারা বাঁধল। যখন তা উঠিয়ে আনার সংকল্প করল হঠাৎ সে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। সুতরাং অবসাদগ্রস্ত দেহে সে ঘুমিয়ে গেল। এদিকে আল্লাহ সাত বছর যাবত তার শ্রবণ শক্তি বন্ধ করে দেন। ফলে সে এক ঘুমে সাত বছর কাটিয়ে দেয়। সাত বছর পর ঘুম ভাঙ্গলে আড়মোড়া দিয়ে পাশ ফিরে শোয়। আল্লাহ আবারও সাত বছরের জন্যে তার শ্রবণ শক্তি বন্ধ রাখেন।
সাত বছর পর আবার তার ঘুম ভাঙে। এবার সে কাষ্ঠের বোঝা বহন করে নিয়ে আসে। সে মনে মনে ভাবল, আমি হয়ত দিনের কিছু সময় ঘুমিয়েছি। বস্তিতে এসে সে পূর্বের ন্যায় কাষ্ঠ বিক্রি করে খাদ্য পানীয় ক্রয় করে। সে উক্ত খাদ্য-পানীয় নিয়ে সেই কুয়ার কাছে গেল। কিন্তু তথায় সে কোন কুয়া দেখতে পেল না। ঘটনা ছিল এই যে, নবীকে কুয়ায় নিক্ষেপ করার কিছুকাল পর এলাকাবাসী তাদের এ কর্মের পরিণতি চিন্তা করে এবং তার কিছু আভাস-ইঙ্গিত পেয়ে নবীকে তারা কুয়া থেকে বের করে আনে। তাঁর প্রতি ঈমান আনে ও তাঁকে সত্যবাদীরূপে গ্রহণ করে। নবী তাদের কাছে ঐ কৃষ্ণকায় লোকটির খবর জিজ্ঞেস করেন। তারা কৃষ্ণকায় লোকটির কোন সংবাদ জানে না বলে জানায়। আল্লাহর ঐ নবী এরপর ইন্তিকাল করেন। নবীর ইন্তিকালের পর আল্লাহ উক্ত কৃষ্ণকায় লোকটিকে ঘুম থেকে জাগ্রত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ঐ কৃষ্ণকায় লোকটিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ হাদীস মুরসাল পর্যায়ের। এতে কিছু সন্দেহের অবকাশ আছে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা সম্ভবত মুহাম্মদ ইবন কাব আল কুরাজি (র)-এর উক্তি।
ইবন জারীর (র) এ ঘটনা উল্লেখ করার পর নিজেই এর প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে কুরআনে বর্ণিত আসহাবুর রসস বলা ঠিক নয়। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে- আসহাবুর রসসকে আল্লাহ ধ্বংস করেছেন। পক্ষান্তরে এই জনগোষ্ঠী পরবর্তীতে নবীর উপর ঈমান আনে। কিন্তু ইবন জারীরের উক্ত দলীলের এই উত্তর দেয়া যায় যে, হয়ত তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন। পরে তাদের সন্তানরা কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করে। ইবন জারীর (র) অতঃপর এই মত পোষণ করেন যে, আসহাবুল উখদূদ (অগ্নিকুণ্ডের অধিপতিরা)-ই আসহাবুর রসস। কিন্তু তার এ মত অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল হওয়ার কারণ আসহাবুল উখদূদের আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আসহাবুল উখদূদ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তওবা না করলে আখিরাতে কঠোর শাস্তি ভোগ করবে, তাদের ধ্বংস হওয়ার কথা বলা হয়নি। পক্ষান্তরে, আসহাবুর রসস-এর ধ্বংস হওয়ার কথা কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, তাদের কাছে উপস্থিত কর এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত; তাদের কাছে তো এসেছিল রসূলগণ। যখন তাদের নিকট পাঠালাম দু’জন রসূল, কিন্তু তারা ওদেরকে মিথ্যাবাদী বলল; তখন আমি ওদেরকে শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা এবং ওরা বলেছিল, আমরা তো তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। তারা বলল, তোমরা তো আমাদেরই মত মানুষ, দয়াময় আল্লাহ তো কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলছ।
ওরা বলল, “আমাদের প্রতিপালক জানেন— আমরা অবশ্যই তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি। স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।’ তারা বলল, ‘আমরা তোমাদের অমঙ্গলের কারণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তোমাদেরকে অবশ্যই পাথরের আঘাতে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ হতে তোমাদের উপর মর্মন্তুদ শাস্তি অবশ্যই আপতিত হবে।’ ওরা বলল, ‘তোমাদের অমঙ্গল তোমদেরই সাথে; এটা কি এ জন্যে যে, আমরা তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি? বস্তুত তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ নগরীর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে আসল, সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! রসূলগণের অনুসরণ কর। অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথ প্রাপ্ত।
আমার কি যুক্তি আছে যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে আমি তাঁর ইবাদত করব না? আমি কি তার পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করব? দয়াময় আল্লাহ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইলে ওদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং ওরা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না। এরূপ করলে আমি অবশ্যই-স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়ব।’ ‘আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি, অতএব তোমরা আমার কথা শোন। তাকে বলা হল, ‘জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সে বলে উঠল, ‘হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত– “কি কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমি তার মৃত্যুর পর তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হতে কোন বাহিনী প্রেরণ করি নাই এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না। এটা ছিল কেবলমাত্র মহানাদ। ফলে ওরা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। (সূরা ইয়াসীনঃ ১৩-২৯)
পূর্বকালের ও পরবর্তীকালের বহুসংখ্যক আলিমের মতে, উক্ত জনপদটি ছিল এন্টিয়ক। ইবন ইসহাক (র) একথা ইবন আব্বাস (রা) কাব আল আহবার এবং ওহাব ইবন মুনাব্বিহ (র) থেকে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে বুরায়দা ইবন হাসীব, ইকরিমা, কাতাদা, যুহরী (র) প্রমুখ থেকেও এই মতটি বর্ণিত হয়েছে। ইবন ইসহাক হযরত ইবন আব্বাস (রা), কা’ব ও ওহাব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঐ জনপদের এক বাদশাহ ছিল, নাম ইনতীখাস ইবন ইনতীহাস। সে ছিল মূর্তিপূজারী। আল্লাহ তার প্রতি সাদিক, সাদূক ও শালুম নামক তিনজন রাসূল প্রেরণ করেন। কিন্তু বাদশাহ তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, উল্লেখিত তিনজনই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল ছিলেন। কিন্তু কাতাদা (র)-এর মতে, তাঁরা তিনজন ছিলেন ঈসা মাসীহ্ (আ)-এর প্রেরিত দূত। ইবন জারীর (র)ও একথা শুআয়ব আল জুব্বায়ী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উক্ত প্রেরিত তিনজনের প্রথম দু’জনের নাম শামউন ও ইউহান্না এবং তৃতীয়জনের নাম বূলাস, আর উক্ত জনপদটি ছিল ইনতাকিয়া বা এন্টিয়ক।
এ মতটি অত্যধিক দুর্বল। কেননা ঈসা মাসীহ যখন ইনতাকিয়ার অধিবাসীদের কাছে তিনজন হাওয়ারী প্রেরণ করেন, তখন ঐ শহরের বাসিন্দারাই সে সময় সর্বপ্রথম মাসীর প্রতি ঈমান আনে। এ কারণে ইনতাকিয়া শহরটি সেই চারটি শহরের অন্যতম, যে চারটি শহরে নাসারাদের গীর্জা প্রতিষ্ঠিত ছিল। শহরগুলো এই ইনতাকিয়া, কুদ্স, আলেকজান্দ্রিয়া ও রূমিয়া বা পরবর্তীকালের কনস্টান্টিনিপল। এ চার শহরের কোনটিই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। কিন্তু কুরআনে বর্ণিত উক্ত জনপদের অধিবাসীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। যেমন তাদের কাহিনীর শেষভাগে আছে, জনপদবাসী যখন রাসূলগণের সমর্থনকারী লোকটিকে হত্যা করল, তখন আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেনঃ ( إِن كَانَتۡ إِلَّا صَیۡحَة ࣰ وَ ٰ حِدَة ࣰ فَإِذَا هُمۡ خَـٰمِدُونَ ) (সে ছিল একটি মহানাদ যার আঘাতে তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে যায়।) কিন্তু যদি এরূপ ধারণা করা হয় যে, কুরআনে বর্ণিত রাসূলকে প্রাচীন কালের কোন এক সময়ে ইনতাকিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, অধিবাসীরা তাদেরকে অস্বীকার করলে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীকালে জনপদটি পুনরায় আবাদ হয় এবং মাসীহর আমলে প্রেরিত দূতগণের প্রতি তারা ঈমান আনে। তবে এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী উপরোক্ত জটিলতা থাকে না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
কুরআনে বর্ণিত উক্ত ঘটনাকে মাসীহর প্রেরিত হাওয়ারীদের ঘটনা বলে অভিহিত করার মতটি একান্তই দুর্বল— এর কারণ উপরে বলা হয়েছে। তা ছাড়া এ ঘটনা সম্পর্কে কুরআনের বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করলে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
আল্লাহ্ বলেনঃ ( وَٱضۡرِبۡ لَهُم مَّثَلًا ) (তুমি তাদের কাছে দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর) অর্থাৎ হে মুহাম্মদ! তোমার সম্প্রদায়ের কাছে বল, হে মুহাম্মদ। أَصۡحَـٰبَ ٱلۡقَرۡیَةِ (সেই জনপদের অধিবাসীদের কথা) অর্থাৎ নগরবাসীদের কথা।
إِذۡ جَاۤءَهَا ٱلۡمُرۡسَلُونَ إِذۡ أَرۡسَلۡنَاۤ إِلَیۡهِمُ ٱثۡنَیۡنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزۡنَا بِثَالِث ࣲ (যখন সেখানে রাসূলগণ আগমন করেছিল। আমি তাদের কাছে দু’জন রাসূল প্রেরণ করেছিলাম। কিন্তু ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের দ্বারা।
অর্থাৎ তৃতীয় একজনের দ্বারা পূর্বের দু’জনকে রিসালাতের ব্যাপারে সাহায্য করেছিলাম ( فَقَالُوۤا۟ إِنَّاۤ إِلَیۡكُم مُّرۡسَلُونَ ) (তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের কাছে প্রেরিত হয়েছি।) জনগণ রাসূলদের প্রত্যাখ্যান করল এই বলে যে, তোমরাও তো আমাদেরই মত সাধারণ মানুষ। পূর্ববর্তী কাফির জাতিসমূহও তাদের কাছে প্রেরিত নবীদেরকে এই একইভাবে উত্তর দিত। মানুষ আবার নবী হতে পারে, এটা ছিল তাদের কাছে এক অসম্ভব ব্যাপার। রাসূলগণ তাদেরকে বলেনঃ আল্লাহ্ জানেন যে, আমরা তোমাদের কাছে প্রেরিত রাসূল। যদি আমরা মিথ্যা দাবি করে থাকি, তবে তিনি আমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন। (( وَمَا عَلَیۡنَاۤ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِینُ ) (স্পষ্টভাবে আল্লাহর কথা তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।)
অর্থাৎ যে বাণী নিয়ে আমরা প্রেরিত হয়েছি তা তোমাদের জানিয়ে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব। তারপর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সুপথ দেখাবেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করবেন। ( قَالُوۤا۟ إِنَّا تَطَیَّرۡنَا بِكُمۡۖ ) (তারা বলল, আমরা তোমাদের অশুভ মনে করি) অর্থাৎ তোমরা যে পয়গাম নিয়ে এসেছ তা আমরা অকল্যাণকর মনে করি। لَىِٕن لَّمۡ تَنتَهُوا۟ لَنَرۡجُمَنَّكُمۡ (যদি তোমরা বিরত না হও তবে অবশ্যই আমরা তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করব।)
অর্থাৎ কথার দ্বারা আঘাত করবো, কিংবা কার্যত হত্যাই করবো। তবে পরের আয়াতটি প্রথম অর্থেরই সমর্থন করে। وَلَیَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِیم ࣱ (এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।) এ কথা দ্বারা তারা রাসূলগণকে হত্যার ও লাঞ্ছিত করার হুমকি দেয়। قَالُوا۟ طَـٰۤىِٕرُكُم مَّعَكُمۡ (রাসূলগণ বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদেরই সাথে) অর্থাৎ তোমাদের উপরই তা প্রত্যাবর্তিত হবে। أَىِٕن ذُكِّرۡتُمۚ (এটা কি এই কারণে যে, তোমাদেরকে সৎ উপদেশ দেওয়া হচ্ছে?) অর্থাৎ তোমাদেরকে আমরা সত্য পথের উপদেশ ও সে দিকে আহ্বান জানাবার কারণেই কি তোমরা আমাদেরকে হত্যার ও লাঞ্ছিত করার ভয় দেখাচ্ছ? بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡم ࣱ مُّسۡرِفُونَ (বরং তোমরাই এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। ফলে না তোমরা সত্যকে গ্রহণ করছ আর না গ্রহণ করার ইচ্ছা করছ। وَجَاۤءَ مِنۡ أَقۡصَا ٱلۡمَدِینَةِ رَجُل ࣱ یَسۡعَىٰ (অতঃপর নগরীর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে আসলো।)
অর্থাৎ রাসূলগণকে সাহায্য করার ও তাদের প্রতি নিজের ঈমান প্রকাশ করার জন্যে।
قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱتَّبِعُوا۟ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ٱتَّبِعُوا۟ مَن لَّا یَسۡـَٔلُكُمۡ أَجۡر ࣰ ا وَهُم مُّهۡتَدُونَ (সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলগণের অনুকরণ কর! অনুসরণ কর তাদের যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথ প্রাপ্ত।) অর্থাৎ তারা তো তোমাদেরকে কেবল প্রকৃত সত্য গ্রহণের আহবান করেন। এর কোন বিনিময় ও পারিশ্রমিক কামনা করেন না। অতঃপর তিনি তাদেরকে এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহকে মেনে নেয়ার জন্যে আহবান করেন এবং এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকলের ইবাদত উপাসনা ত্যাগ করার আবেদন জানান। যারা দুনিয়ায় বা আখিরাতে কোন উপকার করতে অক্ষম।
إِنِّیۤ إِذ ࣰ ا لَّفِی ضَلَـٰل ࣲ مُّبِینٍ এরূপ করলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পড়বো।
অর্থাৎ যদি আমি এক আল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করি এবং তার সাথে অন্যের ইবাদতও করি। অতঃপর ঐ ব্যক্তি রাসূলগণকে সম্বোধন করে বললেনঃ إِنِّیۤ ءَامَنتُ بِرَبِّكُمۡ فَٱسۡمَعُونِ (আমি তোমাদের রবের উপর ঈমান আনলাম, অতএব তোমরা আমার কথা শোন!) কেউ এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, আমার কথা মনোযোগ সহকারে শোন এবং আমার ঈমান আনার ব্যাপারে তোমরা তোমাদের রবের নিকট সাক্ষী দিও। কিন্তু অন্যরা এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা শুনে রাখ, আমি আল্লাহর রাসূলগণের প্রতি প্রকাশ্য ঈমান ঘোষণা করছি। এ কথা বলার পরে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে হত্যা করে। কারও কারও মতে, পাথর নিক্ষেপে; কারও কারও মতে -টুকরো করে আবার কারও কারও মতে, একযোগে সকলে তার উপর হামলা করে হত্যা করে। ইবন ইসহাক (র) ইব্ন মাসউদ-এর বরাতে লিখেছেন যে, তারা তাঁকে পায়ে পিষে তার নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে। ছাওরী (র) আবু মিজলাম (র) সূত্রে বর্ণনা করেন, ঐ ব্যক্তির নাম হাবীব ইবন মুরী। তারপর কেউ বলেছেন, তিনি ছিলেন ছুঁতার। কেউ বলেছেন, রশি প্রস্তুতকারী; কারও কারও মতে, তিনি ছিলেন জুতা প্রস্তুতকারী; কারও কারও মতে তিনি ছিলেন ধোপা। কথিত আছে যে, তিনি তথাকার একটি গুহায় ইবাদতে রত থাকতেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, হাবীবুন নাজ্জার কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন। তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁকে হত্যা করে। এই জন্যে আল্লাহ বলেছেনঃ ٱدۡخُلِ ٱلۡجَنَّةَۖ (তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর) অর্থাৎ সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তাঁকে হত্যা করল, তখন আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান। জান্নাতের শ্যামলিমা ও আনন্দ সম্ভার দেখে তিনি বলে উঠলেনঃ یَـٰلَیۡتَ قَوۡمِی یَعۡلَمُونَ بِمَا غَفَرَ لِی رَبِّی وَجَعَلَنِی مِنَ ٱلۡمُكۡرَمِینَ (হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানত যে, আমার রব আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ আমি যার প্রতি ঈমান এনেছিলাম, তারা যদি তাঁর প্রতি ঈমান আনত। ফলে তারা সে পুরস্কার লাভ করত, যে পুরস্কার আমি লাভ করেছি।)
ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ঐ ব্যক্তি তার জীবিতকালে তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে এই বলে নসীহত করেন যে, (হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলগণের অনুসরণ কর।) এবং মৃত্যুর পর এই বলে নসীহত করেনঃ
( یَـٰلَیۡتَ قَوۡمِی یَعۡلَمُونَ بِمَا غَفَرَ لِی رَبِّی وَجَعَلَنِی مِنَ ٱلۡمُكۡرَمِینَ ) (‘হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত যে, কী কারণে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন।’) ইবন আবী হাতিম (র) এটা বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে কাতাদা (র) বলেছেন, মুমিন যদি কারও সাথে সাক্ষাৎ করে, তবে অবশ্যই যেন তাকে নসীহত করে। আর আল্লাহর কোন অনুগ্রহ যদি সে দেখতে পায় তবে যেন সে তা গোপন না রাখে।
‘হায়, আমার সম্প্রদায় যদি জানত যে, আল্লাহ আমাকে কী কারণে ক্ষমা করে দিয়েছেন ও সম্মানিত করেছেন। আল্লাহর যে অনুগ্রহ ও করুণা সে প্রত্যক্ষ করেছে ও যে নিয়ামত সে ভোগ করছে তার উপর সে আক্ষেপ করে বলছে যে, আল্লাহ যদি আমার সম্প্রদায়কে এ অবস্থাটা জানিয়ে দিতেন তাহলে কতই না উত্তম হত! কাতাদা (র) বলেছেন, আল্লাহ তাঁর এ আক্ষেপ পূরণ করেননি। তাঁকে হত্যা করার পর আল্লাহ তাঁর সম্প্রদায়কে যে শাস্তি দেন তা হল এইঃ—
‘আমি তার মৃত্যুর পর তার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ থেকে কোন বাহিনী প্রেরণ করিনি। এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না। অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দানের জন্যে আকাশ থেকে কোন বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে পাঠাবার প্রয়োজন আমার নেই। ইব্ন ইসহাক (র) এরূপ অর্থ ইব্ন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। মুজাহিদ ও কাতাদা (র) বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন সৈন্য পাঠান নাই, এর অর্থ অন্য কোন রাসূল পাঠান নাই। ইব্ন জারির (র) বলেন, প্রথম অর্থই উত্তম ও অধিক শক্তিশালী। এ কারণেই বলা হয়েছে
وَمَا كُنَّا مُنزِلِینَ
অর্থাৎ তারা যখন আমার রাসূলগণকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং আমার ওলী ও বন্ধুকে (অর্থাৎ তৃতীয় ব্যক্তিকে) হত্যা করেছে, তখন তাদের শাস্তি দানের জন্যে কোন বাহিনী পাঠাবার কোন প্রয়োজন আমার ছিল না।
(তা ছিল শুধু একটি মহানাদ যার ফলে তারা ধ্বংস হয়ে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেল।)
মুফাসসিরগণ বলেছেন, আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে জিবরাঈল (আ)-কে পাঠান। জিবরাঈল (আ) তাদের নগর তোরণের চৌকাঠ দুটি ধরে একটি মাত্র চিৎকার ধ্বনি দেন। ফলে নগরবাসী স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের কথাবার্তার আওয়াজ ও চলাফেরার গতি বন্ধ হয়ে নীরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়, পলক, মারার মত একটি চক্ষুও অবশিষ্ট ছিল না। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আলোচ্য জনপদ ইনতাকিয়া নয়। কেননা এরা আল্লাহর রাসূলগণকে অস্বীকার করার ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। আর ইনতাকিয়ার অধিবাসীরা মাসীহ্র প্রেরিত হওয়ারী দূতদের প্রতি ঈমান ও আনুগত্য প্রদর্শন করে। এ কারণেই বলা হয়েছে যে, ইনতাকিয়া-ই প্রথম নগরী যেখানকার অধিবাসীরা ঈসা মাসীহ (আ)-এর উপর ঈমান এনেছিল। তবে এ ক্ষেত্রে তাবারানী (র) ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তিন লোক অগ্রগামী অর্থাৎ সকলের আগে ঈমান এনেছে। তন্মধ্যে মূসা (আ)-এর প্রতি সর্বাগ্রে ঈমান আনেন ইউশা ইব্ন নূন; ঈসা (আ)-এর উপর সর্বপ্রথম ঈমান আনেন সাহিবে ইয়াসীন অর্থাৎ সূরা ইয়াসীনে বর্ণিত লোকটি এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি সর্বাগ্রে ঈমান আনেন আলী ইব্ন আবী তালিব। এ হাদীস দুটি প্রামাণ্য নয়। কারণ এ হাদীসের অন্যতম বর্ণনাকারী হুসায়ন মুহাদ্দিসদের নিকট পরিত্যক্ত। তাছাড়া সে একজন চরমপন্থী শী‘আ। সে একাই এ হাদীস বর্ণনা করেছে, অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। এটা তার একান্তই দুর্বল হওয়ার প্রমাণ। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/64
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।