hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মহা উপদেশ (‘আদী ইবন মুসাফিরের অনুসারীদের এর কাছে লেখা চিঠি)

লেখকঃ শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবন তাইমিয়্যাহ

মুক্তিপ্রাপ্ত দলের নিদর্শনসমূহ:
ক. আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণ এবং বিচ্ছিন্নতা ও সামগ্রিক পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি:

আর মুক্তিপ্রাপ্তদল, আল্লাহ তা‘আলাই তাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাদের অন্তরে তাকে (ঈমানকে) সু-সজ্জিত করে দিয়েছেন। ফলে তাদেরকে তার রাসূলের অনুসারী বানিয়েছেন। পথভ্রষ্টতার ওপর ঐকমত্য হওয়া হতে তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন, যেমন তাদের পূর্বে বহু জাতি পথভ্রষ্ট হয়েছিল। আর এ কারণেই যখন পূর্বের কোনো জাতি পথভ্রষ্ট হত, তখন মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করতেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা যথার্থই বলেছেন,

﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ ٣٦﴾ [ النحل : ٣٦ ]

“আর আমি প্রত্যেক জাতির কাছে এ মর্মে রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত কর এবং তাগুতকে (সীমালঙ্ঘনকারীকে) পরিহার কর”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِن مِّنۡ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٞ ٢٤﴾ [ فاطر : ٢٤ ]

“এমন কোনো সম্প্রদায় নেই যার নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয় নি”। [সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ২৪]

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীদের মধ্যে সর্বশেষ। তারপর কোনো নবী নেই। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তার উম্মতকে পথভ্রষ্টতার ওপর মতৈক্য হওয়া থেকে নিরাপদ করেছেন এবং এ উম্মতের মধ্যে এমন ব্যক্তিদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাদের দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত দীনের দলীল প্রতিষ্ঠা করবেন। এ কারণেই তাদের ইজমা (মতৈক্য হওয়া) দলীল, যেমনিভাবে কুরআন ও হাদীস দলীল। [কারণ, হাদীসে এসেছে, আমার উম্মত কখনো গোমরাহীর ওপর একত্র বা একমত হবে না। এ হাদীসটি বিভিন্ন সনদে আবু মালেক আল-আশ‘আরী, ইবন উমার, ইবন ‘আব্বাস, আনাস, সামুরাহ, আবূ নাযরাহ, আবু উমামহ ও আবু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী ও হাকেম রহ. বিভিন্ন শব্দে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা যারাকশী রহ. হাদীসটির সব বর্ণনাধারা ও সনদ তুলে ধরার পর বলেন, মনে রাখ! এ হাদীসের বর্ণনাধারা ও সনদ একাধিক রয়েছে, যার কোনটিই প্রশ্নাতীত নয়। তবে আমি একাধিক সনদ এখানে নিয়ে এসেছি যাতে এক সনদ অপর সনদকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়াও হাদীসের সাক্ষ্য হল, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, مُرَّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِجَنَازَةٍ، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا، فَقَالَ : «وَجَبَتْ» ، ثُمَّ مُرَّ بِأُخْرَى، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا - أَوْ قَالَ : غَيْرَ ذَلِكَ - فَقَالَ : «وَجَبَتْ» ، فَقِيلَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، قُلْتَ لِهَذَا وَجَبَتْ، وَلِهَذَا وَجَبَتْ، قَالَ : «شَهَادَةُ القَوْمِ المُؤْمِنُونَ شُهَدَاءُ اللَّهِ فِي الأَرْضِ» “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল, লোকেরা তারা ভালো প্রসংশা করল, তাদের প্রসংশা শোনে আল্লাহর রাসূল বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। তারপর অপর একটি জানাযা অতিক্রম করল, লোকের দূর্নাম করল। তাদের কথা শোনে রাসূল্লাল্লাহু সা. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কেন এর জন্য বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে আবার এর জন্যেও বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে? এ হল, কাওমের লোকদের সাক্ষ্য। মু‘মিনরা জমিনে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ। (বুখারী হাদীসন নং ২৬৪২) সহীহ মুসলিমে এ শব্দে বর্ণিত, «مَنْ أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَمَنْ أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ» “তোমরা যার ভালো প্রসংশা করছ, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে। আর তোমরা যার খারাপ প্রসংশা করছ, তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। জমিনে তোমরা আল্লাহর সাক্ষ্য। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৪৯) এ কথা তিনবার বললেন। দেখুন –ইমাম বদরুদ্দীন আয-যারাকশী রহ. এর আমু‘তাবার, পৃষ্ঠা: (৬২-৭২) ইমাম গাযালী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত ওপর ভুল অসম্ভব হওয়া বিষয়ে প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বাণী দ্বারা প্রমাণিত তারা অবশ্যই নিষ্পাপ উম্মত। কুরআন দ্বারা প্রমাণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ ١٤٣﴾ [ البقرة : ١٤٣ ] “আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের উপর সাক্ষী হও”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৩] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ١٠٣﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ] “আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]আর সুন্নাহের প্রমাণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মত কখনো ভুলের ওপর একমত হবে না। এ উম্মত ভুল থেকে নিরাপদ হওয়া বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক বর্ণনা বিভিন্ন শব্দে একই অর্থে বা সামর্থক বর্ণিত হয়েছে এবং নির্ভর ও গ্রহণযোগ্য সাহাবীগণ যেমন, ‘উরওয়াহ ইবন মাসউদ, আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী, আনাস ইবন মালেক, ইবন উমার, আবু হুরাইরা ও হুযাইফাহ ইবন ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখদের জবানেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীর মতো বিষয়টি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মত গোমরাহীর ওপর একমত হবে না। আল্লাহ আমার উম্মতকে গোমরাহীর ওপর একত্র করবে না। তিনি আরো বলেন, আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট চেয়েছি, যাতে তিনি আমার উম্মতকে গোমরাহীর ওপর একমত না করেন। তিনি আমাকে তা দিয়েছেন। যাকে এ বিষয়টি খুশি করে যে, সে জান্নাতের উচ্চ স্থানে বসবাস করতে সে যেন জামা‘আতকে আঁকড়ে ধরে। কারণ, তাদের দো‘আ বেষ্টন করে রাখে যারা তাদের পিছনে রয়েছে তাদেরক। শয়তান একা লোকের সাথে থাকে। আর দুইজন লোক থেকে সে অনেক দূরে। আল্লাহর সাহায্য জামা‘আতের ওপর। আল্লাহ তা‘আলা যে বিচ্ছিন্ন হয় তার বিচ্ছিন্নতাকে পরওয়াহ করেন না। তিনি আরো বলেন, «إِنَّ أُمَّتِي لَا تَجْتَمِعُ عَلَى ضَلَالَةٍ، فَإِذَا رَأَيْتُمُ اخْتِلَافًا فَعَلَيْكُمْ بِالسَّوَادِ الْأَعْظَمِ» আমরা উম্মত কখনো গোমরাহী ওপর একত্র হবে না। যখন তোমরা তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখ, তবে তোমরা বড় জামা‘আত (যারা হকের ওপর আছে) তাদের সাথে থাক। (ইবন মাজাহ , হাদীস নং ৩৯৫০) তিনি আরো বলেন, «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ، لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ، حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ» “আমার উম্মতের একটি জামা‘আত সর্বদা বিজয়ী থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা হকের ওপর থাকবে, যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা আল্লাহর নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না”। এ ধরনের হাদীসসমূহ সাহাবী ও তাবে‘ঈদের থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, উম্মাতের পূর্বসূরি ও পরবর্তীদের থেকে যারা হাদীস বর্ণনা করেন, তাদের কেউ এ হাদীসগুলোর কোনো প্রতিবাদ করেন নি। সুতরাং হাদীসগুলো উম্মতের পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় শ্রেণীর নিকট গ্রহণযোগ্য। এ হাদীসগুলো দ্বারা তারা সবসময় দ্বীনের মৌলিক ও বিধি-বিধান বিষয়ে দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতের অবস্থানকে খুব গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন এবং তিনি উল্লিখিত বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহের মাধ্যমে এ কথার জানান দেন যে, এ উম্মত ভুল থেকে নিরাপদ। সামগ্রিকভাবে উম্মতের এ ধরনের নিষ্পাপ হওয়া তাদের মতৈক্যকে শর‘ঈ প্রমাণ হওয়াকে সাব্যস্ত করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দেন যে, তোমরা নিরাপদ জামা‘আতের সাথে থাক। দেখুন, আল-মুসতাছফা, ১৭৫-১৭৬/১।]

এ কারণেই এ উম্মতের হক পন্থীগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত নামে বিশেষিত হয়েছে বাতিলপন্থীদের থেকে, যারা নিজেদেরকে আল-কুরআনের অনুসারী বলে দাবী করত এবং তারা হাদীস গ্রহণ করা থেকে এবং যার ওপর মুসলিম জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত ছিল তা থেকে বিরত থাকত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় গ্রন্থে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও তার পথকে আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে জামা‘আত বদ্ধ থাকতে এবং ও মৈত্রী স্থাপনের আদেশ দিয়েছেন। দলাদলি ও মতবিরোধ করা থেকে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ]

“যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য করল সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করল আর যে ফিরে গেল, তাদের ওপর আপনাকে রক্ষক বানিয়ে পাঠাই নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ]

“আর আমরা রাসূল এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি, যেন আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে তার আনুগত্য করা হয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١﴾ [ ال عمران : ٣١ ]

“আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাস তাহলে আমার আনুগত্য কর, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ভালোবাসবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ]

“অতএব, তোমার ‘রব এর শপথ! তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক নিযুক্ত না করে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ١٠٣﴾ [ ال عمران : ١٠٣ ]

“তোমরা সম্মিলিত ভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]

তিনি আরো বলেন,

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩﴾ [ الانعام : ١٥٩ ]

“নিশ্চয় যারা নিজেদের দীনকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে নিয়েছে আর দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের কোনো কাজের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহর নিকট, তারা যা করত সে সম্পর্কে তিনি তাদের সংবাদ দেবেন”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ ١٠٥﴾ [ ال عمران : ١٠٥ ]

“আর তাদের মতো হইয়ো না, যাদের নিকট প্রকাশ্য প্রমাণ আসার পরও তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও বিরোধ করেছে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَا تَفَرَّقَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَةُ ٤﴾ [ البينة : ٤ ]

“যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা তো বিভক্ত হলো তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর”। [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [ البينة : ٥ ]

“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে বিশুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠ ভাবে তার ইবাদাত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দীন”। [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]

“আর এটাই আমার সরল সঠিক পথ, এ পথেরই তোমরা অনুসরণ কর, আর নানান পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সতর্ক হও”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩]

আল্লাহ তা‘আলা সূরা ফাতিহায় বলেন,

﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [ الفاتحة : ٦، ٧ ]

“আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথে যাদের প্রতি আপনি নি‘আমত দান করেছেন; তাদের পথে নয় যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথেও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে”। [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৬-৭]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন,

«الْيَهُوْدُ مَغْضُوْبٌ عَلَيْهِمْ وَالنَّصَارى ضَالُّوْن»

“ইয়াহুদীরা হলো যাদের ওপর গযব বর্ষিত হয়েছে এবং খ্রিস্টানরা হলো যারা পথভ্রষ্ট”। [ইমাম আহমদ রহ. ‘আদী ইবন হাতের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে, তিনি বলেন, তারপর আমি ইসলাম গ্রহণ করি। তারপর দেখলাম তার চেহারা উজ্জল হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, “ইয়াহুদীরা হলো যাদের উপর গযব বর্ষিত হয়েছে এবং খ্রিস্টানরা হলো যারা পথভ্রষ্ট”। (আহমদ, ৩৭৮/৪; তিরমিযী, ২৮৬/৭)]

সূরা ফাতিহা যাকে উম্মুল কিতাব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যে সূরাটি তাওরাত, যবুর ইঞ্জিলসহ কুরআনের অন্য কোথাও এ ধরনের সূরা নাযিল করা হয় নি, যে সূরাটি আমাদের নবী মুহাম্মাদকে আরশের নিচের ধন-ভাণ্ডার থেকে উপহার দেওয়া হয়েছে, যে সূরাটি পাঠ করা ব্যতীত সালাত শুদ্ধ হয় না, সে সূরাটিতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ মর্মে আদেশ করেছেন যে, আমরা যেন এ সূরার মাধ্যমে আমাদের হিদায়াতের ঐ সরল পথ প্রার্থনা করি, যে পথকে আল্লাহ তা‘আলা নি‘আমত হিসেবে দান করেছেন, নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও পুণ্যবান ব্যক্তিদের। এটি ইয়াহূদীদের ন্যায় গযব প্রাপ্ত ও খ্রিস্টানদের ন্যায় পথভ্রষ্টদের পথ নয়।

এ সরল পথই আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নির্ভেজাল দীন তথা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম। এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পথ। কেননা নির্ভেজাল সুন্নাহই হলো খাঁটি দ্বীন ইসলাম। [এমন সোজা ও সঠিক রাস্তা যে রাস্তায় চলাচল করা দ্বার একজন পথিক দ্রূত তার গন্তব্যে পৌছতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে একাধিক স্থানে সিরাত শব্দটি উল্লেখ করেছেন। শয়তানের পথকে কোথাও সিরাত বলেননি বরং তার পথকে সুবুল বলেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে একটি হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারপর তিনি বলেন, এটি আল্লাহর রাস্তা তারপর ডানে ও বামে আরও কিছু রেখা টানেন এবং বলেন, এগুলো রাস্তা প্রতিটি রয়েছে একজন করে শয়তান যারা মানুষকে তাদের দিকে ডাকেন। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেয় তাদের আগুনে নিক্ষেপ করেন। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন। আহমাদ, হাদীস।] এ পথ যারা অনুসরণ করবে, তাদের বলা হবে, আহলে সূন্নাত ওয়াল জামা‘আত। এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বহু সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন, সুনান ও মাসানীদ গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বলেছেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«سَتَفْتَرِقُ هذِهِ الأمَّةُ عَلى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ فِرْقَـةً كُلُّهَا فِيْ النَّارِ إلاَّ وَاحِدَةً ألاَ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ»

“অতিশীঘ্রই এ উম্মত বাহাত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত সবই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। জেনে রেখ ঐ একটি হলো, প্রকৃত জামা‘আত”।

অন্য বর্ণনায় ঐ জামা‘আত এর পরিচয় দেওয়া হচ্ছে এভাবে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ كَانَ عَلى مِثْلَ مَا أنَـا عَلَيْهِ الْيَوْمَ وَأصْحَابِيْ»

“তারা হলো আজ আমি ও আমার সাহাবীগণ যে পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি, তার ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তারা। [হাদীসটি একাধিক সনদে বর্ণিত, আবু দাউদ (৩-৪/৭) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মু‘আবিয়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী, (৩৯৭/৭) কিতাবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৯৯১। জামা‘আত যাদের সাথে থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে সতর্ক করেছেন তাদের বলতে কাদের বুঝানো হয়েছে, এ বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে একাধিক মত রয়েছে। সাতবী রহ. এ সব মতামতকে সাতটি কথায় একত্রে নিয়ে এসেছেন-এক- ইসলাম পন্থীদের বড় জামা‘আত। দুই- মুজতাহেদ ও আলেমদের জামা‘আত। তিন- বিশেষ করে সাহাবীগণের জামা‘আত। কারণ, তারাই দীনের খুটিকে দাড় করিয়েছেন এবং পেরাগ মেরেছেন। তাদের ব্যাপারে এ কথা বলা যায় যে, তারা কখনো গোমরাহীর ওপর একমত হতে পারে না, যদিও অন্যদের ব্যাপারে এ সম্ভাবনা রয়েছে। এর সমর্থন নাজাত প্রাপ্ত দল সম্পর্কে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসে পাওয়া যায়। যেমন— রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,...... চার- জামা‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য মুসলিমদের জামা‘আত। যখন তারা কোন বিষয়ে একমত হয় তখন ওপর ওয়াজিব হল তারা তাদের অনুকরণ করবে। পাঁচ- মুসলিমদের জামা‘আত যখন তারা কোন আমীরের নেতৃত্বে একত্র হয়। (আল-ই‘তিছাম: ২৬০-২৬৫/২)মোটকথা: জামা‘আত দ্বারা কী অর্থ সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, জামা‘আত হল, ঐ দল যাদের নাজাতপ্রাপ্ত বলে রাসুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ....আর ভিত্তি হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুকরণ ও তিনি যে সত্য নিয়ে এসেছেন তার অনুকরনের ওপর। আমর ইবন মাইমুন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু‘আয ইবন জাবাল রাসূলের যুগে আমাদের নিকট আগমন করেন। তাকে দেখে আমার অন্তরে তার ভালোবাসা গভীর হয়। যতদিন সে বেচে ছিল সিরিয়ার মাটিতে দাফন করার পূর্ব পর্যন্ত আমি তার সাথেই ছিলাম। তারপর এ উম্মতের সবচেয়ে বড় ফকীহ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সঙ্গ অবলম্বন করি। একদিন তার নিকট সালাতকে সময়ের বাইরে নিয়ে দেরী করার বিষয়ে আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, তোমরা তা তোমাদের ঘরে আদায় করে নিবে, তারপর তাদের সাথে জামাতে যা পড়বে তা তোমাদের জন্য নফল হিসেবে বিবেচিত হবে। আমর ইবন মাইমুন বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদকে বলা হলো ‘জামা‘আত’ (কে আঁকড়ে ধরার কথা আপনি বলে থাকেন, আবার একাকী সালাত আদায় করতে বলেন, তাহলে জামা‘আতে) আমাদের করনীয় কি? তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আমর ইবন মাইমুন লোকজনের সংখ্যা বেশি হওয়াই বিছিন্নতা। জামা‘আত হলো যারা আল্লাহর আনুগত্যকে মেনে নেয় যদিও তুমি একা হও। (দেখুন: মাজমু‘আয়ে ফাতওয়া: ১৭৯/৩)]

(মু্ক্তিপ্রাপ্ত দলের দ্বিতীয় নিদর্শন হচ্ছে):

খ- আল-ওয়াসাতিয়্যাহ: (মধ্যপন্থী হওয়া)

এ নাজাত বা মুক্তি প্রাপ্ত দল, যারা ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ নামে পরিচিত। তারা হলেন সকল দলসমূহের মধ্যে মধ্যপন্থী। যেমন, সমগ্র ধর্ম তথা জীবন ব্যবস্থার মধ্যে ইসলাম হলো মধ্যপন্থী দীন।

সুতরাং মুসলিমগণ হলেন আল্লাহ তা‘আলার নবী, রাসূল ও পুণ্যবান বান্দাদের মধ্যে মধ্যপন্থী। তারা তাদের বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করে না, যেমন খ্রিস্টানগণ সীমালঙ্ঘন করেছিল। খ্রিস্টানরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে, তাদের যারা আলেম ও পাদ্রী তাদের উপাস্য সাব্যস্ত করে এবং মাসীহ ইবন মারইয়ামকে তারা (উপাস্য) সাব্যস্ত করে। অথচ তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন এক ইলাহের ইবাদাত করে, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তারা তার সাথে যাদের শরীক করে তা হতে তিনি পবিত্র। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُوْنِ اللهِ وَالْمَسِيْحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلٰـهًا وَاحِدًا لاَّ إِلٰـهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَه عَمَّا يُشْرِكُوْنَ﴾ [ التوبة : ৩১ “তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ছেড়ে নিজেদের আলিম ও ধর্ম যাজকদেরকে এবং মরিয়মের পুত্র মাসীহ্কে রব বানিয়ে নিয়েছে অথচ তাদের প্রতি এ আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধুমাত্র এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত ইলাহ হওয়ার যোগ্য কেউ নেই। তিনি তাদের অংশীদার স্থির করা হতে পবিত্র”।]

মুসলিম জামা‘আত নবীদের প্রতি এ ধরনের কোনো অবিচার ও জুলুম অত্যাচার করেনি যেমনটি করেছে ইয়াহূদীরা। তারা বহু নবীদেরকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছে। মানব সমাজে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দিতেন তাদেরকেও তারা হত্যা করেছিল। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيۡنَ مَا ثُقِفُوٓاْ إِلَّا بِحَبۡلٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبۡلٖ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَسۡكَنَةُۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَانُواْ يَكۡفُرُونَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقۡتُلُونَ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ١١٢﴾ [ ال عمران : ١١٢ ] “তারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের ওপর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে লাঞ্ছনা, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি এবং মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি থাকলে আলাদা কথা। আর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব নিয়ে ফিরে এসেছে। আর তাদের উপর দারিদ্র্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তা এ জন্য যে, তারা নাফরমানী করেছে, আর তারা সীমালঙ্ঘন করত”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكۡفُرُونَ بِ‍َٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقۡتُلُونَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ بِغَيۡرِ حَقّٖ وَيَقۡتُلُونَ ٱلَّذِينَ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡقِسۡطِ مِنَ ٱلنَّاسِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ٢١﴾ [ ال عمران : ٢١ ] “নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করে এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে, আর মানুষের মধ্য থেকে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে হত্যা করে, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২১]] তাদের প্রবৃত্তি ও মতের বিরুদ্ধে যখনই কোনো রাসূল আসতেন, তখন তাদের একদল তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করত ও অপর দল তাদেরকে হত্যা করত। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَٰبَ وَقَفَّيۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِۦ بِٱلرُّسُلِۖ وَءَاتَيۡنَا عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَأَيَّدۡنَٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِۗ أَفَكُلَّمَا جَآءَكُمۡ رَسُولُۢ بِمَا لَا تَهۡوَىٰٓ أَنفُسُكُمُ ٱسۡتَكۡبَرۡتُمۡ فَفَرِيقٗا كَذَّبۡتُمۡ وَفَرِيقٗا تَقۡتُلُونَ ٨٧﴾ [ البقرة : ٨٧ ] “আর আমরা নিশ্চয় মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে একের পর এক রাসূল প্রেরণ করেছি এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ। আর তাকে শক্তিশালী করেছি ‘পবিত্র আত্মা’র মাধ্যমে। তবে কি তোমাদের নিকট যখনই কোন রাসূল এমন কিছু নিয়ে এসেছে, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখন তোমরা অহঙ্কার করেছ, অতঃপর (নবীদের) একদলকে তোমরা মিথ্যাবাদী বলেছ আর একদলকে হত্যা করেছ। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮৭]]

পক্ষান্তরে মুমিন মুসলিমরা কখনোই এ ধরনের কাজ করতে পারে না, তারা আল্লাহ তা‘আলার নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন, তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করেন, তাদের সম্মান করেন, ভালোবাসেন ও তাদের আনুগত্য করেন। তারা তাদের ইবাদাত করেন না এবং তাদেরকে রব হিসাবে মেনেও নেন না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা কতই সুন্দর বলেছেন,

﴿مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤۡتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحُكۡمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادٗا لِّي مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُواْ رَبَّٰنِيِّ‍ۧنَ بِمَا كُنتُمۡ تُعَلِّمُونَ ٱلۡكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمۡ تَدۡرُسُونَ ٧٩ وَلَا يَأۡمُرَكُمۡ أَن تَتَّخِذُواْ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ أَرۡبَابًاۗ أَيَأۡمُرُكُم بِٱلۡكُفۡرِ بَعۡدَ إِذۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ٨٠﴾ [ ال عمران : ٧٩، ٨٠ ]

“এটা কোনো মানুষের পক্ষে উপযোগী নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা যাকে কিতাব, জ্ঞান ও নবুওয়ত দান করেন, অতঃপর সে মানবমণ্ডলীর মধ্যে এ কথা বলে যে, তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে পরিত্যাগ করে আমার ইবাদাত কর, বরং বলবে তোমরা হয়ে যাও ‘রাব্বানী’ (কাণ্ডারী), কারণ তোমরাই কুরআন শিক্ষাদান কর এবং ওটা নিজেরাও পাঠ করে থাক। আর তিনি আদেশ করেন না যে, তোমরা ফিরিশতাগণকে ও নবীগণকে রব হিসাবে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হবার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরি করার আদেশ করবেন”? [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭৯-৮০]

অনুরূপভাবে মুমিনগণ ঈসা আলাইহিস সালাম বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তারা খ্রিস্টানদের মতো বলে না যে, ঈসা-ই আল্লাহ, তার পুত্র অথবা তিন জনের একজন। আর তারা তাকে অস্বীকারও করে না এবং মারইয়াম আলাইহিস সালামের প্রতি গুরুতর অপবাদও আরোপ করে না। যেমন, ইয়াহূদীগণ অপবাদ দিয়ে থাকে। ইয়াহূদীরা ঈসা আলাইহিস সালামকে জারজ সন্তান বলে আখ্যায়িত করে। বরং মুমিনগণ বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম বান্দা ও তার শীর্ষস্থানীয় একজন রাসূল, তিনি আল্লাহর কালিমা, যাকে পবিত্রা কুমারী নারী মারিয়ামের পেটে ঢেলে দেওয়া হয় এবং ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত (সৃষ্ট) এক রূহ।

অনুরূপভাবে মুমিনগণ আল্লাহ তা‘আলার দীনের বিধি-বিধানের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তারা মনে করেন আইন প্রণয়ন করা, রহিত করা ও বহাল রাখার একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ তা‘আলা। আল্লাহ তা‘আলা তার ইচ্ছা অনুযায়ী কোন কিছু রহিত করতে চাইলে এবং কোন বিধান বহাল রাখতে চাইলে তারা তার ওপর এসব বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন না। (আল্লাহ যা ইচ্ছা রহিত করেন, আবার যা ইচ্ছা তিনি বহাল রাখেন।) যেমনটি ইয়াহূদীরা বলে থাকেন। (তারা আল্লাহর দ্বারা কোনো বিধান রহিত করার অধিকার নেই বলে থাকে) আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿سَيَقُولُ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَ ٱلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمۡ عَن قِبۡلَتِهِمُ ٱلَّتِي كَانُواْ عَلَيۡهَاۚ ١٤٢﴾ [ البقرة : ١٤٢ ]

“মানুষের মধ্যে নির্বোধগণ বলে যে, তারা যে কিবলার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪২]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ نُؤۡمِنُ بِمَآ أُنزِلَ عَلَيۡنَا وَيَكۡفُرُونَ بِمَا وَرَآءَهُۥ وَهُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقٗا لِّمَا مَعَهُمۡۗ ٩١﴾ [ البقرة : ٩١ ]

“আর যখন তাদেরকে বলা হয় আল্লাহ তা‘আলা যা অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতি ঈমান আন। তখন তারা বলে, আমরা তো শুধু সেসব কিছুর ওপর ঈমান আনি যা আমাদের বনী ইসরাঈল জাতির ওপর নাযিল করা হয়েছে। এর বাহিরে যা আছে তা তারা অস্বীকার করে (অথচ] তা একান্ত সত্য এবং তাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়ণকারী”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৯১]

আর মুসলিমগণ তাদের বিজ্ঞ আলিমদের ও বুজর্গানে দীনদের জন্যে এটা জায়েয মনে করেন না যে, তারা চাইলে আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করবে। যা ইচ্ছে তা শরী‘আত বলে নির্দেশ দিবেন এবং যা ইচ্ছে তা হারাম বলে নিষেধ করবেন যেমনটি করে থাকে খ্রিস্টানগণ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রসঙ্গে বলেন,

﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ وَٱلۡمَسِيحَ ٱبۡنَ مَرۡيَمَ﴾ [ التوبة : ٣١ ]

“এসব লোকেরা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও ধর্ম যাজকদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩১]

এ আয়াতটির ওপর আদী ইবন হাতীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! তারা তো তাদের ইবাদাত করে না। আল্লাহ তা‘আলার রাসূল প্রত্যুত্তরে তাকে বলেছিলেন,

«مَا عَبَدُوْهُمْ وَلَكِنْ أحَلُّوْا لَهُمْ الْحَرَامَ فَاَطَاعُوْهُمْ وَحَرَّمُوْا عَلَيْهِمُ الْحَلاَلَ فَأطَاعُوْهُمْ»

“তারা ইবাদাত করে না ঠিকই, তাদের আলেমরা হারামকে হালাল বলেন। আর তারা তাদের অনুকরণ করে ও মেনে নেয়। আর হারামকে হালাল বলেন আর তারা তাদের অনুকরণ করে ও মেনে নেয়।” সে বলল হাঁ। আল্লাহ তা‘আলার রাসূল তাকে বললেন, তাহলে এটাই তো তাদের ইবাদাত করা হলো। কেননা হালাল ও হারাম করার ক্ষমতা তো তার, যিনি রব। [‘আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস একাংশ। ইমাম তিরমিযী তাফসীর অধ্যায়ে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, أَمَا إِنَّهُمْ لَمْ يَكُونُوا يَعْبُدُونَهُمْ، وَلَكِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا أَحَلُّوا لَهُمْ شَيْئًا اسْتَحَلُّوهُ، وَإِذَا حَرَّمُوا عَلَيْهِمْ شَيْئًا حَرَّمُوهُ “তবে তারা তাদেরকে উপাস্য সাব্যস্ত করেননি, তারা যখন কোন কিছুকে হালাল বলত, তারাও তাকে হালাল মনে করত। আর যখন কোন কিছূকে হারাম বলত, তারা তাকেও হারাম মনে করত”। ইমাম তিরমিযী বলেন হাদীসটি গারীব। আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।]

পক্ষান্তরে, মুমিনদের বক্তব্য হল, সৃষ্টি ও নির্দেশ কেবল আল্লাহর জন্য। যেমন করে কেউ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না তেমনি অপরকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে না। আর মুমিনগণ বলেন, আমাদের কথা হবে আমরা শুনলাম ও মানলাম। ফলে তারা আল্লাহ তা‘আলা যা আদেশ করেছেন, তা তারা মেনে নিয়েছেন। আর তারা বলে,

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يَحۡكُمُ مَا يُرِيدُ ١﴾ [ المائ‍دة : ١ ]

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা যা চান তার আদেশ দেন”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১]

পক্ষান্তরে মাখলুক স্রষ্টার কোনো নির্দেশের পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না, সে যদিও মহা ক্ষমতাশালী হয়।

অনুরূপ মুমিনগণ আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী বিষয়ে মধ্যপন্থী। কেননা, ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীকে অপূর্ণাঙ্গ মাখলুকের গুণাবলীর সাথে বিশেষিত করেছে। তারা বলে, আল্লাহ তা‘আলা গরীব আর আমরা ধনী। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَّقَدۡ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوۡلَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ فَقِيرٞ وَنَحۡنُ أَغۡنِيَآءُۘ سَنَكۡتُبُ مَا قَالُواْ وَقَتۡلَهُمُ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖ وَنَقُولُ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلۡحَرِيقِ ١٨١﴾ [ ال عمران : ١٨١ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ দরিদ্র এবং আমরা ধনী’। অচিরেই আমি লিখে রাখব তারা যা বলেছে এবং নবীদেরকে তাদের অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়টিও এবং আমি বলব, ‘তোমরা উত্তপ্ত আযাব আস্বাদন কর”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮১]] আল্লাহ তা‘আলার হাত বন্ধ। [আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَقَالَتِ ٱلۡيَهُودُ يَدُ ٱللَّهِ مَغۡلُولَةٌۚ غُلَّتۡ أَيۡدِيهِمۡ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْۘ بَلۡ يَدَاهُ مَبۡسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيۡفَ يَشَآءُۚ﴾ [ المائ‍دة : ٦٤ ] “আর ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বাঁধা’। তাদের হাতই বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং তারা যা বলেছে, তার জন্য তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছে। বরং তার দু’হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত নং ৬৪]] তারা আরো বলে, তিনি সৃষ্টি করতে করতে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং তিনি শনিবারের বিশ্রাম ও প্রশান্তি গ্রহণ করেছেন। এরূপ বহু ভ্রান্ত আকীদা ইয়াহূদীরা পোষণ করে থাকে।

আর খ্রিস্টানগণ মাখলুক তথা সৃষ্ট জীবকে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে খাস এ ধরনের গুণাবলীর সাথে বিশেষিত করেছে। তারা বলে, মাখলুক সৃষ্টি করে, রিযিক দেয়, সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়া করে, ক্ষমা করে, অনুগ্রহ প্রদর্শন করে, প্রতিদান দিয়ে থাকে, শাস্তি প্রদান করে। (অথচ এগুলো কেবল স্রষ্টার গুণ)

মুমিনগণ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনে যার কোনো শরীক নেই, সমকক্ষ নেই, তার কোনো উদাহরণও নেই; তিনিই সমগ্র পৃথিবীর রব, সব কিছুর স্রষ্টা, তিনি ছাড়া বাকী সবাই তার বান্দা এবং তার মুখাপেক্ষী। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِن كُلُّ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّآ ءَاتِي ٱلرَّحۡمَٰنِ عَبۡدٗا ٩٣ لَّقَدۡ أَحۡصَىٰهُمۡ وَعَدَّهُمۡ عَدّٗا ٩٤ وَكُلُّهُمۡ ءَاتِيهِ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ فَرۡدًا ٩٥﴾ [ مريم : ٩٣، ٩٥ ]

“আকাশ আর জমিনে এমন কেউ নেই যে, দয়াময়ের নিকট বান্দা হয়ে হাযির হবে না। তিনি (তার সৃষ্টির] সব কিছুকেই (কড়ায় গণ্ডায়] গুনে তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব রেখে দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন এদের সবাই নিঃসঙ্গ অবস্থায় তার সামনে আসবে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৯৩-৯৫]

অনুরূপভাবে হালাল ও হারামের ব্যাপারে মুমিনগণ মধ্যপন্থী। কিন্তু ইয়াহূদীরা তার বিপরীত, তারা নিজেরাই তাদের নিজেদের কতক বস্তুকে হারাম করেছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,

﴿فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا ١٦٠﴾ [ النساء : ١٦٠ ]

“ইয়াহূদীদের বাড়াবাড়ি আর বহু লোককে আল্লাহ তা‘আলার পথে বাধা দেওয়ার কারণে আমরা তাদের ওপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬০] [ইবন কাসীর রহ. বলেন, ইয়াহুদীদের বড় বড় গুনাহের কারণে তাদের জন্য যেসব পবিত্র বস্তু ইতিঃপূর্বে হালাল ছিল তা হারাম করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাওরাতে যেসব বস্তু ইতিঃপূর্বে তাদের জন্য হালাল ছিল, তা হারাম করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿كُلُّ ٱلطَّعَامِ كَانَ حِلّٗا لِّبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسۡرَٰٓءِيلُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦ مِن قَبۡلِ أَن تُنَزَّلَ ٱلتَّوۡرَىٰةُۚ ٩٣﴾ [ ال عمران : ٩٣ ] “সকল খাবার বনী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল। তবে ইসরাঈল তার নিজের উপর যা হারাম করেছিল তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৩] তারপর আল্লাহ তাওরাতে অনেক কিছুকে তাদের ওপর হারাম করে দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَعَلَى ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٖۖ وَمِنَ ٱلۡبَقَرِ وَٱلۡغَنَمِ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ شُحُومَهُمَآ إِلَّا مَا حَمَلَتۡ ظُهُورُهُمَآ أَوِ ٱلۡحَوَايَآ أَوۡ مَا ٱخۡتَلَطَ بِعَظۡمٖۚ ذَٰلِكَ جَزَيۡنَٰهُم بِبَغۡيِهِمۡۖ وَإِنَّا لَصَٰدِقُونَ ١٤٦﴾ [ الانعام : ١٤٦ ] “আর ইয়াহূদীদের ওপর আমরা নখবিশিষ্ট সব জন্তু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাদের উপরে হারাম করেছিলাম, তবে যা এগুলোর পিঠে ও ভুঁড়িতে থাকে, কিংবা যা কোনো হাড়ের সাথে লেগে থাকে, তা ছাড়া। এটি তাদেরকে প্রতিফল দিয়েছিলাম তাদের অবাধ্যতার কারণে। আর নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৬] অর্থাৎ, আমি এসব বস্তু তাদের ওপর হারাম করেছি, কারণ, তারা তাদের অপকর্ম, হৎকারীতা, বাড়াবাড়ি ও রাসূলের বিরোধিতা করার কারণে এ ধরনের শাস্তি প্রাপ্য ছিল। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا ١٦٠﴾ [ النساء : ١٦٠ ] “ইয়াহূদীদের বাড়াবাড়ি আর বহু লোককে আল্লাহ তা‘আলার পথে বাধা দেওয়ার কারণে আমরা তাদের ওপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৫৮৫/১]

ইয়াহূদীরা নখ বিশিষ্ট প্রাণীর গোশত খেত না। যেমন, উট, হাঁস ইত্যাদি। পাকস্থলীর ঝিল্লির চর্বি, দুই কিডনির গোশত ও বকরীর দুধ প্রভৃতি তারা খেত না, যা তারা তাদের নিজেদের ওপর বিভিন্ন খাদ্য ও পোশাক ইত্যাদি হারাম করেছিল। এমনকি বলা হয়ে থাকে (খাদ্য, পোশাক ছাড়াও) তাদের ওপর তিনশত ষাট ধরণের বস্তু হারাম ছিল। দুইশত আটচল্লিশটি বিষয় তাদের ওপর ছিল কঠোর বিধান। অনুরূপভাবে নাপাকীর বিষয়ে তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করা হয়। এমনকি ঋতুবর্তী মহিলার সঙ্গে তারা খানা-পিনা খেত না এবং একসঙ্গে এক ঘরে বসবাস করতো না।

প্রক্ষান্তরে খ্রিস্টানগণ যাবতীয় অপবিত্র জিনিস ও সমস্ত হারাম দ্রব্য হালাল করে নিয়েছিল। সকল প্রকার নোংরা অপবিত্র জিনিসের অনুশীলন করেছিল।

ঈসা আলাইহিস সালাম তাদের শুধু এ কথা বলেছিলেন, যার বর্ণনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعۡضَ ٱلَّذِي حُرِّمَ عَلَيۡكُمۡۚ ٥٠﴾ [ ال عمران : ٥٠ ]

“আর যাতে আমি হালাল করি, কতক এমন বস্তু যা তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছিল”। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৫০]

এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَاتِلُواْ الَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَلاَ بِالْيَوْمِ الآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُوْنَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَلاَ يَدِيْنُوْنَ دِيْنَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِيْنَ أُوْتُواْ الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُواْ الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُوْنَ﴾ [ التوبة :]

“যে সব আহলে কিতাব আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনে না, আর কিয়ামতের দিবসের প্রতিও না, আর ঐ বস্তুগুলোকে হারাম মনে করে না যেগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল হারাম করেছেন, আর সত্য দীনকে নিজেদের দীন (ইসলাম) হিসেবে গ্রহণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাক যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে প্রজারূপে জিযিয়া (কর) দেয়”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৯]

পক্ষান্তরে মুমিনগণ- যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন তারা স্বীয় বাণীতে, তিনি বলেন,

﴿وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِ‍َٔايَٰتِنَا يُؤۡمِنُونَ ١٥٦ ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلۡأُمِّيَّ ٱلَّذِي يَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُواْ ٱلنُّورَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٥٧﴾ [ الاعراف : ١٥٥، ١٥٦ ]

“আর আমার দয়া (রহমত) তো (আসমান-জমিনের) সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, আমি অবশ্যই তা লিখে দেবো এমন লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলাকে ভয় (তাকওয়া অবলম্বন করে) করে, যারা যাকাত আদায় করে, যারা আমার আয়াত সমূহের ওপর ঈমান আনে। যারা এ বার্তাবাহক উম্মী (নিরক্ষর) রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার উল্লেখ তাদের তাওরাত ও ইঞ্জিলেও তারা দেখতে পায়। যে নবী তাদের ভালো কাজের আদেশ দেন, মন্দ কাজ হতে বিরত রাখেন, যিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করে ও অপবিত্র বস্তুগুলো তাদের ওপর হারাম ঘোষণা করেন, তাদের ঘাড়ে যে বোঝা ছিল তা তিনি নামিয়ে দেন এবং যে সব বন্ধন তাদের গলার ওপর ছিল তা তিনি খুলে ফেলেন। অতএব, যারা তার ওপর ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে আর তার ওপর অবতীর্ণ আলোর (কুরআন) অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৬-১৫৭]

এ প্রসঙ্গে তাদের আরো বহু গুণাবলী রয়েছে, যা বর্ণনা করতে গেলে অধ্যায়টি অনেক দীর্ঘ হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন