hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

৩১
ঈমান, কুফর, ইরজা‘ ও মুরজিয়া
-শায়খ ইবনু বায (রহ)

[শায়খ ইবনু বাযের এই প্রশ্নোত্তরটি নেওয়া হয়েছে, حوار حول مسائل التكفير (প্রকাশক : মাকতাবাহ আল-ইমাম যাহাবী, কুয়েত, ১৪২০ হি :/২০০০ ‘ঈসায়ী) থেকে। -অনুবাদক]

سـ ١ : هناك من يقول : إن هذا القول وهو قول السلف : إنا لا نكفر أحدا من أهل الملة بذنب ما لَم يستحله ، يقول هذا هو قول الْمرجئة ؟

প্রশ্ন-১: অনেকে বলেন : সালাফদের থেকে এই উক্তি রয়েছে যে, তারা বলেছেন : ‘‘আমরা এই মিল্লাতের (ইসলামের) কাউকেই তার পাপের জন্য কাফির ঘোষণা করতে পারব না, যদি না সে তা (পাপটি) হালাল মনে করে’’ -তারা বলেন, এটা হল মুরজিয়াদের উক্তি।

سَماحة الشيخ ابن باز : هذا غلط ، هذا قول أهل السنة لا يكفر بذنب ما لَم يستحله ، الزاني لا يكفر ، وشارب الْخمر لا يكفر ، بل عاص ، إلا إذا استحل ذلك ، هذا قول أهل السنة خلافا للخوارج ،

الْخوارج هم الذين يكفرون بالذنوب ، أما أهل السنة فيقولون : عاص يُجب ضعيف الإيْمان ، خلافا للخوارج والْمعتزلة ، هذا قول أهل السنة والْجماعة ، أما إذا استحله ، قال : الزنا حلال يكفر ، أو قال : الْخمر حلال يكفر ، عند أهل السنة والْجماعة جَميعا ، أو قال : الربا حلال يكفر ، أو قال : عقوق الوالدين حلال يكفر ، لكن إذا فعله من غيْر اعتقاد ، وهو يعلم أنه حرام ، عق والديه يعلم أنه حرام ، زنا يعلم أنه حرام ، شرب الْخمر يعلم أنه حرام ، هذا عاص ، ناقص الإيْمان ، ضعيف الإيْمان عند أهل السنة ولا يكفر ، لكن يستحق أن يقام عليه حد الْخمر ، حد الزنا ، يؤدب عن العقوق ، يؤدب عن أكل الربا . لا بأس طيب .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : এটা ভুল কথা। মূলত এটাই আহলে সুন্নাতেরই উক্তি (নীতি) : ‘‘কাউকে পাপের জন্য কাফির বলা যাবে না, যতক্ষণ সে তা হালাল গণ্য করে।’’ একজন যিনাকারী কাফির নয়, একজন মদপানকারী কাফির নয়- বরং সে অবাধ্য, যদি না সে তার কাজটি হালাল গণ্য করে। খারেজীদের মোকাবেলায় এটাই আহলে সুন্নাতের উক্তি।

খারেজীরা পাপের কারণে কাফির গণ্য করে থাকে। পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত বলে থাকে : সে অবাধ্যদের একজন। তার ওপর হদ (শাস্তি) প্রয়োগ করা ওয়াজিব, তেমনি তার জন্য তাওবা করাও ওয়াজিব, কিন্তু সে কাফির নয়- যদি না পাপকে সে হালাল গণ্য করে। যদি সে যিনা করে, কিন্তু তাকে হালাল গণ্য না করে। তেমনি মদপান করে, কিন্তু তাকে হালাল গণ্য না করে। তেমনি অন্যান্য বিষয়েও। যেমন : সুদ খায় কিন্তু তা হালাল গণ্য করে না, তাহলে সে কাফির নয়। বরং সে পাপী- যা ঈমানের ত্রুটি, ঈমানের দুর্বলতা। এটা খারেজী ও মু‘তাযিলাদের বিপরীতে আহলে সুন্নাতের বক্তব্য। আর যদি হালাল গণ্য করে বলে : যিনা হালাল, তবে সে কাফির। কিংবা বলে : মদ হালাল, তবে সে কাফির- এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের সবাই একমত। কিংবা যদি কেউ বলে : সুদ হালাল, সে কাফির। কিংবা বলে : পিতামাতার অবাধ্যতা করা হালাল, তবে সে কাফির।

কিন্তু যদি তার আমলটি উক্ত আক্বীদা রাখা ব্যতিরেকে হয় এবং সে জ্ঞাত যে এটা হারাম। যেমন : পিতামাতার অবাধ্যতা করে, অথচ জানে তা হারাম। সে যিনা করে, কিন্তু জানে সেটা হারাম। মদপান করে, অথচ জানে সেটা হারাম। তবে এটা গোনাহ, ঈমানের ত্রুটি, ঈমানের দুর্বলতা। আহলে সুন্নাতের নিকট সে কাফির নয়। তার উপর যিনার হদ, মদপান করার হদ প্রযোজ্য। তেমনি পিতামাতার অবাধ্যতার জন্য ও সুদ গ্রহণের জন্য তার ব্যাপারে সংশোধনমূলক (শাস্তির) ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে। নিঃসন্দেহে এটা উত্তম।

سـ ٢ : هل العلماء الذين قالوا بعدم كفر من ترك أعمال الْجوارح ، مع تلفظه بالشهادتين ، ووجود أصل الإيْمان القلبي هل هم من الْمرجئة ؟

প্রশ্ন-২: যে সমস্ত আলেমরা বলেন, ‘‘তারা কাফির নয়- যারা সমস্ত আমলসমূহের শাখা-প্রশাখাগুলো ত্যাগ করে, সাথে সাথে দু’টি শাহাদাতের (কালেমায়ে শাহাদাতের) উচ্চারণ ঠিক রাখে এবং তাদের অন্তরে নীতিগতভাবে ঈমানের অস্তিত্ব রয়েছে’’ -তারা কি মুরজিয়া নন?

سَماحة الشيخ ابن باز : هذا من أهل السنة والْجماعة ، من قال بعدم كفر من ترك الصيام ، أو الزكاة ، أو الْحج ، هذا ليس بكافر ، لكنه أتى كبيْرة عظيمة ، وهو كافر عند بعض العلماء ، لكن على الصواب لا يكفر كفرا أكبر ، أما تارك الصلاة فالأرجح فيه أنه كفر أكبْر ، إذا تعمد تركها ، وأما ترك الزكاة ، والصيام ، والْحج ، فهو كفر دون كفر ، معصية وكبيرة من الكبائر ، والدليل على هذا أن النبي قال في من منع الزكاة : «يؤتى به يوم القيامة يعذب بِماله»، كما دل عليه القرآن الكريْم : ﴿ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ ﴾، أخبْر النبي أنه يعذب بِماله ، بإبله ، وبقره ، وغنمه ، وذهبه ، وفضته ، ثُم يرى سبيله بعد هذا إلى الْجنة أو إلَى النار ، دل على أنه لَم يكفر ، كونه يرى سبيله إما إلَى الْجنة ، وإما إلَى النار ، دل على أنه متوعد ، قد يدخل النار ، وقد يكتفي بعذاب البَرزخ ، ولا يدخل النار ، بل يكون إلى الْجنة بعد العذاب الذي في البرزخ .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : এই উক্তিটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকেই এসেছে, যারা বলেছেন : কুফর সংঘটিত হয় না সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ তরক করার জন্যে। এ জন্যে সে কাফির নয়। কিন্তু সে ভয়ানক কবীরা গুনাহে লিপ্ত। কিছু আলেমের কাছে এরাও কাফির। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা কুফরে আকবার নয়। কিন্তু কেউ যদি সালাত তরক করে, সেক্ষেত্রে প্রাধান্যপ্রাপ্ত ( الراجح ) সিদ্ধান্ত হল, সেটা কুফরে আকবার- যখন সে স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে। আর যদি সে সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ তরক করে, তবে সেটা كفر دون كفر (কুফরের থেকে কম কুফর), সেটা পাপ এবং কবীরা গুনাহগুলোর সর্বোচচ গুনাহর অন্তর্ভূক্ত। এর দলিল হল, নবী (স) যাকাত আদায় না করা সম্পর্কে বলেছেন : يؤتى به يوم القيامة يعذب بِماله ‘‘সে তার সম্পদসহ আসবে, তাকে তার মাল দ্বারাই আযাব দেয়া হবে।’’ [.‘‘যাকাত নাআদায়কারী’’ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর সার-সংক্ষেপ এটাই। বিস্তারিত হাদীসের কিতাবের ‘যাকাত’ অধ্যায় দ্রষ্টব্য। (অনুবাদক)] তেমনিভাবে কুরআনে দলিল আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন :

يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

‘‘সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা (যাকাতের সম্পদ) উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর (তার) যা তোমরা জমা রেখেছিলে।’’ [.সূরা তাওবা : ৩৫ আয়াত।]

নবী (স) জানিয়েছেন, তাদের আযাব দেয়া হবে তাদের মাল দ্বারা, উট দ্বারা, গরু দ্বারা, ভেড়া দ্বারা, সোনা ও রূপা দ্বারা। অতঃপর তাকে জান্নাত বা জাহান্নামের পথ দেখান হবে। [.যাকাত নাআদায়কারীর হাশরের ময়দানে তার সম্পদ, উট, গরু, ভেড়া দ্বারা শাস্তি লাভের বর্ণনার পর নবী (স) এর বাণী : فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ ‘‘অতঃপর সে তার পথ ধরবে হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।’’ [সহীহ মুসলিম ২১৮০ (২৪/৯৮৭), মিশকাত ১৭৭৩। -অনুবাদক।] এটাই (হাদীসটি) প্রমাণ যে, সে কাফির নয়। (এরপর) হতে পারে সে দেখবে জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। এটা প্রমাণ করে, তাকে ভয়াবহভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করা হবে। তাকে হয়তো জাহান্নামে দাখিল করা হবে। কিংবা হয়তো কেবল বারযখে আযাব দেয়া হবে এবং জাহান্নামে দাখিল করা হবে না। কিংবা হতে পারে তাকে বারযাখে আযাব দেয়ার পর জান্নাতে দাখিল করা হবে।

سـ ٣ : شيخنا بالنسبة للإجابة على السؤال الأول فهم البعض من كلامك أن الإنسان إذا نطق بالشهادتين ولَم يعمل فإنه ناقص الإيْمان ، هل هذا الفهم صحيح ؟

প্রশ্ন-৩: (হে) আমাদের শায়খ! প্রথম প্রশ্নের জবাব প্রসঙ্গে বলছি, কিছু লোক আপনার বক্তব্যের মর্মটি থেকে বুঝেছে‘ যে, ‘‘যখন কেউ দু’টি শাহাদাতের (কালেমা শাহাদাতের) উচ্চারণ করে, কিন্তু আমল করে না, সেক্ষেত্রে তার ঈমানটি ত্রুটিযুক্ত’’ -এই বুঝটি কি সহীহ?

سَماحة الشيخ ابن باز : نعم . فمن وحدَّ اللهَ وأخلصَ له العبادةَ ، وصدّقَ رسول الله ، لكنه ما أدى الزكاة ، أو ما صام رمضان ، أو ما حج مع الاستطاعة يكون عاصياً أتى كبيرة عظيمة ، ويُتوعدُ بالنارِ ، لكن لا يكفرُ على الصحيحِ ، أما من ترك الصلاةِ عمداً فإنه يكفرُ على الصحيحِ

শায়খ ইবনু বায (রহ) : হ্যাঁ, যে আল্লাহকে একক গণ্য করে এবং ইখলাসের সাথে তাঁর ইবাদত করে, আর রসূলুল্লাহ (স)-কে সত্যায়ন করে; যদিওবা সে যাকাত আদায় না করে, বা সিয়াম পালন না করে, কিংবা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও হজ্জ করে না- তাহলে সে গোনাহগার হবে, ফলে সে ভয়ানক কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়। তার জন্য জাহান্নামের ওয়াদা (ভয়ঙ্কর শাস্তি) রয়েছে। এতদ্বসত্ত্বেও সহীহ কথা হল, সে কাফির নয়। তবে যদি স্বেচ্ছায় সালাত তরক করে, সেক্ষেত্রে তাকে কাফির গণ্য করাটাই সহীহ সিদ্ধান্ত।

سـ ٤ : أحسن الله إليك ، هل يَمكن صدورُ كفرِ عملي مُخرج من الْملة في الأحوال الطبيعية ؟

প্রশ্ন-৪: আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! এটা কি সম্ভব- কুফরে আমলী যা বিভিন্ন দেশে ( الأحوال الطبيعية -বৈশিষ্ট্যগতভাবে) প্রকাশ পেয়েছে, তাকি মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেয়?

سَماحة الشيخ ابن باز : الكفر العملي يُخرج من الْملة مثل السجود لغيْر الله ، والذبح لغيْر الله كفر عملي يُخرج من الْملة فالذبح للأصنام ، أو للكواكبِ ، أو للجنِّ كفر عملي أكبر وهكذا لو صلى لَهم ، لو سجد لَهم يكفر كفراً عملياً أكبر - والعياذ بالله - ، هكذا لو سبّ الدينَ ، أو سب الرسولَ ، أو استهزأ بالله ، أو بالرسول . كفرٌ عملي أكبر عند جَميعِ أهل السنة والْجماعة .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : যে সমস্ত কুফর আমালী মিল্লাত (দ্বীন) থেকে খারিজ করে দেয় তার মেসাল (উদাহরণ) হল, গায়রুল্লাহকে সিজদা করা, গায়রুল্লাহর জন্যে যবেহ করা প্রভৃতি কুফরে আমালী মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেয়। সুতরাং মূর্তির জন্য যবেহ করা, কিংবা তারকার জন্য বা জিনের জন্য প্রভৃতি কুফরে- আমালী-আকবার (আমলগত বড় কুফর)। এগুলোর মাধ্যমে যেন তাদের জন্য সালাত আদায় (ইবাদত) করা হয়, তাদেরকে সিজদা করা হয়। সে তখন কাফির হয়, বড় কুফরে আমালীর মাধ্যমে- এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহর থেকে বিতাড়িত। অনুরূপভাবে, যদি কেউ দ্বীন (ইসলাম)-কে গালাগালি দেয়, রসূলের (স) নিন্দা করে, আল্লাহ বা রসূলের (স) ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে- তবে সেটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সবার নিকট বড় কুফরে আমালী। [.আমাদের বিরোধীপক্ষ ইমাম আলবানীর (রহ) ‘ফিতনাতুত তাকফীরের’’ বক্তব্য খণ্ডনে উপরোক্ত আমালী কুফরগুলোকে উদাহরণ হিসাবে পেশ করে থাকেন। অথচ উক্ত আমলগুলো আক্বীদা, ইবাদত এবং আল্লাহ তাআলা ও রসূলের (স) হক্বের সাথে সম্পর্কিত, যা মুআমালাত বা লেনদেন তথা মানবীয় হক্বের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ কারণে উক্ত আমলগুলো কেবল কুফরে আমালীই নয় বরং ‘ইবাদত ও আক্বীদাগত কুফর, যা দ্বীন থেকে খারিজ করে দেয় তথা বড় কুফর হিসাবে গণ্য। পক্ষান্তরে বিচার-লেনদেন তথা মুআমালাতের ক্ষেত্রে যতক্ষণ তা আক্বীদাকে নষ্ট করে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন না করাটা ঐ সমস্ত আমালী কুফরের অন্তর্ভূক্ত যা ছোট কুফর ( كفر دون كفر )। কিন্তু এক্ষেত্রেও যদি হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল বলে, বা দ্বীন ইসলামের বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, গালি-গালাজ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে- তবে সেটা আক্বীদার বিরোধী হওয়ায় বড় কুফরের অন্তর্ভুক্ত হবে। যা দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ করে। এ সম্পর্কিত ধারণা আমরা ‘ইবাদত ও ইতাআতের পার্থক্য’’ অনুচ্ছেদে আলোচনা করেছি। -অনুবাদক।]

سـ ٥ : سَماحة الشيخ : ما معنى الكفر العملي الذي يكون في الأحوال الطبيعية، والأصل القلبي لَم ينتقض ؟

প্রশ্ন-৫: মাননীয় শায়খ! ঐ সমস্ত কুফরে আমালীর অর্থ কী, যা বিভিন্ন রাষ্ট্রে ( الأحوال الطبيعية -বৈশিষ্ট্যগতভাবে) রয়েছে, এর আন্তরিক অবস্থা কি (ঈমানের) ত্রুটি নয়?

سَماحة الشيخ ابن باز : مثل السجود لغير الله ، والذبح لغير الله كفر عمل ، مثل سبه لدين ، أو استهزأ بالدين كفر عملي - نسأل الله العافية - كفر أكبر .

শায়খ ইবনু বায (রহ): যেমন- গায়রুল্লাহকে সিজদা করা, গায়রুল্লাহর জন্য যবেহ করা কুফরে আমালী। আরো যেমন- দ্বীন (ইসলামকে) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কিংবা দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করাটা কুফরে আমালী। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি- এগুলো কুফরে আকবার।

سـ ٦ : السجود والذبح إذا كان جهلاً ، هل يفرق بين الْجهل والتعمد ؟

প্রশ্ন-৬: (গায়রুল্লাহর জন্য) সিজদা বা যবেহ করা যদি অজ্ঞতার জন্য হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছায় আমলটি সংঘটিত হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?

سَماحة الشيخ ابن باز : هذا ما فيه جهلُ ... هذه من الأمور التِي لا تُجهلُ بين الْمسلمين ... يذبح لغيْر الله، لذلك يكفرُ وعليه التوبة، وإذا كان صادقاً عليه بالتوبة فمن تاب تاب الله عليه . الْمشركون تابوا وتاب الله عليهم يوم الفتح، وهم معروف كفرهم وضلالهم، ولَما فتح الله مكة ودخلوا في دينِ اللهِ قَبلَ اللهُ منهم .

শায়খ ইবনু বায (রহ): এর মধ্যে অজ্ঞতার কোন বিষয় নেই ...। এটা এমন একটা বিষয় যে ব্যাপারে মুসলিমদের মধ্যে কোন অজ্ঞতা নেই...। সে গায়রুল্লাহর জন্যে যবেহ করলে সেক্ষেত্রে কাফির হবে এবং তার উপর তাওবা করা জরুরি। যদি সে সত্যিকারভাবে তাওবা করে, তবে তার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন। মুশরিকরা তাওবা করেছিল, তারা মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর কাছে তাওবা করেছিল। তাদের কুফর ও গোমরাহীর বিষয় প্রসিদ্ধ ছিল। যখন মক্কা বিজয়ের দিনে তারা দ্বীনের মধ্যে দাখিল হল, আল্লাহ তাদের থেকে তাওবা ক্ববুল করেন।

سـ ٧ : لكن يا شيخ بِمجرد العمل ! كسجود معاذِ للنبي عليه الصلاة والسلام بِمجرد العمل هكذا ؟ !

প্রশ্ন-৭: তবে হে শায়খ, কেবল আমলের ক্ষেত্রে! যেমন মাআয (রা) কর্তৃক নবী (স)-কে সিজদা করা কি কেবল আমল হিসাবে গণ্য?

سَماحة الشيخ ابن باز : هذا متأولُ يِحسبُ أنه جاهلُ . بين له النبي ﷺ. استقرت الشريعةُ وعرف أن السجود لله ﴿فاسجدوا لله واعبدوا ﴾وانتهى الأمر . كان معاذ جاهلاً فعلمه النبيُّ ﷺ. الآن استقرت الشريعةُ ، وعلم أن السجود لله ﴿فاسجدوا لله واعبدوا ﴾ والذبح لله . ﴿ قل إن صلاتي ونسكي ومَحياي ومِماتي لله رب العالَمين لا شريك له ﴾ فالذي بين الْمسلمين [ من ] يسجد لغيْر الله يكون كافراً عليه التوبة .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : এটা ছিল একটি মুতা’ওয়াল (ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাখ্যাকৃত সিদ্ধান্ত), যা তার অজ্ঞতা হিসাবে গণ্য। তাকে নবী (স) ব্যাখ্যা করেছিলেন। অতঃপর শরীআত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এটাই বিধান হয়েছে যে, সিজদা কেবল আল্লাহ তাআলা-র জন্য। (ঘোষিত হয়েছে :) فاسجدوا لله واعبدوا ‘‘সুতরাং কেবল আল্লাহর সিজদা কর ও তাঁরই ইবাদত কর।’’ [. সূরা নাযম : ৬২ আয়াত।] এভাবে শরীআতী নির্দেশনা সমাপ্ত হয়েছে। মুআয (রা) ছিলেন এ ব্যাপারে অজ্ঞ, এ কারণে রসূলুল্লাহ (স) তাকে ইলম (শিক্ষা) দিয়েছিলেন। এখন শরীআত প্রতিষ্ঠিত। আর এটা জ্ঞাত যে, সিজদা করতে হবে কেবল আল্লাহ তাআলা’র। (কেননা আল্লাহর নির্দেশ :) فاسجدوا لله واعبدوا ‘‘সুতরাং কেবল আল্লাহর সিজদা কর ও তাঁরই ইবাদত কর।’’ [.সূরা নাযম : ৬২ আয়াত।] তেমনি যবেহ কেবলই আল্লাহর জন্যে। (ঘোষিত হয়েছে :) قل إن صلاتي ونسكي ومَحياي ومَماتي لله رب العالَمين لا شريك له ‘‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ- সমস্ত কিছু আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য, আর তাঁর কোন শরীক নেই।’’ [.সূরা আনয়াম : ১৬২-১৬৩ আয়াত।] সুতরাং মুসলিমদের মধ্যে যে গায়রুল্লাহকে সিজদা করে সে কাফির, তার ওপর তাওবা করা জরুরি।

سـ ٨ : هل تبديل القوانين يعتبْر كفراً مُخرجاً من الْملة ؟

প্রশ্ন-৮: তাহলে (ইসলামী) আইনের পরিবর্তন কি কুফর, যা মিল্লাত (ইসলাম) থেকে খারিজ করে দেয়?

سَماحة الشيخ ابن باز : إذا استباحه . إذا استباح حكم بقانون غير الشريعة يكون كافراً كفراً أكبر إذا استباح ذلك ، أما إذا فعل ذلك لأسباب خاصة عاصياً لله من أجل الرشوة ، أو من أجل إرضاء فلان أو فلان ، ويعلم أن مُحرم يكون كفراً دون كفر .

أما إذا فعله مستحلاً له يكون كفراً أكبر . كما قال ابن عباس في قوله تعالى : ﴿ ومن لَم يَحكم بِما أنزل الله فأولئك هم الكافرون .... الظالِمون .... الفاسقون ﴾ . قال : ليس كمن كفر بالله ، ولكن كفر دون كفر .

أي إذا استحل الْحكم بقانون ، أو استحل الْحكم بكذا ، أو كذا غيْر الشريعة يكون كافراً ، أما إذا فعله لرشوة أو لإتاوة بينه وبين الْمحكوم عليه ، أو لأجل إرضاء بعض الشعب ، أو ما اشبه ذلك فهذا يكون كفراً دون كفر

শায়খ ইবনু বায (রহ) : যখন সে এটাকে বৈধ মনে করে। যদি সে ভিন্ন বিধান দ্বারা হুকুম জারি করাকে জায়েয মনে করে, তবে সে কাফির হবে। এটা কুফরে আকবার- যখন সে তা বৈধ মনে করে। আর যখন সে সুনির্দিষ্ট কারণে তা করে, তাহলে সেটা আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ হবে। যেমন ঘুষের কারণে, বা ব্যক্তি বিশেষকে খুশি করার কারণে- কিন্তু সে জানে যে এটা হারাম। তখন এটা হবে كفر دون كفر (ছোট কুফর)।

আর যদি সে এটা হালাল গণ্য করে, তবে সেটা হবে কুফরে আকবার (বড় কুফর)। যেভাবে ইবনু আব্বাস (রা) আল্লাহ তাআলা’র বাণী : ‘‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম জারি করে না তারা কাফির, .... যালিম, ... ফাসিক্ব’’-(সূরা মায়িদা : ৪৪-৪৭ আয়াত) সম্পর্কে বলেছেন : এটি আল্লাহর প্রতি কুফর করার মত নয়, বরং كفر دون كفر (ছোট কুফর)।

অর্থাৎ যখন সে ঘোষণা করে তার জারিকৃত বিধানটি হালাল, কিংবা অনুরূপ অন্যান্য বিধানও (হালাল), কিংবা শরীআত বিরোধী বিধান (হালাল হিসাবে) জারি করে- তবে সে কাফির। আর যখন সে ঘুষের জন্য করে, বা তার ও বিচারপ্রার্থীর মধ্যকার শত্রুতার জন্য করে, কোন গোষ্ঠীর সন্তুষ্টির জন্য করে, বা এধরনের আরো কোন কারণে- তবে সেক্ষেত্রে কুফরটি হবে كفر دون كفر (ছোট কুফর)।

سـ ٩ : هل هناك فرق بين التبديل وبين الْحكم في قضية واحدة؟ ! يعني في فرق في هذا الْحكم بين التبديل ككل والْحكم في قضية واحدة؟ التبديل يا شيخ؟

প্রশ্ন-৯: হুকুমের তাবদীল (পরিবর্তন) ও কোন একটি বিচারের (বিকৃত) হুকুম জারির মধ্যে কি পার্থক্য আছে? অর্থাৎ কোন একটি (মূল) হুকুমের পরিবর্তন [.যেমন - হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করা। (অনুবাদক)] কি কোন একটি বিচারের হুকুম পরিবর্তনের মত- হে শায়খ?

سَماحة الشيخ ابن باز : إذا كان لَم يقصد بذلك الاستحلال ، وإنّما حكم بذلك لأجل أسباب أخرى يكون كفراً دون كفر ، أما إذا قال : لا حرج بالْحكم بغير ما أنزل الله ، وإن قال الشريعة أفضل ، لكن إذا قال ما في حرج مباح يكفّر بذلك كفراً أكبر سواءٌ قال إن الشريعة أفضل ، أو مساوية ، أو رأى أفضل من الشريعة كله كفر .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : যখন তার আন্তরিক ইচ্ছা এটা নয় যে, সে এটাকে বিচারের দ্বারা হালাল করছে, বরং হুকুমটি জারির পিছনে অন্য কোন (পূর্বোক্ত) কারণ আছে, তাহলে তখন এটি হবে كفر دون كفر (ছোট কুফর)। তবে যখন সে বলে : বিচারের ক্ষেত্রে আল্লাহর নাযিলকৃত হুকুম বিরোধী বিধান জারি করলে কোন ক্ষতি নেই। কিংবা যদি সে বলে : শরীআতই উত্তম; কিন্তু সে যখন এটাও বলে : এতে কোন ক্ষতি নেই, মুবাহ (বৈধ) -তাহলে তা এমন কুফর যা কুফরে আকবার (বড় কুফর এর অন্তর্ভুক্ত)। অথচ সে বলে : শরীআতই উত্তম, কিংবা শরীআতেরই মত, কিংবা শরীআতের চেয়ে এটিই উত্তম- এর সবগুলো পর্যায়ই (বড়) কুফর।

سـ ١٠ : يعني هذا الْحكم يشمل التبديل وعدم التبديل يعني يشمل كل الأنواع ؟

প্রশ্ন-১০: অর্থাৎ (পূর্বে ব্যাখ্যাকৃত) এই হুকুম সামগ্রিকভাবে (শরীআতের) পরিবর্তন (তাবদীল) ও অপরিবর্তন (আদম তাবদীল) সম্পর্কিত, তথা এটা কি সমগ্র বিষয়টিকে ঘিরেই বর্ণিত হয়েছে?

سَماحة الشيخ ابن باز : جميع الصور في جَميع الصور . لكن يُجب أن يَمنع ، ويُجب منع ذلك ، وهو كفر دون كفر ولو قال ما قصدت ولو قال ما استحليته بينِي وبين فلان عداوة أو رشوة يُجب أن يّمنع ، فلا يَجوز لأحد أن يُحكم بغيْر ما أنزل الله مطلقاً ولو كان بينه وبين الْمحكوم عليه عداوة أو لأسباب أخرى يُجب الْمنع من ذلك يُجب على ولِي أمره أن يّمنعه من ذلك ، وأن يّحكم بشرع الله .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : এটা সামগ্রিক শর্ত, যা সমভাবে সমস্ত শর্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে অবশ্যই তাকে নিষেধ করা ওয়াজিব, এ ব্যাপারে তাকে বাধা দেয়াও ওয়াজিব- আর এটা كفر دون كفر (ছোট কুফর)। আর যদি সে বলে : ‘‘আমার এটা করার ইচ্ছা ছিল না’’, কিংবা বলে : ‘‘আমি এটিকে হালাল করিনি আমার ও অমুকের মাঝে শত্রুতা ছিল, কিংবা এতে ঘুষ ছিল।’’ তবে অবশ্যই তার জন্য এর প্রতিকার করা ওয়াজিব। সর্বোপরি কারো জন্যই আল্লাহর নাযিলকৃত হুকুমের বিরোধী বিধান জারি করা কোন ভাবেই জায়েয নয়। আর যদি সে এমন কারো বিচার করে যার সাথে তার শত্রুতা আছে, কিংবা অন্য কোন কারণ রয়েছে- সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিচারকার্যটি স্থগিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে উলূল আমরদের (দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের) প্রতি দায়িত্ব হল, এটা নির্মূল করা এবং শরীআত অনুযায়ী হুকুম জারি করা।

سـ ١١ : ما تقول فيمن يصف أهل السنة الذين لا يكفرون بالذنب بأنّهم مرجئة ؟

প্রশ্ন-১১: আপনি তার ব্যাপারে কি বলবেন, যারা আহলে সুন্নাতে অবস্থান করেন, কিন্তু পাপের কারণে কাউকে কাফির বলেন না, তারা কি মুরজিয়া নন?

سَماحة الشيخ ابن باز : هذا جهل مركب ويُجب أن يعلَّمَ ، هذا جاهل من الْجهلة ويجب أن يعلم ، الْمرجئة الذين يرون الأعمال أنّها تدخل في الإيْمان يرون من لّم يصل ولّم يزك ولّم يصم هذا من الإيْمان هذه هي الْمرجئة . أما أهل السنة والْجماعة يقولون : أن من ترك الزكاة عاص ناقص الإيْمان ، ومن لَم يصم ناقص الإيْمان ، ومن لّم يُحج وهو مستطيع ناقص الإيْمان ، ومن زنى ناقص الإيْمان ، ومن سرق ناقص الإيْمان ، لكن لا يكفر كما تقول الْخوارج ولا يكون مُخلداً في النار كما تقول الْمعتزلة لا . يكون معرض للوعيد وعلى خطر كبيْر ، ومنهم من يدخل النار بذنوبه ، ثُم يشفع فيه الشفعاء ولا يُخلد في النار إلا الكفرة الذين أشركوا بالله واستحلوا مُحارم الله أو سخطوا ما أوجب الله هم الْمخلدون في النار

أما الزانِي لا يَخلد لو مات على الزنا . لا يَخلد ولو دخل النار . وكذلك شارب الخمر لا يَخلد ، والعاق لوالديه إذا دخل النار لا يَخلد . آكل الربا وإن كان متوعداً دخول النار يبقى فيها ما شاء الله ثُم يَخرج بعد التطهيْر إلَى الْجنة كما جاءت به الأحاديث عن رسول الله أحاديث الشفاعة .

ومن عنده شك يراجع أحاديث الآخرة ليعرف ما جاءت به السنة أن النبي يشفع عدة شفاعات للعصاة ، ويُخرجهم الله من النار بشفاعته . ويشفع الْمؤمنون والأفراد والْملائكة والْمؤمنون ثُم بعد هذا يبقى بقية في النار من العصاة يُخرجهم الله من النار بغيْر شفاعة بعدما احترقوا ، ثم يلقون في نَهر الْحياة فينبتون كما تنبت الْحبة في حَميل السيل ، ثُم بعد هذا يأذن لَهم الله في دخول الْجنة ، ولا يبقى في النار إلا الكفرة هم الْمخلدون فيها أبد الآباد أما العصاة فلا يَخلدون . هذا قول أهل السنة ليس قول الْمرجئة .

الْمصيبة في الْجهل

ما يبلغ الأعداء من جاهل * ما يبلغ الْجاهل من نفسه

শায়খ ইবনু বায (রহ) : এখানে অজ্ঞতার মিশ্রণ রয়েছে, তার জন্য ইলম অর্জন করা ওয়াজিব। সে অজ্ঞতার অন্ধকারে রয়েছে, এজন্যে তার জন্য ইলম অর্জন করা ওয়াজিব। মুরজিয়া হল তারা, যারা আমল যা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়- (যেমন) সালাত আদায় না করা, যাকাত আদায় না করা, সিয়াম পালন না করা প্রভৃতি সংঘটিত না হওয়ার পরও ঈমান (পূর্ণাঙ্গ) রয়েছে বলে দাবি করে, এরাই মুরজিয়া। পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বক্তব্য হল : যদি কেউ যাকাত আদায় না করে তবে তা পাপ, ঈমানের ত্রুটি। যদি সিয়াম পালন না করে, তবে সেটাও ঈমানের ত্রুটি। যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ পালন না করে, তবে সেটাও ঈমানের ত্রুটি। তেমনি যিনাকারীর ঈমান ত্রুটিযুক্ত, চোরের ঈমান ত্রুটিযুক্ত- কিন্তু এজন্য তাকে কাফির বলে না, যেভাবে খারেজীরা বলে থাকে। এ জন্যে তারা স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে না- যেভাবে মু’তাযিলারা (স্থায়ী জাহান্নামের হওয়ার কথা) বলে থাকে। কিন্তু সে অত্যন্ত ভয়াবহ আযাব ও বিপদের সম্মুখীন। তাদের অনেকে পাপের জন্যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর শাফায়াতের মাধ্যমে তাদের মুক্তি হবে। শেষাবধি কাফির যারা শিরক করেছে- তারা ছাড়া কেউই স্থায়ী ভাবে জাহান্নামে থাকবে না এবং তারাও যারা আল্লাহর নাযিলকৃত হারাম বিধানকে হালাল গণ্য করেছে। আর তারাও যারা আল্লাহর ওয়াজিবকৃত বিষয়গুলোর প্রতি ঘৃণা রাখে- তারাই স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।

যিনাকারীও চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়, যদিও সে যিনারত অবস্থায় মারা যায়। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়, যদিওবা সেখানে সে প্রবেশ করে। অনুরূপ মদপানকারীও চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। পিতামাতার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী যদিওবা জাহান্নামী, কিন্তু সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে না। সুদখোরের যদিওবা স্থায়ী জাহান্নামের ওয়াদা আছে, যেভাবে আল্লাহ চান। অতঃপর তাদেরকে পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে- যেভাবে শাফাআত সংক্রান্ত হাদীসে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন।

তাদের আখিরাতে (পাপীদের) মুক্তি পাওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি সম্পর্কে সংশয় রয়েছে। যা প্রসিদ্ধ সুন্নাত দ্বারা জানা যায়। সেটা হল, নবী (স) ব্যাপক সংখ্যক পাপীকে শাফাআত দ্বারা মুক্তি দেবেন। তাদের শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অতঃপর মু’মিনগণ ও মালাইকাগণ শাফাআত করবে। শেষে অবশিষ্ট পাপীকে জাহান্নাম থেকে আল্লাহ তাআলা মুক্তি দিবেন কারো শাফাআত ছাড়া- যাদের আগুনে দগ্ধ করা হয়েছে। তারপর তাদের ‘হায়াতের নদীতে’ ফেলা হবে। তখন তারা গাছের চারা গজানোর মত গজিয়ে উঠবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন। শেষাবধি কাফির ছাড়া কেউই চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে না। পাপীরা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে না। এটা আহলে সুন্নাতের বক্তব্য, মুরজিয়াদের নয়।

সমস্যা হল অজ্ঞতা। অজ্ঞদের থেকে শত্রুরা তা পৌঁছায় না,

বরং অজ্ঞরা নিজের থেকেই তা পৌঁছায়।

سـ ١٢ : يا شيخ الذي يقول : أن هذا من قول الْمرجئة ماذا نقول فيه ؟

প্রশ্ন-১২: হে শায়খ! যারা বলে এটি মুরজিয়াদের মত, আমরা তাদের কি বলতে পারি?

سَماحة الشيخ ابن باز : قلنا جاهل مركب لا يعرف قول أهل السنة يراجع كلام أهل السنة يراجع كلام شيخ الإسلام ابن تيمية وكلام الأشعري في الْمقالات وغيرهم من أهل السنة وفتح الْمجيد للشيخ عبد الرحمن بن حسن وغيرهم ويراجع شرح الطحاوية لابن أبي العز ويراجع كتاب التوحيد لابن خزيْمة وأشباهه ، حتى يعرف كلام أهل السنة .

فإذا كان جاهلاً مركباً لا يُحكم على الناس بِجهله نسأل الله لنا وله الْهدايةا

শায়খ ইবনু বায (রহ) : আমরা অজ্ঞদের বলব, এরূপ উক্তি আহলে সুন্নাত থেকে শুনিনি। আমরা ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ), ইমাম আশআরী (রহ)-এর ‘আল-মাক্বালাত’ প্রভৃতি আহলে সুন্নাতের ইমামদের সূত্র উল্লেখ করব। তাছাড়া শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসানের (রহ) ‘‘ফতহুল মাজীদ’’, ইবনু আবীল ‘ঈযের ‘শরহে তাহাবিয়্যাহ’, ইবনু খুযায়মাহ ও অন্যান্যদের ‘কিতাবুত তাওহীদ’ প্রভৃতির সূত্র উল্লেখ করব। ফলে তারা আহলে সুন্নাতের বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞাত হবে। সুতরাং যারা অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন আমরা সে সমস্ত মানুষের প্রতি তাদের অজ্ঞতার জন্য হুকুম জারি করব না। আল্লাহর কাছে আমরা দুআ করব, তিনি যেন তাদের হিদায়াত দেন।

سـ ١٣ : أعمال الْجوارح تعتبِر شرط كمال في الإيْمان أم شرط صحة للإيْمان؟

প্রশ্ন-১৩: আমলের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কি পূর্ণাঙ্গ ঈমানের শর্ত, নাকি সহীহ ঈমানের শর্ত?

سَماحة الشيخ ابن باز : أعمال الْجوارح منها ما هو كمال ، ومنها ما ينافي الإيْمان فالصوم يكمل الإيْمان والصدقة والزكاة من كمال الإيْمان وتركها نقص في الإيْمان وضعف في الإيْمان ومعصية ، أما الصلاة فالصواب أن تركها كفر- نسأل الله العافية - كفر أكبر ، وهكذا فالإنسان يأتِي بالأعمال الصالِحات ، فهذا من كمال الإيْمان أن يكثر من الصلاة ومن صوم التطوع ومن الصدقات . فهذا من كمال الإيْمان الذي يقوى به إيْمانه .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : আমলে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা (ঈমানের) পূর্ণতার জন্য। আর এ থেকে বিরত থাকা ঈমানের হ্রাস ঘটায়। সুতরাং সিয়াম ঈমানকে পূর্ণ করে, সাদাক্বা ও যাকাত ঈমানকে পূর্ণ করে। আর এগুলো থেকে বিরত থাকা ঈমানের ক্ষতি করে, ঈমানকে দুর্বল করে এবং এটা পাপ। পক্ষান্তরে সালাত তরককারী সহীহ মতে কাফির। এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি- যা কুফরে আকবার। এভাবে যখন মানুষ আমালে সালেহ করতে থাকে, তখন তা থেকে ঈমান পূর্ণ হয়। যেমন- বেশি করে নফল সালাত, সিয়াম ও সাদাক্বাত আদায় করা। এগুলোর দ্বারা ঈমান পূর্ণ হয় এবং এগুলো ঈমানকে শক্তিশালী করে।

سـ ١٤ : إذا كان من كلمة أو نصيحة أخيَرة ؟

প্রশ্ন-১৪: সর্বশেষ নসীহত হিসাবে কি আপনার কিছু বলার আছে?

سَماحة الشيخ ابن باز : وصيتِي للجميع التفقه في الدين ، والتدبر للقرآن . الإكثار من قراءة القرآن ، وتدبر معانيه ، والْمذاكرة فيما بينهم كما دل عليه القرآن والسنة ، والقراءة في كتب أهل السنة مثل شيخ الإسلام ابن تيمية وابن القيم ، ويقرؤون كتبهما فيها خير عظيم . كتب السلف مثل تفسير ابن جرير . وكتاب التوحيد لابن خزيْمة وشرح السنة للبغوي ومثل كتاب شرح الطحاوية لابن أبْي العز وأشباهه والْحموية ، التدمرية ، وكلها كتب عظيمة مفيدة

نسأل الله للجميع التوفيق والْهداية وصلاح النية والعمل .

শায়খ ইবনু বায (রহ) : সবার প্রতি আমার নসিহত, দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করুন এবং কুরআনের মর্ম অনুধাবন করুন। বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত করুন এবং অর্থ হৃদয়ঙ্গম করুন। পরস্পরকে উপদেশ দিতে থাকুন- কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উৎসারিত বিষয়ে। আহলে সুন্নাতের কিতাব পড়তে থাকুন, যেমন- ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ), ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম (রহ) প্রমুখের কিতাবগুলোই সর্বোৎকৃষ্ট। সালাফদের তাফসীর যেমন- তাফসীরে ইবনু জারীর, ইমাম ইবনু খুযায়মাহ’র ‘কিতাবুত তাওহীদ’, ইমাম বগভীর ‘শরহে সুন্নাহ’, ইবনু আবীল ‘ঈযের ‘শরহে তাহাবিয়্যাহ’ প্রভৃতি খুবই উপকারী পুস্তক।

আল্লাহ তাআলা’র কাছে সবার জন্য তাওফিক্ব ও হিদায়াত এবং সহীহ নিয়্যাত ও আমলের জন্য দুআ চাইছি।

পরবর্তী দু’টি প্রশ্নোত্তর শায়খ ইবনু বাযের فتاوى نور على الدرب এর ৩৬-৪০ পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত।

سـ ١٥ : تسأل الأخت وتقول : هل الإيْمان بالقلب يكفي لأن يكون الإنسان مسلما بعيدا عن الصلاة والصوم والزكاة؟

প্রশ্ন-১৫: একজন বোনের প্রশ্ন, সে জিজ্ঞাসা করেছিল : ক্বলবের ঈমানই কি একজন মানুষের মুসলিম হওয়ার জন্য যথেষ্ট, অথচ সে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় থেকে দূরে থাকে?

سَماحة الشيخ ابن باز : الإيْمان بالقلب لا يكفي عن الصلاة وغيْرها، بل يُجب أن يؤمن بقلبه وأن الله واحد لا شريك له، وأنه ربه وخالقه، ويُجب أن يُخصه بالعبادة سبحانه وتعالَى، ويؤمن بالرسول مُحمد ، وأنه رسول الله حقا إلى جَميع الثقلين، كل هذا لا بد منه، فهذا أصل الدين وأساسه كما يُجب على الْمكلف أن يؤمن بكل ما أخبَر الله به ورسوله فقد أدى ما عليه، وإن لّم يصل كفر، لأن ترك الصلاة كفر . أما الزكاة والصيام والْحج وبقية الأمور الواجبة إذا اعتقدها وأنّها واجبة، ولكن تساهل فلا يكفر بذلك، بل يكون عاصيا، ويكون إيْمانه ضعيفا ناقصا؛ لأن الإيْمان يزيد وينقص، يزيد الإيْمان بالطاعات والأعمال الصالِحات، وينقص بالْمعاصي عند أهل السنة والْجماعة . أما الصلاة وحدها خاصة فإن تركها كفر عند كثيْر من أهل العلم وإن لّم يِجحد وجوبِها، وهو أصح قولِي العلماء، بِخلاف بقية أمور العبادات، من الزكاة والصوم والْحج ونَحو ذلك، فإن تركها ليس بكفر أكبَر على الصحيح، ولكن نقص في الإيْمان، وضعف في الإيْمان، وكبيِرة عظيمة من كبائر الذنوب، فترك الزكاة كبيِرة عظيمة، وترك الصيام كبيِرة عظيمة، وترك الْحج مع الاستطاعة كبيِرة عظيمة، ولكن لا يكون كفرا أكبَر إذا كان مؤمنا بأن الزكاة حق، وأن الصيام حق، وأن الْحج لِمن استطاع إليه سبيلا حق، ما كذب بذلك ولا أنكر وجوب ذلك، ولكنه تساهل في الفعل، فلا يكون كافرا بذلك على الصحيح . أما الصلاة فإنه إذا تركها يكفر في أصح قولِي العلماء كفرا أكبَر والعياذ بالله وإن لّم يِجحد وجوبِها كما تقدم؛ لقول النبي ﷺ : « بين الرجل وبين الكفر والشرك ترك الصلاة » أخرجه مسلم في صحيحه ، وقوله ﷺ : « العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر » أخرجه الإمام أحْمد وأهل السنن الأربعة بإسناد صحيح ، والْمرأة مثل الرجل في ذلك . نسأل الله العافية والسلامة .

শায়খ ইবনু বায (রহ): ক্বলবের ঈমান যথেষ্ট নয় সালাত ও অনুরূপ অন্যান্য আমল ছাড়া। বরং ওয়াজিব হল, আন্তরিকভাবে একক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। নিশ্চয় তিনি তার রব ও সৃষ্টিকর্তা। তার জন্য এটাও ওয়াজিব যে, খাসভাবে আল্লাহ তাআলা’রই ইবাদত করবে। আর সে রসূলের (স) প্রতি ঈমান আনবে। নিশ্চয় তিনি সত্য রসূল হিসাবে উভয় জাতির (জিন ও মানুষের) কাছে এসেছিলেন। এর প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই দ্বীনের মূলনীতি, যা মুকাল্লিফের (দ্বীনের অনুসারীদের) উপর বাধ্যতামূলক। তাদেরকে আল্লাহ ও রসূল (স) এর পক্ষ থেকে আগত খবর যেমন- জান্নাত, জাহান্নাম, পুলসিরাত, মিযান প্রভৃতি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান রাখতে হবে। সুতরাং এটা জরুরি যে, সাক্ষ্য দেবে ‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল।’’ তেমনিভাবে সালাত ও অন্যান্য আমলগুলোও জরুরি। সুতরাং যখন সে সালাত আদায় করে, তখন সে তার (ঈমানের) দাবি পূর্ণ করে। আর যদি সে সালাত না পড়ে তবে সে কাফির। যেহেতু সালাত তরক করা কুফর।

তাছাড়া যাকাত, সিয়াম, হজ্জ ও অন্যান্য ওয়াজিব আমলও তাকে পালন করতে হবে। যদি সে এগুলোর ব্যাপারে আক্বীদা রাখে যে তা ওয়াজিব, কিন্তু সে অলসতা ও অবহেলা করে- তাহলে সে কাফির নয়, বরং অবাধ্য (পাপাচারী)। এক্ষেত্রে তার ঈমান দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত। কেননা ঈমানের হ্রাস ও বৃদ্ধি হয়। ইতাআত (&আনুগত্য) ও আমলে সালেহ দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে অবাধ্যতা দ্বারা ঈমান হ্রাস পায়- আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিতে।

কেবল সালাত তরক করায় এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম (খাস), যা তরক করা অধিকাংশ আলেমের নিকট কুফর। যদিও-বা সে এর ওয়াজিব হওয়াকে অস্বীকার করে না। এটাই আলেমদের সবচেয়ে সহীহ উক্তি। অবশিষ্টরা বলেন, সালাত তরক করা অন্যান্য ইবাদত যেমন- যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ তরক করার ন্যায়। কেননা সহীহ মতে এগুলো কেবল তরক করাটাই কুফরে আকবার নয়। বরং তা ঈমানের ত্রুটি, ঈমানের দুর্বলতা ও কবীরা গোনাহগুলোর সর্বোচ্চ গুনাহ। এ কারণে যাকাত তরক করা সর্বোচ্চ কবীরা গোনাহ। সিয়াম তরক করাও সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহ। তেমনি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ আদায় না করা সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহ। কিন্তু তাতে কুফরে আকবার সংঘটিত হয় না, যতক্ষণ একজন মু‘মিন যাকাতকে হক্ব মানে, সিয়ামকে হক্ব মানে, সামর্থ্যবানের জন্য হজ্জ আদায় করাকে হক্ব মানে। সে এগুলোকে মিথ্যা বলে না এবং এর ওয়াজিব হওয়াকে অস্বীকারও করে না। কিন্তু সে আমলের দিকে থেকে অলসতা করে। এ কারণে সহীহ মতে সে কাফির নয়।

তবে সালাত তরককারীর ব্যাপারে আলেমদের সহীহ উক্তি হল, সে কাফির, যা কুফরে আকবার। এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই, যদিও সে সালাত ওয়াজিব হওয়াকে অস্বীকার করে না- যেভাবে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। কেননা নবী (স) বলেছেন : ‘‘(মু‘মিন) ব্যক্তি এবং কুফর ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত তরক করা।’’ (সহীহ মুসলিম) তাছাড়া নবী (স) বলেছেন : ‘‘তাদের ও আমাদের মধ্যে চুক্তি হল সালাত। সুতরাং যে সালাত তরক করে সে কুফরী করে।’’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ) এক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের মতই। আল্লাহ কাছে ক্ষমা ও শান্তি চাচ্ছি। [.যারা এর বিপরীতে সালাতকে ওয়াজিব/ফরয হিসাবে স্বীকৃতিদাতার সালাত তরক করাকে আমলী কুফর বলেন তাদের দলিল নিম্নরূপ : ‘উবাদা ইবনু সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللَّهُ عَلَى الْعِبَادِ فَمَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يَأْتِ بِهِنَّ فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ ‘‘আমি রসূলুল্লাহ (স) কে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। কাজেই যে তা সংরক্ষণ করবে এবং তার হক্বের কোন অংশ কম করবে না, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর ব্যাপারে আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা করবে না, তার সাথে আল্লাহর কোন চুক্তি নেই। চাইলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন নতুবা তিনি চাইলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’ [মুয়াত্তা মালিক ২৬৭/১৪, আবু দাউদ ১৪২০, নাসাঈ ৪৬১, সহীহ ইবনু হিব্বান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ইফা) ১/২৬৮ পৃ : হা/২৫; আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (সহীহ আবূ দাউদ হা/১২৫৮)। আলবানী (রহ) বলেন : وقال أيضا : " من مات وهو يعلم أن لا إله إلا الله دخل الْجنة " إلَى غَيْر ذلك ولِهذا لَم يزل الْمسلمون يرثون تارك الصلاة ويورثونه ولو كان كافرا لَم يغفر له ولَم يرث ولَم يورث ‘‘অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে : যে ব্যক্তি এমন অবস্থাতে মারা যায় যে সে ‘ইলম রাখে- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [সহীহ মুসলিম ৪৩ (৪৩/২৬), মিশকাত ৩৭] অনুরূপ আরো বর্ণনা রয়েছে। এপ্রেক্ষিতে যদি মুসলিম (কালেমার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে) পদস্খলিত না হয়ে সালাত তরককারী হলে উপরোক্ত দাবির মধ্যে গণ্য হবে, আর যদি কাফির হয়, তবে তার জন্য ক্ষমা নেই, আর তার জন্য ওয়াদা নেই এবং সে উক্ত দাবির মধ্যেও গণ্য নয়।’’ [আলবানী, হুকমু তারিকুস সালাত ১৭-১৮ পৃ.] এই অনুবাদকের নিকট শেষোক্ত দলিলগুলো আখিরাতের আল্লাহর সিদ্ধান্তের সাথে সম্পৃক্ত। পক্ষান্তরে শায়েখ ইবনু বায (রহ) -এর উল্লিখিত দলিলগুলো দুনিয়াতে মুসলিমের পরিচয় সম্পর্কিত। অর্থাৎ উভয় মতবিরোধের পক্ষের দলিলগুলো নিজ নিজ স্থানে প্রযোজ্য। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।]

سـ ١٦ : وتقول السائلة : إن هناك شيئا يتردد بين أوساط الناس حيث يقولون : إن الصلاة يشترط لَها الإسلام، والْحج يشترط له الإسلام، فالإنسان قد يكون مسلما ولو لَم يأت ببقية أركان الإسلام . فنريد تَجلية هذا الْموضوع . بارك الله فيكم؟

প্রশ্ন-১৬: প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করল : এ ব্যাপারে লোকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে যে যখন তারা বলে : সালাত ইসলামের ক্ষেত্রে শর্ত, হজ্জ ইসলামের জন্য শর্ত- তাহলেই একজন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে। যদিও-বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ইসলামের রোকনগুলো পালিত না হয়। এ কারণে বিষয়টি আরো বেশি সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন।

سَماحة الشيخ ابن باز : نعم . هو مسلم بالشهادتين، فمتى أقر بالشهادتين ووحد الله عز وجل وصدق رسول الله مُحمدا دخل في الإسلام، ثم ينظر فإن صلى تُم إسلامه، وإن لّم يصل صار مرتدا، وهكذا لو أنكر الصلاة بعد ذلك صار مرتدا، أو أنكر صيام شهر رمضان صار مرتدا، أو قال الزكاة غيْر واجبة صار مرتدا، أو قال الْحج مع الاستطاعة غير واجب، صار مرتدا، أو استهزأ بالدين أو سب الله أو سب الرسول صار مرتدا .

فهذا الأمر ينبغي أن يكون واضحا، فإذا دخل في الإسلام بالشهادتين حكم له بالإسلام، ثُم ينظر بعد ذلك في بقية الأمور فإن استقام على الْحق تم إسلامه، وإذا وجد منه ما ينقض الإسلام؛ من سب الدين، أو من تكذيب الرسول ، أو من جحد لَما أوجبه الله من صلاة وصوم، أو جحد لَما حرم الله كما لو قال : الزنا حلال، فإنه يرتد عن الإسلام بِهذا، ولو صلى وصام، ولو قال أشهد أن لا إله إلا الله، وأن مُحمدا رسول الله .

فلو قال : إن الزنا حلال، وهو يعلم الأدلة وقد أقيمت عليه الْحجة، يكون كافرا بالله كفرا أكبَر والعياذ بالله، أو قال : الْخمر حلال، وقد بينت له الأدلة ووضحت له الأدلة ثُم أصر يقول : إن الْخمر حلال، يكون ذلك كفرا أكبَر، وردة عن الإسلام والعياذ بالله، أو قال مثلا : إن العقوق حلال، يكون ردة عن الإسلام والعياذ بالله، أو قال إن شهادة الزور حلال، يكون هذا ردة عن الإسلام بعد أن تبين له الأدلة الشرعية .

كذلك إذا قال : الصلاة غيْر واجبة، أو الزكاة غيْر واجبة، أو صيام رمضان غيْر واجب، أو الْحج مع الاستطاعة غيْر واجب، كل هذه نواقض من نواقض الإسلام يكون بها كافرا والعياذ بالله .

إنّما الخلاف إذا قال : إن الصلاة واجبة، ولكن أنا أتساهل ولا أصلي، فجمهور الفقهاء يقولون : لا يكفر ويكون عاصيا يستتاب فإن تاب وإلا قتل حدا .

وذهب آخرون من أهل العلم وهو الْمنقول عن الصحابة رضي الله عنهم أنه يكفر بذلك كفرا أكبر، فيستتاب فإن تاب وإلا قتل كافرا؛ لقول الله جل وعلا : ﴿ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ﴾ [ التوبة : 5] ، فدل ذلك على أن الذي لا يقيم الصلاة لا يَخلى سبيله ، بل يستتاب فإن تاب وإلا قتل، وقال سبحانه : ﴿ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ﴾ [ التوبة : ١١ ] ، فدل ذلك على أن الذي لا يقيم الصلاة ولا يصلي ليس بأخ في الدين .

শায়খ ইবনু বায (রহ): জি হ্যাঁ, দু’টি শাহাদাতের মাধ্যমে মুসলিম হয়। অর্থাৎ মনে প্রাণে এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তাআলা একক এবং মুহাম্মাদ (স) আল্লাহর রসূল- তাহলে সে ইসলামে প্রবেশ করল। অতঃপর যদি তাকে সালাত আদায় করতে দেখা যায় তবে তার ইসলাম পূর্ণ হল। আর যদি সালাত আদায় করতে দেখা না যায় তবে সে মুরতাদ। অনুরূপ যদি সে সালাতকে অস্বীকার করে তবেও মুরতাদ হয়ে যায়। কিংবা সিয়ামকে অস্বীকার করলে মুরতাদ হয়। অথবা বলে যাকাত প্রভৃতি ওয়াজিব নয়, তবেও সে মুরতাদ। কিংবা বলে সামর্থ্য হলেও হজ্জ করা ওয়াজিব নয়, তবে সে মুরতাদ। কিংবা দ্বীন নিয়ে তামাশা করে, কিংবা রসূলকে গালি দেয়- তবেও সে মুরতাদ।

উক্ত সিদ্ধান্তের কারণ হল, এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট। সুতরাং যখন কেউ ইসলামে দু’টি শাহাদাত দ্বারা প্রবেশ করে তার উপর ইসলামী বিধি-বিধান আবশ্যক হয়। অতঃপর যদি তাকে অন্যান্য নির্দেশগুলোর উপর দেখা যায় এবং সে হক্বভাবে তাতে দৃঢ় হয়- তবে তার ইসলাম পূর্ণ হল। অতঃপর যদি তার মধ্যে ইসলামের কোন ত্রুটি দেখা যায়। যেমন : দ্বীন নিয়ে কটূক্তি করা, রসূলকে মিথ্যারোপ করা, আল্লাহর ওয়াজিবকৃত বিষয়গুলো যেমন- সালাত, সিয়ামের বিরোধিতা করা, কিংবা আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ের বিরোধিতা করা যেমন- যিনাকে হালাল গণ্য করা; তবে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কার হয়। যদিওবা সে সালাত, সিয়াম পালন করে এবং বলে : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই, এবং মুহাম্মাদ (স) তাঁর রসূল।

অনুরূপ যদি সে বলে : যিনা হালাল, অথচ সে এর দলিল সম্পর্কে জ্ঞাত- তখন প্রমাণ তার জন্য কার্যকরী হবে। সে আল্লাহর প্রতি কুফরী করেছে, যা কুফরে আকবার- সে আল্লাহর থেকে বহিষ্কৃত। কিংবা যদি সে বলে, মদ পান করা হালাল। অথচ তার কাছে দলীল-প্রমাণ পেশ করা হয় এবং সেটা তার কাছে সুস্পষ্টও হয়, তারপরেও সে বলে : মদ হালাল। তখন এটা কুফরে আকবার। ফলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় এবং আল্লাহর থেকে বহিষ্কৃত হয়। কিংবা সে বলে : পিতামাতার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ হালাল। সেক্ষেত্রে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় এবং আল্লাহর থেকে বহিষ্কৃত হয়। কিংবা বলে : মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হালাল। সেও ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় যখন তার কাছে ইসলামী শরীআতের দলিলগুলো বর্ণনা করা হয়।

অনুরূপ যদি সে বলে : সালাত ওয়াজিব নয়, বা যাকাত ওয়াজিব নয়, রমাযানের সিয়াম ওয়াজিব নয়, সামর্থ্য হওয়ার পরেও হজ্জ ওয়াজিব নয়- এর সবগুলো ইসলাম থেকে বিচ্যুতির কারণগুলোর অন্যতম। ফলে সে কাফির হয় এবং আল্লাহর থেকে বহিষ্কৃত হয়।

তবে ব্যতিক্রম হল, যখন সে বলে : সালাত ওয়াজিব, আমার অলসতা আছে, আমি সালাত আদায় করি না। জমহুর ফক্বীহদের মতে : সে কাফির নয়, সে অবাধ্য ব্যক্তি, তাকে তাওবা করতে হবে। যদি সে তাওবা না করে তবে তাকে হত্যা করতে হবে।

পূর্বোক্ত বিষয়ে আহলে ইলমদের থেকে যাকিছু বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো সাহাবীদের (রা) থেকে এসেছে। তারা এ ব্যাপারটি কুফর গণ্য করতেন, যা কুফরে আকবার। সুতরাং সে তাওবা করবে, যদি তাওবা না করে তবে তাকে হত্যা করতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘‘যদি তারা তাওবা করে, সালাত ক্বায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে- তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও।’’ (সূরা তাওবা- ৫ আয়াত) এ থেকে দলিল পাওয়া গেল, যদি সালাত আদায় না করে তবে তাদের পথ রোধ করতে হবে। বরং তাদের তাওবা করতে হবে। যদি তাওবা না করে তবে হত্যা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘‘যদি তাওবা করে, সালাত ক্বায়েম করে, যাকাত আদায় করে- তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’’ (সূরা তাওবা- ১১ আয়াত) এ থেকে দলিল পাওয়া গেল, যারা সালাত আদায় করে না তারা দ্বীনি ভাই নয়।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন