hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

৩৮
তাহক্বীক্বকৃত : আমাদের হাকিম কেবলই একজন- আল্লাহ তাআলা
[আমাদের আলোচ্য বইটিতে পূর্বে ব্যবহৃত পরিভাষাগুলোর সঠিক প্রয়োগ না থাকায় আমরা এখন বইটির তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ করব। এ পর্যায়ে প্রথমে আমরা লেখকের বক্তব্যের অনুবাদ প্রদান করব, যা পাঠক ‘‘মাসউদ আহমাদ’’ উদ্ধৃতির মধ্যে পাবেন এবং আমাদর বিশ্লেষণ পাবেন ‘‘তাহক্বীক্ব : ’’ উদ্ধৃতির মধ্যে]

১.মাসউদ আহমাদ : ‘‘হাকিম এর অর্থ- এমন হাকিম যাঁর হুকুমাত বা কর্তৃত্ব অনন্ত ও অসীম, যাঁর ইতাআত বা আনুগত্য সীমাহীন ও নিঃশর্ত। যিনি আইনদাতা, যাঁর আইন পূর্ণাঙ্গ এবং অপরিবর্তনশীল। যিনি ইতাআত বা আনুগত্যের একমাত্র দাবিদার (হক্বদার)।’’

তাহক্বীক্ব ১ : আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইলাহ বা মা‘বুদ শব্দটির বৈধ প্রয়োগ কেবল নিজের জন্যই সুনির্দিষ্ট করেছেন। এর বিপরীতে বাতিল ইলাহ’ বা মা‘বুদের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজেকে ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে বৈধ ‘ইলাহ’ বা মা‘বুদ হিসাবে এই শব্দগুলো ব্যবহার করেননি

আল্লাহ তাআলা বলেন :

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ

‘‘হে নবী! এদের বলে দিন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, একজনই মাত্র তোমাদের ইলাহ।’’ [. সূরা হা-মীম আস-সাজদাহ : ৬ আয়াত]

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ

‘‘তোমাদের ইলাহ তো একক ইলাহ, তিনি ছাড়া রহমান (পরম করুণাময়), রহীম (অসীম দয়ালু) কেউ নেই।’’ [. সূরা বাক্বারা : ১৬৩ আয়াত।]

وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ آَلِهَةً يُعْبَدُونَ

‘‘আপনার পূর্বে আমি যেসব রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের জিজ্ঞেস করুন, রহমান (আল্লাহ) ছাড়া ইবাদতের জন্য আমি কি কোন ইলাহ নির্দিষ্ট করেছিলাম।’’ [. সূরা যুখরুফ : ৪৫ আয়াত।]

অর্থাৎ সত্যিকারের ইলাহ বা মা‘বুদ স্বয়ং আল্লাহই এবং তিনি এই শব্দ’টির প্রয়োগ অন্য কারো জন্য করেননি। বাতিল ইলাহ বা মা‘বুদের ক্ষেত্রে শব্দটির ব্যবহার অন্য কোন ইলাহ থাকার প্রমাণ নয়, বরং তাতো বাতিল। উল্লেখ্য ইলাহ অর্থ মা‘বুদ- অর্থাৎ যার ইবাদত করা হয়।

পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা হাকিম শব্দটি কেবল নিজের জন্যই ব্যবহার করেননি। তিনি মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার বৈধ করেছেন। যেমন রসূলুল্লাহ (স) এর ক্ষেত্রে এই হাকিম শব্দটির প্রয়োগ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে আছে :

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘‘অতএব আপনার রবের ক্বসম! তারা মু‘মিন হবে না, যতক্ষণ না তাদের সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে হাকিম বলে মনে না করে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা থাকবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে ক্ববূল করে নেবে।’’ [. সূরা নিসা : ৬৫ আয়াত।]

সহীহ হাদীসেও হাকিম শব্দটি বিচার-ফায়সালা বা সিদ্ধান্তদাতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ও আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

اِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ وَاَصَابَ فَلَه اَجْرَانِ وَاِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ وَاَخْطَأَ فَلَه اَجْرٌ وَّاحِدٌ

‘‘যখন কোন হাকিম ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে তখন তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। পক্ষান্তরে যখন হাকিম ইজতিহাদ করার পরও ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছে, তখন তার জন্য একটি পুরস্কার।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭৩৫২, সহীহ মুসলিম ৪৩৭৯ (১৫/১৭১৬), মিশকাত ৩৭৩২]

সুতরাং প্রমাণিত হল, আল্লাহ তাআলা ইলাহ হিসাবে একক দাবিদার। কিন্তু হাকিম শব্দটির প্রয়োগ ইলাহ শব্দটির থেকে আলাদা। তবে নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ হাকিম আল্লাহ তাআলা। যেমন আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন :

أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ

‘‘আল্লাহ কি হাকিমদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর হাকিম নন।’’ [. সূরা তীন : ৮ আয়াত।]

সুস্পষ্ট হল, ইলাহ বা মা‘বুদ-এর মধ্যে বৈশিষ্ট্য বা গুণগতভাবে কেউই শরীক নয়। কিন্তু হাকিম শব্দটির ব্যবহার স্রষ্টার সাথে সাথে সৃষ্টির ক্ষেত্রেও প্রয়োগযোগ্য। এ পর্যায়ে ইসলামের মূলনীতি হল, সৃষ্টি হাকিমের কোন ফায়সালা যদি স্রষ্টা আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ তাআলা’র বিপরীত হয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : لاَطَاعَةَ فِيْ مَعْصِيَةٍ اِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ ‘‘নাফরমানীর ব্যাপারে ইতাআত নেই। ইতাআত কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭২৫৭, সহীহ মুসলিম ৪৬৫৯ (৩৯/১৮৪০), মিশকাত ৩৬৬৫] অন্যত্র তিনি (স) বলেন : لاَطَاعَةَ لِمَخْلُوْقْ فِيْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর মধ্যে কোন সৃষ্টির ইতাআত নেই।’’ [. সহীহ : শরহে সুন্নাহ, মিশকাত ৩৬৯৬। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত ২/১০৬২ পৃ.]]

কিন্তু ইলাহ বা মা‘বুদ শব্দটি এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউই এ শব্দটির হক্বদার নয়। এক্ষেত্রেও প্রমাণিত হল, ইবাদাতের ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহই হক্বদার, পক্ষান্তরে মুআমালাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ নয় এমন বিষয়ে আমীর বা শাসক, পিতা-মাতা, শিক্ষক, বিচারক, স্বামী, অগ্রজ এদের মানা জায়েয, বরং ক্ষেত্রবিশেষ বাধ্যতামূলক। তবে এগুলো একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য ইবাদত নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশিত স্বতন্ত্র হুকুম পালন। যার মধ্যে আল্লাহর হক্ব ও বান্দার হক্ব উভয়ের সমন্বয় রয়েছে। আর ইবাদত তো কেবলই আল্লাহর হক্ব।

২.মাসউদ আহমাদ : ‘‘আল্লাহ তা্অলা জিন ও মানুষকে নিজের ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

‘‘আমি মানুষ ও জিনকে কেবলই আমার ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছি।’’ [. সূরা যারিয়াত : ৫৬ আয়াত।]

এখানে ইবাদত দ্বারা কেবল সালাত, সাওম, যিকির ও ওয়াযীফা এর অর্থ নেয়া হলে খুবই জটিলতা দেখা দেবে। কেননা, সেক্ষেত্রে এ আমলগুলো ছাড়া জীবনের অন্যান্য আমলগুলো আল্লাহ তাআলা’র সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য, খাওয়া-পান করা, বিয়ে-শাদী প্রভৃতির অস্তিত্ব থাকবে না। ফলে না দুনিয়াদারী হবে, না ইবাদাত বন্দেগী হবে। সর্বোপরি সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।

তাহক্বীক্ব ২ : পাঠক গভীরভাবে আলোচ্য আয়াতটির সাথে এর পরবর্তী আয়াতটিও পাঠ করুন :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ . مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِّزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ

‘‘আমি মানুষ ও জিনকে কেবলই আমার ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে রিযিক চাই না ও খাদ্য-খাবারও চাই না।’’ [. সূরা যারিয়াত :৫৬-৫৭ আয়াত।]

আয়াত দু’টিতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাঁর ইবাদত করা এবং মানুষের দুনিয়াবী লেনদেন, আয়-উপার্জনকে পৃথক করেছেন। যা থেকে সুস্পষ্ট হল, ইবাদত কেবল আল্লাহ তাআলা’র জন্য। কিন্তু দুনিয়াবী প্রয়োজনে মানুষকে প্রদত্ত রিযিক, আয়-উপার্জন এগুলো মানুষের জন্য, আর এগুলোতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। এই আয়াত থেকেই ইবাদাত ও মুআমালাতের দলিল পাওয়া গেল। আল্লাহ তাআলা ইবাদাত বন্দেগীর নির্দেশ প্রদানের সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজনীয় দুনিয়াবী লেনদেন, বিচারকাজ প্রভৃতিরও নির্দেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু তিনি ইবাদাতের ব্যাপারে কোন মানবীয় সিদ্ধান্তকে বরদাশত করেননি নবী (স) দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রায় বা মতামত প্রদান সম্পর্কে বলেছেন :

مَنْ اُفْتِىَ بِفُتْيًا غَيْرَ ثَبَتٍ فَاِنَّمَا اِثْمُهُ عَلى مَنْ اَفْتَاهُ

‘‘দলিল-প্রমাণ ব্যতীত কাউকে ফতওয়া দেয়া হলে, তার গুনাহর ভার ফাতাওয়াদাতার উপর বর্তাবে।’’ [. হাসান : ইবনু মাজাহ - باب اتباع سنة رسول الله (ص) [ باب اجتناب الرأى والقياس ] ; আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত ইবনু মাজাহ (রিয়াদ) হা/৫৩]]

কেননা, দ্বীনের এই অংশটি পরিপূর্ণ এবং এর মধ্যে নতুন করে সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন নেই। সুতরাং ‘‘সুস্পষ্ট দলিল নেই তো ফাতাওয়াও নেই।’’

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ

‘‘আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা।’’ [. সূরা নাহল : ৮৯ আয়াত।]

مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ

‘‘আমি এ কিতাবের মধ্যে কোন কিছুরই বর্ণনা বাদ রাখিনি।’’ [. সূরা আনয়াম : ৩৮ আয়াত।]

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন :

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ

‘‘আজ আমি তোমাদের জন্যে দ্বীনকে পূর্ণতা দান করছি।’’ [. সূরা আলে-ইমরান : ৩ আয়াত।]

দ্বীন পরিপূর্ণ তাই এর মধ্যে সংযোজন ও বিয়োজন নিষিদ্ধ। এ সর্ম্পকে নবী (স) বলেছেন :

مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তবে তা বাতিল।’’ [. সহীহ মুসলিম ৪৩৮৫ (১৮/১৭১৮), রিয়াদুস সালেহীন ৪/১৬৪৭ নং।]

তিনি (স) অন্যত্র বলেন :

مَنْ اَحْدَثَ فِيْ اَمْرِنَا هذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ

‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীন সম্পর্কে কোন নতুন কথা সৃষ্টি করেছে যা এতে নেই, তবে তা রদ বা প্রত্যাখ্যাত।’’ [. সহীহ বুখারী ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম ৪৩৮৪ (১৪/১৭১৮), মিশকাত ১৪০।]

অন্যত্র বলেন :

وَشَرَّ الْاُمُوْرِ مُحْدَثُاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে যা দ্বীন সম্পর্কে নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং প্রত্যেক বিদআতই (নুতন সৃষ্টি) গোমরাহী।’’ [. সহীহ : মুসলিম ১৮৯০ (৪৩/৮৬৭), মিশকাত ১৪১]

পক্ষান্তরে দুনিয়াবী লেনদেন, বিচারকাজ প্রভৃতির ক্ষেত্রে মানবীয় সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নবী (স) বলেছেন :

اِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ وَاَصَابَ فَلَه اَجْرَانِ وَاِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ وَاَخْطَأَ فَلَه اَجْرٌ وَّاحِدٌ

‘‘যখন কোন হাকিম ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছায় তখন তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। পক্ষান্তরে যখন হাকিম ইজতিহাদ করার পরও ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, তখন তার জন্য একটি পুরস্কার।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭৩৫২, সহীহ মুসলিম ৪৩৭৯ (১৫/১৭১৬), মিশকাত ৩৭৩২]

তবে শর্ত হল, তা আল্লাহর নির্দেশের বা সীমারেখার বিরোধী হতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ

‘‘আর কাজকর্মে ( امر ) তাদের সাথে পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন।’’ [. সূরা আলে-ইমরান : ১৫৯ আয়াত]

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ

‘‘এবং তাদের কাজ-কর্ম ( امر ) পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে (সম্পন্ন হয়)।’’ [. সূরা শূরা : ৩৮ আয়াত]

অন্যত্র আল্লাহতাআলা বলেন :

وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ

‘‘তোমাদের জন্য যেগুলো হারাম তা তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।’’ [. সূরা আনয়াম : ১১৯ আয়াত]

এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

مَا اَحَلَّ اللهُ فِيْ كِتَابِه فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَتَ فَاِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا ثُمَّ تَلاَ هذِه الْايَةَ : وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا

‘‘আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে যা হালাল করেছেন তাই হালাল এবং যা হারাম করেছেন তাই হারাম এবং যা থেকে নীরব থেকেছেন তা মাফযোগ্য। সুতরাং যা মাফযোগ্য তা তোমরা আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে গ্রহণ কর। কেননা, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কিছু ভুলেন না।’’ অতঃপর তিলাওয়াত করলেন : ‘‘তোমাদের রব ভুলেন না। [সূরা মারইয়াম : ৬৪]’’ [. সহীহ : হাকিম- কিতাবুত তাফসীর باب سورة مريم । হাকিম এর সনদকে সহীহ বলেছেন। উক্ত মর্মে বাযযার সলেহ সনদে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। [ফতহুল বারী (মাকতাবা মিশর, ১৪২১/২০০১) ১৩/৩৭৮ পৃ.; নায়লুল আওতার (মিশর : দারুল হাদীস ১৪২১/২০০০)৮/৪২৮ পৃ.।]

অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :

اِنَّمَا اَنَا بَشَرٌ اِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِّنْ اَمْرِ دِيْنِكُمْ فَخُذُوْا بِه وَاِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِّنَ رَّائِىْ اَنَا بَشَرٌ

‘‘আমি একজন মানুষ। আমি যখন তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে নির্দেশ দিই, তখন তা তোমরা গ্রহণ করবে, আর আমি যখন আমার রায় অনুসারে তোমাদের কোন বিষয়ে নির্দেশ ( امر ) দিই, তখন আমিও একজন মানুষ।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৬০২১ (১৪০/২৩৬২), মিশকাত ১৪৭।]

অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :

دَعُوْنِيْ مَا تَرَكْتُكُمْ

‘‘আমি যেসব বিষয় বর্ণনা না করে তোমাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি, সেসব ব্যাপারে আমাকে ছেড়ে দাও।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭২৮৮; আর সহীহ মুসলিম ৩১৪৮ (৪১২/১৩৩৭), মিশকাত ২৫০৫-এ নিচের বাক্যে : ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْء فدَعُوه ‘‘আমাকে ছেড়ে দাও যেটুকু আমি তোমাদের জন্য রেখে যায়। কারণ তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশেস্নন কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতঃপর আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ কর।’’]

উপরোক্ত দলিল প্রমাণগুলো থেকে সুস্পষ্ট হল :

দ্বীন (ইবাদাত অর্থে)

১.সুস্পষ্টভাবে সবকিছু বর্ণিত হয়েছে, কোন অসম্পূর্ণতা, অপূর্ণতা নেই।

২.যা উল্লেখ্য করা হয়নি এবং নতুন সংযোজন এর সবই বিদআত ও গোমরাহী।

৩.নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে أمر শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪.না জেনে ব্যক্তিগত রায় বা ফাতাওয়া প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ভুলের দায়-দায়িত্ব বর্তাবে।

৫.সম্পূর্ণরূপে মানবীয় মতামত মুক্ত।

দ্বীন (মুআমালাত অর্থে)

১.অনেক বিষয়ে বর্ণনা না করে স্বেচ্ছায় চুপ থেকেছেন বা ছাড় দেয়া হয়েছে।

২.হারাম নয় এমন সবকিছুই বৈধ। এটা ছাড় হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। কোন কিছু হারাম হবে দলিল দ্বারা।

৩.নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে أمر শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪.সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ভুল হলেও ধর্তব্য নয়। (অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষেত্রে)

৫.ছাড়কৃত বা অনুল্লিখিত স্থানে মতামত বৈধ।

অর্থাৎ সবকিছু আল্লাহর হুকুম হওয়া সত্ত্বেও স্বয়ং আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত পন্থায় পার্থক্য করেছেন, যা বিভিন্ন দলিল প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। উক্ত পৃথকীকরণের জন্যে আল্লাহ’র সৃষ্টির উদ্দেশ্যের মধ্যে কোন সংঘাত বা সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় না।

পূর্বে বর্ণিত বিচারের ক্ষেত্রে হাকিমের ইজতিহাদ করার হাদীসটি সম্পর্কে মুহাম্মাদ ইশতিয়াক (আমীর, জামাআতুল মুসলিমীন) লিখেছেন :

قارئین کرام مندرجہ بالا حدیث میں لفظ ’’ حاکم ‘‘ وارد ہوا ہے ۔ لفظ ’’ عالم ‘‘ نہیں ہے ۔ اس حدیث کا اطلاق حاکم یا بادشاہ وقت یا خلیفۃ المسلمین یا قاضی پر تو ہوتا ہے لکن اس حدیث کا اطلاق کسی عالم پر کر دینا صحیح نہ ہوگا ؛ رسول اللہ نے حاکم یا قاضی یا خلیفۃ المسلمین یا امام امیر و غیرہ کو ایک قسم کی آسانی دی ہے ۔ کیونکہ اس کی حکومت یا امارت میں بعض مقدمات ایسے بھی آتے ہیں جو بالکل نئے ہوتے ہیے ان مقدمۃ پر فیصلہ کرتے وقت اگر حاکم اجتہاد کرتا ہے خواہ فیصلہ صحیح ہو یا غلط تو حاکم کو ہر صورت میں اجر ملے گا یہ بات اس کی نیک نیتی کی وجہ سے کہی گئ ہے ۔

‘‘সম্মানিত পাঠক! উক্ত হাদীসে ‘হাকিম’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, আলিম’ শব্দ নয়। হাদীসটির সম্পর্ক ক্ষমতাসীন বাদশাহ বা খলিফাতুল মুসলিমীন বা কাযীর সাথে। কোন আলিমের সাথে হাদীসটির সম্পৃক্ত করা সংগত নয়। রসূলুল্লাহ (স) কোন হাকিম বা কাযী বা খলিফাতুল মুসলিমীন বা ইমাম প্রমুখ দায়িত্বপ্রাপ্তদের এক ধরনের ছাড় দিয়েছেন। কেননা, তার হুকুমাত বা ইমারতে এমন অনেক মোকাদ্দামা আসে যা সম্পূর্ণ নতুন। এ ধরণের (নিত্য নতুন) মোকাদ্দামা ফায়সালার সময় যদি হাকিম ইজতিহাদ করে, আর যদিওবা তা সঠিক বা ভুল হয় উভয় ক্ষেত্রেই হাকিম সওয়াবের অধিকারী হবে। তার ন্যায়-নীতির কারণে এটি বলা হয়েছে।’’ [. মুহাম্মাদ ইশতিয়াক, তাহক্বীক্বে সালাত বাজাওয়াবে নামাযে মুদাল্লাল (করাচী : জামাআতুল মুসলিমীন, ১৪২২/২০০১) পৃ. ২৯।]

دوسری بات قابل غور يہ ہے کہ حاکم کا فیصلہ جو اس نے فريقين کے درميان کيا ہوگا وہ فیصلہ ہوگا قانون نہیں ہوگا ۔ اس فیصلہ کو شریعت کي حيثيت حاصل نہ ہوگي بلکہ وہ بطور فيصلہ بھي عارضي ہوگا اور ہنگامي طور پر اس کو تسليم کر لیا جا‏ۓ گا ۔ پھر اس حاکم کے بعد دوسرا حاکم اس حکومت کا ولي ہوگا تو وہ اس بات کا مکلف نہیں ہوگا کہ جو فیصلے سابقہ حکومت ميں ہو چکے ہيں وہ ان کے مطابق ہی فیصلہ کرے بلکہ وہ آزاد ہوگا

‘‘অপর একটি দিক গভীরভাবে লক্ষ্য করুন- হাকিমের ফায়সালা, যা তিনি উভয়পক্ষের মধ্যে করে থাকেন সেটাতো কেবলই ফায়সালা, আইন নয়। এই ফায়সালা শরীআতের (আইনের) মর্যাদা অর্জন করে না। বরং এটা তো কেবল ফায়সালা যা তাৎক্ষণিক এবং এটা সুনির্দিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে। অতঃপর এই হাকিমের পরিবর্তে অন্য হাকিম হুকুমাতের অধিকারী হলে তখন সে পূর্বে হুকুমাতে সংঘটিত ফায়সালার অনুগামী হবেন না। বরং তিনি নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই ফায়সালা দিবেন এবং তিনি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।’’ [. ঐ পৃ. ২৯-৩০।]

তবে ক্ষেত্র বিশেষে দলিলের ব্যাপকতা বিদ্যমান থাকা সাপেক্ষে ইবাদাতের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন :

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ النَّبِيُّ يَوْمَ الأَحْزَابِ ‏ " ‏ لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلاَّ فِي بَنِي قُرَيْظَةَ "‏. ‏ فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمُ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ نُصَلِّي حَتَّى نَأْتِيَهَا‏ . ‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ نُصَلِّي، لَمْ يُرِدْ مِنَّا ذَلِكَ، فَذُكِرَ ذَلِكَ فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ .

ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নবী (স) আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ শেষে) বললেন : বনূ কুরায়যার মহল্লায় না পৌঁছে কেউ যেন আসরের সালাত আদায় না করে। পথিমধ্যে আসরের সালাতের সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার পূর্বে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই সালাত আদায় করব, কেননা নবী (স)-এর নিষেধাজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, রাস্তায় সালাতের সময় হয়ে গেলেও তা আদায় করা যাবে না। বিষয়টি নবী (স)-এর কাছে উত্থাপন করা হলে তিনি তাদের কোন দলের প্রতিই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী- কিতাবুল মাগাযী - باب مرجع النبى صلى الله عليه و سلم من الاحزاب ; সহীহ মুসলিম- কিতাবুল জিহাদ باب جواز قتال من نقض العهد ।]

এই হাদীসটি সম্পর্কে মুহাম্মাদ ইশতিয়াক (আমীর, জামাআতুল মুসলিমীন) লিখেছেন :

صحابہ کرام رضـ دونوں جماعتوں نے قرآن وحديث پر هي عمل كيا ، ايك جماعت نے آيت پر عمل كيا اور دوسري جماعت نے حديث پر عمل كيا يعني ايك جماعت نے حکم عام پر عمل كيا اور دوسری جماعت نے حکم خاص پر عمل كيا ۔ اللہ تعالي فرماتا ہے : إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتا يعني نماز مؤمنين پر اوقات مقررہ پر فرض كي گئ ہے ۔

‘‘সাহাবীদের (রা) উভয় জামাআতই কুরআন ও হাদীসের ওপর আমল করেছেন। একটি পক্ষ কুরআনের আয়াতের ওপর আমল করেছেন, অপর পক্ষ হাদীসের ওপর আমল করেছেন। অর্থাৎ একটি পক্ষ আম হুকুমের উপর আমল করেছেন এবং অপর পক্ষ খাস হুকুমের উপর আমল করেছেন।’’ (আম হুকুমটির স্বপক্ষে) আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا

‘‘নিশ্চয় মু’মিনদের জন্য নির্দিষ্ট ওয়াক্তে সালাত আদায় করা ফরয করা হয়েছে।’’ [সূরা নিসা : ১০৩ আয়াত] [. মুহাম্মাদ ইশতিয়াক, তাহক্বীক্বে সালাত বাজাওয়াবে নামাযে মুদাল্লাল (করাচী : জামাআতুল মুসলিমীন, ১৪২২/২০০১) পৃ. ২২-২৩।]

মাসউদ আহমাদ (রহ) লিখেছেন :

اس حدیث سے معلوم ہوا کہ جب حکم عام اور حکم خاص میں تضاد نظر آئے تو دونو میں سے کسی بھی حکم پر عمل کیا جا سکتا ہے ۔ اور عقیدہ بھی یہی رکھنا چاہۓ کہ دونو طرح جائز ہے کیونکہ رسول اللہ نے کسی کو ناجائز نہیں بتایا ۔ یہ نہیں کہنا چاہۓ کہ فلاں عمل صحیح ہے اور فلاں غلط ، نہ یہ کہے کہ فلاں عمل راجح ہے اور فلاں عمل مرجوح ہے ، کیونکہ رسول اللہ نے کسی کو راجح یہ مرجوح نہیں بتایا ۔ اس حدیث سے یہ بات بھی ثابت ہوئی کہ اگر کسی حدیث کا منشائ سمجھنے میں اختلاف ہو جائے تو یہ قابل معافی ہے ، لیکن ایک دوسرے کو برا نہ کہے کیونکہ رسول اللہ نے کسی کو برا نہیں کہا ۔ البتہ اختلاف کی بنیاد پر فرقہ بنانا ، یا محض قیاس کی بنیاد پر حدیث کو نہ ماننا یا کسی غیر نبی کی رائے کو حدیث پر ترجیح دینا یہ سب چیزیں اسلام وایمان کے منافی اور شرک کی طرف لے جانے والی ہے ۔

‘‘এই হাদীসটি থেকে সুস্পষ্ট হল, যখন কোন হুকুমে আম ও হুকুমে খাসের মধ্যে কোন দ্বন্দ দেখা দেবে, তখন উভয়ের কোন একটি উপর আমল করা যেতে পারে। তখন এই আক্বীদাও রাখতে হবে যে, উভয়ই জায়েয। কেননা রসূলুল্লাহ (স) এর কোনটিকেই নাজায়েয বলেননি এটাও বলা যাবে না যে, এই আমলটি সহীহ এবং এটি ভুল। কিংবা এটা বলা যাবে না যে, অমুকটি গুরুত্ববহ, আর অমুকটি বেশি প্রাধান্য পাবে। কেননা নবী (স) কোনটিকে এভাবে গুরুত্ববহ বা বেশি প্রাধান্য দেননি এই হাদীসটি থেকে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, কোন হাদীস বুঝার ক্ষেত্রে যদি ইখতিলাফ হয়েই যায় তবে তা ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু পরস্পরকে খারাপ কিছু বলা যাবে না। কেননা, রসূলুল্লাহ (স) [পূর্বোক্ত হাদীসে] কোন পক্ষকেই খারাপ বলেননি অবশ্য ইখতিলাফের কারণে ফিরক্বা (দল, উপদল বা গোষ্ঠী) বানানো, কেবল ক্বিয়াসের ভিত্তিতে হাদীসকে না মানা। কিংবা কোন অ-নবী ব্যক্তির রায়কে হাদীসের উপর প্রাধান্য দেয়া- এ সমস্ত বিষয় ইসলাম ও ঈমানের দাবির ভিত্তিতে নিষিদ্ধ, যা শিরকের দিকে ধাবিত করে।’’ [. মাসউদ আহমাদ, সহীহ তারিখুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন (করাচী : জামাআতুল মুসলিমীন ১৯৯৫/১৪১৬) পৃ. ৩৩৪-৩৩৫। এই শর্তের আলোকে বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ, সিয়াম ও মুসলিমদের দিন, তারিখ ও মাস গণনা করা যায়। এর স্বপক্ষে ‘আম আয়াত নিম্নরূপ :১. আল্লাহ তাআলা বলেন : يَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْاَهِلَّةِ - قُلْ هِىَ مَوَاقِيْتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجَّ ‘‘লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন : এটা মানুষ ও হজ্জের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্দেশক।’’[সূরা বাক্বারা : ১৮৯ আয়াত]আয়াতটি দ্বারা সুস্পষ্ট হয়, মানবজাতির জন্য চাঁদের হিসাবে দিন-তারিখ ও হজ্জের সময় নির্ধারণ একই হতে হবে। যেন তারা সবাই চন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী দিন, মাস ও বছর গণনা এবং হজ্জ, সিয়াম, ‘ঈদ প্রভৃতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো একই সাথে উদযাপন করতে পারে। ‘‘এটা মানুষ ও হজ্জের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্দেশক’’ বক্তব্যের দ্বারা কোন বিশৃঙ্খল দিন-তারিখের হিসাব সৃষ্টি করার মোটেই উদ্দেশ্য নেই, বরং সুশৃঙ্খল দিন-তারিখ ও সময় নির্ধারণই উদ্দেশ্য। সুতরাং আয়াতটির আলোকে এটা সম্পূর্ণ বিবেক ও বাস্তবতা বিরোধী যে, কেবল হজ্জ পালনের ক্ষেত্রেই মুসলিমদের তারিখ এক হবে এবং অন্যান্য ধর্মীয় নির্দেশগুলোর ক্ষেত্রে চাঁদ দর্শনের আঞ্চলিকতাই প্রাধান্য পাবে।২. আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন : هُوَ الَّذِىْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُوْرًا وَّقَدَّرَه مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِيْنَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللهُ ذلِكَ اِلاَّ بِالْحَقِّ - يُفَضِّلُ الْآيتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ ‘‘তিনিই (আল্লাহ তাআলা) সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং এর মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করেননি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’’ [সূরা ইউনুস : ৫ আয়াত]৩. আল্লাহ তাআলা তাআলা অন্যত্র বলেন : وَجَعَلْنَا الَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيَنِ فَمَحُوْنَا آيَةَ الَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِّتَبْتَغُوْا فَضْلاً مِّنْ رَّبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِيْنَ وَالْحِسَابِ ‘‘আমি রাত ও দিনকে করেছি দু’টি নিদর্শন; এরপর রাতের নিদর্শনটি করেছি নিষ্প্রভ আর দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বছরের সংখ্যা ও হিসাব স্থির করতে পার।’’ [সূরা বানী ইসরাঈল : ১২ আয়াত]তবে এর স্বপক্ষে খাস হাদীসও রয়েছে, যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, অন্য এলাকার চাঁদ দেখার খবর বিশ্বস্ত সূত্রে পৌঁছালে সেই অনুযায়ী ঐ এলাকার সাথে ‘ঈদ প্রভৃতি উদযাপন করা যাবে। যেমন : عَنْ أَبِى عُمَيْرِ بِنْ أَنَسٍ عَنْ عُمُوْمَةٍ لَه مِنَ الصَّحَابَةِ اَنَّ رَكْبًا ( وفى رواية فَجَاءَ رَكِبٌ مِنْ آخِرِ النَّهَارِ ) فَشَهِدُوْا أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلاَلَ بِالْأَمْسِ فَاَمَرَهُمُ النَّبِىُّ أَنْ يُّفْطِرُوْا ، وَإِذَا أَصْبَحُوْا أَنْ يَّغْدُوْا إِلَى مَصَلاَّهُمْ ‘‘আবূ ‘উমাইর বিন আনাস (রা) তাঁর চাচাদের [সাহাবীদের (রা)] নিকট থেকে বর্ণনা করেন, একটি কাফেলা (অন্য বর্ণনায়, দিনের শেষভাগে) এসে সাক্ষ্য দিল যে, গতকাল সন্ধ্যায় তারা আকাশে চাঁদ দেখেছে। ফলে নবী (স) তাদের সিয়াম ভঙ্গ (ইফতার) করতে বললেন এবং পরদিন সকালে ‘ঈদের ময়দানে যেতে নির্দেশ দিলেন।’’ [আহমাদ, আবূ দাউদ, বুলূগুল মারাম; এর সনদ সহীহ (অনুবাদ : খলিলুর রহমান বিন ফজলুর রহমান) হা/৪৭৪। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [তাহক্বীক্বে আবূ দাউদ হা/১১৫৭]ইমাম শওকানী (রহ) এই মাসআলাটির বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে লিখেছেন : واذا راه أهل بلد لزم سائر البلاد الْموافقة . أما كونه اذا راه أهل بلد لزم سائر البلاد الْموافقة فوجهه الاحاديث الْمصرحة بالصيام لرؤيته والافطار لرؤيته وهى خطاب لِجميع الامة فمن راه منهم فى أى مكان كان ذالك رؤية لِجميعهم .‘‘যখন কোন শহর বা দেশে চাঁদ দেখা যাবে তখন সমস্ত মুসলিম বিশ্ব এবং প্রত্যেকটি শহরবাসী এর অনুসরণ করবে। কেননা রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : صُوْمُوْا لِرُؤْيَتِه وَافْطِرُوْا لِرُؤْيَتِهِ ‘‘চাঁদ দেখে সিয়াম রাখ এবং চাঁদ দেখে সিয়াম খোল।’’[সহীহ বুখারী ১৯০৯, সহীহ মুসলিম ২৩৮৯ (৪/১০৮০), মিশকাত ১৯৭০] এই হুকুম সমস্ত শহর ও প্রত্যেক দেশের জন্য ‘আম (ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য)। এই হাদীসে কোন শহর বা দেশকে খাস (সুনির্দিষ্ট) করা হয়নি এ কারণে কোন শহর বা দেশে চাঁদ দেখা সমস্ত মুসলিমদের জন্যই প্রযোজ্য।( الدرارى الْمضيئة ২/২০-২১ পৃ.)উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর মোকাবেলায় সহীহ মুসলিমে বর্ণিত সাহাবী ইবনু আব্বাস (রা) এর সংশ্লিষ্ট বর্ণনাটির দাবিকে বিরোধী ভাবা যাবে না। যদি কোন এলাকার কাছে এতটা দীর্ঘ সময় পরে চাঁদ দেখার খবর পৌঁছে যেভাবে ইবনু আব্বাসের কাছে রমাযান মাসের শেষে পৌছেছিল। তাদের ক্ষেত্রে ইবনু আব্বাসের বর্ণনানুযায়ী নিজ এলাকার চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই ‘ঈদ, সিয়াম প্রভৃতির আমল নির্ধারিত হবে। পক্ষান্তরে খবরটি যথা সময়ে পৌঁছলে পূর্বোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর ‘আম দাবি অনুযায়ী বিশ্বের যে কোন প্রামেত্মর বিশ্বস্ত খবর অনুযায়ীই ‘ঈদ, সিয়াম, হজ্জ প্রভৃতির উপর আমল করা যাবে। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন। [বিস্তারিত : আতাউল্লাহ ডায়রভী, ‘‘ইসলামের নতুন চাঁদের বিধান ও এ সম্পর্কিত বিতর্ক নিরসন’’, অনুবাদ : কামাল আহমাদ]]

৩.মাসউদ আহমাদ : ‘‘সালাত, সিয়াম প্রভৃতি ইবাদাত অবশ্যই জরুরি, কিন্তু সর্বাবস্থায় নয়। যেমন- মাগরিবে তিন রাকআতের বদলে যদি কেউ চার রাকআত পড়ে, তাহলে আভিধানিক অর্থে এটা ইবাদাত হবে কিন্তু শরীআতের পরিভাষায় এটা আল্লাহ তাআলা’র বিরুদ্ধাচরণ হবে। তার সালাত ইবাদাতের মোকাবেলায় অবাধ্যতা বলে গণ্য হবে। ফলে সৃষ্টির উদ্দেশ্যেরই অবসান হবে।

এভাবে যদি কেউ ফজরের সালাতের পরে সূর্যোদয়ের পূর্বে নফল সালাত পড়ে, তাহলে সে ইবাদাতকারী তো বটেই কিন্তু আল্লাহর কাছে সে বিদ্রোহী বা বিরুদ্ধাচারী।

এমনিভাবে যদি কেউ ‘ঈদের দিন সাওম রাখে, তাহলে তার সাওম ইবাদাত হবে না। এভাবে সিয়াম পালনকে সওয়াব বা ইবাদত হিসাবে গণ্যকারী কেবল গুনাহগারই নয়, বরং কাফিরে পরিণত হবে।’’

তাহক্বীক্ব ৩ : আমরা পূর্বে বলেছি, ইবাদাতের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বা হুবহু দলিল প্রমাণ ছাড়া তা বিদআত হিসাবে গণ্য হবে যা বাতিল ও গোমরাহীর নামান্তর। কিন্তু এর সাথে সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন, লেনদেন প্রভৃতির ক্ষেত্রে শরীআতের সীমারেখা মেনে চলাটাই হুকুম। অর্থাৎ ইবাদাতের ক্ষেত্রটি সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে। পক্ষান্তরে মুআমালাতের ক্ষেত্রে যা নিষিদ্ধ নয় তা-ই বৈধ। এর উদাহরণ ইবাদাতের মধ্যকার ফরয নির্দেশাবলি তরককারী বা মনগড়া আমলকারী ক্ষেত্র বিশেষে কাফির ও বিদআতী, কিন্তু মুআমালাতের মধ্যকার নির্দেশাবলি অমান্যকারী কাফির নয়। যেমন, আল্লাহর হুকুম অমান্যকারী শাসকের ক্ষেত্রে নবী (স) বলেছেন :

يَكُوْنُ عَلَيْكُمْ اُمَرَاءُ تَعْرِفُوْنَ وَتُنْكِرُوْنَ فَمَنْ اَنْكَرَ فَقَدْ بَرِئَ وَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ سَلِمَ وَلكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوْا اَفَلاَ نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لاَ مَا صَلُّوْا ـ

‘‘অচিরেই তোমাদের ওপর এমন সব শাসক নিযুক্ত হবে, যারা ভাল মন্দ উভয় প্রকারের কাজ করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের মন্দ কাজের প্রতিবাদ করল, সে ব্যক্তি দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গেল। আর যে ব্যক্তি মনে মনে উক্ত কাজটিকে খারাপ জানল, সে ব্যক্তিও নিরাপদ হল। কিন্তু যে ব্যক্তি তাদের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল এবং উক্ত শাসকের সে (অন্যায়) কাজে আনুগত্য করল (সে গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত হল)। তখন সাহাবীগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! এমতাবস্থায় আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করব না? তিনি (স) বললেন : না, যতক্ষণ তারা সালাত পড়ে।’’ [. সহীহ : মুসলিম ৪৬৯৫ (৬৩/১৮৫৪), মিশকাত ৩৬৭১] অন্য বর্ণনায় আছে, لاَ مَا اَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ ‘‘না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত ক্বায়েম রাখে।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৬৯৯(৬৬/ ১৮৫৫), মিশকাত ৩৬৭০] অন্য বর্ণনা আছে, اِلاَّ اَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِّنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانَ ‘‘যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলিল থাকবে।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭০৫৬, সহীহ মুসলিম ৪৬৬৫ (৪২/১৭০৯), মিশকাত ৩৬৬৬। হাদীসটি নিযুক্ত মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হাদীসের শুরুর বাক্যগুলো থেকে তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।]

হুযায়ফা (রা) বলেন :

قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنَّا كُنَّا بِشَرٍّ فَجَاءَ اللهُ بِخَيْرٍ فَنَحْنُ فِيْهِ فَهَلْ مِنْ وَّرَاءِ هَذَا الْخَيْرِ شَرُّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ هَلْ وَرَاءَ ذَالِكَ الشَّرِّ خَيْرُ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ فَهَلْ وَرَاءَ ذَالِكَ الْخَيْرِ شَرُّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ كَيْفَ قَالَ يَكُوْنَ بَعْدِيْ اَئِمَّةُ لاَيَهْتَدُوْنَ بِهُدَايَ وَلاَ يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ وَسَيَقُوْمُ فِيْهِمْ رِجَالُ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِيْنِ فِيْ جُثْمَانِ اِنْسٍ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ اَصْنَعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْ اَدْرَكْتُ ذَالِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيْعُ لِلْاَمِيْرِ وَاِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَاُخِذَمَالُكَ فَاسْمَعْ وَاطِعْ ـ

‘‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! আমরা ছিলাম অমঙ্গলের মধ্যে তারপর আল্লাহ আমাদের জন্যে মঙ্গল নিয়ে আসলেন। আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ মঙ্গলের পরে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, এ অমঙ্গলের পরে কি আবার কোন মঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, এ মঙ্গলের পরে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন : হাঁ। আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে যারা আমার হিদায়েতে হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে যাদের অন্তকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তকরণ; রাবী বলেন, আমি বললাম : তখন আমরা কি করবো, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন : তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেওয়া হয় তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।’’ [.সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৬৭৮ (৫১/১৮৪৭), মিশকাত ৫৩৮২]

সুস্পষ্ট হল, সালাত তরককারী কাফির, কিন্তু মুআমালাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী সালাতের ন্যায় ইবাদাত ত্যাগ না করলে জালিম হলেও কাফির নয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং ভাল কাজে তাকে মানতে হবে।

৪.মাসউদ আহমাদ : ‘‘এভাবে শতশত উদাহরণ দেয়া যাবে। ভেবে দেখুন, কেন ইবাদাত বিরুদ্ধাচারণে পরিণত হচ্ছে? যদি আপনি স্বল্প পরিমাণ চিন্তাও করেন, তাহলে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন যে, এর কারণ হল, এ ইবাদাতগুলো আল্লাহ তাআলা’র নির্ধারিত সীমার আওতাভুক্ত ছিল না। এ জন্যেই এগুলো ইবাদাত নয়। এ সমস্ত ইবাদাতে আল্লাহ তাআলা’র বিরুদ্ধাচারণ করা হয়েছে, এর মাধ্যমে ইতাআত বা আনুগত্যের মোকাবেলায় অবাধ্যতা করা হয়েছে। সুতরাং শরীআতি পরিভাষায় এগুলোকে ইবাদাত বলা যায় না।’’

তাহক্বীক্ব ৪ : নিঃসন্দেহে ইবাদাত হতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত সুস্পষ্ট পন্থায়, অন্যথা এটা বিরুদ্ধাচারণে পরিণত হবে। শাব্দিক অর্থে সবকিছুই ইবাদাত ও ইতাআত। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে ইবাদাত ও ইতাআতের মধ্যে সু্স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যার স্বপক্ষে আমরা পূর্বে প্রমাণ পেশ করেছি।

৫.মাসউদ আহমাদ : ‘‘পূর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইবাদাত প্রকারান্তরে ইতাআত বা আনুগত্যেরই নাম। নিচের আয়াতটি এ দাবিই সমর্থন করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ

‘‘শয়তানের ইবাদাত করো না।’’ [. সূরা ইয়াসীন : ৬০ আয়াত।]

লক্ষণীয়, কেউ কি শয়তানকে সাজদা করে? তার নামে কুরবানী করে? তার নামে ওয়াযিফা পড়ে? তার নামে দান-খয়রাত করে? কখনোই না। তাহলে এখানে শয়তানের ইবাদাতের উদ্দেশ্যই বা কী? সুস্পষ্ট হল যে, শয়তানের ইবাদাত বলতে এখানে শয়তানের ইতাআত বা আনুগত্যকে বুঝানো হয়েছে। শয়তানের ইতাআত বা আনুগত্যের কারণেই লোকেরা কুফর ও শিরক, অন্যায় ও পাপাচার, গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে নিমজ্জিত হয় এবং সিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত হয়। এ কারণে পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ

‘‘আমার ইবাদাত কর, এটাই সিরাতে মুস্তাক্বীম।’’ [. সূরা ইয়াসীন : ৬১ আয়াত।]

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শয়তানের ইবাদাতের মোকাবেলায় নিজের ইবাদাতের কথা উল্লেখ্য করেছেন। কেননা, শয়তানের ইবাদাত শয়তানের ইতাআত। সুতরাং আল্লাহ তাআলা’র ইবাদাত আল্লাহ তাআলা’র ইতাআত।’’

তাহক্বীক্ব ৫ : শাব্দিক অর্থে ইবাদাত ও ইতাআত পরিপূরক হলেও, আভিধানিক অর্থে এদের মধ্যকার পার্থক্যও সুস্পষ্ট, যা পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। শয়তানের ইবাদাত ও ইতাআত উভয়েরই প্রমাণ পাওয়া যায়। নিচের আয়াতটিতে মূর্তিপূজাকে শয়তানের ইবাদাত হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে :

يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَنِ عَصِيًّا ـ يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِنَ الرَّحْمَنِ فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا ـ قَالَ أَرَاغِبٌ أَنْتَ عَنْ آَلِهَتِي يَا إِبْرَاهِيمُ لَئِنْ لَمْ تَنْتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا

‘‘ [ইবরাহীম (আ) বললেন:] হে আমার পিতা! আপনি শয়তানের ইবাদত করবেন না। শয়তান তো রহমানের (আল্লাহ’র) অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি, আপনাকে রহমানের আযাব স্পর্শ করবে এবং আপনি হবেন শয়তানের বন্ধু। [পিতা] বললো, হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব-দেবী থেকে বিমুখ? যদি বিরত না হও, তবে আমি প্রস্তরাঘাতে অবশ্যই তোমার প্রাণ নাশ করবো; তুমি চিরদিনের জন্য আমার নিকট থেকে দূর হয়ে যাও।’’ [. সূরা মারইয়াম : ৪৪-৪৬ আয়াত।]

সুতরাং আল্লাহর ইবাদত ছাড়া অন্যদের ইবাদত করাটাই প্রকারান্তরে শয়তানের ইবাদাত। এর মধ্যে সাজদা, রুকু, নযর-নেয়ায, দুআ বা আহবান করা, সমস্যা দূরকারী হিসাবে চিহ্নিত করা এ সবই অন্তর্ভুক্ত। তেমনি ইবাদাত ও মুআমালাত উভয় ক্ষেত্রেও শয়তানী আমল শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ

‘‘হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তির নিকৃষ্ট শয়তানী আমল। তাই তোমরা তা বর্জন কর।’’ [. সূরা মায়িদা : ৯০ আয়াত।]

সুতরাং সুস্পষ্ট হল, ইবাদাত ও ইতাআত শাব্দিক অর্থে এক হলেও পারিভাষিক দাবির ভিত্তিতে এদের মধ্যে স্বতন্ত্রতা আছে। যেমন- ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগকারী দুনিয়াতে কাফির হিসাবে গণ্য হবে। এ সম্পর্কে নবী (স) বলেছেন :

بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ

‘‘বান্দার ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত তরক করা।’’ [.সহীহ : সহীহ মুসলিম ১৪৮ (১৩৪/৮২), মিশকাত ৫৬৯।]

তিনি অন্যত্র বলেছেন :

بَيْنَ الْعَبْدِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيْمَانِ الصَّلاَةِ ، فَإِذَا تَرَكَهَا فَقَدْ اَشْرَكَ

‘‘বান্দার এবং কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন করা। কাজেই যখন সে সালাত বর্জন করল, সে শিরক করল।’’ [. সহীহ : হিবতুল্লাহ তাবারী সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন [আত-তারগীব ওয়াত তারহীব (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশান) ১/৩৭৩ পৃ., হা/৫]। মুহাম্মাদ তামির হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত আত-তারগীব (মিশর : দার ইবনু রজব) ১/৭৯৯ নং।]

পক্ষান্তরে ইচ্ছাকৃত কোন কবীরা গুনাহ করার কারণে ঐ কাজে ব্যস্ত থাকা পর্যন্ত সে ক্ষণিকের জন্য ঈমান হারা হলেও চূড়ান্তভাবে কাফির হিসাবে চিহ্নিত হয় না। এ সম্পর্কে আবূ যার গিফারী (রা) বর্ণনা করেন। আমি একদিন নবী (স) এর কাছে গেলাম, তিনি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর আবার তাঁর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি জেগেছেন। তখন তিনি (স) বললেন :

مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لاَ اِلهَ اِلاَّ اللهُ ثُمَّ مَاتَ عَلى ذَالِكَ اِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ قَالَ وَاِنْ زَنى وَاِنْ سَرَقَ

‘‘আল্লাহ’র যে বান্দা এ কথা বলবে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং এর উপর থেকে মারা যাবে সে জান্নাতে যাবে। আমি [আবূ যার (রা)] জিজ্ঞাসা করলাম : যদিও সে যিনা করে ও চুরি করে? নবী (স) বললেন : যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৫৮২৭, সহীহ মুসলিম ১৭১ (১৫২/৯৩), মিশকাত ২৬।]

তাছাড়া নবী (স) ঐসব কবীরা গুনাহকারীদের শাফায়াত করবেন যারা শিরক থেকে মুক্ত ছিল। আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

لِكُلِّ نَبِىٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِىٍّ دَعْوَتَه وَاِنِّى اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِىْ شَفَاعَةً لِّاُمَّتِىْ اِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَهِىَ نَائِلَةٌ اِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَّاتَ مِنْ اُمَّتِىْ لاَيُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا

‘‘প্রত্যেক নবীকে একটি বিশেষ দুআর অধিকার দেয়া হয়েছে যা কবুল করা হয়। প্রত্যেক নবী শীঘ্র শীঘ্র দুনিয়াতেই তাঁর দুআ চেয়েছেন, আর আমি আমার দুআ ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুলতবী রেখেছি আমার উম্মাতের শাফায়াতরূপে। ইনশাআল্লাহ এটা আমার উম্মাতের প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি পৌঁছবে, যে আল্লাহর সাথে কিছুকে শরীক না করে মারা গেছে।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৩৭৬ (৩৩৫/১৯৮), মিশকাত ২২২৩।]

অন্যত্র নবী (স) বলেছেন :

شَفَاعَتِىْ لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِىْ

‘‘আমার শাফায়াত হবে আমার উম্মাতের কবীরা গুনাহগারদের জন্য।’’ [. সহীহ : আবূ দাউদ, বাযযার, তাবারানী, সহীহ ইবনু হিব্বান, বায়হাক্বী, আত-তারগীব (ইফা) ৪/৪৭১ পৃ :, হা/১১০। মুহাম্মাদ তামির হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত আত-তারগীব (মিশর) ৪/৫৩৩৯ নং, পৃ : ২২৫]]

সুস্পষ্ট হল, ইবাদাত ও মুআমালাতের বিষয়ে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনেই স্বতন্ত্রতা রয়েছে। কেননা পূর্বে বর্ণিত আয়াতে আমরা দেখেছি যে, দেবদেবীর পূজাকে শয়তানের ইবাদাত বলা হয়েছে। আর এতে লিপ্ত ব্যক্তি মুশরিক ও চিরদিনের জন্য জাহান্নামী। পক্ষান্তরে মদ, জুয়া, ব্যভিচার প্রভৃতি হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তি যদি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে তবে সে কেবল কবীরা গুনাহকারী হিসাবে চিহ্নিত হবে এবং আখিরাতে আযাব ভোগের পর কিংবা নবী (স)-এর শাফায়াতে জান্নাতী হবে। সুতরাং শরীআতের উভয় দিকটির পার্থক্য সুস্পষ্ট। [. বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মত প্রণীত- ‘‘কবীরা গুনাহগার মুমিন কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?’’ -আতিফা পাবলিকেশন্স, ঢাকা।]

৬.মাসউদ আহমাদ : ‘‘উপরিউক্ত আয়াত ও পর্যালোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইতাআত বা আনুগত্যের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ইতাআত বা আনুগত্য কেবলই আল্লাহ তাআলা’র হক্ব। তিনি যতক্ষণ না অন্য কারো ইতাআত বা আনুগত্যের অনুমতি দিবেন, ততক্ষণ কারো ইতাআত জায়েয নয়। যদি তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কারো ইতাআত (আনুগত্য) করে তাহলে তা শিরক ফিল ইতাআত (আনুগত্যে শিরক) বলে গণ্য হবে। আর শিরকের চেয়ে বড় অন্য আর কোন শিরক নেই, যার দ্বারা জীবনের উদ্দেশ্যই পাল্টে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন :

فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا

‘‘তোমাদের ইলাহ কেবলই একজন, সুতরাং কেবল তারই অনুগত থাক।’’ [. সূরা হাজ্জ : ৩৪ আয়াত।]

এই ইতাআত বা আনুগত্যের অপর নামই ইসলাম। ইসলাম অর্থ- আল্লাহ তাআলা’র নিকট সমর্পিত বা অনুগত। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা’র আনুগত্য করে সেই মুসলিম। আর যে আল্লাহ’র ইতাআত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে অমুসলিম। সে জীবনের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে বেপরোয়া, সে নিজের স্রষ্টার বিরুদ্ধাচারী এবং তাঁর নিকট নিজেকে সমর্পিত করতে বক্রতা অবলম্বনকারী।

তাহক্বীক্ব ৬ : নিঃসন্দেহে মুসলিম হিসাবে আল্লাহ’র সমস্ত নির্দেশই পালন করতে হবে। তা আল্লাহর হক্ব বা ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্টই হোক, কিংবা বান্দার হক্ব বা দুনিয়াবী মুআমালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ই হোক। উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর সুনির্দিষ্ট হুকুম ও সীমারেখা লংঘনকারী অমুসলিম। [. যেমন- ‘ইবাদাতে শিরককারী এবং মুআমালাতে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম সাব্যস্তকারী অমুসলিম তথা কাফির।] এক্ষেত্রে পার্থক্য হল, ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ নিজের সাথে কাউকেই শরীক করেননি পক্ষান্তরে ইতাআত শব্দটি আল্লাহ তাআলা বান্দার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করেছেন, যা নিঃসন্দেহে মুআমালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ সম্পর্কে পূর্বেই দলিল প্রমাণ উল্লেখ্য করেছি।

সম্মানিত লেখক লিখেছেন : ‘‘ইতাআত বা আনুগত্য কেবলই আল্লাহ তাআলা’র হক্ব। তিনি যতক্ষণ না অন্য কারো ইতাআত বা আনুগত্যের অনুমতি দিবেন, ততক্ষণ কারো ইতাআত জায়েয নয়। যদি তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কারো ইতাআত (আনুগত্য) করে তাহলে তা শিরক ফিল ইতাআত (আনুগত্যে শিরক) বলে গণ্য হবে।’’ -এ পর্যায়ে প্রশ্ন করা চলে, আল্লাহ তাআলা ইতাআতের ন্যায় ইবাদাতের ব্যাপারেও কি নিজেকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাতের অনুমতি দিয়েছেন? এর জবাব হল, না। সুতরাং ইবাদাত ও ইতাআত এক নয়, কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন স্ব স্ব প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করাটাই ইসলাম। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক দিন।

তাছাড়া আমরা পূর্বেই প্রমাণ পেয়েছি যে, ইবাদাতে শিরককারীর হুকুম ও দুনিয়াবী ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর বিধি-বিধানকে স্বীকৃতি দেয়া সাপেক্ষে তাঁরই আইন লঙ্ঘনকারীর হুকুম শরিআতের দৃষ্টিতেই এক নয়। এ কারণে ইতাআতের ক্ষেত্রে হুকুম লঙ্ঘনকারী ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে হুকুম লঙ্ঘনকারীরও হুকুম এক হয় না। অথচ সম্মানিত লেখক উভয়টিকেই এক দৃষ্টিতে দেখেছেন। আর এ দৃষ্টিভঙ্গী নিঃসন্দেহে শরীআতী দৃষ্টিভঙ্গী নয়।

৭.মাসউদ আহমাদ : ‘‘ইসলামই একমাত্র জীবন-বিধান যে বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করা উচিত। যদি জীবনের সমস্ত কাজকর্ম আল্লাহ তাআলা’র ইতাআত অনুযায়ী হয়, তাহলে ঐ সমস্ত কাজকর্মও ইবাদাত। যদি সালাত আল্লাহ তাআলা’র হুকুম মোতাবেক আদায় করা হয়, তাহলে সালাতও ইবাদাত। যদি সাওম আল্লাহ তাআলা’র হুকুম মোতাবেক হয়, তাহলে সাওমও ইবাদাত। যদি ব্যবসা-বাণিজ্য আল্লাহ তাআলা’র হুকুম মোতাবেক হয়, তাহলে এটাও আল্লাহর ইবাদাত। এভাবে জীবনের সমস্ত চলাফেরা, শোয়া-ঘুমানো, উঠা-বসা, খাওয়া-পড়া, বিয়ে-শাদী, লেনদেন, তালাক-মুক্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হিংসা-শত্রুতা, বন্ধুত্ব-সহমর্মিতা প্রভৃতি যদি আল্লাহ তাআলা’র হুকুম-আহকাম মোতাবেক হয়ে থাকে; তাহলে এ সবই ইবাদাত। এভাবে সমস্ত জীবনের কাজকর্মই ইবাদাতে পরিণত হবে।

রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

اِنَّكَ لاَ تَنْفِقَ نَفْقَةً تَبْتَغِىْ بِهَا وَجْهَ اللهِ اِلاَّ اُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتّى مَا تَجْعَلُ فِىْ فَمِ امْرَاَتِك

‘‘তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ কর না কেন, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে (খাদ্যের) লোকমা তুলে দাও, তাও।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী - কিতাবুল ঈমান باب ما جاء ان الاعمال بالنية والحسبة ।]

তাহক্বীক্ব ৭ : আল্লাহর নির্দেশ পালন মাত্রই সওয়াব রয়েছে। তা আল্লাহর হক্ব বা ইবাদাতের ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা বান্দার হক্ব বা দুনিয়াবী লেনদেনের ক্ষেত্রেই হোক। আর পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শাব্দিক অর্থে ইবাদাত ও ইতাআত পরিপূরক হলেও পারিভাষিকভাবে এদের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। সুতরাং পরিভাষার আলোকে ইবাদাত ও ইতাআত শব্দগুলোর নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকা উচিৎ। ইবাদাত ও ইতাআত উভয়টিই আল্লাহর হুকুম এবং অবশ্য পালনীয়।

৮.মাসউদ আহমাদ : ‘‘আল্লাহ তাআলা’র ইতাআত (আনুগত্য) তাঁর বিধি-বিধান আমল করার মধ্যে নিহিত। এই বিধানদাতাও স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। যেমন বর্ণিত হয়েছে :

شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ

‘‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্যে দ্বীনি শরীআত (বিধান) দিয়েছেন।’’ [. সূরা শূরা : ১৩ আয়াত।]

আইন প্রদানের ক্ষেত্রে কেউই আল্লাহ তাআলা’র শরীক নয়। এ বিধান প্রদানের বিষয়টি কেবলই খালেস (নির্ভেজাল) ভাবে আল্লাহ তাআলা’র জন্য। যেমন বর্ণিত হয়েছে :

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ

‘‘সাবধান! খালেস (নির্ভেজাল) দ্বীন কেবলই আল্লাহর জন্য।’’ [. সূরা যুমার : ৩ আয়াত।]

সুতরাং দ্বীনের মধ্যে অন্য কারো অংশ নেই। অন্য কাউকে বিধানদাতা মানা, তার তৈরীকৃত বিধান দ্বীনের মধ্যে সংযোজন, তার ইজতিহাদ-ক্বিয়াস ও ফাতাওয়াকে দ্বীনি বিষয় বিবেচনা করাটাই হল আল্লাহর সাথে শিরক করা। এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে :

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ

‘‘তারা কি এমন কাউকে (আল্লাহ’র) শরীক স্থির করে, যে তাদের জন্য দ্বীনি বিধান তৈরী করে? অথচ আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেননি’’ [. সূরা শূরা : ২১ আয়াত।]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন :

وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

‘‘আল্লাহ তাআলা হুকুমে কাউকে শরীক করো না।’’ [. সূরা কাহাফ : ২৬ আয়াত।]

আল্লাহ তাআলা কারো অংশীদারীত্ব ছাড়া স্বয়ং একাকী-ই হুকুমদাতা। তাঁর হুকুম-আহকামে কেউ-ই শরীক নেই। এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে :

إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ

‘‘হুকুম কেবলই আল্লাহ তাআলা’র, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না।’’ [. সূরা ইউসূফ : ৪০ আয়াত।]

তাহক্বীক্ব ৮ : উম্মাতের মধ্যে উপরোক্ত আয়াতগুলো ইবাদাত ও মুআমালাত উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু আয়াতগুলোর পূর্বাপর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, আয়াতগুলো দাবি ইবাদাতের ক্ষেত্রেই বেশী পরিপূরক। নিচে আমরা উপরোক্ত ক্রমানুসারেই এর বিবরণ উল্লেখ করলাম।

১.প্রথমে উল্লিখিত আয়াতটির পূর্ণ বর্ণনা হল :

شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ

‘‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনি শরীআত দিয়েছেন। যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি অহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দ্বীনকে ক্বায়েম কর এবং তাতে ইখতিলাফ (মতভেদ) করো না। আপনি মুশরিকদের যার প্রতি আহবান করেছেন তা তাদের নিকট দুর্বল মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং তাঁর অভিমুখী, তাকে দ্বীনের দিকে পরিচালিত করেন।’’ [. সূরা শূরা : ১৩ আয়াত।]

‘‘আপনি মুশরিকদের যার প্রতি আহবান করেছেন’’ -আয়াতাংশটির ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত আয়াতটিতে রয়েছে। আর তা হল :

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

‘‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুতকে বর্জন কর।’’ [. সূরা নাহল : ৩৬ আয়াত।]

সুতরাং সুস্পষ্ট হল, দ্বীন ক্বায়েমের দাবির মধ্যে সর্বাগ্রে যে দাবিটি প্রাধান্য পায়- তা হল, আল্লাহর ইবাদাত ও তাগুতকে বর্জন করা। তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা মুআমালাতের (রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক, সামাজিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক) ক্ষেত্রে যেসব আইন দিয়েছেন তাও দ্বীন ক্বায়েমের দাবির মধ্যে গণ্য। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন :

هُوَ الَّذِيْ اَرْسَلَ رَسُوْلَه بِالْهُدي وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَه عَلي الدِّيْنِ كُلِّه لا وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكِيْنَ

‘‘তিনিই তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও দ্বীনকে হক্বসহ প্রেরণ করেছেন। যেন সব দ্বীনের উপর তা প্রভাবশালী হয়। যদিও মুশরিকদের কাছে তা অপছন্দনীয়।’’ [. সূরা সফ : ৯ আয়াত।]

২.দ্বিতীয় আয়াতটির পূর্ণ বর্ণনা লক্ষ্য করুন :

أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ

‘‘সাবধান! খালেস (নির্ভেজাল) দ্বীন কেবলই আল্লাহ’র জন্য। যারা আল্লাহ’র পরিবর্তে অন্যকে অলীরূপে গ্রহণ করে, তারা তো বলে- আমরা তো এগুলোর ইবাদাত এজন্যে করি যে, এরা আমাদের আল্লাহ’র সান্নিধ্যে এনে দেবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ইখতিলাফ (মতভেদ) করছে, আল্লাহ তার ফায়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফির, আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’’ [. সূরা যুমার : ৩ আয়াত।]

আয়াতটি যে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর হক্ব তথা ইবাদাতের জন্য এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে নিঃসন্দেহে আয়াতটির প্রথমাংশ ‘‘সাবধান! খালেস (নির্ভেজাল) দ্বীন কেবলই আল্লাহ’র জন্য’’ -এর দাবি আম বা ব্যাপকার্থক। যা ইবাদাত ও মুআমালাত উভয়টিকেই সম্পৃক্ত করে। কিন্তু এর মধ্যে ইবাদাতের দাবিই সর্বাগ্রে। কেননা ইবাদাত কেবলই আল্লাহর জন্যে হয় আর মুআমালাতের মাঝে আল্লাহ ও বান্দা উভয়েরই হক্ব রয়েছে।

৩.তৃতীয় আয়াতটি লক্ষ্য করুন :

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

‘‘তারা কি এমন কাউকে (আল্লাহ’র) শরীক স্থির করে, যে তাদের জন্য দ্বীনি বিধান তৈরি করে? অথচ আল্লাহ তাদেরকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেননি ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ আযাব।’’ [. সূরা শূরা : ২১ আয়াত।]

লক্ষণীয় যে, ইবাদাতের ক্ষেত্রেই আল্লাহ তাআলা নিজের সাথে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে :

وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِه شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِي الْقُرْبي وَالْيَتمي وَالْمَسكِيْنَ وَالْجَارِذِي الْقُرْبي وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَاِبْنِ السَّبِيْلِ لا وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ ـ

‘‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও।’’ [. সূরা নিসা : ৩৬ আয়াত।]

সুস্পষ্ট হল, ইবাদাত কেবলই আল্লাহর জন্য। মানুষের প্রতি সদাচরণ, লেনদেন প্রভৃতি স্বতন্ত্র বিষয়। এটাও আল্লাহর হুকুম এবং এ ক্ষেত্রে ইতাআত ও মুআমালাত শব্দটি প্রযোজ্য। কেননা আল্লাহর অনুমতিক্রমে বান্দার ইতাআত বৈধ। কিন্তু ইবাদাত সম্পূর্ণরূপে এর বিপরীত। আল্লাহ তাআলা কোথাও বান্দার ইবাদাতের অনুমতি দেননি

৪.চতুর্থ আয়াতটির সম্পূর্ণ বর্ণনা লক্ষ করুন :

قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

‘‘বলুন! তারা (আসহাবে কাহফ) কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। আসমান ও যমীনের গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে আছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন এবং শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের কোন অলী বা সাহায্যকারী নাই। তিনি কাউকে নিজের হুকুমে (কর্তৃত্বে) শরীক করেন না।’’ [. সূরা কাহফ : ২৬ আয়াত।]

এই আয়াতটির শুরুতে আল্লাহ তাআলা’র কয়েকটি সিফাত (গুণাবলি)-এর বর্ণনা এসেছে যা আক্বীদাগত ইবাদাত তথা তাওহীদের সাথে জড়িত। এ সমস্ত বিষয়ে কেউই আল্লাহ তাআলা’র কর্তৃত্বে শরীক নয়- এটাই আয়াতের দাবি। তবে মুআমালাতের ক্ষেত্রেও আল্লাহর হুকুমই প্রাধান্য প্রাপ্ত। কেননা আল্লাহ যা হালাল বা হারাম করেছেন, তাকে কেউ হারাম বা হালাল গণ্যকারী নিঃসন্দেহে কাফির ও মুশরিক। তবে আয়াতটির মূল দাবি প্রকৃতিতে আল্লাহ’র ক্ষমতা বা কর্তৃত্বকে প্রকাশ করা, যা তাওহীদ বা আক্বীদাগত ইবাদাতের সাথে সম্পৃক্ত।

৫.পঞ্চম আয়াতটির পূর্ণাঙ্গ অংশের দিকে লক্ষ্য করুন :

مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآَبَاؤُكُمْ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

‘‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি হুকুম চলবে কেবল আল্লাহ’র। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করো না। এটাই দ্বীনুল ক্বাইয়েম। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’’ [. সূরা ইউসূফ : ৪০ আয়াত।]

আয়াতটির পূর্বাপর দাবি থেকে সুস্পষ্ট হয়, এটাও ইবাদাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা ইবাদাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া কোন আমীর, এমন কি পিতা-মাতার বিরোধী হুকুমও কার্যকরী নয়। কেননা, ইবাদাত করা হয় কেবল আল্লাহর হুকুমে। পক্ষান্তরে ইতাআতও আল্লাহর হুকুমে করা হলেও ইবাদাত কেবল আল্লাহরই হক্ব। অপরপক্ষে ইতাআত আল্লাহ ও বান্দা উভয়েরই হক্ব, আল্লাহরই অনুমতিক্রমে।

সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন, আয়াতগুলোর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা আয়াতগুলোর মূল শিক্ষা থেকে কি আমাদের বঞ্চিত করছে না? আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

সম্মানিত লেখকের পরবর্তী দলিল-প্রমাণ ও বক্তব্যগুলো মুআমালাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইতাআত বা আনুগত্যের সুন্দর আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।

৯.মাসউদ আহমাদ : ‘‘হালাল, হারাম করার এখতিয়ার কেবলই আল্লাহ তাআলা’র। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلَالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ

‘‘তোমাদের মুখ থেকে বেফাঁসভাবে মিথ্যারোপ করে বলো না যে, এটা হালাল, এটা হারাম। এটাতো আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ।’’ [. সূরা নাহল : ১১৬ আয়াত।]

সুতরাং উলামাদের ফাতাওয়াতে কোন কিছুই হালাল বা হারাম হয় না। কেননা হালাল কেবল ঐ জিনিস যা আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন। আর হারাম কেবল ঐ জিনিস যা আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন।

কাযী বা বিচারকের ফায়সালা দ্বারাও কোন কিছু হালাল বা হারাম হতে পারে না। কাযীর ফায়সালা কেবলই ফায়সালা, এটা কোন বিধান হতে পারে না। যদি তার ফায়সালা সহীহ হয় তবে তা উত্তম বিষয়, আর যদি সহীহ না হয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত। যদি ভুলক্রমে তা জারি হয়ে যায়, তাহলে সেটা সাময়িকভাবে হবে। ঐ কাযীই অনুরূপ অন্য একটি বিচারে ভিন্ন ফায়সালা দিতে পারে। কাযীর ফায়সালা চিরস্থায়ী বিধানের মর্যাদা পাবে না। চিরস্থায়ী বিধান কেবল আল্লাহ তাআলা’র নাযিলকৃত বিধান। যে এ বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে সে মুসলিম, যে তার বিপরীত ফায়সালা করে সে অমুসলিম। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

‘‘যারা আল্লাহ’র নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফির।’’ [. সূরা মায়িদা : ৪৪ আয়াত।]

তাহক্বীক্ব ৯ : আল্লাহ তাআলা’র হালালকৃত বিষয়কে হারাম এবং হারামকৃত বিষয়টি হালাল গণ্যকারী কাফির। কেননা সে আল্লাহ’র প্রদত্ত বিধানের বিকৃতি করেছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ’র বিধান অনুযায়ী ফায়সালার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, অবিচার প্রভৃতির ক্ষেত্রে ব্যক্তি জালিম ও ফাসিক্বে পরিণত হয়, তাকে কাফির বা অমুসলিম বলা যাবে না। যেমন- আল্লাহর বিধান ও রসূলের (স) সুন্নাত অমান্যকারী শাসকের ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

يَكُوْنَ بَعْدِيْ اَئِمَّةُ لاَيَهْتَدُوْنَ بِهُدَايَ وَلاَ يَسْتَنُّوْنَ بِسُنَّتِيْ وَسَيَقُوْمُ فِيْهِمْ رِجَالُ قُلُوْبُهُمْ قُلُوْبُ الشَّيَاطِيْنِ فِيْ جُثْمَانِ اِنْسٍ قَالَ قُلْتُ كَيْفَ اَصْنَعُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اِنْ اَدْرَكْتُ ذَالِكَ قَالَ تَسْمَعُ وَتُطِيْعُ لِلْاَمِيْرِ وَاِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَاُخِذَمَالُكَ فَاسْمَعْ وَاطِعْ

‘‘আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে যারা আমার হিদায়েতে হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব লোকের উদ্ভব হবে যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের অন্তঃকরণ; রাবী বলেন, আমি বললাম : তখন আমরা কি করবো, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতির সম্মুখীন হই? বললেন : তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়েও নেয়া হয় তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৬৭৮ (৫১/১৮৪৭), মিশকাত ৫৩৮২]

লক্ষণীয়, উক্ত মানবিক যুলুম ও হক্ব নষ্ট হওয়ার পরেও হিদায়াত ও সুন্নাত বিমুখ শাসকের আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ইবাদাতের ক্ষেত্রে হেরফেরকারী শাসকের আনুগত্য করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন, নবী (স) বলেন :

سَيَلِي أُمُورَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُونَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُونَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُونَ الصَّلَاةَ عَنْ مَوَاقِيتِهَا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ قَالَ تَسْأَلُنِي يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ لَا طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللَّهَ .

‘‘অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর (নেতা) হবে, যারা সুন্নাতকে মিটিয়ে দেবে এবং বিদআতের অনুসরণ করবে এবং সালাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেবে। আমি তখন বললাম : ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! আমি যদি তাদের পাই, তবে কি করবো? তিনি বললেন : হে উম্মু আবদের পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো যে, তুমি কি করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যচারণ করে, তার আনুগত্য করবে না।’’ [. সহীহ :ইবনু মাজাহ- কিতাবুল জিহাদ باب لا داعة فى معصية الله ; আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত ইবনু মাজাহ হা/২৮৬৫]]

অর্থাৎ ইবাদাত বিকৃত হলে সেক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা যাবে না। এ ধরনের শাসকদের ব্যাপারে নবী (স)-কে সাহাবীগণ (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (স)! এমতাবস্থায় আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করব না? তিনি (স) বললেন : না, যতক্ষণ তারা সালাত পড়ে।’’ [. সহীহ : মুসলিম ৪৬৯৫ (৬৩/১৮৫৪), মিশকাত ৩৬৭১।] অন্য বর্ণনায় আছে, لاَ مَا اَقَامُوْا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ ‘‘না, যতক্ষণ তারা তোমাদের মধ্যে সালাত ক্বায়েম রাখে।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৬৯৯(৬৬/ ১৮৫৫), মিশকাত ৩৬৭০।] অন্য বর্ণনা আছে, اِلاَّ اَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِّنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانَ ‘‘যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর সুস্পষ্ট দলিল থাকবে।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭০৫৬, সহীহ মুসলিম ৪৬৬৫ (৪২/১৭০৯), মিশকাত ৩৬৬৬। হাদীসটি নিযুক্ত মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হাদীসের শুরুর বাক্যগুলো থেকে তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।]

এ পর্যায়ে লক্ষণীয় যে, কেবল কুরআনের আয়াতের আলোকে এ ধরনের শাসককে শাব্দিকভাবে কাফির হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। পক্ষান্তরে কুরআন ও সহীহ হাদীস উভয়টির সমন্বয়ে করলে এই সিদ্ধান্তই পাওয়া যায় যে, আল্লাহ’র তাওহীদ বা ইবাদাতে ত্রুটিকারী শাসক কাফির হলেও, মুআমালাতের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিষিদ্ধ বরং সব নেক কাজে তার ইতাআত ওয়াজিব। তবে মুআমালাতের ক্ষেত্রেও আল্লাহ’র হারামকৃত জিনিসকে হালাল বা হালালকৃত জিনিসকে হারাম গণ্যকারী বা ঘোষণাকারী শাসক কাফির। কেননা হালাল ও হারামের অধিকারী কেবলই আল্লাহ। ঐ সব শাসকরা যদি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী শাসন চালাতো তবে কি নবী (স) তাদেরকে নিকৃষ্ট শাসক হিসাবে চিহ্নিত করতেন? কক্ষণো না। পক্ষান্তরে তাদের সালাত তরক করা কিংবা প্রকাশ্য কুফরী পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার ব্যবহারের অনুমতি প্রদান থেকে সুস্পষ্ট হয়- শরীআত এ পর্যায়ে আল্লাহর হক্ব (ইবাদাত) ও বান্দার হক্বের (মুআমালাতের) মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করেছে।

১০.মাসউদ আহমাদ : ‘‘কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলা’র নাযিলকৃত বিধান অনুসরণ করতে হবে। এটাই প্রকৃত তাওহীদ। অন্য কিছুর অনুসরণ করা হারাম। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন :

اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ

‘‘ঐ বিধানের অনুসরণ কর যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে, এছাড়া কোন আওলিয়াদের অনুসরণ করো না।’’ [. সূরা আ‘রাফ : ৩ আয়াত।]

আল্লাহ তাআলা’র বিধান সর্বদাই চূড়ান্ত। কারো ফাতাওয়া বা রায়কে চূড়ান্ত বিধানের মর্যাদা দেয়া শিরক। আহলে কিতাবরাও (ইয়াহুদী, নাসারাও) মুসলিমদের এ আক্বীদার সাথে ঐকমত্য ছিল। এ আক্বীদা থেকে বিচ্যুতির কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত দিয়েছেন। এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে :

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ

‘‘বলুন, হে আহলে কিতাব! একটি বিষয়ের দিকে আস- যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করব না, তাঁর সাথে কোন শিরক করব না, এবং নিজেদের মধ্যকার একে অপরকে আল্লাহ’র পরিবর্তে রব হিসাবে গণ্য করব না।’’ [. সূরা আল-ইমরান : ৬৪ আয়াত।]

এ আক্বীদাতে একমত হওয়া সত্ত্বেও তারা আমলগত শিরকের মধ্যে নিমজ্জিত হল। আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কাউকে নিজেদের রব হিসাবে না মানার আক্বীদা রাখা সত্ত্বেও, তারা নিজেদের উলামা ও দরবেশদের রব বানিয়ে রেখেছিল।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

‘‘তারা নিজেদের আলেম ও দরবেশদের আল্লাহকে ছেড়ে রব বানিয়ে রেখেছে এবং ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকেও। অথচ তিনি তাদের এ হুকুম দিয়েছিলেন যে, ঐ একক সত্তার ইবাদাত (অর্থাৎ এক হাকিমের ইতাআত) কর। তিনি ছাড়া আর কোন হাকিম নেই। (কিন্তু তারা এর উপর দৃঢ় থাকে নি, তারা আলেম ও দরবেশদেরকে হাকিম বানিয়ে শিরক করে।) তিনি তাদের শিরক থেকে পবিত্র।’’ [. সূরা তাওবা : ৩১ আয়াত। এই আয়াতের অনুবাদে লেখক ইলাহ বা মা‘বুদ এবং হাকিমকে একই অর্থে গ্রহণ করেছেন। অথচ আল্লাহ তাআলা হাকিম শব্দটি মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলেও ইলাহ বা মা‘বুদ শব্দটির সহীহ প্রয়োগ হিসাবে এককভাবে নিজেকেই সম্পৃক্ত করেছেন। সুতরাং পারিভাষিকভাবে ইলাহ ও হাকিমের মধ্যে পার্থক্য থাকায় অনুবাদটি হবে নিম্নরূপ :‘‘তারা নিজেদের আলেম ও দরবেশদেরকে আল্লাহকে ছেড়ে রব বানিয়ে রেখেছে এবং ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকেও। অথচ তিনি তাদেরকে এ নির্দেশ ( امر ) দিয়েছিলেন যে, ঐ একক সত্তার ‘ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি তাদের শিরকে থেকে পবিত্র।’’]

সার-সংক্ষেপ : হাকিম কেবলই আল্লাহ তাআলা, ইতাআত (আনুগত্য) কেবলই আল্লাহ তাআলা’র হক্ব। চূড়ান্ত বিধান কেবল আল্লাহ তাআলা’র নির্দেশাবলি। অন্যান্যদের ইতাআতের হক্বদার মানা, তাদের রায় ও ফাতওয়াকে চূড়ান্ত বিধান গণ্য করাটাই আল্লাহ’র সাথে শিরক করা। এটাকে শিরক ফিল ইবাদাত (ইবাদাতে শিরক)-ও বলা হয়। তাছাড়া শিরক ফিল হুকুম (আদেশ পালনে শিরক) এবং শিরক ফিত্তাশরি‘য়ী (বিধি-বিধানে শিরক)-ও বলা হয়।

তাহক্বীক্ব ১০ : ইবাদাত বা মুআমালাত উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহ’র প্রদত্ত বিধানের মোকাবেলায় যে কোন মানবীয় বিধানকে পরিপূরক বা আন্তরিকভাবে মেনে নেয়াটাও শিরক। পার্থক্য এতটুকুই যে, ইবাদাত শব্দটির ক্ষেত্রে স্বয়ং আল্লাহ একক দাবিদার, আর অন্য কেউ-ই। পক্ষান্তরে মুআমালাতের ক্ষেত্রে ইতাআত শব্দটির প্রয়োগে আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্দেশের বিরোধী না হলে অন্যদের যেমন- আমির, পিতামাতা, বয়োজৈষ্ঠ, স্বামী প্রমুখের ইতাআত করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তেমনি হাকিম শব্দটির প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইতাআত শব্দটি প্রযোজ্য। কিন্তু ইবাদাত শব্দটি শাব্দিক অর্থে একই হলেও পারিভাষিকভাবে এর দাবি কেবলই আল্লাহর। কোন আমির, পিতামাতা, বয়োজৈষ্ঠ, স্বামী কেউই এর হক্বদার নয়। যেমন নবী (স) বলেছেন :

لَوْ كُنْتَ آمُرُ اَحَدًا اَنْ يَّسْجُدَ لِاَحَد لَّاَمَرْتُ الْمَرْأَةَ اَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا

‘‘যদি আমি (আল্লাহ ছাড়া) কাউকে সাজদার করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সাজদা করার।’’ [. সহীহ : তিরমিযী ১১৫৯, মিশকাত ৩২৫৫। অনেক সাক্ষ্য থাকায় আলবানী  হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত (বৈরুত) ২/৯৭২ পৃ., হা/৩২৫৫]]

এই হাদীসটিতে সাজদার ন্যায় ইবাদাতের কাজটি যে স্বামীর ক্ষেত্রে হারাম তা সুস্পষ্ট হয়েছে। পক্ষান্তরে স্বামীর ক্ষেত্রে ইতাআত শব্দটি খুব প্রাঞ্জলভাবেই সম্পৃক্ত হয়েছে। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

اَلْمَرْآةُ اِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَاَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَاَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ اَىِّ اَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ ـ

‘‘স্ত্রীলোক যখন তার প্রতি নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং নিজের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে ও স্বামীর ইতাআত করবে- তখন সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা চাইবে প্রবেশ করতে পারবে।’’ [. হাসান : আবূ নুআইম- হিলইয়া, মিশকাত ৩২৫৪। অনেক সাক্ষ্য থাকায় আলবানী  হাদীসটিকে হাসান বা সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত (বৈরুত) ২/৯৭২ পৃ., হা/৩২৫৪]]

সুতরাং সুস্পষ্ট হল, ইবাদাত ও ইতাআত শব্দ দু’টি আভিধানিক অর্থে পরিপূরক হলেও, পারিভাষিকভাবে এদের পার্থক্য সুস্পষ্ট। উভয়টির একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ। কিন্তু ইবাদাত কেবল তাঁরই জন্য এবং ইতাআত তাঁর অনুমতিতে ও সীমারেখার মধ্যে মানুষেরও করা জায়েয বরং ক্ষেত্র বিশেষে বাধ্যতামূলক। পরবর্তী অংশে এই কথাই উল্লেখ হয়েছে।

১১.মাসউদ আহমাদ : ‘‘আল্লাহ তাআলা-ই প্রকৃত হাকিম (হুকুমদাতা)। আল্লাহ তাআলা’র ইতাআত (আনুগত্য) চিরন্তন ও চিরস্থায়ী, নিঃশর্ত ও সীমাহীন। আল্লাহ তাআলা’র ইতাআত ভাষা ও স্থানের মধ্যে সুনির্দিষ্ট নয়। আল্লাহ তাআলা’র ইতাআতেই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা।

কেননা, আল্লাহ তাআলা-ই প্রকৃত ইতাআতের হক্বদার। সুতরাং অন্য কারো ইতাআত কেবল ঐসব ক্ষেত্রে অবশ্যই করতে হবে, যখন ঐ ইতাআতের হুকুম স্বয়ং আল্লাহ তাআলা দেন। আল্লাহ তাআলা নিজের হুকুম-আহকাম যথাযথ পালনের সুবিধার্থে রসূলদের ইতাআতও ফরয করেছেন। সুতরাং আল্লাহর হুকুমে রসূলদের ইতাআতও ফরয।

জামাআতুল মুসলিমনের দা‘ওয়াত : আসুন আমরা সবাই মিলে আল্লাহকে হাকিম মেনে নিই। হাকিমিয়্যাত (সার্বভৌমত্ব) কেবল আল্লাহ তাআলা’র জন্যেই নির্ধারিত। কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলা’র নাযিলকৃত বিধান মেনে চলি। আল্লাহ তাআলা’র বিধান হিসাবে কেবল কুরআন ও হাদীসই সুরক্ষিত। কুরআন ও হাদীস আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। এ দু’টি জিনিসের মধ্যে আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। এই দু’টি জিনিসকেই আমরা অবশ্যপালনীয় মনে করি। দল বা ফিরক্বা ভিত্তিক মাযহাবকে ত্যাগ করি, ফিরক্বাবন্দীর অবসান করি। আল্লাহ তাআলা এক। তাঁকে একমাত্র হাকিম বা হুকুমদাতা মেনে নিয়ে এক হয়ে যাই।

জামাআতুল মুসলিমীনের দা‘ওয়াত ক্ববুল করুন এবং এর সহযোগী/সহযোদ্ধা হোন

তাহক্বীক্ব ১১ : উক্ত বক্তব্যের প্রয়োজনীয় সংস্কার আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। শেষাবধি আবারও লক্ষ্য করুন, এখানে রসূলের ইতাআতকে ফরয করা হয়েছে- আর নিঃসন্দেহে তা ফরয। কিন্তু কোনক্রমেই এটা কি বলা যাবে যে, রসূলের ইবাদাত করাও ফরয- কখনো না। অর্থাৎ ইবাদাত কেবল আল্লাহ‘রই হক্ব এবং এর মধ্যে আর কেউ-ই শরীক নয়। কিন্তু ইতাআত আল্লাহ‘র হুকুমে বা অনুমতিতে অন্যদেরও হক্ব। সুতরাং পারিভাষিকভাবে ইবাদাত ও ইতাআতের পার্থক্য সুস্পষ্ট। এই পৃথকীকরণের অস্পষ্টতার কারণে অধিকাংশ মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল ও দল ভেদে রূঢ় বা বিদ্রোহী আচরণের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। কেবল শাব্দিকভাবে কুরআনকে প্রাধান্য দান ও হাদীসের দাবিকে সেগুলোর সাথে মিলিয়ে সমন্বয় করার মাধ্যমে উক্ত ভারসাম্যহীন আচরণ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। অন্যথায় কেবল শাব্দিকভাবে কুরআন পাঠ ও এর সাধারণ বুঝ কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যেভাবে বিভিন্ন দল, উপদল বা ফিরক্বার জন্ম নিচ্ছে, তেমনি সাধারণ জনগণ হচ্ছে বিভ্রান্ত। ইতোপূর্বে মুসলিমদের থেকে যেসব ফিরক্বার জন্ম হয়েছে তাদের প্রত্যেকের পৃথকীকরণের মূলেও ছিল এই একই কারণ। যার উদাহরণ আমাদের এই পুস্তিকার ভূমিকাতে উল্লেখ করেছি।

সুতরাং হক্বের দা‘ওয়াতের পূর্বে নিজেদের পূর্ববতী বিভিন্ন ফিরক্বার উৎস, তাদের ব্যাপারে সাহাবী (রা), মুহাদ্দিস তথা সালাফে-সালেহীনদের ভূমিকাকেওঅবশ্যই মূল্যায়নকরতেহবে।আমাদেরআলোচ্য পুস্তিকাটিতে যদি তাঁদের অবদানগুলোকে সামনে রেখে লেখা হত সেক্ষেত্রে এই শাব্দিক ভুল হবার সম্ভাবনা থাকতো না। নিঃসন্দেহে কুরআন হাদীসই তো মূল। কিন্তু এর প্রকৃত ব্যবহার মুহাদ্দিস ও সালাফে সালেহীনদের প্রদর্শিত পথেই হতে হবে। [. আল্লাহ তাআলা বলেন : وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهَدى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّى وَنُصْلِه جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا ـ ‘‘আর যে ব্যক্তি রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাঁর নিকট হিদায়াত সুস্পষ্ট হওয়ার পর এবং মু’মিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে ফিরে যায়, সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর তা কত মন্দ আবাস।’’ [সূরা নিসা : ১১৫ আয়াত]রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : خَيْرُ اُمِّتِىْ قَرْنِىْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ اِنَّ بَعْدَهُمْ قَوْمًا يَّشْهَدُوْنَ وَلاَيُسْتَشْهَدُوْنَ وَيَخُوْنُوْنَ وَلاَيُؤْتَمَنُوْنَ وَيَنْذُرُوْنَ وَلاَ يَفُوْنَ وَيَظْهَرُ فِيْهِمُ السِّمَنُ وفى رواية وَيَحْلِفُوْنَ وَلاَ يُسْتَحْلَفُوْنَ ـ ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম লোক হল আমার যুগের লোক। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগের লোক। তাঁদের পর এমন কিছু লোকের আবির্ভাব হবে, যারা সাক্ষ্য দিবে অথচ তাদের থেকে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। তারা খিয়ানত করবে, তাদের আমানতদারীর উপর বিশ্বাস করা যাবে না। তারা মান্নত করবে, কিন্তু তা পূরণ করবে না। (ভোগ-বিলাসের কারণে) তাদের মধ্যে স্থূলতা প্রকাশ পাবে।’’ অপর বর্ণনায় আছে- ‘‘তারা (অযথা) ক্বসম খাবে, অথচ তাদের থেকে ক্বসম চাওয়া হবে না।’’[সহীহ বুখারী ৩৬৫০, সহীহ মুসলিম ৬৩৬৪ (২১১/২৫৩৩), মিশকাত ৬০১০। হাফিয ইবনু হাজার (রহ) ‘আল-ইসাবা’তে (১/১২) এবং সুয়ূতী (রহ) ‘আল-মানায়ী’তে হাদীসটিকে মুতওয়াতির বলেছেন। আল-কিনানী (রহ) এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।]] যেমন উসূলে হাদীস ছাড়া হাদীস মূল্যায়ন সম্ভব নয়- আর নিঃসন্দেহে তা মুহাদ্দিসদের প্রদর্শিত পথ। অনুরূপ উসূলে ফিক্বাহ’র বিষয়টিও। পূর্বোক্ত আলোচনায় সালফে সালেহীন প্রদর্শিত উসূলে ফিক্বাহ’র পরিভাষা ও প্রয়োগ থেকে দূরে থাকার কারণেই উক্ত বিচ্যুতি ঘটেছে। তবে নিঃসন্দেহে অনেক মাযহাবভিত্তিক উসূলে ফিক্বাহ সরাসরি কুরআন ও হাদীস বিরোধি। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সাধারণ বিবেক বিরোধিও বটে। নিঃসন্দেহে এমন উসূলে ফিক্বাহ পরিত্যাজ্য।

সর্বোপরি এটাই উল্লেখ করতে হচেছ যে, সাহাবী (রা), তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী ও মুহাদ্দিসদের দেখানো পথেই আমাদের কুরআন ও হাদীসকে বুঝতে হবে। হঠাৎ করে কেবল কুরআনের শাব্দিক অনুবাদ বা হাদীসকে ঊহ্য রেখে কোন নতুন আভিভূত ব্যাখ্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য এই পথের অনুসরণ জরুরি। এর আলোকেই মুসলিমদের জন্য পূর্ণ কুরআন ও সহীহ হাদীসের সংকলন ও বিভিন্ন ইসলামী সাহিত্য রচিত হতে হবে এবং সেগুলোই গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথায় সালাফে সালেহীনের নির্দেশনাহীন নতুন কোন সাহিত্য বাতিল ফিরক্বার সৃষ্টি বলেই গণ্য হবে। এমনটি হলে সেগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

‘‘আর যারা (মু’মিনরা) দুআতে বলে যে, হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান কর, যারা আমাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী হয় এবং আমাদের মুত্তাক্বীদের জন্য ইমাম বা আদর্শ কর।’’ [. সূরা ফুরক্বান : ৭৪ আয়াত।]

ইমাম বুখারী (রহ) আয়াতটির শেষাংশ- ‘‘আমাদের মুত্তাক্বীদের জন্য ইমাম বা আদর্শ কর’’-এর ব্যাখ্যায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন :

قَالَ اَيِمَّةً نَقْتَدِىْ بِمَنْ قَبْلَنَا ، وَيَقْتَدِىْ بِنَا مِنْ بَعْدِنَا

‘‘কেউ বলেছেন : এরূপ ইমাম যে আমরা আমাদের পূর্ববতীদের (হক্বের ব্যাপারে) অনুসরণ করব, আর আমরাদের পরবর্তীরা আমাদের (হক্বের ব্যাপারে) অনুসরণ করবে।’’ [. সহীহ বুখারী- কিতাবুল ই‘তিসাম বিল কিতাব ওয়া সুন্নাহ باب الاقتداء بسنن رسول الله ... হা/৭২৭৫-এর পূর্বে।]

যারা হাদীসের যাচায়-বাছাই পদ্ধতি বা উসূলে হাদীস মানেন তাদেরকে অবশ্যই উক্ত আয়াত ও তার দাবিকে মেনেই চলতে হয়। [. কেননা এটাই মু’মিনদের পথ (সূরা নিসা : ১১৫ আয়াত)] সুতরাং আসুন আমরা আল্লাহ তাআলা’র কাছে প্রার্থনা করি :

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ـ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ـ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

‘‘(হে আল্লাহ!) আপনি আমাদের সিরাতে মুস্তাক্বীমের পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথে যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। তাদের পথে নয়, যারা আপনার গযবপ্রাপ্ত হয়েছে ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।’’ [. সূরা ফাতিহা : ৫-৭ আয়াত।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন