hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মহা উপদেশ (‘আদী ইবন মুসাফিরের অনুসারীদের এর কাছে লেখা চিঠি)

লেখকঃ শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবন তাইমিয়্যাহ

১৫
প্রথম পরিচ্ছেদ: মিথ্যা বানোয়াট হাদীস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা
আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী বিষয়ে এমন কিছু হাদীস বর্ণনা করে যা ইসলামের স্বর্ণ যুগে সংকলিত হাদীসের গ্রন্থাবলীতে পাওয়া যায় না সে সব হাদীস সম্পর্কে আমরা সুদৃঢ় প্রত্যয়ে বিশ্বাস করি ও জানি যে, তা মিথ্যা ও অপবাদ। এমন কি এটি নিকৃষ্টতম কুফরি কর্ম। আবার তারা কুফরির অন্তর্ভুক্ত এমন কিছু কথাও বলে যার ওপর কোনো হাদীসও পাওয়া যায় না। যেমন তাদের বর্ণিত একটি হাদীস:

«أن الله ينزل عشية عرفة على جمل أورق يصافح الركبان ويعانق المشاة»

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ‘আরাফার দিনের সন্ধ্যা বেলা মাঠে উটের উপর সাওয়ারী হয়ে আরাফায় অবতরণ করেন। আরোহণকারীদের সঙ্গে মুসাফা ও পদ ব্রজে চলমান ব্যক্তিদের সাথে কোলাকুলি করেন।’’ এটি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বড় ধরনের মিথ্যাচার ও অপবাদ। এ কথা যিনি বলেছেন, তিনি আল্লাহ তা‘আলার ওপর না হক অপবাদকারীদের মধ্যে বড় অপবাদদাতা। মুসলিমদের কেউ এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করেন নি; বরং মুসলিম হাদীস বিজ্ঞানী ও সর্ব শ্রেণীর আলেমদের মতৈক্য অনুযায়ী এটি রাসূলের ওপর একটি মিথ্যাচার। জ্ঞানীরা যেমন, ইবন কুতাইবাহ ও অন্যান্যরা বলেন, এ হাদীস বা এ ধরনের আরো যে সব জাল হাদীস রয়েছে, সেগুলো আবিষ্কার করেছে যিনদীক তথা গোপন কাফির সম্প্রদায়; যাতে তারা হাদীস বিজ্ঞানীদের কলংকিত করতে সক্ষম হয় এবং তারা বলতে পারে যে, তারাও এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করেন।

এরূপ আরেকটি হাদীস হলো:

«أنه رأى ربه حين أفاض من مزدلفة يمشي أمام الحجيج وعليه جبة صوف»

‘‘মুযদালিফা থেকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলাকে স্বচক্ষে দেখেছেন যে, তিনি হজব্রতকারীদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং তার গায়ে ছিল পশমি জুব্বা’’।

এরূপ বহু অপবাদ ও মিথ্যাচার তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের ওপর আরোপ করেছে, যা আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল সম্পর্কে জানে এমন কোনো ব্যক্তি উচ্চারণও করতে পারে না।

অনুরূপ আরেকটি হাদীস হল:

«أن الله يمشي على الأرض فإذا كان موضع خضرة قالوا هذا موضع قدميه»

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে চলাচল করেন। যখন সবুজ স্থানে যান তখন তারা বলেন এটা আল্লাহ তা‘আলার দু’পা রাখার স্থান”। এ মর্মে নিম্ন আয়াতটি তারা দলীল বলে পেশ করে থাকেন। আয়াতটি হলো-

﴿فَٱنظُرۡ إِلَىٰٓ ءَاثَٰرِ رَحۡمَتِ ٱللَّهِ كَيۡفَ يُحۡيِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَآۚ ٥٠﴾ [ الروم : ٥٠ ]

“আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের ফল সম্পর্কে চিন্তা কর, কীভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর একে পুনর্জীবিত করেন” [সূরা রূম, আয়াত: ৫০]

আলেম সমাজের ঐকমত্য অনুযায়ী এটিও মিথ্যা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এ কথা বলেন নি যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার পদক্ষেপের ফলসমূহের প্রতি চিন্তা-ভাবনা কর বরং তিনি বলেছেন,

«آثار رحمت الله»

“আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ফল সম্পর্কে”। এখানে রহমত অর্থ হলো উৎপন্ন বস্তুসমূহ; শস্য ও সবুজ তৃণলতা।

অনুরূপভাবে তাদের বানানো হাদীসের আরো অংশ হলো:

«أن محمدا رأي ربه في الطواف»

‘‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ‘রব’-কে তাওয়াফে দেখেছেন’’।

তাদের বানোয়াট হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে,

«أنه رآه خارج من مكة»

“তিনি মক্কার বাহিরে আল্লাহকে দেখেছেন”।

তাদের বানোয়াট হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে,

«أنه رآه في بعض سكك المدينة»

“মদিনার কোনো কোনো গলিতে তিনি তাকে দেখেছেন”। এরূপ বহু বানোয়াট হাদীস, যা বইয়ের কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় ছেড়ে দিলাম।

বস্তুত যত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে আল্লাহ তা‘আলাকে দুনিয়াতে দেখেছেন বলে বর্ণিত হয়েছে তা মুসলিম জাতির ঐকমত্যে ও আলেম সমাজের মতৈক্য অনুযায়ী সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ মর্মে কোনো হাদীস মুসলিম মনীষীদের কেউই বর্ণনা করেন নি।

তবে মি‘রাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন কি না এ মর্মে সাহাবীগণের মধ্যে মতভেদ হয়েছে। ইবন আব্বাসসহ আহলে সুন্নতের বহু আলেম বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি‘রাজে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন। পক্ষান্তরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাসহ একটি দল পূর্বোক্ত অভিমত অস্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীস বর্ণনা করেন নি এবং এ প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাও কেউ করেন নি। এ বিষয়ে কতিপয় মূর্খরা আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক যে হাদীসটি বর্ণনা করে যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলার রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি মি‘রাজে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন, তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ, দেখেছি। অপরদিকে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে বলেছেন, আমি দেখি নি”। আলেম সমাজের ঐকমতে এই হাদীসও মিথ্যা। এ ধরনের কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি।

এ জন্যে ইমাম কাজী আবু ইয়া‘লাসহ অনেক ইমাম উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আহমদ কর্তৃক এ বিষয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।

[ক] মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথার মধ্যে স্থাপিত দুই চোখে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন এ কথা বলা যাবে কিনা?

[খ] নাকি বলা যাবে যে, তিনি অন্তর চক্ষু দ্বারা দেখেছেন?

[গ] অথবা তিনি দেখেছেন তবে এ কথা বলা যাবে না যে মাথায় স্থাপিত দুই চোখ দ্বারা দেখেছেন বা অন্তর চক্ষু দ্বারা দেখেছেন?

অনুরূপভাবে ঐ হাদীস পণ্ডিতগণ ইবন আব্বাস ও উম্মে তুফাইলসহ অনেকের থেকে বর্ণনা করেছেন যে,

«رأيت ربي في صورة كذا وكذا»

‘‘আমি আমার রবকে এই রূপ এই রূপ আকৃতিতে দেখছি’’ সে হাদীসে রয়েছে-

«أنه وضع يده بين كتفي حتى وجدت برد أنامله على صدري»

“তিনি আমার দুই কাঁধের উপর তার হাত রাখলেন এমন কি তার আঙ্গুলসমূহের শীতলতা আমার বক্ষদেশে অনুভব করলাম”। এ হাদীস মি‘রাজের রজনীর হাদীস নয়। এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল মদীনায়। কারণ, হাদীসে এ পরিভাষা রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা ফজরের সালাতে বাধাগ্রস্ত হলেন। তারপর সাহাবীগণের নিকটে গিয়ে বললেন, আমি এ রূপ এ রূপ দেখলাম। এ বর্ণনা এসেছে এ সব লোকদের থেকে যারা কেবল মদীনায় রাসূলের পিছনে সালাত আদায় করেন। যেমন, উম্মে তুফাইল ও অন্যান্যরা। আর পবিত্র কুরআন, মুতাওয়াতির হাদীস ও আলেমদের ঐকমত্য অনুসারে মি‘রাজ সংঘটিত হয়েছে মক্কায়। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ١﴾ [ الاسراء : ١ ]

“পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে কোনো এক রজনীতে ভ্রমণ করিয়ে ছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়”। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১]

দীর্ঘ আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এ হাদীসটিতে যে স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে তা ছিল মদীনার ঘুমের মধ্যে সংঘটিত স্বপ্ন। যেমনটি হাদীসের অসংখ্য সনদে বিষয়টি ব্যাখ্যাসহ বর্ণিত হয়েছে যে, ‘তা ছিল ঘুমের স্বপ্ন’ অথচ নবীদের স্বপ্নও অহী। অতএব, মি‘রাজের রাতে জাগ্রত অবস্থায় কোনো দর্শন ছিল না।

মুসলিমগণ একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে স্বচক্ষে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেন নি। আর আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য কখনো দুনিয়াতে নেমে আসেন নি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কখনও কোনো হাদীসে এরূপ পরিভাষা আসে নি যে, আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। বরং প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীসসমূহে এসেছে,

«أن الله يدنو عشية عرفة»

“আরাফার দিনে বিকাল বেলায় আল্লাহ তা‘আলা নিকটবর্তী হন”।

অপর বর্ণনায়,

«أن الله ينزل إلى سماء الدنيا كل ليلة حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول من يدعوني فأستجيب له، من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له»

“রাতের শেষের তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে প্রতি রাতে আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে এসে বলেন, যে আমার নিকট প্রার্থনা করবে আমি তার প্রার্থনা কবুল করব। যে আমার নিকট কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিয়ে দিব। আমার নিকট যে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫, তাহাজ্জুদ অধ্যায় ২৯/৩]

আর সহীহ হাদীসে এসেছে,

«أن الله يدنو عشية عرفة»

“আরাফার দিনে বিকাল বেলায় আল্লাহ তা‘আলা নিকটবর্তী হন”।

অপর বর্ণনায় এসেছে,

«إلى سماء الدنيا فيباهي الملائكة بأهل عرفة فيقول : انظروا إلى عبادي أتوني شعثا غبرا ما أراد هؤلاء»

“পৃথিবীর নিকটতম আসমানে আসেন। তারপর আরাফাবাসীদের বিষয়ে ফিরিশতাদের সঙ্গে গর্ববোধ করেন। তাদেরকে বলেন, দেখ আমার বান্দারা এলোমেলো চুল, ধুলায় ধুসরিত অবস্থায় আমার নিকট এসেছে। তারা আমার নিকট কি প্রত্যাশা করে”?

আরো বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা শাবান মাসের পনের তারিখে অবতরণ করেন, যদি হাদীসটি সহীহ হয়; কিন্তু হাদীস যাচাই-বাছাইকারী মহা বিজ্ঞানীগণ হাদীসটির গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

অনুরূপ ভাবে কেউ কেউ বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহায় ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন, তখন একদা আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীনের মাঝখানে একটি চেয়ারে উপবিষ্ট হয়ে রাসূলের সামনে প্রকাশিত হয়েছিলেন। আহলে ইলমের ঐকমত্য মোতাবেক এ হাদীসটিও সম্পূর্ণ ভুল; বরং সহীহ হাদীসসমূহে এটাই এসেছে যে, সে ফেরেশতা জিবরীলই তখন আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, যিনি হেরা গুহায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে তাকে বলেছিলেন,

«اقرأ فقلت : لست بقارئ فأخذني وغطني حتى بلغ مني الجهد، ثم أرسلني فقال اقرأ فقلت : لست بقارئ فأخذني وغطني حتى بلغ مني الجهد، ثم أرسلني فقال»

“তুমি পড়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি বললাম, আমি পড়তে জানি না। তিনি আমাকে ধরে নেন এবং চাপ দিলেন যাতে আমি কষ্ট অনুভব করলাম। তখন তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলছেন, তুমি পড়, আমি বললাম, আমি পড়তে জানি না। তিনি আমাকে আবারো ধরে নেন এবং চাপ দিলেন যাতে আমি কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, তুমি বল-

﴿ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِي خَلَقَ ١ خَلَقَ ٱلۡإِنسَٰنَ مِنۡ عَلَقٍ ٢ ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ ٣ ٱلَّذِي عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ ٤ عَلَّمَ ٱلۡإِنسَٰنَ مَا لَمۡ يَعۡلَمۡ ٥﴾ [ العلق : ١، ٥ ]

“তুমি পড়! তোমার ‘রব’ এর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে ‘আলাক (জমাট রক্ত) থেকে সৃষ্টি করেছেন। তুমি পড়! তোমার রব সম্মানিত। যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে এমন বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন যা তারা জানত না”। [সূরা আল-‘আলাক, আয়াত: ১-৫]

এটাই হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ প্রথম অহী।

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহী নাযিল হওয়ার বিরতি সম্পর্কে বলেন,

«فبينما أنا أمشي إذ سمعت صوتاً فرفعت رأسي فإذا هو الملك الذي جاءني بحراء أراه جالسا على كرسي بين السماء والأرض»

“আমি হেটে যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পেলাম। আমি মাথা উত্তোলন করলাম। দেখলাম ঐ জিবরীল ফিরিশতা যিনি হেরা গুহায় এসেছিলেন। তাকে দেখলাম যে, তিনি আসমান ও যমীনের মাঝে একটি চেয়ারে উপবিষ্ট অবস্থায় আছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪]

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আসমান ও যমীনের মাঝে উপবিষ্ট হেরা গুহায় আগত ফিরিশতাই হলেন ইনি। তারপর তাকে দেখে তিনি যে ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন তা বর্ণনা করলেন।

কিন্তু কোনো কোনো বর্ণনায় ‘মালাক’ শব্দটি এসেছে, অর্থাৎ ফিরিশতা; কিন্তু পাঠক পড়ছেন মালিক অর্থাৎ আল্লাহ; অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল ও বাতিল। এভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, উপবিষ্ট ছিলেন ফিরিশতা জিবরীল আলাইহিস সালাম। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান: ৩১৪/৬]

সারকথা হলো, যে সব হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষে পৃথিবীতে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছেন, আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার পদাঙ্কসমূহ হলো জান্নাতের বাগিচা, আল্লাহ তা‘আলা বায়তুল মুকাদ্দাস-এর আঙ্গিনায় চলাচল করেছেন, এসব হাদীস হলো আহলে হাদীস তথা হাদীস বিশারদগণসহ সকল মুসলিমের ঐকমত্য অনুযায়ী মিথ্যা ও বাতিল।

অনুরূপভাবে যে দাবী করে, সে আল্লাহ তা‘আলাকে মৃত্যুর পূর্বে প্রকাশ্যে স্বচক্ষে দেখেছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইজমা অনুযায়ী তার দাবীও বাতিল। কারণ, সকল মুসলিম এ বিষয়ে একমত যে, মৃত্যুর পূর্বে কোনো মুমিন স্বচক্ষে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পারবে না।

বিষয়টি নাওয়াস ইবন সাম‘আন কর্তৃক সহীহ মুসলিম দাজ্জাল প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা প্রমাণিত। তিনি বলেন,

«واعلموا أن أحدا منكم لن يرى ربه حتى يموت»

“তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে কেউই তার মৃত্যুর পূর্বে তার ‘রব’-কে দেখতে পাবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৩১]

এ মর্মে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে যাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় জাতিকে দাজ্জালের ফিতনা বিষয়ে সর্তক করেছেন। তিনি সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, কেউই তার মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না। সুতরাং কেউ যেন দাজ্জালকে দেখে এ ধারণা না করে যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলা।

তবে আল্লাহ তা‘আলার পরিচয়ের বিষয়ে ঈমানদারদের অন্তরে এমন গুণ সন্নিবেশিত হয় যে, তাদের হৃদয়ের গভীর প্রত্যয়, দর্শন ও পর্যবেক্ষণের জন্যে হৃদয়ের চোখে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ মনে করার বহু স্তর রয়েছে। তার মধ্যে একটি অন্যতম স্তর হলো ইহসান।

হাদীসে জিবরীলে ইহসান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিবরীল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,

«الإحسان : أن تعبد الله كأنك تراه، فإن لم تكن تراه فإنه يراك»

“ইহসান হলো তুমি এমনভাবে ইবাদাত করবে যাতে মনে হয় তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে দেখছ। আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তাহলে অবশ্যই মনে করবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দেখছেন”।

কখনো কখনো সময় মুমিনরা স্বপ্নে তাদের ঈমানের স্তর অনুযায়ী আল্লাহকে বিভিন্ন আকৃতিতে দেখতে পাবেন। তাদের ঈমান যদি ভালো হয়, তবে ভালো আকৃতিতে তাকে দেখতে পাবে। আর তাদের ঈমান যদি খারাপ হয় তবে খারাপ আকৃতিতে দেখতে পাবেন। স্বপ্নে দেখার বিধান আর বাস্তবে দেখার বিধান এক নয়। কারণ, স্বপ্নের বিভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে এবং স্বপ্নে মানুষ বাস্তব বস্তুর বিভিন্ন রূপ ও আকৃতি দেখতে পায়।

অনেক মানুষ এমন আছে জাগ্রত অবস্থায়ও তার অন্তরে স্বপ্নে দেখার মত বিভিন্ন জিনিস ভেসে উঠতে পারে। তখন সে অন্তর দিয়ে ঘুমন্ত লোকের মত অনেক কিছুই দেখতে পায়। কখনও কখনও তার অন্তর দিয়ে দেখা বিষয় বাস্তব দেখা বলেই মনে হয়, এ গুলো সবই দুনিয়াতে সংঘটিত হওয়া সম্ভব।

আবার কখনও কখনও তাদের কেউ কেউ যে সব বস্তু অন্তর দিয়ে দেখছে ও ইন্দ্রিয় দিয়ে একত্রিত করছে তা তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে, ফলে সে মনে করে যে সে তো এটা তার দু’চোখ দিয়েই দেখছে। অতঃপর যখন জাগ্রত হয়, তখন বুঝতে পারে যে সে তো স্বপ্নে তা দেখেছে। আবার কখনও কখনও স্বপ্নেও বুঝতে পারে যে আসলে তা স্বপ্ন।

সুতরাং ইবাদতকারী লোকদের কাউকে দেখা যাবে যে, যার এ ধরনের হৃদয়ের দর্শন এমন প্রাধান্য বিস্তার লাভ করে যে সে সম্পূর্ণরূপে অনুভূতি শুণ্য হয়ে পড়ে। তখন সে মনে করে আমি স্বচক্ষে দেখেছি, অথচ সে ভ্রান্তিতে আছে। পূর্বের বা পরবর্তী যুগের যে সব মনীষীরা আল্লাহকে এ ধরনের স্বচক্ষে দেখার দাবী করে থাকে, উম্মতের জ্ঞানী ও ঈমানদার সবার মতে সে ভ্রান্তিতে নিপতিত।

জান্নাতে মুমিনরা তাদের প্রভুকে দেখবেন:

হ্যাঁ, স্বচক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ মুমিনগণের জন্য কেবল জান্নাতেই হবে। অনুরূপভাবে মানুষের জন্য এটি সংঘটিত হবে কিয়ামতের মহা ময়দানে। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অকাট্য হাদীসসমূহ দ্বারা সু-প্রমাণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إنكم سترون ربكم كما ترون الشمس في الظهيرة ليس دونها سحاب، وكما ترون القمر ليلة البدر صحوا ليس دونه سحاب»

“নিশ্চয় তোমরা অতি তাড়াতাড়ি তোমাদের রবকে দেখতে পাবে যেমন মেঘ মুক্ত আকাশে দ্বি-প্রহরে সূর্য দেখতে পাও, যেমন মেঘ মুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাতে চন্দ্র দেখতে পাও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩/২]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«جنان الفردوس اربع : جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ، آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا، وَمَا بَيْنَ القَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلَّا رِدَاءُ الكِبْرِ، عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ»

“ফিরদাউসের বাগানসমূহ চারটি, দু’টি জান্নাত রূপার, তার পাত্র ও তাতে যা কিছু রয়েছে তাও রূপার। আর দু’টি জান্নাত স্বর্ণের তার পাত্র ও তাতে যা কিছু রয়েছে সবই স্বর্ণের। জান্নাতীদের মাঝে এবং রবকে দেখার মাঝে বাধা জান্নাতে ‘আদনে একমাত্র তার চেহারায় বড়ত্বের চাদর”।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন,

«إذا دخل أهل الجنةِ الجنةَ نادي منادِ يا أهل الجنة إن لكم عند الله موعدا يريد أن ينجزكموه، فيقولون : ما هو؟ ألم يبيض وجوهنا ويثقل موازيننا ويدخلنا الجنة ويُجِرنا من النار، فيكشف الحجاب فينظرون إليه فما أعطاهم شيئا أحب إليهم من النظر إليه، وهي الزيادة»

‘‘যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তখন একজন আহ্বানকারী বলবেন, আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি আছে। তিনি তা আপনাদেরকে প্রদান করবেন। জান্নাতবাসীগণ বলবেন সেটি আবার কি! আমাদের চেহারা কি উজ্জ্বল হয় নি! আমাদের আমল নামা কি ভারী হয় নি! আমাদেরকে কি জান্নাত দেন নি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন নি! এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পর্দা উঠে যাবে। তারা তাকে দেখবে। এমনকি তাদেরকে যা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রিয় হবে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভ। আর এটি অতিরিক্ত”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন