hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

কয়েকটি উপমহাদেশীয় প্রসিদ্ধ তাফসীর
এ পর্যায়ে আমরা এখন উপমহাদেশের কয়েকটি প্রসিদ্ধ তাফসীর থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি।

৬.তাফসীরে মাযহারী : কাযী মুহাম্মাদ সানাউল্লাহ পানিপথী (রহ) তাঁর ‘‘তাফসীরে মাযহারী’’-তে সূরা মায়িদার ৪৪ নং আয়াতের শেষাংশ فاولئك هم الْكافرون এর তাফসীরে লিখেছেন : ‘‘যদি সে আল্লাহর বিধান তুচ্ছ জ্ঞান করে অন্যরূপ বিধান দেয়। কেউ বলেছেন, এখানে কাফির হওয়ার অর্থ ফাসিক্ব হওয়া। কুফরের অর্থ সত্য গোপন করা হতে পারে। ইবনু আব্বাস (রা) ও তাউস (রহ) বলেন, এটা এমন কুফরী কাজ নয়, যার দ্বারা মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যেমন খারিজ হয়ে যায় আল্লাহ ও পরকালকে অস্বীকার করলে, বরং এরূপ করলে সে সত্যকেই গোপন করবে।’’ [.তাফসীরে মাযহারী (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন,১৪০৫/১৯৮৮) ৩/৭০০-০১ পৃ.।] অতঃপর তিনি (রহ) فاولئك هم الظالِمون -এর তাফসীরে লিখেছেন : ‘‘আল্লাহর বিধান কার্যকরী না করার কারণে।’’ [.তাফসীরে মাযহারী ৩/৭০৭ পৃ.।] অতঃপর তিনি (রহ) فاولئك هم الفاسقون -এর তাফসীরে লিখেছেন : ‘‘এখানে ফাসিকুন এর দু’ রকম অর্থ হতে পারে-

ক.আল্লাহর বিধানের আনুগত্য থেকে তারা খারিজ;

খ.আল্লাহর বিধানকে তুচ্ছ জানার কারণে ঈমান থেকে খারিজ। [.তাফসীরে মাযহারী ৩/৭০৯ পৃ.।]

৭.তাফহীমুল কুরআন : সাইয়েদ আবূ আ‘লা মওদূদী (রহ) তাঁর ‘‘তাফহীমুল কুরআন’’-এ আলোচ্য আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে লিখেছেন :

‘‘যারা আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ এখানে তিনটি বিধান দিয়েছেন।

ক) তারা কাফের। খ) তারা যালেম। গ) তারা ফাসেক্ব।

এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুম ও তাঁর নাযিল করা আইন ত্যাগ করে নিজের বা অন্য মানুষের মনগড়া আইনের ভিত্তিতে ফায়সালা করে সে আসলে বড় ধরনের অপরাধ করে। প্রথমত তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল, কাজেই এটি কুফরী। দ্বিতীয়ত, তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ, আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল। তৃতীয়ত, বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখনই সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল তখনই সে আসলে বন্দেগী ও আনুগত্যের গণ্ডীর বাইরে পা রাখল। [.সাইয়েদ আবূল আ‘লা মওদূদী (রহ) ইবাদত ও ইতাআতকে একই দৃষ্টিতে দেখেছেন। এর ব্যাখ্যা সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ) লিখিত ‘ইবাদত ও ইতাআত’ অনুচ্ছেদে আসবে ইনঁশাআল্লাহ।] আর এটি অবাধ্যতা বা ফাসেক্বী। এ কুফরী, যুলুম ও ফাসেক্বী তার নিজের ধরন ও প্রকৃতির দিকে দিয়ে অনিবার্যভাবেই পুরোপুরি আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। যেখানে আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে সেখানে এ তিনটি বিষয় থাকবে না, এটা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। তবে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার যেমন পর্যায়ভেদ আছে তেমনি এ তিনটি বিষয়েরও পর্যায়ভেদ আছে। যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমকে ভুল এবং নিজের বা অন্য কোন মানুষের হুকুমকে সঠিক মনে করে আল্লাহর হুকুম বিরোধী ফায়সালা করে সে পুরোপুরি কাফির, যালেম ও ফাসেক্ব। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হুকুমকে সত্য বলে বিশ্বাস করে কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধে ফায়সালা করে সে ইসলামী মিল্লাত বহির্ভুত না হলেও নিজের ঈমানকে কুফুরী, যুলুম ও ফাসেক্বীর সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সমস্ত ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সে সকল ব্যাপারেই কাফির, ফাসেক্ব ও যালেম। আর যে ব্যক্তি কিছু ব্যাপারে অনুগত এবং কিছু ব্যাপারে অবাধ্য তার জীবনে ঈমান ও ইসলাম এবং কুফরী, যুলুম ও ফাসেক্বীর মিশ্রণ ঠিক তেমনি হারে অবস্থান করছে যেহারে সে আনুগত্য ও অবাধ্যতাকে এক সাথে মিশিয়ে রেখেছে। কোন কোন তাফসীরকার এ আয়াতগুলোকে আহলে কিতাবদের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত বলে গণ্য করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আল্লাহর কালামের শব্দের মধ্যে এ ধরনের ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই। হুযাইফা (রা) -এর বক্তব্যই এ ধরনের ব্যাখ্যার সঠিক ও সর্বোত্তম জবাব। তাঁকে একজন বলেছিল, এ আয়াত তিনটি তো বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। সে বুঝাতে চাচ্ছিল যে, ইহুদীদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিল করা হুকুমের বিরুদ্ধে ফায়সালা করে সে-ই কাফির, যালেম ও ফাসেক্ব। একথা শুনে হুযাইফা (রা) বলে ওঠেন :

نعم الإخوة لكم بنو إسرائيل، إن كانت لَهم كل مُرَّة، ولكم كل حلوة ! كلا والله، لتسلكن طريقَهم قِدَر الشراك

‘‘এ বনী ইসরাঈল গোষ্ঠী তোমাদের কেমন চমৎকার ভাই, তিতোগুলো সব তাদের জন্য আর মিঠাগুলো সব তোমাদের জন্য। কখনো নয়, আল্লাহর ক্বসম তাদেরই পথে তোমরা কদম মিলিয়ে চলবে।’’ [.হুযায়ফা (রা) -এর উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করে অনেক খারেজী বলেন যে : যেভাবে বনী ইসরাঈলের জন্য আয়াতটি সরাসরি তথা চূড়ান্ত কুফর, সেটা ‘দুনা কুফর’ নয়। সেভাবে মুসলিমদের জন্যও আয়াতটি সরাসরি বা চূড়ান্ত কুফর, ‘দুনা কুফর’ নয়। অথচ আমরা তাফসীরকারকদের কাছ থেকে জেনেছি : যখন বনী ইসরাঈলের মতো কিতাব বিকৃতি, পরিবর্তন করা হবে এবং কুরআন ও মুহাম্মাদ (স)-এর নবুওয়াত অস্বীকার করা হবে, তখন উক্ত কুফর সরাসরি বা চূড়ান্ত কুফর হিসেবে প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে যখন কুরআন, মুহাম্মাদ (স)-এর নবুওয়াতকে মেনে নেয়, কুরআন-সুন্নাহতে বিকৃতি ও পরিবর্তন করে না, নিজের মনগড়া বিধানকে আল্লাহর বিধান, রসূলের সুন্নাহ বা ইসলামী বিধান বলে দাবি করেন না; তখন আল্লাহর বিধান না জারি অথবা না পালনের জন্য তার কুফরটি চূড়ান্ত কুফরের চেয়ে কম কুফর হিসেবে গণ্য হবে। অথচ খারেজীরা হুযায়ফা (রা) বক্তব্যকে তাদের পক্ষে দলিল বানাচ্ছে। যদিও সহীহ মুসলিমে সাহাবী বারা বিন আযিব (রা) থেকে দীর্ঘ হাদীসে সূরা মায়েদা’র ৪৪-৪৭ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে নবী (স)-এর উক্তিও এসেছে যে : فِي الْكُفَّارِ كُلُّهَا ‘‘এই সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।’’ [সহীহ মুসলিম ৪৩৩২ (২৮/৭০০)] আর মুসলিমদের জন্য ঐভাবে প্রযোজ্য যেভাবে কিছু পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।]

[তাফহীমুল কুরআন (ঢাকা, আধুনিক প্রকাশনী, ১৪২১/২০০০, আলোচ্য আয়াতের তাফসীর, টীকা ৭৭ দ্রষ্টব্য]

৮.তাফসীরে উসমানী : শিবিবর আহমাদ উসমানী (রহ) তাঁর ‘‘তাফসীরে উসমানী’-তে সূরা মায়িদা’র ৪৪ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন :

’’ ما انزل الله ‘‘ کے موافق حکم نہ کرنے سے غالبا یہ مراد ہے کہ منصوص حکم کے وجود ہی سے انکار کردے اور اسکی جگہ دوسرے احکام اپنی راۓ اور خواہش سے تصنیف کرے۔ جیسا کہ یہود نے ’’ رجم ‘‘ کے متغلق کیا تھا۔ تو ایسے لوگوں کے کافر ہونے میں کیا شبہ ہو سکتا ہے اور اگر یہ ہو کہ ’’ ما انزل الله ‘‘ کو عقیدۃ ثابت مان کر پھر فیصلہ عملا اسکے خلاف کرے تو کافر سے مرادعملی کافر ہوگا۔ یعنی اسکی عملی حالت کافروں جیسی ہی

‘‘ ما انزل الله এর সম্পর্ক হল, ‘আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী হুকুম না করা’-এর দ্বারা সম্ভাব্য অর্থ হবে, সুস্পষ্ট দলিলসমৃদ্ধ হুকুম থাকা সত্ত্বেও তা অস্বীকার করা এবং এর পরিবর্তে নিজের রায় ও খায়েশ দ্বারা ভিন্ন বিধান প্রবর্তন করা। যেভাবে ইয়াহুদীরা ‘রজমের’ হুকুমের ব্যাপারে করেছিল। এ ধরনের লোকেরা কাফির হওয়ার ব্যাপারে আর কি সংশয় থাকতে পারে? আর যদি ما انزل الله এর দাবি হয়, আক্বীদাগতভাবে স্বীকার করার পর আমলগত ফায়সালার ক্ষেত্রে এর বিপরীত করা- তবে সেক্ষেত্রে কাফিরের অর্থ আমলগত কুফর। অর্থাৎ তাদের আমলটি কাফিরদের মতো।’’ (তাফসীরে উসমানী, সূরা মায়িদা, ৪৪ নং আয়াতের তাফসীর)

৯.তাফসীরে মাজেদী : আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী (রহ) তাঁর ‘‘তাফসীরে মাজেদী’’-তে আলোচ্য আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে লিখেছেন :

‘‘ ومن لَم يَحكم بِما انزل الله -আর যারা বিধান দেয় না তদনুসারে, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, বরং তারা শরীআত বিরোধী হুকুম-আহকামকে শরীআতসম্মত বলে মনে করে মানুষের তৈরী বিধানকে আল্লাহর বিধান বলে চালায়।

নেতৃস্থানীয় ইয়াহুদীদের সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং গুনাহ এই ছিল যে, তারা তাদের মনগড়া মতবাদকে আল্লাহর [.বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাংলা অনুবাদে : ‘খোদায়ী কানুন’ শব্দ আছে। আমরা তা পরিবর্তন করে ‘আল্লাহর কানুন’ উল্লেখ করলাম।] কানুন বলে চালিয়ে দিত। ফাতওয়া নিজের ইচ্ছামত দিত এবং বলত : দ্বীনের হুকুম এরূপ। এ ধরনের দুঃসাহসী ব্যক্তিদের কুফরীর ব্যাপারে আর কি সন্দেহ হতে পারে? বিশিষ্ট তাবেঈদের থেকে আয়াতের তাফসীর এরূপ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের হাতে লেখা কিতাবের মতানুযায়ী বিধান দেয় এবং আল্লাহর কিতাবকে পরিত্যাগ করে এবং সে মনে করে যে তার কাছে যে কিতাব আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, সে কাফির হয়ে গেল- (ইবনু জারীর)। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অভিমতও অনুরূপ।

ومن لَم يَحكم -এ আয়াতে من শব্দটি الذى শব্দের সমার্থজ্ঞাপক এবং আয়াতটি ইয়াহুদীদের শানে নাযিলকৃত। এখানে من শব্দটি الذى শব্দের সমার্থ জ্ঞাপক- (কুরতুবী)। অর্থ হল : ঐ সমস্ত ইয়াহুদী- যারা রজম, কিসাস ও অন্যান্য ইলাহী [.বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাংলা অনুবাদে : ‘খোদায়ী বিধান’ শব্দ আছে। আমরা তা পরিবর্তন করে ‘ইলাহী বিধান’ উল্লেখ করলাম।] বিধান পরিবর্তন করে নিজেদের মনগড়া বিধান আল্লাহ সঙ্গে সম্পৃক্ত করতো, তারা কাফির। কাজেই এখানে এরূপ উক্তি উহ্য আছে : ইয়াহুদীগণ, যারা ফায়সালা করে না সে মতে, যে বিধান নাযিল করেছেন আল্লাহ, তারা কাফির। সুতরাং এ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তন্মধ্যে এটাই উত্তম (কুরতুবী)। খারিজীরা এ আয়াত দিয়ে জোর দাবি করে যে, যে সমস্ত মুসলিম [.বাংলা অনুবাদে ‘মুসলমান’ আছে। আমরা ‘মুসলিম’ লিখলাম।] ফাসিক, তারাও কাফিরদের হুকুমের মধ্যে শামিল, যখন তারা গায়রুল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে; তখন তারা কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু এই দলিল (খারেজীদের অন্যান্য দলিলের ন্যায়) পরিত্যাজ্য। কেননা, যে ধরনের ফায়সালার কথা এখানে বলা হয়েছে। তার সম্পর্ক আমলের সাথে নয়, বরং তা আক্বীদা-বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। আর সে ব্যক্তি অবশ্যই কাফির হয়ে যায়। যে আক্বীদার দিক দিয়ে আল্লাহর কানুন বা বিধানকে ভুল বলে এবং নিজের মতবাদকে সঠিক মনে করে। এখানে অর্থ হল : ক্বলবের সাথে আমল করা এবং তা হল অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা। আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা যদি কেউ বিশ্বাস না করে, তবে তার কাফির হওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ মতানৈক্য নেই- (রূহ)। আয়াতটি সাধারণ নয়, বরং কাফিরদের বিশেষকরে ইয়াহুদীদের সাথে সম্পৃক্ত এবং এ ব্যাপারে তাবেঈদের মাঝে আবূ সালিহ, ইকরামা, যাহহাক, কাতাদা (রহ)-এর ও অন্যান্যরা ছাড়াও, সাহাবীদের মাঝে হুযায়ফা ও ইবনু আব্বাস (রা) একমত। বরং এতদসম্পর্কে নবী (স) পর্যন্ত সনদ মওজুদ আছে। যেমন- বারা বিন আযিব (রা) নবী (স) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বাণী : আর যারা ফায়সালা দেয় না সে মতে, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, তারা তো কাফির; আর যারা ফায়সালা করে না সে মতে, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, তারা তো ফাসিক্ব। আয়াতগুলো ফাসিক্বদের শানে নাযিল হয়েছে (ইবনু জারীর)।

আবূ সালিহ (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : সূরা মায়িদার মধ্যে যে তিনটি আয়াত আছে : ‘‘আর যারা ফায়সালা দেয় না সে মতে, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, তারা তো কাফির, যালিম এবং ফাসিক্ব’’ -আয়াতগুলি ইসলামের অনুসারীদের শানে নাযিল হয়নি, বরং তা কাফিরদের শানে নাযিল হয়েছে- (ইবনু জারীর)। যাহহাক (রহ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : উপরোক্ত আয়াত ‘আহলে কিতাবদের’ শানে নাযিল হয়েছে (ইবনু জারীর)। ইকরামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : উপরোক্ত আয়াতগুলি ‘আহলে কিতাব’ এর শানে নাযিল হয়েছে (ইবনু জারীর)। উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আয়াতগুলো ইয়াহুদীদের শানে নাযিল হয়েছে আর তাদের গুণাবলি বর্ণনার আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে (ইবনু জারীর)। ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করে- ‘‘যারা সে মত ফায়সালা করে না, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, তারা কাফির, যালিম ও ফাসিক্ব; আয়াতত্রয় বিশেষভাবে ইয়াহুদীদের শানে নাযিল হয়েছে’’ (রূহ)।

বারা ইবনু আযিব, হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান, ইবনু আব্বাস, আবূ মাজলায, আবূরাজা আতারদী, ইকরামা; উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ, হাসান বসরী প্রমুখ সুধীগণ বলেন : আয়াতগুলো ‘আহলে কিতাবদের’ শানে নাযিল হয়েছে। এ উম্মাতের অপরাধ বর্ণনার জন্য নয় (মাআলিম)।

ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (রহ) স্বীয় স্বভাবসুলভ বর্ণনা ভঙ্গীতে বলেন যে, আয়াতের সম্পর্ক হল কাফির ও আহলে কিতাবদের সাথে; বর্ণনা ধারায় তাদের কথা উল্লেখ আছে এবং এর আগেও তাদের সম্বন্ধে আলোচনা রয়েছে। অন্যান্য বিশিষ্ট মুফাসসিরীনদের অভিমতও এরূপ। ইবনু জারীর বলেন : আমার নিকট এ অভিমতই অধিক যুক্তিযুক্ত যে, এসব আয়াত আহলে কিতাবের কাফিরদের শানে নাযিল হয়েছে। কেননা, এর পূর্বাপর আয়াতের আলোকে জানা যায় যে, তাদের সম্পর্কে এগুলো নাযিল হয়েছে এবং দোষারোপ তাদেরই করা হয়েছে (ইবনু জারীর)। ইমাম শা‘বী (রহ) বলেন : আয়াতগুলো বিশেষভাবে ইয়াহুদীদের শানে নাযিল হয়েছে এবং নাহহাসের অভিমতও এরূপ (কুরতুবী)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন ফায়সালাকে মানতে অস্বীকার করে, অথবা এমন ফায়সালা দেয়, যা আল্লাহর হুকুমের বিপরীত এবং বলে : নিশ্চয় এ হল আল্লাহর হুকুম, সে ব্যক্তি কাফির। যেমন বনূ ইসরাঈলরা কাফির হয়েছিল, যখন তারা এরূপ করেছিল। (জাসসাস)

আল্লাহবিরোধী কানুন মোতাবেক ফায়সালা করার কারণে যদি কোন মুসলিম অভিযুক্ত হয়; তবে তখন হবে, যখন সে জেনেশুনে সজ্ঞানে শরীআতের প্রকাশ্য ও স্পষ্ট বিধানের খিলাফ কিছু করবে এবং সে তখন অভিযুক্ত হবে না- যখন হুকুমটি গোপন কোন বিষয়ের ইঙ্গিতবহ হবে এবং না জেনে, না শুনে সে তার অপব্যাখ্যা করবে। এ সম্পর্কে উলামাদের অভিমত হল- যদি কেউ শরীআতের স্পষ্ট দলিলের খিলাফ কিছু করে বা বলে, তবে সে অভিযুক্ত হবে, পক্ষান্তরে শরীআতের গোপনতত্ত্ব যার কাছে স্পষ্ট নয়, সে যদি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভুল করে বসে, তবে সে অভিযুক্ত হবে না (মাআলিম)। তাবে‘য়ী ইকরামা (রহ), যার সঙ্গে ইমাম রাযী (রহ)-এর বক্তব্যের মিল আছে বলেন : যতক্ষণ কেউ কোন ইলাহী বিধানকে অন্তর দিয়ে মানবে এবং মুখে তা স্বীকার করবে, সে কিরূপে অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে। যদি তার কাজ-কর্ম, বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তির খিলাফ হয়, তবে তাকে গুনাহগার এবং হুকুম তরককারী বলা যেতে পারে; তাকে অস্বীকারকারী বা কাফির ও বিদ্রোহী বলা যাবে না। ইকরামা (রহ) বলেন : আল্লাহর কথা- ‘‘যে ব্যক্তি ফায়সালা করে না সে মতে, যা নাযিল করেছেন আল্লাহ- সে কাফির’’-এ অভিমত তার উপর প্রযোজ্য, যে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে এবং মুখে অস্বীকার করে এবং ‘আল্লাহর হুকুম’ হিসাবে যে মুখে তা স্বীকার করে, এরপর খিলাফ কিছু করে, তবে সে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার বিরোধিতাকারী নয়, বরং সে হবে তা তরককারী। সেজন্য এ আয়াতের আওতায় এনে তাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। এটাই সহীহ জবাব (কাবীর)।

আমাদের যামানায় খারেজী মাযহাবের প্রচার ও প্রসার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। সুন্দর সুন্দর নাম ও উপাধীধারী ব্যক্তিরা এ কাজে নিয়োজিত। তারা এ আয়াত দ্বারা তাদের মতাদর্শ প্রচারে প্রয়াসে। সেজন্য জরুরি মনে করে আয়াতটির ব্যাখ্যা কিছু বিস্তারিতভাবে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের’ মাযহাব অনুযায়ী করা হল। [.আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী, তাফসীরে মাজেদী (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জুন ১৯৯২) ২/৫৬৬-৬৮ পৃষ্ঠা।]

১০.বাদীউত তাফাসীর : ইমাম বাদীউদ্দীন শাহ আর-রাশেদী (রহ) তাঁর সিন্ধি ভাষায় লিখিত ‘বাদীউত তাফাসীরে’ আলোচ্য আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তাফসীরে দুররে মানসুর ও তাফসীরে কুরতুবী থেকে পূর্বোক্ত তাফসীরগুলোর সমার্থক উদ্ধৃতিগুলো দেয়ার পর লিখেছেন :

‘‘সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ তাআলা’র নাযিলকৃত বিধান মোতাবেক ফায়সালা জারি না করা কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। যেভাবে ইমাম যাহাবী তাঁর ‘আল-কাবায়ির’-এর ৩১ নং কবীরাহ গুনাহর বর্ণনাতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেবল কবীরা গুনাহর কারণে মুসলিম ইসলাম থেকে বহিষ্কার হয় না, যতক্ষণ না সে নিজের কৃত আমলটিকে সহীহ বা হক্ব হওয়ার আক্বীদা রাখে। বরং যদি তা সে ভুল মনে করে, অথচ কোন বিশেষ (মাজবুরী) পরিস্থিতিতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা না করে- তবে সে অবশ্যই যালিম ও ফাসিক্ব। কিন্তু তাকে কাফির বা ইসলাম থেকে খারিজ বলা যাবে না। এটাই আহলে সুন্নাতের ইজমা‘য়ী মাসআলা যা প্রথম থেকে চলে আসছে। কিন্তু খারেজীরা সব ধরনের কবীরা গোনাহকারীকে কাফির বলে থাকে।.... তারা এই আয়াতটি দ্বারা দলিল নিয়ে থাকে এবং অন্যান্য দলিল-প্রমাণ থেকে নিজেদের চোখ বন্ধ রাখে। যেমনটি বিদআতীরা নিজেদের প্রমাণ উপস্থাপনে এমনটি করে থাকে।...’’

[বাদীউত তাফাসীর (১৯৯৮ ইং) ৭/২৩৮ পৃষ্ঠা]

উদ্ধৃত সমস্ত তাফসীরগুলো থেকে প্রমাণিত হল, আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে সুন্নী মুসলিমদের প্রকৃত আক্বীদা ও তাফসীর সেটাই যা শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) থেকে আমরা এই বইয়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি। উপরোক্ত সমস্ত মুফাসসির এ ব্যাপারে একমত যে, কুফর দু’ধরনের হয়ে থাকে। যথা :

ক.কুফরে আমালী;

খ.কুফরে ইতিক্বাদী।

এই প্রকারভেদ শায়খ আলবানী (রহ) একাই করেননি। তাছাড়া আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান জারি না করাতে কুফরের স্তর বিন্যাসেও তাদের উপস্থাপনায় কোন পার্থক্য নেই। যদি এই কারণে তাকে মুরজিয়া বলা হয়, তবে পূর্বোক্ত সমস্ত তাফসীরকারকগণও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। অথচ এক্ষেত্রে তাদের উপস্থাপনায় আমরা ঐকমত্য লক্ষ করি। সুতরাং এর বিপরীত মতই গোমরাহ পথ। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন