hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামের সমালোচনা ও তার জবাব

লেখকঃ ড. সাঈদ ইসমাঈল চীনী

৪৫
পরিশিষ্ট
ইসলামের কিছু সাধারণ বাস্তবতা রয়েছে, ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস ও শরী‘আ-আইনের -উপাদান-কাঠামো নিয়ে সমালোচনার যোগ্য হতে হলে যেগুলো না জানলেই নয়। যেমন,

প্রথমত: ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেক অংশের একটি পূর্ণ একক। এর মধ্যে রয়েছে খালেক বা স্রষ্টার সঙ্গে মাখলুক বা সৃষ্টিজীবের পারস্পরিক আচরণ ও লেনদেনের প্রয়োজনীয় সব নিয়ম-কানূন ও রীতিনীতি। আর দুনিয়ার জীবন যেহেতু আখিরাতের জীবনের ক্ষেত স্বরূপ। দুনিয়াতে আমরা যা চাষাবাদ করবো এখানে তার সামান্যই ভোগ করবো। তাই যে আখিরাতে সিংহভাগ ভোগ করবো তার মূল্যই বেশি। আর যেসব ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও বক্তব্য এসেছে সেসব নিয়ম-কানূন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে ত্রুটি মুসলিমের চিরস্থায়ী জীবনের গন্তব্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দ্বিতীয়ত: ইসলাম তার সাধারণ অর্থ অনুযায়ী, অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হওয়া- এর পথ পরিক্রমার সূচনা হয়েছে আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে। তার পরে অসংখ্য রাসূল এ পথে মানুষকে ডেকেছেন। সর্বশেষ এ পথে মানুষকে আহ্বান করেছেন খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতপর আল্লাহ তা‘আলা এ আখেরী রিসালত তথা সর্বশেষ প্রত্যাদেশের দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। যে রিসালাত কিয়ামত পর্যন্ত এ পার্থিব জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন মেটাতে পারে এবং সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে। তাই মুসলিমদের জন্য এই রিসালাতকে কেবল নিজেদের মধ্যে সীমিত রাখা সমীচীন নয়। এ সেই ধর্ম যা জিন্ন-ইনসানের ক্ষণস্থায়ী ও চিরস্থায়ী জগতের সৌভাগ্য ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তবে কোনো মুসলিমের জন্য কাউকে এ ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করার অধিকার দেওয়া হয় নি। অতএব এই পরীক্ষার জগতে এবং এ পার্থিব জীবনে কাউকে দীন গ্রহণে জোরজবরদস্তি করা যাবে না।

তৃতীয়ত: ইসলাম একটি রাজনৈতিক ঐক্যের আওতায় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর যাবতীয় অধিকার সংরক্ষণ করে। তারা সংখ্যাগুরুহোক বা সংখ্যালঘু। অবশ্য তা প্রত্যেক দলের যথাযোগ্য ব্যবধানের নিরিখে। তবে সামষ্টিক পর্যায়ে সংখ্যাগুরুদের ইসলাম কিছু অধিকার দেয়, যেখানে বিভিন্নতার কোনো অবকাশ নেই বলে তা সংখ্যালঘুদের দেওয়া সম্ভব হয় না। পক্ষান্তরে ব্যক্তি পর্যায়ে ইবাদাত-বন্দেগী ও নাগরিক অধিকারাদি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বীকৃত সংবিধানের মূলনীতির আলোকে তাদের যথাযোগ্য অধিকার প্রদান করে।

চতুর্থত: আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করেছেন এবং দুনিয়া-আখিরাতের সাফল্য ও সৌভাগ্য লাভের জন্য একে অপরকে পরস্পরের সহযোগি হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি ইসলাম কবুল না করার মাধ্যমে যারা চিরস্থায়ী সৌভাগ্য লাভে সহযোগি হতে অস্বীকৃতি জানায়, অন্তত দুনিয়ার জীবনের সুখ-শান্তি বাস্তবায়নের জন্য হলেও তাদের সহযোগি হতে মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে ইসলাম সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে তাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যৌথ ব্যাপারগুলোতে ইতিবাচক সহযোগিতায় অনুপ্রাণিত করে।

পঞ্চমত: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে ইসলামকে হরদম অভিযুক্ত করা হচ্ছে। যা পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়াচ্ছে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে ভীতি প্রদর্শন, যার সমার্থক হিসেবে ট্যেররিজম (terrorism) বা সন্ত্রাস শব্দ ব্যবহার করা হয় এবং ইসলাম যাকে সন্ত্রাস বলে চিহ্নিত করে সেই ‘রু‘ব’ ( الرعب ) শব্দের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। তদুপরি লক্ষণীয় হলো শব্দদু’টি ব্যবহারের দু’টি দিক রয়েছে:

সর্বাবস্থায় ইসলাম সন্ত্রাস ও আগ্রাসনকে হারাম মনে করে। এবং এ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে। অন্যের বিরুদ্ধে যে সন্ত্রাস ও আগ্রাসনের সূচনা করবে, যে বা যারা তাকে সহযোগিতা করবে এবং যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সাম্যভিত্তিক সমাধানকে যে বা যারা অস্বীকার করবে- এরা সবাই এ অপরাধে অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আক্রান্ত বা মজলুম ব্যক্তি প্রতিরোধ বা আত্মরক্ষামূলক ত্রাস অথবা সহিংসতা অবলম্বন করে। ইসলাম একে শর্তসাপেক্ষে ও প্রয়োজন সীমা পর্যন্ত জরুরী মনে করে। বরং আগ্রাসীকে ঠেকাতে ইসলাম এসব অবলম্বনে উদ্বুদ্ধও করে। বলাবাহুল্য, যুলুম ও অত্যাচার নির্মূলে গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপই এর আওতাভুক্ত।

প্রকৃত অবস্থা ও জাতিসঙ্ঘের সনদগুলো পর্যালোচনা করলে এটা সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, এই বাস্তবানুগ প্রকারের ক্ষেত্রে উভয়টি ইসলামের সঙ্গে সহমত পোষণ করে। এর দাবী, ত্রাস বা সহিংসতা মোকাবেলায় আত্মরক্ষামূলক প্রস্ত্ততি গ্রহণে গাফলতি না করা। কেননা এই সাময়িক জীবনে সংঘাত ও দ্বন্দ্বের অমোঘ নিয়মেই দুষ্ট ও শিষ্টের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। আর সন্ত্রাস ও আগ্রাসন কেবল অস্ত্র ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যালিমের পক্ষে ভোট দেওয়া বা মযলুমের বিপক্ষে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। আর বিশেষ ধরনের বা অবিনাশী সন্ত্রাস যেমন, তৎক্ষণাৎ অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা, আভ্যন্তরীণ কোন্দল উস্কে দেওয়া, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুস্থ মূল্যবোধ বিনষ্টকারী সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও অনেক ক্ষেত্রে নিরপরাধ মানুষের ধীর মৃত্যু বা দীর্ঘ যন্ত্রণার কারণ হয়। কখনো তা তাদেরকে চিরস্থায়ী কল্যাণ লাভ থেকেও বঞ্চিত করে। তাই এসবও এক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বাইরে নয়।

দু’টি বিষয় ভুলে গিয়ে অনেক সময় ইসলামের প্রতিষ্ঠিত কিছু বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়:

বিধানটি আল্লাহর পক্ষ থেকে- যখন মুসলিমের কাছে বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তখন তার পক্ষে বিশ্বাস না করে উপায় থাকে না যে তা মানব রচিত যেকোনো বিধানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের স্রষ্টা। তিনিই ভালো জানেন কোনোটি তাদের উপযুক্ত এবং কোনোটি তাদের জন্য উত্তম। আর পশ্চিমা বিপ্লবকালে মানুষের অনেক অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, ইসলামের অনেক বিধানই বেশি কল্যাণকর, মানবাধিকারের প্রতি অধিক যত্নশীল এবং বিবিধ ও সাংঘার্ষিক অধিকারের মধ্যে সর্বোত্তম ভারসাম্য রক্ষাকারী।

জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমগুলোতে সীমাবদ্ধতার কারণেই মানুষের জ্ঞান সীমিত। অতএব মানুষের উচিৎ তাদের স্রষ্টা এবং সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের দুঃসাহস না দেখানো।

হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা ইনসানকে যে সুস্থ প্রকৃতি ও অর্জিত জ্ঞান দান করেছেন তার মাধ্যমে মানুষের পক্ষে আসমানী কিছু বিধানের রায-রহস্য জানাও সম্ভব। তবে তাদের এমন দাবী করা সমীচীন নয় যে তারা সকল আসমানী বিধানের হিকমত-রহস্য জানতে বা পরিপূর্ণভাবে তার বিধানাবলি বুঝতে সক্ষম হয়েছে।

বিধান প্রণয়নে মানুষের গবেষণা ও আবিষ্কার থেকে যে ঐশী বিধানাবলি অনেক উচ্চে তার সবচে সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পাই আমরা ইসলামে নারীর মর্যাদা এবং মানব রচিত আইনে নারীর মর্যাদার পরস্পর তুলনা করলে। তাই দেখা যায় চৌদ্দশ বছর আগে ইসলাম যেখানে নারীকে গুরুত্বের দিক দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে, মানব রচিত ব্যবস্থাগুলোতে এসবের অনেক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে মাত্র বিগত শতাব্দীতে। তেমনি ইসলাম নারীকে এমন কিছু অধিকার দিয়েছে যা তাকে এখনো দেওয়া হয় নি। ইসলাম যেমন নারীকে পরিবারের সব ধরনের আর্থিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

অনেকে ইসলামী রাষ্ট্রের কিছু ধর্মীয় বিধান বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অথচ তারা ভুলে যান:

একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের অধিবাসী কিংবা কোনো জাতি বা তাদের অধিকাংশই যদি নিজেদের পরস্পর এবং নিজেদের ও অন্যদের মাঝে সম্পর্ক সুদৃঢকরণে নির্দিষ্ট কিছু আইন-কানূন বা বিধানাবলিকে স্বেচ্ছায় নিজেদের জন্য মনোনীত করে, তবে যারা এসব বিধানের সমালোচনাকারী সেই ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে পর্যন্ত এর দাবী হলো তাদের ইচ্ছে ও পছন্দের প্রতি রাষ্ট্রের সম্মান দেখানো।

জাতিসঙ্ঘ এ কথার স্বীকৃতি দেয় যে, প্রতিটি জাতির রয়েছে নিজস্ব স্বাধীনতা এবং আপন চলার পথ নির্বাচনের অধিকার। অতএব এ জাতির ইচ্ছার সমালোচনার অর্থ জাতিসঙ্ঘ সনদ লঙ্ঘন করা।

একটি জাতি বা তার অধিকাংশ সদস্যের কোনো ব্যবস্থাকে নিজেদের জন্য উত্তম বিবেচনা করা (যদিও তার কিছু সদস্যের দৃষ্টিতে তা অন্যায় মনে হয়) আর অন্যায়ভাবে এসব আইন প্রয়োগ করার মধ্যে এবং সংখ্যাগুরুদের তুলনায় সংখ্যালঘুদের বিধানকে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য মনে হওয়া আর কোনো দেশের আইন অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে কিন্তু পার্থক্য বিদ্যমান।

আমরা যদি আমাদের ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত হই, তারপর বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে ইসলামী বিধানগুলো নিয়ে ভেবে দেখি, তাহলে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে, ইসলাম একটি সহজাত ও প্রাকৃতিক জীবন ব্যবস্থা। প্রথম দেখায় যেমন অদ্ভুত মনে হয় বাস্তবে ইসলাম তেমন নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন