মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অর্থাৎ, স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি। তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংস স্তুতি ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, আমি যা জানি তোমরা জান না।
এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সে সমুদয় ফেরেশতার সম্মুখে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, তোমরা আমাকে এ সবের নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়।
তিনি বললেন, হে আদম! তাদেরকে এ সকল নাম বলে দাও। যখন সে তাদেরকে এ সকল নাম বলে দিল, তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ আমি তাও জানি?
আর যখন ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
এবং আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না। হলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করল। আমি বললাম, তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও, পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।
তারপর আদম তার প্রতিপালকের নিকট থেকে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলো। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমা পরবশ হলেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আমি বললাম, তোমরা সকলেই এ স্থান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। যারা কুফরী করে ও আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে তারাই জাহান্নামী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (২ঃ ৩০-৩৯)
অর্থাৎ হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন। এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাজ্ঞা কর এবং সতর্ক থাক আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।(৪ঃ ১)
অর্থাৎ হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন। (৪৯ঃ ১৩)
অর্থাৎ আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করি, তারপর রূপদান করি, তারপর ফেরেশতাদের আদমকে সিজদা করতে বলি, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করে। যারা সিজদা করল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।
তিনি বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন সিজদা করা থেকে কিসে তোমাকে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ; আমাকে তুমি আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি দিয়ে। তিনি বললেন, এখান থেকে তুমি নেমে যাও, এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে তা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।
সে বলল, পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে তুমি অবকাশ দাও। তিনি বললেন, যাদেরকে অবকাশ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে। ইবলীস বলল, তুমি আমাকে শাস্তি দান করলে, তাই আমিও নিঃসন্দেহে তোমার সরল পথে মানুষের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে তাদের নিকট আসবই এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না।
তিনি বললেন, এখান থেকে তুমি ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও; মানুষের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই। আর বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যা এবং যেখানে ইচ্ছা আহার কর কিন্তু এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। অন্যথায় তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
তারপর তাদের গোপন করে রাখা লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা চিরস্থায়ী হও—এ জন্য তোমাদের প্রতিপালক এ বৃক্ষ সম্বন্ধে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। এবং সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমি তোমাদের হিতাকাক্ষীদের একজন।
এভাবে সে প্রবঞ্চনা দ্বারা তাদেরকে অধঃপতিত করল। তারপর যখন তারা সে বৃক্ষফল আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে লাগল। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছি, তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর; তা হলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
তিনি বললেন, তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে দাও এবং পৃথিবীতে কিছু দিনের জন্যে তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল। তিনি বললেন, সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের বের করে আনা হবে। (৭ঃ ১১-২৫)
অর্থাৎ আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে এবং তার পূর্বে সৃষ্টি করেছি জিন জাতিকে অতি উষ্ণ বায়ুর উত্তাপ থেকে। স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব; তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় পড়ে যেয়ো। তখন ফেরেশতাগণ সকলেই সিজদা করল কিন্তু ইবলীস সিজদা করল না। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।
আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! কি ব্যাপার তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না যে! সে বলল, আমি এমন মানুষকে সিজদা করবার নই, যাকে আপনি ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারণ তুমি বিতাড়িত এবং কিয়ামত পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল লা’নত।
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, যাও অবধারিত সময় আসা পর্যন্ত তোমাকে অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, সে জন্য আমি পৃথিবীতে পাপকর্মকে মানুষের সামনে শোভন করে উপস্থাপন করব এবং আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত তাদের সকলকেই আমি বিপথগামী করে ছাড়ব।
আল্লাহ বললেন, এ হলো আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ। বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে; তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না। তোমার অনুসারীদের সকলেরই নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম। যার সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্য আছে পৃথক পৃথক দল। (১৫ঃ ২৬-৪৪)
অর্থাৎ স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে বলল, যাকে আপনি কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, আমি কি তাকে সিজদা করব?
সে আরো বলল, বলুন, ওকে যে আপনি আমার উপর উচ্চ মর্যাদা দান করলেন, তা কেন? আপনি যদি কিয়ামত পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন; তবে অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরকে আমি আমার কর্তৃত্বাধীন করে ফেলব।
আল্লাহ বললেন, যাও তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে; জাহান্নামই হবে তোমাদের সকলের শাস্তি পূর্ণ শাস্তি। তোমার আহবানে ওদের মধ্যকার যাদেরকে পার পদস্খলিত কর, তুমি তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও আর তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়; তা ছলনা মাত্র। আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। কর্মবিধায়ক হিসাবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।(১৭ঃ ৬১-৬৫)
অর্থাৎ, আর স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদা করল। সে জিনদের একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল, তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। জালিমদের এ বিনিময় কত নিকৃষ্ট।(১৮ঃ ৫০)
অর্থাৎ আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল, আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি। স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদমের প্রতি সিজদা কর; তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল; সে অমান্য করল। তারপর আমি বললাম, হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু; সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুঃখ পাবে। তোমার জন্য এই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না ও নগ্নও হবে না এবং তথায় পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্রক্লিষ্টও হবে না।
তারপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রদ গাছের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা? তারপর তারা তা থেকে ভক্ষণ করল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল। আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হলো। এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন, তার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হলেন ও তাকে পথ-নির্দেশ করলেন।
তিনি বললেন, তোমরা একই সাথে জান্নাত থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎ পথের নির্দেশ আসলে যে আমার অনুসরণ করবে, সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না। যে আমার স্মরণে বিমুখ তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন তুমি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো চক্ষুস্মান ছিলাম।
তিনি বলবেন, এরূপই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তুমিও বিস্মৃত হলে। (২০ঃ ১১৫-১২৬)
অর্থাৎ বল, এ এক মহা সংবাদ, যা থেকে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ; ঊর্ধ্বলোকে তাদের বাদানুবাদ সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান ছিল না। আমার কাছে তো এ ওহী এসেছে যে, আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।
স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি কাদা মাটি থেকে, যখন আমি তাকে সুষম করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো। তখন ইবলীস ব্যতীত ফেরেশতারা সকলেই সিজদাবনত হলো। সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
তিনি বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তার থেকে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে। তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা’নত স্থায়ী হবে কমল দিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব, তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদের নয়।
তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য; আর আমি সত্যই বলি— তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই। বল, এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। এতো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ মাত্র। এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে কিছুকাল পরে। (৩৮ঃ ৬৭-৮৮)
এ হলো কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে আদম (আ)-এর সৃষ্টির বিবরণ। আমি তাফসীরে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখানে আমি উপরোক্ত আয়াতসমূহের সারমর্ম এবং এসব আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসসমূহ উল্লেখ করেছি। আল্লাহই তওফীক দাতা। আল্লাহ্ তা’আলা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
[Surat Al-Baqarah 30]
অর্থাৎ “পৃথিবীতে আমি প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি” (২ঃ ৩০)
এ ঘোষণায় আল্লাহ তা’আলা আদম ও তার এমন বংশধরদের সৃষ্টি করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন; যারা একে অপরের প্রতিনিধিত্ব করবে। যেমন এক আয়াতে তিনি বলেনঃ
যাহোক, এ ঘোষণা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা সংকল্প ব্যক্ত করণার্থে ফেরেশতাদেরকে আদম (আ) ও তাঁর বংশধরদের সৃষ্টি করার কথা জানিয়ে দেন। যেমন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আগাম সংবাদ দেওয়া হয়ে থাকে। ঘোষণা শুনে ফেরেশতাগণ বললেনঃ
অর্থাৎ—“আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে সেখানে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে?” (২ঃ ৩০)
উল্লেখ্য যে, ফেরেশতাগণ বিষয়টির তাৎপর্য জানা এবং তার রহস্য সম্পর্কে অবগতি লাভ করার উদ্দেশ্যে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আপত্তি তোলা, আদম সন্তানদের অমর্যাদা বা তাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। যেমন কোন কোন অজ্ঞ মুফাসসির ধারণা করেছেন। তারা বলেছিলেন, আপনি কি পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ও রক্তপাতকারী কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন? এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, আদমের পূর্বে যে জিন ও বিন জাতির বসবাস ছিল; তাদের কার্যকলাপ দেখে ফেরেশতাগণ জানতে পেরেছিলেন যে, আগামীতেও এমন অঘটন ঘটবে। এটা কাতাদার অভিমত।
আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা) বলেনঃ আদম (আ)-এর পূর্বে জিন জাতি দু’হাজার বছর বসবাস করে। তারা রক্তপাতে লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে এক ফেরেশতা বাহিনী প্রেরণ করেন। তারা তাদেরকে বিভিন্ন দ্বীপে তাড়িয়ে দেন। ইবন আব্বাস (রা) থেকেও এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। হাসান (র) থেকে বর্ণিত যে, ফেরেশতাগণের প্রতি এ তথ্য ইলহাম করা হয়েছিল। কেউ বলেন, লাওহে মাহফুজ থেকে তারা এ ব্যাপারে অবগত হয়েছিলেন। কেউ বলেন, মারূত ও হারূত তাদেরকে তা অবগত করেছিলেন। তাঁরা দুজন তা জানতে পেরেছিলেন তাদের উপরস্থ শাজাল নামক এক ফেরেশতা থেকে। ইবন আবু হাতিম (র) আবু জাফর বাকির (র) সূত্রে এটা বর্ণনা করেন। কেউ কেউ বলেন, তাদের একথা জানা ছিল যে, মাটি থেকে সৃষ্ট জীবের স্বভাব এরূপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ونحن نسبح بحمدك ونقدسلك .
অর্থাৎ—আমরা সর্বদা আপনার ইবাদত করি। আমাদের মধ্যকার কেউ আপনার অবাধ্যতা করে না। এখন যদি এদেরকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য এই হয় যে, তারা আপনার ইবাদত করবে; তবে আমরাই তো রাত-দিন অবিশ্রান্তভাবে একাজে নিয়োজিত রয়েছি।
قال اني اعلم ما لا تعلمون
অর্থাৎ—এদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে যে কী সার্থকতা রয়েছে; তা আমি জানি—তোমরা জান না। অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে এদেরই মধ্য থেকে বহু নবী-রাসূল, সিদ্দীক ও শহীদের আবির্ভাব হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা ইলমের ক্ষেত্রে ফেরেশতাগণের উপর আদমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা ব্যক্ত করে বলেন
علم آدم الأسماء
অর্থাৎ- “এবং তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন।” ইবন আব্বাস (রা) বলেন, তাহলো, এসব নাম যদ্বারা মানুষ পরিচিতি লাভ করে থাকে। যেমন মানুষ, জীব, ভূমি, স্থলভাগ ও জলভাগ, পাহাড়-পর্বত, উট-গাধা ইত্যাদি। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ডেগ-ডেকচি, থালা-বাসন থেকে আরম্ভ করে অধঃবায়ু নির্গমনের নাম পর্যন্ত শিক্ষা দেন। মুজাহিদ (র) বলেন, আল্লাহ তাঁকে সকল জীব-জন্তু পশু-পক্ষী ও সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন।
সাঈদ ইবন জুবায়র (রা) এবং কাতাদা (র) প্রমুখও এরূপ বলেছেন। রাবী বলেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ফেরেশতাগণের নামসমূহ শিক্ষা দেন। আবদুর রহমান ইব্ন যায়দ (র) বলেন, আল্লাহ তাকে তার সন্তানদের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। তবে সঠিক কথা হলো, আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)-কে ছোট-বড় সকল বস্তু ও তার গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্যের নাম শিক্ষা দেন। ইবন আব্বাস (রা) এদিকে ইংগিত করেছেন।
ইমাম বুখারী (র) ও মুসলিম (র) এ প্রসংগে আনাস ইবন মালিক (রা), কাতাদা এবং সাঈদ ও হিশামের সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ সমবেত হয়ে বলবে, আল্লাহর নিকট সুপারিশ করার জন্য আমরা যদি কারো কাছে আবেদন করতাম! এই বলে তারা আদম (আ)-এর কাছে এসে বলবে, আপনি মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ কুদরতী হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার ফেরেশতাগণকে আপনার সামনে সিজদাবনত করেছেন ও আপনাকে যাবতীয় বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন .....।
অর্থাৎ “তারপর সেগুলো ফেরেশতাগণের সম্মুখে পেশ করলেন এবং বললেন, তোমরা আমাকে এ সবের নাম বলে দাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।” (২ঃ ৩১)।
হাসান বসরী (র) বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করতে চাইলে ফেরেশতারা বললেন, আমাদের রব যাকেই সৃষ্টি করুন না কেন আমরাই তার চাইতে বেশি জ্ঞানী প্রতিপন্ন হবো। তাই এভাবে তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়। ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’ বলে এদিকেই ইংগিত করা হয়েছে। এ প্রসংগে আরো বিভিন্ন মুফাসসির বিভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। আমি তাফসীরে তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
অর্থাৎ-“তারা (ফেরেশতারা) বলল, আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়। (২ঃ ৩২)
অর্থাৎ আল্লাহ বললেন, হে আদম! তাদেরকে এগুলোর নাম বলে দাও। যখন সে এ সকল নাম বলে দিল, তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ আমি তাও জানি? (২ঃ ৩৩)
অর্থাৎ আমি প্রকাশ্যটা যেমন জানি, গোপনটাও ঠিক তেমনই জানি। কেউ কেউ বলেন, ‘তোমরা যা ব্যক্ত কর’ বলতে তাদের পূর্বেকার বক্তব্য ( اتجعل فيها من يفسد فيها ) -কে বুঝানো হয়েছে ‘আর তোমরা যা গোপন রাখ’ দ্বারা ইবলীসের মনে গুপ্ত সে অহংকার ও নিজেকে আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মনে করাই বুঝানো হয়েছে। সাঈদ ইবন জুবায়র, মুজাহিদ, সুদ্দী যাহ্হাক ও ছাওরী (র) এ কথা বলেছেন এবং ইবন জারীর (র) তা সমর্থন করেছেন।
আবুল ‘আলিয়া, রবী, হাসান ও কাতাদা (র) বলেনঃ وما كنتم تكتمون দ্বারা ফেরেশতাদের বক্তব্য, ‘আমাদের রব যাকেই সৃষ্টি করুন না কেন আমরা তার চেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং বেশি সম্মানিত-ই থাকব’ এ বক্তব্যটির কথা বুঝানো হয়েছে। এবং -
এটা আদমের প্রতি আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত বিরাট বড় সম্মানের বহিঃপ্রকাশ যা তিনি তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করে তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করার পর প্রদর্শন করেছিলেন। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ “আমি যখন তাকে সুঠাম করব এবং তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো।” (১৫ঃ ২৯)
মোটকথা, আদম (আ)-কে আল্লাহ তাআলা চারটি মর্যাদা দান করেছেনঃ (১) তাঁকে নিজের পবিত্র হাতে সৃষ্টি করা, (২) তাঁর মধ্যে নিজের রূহ থেকে সঞ্চার করা, (৩) ফেরেশতাগণকে তাকে সিজদা করার আদেশ দান ও (৪) তাকে বন্ধু নিচয়ের নাম শিক্ষা দান। এ জন্যই ঊর্ধজগতে মূসা কালীম (আ) ও আদম (আ)-এর সাক্ষাৎ হলে বাদানুবাদ প্রসংগে মূসা (আ) তাকে বলেছিলেনঃ “আপনি মানব জাতির পিতা আদম (আ)। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আপনার মধ্যে তিনি নিজের রূহ থেকে সঞ্চার করেছেন, তাঁর ফেরেশতাগণকে তিনি আপনার সামনে সিজদাবনত করিয়েছেন এবং আপনাকে বস্তু নিচয়ের নাম শিক্ষা দিয়েছেন।” কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সমবেত লোকজন এরূপ বলবে। এতদসংক্রান্ত আলোচনা পূর্বেও হয়েছে এবং একটু পরে আবারো আসবে ইনশাআল্লাহ।
অর্থাৎ—তোমাদেরকে আমি সৃষ্টি করি, তারপর তোমাদের রূপ দান করি, তারপর ফেরেশতাদেরকে বলি, আদমকে সিজদা কর। ইবলীস ব্যতীত তারা সকলেই সিজদাবনত হয়। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।
আল্লাহ বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কিসে তোমাকে সিজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আমাকে তুমি সৃষ্টি করেছ আগুন দিয়ে আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি দিয়ে। (৭ঃ ১১-১২)
হাসান বসরী (র) বলেন, ইবলীস এখানে যুক্তি প্রয়োগের আশ্রয় নিয়েছিল। আর সে-ই সর্বপ্রথম যুক্তি প্রয়োগকারী। মুহাম্মদ ইবন শিরীন (র) বলেন, সর্বপ্রথম যে যুক্তির অবতারণা করেছিল, সে হলো ইবলীস। আর যুক্তির উপর নির্ভর করেই সূর্য ও চন্দ্রের পূজা করা হয়ে থাকে। ইবনে জারীর (র) এ দুটি রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ইবলীস নিজেকে তার ও আদমের মাঝে তুলনামূলক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে আদমের চাইতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে। ফলে তার এবং সকল ফেরেশতার প্রতি সিজদার আদেশ থাকা সত্ত্বেও সে সিজদা করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যুক্তি যখন ( نص ) স্পষ্ট নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক হয়; তখন তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। তদুপরি ইবলীসের এ যুক্তিটিই মূলত ভ্রান্ত। কেননা মাটি আগুন অপেক্ষা বেশি উপকারী ও উত্তম। কারণ মাটির মধ্যে আছে গাম্ভীর্য, সহনশীলতা, কোমলতা ও উর্বরতা। পক্ষান্তরে আগুনে আছে অস্থিরতা, অধীরতা, ঝোঁক প্রবণতা ও দহন প্রবণতা। তাছাড়া আপন কুদরতী হাতে সৃষ্টি করে ও নিজের রূহ থেকে সঞ্চার করে আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)-কে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। আর এ কারণেই তাকে সিজদা করার জন্য আল্লাহ্ ফেরেশতাগণকে আদেশ করেছিলেন। যেমন, এক স্থানে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক যখন বললেন, আমি ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করছি, যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার রূহ্ সঞ্চার করব; তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো। তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল। আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! তোমার কি হলো যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?
ইবলীস বলল, আপনি ছাঁচে-ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি হতে যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; তাকে আমি সিজদা করবার নই। আল্লাহ্ বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারণ তুমি বিতাড়িত এবং কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল অভিশাপ। (১৫ঃ ২৮-৩৫)
আল্লাহ্ তা’আলার শুকনো থেকে ইবলীসের এ পরিণতির কারণ এই ছিল যে, একদিকে আদম (আ)-কে তুচ্ছ করায় এবং নিজেকে আদমের চাইতে মর্যাদাবান জ্ঞান করায় সে আদম (আ)-এর ব্যাপারে আল্লাহর সুনির্দিষ্ট আদেশের বিরোধিতা এবং সত্যদ্রোহিতার অপরাধে অপরাধী হয়। অপরদিকে সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে নিষ্ফল যুক্তি-তর্কের অবতারণা করে। বলা বাহুল্য যে, ইবলীস নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার অপচেষ্টা তার মূল অপরাধের চাইতেও জঘন্যতর ছিল। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে বলল, আমি কি তাকে সিজদা করব যাকে আপনি কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?
সে বলেছিল, বলুন তো এ সে ব্যক্তি যাকে আপনি আমার উপর উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন? আপনি যদি কিয়ামত পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন, তবে অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরগণকে আমি আমার কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসবো।
আল্লাহ্ বললেন, যাও তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, জাহান্নামই তোমাদের সকলের শাস্তি, পূর্ণ শাস্তি। তোমার আহ্বানে তুমি তাদের মধ্য থেকে যাকে পার পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও ও তাদের প্রতিশ্রুতি দাও। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র। আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই। কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (১৭ঃ ৫১-৫৪)
অর্থাৎ- স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে জিনদের একজন ছিল।ফলে সে ইচ্ছাকৃতভাবে হঠকারিতা ও অহংকারবশত আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যায়। (১৮ঃ ৫০)
আগুনের সৃষ্ট হওয়ার কারণে তার স্বভাব এবং তার মন্দ উপাদানই তাকে এ অধঃপতনের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ইবলীস যে আগুনের সৃষ্টি তা তার নিজের বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত।
তাছাড়া সহীহ মুসলিমে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “ফেরেশতাগণকে নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন অগ্নিশিখা হতে এবং আদমকে যা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে তা তো তোমাদের কাছে বিবৃত হয়েছে।”
হাসান বসরী (র) বলেনঃ ইবলীস এক পলকের জন্যও ফেরেশতাগণের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। শাহর ইব্ন হাওশাব (র) বলেন, ইবলীস জিন দলভুক্ত ছিল। যখন তারা পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের নিকট একটি ফেরেশতা বাহিনী প্রেরণ করেন। ফেরেশতাগণ তাদের কতককে হত্যা করেন, কতককে বিভিন্ন দ্বীপে নির্বাসন দেন এবং কতককে বন্দী করেন। ইবলীস ছিল বন্দীদের একজন। ফেরেশতাগণ তাকে ধরে সঙ্গে করে আকাশে নিয়ে যান এবং সে সেখানেই রয়ে যায়। তারপর যখন ফেরেশতাগণকে সিজদার আদেশ করা হয় তখন ইবলীস সিজদা থেকে বিরত থাকে।
ইবন মাসউদ ও ইবন আব্বাস (রা)-সহ একদল সাহাবা এবং সাঈদ ইবন মুসায়াব (রা) প্রমুখ বলেন, ইবলীস সর্বনিম্ন আকাশের ফেরেশতাগণের নেতা ছিল। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, তার নাম ছিল আযাযীল। হারিস (র) থেকে বর্ণিত এক বর্ণনায় আছে যে, আবূ কারদূস নাক্কাশ (র) বলেন, ইবন আব্বাস (রা) বলেছেনঃ ইবলীস ফেরেশতাগণের একটি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদেরকে জিন বলা হতো। এরা জান্নাতের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। ইলম ও ইবাদতে ইবলীস ছিল এদের সকলের সেরা। তখন তার চারটি ডানাও ছিল। পরে তার রূপ বিকৃতি ঘটিয়ে আল্লাহ তা’আলা তাকে বিতাড়িত শয়তানে পরিণত করেন।
অর্থাৎ—স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা মাটি থেকে। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদাবনত হলো—কেবল ইবলীস ব্যতীত, সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
তিনি বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম, তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে।
তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা’নত স্থায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত।
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে—অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয়।
তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য আর আমি সত্যই বলি– তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই। (৩৮ঃ ৭১-৮৫)
সে বলল, আপনি আমাকে উদভ্রান্ত করলেন , এ জন্য আমিও তোমার সরল পথে নিশ্চয় ওঁৎ পেতে বসে থাকব। তারপর আমি তাদের নিকট আসবই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ ও বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞরূপে পাবে না। (৭ঃ ১৬-১৭)
অর্থাৎ তোমার আমাকে উদভ্রান্ত করার ফলে আমি ঘাটে ঘাটে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকব এবং তাদের কাছে তাদের সকল দিক থেকেই আসব। অতএব, ভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে তার বিরুদ্ধাচরণ করবে, আর যে তার অনুসরণ করবে সে হলো হতভাগা।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, সুবরা ইবন আবুল ফাকিহ (র) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান আদম (আ)-এর সন্তানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য অলিতে-গলিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকে। ইবলীসের পরিচিতিতে আমি এ হাদীসটি উল্লেখ করেছি।
আদম (আ)-কে সিজদা করার জন্য আদিষ্ট ফেরেশতাগণের ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মতভেদ রয়েছে যে, এ আদেশটি সকল ফেরেশতার জন্য নয়, কেবল পৃথিবীর ফেরেশতাগণের জন্য ছিল? জমহুর আলিমগণের মতে, সকল ফেরেশতার জন্যেই এ আদেশটি ছিল। যেমন কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের ব্যাপকতার দ্বারা বোঝা যায়। পক্ষান্তরে ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে যাহ্হাক (র)-এর সূত্রে ইবন জারীর শুধুমাত্র পৃথিবীর ফেরেশতাগণের আদিষ্ট হওয়ার কথা বর্ণনা করেন। তবে এ সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে এবং বর্ণনাটিতে অপরিচিতি জনিত দুর্বলতা রয়েছে। পরবর্তী যুগের আলিমগণের কেউ কেউ এ দ্বিতীয় অভিমতটি প্রাধান্য দিলেও বর্ণনাভঙ্গি অনুসারে প্রথমটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। ‘এবং তিনি তাঁর ফেরেশতাদেরকে তার সম্মুখে সিজদাবনত করান’ এ হাদীসটিও এর সপক্ষে প্রমাণ বহন করে। এ হাদীসটি ব্যাপক। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
اهبط منها ‘তুমি এখান থেকে নেমে যাও’ এবং اخرج منها ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও’ ইবলীসের প্রতি আল্লাহ্ তা’আলার এ আদেশ প্রমাণ করে যে, ইবলীস আকাশে ছিল। পরে তাকে সেখান থেকে নেমে যাওয়ার এবং নিজের ইবাদত ও আনুগত্যে ফেরেশতাগণের সাদৃশ্য অবলম্বনের ফলে যে পদমর্যাদা সে লাভ করেছিল; তা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। তারপর অহংকার, হিংসা ও তার রব-এর বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে তার সে পদমর্যাদা ছিনিয়ে নেয়া হয় এবং ধিককৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় তাকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আ)-কে নিজ স্ত্রীসহ জান্নাতে বসবাস করার আদেশ দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—এবং আমি বললাম, হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না; হলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (২ঃ ৩৫)
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, এ স্থান থেকে তুমি ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও। মানুষের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবই।
আর হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা আহার কর; কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, হলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (৭ঃ ১৮-১৯)
অর্থাৎ—স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদমের প্রতি সিজদাবনত হও; তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল, সে অমান্য করল। তারপর আমি বললাম, হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুঃখ পাবে। তোমার জন্য এই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না; এবং সেথায় পিপাসার্ত হবে না এবং রৌদ্র-ক্লিষ্টও হবে না। (২০ঃ ১১৬-১১৯)
এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, হাওয়া (আ)-এর সৃষ্টি আদম (আ)-এর জান্নাতে প্রবেশের আগেই হয়েছিল। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর।” ইসহাক ইবন বাশার (র) স্পষ্টরূপেই এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
কিন্তু সুদ্দী আবূ সালিহ ও আবু মালিকের সূত্রে ইবন আব্বাস (রা) থেকে এবং মুররা-এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রা) ও কতিপয় সাহাবা থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইবলীসকে জান্নাত থেকে বের করে দেন। আদম (আ)-কে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। আদম (আ) তথায় নিঃসঙ্গ একাকী ঘুরে বেড়াতে থাকেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী নেই, যার কাছে গিয়ে একটু শান্তি লাভ করা যায়। এক সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। জাগ্রত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তাঁর শিয়রে একজন নারী উপবিষ্ট রয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে আদম (আ)-এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেন। দেখে আদম (আ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে হে? তিনি বললেনঃ আমি একজন নারী। আদম (আ) বললেন, তোমাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, যাতে আপনি আমার কাছে শান্তি পান। তখন ফেরেশতাগণ আদম (আ)-এর জ্ঞানবত্তা যাচাই করার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আদম! উনার নাম কি বলুন তো! আদম (আ) বললেন, হাওয়া। আবার তারা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা হাওয়া নাম হলো কেন? আদম (আ) বললেন, কারণ তাকে ‘হাই’ (জীবন্ত সত্তা) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র) ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হাওয়াকে আদম (আ)-এর বাম পাজরের সবচাইতে ছোট হাড় থেকে সৃষ্টি করা হযেছে। তখন আদম (আ) ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে সে স্থানটি আবার গোশত দ্বারা পূরণ করে দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন এবং তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন। (৪ঃ ১)
অর্থাৎ—তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সঙ্গে সংগত হয়, তখন সে এক লঘু গর্ভধারণ করে এবং তা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। (৭ঃ ১৮৯)
এ বিষয়ে ইনশাআল্লাহ্ পরে আরো আলোচনা করব।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ “মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর। কেননা, নারীদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের উপরের অংশটুকুই সর্বাধিক বাকা। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে এবং আপন অবস্থায় ছেড়ে দিলে তা বাঁকাই থেকে যাবে। অতএব, মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আমার সদুপদেশ গ্রহণ কর।" পাঠটি ইমাম বুখারী (র)-এর।
الاتقربا هذه الشجرة এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণের মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, গাছটি ছিল আঙুরের। ইবন আব্বাস (রা), সাঈদ ইবন জুবায়র, শাবী, জা’দা ইবন হুরায়রা, মুহাম্মদ ইবন কায়স ও সুদ্দী (র) থেকে এরূপ বর্ণিত আছে। ইবন আব্বাস, ইবন মাসঊদ (রা) এবং আরো কতিপয় সাহাবা থেকে এক বর্ণনায় আছে যে, ইহুদীদের ধারণা হলো গাছটি ছিল গমের। ইবন আব্বাস (রা), হাসান বসরী (র), ওহাব ইবন মুনাব্বিহ, অতিয়্যা আওফী, আবু মালিক, মুহারি ইবন দিছার ও আবদুর রহমান ইবন আবু লায়লা থেকেও এ কথা বর্ণিত আছে। ওহাব (র) বলেন, তার দানাগুলো ছিল মাখন অপেক্ষা নরম আর মধু অপেক্ষা মিষ্ট। ছাওরী আবু হাসীন ও আবু মালিক (র) সূত্রে বলেনঃ فمرت به এ আয়াতে যে বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে তাহলো, খেজুর গাছ। ইবন জুরায়জ মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাহলো ডুমুর গাছ। কাতাদা এবং ইবন জুরায়জও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আবুল আলিয়া বলেন, তা এমন একটি গাছ ছিল যে, তার ফল খেলেই পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু জান্নাতে পবিত্রতা নষ্ট হওয়া অনুচিত।
তবে এ মতভেদগুলো পরস্পর কাছাকাছি। কিন্তু লক্ষণীয় হলো এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা নির্দিষ্ট করে এর নাম উল্লেখ করেননি। যদি এর উল্লেখ করার মধ্যে আমাদের কোন উপকার নিহিত থাকত; তাহলে আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই নির্দিষ্ট করে তার উল্লেখ করে দিতেন। পবিত্র কুরআনের আরো বহু ক্ষেত্রে এরূপ অস্পষ্ট রাখার নজীর রয়েছে।
তবে আদম (আ) যে জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন, তার অবস্থান আসমানে না যমীনে; এ ব্যাপারে যে মতভেদ রয়েছে, তা বিস্তারিত আলোচনা ও নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। জমহুর উলামার মতে তা হচ্ছে আসমানে অবিস্থত জান্নাতুল মাওয়া। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং বিভিন্ন হাদীসে যার ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وقلنا يا دم اسكن أنت وزوجك الجنة -
অর্থাৎ আমি বললাম, হে আদম! তুমি এবং তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর।
এ আয়াতে الجنة এর আলিফ-লাম ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি বরং তদ্বারা সুনির্দিষ্ট একটি জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে। তাহলে জান্নাতুল মাওয়া। আবার যেমন মূসা (আ) আদম (আ)-কে বলেছিলেনঃ কেন আপনি আমাদেরকে এবং নিজেকে জান্নাত থেকে বের করলেন? এটি একটি হাদীসের অংশ, এ বিষয়ে পরে আলোচনা করা হবে।
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, আবূ হুরায়রা (রা) ও হুযায়ফা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহ্ তা’আলা মানব জাতিকে সমবেত করবেন। ফলে মুমিনগণ এমন সময়ে উঠে দাঁড়াবে, যখন জান্নাত তাঁদের নিকটে এসে যাবে। তারা আদম (আ)-এর কাছে এসে বলবেন, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য আপনি জান্নাত খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন! তখন তিনি বলবেন, তোমাদের পিতার অপরাধই তো তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল! ... এ হাদীসাংশ শক্তভাবে প্রমাণ করে যে, আদম (আ) যে জান্নাতে বসবাস করেছিলেন, তা হলো জান্নাতুল মাওয়া। কিন্তু এ যুক্তিটিও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
অন্যরা বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আ)-কে যে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছিলেন, তা ‘জান্নাতুল খুলদ’ তথা অনন্ত জান্নাত ছিল না। কারণ নির্দিষ্ট একটি গাছের ফল খেতে নিষেধ করে সেখানেও তার উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তিনি সেখানে নিদ্রাও যান, সেখান থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয় এবং ইবলীসও সেখানে তাঁর নিকটে উপস্থিত হয়। এ সব কটি বিষয়ই তা যে জানাতুল মাওয়া ছিল না তাই নির্দেশ করে। এ অভিমতটি উবাই ইবন কা’ব, আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রা), ওহাব ইব্ন মুনাব্বিহ ও সুফিয়ান ইবন উয়ায়না (রা) থেকে বর্ণিত। ইবন কুতায়বা তার ‘আল-মা‘আরিফ’ গ্রন্থে এবং কাযী মুনযির ইবন সাঈদ আল-বাতী তাঁর তাফসীরে এ অভিমতটির সমর্থন করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে একটি স্বতন্ত্র পুস্তকও রচনা করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (র) এবং তাঁর বিশিষ্ট শিষ্যবৃন্দ থেকেও এরূপ অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন উমর আর-রাযী ইবন খতীব আর-রাই (র) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আবুল কাসিম আল-বলখী ও আবু মুসলিম ইস্পাহানী (র) থেকে এবং কুরতুবী তাঁর তাফসীরে মুতাযিলা ও কাদরিয়্যা থেকে এ অভিমতটি উদ্ধৃত করেছেন। আহলে কিতাবদের হস্তস্থিত তাওরাতের পাঠেও এর স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। আবু মুহাম্মদ ইবন হাম ‘আল-মিলাল ও আননিহল’ গ্রন্থে এবং আবূ মুহাম্মদ ইবন আতিয়্যা ও আবূ ঈসা রুম্মানী আপন আপন তাফসীরে এ বিষয়টির মতভেদের কথা উল্লেখ করেছেন।
জমহুর উলামার বর্ণনায় প্রথম অভিমতের সমর্থন পাওয়া যায়। কাযী মাওয়ারদী (র) তাঁর তাফসীরে বলেন, আদম (আ) ও হাওয়া (আ) যে জান্নাতে বসবাস করেন, তার ব্যাপারে দু’টি অভিমত রয়েছে। প্রথমত, তা জান্নাতুল খুলদ। দ্বিতীয় অভিমত হলো, তা স্বতন্ত্র এক জান্নাত যা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের জন্য পরীক্ষা স্থল হিসাবে তৈরি করেন। এটা সে জান্নাতুল খুলদ নয়, যা আল্লাহ্ তা’আলা পুরস্কারের স্থান হিসেবে প্রস্তুত করে রেখেছেন।
এ দ্বিতীয় অভিমতের সমর্থকদের মধ্যে আবার মতভেদ রয়েছে। একদল বলেন, তার অবস্থান আসমানে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এটা হাসানের অভিমত। অপর দল বলেন, তার অবস্থান ছিল পৃথিবীতে। কেননা, আল্লাহ তাআলা সে জান্নাতে বহু ফল-ফলাদির মাঝে বিশেষ একটি গাছ সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। ইবন য়াহয়া-এর অভিমতও অনুরূপ। উল্লেখ্য যে, এ ঘটনাটি ঘটেছিল ইবলীসকে আদম (আ)-এর প্রতি সিজদাবনত হওয়ার আদেশ দেওয়ার পর। তবে এসব অভিমতের কোনটা সঠিক তা মহান আল্লাহই ভালো জানেন।
এ হলো কাযী মাওয়ারদির বক্তব্য। এতে তিনি তিনটি অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। তাঁর এ বক্তব্য থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, মাসআলাটিতে তিনি নিজের কোন সিদ্ধান্ত প্রদান থেকে বিরত রয়েছেন। আবু আবদুল্লাহ্ রাযী (র) তাঁর তাফসীরে এ মাসআলা সম্পর্কে চারটি অভিমত বর্ণনা করেছেন। কাযী মাওয়ারদির উপস্থাপিত তিনটি আর চতুর্থটি হলো এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। তাছাড়া তিনি আবূ আলী জুবায়ী (র) থেকে এ অভিমত বর্ণনা করেন যে, আদম (আ) যে জান্নাতে বসবাস করেন, তার অবস্থান আসমানে। তবে তা ‘জান্নাতুল মাওয়া নয়।
দ্বিতীয় অভিমতের সমর্থকগণ একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, যার জবাব দেওয়া আবশ্যক। তারা বলেন, এটা নিঃসন্দেহ যে, সিজদা করা থেকে বিরত থাকার দরুন আল্লাহ্ তা’আলা ইবলীসকে আপন সানিধ্য থেকে বিতাড়িত করে দেন এবং তাকে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার ও নেমে যাওয়ার আদেশ প্রদান করেন। আর এ আদেশটি কোন শরয়ী আদেশ ছিল না যে, তাঁর বিরুদ্ধাচরণের অবকাশ থাকবে বরং তা ছিল এমন অখণ্ডনীয় তকদীর সংক্রান্ত নির্দেশ যার বিরুদ্ধাচরণ বা প্রতিরোধের কোন অবকাশই থাকে না।
তাই আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا
[Surat Al-A'raf 18]
অর্থাৎ—এখান থেকে তুমি ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও। (৭ঃ ১৮)
অর্থাৎ—এ স্থান থেকে তুমি নেমে যাও, এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে, এ হতে পারে না। (৭ঃ ১৩)
( قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ
[Surat Al-Hijr 34]
অর্থাৎ—তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, কারণ তুমি অভিশপ্ত। (১৫ঃ ৩৪)।
এ আয়াতগুলোতে منها এর সর্বনামটি দ্বারা الجنة (জান্নাত) কিংবা السما (আসমান) অথবা المنزله (আবাস স্থল) বুঝানো হয়েছে। তা যাই হোক, এটা জানা কথা যে, ইবলীসকে যে স্থান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল, সেখানে সামান্যতম সময়ের জন্যেও তার অবস্থান থাকার কথা নয়—স্থায়িভাবে বসবাস রূপেই হোক, আর কেবল পথ অতিক্রম রূপেই হোক। তারা বলেন যে, কুরআনের বাহ্যিক বর্ণনাভঙ্গী থেকে এটাও প্রমাণিত যে, ইবলীস আদম (আ)-কে এই বলে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল যেঃ
অর্থাৎ—আর সে বলল, পাছে তোমরা উভয়ে ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ী হও এ জন্যই তোমাদের প্রতিপালক এ বৃক্ষ সম্বন্ধে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমি তোমাদের হিতাকাক্ষীদের একজন। এভাবে সে তাদেরকে প্রবন্ধনা দ্বারা অধঃপতিত করল। (৭ঃ ২০-২২)
এ আয়াতগুলো স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, আদম (আ) ও হাওয়ার সঙ্গে তাঁদের জান্নাতে ইবলীস-এর সাক্ষাৎ ঘটেছিল। তাদের এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে যে, নিয়মিত বসবাসের ভিত্তিতে না হলেও যাতায়াত ও আনাগোনার সুবাদে জান্নাতে আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-এর সঙ্গে ইবলীস-এর একত্রিত হওয়া বিচিত্র নয়। কিংবা এও হতে পারে যে, জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে বা আকাশের নিচে থেকে ইবলীস তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। তবে তিনটি জবাবের কোনটিই সন্দেহমুক্ত নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আদম (আ) যে জান্নাতে বসবাস করেন, তার অবস্থান পৃথিবীতে হওয়ার সপক্ষে যারা মতপোষণ করেন, তার দলিল নিম্নের হাদীস— তা হলোঃ
উবাই ইবন কা’ব (রা) সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমদ যিরাদাতে বর্ণনা করেন যে, উবাই ইবন কা’ব (রা) বলেছেন, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে আদম (আ)-এর জান্নাতের আঙ্গুর খাওয়ার আকাঙক্ষা হলে তাঁর সন্তানরা আঙ্গুরের সন্ধানে বের হন। পথে তাঁদের সঙ্গে ফেরেশতাগণের সাক্ষাৎ ঘটে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আদমের সন্তানরা! তোমরা যাচ্ছ কোথায়? তারা বললেন, আমাদের পিতা জান্নাতের এক ছড়া আঙ্গুর খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফেরেশতাগণ বললেন, “তোমরা ফিরে যাও, তোমরা তার জন্য যথেষ্ট করেছ, আর দরকার নেই।” অগত্যা তারা আদম (আ)-এর নিকট ফিরে গেলেন। ফেরেশতাগণ আদম (আ)-এর রূহ কবয করে গোসল দিয়ে সুগন্ধি মাখিয়ে তাকে কাফন পরান। তারপর অন্যান্য ফেরেশতাকে নিয়ে জিবরাঈল (আ) তার জানাযার নামায আদায় করে তাকে দাফন করেন। এরপর তারা বলল, এ হলো তোমাদের মৃতদের ব্যাপারে তোমাদের করণীয় সুন্নত। সনদসহ হাদীসটি পরে আসছে এবং আদম (আ)-এর ওফাতের আলোচনায় পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করা হবে।
এ হাদীসের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অভিমতের সমর্থকগণ বলেনঃ আদম (আ) যে জান্নাতে বসবাস করেছিলেন, তাতে পৌঁছানো যদি সম্ভব না হতো, তাহলে আদম (আ)-এর সন্তানরা তার অনুসন্ধানে বেরই হতেন না। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সে জান্নাত ছিল পৃথিবীতে আসমানে নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। এ তাঁরা আরো বলেনঃ
ويادم اسكن أنت وزوجك الجنه
আয়াতে الجنة বলতে আসমানের জান্নাত বুঝানো হয়নি বরং আদম (আ) আসমানে বক্তব্যের পূর্বাপর দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, তা ছিল দুনিয়াতে অবস্থিত। কেননা, আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে পৃথিবী থেকে। আর কোথাও এ কথার উল্লেখ পাওয়া যায় না যে, তাঁকে আসমানে তুলে নেয়া হয়েছিল। তাছাড়া তাঁকে সৃষ্টিই করা হয়েছে পৃথিবীতে থাকার জন্য।
আর আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাগণকে এ বলে তা জানিয়েও দিয়েছিলে যে,
اني جاعل في الارض خليفة
অর্থাৎ—“পৃথিবীতে আমি প্রতিনিধি বানাচ্ছি।” এর সমর্থনে তাঁরা আরেকটি নজীর হিসাবে নিমোক্ত আয়াতটি পেশ করেন।
অর্থাৎ- ‘আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম উদ্যান ওয়ালাদেরকে। (৬৮ঃ ১৭) এ আয়াতেও الجنة বলতে সকল উদ্যানকে বুঝানো হয়নি বরং তা এক বিশেষ উদ্যান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
তারা আরো বলেন, অবতরণ করার উল্লেখ আদম (আ)-এর আসমান থেকে নেমে আসার প্রমাণ বহন করে না। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ “বলা হলো, হে নূহ! তুমি নেমে এসো আমার প্রদত্ত শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যে সমস্ত সম্প্রদায় তোমার সাথে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ।” (১১ঃ ৪৮)
এখানে লক্ষণীয় যে, যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে পানি শুকিয়ে যায় এবং নৌকাটি জুদী পর্বতে গিয়ে স্থির হয়, তখন নূহ (আ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে সেখান থেকে নেমে আসার আদেশ করা হয়। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ مَا سَأَلْتُمْ
অর্থাৎ তোমরা নগরে অবতরণ কর, তোমরা যা চাও তা সেখানে আছে। (২ঃ ৬১)। আরেক আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ— কতক পাথর এমনও আছে যা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসে পড়ে। (২ঃ ৭৪) হাদীস ও অভিধানে এর অসংখ্য নজীর রয়েছে।
তারা আরো বলেনঃ এতে অসুবিধার কিছু নেই বরং এটাই বাস্তব যে, আল্লাহ তাআলা আদম (আ)-কে যে জান্নাতে থাকতে দিয়েছিলেন, তা ছিল সমগ্র ভূখণ্ড থেকে উঁচু বৃক্ষরাজি, ফল-ফলাদি, ছায়া, ভোগ-সামগ্রী ও সুখ সমৃদ্ধ একটি মনোরম উদ্যান। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ لَكَ أَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرَىٰ
অর্থাৎ সেখানে তোমার অভ্যন্তর ক্ষুধার জ্বালায় এবং বহির্দেহ রৌদ্রের দাহনে ক্লিষ্ট হবে। (২০ঃ ১১৮)
وَأَنَّكَ لَا تَظْمَأُ فِيهَا وَلَا تَضْحَىٰ
অর্থাৎ তথায় তোমার ভেতরাংশ পিপাসার উষ্ণতা এবং বহিরাংশ সূর্যের তাপ স্পর্শ করবে। (২০ঃ ১১৯)
পরস্পর সাযুজ্য থাকার কারণে আল্লাহ্ তা’আলা এ দু’আয়াতে ক্ষুধা ও বিবস্ত্রতাকে একসাথে এবং পিপাসার উষ্ণতা ও সূর্যের দাহনকে একসাথে উল্লেখ করেছেন।
তারপর নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে ফেললে আল্লাহ তা’আলা আদম (আ)-কে দুঃখ-কষ্ট, পংকিলতা, শ্রম-সাধনা, বিপদাপদ; পরীক্ষা, অধিবাসীদের দীন-ধর্ম, স্বভাব-চরিত্র, কার্যকলাপ, কামনা-বাসনা ও উচ্চারণ আচরণগত বৈপরিত্যপূর্ণ পৃথিবীপৃষ্ঠে নামিয়ে দেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ— এরপর আমি বনী ইসরাঈলকে বললাম, তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে বসবাস কর। এবং যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্র করে উপস্থিত করব। (১৭ঃ ১০৪)
কিন্তু এটা সর্বজনবিদিত যে, বনী ইসরাঈলের বসবাস এ পৃথিবীতেই ছিল— আসমানে নয়। তারা আরো বলেন, যারা বর্তমানে জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, আমরা তাদের সে বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করছি না। তাদের বক্তব্য ও আমাদের এ অভিমতের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। এ জন্যই এ দ্বিতীয় মত পোষণকারী প্রাচীন কালের সকল আলিম এবং পরবর্তী যুগের অধিকাংশ আলিমের অভিমত বর্ণিত হয়েছে; তারা বর্তমানেও জান্নাত-জাহান্নামের অস্তিত্ব রয়েছে বলে স্বীকার করেন। যেমন কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বহু বিশুদ্ধ হাদীস তার প্রমাণ বহন করে। যথাস্থানে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ।
অর্থাৎ— কিন্তু শয়তান তা থেকে তাদেরকে পদস্খলন ঘটাল (অর্থাৎ বেহেশত থেকে) এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বহিস্কৃত করল। (২ঃ ৩৬)
অর্থাৎ—জান্নাত থেকে এবং তারা যে সুখ-সম্ভোগ ও আমোদ-আহলাদে ছিলেন তা থেকে বের করে অশান্তি ও দুর্দশার জগতে নিয়ে আসলো। তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়ে এবং মোহে ফেলে শয়তান তাদের দুর্দশা ঘটায়। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ-তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, পাছে তোমরা উভয়ে ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা স্থায়ী হও এ জন্যই তোমাদের প্রতিপালক এ বৃক্ষ সম্বন্ধে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সে তাদের উভয়ের কাছে শপথ করে বলল, আমি তোমাদের হিতাকাঙক্ষীদের একজন। (৭ঃ ২০-২১)
অর্থাৎ শয়তান তাদেরকে বলল যে, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের এ বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করার কারণ হলো তা খেলে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। আর তাদেরকে এ ব্যাপারে শপথ করে বলল যে, নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের হিতকাক্ষীদের একজন। যেমন অন্য আয়াতের আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ তারপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল; সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা? (২০ঃ ১২০)।
অর্থাৎ আমি কি তোমাকে এমন বৃক্ষের সন্ধান দেব, যার ফল খেলে তুমি স্থায়ী জীবন লাভ করবে, তুমি এখন যে সুখ-সম্ভোগ ও শান্তিতে আছ; চিরজীবন তা ভোগ করতে পারবে এবং তুমি এমন রাজত্ব লাভ করবে, যার কখনো বিনাশ ঘটবে না। ইবলীসের এ বক্তব্য ছিল সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।
আলোচ্য আয়াতে شجرة الخلد এর মর্ম হচ্ছে যে, এর ফল ভক্ষণ করলে তুমি অনন্ত জীবন লাভ করবে। আবার তদ্বারা সে বৃক্ষত্ত উদ্দেশ্য হতে পারে, নিম্নোক্ত হাদীসে যার উল্লেখ রয়েছে। তাহলোঃ
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যে, আরোহী তার ছায়ায় একশ বছর ভ্রমণ করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না। তাহলো ‘শাজারাতুল খুলদ’। হাদীসটি অন্যন্য সূত্রেও বর্ণিত আছে এবং ইমাম আবু দাউদ তায়ালিসীও তার মুসনাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। গুনদুর বলেন, আমি শু’বাকে জিজ্ঞেস করলাম, এটি কি সেই শাজারাতুল খুলদ? তিনি বললেন, না বর্ণনায় ‘তাহলো’ বাক্যাংশটি নেই।
অর্থাৎ এভাবে সে তাদেরকে প্রবঞ্চনা দ্বারা অধঃপতিত করল। তারপর যখন তারা সে বৃক্ষ-ফলের আস্বাদ গ্রহণ করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং উদ্যানপত্র দ্বারা তারা তাদেরকে আবৃত করতে লাগল। (৭ঃ ২২)
অর্থাৎ— তারপর তারা তা থেকে ভক্ষণ করল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল। (২০ঃ ১২১)
আদম (আ)-এর আগেই হাওয়া (আ) বৃক্ষ-ফল ভক্ষণ করেছিলেন এবং তিনিই আদম (আ)-কে তা খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। বুখারীর নিম্নোক্ত হাদীসটি এ অর্থেই নেওয়া হয়ে থাকে।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “বনী ইসরাঈলরা না হলে গোশত পচতো না আর হাওয়া না হলে কোন নারী তার স্বামীর সঙ্গে খেয়ানত করত না।” বুখারী ও মুসলিম, আহমদ ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আহলে কিতাবদের হাতে রক্ষিত তাওরাতে আছে যে, হাওয়া (আ)-কে বৃক্ষ-ফল খাওয়ার পথ দেখিয়েছিল একটি সাপ। সাপটি ছিল অত্যন্ত সুদর্শন ও বৃহদাকার। তার কথায় হাওয়া (আ) নিজেও তা খান এবং আদম (আ)-কেও তা খাওয়ান। এ প্রসঙ্গে ইবলীসের উল্লেখ নেই। খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চোখ খুলে যায় এবং তাঁরা দুজনে আঁচ করতে পারেন যে, তারা দুজন বিবস্ত্র। ফলে তাঁরা ডুমুরের পাতা গায়ে জড়িয়ে নেন। তাওরাতে এও আছে যে, তারা বিবস্ত্রই ছিলেন। ওহাব ইবন মুনাব্বিহ (র) বলেন, আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-এর পোশাক ছিল তাদের উভয়ের লজ্জাস্থানের উপর একটি জ্যোতির আবরণ।
উল্লেখ্য যে, আহলে কিতাবদের হাতে রক্ষিত বর্তমান তাওরাতে একথাটি ভুল এবং বিকৃত এবং আরবী ভাষান্তরের প্রমাদ বিশেষ। কারণ, ভাষান্তর কর্মটি যার-তার পক্ষে সহজসাধ্য নয়। বিশেষ করে আরবী ভাষায় যার ভালো দক্ষতা নেই এবং মূল কিতাবের ভাব উদ্ধারে যিনি পটু নন, তার পক্ষে তো এ কাজটি অত্যন্ত দুরূহ। এজন্যই আহলে কিতাবদের তাওরাত আরবীকরণে শব্দ ও মর্মগত যথেষ্ট ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে। কুরআনে করীমের নিম্নোক্ত বর্ণনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আদম ও হাওয়া (আ)-এর দেহে বস্ত্র ছিল।
অর্থাৎ শয়তান তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্য বিবস্ত্র করে। (৭ঃ ২৭)
কুরআনের এ বক্তব্য তো আর অন্য কারো কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ইবন আবু হাতিম (র) বর্ণনা করেন যে, উবাই ইবন কা’ব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আ)-কে দীর্ঘকায় এবং ঘন কেশবিশিষ্ট পুরুষরূপে সৃষ্টি করেন, যেন তিনি ছিলেন দীর্ঘ এক খেজুর গাছ। তারপর যখন তিনি বৃক্ষ-ফল আস্বাদন করেন, তখন দেহ থেকে তার পোশাক খসে পড়ে। তখন সর্বপ্রথম তার যে অঙ্গটি প্রকাশ পেয়েছিল তাহলে তাঁর লজ্জাস্থান। নিজের লজ্জাস্থান দেখে তিনি জান্নাতের মধ্যে দৌড়াতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার চুল একটি বৃক্ষে আঁটকে যায়। ফলে তিনি তা টেনে নেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আদম! তুমি কি আমার থেকে পালিয়ে যাচ্ছ? আল্লাহর কথা শুনে আদম (আ) বললেন, পালাচ্ছি না হে আমার রব! লজ্জায় এমনটি করছি।
ছাওরী (র) وطفقا يخصفان من ورق الجنة এর ব্যাখ্যায় ইবন আব্বাস (রা) বলেনঃ এখানে জান্নাতের যে বৃক্ষ-পত্রের কথা বলা হয়েছে তা ছিল ডুমুর বৃক্ষের পাতা। এটাই সহীহ সনদ। সম্ভবত তা আহলি কিতাবদের বর্ণনা থেকে নেওয়া হয়েছে। আয়াতে সুস্পষ্টভাবে কোন নির্দিষ্ট পাতার কথা বলা হয়নি। আর এটা মেনে নিলেও কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
হাফিজ ইবন আসাকির (র) উবাই ইবন কা’ব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “তোমাদের পিতা আদম (আ) লম্বা খেজুর গাছের ন্যায় ষাট হাত দীর্ঘ ঘন কেশবিশিষ্ট ছিলেন এবং গোপনাঙ্গ আবৃত ছিল। তারপর জান্নাতে অপরাধ করে বসলে তার গোপনাঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ফলে তাঁকে জান্নাত থেকে বের হতে হয়। তখন একটি বৃক্ষের মুখোমুখি হলে বৃক্ষটি তার মাথার সম্মুখ ভাগের কেশগুচ্ছ ধরে ফেলে। এদিকে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ডেকে বললেন, আমার নিকট থেকে পালাতে চাও হে আদম? আদম (আ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আপনার লজ্জায় নিজ কৃতকর্মের জন্যে এমনটি করছি, হে আমার রব!
অন্যান্য সূত্রে বিশুদ্ধতর সনদে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে অনুরূপ একটি রিওয়ায়ত রয়েছেঃ
অর্থাৎ— তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হতে বারণ করিনি? এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর তবে অবশ্য আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (৭ঃ ২২-২৩)
এ হলো অপরাধের স্বীকারোক্তি, তাওবার শরণাপন্ন হওয়া এবং উপস্থিত মুহূর্তে আল্লাহর নিকট নিজের হীনতা, বিনয় ও অসহায়ত্বের অভিব্যক্তি। বলা বাহুল্য যে, আদমের সন্তানদের যে-ই অপরাধ স্বীকার করে এরূপ তাওবা করবে ইহকাল ও পরকালে তার পরিণাম মঙ্গলজনকই হবে।
অর্থাৎ আল্লাহ্ বললেন, তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু এবং পৃথিবীতে তোমাদের কিছুকাল বসবাস ও জীবিকা রয়েছে। (৭ঃ ২৪)।
আদম (আ), হাওয়া (আ) ও ইবলীসকে সম্বোধন করে এ আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কারো কারো মতে, তাদের সঙ্গে সাপটিও এ আদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সীমালংঘন করার অপরাধে তাদেরকে জান্নাত থেকে নেমে যাওয়ার এ আদেশ দেওয়া হয়।
আদম ও হাওয়া (আ)-এর সাথে সাপের উল্লেখের সপক্ষে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি হাদীস পেশ করা হয়ে থাকে। তাহলো— রাসূলুল্লাহ (সা) সাপ হত্যার আদেশ দিয়ে বলেন, যেদিনওগুলোর সাথে আমরা লড়াই করেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ওগুলোর সাথে আর আমরা সন্ধি করিনি।’ সূরা তা-হায় আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ, তোমরা দুজনে একই সঙ্গে জান্নাত থেকে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। (২০: ১২৩)
এই আদেশ হলো আদম (আ) ও ইবলীসের প্রতি। আর হাওয়া আদমের এবং সাপ ইবলীসের অনুগামী হিসাবে এ আদেশের আওতাভুক্ত। কেউ কেউ বলেন, এখানে দ্বিবচন শব্দ দ্বারা একত্রে সকলকেই আদেশ করা হয়েছে। যেমন একস্থানে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
অর্থাৎ—এবং স্মরণ কর দাউদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্য ক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার। (২১: ৭৮)
সঠিক কথা হলো—এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বহুবচন শব্দ দ্বারা দু’ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন। কেননা, বিচারক দু’ব্যক্তির মাঝে বিচার করে থাকেন। একজন বাদী অপরজন বিবাদী। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, وَكُنَّا لِحُكۡمِهِمۡ شَـٰهِدِینَ ‘আমি তাদের বিচার প্রত্যক্ষ করছিলাম।
আয়াতে আল্লাহ তা’আলা দু’বার اهبطوا বলে অবতরণের আদেশ করেছেন। এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কোন কোন মুফাসসির বলেন, প্রথম অবতরণ দ্বারা জান্নাত থেকে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসা আর দ্বিতীয়টি দ্বারা নিকটবর্তী আসমান থেকে দুনিয়াতে নেমে আসা বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাখ্যাটি দুর্বল। কারণ আল্লাহ তা’আলা প্রথম আদেশে বলেছেনঃ
অর্থাৎ-“আমি বললাম, তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও। পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।” এ আয়াত প্রমাণ করে যে, প্রথমবারেই তঁদেরকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সঠিক কথা হলো- বিষয়বস্তু এক হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা’আলা শব্দগতভাবে কথাটি দু’বার উল্লেখ করেছেন এবং প্রতিবারের সাথে একটি করে অবশ্যম্ভাবী বিধান জুড়ে দিয়েছেন। প্রথমটির সাথে জুড়ে দিয়েছেন তাদের পারস্পরিক শত্রুতা এবং দ্বিতীয়টির সাথে জুড়ে দিয়েছেন যে, পরবর্তীতে তাদের উপর যে হিদায়ত নাযিল করা হবে, যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে সে হবে ভাগ্যবান, আর যে তার বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে হবে ভাগ্যাহত। বলা বাহুল্য যে, কুরআনে করীমে এ ধরনের ভাবভঙ্গির বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
হাফিজ ইবন আসাকির (র) মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-কে তাঁর নৈকট্য থেকে বের করে দেয়ার জন্য দু’জন ফেরেশতাকে আদেশ দেন। ফলে জিবরাঈল (আ) তাঁর মাথা থেকে মুকুট উঠিয়ে নেন এবং মীকাঈল (আ) তাঁর কপাল থেকে মুকুট খুলে ফেলেন এবং একটি বৃক্ষশাখা, তাকে জড়িয়ে ধরে। তখন আদম (আ) ধারণা করলেন যে, এটা তাঁর তাৎক্ষণিক শাস্তি। তাই তিনি মাথা নিচু করে বলতে লাগলেন—ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, তুমি কি আমার নিকট থেকে পালাচ্ছো? আদম (আ) বললেন, বরং আপনার লজ্জায় এমনটি করছি, হে আমার মনিব!
আওযায়ী (র) হাসসান ইবন আতিয়্যা (র) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আদম (আ) জান্নাতে একশ’ বছরকাল অবস্থান করেন। অন্য এক বর্ণনায় ষাট বছরের উল্লেখ রয়েছে। তিনি জান্নাত হারানোর দুঃখে সত্তর বছর, অন্যায়ের অনুতাপে সত্তর বছর এবং নিহত পুত্রের শোকে চল্লিশ বছর ক্রন্দন করেন। ইবন আসাকির (র) এটি বর্ণনা করেন।
ইবন আবূ হাতিম (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, আদম (আ)-কে মক্কা ও তায়িফের মধ্যবর্তী দাহনা নামক স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। হাসান (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আদম (আ)-কে ভারতে, হাওয়া (আ)-কে জিদ্দায় এবং ইবলীসকে বসরা থেকে মাইল কয়েক দূরে দস্তমীসান নামক স্থানে নামিয়ে দেয়া হয় আর সর্পটিকে নামানো হয় ইস্পাহানে।
সূদ্দী (র) বলেন, আদম (আ) ভারতে অবতরণ করেন। আসার সময় তিনি হাজারে আসওয়াদ ও জান্নাতের এক মুঠো পাতা নিয়ে আসেন এবং এ পাতাগুলো ভারতের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে দেন। ফলে সে দেশে সুগন্ধির গাছ উৎপন্ন হয়। ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আদম (আ)-কে সাফায় এবং হাওয়া (আ)-কে মারওয়ায় নামিয়ে দেওয়া হয়। ইবন আবূ হাতিম এ তথ্যটিও বর্ণনা করেছেন।
আব্দুর রাযযাক (র) আবু মূসা আশআরী (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়ার সময় যাবতীয় বস্তুর প্রস্তুত প্রণালী শিখিয়ে দেন এবং জান্নাতের ফল-ফলাদি থেকে তার আহার্যের ব্যবস্থা করে দেন। সুতরাং তোমাদের এ ফল-মূল জান্নাতের ফল-মূল থেকেই এসেছে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এগুলোতে বিকৃতি আসে আর ওগুলোর কোন বিকৃতি নেই।
হাকিম (র) তার মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেন যে, ইবন আব্বাস (রা) বলেনঃ আদম (আ)-কে জান্নাতে শুধুমাত্র আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকু থাকতে দেয়া হয়েছিল। হাকিম (র) বলেন, হাদীসটি বুখারী, মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ, তবে তারা হাদীসটি বর্ণনা করেন নি।
সহীহ মুসলিমে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “দিনসমূহের মধ্যে জুমু’আর দিন হলো সর্বোত্তম। এ দিনে আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়, এদিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়, এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করা হয়।” সহীহ বুখারীতে অন্য এক সূত্রে আছে যে, “এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।”
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ দিবসসমূহের মধ্যে জুমুআর দিন হলো সর্বোত্তম। এদিনে আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়, এদিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়, এ দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয় এবং এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। বর্ণনাটি মুসলিমের শর্তে উত্তীর্ণ।
ইবন আসাকির (র) বর্ণনা করেন যে, আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আদম (আ) ও হাওয়া (আ)-কে বিবস্ত্র অবস্থায় একত্রে নামিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাদের দেহে জান্নাতের পাতা জড়ানো ছিল। তখন আদম (আ) অসহ্য গরম অনুভব করেন। এমনকি তিনি বসে কান্নাকাটি করতে শুরু করেন এবং হাওয়াকে লক্ষ্য করে বলেন যে, হাওয়া! গরমে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, তারপর জিবরাঈল (আ) তাঁর কাছে কিছু তুলো নিয়ে আসেন এবং হাওয়াকে সুতা কাটার আদেশ দিয়ে তাকে তা শিখিয়ে দেন। আর আদম (আ)-কে কাপড় বুননের আদেশ দেন এবং তাকে বুনন কার্য শিক্ষা দেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আদম (আ) জান্নাতে তার স্ত্রীর সংগে সহবাস করেননি; ইতিমধ্যেই বৃক্ষ-ফল খাওয়ার অপরাধে তাদেরকে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, তারা উভয়ে আলাদা শয়ন করতেন। একজন বাতহায় এবং অপরজন অন্য প্রান্তে শয়ন করতেন। একদিন জিবরাঈল (আ) এসে তাঁকে সহবাসের আদেশ দেন এবং তার পদ্ধতিও শিখিয়ে দেন। তারপর যখন আদম (আ) স্ত্রী সঙ্গম করলেন, তখন জিবরাঈল (আ) এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন? আদম (আ) বললেন, সতী-সাধ্বী পেয়েছি। ইব্ন আসাকির (র) বর্ণিত এ হাদীসটি গরীব পর্যায়ভুক্ত এবং এটি মারফু হওয়া অত্যন্ত ‘মুনকার’। কোন কোন পূর্বসূরি আলিম সাঈদ ইবন মায়সারা সম্পর্কে বলেন, ইনিই আবু ইমরান বিকরী আল-বসরী। ইমাম বুখারী (র) এ লোকটিকে মুনকারুল হাদীস বলে অভিহিত করেছেন। ইবন হিব্বান বলেন, এ লোকটি যতসব জাল হাদীস বর্ণনা করে। ইবন আদী (র) বলেন, লোকটি একান্তই অজ্ঞাত পর্যায়ের।
অর্থাৎ হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছি। আপনি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবায়র, আবুল আলিয়া, রবী ইবন আনাস, হাসান, কাতাদা, মুহাম্মদ ইবন কা’ব, খালিদ ইবন মাদান, আতা আল-খুরাসানী (র) ও আবদুর রহমান ইবন যায়দ (র) থেকে এ অভিমত বর্ণিত আছে।
ইবন আবু হাতিম (র) বর্ণনা করেন যে, উবাই ইবন কা’ব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ আদম (আ) বললেন, হে আমার রব! আমি যদি তাওবা করি ও ফিরে আসি; তাহলে আমি কি আবার জান্নাতে যেতে পারব? আল্লাহ্ বললেন, হ্যাঁ। এটাই সে বাণী যার কথা فتلقى ادم الخ আয়াতে বলা হয়েছে। এ সূত্রে হাদীসটি গরীব এবং এতে ইনকিতা তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।
ইবন আবু নাজীহ (র) মুজাহিদ (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন- ঐ বাণীগুলো হলঃ
اللهم لا اله الا انت سبحانك وبحمدك رب انى ظلمت نفسي فاغفر لي انك خير الغافرين . اللهم لا اله الا انت سبحانك وبحمدك رب اني ظلمت نفسي فاغفرلي انك خير الراحمين . اللهم لا اله الا انت سبحانك وبحمدك رب انى ظلمت نفسي فتب علي انك انت التواب
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করি। হে আমার রব! নিশ্চয় আমি আমার নিজের প্রতি অত্যাচার করেছি। অতএব, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাকারীদের সর্বোত্তম।
হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি ও প্রশংসা করি। হে আমার রব! নিশ্চয় আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি। আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি দয়ালুদের সর্বোত্তম।
হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি ও প্রশংসা করি। হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি অন্যায় করেছি। আমার প্রতি তুমি ক্ষমা পরবশ হও। নিশ্চয় তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
হাকিম (র) বর্ণনা করেন যে, ইবন আব্বাস (রা) এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ আদম (আ) বললেন, হে আমার রব! আপনি কি আমাকে আপনার নিজ কুদরতী হাতে সৃষ্টি করেননি? বলা হলো, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আপনি কি আমার দেহে আপনার রূহ সঞ্চার করেননি? বলা হলো, হ্যাঁ। তখন তিনি পুনরায় বললেন, আমি হাঁচি দিলে আপনি কি يرحمك الله (আল্লাহ্ তোমাকে রহম করুন) বলেননি এবং আপনার রহমত কি আপনার গযবের উপর প্রবল নয়? বলা হলো, হ্যাঁ। পুনরায় তিনি বললেনঃ আপনি কি একথা নির্ধারণ করে রাখেননি যে, আমি এ কাজ করব? বলা হলো, হ্যাঁ। এবার আদম (আ) বললেন, আচ্ছা, আমি যদি তাওবা করি; তাহলে আপনি পুনরায় আমাকে জান্নাতে ফিরিয়ে নেবেন কি? আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ। হাকিম বলেন, এর সনদ সহীহ কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) হাদীসটি বর্ণনা করেননি।
হাকিম, বায়হাকী ও ইবন আসাকির (র) উমর ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ “আদম (আ) যখন ভুল করে বসলেন তখন বললেন, হে আমার রব! মুহাম্মদের উসিলা দিয়ে আমি আপনার দরবারে প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন! তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, তুমি মুহাম্মদকে চিনলে কি করে অথচ এখনও তাঁকে আমি সৃষ্টি-ই করিনি? আদম (আ) বললেন, হে আমার রব! যখন আপনি আমাকে আপনার নিজ হাতে সৃষ্টি করলেন এবং আমার মধ্যে আপনার রূহ্ সঞ্চার করলেন তখন আমি মাথা তুলে আরশের স্তম্ভসমূহে لا اله الله محمد رسول الله লিখিত দেখতে পাই। তাতে আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার পবিত্র নামের সাথে আপনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো নাম যোগ করেননি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বললেন, তুমি যথার্থই বলেছ, হে আদম! নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার প্রিয়তম। তাঁর উসিলায় যখন তুমি আমার কাছে প্রার্থনা করেই ফেলেছ, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর মুহাম্মদ (সা)-কে সৃষ্টি না করলে তোমাকে আমি সৃষ্টিই করতাম না।
বায়হাকী বলেন, এ সূত্রে আবদুর রহমান ইব্ন যায়দ ইবন আসলাম-ই হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি হলেন দুর্বল রাবী। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। উল্লেখ্য যে, এ আয়াতটি নিম্নের আয়াতটির অনুরূপঃ
অর্থাৎ- আদম তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল, ফলে সে ভ্রমে পতিত হলো। এরপর তার প্রতিপালক তাকে মনোনীত করলেন, তার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হলেন ও তাকে পথ-নির্দেশ করলেন। (২০: ১২১-১২২)
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/488/31
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।