মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
‘‘আল্লাহ তাআলা আমার পূর্বে যে সব নবী (স)-কে তাঁর উম্মাতের জন্য পাঠিয়েছিলেন, ঐ উম্মাতের মধ্যে তাঁর জন্য সাহায্যকারী ও সাহাবীগণ ছিলেন। যারা তাঁর সুন্নাতের উপর আমল করতেন ও তাঁর হুকুম মেনে চলতেন। তাদের পরে ঐ সমস্ত খারাপ লোকের উদ্ভব হতো যারা এমন কথা বলত যার উপর আমল করত না। আর তাদের যে বিষয়ের নির্দেশ দেয়া হয়নি, তার উপর আমল করত। যে ব্যক্তি ঐ সমস্ত লোকদের সাথে হাত দ্বারা জিহাদ করে সে মু’মিন, যে যবান দ্বারা জিহাদ করে সেও মু’মিন, আর যে অন্তর দ্বারা জিহাদ করে সেও মু’মিন। অন্যথায় এর বাইরে তিল দানা পরিমাণ ঈমানের অস্তিত্বও নেই।’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৮৩ (৮০/৫০), মিশকাত ১৫৭ ।]
এই শেষোক্ত হাদীসটিতেও ক্বলব তথা অন্তরের কার্যকারীতাকে স্বীকার করে তাকে সর্বশেষ ঈমানের অস্তিত্ব বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যা আহলে সুন্নাতের আক্বীদাকেই প্রতিষ্ঠিত করে। পক্ষান্তরে খারেজীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংশয় : অনেকে এ ক্ষেত্রে বলতে পারেন, আলোচ্য হাদীসটিতো উপায়হীন অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যখন পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে তখন কেবল অন্তরের কার্যকারিতা গ্রহণযোগ্য নয়।
জবাব : হাদীসটিতে অন্তরের উক্ত কার্যকারিতাকে দুর্বল ঈমান বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ ঈমানের সর্বশেষ অবস্থা। সুতরাং যখন শরীআত নিজেই তা স্বীকৃতি দেয় তখন তা অস্বীকার করা প্রকারান্তরে ‘‘আল্লাহর বিধানকেই অস্বীকার করা’’। যা কুফরে ই‘তিক্বাদী বা আক্বীদাগত কুফরের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া যারা ঈমানী দুর্বলতা ও অন্যান্য কারণে আমলগতভাবে চরম পাপী হিসাবে গণ্য হবে তাদের আখিরাতের পরিস্থিতি সম্পর্কেও হাদীসে সু্স্পষ্ট বর্ণনা আছে। যেমন- সমস্ত নবী-রসূলদের শাফায়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলবেন :
‘‘মালাইকাগণ, নবীগণ ও মুমীনগণ সবাই শাফায়ত করেছেন, এখন এক আর-রহমানুর রহিমীন ছাড়া কেউ বাকি নেই। এই বলে তিনি মুষ্টিভরে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা কখনো কোন নেক কাজ করেনি’’ [. সহীহ : সহীহ মুসলিম ৩৪৩ (৩০২/১৮৩), মিশকাত ৫৫৭৯।]
উপরিউক্ত হাদীসগুলো মুরজিয়া ও খারেজী উভয় ফিতনাকে খণ্ডন করে। কেননা-
১.মুরজিয়াদের দাবি হল, কেবল ঈমান থাকাই জান্নাতের যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অথচ শেষোক্ত হাদীসটিতে কেবল ঈমান থাকলেও জাহান্নামী হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
২.খারেজীরা আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘনকারীকে কাফিরদের মতো চিরস্থায় জাহান্নামী মনে করে থাকে।
‘‘আমরা কোন বৈঠকে রসূলুল্লাহ (স) এর সঙ্গে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন : তোমরা আমার কাছে এ বলে বায়য়াত গ্রহণ কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যিনা করবে, চুরি করবে না এবং কাউকে হত্যা করবে না, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কিন্তু ন্যায়সঙ্গতভাবে (অর্থাৎ ক্বিসাসের কারণে)। অতএব, তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তা পূর্ণ করবে, তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাবে। আর যদি কেউ উক্ত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করে, তবে তাই তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যক্তি উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয় অতঃপর আল্লাহ তাআলা তা গোপন রাখেন, তবে বিষয়টি মহান আল্লাহ’র এখতিয়ারে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন।’’ [সহীহ মুসলিম ৪৩৫৫ (৪৩/১৭০৯)- কিতাবুল হুদূদ باب الحدود كفارات لاهلها ]
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- উবাদা (রা) বলেন : আমরা এ সকল কথার উপর তাঁর হাতে বায়আত করলাম।’’ [সহীহ বুখারী ১৮, সহীহ মুসলিম ৪৩৫৩ (৪১/১৭০৯), মিশকাত ১৮]
৪.হত্যাকারী ও সুদখোরো চিরস্থায়ী (!?) জাহান্নামী হওয়া
পূর্বের হাদীসটির বিপরিতে মু‘তাযিলা ও খারেজীদের দলিল হল :
ক. আল্লাহ তাআলা হত্যাকারী [. হত্যাকারীসম্পর্কিত আয়াত: আল্লাহ তাআলা বলেন : وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا .‘‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাক্রমে মু’মিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম- তাতে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে লা‘নত করেছেন এবং তার জন্যে রয়েছে ভয়ানক আযাব।’’ [সূরা নিসা : ৯৩ আয়াত]] এবং
খ. সুদখোরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলেছেন। [. সুদখোরসম্পর্কিত আয়াত : আল্লাহ তাআলা বলেন : وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُون ‘‘(সুদ হারাম ঘোষণার পর) যে পুনরায় করবে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’’ [সূরা বাক্বারাহ : ২৭৫]অতঃপর আল্লাহ তাআলা সুদের মধ্যে ফিরে যাওয়াকে কুফরির পাপ বলেছেন : يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ‘‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন ও দানকে বর্ধিত করেন। আর আল্লাহ কোনো অধিক কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না।’’ [সূরা বাক্বারাহ : ২৭৬]]
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় এই দুটি কবীরা গুনাহকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং সে কাফির।
জবাব : পূর্বে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটির মূলনীতির আলোকে বুঝা যায়, সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহকারীদের আল্লাহ ইচ্ছা করলে জাহান্নামে দিতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমা করতে পারেন। তা ছাড়া হাদীসটির মতো কুরআনেও মু’মিনের পাপের কাফফারার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘হে মু’মিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য ক্বিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে, স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী; তবে যাকে তার ভাইদের পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দেয়া হবে, তখন যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও ইহসানের সাথে তা আদায় করা। এ বিধি তোমাদের রবের পক্ষ হতে সহজ ব্যবস্থা ও অনুগ্রহ। এরপরও যে সীমালঙ্ঘন করে তার জন্য রয়েছে ভয়ানক আযাব। ’’ [সূরা বাক্বারাহ : ১৭৮ আয়াত]
‘‘যার শরীরে কোন আঘাত করা হয়েছে এবং সে তা সাদাক্বা (মাফ) করে দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা যে পর্যায়ের ক্ষমা হবে ঠিক একই পর্যায়ের গোনাহ মাফ করা হবে।’’ [মুসনাদে আহমাদ, শুআয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৮৪৪ নং)।]
উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে মানুষের অধিকার সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহ তথা হত্যার ব্যাপারটিই মানুষ দ্বারাও যখন ক্ষমাযোগ্য। তখন অন্যান্য কবীরা গোনাহর ক্ষেত্রেও ঐ নীতিই প্রযোজ্য যা পূর্বে সহীহ মুসলিমের উবাদা ইবনু সামিত (রা) -এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যথাযথ শাস্তি ভোগ বা মেয়াদের পর কেবল ঈমানের বদৌলতে জান্নাতী হওয়া সম্পর্কিত হাদীসগুলোও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ এক্ষেত্রে উক্ত আমলটি আমলী কুফর, আক্বীদাগত কুফর নয়।
চিরস্থায়ী জাহান্নামী ঘোষণার পরও কেবল মু’মিনদের জন্য
ব্যতিক্রম সিদ্ধান্তের ঘোষণা রয়েছে
হত্যা ও সুদের আয়াতে উক্ত কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের সম্পর্কে ব্যতিক্রম ইচ্ছাও প্রকাশ করবেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘অতএব যারা হতভাগ্য তারা থাকবে আগুনে (জাহান্নামে) এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে চিৎকার ও আর্তনাদ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; আপনার রব যা চান তা-ই করেন। পক্ষান্তরে যারা ভাগ্যবান তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে : যতদিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে, যদি না আপনার রব অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; এটা এক নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার।’’ [সূরা হুদ : ১০৬-১০৮ আয়াত]
‘‘অনেকগুলো ক্বওমকে তাদের গুনাহর কারণে শাস্তি হিসেবে জাহান্নামের তাপে দগ্ধ করা হবে। অতঃপর আল্লাহ নিজ রহমতে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাদেরকে জাহান্নামী বলে সম্বোধন করা হবে।’’ [সহীহ বুখারী হা/৭৪৫০, অনুরূপ হা/৬৫৫৯]
‘‘এই ব্যতিক্রমের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহীহ অর্থ হল- এই ব্যতিক্রম ঐ সমস্ত গুনাহগারের জন্য, যার তাওহিদবাদী ও ঈমানদার হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতে উল্লিখিত شقى (হতভাগা) শব্দের দাবি ‘আম (ব্যাপকার্থক)। অর্থাৎ কাফির ও মু’মিন পাপী উভয়েই এর অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَۚ দ্বারা মু’মিন পাপী ব্যতিক্রম হিসাবে গণ্য। এখানে ما شاء এর ما এর অর্থ من (যে বা যারা)।’’ [. সালাহুদ্দীন ইউসুফ, তাফসীরে আহসানুল বয়ান (সৌদি আরব : শাহ ফাহদ কুরআনে কারীম প্রিন্টিং কমপেস্নক্স), আলোচ্য আয়াতের তাফসীর। আরও দ্র : : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ ও তাফসীর (কুরআনুল কারীম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, খাদেমুল হারামাইন আশ-শরীফাইন বাদশাহ সালমান ইবনু আব্দুল আজিজ আলে সউদ-এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১৪৩৬ হিজরি- আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্র :)]]
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ করে।’’ [ সূরা নিসা : ৪৮ আয়াত]
মুত্তাক্বীদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো
যদি সূরা হুদের ১০৭ নং আয়াতটির শেষাংশের দাবি কাফিরদের সাথে হতো, অর্থাৎ ‘জাহান্নামে যাওয়ার পর পুনরায় জান্নাতে যাওয়া’, তা হলে عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذ ‘‘এটা এক নিবিচ্ছিন্ন পুরস্কার’’-বাক্যটি আসত না। কেননা মু’মিনদেরকেই কেবল জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ থাকবে জান্নাতে ও নিয়ামতের মধ্যে। তারা উপভোগ করবে যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদের রক্ষা করবেন।’’ [সূরা তুর : ১৭-১৮ আয়াত]
অন্যত্র মু’মিনদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘তারা সেখানে মৃত্যুর স্বাদ পাবে না, প্রথম মৃত্যু ব্যতীত এবং আপনার রব তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।’’ [সূরা দুখান : ৫৬ আয়াত]
এই দুটি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হয়, আল্লাহ তাআলা নিজের অনুগ্রহে মুত্তাক্বীদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন, যা খারেজী ও মু’তাযিলা আক্বীদার সম্পূর্ণ বিরোধী।
অপর একটি আয়াত ও হাদীসের সম্মিলিত দাবি থেকে জানা যায়। কাফিররা জাহান্নামী মু’মিনদের দেখে টিটকারী দিলে তখন আল্লাহ তাআলা মু’মিন জাহান্নামীদেরকে সেখান থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে নেবেন। যেমন- আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘আল্লাহ তাআলা কিছু মু’মিনকে তাদের শাস্তি ভোগের পর জাহান্নাম থেকে বের করবেন। (এর পূর্বে) যখন মুশরিকদের সাথে তাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করবেন, তখন মুশরিকরা তাদেরকে বলবে, তোমরা তো দুনিয়াতে দাবি করতে যে, তোমরা দুনিয়াতে আল্লাহর ওলী (প্রিয়ভাজন) ছিলে। এখন কী হলো, আমাদের সাথে জাহান্নামে যে? আল্লাহ তাআলা এ কথা শুনে শাফাআতের অনুমতি দিবেন। তখন মালাইকা, নবীগণ এবং মু’মিনগণ তাদের জন্য শাফাআত করবেন। ফলে আল্লাহ তাআলা’র নির্দেশে তাদেরকে বের করা হবে। মুশরিকরা এটা দেখে বলবে : যদি আমরা তাদের মতো হতাম, তবে আমরা তাদের সাথে বের হতে পারতাম। তিনি বলেন : رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ আয়াতটিতে একথাই বলা হয়েছে। অতঃপর তাদের মুখম-ল কালো হওয়ার কারণে তারা জান্নাতের মধ্যে জাহান্নামী নামে পরিচিত হবে। তখন তারা আল্লাহর দরবারে আবেদন করবে, ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের এই নামের কলঙ্ক মুছে দিন। তখন আল্লাহ তাদের আবেদন মঞ্জুর করবেন। এরপর তারা জান্নাতের নহরে গোসল করবে ও তাদের ঐ নাম মুছে যাবে।’’ [.সহীহ ইবনু হিব্বান- শায়েখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে সহীহ লি-গয়রিহি বলেছেন (আত-তা‘লিকাতুল হিসান আলা সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৭৩৮৯), শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহ) লিখেছেন : এটি তাবারানি তাঁর ‘আল-মু‘জামুল আওসাতে’ (৮১০৬) উল্লেখ করেছেন। এর সনদ হাসান। (তাহক্বীক্ব তাফসীরে ইবনু কাসির উর্দু আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্র :) হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত। ফলে সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হাদীসটি হাসান বা সহীহ লি-গয়রিহি। বিস্তারিত : তাফসীরে ইবনু কাসির, তাফসীরে মাযহারি, ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার অনুবাদ ও তাফসীর (কুরআনুল কারীম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, খাদেমুল হারামাইন আশ-শরীফাইন বাদশাহ সালমান ইবনু আব্দুল আজিজ আলে সউদ-এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ১৪৩৬ হিজরি- আলোচ্য আয়াতের তাফসীর দ্র :)]]
পক্ষান্তরে জাহান্নামকে কেবল কাফির মিথ্যারোপকারীদের চিরস্থায়ী আবাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম প্রতীক্ষায় থাকবে, সীমালঙ্ঘনকারীদের আশ্রয়স্থলরূপে। তারা সেখানে অনন্তকাল (হুকবা সময়কাল) থাকবে। সেখানে তারা কোনো শীতল ও পানীয় আস্বাদন করবে না। কিন্তু ফুটন্ত পানি ও পূঁজ পাবে। পরিপূর্ণ প্রতিফল হিসেবে। নিশ্চয় তারা হিসাব-নিকাশ আশা করত না এবং আমার আয়াতসমূহের প্রতি মিথ্যারোপ করত।’’ [সূরা নাবা : ২১-২৮]
সম্মানিত পাঠক, কিছু পূর্বে বর্ণিত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে- মু’মিনদের আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। আর শেষোক্ত আয়াতে প্রমাণিত হলো, আখিরাত অস্বীকারকারী তথা কাফিরদের ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রমটি ঘটবে না। সুতরাং সূরা হুদের ১০৬-১০৮ নং আয়াতের জান্নাতী ও জাহান্নামীদের বর্ণনার পরে إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۚ (তবে, তোমার রব যা ইচ্ছা করেন)-এর ব্যতিক্রম ইচ্ছার দাবিটি কেবলই মু’মিনদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
আবার অনেক সময় মু’মিন ও কাফিরকে এই আয়াতে একইভাবে ভয় দেখান হলেও পূর্ববর্তী আয়াত ও হাদীসের ন্যায় সেগুলোর ব্যাখ্যা নিতে হবে। যেমন, সুদ সম্পর্কে আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী (রহ) লিখেছেন :
قوله تعالى : ﴿ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبا﴾ معناه عند جميع المتأولين في الكفار ، ولهم قيل : ﴿فَلَهُ مَا سَلَفَ﴾ ولا يقال ذلك لمؤمن عاص بل ينقض بيعه ويرد فعله وإن كان جاهلا ، فلذلك قال ﷺ : " من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد ". لكن قد يأخذ العصاة في الربا بطرف من وعيد هذه الآية .
‘‘আল্লাহর বাণী- ‘এটা (সুদখোর শয়তানের আছরে পাগলের মতো হবে) এ জন্যে যে, তারা বলে : নিশ্চয় ক্রয়-বিক্রয় হল সুদের মতো’- প্রথম যুগের সমস্ত ব্যাখ্যাকারী আয়াতটির দাবি কাফিরদের সাথে গণ্য করেছেন। তাদেরকে বলা হয়েছে فَلَهُ مَا سَلَفَ ‘তাদের মধ্যে যারা চলে গেছে তারা ব্যতিক্রম’। কেননা গুনাহগার মু’মিনকে এভাবে বলা হয় না। বরং তার ক্রয়-বিক্রয় ভঙ্গ হয় এবং তার আমলটি বাতিল করা হয় - যদি সে অবগত না থাকে। কেননা রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : ‘যে এমন কোনো আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই- তা রদ বা বাতিল।’ পক্ষান্তরে সুদ গ্রহণ করে পাপে লিপ্ত ছিল তাদের ক্ষেত্রে আয়াতটির ধমকি প্রযোজ্য।’’ [তাফসিরে কুরতুবি, আলোচ্য আয়াতের তাফসির দ্র :]
বুঝা যাচ্ছে, সুদ ও হত্যার আয়াতটি সম্পর্কে খারেজীরা যে অর্থ নিয়েছেন সেটা কুরআন থেকে কুরআন, কুরআন থেকে হাদীস সালাফদের তাফসীর অনুযায়ী ভুল তাফসীর।
খারেজী ও মু’তাযিলাদের পক্ষ থেকে আরও একটি যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, সুদখোরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। (সূরা বাক্বারাহ : ১৭৯)
এর জবাব হল, মু’মিনের সাথে মু’মিনের যুদ্ধ ঘটতে পারে। [সূরা হুজুরাত : ৯]
রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : لاَ تَرْجِعُنَّ بَعْدِيْ كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ ‘‘তোমরা আমার পরে পরস্পরের গর্দান উড়িয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।’’ [সহীহ বুখারী ১২১, সহীহ মুসলিম ১২৬ (১১৮/৬৫), মিশকাত ৩৫৩৭]
বুঝা যাচ্ছে, এইসব বড় বড় ক্ষেত্রেও আমলটি আক্বীদাগত নয় বরং আমলগত কুফর। শেষোক্ত আয়াত ও হাদীসটি পরস্পরের ব্যাখ্যা।
পক্ষান্তরে যদি সুদকে অস্বীকার করে তাহলে সে নিশ্চিত কাফির। তাদের বিরুদ্ধে মুরতাদ-কাফির হিসেবে যুদ্ধ করতে হবে। যেভাবে আবূ বকর (রা) তাঁর খেলাফতের শুরুতে যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। কেননা, অস্বীকারের দ্বারা কুফরটি আক্বীদা ও আমল উভয় কুফরে পরিণত হয়।
‘‘হে মুমিণগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।’’ [সূরা মায়েদা : ৫১]
এই আয়াতের আলোকে বলা হয়, যেসব ব্যক্তি বা শাসক বা দেশ কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে তারা কাফির হয়ে যায়। অথচ পরবর্তী আয়াত বলছে, আয়াতটি তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা আক্বীদার দিক থেকে মুনাফিক্ব :
‘‘বস্তুত যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌঁড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে : আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দূরে নয়, যেদিন আল্লাহ তাআলা বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেবেন-ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্যে অনুতপ্ত হবে।’’ [সূরা মায়েদা : ৫২]
পরবর্তী দুটি আয়াতেও আক্বীদাগত মুনাফিক্বদের সাথে মু’মিনদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘মু’মিনরা বলবে : এরাই কি সেসব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি? তাদের কৃতকর্মসমূহ বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। হে মু’মিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।’’ [সূরা মায়েদা : ৫৩-৫৪]
ইমাম তাবারী (রহ) লিখেছেন :
غير أنه لا شك أن الآية نـزلت في منافق كان يوالي يهودًا أو نصارى خوفًا على نفسه من دوائر الدهر، لأن الآية التي بعد هذه تدلّ على ذلك، وذلك قوله : فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَى أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ الآية .
‘‘এতে কোন সংশয় নেই যে, আয়াতটি মুনাফিক্বদের সম্পর্ক নাযিল হয়েছে, যারা আগত দিনগুলোতে নিজেদের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকায় ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আন্তরিক বন্ধু বানিয়েছিল। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌঁড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে : আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই। (সূরা মায়েদা : ৫২)।’’ [তাফসীরে ইবনু জারীর তাবারী. সূরা মায়েদা ৫১-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর]
এ থেকে বুঝা যায়, যেসব শাসক বা ব্যক্তি ইসলামের থেকে ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে বেশি হক্ব মনে করে তাদেরকে আন্তরিক বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তবে তারা কাফির। নবী (স) -এর যামানাতে আক্বীদাগত মুনাফিক্বদের সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে এভাবে জানিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানের মুনাফিক্বদের ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। যেমন, সাহাবী হুযায়ফা (রা) হতে বর্ণিত :
‘‘নিফাক বস্তুত নবী (স) -এর যুগে ছিল। আর এখন হল তা ঈমান গ্রহণের পর কুফর।’’ [সহীহ বুখারী ৭১১৪, মিশকাত ৬২]
এ কারণে ইবনু তাইমিয়া (রহ) ও কয়েকজন ইমাম আক্বীদাগত নিফাক্ব কেবল নবী (স) -এর যামানার সাথে খাস করেছেন। ঐ যামানার পরবর্তীদের ক্ষেত্রে কেবল আমলগত নিফাক্ব প্রযোজ্য করেছেন। কেননা, নবী (স)-এর যামানাতে ওহীর মাধ্যমে আক্বীদাগত মুনাফিক্বদের জানা যেত। আমাদের যামানাতে যা অসম্ভব। তবে এ যামানাতে এভাবে আক্বীদাগত নিফাক্ব বা কুফর স্পষ্ট হতে পারে, যখন ঐ ব্যক্তি নিজেই সেটা দাবি করে : আমি আক্বীদাগতভাবে কাফির বা মুনাফিক্ব।
সুতরাং যখন কোন শাসক বা ব্যক্তিবিশেষ নিজেকে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে - তখন তাকে আক্বীদাগত কাফির বলা যাবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হবে তখন যাচাই করবে এবং যে তোমাদেরকে সালাম দেবে দুনিয়ার জীবনের সম্পদের আশায় তাকে বলবে না যে, ‘তুমি মু’মিন নও’।’’ [সূরা নিসা : ৯৪]
আয়াতটির শানে-নুযূল বলছে, যখন কাফিরদের হয়ে কেউ যুদ্ধ করতে আসে অতঃপর সালাম দেয় নিজেকে ‘মু’মিন’ হিসেবে পরিচয় দিতে। তখন তাকে হত্যা করা যাবে না, এমনকি সে মু’মিন কি না, এ ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। ঐ কাফিরর পক্ষে যুদ্ধকারী ছলনা করুক বা সত্যিই এখন মু’মিন হতে চায় - যেটিই হোক তাকে মু’মিন হিসেবেই মেনে নিতে হবে। ইমাম আদিল হাম্বলী (রহ) লিখেছেন :
موالاة الكافر تنقسم ثلاثة أقسامٍ . الأول : أن يَرْضَى بكفره ، ويُصَوِّبَه ، ويواليَه لأجْلِه ، فهذا كافر ؛ لأنه راضٍ بالكفر ومُصَوِّبٌ له . الثاني : المعاشرةُ الجميلةُ بحَسَب الظاهر ، وذلك غير ممنوع منه . الثالث : الموالاة ، بمعنى الركون إليهم ، والمعونة ، والنُّصْرة ، إما بسبب القرابة ، وإما بسبب المحبة مع اعتقاد أن دينَه باطل - فهذا منهيٌّ عنه ، ولا يوجب الكفر .
‘‘কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব তিন প্রকারে বিভক্ত : প্রথমত, যে (মুসলিম) তাদের কুফরকে মেনে নেয় এবং সঠিক মনে করে আর এ কারণেই তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে, এরা কাফির। কেননা সে কুফরের ব্যাপারে খুশি এবং সেটাকে সত্যায়নকারী। দ্বিতীয়ত, দুনিয়াবী সুবিধা অর্জনে বাহ্যিক সুন্দর লেনদেনের সম্পর্ক, এটা নিষিদ্ধ নয়। তৃতীয়ত, এমন বন্ধুত্ব যার ফলে তাদের উপর নির্ভর করা হয়, সহায়ক শক্তি হয়, সহযোগিতা করা হয়- সেটা তাদের নৈকট্য হাসিলের কারণে হোক, অথবা এই আক্বীদাসহ মুহাব্বাতের ভিত্তিতে যে, তাদের দ্বীন বাতিল; সেক্ষেত্রে এটা নিষিদ্ধ কিন্তু ওয়াজিব কুফর নয়।’’ [আল-লুবাব ফী উলূমুল কিতাব ৫/১৪৩ পৃ. সূরা আলে-ইমরানের ২৮ নং আয়াতের তাফসীর]
ইমাম রাযী (রহ)-ও প্রায় কাছাকাছি অর্থে উক্ত তিনটি ভাগ উল্লেখ করেছেন। [তাফসীরে রাযী (মাফাতিহুল গায়ব) সূরা আলে-ইমরানের ২৮ নং আয়াতের তাফসীর]
অপর একটি দিক :
উপকারের ক্ষেত্রে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব : এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের শাসকদের অধিকাংশ ইয়াহুদী ও নাসারাদের সাথে বন্ধুত্বের কারণ হল, তারা তাদের ভয় করে। অর্থাৎ তাদের টেকনোলজির ভয়, আরাম-আয়েশের আকাঙ্ক্ষা, অলসতা ও উদ্যমহীনতা, মৃত্যুর ভয়, মাল-সম্পদের মুহাব্বাত প্রভৃতির কারণে আমাদের শাসকরা তাদের শত্রু ইয়াহুদী-নাসারাদের সাথে বন্ধুত্ব করে। এসব ক্ষেত্রে শাসকরা ফাসেক্ব ও মুনাফিক্ব, কিন্তু এমন কাফির নয় যে, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে নিজের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দিক লক্ষ রেখে কাফিরদের সাথে বাহ্যিক বন্ধুত্বের সম্পর্কের অনুমতি দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্কে থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন।’’ [সূরা আলে ইমরান : ২৮]
শাসকদের অন্তরে কাফির এবং ইয়াহুদী ও নাসারাদের ব্যাপারে যে ভয়-ভীতি, সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে - সেটা হওয়া উচিত কি না ? অথচ উক্ত আয়াতটিতে আত্মরক্ষার ব্যতিক্রম অনুমতিটির প্রেক্ষাপটে শাসককে তাকফীর করার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে। আয়াতটিতে ব্যবহৃত تقاة দ্বারা সালাফগণ তাক্বীয়া ও ভয় উভয় অর্থ নেন। ইমাম শানকীতি মালিকী (রহ) বলেছেন : যদি শত্রুর ভয়ে কোন মুসলিম তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে তবে তা জায়েয। তিনি সূরা মায়িদা’র ৫১ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন :
وبين في موضع آخر : أن محل ذلك، فيما إذا لم تكن الموالاة بسبب خوف، وتقية، وإن كانت بسبب ذلك فصاحبها معذور، وهو قوله تعالى : ﴿لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً﴾ ]٣/ ٢٨ ] ، فهذه الآية الكريمة فيها بيان لكل الآيات القاضية بمنع موالاة الكفار مطلقاً وإيضاح، لأن محل ذلك في حالة الاختيار، وأما عند الخوف والتقية، فيرخص في موالاتهم، بقدر المداراة التي يكتفي بها شرهم، .
‘‘অন্যত্র আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন যে, যদি (ইয়াহুদী ও নাসারাদের সাথে) বন্ধুত্বের নিষেধাজ্ঞা ভয় ও বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে না হলে প্রযোজ্য। আর যদি এ (ভয় ও বেঁচে থাকার) কারণে হয় তবে ব্যক্তি মা‘যুর। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ্র কোন সম্পর্কে থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাদের নিকট থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন এবং আল্লাহর দিকেই প্রত্যাবর্তন।’ [সূরা আলে ইমরান : ২৮] এই আয়াতে কারিমাটি কাফিরদের সাথে উন্মুক্ত ও সুস্পষ্ট বন্ধুত্বের নিষেধাজ্ঞার ফায়াসালাকারী আয়াত হিসেবে সুস্পষ্ট করে। কেননা সেক্ষেত্রে বন্ধুত্বটি হবে উপায়হীন অবস্থাতে ভয় ও বেঁচে থাকার দাবিতে, ফলে সেক্ষেত্রে তাদের সাথে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে, সামর্থ্যানুযায়ী কোমল আচরণ দ্বারা যা তাদের ক্ষতি মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে।... ’’ [আযওয়াউল বায়ান সূরা মায়েদা’র ৫১ নং আয়াতের তাফসীর]
কাফিদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ হলেও দুনিয়াবী লেনদেন বৈধ : এ মর্মে আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
‘‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।’’ [সূরা মুমতাহিনা : ৮ আয়াত]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/385/6
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।