hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

হাফেয ইবন কাসীরের তাফসীর থেকে সংক্ষেপিত সূরা আল-আনফালের তাফসীর

লেখকঃ শাইখ আহমদ মুহাম্মাদ শাকের

১১
রাসূলের আনুগত্য করা মুমিনগণের জন্য উত্তম:
ইমাম আবু জা‘ফর আত তাবারী রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে বের করে এনেছিলেন”-এর কাফ অক্ষরটির ব্যাখ্যায় মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মুমিনগণের ইসলাহের ক্ষেত্রে তার উপমা দেওয়া হয়েছে। তাদের রবের প্রতি তাদের ভীতি এবং তাদের নিজেদের সম্পর্ককে সুষ্ঠু সুন্দর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি তাদের আনুগত্য। অতঃপর ইকরিমা থেকে এমনই বর্ণনা করা হয়েছে।

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যেভাবে তোমরা গনীমত নিয়ে পরস্পর বিবাদ করেছ আর এ ব্যাপারে কৃপণতা করেছ, যার ফলে তোমাদের থেকে আল্লাহ তা‘আলা তা ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং তা স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বন্টনে দিয়েছেন, এরপর তিনি (রাসূল) সেটা ন্যায় ও ইনসাফের সাথে বন্টন করেছেন। এটি তোমাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়েছিল। অনুরূপভাবে যখন তোমরা অস্ত্রে সজ্জিত শত্রুদের বিরুদ্ধে বের হতে অপছন্দ করেছিলে, তারা ঐ দল যারা তাদের (বাতিল) ধর্মের সাহাযার্থে এবং তাদের বাণিজ্যিক কাফেলাকে বাঁচানোর জন্য বের হয়েছিল। তোমরা যুদ্ধ অপছন্দ করেছিলে, ফলে আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ফায়সালা দেন আর দিনক্ষণ নির্ধারণ ছাড়াই তোমাদেরকে এবং তোমাদের শত্রুদেরকে মুখোমুখি করেন। এতে তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাদেরকে হিদায়াত করা, সাহায্য করা এবং বিজয় দান করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦﴾ [ البقرة : ٢١٦ ] “তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপ্রিয়, কিন্তু তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ কর সম্ভবতঃ তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর এবং সম্ভবতঃ কোনো কিছু তোমাদের কাছে প্রিয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৬]

ইবন জারির রহ. বলেন, অন্যান্যরা বলেন, كَمَآ أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِن بَيْتِكَ بِالْحَقِّ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে বের করে এনেছিলেন”-এর অর্থ মুমিনদের একটি অংশের অপছন্দ সত্বেও তোমাদের বের করা হয়, অনুরূপভাবে তারা যুদ্ধ করতেও অপছন্দ করে। তারপর মুজাহিদ থেকেও একই কথা বর্ণিত, তিনি বলেন, كَمَآ أَخْرَجَكَ رَبُّكَ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে বের করে এনেছিলেন” তারা অনুরূপভাবে হকের বিষয়ে তোমার সাথে বিবাদ করবে। সুদ্দি রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আয়াতটি বদরের যুদ্ধে বের হওয়া এবং তার সাথে সাথে বিবাদ করা বিষয়ে নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَإِنَّ فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ “যদিও মুমিনদের একদল তা পছন্দ করে নি” মুশরিকদেরকে অনুসন্ধান করার জন্য। আল্লাহ বলেন, يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ “সত্য স্পষ্ট করে দেওয়ার পরও তারা তোমার সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছিল”।

কেউ কেউ বলেন, তারা তোমার নিকট আনফাল (যুদ্ধলব্ধ অতিরিক্ত সম্পদ) চায়। আর এ ব্যাপারে তর্ক করে, যেভাবে বদরের দিন তোমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, তখন তারা বলেছিল: আপনি বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার জন্য আমাদেরকে বের করে এনেছেন, আমাদেরকে যুদ্ধের ব্যাপারে অবহিত করেন নি, যাতে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি।

আমি বলি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফেলার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হন। যে কাফেলাটি সিরিয়া থেকে ফিরছিল। তাতে ছিল কুরাইশদের বিশাল ধন ভাণ্ডার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের এ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বললে লোকেরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়, কেউ কেউ বিষয়টিকে হালকা মনে করে। অবশেষে তিনশত তের জন লোক নিয়ে আল্লাহর রাসূল নদীর দিকে বদরের পথে বের হন। আবু সুফিয়ান যখন হিজাযের নিকটবর্তী হয় তখন সে সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয় এবং গোপন সূত্রে সংবাদ সংগ্রহ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বের হওয়ার কথা জানতে পারে। সে সময় সে ভীত হয়ে দমদম ইবন আমর আল গিফারীকে ভাড়া করে মক্কায় প্রেরণ করে যাতে করে সে বাণিজ্য কাফেলাকে রক্ষার জন্য কুরাইশদের সমবেত করে আর তাদেরকে যেন অবহিত করে যে, মুহাম্মাদ বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার জন্য তার সহচরবৃন্দকে সমবেত করেছে। দমদম ইবন আমর দ্রুত মক্কায় গমন করে। ফলে তারা প্রায় এক হাজার যোদ্ধা নিয়ে বের হয়ে পড়েন। এ দিকে আবু সুফিয়ান বিকল্প পথ দিয়ে মক্কায় গমন করে এবং বেঁচে যায়। মক্কার কাফেররা বদরের প্রান্তরে এসে সমবেত হয়। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ও কাফেরদের মাঝে অনির্ধারিতভাবে একত্র করেন। যাতে মুসলিমদের বাক্যকে সমুন্নত করেন, তাদের দুশমনদের ওপর তাদের বিজয়ী করেন এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করেন। যার বর্ণনা অচিরেই আসছে।

মোটকথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যখন বাণিজ্যিক কাফেলা বের হওয়ার সংবাদ পৌঁছল, আল্লাহ তা‘আলা যে কোনো একটি দল (হয় বাণিজ্যিক কাফেলা বা কুরাইশ) যে কোনো একটি ওপর বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়ে তার নিকট অহী প্রেরণ করেন। অধিকাংশ মুসলিম বাণিজ্যিক কাফেলার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ, তাতে যুদ্ধ ছাড়াই অর্জন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيۡرَ ذَاتِ ٱلشَّوۡكَةِ تَكُونُ لَكُمۡ وَيُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُحِقَّ ٱلۡحَقَّ بِكَلِمَٰتِهِۦ وَيَقۡطَعَ دَابِرَ ٱلۡكَٰفِرِينَ “আর তোমরা চেয়েছিলে যেন নিরস্ত্র দলটি তোমরা লাভ কর আর আল্লাহ চেয়েছিলেন তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে আর কাফেরদের জড় কেটে দিতে। যাতে তিনি সত্যকে সত্য হিসেবে প্রতিপন্ন করেন আর মিথ্যেকে মিথ্যে প্রমাণিত করেন, যদিও তা পাপীদের কাছে পছন্দনীয় নয়”। হাফেয আবু বকর ইবন মারদুবিয়্যাহ আবু আইউব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে আবূ সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফেলা সম্পকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, তা সিরিয়া থেকে অগ্রসর হচ্ছে। এ দলটির ওপর আক্রমণ করার ব্যাপারে তোমাদের আগ্রহ আছে কি? হতে পারে আল্লাহ এর মাধ্যমে আমাদের লাভবান করবেন। আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি ও আমরা বের হলাম। আমরা এক বা দুই দিন চলার পর তিনি আমাদের বললেন, তারা আমাদের বের হওয়ার সংবাদ জেনে ফেলেছে সুতরাং কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করাকে তোমরা কি মনে করছ? তখন আমরা বললাম, আল্লাহর শপথ শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করার কোনো শক্তি আমাদের নেই। আমরা বাণিজ্যিক কাফেলার উদ্দেশ্যেই বের হয়েছি। তারপর তিনি আবার বললেন, কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ করাকে তোমরা কী মনে করছ? আমরা একই উত্তর দিলে মিকদাদ ইবন ‘আমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে এমন কথা বলব না যে কথা মূসা আলাইহিস সালামের কাওমের লোকেরা তাকে বলেছিল। ﴿فَٱذۡهَبۡ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَٰتِلَآ إِنَّا هَٰهُنَا قَٰعِدُونَ ٢٤﴾ [ المائ‍دة : ٢٤ ] “তুমি এবং তোমার রব যাও যুদ্ধ কর আমরা এখানে অবস্থা করলাম”। সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২৪] এ কথা শোনে আমরা আনসারী সাহাবীরা এ আকাঙ্খা পোষণ করলাম যে, আমরা যদি এমন কথা বলতাম যেমনটি মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আন বলেছে তা আমাদের জন্য অনেক সম্পদের লাভের তুলনায় অধিক প্রিয় ছিল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত كَمَآ أَخۡرَجَكَ رَبُّكَ مِنۢ بَيۡتِكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لَكَٰرِهُونَ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে তোমার ঘর থেকে বের করে এনেছিলেন যদিও মুমিনদের একদল তা পছন্দ করে নি”। তারপর পুরো হাদীস উল্লেখ করেন। ইবন আবী হাতিম রহ. অনুরূপ বর্ণনা করেন। ইবন মারদাবিয়্যাহ আলকামা ইবন ওয়াক্কাস আল-লাইসী থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, বদরের দিন রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, রাওহা নামক স্থানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর? আবু বকর রা. বলল, আমাদের নিকট সংবাদ আছে যে, তারা অমুক অমুক স্থানে। তারপর আবারও ভাষণ দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি মতামত দাও? উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মতো একই উত্তর দিলেন। তারপর আবারও ভাষণ দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কী মতামত দাও? তখন সা‘দ ইবন মু‘আয রা. বললেন, আপনি কি আমাদের থেকে উত্তর চাচ্ছেন হে আল্লাহর রাসূল। যে আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করেছেন এবং আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার শপথ করে বলছি, আমি কখনোই এ পথে চলিনি, আর তা আমার জানাও নেই। কিন্তু আপনি যদি ইয়ামানের ‘বারকুল গামাদ’ও ভ্রমণ করেন আমরা আপনার সাথেই চলতে থাকব। আমরা তাদের মতো হব না যারা মূসা আ. কে বলেছিল, ﴿فَٱذۡهَبۡ أَنتَ وَرَبُّكَ فَقَٰتِلَآ إِنَّا هَٰهُنَا قَٰعِدُونَ ٢٤﴾ [ المائ‍دة : ٢٤ ] “তুমি এবং তোমার রব যাও যুদ্ধ কর আমরা এখানে অবস্থা করলাম”। সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২৪] বরং আমরা বলব, আপনি এবং আপনার রব যান যুদ্ধ করুন আমরা আপনাদের দু’জনের অনুসারী। নিশ্চয় আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মে বের হচ্ছেন, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ব্যতিক্রম কিছু জানিয়েছেন, আল্লাহর জন্য তা বাস্তবায়ন করুন, যার সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান করুন, যার সাথে সম্পর্ক করতে চান করুন, যার সাথে শত্রুতা করতে চান করুন এবং যার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান করুন। আমাদের সম্পদ থেকে যা নিতে চান তা নিন। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথার ওপর আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন। كَمَآ أَخۡرَجَكَ رَبُّكَ مِنۢ بَيۡتِكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لَكَٰرِهُونَ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে তোমার ঘর থেকে বের করে এনেছিলেন যদিও মুমিনদের একদল তা পছন্দ করে নি”।

আওফী রহ. ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করে বলেন, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা বিষয়ে পরামর্শ চাইলে সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যা বলার বলেন, তিনি লোকদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তাদেরকে কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। বিষয়টি মুমিনদের অপছন্দ হলে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত كَمَآ أَخۡرَجَكَ رَبُّكَ مِنۢ بَيۡتِكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ لَكَٰرِهُونَ ٥ يُجَٰدِلُونَكَ فِي ٱلۡحَقِّ بَعۡدَ مَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى ٱلۡمَوۡتِ وَهُمۡ يَنظُرُونَ “ঠিক তেমনি প্রকৃতভাবেই তোমার রব তোমাকে তোমার ঘর থেকে বের করে এনেছিলেন যদিও মুমিনদের একদল তা পছন্দ করে নি। সত্য স্পষ্ট করে দেওয়ার পরও তারা তোমার সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছিল, (তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল) তারা যেন চেয়ে চেয়ে দেখছিল যে, তাদেরকে মৃত্যুর দিকে তাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে”।

মুজাহিদ রহ. বলেন, হক বিষয়ে যুদ্ধ করতে তারা তোমার সাথে বিবাদ করে।

ইবন জারির বলেন, অন্যান্যরা বলেছেন, এ দ্বারা উদ্দেশ্য মুশরিকরা। তারপর ইবন যায়েদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ সব মুশরিক হকের বিষয়ে রাসূলের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বাণী, وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيۡرَ ذَاتِ ٱلشَّوۡكَةِ تَكُونُ لَكُمۡ এর অর্থ তারা পছন্দ করে যে দলটির কোনো শক্তি নেই এবং যুদ্ধ করার প্রয়োজন নেই সে দলটি যেন তাদের মুখোমুখি হয়। অর্থাৎ বাণিজ্যিক কাফেলা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ “আর আল্লাহ্ চেয়েছিলেন তাঁর বাণী দ্বারা সত্যকে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে” অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে এবং অস্ত্র-শস্ত্রে বলিয়ান দলকে একত্রিত করার ইচ্ছা করেন যাতে করে তিনি তাদের ওপর তোমাদেরকে বিজয় দান করেন তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেন, তাঁর দীনকে বিজয়ী করেন, ইসলামের বাণীকে উর্ধ্বে তুলে ধরেন এবং সকল দীনের ওপরে তাঁর দীনকে বিজয়ী করেন। তিনি সকল বিষয়ের পরিণতি সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি তোমাদেরকে সুন্দররূপে পরিচালিত করেন, যদিও বান্দারা এর বিপরীত বিষয়কে পছন্দ করে, যা তাদের নিকট বাহ্যত প্রতিভাত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡ‍ٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦﴾ [ البقرة : ٢١٦ ] “তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে অথচ তা তোমাদের কাছে অপ্রিয়, কিন্তু তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ কর সম্ভবত তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর এবং সম্ভবত কোনো কিছু তোমাদের কাছে প্রিয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১৬]

মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারেন যে, আবু সুফিয়ান মক্কার উদ্দেশ্যে সিরিয়া ত্যাগ করেছে তখন তিনি মুসলিমগণকে উৎসাহিত করেন মাঝপথে তাদের পাকড়াও করতে। তিনি বলেন, এ হচ্ছে কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা এতে তাদের মালামাল রয়েছে, তাদেরকে ধরার জন্য বের হও, হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে তোমাদেরকে গনীমত প্রদান করবেন। লোকেরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়, কেউ কেউ বিষয়টিকে হালকা মনে করে আবার কারও কারও কাছে তা ভারি মনে হয়, কেননা তারা ভাবেন নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যুদ্ধ করতে হবে। আবু সুফিয়ান যখন হিজাযের নিকটবর্তী হয় তখন সে সতর্কতার সাথে অগ্রসর হয় আর এবং গোপনসূত্রে সংবাদ সংগ্রহ করে। সে তার বাণিজ্য কাফেলার ক্ষতির ভয়ে পথিমধ্যে যার সাথে সাক্ষাত হয় তাকেই জিজ্ঞেস করে, অবশেষে কতিপয় কাফেলার নিকট সংবাদ পায় মুহাম্মাদ তোমাকে এবং তোমার বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার জন্য তাঁর সহচরবৃন্দকে সমবেত করেছে। সে সময় সে ভীত হয়ে দমদম ইবন আমর আল-গিফারীকে ভাড়া করে মক্কায় প্রেরণ করে যাতে করে সে বাণিজ্য কাফেলাকে রক্ষার জন্য কুরাইশদের সমবেত করে আর তাদেরকে যেন অবহিত করে যে, মুহাম্মাদ বাণিজ্য কাফেলাকে ধরার জন্য তার সহচরবৃন্দকে সমবেত করেছে। দমদম ইবন আমর দ্রুত মক্কায় গমন করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে বের হন, এমনকি তারা যারফান নামক উপত্যকায় এসে পৌঁছেন, এরপর তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যান তবে এর কিছু অবশিষ্ট থাকতে তিনি সেখানে নেমে পড়েন (শিবির স্থাপন করেন) এ সময় তাঁর নিকট সংবাদ আসে যে, কুরাইশরা তাদের বাণিজ্য কাফেলাকে রক্ষা করার জন্য বের হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের নিকট পরামর্শ চান আর তাদেরকে কুরাইশাদের সম্পর্কে অবহিত করেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাঁড়িয়ে ভালো কিছু পরামর্শ দেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও অনুরূপ বলেন, এরপর মিকদাদ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তার জন্য অগ্রসর হোন, আমরা আপনার সাথে আছি, আল্লাহর শপথ, আমরা আপনাকে এমন কথা বলব না যা বনী ইসরাঈল মূসা আলাইহিস সালামকে বলেছিল: ‘তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে রইলাম’ বরং (বলব) আপনি আর আপনার রব গিয়ে যুদ্ধ করুন আমারও আপনাদের সাথে থেকে যুদ্ধ করব। যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে বিরকুল গিমাদ অর্থাৎ হাবাশার (ইথিওপিয়ার) উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন তবুও আমরা আপনার সাথে থেকে যুদ্ধ করব যে পর্যন্ত আমরা সেখানে গিয়ে পৌঁছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ভালো কিছু বলেন আর তার জন্য মঙ্গলের দো‘আ করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের মতামত ব্যক্ত কর’ এ থেকে তিনি আনসারদের প্রতি ইঙ্গিত করেন, কেননা সে সময় অধিকাংশ লোক ছিল তাদের থেকে, কেননা তারা যখন আক্বাবায় তাঁকে অঙ্গিকার দিয়েছিল, তারা বলেছিল: হে আল্লাহর রাসূল, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে নিরাপত্তা দিব না যতক্ষণ না আপনি আমাদের অঞ্চলে আসেন, যখন আপনি আমাদের অঞ্চলে আসবেন তখন কেবল আমরা আপনাকে নিরাপত্তা দিব, আপনাকে আমরা সে সব বিষয় থেকে নিরাপত্তা দিব যেসব বিষয়ে আমরা আমাদের বাপ-দাদা এবং সন্তানাদিকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশঙ্কা করেন যে, আনসারগণ হয়ত ভাবতে পারে যে, মদীনায় যারা তাঁকে আক্রমণ করে তাদেরকে প্রতিহত করা ছাড়া তাদের জন্য তাঁকে সমর্থন করা আবশ্যক নয়। অন্য এলাকায় শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য তারা তাঁর সাথে যাবে না; কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন একথা বলেন তখন সা‘দ ইবন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বলেন, আল্লাহর শপথ, আপনি যাদেরকে ইঙ্গিত করেছেন তারা আমরা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাঁ, তখন তিনি (সা‘দ) বলেন, আমরা আপনার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনাকে বিশ্বাস করেছি, আর এ সাক্ষ্যও দিয়েছি যে, আপনি যা নিয়ে এসেছেন তা সত্য, আর এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে আমাদের অঙ্গিকার প্রদান করেছি যে, আর আপনার সাথে ওয়াদা করেছি যে, আপনার কথা শুনব এবং আপনার আনুগত্য করব, হে আল্লাহর রাসূল আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা যে নির্দেশ দিয়েছেন তা পালনে চলুন, তাঁর শপথ যিনি আপনাকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, আপনি যদি এ সমুদ্র (লোহিত সাগর) পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তবে এ ক্ষেত্রে আমরা আপনার অনুসরণ করব, আমাদের কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না, আর আগামীকাল আমরা আমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হতেও ভয় করি না, যুদ্ধের ময়দানে আমরা ধৈর্যশীল, লড়াই আমরা দুর্ধর্ষ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের থেকে আপনাকে এমন কিছু দেখাবেন যাতে আপনার চক্ষু জুড়িয়ে যায়। আল্লাহর বরকতের সাথে আমাদেরকে নিয়ে চলুন, সা‘দের কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হন আর সেটা তাঁর উদ্যম সৃষ্টি করে। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহর বরকতের সাথে তোমরা অগ্রসর হও, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ দু’টি দলের একটির সুসংবাদ দিয়েছেন, আল্লাহর শপথ, যেন আমি কাওমের (কুরাইশের) ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছি।

আউফী আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ বলেছেন সুদ্দী, কাতাদা, আব্দুর রহমান ইবন যায়েদ ইবন আসলাম রহ. সহ আগের পরের অনেক আলেম। আমরা মুহাম্মাদ ইবন ইসহাকের বর্ণনার দ্বারা তাদের কথাগুলো সংক্ষিপ্ত করা যথেষ্ট মনে করলাম।

﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ ٩ وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشۡرَىٰ وَلِتَطۡمَئِنَّ بِهِۦ قُلُوبُكُمۡۚ وَمَا ٱلنَّصۡرُ إِلَّا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ١٠﴾ [ الانفال : ٩، ١٠ ]

অর্থানুবাদ:

“স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফিরিশতা দিয়ে সাহায্য করব যারা পর পর আসবে।’ আর আল্লাহ যে এটি করেছিলেন তার উদ্দেশ্য তোমাদেরকে সুসংবাদ দান ছাড়া অন্য কিছু নয় আর যাতে এর মাধ্যমে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি ঘটে। কেননা সাহায্য তো একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকেই আসে। আল্লাহ তো মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৯-১০]

তাফসীর:

ইমাম আহমদ রহ. উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথীদের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাদের সংখ্যা মাত্র তিনশত ও সামান্য; পক্ষান্তরে কাফেরদের দিকে দেখেন তাদের সংখ্যা তাদের এক হাজারের বেশি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাদর ও পরিধেয় পরিহিত অবস্থায় কিবলামুখী হন এবং বলেন: হে আল্লাহ তুমি যা ওয়াদা করেছ তা কোথায়? তারপর তিনি বলেন, «اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي، اللَّهُمَّ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَلَا تُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ أَبَدًا» “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলে তা বাস্তবায়ন কর। হে আল্লাহ! যদি তুমি আহলে ইসলামের এ ছোট জামা‘আত ধ্বংস করে দাও, তবে জমিনে কখনোই তোমার গোলামী করার মতো কেউ থাকবে না”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন, তাকে ডাকছিলেন। ফলে তাঁর তার চাদর তাঁর শরীর থেকে নিচে পড়ে গেল। এ মুহুর্তে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে তাঁর চাদরকে তাঁর শরীরে ফিরিয়ে দিলেন এবং পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আপনার রবের নিকট যেভাবে চেয়েছেন তাই আপনার জন্য যথেষ্ট। তিনি আপনাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلۡفٖ مِّنَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ مُرۡدِفِينَ “স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের রবের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তখন তিনি তোমাদেরকে জবাব দিলেন” নাযিল করেন। তারপর যখন যুদ্ধ সংঘটিত হলো, আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের পরাজিত করেন, তাদের সত্তর জন নিহত হয় এবং সত্তরজন বন্দী হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বন্দীদের বিষয়ে আবু বকর, উমার ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমদের নিকট পরামর্শ চান। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এরা সবাই চাচাতো ভাই, স্বগোত্রীয় ভাই। আমার মতামত হলো, তাদের থেকে ফিদইয়া নেওয়া হোক। আমরা তাদের থেকে যা নিলাম তা আমাদের জন্য কাফেরদের বিপক্ষে শক্তিতে পরিণত হবে। আর হতে পারে আল্লাহ তাদের হিদায়াত দেবেন, তাতে তারা আমাদের শক্তি হবে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনুল খাত্তাব তোমার মতামত কী? তিনি বললেন, আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মতামতের সাথে একমত নই। আমার মতামত হলো, আমাকে আমার অমুক আত্মীয় বিষয়ে অনুমতি দেবেন আমি নিজ হাতে তাকে হত্যা করব। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আকীলকে হত্যা করবে এবং হামযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার ভাইকে হত্যা করবে। যাতে আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, আমাদের অন্তরে মুশরিকদের প্রতি কোনো দুর্বলতা নেই। এরা সবাই মুশরিকদের সর্দার, তাদের ইমাম ও তাদের নেতা। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর মতামতের দিকে ঝুঁকেন এবং আমার মতামতকে গ্রহণ করেন নি। তাই তাদের থেকে তিনি ফিদইয়া গ্রহণ করেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পরবর্তী দিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট গমন করলে তাদের দেখতে পাই, তারা দুইজন কাঁদছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল কোনো জিনিসটি আপনাকে এবং আপনার সাথীকে কাঁদতে বাধ্য করল? যদি কাঁদার বিষয় হয়, তবে আমিও কাঁদবো আর যদি তা কাঁদার বিষয় না হয় তবে আমি কাঁদার ভান করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, «لِلَّذِي عرض عليَّ أصحابك من أخذهم الفداء، لقد عُرِضَ عليَّ عَذَابُكُمْ أَدْنَى مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ» “তোমার সাথীরা আমাকে তাদের ফিদিয়া গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করার কারণে তোমাদের শাস্তি আমার নিকট পেশ করা হয়েছে যা এ গাছেরও নিকটে এসে গেছে”। গাছটি রাসূলুল্লার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব কাছেই ছিল। আর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত ﴿مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُۥٓ أَسۡرَىٰ حَتَّىٰ يُثۡخِنَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ ٦٧﴾ [ الانفال : ٦٧ ] “কোনো নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দী থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি জমিনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৭] থেকে নিয়ে ﴿فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمۡتُمۡ حَلَٰلٗا طَيِّبٗاۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٦٩﴾ [ الانفال : ٦٩ ] “অতএব, তোমরা যে গনীমত পেয়েছ, তা থেকে হালাল পবিত্র হিসেবে খাও, আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬৯] পর্যন্ত নাযিল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৯২] আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য গনীমতকে হালাল করেন। পরবর্তী বছর ওহুদের যুদ্ধে এ কর্ম অর্থাৎ ফিদইয়া গ্রহন করার ফলাফল হিসেবে মুসলিমরা শাস্তি ভোগ করেন। তাদের সত্তরজন শহীদ হয়, সাহাবীগণ রাসূলকে ছেড়ে পলায়ন করে, তাঁর দাঁত ভেঙ্গে যায়, তাঁর মাথায় বল্লমের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়, তাঁর চেহারা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত ﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥﴾ [ ال عمران : ١٦٥ ] “আর যখন তোমাদের ওপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটি কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান”। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৬৫] নাযিল করেন। তোমাদের ফিদইয়া গ্রহণ করার কারণে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৬৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ২৬৯০, তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৮১; ইমাম আহমাদ রহ. স্বীয় মুসনাদে ১/৩০)]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন