hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সংক্ষিপ্ত ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব

লেখকঃ সাইয়্যেদ মাহমূদ শুকরী আলূসী

৫১
৪৯। আল্লাহর অলীদেরকে হত্যা করা
আল্লাহর অলীদেরকে হত্যা করা এবং সমাজের ন্যায় বিচারক লোকদেরকে হত্যা করা জাহেলী যুগের অন্যতম বদ-স্বভাব ছিল। আল্লাহ ইয়াহূদীদের সম্বন্ধে বলেন-

وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآَيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ . ( سورة البقرة : 61)

‘তাদের উপর লাঞ্ছনা, দারিদ্র্য অর্পিত হলো, বরং তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হলো। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করতো। নিরন্তর অবাধ্যতা ও সীমা লংঘনের জন্যই তাদের এই পরিণতি বরণ করতে হলো’। (সূরা আল-বাক্বারাহ ২: আয়াত ৬১)

এমনিভাবে আরও বহু আয়াত রয়েছে যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে অবিশ্বাসী, জাহেল ও সীমা লংঘনকারীদের হাতে নবী রাসূল ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারী ও হক্কের দিকে আহবানকারীদেরকে কিভাবে কত রকমের লাঞ্ছনা পোহাতে হয়েছে।

উম্মতে মুহাম্মদীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ, তাদের মর্যাদাবান আলেমগণ মানুষকে হকের দাওয়াত দিতে গিয়ে এত বেশী দুঃখ-কষ্টের সম্মূখীন হয়েছেন যে, ইতিহাসের পাতা মসীলিপ্ত হয়ে গেছে। তবে সান্ত্বনা এই যে, আম্বিয়ায়ে কিরাম ও তাঁদের অনুসারী মু‘মিনগণ যদিও প্রথম অবস্থায় দুঃখ বরণ করেছেন, কিন্তু শুভ পরিণতি তাঁদের জন্যই। যেমন আল্লাহ বলেন-

تِلْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ مَا كُنْتَ تَعْلَمُهَا أَنْتَ وَلَا قَوْمُكَ مِنْ قَبْلِ هَذَا فَاصْبِرْ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ . ( سورة هود : 49)

‘এ সবকিছু গায়েবের খবর আমি তোমার নিকট অহী পাঠিয়েছি, ইতোপূর্বে তুমি বা তোমার কওমের কেউ তা জানতো না। তুমি ধৈর্য্য ধারণ করতে থাকো। কেননা অবশ্যই শেষ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্যই। (সূরা হুদ ১১: আয়াত ৪৯)।

ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম সম্রাটের দরবারে তাঁর দূত পাঠালেন তখন রোম সম্রাট রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চরিত্র জানার জন্য তাঁর দুশমন মুশরিকদের তলব করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের ও তাঁর মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা কি? তারা উত্তরে বলল, অবস্থা পরিবর্তনশীল। হার জিত দু’পক্ষেই হয়ে থাকে। রোম সম্রাট (হিরাক্লিয়াস) বললেন, রাসূলদের অবস্থাই এরকম। তবে শেষ পরিণতি তাদের জন্যই। যেমন বদরের দিন আল্লাহ মুসলিমদের সাহায্য করলেন। কিন্তু ওহুদের দিন তাদেরকে পরীক্ষায় ফেললেন। এরপর ইসলাম সম্পূর্ণরূপে বিজয় লাভ না করা পর্যন্ত মুসলিমরা কখনোই পরাজিত হয়নি।

যদি বলা হয় যে, বনী ঈস্রাইলের নবীগণ তাঁদের কওমের হাতে অন্যায়ভাবে নিহত হয়েছেন, সেকথা পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ বিবৃত করেছেন। কিংবা ধার্মিক লোকদের উপর আল্লাহ দুষ্ট লোকদেরকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দান করে থাকেন। যেমন- ‘বখত নছর’ বনী ইস্রাইলদের উপর শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল। যেমন কাফির মুশরিকগণ এবং ইয়াহূদী-খৃষ্টানগণ কখনও কখনও মুসলিমদের উপর বিজয় লাভ করে থাকে। উপরে বলা হয়েছে যে, নিহত নবীগণ জিহাদে শহীদ মু‘মিনদের মতই। যেমন আল্লাহ বলেন-

وَكَأَيِّنْ مِنْ نَبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ ﴿146﴾ وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَنْ قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ ﴿147﴾ فَآَتَاهُمُ اللَّهُ ثَوَابَ الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْآَخِرَةِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿148﴾ ( سورة آل عمران : 146-148)

‘‘এমন কত নবী যুদ্ধ করেছেন, যাঁদের সংগে বহু আল্লাহওয়ালা ছিলেন। আল্লাহর পথে তাদের কত বিপর্যয় ঘটেছে কিন্তু তাঁরা হীনবল হননি, দুর্বল হননি, কিংবা নত হননি। আললাহ ধৈর্য্যশীল ব্যক্তিদেরকেই ভালবাসেন। তাদের মুখে কোনো কথা ছিল না কেবল মাত্র একটি দোয়া ছাড়া, প্রভু হে! আমাদের গুনাহ গুলো এবং বাড়াবাড়িসমূহকে তুমি ক্ষমা করো। আমাদের পদ যুগল সূদৃঢ় রাখো এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের উপর তুমি আমাদিগকে সাহায্য করো। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ইহকালীন ও পরকালীন পুরস্কার দান করেন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।’’ (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৪৬-১৪৮)

আর এটাতো জানা কথা যে, মুসলিমদের মধ্যে যাদের শাহাদাত বরণের সৌভাগ্য হয়েছে সাধারণভাবে মৃত্যু বরণকারীদের চেয়ে তারা অনেক মর্যাদার অধিকারী। যেমন আল্লাহ বলেন-

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ . ( سورة آل عمران : 169)

‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের প্রতিপালকের দৃষ্টিতে জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত’। (সূরা আলে ইমরান, ৩: আয়াত ১৬৯)

মুমিনদের প্রতি অবিশ্বাসীদের আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে অন্যত্র আল্লাহ বলেন-

قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَنْ يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُمْ مُتَرَبِّصُونَ . ( سورة التوبة : 52)

(হে রাসূল) ‘‘আপনি (ওদেরকে) বলে দিন যে, তোমরা আমাদের জন্য শাহাদাত অথবা বিজয় দু’টির যে কোনো একটির জন্য অপেক্ষা করছো। আর আমরা অপেক্ষা করছি যে, আল্লাহ সরাসরি নিজের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন, নাকি আমাদের হাত দিয়ে? অতএব তোমরা প্রতীক্ষা করো, আমরাও তোমাদের সংগে প্রতীক্ষায় রইলাম। (সূরা আত-তাওবা ৯: আয়াত ৫২)

অতঃপর যে দ্বীনের জন্য শহীদগণ রক্ত দিলেন, সেই দ্বীন বিজয়ী হলো, যা মু‘মিনদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্য বহন করে আনলো। এটাই হলো আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্যের প্রকৃত তাৎপর্য।

মোটকথা, মৃত্যু যখন হবেই, তখন এমন মৃত্যুবরণ করা উচিত, যার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যশালী হওয়া যায়। এমন মৃত্যু নিশ্চয়ই কারো কামনা করা উচিৎ নয়, যার দ্বারা না দুনিয়াতে কোনো স্থায়ী কল্যাণ লাভ হয়, না আখিরাতে কামিয়াবী হাছিল করা যায়।

মুমিনদের মধ্যে যাঁরা শাহাদাত লাভে ধন্য হয়েছেন, তাঁরা ন্যায় কাজের নির্দেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা শাহাদাতকে কামনা করেছিলেন দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্য লাভের জন্য। পক্ষান্তরে কাফিরদের মধ্যে যারা নিহত হয়, তারা নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিহত হয়। তারা এর দ্বারা নিজেদের বা নিজেদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কোনো কল্যাণ বা সৌভাগ্য কামনা করে না, বরং দুনিয়াতে সকলের অভিশাপগ্রস্ত এবং আখিরাতে নিন্দিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন-

كَمْ تَرَكُوا مِنْ جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ ﴿25﴾ وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ ﴿26﴾ وَنَعْمَةٍ كَانُوا فِيهَا فَاكِهِينَ ﴿27﴾ كَذَلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آَخَرِينَ ﴿28﴾ فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ ﴿29﴾ ( سورة الدخان : 25-29)

‘এরা ছেড়ে গেছে দুনিয়াতে কতো না বাগ-বাগিচা, নির্ঝরিণী, কৃষিক্ষেতসমূহ, সুরম্য গৃহসমূহ এবং অসংখ্য নেয়াতম - যার মধ্যে তারা আনন্দে বিভোর ছিল। তাঁদের পরবর্তী লোকদের অবস্থাও এমন ছিল। আসমান ও জমিনের কেউ তাদের জন্য সামান্য চোখের পানিও ফেলেনি এবং (মৃত্যু ঘন্টা বাজার পর) তাদেরকে কোনরূপ ফুরসতও দেওয়া হয়নি’। (সূরা আদ-দুখান, ৪৪: আয়াত ২৫-২৯)

পবিত্র কুরআনেই সাক্ষ্য রয়েছে যে, বহু নবী ইতোপূর্বে নিহত হয়েছেন। সংগে নিহত হয়েছিলেন তাঁদের অসংখ্য আল্লাহভীরু অনুসারী। কিন্তু কোনরূপ দুর্বলতা ও হীনতা তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি এবং শত্রুপক্ষের জয়লাভের কারণ হিসাবে নিজেদের ত্রুটিসমূহকে দায়ী করে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন। আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম পুরস্কার দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন। সাধারণ মুমিনদের ঈমানী অবস্থা যখন এই ছিল তখন নবীগণের অবস্থা এর চাইতে কত উচ্চ মানের ছিল, সহজেই তা অনুমেয়।

মুসলিমদের উপর কাফিরদের যেসব সাময়িক বিজয় ঘটেছে, তার কারণ ছিল মুসলিমদের অন্যায় আচরণ। যেমন ওহুদের যুদ্ধে ঘটেছিল। যদি তারা তাওবা করে তাহলে কাফিরদের উপর বিজয় লাভ করে, যেমন অন্যান্য সমস্ত যুদ্ধসমূহে ঘটেছে। এটা নবুওতের নিদর্শন। মোদ্দাকথা, আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য বিজয় লাভের মূল কথা হলো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ বা ইত্তেবা। কেননা আল্লাহ চান তাঁর কালেমাকে বুলন্দ করতে এবং তিনি চান তাঁর বিজয়ীদের উপর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসারীদের বিজয় দান করতে।

বনি ইসরাইলদের উপরে বখত নছরের বিজয়ের মূল কারণ ছিল এটাই যে, বনী ইসরাইলগণ মূছা আলাইহিস সালাম অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছিল। অতএব তার শাস্তিস্বরূপ তাদের এই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। যদি তারা মূসা আলাইহিস সালামের অনুসরণে অটল থাকতো, তাহলে তারা অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য পেত, যেমন- দাউদ ও সুলায়মান আলাইহিস সালামের সময়ে তারা পেয়েছিলেন।

সুরা আল-ইসরা ৪-৮ আয়াতে উক্ত বিষয়ে আল্লাহ বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। মোটকথা, শত্রুপক্ষের, উপর বনী ঈস্রাইলদের বিজয় ও কখনো বণী ঈস্রাইলদের উপর শত্রুপক্ষের বিজয়, মূসা আলাইহিস সালামের নবুওতের নিদর্শন। যেমন মুসলিমদের ইতিহাসে অনুরূপ ঘটনা শেষ নবীর নবুওতের সত্যতার নিদর্শন। বিজয়ীদের উপর বিজয় লাভের এই ধারা মূসা আলাইহিস সালামের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে ও ঈসা আলাইহিস সালাম প্রমুখের সময়ে যেমন চালু ছিল, আমাদের নবীর জীবদ্দশায় ও তাঁর মৃত্যুর পরে খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলেও তেমনি চালু ছিল।

পক্ষান্তরে মু‘মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের মাঝে বিজয় লাভের দ্বারা মূলতঃ এটাই বলতে চায় যে, আমরা তোমাদের উপর জয়লাভ করেছি তোমাদের পাপের কারণে। নইলে তোমরা যদি তোমাদের দ্বীনের যথার্থ অনুসারী হতে তাহলে কখনোই আমরা জয়ী হতে পারতাম না। বলাবাহুল্য, জয়লাভ সত্বেও শুভ পরিণতি তাদের জন্য নয়। বরং আল্লাহ যালিমকে যালিম দ্বারাই ধ্বংস করে থাকেন। এমনি করে একদিন সমস্ত যালিমই ধ্বংস হয়ে যাবে। উপরন্তু এই নিহত যালিমরা মৃত্যুর পরে কিছুই সৌভাগ্য কামনা করতে পারে না। কতই না করুণ এদের অবস্থা।

অতএব ইয়াহূদী খৃষ্টানদেরদের উপর মুসলিমদের বিজয় ইতোপূর্বে তাদের উপর বখত নছরের বিজয়ের মত নয়। যেমন- আহলে কিতাবদের অনেকে বলে থাকে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীরা আমাদের উপর জয়লাভ করেছে আমাদের পাপের কারণে। আসলে আমাদের দ্বীন অত্যন্ত সঠিক ও নির্ভেজাল।

ইহা মূলতঃ একটি বাজে ধারণা। কেননা বখত নছর নবুওতের দাবী করেনি। সে ধর্মের জন্য যুদ্ধ করেনি। সে ইয়াহূদীদেরকে মুসা আলাইহিস সালামের ধর্ম ত্যাগ করে তার ধর্মে আসতে বলেনি। বরং তার এই হামলা ছিল লুটেরা ও ডাকাতের হামলার ন্যায়। এটা কখনোই সেই মহানবীর জয়লাভের মত নয়, যিনি নবুওতের দাবী করেছেন। মানুষকে সেই দাবী মেনে নেবার আহবান জানিয়েছেন। তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গলের পথ বাতলে দিয়েছেন। সুসংবাদ ও জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন এবং দ্বীন বিজয় লাভ করেছে। সংগে সংগে তাঁর বিরোধীরা পর্যুদস্ত হয়েছে।

মোটকথা, অবিশ্বাসীদের উপর বিশ্বাসীদের বিজয় চিরন্তন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ﴿22﴾ سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا ﴿23﴾ ( سورة الفتح : 22-23)

‘যদি অবিশ্বাসীরা তোমাদের সংগে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তাহলে অবশ্যই তারা পিছু হটবে। অতঃপর তারা কোনো বন্ধু বা সাহায্যকারী কিছুই পাবে না। আল্লাহর এই নির্ধারিত নিয়ম বিগত দিন থেকে চলে আসছে। তুমি কখনোই এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখবে না।’ (সূরা আল-ফাতাহ্ ৪৮: আয়াত ২২-২৩)

কিন্তু উপরোক্ত বিজয় লাভের জন্য আবশ্যিক পূর্বশর্ত হলো ঈমান সঠিক হওয়া, যা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য ব্যতীত সম্ভব নয়। যখন বিভিন্ন পাপের কারণে ঈমান ত্রুটিপূর্ণ হবে তখন তার প্রতিফলও তেমনি হবে। যেমন- উহুদের যুদ্ধে হয়েছিল।

আবু হোরায়রা রা. হতে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ যালিমদেরকেই ঢিল দিয়ে থাকেন। তারপর যখন ধরেন আর কোনো মতেই রেহাই দেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ . ( سورة هود : 102)

‘কোন যালিম জনপদকে যখন আল্লাহ তা‘আলা পাকড়াও করেন, তখন এমনিভাবেই পাকড়াও করে থাকেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন মর্মন্তুদ’। (সূরা হুদ ১১: আয়াত ১০২)

অতএব মিথ্যাবাদী কদাচারী যারা, তাদের ধন-দৌলত যতই বেশী থাকুক না কেন, তাদের সব কিছুই নিশ্চি‎হ্ন হয়ে যাবে। সমাজে বেঁচে থাকবে কেবল তাদের বদনাম ও নিন্দাবাদ। এরা যেমন তাড়াতাড়ি উঠে, তেমনি তাড়াতাড়ি এদের পতন হয়। যেমন- (মিথ্যা নবীর দাবীদার) আসওয়াদ আনাসী, মুসায়লামা কাযযাব, হারেছ দামেস্কী, বাবক খরমী প্রমুখ।

পক্ষান্তরে নবীগণের জীবনে বহু বিপদ-মুসীবত এসেছে শুধুমাত্র তাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য। কেননা আল্লাহ পরীক্ষার মাধ্যমেই তাঁর বান্দাদেরকে মযবুত ও খাঁটি করে দেন এবং চারা গাছের মত ক্রমেই তাঁর ঈমানকে বিকশিত করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا . ( سورة الفتح : 29)

‘‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচরগণ অবিশ্বাসীদের উপর কঠোর, কিন্তু নিজেরা পরস্পরে সহানুভুতিশীল। তুমি তাদেরকে আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য (প্রায়ই) রুকু-সিজদায় রত দেখবে। তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন দেখতে পাবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের করা এরূপ দেয়া হয়েছে, যেমন- একটি চারাগাছ, প্রথমে তার অংকুরোদগম হয়, তারপর ক্রমে তা শক্তি সঞ্চয় করে ও শক্ত হয় এবং এক সময় নিজ পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। চাষী এতে অত্যন্ত খুশী হয় যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের জন্য ক্ষমা ও উত্তম পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন’। (সূরা আল-ফাতহ, ৪৮: আয়াত ২৯)

উপরোক্ত উদাহরণ এজন্য যে, নবীদের অনুসারী প্রথম দিকে তারাই হয়ে থাকে যারা সমাজের দুর্বল শ্রেণী। পরে ক্রমে তারা শক্তি সঞ্চয় করে থাকেন ও বিজয় লাভে ধন্য হন।

অন্য আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের লক্ষ্য করে বলেন-

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ . ( سورة البقرة : 214)

‘তোমরা কি এত সহজেই জান্নাতে যাবে বলে ভেবে নিয়েছো? অথচ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত কঠিন দুঃখ-কষ্ট-ক্লেশ ও ভুমিকম্প সদৃশ বিপদাপদসমূহের কিছুই তোমাদের কাছে আসেনি? যার ফলে রাসুল ও তাঁর সংগীরা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে’। জেনে রাখো, আল্লাহ সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’। (সূরা আল-বাক্বারাহ ২: আয়াত ২১৪)

উপরের বিস্তারিত আলোচনায় একথা প্রমাণিত হলো যে, হকপন্থী ও তাদের সাহায্যকারীদের যুলুম করা জাহেলী যুগের রীতি, যা এ যুগেও চলছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন