hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ফিতনাতুত-তাকফীর

লেখকঃ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ), শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ), শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহ), বিভিন্ন মুফাসসির ও মুহাদ্দিসদের (রহ) উদ্ধৃতি

৩৬
তাহক্বীক্বকৃত : আমাদের হাকিম কেবলই একজন- আল্লাহ তাআলা কয়েকটি পরিভাষা : ইবাদাত, ইতাআত, মুআমালাত ও ইস্তিআনাত
[এই বইটির তাহক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে গেলে উক্ত শব্দগুলোর সাথে পরিচয় থাকা জরুরি। অন্যথায় এক্ষেত্রে বিভ্রান্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এ কারণে শুরুতে এ পরিভাষাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।]

আল্লাহ তাআলা বলেন :

اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ

অর্থ : আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং কেবল আপনারই সাহায্য চাই। [সূরা ফাতিহা- ৪ আয়াত]

বিশ্লেষণ : اياك আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী কর্ম ( مفعول ) এবং এটার স্থান ক্রিয়া ( فعل ) ও কর্তার ( فاعل )পরে হলেও এখানে মর্যাদা এবং গুরুত্ব প্রকাশ ও حصر (সীমাবদ্ধতা)-এর অর্থ গ্রহণের জন্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। [. তাফসীরে মাযহারী [ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন] ১/১৫ পৃ :।] সাধারণভাবে বলা হয় যে, نَعْبُدُكَ وَنَسْتَعِيْنُكَ ‘‘আমরা তোমার ইবাদাত করি এবং তোমার সাহায্য চাই।’’ কিন্তু এখানে আল্লাহ তাআলা কর্মকে ( مفعول ) ক্রিয়ার ( فعل ) পূর্বে ব্যবহার করে বলেছেন : اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ -যা দ্বারা ইখতিসাস (সুনির্দিষ্টকরণ) করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘‘আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং কেবল আপনারই সাহায্য চাই।’’ [. সালাহুদ্দীন ইউসুফ, কুরআনে কারীম মাআ উর্দু তরজমা ও তাফসীর (মাদীনা মুনাওওয়ারা : বাদশাহ ফাহ্দ কুরআনে কারীম প্রিন্টিং কমপ্লেক্স) পৃ. ৪।]

অর্থাৎ ইবাদাত আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্যই বৈধ নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসে ইসলাম অনুমোদিত ইবাদাত শব্দটির পারিভাষিক প্রয়োগ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

ইবাদাত এর অর্থ : কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা, অক্ষমতা ও পূর্ণাঙ্গ বিনয় (খুশু) প্রকাশ করা। ইবনু কাসির (রহ)-এর মতে- ‘‘ইবাদাত হল শরীআতের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ মুহাব্বাত, বিনয় ও ভয়ের সমষ্টির নাম।’’ অর্থাৎ যে সত্তার সাথে মুহাব্বাত হয়েছে তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা এবং তাঁর কাছে গ্রেফতার হবার ভয় থাকা। [. সালাহুদ্দীন ইউসুফ, কুরআনে কারীম মাআ উর্দু তরজমা ও তাফসীর পৃ. ৪।]

[আভিধানিকভাবে ইবাদাত শব্দের ব্যবহার :

১. عَبَدَ ، يَعْبُدُ ، عِبَادَةٌ ، عُبُوْدِيَّةٌ : তাওহীদ (একক মানা), বন্দেগী করা, পূজা করা, খিদমাত করা, ক্ষুদ্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা, ইতাআত বা আনুগত্য করা। [. মাসউদ আহমাদ, তাফসীরে কুরআনে আযীয [করাচী] পৃ. ৬০।]

২. عَبَدَ اللهَ ـ عِبَادَةً وَعُبُوْدِيَّةً : আল্লাহ আনুগত্য ও বন্দেগী করা, ইবাদাত করা, আদাবে বন্দেগী পালন করা, ক্ষুদ্রতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা, কেবল আল্লাহকেই মালিক ও খালিক (সৃষ্টিকর্তা) এবং ওয়াজিবুল ইতাআত (তাঁর আনুগত্য অত্যাবশ্যক) মনে করা। [. আল-ক্বামূসুল ওয়াহীদি [দেওবন্দ : কুতুবখানাহ হুসাইনিয়া, এপ্রিল-২০০৪] ২/১০৩৮ পৃ.।]

৩.ইবাদাত শব্দটি আরবি ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ক. পূজা ও উপাসনা করা, খ. আনুগত্য ও হুকুম মেনে চলা এবং গ. বন্দেগী ও দাসত্ব করা। এখানে (আলোচ্য আয়াতে) একই সাথে এই তিনটি অর্থই প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আমরা তোমার পূজা-উপাসনা করি, তোমার আনুগত্য করি এবং তোমার বন্দেগী ও দাসত্বও করি। [. তাফহীমুল কুরআন, সূরা ফাতিহার ৬ নং টীকা।]]

ইবাদাত ও ইতাআত : ইবাদাত কেবল আল্লাহরই হয়। কিন্তু ইতাআত বা আনুগত্য আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সৃষ্টিজীবেরও হয়। যেমন- আল্লাহ তাআলা নিজের ও তাঁর রসূলের ইতাআত সম্পর্কে বলেছেন :

ياَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ’র ইতাআত কর এবং রসূলের ইতাআত কর।’’ [. সুরা নিসা : ৫৯ আয়াত। অনুরূপ আরো দ্র : মায়িদাহ : ৯২, নূর : ৫৪, মুহাম্মাদ : ৩৩, তাগাবুন : ১২।]

অনুরূপভাবে রসূলুল্লাহ (স) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ইতাআতের সাথে সাথে আমীরের ইতাআতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন :

مَنْ اَطَاعَنِيْ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ عَصَي اللهَ وَمَنْ يُّطِعِ الْاَمِيْرِ فَقَدْ اَطَاعَنِيْ وَمَنْ يَّعْصِ الْاَمِيْرِ فَقَدْ عَصَانِيْ

‘‘যে ব্যক্তি আমার ইতাআত করল, সে যেন আল্লাহ’র ইতাআত করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফমানি করল, বস্তুত সে আল্লাহ’র নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের ইতাআত করল, সে যেন আমারই ইতাআত করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল, সে যেন আমারই নাফরমানী করল।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭১৩৭, সহীহ মুসলিম ৪৬৪১ (৩২/১৮৩৫), মিশকাত ৩৬৬১]

তবে আল্লাহ ও রসূলের ইতাআত বা আনুগত্য শর্তহীন। কিন্তু সৃষ্টিজীবের আনুগত্য শর্তযুক্ত। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : لاَطَاعَةَ فِيْ مَعْصِيَةٍ اِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ ‘‘নাফরমানীর ব্যাপারে ইতাআত নেই। ইতাআত কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭২৫৭, সহীহ মুসলিম ৪৬৫৯ (৩৯/১৮৪০), মিশকাত ৩৬৬৫] অন্যত্র তিনি (স) বলেন : لاَطَاعَةَ لِمَخْلُوْقْ فِيْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ ‘‘সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর মধ্যে কোন সৃষ্টির ইতাআত নেই।’’ [. সহীহ : শরহে সুন্নাহ, মিশকাত ৩৬৯৬। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত ২/১০৬২ পৃ :]]

উক্ত আলোচনার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হল, ইবাদাত কেবল আল্লাহরই করা যায়। ইবাদাতের অন্যতম অর্থ ইতাআত হলেও সব ইতাআত ইবাদাত নয়। কেননা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমীর, পিতা-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, বয়োজ্যেষ্ঠ, উর্ধ্বতন বা দায়িত্বশীল প্রমুখের ইতাআত করার প্রয়োজন হয়। তারা সেক্ষেত্রেই হুকুম করতে পারেন যেক্ষেত্রে আল্লাহ’র নাফরমানী হবে না, কিংবা যেসব ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা স্বাধীনতা দিয়েছেন। এ স্বাধীনতা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : دَعُوْنِيْ مَا تَرَكْتُكُمْ ‘‘আমি যেসব বিষয় বর্ণনা না করে তোমাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি, সেসব ব্যাপারে আমাকে ছেড়ে দাও।’’ [. সহীহ : সহীহ বুখারী ৭২৮৮; আর সহীহ মুসলিম ৩১৪৮ (৪১২/১৩৩৭), মিশকাত ২৫০৫-এ নিচের বাক্যে : ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْء فدَعُوه ‘‘আমাকে ছেড়ে দাও যেটুকু আমি তোমাদের জন্য রেখে যায়। কারণ তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতঃপর আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ কর।’’]

তিনি (স) অন্যত্র বলেছেন :

اِنَّمَا اَنَا بَشَرٌ اِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ مِّنْ اَمْرِ دِيْنِكُمْ فَخُذُوْا بِه وَاِذَا اَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ رَّائِيْ فَاِنَّمَا اَنَا بَشَرٌ

‘‘আমি একজন মানুষ। আমি যখন তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে কোন নির্দেশ দেই, তখন তা গ্রহণ করবে। আর আমি যখন (দ্বীন বহির্ভূত বিষয়ে) আমার রায় (ব্যক্তিগত মত) অনুসারে নির্দেশ প্রদান করি, তখন আমিও একজন মানুষ।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৬০২১ (১৪০/২৩৬২), মিশকাত ১৪৭।]

সুতরাং প্রমাণিত হল, জীবনের সবক্ষেত্রে আমলে সলেহ বা নেককাজ করা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু কিছু হুকুম কেবলই আল্লাহর জন্য খাস (সুনির্দিষ্ট) এবং তাতে আর কেউই শরীক নয়- এটাই পারিভাষিক ইবাদাত। আর কিছু হুকুম স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মানুষের পারস্পরিক লেনদেন ও জীবন-যাপন পদ্ধতির জন্যে নির্দিষ্ট করেছেন। যা শাব্দিকভাবে ইবাদাতের মধ্যে গণ্য হলেও পারিভাষিকভাবে ইতাআত। কেননা এ হুকুমগুলো আল্লাহ তাআলা নিজের জন্যে খাস করেননি, বরং এর মধ্যে মাখলুককেও শরীক করেছেন। যেমন- আমীরের আনুগত্য, পিতা-মাতার আনুগত্য, স্বামীর আনুগত্য, আল্লাহর বান্দাদের (মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর) হক্ব প্রভৃতি। আর যে কাজের মধ্যে অন্যদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে তা নিষ্কলুষ ইবাদাত না, বরং তাকে ইতাআত বলাই বাঞ্ছনীয়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-ও নিজের জন্য সুনির্দিষ্ট হক্ব তথা ইবাদাত এবং বান্দার হক্ব তথা সদাচারণকে স্বতন্ত্র শব্দে প্রকাশ করেছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে :

وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِه شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ اِحْسَانًا وَّبِذِي الْقُرْبي وَالْيَتمي وَالْمَسكِيْنَ وَالْجَارِذِي الْقُرْبي وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَاِبْنِ السَّبِيْلِ لا وَمَا مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ ـ

‘‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে ইহসান (সদাচরণ) কর এবং নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও।’’ [. সূরা নিসা : ৩৬ আয়াত।]

ইবাদাত ও মুআমালাত : লক্ষণীয়, উক্ত আয়াতে আল্লাহ নিজের হক্বের ক্ষেত্রে ইবাদাত শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং তাতে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেছেন। পক্ষান্তরে বান্দার হক্বের ক্ষেত্রে ইহসান বা সদাচারণ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ পর্যায়ে প্রথমটি আল্লাহর ইবাদাত এবং দ্বিতীয়টি আল্লাহর ইতাআত। এ ধরনের ইতাআতকেই ফিক্বহী পারিভাষায় মুআমালাত (লেনদেন, আচার-ব্যবহার) বলা হয়। ইবাদাতের ক্ষেত্রে (নীতিমালা) হল, এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সহীহ দলিল-প্রমাণ না পাওয়া গেলে মনগড়া আমল করাটাই বিদআত।

এ সর্ম্পকে নবী (স) বলেছেন :

مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তবে তা বাতিল।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৪৩৮৫ (১৮/১৭১৮), রিয়াদুস সালেহীন [বি. আই. সি] ৪/১৬৪৭ নং।]

তিনি (স) অন্যত্র বলেন :

مَنْ اَحْدَثَ فِيْ اَمْرِنَا هذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ

‘‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীন সম্পর্কে কোন নতুন কথা সৃষ্টি করেছে যা এতে নেই, তবে তা রদ বা প্রত্যাখ্যাত।’’ [.সহীহ : সহীহ বুখারী ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম ৪৩৮৪ (১৪/১৭১৮), মিশকাত ১৪০।]

অন্যত্র বলেন :

وَشَرَّ الْاُمُوْرِ مُحْدَثُاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে যা দ্বীন সম্পর্কে নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং প্রত্যেক বিদআতই (নুতন সৃষ্টি) গোমরাহী।’’ [. সহীহ : মুসলিম ১৮৯০ (৪৩/৮৬৭), মিশকাত ১৪১।]

পক্ষান্তরে মুআমালাতের (লেনদেন, আচার-ব্যবহার) ক্ষেত্রে উসূল (নীতি) হল, হারাম বা নিষিদ্ধতার দলিল-প্রমাণ না পাওয়া গেলেই তা বৈধ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا

‘‘তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরই জন্য জমিনের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’’ [.সূরা বাক্বারাহ : ২৯ আয়াত।]

এ আয়াতটি দ্বারা এই দলিল ও উসূল (নীতি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মানুষের জন্য আল্লাহর সৃষ্টি সব কিছুই তার আসল অবস্থাতেই হালাল। কোন জিনিস হারাম করতে হলে দলিল ( نص )দ্বারা প্রমাণ করতে হবে। [. শওকানীর ফতহুল ক্বাদীর সূত্রে : সালাহুদ্দীন ইউসুফ, কুরআনে কারীম মাআ উর্দু তরজমা ও তাফসীর পৃ : ১৬। কেননা, আল্লাহ তাআলা যা কিছু হারাম তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন : وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ ‘‘তোমাদের জন্য যেগুলো হারাম তা তিনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।’’ [সূরা আনয়াম : ১১৯ আয়াত] সুতরাং কোন কিছু হারাম বললে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ জরুরী, অন্যথায় সবই হালাল। এই নীতিটি মুআমালাতের সাথে সম্পৃক্ত। পক্ষান্তরে ইবাদাতের ব্যাপারে যার সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই তা পালন করাই বিদআত।]

এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :

مَا اَحَلَّ اللهُ فِيْ كِتَابِه فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَتَهُ فَاِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا ثُمَّ تَلاَ هذِه الْايَةَ : وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا

‘‘আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে যা হালাল করেছেন তাই হালাল এবং যা হারাম করেছেন তাই হারাম এবং যা থেকে নীরব থেকেছেন তা মাফযোগ্য। সুতরাং যা মাফযোগ্য তা তোমরা আল্লাহ তাআলা’র পক্ষ থেকে গ্রহণ কর। কেননা, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কিছু ভুলেন না।’’ অতঃপর তিলাওয়াত করলেন : ‘‘তোমাদের রব ভুলেন না। [সূরা মারইয়াম : ৬৪]’’ [. সহীহ : হাকিম- কিতাবুত তাফসীর باب سورة مريم । হাকিম এর সনদকে সহীহ বলেছেন। উক্ত মর্মে বাযযার সলেহ সনদে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। [ফতহুল বারী (মাকতাবা মিশর, ১৪২১/২০০১) ১৩/৩৭৮ পৃ.; নায়লুল আওতার (মিশর : দারুল হাদীস ১৪২১/২০০০)৮/৪২৮ পৃ.।]

অন্যত্র স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-ই তাঁর ইবাদাত ও দুনিয়াবী বস্তুসামগ্রী ও উপায়-উপকরণকে পৃথক করে বর্ণনা করেছেন। যেমন বর্ণিত হয়েছে :

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْاِنْسَ اِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ ـ مَا اُرِيْدُ مِنْهُمْ مِّنْ رِّزْقٍ وَّمَا اُرِيْدُ اَنْ يُّطْعِمُوْنِ ـ

‘‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদাতের জন্যে সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে রিযিক চাই না এবং তাদের কাছে খাদ্য-খাবারও চাই না।’’ [. সূরা যারিয়াত : ৫৬-৫৭ আয়াত।]

আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা ইবাদত থেকে রিযিক ও খাদ্য-খাবারকে পৃথক করে দেখিয়েছেন। অথচ দু’টির ক্ষেত্রেই মানুষকে আল্লাহর হুকুম স্বতন্ত্রভাবে পালন করতে হবে। কিন্তু ইবাদত কেবল স্বয়ং আল্লাহর জন্যই করতে হয়, পক্ষান্তরে রুযী রোযগার, খাদ্য-খাবার প্রভৃতি দুনিয়াবী বিষয় মানুষ আল্লাহর হুকুমে নিজের প্রয়োজন ও শৃঙ্খলা আনার জন্য পালন করে থাকে। সুতরাং প্রমাণিত হল ইবাদাত ও মুআমালাত স্বতন্ত্র বিষয়। কিন্তু উভয়টির মূল দাবি আল্লাহর হুকুম মেনে চলা, যা এক কথায় আল্লাহর হুকুম’ কিংবা আমলে সলেহ’ নামে আখ্যায়িত। মোটকথা শাব্দিকভাবে ইবাদাত ও ইতাআত পরিপূরক হলেও পারিভাষিক ও প্রায়োগিক অর্থে ভিন্নতা আছে।

সুতরাং যেহেতু ইবাদাতের ব্যাপারে সরাসরি শক্তিশালী দলিল-প্রমাণ ছাড়া নতুন কিছুর উপর আমল করা নিষিদ্ধ এ জন্য বিদআত শব্দটি এক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে মুআমালাত বা বৈষয়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে শরীআত থেকে নিষেধাজ্ঞা না পাওয়া পর্যন্ত তা সাধারণভাবে বৈধ। এ ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ও নিত্যনতুন বিষয়াদির সংযোগ চলতে থাকবে। এ কারণে বৈষয়িক লেনদেনের ব্যাপারে বিদআত শব্দটি প্রযোজ্য নয়। বরং ‘‘যা নিষিদ্ধ নয় তা-ই বৈধ।’’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন