hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

আক্বীদাগত ও আমলগত কুফরের দৃষ্টান্ত
-কামাল আহমাদ

মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর পূর্বোক্ত আলোচনায় আক্বীদাগত কুফর ও আমলগত কুফরের বর্ণনা এসেছে। আমরা এখন এ দু’টি বিষয়ে জড়িতদের সাথে নবী (স)-এর যামানাতে কী আচরণ ও নির্দেশ ছিল তা তুলে ধরার চেষ্টা করব। এর ফলে এ সম্পর্কে বাস্তবচিত্র আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হবে এবং মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ)-এর উপর মুরজিয়া হওয়ার অপবাদও খণ্ডিত হবে।

কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আক্বীদাগত কুফর ও আমলগত কুফরের দৃষ্টান্ত যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হল :

১.মুনাফিক্ব

২.খারেজী

৩.গোমরাহ শাসক

৪.হত্যাকারী ও সুদখোরের চিরস্থায়ী (!?) জাহান্নামী হওয়া

৫.আল-ওয়ালা ওয়াল বারা (বন্ধুত্ব ও শত্রুতা)

কুরআন ও সহীহ হাদীসে এদের সাথে আচরণ ও হুকুমের আলোকে বর্তমান যামানায় যারা আক্বীদা বা আমলগত কিংবা উভয় কুফরের সাথে জড়িত তাদের প্রতি করণীয় বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাব, ইনঁশাআল্লাহ।

১.মুনাফিক্ব : এতে কোন মতপার্থক্য নেই যে, মুনাফিক্বরা আক্বীদাগত দিকে থেকে কুফরী আক্বীদা রাখলেও প্রকাশ্য আমলগতভাবে নিজেদের মুসলিম হিসাবেই প্রকাশ করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা’র কাছে তাদের আক্বীদা ও আমল উভয়টিই সুস্পষ্টভাবে কুফরীর দোষে দুষ্ট।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِذَا جَاءَكَ الْمُنَافِقُونَ قَالُوا نَشْهَدُ إِنَّكَ لَرَسُولُ اللَّهِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ ـ اتَّخَذُوا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ـ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ آَمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا فَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ ـ

‘‘যখন মুনাফিক্বরা আপনার নিকট আসে তখন তারা বলে : ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি- নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রসূল।’ আর আল্লাহ জানেন যে, অবশ্যই আপনি তাঁর রসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিক্বরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তারা তাদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে, আর তারা আল্লাহর পথ হতে নিবৃত্ত করে। তারা যা করছে, তা কতই না মন্দ। এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে। ফলে, তাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দেয়া হয়েছে; পরিণামে তারা বুঝে না।’’ [.সূরা মুনাফিকুন : ১-৩ আয়াত।]

আলোচ্য আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হল, আল্লাহ তাআলা’র কাছে মুনাফিক্বদের আক্বীদা ও আমল উভয়টিই প্রত্যাখ্যাত। এরপরও আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ছাড় দিতে বলেছেন যতক্ষণ না তারা মুসলিম ও ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধী তৎপরতায় অংশ নেয়। এ সম্পর্কে সূরা নিসার ১২ নং রুকুর সম্পূর্ণ অংশটিতে তাদের ব্যাপারে নির্দেশ ও নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে। উক্ত আয়াতগুলোর ধারাবাহিক বক্তব্যগুলো হল :

ক.মুনাফিক্বরা পথভ্রষ্ট, তারা কখনো পথ পাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন :

فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُمْ بِمَا كَسَبُوا أَتُرِيدُونَ أَنْ تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا

‘‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিক্বদের ব্যাপারে দু’দল হয়ে গেলে? যখন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। তোমরা কি তাকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাও, যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন? আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কখনো কোন পথ পাবে না।’’ [সূরা নিসা : ৮৮ আয়াত]

খ.তারা মুসলিমদের কাফির বানাতে চায়। সবকিছু ছেড়ে মুসলিমদের কাছে হিজরত না করলে কাফিরদের ন্যায় তাদের হত্যা করতে হবে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاءَ حَتَّى يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَخُذُوهُمْ وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا

‘‘তারা চায় যে, তারা যেরূপ কাফির হয়েছে, তোমরাও সেরূপ কাফির হও, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। সুতরাং তাদের মধ্যে হতে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদের যেখানেই পাবে পাকড়াও করবে ও হত্যা করবে এবং তাদের মধ্যে হতে কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবে না।’’ [সূরা নিসা : ৮৯ আয়াত]

আলোচ্য আয়াতটিতে মুনাফিক্বদের কাফির বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

গ.যদি মুনাফিক্বরা মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধদের মাঝে থাকে, কিংবা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিজেদের দুর্বলতার কারণে তারা যুদ্ধ করতে ভয়ে দূরে থাকে এবং শান্তির প্রস্তাব দেয়, অথচ শক্তি থাকলে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো; এদের সাথেও যুদ্ধ নিষিদ্ধ।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِلَّا الَّذِينَ يَصِلُونَ إِلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ أَوْ جَاءُوكُمْ حَصِرَتْ صُدُورُهُمْ أَنْ يُقَاتِلُوكُمْ أَوْ يُقَاتِلُوا قَوْمَهُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَسَلَّطَهُمْ عَلَيْكُمْ فَلَقَاتَلُوكُمْ فَإِنِ اعْتَزَلُوكُمْ فَلَمْ يُقَاتِلُوكُمْ وَأَلْقَوْا إِلَيْكُمُ السَّلَمَ فَمَا جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ عَلَيْهِمْ سَبِيلًا

‘‘কিন্তু তারা নয়, যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয়, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ। অথবা যারা তোমাদের নিকট এ অবস্থায় আসে যে, তাদের অন্তর তোমাদের সাথে অথবা তাদের সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করতে অনুৎসাহিত। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতেন। ফলে তারা অবশ্যই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত। সুতরাং তারা যদি তোমাদের নিকট থেকে সরে দাঁড়ায়, তোমাদের সাথে যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তির প্রস্তাব করে, তবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা অবলম্বনের পথ রাখেননি।’’ [সূরা নিসা : ৮৯ আয়াত]

সুস্পষ্ট হল, মুনাফিক্বদের আক্বীদা কুফর হলেও যতক্ষণ তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না বা অন্য কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না, ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা’র কাছে তাদের আক্বীদা ও আমল কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং প্রমাণিত হল :

১.আল্লাহ তাআলা’র কাছে মুনাফিক্বদের ঈমান ও আমল গ্রহণযোগ্য নয়।

২.আল্লাহ তাআলা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে তাদের ছাড় দিচ্ছেন এবং তাদের ব্যাপারে যুদ্ধ করতে বা কঠোর হতে নিষেধ করছেন; যতক্ষণ না তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরমপন্থা অবলম্বন করে।

ঘ.যখন মুনাফিক্বরা সমাজ ও রাষ্ট্রে ফিতনা সৃষ্টি করবে তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

سَتَجِدُونَ آَخَرِينَ يُرِيدُونَ أَنْ يَأْمَنُوكُمْ وَيَأْمَنُوا قَوْمَهُمْ كُلَّ مَا رُدُّوا إِلَى الْفِتْنَةِ أُرْكِسُوا فِيهَا فَإِنْ لَمْ يَعْتَزِلُوكُمْ وَيُلْقُوا إِلَيْكُمُ السَّلَمَ وَيَكُفُّوا أَيْدِيَهُمْ فَخُذُوهُمْ وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأُولَئِكُمْ جَعَلْنَا لَكُمْ عَلَيْهِمْ سُلْطَانًا مُبِينًا .

‘‘তোমরা আরো কতক লোক পাবে, যারা তোমাদের সাথে এবং তাদের সম্প্রদায়ের সাথে শান্তিতে থাকতে চায়। যখনই তাদের ফিতনার দিকে ডাকা হয়, তখনই তারা তাদের পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবৃত্ত হয়। অতএব, তারা যদি তোমাদের নিকট হতে চলে না যায়, তোমাদের নিকট শান্তির প্রস্তাব না করে এবং তাদের হাত সংবরণ না করে, তবে তাদের যেখানেই পাবে গ্রেফতার করবে এবং হত্যা করবে। আমি তাদের উপর তোমাদের বিরুদ্ধাচারণের স্পষ্ট অধিকার দিয়েছি।’’ [সূরা নিসা : ৯১ আয়াত]

ঙ. তাগুতের কাছে বিচার উপস্থাপনকারী মুনাফিক্ব ও এ সম্পর্কিত বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন :

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ـ وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا ـ

‘‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে, তাতে তারা ঈমান আনে, অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদের ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়? তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো, তখন মুনাফিক্বদের আপনি আপনার নিকট থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবেন।’’ [সূরা নিসা : ৬০-৬১ আয়াত]

আল্লাহ তাআলা বলেন :

ياَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ

‘‘হে নবী! কাফির ও মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও তাদের প্রতি কঠোর হও।’’ [সূরা তাওবাহ : ৭৩ আয়াত]

এখন আমরা জানব, মুনাফিক্বদের সাথে কখন, কি পরিস্থিতিতে ও কিভাবে জিহাদ করতে হবে এবং কঠোর হতে হবে?

মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে জিহাদের ধরণ

ক.বিদ্রোহ করলে (হত্যা/ ক্বিতাল/ দেশান্তর) : এক্ষেত্রে বিদ্রোহ করার শাস্তি প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ـ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَقْدِرُوا عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ـ

‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট শাস্তি হত্যা কিংবা শূলে চড়ান অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীতভাবে কেটে ফেলা, কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা। এ লাঞ্ছনা ও অপমান হবে এ দুনিয়ায়; কিন্তু পরকালে তাদের জন্যে এটা অপেক্ষাও কঠিনতম আযাব নির্দিষ্ট আছে। কিন্তু যারা তাওবা করবে, তাদের উপর তোমাদের আধিপত্য স্থাপিত হওয়ার পূর্বে। তোমাদের জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহই হচ্ছেন ক্ষমাকারী ও অনুগ্রহশীল।’’

[সূরা মায়িদা : ৩৩-৩৪ আয়াত]

সুস্পষ্ট হল মুনাফিক্ব/ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের উপর মুসলিমদের প্রভাব থাকলেও তারা মুসলিমদের সাথে বিদ্রোহমূলক আচরণ না করলে তাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-ই ছাড় দিয়েছেন। অথচ তাদের আক্বীদা ও আমল কোনটিই আল্লাহ তাআলা’র কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

খ.সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করলে (হত্যা) : আল্লাহ তাআলা বলেন :

لَئِنْ لَّمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَّرْضٌ وَالْمُرْجِفُوْنَ فِي الْمَدِيْنَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لاَيُجَاوِرُوْنَكَ فِيْهَا اِلاَّ قَلِيْلاً ـ مَّلْعُوْنِيْنَ ج اَيْنَمَا ثُقِفُوْا اُخِذُوْا وَقُتِّلُوْا تَقْتِيْلاً ـ

‘‘মুনাফিক্বরা এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যারা নগরে গুজব রটনা করে, তারা বিরত না হলে আমি নিশ্চয়ই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে প্রবল করব। এরপর এ নগরীতে আপনার প্রতিবেশীরূপে তারা অল্প সময়ই থাকবে- অভিশপ্ত হয়ে। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই ধরা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে।’’ [সূরা আহযাব : ৬০-৬১ আয়াত]

গ.সমাজে শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করলে (শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ পাবে) : পূর্বোক্ত আয়াতে لَئِنْ لَّمْ يَنْتَهِ الْمُنَافِقُوْنَ ‘‘মুনাফিক্বরা যদি বিরত না হয়’’ কথাটি রয়েছে। যা থেকে সুস্পষ্ট হয়, তারা অশান্তি সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকলে তাদের ব্যাপারে কঠিন হওয়া যাবে না। তাদের সংস্কারের ক্ষেত্রে ফাসেক/ বিদআতী প্রমুখের ন্যায় হাত/ মুখ/ অন্তরের জিহাদ পরিস্থিতি অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। ইবনু কাসির (রহ) মুনাফিক্বদের শাস্তির বিধান সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীর ভিন্ন ভিন্ন উদ্ধৃতি দেয়ার পর লিখেছেন :

انه لا منافاة بيْن هذه الأقوال، لأنه تارة يؤاخذهم بِهذا، وتارة بِهذا بِحسب الأحوال .

‘‘উপরোক্ত (বিভিন্ন) উদ্ধৃতির মধ্যে কোনরূপ বৈপরিত্য নেই। বস্তুত মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অবস্থায় পূর্বোক্ত বিভিন্ন পন্থায় জিহাদ করাই বিধেয়।’’

[তাফসীরে ইবনু কাসির, সূরা তাওবা : ৭৩-৭৪ নং আয়াতের তাফসীর দ্র:। এই আয়াতটির তাফসীরে মুনাফিক্বগণ কর্তৃক নবী (স)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র, বিদ্রূপ এবং পরবর্তীতে নবী (স)-এর সামনে তা অস্বীকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে]

সুতরাং নবী (স)-এর উপস্থিতিতে যারা তাঁকে হত্যার ও ইসলামকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছে, নবী (স) -কে হাকিম/শাসক/বিচারক হিসাবে গ্রহণ করেনি- তাদের ব্যাপারে ইসলাম ক্ষমতাসীন থাকার মুহূর্তে যখন পূর্বোক্ত বিধানগুলো প্রযোজ্য। তখন মুসলিমদের দুর্বলতার সময় করণীয় বিষয়গুলো খুবই সুস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে হাকিম/শাসকদের তাকফির করে হত্যা করা ঘোষণা দেয়ার চেয়ে তাসফিয়্যাহ ও তারবিয়্যাহ-ই যে সবচে জরুরি এতে কোন সন্দেহ নেই।

২.খারেজী : খারেজীদের সূত্রপাতও মুনাফিক্বদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَمَا هُمْ مِنْكُمْ وَلَكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ ـ لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ ـ وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا مِنْهَا رَضُوا وَإِنْ لَمْ يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ ـ وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آَتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى اللَّهِ رَاغِبُونَ ـ إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاِبْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

‘‘তারা আল্লাহ’র নামে শপথ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বস্তুত তারা এমন এক সম্প্রদায়, যারা ভয় করে থাকে। তারা কোন আশ্রয়স্থল, কোন গিরিগুহা অথবা কোন প্রবেশস্থল পেয়ে গেলে সে দিকে পলায়ন করবে ক্ষিপ্রগতিতে। তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যে সাদাক্বা বণ্টনের ব্যাপারে আপনাকে দোষারোপ করে। অতঃপর তার কিছু তাদের দেয়া হলে পরিতুষ্ট হয় এবং তার কিছু না দেয়া হলে তখনই তারা বিক্ষুব্ধ হয়। ভাল হতো যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের যা দিয়েছেন তাতে রাযী হয়ে যেত এবং বলত আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট; আল্লাহ আমাদের দিবেন নিজ করুণা এবং তাঁর রসূলও। সাদাক্বা তো কেবল ফক্বীর, মিসকীন ও এর (জন্য নিয়োজিত) কর্মচারীদের জন্য এবং (অমুসলিম/দুর্বল মু’মিনদের) অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য এবং দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য ও আল্লাহ’র পথে জিহাদরতদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহ’র বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’ [সূরা তাওবা : ৫৮-৬০ আয়াত]

عن أبي سعيد رضي الله عنه قال : بعث إلي النبي بشيء فقسمه بين أربعة وقال : أتألفهم . فقال رجل ما عدلت فقال : يَخرج من ضئضئ هذا قوم يِمرقون من الدين

‘‘আবূ সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নবী (স) -এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বললেন, তাদের (এর দ্বারা) আকৃষ্ট করছি। তখন এক ব্যক্তি বলল, আপনি সঠিকভাবে দান করেনি এতদশ্রবণে তিনি বললেন : এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন সব লোক জন্ম নেবে যারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে।’’ [সহীহ বুখারী- কিতাবুত তাফসীর, সূরা নিসা : ৬০ নং আয়াতের তাফসীর দ্র :]

আবূ সাঈদ খুদরী (রা) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে : আলী (রা) ইয়ামান থেকে রসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তিনি (স) সেগুলো চার জনের মধ্যে বণ্টন করেন। তখন সাহাবীদের একজন বললেন : ‘এ স্বর্ণের ব্যাপারে তাদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হক্বদার ছিলাম।’ কথাটি শোনার পর নবী (স) বললেন : ‘তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে।..... তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল : ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহকে ভয় করুন। নবী (স) বললেন : তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি বেশি হক্বদার নই? লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালিদ বললেন : ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি (স) বললেন : ( لا لعله أن يكون يصلي ) না, হয়ত সে সালাত আদায় করে। খালিদ বললেন : ( وكم من مصل يقول بلسانه ما ليس في قلبه ) অনেক মুসলস্নী আছে যারা মুখে এমন কথা উচ্চারণ করে যা অন্তরে নেই। রসূলুল্লাহ (স) বললেন : ( إنّي لَم أومر أن أنقب قلوب الناس ولا أشق بطونَهم ) আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমান) দেখার জন্য বলা হয়নি .... তিনি (স) বললেন : এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হবে যারা শ্রুতিমধুর কন্ঠে আল্লাহ’র কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর বের হয়। যদি আমি তাদের পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ জাতির মত হত্যা করব।’’ [সহীহ বুখারী- কিতাবুল মাগাযী باب بعث على بن ابى طالب ; (সংক্ষেপিত)]

আলী (রা) -এর খিলাফতের যামানায় খারেজীদের উদ্ভব হয়।

[ফতহুল বারী, আলোচ্য অনুচ্ছেদ দ্র :, আরো বিস্তারিত : তাফসীরে মাযহারী সূরা নিসা : ৫৬-৫৯ আয়াতের তাফসীর]

আলী (রা) খারেজীদের বলেছিলেন : ‘‘যতদিন তোমাদের দায়িত্ব আমাদের উপরে ছিল ততদিন আমরা তোমাদের গনীমত দেয়া বন্ধ করিনি এবং আল্লাহর মাসজিদে সালাত আদায় করতে বাধা দেইনি এখন তোমাদের উপর আমরা আগেই হামলা করবো না। যদি তোমরা প্রথমে হামলা না করো।’’ এরপর তারা সবাই কূফা থেকে বেরিয়ে গিয়ে নাহরাওয়ান নামক স্থানে সমবেত হয়। [আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া (ই.ফা.) ৭/৫১০ পৃষ্ঠা]

পূর্বোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হল, মুনাফিক্ব ও খারেজীরা একই সূত্রে গাঁথা। তাদের প্রতি একই ধরণের আচরণ প্রযোজ্য :

ক.তাদের ঈমান ও আমল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে অগ্রহণযোগ্য।

খ.এরপরও রাষ্ট্রীয় আইন এক্ষেত্রে তাদের প্রতি অনেক সহনশীল ও যুক্তিসংগত আচরণ করেছে, যতক্ষণ তারা ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতির কারণ না হয়। অথচ তখন ইসলামী রাষ্ট্র ক্বায়েম ছিল। তাদের ঈমান ও আক্বীদা আল্লাহ তাআলা’র কাছে অগ্রহণযোগ্য হওয়াটাও সুস্পষ্ট ছিল। রসূল (স) -কেও হাকিম/শাসক/বিচারক হিসাবে স্বীকার করার ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিল। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহী ও সরাসরি ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নি, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামী আইনেই তাদের অবকাশ দেয়া হয়েছে।

৩.গোমরাহ শাসক : শাসকদের ব্যাপারে আমরা নবী (স) থেকে কয়েক ধরণের নিদের্শনা পায়। যথা :

ক.প্রতিষ্ঠিত ইসলামী খিলাফত ও আইনসমূহ বিকৃতকারী শাসক : রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ، وَشِرَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلْعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ গ্ধ ، قَالُوا : قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلَا نُنَابِذُهُمْ عِنْدَ ذَلِكَ؟ قَالَ :র لَا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ، لَا، مَا أَقَامُوا فِيكُمُ الصَّلَاةَ، أَلَا مَنْ وَلِيَ عَلَيْهِ وَالٍ، فَرَآهُ يَأْتِي شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِي مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ، وَلَا يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ .

‘‘তোমাদের শাসকদের মধ্যে সেই শাসকই উত্তম যাকে তোমরা ভালবাস, আর যারা তোমাদের ভালবাসে। আর তোমরা তাদের জন্য দুআ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দুআ করে। আর তোমাদের সেই শাসকই মন্দ যাদের তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। আর তাদের প্রতি তোমরা লানত কর এবং তারা তোমাদের প্রতি লানত করে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা বললাম : ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! এমতাবস্থায় আমরা কি সেই সমস্ত শাসকদের অপসারণ করে তাদের সাথে কৃত বায়য়াত ভঙ্গ করে ফেলব না? তিনি (স) বললেন : না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত ক্বায়েম করে (আবার বললেন) না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত ক্বায়েম রাখে। সাবধান! যে ব্যক্তিকে তোমাদের উপর শাসক নিযুক্ত করা হয়, আর যদি তার মধ্যে আল্লাহর নাফরমানীর কোন কিছু পরিলক্ষিত হয়, তখন তোমরা তার সেই আল্লাহর নাফরমানীর কাজটিকে ঘৃণার সাথে অপছন্দ কর, কিন্তু তার আনুগত্য হতে হাত গুটাতে পারবে না।’’

[সহীহ মুসলিম ৪৬৯৯(৬৬/ ১৮৫৫)]

হাদীসটিতে বায়য়াত ভঙ্গের প্রসঙ্গ দ্বারা সুস্পষ্ট হয়, উক্ত শাসকের শাসন ইসলামী হুকুমাতের অন্তর্ভূক্ত। অন্যত্র নবী (স) বলেন :

إِنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ ‏ " ‏ ‏ . ‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ نُقَاتِلُهُمْ قَالَ ‏ " ‏ لاَ مَا صَلَّوْا ‏ " ‏ ‏ . ‏ أَىْ مَنْ كَرِهَ بِقَلْبِهِ وَأَنْكَرَ بِقَلْبِهِ ‏ .‏

‘‘তোমাদের উপর এরূপ কতিপয় আমীর নিযুক্ত করা হবে তোমরা তাদের চিনতে পারবে এবং অপছন্দ করবে। যে তাদের অপছন্দ করল সে মুক্তি পেল এবং যে প্রত্যাখ্যান করল সে নিরাপদ হল। কিন্তু যে (তাদের প্রতি) সন্তুষ্ট থাকল এবং অনুসরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হল) লোকেরা জানতে চাইল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? তিনি বললেন, না, যতক্ষণ তারা সালাত আদায়কারী থাকবে। (অপছন্দ করল) অর্থাৎ, যে অন্তর থেকে তাদের অপছন্দ করল এবং অন্তর থেকে প্রত্যাখ্যান করল।’’ [.সহীহ : মুসলিম ৪৬৯৫ (৬৩/১৮৫৪), মিশকাত ৩৬৭১।]

অন্য বর্ণনায় আছে, لاَ مَا اَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ ‘‘না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত ক্বায়েম রাখে।’’ [.সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৬৯৯(৬৬/ ১৮৫৫), মিশকাত ৩৬৭০। হাদীসটি বায়য়াত কোন পরিস্থিতিতে ভঙ্গ করা যায় সে সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর সংশ্লিষ্ট ছিল।] অপর এক বর্ণনায় আছে, اِلاَّ اَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِّنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانَ ‘‘যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলিল থাকবে।’’ [.সহীহ : সহীহ বুখারী ৭০৫৬, সহীহ মুসলিম ৪৬৬৫ (৪২/১৭০৯), মিশকাত ৩৬৬৬। হাদীসটি নিযুক্ত মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হাদীসের শুরুর বাক্যগুলো থেকে তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।]

পূর্বোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, পূর্ব থেকেই বায়আত-খিলাফত ও সালাত ক্বায়েম ছিল, এমন শাসক যখন সালাত ক্বায়েম করবে না তখন তাকে হত্যা করা যাবে। তবে নিঃসন্দেহে উক্ত শাসককে অপসারণের বিষয়টি শক্তি-সামর্থ্যের সাথে জড়িত।

খ.সম্পূর্ণ গোমরাহ শাসক : হুযায়ফা (রা) বলেন :

قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّا كُنَّا بِشَرٍّ فَجَاءَ اللهُ بِخَيْرٍ فَنَحْنُ فِيْهِ فَهَلْ مِنْ وَّرَاءِ هَذَا الْخَيْرِ شَرُّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ هَلْ وَرَاءَ ذَالِكَ الشَّرِّ خَيْرُ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ فَهَلْ وَرَاءَ ذَالِكَ الْخَيْرِ شَرُّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ كَيْفَ قَالَ يَكُوْنَ بَعْدِيْ اَئِمَّةُ لاَيَهْتَدُوْنَ بِهُدَايَ وَلاَ يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ وَسَيَقُوْمُ فِيْهِمْ رِجَالُ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِيْنِ فِيْ جُثْمَانِ اِنْسٍ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ اَصْنَعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْ اَدْرَكْتُ ذَالِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيْعُ لِلْاَمِيْرِ وَاِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَاُخِذَ مَالُكَ فَاسْمَعْ وَاطِعْ ـ

‘‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! আমরা ছিলাম অমঙ্গলের মধ্যে তারপর আল্লাহ আমাদের জন্যে মঙ্গল নিয়ে আসলেন। আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ মঙ্গলের পরে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, এ অমঙ্গলের পরে কি আবার কোন মঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, এ মঙ্গলের পরে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে যারা আমার হিদায়েতে হিদায়েত প্রাপ্ত হবে না এবং আমার সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তঃকরণ; রাবী বলেন, আমি বললাম : তখন আমরা কী করবো, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন : তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেয়া হয় তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।’’ [সহীহ মুসলিম ৪৬৭৮ (৫১/১৮৪৭), মিশকাত ৫৩৮২]

যারা আল্লাহর বিধান দ্বারা হুকুমাত পরিচালনা করবে তারা কখনই হিদায়াত ও রসূলের সুন্নাত ত্যাগকারী শাসক নয়। তাদের যে বিষয়ে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে তা আল্লাহর একক হক্ব তথা ইবাদাত সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। এমনকি ইসলামী কোন মৌলিক আক্বীদার বিরোধিতায়ও তাদেরকে মানতে বলা হয়নি। অথচ বান্দার অধিকার যেমন অন্যায়ভাবে বেত্রাঘাত করা অথবা ধন-সম্পদ প্রভৃতি তথা অধিকার কেড়ে নেয়া সত্ত্বেও তাদের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। যা সুস্পষ্টভাবে মুআমালাতের অন্তর্ভুক্ত। অথচ পূর্বের হাদীসগুলো শাসকের শেষ বাহ্যিক কুফর তথা সালাত আদায় পর্যন্ত আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, পরিস্থিতি বিশেষে যখন মুসলিমদের ঈমান ও বৈষয়িক শক্তি-সামর্থ্যের হ্রাস ঘটবে এবং গোমরাহ শাসকদের আবির্ভাব ঘটবে তখনকার করণীয় বিষয় সম্পর্কে হাদীসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন। আমিন!!

পূর্বোক্ত আলোচনাতে আক্বীদাভিত্তিক ও আমলভিত্তিক কুফরের বিষয়টি সুস্পষ্ট হল। কেননা রসূলুল্লাহ (স) যখন নিজেই হাকিম তখন তাঁর সাথে দুর্ব্যবহারকারীদের ব্যাপারে যেখানে তার অবস্থান সুস্পষ্ট, অথচ তিনি তখন রাষ্ট্রীয় শক্তি-ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং যখন মুসলিমরা ঈমানী দুর্বলতায় জর্জরিত হবে, তখন শক্তিশালী গোমরাহ শাসকদের ব্যাপারে তাদের করণীয় সেটাই যা পূর্বোক্ত সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে পুনরায় নবী (স) -এর দেখানো পথেই সংস্কার করতে হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বলেন : একবার রসূলুল্লাহ (স) আমাদের বললেন : اِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِيْ اَثْرَةً وَاٌمٌوْرًا تُنْكِرُوْنَهَا ‘‘অচিরেই তোমরা আমার পরে স্বজনপ্রীতি এবং এমন সব কাজ দেখবে, যা তোমরা অপছন্দ করবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন : فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ! তখন আমাদের কী করতে আদেশ করেন? তিনি (স) বললেন : اَدُّوْا اِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ وَسَلُوْا اللهَ حَقَّكُمْ ‘‘তোমরা তাদের হক্ব তাদের পরিশোধ করে দেবে এবং তোমাদের হক্ব আল্লাহ’র কাছে চাবে।’’ [.সহীহ : সহীহ বুখারী ৭০৫২, মিশকাত ৩৬৭২।]

রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

سَتَكُوْنُ أَحْدَاثٌ وَفِتْنَةٌ وَفُرْقَةٌ وَاِخْتِلاَفٌ ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُوْنَ الْمَقْتُوْلَ لاَ الْقَاتِلَ فَافْعَلْ

‘‘অচিরেই নিত্য নতুন বিষয়াদি (বিদআত), ফিতনা, ফিরক্বা (দলাদলি) ও ইখতিলাফ (মতবিরোধ) দেখা দেবে। তখন যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে নিহত হও, হত্যাকারী হয়ো না, তবে তা-ই কর।’’ [.হাসান : মুসনাদে আহমাদ, মুস্তাদরাকে হাকিম। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (সহীহুল জামে‘ ১/৩৬১৬)। শুআয়েব আরনাউত হাদীসটির সমালোচনাসহ হাদীসটি হাসান লি-গয়রিহী বলে মন্তব্য করেছেন। (তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৫৫২)। পরবর্তী সহীহ হাদীসটি এই হাদীসটিকে সমর্থন করে।]

আবূ মূসা (রা) নবী (স) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (স) বলেন :

إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وِيُمْسِيْ كَافِرًا وَيُمْسِيْ مُؤْمِنًا وَّيُصْبِحُ كَافِرًا اَلْقَاعِدُ فِيْهَا خَيْرٌ مِّنَ الْقَائِمِ وَالْمَاشِيْ فِيْهَا خَيْرٌ مِّنَ السَّاعِيْ فَكَسِّرُوْا فِيْهَا قِسِيَّكُمْ وَقَطِّعُوْا فِيْهَا أَوْتَارَكُمْ وَاضْرِبُوْا سُيُوْفَكُمْ بِالْحِجَارَةِ فَإِنْ دُخِلَ عَلى أَحَدٍ مِّنْكُمْ فَلْيَكُنْ كَخَيْرِ ابْنَيْ آدَمَ .

‘‘ক্বিয়ামত আসার পূর্বে ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের ন্যায় ফিতনা সংঘটিত হতে থাকবে, এতে কোন ব্যক্তি সকালে মু’মিন এবং বিকালে কাফির এবং বিকালে মু’মিন আর সকালে কাফিরে পরিণত হতে থাকবে। এতে বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি হতে উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে। তখন তোমরা তোমাদের ধনুকগুলো ভেঙ্গে ফেলবে এবং এর রশিগুলি কেটে ফেলবে। আর তোমাদের তলোয়ার পাথরে আঘাত করে এর ধার নষ্ট করে দেবে। এই সময় কেউ যদি আগ্রাসী হয়ে তোমাদের কাউকেও আক্রমণ করে, তখন সে যেন আদম (আ)-এর দুই ছেলের মধ্যে উত্তম ছেলের নীতি অবলম্বন করে।’’ [. সহীহ : আবূ দাউদ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত ৩/৫৩৯৯, তাহক্বীক্বকৃত আবূ দাউদ হা/৪২৫৯)।] আদম (আ)-এর উক্ত দুই পুত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :

لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لأقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ

‘‘(আদম (আ)-এর এক পুত্র অপর পুত্রকে বলল) তুমি যদি আমাকে হত্যার জন্য হাত বাড়াও, আমি তোমাকে হত্যার জন্য হাত বাড়াব না। আমি রব্বুল আলামীনকে ভয় করি।’’ [সূরা মায়িদাহ : ২৮ আয়াত]

ইমাম ইবনু কাসীর (রহ) লিখেছেন :

قال أيوب السَّخْتَياني : إن أول من أخذ بهذه الآية من هذه الأمة : ﴿ لَئِنْ بَسَطْتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لأقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ ﴾ لَعُثْمان بن عفان رضي الله عنه . رواه ابن أبي حاتم .

‘‘আইয়ুব সাখতিয়ানী (রহ) বলেন : এই উম্মাতের মধ্যে সর্বপ্রথম এই আয়াতের ওপর যিনি আমল করেছিলেন তিনি হলেন উসমান (রা) । আবূ হাতিম এটা বর্ণনা করেছেন।’’

[তাফসীর ইবনু কাসীর, সূরা মায়িদাহ- ২৮ নং আয়াতের তাফসীর দ্র :]

লক্ষণীয় বিদ্রোহীদের মোকাবেলায় ইসলামী রাষ্ট্র তখন শক্তিশালী ছিল। কিন্তু উসমান (রা) রাষ্ট্রীয় নীতির আলোকে তাদের মুসলিম গণ্য করায় তাদের রক্ত নেওয়ার চেয়ে নিজের শহীদ হওয়াটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন