hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

আয়াতে তাহক্বীম বি-গয়রি মা-আনযালাল্লাহ সূরা মায়িদা : ৪৪-৪৭ আয়াত এর পর্যালোচনা
-মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)

[সিলসিলাহ আহদীসুস সহীহাহ হা/২৫৫২ ও ২৭০৪]

আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآَيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ .... ُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ..... فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘‘আমি তাওরাত নাযিল করেছিলাম, তাতে হিদায়াত ও নূর ছিল। নবীগণ- যারা ছিলেন অনুগত (মুসলিম) তদনুযায়ী এই ইয়াহুদীদের বিধান দিত, আর রব্বানী (সূফী/দরবেশ) ও আহবার (পণ্ডিত/আলেম/চিন্তাবিদ)-রাও। কেননা তাদের আল্লাহর কিতাবের হেফযাতকারী করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর সাক্ষী। অতএব, তোমরা লোকদের ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতকে সামান্য ও নগণ্য বিনিময়ে বিক্রি করো না। যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির।.... তারাই যালিম।..... তারাই ফাসিক্ব।’’

(সূরা মায়িদা : ৪৪-৪৭ আয়াত)

আয়াতের শানে নুযূল

ইবনু আব্বাস (রা) বলেন : আল্লাহ তাআলা এই (সূরা মায়িদা, ৪৪-৪৭ নং) আয়াতগুলো ইয়াহুদীদের দু’টি গোত্র সম্পর্কে নাযিল হয়। একটি গোত্র ছিল বিজয়ী এবং অপরটি ছিল পরাজিত। তারা পরস্পর এ ব্যাপারে সন্ধি করে যে, বিজয়ী সম্মানিত গোত্রের কোন ব্যক্তি যদি পরাজিত অপমানিত গোত্রের কাউকে হত্যা করে, সেক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াসাক দিয়াত (রক্তমূল্য) দেবে। আর পরাজিত অপমানিত গোত্রের কেউ বিজয়ী গোত্রের কাউকে হত্যা করলে একশ’ ওয়াসাক দিয়াত দেবে। এই প্রথাই চলে আসছিল। যখন রসূলুল্লাহ (স) মদীনাতে আসলেন, তখন গোত্র দু’টি রসূলুল্লাহ (স) -এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সেটা প্রকাশ করেনি, এমনকি সমাধানেরও চেষ্টা করেনি। এরপর এমন একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে পরাজিত ইয়াহুদীদের একজন বিজয়ী ইয়াহুদীদের কাউকে হত্যা করে। তখন এদের (বিজয়ীদের) পক্ষ থেকে একশ’ ওয়াসাক আদায়ের জন্য (পরাজিতদের কাছে) একজনকে পাঠান হল। পরাজিতপক্ষ তখন বলল, এটা সুস্পষ্ট বেইনসাফী। কেননা আমরা উভয়েই একই জাতি, একই দ্বীন, একই বংশ, একই শহরের অধিবাসী। তাহলে একপক্ষের দিয়াত কিভাবে অপরপক্ষের অর্ধেক হয়? আমরা যদিও এতকাল তোমাদের চাপের মুখে ছিলাম, এই বেইনসাফী আইন পরিবর্তন না করে তা লাঞ্ছিত অবস্থায় মেনে এসেছি। কিন্তু এখন মুহাম্মাদ (স) এখানে এসেছেন (যিনি ন্যায়বিচারক)। সুতরাং আমরা তোমাদের তা দিব না।

তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হল। শেষাবধি তারা বলল, চল এই দ্বন্দের ফায়সালা মুহাম্মাদ (স) -ই করবেন। কিন্তু বিজয়ী গোত্রের লোকেরা যখন নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করল তখন তারা বলল, দেখ আল্লাহ’র ক্বসম! মুহাম্মাদ (স) কখনই তোমরা যা (পরাজিতদের কাছ থেকে) পেতে, তাতে তোমাদের দ্বিগুণ দিবেন না। আর তিনি সত্য কথা বলেন। তারা কখনই আমাদের এটা দেবে না, যতক্ষন না এই বিচারের রায় আমাদের পক্ষে হয়- এই জন্যে যে আমরা তাদের উপর বিজয়ী। সুতরাং রসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে গোপনে লোক পাঠাও। সে এটা বুঝে আসুক তিনি (স) কি ফায়সালা করবেন। যদি তা আমাদের পক্ষে হয় তবে তো খুব ভাল- তখন আমরা তাঁর ফায়সালা মেনে নেব। আর যদি আমাদের বিপক্ষে যায় সেক্ষেত্রে দূরে থাকাই ভাল এবং তাঁর ফায়সালা মানব না। তখন মুনাফিক্বদের মধ্যে থেকে কাউকে গোয়েন্দা বানিয়ে নবী (স) -এর কাছে পাঠাল। সে যখন প্রথমে গেল তখন আল্লাহ তাআলা নিচের আয়াত নাযিল করে তাদের ষড়যন্ত্র নবী (স)-কে জানিয়ে দিলেন।

আয়াতগুলো হল :

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنْكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آَمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِنْ قُلُوبُهُمْ وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّاعُونَ لِقَوْمٍ آَخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِنْ بَعْدِ مَوَاضِعِهِ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَذَا فَخُذُوهُ وَإِنْ لَمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا وَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُ فَلَنْ تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا أُولَئِكَ الَّذِينَ لَمْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ -

‘‘হে রসূল! সেই সব লোক যেন আপনার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ না হয় যারা দ্রুতগতিতে কুফরীর পথে অগ্রসর হচ্ছে। তারা সেই লোক, যারা মুখে বলে- আমরা ঈমান এনেছি, কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান গ্রহণ করেনি এবং তারা সেই লোক যারা ইয়াহুদী হয়েছে, তাদের অবস্থা এই যে, মিথ্যা শোনার জন্য তারা কান পেতে থাকে এবং এমন এক শ্রেণীর লোকের থেকে তারা কথা টুকিয়ে (কুড়িয়ে) বেড়ায় যারা কখনো তোমার নিকট আসেনি। তারা আল্লাহর কিতাবের শব্দগুলোকে তার স্থান থেকে পরিবর্তন করে এবং বলে যে, তোমাদের এ আদেশ দেয়া হলে মানবে অন্যথায় মানবে না। বস্তুত আল্লাহই যাকে ফিতনায় নিক্ষেপ করতে ইচ্ছা করেছেন, তাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে উদ্ধার করার জন্য তুমি কিছু করতে পার না। এরা সেই লোক যাদের মন-হৃদয়কে আল্লাহ পবিত্র করতে চাননি। তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।’’ [সূরা মায়িদা : ৪১ আয়াত]

سَمَّاعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّالُونَ لِلسُّحْتِ فَإِنْ جَاءُوكَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ وَإِنْ تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَنْ يَضُرُّوكَ شَيْئًا وَإِنْ حَكَمْتَ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِالْقِسْطِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ ( ٤٢ )

‘‘এরা মিথ্যা শ্রবণে ও হারাম মাল ভক্ষণে অভ্যস্ত। কাজেই এরা যদি তোমার নিকট (নিজেদের মোকদ্দমা নিয়ে) আসে তবে তোমার ইখতিয়ার রয়েছে, ইচ্ছা করলে তাদের বিচার কর, অন্যথায় অস্বীকার কর। অস্বীকার করলে এরা তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর বিচার ফায়সালা করলে ঠিক ইনসাফ মুতাবিকই করবে, কেননা আল্লাহ ইনসাফকারী লোকদের পছন্দ করেন।’’ [সূরা মায়িদা : ৪২ আয়াত]

وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِنْدَهُمُ التَّوْرَاةُ فِيهَا حُكْمُ اللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ ( ٤٣ ) إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ فَلَا تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا بِآَيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ ( ٤٤ ) وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ( ٤٥ ) وَقَفَّيْنَا عَلَى آَثَارِهِمْ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَآَتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ ( ٤٦ ) وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فِيهِ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ( ٤٧ )

‘‘এরা তোমাকে কিরূপে বিচারক মানে, যখন তাদের নিকট তাওরাত বর্তমান রয়েছে, তাতেই আল্লাহর আইন ও বিধান লিখিত আছে। কিন্তু এরা তা থেকে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। আসল কথা এই যে, এরা ঈমানদার লোকই নয়। আমরা তাওরাত নাযিল করেছিলাম, তাতে হিদায়াত ও নূর ছিল। নবীগণ- যারা ছিলেন অনুগত (মুসলিম) তদনুযায়ী এই ইয়াহুদীদের বিধান দিত, আর রব্বানী (সূফী/দরবেশ) ও আহবার (পণ্ডিত/আলেম/চিন্তাবিদগণও)। কেননা তাদের আল্লাহর কিতাবের হিফযাতকারী করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর সাক্ষী। অতএব, তোমরা লোকদের ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতকে সামান্য ও নগণ্য বিনিময়ে বিক্রি করো না। যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির। তাওরাতে আমরা ইয়াহুদীদের প্রতি এ হুকুমই লিখে দিয়েছিলাম যে, জানের বদলে জান, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং সব রকমের যখমের বদলা নির্দিষ্ট। অবশ্য কেউ ক্বিসাস সাদাক্বা করে দিলে তা তার জন্যে কাফফারা হয়ে যাবে। আর যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই যালিম। তাদের পরে ঈসা ইবনু মারইয়ামকে প্রেরণ করেছি। তাওরাতের যা-কিছু তার সম্মুখে ছিল, সে ছিল তারই সত্যতা প্রমাণকারী। আমরা তাঁকে ইঞ্জিল দান করেছি, যার মধ্যে ছিল হিদায়াত ও আলো এবং তা-ও তাওরাতের যা কিছু তার সম্মুখে ছিল তারই সত্যতা প্রমাণকারী এবং মুত্তাক্বীদের জন্যে পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত ও নসীহত ছিল। আমাদের নির্দেশ ছিল যে, ইঞ্জিল বিশ্বাসীগণ তাতে আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করবে। আর যারাই আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করবে না তারাই ফাসিক্ব।’’ [সূরা মায়িদা : ৪১-৪৭ আয়াত]

আলবানী (রহ) বলেন : হাদীসটি আহমাদ ১/২৪৬, তাবারানী-মু‘জামুল কাবীর ৩/৯৫/১-এ আব্দুর রহমান বিন আবূ যিনাদ তাঁর পিতা থেকে, তিনি উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন উতবাহ বিন মাসউদ থেকে, তিনি ইবনু আব্বাস (রা) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইমাম সুয়ূতী (রহ) এটাকে সমর্থন করেছেন (আদ-দুররুল মানসুর ২/২৮১)। আবূ দাউদ, ইবনু জারীর, ইবনু মুনযির, আবূ শায়খ, ইবনু মারদুবিয়াহ-ও ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু জারীর (রহ) নিজের তাফসীরে (১০/৩২৫/১২০৩৭) এভাবেই বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি ইবনু আব্বাসের (রা) নাম উল্লেখ করেননি। আবূ দাউদের বর্ণনাতে উক্ত ঘটনাটি সুনির্দিষ্টভাবে ইয়াহুদী গোত্র বনূ কুরায়যা ও বনূ নাযির গোত্র সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে। অথচ ইবনু কাসির (রহ) আহমাদ থেকে (পূর্বোক্ত) দীর্ঘ রেওয়ায়াতটি বর্ণনার পর লিখেছেন : ‘‘আবূ দাউদ আবূ যিনাদ তাঁর পিতা থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন’’ অথচ এখানে একটি সন্দেহের সৃষ্টি হয় (৬/১৬০)।

‘‘আর-রাওদুল বাসিম ফি আযযাহবিস সুন্নাহ আবীল ক্বাসিম’’ গ্রন্থের সম্মানিত লেখক ইমাম ইবনু কাসির (রহ) থেকে বর্ণনা করেছেন- তিনি এর সনদকে হাসান বলেছেন। আমি (নাসিরুদ্দীন আলবানী) ইমাম ইবনু কাসিরের ‘তাফসীরে’ এটা পাইনি। সম্ভবত তিনি তাঁর অন্য কোন কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন।

উলূমুল হাদীসের আলোকে হাদীসটি অতি উত্তম। কেননা হাদীসটির ভিত্তি হল আবূ যিনাদ। তাঁর সম্পর্কে হাফিয (রহ) বলেছেন :

صدق ، تغير حفظه لَما قدم بغداد ، وكان فقيه

‘‘সত্যবাদী, কিন্তু বাগদাদে যাওয়ার পর তার স্মৃতিশক্তিতে বিভ্রম হয়। তিনি একজন ফক্বীহ ছিলেন।’’

হায়সামী (রহ) বলেছেন : (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১৬ হা/১০৯৭৫)

رواه أحْمد والطبْراني بنحوه وفيه عبد الرحْمن بن أبِي الزناد وهو ضعيف وقد وثق وبقية رجال أحْمد ثقات

‘‘আহমাদ, তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে আব্দুর রহমান বিন আবী যিনাদ যঈফ বর্ণনাকারী আছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাকে সিক্বাহ গণ্য করা হয়। অন্যান্যরা আহমাদের সিক্বাহ বর্ণনাকারী।

আমি (আলবানী) বলছি : হায়সামী’র উক্তি : ضعيف وقد وثق ‘‘যঈফ, তবে তাকে সিক্বাহও গণ্য করা হয়’’ -সংগত নয়। কেননা তিনি তাঁকে যঈফ গণ্যকারীদের সিক্বাহ গণ্যকারীদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ প্রকৃত সত্য হল, তিনি মাঝামাঝি। অর্থাৎ তিনি ‘হাসান’ স্তরের, যদি না তাঁর থেকে অন্যদের (সিক্বাহ বর্ণনাকারীদের) বিপরীত কিছু পাওয়া যায়। [. শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) আব্দুর রহমান বিন আবী যিনাদ (রহ)-কে হাসান স্তরের গণ্য করেছেন। আলী যাঈ (রহ) তাঁর সম্পর্কে সতেরজন ইমামের জারাহ ও বিশজন ইমামের তা‘দিল উল্লেখ করেছেন। অতঃপর (২১) ইমাম মুহাম্মাদ (রহ) (২২) আল্লামা আয়নী (রহ) এবং (২৩) ‘আসারুস সুনানে’র সংকলক নিমাবী হানাফী’র পক্ষ থেকে আব্দুর রহমান বিন আবী যিনাদের গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখ করেছেন। অতঃপর সমাপ্তি টেনেছেন নিম্নোক্তভাবে : خلاصہ التحقیق یہ ہے کہ عبد رحمان بن ابی زناد کی بیان کردہ حدیث حسن لذاتہ ہے اور سلیمان بن داود الہاشمی و اہل مدینہ کی ان سے روایت صحیح ہوتی ہے، اِلا یہ کہ کسی خاص روایت میں ان کا وہم یا اس روایت کو معلول ہونا محدثین کرام سے ثابت ہو جائے تو خاص کے عام پر مقدم ہونے کے اصول سے وہ روایت مستثنی ہوگی اور باقی تمامروایت پرحسن یا صحیح ولا اصول جاری رہے گا۔ ‘‘তাহক্বীক্বের সার-সংক্ষেপ : আব্দুর রহমান বিন আবী যিনাদের বর্ণিত হাদীস হাসান লিযাতিহি স্তরের। তার থেকে সুলায়মান বিন দাউদ হাশিমী ও মদীনাবাসীরা বর্ণনা সহীহ। তবে যদি কোন খাস (সুনির্দিষ্ট) বর্ণনাতে তার ব্যাপারে সংশয় বা বর্ণনাতে ত্রুটি থাকা মুহাদ্দিসগণের নিকট প্রমাণিত হয়, তবে ঐ খাস বর্ণনাকে ‘আম বর্ণনার উপর প্রাধান্য পাওয়ার উসূলের আলোকে ব্যতিক্রম (যঈফ) গণ্য হবে। অন্যান্য সবক্ষেত্রে হাসান বা সহীহ’র উসূল জারি থাকবে। আলহামদু লিল্লাহ। [শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ, তাহক্বীক্ব আওর ইলমি মাক্বালাত-৪ পৃ. ৩৭১-৩৭৭ (সংক্ষেপিত)।]-বাংলা অনুবাদক] কিন্তু পূর্বোক্ত (হায়সামীর) উক্তিটি এই মর্যাদা দেয় না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

[মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-বানী, সিলসিলাতুল আহাদীসুস সহীহাহ ৬/২৫৫২ নং হাদীস]

বিশেষ জ্ঞাতব্য : (অতঃপর ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) বলেন) যখন আপনি এটা বুঝতে পারলেন [‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির।.... তারাই যালিম। ...... তারাই ফাসিক্ব।’’ (সূরা মায়িদার : ৪৪, ৪৫ ও ৪৭)] আয়াত তিনটি ইয়াহুদীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, আর তারা রসূলুল্লাহ (স)-এর হুকুম সম্পর্কে বলেছিল :

إن أعطاكم ما تريدون حكمتموه و إن لَم يعطكم حذرتُم فلم تُحكموه

‘‘যা তোমরা চাও যদি সে তা দেয় তবে তাঁকে হাকিম বানাও, আর যদি তোমাদের চাহিদা সে পূরণ না করে তবে তাঁকে হাকিম বানিয়ো না।’’ কুরআনুল কারীম তাদের এই বক্তব্যের দিকে লক্ষ করে নিম্নোক্ত বক্তব্যটি উপস্থাপন করে :

إِنْ أُوتِيتُمْ هَذَا فَخُذُوهُ وَإِنْ لَمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا يَقُولُونَ

‘‘তারা বলে : যদি তোমাদের এটা দেয়া হয় তাহলে মানবে, অন্যথায় মানবে না।’’ [সূরা মায়িদা : ৪১]

আপনি যখন এটা জানেনই যে, এই আয়াতগুলোর আলোকে ঐসব মুসলিম শাসককে কাফির বলা জায়েয নয়- যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আইনের পরিবর্তে দুনিয়াবী (মতবাদযুক্ত) আইন মোতাবেক বিচার ফায়সালা করে। কেননা সে এক দৃষ্টিতে ইয়াহুদীদের মতই অর্থাৎ (আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধানের বিপরীত) বিচারকার্যের ক্ষেত্রে। অন্য দৃষ্টিতে তাদের বিপরীত অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা-এর নাযিলকৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনা ও তাঁর সত্যতাকে মানা কাফির ইয়াহুদীদের বিপরীত। কেননা ইয়াহুদীরা নবী (স)-কে অস্বীকার করেছিল, যার স্বপক্ষে প্রথম (সূরা মায়িদা : ৪১ নং) আয়াতটি প্রমাণ বহন করে। প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলিমই ছিল না।

এর আলোকে যে বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট হয় তা হল কুফর দুই প্রকার। যথা :

১.ই‘তিক্বাদী বা আক্বীদাভিত্তিক,

২.আমালী বা আমলভিত্তিক।

ই‘তিক্বাদী হল, আন্তরিক স্বীকৃতি। পক্ষান্তরে আমালী হল, যা বাহ্যভাবে প্রকাশিত। যার কোন আমল শরীআতের বিরোধী হওয়ার কারণে কুফর হয় এবং যা তার অন্তরে আছে তাও প্রকাশ্য কুফর মোতাবেক হয়- সেক্ষেত্রে এই কুফরকে ই‘তিক্বাদী কুফর বলা হবে। এটা ঐ কুফর যা আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করেন না। আর এর পরিণাম হল, সে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকবে। আর যদি তার অন্তরে যা আছে তা তার আমলের বিপরীত, অর্থাৎ সে নিজের রবের হুকুমের প্রতি ঈমান আনে, কিন্তু আমলের দিক থেকে তার বিপরীত করে- তবে তার কুফর কেবলই আমলী কুফর হবে, ই‘তিক্বাদী কুফর হবে না। আর সে আল্লাহ’র ইচ্ছার অধীন হবে- তিনি ইচ্ছা করলে তাকে আযাব দেবেন, কিংবা ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করবেন। আর ঐ সমস্ত হাদীস যেখানে অপরাধ বা গোনাহের কারণে মুসলিমের ব্যাপারে কুফর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সন্দেহযুক্ত কুফর হিসাবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে কয়েকটি উদাহরণ নিচে প্রণিধানযোগ্য :

১.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : اثْنَتَان في النَّاسِ هُمَا بهم كُفْرٌ : الطَّعْنُ فِي النَّسَبِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ ‘‘দু’টি বিষয় মানুষের মধ্যে রয়েছে, যা তাদের জন্য কুফর : ক. বংশ নিয়ে খোঁটা দেয়া, খ. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা।’’ [. উক্ত হাদীসটি কেবল كفر শব্দ থেকে। অপর হাদীসে الكفر শব্দও এসেছে। যেমন- রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :   ثلاثٌ   مِن   الكفرِ   باللهِ : شَقُّ الجَيْبِ والنِّياحةُ والطَّعنُ في النَّسبِ ‘‘তিনটি হল আল্লাহর সাথে আল-কুফরের অন্তর্ভুক্ত : অন্তরে আঘাত দেয়া, নিয়াহাহ (মৃতের স্মরণে একত্রিত হওয়া), বংশের ব্যাপারে খোঁটা দেয়া।’’ [সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪৬৫- শুআয়েব আরনাউত সহীহ বলেছেন]  سُئِلَ ابنُ عباسٍ   عن   الذي يأتي امرأتَه في دُبُرِها ؟ فقال هذا   يَسْأَلُنِي   عن   الكُفْرِ  ؟‘‘সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা)-কে কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর পশ্চাদদ্বারে সংগম করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল? তিনি (রা) বললেন : সে কি আমাকে আল-কুফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে?’’ [নাসাঈ কুবরা ৮৯৫৫, আদাবুয যিফাফ পৃ. ১০৬, ৩০৪- আলবানী সনদ সহীহ]এ থেকে সুস্পষ্ট হল, ‘আল-কুফর’ থাকলেই চূড়ান্ত কুফর হয় না, বরং আমলী কুফরও হয়।- [বাংলা অনুবাদক]] [সহীহ মুসলিম, আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব (ইফা) ৪/৩৫৬ পৃ.]

২.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : اَلْجِدَالُ فِي الْقُرْآنِ كُفْرٌ ‘‘কুরআন নিয়ে বিতর্ক করা কুফর।’’ [মুস্তাদরাকে হাকিম; আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (সহীহুল জামেউস সগীর ওয়া যিয়াদাতাহু ১/৩১০৬ নং)]

৩.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوْقٌ وَ قِتَالُه كُفْرٌ ‘‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেক্বী, আর তাকে হত্যা করা কুফরী।’’ [সহীহ বুখারী ৪৮, সহীহ মুসলিম ১২৪ (১১৬/৬৪), তাহক্বীক্ব মিশকাত ৪৮১৪]

৪.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : كُفْرٌ بِاللهِ تَبَرُّؤَ مِنْ نَّسَبٍ وَ إِنْ دَقَّ ‘‘(সত্যিকারের) বংশকে অস্বীকার করাতে আল্লাহ’র সাথে কুফর করা হয়, যদিও বংশ খুবই নিচু হয়।’’ [বাযযার, দারেমী, তাবারানীর আওসাত; আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (সহীহুল জামে‘ ২/৪৪৮৫ নং)]

৫.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : اَلتَّحَدُّثُ بِنِعْمَةِ اللهِ شُكْرٌ وَ تَرَكُهَا كُفْرٌ ‘‘আল্লাহ তাআলা-এর নিয়ামত বর্ণনা করা শোকর এবং তা তরক করা কুফর।’’ [বায়হাক্বী- শুআবুল ঈমান; আলবানী : হাসান বলেছেন (সহীহুল জামে‘ ১/৩০১৪ নং)]

৬.রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : لاَ تَرْجِعُنَّ بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘‘তোমরা আমার পরে পরস্পরের গর্দান উড়িয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।’’ [সহীহ বুখারী ১২১, সহীহ মুসলিম ১২৬ (১১৮/৬৫), মিশকাত ৩৫৩৭]

এ ধরনের আরও অনেক হাদীস আছে, যার সবগুলোর বর্ণনা উল্লেখ করা এখানে নিষ্প্রয়োজন। সুতরাং মুসলিমদের মধ্যে কেউ এই জাতীয় অপরাধ করলে এই কুফর আমলী কুফর’ হিসাবে গণ্য হবে- অর্থাৎ সে কাফিরদের ন্যায় আমল করল। তবে সে যদি এ অপরাধ করাকে হালাল মনে করে এবং গোনাহ হিসাবে গণ্য না করে, তবে সেক্ষেত্রে সে (এমন) কাফির বলে গণ্য হবে, যার রক্ত (হত্যা করা) হালাল। কেননা তার কুফরী আক্বীদার ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছে। আর حكم بغيْر ماانزل الله ‘‘আল্লাহ’র নাযিলকৃত হুকুম ছাড়া অন্য কোন হুকুম’’-এই নীতি থেকে ভিন্ন কিছু নয়। সালাফদের থেকে এ ধরনের বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা একে শক্তিশালী করে। এই আয়াতের তাফসীরে তাদের বক্তব্য হল, كفر دون كفر ‘‘(মুরতাদ হওয়ার) কুফর থেকে কম কুফর’’। এই তাফসীর আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর তাঁর থেকে অনেক তাবেয়ী (রহ) বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে থেকে আমার সাধ্যমত কয়েকটি বর্ণনা জরুরি মনে করছি। আশাকরি, এর ফলে ইদানিং যারা এই মাসয়ালার ব্যাপারে চরমপন্থা গ্রহণে গোমরাহ হয়েছে তাদের সহীহ পথ দেখাবে এবং খারেজীদের পথ ছেড়ে দেবে, তারা মুসলিমদের গোনাহর কারণে তাকফির (সুস্পষ্ট কাফির সম্বোধন) করে- যদিও তারা সালাত আদায় করছে ও সিয়াম পালন করে।

১.ইবনু জারীর তাবারী (রহ) (১০/৩৫৫/১২০৫৩) ইবনু আব্বাস (রা) থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন-

و من لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون قال : هي به كفر ، و ليس كفرا بالله و ملائكته و كتبه و رسله

‘‘(যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম শাসন করে না- তারাই কাফির) ইবনু আব্বাস (রা) বলেন : এটা কুফর, কিন্তু এই ব্যক্তির কুফর এমন নয় যেভাবে কেউ আল্লাহ তাআলা, মালাইকা, কিতাবসমূহ ও রসূলগণের প্রতি কুফর করে।’’ [. এই সনদটি বিরোধী পক্ষের নিকটও সহীহ, কিন্তু তারা মতনটির ব্যাপারে আপত্তি করেছে। অথচ পরের বর্ণনাগুলো এই মতনটিকে সমর্থন করলেও তাদের দাবি হল, মতনগুলো পরস্পর বিরোধী বা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হওয়ায় একটি অপরটিকে সমর্থন করে না। যদিও প্রতিটি মতনের মূল দাবি হল, কুফর বলতে চূড়ান্ত কুফর সবসময় বুঝাবে না, বরং যে আল্লাহ, রসূল, আখিরাত প্রভৃতির উপর ঈমান রাখে তার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কুফর থেকে কম কুফর প্রযোজ্য। তা ছাড়া সূরা মায়িদা’র ৪৪ নং আয়াতটি বলছে : ‘আল্লাহর বিধান’ হেফাযত না করে বিকৃত ও গোপন করার কারণে আল্লাহর বিধান জারি না হলে তারা কাফির। পক্ষান্তরে সূরা মায়িদা’র ৪৫ ও ৪৭ নং আয়াতের দাবি হল, কেবল আল্লাহর বিধান না জারিকারী জালিম ও ফাসিক্ব। কাজেই সূরা মায়িদা ৪৪-৪৭ আয়াতও ইবনু আব্বাস (রা)-এর হাদীসের মতনকে সমর্থন করছে। [বাংলা অনুবাদক]]

২.তিনি ইবনু আব্বাস (রা) থেকে অপর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন :

إنه ليس بالكفر الذي يذهبون إليه ، إنه ليس كفرا ينقل عن الملة، كفر دون كفر

‘‘এটা ঐ কুফর নয়, যার দিকে এরা (খারেজীরা) গিয়েছে। এটা ঐ কুফর নয়, যা মিল্লাতে ইসলামিয়াহ থেকে খারিজ করে দেয়। বরং كفر دون كفر ‘‘(চূড়ান্ত) কুফরের থেকে কম কুফর’’। [. বিরোধী পক্ষ এই বর্ণনাটির সনদকে যঈফ বলেছেন। কেননা, এই বর্ণনাটির সনদে হিশাম বিন হুজায়রকে ইয়াহইয়া বিন ক্বত্তান (রহ), ইবনু মাঈন (রহ) ও ইমাম আহমাদ (রহ) বিভিন্ন শব্দে আপত্তি করেছেন। এর জবাব হল, হিশাম বিন হুজায়রকে যারা সিক্বাহ ও গ্রহণযোগ্য বলেছেন মুহাদ্দিসদের মধ্যে তারাই সংখ্যাধিক্য। ফলে সনদটি হাসান স্তরের। তার বর্ণনা রয়েছে সহীহ বুখারীতে (হা/৬৭২০), সহীহ মুসলিমে হা/২৯১১ (২০৯/১২৪৬)- হজ্জ অধ্যায়, হা/৪১৭৮ (২৩/১৬৫৪) - শপথ অধ্যায়। এ ছাড়া উক্ত ইমামদের পক্ষ থেকে হিশামের প্রতি আপত্তিগুলো চূড়ান্ত জারাহ’র শব্দ হিসেবে প্রমাণিত নয়। তাদের পক্ষ থেকে সমর্থনমূলক শব্দও আছে। বিস্তারিত : আবূ উসামা সুলায়ম বিন ঈদ হিলালী, কুর্রাতুল উয়ুন ফী তাসহীহ তাফসীর আব্দিল্লাহ বিন আব্বাস পৃ. ৪৩-৭০। পূর্বের সহীহ সনদের বর্ণনাটিও মতনের দিক থেকে একে সমর্থন করে। সেক্ষেত্রে হিশাম একক হওয়ার আপত্তি দূর হয়। [বাংলা অনুবাদক]]

এটা ইমাম হাকিম (রহ) বর্ণনা করেছেন (২/৩১৩) এবং বলেছেন : ‘সহীহুল ইসনাদ’। আর ইমাম যাহাবী (রহ) চুপ থেকেছেন। আর তাদের দু’জনের সমন্বয়ে হক্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ তাদের উক্তি : على شرط الشيخين ‘‘সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী’’ দ্বারা হাদীসটি উক্ত মর্যাদাই উন্নীত হয়। অতঃপর আমি এটাও দেখলাম যে, হাফিয ইবনু কাসির (রহ) তাঁর তাফসিরে (৬/১৬৩) হাকিম থেকে বর্ণনা করার পর বলেছেন : على شرط الشيخين ‘‘সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী’’। সুতরাং সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুস্তাদরাকে হাকিমের কোন কোন সংস্করণে বাক্যটি বাদ পড়েছে। [. বর্ণনাটি রাবী হিশাম বিন জুহায়রকে যারা সিক্বাহ বা গ্রহণযোগ্য বলেছে : ইবনু শিবরামা (রহ) বলেন : ليس بمكة مثله (হিশামের সাথে তুলনীয় কেউ মক্কাতে ছিল না) [আহমাদ বিন হাম্বল, আল-জামিউ লিউলূমির রিজাল পৃ. ৩৪৩] ইবনু মাঈন (রহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে : তিনি সালিহ (নেককার) ছিলেন। ...ইমাম আবূ হাতিম (রহ) বলেন : তার হাদীস লেখা হয়। [আবূ হাতিম রাযী, আল-জারাহ ও তা‘দিল] যাহাবী (রহ) বলেন : ইমাম আহমাদ তাকে যঈফ বলেছেন আর অন্যরা তাকে সিক্বাহ বলেছেন। [ইমাম যাহাবী, যাকারু আসমাউ মান তাকাল্লামা ফীহি ওয়া হুয়া মাওসুকুন ১/১৮৭ পৃ. ৩৫৫ নং] আজলী (রহ) তাকে সিক্বাহ বলেছেন। [উক্বদুস সামিন ফী তারিখিল বালাদিল আমীন ৬/১৭৯-১৮০, ২৬৩৭ নং]- বাংলা অনুবাদক]]

৩.ইবনু জারীর তাবারী (রহ) অপর একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন যা আলী ইবনু আবী তালহা, ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (রা) বলেন :

من جحد ما أنزل الله فقد كفر ، و من أقر به و لَم يَحكم فهو ظالِم فاسق

‘‘যে আল্লাহ তাআলা’র নাযিলকৃত বিষয়াদি অস্বীকার করে সে কাফির, কিন্তু যে স্বীকার করে অথচ সে মোতাবেক ফায়সালা না করে তবে সে যালিম ও ফাসিক্ব।’’

আমি (আলবানী) বলছি : ইবনু আবী তালহা কর্তৃক ইবনু আব্বাস (রা) থেকে শোনার কথা প্রমাণিত নয়। এরপরও সাক্ষ্যমূলক হাদীস হিসেবে এটি খুবই উত্তম। [. বিরোধী পক্ষ বর্ণনাটির বাহ্যিক অবস্থা থেকে মুনক্বাতে‘ হওয়াতে যঈফ বলেছেন। তবে বর্ণনাটি উপরে সহীহ-মুত্তাসিল বর্ণনা দুটিকে সমর্থন করে। ফলে এক্ষেত্রে সিক্বাহ বর্ণনাকারী বর্ণনাকে সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করা যায়। আবূ জা‘ফার নুহাস (রহ) তাঁর ‘নাসিখ ওয়াল মানসুখে’ (পৃ.৭৫) লিখেছেন : والذي يطعن في إسناده يقول : إبن أبي طلحة لم يسمع من ابن عباس، وإنما أخذ التفسير عن مجاهد وعكرمة ، وهذا القول لا يوجب طعنًا، لأنه أخذه رجلين ثقين، وهو في نفسه ثقة صدوق ‘‘যারা সনদটির প্রতি অভিযোগ করেন তারা বলেন : ইবনু আবী তালহা (রহ) ইবনু আব্বাস (রা) থেকে শোনেননি। অথচ তিনি মুজাহিদ ও ইকরামা থেকে তাফসীরটি গ্রহণ করেছেন। ফলে উক্ত উক্তিটি অভিযোগটিকে গুরুত্ববহ করে না। কেননা তিনি দুইজন সিক্বাহ থেকে এটি নিয়েছেন। আর তিনি নিজেই সিক্বাহ ও সত্যবাদী। [বিস্তারিত : আবূ উসামা সুলায়ম বিন ঈদ হিলালী, কুর্রাতুল উয়ুন ফী তাসহীহ তাফসীর আব্দিল্লাহ বিন আব্বাস পৃ. ৭২] -বাংলা অনুবাদক]

৪.অতঃপর ইবনু জারীর (রহ) (১২০৪৭-১২০৫১) আতা বিন আবী রিবাহ’র উক্তি উল্লেখ করেছেন : ‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির।.... তারাই যালিম।.... তারাই ফাসিক্ব’’ (সূরা মায়িদা : ৪৪, ৪৫ ও ৪৭) ‘‘তিনটি আয়াত উল্লেখ করে বলেছেন : كفر دون كفر ، و فسق دون فسق ، و ظلم دون ظلم (চূড়ান্ত) কুফর থেকে (কম) কুফর, (চূড়ান্ত) ফিস্ক্ব থেকে (কম) ফিস্ক্ব এবং (চূড়ান্ত) যুলুম থেকে (কম) যুলুম।’’ এর সনদ সহীহ। [. এই সনদটির প্রতি আপত্তি হল, এতে ইবনু জুরায়জ মুদাল্লিস এবং সে বর্ণনাটি ‘আন দ্বারা উল্লেখ করেছে। ফলে সনদটি যঈফ। এ পর্যায়ে অনুসন্ধানের বিষয় হল, ইবনু জুরায়জ (রহ) আতা (রহ) থেকে শুনেছেন কী না? সুলায়ম বিন ঈদ আল-হিলালী লিখেছেন : ابن جريج معروف بالتدليس مع جلالته وتقته، لكن استثنى أهل العلم روايته عن عطاء بخاصة ، فقد روى ابن أبي خيثمة بسند صحيح عن ابن جريج أنه قال : إذا قلت : قال عطاء فأنه سمعته منه وإن لم أقل : سمعت . ( تهذيب التهذيب ٦ \ ٤٠٦ ) ‘‘ইবনু জুরায়জ তার সম্মান ও বিশ্বস্ততাসহ তাদলীসকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। কিন্তু আহলে ইলম খাসভাবে আতা’র বর্ণনার ব্যাপারে তাকে ব্যতিক্রম গণ্য করেছেন। যেমনটি ইবনু আবী খায়সামা সহীহ সনদে ইবনু জুরায়জ থেকে উল্লেখ করেন, তিনি বলেছেন : যখন আমি বলি : আতা বলেছেন, তাহলে আমি তার থেকে শুনেছি। আর যদি আমি না বলি : তবে শুনেছি। (তাহযীবুত তাহযীব ৬/৪০৬) [কুর্রাতুল উয়ুন পৃ. ৭৮] শায়খ আলবানী (রহ) -ও উদ্ধৃতিটি দেয়ার পর বলেছেন : وهذه فائدة هامة جدا تدلنا على أن عنعنة ابن جريج عن عطاء في حكم السماع ‘‘উদ্ধতিটি খুব বেশি উপকারী, ইবনু জুরায়জ থেকে আতা সনদে আনআনা থাকাটা শোনার হুকুম হিসেবে আমাদের জন্য দলিল।’’ [ইরওয়াউল গালীল ৪/২৪৪ পৃ. হা/১০৫০-এর আলোচনা] -বাংলা অনুবাদক]

৫.অতঃপর (১২০৫২) ইবনু জারীর (রহ) সাঈদ আলমাক্কী থেকে বর্ণনা করেছেন : ‘‘আয়াতটি উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন, ليس بكفر ينقل عن الْملة এটা ঐ কুফর নয় যা মিল্লাত থেকে বের করে দেয়।’’

এর সনদ সহীহ। এই সাঈদ হলেন, ইবনু যিয়াদ আশ-শায়বানী আলমাক্কী। যাঁকে ইবনু মুঈন, আল-ইজলী, ইবনু হিব্বান প্রমুখ সিক্বাহ বলেছেন এবং তার থেকে একটি জামাআত বর্ণনা করেছেন।

৬. অতঃপর ইবনু জারীর তাবারী (রহ) (১২০২৫-১২০২৬) দু’টি ভিন্নভাবে ইমরান বিন হাদীর থেকে বর্ণনা করেছেন : ‘‘আবূ মিজলাযের কাছে বনী আমর বিন সাদুসের কিছু লোক এসে (অন্য বর্ণনায়, ইবাযিয়াহ’র একটি গোত্র) বলল :

أرأيت قول الله : ( و من لَم يَحكم بِما أنزل الله فأولئك هم الكافرون ) أحق هو؟ قال : نعم . قالوا : ( و من لَم يَحكم بِما أنزل الله فأولئك هم الظالِمون ) أحق هو؟ قال : نعم . قالوا : ( و من لَم يَحكم بما أنزل الله فأولئك هم الفاسقون ) أحق هو ؟ قال : نعم . قال : فقالوا : يا أبا مُجلز فيحكم هؤلاء بما أنزل الله ؟ قال : هو دينهم الذي يدينون به ، و به يقولون و إليه يدعون - [ يعني الأمراء ] - فإن هم تركوا شيئا منه عرفوا أنّهم أصابوا ذنبا . فقالوا : لا والله ، و لكنك تفرق . قال : أنتم أولى بِهذا منَي ! لا أرى ، و إنكم أنتم ترون هذا و لا تَحرجون ، و لكنها أنزلت في اليهود و النصارى و أهل الشرك . أو نَحوا من هذا

‘‘আল্লাহ তাআলা’র এই নির্দেশের ব্যাপারে আপনি কি বলেন (‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির।’’) এটা কি হক্ব (সঠিক)? তিনি জবাব দিলেন : হাঁ, অবশ্যই। অতঃপর তারা জিজ্ঞাসা করল, (‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই যালিম।’’) এটা কি হক্ব (সঠিক)? তিনি জবাব দিলেন : হাঁ। অতঃপর তারা জিজ্ঞাসা করল, (যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই ফাসিক।’’) এটা কি হক্ব (সঠিক)? তিনি জবাব দিলেন : হাঁ। তারা জিজ্ঞাসা করল, এই লোকেরা (হাকিম/বিচারক) কি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান মোতাবেক ফায়সালা করে? তিনি বললেন : এটা তাদের দ্বীন, যার উপর তারা চলছে। সে মোতাবেকই করে এবং সে দিকেই ডাকে। তারা এটা জানে যে, এর মধ্যে কোন কিছু থেকে বিচ্যুতি হলে সে গোনাহগার হবে। তারা বলল : এমনটা না, বরং আল্লাহর ক্বসম! আপনি তো এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ পৃথক। তিনি বললেন : ‘‘(উম্মাতের বিভক্তির ক্ষেত্রে) তোমরাই আমার থেকে অগ্রগামী এবং এই অপবাদের অধিকারী। আমি তো এই রায় দিই না, অথচ তোমরা এমন দৃষ্টিভঙ্গিই রাখ এবং এ ব্যাপারে কোন ক্ষতির ভয় রাখ না। অথচ প্রকৃতপক্ষে আয়াতটি ইয়াহুদী, নাসারা, মুশরিকীন ও তাদের গোত্রগুলো সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।’’ -এর সনদ সহীহ।

আলেমদের ইখতিলাফ রয়েছে, প্রথম আয়াতটির ‘কাফির’ শব্দটির তাফসীর নিয়ে। এখানে পূর্বোক্ত পাঁচটি উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। যা ইবনু জারীর (রহ) তাঁর তাফসীরে নিজের সনদসহ উল্লেখ করেছেন (১০/৩৪৬-৩৫৭)। অতঃপর উপসংহারে (১০/৩৫৮) লিখেছেন :

و أولَى هذه الأقوال عندي بالصواب قول من قال : نزلت هذه الآيات في كفار أهل الكتاب ، لأن ما قبلها و ما بعدها من الآيات ففيهم نزلت ، و هم الْمعنيون بِها ، و هذه الآيات سياق الْخبْر عنهم ، فكونَها خبْرا عنهم أولَى . فإن قال قائل : فإن الله تعالى ذكره قد عم بالْخبْر بذلك عن جميع من لَم يَحكم بِما أنزل الله ، فكيف جعلته خاصا ؟ قيل : إن الله تعالَى عم بالْخبر بذلك عن قوم كانوا بِحكم الله الذي حكم به في كتابه جاحدين ، فأخبْر عنهم أنّهم بتركهم الْحكم - على سبيل ما تركوه - كافرون . و كذلك القول في كل من لَم يَحكم بِما أنزل الله جاحدا به هو بالله كافر ، كما قال ابن عباس ، لأنه بَجحوده حكم الله بعد علمه أنه أنزله في كتابه ، نظيْر جحوده نبوة نبيه بعد علمه أنه نبَي "

‘‘আয়াতে তাহকীমে’র তাফসীরে বর্ণিত উক্তিগুলোর মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য উক্তি হল, যিনি বলেছেন : এই আয়াত আহলে কিতাবের কাফিরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা, আয়াতটির পূর্বাপর সম্পর্ক আহলে কিতাবদের সাথে। এই কারণে তারাই এখানে উদ্দেশ্য। কেননা তাদের সম্পর্কে পূর্বেই খবর বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং তাদের সম্পর্কে পূর্বের বর্ণনাই এ সম্পর্কিত দলিল। যদি কেউ এটা বলে যে, আল্লাহ তাআলা এই খবরকে ‘আম রেখেছেন, যা সবার জন্যই প্রযোজ্য- যারা আল্লাহ তাআলা’র নাযিল করা শরীআত মোতাবেক ফায়সালা করে না। সুতরাং আপনি কিভাবে এগুলো খাস করছেন? তখন তাদের জবাব দেয়া হবে : নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এ খবরকে ‘আম রেখেছেন। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে যারা কিতাবুল্লাহ’র নাযিলকৃত আহকামকে অস্বীকার করে। সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে এ খবর দিচ্ছেন যে, তাদের হুকুমে ইলাহী তরক করার যে অভ্যাসগত আমল ছিল, সেই হুকুমে ইলাহী তরক করার ক্ষেত্রে ঐ (খাস) আমলের কারণেই তারা কাফির ছিল। আর এই হুকুম ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা আমলগতভাবেই অস্বীকৃতির করার কারণে হুকুমে ইলাহী মোতাবেক্ব ফায়সালা করে না। কেননা এ সমস্ত লোকেরা আল্লাহকেই অস্বীকার করে, যেভাবে ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন। কেননা হুকুমে ইলাহী অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বিষয়টি তাঁর কিতাবে নাযিল করেছেন জেনে নেয়ার পর, সেটা অস্বীকার করাটা তেমনি, যেমন নবীর নবুওয়াত অস্বীকার করা। অথচ তারা সুস্পষ্টভাবে তা জানে।’’

মোটকথা, এই আয়াত আল্লাহ তাআলা’র আয়াত অস্বীকারকারী ইয়াহুদের সম্পর্কে নাযিল হয়। এখন অস্বীকৃতি ও অবজ্ঞার ক্ষেত্রে যে তাদের সাথে শরীক (মতো/সাদৃশ্য) হবে, সে কুফরের মধ্যকার ই‘তিক্বাদী (বিশ্বাসগত) কুফরের অধিকারী হবে। কিন্তু যে অস্বীকৃতি ও অবজ্ঞার ক্ষেত্রে তাদের শরীক (মতো/সদৃশ) নয়, সে কুফরের মধ্যকার আমলী কুফরের অধিকারী হবে। কেননা সে ইয়াহুদীদের ন্যায় আমল করেছে। এ কারণে সে গোনাহগার ও সীমালঙ্ঘনকারী হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু এ কারণে সে মিল্লাতে ইসলামিয়া থেকে খারিজ (বহিষ্কৃত) হবে না। এ সম্পর্কে ইবনু আব্বাসের উক্তি ইতোপূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ইমাম হাফিয আবূ উবায়দ আল-ক্বাসিম বিন সালাম নিজ গ্রন্থ ‘কিতাবুল ঈমান’-এ উল্লেখ করেছেন। [ باب الْخروج من الإيْمان بالْمعاصي ( صـ ٨٤ - ٨٧ ) بتحقيقي )] সুতরাং যে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে চায় সে যেন (আমার তাহক্বীক্বসহ) গ্রন্থটি পাঠ করে।

আমি (আলবানী) এগুলো লেখার পর আমার দৃষ্টি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ)’র ‘মাজমাউল ফাতাওয়া’র (৩/২৬৮) আয়াতে তাহকীমের দিকে নিবদ্ধ হয়। তিনি বলেছেন :

أي هو الْمستحل للحكم بغيْر ما أنزل الله .

‘‘এই হুকুম তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান ছাড়া অন্য বিধানকে হালাল মনে করে।’’

অতঃপর (৭/২০৪) বলেছেন : ইমাম আহমাদকে আলোচ্য কুফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়।

তিনি (রহ) বললেন :

كفر لا ينقل عن الإيْمان ، مثل الإيْمان بعضه دون بعض ، فكذلك الكفر ، حتى يَجيء من ذلك أمر لا يَختلف فيه

‘‘এটা এমন কুফর যা মিল্লাতে ইসলামিয়াহ থেকে খারিজ করে না, যেভাবে ঈমান কারো থেকে কারো কম হয়। তেমনি কুফরও (কমবেশি হয়)। এভাবে ব্যক্তি ঐ কুফরেরও অধিকারী হয় যে ব্যাপারে কোন ইখতিলাফই (ভিন্নমত) নেই।’’

অতঃপর ইবনু তাইমিয়াহ (রহ) (৭/৩১) বলেছেন।

সালাফদের উক্তি :

أن الإنسان يكون فيه إيْمان و نفاق

‘‘একজন মানুষের মধ্যে ঈমান ও নিফাক্ব একত্রিত হতে পারে।’’

তাঁদের অন্যতম অপর একটি উক্তি :

أنه يكون فيه إيْمان و كفر، و ليس هو الكفر الذي ينقل عن الْملة

‘‘একজন মানুষের মধ্যে ঈমান ও কুফর একত্রিত হতে পারে। তবে এ কুফর মিল্লাতে ইসলামিয়াহ থেকে খারিজ করে না।’’ যেভাবে ইবনু আব্বাস (রা) ও তাঁর সাথীরা আল্লাহ তাআলা’র বাণী : و من لَم يَحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون (সূরা মায়িদা : ৪৪ আয়াত) সম্পর্কে বলেছেন।

তাঁরা বলেছেন :

كفر لا ينقل عن الْملة . و قد اتبعهم على ذلك أحْمد و غيْره من أئمة السنة

‘‘এটা এমন কুফরের অধিকারী যা মিল্লাতে ইসলামিয়াহ থেকে খারিজ করে না। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও অন্যান্য সালাফগণ (রহ) এই উক্তির অনুসরণ করেছেন।’’ [সূত্র : মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/২৫৫২ নং হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য]

উক্ত গ্রন্থের ৪৫৭ পৃষ্ঠায় (হা/২৭০৪) শায়খ আরও আলোচনা করেছেন :

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ .... ُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ..... فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত আইন দ্বারা বিচার করে না, তারাই কাফির।.... তারাই যালিম। ...... তারাই ফাসিক্ব।’’ (সূরা মায়িদা : ৪৪-৪৭)

(রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :) ‘‘এই আয়াত কাফিরদের সম্পর্কে নাযিল হয়।’’

ইমাম আহমাদ (রহ) এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সনদ হল : ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন আ‘মাশ থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন মার্রাহ থেকে, তিনি বারা বিন আযিব (রা) থেকে যে, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন ....।

আমি (আলবানী) বলছি : এর সনদ শায়খায়নের (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের) শর্তে সহীহ।

এই হাদীসটি সুস্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে যে, আলোচ্য তিনটি (সূরা মায়িদা ৪৪-৪৭) আয়াতের প্রকৃত দাবি হল, ইয়াহুদী ও নাসারাদের কাফিরগণ এবং যেসব লোক ইসলামী শরীআত ও এর আহকামকে অস্বীকার করে। এভাবে তারাও এর মধ্যে শরীক, যাদের প্রতি হুকুমের সদৃশ পাওয়া যায়- যদিও সে নিজেকে মুসলিম হিসাবে প্রকাশ করে। কেননা, কোন একটি হুকুম অস্বীকার করলেও সেই প্রকৃত কাফির। কিন্তু যে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত তা হল, যদি কেউ কোন ক্ষেত্রে এই ইসলামী বিধানকে অস্বীকার করা ছাড়াই (ইসলাম মোতাবেক) ফায়সালা না করে, তবে তার প্রতি কাফির হুকুম লাগানো জায়েয নয়। এমনকি সে এই মিল্লাত থেকে খারিজও নয়। কেননা সে মু’মিন। বেশির চেয়ে বেশি এটা বলা যাবে যে, তার কুফর আমলী কুফর। এটা এমনই গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা যে ব্যাপারে অধিকাংশ যুবকরাই ভুলের মধ্যে আছে। এ কারণে অধিকাংশ লোকেরা ঐ সমস্ত হাকিমদের (শাসক/বিচারক) ইসলাম থেকে খারিজ গণ্য করে যারা শরীআতের বিরোধি ফায়সালা দিচ্ছে। যার ফলে অনেক ফিতনার বিসত্মৃতি ঘটেছে। এমনকি যাদের তা প্রতিরোধের শক্তি ও ক্ষমতা নেই এমন অনেক নিষ্পাপ প্রাণ থেকে খুন ঝরছে।......

আমার মতে (এ মুহূর্তে) ওয়াজিব হল, ইসলামকে ঐ সব বিষয় থেকে পাক-পবিত্র করা যার উদ্যোগ তাদের মধ্যে নেই। তা হল- বাতিল আক্বীদা, নিরর্থক মাসলা-মাসায়েল (আহকাম), বিকৃত রায়ের মাধ্যমে সুন্নাতের বিরোধিতা। অতঃপর নতুন প্রজন্মকে এই পাক-পবিত্র ও নিষ্কলুষ ইসলামের তারবিয়াত প্রদান। [সূত্র : মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬/২৭০৪ নং হাদীসের আলোচনা দ্রষ্টব্য]

العلماء الأعلام الذين صرحوا بصحة تفسير ابن عباس واحتجوا به

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন