hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

হাকিম ও হুকুম সম্পর্কিত আয়াতের বিশ্লেষণ
-কামাল আহমাদ

যারা ইসলাম অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করার জন্য শাসক বলতেই কাফির বলে ফতোয়া দিচ্ছে তাদের দলিল হল কুরআনের ঐ সমস্ত আয়াত, যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের ও তাঁর রসূলের হুকুম অমান্যকারীকে ‘মু’মিন নয়’ বলে সম্বোধন করেছেন। এ বিষয়টি পূর্বে আলোচিত মুনাফিক্ব ও খারেজীদের আলোচনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের ঈমান ও আক্বীদা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে অগ্রহণযোগ্য হলেও, ইসলামী রাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না যতক্ষণ তাদের ইসলামবিরোধি আক্বীদাগুলো আমল হিসাবে বাস্তবরূপ লাভ করে। এখন এ সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াতগুলো নবী (স) -এর যামানার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা হল।

প্রথম আয়াত : আল্লাহ তাআলা বলেন :

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘‘কিন্তু না, আপনার রবের ক্বসম! তারা মু’মিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিরোধে আপনাকে হাকিম না বানায়, এরপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে না নেয়।’’ [সূরা নিসা : ৬৫ আয়াত]

দৃষ্টান্ত : উরওয়া (রা) থেকে বর্ণিত; হাররা বা মদীনার কঙ্করময় ভূমিতে একটি পানির নালা নিয়ে যুবায়ের (রা) এর সাথে একজন আনসার ঝগড়া করেছিলেন। নবী (স) বললেন : ‘হে যুবায়ের! প্রথমত, তুমি তোমার জমিতে পানি দাও, তারপর তুমি প্রতিবেশীর জমিতে পানি ছেড়ে দেবে।’ আনসার বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! সে আপনার ফুফাত ভাই, তাই এই ফায়সালা দিলেন। এতে অসন্তুষ্টিবশত রসূল (স) এর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। তখন তিনি (স) বললেন : ‘হে যুবায়ের! তুমি পানি চালাবে তারপর আইল পর্যন্ত ফিরে না আসা পর্যন্ত তা আটকে রাখবে তারপর প্রতিবেশীর জমির দিকে ছাড়বে।’ আনসারী যখন রসূল (স)-কে রাগিয়ে তুললেন তখন তিনি তার হক পুরোপুরি যুবায়ের (রা) কে প্রদানের স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে প্রথমে নবী (স) এমন একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে উদারতা ছিল। যুবায়ের (রা) বলেন : فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ আয়াতটি এ উপলক্ষে নাযিল হয়েছে বলে আমার ধারণা। [সহীহ বুখারী ২৩৫৯ কিতাবুত তাফসীর]

আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হল, নবীকে বিচারক অমান্যকারী আক্বীদাগতভাবে কাফির। কিন্তু নবী (স) কর্তৃক এ ধরণের বিচার অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং পূর্বে মুনাফিক্ব ও খারেজীদের উদ্ভব সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীতে আমরা প্রমাণ পেয়েছি, নবী (স) তাঁর বিচারের রায় অমান্যকারীকে لعله أن يكون يصلي ‘‘সম্ভবত সে সালাত আদায় করে’’ বাক্যের মাধ্যমে ছাড় দিয়েছেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ ফিতনার প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার দিকে সাহাবীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। অর্থাৎ আক্বীদাগত কুফর যতক্ষণ পর্যন্ত আমলী কুফরে পরিণত হয়ে প্রকাশিত না হয় এবং সমগ্র মুসলিম ও ইসলামের জন্য ফিতনাতে পরিণত না হচ্ছে- ততক্ষণ পর্যন্ত এমন লোকদের ছাড় দিতে নবী (স) নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আয়াতটির শানে-নুযূল হিসাবে অপর একটি বর্ণনা হল, একজন ইয়াহুদী ও মুনাফিক্ব মুসলিমের সাথে সংঘটিত ঘটনা। যেখানে নবী (স) ইয়াহুদী ব্যক্তিটির পক্ষে রায় দিলে মুনাফিক্ব মুসলিমটি তা অমান্য করে, শেষাবধি উমার (রা) -এর কাছে বিচার পেশ করে। উমার (রা) নবী (স) এর ফায়সালা অমান্য করার কথা শুনে মুনাফিক্ব ব্যক্তিটিকে হত্যা করেন। কিন্তু এই হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম ইবনু কাসির (রহ) বলেছেন : হাদীসটি গরীব, মুরসাল (সূত্রছিন্ন), তাছাড়া এর অন্যতম রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু লিহইয়া (তাফসীরে ইবনু কাসির, সূরা নিসা : ৬৫ নং আয়াত দ্র :)। এছাড়া হাদীসটির শেষে বর্ণিত হয়েছে : অতঃপর নবী (স) উমার (রা) -কে উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করার দণ্ড হতে মুক্তি দিলেন। তবে পরবর্তীকালে এটা প্রথা হয়ে দাঁড়ানোকে আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করলেন এবং পরবর্তী (নিসা : ৬৬) আয়াতটি নাযিল হল।

তাছাড়া হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত খারেজীদের উদ্ভব সংক্রান্ত সহীহ বুখারীর হাদীসটির বিরোধী। সেখানে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) রসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে তাঁর বিচার অমান্যকারীকে হত্যা করার অনুমতি চাইলে তিনি (স) তা নিষেধ করেন। সুতরাং হাদীসটি সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ায় বাতিল। তাছাড়া নিচের সহীহ হাদীসটিও আমাদের বক্তব্যকে সমর্থন করে।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বলেন : যখন নবী (স) হুনায়নের গনীমত বণ্টন করে দিলেন, তখন আনসারদের এক ব্যক্তি বলে ফেলল, এই বণ্টনের ব্যাপারে তিনি (স) আল্লাহ’র সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখেননি। কথাটি শুনে আমি নবী (স) -এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে কথাটি জানিয়ে দিলাম। তখন তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি (স) বললেন : رَحْمَةُ اللهِ عَلى مُوْسى لَقَدْ اُوْذِىَ بِاَكْثَرَ مِنْ هذَا فَصَبَرَ ‘‘আল্লাহ, মূসা (আ)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবর করেছিলেন।’’ [সহীহ বুখারী ৬২৯১]

সুতরাং সবক্ষেত্রে আমলগত কুফর ইসলামী রাষ্ট্রের ঘোষিত চূড়ান্ত মুরতাদ হিসাবে গণ্য হবে না। বরং এখানে كفر دون كفر (চূড়ান্ত কুফরের চেয়ে কম কুফর) নীতি প্রযোজ্য। নবী (স)-এর নিজস্ব এই আমলটিই ইবনু আব্বাস (রা) -এর এই তাফসীরের প্রত্যক্ষ সমর্থক।

দ্বিতীয় আয়াতঃ আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا

‘‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়।’’ [সূরা আহযাব : ৩৬ আয়াত]

আলোচ্য আয়াতটি যয়নাব বিনতে জাহাশের (রা) সঙ্গে যায়দ বিন হারিসের (রা) বিয়ে সম্পর্কে নাযিল হয়। প্রথমে যয়নাব (রা) এই বিয়েতে রাজী ছিলেন না। তখন আয়াতটি নাযিল হলে তিনি বিয়েতে রাজী হন।

(সূরা আহযাবের ৩৬ নং আয়াতের বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ অবলম্বনে)

عن قتادة قال : خطب النبي زينب وهي بنت عمته وهو يريدها لزيد فظنت أنه يريدها لنفسه فلما علمت أنه يريدها لزيد أبت فأنزل الله تعالى : ﴿ وما كان لمؤمن ولا مؤمنة إذا قضى الله ورسوله أمرا أن يكون لهم الخيرة من أمرهم ﴾ فرضيت وسلمت رواه الطبراني بأسانيد ورجال بعضها رجال الصحيح . صـ ٢٠٩

(মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/২০৯ পৃ.)

এরপরেও তাদের বিয়ে টিকল না এবং শেষাবধি নবী (স) -এর সাথে যয়নাব বিনতে জাহাশের (রা) বিয়ে হয় এবং সে সম্পর্কে পরবর্তী আয়াতটি নাযিল হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ فَلَمَّا قَضَى زَيْدٌ مِنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا

‘‘স্মরণ করুন! আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন এবং আপনিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আপনি তাকে বলেছিলেন যে, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে ভয় কর।’ আপনি মনে মনে যা গোপন করেছেন আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিয়েছেন। আপনি লোক ভয় করছিলেন অথচ আল্লাহকেই ভয় করা আপনার পক্ষে অধিকতর সঙ্গত। এরপর যায়দ যখন তার স্ত্রী (যয়নাব)’র সাথে বিয়ে ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিয়ে দিলাম। যাতে মু’মিনদের পালকপুত্রদের নিজ স্ত্রীদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে সব নারীকে বিয়ে করায় মু’মিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকর হয়েই থাকে।’’ [সূরা আহযাব : ৩৭ আয়াত]

মূলত আয়াতটির দাবি হল :

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ

‘‘নবী মু’মিনদের কাছে তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।’’ [সূরা আহযাব : ৬ আয়াত]

অথচ মুনাফিক্বগণ কখনই এই দাবি পূরণ করে না। তারপরেও রাষ্ট্রে বা সমাজে ফিতনা বিস্তার না করা পর্যন্ত তাদেরকে ছাড় দেয়া হয়েছে। অনুরূপ খারেজীদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের বর্ণিত শানে-নুযূল আক্বীদাগত কুফরের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে পূর্ববর্তী আলোচনাতে প্রমাণিত হয়েছে, নবী (স) -এর যামানাতে কেবল সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী ফিতনাবাজদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ এসেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে রসূল (স) তাদের ব্যাপারে সবরের নীতি অবলম্বন করেছিলেন। আবূ বকরের (রা) যুগে যারা বিদ্রোহ করেছিল তা গোটা উম্মাতের বিরুদ্ধে ছিল। তা-ই তিনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। উসমান (রা) -এর বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহ করেছিল তাদেরকে তিনি (রা) গোটা উম্মাতের সাথে গণ্য না করে কেবল নিজের সাথেই সংশ্লিষ্ট করেন। ফলে তিনি (রা) আদম (আ)-এর নেককার পুত্র, মূসা (আ) ও নবী (স)-এর ন্যায় সবরের নীতি অনুসরণ করেন। তিনি (রা) মুসলিমদের মধ্যে রক্তপাত ঘটনোর পরিবর্তে নিজের মযলুম অবস্থায় শহীদ হওয়াকে বেছে নেন।

এ সম্পর্কে আরো যেসব আয়াত দলিল হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তার সবই ইবাদত ও আক্বীদাগত কুফরের সাথে সংশ্লিষ্ট। [.দ্রষ্টব্য : পরিশিষ্ট- ২।] যার জবাব পূর্বের ন্যায়। নবী (স) কর্তৃক তাঁর যামানার আমল ও উম্মাতের প্রতি তার নির্দেশ থেকে বিষয়টি আমাদের কাছে সুস্পষ্ট।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন