hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড

লেখকঃ আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (র)

৪৯
ইসমাঈল (আ) ও হাজেরাকে নিয়ে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ফারান পর্বতমালা তথা মক্কা ভূমিতে হিজরত ও কা’বা গৃহ নির্মাণ
ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন ও নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ ব্যবহার শিখে ইসমাঈল (আ)-এর মায়ের নিকট থেকে। হাজেরা কোমরবন্দ ব্যবহার করতেন সারাহর দৃষ্টি থেকে নিজের পদচিহ্ন গোপন রাখার জন্যে।

হযরত ইবরাহীম (আ) হাজেরা ও ইসমাঈল (আ)-কে নিয়ে যখন মক্কায় যান, হাজেরা তখন তার শিশু পুত্রকে দুধ পান করাতেন। মসজিদে হারমের উঁচু অংশে বায়তুল্লাহর কাছে, যমযম কূপের নিকটে অবস্থিত একটি বড় গাছের নিচে তিনি তাদেরকে রেখে আসেন। মক্কায় তখন না ছিল কোন মানুষ, না ছিল কোন পানি। এখানেই তিনি তাদেরকে রেখে এলেন। একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর ও একটি মশকে কিছু পানিও রাখলেন। তারপর ইবরাহীম (আ) যেদিক থেকে এসেছিলেন, সেদিকে ফিরে চললেন। হাজেরাও তার পিছু পিছু ছুটে যান এবং জিজ্ঞেস করেনঃ ‘হে ইবরাহীম! আমাদেরকে এই শূন্য প্রান্তরে রেখে কোথায় যাচ্ছেন? যেখানে নেই কোন মানুষজন, নেই কোন খাদ্য-পানীয়।’ হাজেরা বার বার একথা বলা সত্ত্বেও ইবরাহীম (আ) তার দিকে ফিরেও তাকালেন না। তখন হাজেরা জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘আল্লাহ কি এরকম করতে আপনাকে আদেশ করেছেন?’ ইবরাহীম (আ) বললেন, ‘হ্যাঁ।’ হাজেরা বললেনঃ ‘তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না।’ একথা বলে হাজেরা ফিরে আসলেন এবং ইবরাহীম (আ)-ও চলে গেলেন। যখন তিনি 'ছানিয়া’ (গিরিপথ) পর্যন্ত পৌঁছলেন, যেখান থেকে তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না। তখন তিনি কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং দু’হাত তুলে নিম্নোক্ত দু’আ পড়লেনঃ

( رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ ) [Surat Ibrahim 37]

অর্থাৎ, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্যে যে, ওরা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের দিকে অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা ওদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও। যাতে ওরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সূরা ইবরাহীমঃ ৩৭)

ইসমাঈল (আ)-এর মা ইসমাঈলকে নিজের স্তনের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশকের পানি পান করতেন। শেষে মশকের পানি ফুরিয়ে গেলে মা ও শিশু উভয়ে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন। শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখেন, পিপাসায় তার বুক ধড়ফড় করছে কিংবা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থা দেখে সহ্য করতে না পেরে মা সেখান থেকে উঠে গেলেন এবং নিকটবর্তী সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন। সেখান থেকে প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে কাউকে দেখা যায় কিনা লক্ষ্য করলেন। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। তারপর সাফা পর্বত থেকে হাজেরা নেমে নিম্ন ভূমিতে চলে আসলে তিনি তার জামার আঁচলের একদিক উঠিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত ব্যক্তির মত ছুটে চললেন। নীচু ভূমি পাড়ি দিয়ে তিনি মারওয়া পাহাড়ে ওঠেন। চতুর্দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলেন, কাউকে দেখা যায় কিনা। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এভাবে তিনি সাতবার আসা-যাওয়া করেন। ইবন আব্বাস (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, এ জন্যেই লোকজন হজ্জ ও উমরায় উভয় পাহাড়ের মাঝে সাতবার সাঈ করে থাকেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান। তিনি তখন নিজেকে লক্ষ্য করে বলেনঃ চুপ কর! তারপর কান পেতে পুনরায় ঐ একই আওয়াজ শুনতে পেলেন। হাজেরা তখন বললেন, তোমার আওয়াজ শুনেছি, যদি সাহায্য করতে পার, তবে সাহায্য কর! এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন যে, যমযম কূপের স্থানে একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আছেন। ফেরেশতা নিজের পায়ের গোড়ালি দ্বারা কিংবা তার ডানা দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত পানি বের হয়ে আসে। তখন হাজেরা এর চারপাশে আপন হাত দ্বারা বাঁধ দিয়ে হাউজের ন্যায় করে দিলেন এবং আঁজলা ভরে মশকে পানি তোলার পরও পানি উপচে পড়তে লাগল।

ইবন আব্বাস (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, ইসমাঈল (আ)-এর মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি যমযমকে বাঁধ না দিয়ে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা তিনি বলেছেনঃ যদি তিনি আঁজলা ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তা হলে যমযম একটি কূপ না হয়ে প্রবহমান ঝর্ণায় পরিণত হত। তারপর হাজেরা পানি পান করলেন এবং শিশু-পুত্রকে দুধ পান করালেন। ফেরেশতা তাকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। একে এই শিশু ও তাঁর পিতা পুনঃনির্মাণ করবেন। আল্লাহ তার পরিজনকে বিনাশ করবেন না। ঐ সময় আল্লাহর এ ঘরটি মাটির থেকে কিছু উঁচু ঢিবির মত ছিল। বন্যার পানির ফলে তার ডান ও বামদিকে ভাঙন ধরেছিল। হাজেরা এভাবে দিনযাপন করছিলেন। পরিশেষে জুরহুম গোত্রের [য়ামান দেশীয় একদল লোক তাঁদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা জুরহুম পরিবারের কিছু লোক ঐ পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল যে, একটা পাখি চক্রাকারে উড়ছে।

তখন তারা বলাবলি করল, নিশ্চয় এ পাখিটি পানির উপরই উড়ছে অথচ আমরা এ উপত্যকায় বহুদিন কাটিয়েছি, এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন মশকধারী লোক সেখানে পাঠান। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ পেয়ে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। ইসমাঈল (আ)-এর মা ঐ সময় পানির নিকট বসা ছিলেন। তারা তাঁর নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করার অনুমতি চাইল। হাজেরা জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ, থাকতে পার, তবে এ পানির ওপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা তা মেনে নিল।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈল (আ)-এর মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। সেও মানুষের সাহচর্য চাচ্ছিল। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও সংবাদ পাঠাল, তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। এদিকে ইসমাঈল (আ) যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের কাছে আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈল (আ)-এর মা হাজেরার ইন্তিকাল হয়। ইসমাঈল (আ)-এর বিবাহের পর ইবরাহীম (আ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিবারকে দেখার জন্যে এখানে আসেন। কিন্তু ইসমাঈল (আ)-কে পেলেন না। তখন তার স্ত্রীকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। স্ত্রী জানালেন, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। তখন তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। সে জানায়, আমরা অতি কষ্টে, অভাব-অনটনে আছি। সে তার কাছে নিজেদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তখন ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী বাড়ি ফিরে এলে আমার সালাম জানাবে এবং তাঁকে দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলতে বলবে।

ইসমাঈল (আ) বাড়ি ফিরে এলে তিনি যেন কিছু একটা ঘটনার আভাস পেলেন। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কাছে কি কোন লোক এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ, এই এই আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তা জানিয়েছি। আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি বলেছি যে, আমরা খুব কষ্টে ও অভাবে আছি। ইসমাঈল (আ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়েছেন কি? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ, আপনাকে তাঁর সালাম জানাতে বলেছেন ও আপনাকে দরজার চৌকাঠ বদলাতে বলেছেন। ইসমাঈল (আ) বললেন, ইনি আমার পিতা। তোমাকে ত্যাগ করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তুমি তোমার আপনজনদের কাছে চলে যাও। তখন তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং জুরহুম গোত্রের অন্য এক মহিলাকে বিবাহ করেন। ইবরাহীম (আ) দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের থেকে দূরেই রইলেন। তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) তাদেরকে পুনরায় দেখতে এলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈলকে বাড়িতে পেলেন না। পুত্রবধুর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, তিনি আমাদের জীবিকার অন্বেষণে বাইরে গেছেন। ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমরা কেমন আছ, তোমাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা কেমন? জবাবে পুত্রবধু বললেনঃ আমরা ভাল আছি ও স্বচ্ছন্দে আছি, সাথে সাথে মহিলাটি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইবরাহীম (আ) জিজ্ঞেস করলেনঃ সাধারণত তোমাদের খাদ্য কী? তিনি বললেনঃ গোসত। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের পানীয় কি? তিনি বললেন, পানি। ইবরাহীম (আ) দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে বরকত দান করুন।’

নবী করীম (সা) বলেছেন, ঐ সময় তাদের ওখানে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হত না। যদি হত তা হলে তিনি তাদের জন্যে সে বিষয়েও দু’আ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশত ও পানি জীবন যাপনের অনুকূল হতে পারে না। ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী যখন বাড়িতে আসবে তখন আমার সালাম জানাবে ও দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখতে বলবে। ইসমাঈল (আ) যখন বাড়িতে আসলেন, তখন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিল কি? স্ত্রী বললেনঃ হ্যাঁ, একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধলোক এসেছিলেন। স্ত্রী আগন্তুকের প্রশংসা করলেন। তিনি আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। আমি জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল (আ) বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ, তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন ও আপনার দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখতে বলেছেন। ইসমাঈল (আ) বললেন, ইনি আমার পিতা। তোমাকে স্ত্রীরূপে বহাল রাখতে আদেশ করেছেন।

পুনরায় ইবরাহীম (আ) এদের থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দূরেই থাকলেন। তারপর ইবরাহীম (আ) পুনরায় তথায় আসলেন। দেখলেন, ইসমাঈল যমযম কূপের নিকটে বিরাট এক বৃক্ষের নিচে বসে তীর চাছছিলেন। পিতাকে দেখে তিনি তার দিকে এগিয়ে আসলেন। অতঃপর উভয়ে এমনভাবে পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, যেমন সাধারণত পিতাপুত্রের মধ্যে হয়ে থাকে। এরপর ইবরাহীম (আ) বললেন, হে ইসমাঈল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের আদেশ করেছেন। ইসমাঈল (আ) বললেন, আল্লাহ যে আদেশ করেছেন তা বাস্তবায়িত করুন। ইবরাহীম (আ) বললেন, তুমি আমাকে সাহায্য করবে? ইসমাঈল (আ) বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাহায্য করব। ইবরাহীম (আ) পার্শ্বে অবস্থিত উঁচু ঢিবিটির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আল্লাহ আমাকে এ স্থানটি ঘিরে একটি ঘর নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন। তখন তারা উভয়ে কা’বা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল (আ) পাথর আনতেন ও ইবরাহীম (আ) গাথুনী দিতেন। শেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ) ‘মাকামে ইবরাহীম’ নামে প্রসিদ্ধ পাথরটি আনলেন এবং সেখানে রাখলেন। ইবরাহীম (আ) তার উপর দাঁড়িয়ে ইমারত তৈরি করতে লাগলেন আর ইসমাঈল (আ) তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। এ সময় তারা উভয়ে নিম্নের দু’আটি পাঠ করেন -

( وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ )

[Surat Al-Baqarah 127]

অর্থাৎ, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ কাজ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শোনেন ও জানেন। (সূরা বাকারাঃ ১২৭)

এভাবে তারা দু’জনে কা’বাঘর নির্মাণ কাজ শেষ করেন এবং কাজ শেষে ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করেন এবং উক্ত দুআ পাঠ করেন। ইমাম বুখারী (র) ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ যখন ইবরাহীম (আ) ও তাঁর স্ত্রী সারাহর মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল, তখন তিনি ইসমাঈল (আ) ও তার মাকে নিয়ে বের হয়ে যান। তাদের সাথে পানি ভর্তি একটি মশক ছিল। তারপর ইমাম বুখারী (র) পূৰ্বোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ ঘটনার বিবরণ দেন। হাদীসটি ইবন আব্বাসের উক্তি। এর কিছু অংশ ‘মারফু’ আর কিছু ‘গরীব’ পর্যায়ের। ইবন আব্বাস (রা) সম্ভবত ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, ইসমাঈল (আ) ঐ সময় দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন। তাওরাত পন্থীরা বলেন, আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-কে পুত্র ইসমাঈল (আ) ও তার কাছে আর যত দাস ও অন্যান্য লোক ছিল তাদের খাৎনার নির্দেশ দেন। তিনি এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে খাৎনা করান। এ সময় ইবরাহীম (আ)-এর বয়স হয়েছিল নিরানব্বই বছর ও ইসমাঈল (আ)-এর বয়স ছিল তের বছর। খাৎনা করাটা ছিল আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে। এতে প্রতীয়মান হয়, অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবেই তিনি তা পালন করেন। এ কারণেই উলামায়ে কিরাম খাৎনা করা ওয়াজিব বলেছেন—এ মতই সঠিক।

বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ইবরাহীম (আ) আশি বছর বয়সে (ছুঁতারের) বাইসের ( با لقدوم ) সাহায্যে নিজের খাতনা করেন। আবদুর রহমান ইবন ইসহাক, আজলান, মুহাম্মদ ইবন আমর ও ইমাম মুসলিম ভিন্ন ভিন্ন সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উক্ত বর্ণনায় ব্যবহৃত ‘কুদূম’ শব্দটির অর্থ ধারাল অস্ত্র। কেউ কেউ এটি একটি স্থানের নাম বলেছেন। এসব হাদীসের শব্দের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য আছে। ইবন হিব্বান (র) আবূ হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ নবী ইবরাহীম (আ) একশ’ বিশ বছর বয়সে খাৎনা করান। এর পরেও আশি বছর জীবিত থাকেন। এসব বর্ণনায় ইসমাঈল (আ)-কে ‘যাবীহ’ বলে উল্লেখ করা হয়নি এবং এতে ইবরাহীম (আ)-এর তিনবার আগমনের কথা বলা হয়েছে। প্রথমবার আগমন করেন তখন, যখন হাজেরার মৃত্যু হয় ও ইসমাঈল (আ) বিবাহ করেন। শিশুকালে রেখে আসার পর থেকে ইসমাঈলের বিবাহ করা পর্যন্ত তিনি আর তাদের খোঁজ-খবর নেননি। বলা হয় যে, সফরকালে ইবরাহীম (আ)-এর জন্যে যমীনের দূরত্ব সংকুচিত হয়ে যেত। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি যখন আসতেন তখন বিদ্যুতের গতিসম্পন্ন বাহন বুরাকে চড়ে আসতেন। এ যদি হয় তাহলে হযরত ইবরাহীম (আ) তাদের সংবাদ না নিয়ে কিভাবে দূরে পড়ে থাকতে পারেন? অথচ নিজের পরিজনের সংবাদ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব; বিশেষ করে যে অবস্থায় তাদের রেখে এসেছিলেন। এসব ঘটনার কিছু অংশ ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে নেয়া। অবশ্য কিছু আছে মারফূ হাদীস। তবে এতে যাবীহ’-এর ঘটনার উল্লেখ নেই। কিন্তু তাফসীরের মধ্যে সূরা সাফফাতে আমরা দলীলসহ উল্লেখ করেছি যে, ‘যাবীহ’ হলেন হযরত ইসমাঈল (আ)।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন